- 389
- 58
- 29
[পার্ট ১]
অনিমেষ ভট্টাচার্য কলকাতার একজন প্রশিক্ষিত ডাক্তারদের মধ্যে একজন. বিলেত থেকে ডাক্তারি জ্ঞান অর্জন করে এসেছেন তিনি. তার পিতা তপন ভট্টাচার্য ছিলেন উকিল. এখন যদিও অবসর নিয়েছেন. তার মা রমলা দেবী গৃহবধূ. অনিমেষ বাবু কলকাতার একটি বিখ্যাত হসপিটালে ডাক্তারি প্রাকটিস করেন. কিন্তু তিনি খুশি নন. ছোট বেলা থেকেই তার মধ্যে গরিব দুঃখীদের সেবা করার, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর একটা দৃঢ় ইচ্ছা ছিল. কিন্তু ডাক্তার হয়েও কলকাতায় তিনি নিজের এই ইচ্ছাটা সফল করতে পারছিলেন না. তাকে এখানে রুলস আর রেগুলেশন এর মধ্যে দিয়ে চলতে হয়. তিনি সচ্ছল ভাবে এখানে কাজ করতে পারছিলেন না. কারণ তার মনে সেবা করার ভাবনাটা এখনো রয়ে গেছেন. তিনি তার স্ত্রীকে বলেন : স্নিগ্ধা, যদি সবাই শহরে ডাক্তারি করে…. তাহলে গ্রামের ওই গরিব লোক গুলোর কি হবে বলতো?
স্নিগ্ধা বলে : তুমি একদম ঠিক কিন্তু এখানে তোমার অনেক সুযোগ আছে যেটা ওখানে নেই.
স্নিগ্ধা, দুই সন্তানের জননী. প্রথম জন আট বছরের আর দ্বিতীয় জন এখনো দুধপান করে. অর্ণব আর সুজয়. অর্ণব বড়ো. তাদের মা অসাধারণ রূপের অধিকারিণী. দুই সন্তানের মা হয়েও শরীরে কোনো সৌন্দর্যের অভাব নেই. রমলা দেবী যখন অনিমেষ বাবুকে স্নিগ্ধার ছবি দেখিয়ে ছিল ওই টানা টানা চোখ দেখেই অনিমেষ বাবু হা বলে দিয়েছিলেন. তারা দু পক্ষই বড়ো ঘরের. আজ স্নিগ্ধা আর অনিমেষ বাবু সুখী দাম্পত্য জীবনের অধিকারী কিন্তু তারা জানতেন না এই সুখী জীবনের ওপর নেমে আসবে কালো ছায়া, তাদের দাম্পত্য জীবনে নজর পরতে চলেছে কালো এক ছায়ার.
অনিমেষ বাবু একদিন ঠিক করে ফেললেন না…. আর নয় এইভাবে আর চলতে পারেনা. জীবনে স্বার্থ, অর্থ থেকেও সেবা বড়ো. তিনি এই শিক্ষা তার দাদুর থেকে, বাবার থেকে পেয়ে এসেছেন. তাই তিনি একদিন তার এক বন্ধুরা প্রতুল কে তার মনের কথা বলেই ফেললেন. প্রতুল তাকে জানালো সে যদি চায় তাহলে সে তার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে. অনিমেষ বাবু তো হাতে চাঁদ পেলেন. তিনি প্রতুল কে বললেন তিনি রাজি. গরিব মানুষ গুলোর সেবা করে তার আত্ম তৃপ্তি. টাকা পয়সার কোনো অভাব কোনো দিনই ছিলোনা অনিমেষ বাবুর. তাই সেবাতে নিজের মন দিতে চান. নিজের শিক্ষাকে সেবার কাজে লাগাতে চান. প্রতুল তার কথা শুনে বললো : ভাই…. তোর মতো যদি সব ডাক্তার হতো তাহলে……… থাক…. তুই যখন এটাই চাইছিস তখন আমার জানা একটা গ্রাম আছে. ওখানে কোনো ডাক্তার থাকতে চায়না… আসলে সবাই শহরকে আপন করতে চায়. তাই আগের ডাক্তারও দিয়েছে লম্বা. তা তুই ওখান দিয়েই নিজের যাত্রা শুরু কর. অনিমেষ বাবু তো এককথায় রাজি. কিন্তু বাসস্থান তো দরকার, সেই ব্যাপারে প্রতুল কে জিজ্ঞাসা করাতে সে বললো : কোনো অসুবিধা নেই. ওইগ্রামে আমার এক বন্ধুর একটা জমিদার বাড়ি আছে. যদিও সেই বাড়ি আজ পরিত্যক্ত. কিন্তু আমি ওকে বলবো যাতে ও ওখানকার সব কিছু পরিষ্কার করিয়ে রাখে. আসলে ওদের পরিবারই একটা ছোট হাসপাতাল খুলে ছিল কিন্তু ঐযে সব ডাক্তার শহরে পালিয়ে যায়. এবার তুই ভেবে দেখ. অনিমেষ বাবু বললেন সব ব্যাবস্থা যখন হলোই তখন তুই তোর বন্ধুরা সাথে কথা বলে দেখ. দু দিন বাদে ওই বন্ধুর সাথে প্রতুল অনিমেষ বাবুর দেখা করিয়ে দিলেন. তার নাম অঞ্জন ভট্টাচার্য. তিনি বললেন জমিদার বংশের সন্তান তিনি কিন্তু তার জন্ম শহরেই. তিনি নিজে কয়েকবার মাত্র গেছেন ওই গ্রামে. তবে তার বাবার ওই গ্রামে অনেক influence আছে. তাই তার এক কোথায় গ্রামের লোকেরা সব ঠিক থাক করে দেবে.
অঞ্জন : সত্যি আপনার মতো মানুষকে আমি খুজছিলাম. গ্রামের হাসপাতালটা পড়ে আছে, কেউ দেখার নেই. আপনি থাকলে ভালোই হবে. আপনার থাকা খাওয়ার কোনো অসুবিধা হবেনা. পুরো বাড়িটাই আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন. কিন্তু………
অঞ্জন বাবুর কিন্তু শুনে আর একটু চিন্তিত মুখ দেখে অনিমেষ বাবু বললেন : কি হলো অঞ্জন বাবু? একটু চিন্তিত মনে হচ্ছে?
অঞ্জন : আসলে ব্যাপারটা কিছুই নয়. আমরা শহুরে লোক. আমরা যদিও এসব মানিনা. আমার বাবাও মানেনা. কিন্তু গাঁয়ের লোকেরা বলে বাড়িটাতে নাকি গোলমাল আছে.
অনিমেষ : গোলমাল? কি গোলমাল মানে চুরি টুরির কথা বলছেন?
অঞ্জন : আরে না দাদা….. আসলে লোকে বলে বাড়িটা নাকি Haunted. অনেক আওয়াজ ভেসে আসে নাকি….. যদিও আমি ঐসব ফালতু কোথায় কান দিনা. গ্রামের অশিক্ষিত কিছু লোকের ভুলভাল চিন্তাধারা. তবু আপনাকে এই ব্যাপারটা জানানো উচিত বলে আমি বললাম. আপনার কোনো অসুবিধা থাকলে………
অনিমেষ বাবু অট্টহাসি হেসে উঠলেন. এইসব নিম্নমানের ব্যাপার তিনি মাথাতেই আনেননি. তিনি ভেবেছিলেন বোধহয় গ্রামে চুরি ডাকাতি হয়. তিনি অঞ্জন বাবুকে জানিয়ে দিলেন ঐসব প্রাগৈতিহাসিক চিন্তাধারাতে তার বিশ্বাস নেই. তিনি বিজ্ঞান জগতের মানুষ. তিনি স্পষ্ট ভাবে অঞ্জন বাবুকে জানিয়ে দিলেন তার কোনো অসুবিধা নেই ওই বাড়িতে থাকতে. এতো বড়ো একটা বাড়ি পাওয়া যাবে সেখানে তিনি ভালোই থাকবেন. সব কথার শেষে ঠিক হলো ওই বাড়িতেই থাকা হবে. হায়রে….. মানুষ মাঝে মাঝে এমন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যার ফলাফল হয় ভয়ানক.
তার এই সিদ্ধান্তের কথা যখন তিনি বাড়িতে জানালেন তখন প্রথমে সবাই আপত্তি করলো. বিশেষ করে স্নিগ্ধা. সে অনিমেষ বাবুকে বোঝালো কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল. ছোট থেকেই তার মধ্যে সেবা করার একটা ইচ্ছা ছিল আজ সেই সুযোগ পেয়েও তিনি ছেড়ে দেবেন. না কখনোই নয়. শেষ মেশ এটাই ঠিক হলো তিনি যাবেন. এই ব্যাপারে তপন বাবু অর্থাৎ ওনার পিতাও একমত হলেন. তিনিও পরোপকারী মানুষ. ঠিক হলো অনিমেষ বাবু আগে গিয়ে সব সাজিয়ে গুছিয়ে নেবেন. তারপর তিনি সপরিবারে সেই বাড়িতে যাবেন. কিন্তু অনিমেষ বাবুর স্ত্রী স্বামীকে ওই অচেনা জায়গায় একা ছাড়বেনা. আবার ওনার বাবা মায়ের যাওয়া হবেনা. তাদের বেশি বাইরে ঘোরা ঘুরি মানা. তাই ঠিক হলো যে কটা মাস তিনি ওই গ্রামে সেবা করবেন সেই কটা দিন তারা তাদের ছোট ছেলের কাছে চলে যাবেন. ওদিকে অর্ণব এর স্কুলে কয়েকদিন পরেই ছুটি পড়বে. গরমের ছুটি. তখনি রওনা হওয়া যাবে. তাহলে সবাই যেতে পারবে একসাথে. অনিমেষ বাবু সেই মতো বড়ো কর্তাদের জানালেন. সেখানকার বড়ো একজন তাকে সাহায্য করলো তাকে সব কাজে. ঠিক হলো যাত্রার দিন. অঞ্জন বাবুও সস্ত্রীক বাচ্চাদের নিয়ে একেবারে অনিমেষ বাবু কে নিয়ে একবার ঘুরে আসবেন বাড়িটা থেকে. নিজেও দেখে আসবেন বাড়িটা.
এসে গেলো সেইদিন. অনিমেষ বাবু স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাবা মাকে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়লেন ওই বাড়ির পথে. স্টেশনে গিয়ে দেখলেন অঞ্জন বাবু সঙ্গে একটা বাচ্চা. বোধহয় ওনার ছেলে. এগিয়ে গিয়ে পরিচিত হলেন একে ওপরের সাথে. অঞ্জন বাবু বললেন তার স্ত্রীয়ের শরীরটা একটু খাড়াপ তাই তিনি ছেলেকে নিয়েই এসেছেন. তারা ট্রেনে গিয়ে বসলো. দুই বাচ্চা একসাথে বসলো. অঞ্জন বাবুর ছেলের নাম চয়ন. চয়ন আর অর্ণব দ্রুত বন্ধু হয়ে গেলো. ওরা গল্প করতে লাগলো. বড়োরাও গল্প করতে লাগলো. দীর্ঘ 4 ঘন্টার পথ. স্টেশনে যখন গাড়িটা থামলো তখন সন্ধে 6 টা বেজে গেছে. স্টেশনে আগেই বলা ছিল. লোক আগেই ওনাদের নিতে এসেছে. অর্ণব দেখলো একজন বুড়ো লোক সঙ্গে দুজন কুলি. অঞ্জন বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন ওনার সঙ্গে. উনি গ্রামের একজন বিশিষ্ট মানুষ. নাম জগবন্ধু দাস. ওনার সঙ্গে অঞ্জন বাবুর বাবা মিলেই ওই হাসপাতাল বানিয়ে ছিলেন.
জগবন্ধু বাবু বললেন : এই গ্রামে নিজের থেকে যে কোনো ডাক্তার আসবে সেটা তিনি ভাবতেই পারেননি. তিনি বললেন আজতো সন্ধে হয়ে গেছে তাই কাল অনিমেষ বাবুর উদ্দেশে একটি স্বাগতম অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে. ওই একটু বক্তৃতা আর ওনার সম্মানে একটু মিষ্টি বিতরণ. জগবন্ধু বাবু কুলিদের বললেন সব মল পত্র ঠিক মতো গাড়িতে তুলে দিতে . তিনি আগেই গরুর গাড়ির ব্যবস্থা করে রেখে ছিলেন. তিনি সকলকে নমস্কার বলে চলে গেলেন. সবাই দুটো গরুর গাড়িতে চড়ে আসতে লাগলেন. 10 মিনিটের মধ্যেই তারা ওই বাড়িটাতে পৌঁছে গেলেন. বাড়িটা বিশাল কিছু না হলেও বেশ বড়ো. তিন তলা. টিপ টিপ করে হারিকেনের আলোয় জানলা গুলো আলোকিত. অঞ্জন বাবু নেমে হাঁক পারলেন. আর দুইজন লোক বেরিয়ে এলো. একজন মেয়েমানুষ আরেকজন লম্বা করে লোক. অঞ্জন বাবু ওনাদের সঙ্গে অনিমেষ বাবুর পরিচয় করিয়ে দিলেন. মেয়েমানুষটির নাম মালতি আর লোকটি তার বর তপন. দুজনেই পেন্নাম করলো তাদের. অর্ণব দেখলো তপন লোকটি কেমন করে যেন তার মায়ের দিকে চেয়ে আছে. ওর মা লক্ষ্য করছেনা কারণ সে অনিমেষ বাবুর সঙ্গে কথা বলছে. তপন ওদের মল পত্র নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আর পেছনে ওরা. মালতি ওদের জন্য কিছু জল আর খাবারের ব্যবস্থা করতে গেলো.
স্নিগ্ধা ওনার স্বামীকে বললো : বাব্বা….. জায়গাটা কি থম থমে গো. আসে পাশে সেইরকম বাড়ি ঘোরও নেই. ভাগ্গিস ইলেকট্রিক ব্যবস্থা আছে. নইলে এই জায়গাতে থাকতে কি করে?
অঞ্জন বাবু হেসে বললো : আসলে বৌদি কি এই বাড়িতে কেউতো থাকতো না…… ওই মালতি আর ওর বর বাড়ির থেকে দূরে ওই গ্রামে থাকে. আপনাদের জন্যই ওদের ডেকে পাঠালাম. ওরাই আমাদের বাড়িটার দেখভাল করে. আমরা যখনি আসি ওরাই আমাদের রান্না বান্না করে দিতো. তবে ওদের আমি বলে দিয়েছি এলং থেকে এই বাড়ির নিচেই থাকতে হবে. আপনাদের নতুন জায়গাতে তো এইভাবে একা ছেড়ে দিতে পারিনা. চলুন….
ওনাদের ওপরে দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে. অর্ণব দেখলো চয়ন কেমন করে ঘরটা দেখছে. যেন কিছু একটা ভয় পাচ্ছে. দোতলায় মাল পত্র রেখে সবাই বাইরে বারান্দাতে বসলো. একটু পরেই মালতি কিছু নিমকি আর মিষ্টি নিয়ে এলো. অঞ্জন বাবু জিজ্ঞেস করাতে মালতি বললো রাতের জন্য মুরগি আর লুচির ব্যবস্থা করা হয়েছে. সবাই বসে গল্প করতে লাগলো. চয়ন আর অর্ণব খেলতে লাগলো. দুজনে কম সময়েই বন্ধু হয়ে গেছে.
স্নিগ্ধা : বুবাই (অর্ণবের ডাক নাম) পরে খেলবে আগে খেয়ে নাও.
তারা খেলা ছেড়ে খেতে লাগলো নিমকি. গল্প করতে করতে রাত 10 টা বেজে গেলো. মালতি বললো খাবার ব্যাবস্থা করা হয়েছে. সবাই নীচে রান্না ঘরের পাশে খাবার ঘরে গেলো. সেখানে একটা পুরোনো খাবার টেবিল আছে. আর 4টা চেয়ার. বাচ্চারা দাঁড়িয়ে খেলতে খেলতে খেতে লাগলো. স্নিগ্ধা বুবাই কে খাইয়ে দিচ্ছে ওদিকে অঞ্জন বাবু চয়ন কে. মালতি বেশ ভালোই রান্না করে. খাবার পর অঞ্জন বাবু নিচ তোলাটা ওদের ঘুরিয়ে দেখালো. একটা ঘরে ওই মালতি আর তপন. আর বাকি ঘোর গুলোতে পুরোনো মল পত্র.
অনিমেষ বাবু অঞ্জন বাবুকে বললেন : এই বাড়ি কার বানানো?
অঞ্জন বাবু একটা সিগারেট ধরালেন আর বললেন : আমার দাদুর দাদু. অমর ভট্টাচার্য. লোকটা বেশ দিল দরিয়া ছিল…. কিন্তু তার ছেলে একেবারে বিপরীত.
অনিমেষ : মানে?
অঞ্জন : সে কালকে বলব. আজ অনেক খাটাখাটনি গেছে. বৌদি বাচ্চার নিশ্চই ঘুম পেয়েছে. চলুন…. চলুন.
সবাই উপরে উঠে এলো. তখনি কোলের বাচ্চাটা কেঁদে উঠলো. স্নিগ্ধা অনিমেষ আর অঞ্জন বাবুকে শুভরাত্রি বলে ঘরে চলে গেলো. তাকে এখন বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াতে হবে. বাচ্চারা অঞ্জন বাবুর ঘরটাতে বসে একটা ফুটবল নিয়ে. বাইরে তাদের বাবারা সিগারেট টানছে আর গপ্পো / আড্ডা মারছে. অর্ণব দেখলো চয়ন তাকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু কেন যেন চেপে যাচ্ছে. তখনি স্নিগ্ধা ঘর থেকে ওদের শুতে আসতে বললো. অনিমেষ বাবু অঞ্জন বাবুকে শুভরাত্রি বলে ছেলেকে নিয়ে চলে এলো ঘরে. সারাদিন যাত্রার ধক এ সবাই ক্লান্ত. জামা কাপড় বদলে সবাই শুয়ে পরলো. স্নিগ্ধা আগেই শাড়ি পাল্টে একটা ম্যাক্সি পরে নিয়েছে. সবাই শুয়ে পরলো. আর একটু পরেই ঘুম. রাত গভীর. বাইরে শেয়াল ডাকছে. জানলা দিয়ে চাঁদের আলো ঘরে ঢুকে ঘর আলোকিত. পাখা ঘুরছে. খাটের দুপাশে অনিমেষ আর স্নিগ্ধা. মাঝখানে দুই সন্তান. হটাৎ বুবাইয়ের ঘুমটা কেন যেন ভেঙে গেলো. ও চোখ খুলতেই দেখলো কে যেন ওর ডান পাশে দাঁড়িয়ে. ওই পাশেই ওর মা ঘুমোচ্ছে. বুবাই একটু নড়ে উঠতেই আর কিছু দেখতে পেলোনা. ও ভাবলো চোখের ভুল তাই আবার চোখ বুজলো. ওদিকে পাশের ঘরে চয়ন ঘুমিয়ে তার বাবার সাথে. তারা কালকেই চলে যাবে সন্ধে বেলায়. চয়ন তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যেতে চায়. সে এইবাড়িতে বেশিক্ষন থাকতে চায় না.
**********
পরের দিন সকালে সবাই উঠে চা খাচ্ছে. অর্ণব আর চয়ন বাইরে বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছে. যদিও বাগানটি ঠিক করে পরিচর্যা করা হয়না. কেই বা করবে. তাই সুন্দর ফুল গুলোকে উপেক্ষা করে জংলী গাছ আর জংলী ফুল গজিয়ে উঠেছে. তাদের মাঝে ওই ফুল গুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চাপা পরে গেছে. ওরা বাগানটা ঘুরে দেখে যেই ফেরার জন্য ঘুরেছে ওরা দেখলো ওদের পেছনে তপন দাঁড়িয়ে আছে. ওদের দিকে চেয়ে হাসছে. সে এগিয়ে এসে বললো : কি খোকাবাবুরা….. বাগান দেখছো? দেখো দেখো. তারপর চয়নের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো : তা এইবার এতো পরে এলে খোকাবাবু? তোমার কথা কত ভাবতাম আমি. তা তোমার মা এলোনা কেন? উনি আসলে আরো ভালো লাগতো. কি তাইনা? বলে বাগানের পাশের রাস্তা দিয়ে কোথায় চলে গেলো. অর্ণব চয়নের দিকে তাকালো. ও দেখলো চয়নের চোখে মুখে কেমন একটা ভয়. ও চয়ন কে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি ওর মা ওদের ডাক দিলো. ওরা যেতেই মালতি ওদের জন্য লুচি তরকারি নিয়ে এলো. ওরা চুপচাপ খেতে লাগলো. অঞ্জন বাবু চা খেতে খেতে স্নিগ্ধা কে বললো : তা বৌদি…. কাল কোনো অসুবিধা হয়নি তো? আসলে নতুন জায়গা তো সেইজন্যে. স্নিগ্ধা হেসে বললো : না… না কোনো অসুবিধা হয়নি খুব ভালো ঘুম হয়েছে. নতুন জায়গায় সচরাচর আমার ঘুম আসেনা কিন্তু কাল খুব ভালো ঘুম হয়েছে. একটু পরেই চা খাওয়া হয়ে গেলে অঞ্জন বাবু আর অনিমেষ বাবু বেরোনোর জন্য তৈরী হয়ে নিলেন. একটু পরে দুজনে বেরিয়ে গেলেন. জগবন্ধু বাবু ওনাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো. ওদিকে স্নিগ্ধা ছোট ছেলেকে নিয়ে ওপরে চলে গেলো আর দুই বাচ্চা দালানে ফুটবল খেলতে লাগলো. ওরা খেলছে তখনই অর্ণব দেখলো তপন ছুট্টে ঘরে ঢুকে উপরে উঠে গেলো. চয়নও সেটা দেখলো. তারপর তারা আবার খেলতে লাগলো. ওদিকে অঞ্জন বাবু আর অনিমেষ বাবু হাসপাতালে পৌঁছে দেখলো তাদের জন্য জগবন্ধু বাবু আর বেশ কয়েকজন সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে. সেখানে গ্রামের অনেক লোক এসেছেন. নতুন ডাক্তার বাবুকে পেয়ে তারা খুব খুশি. মালা পরিয়ে তাকে সম্মান জানানো হলো. গ্রামের বিশিষ্ট কিছু মানুষ তাকে সম্মান জানালেন তার সাথে অঞ্জন বাবুকেও. কারণ এই হাসপাতাল বানাতে তাদের পরিবারের অনেক অবদান আছে. অনিমেষ বাবু গ্রামের লোকেদের উদ্দেশ্য কিছু বক্তৃতা দিলেন. তারপর সামান্য মিষ্টিমুখ হলো. সবশেষে হাসপাতাল ভালো ভাবে ঘুরে দেখার পর দুপুর বেলাতে সব লোক চলে গেলে অনিমেষ বাবু, অঞ্জন বাবু, জগবন্ধু বাবু আর গ্রামের প্রৌঢ় অচিন্ত বাবু বসে আড্ডা দিচ্ছে. হটাৎ অচিন্ত বাবু প্রশ্ন করলেন : অঞ্জন তুমি ডাক্তার বাবুকে তোমার ওই জমিদার বাড়িতে রেখেছো ভালো কথা কিন্তু…….
অনিমেষ বাবু হেসে বললেন : আপনি কি ভুতের ভয়ের কথা বলছেন? স্যার আমি ওসব মানিনা. আমি ওই বাড়িতেই থাকবো. আমার বা আমার পরিবারের কোনোই অসুবিধা হবেনা.
জগবন্ধু বাবু একটু চিন্তিত হয়ে বললেন : সে সব ঠিক আছে. আমি আপনাকে থাকতে বারণ করছিনা…. আসলে অচিন্ত বাবু বলতে চাইছেন বাড়িটা নিয়ে যেভাবে গ্রামের লোকেরা বলাবলি করে তার ওপর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে বাড়িটার ওপর দিয়ে.
অনিমেষ : কি দুর্ঘটনার কথা বলছেন.
অচিন্ত : বাবা অঞ্জন.. তুমিই বলোনা. তোমাদের বাড়ি… আমি বলাটা ঠিক হবে না.
অঞ্জন বাবু : আমি বাবার মুখে যতটা জানি তাই বলছি. আমার জন্ম কলকাতায় তাই আমি এই বাড়ির সঙ্গে আমার কোনো অতীত জড়িয়ে নেই. বাবা এখানেই বড়ো হয়েছে. হা এটা ঠিক এই বাড়িতেই অনেক অঘটন ঘটে গেছে. আমার বাবার দাদা মানে আমার জেঠু তার ছোটবেলাতেই এই বাড়িতেই মারা যান. তাছাড়া ঐযে বলেছিলাম আমার দাদুর দাদু তার ছেলে অরিন্দম ভট্টাচার্য ছিল খুব রাগী স্বভাবের মানুষ. সে নাকি কাকে খুন করেছিল. তাছাড়া এই বাড়িতে নাকি বাচ্চাদের বলি দেওয়া হয়েছে. যদিও আমি সেসব ভালো ভাবে জানি না.
অচিন্ত বাবু : আমি জানি..আমি বলছি. অমর ভট্টাচার্যের ছেলে অরিন্দম ছিল রাগী স্বভাবের. কিন্তু বাবা ছিল শান্ত হাসি খুশি স্বভাবের আর ভগবানে বিশ্বাসী মানুষ. ছেলের যখন বিয়ের বয়স হলো তখন তাকে পাশের গ্রামের এক সুন্দরী মহিলার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন. তার বৌমার নাম ছিল সুজাতা. খুব সুন্দরী ছিল সে. একবার অমর বাবু এক সন্ন্যাসী গোছের মানুষকে এই বাড়িতে নিয়ে আসেন. পরে অবশ্য জানা গেছিলো সে তান্ত্রিক. পিশাচ সিদ্ধ. সব রকমের কু কাজে যুক্ত. অনেক শক্তি ছিল নাকি তার. তখন অবশ্য কেউ কিছু জানতোনা. অমর বাবু ভক্তি ভাব নিয়ে তাকে নিয়ে আসেন. তার ছেলের যদিও এইসবে মনোযোগ ছিলোনা. অমর বাবু তার বৌমাকেই বলেছিলো বাবাজির সব রকমের খাবার দাবারের ভার নিতে. সুজাতা সেই মতো বাবাজির সেবা করতো. এক সময়ে অরিন্দম দেখলো তার স্ত্রী ওই বাবাজির একটু বেশিই খেয়াল রাখছে. নিজেই সব খাবার দিয়ে আসে, খাবার পর নিজেই সেই সব পাত্র আনতে যেত. অরিন্দমের সেসব ভালো লাগতোনা. ততদিনে তাদের একটা মেয়ে হয়েছিল. তবে অমর বাবু চাইতেন যেন বৌমার একটা ছেলে হয়. ওই তান্ত্রিক তাকে আশ্বাস দিয়ে ছিল যে তার বৌমার ছেলে হবে. তবে তাকে নাকি বড়ো যোগ্য করতে হবে. এই কাজে তাকে তার বৌমাকে আর তার মেয়েকে লাগবে. আর যতক্ষণ যোগ্য চলবে কেউ যেন ওই ঘরে না আসে. অমর বাবু রাজি হন. ওদিকে অরিন্দম এইসব ভন্ডামিতে একটুও বিশ্বাস করতোনা. সে ঠিক করলো সে লুকিয়ে ওই যোগ্য দেখবে. অবশেষে যজ্ঞের দিন এলো. রাতের বেলা নিচের যে ঘরে তান্ত্রিক থাকতো সেই ঘরেই যোগ্য শুরু হয়. সারারাত নাকি যোগ্য হবে. সবাই শুয়ে পড়েছে কিন্তু অরিন্দম জেগে ছিল. সে ভেবেছিলো ওই ভন্ড লোকটার ভণ্ডামি সবার সামনে নিয়ে আসবেন. সেই মতো তিনি চুপ চাপ উঠে নীচে নামেন. নীচে এসে সে তান্ত্রিকের ঘরের কাছে এসে তার স্ত্রীয়ের গোঙানি শুনতে পান. তিনি দৌড়ে গিয়ে দরজায় লাথি মেরে খোলেন আর যা দেখেন তা ছিল বীভৎস. তার একমাত্র মেয়ের মৃতদেহ পরে আছে আর তার স্ত্রী সুজাতা আর তান্ত্রিক নোংরামো করে চলেছে. নিজের স্ত্রীকে ওই ভাবে তান্ত্রিকের সাথে দেখে রাগী অরিন্দম আরো রেগে যায় আর তান্ত্রিক কে গুলি করে মারেন. ওদিকে তান্ত্রিক নাকি মরার আগে বলে যায় তার এতদিনের কাজে বাঁধা দিয়ে সে ঠিক করেনি তান্ত্রিক বলে সে এইবাড়ির মহিলাদের ছাড়বেনা…. তার যোগ্য সে পূর্ণ করেই ছাড়বে. তার মৃত্যু নেই. সে বার বার ফিরে আসবে. এদিকে স্ত্রীয়ের জ্ঞান ফিরতেই সে এইসব দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়. পরে জানা যায় তান্ত্রিক তার শক্তি বাড়ানোর জন্য ছোট বাচ্চাদের বলি দিতো. এখানে এসে সুজাতা আর তার বাচ্চাকে দেখে তার সেই ইচ্ছা বেড়ে যায়. একদিকে নতুন বাচ্চা আরেকদিকে সুজাতার রূপে তান্ত্রিক পাগল. সে ঠিক করে সুজাতাকে বশ করে তাকে ভোগ করবে আর সুযোগ বুঝে তার বাচ্চাকে বলি দেবে. কিন্তু তার পরিকল্পনা পূর্ণ হবার আগেই অরিন্দম তাকে খুন করে. সবাই বলে সেই তান্ত্রিক এর আত্মা আজও নাকি এইবাড়িতে ঘোরাফেরা করে.
সব শুনে অনিমেষ বাবু বললেন : বুঝলাম…. বাড়িটাতে এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে আর তাই লোকেরা মনে করে ভুত ঘুরে বেড়ায়. যতসব কুসংস্কার. আমি এসব মানিনা. আরেকটা কি দুর্ঘটনার কথা বলছিলেন.
অঞ্জন বাবু বললো : ওটা আমি বলছি. আমার বাবারা ছিল তিন ভাই. বাবা মেজো. ছোটকা কলকাতায় থাকে. জেঠু তার ছোটবেলাতেই মারা যান. বাবা তখন ছোট বোধহয় 6 বছরের মতো আর জেঠু 11 বছরের. সব ঠিকই ছিল কিন্তু কি করে যে একদিন সব কিছু গোলমাল হয়ে গেলো কেউ জানেনা. অরিন্দম তার মেয়েকে হারানোর পরে আবার বাবা হয়েছিলেন. এবারে দুই ছেলে হয়েছিল. তার নাম ছিল সুজিত ভট্টাচার্য আর রঞ্জন ভট্টাচার্য. রঞ্জন আমার দাদু কিন্তু সুজিত ছিল নাকি পাগল. মানে পরে পাগল হয়ে গেছিলো. তাকে ঘরে আটকে রাখা হতো . অনেকে বলে সেই নাকি জেঠুকে মেরে ছিল তখন থেকেই তার পাগলামি ধরা পড়ে. তবে কোনো প্রমান নেই বলে সে ছাড়া পেয়ে যায়. তারপর দাদু বাবা আর ছোটকাকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে দেয়. দাদু কর্মসূত্রে আগে বাইরেই থাকতেন. সুজিত একাই থাকতো এই বাড়িতে. সে বিয়ে করেনি. পরে একদিন সে মারা যায় বুড়ো হয়ে. অনেকে বলে সুজিত নাকি ওই তান্ত্রিক দ্বারা possessed ছিল. আমি বা বাবা যদিও এসব মানি টানি না. সে পরে পাগল হয়ে গেছিলো এটা হতেই পারে.
অনিমেষ : একদমই তাই. এই গ্রামে এরকম অনেক ঘটনা রটে যায়. যাকগে….. চলুন… এবার ফিরি. বিকেল হয়ে এলো. অনিমেষ বাবু আর অঞ্জন বাবু ওনাদের বিদায় জানিয়ে ফিরতে লাগলো. ওদিকে চয়ন তার একটা ঘটনা অর্ণব কে বলছে. তারা খেলছিল আর গল্প করছিলো. হটাত চয়ন বললো : তুমি তোমার মাকে বলো ওই তপন এর সাথে যেন বেশি কথা না বলে.
অর্ণব : কেন?
চয়ন : লোকটাকে আমার একদম ভালো লাগেনা. আমরা যখন আগের বছর এখানে এসে ছিলাম তখন লোকটাকে দেখতাম খালি মায়ের দিকে কেমন করে তাকাতো. আমার কেমন যেন লাগতো. মা যখন রান্না করতো তখন আমি প্রায় দেখতাম লোকটা রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখতো. আমরা 10 দিন মতো ছিলাম কিন্তু শেষের কটা দিন মা যেমন কেমন হয়ে গেছিলো. কি যেন ভাবতো. আমার মনে আছে যেদিন আমরা এসেছিলাম তার পরেরদিন রাতের ঘটনা. আমি বাবা আর মা ঘুমিয়ে আছি. হটাৎ আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো. চোখ খুলে দেখি মা কি যেন বলে চলেছে. আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না. কিন্তু কয়েকটা কথা বুঝতে পেরে ছিলাম. না……. আমি আর পারছিনা….. এবার আসুন…… আমার কাছে. এরমকম কিছু শব্দ. তারপরের দিন রাতেও মা এরকম বলছিলো. আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে মা? মা হটাৎ ঘুম থেকে জেগে বললো : কৈ কিছু নাতো. তারপর ফেরার 2 দিন আগে আমি ঘুমোচ্ছি. হটাৎ কে যেন বললো ওঠো. তাড়াতাড়ি ওঠো. চলে যাও এখন থেকে. আমি ঘুম ভেঙে উঠে বসলাম. দেখি বাবা ঘুমোচ্ছে. মা পাশে নেই. আমি ভাবলাম বোধহয় বাথরুমে গেছে. কিন্তু অনেক্ষন না ফেরায় আমি ভাবলাম যাই. বাবাকে দেখলাম কিন্তু বাবার ঘুম খুব কড়া. তাই একাই বেরোলাম. দেখি বাইরের হারিকেনটা নেই আর নীচে কলঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে একটা আলো আসছে. আমি বুঝলাম মা নীচে তাই ঘরে ফিরে আসছি হটাৎ মায়ের তীব্র চিৎকার. তারপর মাটিতে জল পড়ার শব্দ হলো. আমি বাবাকে ডাকতে যাবো তখনি দেখি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ওই তপন লোকটা. তারপর পেছন ফিরে কাকে দেখে হাসলো তারপর আড়মোড়া ভেঙে কোথায় চলে গেলো. আমি দাঁড়িয়ে রইলাম. একটু পরে দেখি মা ওই কলঘর থেকে বেরোলো. আর ওপরে উঠতে লাগলো. আমি ছুটে গিয়ে ঘরে শুয়ে পড়লাম. মা একটু পরে আমার পাশে শুয়ে পরলো. পরের দিন সকালে দেখি মা আর মালতি মাসি রান্না করছে আর তপনও ওদের সাথে গপ্পো করছে. আমাকে দেখে ওই তপন কেমন যেন রেগে তাকালো তারপর চলে গেলো. লোকটা যেন কেমন. পরের রাতে আমার ঘুম যদিও ভাঙেনি কিন্তু মনে হচ্ছিলো কে যেন বলছে আমায় চলে যাও…. তোমার মাকে নিয়ে চলে যাও. আমি ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি. তারপর দিন সন্ধেবেলা আমাদের আসার কথা. বাবা গেছিলো ওই হাসপাতালে ঘুরতে. আমি একা ঘরে খেলছি. হটাৎ মনে হলো কে যেন ঘরে ঢুকলো. আমি এদিক ওদিক দেখলাম কিন্তু কিচ্ছু দেখতে পেলামনা. হটাৎ মনে হলো কানে এসে কে যেন বললো : তোমার মাকে বাঁচাও. আমি আবার এদিক ওদিক দেখলাম তারপর ভয় পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম. তারপর মা মা করে মাকে খুঁজতে লাগলাম. কিন্তু মা ওপরে ছিলোনা. আমি একতলায় এসে মা মা করে ডাকতে লাগলাম. দেখি ওই যে ঘরটা দেখতে পাচ্ছ ওই ঘরটা থেকে তপন বেরিয়ে এলো. তারপর মাকে দেখলাম বেরিয়ে আসতে. দুজনেরই সেকি হাসাহাসি. হটাৎ আমাকে দেখে মা রেগে মেগে এগিয়ে এলো তারপর বললো : নীচে কি করছিস? যা ওপরে যা. আমি আসছি. এতো ভীতু কেন তুই. পেছন থেকে তপন বললো : মায়ের কথা শোনো খোকাবাবু. দুস্টুমি করোনা. তারপর মা আমাকে বললো : যা ওপরে আমি তপনের সাথে কয়েকটা কথা বলেই আসছি. আমি ওপরে চলে এলাম. আমি অবাক হলাম. মা এখানে এসে প্রথমদিন তপনের সাথে কোনো কথাই বলেনি তাহলে আজ এতো কি কথা. তারপর দুপুরে বাবা ফিরে এলো. আর সন্ধেবেলা আমরা ফিরে এলাম. তবে মা বাবাকে বলছিলো আরো কদিন থেকে যেতে কিন্তু বাবা রাজী হয়নি. ফিরে এসে মাকে কদিন কেমন যেন মন মরা দেখতাম. তারপর বাড়িতে যেদিন পুজো হলো সেদিন থেকে দেখি মা আবার হাসি খুশি. তাই বলছিলাম কেন জানিনা ওই লোকটাকে আমার ভালো লাগেনা. তুমি তোমার মায়ের সাথে ওকে বেশি মিশতে দিওনা. এই বলে ওরা আবার খেলতে লাগলো. একটু পরেই ওদের বাবারা ফিরে এলো. দুপুরে ওরা খেয়ে দিয়ে একটা ঘুম দিলো. সন্ধে বেলায় অঞ্জন বাবু আর চয়ন ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলো. রাতে মালতি মাংস আর ভাত রান্না করেছিল. খেতে খেতে কথাবার্তা হচ্ছিলো.
অনিমেষ বাবু বললেন : আমার তো জায়গাটা বেশ লাগলো. এখানে আমি ভালোভাবেই কাজ করতে পারবো. বুবাইটার এখন গরমের ছুটি. সেকটা দিন ও এখানে থাকবে তারপর ওকে বাবা মায়ের কাছে রেখে আসবো.
খাওয়া দাবার পরে মা বাবা বসে বারান্দায় গল্প করছে. বুবাই ঘরে বসে টিভি দেখছে. এখানে সব রকম ব্যাবস্থায় অঞ্জন বাবু করে দিয়ে গেছেন.
বুবাইয়ের মা অনিমেষ বাবুকে বললো : হা জায়গাটা বেশ ভালোই তবে…… কি জানতো… আমার কেমন যেন লাগছে. জানিনা কিভাবে নেবে তুমি ব্যাপারটা কিন্তু তুমি চলে গেছিলে সকালে. আমি একা ছিলাম বাচ্চা দুটো নীচে খেলা করছিলো. আমি বসে টিভি দেখছি আর ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছি হটাৎ মনে হলো আমার পেছনে কে যেন হাত রাখলো. আমি ঘুরে দেখলাম কিন্তু কেউ নেই. আমি ভাবলাম মনের ভুল. তারপর দুপুরে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে স্নান করতে গেছি স্নান করছিও হটাত মনে হলো আমার পিঠে কার যেন হাত আবার. আমি ঘুরে তাকালাম কিন্তু কিচ্ছু নেই. কি হলো বলতো?
অনিমেষ বাবু হেসে বললো : আরে ধুর…… তুমিও না. নতুন জায়গায়. নতুন পরিবেশ. সব কিছুই নতুন. তাই এসব মনে হচ্ছে. দেখবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে. অনিমেষ বাবু আজ যা শুনেছেন তার কিছুই স্নিগ্ধাকে জানালেন না. যদি আরো ভয় পেয়ে যায় তাই. একটু পরেই গল্প শেষে অর্ণবের বাবা এসে ওকে যে কথাটা বললো সেটা শুনে ওর খুব ভয় হলো.
বুবাই টিভি দেখছিলো. ওর বাবা এসে বললো : বুবাই তুই ওই পাশের ঘরটায় থাকতে পারবি? আসলে এই খাটটায় চার জন ধরছে না. তাছাড়া তুমি বড়ো হচ্ছ. আজ বাদে কাল তোমায় ওই বাড়িতেই দাদু দিদার সাথেই থাকতে হবে আমরা তো এখানে থাকবো. যদিও স্নিগ্ধা বললো একসাথেই শুতে কিন্তু এটা ঠিক ওই খাটে চার জন ধরে না. তাই শেষ মেশ ঠিক হলো ও একাই ওই ঘরে শোবে. তাই সেইমতো ওই ঘরে সবার ব্যবস্থা করা হলো. রাতে একা একা শুতে বুবাইয়ের ভয় হচ্ছিলো. তবে সেরাতে তার কোনো অসুবিধা হলোনা. পরের দিন সকালে উঠে সে তৈরী হয়ে বাইরে এলো. বাইরে এসে দেখলো বাবা বেরোচ্ছে. ছেলেকে টাটা করে অনিমেষ বাবু চলে গেলেন নিজের কাজে. বুবাই কে মালতি এসে খেতে দিয়ে গেলো. লুচি আর বেগুন ভাজা. সে খেতে লাগলো আর টিভি দেখতে লাগলো. স্নিগ্ধা বললো : বুবাই ভাই রইলো. আমি বাথরুমে যাচ্ছি. বলে সে নীচে চলে গেলো. বুবাইয়ের কিছুক্ষন পরেই খাওয়া শেষ হয়ে গেলো. সে হাত ধুয়ে প্লেট রেখে ভাইকে দেখে নিলো সে ঘুমোচ্ছে. তারপর ওপরে তিন তোলাটা ঘুরতে গেলো. ওপরে যেতেই দেখলো তপন একটা ঘরে কি যেন করছে. সে এগোতেই দেখলো তপন বেরিয়ে আসছে. তাকে দেখে তপন হেসে উঠলো. কি খোকাবাবু এখানে কি করছো? এখানে উঠনা. এখানে ভুত আছে হি… হি…. বলে সে চলে গেলো. সে দেখলো তপনের হাতে কালো মতো কি একটা ছিল. সে অতটা খেয়াল করলোনা. সে একটু ঘুরে ফিরে নীচে নেমে এলো. এসে দেখলো মা এখনো আসেনি. সে বারান্দায় দাঁড়ালো. বারান্দা দিয়ে নীচে বাথরুমের কিছুটা দেখা যায়. বুবাই দেখলো তপন এদিক ওদিক দেখে কল পরের পেছনের দিকে চলে গেলো. সে ঐখানটাতে দেখতে এতো ব্যাস্ত যে পেছনে আরেকজন এসে দাঁড়িয়েছে সেটা সে বুঝতেও পারেনি. সে ঘুরতেই চমকে উঠলো. একটা বাচ্চা তার থেকে একটু বড়োই হবে. তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে. হাসছে. বুবাই ভয় পেয়ে গেলো.
সে বললো : কে….. কে…. তুমি.
ছেলেটি বললো : আমি রাজু. এই বাড়িতে আগে থাকতাম. এখন অনেক দূরে চলে গেছি. মাঝে মাঝে এই বাড়িতে ঘুরতে আসি. তা দেখলাম তোমরা নতুন এসেছো. তাই এলাম গল্প করতে. তুমি কি দেখছিলে?
বুবাই বললো কৈ কিছুনা তো?
রাজু হেসে বললো আমি জানি তুমি ওই তপনকে দেখছিলে তাইতো?
বুবাই বললো : তুমি কিকরে জানলে.
রাজু বললো : আমি জানি. তোমার জায়গায় একদিন আমিও ছিলাম. আমার সাথে আমার ছোট ভাই. তারপর……
বুবাই : তারপরে? তারপরে কি গো?
রাজু বললো : শুনবে?
বুবাই : হা বলোনা. বলোনা.
রাজু : তাহলে ছাদে চলো. এখানে নয়.
দুজনে ছাদে যেতে লাগলো. ছাদ খোলাই ছিল. বুবাই আর রাজু ছাদে একটা জায়গায় গিয়ে বসলো. বুবাই তাকে গল্পটা বলতে বললো. সে শুরু করলো তার কাহিনী.
**********
ছেলেটি বলতে লাগলো গল্প. (এখানে বলে রাখি কথোপকথন দুই ছোট বাচ্চার মধ্যে হলেও অতীতে যা যা হয়েছিল সেটা আমি অর্থাৎ লেখক বড়োদের মতো করেই বর্ণনা করবো )
রাজু: আমার ভালো নাম হলো রমেশ ভট্টাচার্য. আমার বাবার নাম রঞ্জন ভট্টাচার্য. বাবার এক ভাই ছিল সুজিত বলে. সে ছিল পাগল. মানে সবাই মনে করতো সেটাই. কিন্তু….. যাক সেটা পড়ে বলছি. আমার বাবা কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন বেশ কিছু বছর. সেখানে আমাদের আরেকটা বাড়ি ছিল. সেখানেই আমার, আমার ভাই আর আরেকটা ভাই জন্মায়. আমরা তিন ভাই ছিলাম. আমাদের মায়ের নাম ছিল অনুপমা. খুব সুন্দরী. টানা টানা চোখ অনেকটা তোমার মায়ের মতনই.
সব ঠিক থাক চলছিল কিন্তু একদিন বাবা দাদুর চিঠি পান যে তিনি খুব অসুস্থ তাকে দেখতে আসতে. আর সম্পত্তির ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে. তাই ঠিক হয় আমরা ওই বাড়িতে আসবো কিছুদিনের জন্য. আমি বাবা মা আর দুই ভাই এলাম এই বাড়িতে থাকতে. হয়তো জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল এটা. এইটা বলেই ছেলেটা কি যেন ভেবে ছাদের ধারে গিয়ে কি যেন দেখলো তারপর চিন্তিত মনে বুবাইয়ের পাশে এসে বসলো.
বুবাই বললো : কি হলো থামলে কেন বলো?
রাজু : হ্যা…? ওহ হ্যা যেটা বলছিলাম. তিন দিন পর আমরা বেহালা থেকে এই বাড়িতে আসি ট্রেনে করে. ট্রেন বেশ দেরি করেই সেই জায়গায় পৌছালো. স্টেশন যখন গাড়িটা থামল তখন রাত একটা হবে. একটা লোককে দেখলাম দাড়িয়ে ছিল. আমাদের নামতে দেখে আমাদের কাছে এল. লোকটা এসে বাবাকে পেন্নাম করলো. তারপর বললো : দাদাবাবু আসুন আসুন. আমি কল্যাণ. আপনাদের বাড়ির কাজ করি. তারপর সে মাকে পেন্নাম করলো. আমার যেন মনে হলো মাকে নমস্কার করার সময় কল্যাণ মাকে একবার নিচ থেকে ওপর দেখে নিলো তারপর দাঁত বের করে হেসে বললো : চলুন বাবু সময় হয়ে গেছে মানে….. আমাদের যাবার সময় হয়ে গেছে. এমনিতেই অনেক রাত এবং নিজেই সূটকেসট হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল. আমরা ওর পিছন পিছন যেতে লাগলাম.
বাবা বলল – “ট্রেন অনেক দেরি করেছে আজ.
কল্যাণ বলল-আর বলবেন না বাবু, সবসময় করে এবং মার কোলে ছোট্ট ভাইকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল – বাহ্ কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে আপনার. ঘুমাচ্ছে বুঝি?
বাবা বললো : হ্যা.
মা বলল-এইতো ট্রেনে ওঠার আগেই আগেই ঘুমালো. আবার উঠেছে না পড়ে. জেগে থাকলে কেঁদে কেঁদে আমাদের মাথা খারাপ করে দেয়. আমরা গরুর গাড়িতে করে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম. চারিদিক থম থমে, নিস্তব্ধ. আকাশে চাঁদ মাথার ওপরে. হটাৎ গাড়িটার চাকা একটা পাথরের ওপর পড়াতে গাড়িটা কেঁপে উঠলো জোরে. গাড়ির ওই ঝাকুনিতে ছোটটার ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং কাঁদতে লাগল. বাবা – উফ….. আবার জেগে গেছে…ওকে থামাও অনুপমা নইলে এখন কেঁদে কেঁদে রাস্তা মাথায় তুলবে. মেজো ভাই এতো রাত অব্দি জাগেনা. তাই ও গাড়িতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন. মা ভাইয়ের কান্না থামানোর চেস্টা করল কিন্তু ভাই কেঁদেই চলল. মা বললো : রাজু একটু ওদিকটা গিয়ে বস আমি ভাইকে দুধ খাওয়াবো . আমি পেছনটাতে গিয়ে বসলাম. মা ব্লাউসটা কিছুটা খুলে নিজের ডানদিকের দূদুটা বেড় করল এবং ভাইকে দুধ খাওয়াতে লাগল. ভাই দুধ খাচ্ছে. বাবা চোখ বুজে রয়েছে. আমি যেহেতু পেছনে ছিলাম তাই পেছনে গাড়ির কাপড় সরিয়ে বাইরের জঙ্গল দেখছিলাম. হটাৎ আমি যেই সামনে ফিরলাম আমি দেখলাম মা ভাইকে দুধ খাওয়াতে ব্যাস্ত কিন্তু কল্যাণ মায়ের দুধ খাওয়ানো দেখছিলো আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো আর গাড়ি চালাতে লাগলো. আমার কেমন যেন লাগলো কিন্তু ওতো কিছু ভাবলাম না.
কিছুক্ষনের মধ্যে ঘোড়ার গাড়িটা একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো মানে এই বাড়িটার সামনে. তখন মনে হচ্ছিল কি বিশাল বাড়ি!!! কল্যাণ বললো : রঞ্জন বাবু আমরা এসে গেছি. মা বাড়ির চারপাসে অন্ধকার দেখে জিজ্ঞেস করল-বাবা… এই বাড়িতে বাবা থাকেন তাও এতো অন্ধকার? যেন কেউ থাকেনা. কল্যাণ বললো : আসলে বৌদিমনি….বড়ো দাদাবাবু তো আর সেই ভাবে বাইরে বেরোনই না. আর দাদাবাবু আপনার ভাই কখন ভালো কখন রেগে যায় মানে আপনি তো জানেনি. উনিও খুব একটা নীচে নামেন টামেন না. নিচ তোলাটাতে আমি থাকি আর আমার বোন থাকে লাবনী. এই বলে কল্যাণ ডাক দিলো : লাবনী….. এই লাবনী… কোথায় গেলি বেরিয়ে আয়. একটু পড়ে একটি মহিলা বেরিয়ে এলো বছর ৩৫ বা ৪০ এর. দখতে যেন কেমন. এসেই বললো: দাদা ডাকছিলে?
কল্যাণ : দেখ যাদের আসার কথা এসে গেছেন. ইনি হলেন রঞ্জন বাবু আর ওনার স্ত্রী অনুপমা. আমাদের দাদাবাবুর পুত্রবধূ.
এইটা বলার পরেই দেখলাম কল্যাণ আর লাবনীর মধ্যে চোখে চোখে কি ইশারা হলো. লাবনী হেসে মাকে আর বাবাকে বললো : পেন্নাম দাদাবাবু, পেন্নাম বৌদিমনি. ওমা….. কি সুন্দর মুখখানি আপনার. আসুন আসুন. লাবনী আমাদের নিয়ে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো. পেছনে আমরা যেতে লাগলাম. আমাদের উত্তর দিকের একটা বড়ো ঘরে নিয়ে গেলো লাবনী. বেশ বড়ো ঘর.
লাবনী : আসুন দাদাবাবু, বৌদিমনি…. এটা আপনার ঘর. আপনারা বিশ্রাম করুন. আপনারা কিছু খাবেন?
বাবা : না…. আমরা খেয়ে নিয়েছি. এতো রাত হয়ে গেলো নইলে একবার বাবার সঙ্গে দেখা করে আসতাম. ঠিক আছে….. কাল সকালেই যাবো. এখন ঘুমিয়ে পড়ি.
কল্যাণ সুটকেস নিয়ে ঘরে ঢুকে পরলো. সেটা কে রেখে বিচ্ছিরি ভাবে একটা হাসি হেসে বললো : হি.. হি… দাদাবাবু আপনারা এসেছেন খুব ভালো হয়েছে. বড়ো দাদাবাবু আর সুজিত বাবু খুব খুশি হবে.
বাবা : দাদা কেমন আছে? এখনো কি আগের মতোই নাকি উন্নতি হয়েছে?
কল্যাণ : না…. না… উনি আগের থেকে অনেক ভালো. এখন আর রেগে টেগে যান না ওতো. যদিও বা রেগে যান কিন্তু সামলে নেন. আপনারা আসছেন শুনে তিনি আপনাদের দেখতে চেয়েছেন. বিশেষ করে বৌদিমনি কে. আসলে উনি তো বৌদিমনিকে দেখেনি নি. আচ্ছা আসি তাহলে. আপনারা বিশ্রাম করুন.
কল্যাণ আর লাবনী চলে গেলো. মেজোটা এসেই বিছানাতে শুয়ে পড়েছেন. ছোট ছিল তো. আর একদম ছোটটা মায়ের কোলে. আমি বাইরে বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছি. আর বাবা মায়ের কথা শুনছি.
মা : ওনার কি হয়েছিল বলতো? আমাদের বিয়েতেও উনি আসেননি. তোমার বাবা তো আমাদের বেহালার বাড়িতেই আমাদের বিয়ে দিলেন. আমরা আজ অব্দি ঐবাড়িতেই থেকে এসেছি. আজ জীবনে আমি প্রথমবার এই বাড়িতে এলাম. বাবা মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন. কিন্তু একবারও এই বাড়িতে ডাকেননি. ব্যাপারটা কি বলোতো?
বাবা : আসলে দাদার মাথাটা ঠিক নেই. না…. তার মানে পুরো পাগল নন. খুব রাগী, রাগলে মাথা ঠিক থাকেনা. যাতা বলেন…. কাউকে ছাড়বোনা…. তোদের মেরে ফেলবো…. তোরা আমাকে চিনিসনা… এইসব আরকি. কিন্তু একবার খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল. যার জন্য বাবা আমাকে বেহালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন.
মা : কি হয়েছিল গো?
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে কানে কানে কি বললো. মা চমকে উঠলো সেটা শুনে.
মা : কি!! তোমায়….. তোমাকে উনি মারতে….. !!
বাবা : আঃ…. আস্তে বলো….. রাজু বারান্দায়.
মা : কবেকার ব্যাপার এটা?
বাবা : আমি তখন সবে কলেজ পাস করেছি. ওই যে বললাম দাদা এমনিতে আগে ভালোই ছিল. এই মানুসিক ব্যাপারটা হটাত করেই ধরা পড়ে. পরে বলবো. এখন চলো শুয়ে পড়ি. উফফফ…. এতটা দেরি হয়ে গেলো.
বাবা নীচে বিছানা করে শুয়ে পড়লেন আর আমরা আর মা ওপরে খাটে. সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল হটাৎ একটা হাসির শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো. একটা কালো ছায়া মতো কি যেন জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেলো. আমি উঠে বসলাম. কিন্তু আর কোনো শব্দ হলোনা. বাইরে শেয়ালের ডাক. চোখের ভুল ভেবে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম. সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে. চোখ কচলে উঠে বসলাম. দেখি মেজো ভাই তখনো ঘুমোচ্ছে. বাবা বাথরুমে গেছেন. দরজা খোলাই ছিল. আমি বিছানা ছেড়ে নামতেই দেখি লাবনী খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো. আজ সকালের আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম. দেখতে ভয়ঙ্কর নয় কিন্তু এমন একটা ব্যাপার আছে মুখে যেটা আমায় ওর প্রতি ভয়টা বাড়িয়ে দিচ্ছে.
লাবনী : বৌদিমনি…… খাবার এনেছি. তোমরা আগে খেয়ে নাও তারপরে বড়ো বাবুর সাথে দেখা করতে যেও. আমি ওনাকে বলে এসেছি তোমরা এসেছো.
বাবা সেই সময়ে ঘরে ঢুকে বললো : যাও এবার তুমি. আমার হয়ে গেছে. ও… খাবার এসে গেছে. রাজু ভাই কে ডাক….. তোদের মাও যাচ্ছে…. যা তোরা মায়ের সাথে পাশের ছোট বাথরুম টাতে যা. একটু পরেই দাদুর সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে.
আমি ভাইকে জাগিয়ে মায়ের সঙ্গে নীচে গেলাম. লাবনী নিতে গেলো আমাদের. নীচে গিয়ে মা দূরের বাথরুমটাতে ঢুকলো আর আমরা সামনের ঔ ছোট দুটোয়. কিছুক্ষন পর আমার মায়ের বেরোনোর শব্দ পেলাম. মা ওপরে চলে গেলো. কিন্তু একটু পরেই আবার ওই বাথরুমেই কে যেন ঢুকলো. দরজা বন্ধ করার আওয়াজ স্পষ্ট পেলাম. একটু পরেই আমি বেরিয়ে এলাম. আমি এগিয়ে গেলাম ওই বাথরুমটায়. ভেতরে কেউ রয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে. কারণ দরজার নিচ দিয়ে দুটো বড়ো বড়ো পা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে. তবে সে কি যেন বলছে গুন গুন করে. আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না. আমি আরো এগিয়ে যাবো কিনা ভাবছি হটাৎ পেছনে একটা হাত ! আমি চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি মেজো ভাই. সে বললো তার হয়ে গেছে. আমিও আর সাত পাঁচ না ভেবে ভাইয়ের সঙ্গে ওপরে উঠে এলাম. উপরে গিয়ে লুচি তরকারি খেলাম. লাবনী মাসির হাতের রান্না ভালো তবে মায়ের মতো নয় সেটা বুঝলাম. মুখ ধুয়ে নিয়ে বাবা বললেন চলো চলো বাবার সঙ্গে দেখা করেনিই. আমরা সবাই গেলাম দাদুর ঘরে. পূর্বের একটা বড়ো ঘরে উনি থাকতেন. আমরা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে দেখলাম দাদু শুয়ে আছে আর লাবনী মাথার কাছে দাঁড়িয়ে.
মা প্রথমে এগিয়ে গেলেন. দাদুর পা ছুঁয়েছে প্রণাম করল. দাদু মা কে দেখে হাসিমুখে উঠে বসতে যাচ্ছিলেন কিন্তু মা তাকে আবার শুয়ে দিলো.
মা : না.. না… বাবা. আপনাকে উঠতে হবেনা. আপনি শুয়ে থাকুন.
দাদু : বৌমা…. তোমরা এসেছো. খুব খুশি হয়েছি মা. কৈ আমার নাতিরা কোথায়?
বাবা আমাদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন. আমরা সকলে দাদুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম. বাবাও করলেন. তারপর বাবা আর মা দাদুর পায়ের কাছে বসলেন. আমরা দাদুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম. দাদু আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে.
মা : বাবা…. কতদিন আপনাকে দেখিনি. কি অবস্থা হয়েছে আপনার. সেই ৮ বছর আগে আপনি এসেছিলেন তারপর আজ.
দাদু : বৌমা…. আমায় ক্ষমা করো….তুমি এই বাড়ির বৌমা… তা সত্ত্বেও তোমাকেও এই বাড়িতে বৌমা করে আনতে পারিনি মা. আসলে কিছু অতীতের ব্যাপার যা……
মা দাদুকে থামিয়ে বললেন : ছি.. ছি… বাবা… একি বলছেন ! আমি সব জেনেছি বাবা. আপনি যা করেছেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেছেন.
দাদু হটাৎ লাবনী মাসিকে একটু বাইরে যেতে বললেন. লাবনী ভুরু কুঁচকে একবার দাদুর দিকে তাকালো তারপর বেরিয়ে গেলো. তারপর দাদু মায়ের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন.
দাদু : সুখী হও মা….. মা এই শেষ বয়সে তোমাদের দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই সাহস করে ডেকে পাঠালাম. জানিনা আমি আর কদিন. তাই সব কিছু রঞ্জন কে বুঝিয়ে দিতে চাই. সুজিত তো এসব বেপারে কিচ্ছু বোঝেনা. তাই রঞ্জন কেই সব দায়িত্ব বুঝিয়ে আমার মুক্তি. আচ্ছা বৌমা যদি একটা অনুরোধ করি তোমার কাছে তুমি রাখবে মা?
মা : এমা…. বাবা… অনুরোধ কেন? আমি আপনার বৌমা…. আপনি আমার বাবার মতন. বলুননা.
দাদু : যে কটাদিন তোমরা এই বাড়িতে আছো… মানে যতদিন না সব দলিল পত্র তৈরী হচ্ছে তোমরা তো এখানেই আছো… তাই বলছিলাম মা যে তুমি যদি আমার খাবারের দায়িত্বটা নাও. আমার বৌমার হাতের সেই চমৎকার রান্না কতদিন খাওয়া হয়নি.
মা হেসে বললেন : আপনি না বললেও আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আপনাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবো. কতদিন আপনাকে কিছু রেঁধে খাওয়াতে পারিনি.
মা দাদুর মধ্যে কথা হচ্ছে…. আমি, বাবা ভাই সেইদিকে চেয়ে. হটাৎ আমার নজর পরলো দরজার বাইরে. পর্দার ওপারে কে যেন দাঁড়িয়ে. বিশাল লম্বা আর চোখ দুটো যেন জ্বলছে. আমার বুকটা হটাৎ ছ্যাৎ করে উঠলো. কে ওটা? বাবা কি বিশাল লম্বা. তখনি পর্দা সরিয়ে ওই ছায়া ঘরে প্রবেশ করলো. একজন লম্বা করে ভদ্রলোক. এসেই হাসি মুখে বাবাকে দেখে বললো : কি রে? কেমন আছিস? চিনতে পারছিস? বাবাকে দেখলাম হাসি মুখে লোকটার দিকে এগিয়ে গেলেন. গিয়ে প্রণাম করলেন. লোকটা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো. বাবা বললেন : দাদা….. কতদিন পর তোমায় দেখলাম. কিযে ভালো লাগছে. আমি বুঝতে পারলাম ইনি আমার জেঠু. সুজিত জেঠু. বাবা মাকে ডাকলেন এবং মা হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে ওনাকে প্রণাম করলো. জেঠু মায়ের মাথায় হাত রেখে বললেন : থাক থাক. তারপর মায়ের থুতনি ধরে বললেন : বাহ্…. কি সুন্দরী বৌ হয়েছে রঞ্জন তোর. ভালো থাকো অনুপমা. তা এতদিনে মনে পরলো আমাদের. তোমাকেতো শুধু ছবিতেই দেখেছি. তোমাদের বিয়ের ছবিতে বাবা তুলে এনেছিল. আজ এতদিন পরে সামনে দেখলাম.
মা হেসে বললো : দাদা আমি তো আসতেই চাইতাম কিন্তু আপনার ভাইয়ের কাজ পরে যেত তাই আসা হয়ে ওঠেনি. রাজু, তনু… এসো জেঠুকে প্রণাম করো.
আমি আর ভাই তনু গিয়ে জেঠুকে প্রণাম করলাম. জেঠু আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিন্তু আমার মনে হলো তিনি আমাদের থেকে আমার মায়ের আসাতে বা মায়ের প্রতি বেশি আগ্রহী. আমাদের পাশ কাটিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললেন : তা তোমার আরেকটা ছেলে আছে শুনলাম. মা বললো : হ্যা…. ওকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি. আপনি বসুন না দাদা. জেঠু বললেন : না ঘরে যাই. একটু কাজ আছে. তোমরা আমার ঘরে এসো. বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন. বাবা মা আবার দাদুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন. আমি দরজার দিকে তাকালাম দেখলাম জেঠু ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গেলোনা বরং বাইরে থেকে ঘরে নজর রাখছিলেন. আর তার নজরটা যেন মায়েরই দিকে. দাদুকে বিশ্রাম করতে বলে মা আর বাবা ঘরে চলে গেলো. আমি আর ভাই নীচে গেলাম ঘর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে. ভাই একটা ফুটবল নিয়ে নিলো. আমি নীচে নামতেই কল্যাণ লোকটার সাথে দেখা. উনি উপরেই আসছিলেন. আমাদের নীচে নামতে দেখে হেসে বললেন : কি… তোমরা নীচে খেলতে যাচ্চো. আমরা হ্যা সূচক মাথা নাড়তে সে হেসে বললো : যাও… যাও. খেলো. বলে সে উপরে উঠে গেলো. আমরা নীচে খেলতে বাইরে গেলাম. ওই বাগানটাতে. তখন ওই বাগানটা আজকের মতো অগোছালো ছিলোনা. নিয়মিত যত্ন করা হতো. কত সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে বাগানে. আমি আর ভাই ওই বাগানে খেলতে লাগলাম. ভাই হটাৎ বল টাতে লাথি মেরে দূরে ছুড়ে দিলো আমি ওটা নিয়ে ফিরে আসছি হটাৎ ওপরে দোতলায় চোখ পরলো. ওখানে জানলার ধারে দুজন লোককে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে. স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সুজিত জেঠু আর কল্যাণ. দুজনেই হাসি মুখে কি যেন আলোচনা করছে. তারপর কল্যাণ একটা লাল কাপড়ে মোড়া কি যেন একটা জেঠুর হাতে দিলো. আমি ওতো কিছু না ভেবে খেলতে লাগলাম. কিছুক্ষন পরে মা নেমে এলো. আমি দেখলাম মা আর লাবনী ঢুকলো রান্না ঘরে. তারপর আমরা রান্না ঘরে ঢুকলাম. কি বড়ো রান্না ঘর. পুরানো বনেদি বাড়ির রান্না ঘর বলে কথা. মা আমাকে দেখে বললো : রাজু… অনেক খেলা হয়েছে এবার ওপরে যাও. ভাই ঘুমোচ্ছে ওখানে থাকো. বাবার সঙ্গে উকিল বাবু দেখা করতে এসেছেন তাই সে ব্যাস্ত আছে. যাও.
আমি আর ভাই ওপরে উঠে এলাম. দেখলাম দাদুর ঘরে বাবা, জেঠু আর একজন লোক. জামাকাপড় থেকেই বোঝা যাচ্ছে সে উকিল. আমি আমাদের ঘরে আসতেই দেখি কল্যাণ. সে আমার ঘুমন্ত ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে. আমাদের দেখে হেসে বললো : হি… হি.. তোমরা সবাই বাইরে তাই আমি তোমার ভাইকে পাহারা দিচ্ছিলাম. আসি তাহলে. সে বেরিয়ে গেলো. আমি আর ভাই ওখানেই বসে বই পরতে লাগলাম. দুপুরে আমরা সবাই রান্না ঘরে খেতে গেলাম. ওখানে আগে একটা বড়ো টেবিল ছিল. এখন আর নেই. আমি বাবা ভাই আর মা খেতে বসলাম. মা লাবনী কে জিজ্ঞেস করলো দাদা খেতে আসবেন না? লাবনী বললো জেঠু তার ঘরেই খান. সে জেঠুর খাবার তার ঘরে নিয়ে গেলো. খেতে খেতে বাবা বললো : উকিল বললো কটাদিন সময় লাগবে. আমাদের ততদিন এখানেই থাকতে হবে. তাছাড়া আমার ওখানকার ব্যাবসার উন্নতির জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন. এটা পেলে ভালোই হবে. ও হ্যা….. ভালো কথা. দাদা আমাদের তার ঘরে একবার যেতে বলেছেন. খাওয়া হয়ে গেলে একবার দেখা করে আসবো. আমরা জেঠুর ঘরে দেখা করতে গেলাম. আশ্চর্য এই লোকটা রাগী ছিল? কে বলবে? এতো শান্ত লোক কিকরে রাগী হতে পারে আমি সেটাই ভাবছিলাম. জেঠু বাবা মায়ের সাথে কথা বলছিলো আমি বাইরে চলে এলাম. সেদিনটা এসবেই কেটে গেলো. কিন্তু কে জানতো পরের দিন গুলো কত ভয়ানক হতে চলেছে.
বুবাই : কি হয়েছিল পরে?
রাজু কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি সে কান পেতে কি শুনলো তারপর বুবাইকে বললো : তোমার মা তোমায় ডাকবে এক্ষুনি.
বুবাই : ডাকবে….. কৈ ডাকছে নাতো?
অমনি নিচ থেকে মায়ের ডাক : বুবাই….? কোথায় তুই বাবা?
বুবাই অবাক হয়ে গেলো. সে রাজু কে বললো : তুমি কিকরে জানলে মা ডাকবে? রাজু হেসে বললো : আমি আওয়াজ পেলাম যে. তুমি যাও মায়ের কাছে. আমি আজ আসি. কাল আবার এই সময়ে আসবো বাকিটা বলতে. চলো. বুবাই এগিয়ে যেতে লাগলো হটাৎ পেছন থেকে রাজু ডাকলো. বুবাই পেছন ফিরে তাকালো. রাজু এগিয়ে এসে বুবাইকে বললো : শোনো….. তুমি একটু চোখ কান খোলা রেখো. ওই তপন লোকটার ওপর নজর রেখো. এই বলে সে বুবাইয়ের আগে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো. বুবাই মায়ের কাছে ফিরে এলো. আসতেই মায়ের কাছে একচোট বকা খেলো. কেন ভাইকে ছেড়ে গেছিলো. মায়ের বকা যে আদরের বকা সেটা বুবাই জানে. কিন্তু ঘরে একটা নতুন জিনিস দেখে বুবাই অবাক.
বুবাই : মা…. ওটাকি? এইবলে সে বিছানায় রাখা একটা লকেট এর দিকে ইশারা করলো. মা বললো সে স্নান করে ফেরার সময় সে বাথরুমের জানলার আয়নাতে এটা ঝোলানো ছিল. এতো সুন্দর একটা লকেট ঝুলে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে. কি সুন্দর দেখতে. তাই নিয়ে এসেছে. বুবাই দেখলো মা ওইটা হাতে নিয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো তারপর আয়নার সামনে ওটা পড়ে নিজেকে দেখতে লাগলো.
বুবাই : মা… ওটা পড়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে. কি সুন্দর লাগছে তোমায়.
স্নিগ্ধা বুবাইয়ের গাল টিপে মাথায় চুমু খেয়ে বললো : যাও এবার চান করে নাও. তোয়ালে নিয়ে যাও. বুবাই নীচে নেমে কল ঘরে ঢোকার সময় দেখলো তপন কল ঘর থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসছে. বুবাইকে দেখে আরো হেসে এগিয়ে এসে বললো : কি খোকাবাবু? চান করতে যাচ্চো? যাও যাও চান করে নাও. ওদিকে তোমার বাবা বাড়িতে নেই. এখন তোমার, তোমায় ভাই আর তোমার মায়ের খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে তাইনা? তোমার মায়ের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমারই. হি…. হি….করে হাসতে হাসতে তপন চলে গেলো.
বুবাইয়ের তপনের এই শেষের কথাটা কেমন যেন লাগলো. কিনতু সে ওতো কিছু না ভেবে স্নান করতে ঢুকে গেলো. কিন্তু বিপদের শুরু যে হয়ে গেছে সেটা ওই আট বছরের বাচ্চাটা বুঝতেই পারলোনা.
**********
বুবাই চান করে বেরোলো. সে বেরোতেই দেখলো মা দাঁড়িয়ে আছে. বুবাই এর থেকে তোয়ালে নিয়ে স্নিগ্ধাই ছেলের মাথা মুছিয়ে দিলো. তারপর গা মুছিয়ে দিলো. তখনি তপন ঐখানে কি কাজে আসলো আর বুবাই দেখলো তপন হুট্ করে দরজার পেছনে লুকিয়ে গেলো আর তার নজর তার মায়ের দিকে. স্নিগ্ধা পেছন ফিরে নিচু হয়ে ছেলেকে মুছিয়ে দিচ্ছিলো তাই সে তপন কে দেখতে পায়নি. বুবাই দেখলো তপন দরজার পেছন থেকে মুখ বাড়িয়ে কেমন করে যেন তার মায়ের দিকে চেয়ে আছে. চোখ দুটো লাল. মুখে কেমন একটা হাসি. তারপর বুবাইয়ের সাথে তার চোখাচুখি হতেই সে বুবাইকে দেখে হাসি দিলো. বুবাই কিছু বুঝলোনা সেও তপনকে দেখে হাসি দিলো. ছেলেকে হাসতে দেখে স্নিগ্ধা বুবাইকে জিজ্ঞেস করলো : কিরে কাকে দেখে হাসছিস? বুবাই বলতেই যাচ্ছিলো মা ওকে দেখে……. কিন্তু সে চেয়ে দেখলো ওখানে কেউ নেই. স্নিগ্ধা ছেলেকে নিয়ে ওপরে উঠে এলো. বুবাই ওপরে উঠেই টিভিতে তার রোজকার দিনের মতো কার্টুন দেখতে লাগলো. টিভিটা মা বাবার ঘরে ছিল. তখনি অনিমেষ বাবুর ফোনে আসলো আর স্নিগ্ধা তার সাথে কথা বলতে লাগলো. একটু পরে ফোন রেখে স্নিগ্ধা দেখলো দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে. সে বুবাইকে বললো : বুবাই…. আমি একটু ছাদে যাচ্ছি. তুই কিন্তু ঘরেই থাকবি. আর নীচে গেলে দরজা ভিজিয়ে যাবি. ঠিক আছে? বুবাই টিভি থেকে মুখ না সরিয়েই হ্যা সূচক মাথা নাড়লো. স্নিগ্ধা সঙ্গে কিছু ভেজা কাপড় নিয়ে বেরিয়ে গেলো. বুবাই টিভিতে কার্টুন দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো. এখন তার ছুটির সময়, সে পুরো ছুটতে আনন্দ উপভোগ করে কাটাতে চায়.
ওদিকে স্নিগ্ধা ছাদে যাচ্ছিলো হটাৎ দেখলো সিঁড়ি দিয়ে মালতি উঠছে. সে আসলে জিজ্ঞেস করতে আসছিলো স্নিগ্ধা কখন খাবে.
মালতি : বৌদি…. আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতেই আসছিলাম বুবাই আর আপনি কখন খাবেন?
স্নিগ্ধা : ওই দেড়টা নাগাদ. তুমি এখন কি করবে? কোনো কাজ আছে?
মালতি : না বৌদি… সব রান্না শেষ. কোনো কাজ নেই.
স্নিগ্ধা : তাহলে ছাদে চলোনা. আমি চুল শুকাতে যাচ্ছি আর এগুলোও রোদে দেবো বেশ রোদ উঠেছে. কিছুক্ষন গল্প করা যাবে.
মালতি : চলুন দিদি. আমি আপনাকে দিদি বলতে পারিতো?
স্নিগ্ধা : নিশ্চই…… আসো.
দুজনে ছাদে উঠে গেলো. ছাদে একটা লম্বা দড়ি আগেই টাঙানো ছিল খুব পুরোনো তাই সেখানেই সে বুবাইয়ের ধোয়া জামা প্যান্ট আর একদম ছোটটার হিসু করে দেওয়া প্যান্ট কেচে শুকোতে দিলো. সঙ্গে নিজের ম্যাক্সি আর অন্তর্বাস. তারপর তারা দুজনে একটু ছাওয়া দেখে বসলো. বাড়ির পেছন দিয়ে এক বিরাট আম গাছ গজিয়েছে. না জানে কত বছরের পুরোনো. এই বাড়ির কত কিছুর সাক্ষী সেই গাছ. সেই গাছের বেশ কিছু ডাল পালা ওই ছাদের পশ্চিম দিকটা ঘিরে রেখেছে. ওরা দুজন ঐখানটাতে গিয়েই বসলো. বেশ ঠান্ডা জায়গাটা. মালতি আগের দিনিই পুরো ছাদ ঝাঁড় দিয়ে গেছিলো তাই পরিষ্কার. স্নিগ্ধা একটা ম্যাক্সি পরে নিয়েছে. তার বাড়িতেও ম্যাক্সি পড়াই অভ্যেস. সে বসে মালতিকে বললো….
স্নিগ্ধা : তুমি এই বাড়িতে কতদিন আছো মালতি?
মালতি : আমি মানে আমরা এই বাড়িতে থাকিনা. আমাদের ঘর এই বাড়ির থেকে একটু দূরে. আমার বরের পরিবারের লোকেরা বংশ পরম্পরায় এই বাড়িতে কাজ করতো তাই ও করে সঙ্গে আমি. ওর বাড়ির লোকেরা আগে এই বাড়িতেই থাকতো. নীচে রান্না ঘরের পাশে আগে কয়েকটা ঘর ছিল এখন ভেঙে পড়েছে. ওখানেই থাকতো. কিন্তু এই বাড়িতে সেই ঘটনার পরে ধীরে ধীরে সব পাল্টে যায়. ওরাও এই বাড়ি ছেড়ে দেয়.
স্নিগ্ধা : ঘটনা? কি ঘটনা মালতি?
মালতি : আমিও সেই ভাবে কিছু জানিনা. আমি শশুর মশাই থেকে শুনেছিলাম এই বাড়ির মালিক মানে অঞ্জন বাবুর বাবার বড়ো ভাই নাকি এই ছাদের সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরে মারা যান. তখন সে খুব ছোট ছিল. এগারো না বারো বছরের. অনেকে বলে দুর্ঘটনা আবার অনেকে বলে ষড়যন্ত্র. কে জানে? শশুড়মশাই বলেছিলো পুলিশ এসে এই বাড়ির এক পাগল ছেলেকে সন্দেহ করে কিন্তু কোনো প্রমান না থাকায় সে ছাড়া পেয়ে যায়. এরপর বাড়ির কর্তাও মারা যান. অঞ্জন বাবুর দাদু বাকি দুই ছেলেকে আর বৌকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে দেয়. তারপর ধীরে ধীরে এই বাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়. তারপর অনেক বছর এই বাড়ি ফাঁকা থাকে. আট বছর আগে অঞ্জন বাবুরা এই গ্রামে একটি হাসপাতাল তৈরী করেন গাঁয়ের লোকেদের জন্য কিন্তু আমাদের এই গাঁয়ে কোন ডাক্তার আর থাকবে তারা সব শহরে চলে যায়. অঞ্জন বাবুরাও মাঝে মাঝে এই বাড়িতে থাকতে আসতো এইতো আগের বছরই এসেছিলো তারপর এই আপনাদের সঙ্গে. অঞ্জন বাবু আমাদের ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন. আপনাদের যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় তাই এবাড়িতে থাকার ঘর দিলেন. ওনারা আমাদের মাস মাইনের ব্যাবস্থা করে দিলেন.
স্নিগ্ধা : বাব্বা…. এই বাড়িতেই দুর্ঘটনাও ঘটে গেছে? অবশ্য এইসব বাড়িতেই জমির সমস্যা হয়েই থাকে. কে জানে এর পেছনে হয়তো সম্পত্তির ব্যাপার ছিল.
মালতি : এই বাড়িতে নাকি আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে. এই বাড়ির সঙ্গে অপঘাতে মৃত্যু ব্যাপারটা জড়িত.
স্নিগ্ধা : তোমার বর কি করে?
মালতি : আজ্ঞে…. ওর বাবার জমি আছে সেটাই দেখাশুনা করে. আগে একটা জায়গায় কাজ করতো পরে অঞ্জন বাবু এসে আমাদের এই বাড়ির দেখাশুনা করার ভার দেন আর মাস মাইনের ব্যবস্থা করে দেন. দু বেলা এসে ও বাড়িটা দেখে যেত. মাঝে মাঝে আমরা এসেও থাকি. পরিষ্কার টোরিস্কার করে আবার চলে যাই. বেশির ভাগ সময়ই ও একা আসতো. ওর আবার ভয় ডর বলে কিছু নেই. এই খুন হওয়া বাড়িতে কতবার একাই রাত কাটিয়ে গেছে. আসলে গায়ের লোকেরা বলে এটা নাকি ভুতুড়ে বাড়ি. আমার উনি যদিও মানেনা. ও কোনোদিন কিছু দেখেনি. তবে হ্যা…. আগের বছর এক তান্ত্রিক এই বাড়িতে এসেছিলো. ওর আবার এইসব ব্যাপারে একটু ঝোক আছে. ওকে নাকি তান্ত্রিক বলেছিলো এই বাড়িতে সোনা ডানা পোতা আছে. তাই একরাত্রে ও আর ওই তান্ত্রিক যোগ্য করেছিল. কিন্তু ঘোড়ার ডিম. কিস্সু পাওয়া যায়নি. পরের দিনই ও এসে বলেছিলো সেই কথা. সারারাত না ঘুমিয়ে ওর চোখ দুটো লাল হয়ে ছিল সেদিন.
ওদিকে বুবাই টিভি দেখছিলো. তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন শুরু হলো. বুবাই উঠে ভাই কে দেখলো. গভীর ঘুমে ভাই. সে উঠে কি মনে করে জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো. ঐদিকটা বাড়ির পেছন দিক. নীচে জঙ্গল আর গাছ পালাতে ভর্তি. বুবাই আকাশের দিকে চেয়েছিলো. নীল আকাশ, হলুদ সূর্য. বুবাই ছবি আঁকতে ভালোবাসে সে ভাবলো এই সুন্দর প্রকৃতির একটা ছবি একবার সে. তার আঁকার খাতায় ফুটিয়ে তুলবে এই বাড়ি আর প্রকতি কে. এইসবই সে ভাবছিলো হটাৎ সে নীল আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে নীচে সবুজ ঘাসের সভা দেখার জন্য তাকাতেই নীচে দেখলো আম গাছটার নীচে তপন দাঁড়িয়ে. খালি গা. কি বিশাল চেহারা. একটু পরেই আরেকজন লোক এসে দাঁড়ালো তার পাশে. তার গায়ে আবার কালো পাঞ্জাবী মাথায় কালো কি যেন বাঁধা. লাল রঙের ধুতি. কাঁধে একটা ঝোলা. সে এসে তপনের পাশে দাঁড়ালো আর নিচু হয়ে তপনকে প্রণাম করলো. বুবাই আশ্চর্য হলো ব্যাপারটা দেখে. কারণ তপনের বয়স লোকটার থেকে অনেক কম. ওই লোকটা 50 বা 55 বছরের হবে আর তপন হয়তো 35. তাহলে? এর মানে কি? বুবাই এটাই ভাবছিলো কিন্তু ততক্ষনে টিভিতে তার কার্টুন শুরু হয়ে গেছে. সে ঐসব ভুলে আবার টিভিতে মন দিলো.
স্নিগ্ধা : আচ্ছা…. মালতি তোমার কি মনে হয়? এই বাড়িতে সত্যি কোনো…. মানে…. ভূত আছে (একটু ভয় ভয়)
মালতি : আরে না দিদি. আমি বললাম না আমার বর কতবার একা এসে থেকে গেছে. তারপর অঞ্জন বাবু তার পরিবার নিয়ে আগের বছরই কাটিয়ে গেলো. ওসব কিচ্ছু না দিদি. আসলে এই বাড়িটাতে ওই দুর্ঘটনা গুলো ঘটেছে বলে সবাই ঐসব ভাবে.
স্নিগ্ধা : হ্যা…. আমারো তাই মনে হয়. ছাড়ো ওসব কথা. তা তোমার এখনো বাচ্চা হয়নি? নাকি নাওনি?
মালতি মুখ নামিয়ে বললো : কি বলবো দিদি…. কম চেষ্টা তো করলাম না. কিন্তু……….
স্নিগ্ধা বুঝে গেলো যা বোঝার. সে কথা পাল্টে অন্য কথায় চলে গেলো.
বুবাই এর খুব বাথরুম পেয়েছে. সে উঠে একবার ভাইকে দেখে নিলো. ঘুমাচ্ছে. বুবাই উঠে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো আর যাওয়ার আগে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে গেলো. সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাথরুমে গেলো আর নিজের কাজ করতে লাগলো. কল ঘরের পেছনেই বাথরুম. আর একটু দূরেই আম গাছ. বুবাই একটা হাসি শুনতে পেলো. কি বিচ্ছিরি হাসি. বুবাইয়ের বাথরুম হয়ে গেছিলো. সে বেরিয়ে না এসে শুনতে লাগলো সেই সব অস্পষ্ট কথা গুলো. ঠিক করে বুঝতে পারছিলোনা ও. কারণ দূরত্ব অনেকটাই. তাও কয়েকটা কথা ওর কানে এলো.
যেমন – এইবারে আর ছাড়াছাড়ি নয়. উফফফফ আমার এই সুন্দরীকে দেখে ওর কথা মনে পরে গেলো. কি রূপ এর. চোখ দুটো কি কামনাময়ী, আর ঠোঁটটা লাল গোলাপের মতো. একদম এই বাড়ির সেই গিন্নিমায়ের মতো.
হটাৎ পাশ থেকে আরেকটা গলা. সে বলছে : হি…. হি…. আপনিতো সেই গিন্নিমাকেও ছাড়েননি. তাকেও চরম তৃপ্তি দিয়েছিলেন বাবা. হি… হি.
আগের গলা : হ্যা….. এই বাড়ির বৌমা অনুপমা . উফফফ অনুপমাকে যখন প্রথমবার ছবিতে দেখেছিলাম. আমি পাগল হয়ে গেছিলাম. কি রূপ, কি হাসি. আমি ভেবেই নিয়েছিলাম… ওকে আমার চাই. তাইতো ওতো ফন্দি এঁটে ওকে এই বাড়িতে এনে ফেলেছিলাম. আর তারপর ওর শরীর সুধা পান করে ছিলাম. খানকি মাগিতে পরিণত করেছিলাম ওকে. আমার কাছে আসার জন্য ওকে পাগল করে তুলেছিলাম. কখনো দুপুরে রান্না ঘরে, সন্ধে বেলায় ছাদে আবার একবার মাঝরাতে ওই বাড়ির পেছনের পুকুরে নিয়ে গিয়ে চান করার পর পুকুর ঘাটে বসে. উফফফ….. সেই সব দিন কি ভোলা যায়.
দ্বিতীয় গলা : কিন্তু বাবা….. কাজ যে অসমাপ্ত থেকে গেছিলো. এখনো অসমাপ্ত.
প্রথম গলা রাগী স্বরে : কাজ তো কবেই সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল. কিন্তু চরম মুহূর্তে ওই অনুপমার শয়তান বাচ্চাটা এসেই সব নষ্ট করে দিলো. আমার এতদিনের পরিকল্পনা সব ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো. তার পর থেকে আর সুযোগ পাচ্ছিনা. এই মালতিকে পেয়ে ভেবেছিলাম একে দিয়েই কাজ সারবো কিন্তু ও আবার বাচ্চা পয়দা করতে অসফল. আগের বছর এই বাড়ির মালিকের ছেলে তার বৌ বাচ্চা নিয়ে থাকতে এলো. ওই বৌটাও দারুন ছিল. ওর রূপ দেখেই ওকে নিজের করে নেবার জন্য সব কিছু পরিকল্পনা করলাম. ওকে ওই জিনিষটা গলায় পড়িয়েও দিলাম. রোজ রাতে ওকে এই বাড়ির কল ঘরে এনে ভয়ানক সুখ দিতাম. আমাদের মিলনের সাক্ষী এই কল ঘর. আমিতো ভেবেছিলাম ওকে দিয়েই কাজ সারবো আর ওর পেট দিয়েই……… কিন্তু হলোনা. দুদিন পরেই চলে গেলো. ভাগ্গিস ওইটা ওর গলা থেকে খুলে নিতে পেরেছিলাম. কিন্তু এবারে আর নয়. ওই ডাক্তার তো এইবাড়িতেই থাকবে আর ওর স্ত্রীও. একে দেখেতো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে. ঠিক যেন অনুপমার মুখ. সেই চোখ, সেই ফর্সা গায়ের রং, টানা টানা মায়াবী চোখ আর গতরটা কি অসাধারণ. দুধ পূর্ণ স্তন আর সুগভীর নাভি. ব্যাস আর নয়. অনেক অপেক্ষা করেছি. আর নয় ….. আমি এবার আর কোনো বাঁধার সম্মুখীন হবোনা. ওকে দিয়েই আমার কাজ সারবো. ওই হবে আমার সুখের সাথী আর শক্তি বৃদ্ধির উপায়. আমার শক্তি কম নয় কিন্তু শক্তির সেই উচ্চ শিখরে আমি পৌঁছতে চাই আর তার জন্য আমাকে বার বার ফিরে আস্তে হবে… হা… হা… হা.. আর এই সুন্দরীটার একটা কচি বাচ্চাও আছে. তুই ঐটার শরীরেই আমাকে….. বুঝলিত?
দ্বিতীয় গলা : আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেননা. আমি আছি তো. ওই শিশুটার মধ্যেই আপনাকে….. হা…. হা হা….. হা. তবে এখন আপনি তার মায়ের সাথে আশ মিটিয়ে মজা করুন. আপনি যখন ইহলোকে ছিলেন তখন তো আপনি অনেক মহিলাকে নিজের করে নিয়েছিলেন.
প্রথম গলা : তা ঠিক…… আমার লালসার স্বীকার অনেক বৌ. আমার একবারের একটা ঘটনা মনে আছে. উফফফফ ওই বৌটাকে আমি যা করেছিলাম না….এখনও মনে আছে. ওকে আর আরেকটা বৌকে. সে আবার ছেলে সন্তান হবার জন্য আমার কাছে এসেছিলো. তাকেও ছাড়িনি….. তাদের সাথে যা করেছিলাম না উফফফফ….
দ্বিতীয় গলা : কি… কি… করেছিলেন বাবা? একটু বলুন? আমিও শুনি?
প্রথম গলা : তুই আমার সব থেকে প্রিয় শিষ্য. তোর দাদু কল্যাণও ছিল আমার প্রিয়. সেই তো আমাকে ওই সুজিতের শরীরে……থাক সে কথা. তুই যখন শুনতে চাস তাহলে তোকে বলবো তবে আজ নয় এখন আমায় যেতে হবে. দুদিন বাদে এখানে আসবি আর ওষুধটা নিয়ে আসবি. তখনি বলবো. এখন যা.
বুবাই যতটুকু শুনলো তাতে সে সেভাবে কিছুই বুঝতে পারলোনা. কারণ এখনো সেইসব কথা বোঝার মতো বয়স তার হয়নি. সিধু এইটুকু বুঝলো কেউ ওই আজকের পরিচিত রাজুর ব্যাপারে আর তাদের ব্যাপারে কথা বলছে. সে চলে এলো কল ঘর থেকে নিজের ঘরে আর টিভি দেখতে দেখতে সে একসময় ভুলেই গেলো সেই সব কথোপকথন. একটু পরেই ওর মা আর মালতি নীচে নেমে এলো. ততক্ষনে দেড়টা বাজতে চলেছে. মালতি নীচে গিয়ে খাবার ব্যাবস্থা করতে গেলো. স্নিগ্ধা ঠিক করেছে ঘরেই খাবে কারণ ছোট ছেলেকে রেখে খেতে যাবে আর তখন যদি ও জেগে যায় আবার শিশুটাকে নিয়েও ওতো ঘোরাঘুরি ঠিক নয়. তাই একটু পরে মালতি ওদের খাবার ঘরেই দিয়ে গেলো. ওরা টেবিলে এ বসে খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো. স্নিগ্ধা তার সিরিয়াল দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো আর বুবাই একটা গল্পের বই নিয়ে পরতে লাগলো. একটু পরে ওর মা টিভি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলো. বুবাই একটু পরে বই থেকে মুখ সরিয়ে দেখলো মা ঘুমিয়ে পড়েছে. সে আঁকার খাতাটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো. ঘরের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে. সে ছাদে যাচ্ছিলো ছবি আঁকতে. ছাদের সিঁড়ির শেষ ধাপ উঠে সে যেই ছাদে ঢুকবে সে দেখলো তপন ! তার হাতে তার মায়ের দুটো ব্লউস আর ব্রা. সে চোখ বুজে ব্রাটা সুঁখছে আর ব্লউসটা নিজের বুকে ঘসছে. তারপর চোখ খুলে ওই দুটো দেখে হেসে উঠলো তখনি তার নজর পরলো ওই কাপড় দুটোর মালকিনের সন্তানের ওপরে. বুবাই চেয়ে আছে তার দিকে. সে তৎক্ষণাৎ ঐদুটো আবার মেলে দিয়ে হেসে বললো : আসলে এগুলো নীচে পড়ে গেছিলো আমি এখানে এসে দেখি পড়ে আছে তাই এগুলো তুলে দিলাম. তারপর বুবাইয়ের হাতে আঁকার খাতা আর রং পেন্সিল দেখে তপন বললো : বাহ…. খোকাবাবু…. তুমি ছবি আঁকতে এসেছো. বা আঁকো আঁকো. তারপরে এক সেকেন্ড এর জন্য কি ভেবে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো. সে বললো : আঁকো ভালো করে বসে সময় নিয়ে আঁকো. পরে আমাকে দেখিও কিন্তু কেমন আঁকলে. হি… হি. আমি আসি কেমন…. তুমি আঁকো. এই বলে সে নীচে চলে গেলো. বুবাই ওই আম গাছের ডালগুলির তলায় বসে একটা গ্রামের ছবি আঁকতে লাগলো. দুটো বাড়ি, কয়েকটা গাছ. পাশে নদী বয়ে চলেছে আর দুজন গ্রাম্য মহিলা কলসিতে জল নিয়ে ঘরে ফিরছে. পেন্সিল দিয়ে এঁকে নিয়ে তারপর তাতে রং ভরতে লাগলো বুবাই. দেখতে দেখতে সে খালি আঁকার খাতায় ফুটিয়ে তুলতে লাগলো সুন্দর একটা গ্রাম্য পরিবেশ. এই আঁকতে আঁকতে বেশ কিছু সময় কেটে গেলো. সে ভাবলো এবার ঘরে গিয়ে একটু শুতে হবে বাকিটা পরে আঁকবো. সে সব গুছিয়ে নিয়ে নীচে যেতে লাগলো. সিঁড়ির আর কয়েক ধাপ বাকি নামতে তখনি সে শুনতে পেলো নিচ থেকে মালতির ডাক: এই….. কোথায় তুমি? কোথায় গেলে? ঠিক তখনি বুবাই দেখলো তপন ছুট্টে তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে গেলো. বুবাই নিজের ঘরে এসে খাতা পেন্সিল রেখে মায়ের ঘরে গেলো. সে গিয়ে দেখলো ভাই ঘুমাচ্ছে কিন্তু মা মনে হয় জেগে. ঐতো মা নড়ছে. বুবাই এগিয়ে গিয়ে বুঝলো তার ভুল হয়েছে. মাও ঘুমোচ্ছে. কিন্তু তাহলে মা এতো নড়াচড়া করছে কেন? মায়ের মুখে একটা হাসি. মা দুই হাতে নিজের মাথার বালিশটা আঁকড়ে ধরে আছে আর মায়ের পা দুটো একে অপরকে ঘসছে. ম্যাক্সিটা উঠে গেছে হাঁটু অব্দি. বুবাইয়ের মায়ের ফর্সা পা দুটো বেরিয়ে এসেছে. একটু পরে মা আবার শান্ত হয়ে গেলো. বুবাই ওতো কিছু বুঝলোনা. সে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো. দিনের আলো ফুরিয়ে নেমে এলো অন্ধকার. সন্ধেতে স্নিগ্ধার নিজের হাতে চা খাওয়া অভ্যেস. তাই সে নিজেই চা বানিয়ে এনে ঘরে বসে চা খাচ্ছে. বুবাই ভাইয়ের সাথে খেলছে. বাচ্চাটা হাসছে আর নিজের ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে দাদার হাত হাত ধরার চেষ্টা করছে. স্নিগ্ধা চা খেয়ে কাপটা রাখতেই মনে পরলো এ বাবা…. কাপড় গুলো এখনও ছাদে রয়েছে. তোলা হয়নি. স্নিগ্ধা যাওয়ার জন্য চটি পড়ে নিলো. কিন্তু আজকে যা যা শুনলো এই বাড়ি সম্পর্কে তাতে তার এখন একা যেতে কেমন যেন ভয় করছে. সে ভাবলো বুবাইকে নিয়ে যাবে. কিন্তু স্নিগ্ধা দেখলো বুবাই তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলায় মশগুল. দুই ভাই কি সুন্দর খেলা করছে দেখে স্নিগ্ধা হাসলো আর ভাবলো : ধুর…. যতসব. আমি কিসব চিন্তা করছি. যাই নিয়ে আসি কাপড় গুলো. এই বলে সে বুবাইকে ভাইয়ের সাথে রেখে ছাদে একাই গেলো. ছাদের সিঁড়ির কাছের আলোটা জ্বালাতে গিয়ে স্নিগ্ধা দেখলো ওটা কেটে গেছে. সে একটু ভয় পেলো কিন্তু এগিয়ে গেল ছাদে. হাওয়ায় কাপড় গুলো উড়ছে. সে ক্লিপ সরিয়ে এক এক করে কাপড় গুলো নিতে লাগলো. ছেলের জামা কাপড় হাতে নেবার পর এবার সে নিজের অন্তর্বাস গুলো নিতে লাগলো. সে একটু এগিয়ে গেছে কাপড় গুলো নিতে তার মনে হলো কেউ এই ছাদে রয়েছে. এটা মনে হতেই তার ভয় হতে লাগলো. সে এদিক ওদিক দেখলো. কেউ নেই. সে তাড়াতাড়ি কাপড় গুলো তুলছে হটাৎ তার পিঠে কি ঠেকলো. সে চমকে ওমা করে উঠলো. পেছন ফিরেই দেখলো কিছুই নয়…. আম গাছের একটা ডাল তার পিঠে থেকেছে. স্নিগ্ধা আপন মনেই হেসে উঠলো. ভুলভাল চিন্তা আর পারিপার্শিক পরিবেশ সব মিলিয়ে তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে. স্নিগ্ধা বুকে হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করলো. তখনি তার হাতে ওই লকেট টা ঠেকলো. সে ওটা হাতে নিয়ে ধরতেই তার ভয় যেন আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো বরং তার বদলে তার মধ্যে এক অন্য অনুভব বাড়তে লাগলো. তেষ্টা…… শরীরের প্রতি টান. সে আনমনে নিজেই ভাবতে লাগলো তার সেদিনগুলোর কথা যখন বুবাইয়ের বাবা আর সে একান্তে জীবনের শ্রেষ্ট সময় কাটিয়েছে. এখন কাজের চাপে সে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন. স্নিগ্ধার মন তা মেনে নিয়েছে কিন্তু শরীর কি তা শুনতে চায়? তার বয়সী বা কি এমন? স্নিগ্ধা আপন মনে লকেটটা নিয়ে খেলতে খেলতে নিজের অজান্তেই তার মাইতে একটা চাপ দিলো. ইশ…. কি সুন্দর অনুভূতি. স্নিগ্ধা আহ করে উঠলো. সে আবার ওই অনুভূতির জন্য নিজের মাই টিপলো. তার স্তন জোড়া এমনিতেই তার গর্ব. তার ওপর এখন সে একজন শিশুর মা. স্তন ভর্তি দুগ্ধ. সেই দুধেল মাই টিপতে স্নিগ্ধার আবার ভালো লাগলো. ইশ… এইভাবে নিজের সাথে দুস্টুমি করে এতো ভালো লাগছে কেন আমার? ভাবলো স্নিগ্ধা. তার মুখে দুস্টু হাসি. সে আম গাছটার তলায় ছিল. ঠান্ডা বাতাস বইছে. স্নিগ্ধার নিজেকে নিয়ে একটু খেলতে ইচ্ছা করলো. সে এবার নিজের ম্যাক্সির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে নিজের মাইতে চাপ দিলো. তার চোখ দুটো আবেশে বুজে এলো. তার আরেকটা হাত কখন যেন নিম্নাঙ্গে পৌঁছে গেছে. স্নিগ্ধা নিজের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে নিজেকে নিয়ে খেলতে লাগলো. ওই অন্ধকার পরিবেশে কতক্ষন ছিল সে খেয়াল নেই. তার আর ভয় করছেনা. সে নিজেকে নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত. সে নিজের মাইতে বোধহয় একটু জোরেই চাপ দিয়ে ছিল যার ফলে তার অজান্তেই তার ম্যাক্সি ভিজে উঠলো আর ম্যাক্সির ফাঁক দিয়ে টপ টপ করে দুধ বেরিয়ে নিচের আম গাছের শুকিয়ে খসে পরা পাতার ওপর পরতে লাগলো. এদিকে স্নিগ্ধা জানেইনা তার এই খেলা কেউ লক্ষ্য করছে. ছাদের দরজা জুড়ে একটা ছায়া. স্নিগ্ধার ওই একান্ত গোপনীয় কাজের সাক্ষী. স্নিগ্ধা ভাবছে এবার থামা উচিত কিন্তু এই দুস্টুমি করতে বিশেষ করে এই অন্ধকারে এই কাজটা করতে তার খুব ভালো লাগচ্ছে. না…. সে থামতে চায় না. হটাৎ নিচ থেকে একটা পায়ের শব্দ আর আওয়াজ – মা…. কি হলো তুমি নামছো? বুবাই !! স্নিগ্ধা কোনোরকমে নিজেকে শান্ত করে তাড়াতাড়ি কাপড় গুলো নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো. সেই ছায়া দরজার থেকে সরে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছে কখন. স্নিগ্ধা নেমে যেতেই সেই ছায়া আবার বেরিয়ে এলো. সে এগিয়ে গেলো সেই জায়গাটায় যেখানে একটু আগে স্নিগ্ধা দাঁড়িয়েছিল. এগিয়ে আসার সময় ছায়ার দু পায়ের মাঝে ফুলে থাকা অংশটা লুঙ্গির ওপর দিয়েই এদিক ওদিক দুলছিলো. এক নারীর অন্তরঙ্গ দুস্টুমি দেখে তার এই অবস্থায়. ছায়ার মুখে হাসি. কার্য সফল এর হাসি. সে নিজের মনে বললো : কাজ শুরু হয়ে গেছে. লকেট তার কাজ শুরু করে দিয়েছে. এবার শুধু রতন ওই ওষুধ এনে দিলেই কার্য সিদ্ধি. তখনি তার নজর পরলো ওই নীচে পড়ে থাকা আম পাতার ওপর. পাতাটার ওপর সাদা তরল. সে বুঝে গেলো ওটা কি. সে ওই পাতাটা তুলে নিয়ে জিভ বার করে ওই দুধ নিজের জিভে ঢাললো. তারপর পান করে নিলো সেটা. আহ কি সুস্বাদু! পাতাটা ফেলে দিলো আর সে নিজের লুঙ্গির ওই ফুলে থাকা অংশে হাত বোলাতে বোলাতে মনে মনে বললো : আর মাত্র দুদিন. তার পরেই ওই রূপসী আমার. ওকে দিয়েই আমার মনের সাধ মেটাবো. আমার চরম বিকৃত কাম লালসা পূর্ণ করবো ওই রূপসীকে দিয়েই. তবে আজ রাতে স্বপ্নে ওকে আমি ছিঁড়ে খাবো. আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই সুন্দরী. তারপরেই সে হাসতে হাসতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো.
অনিমেষ ভট্টাচার্য কলকাতার একজন প্রশিক্ষিত ডাক্তারদের মধ্যে একজন. বিলেত থেকে ডাক্তারি জ্ঞান অর্জন করে এসেছেন তিনি. তার পিতা তপন ভট্টাচার্য ছিলেন উকিল. এখন যদিও অবসর নিয়েছেন. তার মা রমলা দেবী গৃহবধূ. অনিমেষ বাবু কলকাতার একটি বিখ্যাত হসপিটালে ডাক্তারি প্রাকটিস করেন. কিন্তু তিনি খুশি নন. ছোট বেলা থেকেই তার মধ্যে গরিব দুঃখীদের সেবা করার, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর একটা দৃঢ় ইচ্ছা ছিল. কিন্তু ডাক্তার হয়েও কলকাতায় তিনি নিজের এই ইচ্ছাটা সফল করতে পারছিলেন না. তাকে এখানে রুলস আর রেগুলেশন এর মধ্যে দিয়ে চলতে হয়. তিনি সচ্ছল ভাবে এখানে কাজ করতে পারছিলেন না. কারণ তার মনে সেবা করার ভাবনাটা এখনো রয়ে গেছেন. তিনি তার স্ত্রীকে বলেন : স্নিগ্ধা, যদি সবাই শহরে ডাক্তারি করে…. তাহলে গ্রামের ওই গরিব লোক গুলোর কি হবে বলতো?
স্নিগ্ধা বলে : তুমি একদম ঠিক কিন্তু এখানে তোমার অনেক সুযোগ আছে যেটা ওখানে নেই.
স্নিগ্ধা, দুই সন্তানের জননী. প্রথম জন আট বছরের আর দ্বিতীয় জন এখনো দুধপান করে. অর্ণব আর সুজয়. অর্ণব বড়ো. তাদের মা অসাধারণ রূপের অধিকারিণী. দুই সন্তানের মা হয়েও শরীরে কোনো সৌন্দর্যের অভাব নেই. রমলা দেবী যখন অনিমেষ বাবুকে স্নিগ্ধার ছবি দেখিয়ে ছিল ওই টানা টানা চোখ দেখেই অনিমেষ বাবু হা বলে দিয়েছিলেন. তারা দু পক্ষই বড়ো ঘরের. আজ স্নিগ্ধা আর অনিমেষ বাবু সুখী দাম্পত্য জীবনের অধিকারী কিন্তু তারা জানতেন না এই সুখী জীবনের ওপর নেমে আসবে কালো ছায়া, তাদের দাম্পত্য জীবনে নজর পরতে চলেছে কালো এক ছায়ার.
অনিমেষ বাবু একদিন ঠিক করে ফেললেন না…. আর নয় এইভাবে আর চলতে পারেনা. জীবনে স্বার্থ, অর্থ থেকেও সেবা বড়ো. তিনি এই শিক্ষা তার দাদুর থেকে, বাবার থেকে পেয়ে এসেছেন. তাই তিনি একদিন তার এক বন্ধুরা প্রতুল কে তার মনের কথা বলেই ফেললেন. প্রতুল তাকে জানালো সে যদি চায় তাহলে সে তার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে. অনিমেষ বাবু তো হাতে চাঁদ পেলেন. তিনি প্রতুল কে বললেন তিনি রাজি. গরিব মানুষ গুলোর সেবা করে তার আত্ম তৃপ্তি. টাকা পয়সার কোনো অভাব কোনো দিনই ছিলোনা অনিমেষ বাবুর. তাই সেবাতে নিজের মন দিতে চান. নিজের শিক্ষাকে সেবার কাজে লাগাতে চান. প্রতুল তার কথা শুনে বললো : ভাই…. তোর মতো যদি সব ডাক্তার হতো তাহলে……… থাক…. তুই যখন এটাই চাইছিস তখন আমার জানা একটা গ্রাম আছে. ওখানে কোনো ডাক্তার থাকতে চায়না… আসলে সবাই শহরকে আপন করতে চায়. তাই আগের ডাক্তারও দিয়েছে লম্বা. তা তুই ওখান দিয়েই নিজের যাত্রা শুরু কর. অনিমেষ বাবু তো এককথায় রাজি. কিন্তু বাসস্থান তো দরকার, সেই ব্যাপারে প্রতুল কে জিজ্ঞাসা করাতে সে বললো : কোনো অসুবিধা নেই. ওইগ্রামে আমার এক বন্ধুর একটা জমিদার বাড়ি আছে. যদিও সেই বাড়ি আজ পরিত্যক্ত. কিন্তু আমি ওকে বলবো যাতে ও ওখানকার সব কিছু পরিষ্কার করিয়ে রাখে. আসলে ওদের পরিবারই একটা ছোট হাসপাতাল খুলে ছিল কিন্তু ঐযে সব ডাক্তার শহরে পালিয়ে যায়. এবার তুই ভেবে দেখ. অনিমেষ বাবু বললেন সব ব্যাবস্থা যখন হলোই তখন তুই তোর বন্ধুরা সাথে কথা বলে দেখ. দু দিন বাদে ওই বন্ধুর সাথে প্রতুল অনিমেষ বাবুর দেখা করিয়ে দিলেন. তার নাম অঞ্জন ভট্টাচার্য. তিনি বললেন জমিদার বংশের সন্তান তিনি কিন্তু তার জন্ম শহরেই. তিনি নিজে কয়েকবার মাত্র গেছেন ওই গ্রামে. তবে তার বাবার ওই গ্রামে অনেক influence আছে. তাই তার এক কোথায় গ্রামের লোকেরা সব ঠিক থাক করে দেবে.
অঞ্জন : সত্যি আপনার মতো মানুষকে আমি খুজছিলাম. গ্রামের হাসপাতালটা পড়ে আছে, কেউ দেখার নেই. আপনি থাকলে ভালোই হবে. আপনার থাকা খাওয়ার কোনো অসুবিধা হবেনা. পুরো বাড়িটাই আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন. কিন্তু………
অঞ্জন বাবুর কিন্তু শুনে আর একটু চিন্তিত মুখ দেখে অনিমেষ বাবু বললেন : কি হলো অঞ্জন বাবু? একটু চিন্তিত মনে হচ্ছে?
অঞ্জন : আসলে ব্যাপারটা কিছুই নয়. আমরা শহুরে লোক. আমরা যদিও এসব মানিনা. আমার বাবাও মানেনা. কিন্তু গাঁয়ের লোকেরা বলে বাড়িটাতে নাকি গোলমাল আছে.
অনিমেষ : গোলমাল? কি গোলমাল মানে চুরি টুরির কথা বলছেন?
অঞ্জন : আরে না দাদা….. আসলে লোকে বলে বাড়িটা নাকি Haunted. অনেক আওয়াজ ভেসে আসে নাকি….. যদিও আমি ঐসব ফালতু কোথায় কান দিনা. গ্রামের অশিক্ষিত কিছু লোকের ভুলভাল চিন্তাধারা. তবু আপনাকে এই ব্যাপারটা জানানো উচিত বলে আমি বললাম. আপনার কোনো অসুবিধা থাকলে………
অনিমেষ বাবু অট্টহাসি হেসে উঠলেন. এইসব নিম্নমানের ব্যাপার তিনি মাথাতেই আনেননি. তিনি ভেবেছিলেন বোধহয় গ্রামে চুরি ডাকাতি হয়. তিনি অঞ্জন বাবুকে জানিয়ে দিলেন ঐসব প্রাগৈতিহাসিক চিন্তাধারাতে তার বিশ্বাস নেই. তিনি বিজ্ঞান জগতের মানুষ. তিনি স্পষ্ট ভাবে অঞ্জন বাবুকে জানিয়ে দিলেন তার কোনো অসুবিধা নেই ওই বাড়িতে থাকতে. এতো বড়ো একটা বাড়ি পাওয়া যাবে সেখানে তিনি ভালোই থাকবেন. সব কথার শেষে ঠিক হলো ওই বাড়িতেই থাকা হবে. হায়রে….. মানুষ মাঝে মাঝে এমন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যার ফলাফল হয় ভয়ানক.
তার এই সিদ্ধান্তের কথা যখন তিনি বাড়িতে জানালেন তখন প্রথমে সবাই আপত্তি করলো. বিশেষ করে স্নিগ্ধা. সে অনিমেষ বাবুকে বোঝালো কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল. ছোট থেকেই তার মধ্যে সেবা করার একটা ইচ্ছা ছিল আজ সেই সুযোগ পেয়েও তিনি ছেড়ে দেবেন. না কখনোই নয়. শেষ মেশ এটাই ঠিক হলো তিনি যাবেন. এই ব্যাপারে তপন বাবু অর্থাৎ ওনার পিতাও একমত হলেন. তিনিও পরোপকারী মানুষ. ঠিক হলো অনিমেষ বাবু আগে গিয়ে সব সাজিয়ে গুছিয়ে নেবেন. তারপর তিনি সপরিবারে সেই বাড়িতে যাবেন. কিন্তু অনিমেষ বাবুর স্ত্রী স্বামীকে ওই অচেনা জায়গায় একা ছাড়বেনা. আবার ওনার বাবা মায়ের যাওয়া হবেনা. তাদের বেশি বাইরে ঘোরা ঘুরি মানা. তাই ঠিক হলো যে কটা মাস তিনি ওই গ্রামে সেবা করবেন সেই কটা দিন তারা তাদের ছোট ছেলের কাছে চলে যাবেন. ওদিকে অর্ণব এর স্কুলে কয়েকদিন পরেই ছুটি পড়বে. গরমের ছুটি. তখনি রওনা হওয়া যাবে. তাহলে সবাই যেতে পারবে একসাথে. অনিমেষ বাবু সেই মতো বড়ো কর্তাদের জানালেন. সেখানকার বড়ো একজন তাকে সাহায্য করলো তাকে সব কাজে. ঠিক হলো যাত্রার দিন. অঞ্জন বাবুও সস্ত্রীক বাচ্চাদের নিয়ে একেবারে অনিমেষ বাবু কে নিয়ে একবার ঘুরে আসবেন বাড়িটা থেকে. নিজেও দেখে আসবেন বাড়িটা.
এসে গেলো সেইদিন. অনিমেষ বাবু স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাবা মাকে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়লেন ওই বাড়ির পথে. স্টেশনে গিয়ে দেখলেন অঞ্জন বাবু সঙ্গে একটা বাচ্চা. বোধহয় ওনার ছেলে. এগিয়ে গিয়ে পরিচিত হলেন একে ওপরের সাথে. অঞ্জন বাবু বললেন তার স্ত্রীয়ের শরীরটা একটু খাড়াপ তাই তিনি ছেলেকে নিয়েই এসেছেন. তারা ট্রেনে গিয়ে বসলো. দুই বাচ্চা একসাথে বসলো. অঞ্জন বাবুর ছেলের নাম চয়ন. চয়ন আর অর্ণব দ্রুত বন্ধু হয়ে গেলো. ওরা গল্প করতে লাগলো. বড়োরাও গল্প করতে লাগলো. দীর্ঘ 4 ঘন্টার পথ. স্টেশনে যখন গাড়িটা থামলো তখন সন্ধে 6 টা বেজে গেছে. স্টেশনে আগেই বলা ছিল. লোক আগেই ওনাদের নিতে এসেছে. অর্ণব দেখলো একজন বুড়ো লোক সঙ্গে দুজন কুলি. অঞ্জন বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন ওনার সঙ্গে. উনি গ্রামের একজন বিশিষ্ট মানুষ. নাম জগবন্ধু দাস. ওনার সঙ্গে অঞ্জন বাবুর বাবা মিলেই ওই হাসপাতাল বানিয়ে ছিলেন.
জগবন্ধু বাবু বললেন : এই গ্রামে নিজের থেকে যে কোনো ডাক্তার আসবে সেটা তিনি ভাবতেই পারেননি. তিনি বললেন আজতো সন্ধে হয়ে গেছে তাই কাল অনিমেষ বাবুর উদ্দেশে একটি স্বাগতম অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে. ওই একটু বক্তৃতা আর ওনার সম্মানে একটু মিষ্টি বিতরণ. জগবন্ধু বাবু কুলিদের বললেন সব মল পত্র ঠিক মতো গাড়িতে তুলে দিতে . তিনি আগেই গরুর গাড়ির ব্যবস্থা করে রেখে ছিলেন. তিনি সকলকে নমস্কার বলে চলে গেলেন. সবাই দুটো গরুর গাড়িতে চড়ে আসতে লাগলেন. 10 মিনিটের মধ্যেই তারা ওই বাড়িটাতে পৌঁছে গেলেন. বাড়িটা বিশাল কিছু না হলেও বেশ বড়ো. তিন তলা. টিপ টিপ করে হারিকেনের আলোয় জানলা গুলো আলোকিত. অঞ্জন বাবু নেমে হাঁক পারলেন. আর দুইজন লোক বেরিয়ে এলো. একজন মেয়েমানুষ আরেকজন লম্বা করে লোক. অঞ্জন বাবু ওনাদের সঙ্গে অনিমেষ বাবুর পরিচয় করিয়ে দিলেন. মেয়েমানুষটির নাম মালতি আর লোকটি তার বর তপন. দুজনেই পেন্নাম করলো তাদের. অর্ণব দেখলো তপন লোকটি কেমন করে যেন তার মায়ের দিকে চেয়ে আছে. ওর মা লক্ষ্য করছেনা কারণ সে অনিমেষ বাবুর সঙ্গে কথা বলছে. তপন ওদের মল পত্র নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আর পেছনে ওরা. মালতি ওদের জন্য কিছু জল আর খাবারের ব্যবস্থা করতে গেলো.
স্নিগ্ধা ওনার স্বামীকে বললো : বাব্বা….. জায়গাটা কি থম থমে গো. আসে পাশে সেইরকম বাড়ি ঘোরও নেই. ভাগ্গিস ইলেকট্রিক ব্যবস্থা আছে. নইলে এই জায়গাতে থাকতে কি করে?
অঞ্জন বাবু হেসে বললো : আসলে বৌদি কি এই বাড়িতে কেউতো থাকতো না…… ওই মালতি আর ওর বর বাড়ির থেকে দূরে ওই গ্রামে থাকে. আপনাদের জন্যই ওদের ডেকে পাঠালাম. ওরাই আমাদের বাড়িটার দেখভাল করে. আমরা যখনি আসি ওরাই আমাদের রান্না বান্না করে দিতো. তবে ওদের আমি বলে দিয়েছি এলং থেকে এই বাড়ির নিচেই থাকতে হবে. আপনাদের নতুন জায়গাতে তো এইভাবে একা ছেড়ে দিতে পারিনা. চলুন….
ওনাদের ওপরে দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে. অর্ণব দেখলো চয়ন কেমন করে ঘরটা দেখছে. যেন কিছু একটা ভয় পাচ্ছে. দোতলায় মাল পত্র রেখে সবাই বাইরে বারান্দাতে বসলো. একটু পরেই মালতি কিছু নিমকি আর মিষ্টি নিয়ে এলো. অঞ্জন বাবু জিজ্ঞেস করাতে মালতি বললো রাতের জন্য মুরগি আর লুচির ব্যবস্থা করা হয়েছে. সবাই বসে গল্প করতে লাগলো. চয়ন আর অর্ণব খেলতে লাগলো. দুজনে কম সময়েই বন্ধু হয়ে গেছে.
স্নিগ্ধা : বুবাই (অর্ণবের ডাক নাম) পরে খেলবে আগে খেয়ে নাও.
তারা খেলা ছেড়ে খেতে লাগলো নিমকি. গল্প করতে করতে রাত 10 টা বেজে গেলো. মালতি বললো খাবার ব্যাবস্থা করা হয়েছে. সবাই নীচে রান্না ঘরের পাশে খাবার ঘরে গেলো. সেখানে একটা পুরোনো খাবার টেবিল আছে. আর 4টা চেয়ার. বাচ্চারা দাঁড়িয়ে খেলতে খেলতে খেতে লাগলো. স্নিগ্ধা বুবাই কে খাইয়ে দিচ্ছে ওদিকে অঞ্জন বাবু চয়ন কে. মালতি বেশ ভালোই রান্না করে. খাবার পর অঞ্জন বাবু নিচ তোলাটা ওদের ঘুরিয়ে দেখালো. একটা ঘরে ওই মালতি আর তপন. আর বাকি ঘোর গুলোতে পুরোনো মল পত্র.
অনিমেষ বাবু অঞ্জন বাবুকে বললেন : এই বাড়ি কার বানানো?
অঞ্জন বাবু একটা সিগারেট ধরালেন আর বললেন : আমার দাদুর দাদু. অমর ভট্টাচার্য. লোকটা বেশ দিল দরিয়া ছিল…. কিন্তু তার ছেলে একেবারে বিপরীত.
অনিমেষ : মানে?
অঞ্জন : সে কালকে বলব. আজ অনেক খাটাখাটনি গেছে. বৌদি বাচ্চার নিশ্চই ঘুম পেয়েছে. চলুন…. চলুন.
সবাই উপরে উঠে এলো. তখনি কোলের বাচ্চাটা কেঁদে উঠলো. স্নিগ্ধা অনিমেষ আর অঞ্জন বাবুকে শুভরাত্রি বলে ঘরে চলে গেলো. তাকে এখন বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াতে হবে. বাচ্চারা অঞ্জন বাবুর ঘরটাতে বসে একটা ফুটবল নিয়ে. বাইরে তাদের বাবারা সিগারেট টানছে আর গপ্পো / আড্ডা মারছে. অর্ণব দেখলো চয়ন তাকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু কেন যেন চেপে যাচ্ছে. তখনি স্নিগ্ধা ঘর থেকে ওদের শুতে আসতে বললো. অনিমেষ বাবু অঞ্জন বাবুকে শুভরাত্রি বলে ছেলেকে নিয়ে চলে এলো ঘরে. সারাদিন যাত্রার ধক এ সবাই ক্লান্ত. জামা কাপড় বদলে সবাই শুয়ে পরলো. স্নিগ্ধা আগেই শাড়ি পাল্টে একটা ম্যাক্সি পরে নিয়েছে. সবাই শুয়ে পরলো. আর একটু পরেই ঘুম. রাত গভীর. বাইরে শেয়াল ডাকছে. জানলা দিয়ে চাঁদের আলো ঘরে ঢুকে ঘর আলোকিত. পাখা ঘুরছে. খাটের দুপাশে অনিমেষ আর স্নিগ্ধা. মাঝখানে দুই সন্তান. হটাৎ বুবাইয়ের ঘুমটা কেন যেন ভেঙে গেলো. ও চোখ খুলতেই দেখলো কে যেন ওর ডান পাশে দাঁড়িয়ে. ওই পাশেই ওর মা ঘুমোচ্ছে. বুবাই একটু নড়ে উঠতেই আর কিছু দেখতে পেলোনা. ও ভাবলো চোখের ভুল তাই আবার চোখ বুজলো. ওদিকে পাশের ঘরে চয়ন ঘুমিয়ে তার বাবার সাথে. তারা কালকেই চলে যাবে সন্ধে বেলায়. চয়ন তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যেতে চায়. সে এইবাড়িতে বেশিক্ষন থাকতে চায় না.
**********
পরের দিন সকালে সবাই উঠে চা খাচ্ছে. অর্ণব আর চয়ন বাইরে বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছে. যদিও বাগানটি ঠিক করে পরিচর্যা করা হয়না. কেই বা করবে. তাই সুন্দর ফুল গুলোকে উপেক্ষা করে জংলী গাছ আর জংলী ফুল গজিয়ে উঠেছে. তাদের মাঝে ওই ফুল গুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চাপা পরে গেছে. ওরা বাগানটা ঘুরে দেখে যেই ফেরার জন্য ঘুরেছে ওরা দেখলো ওদের পেছনে তপন দাঁড়িয়ে আছে. ওদের দিকে চেয়ে হাসছে. সে এগিয়ে এসে বললো : কি খোকাবাবুরা….. বাগান দেখছো? দেখো দেখো. তারপর চয়নের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো : তা এইবার এতো পরে এলে খোকাবাবু? তোমার কথা কত ভাবতাম আমি. তা তোমার মা এলোনা কেন? উনি আসলে আরো ভালো লাগতো. কি তাইনা? বলে বাগানের পাশের রাস্তা দিয়ে কোথায় চলে গেলো. অর্ণব চয়নের দিকে তাকালো. ও দেখলো চয়নের চোখে মুখে কেমন একটা ভয়. ও চয়ন কে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি ওর মা ওদের ডাক দিলো. ওরা যেতেই মালতি ওদের জন্য লুচি তরকারি নিয়ে এলো. ওরা চুপচাপ খেতে লাগলো. অঞ্জন বাবু চা খেতে খেতে স্নিগ্ধা কে বললো : তা বৌদি…. কাল কোনো অসুবিধা হয়নি তো? আসলে নতুন জায়গা তো সেইজন্যে. স্নিগ্ধা হেসে বললো : না… না কোনো অসুবিধা হয়নি খুব ভালো ঘুম হয়েছে. নতুন জায়গায় সচরাচর আমার ঘুম আসেনা কিন্তু কাল খুব ভালো ঘুম হয়েছে. একটু পরেই চা খাওয়া হয়ে গেলে অঞ্জন বাবু আর অনিমেষ বাবু বেরোনোর জন্য তৈরী হয়ে নিলেন. একটু পরে দুজনে বেরিয়ে গেলেন. জগবন্ধু বাবু ওনাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো. ওদিকে স্নিগ্ধা ছোট ছেলেকে নিয়ে ওপরে চলে গেলো আর দুই বাচ্চা দালানে ফুটবল খেলতে লাগলো. ওরা খেলছে তখনই অর্ণব দেখলো তপন ছুট্টে ঘরে ঢুকে উপরে উঠে গেলো. চয়নও সেটা দেখলো. তারপর তারা আবার খেলতে লাগলো. ওদিকে অঞ্জন বাবু আর অনিমেষ বাবু হাসপাতালে পৌঁছে দেখলো তাদের জন্য জগবন্ধু বাবু আর বেশ কয়েকজন সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে. সেখানে গ্রামের অনেক লোক এসেছেন. নতুন ডাক্তার বাবুকে পেয়ে তারা খুব খুশি. মালা পরিয়ে তাকে সম্মান জানানো হলো. গ্রামের বিশিষ্ট কিছু মানুষ তাকে সম্মান জানালেন তার সাথে অঞ্জন বাবুকেও. কারণ এই হাসপাতাল বানাতে তাদের পরিবারের অনেক অবদান আছে. অনিমেষ বাবু গ্রামের লোকেদের উদ্দেশ্য কিছু বক্তৃতা দিলেন. তারপর সামান্য মিষ্টিমুখ হলো. সবশেষে হাসপাতাল ভালো ভাবে ঘুরে দেখার পর দুপুর বেলাতে সব লোক চলে গেলে অনিমেষ বাবু, অঞ্জন বাবু, জগবন্ধু বাবু আর গ্রামের প্রৌঢ় অচিন্ত বাবু বসে আড্ডা দিচ্ছে. হটাৎ অচিন্ত বাবু প্রশ্ন করলেন : অঞ্জন তুমি ডাক্তার বাবুকে তোমার ওই জমিদার বাড়িতে রেখেছো ভালো কথা কিন্তু…….
অনিমেষ বাবু হেসে বললেন : আপনি কি ভুতের ভয়ের কথা বলছেন? স্যার আমি ওসব মানিনা. আমি ওই বাড়িতেই থাকবো. আমার বা আমার পরিবারের কোনোই অসুবিধা হবেনা.
জগবন্ধু বাবু একটু চিন্তিত হয়ে বললেন : সে সব ঠিক আছে. আমি আপনাকে থাকতে বারণ করছিনা…. আসলে অচিন্ত বাবু বলতে চাইছেন বাড়িটা নিয়ে যেভাবে গ্রামের লোকেরা বলাবলি করে তার ওপর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে বাড়িটার ওপর দিয়ে.
অনিমেষ : কি দুর্ঘটনার কথা বলছেন.
অচিন্ত : বাবা অঞ্জন.. তুমিই বলোনা. তোমাদের বাড়ি… আমি বলাটা ঠিক হবে না.
অঞ্জন বাবু : আমি বাবার মুখে যতটা জানি তাই বলছি. আমার জন্ম কলকাতায় তাই আমি এই বাড়ির সঙ্গে আমার কোনো অতীত জড়িয়ে নেই. বাবা এখানেই বড়ো হয়েছে. হা এটা ঠিক এই বাড়িতেই অনেক অঘটন ঘটে গেছে. আমার বাবার দাদা মানে আমার জেঠু তার ছোটবেলাতেই এই বাড়িতেই মারা যান. তাছাড়া ঐযে বলেছিলাম আমার দাদুর দাদু তার ছেলে অরিন্দম ভট্টাচার্য ছিল খুব রাগী স্বভাবের মানুষ. সে নাকি কাকে খুন করেছিল. তাছাড়া এই বাড়িতে নাকি বাচ্চাদের বলি দেওয়া হয়েছে. যদিও আমি সেসব ভালো ভাবে জানি না.
অচিন্ত বাবু : আমি জানি..আমি বলছি. অমর ভট্টাচার্যের ছেলে অরিন্দম ছিল রাগী স্বভাবের. কিন্তু বাবা ছিল শান্ত হাসি খুশি স্বভাবের আর ভগবানে বিশ্বাসী মানুষ. ছেলের যখন বিয়ের বয়স হলো তখন তাকে পাশের গ্রামের এক সুন্দরী মহিলার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন. তার বৌমার নাম ছিল সুজাতা. খুব সুন্দরী ছিল সে. একবার অমর বাবু এক সন্ন্যাসী গোছের মানুষকে এই বাড়িতে নিয়ে আসেন. পরে অবশ্য জানা গেছিলো সে তান্ত্রিক. পিশাচ সিদ্ধ. সব রকমের কু কাজে যুক্ত. অনেক শক্তি ছিল নাকি তার. তখন অবশ্য কেউ কিছু জানতোনা. অমর বাবু ভক্তি ভাব নিয়ে তাকে নিয়ে আসেন. তার ছেলের যদিও এইসবে মনোযোগ ছিলোনা. অমর বাবু তার বৌমাকেই বলেছিলো বাবাজির সব রকমের খাবার দাবারের ভার নিতে. সুজাতা সেই মতো বাবাজির সেবা করতো. এক সময়ে অরিন্দম দেখলো তার স্ত্রী ওই বাবাজির একটু বেশিই খেয়াল রাখছে. নিজেই সব খাবার দিয়ে আসে, খাবার পর নিজেই সেই সব পাত্র আনতে যেত. অরিন্দমের সেসব ভালো লাগতোনা. ততদিনে তাদের একটা মেয়ে হয়েছিল. তবে অমর বাবু চাইতেন যেন বৌমার একটা ছেলে হয়. ওই তান্ত্রিক তাকে আশ্বাস দিয়ে ছিল যে তার বৌমার ছেলে হবে. তবে তাকে নাকি বড়ো যোগ্য করতে হবে. এই কাজে তাকে তার বৌমাকে আর তার মেয়েকে লাগবে. আর যতক্ষণ যোগ্য চলবে কেউ যেন ওই ঘরে না আসে. অমর বাবু রাজি হন. ওদিকে অরিন্দম এইসব ভন্ডামিতে একটুও বিশ্বাস করতোনা. সে ঠিক করলো সে লুকিয়ে ওই যোগ্য দেখবে. অবশেষে যজ্ঞের দিন এলো. রাতের বেলা নিচের যে ঘরে তান্ত্রিক থাকতো সেই ঘরেই যোগ্য শুরু হয়. সারারাত নাকি যোগ্য হবে. সবাই শুয়ে পড়েছে কিন্তু অরিন্দম জেগে ছিল. সে ভেবেছিলো ওই ভন্ড লোকটার ভণ্ডামি সবার সামনে নিয়ে আসবেন. সেই মতো তিনি চুপ চাপ উঠে নীচে নামেন. নীচে এসে সে তান্ত্রিকের ঘরের কাছে এসে তার স্ত্রীয়ের গোঙানি শুনতে পান. তিনি দৌড়ে গিয়ে দরজায় লাথি মেরে খোলেন আর যা দেখেন তা ছিল বীভৎস. তার একমাত্র মেয়ের মৃতদেহ পরে আছে আর তার স্ত্রী সুজাতা আর তান্ত্রিক নোংরামো করে চলেছে. নিজের স্ত্রীকে ওই ভাবে তান্ত্রিকের সাথে দেখে রাগী অরিন্দম আরো রেগে যায় আর তান্ত্রিক কে গুলি করে মারেন. ওদিকে তান্ত্রিক নাকি মরার আগে বলে যায় তার এতদিনের কাজে বাঁধা দিয়ে সে ঠিক করেনি তান্ত্রিক বলে সে এইবাড়ির মহিলাদের ছাড়বেনা…. তার যোগ্য সে পূর্ণ করেই ছাড়বে. তার মৃত্যু নেই. সে বার বার ফিরে আসবে. এদিকে স্ত্রীয়ের জ্ঞান ফিরতেই সে এইসব দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়. পরে জানা যায় তান্ত্রিক তার শক্তি বাড়ানোর জন্য ছোট বাচ্চাদের বলি দিতো. এখানে এসে সুজাতা আর তার বাচ্চাকে দেখে তার সেই ইচ্ছা বেড়ে যায়. একদিকে নতুন বাচ্চা আরেকদিকে সুজাতার রূপে তান্ত্রিক পাগল. সে ঠিক করে সুজাতাকে বশ করে তাকে ভোগ করবে আর সুযোগ বুঝে তার বাচ্চাকে বলি দেবে. কিন্তু তার পরিকল্পনা পূর্ণ হবার আগেই অরিন্দম তাকে খুন করে. সবাই বলে সেই তান্ত্রিক এর আত্মা আজও নাকি এইবাড়িতে ঘোরাফেরা করে.
সব শুনে অনিমেষ বাবু বললেন : বুঝলাম…. বাড়িটাতে এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে আর তাই লোকেরা মনে করে ভুত ঘুরে বেড়ায়. যতসব কুসংস্কার. আমি এসব মানিনা. আরেকটা কি দুর্ঘটনার কথা বলছিলেন.
অঞ্জন বাবু বললো : ওটা আমি বলছি. আমার বাবারা ছিল তিন ভাই. বাবা মেজো. ছোটকা কলকাতায় থাকে. জেঠু তার ছোটবেলাতেই মারা যান. বাবা তখন ছোট বোধহয় 6 বছরের মতো আর জেঠু 11 বছরের. সব ঠিকই ছিল কিন্তু কি করে যে একদিন সব কিছু গোলমাল হয়ে গেলো কেউ জানেনা. অরিন্দম তার মেয়েকে হারানোর পরে আবার বাবা হয়েছিলেন. এবারে দুই ছেলে হয়েছিল. তার নাম ছিল সুজিত ভট্টাচার্য আর রঞ্জন ভট্টাচার্য. রঞ্জন আমার দাদু কিন্তু সুজিত ছিল নাকি পাগল. মানে পরে পাগল হয়ে গেছিলো. তাকে ঘরে আটকে রাখা হতো . অনেকে বলে সেই নাকি জেঠুকে মেরে ছিল তখন থেকেই তার পাগলামি ধরা পড়ে. তবে কোনো প্রমান নেই বলে সে ছাড়া পেয়ে যায়. তারপর দাদু বাবা আর ছোটকাকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে দেয়. দাদু কর্মসূত্রে আগে বাইরেই থাকতেন. সুজিত একাই থাকতো এই বাড়িতে. সে বিয়ে করেনি. পরে একদিন সে মারা যায় বুড়ো হয়ে. অনেকে বলে সুজিত নাকি ওই তান্ত্রিক দ্বারা possessed ছিল. আমি বা বাবা যদিও এসব মানি টানি না. সে পরে পাগল হয়ে গেছিলো এটা হতেই পারে.
অনিমেষ : একদমই তাই. এই গ্রামে এরকম অনেক ঘটনা রটে যায়. যাকগে….. চলুন… এবার ফিরি. বিকেল হয়ে এলো. অনিমেষ বাবু আর অঞ্জন বাবু ওনাদের বিদায় জানিয়ে ফিরতে লাগলো. ওদিকে চয়ন তার একটা ঘটনা অর্ণব কে বলছে. তারা খেলছিল আর গল্প করছিলো. হটাত চয়ন বললো : তুমি তোমার মাকে বলো ওই তপন এর সাথে যেন বেশি কথা না বলে.
অর্ণব : কেন?
চয়ন : লোকটাকে আমার একদম ভালো লাগেনা. আমরা যখন আগের বছর এখানে এসে ছিলাম তখন লোকটাকে দেখতাম খালি মায়ের দিকে কেমন করে তাকাতো. আমার কেমন যেন লাগতো. মা যখন রান্না করতো তখন আমি প্রায় দেখতাম লোকটা রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখতো. আমরা 10 দিন মতো ছিলাম কিন্তু শেষের কটা দিন মা যেমন কেমন হয়ে গেছিলো. কি যেন ভাবতো. আমার মনে আছে যেদিন আমরা এসেছিলাম তার পরেরদিন রাতের ঘটনা. আমি বাবা আর মা ঘুমিয়ে আছি. হটাৎ আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো. চোখ খুলে দেখি মা কি যেন বলে চলেছে. আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না. কিন্তু কয়েকটা কথা বুঝতে পেরে ছিলাম. না……. আমি আর পারছিনা….. এবার আসুন…… আমার কাছে. এরমকম কিছু শব্দ. তারপরের দিন রাতেও মা এরকম বলছিলো. আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে মা? মা হটাৎ ঘুম থেকে জেগে বললো : কৈ কিছু নাতো. তারপর ফেরার 2 দিন আগে আমি ঘুমোচ্ছি. হটাৎ কে যেন বললো ওঠো. তাড়াতাড়ি ওঠো. চলে যাও এখন থেকে. আমি ঘুম ভেঙে উঠে বসলাম. দেখি বাবা ঘুমোচ্ছে. মা পাশে নেই. আমি ভাবলাম বোধহয় বাথরুমে গেছে. কিন্তু অনেক্ষন না ফেরায় আমি ভাবলাম যাই. বাবাকে দেখলাম কিন্তু বাবার ঘুম খুব কড়া. তাই একাই বেরোলাম. দেখি বাইরের হারিকেনটা নেই আর নীচে কলঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে একটা আলো আসছে. আমি বুঝলাম মা নীচে তাই ঘরে ফিরে আসছি হটাৎ মায়ের তীব্র চিৎকার. তারপর মাটিতে জল পড়ার শব্দ হলো. আমি বাবাকে ডাকতে যাবো তখনি দেখি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ওই তপন লোকটা. তারপর পেছন ফিরে কাকে দেখে হাসলো তারপর আড়মোড়া ভেঙে কোথায় চলে গেলো. আমি দাঁড়িয়ে রইলাম. একটু পরে দেখি মা ওই কলঘর থেকে বেরোলো. আর ওপরে উঠতে লাগলো. আমি ছুটে গিয়ে ঘরে শুয়ে পড়লাম. মা একটু পরে আমার পাশে শুয়ে পরলো. পরের দিন সকালে দেখি মা আর মালতি মাসি রান্না করছে আর তপনও ওদের সাথে গপ্পো করছে. আমাকে দেখে ওই তপন কেমন যেন রেগে তাকালো তারপর চলে গেলো. লোকটা যেন কেমন. পরের রাতে আমার ঘুম যদিও ভাঙেনি কিন্তু মনে হচ্ছিলো কে যেন বলছে আমায় চলে যাও…. তোমার মাকে নিয়ে চলে যাও. আমি ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি. তারপর দিন সন্ধেবেলা আমাদের আসার কথা. বাবা গেছিলো ওই হাসপাতালে ঘুরতে. আমি একা ঘরে খেলছি. হটাৎ মনে হলো কে যেন ঘরে ঢুকলো. আমি এদিক ওদিক দেখলাম কিন্তু কিচ্ছু দেখতে পেলামনা. হটাৎ মনে হলো কানে এসে কে যেন বললো : তোমার মাকে বাঁচাও. আমি আবার এদিক ওদিক দেখলাম তারপর ভয় পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম. তারপর মা মা করে মাকে খুঁজতে লাগলাম. কিন্তু মা ওপরে ছিলোনা. আমি একতলায় এসে মা মা করে ডাকতে লাগলাম. দেখি ওই যে ঘরটা দেখতে পাচ্ছ ওই ঘরটা থেকে তপন বেরিয়ে এলো. তারপর মাকে দেখলাম বেরিয়ে আসতে. দুজনেরই সেকি হাসাহাসি. হটাৎ আমাকে দেখে মা রেগে মেগে এগিয়ে এলো তারপর বললো : নীচে কি করছিস? যা ওপরে যা. আমি আসছি. এতো ভীতু কেন তুই. পেছন থেকে তপন বললো : মায়ের কথা শোনো খোকাবাবু. দুস্টুমি করোনা. তারপর মা আমাকে বললো : যা ওপরে আমি তপনের সাথে কয়েকটা কথা বলেই আসছি. আমি ওপরে চলে এলাম. আমি অবাক হলাম. মা এখানে এসে প্রথমদিন তপনের সাথে কোনো কথাই বলেনি তাহলে আজ এতো কি কথা. তারপর দুপুরে বাবা ফিরে এলো. আর সন্ধেবেলা আমরা ফিরে এলাম. তবে মা বাবাকে বলছিলো আরো কদিন থেকে যেতে কিন্তু বাবা রাজী হয়নি. ফিরে এসে মাকে কদিন কেমন যেন মন মরা দেখতাম. তারপর বাড়িতে যেদিন পুজো হলো সেদিন থেকে দেখি মা আবার হাসি খুশি. তাই বলছিলাম কেন জানিনা ওই লোকটাকে আমার ভালো লাগেনা. তুমি তোমার মায়ের সাথে ওকে বেশি মিশতে দিওনা. এই বলে ওরা আবার খেলতে লাগলো. একটু পরেই ওদের বাবারা ফিরে এলো. দুপুরে ওরা খেয়ে দিয়ে একটা ঘুম দিলো. সন্ধে বেলায় অঞ্জন বাবু আর চয়ন ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলো. রাতে মালতি মাংস আর ভাত রান্না করেছিল. খেতে খেতে কথাবার্তা হচ্ছিলো.
অনিমেষ বাবু বললেন : আমার তো জায়গাটা বেশ লাগলো. এখানে আমি ভালোভাবেই কাজ করতে পারবো. বুবাইটার এখন গরমের ছুটি. সেকটা দিন ও এখানে থাকবে তারপর ওকে বাবা মায়ের কাছে রেখে আসবো.
খাওয়া দাবার পরে মা বাবা বসে বারান্দায় গল্প করছে. বুবাই ঘরে বসে টিভি দেখছে. এখানে সব রকম ব্যাবস্থায় অঞ্জন বাবু করে দিয়ে গেছেন.
বুবাইয়ের মা অনিমেষ বাবুকে বললো : হা জায়গাটা বেশ ভালোই তবে…… কি জানতো… আমার কেমন যেন লাগছে. জানিনা কিভাবে নেবে তুমি ব্যাপারটা কিন্তু তুমি চলে গেছিলে সকালে. আমি একা ছিলাম বাচ্চা দুটো নীচে খেলা করছিলো. আমি বসে টিভি দেখছি আর ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছি হটাৎ মনে হলো আমার পেছনে কে যেন হাত রাখলো. আমি ঘুরে দেখলাম কিন্তু কেউ নেই. আমি ভাবলাম মনের ভুল. তারপর দুপুরে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে স্নান করতে গেছি স্নান করছিও হটাত মনে হলো আমার পিঠে কার যেন হাত আবার. আমি ঘুরে তাকালাম কিন্তু কিচ্ছু নেই. কি হলো বলতো?
অনিমেষ বাবু হেসে বললো : আরে ধুর…… তুমিও না. নতুন জায়গায়. নতুন পরিবেশ. সব কিছুই নতুন. তাই এসব মনে হচ্ছে. দেখবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে. অনিমেষ বাবু আজ যা শুনেছেন তার কিছুই স্নিগ্ধাকে জানালেন না. যদি আরো ভয় পেয়ে যায় তাই. একটু পরেই গল্প শেষে অর্ণবের বাবা এসে ওকে যে কথাটা বললো সেটা শুনে ওর খুব ভয় হলো.
বুবাই টিভি দেখছিলো. ওর বাবা এসে বললো : বুবাই তুই ওই পাশের ঘরটায় থাকতে পারবি? আসলে এই খাটটায় চার জন ধরছে না. তাছাড়া তুমি বড়ো হচ্ছ. আজ বাদে কাল তোমায় ওই বাড়িতেই দাদু দিদার সাথেই থাকতে হবে আমরা তো এখানে থাকবো. যদিও স্নিগ্ধা বললো একসাথেই শুতে কিন্তু এটা ঠিক ওই খাটে চার জন ধরে না. তাই শেষ মেশ ঠিক হলো ও একাই ওই ঘরে শোবে. তাই সেইমতো ওই ঘরে সবার ব্যবস্থা করা হলো. রাতে একা একা শুতে বুবাইয়ের ভয় হচ্ছিলো. তবে সেরাতে তার কোনো অসুবিধা হলোনা. পরের দিন সকালে উঠে সে তৈরী হয়ে বাইরে এলো. বাইরে এসে দেখলো বাবা বেরোচ্ছে. ছেলেকে টাটা করে অনিমেষ বাবু চলে গেলেন নিজের কাজে. বুবাই কে মালতি এসে খেতে দিয়ে গেলো. লুচি আর বেগুন ভাজা. সে খেতে লাগলো আর টিভি দেখতে লাগলো. স্নিগ্ধা বললো : বুবাই ভাই রইলো. আমি বাথরুমে যাচ্ছি. বলে সে নীচে চলে গেলো. বুবাইয়ের কিছুক্ষন পরেই খাওয়া শেষ হয়ে গেলো. সে হাত ধুয়ে প্লেট রেখে ভাইকে দেখে নিলো সে ঘুমোচ্ছে. তারপর ওপরে তিন তোলাটা ঘুরতে গেলো. ওপরে যেতেই দেখলো তপন একটা ঘরে কি যেন করছে. সে এগোতেই দেখলো তপন বেরিয়ে আসছে. তাকে দেখে তপন হেসে উঠলো. কি খোকাবাবু এখানে কি করছো? এখানে উঠনা. এখানে ভুত আছে হি… হি…. বলে সে চলে গেলো. সে দেখলো তপনের হাতে কালো মতো কি একটা ছিল. সে অতটা খেয়াল করলোনা. সে একটু ঘুরে ফিরে নীচে নেমে এলো. এসে দেখলো মা এখনো আসেনি. সে বারান্দায় দাঁড়ালো. বারান্দা দিয়ে নীচে বাথরুমের কিছুটা দেখা যায়. বুবাই দেখলো তপন এদিক ওদিক দেখে কল পরের পেছনের দিকে চলে গেলো. সে ঐখানটাতে দেখতে এতো ব্যাস্ত যে পেছনে আরেকজন এসে দাঁড়িয়েছে সেটা সে বুঝতেও পারেনি. সে ঘুরতেই চমকে উঠলো. একটা বাচ্চা তার থেকে একটু বড়োই হবে. তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে. হাসছে. বুবাই ভয় পেয়ে গেলো.
সে বললো : কে….. কে…. তুমি.
ছেলেটি বললো : আমি রাজু. এই বাড়িতে আগে থাকতাম. এখন অনেক দূরে চলে গেছি. মাঝে মাঝে এই বাড়িতে ঘুরতে আসি. তা দেখলাম তোমরা নতুন এসেছো. তাই এলাম গল্প করতে. তুমি কি দেখছিলে?
বুবাই বললো কৈ কিছুনা তো?
রাজু হেসে বললো আমি জানি তুমি ওই তপনকে দেখছিলে তাইতো?
বুবাই বললো : তুমি কিকরে জানলে.
রাজু বললো : আমি জানি. তোমার জায়গায় একদিন আমিও ছিলাম. আমার সাথে আমার ছোট ভাই. তারপর……
বুবাই : তারপরে? তারপরে কি গো?
রাজু বললো : শুনবে?
বুবাই : হা বলোনা. বলোনা.
রাজু : তাহলে ছাদে চলো. এখানে নয়.
দুজনে ছাদে যেতে লাগলো. ছাদ খোলাই ছিল. বুবাই আর রাজু ছাদে একটা জায়গায় গিয়ে বসলো. বুবাই তাকে গল্পটা বলতে বললো. সে শুরু করলো তার কাহিনী.
**********
ছেলেটি বলতে লাগলো গল্প. (এখানে বলে রাখি কথোপকথন দুই ছোট বাচ্চার মধ্যে হলেও অতীতে যা যা হয়েছিল সেটা আমি অর্থাৎ লেখক বড়োদের মতো করেই বর্ণনা করবো )
রাজু: আমার ভালো নাম হলো রমেশ ভট্টাচার্য. আমার বাবার নাম রঞ্জন ভট্টাচার্য. বাবার এক ভাই ছিল সুজিত বলে. সে ছিল পাগল. মানে সবাই মনে করতো সেটাই. কিন্তু….. যাক সেটা পড়ে বলছি. আমার বাবা কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন বেশ কিছু বছর. সেখানে আমাদের আরেকটা বাড়ি ছিল. সেখানেই আমার, আমার ভাই আর আরেকটা ভাই জন্মায়. আমরা তিন ভাই ছিলাম. আমাদের মায়ের নাম ছিল অনুপমা. খুব সুন্দরী. টানা টানা চোখ অনেকটা তোমার মায়ের মতনই.
সব ঠিক থাক চলছিল কিন্তু একদিন বাবা দাদুর চিঠি পান যে তিনি খুব অসুস্থ তাকে দেখতে আসতে. আর সম্পত্তির ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে. তাই ঠিক হয় আমরা ওই বাড়িতে আসবো কিছুদিনের জন্য. আমি বাবা মা আর দুই ভাই এলাম এই বাড়িতে থাকতে. হয়তো জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল এটা. এইটা বলেই ছেলেটা কি যেন ভেবে ছাদের ধারে গিয়ে কি যেন দেখলো তারপর চিন্তিত মনে বুবাইয়ের পাশে এসে বসলো.
বুবাই বললো : কি হলো থামলে কেন বলো?
রাজু : হ্যা…? ওহ হ্যা যেটা বলছিলাম. তিন দিন পর আমরা বেহালা থেকে এই বাড়িতে আসি ট্রেনে করে. ট্রেন বেশ দেরি করেই সেই জায়গায় পৌছালো. স্টেশন যখন গাড়িটা থামল তখন রাত একটা হবে. একটা লোককে দেখলাম দাড়িয়ে ছিল. আমাদের নামতে দেখে আমাদের কাছে এল. লোকটা এসে বাবাকে পেন্নাম করলো. তারপর বললো : দাদাবাবু আসুন আসুন. আমি কল্যাণ. আপনাদের বাড়ির কাজ করি. তারপর সে মাকে পেন্নাম করলো. আমার যেন মনে হলো মাকে নমস্কার করার সময় কল্যাণ মাকে একবার নিচ থেকে ওপর দেখে নিলো তারপর দাঁত বের করে হেসে বললো : চলুন বাবু সময় হয়ে গেছে মানে….. আমাদের যাবার সময় হয়ে গেছে. এমনিতেই অনেক রাত এবং নিজেই সূটকেসট হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল. আমরা ওর পিছন পিছন যেতে লাগলাম.
বাবা বলল – “ট্রেন অনেক দেরি করেছে আজ.
কল্যাণ বলল-আর বলবেন না বাবু, সবসময় করে এবং মার কোলে ছোট্ট ভাইকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল – বাহ্ কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে আপনার. ঘুমাচ্ছে বুঝি?
বাবা বললো : হ্যা.
মা বলল-এইতো ট্রেনে ওঠার আগেই আগেই ঘুমালো. আবার উঠেছে না পড়ে. জেগে থাকলে কেঁদে কেঁদে আমাদের মাথা খারাপ করে দেয়. আমরা গরুর গাড়িতে করে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম. চারিদিক থম থমে, নিস্তব্ধ. আকাশে চাঁদ মাথার ওপরে. হটাৎ গাড়িটার চাকা একটা পাথরের ওপর পড়াতে গাড়িটা কেঁপে উঠলো জোরে. গাড়ির ওই ঝাকুনিতে ছোটটার ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং কাঁদতে লাগল. বাবা – উফ….. আবার জেগে গেছে…ওকে থামাও অনুপমা নইলে এখন কেঁদে কেঁদে রাস্তা মাথায় তুলবে. মেজো ভাই এতো রাত অব্দি জাগেনা. তাই ও গাড়িতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন. মা ভাইয়ের কান্না থামানোর চেস্টা করল কিন্তু ভাই কেঁদেই চলল. মা বললো : রাজু একটু ওদিকটা গিয়ে বস আমি ভাইকে দুধ খাওয়াবো . আমি পেছনটাতে গিয়ে বসলাম. মা ব্লাউসটা কিছুটা খুলে নিজের ডানদিকের দূদুটা বেড় করল এবং ভাইকে দুধ খাওয়াতে লাগল. ভাই দুধ খাচ্ছে. বাবা চোখ বুজে রয়েছে. আমি যেহেতু পেছনে ছিলাম তাই পেছনে গাড়ির কাপড় সরিয়ে বাইরের জঙ্গল দেখছিলাম. হটাৎ আমি যেই সামনে ফিরলাম আমি দেখলাম মা ভাইকে দুধ খাওয়াতে ব্যাস্ত কিন্তু কল্যাণ মায়ের দুধ খাওয়ানো দেখছিলো আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো আর গাড়ি চালাতে লাগলো. আমার কেমন যেন লাগলো কিন্তু ওতো কিছু ভাবলাম না.
কিছুক্ষনের মধ্যে ঘোড়ার গাড়িটা একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো মানে এই বাড়িটার সামনে. তখন মনে হচ্ছিল কি বিশাল বাড়ি!!! কল্যাণ বললো : রঞ্জন বাবু আমরা এসে গেছি. মা বাড়ির চারপাসে অন্ধকার দেখে জিজ্ঞেস করল-বাবা… এই বাড়িতে বাবা থাকেন তাও এতো অন্ধকার? যেন কেউ থাকেনা. কল্যাণ বললো : আসলে বৌদিমনি….বড়ো দাদাবাবু তো আর সেই ভাবে বাইরে বেরোনই না. আর দাদাবাবু আপনার ভাই কখন ভালো কখন রেগে যায় মানে আপনি তো জানেনি. উনিও খুব একটা নীচে নামেন টামেন না. নিচ তোলাটাতে আমি থাকি আর আমার বোন থাকে লাবনী. এই বলে কল্যাণ ডাক দিলো : লাবনী….. এই লাবনী… কোথায় গেলি বেরিয়ে আয়. একটু পড়ে একটি মহিলা বেরিয়ে এলো বছর ৩৫ বা ৪০ এর. দখতে যেন কেমন. এসেই বললো: দাদা ডাকছিলে?
কল্যাণ : দেখ যাদের আসার কথা এসে গেছেন. ইনি হলেন রঞ্জন বাবু আর ওনার স্ত্রী অনুপমা. আমাদের দাদাবাবুর পুত্রবধূ.
এইটা বলার পরেই দেখলাম কল্যাণ আর লাবনীর মধ্যে চোখে চোখে কি ইশারা হলো. লাবনী হেসে মাকে আর বাবাকে বললো : পেন্নাম দাদাবাবু, পেন্নাম বৌদিমনি. ওমা….. কি সুন্দর মুখখানি আপনার. আসুন আসুন. লাবনী আমাদের নিয়ে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো. পেছনে আমরা যেতে লাগলাম. আমাদের উত্তর দিকের একটা বড়ো ঘরে নিয়ে গেলো লাবনী. বেশ বড়ো ঘর.
লাবনী : আসুন দাদাবাবু, বৌদিমনি…. এটা আপনার ঘর. আপনারা বিশ্রাম করুন. আপনারা কিছু খাবেন?
বাবা : না…. আমরা খেয়ে নিয়েছি. এতো রাত হয়ে গেলো নইলে একবার বাবার সঙ্গে দেখা করে আসতাম. ঠিক আছে….. কাল সকালেই যাবো. এখন ঘুমিয়ে পড়ি.
কল্যাণ সুটকেস নিয়ে ঘরে ঢুকে পরলো. সেটা কে রেখে বিচ্ছিরি ভাবে একটা হাসি হেসে বললো : হি.. হি… দাদাবাবু আপনারা এসেছেন খুব ভালো হয়েছে. বড়ো দাদাবাবু আর সুজিত বাবু খুব খুশি হবে.
বাবা : দাদা কেমন আছে? এখনো কি আগের মতোই নাকি উন্নতি হয়েছে?
কল্যাণ : না…. না… উনি আগের থেকে অনেক ভালো. এখন আর রেগে টেগে যান না ওতো. যদিও বা রেগে যান কিন্তু সামলে নেন. আপনারা আসছেন শুনে তিনি আপনাদের দেখতে চেয়েছেন. বিশেষ করে বৌদিমনি কে. আসলে উনি তো বৌদিমনিকে দেখেনি নি. আচ্ছা আসি তাহলে. আপনারা বিশ্রাম করুন.
কল্যাণ আর লাবনী চলে গেলো. মেজোটা এসেই বিছানাতে শুয়ে পড়েছেন. ছোট ছিল তো. আর একদম ছোটটা মায়ের কোলে. আমি বাইরে বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছি. আর বাবা মায়ের কথা শুনছি.
মা : ওনার কি হয়েছিল বলতো? আমাদের বিয়েতেও উনি আসেননি. তোমার বাবা তো আমাদের বেহালার বাড়িতেই আমাদের বিয়ে দিলেন. আমরা আজ অব্দি ঐবাড়িতেই থেকে এসেছি. আজ জীবনে আমি প্রথমবার এই বাড়িতে এলাম. বাবা মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন. কিন্তু একবারও এই বাড়িতে ডাকেননি. ব্যাপারটা কি বলোতো?
বাবা : আসলে দাদার মাথাটা ঠিক নেই. না…. তার মানে পুরো পাগল নন. খুব রাগী, রাগলে মাথা ঠিক থাকেনা. যাতা বলেন…. কাউকে ছাড়বোনা…. তোদের মেরে ফেলবো…. তোরা আমাকে চিনিসনা… এইসব আরকি. কিন্তু একবার খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল. যার জন্য বাবা আমাকে বেহালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন.
মা : কি হয়েছিল গো?
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে কানে কানে কি বললো. মা চমকে উঠলো সেটা শুনে.
মা : কি!! তোমায়….. তোমাকে উনি মারতে….. !!
বাবা : আঃ…. আস্তে বলো….. রাজু বারান্দায়.
মা : কবেকার ব্যাপার এটা?
বাবা : আমি তখন সবে কলেজ পাস করেছি. ওই যে বললাম দাদা এমনিতে আগে ভালোই ছিল. এই মানুসিক ব্যাপারটা হটাত করেই ধরা পড়ে. পরে বলবো. এখন চলো শুয়ে পড়ি. উফফফ…. এতটা দেরি হয়ে গেলো.
বাবা নীচে বিছানা করে শুয়ে পড়লেন আর আমরা আর মা ওপরে খাটে. সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল হটাৎ একটা হাসির শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো. একটা কালো ছায়া মতো কি যেন জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেলো. আমি উঠে বসলাম. কিন্তু আর কোনো শব্দ হলোনা. বাইরে শেয়ালের ডাক. চোখের ভুল ভেবে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম. সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে. চোখ কচলে উঠে বসলাম. দেখি মেজো ভাই তখনো ঘুমোচ্ছে. বাবা বাথরুমে গেছেন. দরজা খোলাই ছিল. আমি বিছানা ছেড়ে নামতেই দেখি লাবনী খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো. আজ সকালের আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম. দেখতে ভয়ঙ্কর নয় কিন্তু এমন একটা ব্যাপার আছে মুখে যেটা আমায় ওর প্রতি ভয়টা বাড়িয়ে দিচ্ছে.
লাবনী : বৌদিমনি…… খাবার এনেছি. তোমরা আগে খেয়ে নাও তারপরে বড়ো বাবুর সাথে দেখা করতে যেও. আমি ওনাকে বলে এসেছি তোমরা এসেছো.
বাবা সেই সময়ে ঘরে ঢুকে বললো : যাও এবার তুমি. আমার হয়ে গেছে. ও… খাবার এসে গেছে. রাজু ভাই কে ডাক….. তোদের মাও যাচ্ছে…. যা তোরা মায়ের সাথে পাশের ছোট বাথরুম টাতে যা. একটু পরেই দাদুর সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে.
আমি ভাইকে জাগিয়ে মায়ের সঙ্গে নীচে গেলাম. লাবনী নিতে গেলো আমাদের. নীচে গিয়ে মা দূরের বাথরুমটাতে ঢুকলো আর আমরা সামনের ঔ ছোট দুটোয়. কিছুক্ষন পর আমার মায়ের বেরোনোর শব্দ পেলাম. মা ওপরে চলে গেলো. কিন্তু একটু পরেই আবার ওই বাথরুমেই কে যেন ঢুকলো. দরজা বন্ধ করার আওয়াজ স্পষ্ট পেলাম. একটু পরেই আমি বেরিয়ে এলাম. আমি এগিয়ে গেলাম ওই বাথরুমটায়. ভেতরে কেউ রয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে. কারণ দরজার নিচ দিয়ে দুটো বড়ো বড়ো পা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে. তবে সে কি যেন বলছে গুন গুন করে. আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না. আমি আরো এগিয়ে যাবো কিনা ভাবছি হটাৎ পেছনে একটা হাত ! আমি চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি মেজো ভাই. সে বললো তার হয়ে গেছে. আমিও আর সাত পাঁচ না ভেবে ভাইয়ের সঙ্গে ওপরে উঠে এলাম. উপরে গিয়ে লুচি তরকারি খেলাম. লাবনী মাসির হাতের রান্না ভালো তবে মায়ের মতো নয় সেটা বুঝলাম. মুখ ধুয়ে নিয়ে বাবা বললেন চলো চলো বাবার সঙ্গে দেখা করেনিই. আমরা সবাই গেলাম দাদুর ঘরে. পূর্বের একটা বড়ো ঘরে উনি থাকতেন. আমরা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে দেখলাম দাদু শুয়ে আছে আর লাবনী মাথার কাছে দাঁড়িয়ে.
মা প্রথমে এগিয়ে গেলেন. দাদুর পা ছুঁয়েছে প্রণাম করল. দাদু মা কে দেখে হাসিমুখে উঠে বসতে যাচ্ছিলেন কিন্তু মা তাকে আবার শুয়ে দিলো.
মা : না.. না… বাবা. আপনাকে উঠতে হবেনা. আপনি শুয়ে থাকুন.
দাদু : বৌমা…. তোমরা এসেছো. খুব খুশি হয়েছি মা. কৈ আমার নাতিরা কোথায়?
বাবা আমাদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন. আমরা সকলে দাদুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম. বাবাও করলেন. তারপর বাবা আর মা দাদুর পায়ের কাছে বসলেন. আমরা দাদুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম. দাদু আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে.
মা : বাবা…. কতদিন আপনাকে দেখিনি. কি অবস্থা হয়েছে আপনার. সেই ৮ বছর আগে আপনি এসেছিলেন তারপর আজ.
দাদু : বৌমা…. আমায় ক্ষমা করো….তুমি এই বাড়ির বৌমা… তা সত্ত্বেও তোমাকেও এই বাড়িতে বৌমা করে আনতে পারিনি মা. আসলে কিছু অতীতের ব্যাপার যা……
মা দাদুকে থামিয়ে বললেন : ছি.. ছি… বাবা… একি বলছেন ! আমি সব জেনেছি বাবা. আপনি যা করেছেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেছেন.
দাদু হটাৎ লাবনী মাসিকে একটু বাইরে যেতে বললেন. লাবনী ভুরু কুঁচকে একবার দাদুর দিকে তাকালো তারপর বেরিয়ে গেলো. তারপর দাদু মায়ের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন.
দাদু : সুখী হও মা….. মা এই শেষ বয়সে তোমাদের দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই সাহস করে ডেকে পাঠালাম. জানিনা আমি আর কদিন. তাই সব কিছু রঞ্জন কে বুঝিয়ে দিতে চাই. সুজিত তো এসব বেপারে কিচ্ছু বোঝেনা. তাই রঞ্জন কেই সব দায়িত্ব বুঝিয়ে আমার মুক্তি. আচ্ছা বৌমা যদি একটা অনুরোধ করি তোমার কাছে তুমি রাখবে মা?
মা : এমা…. বাবা… অনুরোধ কেন? আমি আপনার বৌমা…. আপনি আমার বাবার মতন. বলুননা.
দাদু : যে কটাদিন তোমরা এই বাড়িতে আছো… মানে যতদিন না সব দলিল পত্র তৈরী হচ্ছে তোমরা তো এখানেই আছো… তাই বলছিলাম মা যে তুমি যদি আমার খাবারের দায়িত্বটা নাও. আমার বৌমার হাতের সেই চমৎকার রান্না কতদিন খাওয়া হয়নি.
মা হেসে বললেন : আপনি না বললেও আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আপনাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবো. কতদিন আপনাকে কিছু রেঁধে খাওয়াতে পারিনি.
মা দাদুর মধ্যে কথা হচ্ছে…. আমি, বাবা ভাই সেইদিকে চেয়ে. হটাৎ আমার নজর পরলো দরজার বাইরে. পর্দার ওপারে কে যেন দাঁড়িয়ে. বিশাল লম্বা আর চোখ দুটো যেন জ্বলছে. আমার বুকটা হটাৎ ছ্যাৎ করে উঠলো. কে ওটা? বাবা কি বিশাল লম্বা. তখনি পর্দা সরিয়ে ওই ছায়া ঘরে প্রবেশ করলো. একজন লম্বা করে ভদ্রলোক. এসেই হাসি মুখে বাবাকে দেখে বললো : কি রে? কেমন আছিস? চিনতে পারছিস? বাবাকে দেখলাম হাসি মুখে লোকটার দিকে এগিয়ে গেলেন. গিয়ে প্রণাম করলেন. লোকটা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো. বাবা বললেন : দাদা….. কতদিন পর তোমায় দেখলাম. কিযে ভালো লাগছে. আমি বুঝতে পারলাম ইনি আমার জেঠু. সুজিত জেঠু. বাবা মাকে ডাকলেন এবং মা হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে ওনাকে প্রণাম করলো. জেঠু মায়ের মাথায় হাত রেখে বললেন : থাক থাক. তারপর মায়ের থুতনি ধরে বললেন : বাহ্…. কি সুন্দরী বৌ হয়েছে রঞ্জন তোর. ভালো থাকো অনুপমা. তা এতদিনে মনে পরলো আমাদের. তোমাকেতো শুধু ছবিতেই দেখেছি. তোমাদের বিয়ের ছবিতে বাবা তুলে এনেছিল. আজ এতদিন পরে সামনে দেখলাম.
মা হেসে বললো : দাদা আমি তো আসতেই চাইতাম কিন্তু আপনার ভাইয়ের কাজ পরে যেত তাই আসা হয়ে ওঠেনি. রাজু, তনু… এসো জেঠুকে প্রণাম করো.
আমি আর ভাই তনু গিয়ে জেঠুকে প্রণাম করলাম. জেঠু আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিন্তু আমার মনে হলো তিনি আমাদের থেকে আমার মায়ের আসাতে বা মায়ের প্রতি বেশি আগ্রহী. আমাদের পাশ কাটিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললেন : তা তোমার আরেকটা ছেলে আছে শুনলাম. মা বললো : হ্যা…. ওকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি. আপনি বসুন না দাদা. জেঠু বললেন : না ঘরে যাই. একটু কাজ আছে. তোমরা আমার ঘরে এসো. বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন. বাবা মা আবার দাদুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন. আমি দরজার দিকে তাকালাম দেখলাম জেঠু ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গেলোনা বরং বাইরে থেকে ঘরে নজর রাখছিলেন. আর তার নজরটা যেন মায়েরই দিকে. দাদুকে বিশ্রাম করতে বলে মা আর বাবা ঘরে চলে গেলো. আমি আর ভাই নীচে গেলাম ঘর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে. ভাই একটা ফুটবল নিয়ে নিলো. আমি নীচে নামতেই কল্যাণ লোকটার সাথে দেখা. উনি উপরেই আসছিলেন. আমাদের নীচে নামতে দেখে হেসে বললেন : কি… তোমরা নীচে খেলতে যাচ্চো. আমরা হ্যা সূচক মাথা নাড়তে সে হেসে বললো : যাও… যাও. খেলো. বলে সে উপরে উঠে গেলো. আমরা নীচে খেলতে বাইরে গেলাম. ওই বাগানটাতে. তখন ওই বাগানটা আজকের মতো অগোছালো ছিলোনা. নিয়মিত যত্ন করা হতো. কত সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে বাগানে. আমি আর ভাই ওই বাগানে খেলতে লাগলাম. ভাই হটাৎ বল টাতে লাথি মেরে দূরে ছুড়ে দিলো আমি ওটা নিয়ে ফিরে আসছি হটাৎ ওপরে দোতলায় চোখ পরলো. ওখানে জানলার ধারে দুজন লোককে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে. স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সুজিত জেঠু আর কল্যাণ. দুজনেই হাসি মুখে কি যেন আলোচনা করছে. তারপর কল্যাণ একটা লাল কাপড়ে মোড়া কি যেন একটা জেঠুর হাতে দিলো. আমি ওতো কিছু না ভেবে খেলতে লাগলাম. কিছুক্ষন পরে মা নেমে এলো. আমি দেখলাম মা আর লাবনী ঢুকলো রান্না ঘরে. তারপর আমরা রান্না ঘরে ঢুকলাম. কি বড়ো রান্না ঘর. পুরানো বনেদি বাড়ির রান্না ঘর বলে কথা. মা আমাকে দেখে বললো : রাজু… অনেক খেলা হয়েছে এবার ওপরে যাও. ভাই ঘুমোচ্ছে ওখানে থাকো. বাবার সঙ্গে উকিল বাবু দেখা করতে এসেছেন তাই সে ব্যাস্ত আছে. যাও.
আমি আর ভাই ওপরে উঠে এলাম. দেখলাম দাদুর ঘরে বাবা, জেঠু আর একজন লোক. জামাকাপড় থেকেই বোঝা যাচ্ছে সে উকিল. আমি আমাদের ঘরে আসতেই দেখি কল্যাণ. সে আমার ঘুমন্ত ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে. আমাদের দেখে হেসে বললো : হি… হি.. তোমরা সবাই বাইরে তাই আমি তোমার ভাইকে পাহারা দিচ্ছিলাম. আসি তাহলে. সে বেরিয়ে গেলো. আমি আর ভাই ওখানেই বসে বই পরতে লাগলাম. দুপুরে আমরা সবাই রান্না ঘরে খেতে গেলাম. ওখানে আগে একটা বড়ো টেবিল ছিল. এখন আর নেই. আমি বাবা ভাই আর মা খেতে বসলাম. মা লাবনী কে জিজ্ঞেস করলো দাদা খেতে আসবেন না? লাবনী বললো জেঠু তার ঘরেই খান. সে জেঠুর খাবার তার ঘরে নিয়ে গেলো. খেতে খেতে বাবা বললো : উকিল বললো কটাদিন সময় লাগবে. আমাদের ততদিন এখানেই থাকতে হবে. তাছাড়া আমার ওখানকার ব্যাবসার উন্নতির জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন. এটা পেলে ভালোই হবে. ও হ্যা….. ভালো কথা. দাদা আমাদের তার ঘরে একবার যেতে বলেছেন. খাওয়া হয়ে গেলে একবার দেখা করে আসবো. আমরা জেঠুর ঘরে দেখা করতে গেলাম. আশ্চর্য এই লোকটা রাগী ছিল? কে বলবে? এতো শান্ত লোক কিকরে রাগী হতে পারে আমি সেটাই ভাবছিলাম. জেঠু বাবা মায়ের সাথে কথা বলছিলো আমি বাইরে চলে এলাম. সেদিনটা এসবেই কেটে গেলো. কিন্তু কে জানতো পরের দিন গুলো কত ভয়ানক হতে চলেছে.
বুবাই : কি হয়েছিল পরে?
রাজু কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি সে কান পেতে কি শুনলো তারপর বুবাইকে বললো : তোমার মা তোমায় ডাকবে এক্ষুনি.
বুবাই : ডাকবে….. কৈ ডাকছে নাতো?
অমনি নিচ থেকে মায়ের ডাক : বুবাই….? কোথায় তুই বাবা?
বুবাই অবাক হয়ে গেলো. সে রাজু কে বললো : তুমি কিকরে জানলে মা ডাকবে? রাজু হেসে বললো : আমি আওয়াজ পেলাম যে. তুমি যাও মায়ের কাছে. আমি আজ আসি. কাল আবার এই সময়ে আসবো বাকিটা বলতে. চলো. বুবাই এগিয়ে যেতে লাগলো হটাৎ পেছন থেকে রাজু ডাকলো. বুবাই পেছন ফিরে তাকালো. রাজু এগিয়ে এসে বুবাইকে বললো : শোনো….. তুমি একটু চোখ কান খোলা রেখো. ওই তপন লোকটার ওপর নজর রেখো. এই বলে সে বুবাইয়ের আগে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো. বুবাই মায়ের কাছে ফিরে এলো. আসতেই মায়ের কাছে একচোট বকা খেলো. কেন ভাইকে ছেড়ে গেছিলো. মায়ের বকা যে আদরের বকা সেটা বুবাই জানে. কিন্তু ঘরে একটা নতুন জিনিস দেখে বুবাই অবাক.
বুবাই : মা…. ওটাকি? এইবলে সে বিছানায় রাখা একটা লকেট এর দিকে ইশারা করলো. মা বললো সে স্নান করে ফেরার সময় সে বাথরুমের জানলার আয়নাতে এটা ঝোলানো ছিল. এতো সুন্দর একটা লকেট ঝুলে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে. কি সুন্দর দেখতে. তাই নিয়ে এসেছে. বুবাই দেখলো মা ওইটা হাতে নিয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো তারপর আয়নার সামনে ওটা পড়ে নিজেকে দেখতে লাগলো.
বুবাই : মা… ওটা পড়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে. কি সুন্দর লাগছে তোমায়.
স্নিগ্ধা বুবাইয়ের গাল টিপে মাথায় চুমু খেয়ে বললো : যাও এবার চান করে নাও. তোয়ালে নিয়ে যাও. বুবাই নীচে নেমে কল ঘরে ঢোকার সময় দেখলো তপন কল ঘর থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসছে. বুবাইকে দেখে আরো হেসে এগিয়ে এসে বললো : কি খোকাবাবু? চান করতে যাচ্চো? যাও যাও চান করে নাও. ওদিকে তোমার বাবা বাড়িতে নেই. এখন তোমার, তোমায় ভাই আর তোমার মায়ের খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে তাইনা? তোমার মায়ের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমারই. হি…. হি….করে হাসতে হাসতে তপন চলে গেলো.
বুবাইয়ের তপনের এই শেষের কথাটা কেমন যেন লাগলো. কিনতু সে ওতো কিছু না ভেবে স্নান করতে ঢুকে গেলো. কিন্তু বিপদের শুরু যে হয়ে গেছে সেটা ওই আট বছরের বাচ্চাটা বুঝতেই পারলোনা.
**********
বুবাই চান করে বেরোলো. সে বেরোতেই দেখলো মা দাঁড়িয়ে আছে. বুবাই এর থেকে তোয়ালে নিয়ে স্নিগ্ধাই ছেলের মাথা মুছিয়ে দিলো. তারপর গা মুছিয়ে দিলো. তখনি তপন ঐখানে কি কাজে আসলো আর বুবাই দেখলো তপন হুট্ করে দরজার পেছনে লুকিয়ে গেলো আর তার নজর তার মায়ের দিকে. স্নিগ্ধা পেছন ফিরে নিচু হয়ে ছেলেকে মুছিয়ে দিচ্ছিলো তাই সে তপন কে দেখতে পায়নি. বুবাই দেখলো তপন দরজার পেছন থেকে মুখ বাড়িয়ে কেমন করে যেন তার মায়ের দিকে চেয়ে আছে. চোখ দুটো লাল. মুখে কেমন একটা হাসি. তারপর বুবাইয়ের সাথে তার চোখাচুখি হতেই সে বুবাইকে দেখে হাসি দিলো. বুবাই কিছু বুঝলোনা সেও তপনকে দেখে হাসি দিলো. ছেলেকে হাসতে দেখে স্নিগ্ধা বুবাইকে জিজ্ঞেস করলো : কিরে কাকে দেখে হাসছিস? বুবাই বলতেই যাচ্ছিলো মা ওকে দেখে……. কিন্তু সে চেয়ে দেখলো ওখানে কেউ নেই. স্নিগ্ধা ছেলেকে নিয়ে ওপরে উঠে এলো. বুবাই ওপরে উঠেই টিভিতে তার রোজকার দিনের মতো কার্টুন দেখতে লাগলো. টিভিটা মা বাবার ঘরে ছিল. তখনি অনিমেষ বাবুর ফোনে আসলো আর স্নিগ্ধা তার সাথে কথা বলতে লাগলো. একটু পরে ফোন রেখে স্নিগ্ধা দেখলো দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে. সে বুবাইকে বললো : বুবাই…. আমি একটু ছাদে যাচ্ছি. তুই কিন্তু ঘরেই থাকবি. আর নীচে গেলে দরজা ভিজিয়ে যাবি. ঠিক আছে? বুবাই টিভি থেকে মুখ না সরিয়েই হ্যা সূচক মাথা নাড়লো. স্নিগ্ধা সঙ্গে কিছু ভেজা কাপড় নিয়ে বেরিয়ে গেলো. বুবাই টিভিতে কার্টুন দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো. এখন তার ছুটির সময়, সে পুরো ছুটতে আনন্দ উপভোগ করে কাটাতে চায়.
ওদিকে স্নিগ্ধা ছাদে যাচ্ছিলো হটাৎ দেখলো সিঁড়ি দিয়ে মালতি উঠছে. সে আসলে জিজ্ঞেস করতে আসছিলো স্নিগ্ধা কখন খাবে.
মালতি : বৌদি…. আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতেই আসছিলাম বুবাই আর আপনি কখন খাবেন?
স্নিগ্ধা : ওই দেড়টা নাগাদ. তুমি এখন কি করবে? কোনো কাজ আছে?
মালতি : না বৌদি… সব রান্না শেষ. কোনো কাজ নেই.
স্নিগ্ধা : তাহলে ছাদে চলোনা. আমি চুল শুকাতে যাচ্ছি আর এগুলোও রোদে দেবো বেশ রোদ উঠেছে. কিছুক্ষন গল্প করা যাবে.
মালতি : চলুন দিদি. আমি আপনাকে দিদি বলতে পারিতো?
স্নিগ্ধা : নিশ্চই…… আসো.
দুজনে ছাদে উঠে গেলো. ছাদে একটা লম্বা দড়ি আগেই টাঙানো ছিল খুব পুরোনো তাই সেখানেই সে বুবাইয়ের ধোয়া জামা প্যান্ট আর একদম ছোটটার হিসু করে দেওয়া প্যান্ট কেচে শুকোতে দিলো. সঙ্গে নিজের ম্যাক্সি আর অন্তর্বাস. তারপর তারা দুজনে একটু ছাওয়া দেখে বসলো. বাড়ির পেছন দিয়ে এক বিরাট আম গাছ গজিয়েছে. না জানে কত বছরের পুরোনো. এই বাড়ির কত কিছুর সাক্ষী সেই গাছ. সেই গাছের বেশ কিছু ডাল পালা ওই ছাদের পশ্চিম দিকটা ঘিরে রেখেছে. ওরা দুজন ঐখানটাতে গিয়েই বসলো. বেশ ঠান্ডা জায়গাটা. মালতি আগের দিনিই পুরো ছাদ ঝাঁড় দিয়ে গেছিলো তাই পরিষ্কার. স্নিগ্ধা একটা ম্যাক্সি পরে নিয়েছে. তার বাড়িতেও ম্যাক্সি পড়াই অভ্যেস. সে বসে মালতিকে বললো….
স্নিগ্ধা : তুমি এই বাড়িতে কতদিন আছো মালতি?
মালতি : আমি মানে আমরা এই বাড়িতে থাকিনা. আমাদের ঘর এই বাড়ির থেকে একটু দূরে. আমার বরের পরিবারের লোকেরা বংশ পরম্পরায় এই বাড়িতে কাজ করতো তাই ও করে সঙ্গে আমি. ওর বাড়ির লোকেরা আগে এই বাড়িতেই থাকতো. নীচে রান্না ঘরের পাশে আগে কয়েকটা ঘর ছিল এখন ভেঙে পড়েছে. ওখানেই থাকতো. কিন্তু এই বাড়িতে সেই ঘটনার পরে ধীরে ধীরে সব পাল্টে যায়. ওরাও এই বাড়ি ছেড়ে দেয়.
স্নিগ্ধা : ঘটনা? কি ঘটনা মালতি?
মালতি : আমিও সেই ভাবে কিছু জানিনা. আমি শশুর মশাই থেকে শুনেছিলাম এই বাড়ির মালিক মানে অঞ্জন বাবুর বাবার বড়ো ভাই নাকি এই ছাদের সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরে মারা যান. তখন সে খুব ছোট ছিল. এগারো না বারো বছরের. অনেকে বলে দুর্ঘটনা আবার অনেকে বলে ষড়যন্ত্র. কে জানে? শশুড়মশাই বলেছিলো পুলিশ এসে এই বাড়ির এক পাগল ছেলেকে সন্দেহ করে কিন্তু কোনো প্রমান না থাকায় সে ছাড়া পেয়ে যায়. এরপর বাড়ির কর্তাও মারা যান. অঞ্জন বাবুর দাদু বাকি দুই ছেলেকে আর বৌকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে দেয়. তারপর ধীরে ধীরে এই বাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়. তারপর অনেক বছর এই বাড়ি ফাঁকা থাকে. আট বছর আগে অঞ্জন বাবুরা এই গ্রামে একটি হাসপাতাল তৈরী করেন গাঁয়ের লোকেদের জন্য কিন্তু আমাদের এই গাঁয়ে কোন ডাক্তার আর থাকবে তারা সব শহরে চলে যায়. অঞ্জন বাবুরাও মাঝে মাঝে এই বাড়িতে থাকতে আসতো এইতো আগের বছরই এসেছিলো তারপর এই আপনাদের সঙ্গে. অঞ্জন বাবু আমাদের ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন. আপনাদের যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় তাই এবাড়িতে থাকার ঘর দিলেন. ওনারা আমাদের মাস মাইনের ব্যাবস্থা করে দিলেন.
স্নিগ্ধা : বাব্বা…. এই বাড়িতেই দুর্ঘটনাও ঘটে গেছে? অবশ্য এইসব বাড়িতেই জমির সমস্যা হয়েই থাকে. কে জানে এর পেছনে হয়তো সম্পত্তির ব্যাপার ছিল.
মালতি : এই বাড়িতে নাকি আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে. এই বাড়ির সঙ্গে অপঘাতে মৃত্যু ব্যাপারটা জড়িত.
স্নিগ্ধা : তোমার বর কি করে?
মালতি : আজ্ঞে…. ওর বাবার জমি আছে সেটাই দেখাশুনা করে. আগে একটা জায়গায় কাজ করতো পরে অঞ্জন বাবু এসে আমাদের এই বাড়ির দেখাশুনা করার ভার দেন আর মাস মাইনের ব্যবস্থা করে দেন. দু বেলা এসে ও বাড়িটা দেখে যেত. মাঝে মাঝে আমরা এসেও থাকি. পরিষ্কার টোরিস্কার করে আবার চলে যাই. বেশির ভাগ সময়ই ও একা আসতো. ওর আবার ভয় ডর বলে কিছু নেই. এই খুন হওয়া বাড়িতে কতবার একাই রাত কাটিয়ে গেছে. আসলে গায়ের লোকেরা বলে এটা নাকি ভুতুড়ে বাড়ি. আমার উনি যদিও মানেনা. ও কোনোদিন কিছু দেখেনি. তবে হ্যা…. আগের বছর এক তান্ত্রিক এই বাড়িতে এসেছিলো. ওর আবার এইসব ব্যাপারে একটু ঝোক আছে. ওকে নাকি তান্ত্রিক বলেছিলো এই বাড়িতে সোনা ডানা পোতা আছে. তাই একরাত্রে ও আর ওই তান্ত্রিক যোগ্য করেছিল. কিন্তু ঘোড়ার ডিম. কিস্সু পাওয়া যায়নি. পরের দিনই ও এসে বলেছিলো সেই কথা. সারারাত না ঘুমিয়ে ওর চোখ দুটো লাল হয়ে ছিল সেদিন.
ওদিকে বুবাই টিভি দেখছিলো. তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন শুরু হলো. বুবাই উঠে ভাই কে দেখলো. গভীর ঘুমে ভাই. সে উঠে কি মনে করে জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো. ঐদিকটা বাড়ির পেছন দিক. নীচে জঙ্গল আর গাছ পালাতে ভর্তি. বুবাই আকাশের দিকে চেয়েছিলো. নীল আকাশ, হলুদ সূর্য. বুবাই ছবি আঁকতে ভালোবাসে সে ভাবলো এই সুন্দর প্রকৃতির একটা ছবি একবার সে. তার আঁকার খাতায় ফুটিয়ে তুলবে এই বাড়ি আর প্রকতি কে. এইসবই সে ভাবছিলো হটাৎ সে নীল আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে নীচে সবুজ ঘাসের সভা দেখার জন্য তাকাতেই নীচে দেখলো আম গাছটার নীচে তপন দাঁড়িয়ে. খালি গা. কি বিশাল চেহারা. একটু পরেই আরেকজন লোক এসে দাঁড়ালো তার পাশে. তার গায়ে আবার কালো পাঞ্জাবী মাথায় কালো কি যেন বাঁধা. লাল রঙের ধুতি. কাঁধে একটা ঝোলা. সে এসে তপনের পাশে দাঁড়ালো আর নিচু হয়ে তপনকে প্রণাম করলো. বুবাই আশ্চর্য হলো ব্যাপারটা দেখে. কারণ তপনের বয়স লোকটার থেকে অনেক কম. ওই লোকটা 50 বা 55 বছরের হবে আর তপন হয়তো 35. তাহলে? এর মানে কি? বুবাই এটাই ভাবছিলো কিন্তু ততক্ষনে টিভিতে তার কার্টুন শুরু হয়ে গেছে. সে ঐসব ভুলে আবার টিভিতে মন দিলো.
স্নিগ্ধা : আচ্ছা…. মালতি তোমার কি মনে হয়? এই বাড়িতে সত্যি কোনো…. মানে…. ভূত আছে (একটু ভয় ভয়)
মালতি : আরে না দিদি. আমি বললাম না আমার বর কতবার একা এসে থেকে গেছে. তারপর অঞ্জন বাবু তার পরিবার নিয়ে আগের বছরই কাটিয়ে গেলো. ওসব কিচ্ছু না দিদি. আসলে এই বাড়িটাতে ওই দুর্ঘটনা গুলো ঘটেছে বলে সবাই ঐসব ভাবে.
স্নিগ্ধা : হ্যা…. আমারো তাই মনে হয়. ছাড়ো ওসব কথা. তা তোমার এখনো বাচ্চা হয়নি? নাকি নাওনি?
মালতি মুখ নামিয়ে বললো : কি বলবো দিদি…. কম চেষ্টা তো করলাম না. কিন্তু……….
স্নিগ্ধা বুঝে গেলো যা বোঝার. সে কথা পাল্টে অন্য কথায় চলে গেলো.
বুবাই এর খুব বাথরুম পেয়েছে. সে উঠে একবার ভাইকে দেখে নিলো. ঘুমাচ্ছে. বুবাই উঠে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো আর যাওয়ার আগে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে গেলো. সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাথরুমে গেলো আর নিজের কাজ করতে লাগলো. কল ঘরের পেছনেই বাথরুম. আর একটু দূরেই আম গাছ. বুবাই একটা হাসি শুনতে পেলো. কি বিচ্ছিরি হাসি. বুবাইয়ের বাথরুম হয়ে গেছিলো. সে বেরিয়ে না এসে শুনতে লাগলো সেই সব অস্পষ্ট কথা গুলো. ঠিক করে বুঝতে পারছিলোনা ও. কারণ দূরত্ব অনেকটাই. তাও কয়েকটা কথা ওর কানে এলো.
যেমন – এইবারে আর ছাড়াছাড়ি নয়. উফফফফ আমার এই সুন্দরীকে দেখে ওর কথা মনে পরে গেলো. কি রূপ এর. চোখ দুটো কি কামনাময়ী, আর ঠোঁটটা লাল গোলাপের মতো. একদম এই বাড়ির সেই গিন্নিমায়ের মতো.
হটাৎ পাশ থেকে আরেকটা গলা. সে বলছে : হি…. হি…. আপনিতো সেই গিন্নিমাকেও ছাড়েননি. তাকেও চরম তৃপ্তি দিয়েছিলেন বাবা. হি… হি.
আগের গলা : হ্যা….. এই বাড়ির বৌমা অনুপমা . উফফফ অনুপমাকে যখন প্রথমবার ছবিতে দেখেছিলাম. আমি পাগল হয়ে গেছিলাম. কি রূপ, কি হাসি. আমি ভেবেই নিয়েছিলাম… ওকে আমার চাই. তাইতো ওতো ফন্দি এঁটে ওকে এই বাড়িতে এনে ফেলেছিলাম. আর তারপর ওর শরীর সুধা পান করে ছিলাম. খানকি মাগিতে পরিণত করেছিলাম ওকে. আমার কাছে আসার জন্য ওকে পাগল করে তুলেছিলাম. কখনো দুপুরে রান্না ঘরে, সন্ধে বেলায় ছাদে আবার একবার মাঝরাতে ওই বাড়ির পেছনের পুকুরে নিয়ে গিয়ে চান করার পর পুকুর ঘাটে বসে. উফফফ….. সেই সব দিন কি ভোলা যায়.
দ্বিতীয় গলা : কিন্তু বাবা….. কাজ যে অসমাপ্ত থেকে গেছিলো. এখনো অসমাপ্ত.
প্রথম গলা রাগী স্বরে : কাজ তো কবেই সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল. কিন্তু চরম মুহূর্তে ওই অনুপমার শয়তান বাচ্চাটা এসেই সব নষ্ট করে দিলো. আমার এতদিনের পরিকল্পনা সব ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো. তার পর থেকে আর সুযোগ পাচ্ছিনা. এই মালতিকে পেয়ে ভেবেছিলাম একে দিয়েই কাজ সারবো কিন্তু ও আবার বাচ্চা পয়দা করতে অসফল. আগের বছর এই বাড়ির মালিকের ছেলে তার বৌ বাচ্চা নিয়ে থাকতে এলো. ওই বৌটাও দারুন ছিল. ওর রূপ দেখেই ওকে নিজের করে নেবার জন্য সব কিছু পরিকল্পনা করলাম. ওকে ওই জিনিষটা গলায় পড়িয়েও দিলাম. রোজ রাতে ওকে এই বাড়ির কল ঘরে এনে ভয়ানক সুখ দিতাম. আমাদের মিলনের সাক্ষী এই কল ঘর. আমিতো ভেবেছিলাম ওকে দিয়েই কাজ সারবো আর ওর পেট দিয়েই……… কিন্তু হলোনা. দুদিন পরেই চলে গেলো. ভাগ্গিস ওইটা ওর গলা থেকে খুলে নিতে পেরেছিলাম. কিন্তু এবারে আর নয়. ওই ডাক্তার তো এইবাড়িতেই থাকবে আর ওর স্ত্রীও. একে দেখেতো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে. ঠিক যেন অনুপমার মুখ. সেই চোখ, সেই ফর্সা গায়ের রং, টানা টানা মায়াবী চোখ আর গতরটা কি অসাধারণ. দুধ পূর্ণ স্তন আর সুগভীর নাভি. ব্যাস আর নয়. অনেক অপেক্ষা করেছি. আর নয় ….. আমি এবার আর কোনো বাঁধার সম্মুখীন হবোনা. ওকে দিয়েই আমার কাজ সারবো. ওই হবে আমার সুখের সাথী আর শক্তি বৃদ্ধির উপায়. আমার শক্তি কম নয় কিন্তু শক্তির সেই উচ্চ শিখরে আমি পৌঁছতে চাই আর তার জন্য আমাকে বার বার ফিরে আস্তে হবে… হা… হা… হা.. আর এই সুন্দরীটার একটা কচি বাচ্চাও আছে. তুই ঐটার শরীরেই আমাকে….. বুঝলিত?
দ্বিতীয় গলা : আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেননা. আমি আছি তো. ওই শিশুটার মধ্যেই আপনাকে….. হা…. হা হা….. হা. তবে এখন আপনি তার মায়ের সাথে আশ মিটিয়ে মজা করুন. আপনি যখন ইহলোকে ছিলেন তখন তো আপনি অনেক মহিলাকে নিজের করে নিয়েছিলেন.
প্রথম গলা : তা ঠিক…… আমার লালসার স্বীকার অনেক বৌ. আমার একবারের একটা ঘটনা মনে আছে. উফফফফ ওই বৌটাকে আমি যা করেছিলাম না….এখনও মনে আছে. ওকে আর আরেকটা বৌকে. সে আবার ছেলে সন্তান হবার জন্য আমার কাছে এসেছিলো. তাকেও ছাড়িনি….. তাদের সাথে যা করেছিলাম না উফফফফ….
দ্বিতীয় গলা : কি… কি… করেছিলেন বাবা? একটু বলুন? আমিও শুনি?
প্রথম গলা : তুই আমার সব থেকে প্রিয় শিষ্য. তোর দাদু কল্যাণও ছিল আমার প্রিয়. সেই তো আমাকে ওই সুজিতের শরীরে……থাক সে কথা. তুই যখন শুনতে চাস তাহলে তোকে বলবো তবে আজ নয় এখন আমায় যেতে হবে. দুদিন বাদে এখানে আসবি আর ওষুধটা নিয়ে আসবি. তখনি বলবো. এখন যা.
বুবাই যতটুকু শুনলো তাতে সে সেভাবে কিছুই বুঝতে পারলোনা. কারণ এখনো সেইসব কথা বোঝার মতো বয়স তার হয়নি. সিধু এইটুকু বুঝলো কেউ ওই আজকের পরিচিত রাজুর ব্যাপারে আর তাদের ব্যাপারে কথা বলছে. সে চলে এলো কল ঘর থেকে নিজের ঘরে আর টিভি দেখতে দেখতে সে একসময় ভুলেই গেলো সেই সব কথোপকথন. একটু পরেই ওর মা আর মালতি নীচে নেমে এলো. ততক্ষনে দেড়টা বাজতে চলেছে. মালতি নীচে গিয়ে খাবার ব্যাবস্থা করতে গেলো. স্নিগ্ধা ঠিক করেছে ঘরেই খাবে কারণ ছোট ছেলেকে রেখে খেতে যাবে আর তখন যদি ও জেগে যায় আবার শিশুটাকে নিয়েও ওতো ঘোরাঘুরি ঠিক নয়. তাই একটু পরে মালতি ওদের খাবার ঘরেই দিয়ে গেলো. ওরা টেবিলে এ বসে খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো. স্নিগ্ধা তার সিরিয়াল দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো আর বুবাই একটা গল্পের বই নিয়ে পরতে লাগলো. একটু পরে ওর মা টিভি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলো. বুবাই একটু পরে বই থেকে মুখ সরিয়ে দেখলো মা ঘুমিয়ে পড়েছে. সে আঁকার খাতাটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো. ঘরের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে. সে ছাদে যাচ্ছিলো ছবি আঁকতে. ছাদের সিঁড়ির শেষ ধাপ উঠে সে যেই ছাদে ঢুকবে সে দেখলো তপন ! তার হাতে তার মায়ের দুটো ব্লউস আর ব্রা. সে চোখ বুজে ব্রাটা সুঁখছে আর ব্লউসটা নিজের বুকে ঘসছে. তারপর চোখ খুলে ওই দুটো দেখে হেসে উঠলো তখনি তার নজর পরলো ওই কাপড় দুটোর মালকিনের সন্তানের ওপরে. বুবাই চেয়ে আছে তার দিকে. সে তৎক্ষণাৎ ঐদুটো আবার মেলে দিয়ে হেসে বললো : আসলে এগুলো নীচে পড়ে গেছিলো আমি এখানে এসে দেখি পড়ে আছে তাই এগুলো তুলে দিলাম. তারপর বুবাইয়ের হাতে আঁকার খাতা আর রং পেন্সিল দেখে তপন বললো : বাহ…. খোকাবাবু…. তুমি ছবি আঁকতে এসেছো. বা আঁকো আঁকো. তারপরে এক সেকেন্ড এর জন্য কি ভেবে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো. সে বললো : আঁকো ভালো করে বসে সময় নিয়ে আঁকো. পরে আমাকে দেখিও কিন্তু কেমন আঁকলে. হি… হি. আমি আসি কেমন…. তুমি আঁকো. এই বলে সে নীচে চলে গেলো. বুবাই ওই আম গাছের ডালগুলির তলায় বসে একটা গ্রামের ছবি আঁকতে লাগলো. দুটো বাড়ি, কয়েকটা গাছ. পাশে নদী বয়ে চলেছে আর দুজন গ্রাম্য মহিলা কলসিতে জল নিয়ে ঘরে ফিরছে. পেন্সিল দিয়ে এঁকে নিয়ে তারপর তাতে রং ভরতে লাগলো বুবাই. দেখতে দেখতে সে খালি আঁকার খাতায় ফুটিয়ে তুলতে লাগলো সুন্দর একটা গ্রাম্য পরিবেশ. এই আঁকতে আঁকতে বেশ কিছু সময় কেটে গেলো. সে ভাবলো এবার ঘরে গিয়ে একটু শুতে হবে বাকিটা পরে আঁকবো. সে সব গুছিয়ে নিয়ে নীচে যেতে লাগলো. সিঁড়ির আর কয়েক ধাপ বাকি নামতে তখনি সে শুনতে পেলো নিচ থেকে মালতির ডাক: এই….. কোথায় তুমি? কোথায় গেলে? ঠিক তখনি বুবাই দেখলো তপন ছুট্টে তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে গেলো. বুবাই নিজের ঘরে এসে খাতা পেন্সিল রেখে মায়ের ঘরে গেলো. সে গিয়ে দেখলো ভাই ঘুমাচ্ছে কিন্তু মা মনে হয় জেগে. ঐতো মা নড়ছে. বুবাই এগিয়ে গিয়ে বুঝলো তার ভুল হয়েছে. মাও ঘুমোচ্ছে. কিন্তু তাহলে মা এতো নড়াচড়া করছে কেন? মায়ের মুখে একটা হাসি. মা দুই হাতে নিজের মাথার বালিশটা আঁকড়ে ধরে আছে আর মায়ের পা দুটো একে অপরকে ঘসছে. ম্যাক্সিটা উঠে গেছে হাঁটু অব্দি. বুবাইয়ের মায়ের ফর্সা পা দুটো বেরিয়ে এসেছে. একটু পরে মা আবার শান্ত হয়ে গেলো. বুবাই ওতো কিছু বুঝলোনা. সে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো. দিনের আলো ফুরিয়ে নেমে এলো অন্ধকার. সন্ধেতে স্নিগ্ধার নিজের হাতে চা খাওয়া অভ্যেস. তাই সে নিজেই চা বানিয়ে এনে ঘরে বসে চা খাচ্ছে. বুবাই ভাইয়ের সাথে খেলছে. বাচ্চাটা হাসছে আর নিজের ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে দাদার হাত হাত ধরার চেষ্টা করছে. স্নিগ্ধা চা খেয়ে কাপটা রাখতেই মনে পরলো এ বাবা…. কাপড় গুলো এখনও ছাদে রয়েছে. তোলা হয়নি. স্নিগ্ধা যাওয়ার জন্য চটি পড়ে নিলো. কিন্তু আজকে যা যা শুনলো এই বাড়ি সম্পর্কে তাতে তার এখন একা যেতে কেমন যেন ভয় করছে. সে ভাবলো বুবাইকে নিয়ে যাবে. কিন্তু স্নিগ্ধা দেখলো বুবাই তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলায় মশগুল. দুই ভাই কি সুন্দর খেলা করছে দেখে স্নিগ্ধা হাসলো আর ভাবলো : ধুর…. যতসব. আমি কিসব চিন্তা করছি. যাই নিয়ে আসি কাপড় গুলো. এই বলে সে বুবাইকে ভাইয়ের সাথে রেখে ছাদে একাই গেলো. ছাদের সিঁড়ির কাছের আলোটা জ্বালাতে গিয়ে স্নিগ্ধা দেখলো ওটা কেটে গেছে. সে একটু ভয় পেলো কিন্তু এগিয়ে গেল ছাদে. হাওয়ায় কাপড় গুলো উড়ছে. সে ক্লিপ সরিয়ে এক এক করে কাপড় গুলো নিতে লাগলো. ছেলের জামা কাপড় হাতে নেবার পর এবার সে নিজের অন্তর্বাস গুলো নিতে লাগলো. সে একটু এগিয়ে গেছে কাপড় গুলো নিতে তার মনে হলো কেউ এই ছাদে রয়েছে. এটা মনে হতেই তার ভয় হতে লাগলো. সে এদিক ওদিক দেখলো. কেউ নেই. সে তাড়াতাড়ি কাপড় গুলো তুলছে হটাৎ তার পিঠে কি ঠেকলো. সে চমকে ওমা করে উঠলো. পেছন ফিরেই দেখলো কিছুই নয়…. আম গাছের একটা ডাল তার পিঠে থেকেছে. স্নিগ্ধা আপন মনেই হেসে উঠলো. ভুলভাল চিন্তা আর পারিপার্শিক পরিবেশ সব মিলিয়ে তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে. স্নিগ্ধা বুকে হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করলো. তখনি তার হাতে ওই লকেট টা ঠেকলো. সে ওটা হাতে নিয়ে ধরতেই তার ভয় যেন আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো বরং তার বদলে তার মধ্যে এক অন্য অনুভব বাড়তে লাগলো. তেষ্টা…… শরীরের প্রতি টান. সে আনমনে নিজেই ভাবতে লাগলো তার সেদিনগুলোর কথা যখন বুবাইয়ের বাবা আর সে একান্তে জীবনের শ্রেষ্ট সময় কাটিয়েছে. এখন কাজের চাপে সে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন. স্নিগ্ধার মন তা মেনে নিয়েছে কিন্তু শরীর কি তা শুনতে চায়? তার বয়সী বা কি এমন? স্নিগ্ধা আপন মনে লকেটটা নিয়ে খেলতে খেলতে নিজের অজান্তেই তার মাইতে একটা চাপ দিলো. ইশ…. কি সুন্দর অনুভূতি. স্নিগ্ধা আহ করে উঠলো. সে আবার ওই অনুভূতির জন্য নিজের মাই টিপলো. তার স্তন জোড়া এমনিতেই তার গর্ব. তার ওপর এখন সে একজন শিশুর মা. স্তন ভর্তি দুগ্ধ. সেই দুধেল মাই টিপতে স্নিগ্ধার আবার ভালো লাগলো. ইশ… এইভাবে নিজের সাথে দুস্টুমি করে এতো ভালো লাগছে কেন আমার? ভাবলো স্নিগ্ধা. তার মুখে দুস্টু হাসি. সে আম গাছটার তলায় ছিল. ঠান্ডা বাতাস বইছে. স্নিগ্ধার নিজেকে নিয়ে একটু খেলতে ইচ্ছা করলো. সে এবার নিজের ম্যাক্সির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে নিজের মাইতে চাপ দিলো. তার চোখ দুটো আবেশে বুজে এলো. তার আরেকটা হাত কখন যেন নিম্নাঙ্গে পৌঁছে গেছে. স্নিগ্ধা নিজের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে নিজেকে নিয়ে খেলতে লাগলো. ওই অন্ধকার পরিবেশে কতক্ষন ছিল সে খেয়াল নেই. তার আর ভয় করছেনা. সে নিজেকে নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত. সে নিজের মাইতে বোধহয় একটু জোরেই চাপ দিয়ে ছিল যার ফলে তার অজান্তেই তার ম্যাক্সি ভিজে উঠলো আর ম্যাক্সির ফাঁক দিয়ে টপ টপ করে দুধ বেরিয়ে নিচের আম গাছের শুকিয়ে খসে পরা পাতার ওপর পরতে লাগলো. এদিকে স্নিগ্ধা জানেইনা তার এই খেলা কেউ লক্ষ্য করছে. ছাদের দরজা জুড়ে একটা ছায়া. স্নিগ্ধার ওই একান্ত গোপনীয় কাজের সাক্ষী. স্নিগ্ধা ভাবছে এবার থামা উচিত কিন্তু এই দুস্টুমি করতে বিশেষ করে এই অন্ধকারে এই কাজটা করতে তার খুব ভালো লাগচ্ছে. না…. সে থামতে চায় না. হটাৎ নিচ থেকে একটা পায়ের শব্দ আর আওয়াজ – মা…. কি হলো তুমি নামছো? বুবাই !! স্নিগ্ধা কোনোরকমে নিজেকে শান্ত করে তাড়াতাড়ি কাপড় গুলো নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো. সেই ছায়া দরজার থেকে সরে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছে কখন. স্নিগ্ধা নেমে যেতেই সেই ছায়া আবার বেরিয়ে এলো. সে এগিয়ে গেলো সেই জায়গাটায় যেখানে একটু আগে স্নিগ্ধা দাঁড়িয়েছিল. এগিয়ে আসার সময় ছায়ার দু পায়ের মাঝে ফুলে থাকা অংশটা লুঙ্গির ওপর দিয়েই এদিক ওদিক দুলছিলো. এক নারীর অন্তরঙ্গ দুস্টুমি দেখে তার এই অবস্থায়. ছায়ার মুখে হাসি. কার্য সফল এর হাসি. সে নিজের মনে বললো : কাজ শুরু হয়ে গেছে. লকেট তার কাজ শুরু করে দিয়েছে. এবার শুধু রতন ওই ওষুধ এনে দিলেই কার্য সিদ্ধি. তখনি তার নজর পরলো ওই নীচে পড়ে থাকা আম পাতার ওপর. পাতাটার ওপর সাদা তরল. সে বুঝে গেলো ওটা কি. সে ওই পাতাটা তুলে নিয়ে জিভ বার করে ওই দুধ নিজের জিভে ঢাললো. তারপর পান করে নিলো সেটা. আহ কি সুস্বাদু! পাতাটা ফেলে দিলো আর সে নিজের লুঙ্গির ওই ফুলে থাকা অংশে হাত বোলাতে বোলাতে মনে মনে বললো : আর মাত্র দুদিন. তার পরেই ওই রূপসী আমার. ওকে দিয়েই আমার মনের সাধ মেটাবো. আমার চরম বিকৃত কাম লালসা পূর্ণ করবো ওই রূপসীকে দিয়েই. তবে আজ রাতে স্বপ্নে ওকে আমি ছিঁড়ে খাবো. আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই সুন্দরী. তারপরেই সে হাসতে হাসতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো.