- 246
- 604
- 94
সুজাতা, আমার মা, আমার স্ত্রী
আমার নাম মোহন এবং আমি আমার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। যখন আমার মা ১৬ বছর এবং আমার বাবা ২৭ বছর বয়সের ছিল তখন আমার জন্ম হয়। বাবা একটা কেমিক্যাল কারখানায় কাজ করতো । উপার্জন যথাযথভাবে ভাল না হওয়ায় আমরা একটি ছোট ষ্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম যাতে একটা বেডরুম, একটা রান্না ঘর, একটা বাইরে বসার ঘর আর একটা টয়লেট ছিল।
আমার মা সুজাতা আমার বাবা কে বিয়ে করেছিল যখন মায়ের বয়স ১৫ বছর এবং পরের বছর আমার জন্ম হয়েছিল। মা তখনো পড়াশোনা করছিলো এবং ৩ বছর পরে তাঁর ডিগ্রি শেষ করে। আমিও মায়ের মতো পড়াশুনোয় ভালো ছিলাম। আমার মা বাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে পড়াতো। মা আমাকে কবিতা, গণিতের টেবিল, বানান ইত্যাদি আবৃত্তি করাতেন তাঁর অবিরাম নজরদারি আমাকে সর্বদা বিরক্ত করতো । কিন্তু আমি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হই তখন এই সমস্তগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আমি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংনিয়ে পড়াশুনা করি।
এখন আমার বাড়ির সম্বন্ধে কিছু বলি। আমি যেমনটি উল্লেখ করেছি যে আমরা একটি ষ্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম তাই আমাদের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা ছিল না। আমার বয়স ৭ -৮ বছর অবধি আমরা সবাই একই ঘরে শুতাম। আমার একটি আলাদা বিছানা ছিল যা আমার বাবা মা এর বিছানা থেকে কিছুটা দূরে ছিল। আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে বাবা-মা বাইরে বসার ঘরে ঘুমোতে শুরু করলো। প্রতি রাতে আমার বাবা মা বসার ঘরে একটি গদি তে তারা দুজন ঘুমোতো। আমার মনে আছে যখন আমি প্রায় ষোল বা সতেরো বছর বয়সে তখন অবধি তারা এইভাবেই ঘুমোতো। আমি লক্ষ্য করতাম বাবা-মা বিছানায় সেইরকম কোনো কিছু করতেন না যেটা বৈবাহিক জীবনে প্রত্যেক স্বামী স্ত্রী করে থাকে। ভাবলাম ব্যাপারটা কী। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে আমার বাবা-মা বিবাহবিচ্ছেদ করবে না তো । এমনকি আমার সন্দেহও হয়েছিল যে আমার বাবা অন্য কোনও মহিলাকে নিয়ে চলে যাবে না তো । ভাগ্যক্রমে এই ধরণের কিছুই ঘটেনি। ইতিমধ্যে আমার মা স্কুল শিক্ষক হিসাবে চাকরি নেয় এবং শীঘ্রই স্কুলে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে সব কিছু ঠিক ঠাক চলছিল না বাড়িতে কারণ আমি লক্ষ্য করেছি যে প্রতি দিন কাজের শেষে আমার বাবা খুব বিবর্ণ মুখ নিয়ে বাড়িতে আসতেন এবং তিনি আরও ক্লান্ত হয়ে থাকতেন। একবার আমি বাবা কে বললাম যে তাঁর শরীরের চেকআপ করানো টা দরকার কিন্তু বাবা এড়িয়ে গেলেন। একদিন মাঝ রাতে বাবার কারখানা থেকে একটি ফোন পেলাম যে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই খবর শুনে আমার মা কাঁদতে শুরু করলো আমিও কান্নায় ভেঙে পড়লাম এবং কী করব বুঝতে পারছি না। আমার মা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো এবং আমি তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। মধ্যরাতে কোনও গাড়ি পাওয়া যায়নি। পরের দিন ভোরে আমরা বাবাকে দেখতে যাই। আমরা দেখা করার সাথে সাথে বাবার চোখ মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখতে পাই। আমরা দুজনেই আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করছিলাম যে তাঁর কি হয়েছে ? বাবা কিছুই বলছিলো না।
একজন অল্প বয়স্ক ডাক্তার আমার বাবাকে পরীক্ষা করেছিলেন এবং রক্তের রিপোর্টগুলি আমার হাতে দিয়ে বলতে শুরু করেন "এই রিপোর্ট টা দেখুন, কেমিক্যাল কারখানায় কাজ করে করে আপনার বাবার শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ঢুকে গেছে যেটা ওনার রক্তের সাথে মিশে গেছে।“ তিনি আরো বললেন " আরো আগে আপনাদের আসা উচিত ছিল কারণ আপনার বাবার অনেক অঙ্গ খারাপ হয়ে গেছে তাই এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।” এটা শুনে আমি আর মা খুব ভয় পেয়ে গেলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না কি করবো আমরা?
কারখানার একজন উচ্চপদস্থ অফিসার ছিলেন হাসপাতালে। তিনি বললেন " আপনারা কারখানা থেকে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন এবং আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আপনারা সেটা পেয়েও যাবেন।"
আমরা বাবার রুম এ গেলাম এবং দেখলাম বাবা শুয়ে আছে।
"ডাক্তার কি বললো ?" বাবা জিজ্ঞাসা করলো।
আমি বললাম " তোমার রক্তের কিছু সমস্যা আছে তবে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।”
আমার বাবা যেন কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলো যে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে তাই সে আমাকে কাছে ডেকে বললো "দেখ মোহন আমি জানি আমার সময় এসে গেছে। আমি অনুভব করতে পারছি যে আমি মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে তবে আমি এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমি তোকে আর তোর মাকে নিয়ে চিন্তিত।” বাবার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। আমার মাও কাঁদছিলো।
বাবা বললো "আমি তোর কাছ থেকে দুটি প্রতিশ্রুতি চাই।"
আমি বললাম " বাবা কি প্রতিশ্রুতি চাও আমার কাছে থেকে"?
বাবা - "তুই তোর কলেজে শেষ করিস আর আমার মৃত্যুর দ্বারা বিভ্রান্ত হবি না।"
আমি - "অন্যটি কি?
বাবা - "আমি চাই তুই তোর মায়ের দেখাশোনা করবি এবং কখনই তোর মা কে একা রেখে কোথাও যাবি না।"
"তুমি আমাকে না বললেও আমি এটি করতাম," আমি বাবা কে আশ্বাস দিলাম।
আমার নাম মোহন এবং আমি আমার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। যখন আমার মা ১৬ বছর এবং আমার বাবা ২৭ বছর বয়সের ছিল তখন আমার জন্ম হয়। বাবা একটা কেমিক্যাল কারখানায় কাজ করতো । উপার্জন যথাযথভাবে ভাল না হওয়ায় আমরা একটি ছোট ষ্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম যাতে একটা বেডরুম, একটা রান্না ঘর, একটা বাইরে বসার ঘর আর একটা টয়লেট ছিল।
আমার মা সুজাতা আমার বাবা কে বিয়ে করেছিল যখন মায়ের বয়স ১৫ বছর এবং পরের বছর আমার জন্ম হয়েছিল। মা তখনো পড়াশোনা করছিলো এবং ৩ বছর পরে তাঁর ডিগ্রি শেষ করে। আমিও মায়ের মতো পড়াশুনোয় ভালো ছিলাম। আমার মা বাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে পড়াতো। মা আমাকে কবিতা, গণিতের টেবিল, বানান ইত্যাদি আবৃত্তি করাতেন তাঁর অবিরাম নজরদারি আমাকে সর্বদা বিরক্ত করতো । কিন্তু আমি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হই তখন এই সমস্তগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আমি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংনিয়ে পড়াশুনা করি।
এখন আমার বাড়ির সম্বন্ধে কিছু বলি। আমি যেমনটি উল্লেখ করেছি যে আমরা একটি ষ্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম তাই আমাদের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা ছিল না। আমার বয়স ৭ -৮ বছর অবধি আমরা সবাই একই ঘরে শুতাম। আমার একটি আলাদা বিছানা ছিল যা আমার বাবা মা এর বিছানা থেকে কিছুটা দূরে ছিল। আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে বাবা-মা বাইরে বসার ঘরে ঘুমোতে শুরু করলো। প্রতি রাতে আমার বাবা মা বসার ঘরে একটি গদি তে তারা দুজন ঘুমোতো। আমার মনে আছে যখন আমি প্রায় ষোল বা সতেরো বছর বয়সে তখন অবধি তারা এইভাবেই ঘুমোতো। আমি লক্ষ্য করতাম বাবা-মা বিছানায় সেইরকম কোনো কিছু করতেন না যেটা বৈবাহিক জীবনে প্রত্যেক স্বামী স্ত্রী করে থাকে। ভাবলাম ব্যাপারটা কী। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে আমার বাবা-মা বিবাহবিচ্ছেদ করবে না তো । এমনকি আমার সন্দেহও হয়েছিল যে আমার বাবা অন্য কোনও মহিলাকে নিয়ে চলে যাবে না তো । ভাগ্যক্রমে এই ধরণের কিছুই ঘটেনি। ইতিমধ্যে আমার মা স্কুল শিক্ষক হিসাবে চাকরি নেয় এবং শীঘ্রই স্কুলে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে সব কিছু ঠিক ঠাক চলছিল না বাড়িতে কারণ আমি লক্ষ্য করেছি যে প্রতি দিন কাজের শেষে আমার বাবা খুব বিবর্ণ মুখ নিয়ে বাড়িতে আসতেন এবং তিনি আরও ক্লান্ত হয়ে থাকতেন। একবার আমি বাবা কে বললাম যে তাঁর শরীরের চেকআপ করানো টা দরকার কিন্তু বাবা এড়িয়ে গেলেন। একদিন মাঝ রাতে বাবার কারখানা থেকে একটি ফোন পেলাম যে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই খবর শুনে আমার মা কাঁদতে শুরু করলো আমিও কান্নায় ভেঙে পড়লাম এবং কী করব বুঝতে পারছি না। আমার মা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো এবং আমি তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। মধ্যরাতে কোনও গাড়ি পাওয়া যায়নি। পরের দিন ভোরে আমরা বাবাকে দেখতে যাই। আমরা দেখা করার সাথে সাথে বাবার চোখ মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখতে পাই। আমরা দুজনেই আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করছিলাম যে তাঁর কি হয়েছে ? বাবা কিছুই বলছিলো না।
একজন অল্প বয়স্ক ডাক্তার আমার বাবাকে পরীক্ষা করেছিলেন এবং রক্তের রিপোর্টগুলি আমার হাতে দিয়ে বলতে শুরু করেন "এই রিপোর্ট টা দেখুন, কেমিক্যাল কারখানায় কাজ করে করে আপনার বাবার শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ঢুকে গেছে যেটা ওনার রক্তের সাথে মিশে গেছে।“ তিনি আরো বললেন " আরো আগে আপনাদের আসা উচিত ছিল কারণ আপনার বাবার অনেক অঙ্গ খারাপ হয়ে গেছে তাই এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।” এটা শুনে আমি আর মা খুব ভয় পেয়ে গেলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না কি করবো আমরা?
কারখানার একজন উচ্চপদস্থ অফিসার ছিলেন হাসপাতালে। তিনি বললেন " আপনারা কারখানা থেকে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন এবং আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আপনারা সেটা পেয়েও যাবেন।"
আমরা বাবার রুম এ গেলাম এবং দেখলাম বাবা শুয়ে আছে।
"ডাক্তার কি বললো ?" বাবা জিজ্ঞাসা করলো।
আমি বললাম " তোমার রক্তের কিছু সমস্যা আছে তবে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।”
আমার বাবা যেন কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলো যে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে তাই সে আমাকে কাছে ডেকে বললো "দেখ মোহন আমি জানি আমার সময় এসে গেছে। আমি অনুভব করতে পারছি যে আমি মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে তবে আমি এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমি তোকে আর তোর মাকে নিয়ে চিন্তিত।” বাবার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। আমার মাও কাঁদছিলো।
বাবা বললো "আমি তোর কাছ থেকে দুটি প্রতিশ্রুতি চাই।"
আমি বললাম " বাবা কি প্রতিশ্রুতি চাও আমার কাছে থেকে"?
বাবা - "তুই তোর কলেজে শেষ করিস আর আমার মৃত্যুর দ্বারা বিভ্রান্ত হবি না।"
আমি - "অন্যটি কি?
বাবা - "আমি চাই তুই তোর মায়ের দেখাশোনা করবি এবং কখনই তোর মা কে একা রেখে কোথাও যাবি না।"
"তুমি আমাকে না বললেও আমি এটি করতাম," আমি বাবা কে আশ্বাস দিলাম।