দুই
ওর কথা শুনে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এইতো মাত্র বছর দুয়েক আগে জমি জমা সক্রান্ত এক গ্রাম্য বিবাদের জেরে আমার বাবা খুন হয়েছেন ।শুধু বাবা নয় বাবার সাথে আমার মেজ কাকাও খুন হয়েছেন। অবশ্য যাদের সঙ্গে বিবাদ তারা সবাই এখন জেলে যাবজ্জীবন সাজা খাটছে। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না বঙ্কু ঠিক কি বলতে চাইছে। এই তো সবে আমরা শোক কাটিয়ে উঠলাম এর মধ্যেই মা আবার কার সাথে বিয়ের পিড়ি তে বসতে রাজি হয়ে গেল? আমার মা দেখতে ঘরোয়া। গায়ের রঙ মাঝারি। শুনেছি আমার জন্মের সময় দেখতে একবারে ছিপছিপে ছিল, শেষ পাঁচ ছয় বছরে বেশ মুটিয়েছে। বুক পাছা বেশ ভারি হয়েছে। মার বয়স তখন প্রায় সাঁইত্রিশ মতন। মা কচি খুকি নয় যে এই বয়েসে বিয়ে আবার করতেই হবে, না হলে সারা জীবন একা কি করে কাটাবে।
মার আবার ফুলশয্যা হবে, নতুন স্বামীর আদর খেয়ে পেটে বাচ্ছা আসবে এসব ভাবতেই আমার মাথাটা বনবন করে একটু ঘুরে উঠলো। মা কে তো সারাদিন ঘরের কাজ, আমার পড়াশুনা আর রান্না বান্না নিয়েই ব্যাস্ত থাকতে দেখি। মাকে দেখে তো মনে হয়না যে মার মনে আবার বিয়ে করার বা নতুন করে সংসার পাতার সাধ আছে। আমার সাইত্রিস আটত্রিশ বছর বয়সি গিন্নিবান্নি মা আবার বিয়ে করতে চলেছে এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিলনা।
বঙ্কু কে বললাম -ধুর কি যা তা বলছিস। বঙ্কু বলে -না রে সত্যি, আমি নিজের কানে শুনলাম। তোর ঠাকুমা নাকি অনেক দিন থেকেই তোর মার পেছনে পরে আছে বিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু তোর মা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলনা। তাই তোর ঠাকুমা আমার মাকে তোর মাকে বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। বলেছিল তোর মাকে রাজি করাতে পারলে এবার পুজোয় তিন তিনটে দামি শাড়ি কিনে দেবে।
এসব শুনে আমি হেসে ওকে বললাম -বঙ্কু তুই কি শুনতে কি শুনেছিস। আমার ঠাকমা নিজের বড় ছেলের বিধবা বউয়ের আবার বিয়ে দিতে যাবে কোন দুঃখ্য?এইতো তো সবে মাত্র দু দুটোছেলের বিয়োগের শোক সামলে উঠলো ঠাকুমা। আর দেখ আমার ঠাকুমা অত্যন্ত বিষয়ী আর ধান্দাবাজ টাইপের মানুষ। উনি এত উদার টাইপের কোনদিন ছিলেননা আর হবেনও না। আর আমার দিদিমা মার বিয়ে দিতে চাইলে তাও বুঝতাম। যতই হোক পেটের মেয়ে বলে কথা। কিন্তু আমার দিদিমা অত্যন্ত সেকেলে টাইপের গ্রামগঞ্জের মানুষ। উনি আবার আমার মায়ের বিয়ে দেবার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পরেছেন এটা ভাবাই জায়না। দিদিমা তো মাকে প্রায়ই বলে তোর শ্বশুরবাড়িতে থাকতে কোন অসুবিধা হলে তুই আমার কাছে এসে থাক। কিন্তু দিদিমা মাকে এই সাইত্রিশ বছর বয়েসে আবার বিয়ে করতে বলেছে এটা হতেই পারেনা।
বঙ্কু মাথা নেড়ে বললো -না তোর দিদিমা নয় এটা তোর ঠাকুমারই বুদ্ধি। তুই ঠিকই বলেছিস তোর ঠাকুমা একখানি মাল, এক নম্বরের বিষয়ী মানুষ, তাই তোর ঠাকুমাই অনেক ভেবে মাথা থেকে এই প্ল্যান বার করেছে। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকাতে বঙ্কু বললো -দাঁড়া তোকে ব্যাপারটা আগে বুঝিয়ে বলি। তুই তো জানিস তোদের যে এখন এত বিঘা জমি জমা আছে তার বেশির ভাগটাই তোর মামাবাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে পাওয়া। তোর মামারা তোর মার বিয়ের সময় এই গ্রামে এসে ওই জমি কিনে তোর মায়ের নামে করে দিয়েছিল। আর যৌতূক হিসেবে পাওয়া তোদের ওই অত বিঘা জমির বেশিরভাগটাই এখোনো তোর মায়ের নামে আছে। আমি বললাম -হ্যাঁ সেটা ঠিক। আমার ঠাকুরদার একটা পুকুর আর কিছু জমি জমা ছিল কিন্তু সেটা মায়ের নামে যতটা আছে তার থেকে অনেক অনেক কম। বঙ্কু বলতে লাগলো –ঠিক বলেছিস...যাই হোক যেটা বলছিলাম সেটা হল...এখন তোর ঠাকুমার মনে ভয় ঢুকেছে যে তোর মা যদি কোন কারনে তোর মামার বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করে তাহলে তোর মামারা ওই জমি কায়দা করে নিজের নামে করে নেবে। তোর মেজকাকিমা যেমন তোর মেজ কাকা খুন হবার পর তোর ঠাকুমার সাথে ঝগড়া করে পাশের গ্রামে নিজের বাপের বাড়ি গিয়ে আছে সেরকম। মার কাছে শুনেছি তোর মেজকাকিমাও বিয়েতে যে জমি জমা যৌতূক হিসেবে পেয়েছিল এখন সেটা এখন তোর মেজকাকিমার বাবা ফেরত চাইছেন। অবশ্য তোর মেজকাকিমার নামে জমি জমা খুব বেশি একটা নেই তাই তোর ঠাকুমা হয়তো বাধা দেবেননা। কিন্তু তোর মার নামে তোদের বর্তমান সম্পত্তির প্রায় আশিভাগ জমি আছে। তাই বংশের জমি বংশের নামে রাখতে তোর ঠাকুমা তোর ছোটকাকার সাথে তোর মার আবার বিয়ে দেবার প্ল্যান করেছে।
আমি ছোটকার নাম শুনে বিরাট ধাক্কা খেলাম। কি যে ব্যাপারটা হতে চলেছে কিছুতেই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
বঙ্কু কে বললাম -ধুর ছোটকার কি বিয়ে করার বয়স হয়েছে নাকি... আমার থেকে তো মাত্র কয়েক বছরের বড়। ছোটকা তো সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। আর মার তো প্রায় সাইত্রিশ বছর বয়েস। মা কি করে ছোটকা কে বিয়ে করবে। বঙ্কু বলে -আরে সেই জন্যই তো তোর মা প্রথমে বিয়ে করতে চাইছিল না। আমার মাকে বলে ছিল আমার শ্বাশুড়ির মাথাটা একবারে খারাপ হয়ে গেছে মোক্ষদা, তুই বল নিজের পেটের ছেলের বয়সি দেওরের সাথে কোন মুখে আমি রোজ রাতে দরজা বন্ধ করে শুতে যাব। কিন্তু মা নাকি তোর মাকে কি সব বুঝিয়েছে, যাতে শেষ পর্যন্ত তোর মা রাজি হয়েছে। আমি বললাম – বলিস কিরে? মোক্ষদা মাসি মা কে কি এমন বোঝালো যে মা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল? বঙ্কু বললো -আমার মা কে তো তুই জানিস।সেক্স ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। বাবা নেই বলে যার তার সাথে যেখানে সেখানে শুয়ে পড়ে। তোর মাকে সেক্স ফেক্স নিয়ে অনেক কিছু বুঝিয়েছে। বলেছে... মাথাটা তোমার খারাপ হয়েছে বউদি... তোমার শ্বশুড়ির নয়। দু বছর হল বিধবা হয়েছ... এই বয়েসে আবার একটা বিয়ে করার সুযোগ যখন পেয়েছ তখন ছাড়তে যাচ্ছ কোন দুঃখ্যে ? কলেজে পড়া একটা কচি ছেলেকে বিছানায় তোলার এমন সুযোগ পেলে কেউ ছাড়ে। এসব বলে বলে তোর মার মাথাটা খারাপ করে দিয়েছে আরকি। আমি বলি -এসব যে বলেছে তুই কি করে জানলি। বঙ্কু বলে -বললাম না চম্পা মাসির সাথে মা গল্প করছিল আমি শুনে ফেলেছি। মা তো বলছিল সামনের বছর আমার তিনটে শাড়ি একবারে পাকা আর বখশিশ ও ভালই জুটবে।
আমি বলি -চম্পা মাসিটা কে রে? বঙ্কু বলে -আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে, স্বামীটা মুম্বাইতে সোনার দোকানে কাজ করে। মা তো সারা দিন সময় পেলেই চম্পা মাসির সাথে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে। চম্পা মাসির চরিত্রও সেরকম, বলেনা রতনে রতন চেনে। কম বয়সি ছেলে দেখলে দুজনের নাল পরে। জানিস মা কাছে না থাকলে চম্পা মাসি আমার দিকেও এমন করে তাকায় যেন মনে হয় সুযোগ পেলেই ছিঁড়ে খাবে। যাই হোক ছাড় চম্পা মাসির কথা। আসল বিপদের কথাটা হল যে তোর মা নাকি মার কথা শুনে শেষ পর্যন্ত নিম রাজি হয়েছে।
আমার মাথা আর কাজ করছিলনা। যে ছোটকা আমার থেকে মাত্র কয়েক বছরের বড়, যে ছোটকা আর আমাকে ছোটবেলায় মা লাংটো করে একসঙ্গে চান করিয়েছে, সেই ছোটকা কে মা কিনা শেষে বিয়ে করতে যাচ্ছে। অদ্ভুত ব্যাপার... কারন এখন মা ছোটকা কে খুব একটা পছন্দও করেনা। এই তো সেদিনও পাশের বাড়িরই অপর্ণা পিসি কে বলছিল -আমাদের পিকুটা ভীষণ এঁচোরে পাকা হয়ে যাচ্ছে বউদি, গ্রামের যত বদ ছেলেগুলো হয়েছে ওর বন্ধু।