• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Incest গৃহবধু : বাড়ির রক্ষাকর্ত্রী

Sreelanka

New Member
4
0
2
প্রিভিউ

ঢাকার অভিজাত এক শান্ত পাড়ায়, তিনতলা সাদা রঙের পুরনো নকশার একটি বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে রাজসিক ভঙ্গিতে। প্রবেশপথের লোহার গেট পেরিয়ে ঢুকলেই, পাকা পথ ধরে ফুলে ভরা ছোট্ট বাগান—গোলাপ, জুঁই আর বেলির গন্ধ মিশে থাকে বাতাসে। ভেতরে উঠোনের একপাশে গাড়ি রাখার শেড, অন্যপাশে রান্নাঘরের ছোট্ট পেছনের দরজা।

এই বাড়িতে থাকে চারজনের এক স্নিগ্ধ সংসার।

রিয়া (২৪)—শহরের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা এক মার্জিত, নরম স্বভাবের তরুণী। তার হাসি যেমন শান্ত, তেমনি চোখে লেগে থাকে এক অদৃশ্য মায়া। বিয়ের আগে জীবন কেটেছে আরাম আর স্নেহের ছায়ায়। বিয়ের ছয় মাস পেরোলেও রাতুলকে নিয়ে তার নতুন সংসারের আবেগ এখনও টাটকা। ঘরের সাজসজ্জা থেকে শুরু করে রান্নার আয়োজন—সবখানেই রিয়ার সূক্ষ্ম রুচির ছাপ মেলে।

রাতুল (২৭)—স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী, বাবার ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি নতুন নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে। অফিসের বাইরে রিয়াকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করে, আর দুজনের মিলের কারণে তাদের সম্পর্ক সহজ আর নির্ভেজাল।

মো. আজিম (৬২)—পরিবারের কর্তা, শান্ত কিন্তু দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মানুষ। ব্যবসায় অভিজ্ঞ, কথায় কম কিন্তু কাজে মনোযোগী। ছেলেকে দায়িত্ব শিখিয়ে দিতে চান, তবে মাঝে মাঝে পুরনো দিনের স্মৃতিতে হারিয়ে যান।

নাজমা বেগম (৫৫)—গৃহিণী, পরিবারের মমতার কেন্দ্র। রিয়াকে নিজের মেয়ে মনে করে, তার প্রতি যত্নে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য নেই। রিয়ার জন্য প্রিয় খাবার বানানো থেকে শুরু করে শাড়ির রঙ বাছাই—সবকিছুতেই তিনি মাতৃসুলভ আন্তরিকতা দেখান।

হরিশ (৫৬)—এই পরিবারের ড্রাইভার। গায়ের রং খুবই কালো, কিন্তু লম্বা ও শক্তসমর্থ গড়ন। গ্রামের মানুষ, সেখানেই বউ-বাচ্চা থাকে; বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেশি কথা বলে না, কিন্তু আচরণে এক ধরনের গম্ভীরতা আর অভ্যন্তরীণ রহস্য লুকিয়ে থাকে।

লতা (৩৮)—গৃহকর্মী। চটপটে, মুখে সবসময় ব্যস্ত ভাব, তবে মাঝে মাঝে ফাঁক পেলেই গসিপে মাতেন। হরিশের সাথে তার সম্পর্ক শুধুই পরিচিতি নয়—একই গ্রামের হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনের সখ্য আছে, আর গোপনে তারা একে অপরের কাছে আরও ঘনিষ্ঠ। লতাই একসময় হরিশকে এ বাড়িতে কাজের জন্য নিয়ে আসে।
পর্ব ১
সকালের আলো বড় জানালা দিয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকে পড়েছে। সাদা পর্দা হালকা বাতাসে দুলছে, আর টেবিলের উপর রাখা কাচের জগে কমলার রসের রঙ যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চারজনের সাজানো টেবিল—তাজা পরোটা, ডালপুরি, ডিম ভাজি, আর নাজমা বেগমের হাতে বানানো খাস্তা আলুর চপের গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
লতা ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্লেটে নাস্তা তুলে দিচ্ছে।
— “বড় সাহেব, এই নিন আপনার চপটা… আর আপার জন্যে ডালপুরি।”
রাতুল পরোটা কেটে রিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
— “এই যে ম্যাডাম, গতকাল কিন্তু আমি তিনবার বলেছিলাম লবণটা কম দিতে… তাও—”
রিয়া সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে ন্যাকামি ভঙ্গিতে বলল,
— “মা… দেখেন তো, কেমন খুঁত ধরা শুরু করেছে!”
নাজমা বেগম হাসি চেপে রাখলেন না।
— “খবরদার, আমার বৌমাকে নিয়ে একটাও কথা বলবি না! আমার বৌমা সেরা।”
রাতুল মুখে হাসি রেখে মায়ের দিকে তাকাল,
— “আচ্ছা আচ্ছা… এখন তো মনে হচ্ছে আমি একা হয়ে গেলাম এই সংসারে।”
সবার হাসির মধ্যে হঠাৎ বাইরের গেট থেকে ধাতব শব্দ শোনা গেল। তারপর ধীর পায়ের শব্দ, আর এক মুহূর্ত পরেই দরজার পাশে দাঁড়াল এক লম্বা, গাঢ় কালো মানুষ। তার মুখে অদ্ভুত গম্ভীরতা, চোখে গভীর দৃষ্টি। ধুলো লাগা নীল শার্ট, হাতের আঙুলে পুরনো সোনালি আংটি।
সবার দৃষ্টি একসঙ্গে তার দিকে ঘুরে গেল।
লতা থেমে গিয়ে দরজার দিকে তাকাল, তারপর হাসিমুখে বলল,
— “বড় মালিক, আপনি যে আনতে বলেছিলেন… এই হরিশ। আমাদের গ্রামের মানুষ।”
মো. আজিম চশমার ফাঁক দিয়ে মানুষটাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত লক্ষ্য করলেন।
— “হঁম… লম্বা তো বটে। ড্রাইভিং জানিস?”
হরিশ বিনম্র গলায় উত্তর দিল,
— “জানি, সাহেব। বিশ বছর গাড়ি চালাইছি।”
রিয়া চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে রইল, চোখে যেন একটু কৌতূহল। আর হরিশও, ভদ্রভাবে মাথা নিচু করলেও, এক মুহূর্তের জন্য তার কালো চোখ দুটো রিয়ার মুখে থেমে রইল।
ডাইনিং টেবিলে হঠাৎ যেন কিছুটা নীরবতা নেমে এলো—যেন নতুন কারও আগমনে ঘরের বাতাসেই বদল এসে গেছে।
পর্ব ২
সেদিন নাস্তার পরেই মি. আজিম বাইরে বেরোলেন হরিশকে নিয়ে। আঙিনায় দাঁড়িয়ে পুরনো সাদা মাইক্রোবাসটা দেখিয়ে বললেন—
— “চল, এক চক্কর দিয়ে আয় দেখি কেমন চালাস।”
হরিশ নীরবে দরজা খুলে ভেতরে বসল। লম্বা হাত দিয়ে স্টিয়ারিং ধরার ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছিল, সে গাড়ির সঙ্গে অপরিচিত নয়। ইঞ্জিন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একধরনের মসৃণ শব্দ উঠল—যেন অনেক দিন ধরে সে এই গাড়িটাই চালিয়ে আসছে।
মি. আজিম সামনে বসে নির্দেশ দিচ্ছিলেন,
— “এখান দিয়ে ঘুর… হ্যাঁ, ব্রেকটা টিপে দেখ… ভালো, এবার রিভার্স কর।”
ড্রাইভিং টেস্ট শেষ হতেই আজিম কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর গম্ভীর মুখে বললেন—
— “থাক, আর কাউকে খোঁজার দরকার হবে না।”
এরপর থেকে হরিশের সকাল শুরু হতো গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গাড়ি মুছে, তেলের মাত্রা চেক করে, আর কখনো কখনো নাজমা বেগমকে বাজারে পৌঁছে দিয়ে। বিকেলে মি. আজিমের সঙ্গে ব্যবসার কাজে বের হতো, আবার সন্ধ্যায় রাতুলকে অফিস থেকে আনত।
রিয়া মাঝে মাঝে বারান্দা থেকে তাকিয়ে দেখত—গাড়ির দরজা খুলে দেওয়ার সময় হরিশ মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে, কথা কম বলে, কিন্তু কাজে ভুল করে না।
এক মাস এভাবেই কেটে গেল। ধীরে ধীরে হরিশ হয়ে উঠল পরিবারের একজন বিশ্বস্ত মানুষ।
নাজমা বেগম নিশ্চিন্ত মনে বলতেন—
— “হরিশ থাকলে গাড়ি নিয়ে আমার আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই।”
লতাও খুশি—নিজ গ্রামের মানুষকে এনে কাজে লাগাতে পেরে যেন তার ভেতরে এক গোপন গর্ব। আর হরিশ… সব সময় দূরে দাঁড়িয়ে, চুপচাপ, কিন্তু পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অভ্যাস, যাতায়াতের সময়—সব যেন ধীরে ধীরে মুখস্থ করে নিচ্ছে।
পর্ব ৩
সেদিন রাতটা অস্বাভাবিক নীরব ছিল। দেয়াল ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে এগারো ছুঁইছুঁই, কিন্তু রাতুলের কোনো খোঁজ নেই। বিকেলে বের হওয়ার সময় বলেছিল— “আজ ফিরতে দেরি হবে, ঘুমিয়ে যেও।”
কিন্তু মোবাইলটা ভুলে রেখে গেছে টেবিলে—যার মানে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই।
রিয়া সোফায় বসে টিভির পর্দায় ফাঁকা চোখে তাকিয়ে ছিল। মাথায় নানা চিন্তা ঘুরছিল—রাতুল ঠিক আছে তো? কোথায় গেল? গাড়ি নষ্ট হলো নাকি? বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, জানলার কাঁচে টুপটাপ শব্দ পড়ছে।
উপরে শ্বাশুড়ির রুম থেকে ভেসে আসছে নিয়মিত নাক ডাকার শব্দ—নাজমা বেগম একবার ঘুমিয়ে পড়লে সহজে জাগেন না। শ্বশুর তো ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে।
ডুপ্লেক্স বাড়ির ভেতরে যেন এক অদ্ভুত ফাঁকা ভাব নেমে এসেছে। রিয়া উঠে দাঁড়াল। নিজের রুমের বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখল—গেটের বাইরে রাস্তাটা ফাঁকা, স্ট্রিটলাইটের আলোয় শুধু হালকা কুয়াশা ভাসছে।
কিছুক্ষণ দ্বিধা করে সে নিচের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। নিচতলার একপাশে লতার ছোট্ট ঘর—দরজা বন্ধ, ভেতরে কোনো শব্দ নেই। অন্যপাশে, করিডরের শেষ মাথায় হরিশের ঘর। কাঠের পুরনো দরজাটা আধো আঁধারে দাঁড়িয়ে আছে, দরজার সামনে ছোট্ট বাল্ব জ্বলছে ম্লান আলোয়।
রিয়ার বুকের ভেতর কেমন এক ধরণের টান অনুভূত হচ্ছিল—চিন্তা, কৌতূহল আর একটুখানি দ্বিধা মিশ্রিত। সে হাত তুলে ধীরে ধীরে টোক টোক করে নক করল।
নীরবতা।
তারপর ভেতর থেকে ধীর কণ্ঠে গম্ভীর একটা শব্দ—
— “কেডারে?”
রিয়া হালকা গলায় বলল,
— “আমি… রিয়া। একটু দরজা খুলবেন?”
দরজার ভেতর থেকে তালার শব্দ, তারপর ধীরে ধীরে দরজা ফাঁক হলো। ম্লান আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা হরিশের মুখে একরাশ ঘুমঘুম ভাব, কিন্তু চোখ দুটো অদ্ভুতভাবে সজাগ।
— “কী হয়েছেরে? রাতে কি হয়েছে, তোরা কি আমাকে কিনে নিয়েছিস?যখন ইচ্ছা তখন কাজ করব”
আসলে হরি ঘুমের মধ্যে কাওকে চিনে না, ঘুম কেও ডাক দিলে সে রেগে যায়।
রিয়া এক মুহূর্ত তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর নিচু স্বরে বলল—
— “আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন? রাতুল এখনো ফিরে নি, তাই আমি চিন্তা করছি।”
---”তোর স্বামী আমাকে বলেছে চলে আসতে, তার আজ বিদেশি পার্টির সাথে মিটিং।“
হরিশ রিয়ার সামনে গেইট বন্ধ করে দেয় জোরে। রিয়া খুব অপমানিত বোধ করে এবং রাগে সে ফায়ার হয়ে যায়।?
 

sdfara

New Member
62
25
19
hi
প্রিভিউ

ঢাকার অভিজাত এক শান্ত পাড়ায়, তিনতলা সাদা রঙের পুরনো নকশার একটি বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে রাজসিক ভঙ্গিতে। প্রবেশপথের লোহার গেট পেরিয়ে ঢুকলেই, পাকা পথ ধরে ফুলে ভরা ছোট্ট বাগান—গোলাপ, জুঁই আর বেলির গন্ধ মিশে থাকে বাতাসে। ভেতরে উঠোনের একপাশে গাড়ি রাখার শেড, অন্যপাশে রান্নাঘরের ছোট্ট পেছনের দরজা।

এই বাড়িতে থাকে চারজনের এক স্নিগ্ধ সংসার।

রিয়া (২৪)—শহরের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা এক মার্জিত, নরম স্বভাবের তরুণী। তার হাসি যেমন শান্ত, তেমনি চোখে লেগে থাকে এক অদৃশ্য মায়া। বিয়ের আগে জীবন কেটেছে আরাম আর স্নেহের ছায়ায়। বিয়ের ছয় মাস পেরোলেও রাতুলকে নিয়ে তার নতুন সংসারের আবেগ এখনও টাটকা। ঘরের সাজসজ্জা থেকে শুরু করে রান্নার আয়োজন—সবখানেই রিয়ার সূক্ষ্ম রুচির ছাপ মেলে।

রাতুল (২৭)—স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী, বাবার ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি নতুন নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে। অফিসের বাইরে রিয়াকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করে, আর দুজনের মিলের কারণে তাদের সম্পর্ক সহজ আর নির্ভেজাল।

মো. আজিম (৬২)—পরিবারের কর্তা, শান্ত কিন্তু দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মানুষ। ব্যবসায় অভিজ্ঞ, কথায় কম কিন্তু কাজে মনোযোগী। ছেলেকে দায়িত্ব শিখিয়ে দিতে চান, তবে মাঝে মাঝে পুরনো দিনের স্মৃতিতে হারিয়ে যান।

নাজমা বেগম (৫৫)—গৃহিণী, পরিবারের মমতার কেন্দ্র। রিয়াকে নিজের মেয়ে মনে করে, তার প্রতি যত্নে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য নেই। রিয়ার জন্য প্রিয় খাবার বানানো থেকে শুরু করে শাড়ির রঙ বাছাই—সবকিছুতেই তিনি মাতৃসুলভ আন্তরিকতা দেখান।

হরিশ (৫৬)—এই পরিবারের ড্রাইভার। গায়ের রং খুবই কালো, কিন্তু লম্বা ও শক্তসমর্থ গড়ন। গ্রামের মানুষ, সেখানেই বউ-বাচ্চা থাকে; বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেশি কথা বলে না, কিন্তু আচরণে এক ধরনের গম্ভীরতা আর অভ্যন্তরীণ রহস্য লুকিয়ে থাকে।

লতা (৩৮)—গৃহকর্মী। চটপটে, মুখে সবসময় ব্যস্ত ভাব, তবে মাঝে মাঝে ফাঁক পেলেই গসিপে মাতেন। হরিশের সাথে তার সম্পর্ক শুধুই পরিচিতি নয়—একই গ্রামের হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনের সখ্য আছে, আর গোপনে তারা একে অপরের কাছে আরও ঘনিষ্ঠ। লতাই একসময় হরিশকে এ বাড়িতে কাজের জন্য নিয়ে আসে।
পর্ব ১
সকালের আলো বড় জানালা দিয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকে পড়েছে। সাদা পর্দা হালকা বাতাসে দুলছে, আর টেবিলের উপর রাখা কাচের জগে কমলার রসের রঙ যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চারজনের সাজানো টেবিল—তাজা পরোটা, ডালপুরি, ডিম ভাজি, আর নাজমা বেগমের হাতে বানানো খাস্তা আলুর চপের গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
লতা ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্লেটে নাস্তা তুলে দিচ্ছে।
— “বড় সাহেব, এই নিন আপনার চপটা… আর আপার জন্যে ডালপুরি।”
রাতুল পরোটা কেটে রিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
— “এই যে ম্যাডাম, গতকাল কিন্তু আমি তিনবার বলেছিলাম লবণটা কম দিতে… তাও—”
রিয়া সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে ন্যাকামি ভঙ্গিতে বলল,
— “মা… দেখেন তো, কেমন খুঁত ধরা শুরু করেছে!”
নাজমা বেগম হাসি চেপে রাখলেন না।
— “খবরদার, আমার বৌমাকে নিয়ে একটাও কথা বলবি না! আমার বৌমা সেরা।”
রাতুল মুখে হাসি রেখে মায়ের দিকে তাকাল,
— “আচ্ছা আচ্ছা… এখন তো মনে হচ্ছে আমি একা হয়ে গেলাম এই সংসারে।”
সবার হাসির মধ্যে হঠাৎ বাইরের গেট থেকে ধাতব শব্দ শোনা গেল। তারপর ধীর পায়ের শব্দ, আর এক মুহূর্ত পরেই দরজার পাশে দাঁড়াল এক লম্বা, গাঢ় কালো মানুষ। তার মুখে অদ্ভুত গম্ভীরতা, চোখে গভীর দৃষ্টি। ধুলো লাগা নীল শার্ট, হাতের আঙুলে পুরনো সোনালি আংটি।
সবার দৃষ্টি একসঙ্গে তার দিকে ঘুরে গেল।
লতা থেমে গিয়ে দরজার দিকে তাকাল, তারপর হাসিমুখে বলল,
— “বড় মালিক, আপনি যে আনতে বলেছিলেন… এই হরিশ। আমাদের গ্রামের মানুষ।”
মো. আজিম চশমার ফাঁক দিয়ে মানুষটাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত লক্ষ্য করলেন।
— “হঁম… লম্বা তো বটে। ড্রাইভিং জানিস?”
হরিশ বিনম্র গলায় উত্তর দিল,
— “জানি, সাহেব। বিশ বছর গাড়ি চালাইছি।”
রিয়া চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে রইল, চোখে যেন একটু কৌতূহল। আর হরিশও, ভদ্রভাবে মাথা নিচু করলেও, এক মুহূর্তের জন্য তার কালো চোখ দুটো রিয়ার মুখে থেমে রইল।
ডাইনিং টেবিলে হঠাৎ যেন কিছুটা নীরবতা নেমে এলো—যেন নতুন কারও আগমনে ঘরের বাতাসেই বদল এসে গেছে।
পর্ব ২
সেদিন নাস্তার পরেই মি. আজিম বাইরে বেরোলেন হরিশকে নিয়ে। আঙিনায় দাঁড়িয়ে পুরনো সাদা মাইক্রোবাসটা দেখিয়ে বললেন—
— “চল, এক চক্কর দিয়ে আয় দেখি কেমন চালাস।”
হরিশ নীরবে দরজা খুলে ভেতরে বসল। লম্বা হাত দিয়ে স্টিয়ারিং ধরার ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছিল, সে গাড়ির সঙ্গে অপরিচিত নয়। ইঞ্জিন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একধরনের মসৃণ শব্দ উঠল—যেন অনেক দিন ধরে সে এই গাড়িটাই চালিয়ে আসছে।
মি. আজিম সামনে বসে নির্দেশ দিচ্ছিলেন,
— “এখান দিয়ে ঘুর… হ্যাঁ, ব্রেকটা টিপে দেখ… ভালো, এবার রিভার্স কর।”
ড্রাইভিং টেস্ট শেষ হতেই আজিম কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর গম্ভীর মুখে বললেন—
— “থাক, আর কাউকে খোঁজার দরকার হবে না।”
এরপর থেকে হরিশের সকাল শুরু হতো গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গাড়ি মুছে, তেলের মাত্রা চেক করে, আর কখনো কখনো নাজমা বেগমকে বাজারে পৌঁছে দিয়ে। বিকেলে মি. আজিমের সঙ্গে ব্যবসার কাজে বের হতো, আবার সন্ধ্যায় রাতুলকে অফিস থেকে আনত।
রিয়া মাঝে মাঝে বারান্দা থেকে তাকিয়ে দেখত—গাড়ির দরজা খুলে দেওয়ার সময় হরিশ মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে, কথা কম বলে, কিন্তু কাজে ভুল করে না।
এক মাস এভাবেই কেটে গেল। ধীরে ধীরে হরিশ হয়ে উঠল পরিবারের একজন বিশ্বস্ত মানুষ।
নাজমা বেগম নিশ্চিন্ত মনে বলতেন—
— “হরিশ থাকলে গাড়ি নিয়ে আমার আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই।”
লতাও খুশি—নিজ গ্রামের মানুষকে এনে কাজে লাগাতে পেরে যেন তার ভেতরে এক গোপন গর্ব। আর হরিশ… সব সময় দূরে দাঁড়িয়ে, চুপচাপ, কিন্তু পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অভ্যাস, যাতায়াতের সময়—সব যেন ধীরে ধীরে মুখস্থ করে নিচ্ছে।
পর্ব ৩
সেদিন রাতটা অস্বাভাবিক নীরব ছিল। দেয়াল ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে এগারো ছুঁইছুঁই, কিন্তু রাতুলের কোনো খোঁজ নেই। বিকেলে বের হওয়ার সময় বলেছিল— “আজ ফিরতে দেরি হবে, ঘুমিয়ে যেও।”
কিন্তু মোবাইলটা ভুলে রেখে গেছে টেবিলে—যার মানে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই।
রিয়া সোফায় বসে টিভির পর্দায় ফাঁকা চোখে তাকিয়ে ছিল। মাথায় নানা চিন্তা ঘুরছিল—রাতুল ঠিক আছে তো? কোথায় গেল? গাড়ি নষ্ট হলো নাকি? বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, জানলার কাঁচে টুপটাপ শব্দ পড়ছে।
উপরে শ্বাশুড়ির রুম থেকে ভেসে আসছে নিয়মিত নাক ডাকার শব্দ—নাজমা বেগম একবার ঘুমিয়ে পড়লে সহজে জাগেন না। শ্বশুর তো ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে।
ডুপ্লেক্স বাড়ির ভেতরে যেন এক অদ্ভুত ফাঁকা ভাব নেমে এসেছে। রিয়া উঠে দাঁড়াল। নিজের রুমের বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখল—গেটের বাইরে রাস্তাটা ফাঁকা, স্ট্রিটলাইটের আলোয় শুধু হালকা কুয়াশা ভাসছে।
কিছুক্ষণ দ্বিধা করে সে নিচের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। নিচতলার একপাশে লতার ছোট্ট ঘর—দরজা বন্ধ, ভেতরে কোনো শব্দ নেই। অন্যপাশে, করিডরের শেষ মাথায় হরিশের ঘর। কাঠের পুরনো দরজাটা আধো আঁধারে দাঁড়িয়ে আছে, দরজার সামনে ছোট্ট বাল্ব জ্বলছে ম্লান আলোয়।
রিয়ার বুকের ভেতর কেমন এক ধরণের টান অনুভূত হচ্ছিল—চিন্তা, কৌতূহল আর একটুখানি দ্বিধা মিশ্রিত। সে হাত তুলে ধীরে ধীরে টোক টোক করে নক করল।
নীরবতা।
তারপর ভেতর থেকে ধীর কণ্ঠে গম্ভীর একটা শব্দ—
— “কেডারে?”
রিয়া হালকা গলায় বলল,
— “আমি… রিয়া। একটু দরজা খুলবেন?”
দরজার ভেতর থেকে তালার শব্দ, তারপর ধীরে ধীরে দরজা ফাঁক হলো। ম্লান আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা হরিশের মুখে একরাশ ঘুমঘুম ভাব, কিন্তু চোখ দুটো অদ্ভুতভাবে সজাগ।
— “কী হয়েছেরে? রাতে কি হয়েছে, তোরা কি আমাকে কিনে নিয়েছিস?যখন ইচ্ছা তখন কাজ করব”
আসলে হরি ঘুমের মধ্যে কাওকে চিনে না, ঘুম কেও ডাক দিলে সে রেগে যায়।
রিয়া এক মুহূর্ত তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর নিচু স্বরে বলল—
— “আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন? রাতুল এখনো ফিরে নি, তাই আমি চিন্তা করছি।”
---”তোর স্বামী আমাকে বলেছে চলে আসতে, তার আজ বিদেশি পার্টির সাথে মিটিং।“
হরিশ রিয়ার সামনে গেইট বন্ধ করে দেয় জোরে। রিয়া খুব অপমানিত বোধ করে এবং রাগে সে ফায়ার হয়ে যায়।?
hi
 
  • Like
Reactions: Sreelanka

Sreelanka

New Member
4
0
2
পর্ব ৪
রুমে ফিরে এসে রিয়ার গা জ্বলে যাচ্ছিল। হরিশের রূঢ় আচরণ আর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার দৃশ্য যেন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
— “এই লোকটার সাহস কত! আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলে!”
বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করল, কিন্তু ঘুম আসছিল না। জানলার বাইরে বৃষ্টির শব্দ ধীরে ধীরে থেমে এলো, তবুও মনে হচ্ছিল বুকের ভেতরে একধরনের শব্দ বাজছে—রাগ আর অপমানের মিলেমিশে থাকা এক অস্থিরতা। শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে চোখ লেগে গেল।
সকালবেলা, কাঁধে হালকা স্পর্শে রিয়া চমকে উঠে চোখ খুলল।
— “উঠো… সকাল হয়ে গেছে।”
রাতুল বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে হাসছে। চুলে হালকা ভেজাভাব, হয়তো সবে ফ্রেশ হয়ে এসেছে।
রিয়া আধো ঘুমে বলল,
— “তুমি কবে এলে?”
— “দেরি করেই এসেছি… তুমি তখন ঘুমিয়ে ছিলে।”
— “ডাকোনি কেন?”
রাতুল মৃদু হাসল, হাত দিয়ে তার চুলে আলতো করে ছুঁয়ে বলল,
— “বউয়ের এত সুন্দর ঘুম ভাঙতে মন চাইল না।”
রিয়ার মনে অজান্তে একটু নরম ভাব এলো, তবে রাতের ঘটনাটা এখনও কাঁটার মতো বিঁধে ছিল।
নাস্তার টেবিলে নাজমা বেগমের বানানো গরম লুচি, ডিমের কারি, চা—সব মিলে সকালটা যেন বেশ প্রাণবন্ত। তবে রিয়ার মন বারবার রাতের দিকে ফিরে যাচ্ছিল।
খাওয়ার সময় রাতুল বলল,
— “আজ অফিসে যাচ্ছি না। তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।”
— “ভালো তো… তবে গাড়ি কে চালাবে?”
— “হরিশকে ডাকব।”
হরিশের নাম শুনতেই রিয়ার হাতের চামচ থমকে গেল। মনে পড়ল রাতের কথা—দরজা বন্ধ করার সেই মুহূর্ত, তার মুখের রূঢ়তা। বুকের ভেতরে আবার রাগের স্রোত বয়ে গেল।
অল্প সময় পরেই গেট দিয়ে হরিশ ভেতরে এলো। পরিপাটি শার্ট, মাথায় আঁচড়ানো চুল, কিন্তু তার সেই কালো চোখে আজও আগের মতো স্থির দৃষ্টি।
রিয়া টেবিল থেকে তাকিয়ে রইল—চোখে স্পষ্ট বিরক্তি, আর মনে যেন প্রতিজ্ঞা—
“আজ আমি ওর সঙ্গে অত সহজে কথা বলব না।”
পর্ব ৫
পরে হরিশকে রাতুল গাড়ি ধোয়ার নির্দেশ দেয়।
সকালবেলার রোদ ঝলমলে, আকাশে হালকা সাদা মেঘ ভাসছে। গেটের সামনে হরিশ গাড়ি ধুয়ে চকচকে করে রেখেছে। ইঞ্জিন চালু করে দরজা খুলে দাঁড়িয়েছে, মুখে ভদ্রতাপূর্ণ হাসি—যেন কাল রাতের ঘটনাটা ঘটেইনি।
রিয়া একবার তাকাল, ঠোঁটে কোনো কথা নেই, শুধু চোখে ঠান্ডা অবজ্ঞা।
রাতুল এসে বলল,
— “চলো, বের হবো। আজ শুধু আমরা দু’জন।”
গাড়িতে উঠে রিয়া ব্যাগটা কোলে রাখল, আর রাতুল স্টিয়ারিংয়ের পেছনে বসা হরিশকে নির্দেশ দিল,
— “গুলশান দিয়ে বনানীর দিকে চালাও।”
রাস্তায় বের হতেই রাতুল রিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
— “জানো, তোমাকে নিয়ে বের হলেই মনে হয় পুরো শহরটা যেন আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।”
রিয়া চোখ সরিয়ে জানলার বাইরে তাকাল,
— “আহা… নাটক করো না।”
— “নাটক নয়, সত্যি বলছি। তুমি সবচেয়ে সুন্দর।”
রিয়া কাঁধ ঝাঁকাল, একটু খোঁচা মেরে বলল,
— “হ্যাঁ, যেন আর কোনো মেয়ে নেই দুনিয়ায়!”
রাতুল হাসতে হাসতে সামনে বসা হরিশের দিকে তাকাল,
— “আচ্ছা, হরিশ… তোমার কি মনে হয়, সবচেয়ে সুন্দর নারী কে?”
হরিশ সামনের আয়নায় রিয়ার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে শান্ত গলায় বলল,
— “মেমসাহেব… তিনি দেবীর মত সুন্দর। এমন দেবীর পূজা করতে কোন পুরুষ চাইবে না?”
গাড়ির ভেতর হঠাৎ যেন কয়েক সেকেন্ড নীরব হয়ে গেল।
রাতুল হেসে বলল,
— “দেখো, আমি একাই বলছি না।”
কিন্তু রিয়ার বুকের ভেতরে হরিশের এই সরাসরি মন্তব্য কেমন যেন কাঁটার মতো বিঁধে গেল। ঠোঁট শক্ত করে বসে রইল সে, চোখে স্পষ্ট রাগের ছায়া।
বাইরে শহরের রোদ ঝিলমিল করছিল, কিন্তু রিয়ার মনে যেন কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে।
পর্ব ৬
ব্যস্ত সড়কে গাড়ি এসে থামল এক নামকরা ব্যাংকের সামনে।
রাতুল রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
— “তুমি আর হরিশ এখানে বসো, আমি একটু কাজ সেরে আসছি।”
গাড়ির দরজা খুলে সে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে গেল। বাইরে তখন দুপুরের হালকা রোদ, রাস্তায় মানুষের ভিড়, আর গাড়ির ভেতরে এক চাপা নীরবতা।
হরিশ স্টিয়ারিংয়ের ওপর হাত রেখে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে। রিয়া চুপচাপ বসে ছিল, কিন্তু বুকের ভেতরের অস্বস্তি আর রাগ তাকে বেশি সময় চুপ থাকতে দিল না।
— “আপনি জানেন, কাল রাতে আমাকে আপনি অপমান করেছেন। আজও ক্ষমা চাননি।”
হরিশ ধীরে তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
— “আমি কখনো ক্ষমা চাই না কারো কাছে। তুমি আমার বয়সে মেয়ের থেকেও ছোট। আর কাল রাতে আমি কিছু ভুল করিনি—ঘুম থেকে ডাকার জন্য রেগে গিয়েছিলাম, ওই পর্যন্তই।”
রিয়া ভ্রু কুঁচকাল,
— “তাহলে আজ? আজ আমার স্বামীর সামনে এমন বাজে কথা বললেন কেন?”
হরিশ ঠোঁটে এক হালকা হাসি টেনে বলল,
— “আজ আমি কোনো বাজে কথা বলিনি। আমি শুধু এক নারীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছি। সেটা তো অপরাধ নয়।”
রিয়ার চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি জমল, কথা বলতে যাবে—ঠিক তখনই জানলার পাশে এক কচি গলার শব্দ,
— “সাহেব… ফুল নেন না? আপনার ভালোবাসাকে দিন। আপনাদের খুব সুন্দর লাগছে।”
এক ছোট্ট মালিনী, হাতে লাল গোলাপের গুচ্ছ, দাঁড়িয়ে মিষ্টি করে হাসছে। তার কথায় যেন মুহূর্তের জন্য গাড়ির ভেতরের উত্তেজনা থেমে গেল।
হরিশের চোখে ক্ষণিকের কৌতুকমাখা ঝিলিক দেখা গেল। সে যেন কিছু বলার জন্য ঠোঁট সামান্য খুলল, কিন্তু রিয়ার দৃষ্টি তার দিকে এমন ছিল—যেন কোনো শব্দই উচ্চারণ করার সাহস সে পায় না।
পর্ব ৭
হরিশ পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে ফুলওয়ালির হাতে দিল। লাল গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে সে হঠাৎ রিয়ার দিকে ছুঁড়ে মারল।
ফুলগুলো রিয়ার কোলের ওপর এসে পড়ল, কয়েকটা পাপড়ি গড়িয়ে মেঝেতে পড়ল।
রিয়ার মুখ লাল হয়ে উঠল রাগে।
— “এটা কি ধরনের অসভ্যতামি!”
হরিশ গম্ভীর কিন্তু ধীর স্বরে বলল,
— “আমি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারীকে দিলাম। এতে অসভ্যতামি কোথায়?”
রিয়ার বুকের ভেতর হঠাৎ যেন কিছু নড়েচড়ে উঠল—তার প্রশংসার কথা শুনে একটা অদ্ভুত আনন্দ কেমন যেন ছুঁয়ে গেল তাকে। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ না করে কঠোর গলায় বলল,
— “এই অধিকার আপনার নেই। আর এভাবে ফুল দেওয়া যায় না।”
হরিশ ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে বলল,
— “পরের বার ভালো করে দেব।”
রিয়া চোখ কুঁচকে তাকাল,
— “আপনি সীমা অতিক্রম করছেন।”
ঠিক তখনই গাড়ির গেট খোলার শব্দ শোনা গেল। রাতুল ব্যাংক থেকে ফিরে এসে গাড়িতে বসল।
— “কি নিয়ে এত কথা?”
হরিশ মুচকি হেসে বলল,
— “কিছু না… মাইয়া মানুষের তো অনেক কথা।”
রাতুল মজা করে বলল,
— “এত জলদি হাঁপিয়ে গেছ? চিন্তা কর আমার কথা।”
রিয়া তার কাঁধে হালকা চড় মেরে রাগ দেখাল, কিন্তু চোখে ছিল মৃদু হাসি।
স্টিয়ারিংয়ের পেছনে বসা হরিশ চুপচাপ গাড়ি চালু করল, ইঞ্জিনের গর্জন ভেতরের অস্বস্তি আর অদ্ভুত আবহটাকে ঢেকে দিল।
পর্ব ৮
সেদিনের পর অনেক কিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেল। রিয়া আর রাতুল প্রায়ই বাইরে যায়—কখনো শহরের নতুন ক্যাফে, কখনো পার্ক, আবার কখনো রেস্টুরেন্টে একসাথে খাওয়া।
গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হরিশ থাকলেও, রিয়া আর তার মধ্যে খুব বেশি কথা হয় না—শুধু প্রয়োজনমতো কয়েকটি শব্দের বিনিময়।
দিন কেটে যায়, মাস খানেক এমনভাবেই চলে।
এদিকে লতার সঙ্গে হরিশের গোপন দেখা-সাক্ষাৎ যেন ক্রমে কমে আসছে। একদিন রান্নাঘরের এক কোণে ফাঁকা সময় পেয়ে লতা গম্ভীর গলায় বলল,
— “হরিশ, আমি আর এভাবে লুকিয়ে দেখা করতে পারব না। কেউ জানলে খুব বিপদ হবে।”
হরিশ চোয়াল শক্ত করল, চোখে চাপা রাগের ঝিলিক দেখা গেল। তবুও ধীর স্বরে বলল না কিছু—শুধু মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাল।
কারণ সে জানে, লতার কথায় যুক্তি আছে।
ওই মাসের শুরুতে একবার নাজমা বেগমের হাতে প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিল সে—পোর্টে লতার কাছ থেকে কিছু নিতে গিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে নাজমা বেগমের সরলতা আর অপ্রশ্নকারী স্বভাব তাকে বাঁচিয়ে দেয়।
এরপর আরও এক মাস কেটে গেল।
বাড়ির প্রতিদিনের জীবন যেন আগের মতোই হয়ে যায়।
 

Sreelanka

New Member
4
0
2
পর্ব ৯
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। বাসার চারপাশ নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে দূরে কোনো কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। রিয়া হালকা নড়েচড়ে উঠে দেখে রাতুল গভীর ঘুমে। তার বুকের ওপর এক হাত ছড়িয়ে রেখেছে। রিয়ার শ্বাস কিছুটা ভারী লাগছিল, গরমে যেন ঘরে বাতাস কম।
সে ধীরে ধীরে রাতুলের হাত সরিয়ে উঠে বসে। চাদরটা কাঁধ থেকে সরিয়ে পা মেঝেতে রাখে। পায়ের পাতায় ঠান্ডা টাইলসের ছোঁয়া লাগতেই কেমন শিহরণ জাগে। সে আলতো পায়ে দরজা ঠেলে বারান্দায় চলে আসে।
বারান্দায় পা রাখতেই একটা ঠান্ডা হাওয়া মুখে এসে লাগে। সে একটু গভীর শ্বাস নিল। চারপাশে আধো অন্ধকার, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো কেবল সামনের গলিটা ছুঁয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ নিচতলার গেটের পাশে দুইটা অবয়ব চোখে পড়ে। রিয়া খানিকটা ঝুঁকে দেখে—
একজন হরিশ, আরেকজন অচেনা লোক। ওই অপরিচিত লোকটার মাথায় টুপি, গায়ের ওপর গাঢ় রঙের জ্যাকেট। তারা নিচু স্বরে কথা বলছে।
রিয়া মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলেও স্পষ্ট শুনতে পেল না, কেবল কিছু শব্দ—
"আজ ধরা পরতে পরতে বেঁচে গেছি... সাবধানে কাজ করতে হবে..."
দেখে সে অবাক হয়ে গেল—হরিশ একটা ছোট কাপড়ের পোটলা সেই লোকটার হাতে দিল। লোকটা দ্রুত সেটা জ্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে নিল।
রিয়ার মনে কেমন অস্বস্তি হলো। "এতো রাতে গোপনে কেন? আর এই পোটলায় কী থাকতে পারে?"—মনে মনে ভাবল সে।
লোকটা দ্রুত চলে গেল, হরিশ চারপাশে তাকিয়ে গেটের তালা লাগিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল। রিয়া বারান্দা থেকে সরে এসে ভেতরে চলে যায়, যেন কিছুই দেখেনি। কিন্তু ঘুম আর আসে না।
পরদিন সকালে, বাসার ভেতর চেনা ব্যস্ততা। নাজমা বেগম সোফায় বসে আছেন সেলাই করছেন, রঙিন কাপড়ের কাজ করছেন।
লতা রান্নাঘর থেকে এসে বসার ঘরে ঢোকে।
লতা: "বৌমা, এই চায়ের কাপটা শাশুড়ি মায়ের কাছে দিয়ে আসেন তো, আমি আলু ভাজি দেখি।"
রিয়া: "ঠিক আছে, দিচ্ছি।"
রিয়া চা দিয়ে বসে গেল শাশুড়ির পাশে।
নাজমা বেগম: "রাতুলের শার্টগুলো কাল ইস্ত্রি হয়ে গেছিল তো?"
রিয়া: "হ্যাঁ মা, হয়ে গেছে।"
এ সময় লতা বসে আলতো করে কথা শুরু করল।
লতা: "এই বেগম, কাল রাতে আবার বাতাস কেমন ঠান্ডা ছিল না? জানালা দিয়ে ঢুকছিল..."
নাজমা বেগম: "হুম, গরমে ভালোই লাগছিল।"
রিয়া: (হালকা হাসি দিয়ে) "আমিও রাতে বারান্দায় গিয়েছিলাম।"
লতা একটু থেমে রিয়ার দিকে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না।
টিভি অন ছিল, কিন্তু কারো খেয়াল নেই। হঠাৎ খবরের ভলিউম বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
সংবাদ পাঠক:
"গতকাল গভীর রাতে রাজধানীতে এক সন্ত্রাসী ড্রাগ সাপ্লাই করেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তার একটি আংটি উদ্ধার করেছে। আংটিতে বিশেষ নকশা থাকলেও এটি দিয়ে তাকে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছে তদন্ত দল।"
রিয়ার মনে ধাক্কা লাগল। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল হরিশের কালো, লম্বা আঙুলে পরা পুরনো রূপার আংটি—ঠিক একই নকশার।
তার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। "এটা কি কাকতালীয়? নাকি... কাল রাতের সেই লোকটাই খবরের ড্রাগ সাপ্লায়ার?"
সে চুপচাপ কাপটা হাতে নিয়ে বসে রইল। নাজমা বেগম সেলাইয়ে মন দিলেন, লতা আবার রান্নাঘরে চলে গেল। কিন্তু রিয়ার মন থেকে রাতের সেই দৃশ্য আর আংটির মিলের ছবি কিছুতেই মুছল না।
পর্ব ১০
রাতে রাতুল ও তার বাবা মো. আজিম বাইরে থেকে ফিরেছেন। নাজমা বেগম টেবিলে ডিনার আয়োজন করে রেখেছেন—ভাত, মাছ, মাংস ও ডাল।
নাজমা বেগম: "এই বাবা, হাত মুখ ধুয়ে আসো, ডিনার ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
রাতুল: "জি মা।"
সবাই টেবিলে বসে খেতে শুরু করল। রিয়া মাঝেমাঝে পানি ঢালছে, সবার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে। খাওয়া শেষে সবাই প্রশান্তভাবে বসে রইল কিছুক্ষণ, তারপর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
রান্নাঘরে এখন শুধু রিয়া আর লতা। থালাবাসনের ঠকঠক শব্দ, সঙ্গে কলের পানি পড়ার শব্দ মিলে রান্নাঘর ভরে আছে।
লতা হাতে একটা ঢাকনাওয়ালা প্লেট নিয়ে দাঁড়াল।
লতা: "এই বৌমা, আমি হরিশের খাবার দিয়ে আসি নিচে।"
রিয়া: "আপা, এই প্লেটগুলো ধুয়ে দেন না। আমি খাবারটা দিয়ে আসব।"
লতা খানিকটা অবাক হয়ে তাকাল।
লতা: "তুমি যাবে?"
রিয়া: (হালকা হেসে) "হ্যাঁ, তো কী হয়েছে?"
লতা ঠোঁট কুঁচকে বলল—
লতা: "দাও, আমি যাই।
রিয়া বলল,“আমি গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে?"
এরপর আর কথা না বাড়িয়ে, তার মনে কাল রাতের বারান্দার সেই দৃশ্য আর আংটির ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে তার তদন্ত করতে রওনা হয়।
"আজ যদি সুযোগ পাই, হরিশের কাছ থেকে কিছু জানতে হবে..."
নিচে গিয়ে রিয়া দেখল হরিশের ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে লাগানো। সে আলতো করে দরজায় কড়া নাড়ল।
রিয়া: "গেইট খুলুন, খাবার এনেছি।"
পর্ব ১১
রিয়া আলতো করে হরিশের ঘরের দরজায় কড়া নাড়ল।
রিয়া: "গেইট খুলুন, খাবার এনেছি।"
দরজা খুলল হরিশ। রিয়া ভেতরে ঢুকল এবং প্লেটটা টেবিলে রাখল। সে পিছনের দিকে একটু সরে দাঁড়াল। এরপর জলদি রিয়া দ্রুত গেট বন্ধ করে দিল। ঘরের ভেতরে হালকা অন্ধকার, বাতি তে ভালো আলো নেই। জানালার কাঁচে বর্ষার ফোঁটা টপটপ করছে।
রিয়া তার নিজের নিঃশ্বাস শান্ত করতে চেষ্টা করল।
রিয়া: "আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"
হরিশ ধীরে ধীরে তার কাছে এগোল। রিয়ার পিঠ দেয়ালের সাথে লাগল। বৃষ্টির শব্দ বাইরে ভেতরের নিস্তব্ধতাকে আরও ঘনীভূত করছে।
রিয়া: "দূরে যান, আমার থেকে।"
হরিশ হালকা হেসে বলল,
হরিশ: "আমার কাছে তুমি এসেছো, আর তুমি দূরে যেতে বলছো?"
রিয়া চোখ গরম করে বলল,
রিয়া: "দূরে সরতে বলেছি আমি।"
ঠিক সেই মুহূর্তে, বাইরে একটি বিশাল বিদ্যুৎ চমক! রিয়া ভয় পেয়ে হরিশকে আঁকড়ে ধরল। হরিশ হালকা থমকে দাঁড়াল, কিন্তু সে তার হাত গরম করে রিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরল। রিয়ার চোখে কৌতূহল আর ভয়ের মিলিত আবেগ ভেসে উঠল। তার রাগও উঠল সে একটা বড় ঘরের বউ, আর সামান্য বুড়ো ড্রাইভারের সাথে একই রুমে, জড়িয়ে ধরে আছে। রিয়া হরিশকে ছেড়ে দেয়।
রিয়া রাগে বলে,“আমাকে ছেড়ে দেন”
বৃষ্টি এখন আরও জোরে পড়ছে, জানালার কাঁচে ফোঁটাগুলো লাফাচ্ছে। দুজন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। রিয়ার হৃদস্পন্দন তীব্র, বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, বিদ্যুতের চমক আর ঘরের নিস্তব্ধতা—সবই মুহূর্তটিকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
ঠিক যখন হরিশ ভাবছে সে কিছুটা ছাড়বে, তখন আরেকবার বিদ্যুতের দমকা আলো! রিয়া আঁকড়ে ধরে, হরিশও আরও শক্ত করে ধরেছে।
রিয়ার মুখে সামান্য চিৎকার—হরিশ হাত দিয়ে তার মুখ নীরব করে দেয়।
হরিশ কেবল হেসে বলল, "ভয় পেলি? এখন আর ছাড়ব না।"
রিয়ার দুধ তেমন বড় না হলেও মাঝারি সাইজের হবেই, একটি বড় হতে পারে। হরিশ সে তার সিনার একটু নিচে ভালোই অনুভব করছে।
বৃষ্টি, বিদ্যুৎ, এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস—সব মিলিয়ে ঘরটি যেন একটি আলাদা জগত হয়ে উঠেছে। দুজন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে সময়টা টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যেন বাইরে পৃথিবীর সব কিছু থেমে গেছে।
 
Top