সদ্য যৌবনে পড়া নারীকে কে পছন্দ করবে, কে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে সেটা তার হাতে থাকে না সবসময়। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ খেলে তার দেহে। শুধুমাত্র সাহসীরাই ঝাপিয়ে পড়ে সেই ভয়ংকর ঢেউ তোলা জলরাশিতে। কিন্তু শান্ত দিঘির জলে স্নান করার যে শান্তি, সমুদ্র আপনাকে সেই শান্তি দিতে পারবে না।
মধ্যবয়সী নারীদের আমার কাছে এই শান্ত দিঘির মত মনে হয়। আমার উত্তাল সমুদ্রে এডভেঞ্চারের চাইতে, শান্তিতে স্নান করাটাই ভাল লাগে।
এখন অনেকেই আমার সাথে বিতর্ক করতে পারেন। সেটা আপনার অধিকার। আমি তাতে না করবো না।
নার্গিস আন্টিকে আমার এইজন্যই ভাল লাগে। উনার পাশে বসে কথা বলতে শান্তি পাই। উনি মমতাময়ী, বিচক্ষণ, বাস্তবতা মেপে কথা বলেন। কোন উটকো আবেগ দেখিয়ে কাউকে সমস্যায় ফেলে না। এমন মানুষকে না ভাল লাগার কোন কারণ নেই। উনি আমাদের বাড়িতে বিগত ৫ বছর ধরে ভাড়া থাকেন। আংকেল ব্যাংকার। খুবই ভদ্র এবং নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ। একটা মাত্র আদরের সন্তান রবিনকে নিয়ে চমৎকার একটা পরিবার।
বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার মধ্যে প্রথম প্রথম একটা ব্যবসায়িক সম্পর্কের মত থাকলেও দিন যত সামনে এগোয়, সম্পর্কটাও আত্মীয়ের মত হয়ে যায়। আজ আমাদের বাসায় পোলাও কোর্মা রান্না হলে, মা নিজেই নার্গিস আন্টিদের বাসায় পাঠিয়ে দেয় আমাকে দিয়ে। আবার উনাদের বাসাতেও ভাল কিছু রান্না হলে আমাদের বাসায় চলে আসে সেই খাবার।
আমি আকরাম, বুয়েটে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করি। থার্ড ইয়ার চলছে।
নার্গিস আন্টিরা এখন আমাদের আত্মীয়ের পর্যায়ে চলে এসেছে।
একদিনের কথা। ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে আন্টির সাথে দেখা। আন্টি সদ্য গোসল করে এসেছে, লম্বা ভেজা চুলে তোয়ালে বাধা। হাতে বালতি ভরা কাপড়।
ছাদে একটাই দড়ি। সেটাতে আমি কাপড় মেলে দিয়েছি কিছুক্ষণ আগে। আন্টি দেখে কপট রাগ করে বলে, এখন আমি কোথায় কাপড় মেলবো বলো দেখি! আরেকটা দড়ি লাগাও না কেন তোমরা।
-- আব্বাকে বলবো আন্টি। আপনি মেলে দেন, আমি আমার গুলো বারান্দায় দিচ্ছি। আমার তো বেশি কাপড় না, আপনার অনেক গুলা।
আন্টি আমার কথা শুনে মনে মনে অনেক খুশি হলো উনার চেহারাতেই বোঝা গেছে।
আমি আমার কাপড় গুলো নিয়ে নামতে যাচ্ছি৷ তখন আন্টি বলছে, আকরাম, একটু সময় পাইলে রবিনকে একটু পড়াও না, প্লিজ। আমার কাছে পড়তেই চায় না। তোমার আংকেলও কত বিজি থাকে তুমি তো দেখতেই পাও। কত করে দিতে হবে মাসে সেটা বইলো।
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। উনার সাথে টাকা নিয়ে দর কষাকষি করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি বললাম কি যে বলেন আন্টি। ঠিকাছে কোন সমস্যা নাই। আমি সময় পাইলে দেখবো টেনশন কইরেন না। আমি আমার ভেজা কাপড় গুলো নিয়ে নামতে নামতে আন্টির দিকে একবার তাকালাম। আন্টি বালতি নিচে নামিয়ে রেখে চুল থেকে তোয়ালে খুলে চুলের পানি ঝাড়তে লাগলো। জানি না কেন, আমার তখন ইচ্ছা হলো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে দেখি। পরে আবার ভাবলাম, আন্টি কি না কি মনে করে। চলে এলাম।
2.
আমাদের বাড়ির ৫ তলার কাজ কোভিডের কারণে গত ২ বছর ধরে আটকে ছিল। অবশেষে মহামারীর প্রকোপ কমার পরে আব্বা আবার বাড়ির কাজে হাত দিয়েছে এবং এখন মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। রঙ করাটা বাকি। আমরা টু লেট লাগিয়ে দিয়েছি বাসা ভাড়ার জন্য। বাসায় ব্যাচেলর ভাড়া দেয়ার ব্যাপারে আমার আব্বা কখনোই রাজি ছিল না। কিন্তু এত উপরে কোন ফ্যামিলিও থাকতে চায় না। তাই শেষ পর্যন্ত আব্বা নিমরাজি হয়েছে। তবে কড়া অর্ডার যে, যাকেই দেয়া হোক একটু দেখে শুনে যেন দেয়া হয়। আব্বা উশৃঙ্খল ছেলে পেলে একদম দেখতে পারে না।
তারপর অনেক দেখে শুনে ৫ তলার ২ রুমের বাসাটা ভাড়া দেয়া হলো। রুম ভাড়া নিল একটা ছেলে, আমার কাছাকাছি বয়স,তবে একটু বয়স্ক হবে হয়তো আমার চেয়ে। বেশ ভদ্র, কোন বদঅভ্যাসও নেই। ছাদে গিয়ে আমি সিগারেট খাই, তখন দেখা হয় উনার সাথে। টুকটাক কথা হয়। উনার নাম রেজা, ঢাকা ভার্সিটিতে ফিন্যান্স নিয়ে মাস্টার্স করছে। কথাবার্তা বেশ গোছালো। মা বাবা থাকে গ্রামের বাড়িতে। উনারা দুই ভাই। একভাই গ্রামে ব্যবসা করে৷ আর উনি ঢাকায় পড়াশোনা। আর পড়ালেখার পাশাপাশি ৩ টা টিউশনি করায়। বেশ মেরিটোরিয়াস স্টুডেন্ট। বই পড়ার অভ্যাস। যাই হোক, টুক টাক এইসব জেনেছি উনার সম্পর্কে।
একদিন ছাদে উঠে দেখি, চমৎকার একটা হাসনা হেনা গাছ। আমি একটু অবাক হলাম! ছাদে গাছ লাগালো কে? সিগারেট টেনে নিচে নামার সময় আমাদের নতুন ভাড়াটিয়ার রুমে নক দিলাম।
কেমন আছেন রেজা ভাই?
-- আলহামদুলিল্লাহ ভাই। কি ব্যাপার?
উনি বেশ অবাক আমাকে দেখে। একটু ভীত মনে হলো।
আমি বললাম - ছাদের গাছটা কি আপনি লাগিয়েছেন?
- হ্যা ভাই! একটু আমতা আমতা করে বললো। কোন সমস্যা আছে কি? আমি তো আপনাদের জিগ্যেস না করেই নিয়ে এসেছি।
আমি হেসে দিলাম উনার টেনশন দেখে।
আরে না ভাই। খুব ভাল লাগলো দেখে। আজকাল ফুলের গাছ কিনার মত ব্যাচেলর আছে ভাবাই যায় না।
- হাহা। আমি অনেক পছন্দ করি ভাই। আর হাসনা হেনার ঘ্রাণ আমার খুব পছন্দ।
ওইদিন রেজা ভাই এর সাথে কথা বলে বাসায় আসার পর আমি মোটামুটি এখন নিশ্চিত হলাম, লোকটা ভাল। কথা বলার সময় রুমের ভেতর উকি দিয়ে একটু দেখেছিলাম, বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
প্রথম কথা বলে বাসা ভাড়া দেয়ার সময় সবাই ভদ্র ব্যবহার করে। কিন্তু বাসায় ওঠার পর ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় মানুষটা কেমন।
আমি এখন নিশ্চিন্ত। এই ব্যাপার নিয়ে আমার এত কনসার্ন হওয়ার কারণ, ভাড়াটিয়াদের কোন রকম সমস্যা হলে আমার ঘাড়েই আসে সেই সমস্যা গুলো।
3.
প্রায় ১ মাস হলো টিউশনি করাচ্ছি। আজ প্রথম মাসের টাকা হাতে পেলাম। ৬ হাজার টাকা। রবিনের আম্মু, নার্গিস আন্টি বেশির ভাগ সময় আমার সামনে এলে মাথায় কাপড় দিয়ে আসেন। তবে আজকে টাকা দিতে যখন এলেন ,খেয়াল করলাম আন্টি অনেক সেজে গুজে এসেছেন। টিয়া রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পরেছেন আন্টি। মাথায় ওড়না না থাকলেও বুকে ওড়না আছে আন্টির। ঠোটে গাড় লাল লিপস্টিক। মুখে হালকা মেকাপ। আন্টি এমনিতেই ফর্সা, আরো ফর্সা লাগছে।
- আন্টি কোথাও বেড়াতে যাবেন নাকি?
- কই না তো বাবা! কেন?
- আমি একটু সলজ্জ হাসি দিয়ে বললাম, এত সুন্দর করে সেজে গুজে এসেছেন, তাই ভাবলাম।
নার্গিস আন্টি হাসলো। এখন এই হাসিটাকে কীভাবে বর্ণনা করবো আমার জানা নেই।মহিলাদের যে হাসি যেকোন সক্ষম পুরুষের বুকে অন্য রকম এক ধাক্কা দেয়, সেই হাসি। সেই পুরুষ ওই মুহূর্তে ভুলে যাবে সব রকম সামাজিক সম্পর্ক।
হাসি দিয়ে আন্টি বললো আজকে আমাদের ম্যারেজ ডে।
-হ্যাপি অ্যানিভার্সারি আন্টি!
আন্টি হাসিমুখেই থ্যাংক ইউ দিল৷
আমার মাথায় ঘুরছে এই শুভ দিনে আন্টিকে অবশ্যই কোন গিফট দেয়া উচিত।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে আমি বের হয়ে গেলাম। ( চলবে)