- 26
- 31
- 19
RJ Redwan Sikder [ পর্ব :- ১ আমার নাম অভিষেক | আজ তোমাদের আমি এমন একটি ঘটনা বলবো যা আমি আমার নিজের চোখের সামনে দেখেছি | এই ঘটনাটি শুরু হয়ে যখন আমার বাবা বদলি হয়ে বেঙ্গল আর বিহারের বর্ডারের একটি গ্রামে | আমি তখন খুব ছোট ছিলাম সেই সময়ে | সেই গ্রামে আমার বাবা আগে চলে গেছিলো এবং আমার স্কুলের পরিক্ষা চলছিলো বলে আমি আর আমার মা বাবার সাথে তখন যেতে পারিনি |পরিক্ষার শেষ হওয়ার পড়েই আমাকে আর মাকে নিয়ে ঠাকুর দা বাবার সেই গ্রামে নিয়ে গেলো| বাবা আমাদের নিয়ে আসার জন্য স্টেশনে এসেছিলো| মালপত্র গাড়িতে তুলে আমাদেরকে বাবা নিয়ে গিয়ে তুললো একটি বাংলোতে |
আমার বাবা একজন সরকারী ইঞ্জিনিয়ার ছিলো এবং ইঞ্জিনিয়ারদের থাকার জন্য ওই গ্রামে বাংলো দেওয়া হতো এবং বাংলো গুলো বেশ বড় হতো| বাংলোর পাশে বড় বাগান থাকতো|আমার মা গ্রামে আসার পর থেকে গ্রামের বিভতসো গরম নিয়ে একটু গজর গজর করছিলো কিন্তু পরে আমাদের থাকার বাংলো এবং আসে পাশে দেখে আনন্দে বলে উঠলো-“আমি যতো তা খারাপ ভেবেছিলাম…অতটা খারাপ নয়ে.”
ঠাকুরদা আমাদেরকে ওখানে রেখে পরের দিন কলকাতার জন্য রয়না দিয়ে দিল |আমাদেরকে স্টেশন থেকে ওই বাংলোতে যে ব্যক্তি নিয়ে এসেছিলো গাড়িতে, সেই একই লোক আমার ঠাকুরদাকে স্টেশনে নিয়ে গেলো| লোকটি নাম ছিলো রঘু, তিরিশের নিচে বয়েস হবে| হাটটা গাট্টা পেশিদার শরীর ছিলো রঘুর ,গায়ের রং তামাটে ছিলো এবং বেশ পুরুষালি ছিলো| বাবাকে অফিস থেকে বাড়িতে এবং বাড়ি থেকে অফিসে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার কাজ ছিলো রঘুর|
এ ছাড়া আমাকে ওখানে যখন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো, সেই স্কুলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার পুরো দায়িত্ব ছিলো রঘুর| ওই গ্রামে বাজার হাট করতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিলো পুরো রঘুর| আমার মায়ের সাথে রঘুর ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিলো সময়ের সাথে| মাকে রঘু বৌদি বলে ডাকতো এবং মাকে একবার বলতে শুনেছিলাম রঘুকে সে তার ছোট ভাইয়ের মতো|
ওই বাংলোতে আরেক কাজের মাসি ছিলো| তার নাম ছিলো কমলা|কমলা মাসি আর মা সর্বদা গল্প করতো| কমলা মাসির কাছ থেকে মা প্রথম শুনেছিলো এই গ্রামের মেয়ের সংখা কম হওয়ার ব্যাপারে| এই গ্রামের মেয়েরা নাকি দুই তিন মরদের সাথে ঘর করে| সৌভাগ্য ক্রমে কমলা মাসির সেই দুর্ভাগ্য হয়েনি| মাকে বলতে শুনেছিলাম ভগবানের দয়ায়ে কুচ্ছিত হয়ে জন্মেছিলো বলে তার ভাগ্যে একের থেকে অধিক মরদ সামলানোর দয়িত্ব আর পড়েনি|
মা যদিও এই ব্যাপার গুলো বাবাকে জানিয়েছিলো| কমলা মাসি মাকে এও বলেছিলো যে মা যেনো এই গ্রামে একা কোথাও না যায়ে| গ্রামের এই নিরাপত্তার অভাবের ব্যাপারে মা বাবাকে জানানো সত্তেও বাবা তখন মায়ের কথা গ্রাহ্য করেনি প্রথমে এবং তার মাশুল আমাদের পরিবারকে ভবিষ্যতে দিতে হয়েছিলো|
আগেই বলেছিলাম আমাকে এখানে আসার পর এক স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিলো|সেই স্কুলে আমার প্রথম আলাপ হয়ে সুমন্ত সাথে|সুমন্ত আমার ক্লাসএ পরতো, বাকি ছেলেদের তুলনায়ে স্বভাবে ভালো ছিল এবং ভদ্র ছিল| স্কুলে অধিকাংশ ছেলেরা ওই গ্রামের ছেলে ছিল এবং বদমাশ অসভ্য ছিলো | সুমন্ত বাবা ওই গ্রামের গভর্নমেন্ট হাসপাতালে ডাক্তার ছিলো|
আমার স্কুল টা ভালো ছিলো না তা বাবা মা টের পেয়েছিলো এবং রোজ আমার পড়াশুনো নিয়ে মা আর বাবাকে কথা বলতে শুনতাম| মা স্কুলে ভর্তি করানোর সময়ে থেকে এক কথা বাবাকে বলে যেতো-“তোমার তো আগে একটু খোজ খবর নেওয়া দরকার ছিলো এই স্কুলে পড়াশুনোর ব্যাপার নিয়ে | বাবাই কে স্কুল টা ছাড়িয়ে নিয়ে আসা উচিত হয়েনি”
আমার বাড়ির নাম হচ্ছে বাবাই| মায়ের এই প্রশ্নে বাবা একি উত্তর দিতো যে তাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিলো এই গ্রামের পড়াশুনোর ব্যাপারে কিন্তু আমার পড়াশুনোর ব্যাপার নিয়ে কিছু সমাধান বেড়াচ্ছিলো না| কোনো সময়ে আমাকে হোস্টেলে পাঠানোর কথা হতো আর কোনো সময়ে কথা চলতো আমাকে কলকাতায়ে পাঠিয়ে দিয়ে দাদু আর দিদার দায়িত্বে দিয়ে দিতে | এরকমও ভাবা হয়েছিলো মা আমাকে নিয়ে কলকাতায়ে ফিরে যাবে কিন্তু এতে মায়ের প্রচন্ড আপত্তি ছিলো কারণ সে বাবাকে একা ছেড়ে যেতে চায়ছিলো না |যাই হোক শেষ পর্যন্ত রঘু কাকু গাড়ি করে রোজ স্কুল যাওয়া চলতে লাগলো আমার| স্কুলে আমার শুধু বন্ধুত্ব ছিলো সুমন্তের সাথে|
সুমন্তর সাথে কথা বলে বুঝতে পারতাম সুমন্ত প্রচন্ড রাগ ছিলো এই গ্রামের উপর| তার কারণ কি সেটা তখন টের পেতাম না|একদিন সুমন্তকে নিয়ে বাড়িতে গেলাম এবং ওর আমার মাকে বেশ পছন্দ হয়েছিলো| আমিও সুমন্তের বাড়িতে গেছিলাম এবং সেই সূত্রে আমার মায়ের সাথে সুমন্তের মায়ের আলাপ আর বন্ধুত্ব হয়ে এবং খুব শিগ্রোহী সেই বন্ধুত্ব গিয়ে দাড়ায়ে পারিবারিক বন্ধুত্যে|
গ্রামে তেমন ভাবে কাউকে চিনতাম না বলে সুমন্ত পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের মাঝে মধ্যে মেলা মেশা হতো| আমার বাবার সাথে সুমন্তর বাবা শেখর কাকুর ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিলো| কিন্তু আমার বাবার আর মায়ের কেনো যেনো মনে হতো সুমন্তের পরিবার কিছু একটা লোকাচ্ছে| এই বিষয়ে বাবা মায়ের মধ্যে কথা বলতে শুনতাম|
সুমন্তর সাথে বন্ধুত্ব বাড়তে সুমন্ত অনেক কথা আমাকে জানাতে শুরু করলো | ও একদিন আমাকে বলেছিলো এই স্কুলে অনেক ছেলে আছে যাদের বাবা আলাদা লোক কিন্তু মা এক | স্কুলে শংকর সেথ বলে আমাদের থেকে দু শ্রেণী উপরে একটি ছেলে সুমন্তকে একা পেলে নিজের বন্ধুদের সাথে ঘেরাও করে খুব নোংরা নোংরা কথা বলতো| সব কথা সুমন্তের মা শিখা কাকিমাকে নিয়ে বলতো এবং সুমন্ত মাঝে মধ্যে কেদে ফেলতো ওই সব শুনে কিন্তু কিছু বলতো না| আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতাম -“তুই টিচার কে কমপ্লেন করিস না কেন এই ব্যাপারে”
সুমন্ত আমাকে বাধা দিয়ে বলতো-“না …তুই জানিস না…ওর বাবা ভালো লোক নয়ে|”
আমি-“তুই এরকম ভয় পাস কেনো?”
সুমন্ত-“তুই বুঝবি না অভি…”
আমি-“তুই যদি কমপ্লেইন না করিস তাহলে আমি করবো..”
সুমন্ত-“কোনো লাভ নেই অভি…”
আমি সুমন্তের কথা না শুনে টিচার কে এই ব্যাপারে বললাম কিন্তু সে কিছুই করলো না| সুমন্তের কথা সত্যি হলো| একদিন শংকর সেথ তার বন্ধুদের সাথে সুমন্ত কে আবার যখন ঘেরাও করলো, আমি গিয়ে সুমন্তের পাশে দাড়ালাম| আমাকে ওরা পাত্তা না দিয়ে সুমন্তের পিছনে লাগতে শুরু করলো| আমি সহ্য না করতে পেরে শংকরকে ধাক্কা মারলাম| শংকর চেচিয়ে উঠলো-“কে রে তুই…অনেক দিন ধরে দেখছি ওস্তাদি মারছিস…নতুন এসছিস স্কুলে ….আগে যান আমি কে?”
শংকর আমাদের থেকে ২ ক্লাস উপরে পড়লেও বয়েসে আমার থেকে চার বছর বড় ছিলো| এর কারণ ছিলো দুই বছর ফেল করেছিলো একই ক্লাসে শংকর সেথ| আমি বলে বসলাম-“ওকে তোমরা জ্বালাবে না…”
শংকর সেথ আমাকে পাত্তা না দিয়ে-“ভাগ এখান থেকে ইদূর কথাকারের”
শংকর আমার থেকে সাস্থবান হওয়া সত্তেও আমাদের দুজনের মধ্যে মারপিট লেগে গেলো| শঙ্করকে বেশি মারার চেয়ে নিজে বেশি মার খেলাম ওর হাতে| শেষে টিচার এসে আমাদের দুজনকে ছাড়ালো| হেডমাস্টার আমাদের দুইজনের বাবা মাকে ডেকে পাঠালো| শঙ্করের হাতে মার খাওয়ার দাগ আমার মুখে দেখে মা বেশে রেগে গেছিলো| বাবাকে বলতে শুরু করলো-“একটা অশিক্ষিত অসভ্য জায়গায়ে নিয়ে এসেছো….ওই স্কুলে মানুষের ছেলে পড়াশুনো করে..সব গুন্ডার দল…এগুলো সব তোমার জন্য হয়েছে|”
বাবা আমতা আমতা করে বলল-“হেডমাস্টার তো বলল তোমার ছেলে তো কোমর বেধে মারপিট করছিলো এবং প্রথমে ওই শুরু করেছিলো|”
মা-“বাজে কথা বোলো না..আগে তো বাবাই কোনদিনও এরকম করেনি….বাবাই তো বলল সুমন্ত কে ওই ছেলেটা উল্টোপাল্টা বলছিলো বলে ও ওকে মেরেছে….”
বাবা-“যাই হোক…আমাকে এখন কাজ বাদ দিয়ে যেতে হবে..”
মা-“তোমাকে যেতে হবে না..আমি যাবো…রঘুকে বলবো নিয়ে যেতে আমাকে…” ] " চলবে "
আমার বাবা একজন সরকারী ইঞ্জিনিয়ার ছিলো এবং ইঞ্জিনিয়ারদের থাকার জন্য ওই গ্রামে বাংলো দেওয়া হতো এবং বাংলো গুলো বেশ বড় হতো| বাংলোর পাশে বড় বাগান থাকতো|আমার মা গ্রামে আসার পর থেকে গ্রামের বিভতসো গরম নিয়ে একটু গজর গজর করছিলো কিন্তু পরে আমাদের থাকার বাংলো এবং আসে পাশে দেখে আনন্দে বলে উঠলো-“আমি যতো তা খারাপ ভেবেছিলাম…অতটা খারাপ নয়ে.”
ঠাকুরদা আমাদেরকে ওখানে রেখে পরের দিন কলকাতার জন্য রয়না দিয়ে দিল |আমাদেরকে স্টেশন থেকে ওই বাংলোতে যে ব্যক্তি নিয়ে এসেছিলো গাড়িতে, সেই একই লোক আমার ঠাকুরদাকে স্টেশনে নিয়ে গেলো| লোকটি নাম ছিলো রঘু, তিরিশের নিচে বয়েস হবে| হাটটা গাট্টা পেশিদার শরীর ছিলো রঘুর ,গায়ের রং তামাটে ছিলো এবং বেশ পুরুষালি ছিলো| বাবাকে অফিস থেকে বাড়িতে এবং বাড়ি থেকে অফিসে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার কাজ ছিলো রঘুর|
এ ছাড়া আমাকে ওখানে যখন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো, সেই স্কুলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার পুরো দায়িত্ব ছিলো রঘুর| ওই গ্রামে বাজার হাট করতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিলো পুরো রঘুর| আমার মায়ের সাথে রঘুর ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিলো সময়ের সাথে| মাকে রঘু বৌদি বলে ডাকতো এবং মাকে একবার বলতে শুনেছিলাম রঘুকে সে তার ছোট ভাইয়ের মতো|
ওই বাংলোতে আরেক কাজের মাসি ছিলো| তার নাম ছিলো কমলা|কমলা মাসি আর মা সর্বদা গল্প করতো| কমলা মাসির কাছ থেকে মা প্রথম শুনেছিলো এই গ্রামের মেয়ের সংখা কম হওয়ার ব্যাপারে| এই গ্রামের মেয়েরা নাকি দুই তিন মরদের সাথে ঘর করে| সৌভাগ্য ক্রমে কমলা মাসির সেই দুর্ভাগ্য হয়েনি| মাকে বলতে শুনেছিলাম ভগবানের দয়ায়ে কুচ্ছিত হয়ে জন্মেছিলো বলে তার ভাগ্যে একের থেকে অধিক মরদ সামলানোর দয়িত্ব আর পড়েনি|
মা যদিও এই ব্যাপার গুলো বাবাকে জানিয়েছিলো| কমলা মাসি মাকে এও বলেছিলো যে মা যেনো এই গ্রামে একা কোথাও না যায়ে| গ্রামের এই নিরাপত্তার অভাবের ব্যাপারে মা বাবাকে জানানো সত্তেও বাবা তখন মায়ের কথা গ্রাহ্য করেনি প্রথমে এবং তার মাশুল আমাদের পরিবারকে ভবিষ্যতে দিতে হয়েছিলো|
আগেই বলেছিলাম আমাকে এখানে আসার পর এক স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিলো|সেই স্কুলে আমার প্রথম আলাপ হয়ে সুমন্ত সাথে|সুমন্ত আমার ক্লাসএ পরতো, বাকি ছেলেদের তুলনায়ে স্বভাবে ভালো ছিল এবং ভদ্র ছিল| স্কুলে অধিকাংশ ছেলেরা ওই গ্রামের ছেলে ছিল এবং বদমাশ অসভ্য ছিলো | সুমন্ত বাবা ওই গ্রামের গভর্নমেন্ট হাসপাতালে ডাক্তার ছিলো|
আমার স্কুল টা ভালো ছিলো না তা বাবা মা টের পেয়েছিলো এবং রোজ আমার পড়াশুনো নিয়ে মা আর বাবাকে কথা বলতে শুনতাম| মা স্কুলে ভর্তি করানোর সময়ে থেকে এক কথা বাবাকে বলে যেতো-“তোমার তো আগে একটু খোজ খবর নেওয়া দরকার ছিলো এই স্কুলে পড়াশুনোর ব্যাপার নিয়ে | বাবাই কে স্কুল টা ছাড়িয়ে নিয়ে আসা উচিত হয়েনি”
আমার বাড়ির নাম হচ্ছে বাবাই| মায়ের এই প্রশ্নে বাবা একি উত্তর দিতো যে তাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিলো এই গ্রামের পড়াশুনোর ব্যাপারে কিন্তু আমার পড়াশুনোর ব্যাপার নিয়ে কিছু সমাধান বেড়াচ্ছিলো না| কোনো সময়ে আমাকে হোস্টেলে পাঠানোর কথা হতো আর কোনো সময়ে কথা চলতো আমাকে কলকাতায়ে পাঠিয়ে দিয়ে দাদু আর দিদার দায়িত্বে দিয়ে দিতে | এরকমও ভাবা হয়েছিলো মা আমাকে নিয়ে কলকাতায়ে ফিরে যাবে কিন্তু এতে মায়ের প্রচন্ড আপত্তি ছিলো কারণ সে বাবাকে একা ছেড়ে যেতে চায়ছিলো না |যাই হোক শেষ পর্যন্ত রঘু কাকু গাড়ি করে রোজ স্কুল যাওয়া চলতে লাগলো আমার| স্কুলে আমার শুধু বন্ধুত্ব ছিলো সুমন্তের সাথে|
সুমন্তর সাথে কথা বলে বুঝতে পারতাম সুমন্ত প্রচন্ড রাগ ছিলো এই গ্রামের উপর| তার কারণ কি সেটা তখন টের পেতাম না|একদিন সুমন্তকে নিয়ে বাড়িতে গেলাম এবং ওর আমার মাকে বেশ পছন্দ হয়েছিলো| আমিও সুমন্তের বাড়িতে গেছিলাম এবং সেই সূত্রে আমার মায়ের সাথে সুমন্তের মায়ের আলাপ আর বন্ধুত্ব হয়ে এবং খুব শিগ্রোহী সেই বন্ধুত্ব গিয়ে দাড়ায়ে পারিবারিক বন্ধুত্যে|
গ্রামে তেমন ভাবে কাউকে চিনতাম না বলে সুমন্ত পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের মাঝে মধ্যে মেলা মেশা হতো| আমার বাবার সাথে সুমন্তর বাবা শেখর কাকুর ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিলো| কিন্তু আমার বাবার আর মায়ের কেনো যেনো মনে হতো সুমন্তের পরিবার কিছু একটা লোকাচ্ছে| এই বিষয়ে বাবা মায়ের মধ্যে কথা বলতে শুনতাম|
সুমন্তর সাথে বন্ধুত্ব বাড়তে সুমন্ত অনেক কথা আমাকে জানাতে শুরু করলো | ও একদিন আমাকে বলেছিলো এই স্কুলে অনেক ছেলে আছে যাদের বাবা আলাদা লোক কিন্তু মা এক | স্কুলে শংকর সেথ বলে আমাদের থেকে দু শ্রেণী উপরে একটি ছেলে সুমন্তকে একা পেলে নিজের বন্ধুদের সাথে ঘেরাও করে খুব নোংরা নোংরা কথা বলতো| সব কথা সুমন্তের মা শিখা কাকিমাকে নিয়ে বলতো এবং সুমন্ত মাঝে মধ্যে কেদে ফেলতো ওই সব শুনে কিন্তু কিছু বলতো না| আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতাম -“তুই টিচার কে কমপ্লেন করিস না কেন এই ব্যাপারে”
সুমন্ত আমাকে বাধা দিয়ে বলতো-“না …তুই জানিস না…ওর বাবা ভালো লোক নয়ে|”
আমি-“তুই এরকম ভয় পাস কেনো?”
সুমন্ত-“তুই বুঝবি না অভি…”
আমি-“তুই যদি কমপ্লেইন না করিস তাহলে আমি করবো..”
সুমন্ত-“কোনো লাভ নেই অভি…”
আমি সুমন্তের কথা না শুনে টিচার কে এই ব্যাপারে বললাম কিন্তু সে কিছুই করলো না| সুমন্তের কথা সত্যি হলো| একদিন শংকর সেথ তার বন্ধুদের সাথে সুমন্ত কে আবার যখন ঘেরাও করলো, আমি গিয়ে সুমন্তের পাশে দাড়ালাম| আমাকে ওরা পাত্তা না দিয়ে সুমন্তের পিছনে লাগতে শুরু করলো| আমি সহ্য না করতে পেরে শংকরকে ধাক্কা মারলাম| শংকর চেচিয়ে উঠলো-“কে রে তুই…অনেক দিন ধরে দেখছি ওস্তাদি মারছিস…নতুন এসছিস স্কুলে ….আগে যান আমি কে?”
শংকর আমাদের থেকে ২ ক্লাস উপরে পড়লেও বয়েসে আমার থেকে চার বছর বড় ছিলো| এর কারণ ছিলো দুই বছর ফেল করেছিলো একই ক্লাসে শংকর সেথ| আমি বলে বসলাম-“ওকে তোমরা জ্বালাবে না…”
শংকর সেথ আমাকে পাত্তা না দিয়ে-“ভাগ এখান থেকে ইদূর কথাকারের”
শংকর আমার থেকে সাস্থবান হওয়া সত্তেও আমাদের দুজনের মধ্যে মারপিট লেগে গেলো| শঙ্করকে বেশি মারার চেয়ে নিজে বেশি মার খেলাম ওর হাতে| শেষে টিচার এসে আমাদের দুজনকে ছাড়ালো| হেডমাস্টার আমাদের দুইজনের বাবা মাকে ডেকে পাঠালো| শঙ্করের হাতে মার খাওয়ার দাগ আমার মুখে দেখে মা বেশে রেগে গেছিলো| বাবাকে বলতে শুরু করলো-“একটা অশিক্ষিত অসভ্য জায়গায়ে নিয়ে এসেছো….ওই স্কুলে মানুষের ছেলে পড়াশুনো করে..সব গুন্ডার দল…এগুলো সব তোমার জন্য হয়েছে|”
বাবা আমতা আমতা করে বলল-“হেডমাস্টার তো বলল তোমার ছেলে তো কোমর বেধে মারপিট করছিলো এবং প্রথমে ওই শুরু করেছিলো|”
মা-“বাজে কথা বোলো না..আগে তো বাবাই কোনদিনও এরকম করেনি….বাবাই তো বলল সুমন্ত কে ওই ছেলেটা উল্টোপাল্টা বলছিলো বলে ও ওকে মেরেছে….”
বাবা-“যাই হোক…আমাকে এখন কাজ বাদ দিয়ে যেতে হবে..”
মা-“তোমাকে যেতে হবে না..আমি যাবো…রঘুকে বলবো নিয়ে যেতে আমাকে…” ] " চলবে "