• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

darksoul440

New Member
14
11
4
"গল্পটি রেহানা ফেরদৌস নামের এক প্রিয় বন্ধুকে উৎসর্গ করে লেখা, যাকে কোনো এক অজানা কারণে জীবনের পথচলায় হারিয়ে ফেলেছি। যদি কোনোভাবে সে এই গল্পটি পড়ে, তবে আশা করি সে আমাকে নক করবে। আমি অপেক্ষায় আছি।"


Screenshot-2025-01-15-10-12-43-94-1c337646f29875672b5a61192b9010f9
রেহানা ফেরদৌস

গ্রাম থেকে দূরে, সবুজ পাহাড়ঘেরা এক রাজ্য—সন্ধ্যানগরী। শক্তি, ঐশ্বর্য, এবং মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্য পরিচিত এই রাজ্য। আশেপাশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এটি সবচেয়ে শক্তিশালী। এ রাজ্যের প্রতিটি মানুষ রাজার প্রতি অনুগত। তাদের বিশ্বাস, রাজা এবং তার পরিবারই তাদের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি।

রাজ্যের কেন্দ্রে এক বিশাল প্রাসাদ, যা রাজ্যের গৌরবময় ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। এখানে থাকেন রেহানা ফেরদৌস এবং তার একমাত্র সন্তান রাহাত ফেরদৌস। রাজ পরিবারের এই দুই সদস্যই রাজ্যের জনগণের আশা এবং ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু।

ভোর

সূর্যোদয়ের প্রথম আলো প্রাসাদের সোনালী গম্বুজে পড়ে। প্রাসাদের উঠানে রেহানা ফেরদৌস ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন। ৬৫ বছর বয়স হলেও তার চোখে-মুখে ক্লান্তির কোনো ছাপ নেই। বরং তার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব প্রাসাদের প্রতিটি কোণ আলোকিত করে।

অন্যদিকে, রাহাত ফেরদৌস তখন প্রাসাদের মাঠে তরুণ সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেখছিলেন। তার চেহারায় রাজকীয় গাম্ভীর্য এবং মনের গভীরে জনগণের প্রতি অগাধ দায়িত্ববোধ।

“মা, তুমি এত সকালে হাঁটতে বের হয়েছ?” রাহাত পেছন থেকে ডাক দিল।
রেহানা মৃদু হেসে বললেন, “ভোরের বাতাস আমাকে সব সময় নতুন শক্তি দেয়। তাছাড়া, তোমার ব্যস্ত সময়ে তো আমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কম পাই।”
রাহাত হেসে উত্তর দিল, “তোমার কথা শোনার সময় আমি সব সময় বের করতে পারি, মা। তুমি তো শুধু আমার মা নও, পুরো রাজ্যের মায়ের মতো।”

দুপুর

প্রাসাদে রাজ্যের প্রবীণ এবং যুব নেতাদের এক বৈঠক চলছিল। রেহানা এবং রাহাত বৈঠকে উপস্থিত। আলোচনার বিষয় রাজ্যের অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণ। রেহানা বলেন,
“আমাদের রাজ্য শুধু শক্তিতে নয়, মানুষের ভালোবাসায়ও সমৃদ্ধ। সেই ভালোবাসা ধরে রাখা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।”

রাহাত সম্মতি জানিয়ে বলেন, “আমরা যদি মানুষের জন্য কাজ করি, তারা আমাদের পাশে থাকবে। রাজ্যের শক্তি তাদের ঐক্যের মধ্যেই নিহিত।”

সন্ধ্যা

প্রাসাদের উঠানে মৃদু বাতাস বইছিল। রেহানা একটি আরামদায়ক চেয়ারে বসে রাজ্যের পুরনো ইতিহাসের বই পড়ছিলেন। রাহাত এসে বলল,
“মা, তুমি সবসময় এই বইগুলো পড়ো কেন?”
“কারণ, অতীত আমাদের শিক্ষা দেয়। আমাদের রাজ্য কেমন করে এত শক্তিশালী হলো, তা জানার জন্য এই বইগুলোই যথেষ্ট।”

রাহাত মৃদু হেসে বলল, “তুমি নিজেই তো আমাদের ইতিহাসের একটা অধ্যায়। তোমার কাছ থেকে শিখতেই আমি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী।”
রেহানা মৃদু হেসে বললেন, “তুমি রাজ্যের ভবিষ্যৎ। তোমার হাতেই সবকিছু নিরাপদ থাকবে।”


সূর্যোদয়ের আলো সন্ধ্যানগরীর প্রাসাদে পড়ে সোনালী গম্বুজটিকে ঝলমল করে তুলেছে। প্রাসাদটি এতটাই বিশাল যে এর ছায়া গ্রামের কাঁচা বাড়িগুলোর উপর পড়ে। আশেপাশের রাজ্যগুলো এই প্রাসাদ এবং এর অধিবাসীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। কারণ এই রাজ্যের শক্তি শুধু তার সামরিক শক্তিতে নয়, তার মানুষের ভালোবাসা এবং ঐক্যের মধ্যেও নিহিত।

রেহানা ফেরদৌস প্রাসাদের বিশাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার হাতে রাজ্যের পুরনো মানচিত্র। সাদা আর কালো চুলের মিশ্রণে তার চেহারায় এক অদ্ভুত মর্যাদা ফুটে উঠেছে। ৬৫ বছরের এই নারীকে দেখে কারো বোঝার উপায় নেই, তিনি কত ঝড়-ঝাপ্টা সামলে এই রাজ্য এবং তার ছেলেকে টিকিয়ে রেখেছেন।

রাহাত ফেরদৌস তখন প্রাসাদের মাঠে। সৈন্যদের নতুন যুদ্ধকৌশল শেখাচ্ছিলেন। রাজ্যের নিরাপত্তা এবং মানুষের কল্যাণের জন্য তার এই প্রচেষ্টা প্রায়ই তাকে দিনের বেশির ভাগ সময় মাঠে কাটাতে বাধ্য করে। কিন্তু তার চোখে-মুখে কোনো ক্লান্তি নেই।

"মা, তোমাকে এমন গভীর চিন্তায় মগ্ন দেখছি," রাহাত বলল, মাঠ থেকে উঠে এসে।
রেহানা হেসে বললেন, "চিন্তা তো সবসময় থাকবে। রাজ্যের দায়িত্ব যদি সহজ হতো, তাহলে হয়তো আমি তোমার মতো অনেক বেশি হাসতে পারতাম।"
"তুমি শুধু হাসো, মা। রাজ্যের দায়িত্ব আমি সামলাব। তুমি দেখবে, এই সন্ধ্যানগরী শুধু শক্তিশালী নয়, সবচেয়ে সুখী রাজ্যও হবে।"

রেহানা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, "তোমার এই আত্মবিশ্বাসই আমাকে শান্তি দেয়, রাহাত।"

রাত গভীর হলে রাজ্যের প্রাসাদে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। দূরে পাহাড়ি নদীর কলকল ধ্বনি আর প্রাসাদের সীমানার বাইরে জ্বলতে থাকা প্রহরার আগুনের আলো ছাড়া সব যেন স্তব্ধ। এই সময় রেহানা ফেরদৌস রাজ্যের প্রধান কক্ষে বসে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজগুলো দেখছিলেন। পুরনো দলিল, রাজকোষের হিসাব, এবং সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ রিপোর্ট সবই তার কাছে ছিল।

রাহাত ঘরে ঢুকে মৃদু স্বরে বলল,
"মা, এখনো কাজ করছ? আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি, এত রাত পর্যন্ত কাজ কোরো না।"
রেহানা একটু হেসে বললেন, "আমাদের রাজ্যের শক্তি তো শুধু সৈন্যদের উপর নির্ভর করে না, রাহাত। প্রশাসনও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, তুমি যেভাবে রাজ্যের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করো, আমার কি বসে থাকা সাজে?"

রাহাত তার পাশে বসে বলল, "তুমি আমাদের রাজ্যের সবচেয়ে বড় শক্তি। তোমার অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব ছাড়া আমি একদিনও রাজ্যের দায়িত্ব নিতে পারব না।"
রেহানা ছেলের দিকে তাকিয়ে গভীর স্বরে বললেন, "তুমি একদিন রাজ্যের দায়িত্ব নেবে, রাহাত। এবং আমি জানি, তুমি তা অত্যন্ত সফলভাবে করবে। কারণ তোমার মধ্যে সেই গুণ আছে, যা একজন প্রকৃত নেতার থাকা উচিত।"

সকালের আলো যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, রাজ্যের বাজার ঘুরতে বেরোলেন রাহাত। সন্ধ্যানগরীর বাজারের ব্যস্ততা দেখে বোঝা যায় রাজ্যের মানুষ কতটা সুখী। প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড়, মুচিদের কাজ, এবং চাষিদের মুখে হাসি—সব মিলিয়ে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

বাজারে হাঁটতে হাঁটতে রাহাত গ্রামের কয়েকজন প্রবীণের সঙ্গে দেখা করল। তারা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল রাজ্যের মানুষের জন্য তার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য।
"তুমি তোমার বাবার মতোই প্রজাদের ভালোবাসতে জানো," একজন বৃদ্ধ বলল।
রাহাত একটু লজ্জা পেয়ে উত্তর দিল, "আমার মায়ের কাছ থেকেই আমি সব শিখেছি। তিনি না থাকলে আমি কিছুই হতে পারতাম না।"

প্রাসাদে ফিরে রাহাত দেখল, রেহানা রাজ্যের কয়েকজন প্রবীণ নারীকে নিয়ে বসেছেন। তারা রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করছিল। রেহানার নেতৃত্বের প্রতি তাদের গভীর আস্থা ছিল।
"মা, আজ তুমি আবারও প্রমাণ করলে কেন সবাই তোমাকে এত শ্রদ্ধা করে," রাহাত মৃদু হেসে বলল।
রেহানা বললেন, "শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। তুমি যদি মানুষের প্রতি সৎ থাকো, তারাই তোমাকে সম্মান দেবে।"

এই কথাগুলো রাহাতের মনে গভীর ছাপ ফেলল। সে জানত, তার মায়ের শেখানো প্রতিটি শিক্ষা তাকে একদিন রাজ্যের সবচেয়ে সফল শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

সন্ধ্যানগরীর একটি গভীর জঙ্গল। এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা একটি সরু নদী প্রাসাদের চারপাশে প্রাকৃতিক সুরক্ষার প্রাচীর তৈরি করেছে। সন্ধ্যা হলে জঙ্গলের বিভিন্ন প্রাণীর ডাক আর নদীর কলধ্বনি এক ধরনের রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করে।

রাহাত ফেরদৌস আজ সৈন্যদের একটি নতুন কৌশল শেখাতে জঙ্গলের প্রান্তে গিয়েছিলেন। কয়েকজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা এবং যুব সৈনিক তার সঙ্গে ছিল। নদীর ধারে বসে তারা পরিকল্পনা করছিল কিভাবে রাজ্যের সীমান্তে নতুন টহল ব্যবস্থা আরও মজবুত করা যায়।

একজন সৈনিক বলল, "রাজকুমার, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্যগুলো যদিও আপাতত শান্ত, তবুও আমরা খবর পেয়েছি কিছু ছোট দস্যু দল জঙ্গলের ভেতর সক্রিয় হচ্ছে।"
রাহাত গম্ভীর মুখে উত্তর দিল, "আমরা রাজ্যের প্রতিটি সীমান্ত নিরাপদ রাখব। প্রয়োজন হলে রাতের টহল বাড়াতে হবে। জঙ্গলের পথও বন্ধ করা যাবে না, কারণ এগুলো সাধারণ মানুষের যাতায়াতের পথ।"

প্রাসাদে ফিরে রাহাত তার মাকে সব জানাল। রেহানা ফেরদৌস বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করলেন।
"দস্যুদের মতো ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে অবহেলা করা যাবে না। ছোট ভুল বড় বিপদের কারণ হতে পারে," রেহানা বললেন।
"মা, আমি নিশ্চিত করব যে রাজ্যের মানুষ কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই দিন কাটাতে পারে।"

রাতে রেহানা তার নিজের ঘরে বসে রাজ্যের পুরনো ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবছিলেন। তার মনে পড়ল, কীভাবে একসময় সন্ধ্যানগরী ছিল দুর্বল আর বিভক্ত। তার স্বামী, প্রয়াত রাজা, এবং তার অদম্য সাহসিকতায় এই রাজ্য আজ এত শক্তিশালী হয়েছে।

এদিকে, রাহাত প্রাসাদের টহল দলের সঙ্গে রাজ্যের সীমান্তে পরিদর্শনে বের হলেন। রাতের আঁধারে মশালের আলোয় তার মুখ আরও দৃঢ় মনে হচ্ছিল। সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিশ্চিত করলেন, টহলের ব্যবস্থা যথাযথ আছে।

সীমান্ত থেকে ফিরে রাহাত যখন প্রাসাদে পৌঁছাল, তখন রেহানা জেগে ছিলেন।
"তুমি এখনো ঘুমাওনি, মা?"
"তুমি বাইরে থাকলে আমি কীভাবে শান্তিতে ঘুমাই, রাহাত?" রেহানা মৃদু হেসে বললেন।
রাহাত তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমার শক্তি আর স্নেহই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।"

রেহানা তার ছেলেকে গভীর ভালোবাসায় দেখলেন। রাজ্যের জন্য তাদের এই নিবেদন যেন এক চিরন্তন বন্ধনের মতো।




রাহাত ফেরদৌস প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তার চোখে-মুখে এক অদ্ভুত শূন্যতা। সে ভেবেই চলেছে, তার জীবন এক বিশাল দায়িত্বের পাথর। রাজ্যের মানুষের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করতে গিয়ে নিজের আনন্দকে কখন যেন হারিয়ে ফেলেছে।

পেছন থেকে রেহানা ফেরদৌস ধীর পায়ে এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন।
"কী ভাবছ, রাহাত?"
রাহাত মৃদু হাসল। "তোমার শেখানো দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনো কখনো মনে হয়, মা, আমি কি সত্যিই সুখী?"

রেহানা একটু থেমে বললেন, "তুমি সুখ খুঁজে পাওনি, রাহাত। কারণ তোমার সুখ সবসময় অন্যের জন্য উৎসর্গ করা। কিন্তু জানো কি? প্রকৃত সুখ পেতে হলে নিজের জন্য কিছু খুঁজে নিতে হয়।"

রাহাত মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি ছাড়া আমার জীবনে আর কিছু নেই, মা। তোমার ভালোবাসা, তোমার আদর ছাড়া আমি কিছুই জানি না। তোমার ছায়ায় বড় হয়েছি, তোমার আদর্শেই বাঁচছি।"

রেহানার চোখে জল চলে এল। "তুমি জানো, রাহাত, তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি। তুমি আমার সবকিছু। কিন্তু একসময় তোমাকে নিজের জীবনকেও ভালোবাসতে শিখতে হবে।"

রাহাত শান্ত স্বরে বলল, "তুমি আমার জীবন। তুমি ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না। রাজ্য, দায়িত্ব—সবকিছুই যেন তোমার জন্য। আমি জানি, তুমি সবসময় আমার পাশে থাকবে।"

রেহানা ছেলের মুখে হাত রাখলেন। "আমি সবসময় তোমার পাশে আছি, রাহাত। তোমার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি অনুভূতি আমার কাছে মূল্যবান। কিন্তু জীবনে এক সময় তুমি বুঝবে, ভালোবাসার মানে শুধু দায়িত্ব নয়। ভালোবাসার মানে একে অপরকে নির্ভরতা দেওয়া।"

রাহাতের চোখে-মুখে এক ধরনের প্রশান্তি এল। সে অনুভব করল, তার মায়ের প্রতি তার ভালোবাসা কতটা গভীর, কতটা আবেগময়। এই ভালোবাসা যেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।

রাত গভীর হলে রেহানা নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। কিন্তু রাহাত প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। তার মায়ের কথা, তার স্নেহ—সবকিছু যেন তার মনে দোলা দিচ্ছিল। সে উপলব্ধি করল, এই পৃথিবীতে যদি কেউ তার জীবন পূর্ণ করতে পারে, তা তার মা।

রেহানা ঘরে বসে জানলার বাইরে তাকালেন। তার মনে একটাই কথা—এই ছেলেকে তিনি কীভাবে আরও সুখী করতে পারেন। নিজের ভালোবাসা দিয়ে, স্নেহ দিয়ে তিনি যে ছেলেটিকে মানুষ করেছেন, তার জীবনে যেন কোনো দুঃখ না আসে। ভালোবাসার এই গভীর বন্ধনই তাদের সম্পর্কের ভিত্তি।


রাতে রেহানা ফেরদৌস শোবার ঘরে বসে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করতে লাগলেন। তার জীবনে কত কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে! রাজ্য যখন ভাঙনের মুখে, তখন রাজাকে হারানোর ব্যথা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন। রাহাত তখন একেবারে ছোট, রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি ছেলেকে বড় করেছেন।

তিনি জানতেন, রাহাত তার সবকিছু। কিন্তু সেই ভালোবাসার ভার যেন রাহাতকে আটকে ফেলছে। রেহানা মাঝে মাঝে ভাবেন, তার স্নেহের কারণে রাহাত কি নিজের জীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে? এই প্রশ্ন তার মনকে অস্থির করে তোলে।

অন্যদিকে, রাহাত নিজের ঘরে বসে মায়ের কথা ভাবছিল। রেহানা শুধু তার মা নন, তার আদর্শ, তার জীবন। কিন্তু তার মায়ের চোখে মাঝে মাঝে যে অদ্ভুত এক শূন্যতা দেখে, তা তাকে কষ্ট দেয়। মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা তাকে আরও দায়িত্বশীল করে তুলেছে।

একদিন সকালে, রেহানা রাহাতকে ডেকে বললেন,
"রাহাত, তোমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন রাজ্যের জন্য। কিন্তু তুমি কি কখনো ভেবেছ, নিজের জন্য কী করতে চাও?"

রাহাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "তুমি যদি আমার পাশে থাকো, মা, তবে আমার কিছুই আর চাই না। আমার পুরো জীবনই তোমার জন্য উৎসর্গ। তুমি যে ভালোবাসা দিয়েছ, তা আমার কাছে অমূল্য।"

রেহানা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। "তুমি জানো, রাহাত, ভালোবাসার মানে শুধু ত্যাগ নয়। ভালোবাসার মানে একে অপরের আনন্দ খুঁজে পাওয়া। আমার ভালোবাসা সবসময় তোমার সঙ্গে থাকবে, কিন্তু তোমার নিজের জীবনের আনন্দ খুঁজে নিতে হবে।"

রাহাত তার মায়ের হাত ধরে বলল, "তুমি যদি না থাকতে, আমি হয়তো এত দূর আসতেই পারতাম না। তুমি আমার জীবন, মা। তোমার ছায়ার নিচে থাকাটাই আমার সুখ।"

রেহানা বুঝতে পারলেন, রাহাত তাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। কিন্তু তিনি জানেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাহাতকে নিজের পথ খুঁজে নিতে হবে। তার ভালোবাসা দিয়ে তিনি ছেলেকে সবসময় সুরক্ষিত রাখতে চান, কিন্তু তার জীবন যেন নতুন আলোয় ভরে ওঠে, সেটাই তার কামনা।

একদিন ভোরে রাহাত ঘোড়ায় চড়ে জঙ্গলের দিকে বেরিয়ে পড়ল। সে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চেয়েছিল। তার মনে একটাই প্রশ্ন, এই ভালোবাসা কি স্বাভাবিক? সে কি তার মায়ের প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করছে?

রাত্রে যখন সে প্রাসাদে ফিরে আসে, রেহানা তাকে দরজায় অপেক্ষা করতে দেখে।
"সারাদিন কোথায় ছিলে, রাহাত? আমি চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম," রেহানা বললেন।

রাহাত মায়ের চোখে উদ্বেগ দেখে গভীরভাবে তার দিকে তাকাল।
"মা, তুমি সবসময় এত চিন্তা করো কেন? আমি তো আর ছোট নেই।"

রেহানা মৃদু হেসে বললেন, "তুমি যত বড়ই হও না কেন, আমার কাছে তুমি সবসময় ছোটই থাকবে।"

রাহাত কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর হঠাৎ বলল,
"মা, তুমি কি জানো, তোমার এই ভালোবাসা আমার কাছে সবকিছু? রাজ্য, দায়িত্ব, ক্ষমতা—সবকিছুর ওপরে তোমার স্নেহ আমার জন্য।"

রেহানা মৃদু গলায় বললেন, "তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা পৃথিবীর কোনো ভালোবাসার সঙ্গে তুলনীয় নয়। কিন্তু রাহাত, তুমি কি ঠিক আছো? তোমার চোখে আজকাল আমি কিছু অন্য রকম অনুভূতি দেখতে পাই।"

রাহাত চমকে গেল। সে অনুভব করল, তার মনের কথা যেন ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু নিজেকে সামলে বলল,
"তুমি যা দেখো, তা হয়তো সত্যি। মা, তুমি শুধু আমার মা নও। তুমি আমার সবকিছু। আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না।"

রেহানার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।
"রাহাত, তুমি কী বলতে চাচ্ছো?"

রাহাত ধীরে ধীরে বলল,
"আমি বলতে চাই, মা, আমি তোমাকে শুধু মা হিসেবে নয়, আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হিসেবে দেখি। আমি জানি, এই অনুভূতি সবার কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এত গভীর যে আমি আর লুকিয়ে রাখতে পারছি না।"

রেহানা কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। তার মনে একদিকে ছিল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির শঙ্কা, অন্যদিকে রাহাতের প্রতি গভীর ভালোবাসা। তিনি বুঝতে পারলেন, রাহাত যা বলছে, তা তার মনের গভীর থেকে উঠে আসা।

রেহানা তার ঘরে ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লেন। তার মনের মধ্যে যেন ঝড় বইতে লাগল। রাহাতের কথা বারবার তার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। “তুমি শুধু আমার মা নও। তুমি আমার সবকিছু।”

কীভাবে সম্ভব? এই ছেলে তার জীবনের আলো, তার সন্তান। এত বছর ধরে মাতৃত্বের স্নেহ দিয়ে তাকে বড় করেছেন। কিন্তু আজ তার মুখ থেকে শোনা কথাগুলো যেন তাকে এক অজানা সংকটে ফেলে দিল।

রেহানা গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি জানেন, রাহাত তার প্রতি নিষ্পাপ ভালোবাসা পোষণ করে। কিন্তু সমাজ? রাজ্যের মানুষ? তাদের এই সম্পর্ক কীভাবে দেখবে? রাজার পরিবারের প্রতি মানুষের আস্থা এতটাই গভীর যে তারা রাজার পরিবারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মেনে চলে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যদি মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা দেয়?

তিনি জানেন, রাজ্যের শাসক হিসেবে রাহাতের দায়িত্ব সবার আগে। কিন্তু একজন মা হিসেবে তিনি চান তার সন্তান সুখী হোক। তার চোখে ভাসতে লাগল ছোটবেলার রাহাত। কোলের মধ্যে শুয়ে থাকা সেই ছোট্ট ছেলেটি আজ বড় হয়ে তার মনের গোপন কথাগুলো বলে দিচ্ছে।


রেহানা জানেন, রাজ্যের মানুষ তাকে সম্মান করে। তারা তাকে মা রানি বলে ডাকে। তার প্রতি তাদের আস্থা ও শ্রদ্ধা কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কিন্তু এই শ্রদ্ধা যদি নষ্ট হয়? যদি রাহাতের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়? তার মনের প্রশ্নগুলোর যেন কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না।

তিনি নিজেকে বললেন, “ভালোবাসা পবিত্র। কিন্তু এই ভালোবাসার কারণে যদি রাহাতের জীবন কঠিন হয়ে যায়? আমি কি তার সামনে এই বাধা হতে পারি?”


রেহানা জানেন, তিনি রাহাতকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলে রাহাত কষ্ট পাবে। কিন্তু তিনি তাকে ভুল পথে যেতে দিতে পারেন না।
নিজেকে বোঝালেন, “রাহাত এখন যুবক। তার মনের আবেগ একসময় স্থির হবে। আমি যদি তাকে সময় দিই, তবে সে নিজেই তার অনুভূতির ভুল বা সঠিকতা বুঝতে পারবে।”


রেহানা তার চোখ মুছলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, রাহাতের ভালোবাসা তিনি আপাতত গ্রহণ করবেন না। কিন্তু তাকে সরাসরি আঘাতও করবেন না। তাকে সময় দেবেন।


রেহানা কিছুদিন ধরে রাহাতের সঙ্গে আগের মতো স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলেন। কিন্তু তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন স্পষ্ট। তিনি রাহাতকে একা সময় কাটানোর সুযোগ দিচ্ছেন। রাজ্যের দায়িত্বে আরও বেশি মনোযোগ দিতে বলছেন।

রাহাত লক্ষ্য করল, তার মায়ের চোখে এক ধরনের দ্বিধা। তিনি জানেন, তার কথা মাকে আঘাত করেছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না, কীভাবে মাকে এই ভালোবাসা বোঝাতে হবে।

রেহানা প্রতিদিন নিজেকে আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি জানতেন, রাহাতের ভালোবাসা পবিত্র এবং গভীর, কিন্তু সমাজের নিয়ম ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে মানসিকভাবে এক কঠিন অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

রেহানা তার দিনের বেশিরভাগ সময় রাজ্যের কাজকর্মে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন। তিনি রাহাতকে নিয়মিত রাজ্য পরিচালনার কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায়, যখন রাহাত তার পাশে এসে বসত, তখন তার চোখে সেই গভীর ভালোবাসার ঝলক দেখা যেত। রেহানার মনে হতো, এই ভালোবাসা অস্বীকার করা তার পক্ষে সহজ হবে না।

রাহাত নিজেও কিছুটা বদলে গিয়েছিল। মায়ের প্রতি তার অনুভূতিগুলো আর লুকানোর চেষ্টা করত না। তবে সে বুঝতে পারছিল, রেহানা তাকে সময় দিচ্ছেন। সে এটাও জানত, তার মা একদিন তার ভালোবাসার গভীরতাকে স্বীকৃতি দেবেন।

একদিন সন্ধ্যায় রাহাত রাজপ্রাসাদের বাগানে গিয়ে দাঁড়াল। পূর্ণিমার আলোয় চারপাশ স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। রেহানা তার পেছনে এসে দাঁড়ালেন।
"রাহাত, তুমি এত চুপচাপ কেন?"

রাহাত মৃদু হেসে বলল, "মা, আমি ভাবছি। তুমি আমাকে বোঝার জন্য সময় নিচ্ছ, আমিও নিজেকে বোঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু একটা কথা আমি নিশ্চিত—তুমি ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ।"

রেহানা তার কথায় কোনো উত্তর দিলেন না। শুধু এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন, "সময় অনেক কিছুর উত্তর দিতে পারে, রাহাত। আমাদের শুধু ধৈর্য ধরতে হবে।"

রেহানা প্রতিদিন ভাবতেন, রাহাতের ভালোবাসা কি সত্যিই অসম্ভব? তাদের এই সম্পর্ক কি সমাজের চোখে ভুল? কিন্তু যখনই তিনি রাহাতের চোখের দিকে তাকাতেন, তার সমস্ত দ্বিধা যেন মুহূর্তে মিলিয়ে যেত।

রেহানা একদিন নিজেকে প্রশ্ন করলেন, "আমার মনের এই বাধা কি শুধু সমাজের কথা ভেবে? রাহাত যদি রাজ্যের রাজার দায়িত্ব নিয়ে এই সম্পর্ককে সম্মানজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তবে কি সত্যিই ভুল হবে?"

এক রাতে রেহানা তার কক্ষে বসে ছিলেন। রাহাত ধীরে ধীরে এসে বলল, "মা, আমি জানি, তুমি আমাকে বোঝার চেষ্টা করছ। আমি চাই না, তোমার ওপর কোনো চাপ পড়ুক। কিন্তু আমি একটা কথা জানতে চাই। তুমি কি আমার এই ভালোবাসাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করছ?"

রেহানা তার ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। তার চোখে এক ধরনের অপরাধবোধ আর ভালোবাসার মিশ্রণ। তিনি বললেন,
"রাহাত, আমি তোমার ভালোবাসাকে অস্বীকার করি না। কিন্তু এখনো মনে হয়, আমাদের সম্পর্ককে সঠিক পথে পরিচালিত করার সময় আসেনি।"

রাহাত মৃদু হেসে বলল, "তাহলে আমি অপেক্ষা করব, যতদিন প্রয়োজন। কারণ আমি জানি, আমার ভালোবাসা একদিন তোমার হৃদয় জয় করবে।"

রেহানা জানতেন, রাহাতের ভালোবাসা খাঁটি। তিনি নিজেও অনুভব করলেন, তার মনের গভীরে রাহাতের প্রতি এক ধরনের টান জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু তিনি সময় নিতে চাইলেন।

এরপর থেকে রেহানা এবং রাহাতের সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও গভীর হতে থাকল। তারা একে অপরের প্রতি নিজের অনুভূতি নিয়ে আরও বেশি স্বচ্ছ হতে থাকল।


একটি শান্ত সন্ধ্যা
প্রাসাদের বাগান। গাছের নিচে বসে রয়েছেন রেহানা। রাতের হালকা হাওয়া তার মুখের চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। রাহাত এসে ধীরে ধীরে তার পাশে বসল।
"মা, তোমার সঙ্গে এখানে বসে থাকা যেন পৃথিবীর সব শান্তি নিয়ে আসে," রাহাত মৃদু হেসে বলল।

রেহানা তাকিয়ে দেখলেন তার ছেলে কতটা শান্ত এবং স্নিগ্ধ। তিনি হেসে বললেন, "তুমি কখনোই বদলাবে না, রাহাত। ছোটবেলা থেকেই তুমি এমনই। আমার সঙ্গ ছাড়া থাকতে পারো না।"

রাহাত মৃদুস্বরে বলল, "মা, এটা শুধু ছোটবেলার কথা নয়। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তোমার কাছ থেকে দূরে থাকা অসম্ভব।"

রেহানা কিছু বললেন না। তবে রাহাতের এই কথাগুলো তার হৃদয়ের গভীরে নাড়া দিল।

এক বৃষ্টিভেজা বিকেল

একদিন বিকেলে আকাশ কালো করে এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুষলধারে বৃষ্টি নামল। রেহানা প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলেন। হঠাৎ রাহাত এসে দাঁড়াল।
"বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগছে?" রাহাত প্রশ্ন করল।

"হ্যাঁ," রেহানা মৃদু হেসে বললেন।

রাহাত হঠাৎ তার হাত ধরে বলল, "চল, বাইরে যাই। আজকের বৃষ্টিটা যেন আমাদের ডাকছে।"

রেহানা প্রথমে দ্বিধা করলেও রাহাতের টানে বাইরে চলে গেলেন। বৃষ্টির ফোঁটা তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল। রেহানা একটু অপ্রস্তুত হলেও রাহাতের মুখের হাসি দেখে তার মন ভরে গেল।

"তুমি এত আনন্দ পাচ্ছ কেন?" রেহানা জিজ্ঞেস করলেন।

রাহাত হেসে বলল, "কারণ আমি জানি, এই মুহূর্তগুলো আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল থাকবে। আমি চাই তোমার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত এভাবেই কাটাতে।"

রেহানা তার ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। তার মনে হলো, এই মুহূর্তে রাহাতের ভালোবাসার গভীরতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

রাত্রে তারা প্রাসাদের ছাদে বসে চাঁদ দেখছিলেন। চারপাশে ছিল নিস্তব্ধতা। রেহানা তার শাল গায়ে জড়াচ্ছিলেন।
রাহাত এগিয়ে এসে বলল, "মা, তোমার গায়ে আরও কিছু দিতে হবে? ঠান্ডা লাগবে।"

রেহানা মৃদু হেসে বললেন, "তুমি আমার এত যত্ন নাও কেন, রাহাত?"

"কারণ তোমার যত্ন নেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তোমার পাশে থাকা আমার সবচেয়ে বড় সুখ।"

রেহানার মন এক অদ্ভুত আবেগে ভরে উঠল। তিনি বুঝতে পারলেন, রাহাতের এই ভালোবাসা সাধারণ নয়। এটি গভীর এবং খাঁটি।

এই মুহূর্তগুলো রেহানার মনে রাহাতের ভালোবাসাকে আরও জীবন্ত করে তুলল। তিনি অনুভব করলেন, রাহাত শুধু তার প্রতি অনুগত নয়; তার প্রতি এক গভীর আকর্ষণ বোধ করে। এই মুহূর্তগুলো ধীরে ধীরে রেহানার মনকে বদলাতে শুরু করল। তবে তিনি এখনো নিজের সিদ্ধান্তে সময় নিতে চাইলেন।


রেহানার মনের দ্বিধা ক্রমেই কমতে শুরু করেছিল। রাহাতের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কথা যেন তার হৃদয়ের গোপন অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলছিল। তবে রেহানা তখনো নিশ্চিত ছিলেন না—এটা কি সত্যিই গ্রহণযোগ্য হবে?

পরদিন সকালে রেহানা প্রাসাদের ছোট্ট বাগানে বসে ছিলেন। তার হাতে ছিল রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র। রাহাত সেখানে এল এবং মৃদু হেসে বলল,
"মা, এত কাজ তোমার জন্য নয়। কিছু সময় নিজের জন্যও রাখো।"

রেহানা তাকে বললেন, "রাজ্যের কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই, রাহাত।"

রাহাত একটু হেসে তার দিকে তাকাল। "তোমার জন্য রাজ্য নয়, তুমি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।"

রেহানা থমকে গেলেন। তার চোখে জল চলে এল, কিন্তু তিনি নিজেকে সামলে নিলেন।

রাতের এক গভীর মুহূর্তে রাহাত তার মায়ের কাছে এল। তার মুখে গভীর চিন্তার ছাপ।
"মা, আমি বুঝি তুমি দ্বিধায় আছো। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমি এমন কিছু করব না যা তোমার সম্মান কিংবা রাজ্যের মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে। আমি শুধু চাই তুমি আমার হৃদয়ের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারো।"

রেহানা কোনো উত্তর দিলেন না। কিন্তু তার হৃদয়ের ভিতর গভীর এক আলোড়ন সৃষ্টি হলো। তিনি অনুভব করলেন, রাহাতের ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়; এটি তার প্রতি এক অমোঘ সম্মান।

এরপর থেকে রেহানা ধীরে ধীরে রাহাতকে আরও সময় দিতে শুরু করলেন। তারা একসঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করতে যেতেন। একদিন, গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর রেহানা হঠাৎ অনুভব করলেন, রাহাত তাদের মধ্যে একজন আদর্শ নেতা হয়ে উঠেছে। তার মনের আর কোনো দ্বিধা রইল না।

রেহানা একদিন গভীর রাতে রাহাতকে ডেকে বললেন,
"রাহাত, আমি রাজ্যের শাসন নিয়ে সব সময় গর্ব করি। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব তুমি।"

রাহাত মায়ের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,
"তাহলে কি তুমি আমাকে নিজের কাছে চিরতরে রাখার অনুমতি দেবে?"

রেহানা তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
"সময় সবকিছুর উত্তর দেয়, রাহাত। হয়তো আমার উত্তরও সময়ই দেবে।"

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে রেহানা বুঝতে পারলেন, তিনি নিজেও রাহাতের ভালোবাসার প্রতি গভীর টান অনুভব করছেন। তার সমস্ত দ্বিধা ক্রমেই কেটে যেতে লাগল। রাজ্যের মানুষের সুখ, রাহাতের প্রতি তাদের আস্থা, এবং রাহাতের প্রতি তার নিজের ভালোবাসা—সবকিছু যেন এক সুতোয় বাঁধা হয়ে গেছে।

চালায়। আশেপাশের রাজ্যগুলোর মধ্যে এই রাজ্য সবচেয়ে শক্তিশালী হলেও, আক্রমণের আকস্মিকতা রাজ্যের সেনাবাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

রাহাত এই সংকটের সময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে নিজের সাহস এবং কৌশল প্রমাণ করে। সে রেহানার সঙ্গে মিলে দ্রুত প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা করে। রেহানা তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সেনাদের উৎসাহিত করেন এবং রাহাত সামনের সারিতে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করে।

এই যুদ্ধে রাজ্যের মানুষ রাহাতের বীরত্ব এবং রেহানার দূরদর্শিতা দেখে মুগ্ধ হয়। তারা উপলব্ধি করে, এই দুইজন একসঙ্গে থাকলে রাজ্যের উন্নতি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত।

একদিন প্রাসাদের মূল দরবারে বিচার আসলো। গ্রামের কিছু লোক অভিযোগ নিয়ে এল যে একজন তরুণ যুবক তার চেয়ে অনেক বড় এক বৃদ্ধ মহিলাকে বিয়ে করেছে। তাদের মতে, এই সম্পর্ক সমাজের রীতিনীতির পরিপন্থী।

দরবারের সবাই একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল। রেহানা এবং রাহাত তখন দরবারে উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যের প্রধান বিচারক বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।

রেহানা প্রাসাদের একটি কোণে বসে ঘটনাটি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন। তার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো—এটি কি তাদের নিজের সম্পর্কের প্রতিফলন হতে পারে?

যুবক এবং বৃদ্ধা মহিলাকে দরবারে উপস্থিত করা হলো। যুবক বলল,
"আমি তাকে ভালোবাসি। তার বয়স আমার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে, কিন্তু তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমি তার প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"

বৃদ্ধা মহিলা অশ্রুসজল চোখে বললেন,
"সমাজ আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের ভালোবাসা সৎ এবং পবিত্র। আমরা কাউকে আঘাত করতে চাই না। আমরা শুধু একসঙ্গে থাকতে চাই।"

গ্রামের কয়েকজন প্রতিবাদ করে বলল,
"এটা সমাজের রীতিনীতির বিরুদ্ধে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।" কিন্তু অন্যদিকে কিছু মানুষ তাদের সমর্থন জানাল।


এই কথাগুলো রেহানার মনে গভীর প্রভাব ফেলল। তিনি অনুভব করলেন, রাহাতের ভালোবাসাও ঠিক এমনই সৎ এবং গভীর। রেহানা বুঝতে পারলেন, সমাজের চোখে যা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, তা আসলে ভালোবাসার প্রকৃত রূপের সামনে তুচ্ছ।

রেহানা এই পরিস্থিতিকে নিজের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখলেন। তিনি রাহাতকে একটি ইশারা করলেন এবং দরবারের সামনে উঠে বললেন,
"যদি ভালোবাসা বয়স, অবস্থান বা সমাজের রীতিনীতির কারণে বিচারযোগ্য হয়, তবে আমাদের নিজেদের দিকে তাকানো উচিত। আমরা কি কখনো ভেবেছি, ভালোবাসা কেন সৃষ্টি হয়? ভালোবাসার শক্তি রাজ্য রক্ষা করতে পারে, মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।"

তিনি আরও যোগ করলেন,
"আজ যদি আমরা এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিই, তবে আমরা দেখাতে পারব যে আমাদের রাজ্য সত্যিই সব ধরনের ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখায়।"


এরপর দরবারে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি বলল,
"আমি আমার চেয়ে ত্রিশ বছরের ছোট এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। আমাদের সম্পর্ক সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য না, কারণ সে আমার রক্তের সম্পর্কের। তাই আমরা আজও আমাদের সম্পর্ক সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে আমি আমার এই সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি চাই আমার একজন উত্তরাধিকার যে কিনা আমার পরবর্তী সময়ে আমার সবকিছু দেখাশোনা করবে। আমার সব স্মৃতি গুলো আগলে রাখবে। আমার সকল দায়িত্বগুলো সে নিজে পালন করবে।


দরবারে উপস্থিত মানুষ তখন ওই বৃদ্ধের কাছে জানতে চায় সেই নারীর পরিচয়। বৃদ্ধ যখন সেই নারীর পরিচয় প্রকাশ করে তখন সবাই চমকিত হয়। কারন সেই নারী ছিল ওই বৃদ্ধের নিজের মেয়ে।


দরবারে সবাই একে একে এই সম্পর্কের পক্ষে কথা বলতে শুরু করল। রেহানা বুঝতে পারলেন, এখনই সময় তার এবং রাহাতের ভালোবাসাকে সামনে আনার।

রেহানা রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,
"আজকের এই ঘটনা আমাকে নতুন করে শিখিয়েছে, ভালোবাসা সবসময় সৎ এবং পবিত্র। আমি বিশ্বাস করি, রাজ্যের প্রতিটি মানুষ এটা উপলব্ধি করতে পারবে।"

রাহাত মৃদু হেসে বলল,
"তাহলে কি তুমি আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করবে?"

রেহানা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
"সময়ই সব উত্তর দেবে। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পেরেছি, ভালোবাসার জন্য আমরা রাজ্যের মানুষকে দৃষ্টান্ত হতে পারি। প্রয়োজন হলে আমি এ রাজ্যের রাজপুত্র রাহাত ফেরদৌসের সাথে এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করব। তাতে করে রাজ্যে সব ধরনের ভালোবাসার স্বীকৃতি পায়।"

রেহানার বক্তব্য দরবারে উপস্থিত সবার মনে দাগ কাটল। রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারল, ভালোবাসা কোনো বাধার কাছে মাথা নত করে না। এর মধ্যেই একজন প্রবীণ রাজকর্মচারী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
"রেহানা দেবী, আপনি আমাদের মাতার মতো। আপনার কথা শুনে আমি উপলব্ধি করছি, ভালোবাসার এই উদাহরণ আমাদের রাজ্যের জন্য প্রেরণা হতে পারে। যদি আপনার এবং যুবরাজের মধ্যে এমন কোনো অনুভূতি থাকে, তবে আমরা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।"

রেহানার চোখে জল চলে এলো। তিনি ভাবলেন, এটাই হয়তো সেই সুযোগ, যার জন্য তিনি এত দিন অপেক্ষা করছিলেন।


দরবারের পরে রেহানা এবং রাহাত একান্তে কথা বললেন। রেহানা বললেন,
"রাহাত, আমি ভেবেছিলাম সমাজ আমাদের সম্পর্ক কোনোদিন মেনে নেবে না। কিন্তু আজ আমি তাদের চোখে সমর্থন দেখেছি। তবু আমি চাচ্ছি, আমরা ধীরে এগোই।"

রাহাত তার দিকে তাকিয়ে বলল,
"মা, আমি বুঝি তোমার দুশ্চিন্তা। কিন্তু আমি জানি, তুমি কখনো কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।"


পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে রেহানা এবং রাহাতের এই বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চলতে লাগল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বেশিরভাগ মানুষ তাদের সমর্থন জানাল। গ্রামে গ্রামে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া গেল, যেখানে অসম বয়সী দম্পতিরা সুখী জীবন কাটাচ্ছে।


রাজ্যের মানুষ উপলব্ধি করল, তাদের রানি এবং যুবরাজ শুধু ক্ষমতার প্রতীক নন, বরং ভালোবাসারও প্রতীক। তারা সিদ্ধান্ত নিল, রেহানা এবং রাহাতের সম্পর্ককে স্বীকৃতি জানিয়ে একটি বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হবে।

রেহানা প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু রাহাত বলল,
"তুমি সবসময় রাজ্যের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছ। এবার রাজ্য তোমার পাশে দাঁড়াতে চায়। এটা গ্রহণ করো।"

অবশেষে রেহানা রাজ্যের সামনে রাহাতের ভালোবাসা গ্রহণ করলেন। উৎসবের দিন, রাজ্যের মানুষ তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। রেহানা তার বক্তব্যে বললেন,
"আজ আমি বুঝতে পেরেছি, ভালোবাসা সব বাধা অতিক্রম করতে পারে। রাজ্যের মানুষের এই সমর্থন আমাদের ভালোবাসাকে আরও শক্তিশালী করেছে।"

রাহাত তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
"আমাদের সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি রাজ্যের জন্য ভালোবাসার এক নতুন উদাহরণ। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে থাকব।"

রাজ্যের ইতিহাসে এমন রাজকীয় বিবাহ আগে কখনো দেখা যায়নি। পুরো রাজ্য আলোয় ঝলমল করছিল। প্রাসাদের চারপাশ সাজানো হয়েছিল সাদা আর সোনালি ফুলে। রাজ্যের প্রতিটি কোণ থেকে সাধারণ মানুষ প্রাসাদের প্রাঙ্গণে এসে ভিড় জমিয়েছিল। সবার মুখে ছিল আনন্দ আর চোখে ছিল কৌতূহল—তারা দেখতে চেয়েছিল, কেমন হয় এমন একটি বিশেষ সম্পর্কের বিবাহ।



বিবাহ অনুষ্ঠানে রেহানা নিজে নিশ্চিত করেছিলেন যে, রাজ্যের প্রতিটি কোণের মানুষের কাছে এই বিবাহের বার্তা পৌঁছায়। এ ছিল তাদের ভালোবাসা এবং সম্পর্ককে রাজ্যের সামনে স্বীকৃতি দেওয়ার এক অনন্য উদযাপন।

বিবাহের দিন সকালে রেহানা নিজেকে আয়নার সামনে প্রস্তুত করছিলেন। তার পরনে ছিল একটি সোনালি কারুকাজ করা লাল শাড়ি, যা তার ব্যক্তিত্বের মতোই শালীন এবং গৌরবময়। রেহানার হাতে ছিল সেই ব্রেসলেট, যা একসময় রাহাত ছোটবেলায় নিজের হাতে তৈরি করে তাকে উপহার দিয়েছিল। তিনি ভাবছিলেন, আজ রাজ্য তার এবং রাহাতের ভালোবাসার সাক্ষী হবে।

রাহাতও কম চিন্তিত ছিল না। তার পরনে ছিল সাদা শেরওয়ানি এবং সোনালি পাগড়ি। তার মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছিল। সে জানত, আজ সে তার মনের মানুষকে চিরতরে নিজের পাশে পাবে। কিন্তু তার মন পড়ে ছিল রেহানার প্রতিক্রিয়ার দিকে।

বিবাহ অনুষ্ঠানটি শুরু হলো দুপুরে। বিশাল রাজপ্রাসাদের বাগানে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। প্রথা অনুযায়ী, রেহানা মঞ্চে এসে বসলেন। রাহাতও তার পাশে এসে দাঁড়াল। রাজ্যের মানুষ তখন প্রাসাদের বাইরে জড়ো হয়ে তাদের প্রিয় রানি এবং যুবরাজের এই বিশেষ মুহূর্ত দেখছিল। বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে রেহানা এবং রাহাত একে অপরের দিকে তাকালেন। রাহাত হাসিমুখে বলল,
"তুমি কি আমাকে চিরতরে তোমার সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করছো?"

রেহানা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর মৃদু হেসে বললেন,
"তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব, রাহাত। আজ আমি রাজ্যের সামনে তা স্বীকার করছি।"

এরপর তারা একে অপরের হাতে আংটি পরিয়ে দিলেন।

বিবাহ শেষে রাজ্যের প্রতিটি মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ল। সবাই তাদের সম্পর্ককে মেনে নিল। প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেহানা রাজ্যের মানুষের উদ্দেশ্যে বললেন,
"আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমি আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ আপনারা আমাদের ভালোবাসার প্রতি যে সম্মান দেখিয়েছেন, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো রাজ্যের জন্যই একটি উদাহরণ।"

রাহাত যোগ করল,
"আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা রাজ্যের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের ভালোবাসা শুধু আমাদের নয়, আপনাদের সবার জন্য একটি শক্তি হয়ে উঠবে।"

বিবাহ শেষে রেহানা এবং রাহাত একান্তে কিছু সময় কাটালেন। রেহানা রাহাতকে বললেন,
"তুমি শুধু আমার জীবন নয়, আমার অস্তিত্বের কারণ। আজ রাজ্য আমাদের গ্রহণ করেছে, আর আমি তোমাকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছি।"

রাহাত তার হাত ধরে বলল,
"আমার জীবন তোমার জন্যই নিবেদিত। আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।"

রেহানা এবং রাহাতের বিবাহ কেবল একটি সম্পর্ক নয়, এটি ভালোবাসার শক্তি, সামাজিক বাধা অতিক্রম করার সাহস এবং রাজ্যের মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের প্রতীক হয়ে রইল।

রাজ্যের মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের ভালোবাসার গল্প স্মরণ করল। তারা শুধু রাজ্যের রানি এবং যুবরাজ নয়, বরং ভালোবাসার এক চিরন্তন উদাহরণ হয়ে থাকলেন।

গল্পের সমাপ্তি এখানেই।
 
Top