- 207
- 440
- 64
পর্ব ১৫
"তবে এইবার পালা একাউন্টটার উপযুক্ত ব্যবহার করার ," বলে পরবর্তী ৩০ মিনিটের জন্য তিস্তা আর পাণ্ডে-জি ব্যস্ত হয়ে পড়লো| তারা বিভিন্ন বৈধ, অবৈধ একাউন্ট থেকে টাকা তাদের সেই ডিএনএ প্রোটেক্টেড একাউন্টে ট্রান্সফার করতে লাগল | প্রায় কোটিকোটি টাকা নিমেষের মধ্যে এক দিক থেকে আরেক দিক হতে লাগলো আর সেই একাউন্টে এসে সব ভরতে লাগল |
এরই মধ্যে পাণ্ডে-জি-র অনুমতি নিয়ে দীপা আর রুদ্র অফিসের চারিদিক ঘুরে দেখতে লাগলো। পাশে রাখা একটা বড় বুক কেস দেখতে পেলো ওরা যার মধ্যে অজস্র নানান ভাষার বই সাজানো ছিল । তবে বইয়ের উপরে ধুলো জমে থাকতে দেখে ওরা বুঝল যে সেগুলো পড়ার কোনও লোক ছিল না |
"তিস্তা, এই বুক কেসটা খুলতে পারি কি?"
"নিশ্চয়ই," ওর কণ্ঠে কিছুটা দ্বিধা বোধ করলো দীপা, "নিশ্চয়ই...কিন্তু অন্য কোনও সময়।"
দীপা লক্ষ্য করে দেখল যে তিস্তা এবং পাণ্ডে-জি দুজনেই বেশ উত্তেজিত হয়ে তাদের কাজ করছিল । " কিসের এত চাপ ওদের কে জানে ?" দীপা নিজের মনে ভাবতে লাগল এমন সময় দুজনে একসঙ্গে চিৎকার করে উঠলো, তবে সেই চিৎকার দুঃখের নয় আনন্দের, উল্লাসের |
"ওহ গ্রেট!" পাণ্ডে-জি চিৎকার করে উঠলেন আনন্দে, "আমরা শেষ পর্যন্ত এটা করতে পেরেছি।"
"ওহ ইয়াস, বস," তিস্তাও চেঁচিয়ে উঠলো আর তার সাথে সাথে হাততালি দিয়ে উঠল।
দীপা আর রুদ্র দুজনেই তাদের দিকে কিছুর প্রত্যাশায় তাকিয়ে ছিল তবে পাণ্ডে-জিও তাদের হতাশ করলেন না।
"এই প্রসেসটার ব্যবস্থা করার জন্য দীপা আর তোমাকে...মানে রুদ্রকে আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, বিকজঃ এখন আমি আমার সব ধনদৌলত আমার নিজের সাথে নিয়ে ঘুরতে পারবো "
"আপনি তো ওটাকে যে কোনও জায়গা থেকেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন?"
"হা সেটা তো বটেই তাছাড়া এটা এত সিকিউর, তার মানে বুঝতে পারলে কি তোমার?"
"কি পাণ্ডে-জি?"
"এর মানে? হা...হা..হা...এর মানে আমরা এই জাহান্নামের থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর যে কোনও জায়গায়, যে কোনও দেশে গিয়ে নিজেদের মতন বাঁচতে পারবো ।"
"তার মানে ইউ উয়িল বি আউট অফ কলকাতা সুন ?"
"ওহ ইয়েস মাই বয়...আর তোমাদের দুজন ছাড়া এই ব্যাপার আর কেউ জানবে না, অবশ্যই তিস্তা ছাড়া।"
"পাণ্ডে-জি আমরা কি আপনার সাথে যেতে পারি?" লোহা গরম থাকাকালীন তাতে ঘা মারল দীপা আর সরাসরি এই অনুরোধ করে বসলো।
"ওহ ইয়াস, নিশ্চই..নিশ্চই মাই ডিয়ার," পাণ্ডে-জি দীপাকে বললেন । "তোমাদের এখানে ফেলে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই আমাদের, আর তোমারদের কি মনে হয় যে আমরা তোমাদের এখানে ফেলে রেখে চলে যাবো আমাদের ব্যাপারে এত কথা জানবার পর? দ্যাটস নট এন অপসন ফর আস ।"
"কিন্তু কবে, কখন, কিভাবে?"
"শীঘ্রই, তবে এই ব্যাপারে এত টা জেনে যাওয়ার পর তোমাদের আজ থেকে এখানেই থাকতে হবে যতদিন না আমাদের যাওয়ার দিন আসে । আমাদের যাওয়ার দিন আসা না পর্যন্ত তোমরা কেউ এই বিল্ডিং থেকে বেরোতে পারবে না।"
পাণ্ডে-জির মুখে এই কথা শুনে দীপা আর রুদ্র দুজনেই ভয় পেয়ে গেল। "তার...তারমানে আমরা এখানে বন্দী থাকব?"
"নো মাই বয়, আবসোলিউটলি নট," পাণ্ডে-জি রুদ্রকে আশ্বস্ত করলেন, " তোমরা এত সাহায্য করলে আমাদের, তোমাদের আমরা কি ভাবে বন্দি করবো বলতো? তোমরা এখানে থাকবে কিন্তু এই ৫স্টার হোটেলের গেস্ট হয়ে, যতদিন না...."
"তবুও...আপনার আন্দাজে কতদিন লাগবে পাণ্ডে-জি?" দীপা শার্পলি বলে উঠলো ।
"দ্যাখো এখন যেহেতু আমার পুরো মানি মার্কেটটা পোর্টেবল মানে যেখানে ইচ্ছা ওটা এক্সেস করতে পারবো তাই আমাদের বেশি দিন লাগার কথা নয় কিন্তু এখন আমাদের এই সব নিয়ে আলোচনার করবার সময় নয়, এখন আমাদের এনজয় করার সময়। এই রাতে আমরা আমাদের এই সাকসেসের পার্টি করবো "
"রাইট ইউ আর , বস!" তিস্তা বলে উঠলো, "আর দীপাদি, তোমরা যদি ফ্রেশ হতে চাও, তোমাদের জন্য একটা লাক্সারি স্যুট রেডি করে রেখেছি আমরা " বলে একটা দরজার দিকে ইশারা করল তিস্তা।
আধ ঘণ্টা পরে, ওরা চারজন মানে পাণ্ডে-জি, তিস্তা, দীপা আর রুদ্র একটা বড়, লাক্সারি লাউঞ্জে নিজেদের পার্টি শুরু করলো আর তাদের জন্য সামনের টেবিলে বিভিন্ন সব পছন্দসই খাবার আর বিদেশি মদে ভোরে উঠলো। ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিল সব বিশাল বিশাল আরামদায়ক সোফা আর তাতে বসেই কথাবার্তা গল্পগুজব করতে লাগলো ওরা | পাণ্ডে-জি সূক্ষ্ম, সাদা, হাফ হাতা কুর্তা পড়ে বসে ছিলেন আর তার পাশেই দীপা বসেছিল । লম্বা কাঁচের মগ থেকে হোয়াইট ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে নিজেরা গল্প করতে লাগল |, অন্যদিকে আরেকটা সোফাতে বসেছিল তিস্তা আর রুদ্র একে অপর কে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। ওরা রামের সাথে কোলা মিশিয়ে খেতে লাগলো | তাদের দেখে মনে হতে লাগল যে একে ওপরের সঙ্গ তাদের নিজেদের খুব ভাল লেগেছে ।
"এই নাও...এটা টেস্ট কর, খুব ভালো খেতে এটা " বলে সিক কাবাবের একটা পিস রুদ্রর মুখে ঢুকিয়ে দিলো তিস্তা |
"আঃরে....মমম..বাহ্ হেব্বি তো.....উফফ কত বছর পর মাংস খাচ্ছি..., এই তুমিও....তুমিও খাও....প্লিজ" বলে তিস্তার মুখে একটা পিস ঢুকিয়ে দিলো রুদ্র ।
"আচ্ছা...রুদ্র যুদ্ধের আগে তুমি কোথায় থাকতে?" কাবাবের পিসটা খেতে খেতে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো তিস্তা
"কেন...? যুদ্ধ...? মানে..কোন...ওহ আচ্ছা.." বলে থমকে দাঁড়ালো রুদ্র তারপর একটু ভেবে আবার বলে উঠলো "আমার...আমার ওই ব্যাপারে কিছু মনে নেই" | তারপর হঠাৎ নিজের মাথা নামিয়ে মেঝের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো ও | সত্যি তো সেই ব্যাপারে তার কিছুই মনে নেই তবে হ্যাঁ ওর সেই দিনটার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে যেদিন ও প্রথমবারের জন্য দীপাকে খুঁজে পেয়েছিলো |
"দীপা, তুমি আজকে আমার অনেক বড়ো হেল্প করেছো," পাণ্ডে-জি বলে উঠলেন, " এবার আমার তার থেকেও বড়ো একটা হেল্প দরকার তোমার কাছ থেকে"
"হা নিশ্চই....বলুন আমাকে ..." তবে পাণ্ডে-জি উত্তর দেওয়ার আগেই তিস্তা ঘুরে জিজ্ঞাসা করলো, "তোমাদের মধ্যে কি কেউ সিনেমা দেখতে চাও?"
"হা নিশ্চই..হোয়াই নট? কতদিন কোনও থিয়েটারে সিনেমা দেখিনি... তবে কি সিনেমা আছে এখানে?" দীপা বলল
"এনিথিং ইউ উইশ ফর দীপা দি, এনিথিং এটা একটা অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস "
"ওহ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে এখানে আলট্রা হাই স্পিড ইন্টারনেট আছে আর তাই কোনও ব্যান্ডউইথ ইস্যুও নেই" পাস থেকে রুদ্র বলে উঠল
"একদম...রুদ্র তোমার কি হয়ে ছিল একটু আগে ? ওরকম চুপ করে গেছিলে একদম "?
"না কিছু না তবে কি কি সিনেমা আছে সেটা বল"
"ওই যে বললাম সব কিছুই...তবে এই সিনেমাগুলো সাধারণ ভার্সন না"
"মানে ? সাধারণ নয় তো কি অসাধারণ?"
"একদম! এই মুভিগুলো সব 3 ডি হলোগ্রাম ভার্সন।"
"ওরে: শালা...আমি এটার ব্যাপারে আগে শুনেছি কিন্তু রিয়েল লাইফে দেখার কোনও সৌভাগ্য হয়নি আমার... আর এইটাতেই মনে হয় না যে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যেন আমাদের ঘরের মধ্যেই হেটে চলে বেড়াচ্ছে।"
"হ্যাঁ...তবে কি চালাবো বলও? তিস্তা জিজ্ঞাসা করলো
"কিছু রগরগে গা গরম করা সিনেমা চালাও...মানে ওই বেসিক ইনস্টিংক্টর মতন" দীপা বলে উঠল
"ওঃ ইয়েস, চলো লেটস ওয়াচ ইট ।" রুদ্র চেঁচিয়ে উঠলো উৎসাহে আর তার সেই উৎসাহ দেখে দীপা হেসে উঠল ।