পর্ব ৩৭
সেই লম্বা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল ওরা | সেই অন্ধকারের মধ্যে ঠিক করে ঠাহর করতে লাগল যে সেইখানে কেউ আছে কি নেই । তারপর আস্তে আস্তে সেই গাছের পেছন থেকে বেরিয়ে আরেকটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল ওরা । এইরকম একটা গাছ থেকে আরেকটা গাছের আড়ালে থাকতে থাকতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা তারপর এমন সময় হঠাৎই সেই লম্বা গাছ-গুলর শাখাপ্রশাখার মধ্যে দিয়ে চাঁদের আলো ধেয়ে এলো আর সাথে সাথে সেই আলোতে সেই প্রথমবার দেখতে পেলো তাদের সেই সেফ হাউসটাকে...ঠিক যেমন উইকি-ম্যাপিয়াতে দেখেছিলো ওরা ঠিক সেইরকমই লোকেশনে । শেষমেশ চোখের সামনে নিজেদের মুক্তির ঠিকানাটা দেখতে পেয়ে দীপা স্বস্তিতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তারপর তিস্তার দিকে ঘুরে ফিসফিস করে বলে উঠল :
"তিস্তা, এইবার আস্তে আস্তে আমাদের ব্যাগগুলো পেছন থেকে নিয়ে আয়, আমরা আপাতত এখানেই দাঁড়াবো কিছুক্ষণ..."
দীপার কথা শুনে তিস্তা নিজের মাথা নাড়িয়ে সাথে সাথে ওদের ব্যাগগুলো নিয়ে এসে ওদের পায়ের কাছে এনে রাখল | তবে পাণ্ডে-জির যে ভালো জিনিসের প্রতি চোখ আছে সেটা সেই জায়গাটা দেখে তিনজনেই বুঝতে পারল । সত্যিই জায়গাটা খুবই সেফ আর সিকিওর আর এমনি ভাবে বানানো যে কাছ থেকে দেখলেও ঠিক করে বোঝা যাবে না সেফ হাউসটাকে | আর কেউ যদি দূর থেকে দেখে তাহলে তার রং আর স্ট্রাকচার দেখে ভাববে যে সেটা জঙ্গলেরই একটা ভাগ | সামনের দিকে লেকের জলটাকে ধরে রাখা হয়েছে যার ফলে একটা আলাদা দিঘির
মতন জলাশয় তৈরি হয়েছে তবে সেটাকে দেখে অনেকটা সুইমিংপুলের মতন হল ওদের । বড় বড় পাতা যুক্ত গাছ-গুল এমন ভাবে সেই জায়গাটাকে ঘিরে ছিল যে তাদের দেখে মনে হতে লাগল যেন কেউ ইচ্ছা করেই সেই ভাবে তাদের পুঁতেছে | আর সেই গাছ-গুলর ঠিক পেছনেই ছিল তাদের সেই একতলা সেফ হাউস | রুদ্র সেই দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বলে উঠল ঃ
"টর্চটা দাও..."
"কেন...? এখন টর্চ দিয়ে কি করবি তুই...?" রুদ্রর দিকে ঘুরে ফিসফিস করে বলে উঠল দীপা
"টর্চ দিয়ে যা করে তাই করব...সামনে যাবো ওইদিকে..." বলে দীপার হাত থেকে টর্চটা কেরে নিয়ে রুদ্র প্রায় সেই দিকে পা বাড়াল এমন সময় খপ করে ওর হাতটা ওর হাতটা চেপে ধরে ওকে বাধা দিলো তিস্তা | নিজের কাজে বাধা পাওয়ায় রুদ্র তিস্তার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকাতেই তিস্তা বলল :
"প্লিজ রুদ্র...এতদিন যখন তুমি অপেক্ষা করতে পেরেছ তখন আরও কিছুটা সময় তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে পারবে...প্লিজ" রুদ্রর হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠল তিস্তা | সে বুঝতে পারছিল যে এত সামনে এসে পরে রুদ্র আর নিজের প্রতি সংযম রাখতে পারছেনা ।
"কিন্তু...এখানে তো কেউ নেই....দেন....? হোয়াট আর উই ওয়েটিং ফর...? এখন আবার কেন এত...?" নিজের কথা শেষ করতে যেতেই দীপা পাশ থেকে বলে উঠল ঃ
"কেউ না থাকলেও...সাবধানের কোনও মার নেই রু, সাফলতার ঠিক দোরগোড়াতে এসেই লোকেরা ভিরমি খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে যায়, আর সেই জন্যই আমরা এখানে এখন অপেক্ষা করছি অ্যান্ড দ্যাটস অ্যাই প্রে টু ইয়উ প্লিজ...প্লিজ ওয়েট এ বিট রু...." |
দীপার কণ্ঠে সেই কাতর অনুরধের সুর শুনেই রুদ্রর সব বিরক্তি গোলে জল হয়ে গেল আর সাথে সাথে টর্চটা আবার দীপার হাতে দিয়ে "সরি" বলে উঠল... দীপার তার প্রেমিকা হলেও সেই ছিল তার একমাত্র গার্ডিয়ান তাই তার কথা কখনই অমান্য করত না রুদ্র । অন্যথা আর কোনও উপায় না দেখতে পেয়ে আস্তে আস্তে সেই গাছের পেছনেই বসে পরে সামনের দিকে আবার মনোযোগ দিকে চেয়ে থাকল রুদ্র | অন্যদিকে রাত আস্তে আস্তে ঘন হতে আরম্ভ করতেই সামনের জঙ্গল থেকে ঝিঝির ডাক ভেসে আসতে আরম্ভ করল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠল |
"তিস্তা...কিছু টের পাচ্ছিস...?"
"না...না দীপা দি, কোনও জনমানবের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি না আমি..."
"আর দেখতে পাবেও না..." নিজের মনে মনে বলে উঠল রুদ্র । আধঘণ্টা ধরে সেই স্যাঁতস্যাঁতে গাছের পেছনে লুকিয়ে সেই বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুদ্র এতটাই বোর হয়ে গিয়েছিল যে সে অন্যমনস্ক হয়ে এইদিক ওইদিক তাকাতে লাগলো | উলটো দিকে ঘুরে বাঁ দিকে তাকাতেই হঠাৎ দীপার ওপর নজর পড়লো ওর | সদ্য জল থেকে উঠে আসার জন্য দীপার নগ্ন শরীরে তখনও কিছু জল রেখা দেখা যাচ্ছিল | গাছের ফাঁক দিয়ে যেটুকু চাঁদের আলো তাদের উপর এসে পরছিল তাতেই সে দীপার উলঙ্গ শরীরটাকে উপভোগ করতে আরম্ভ করল । সে দেখল যে দীপার যোনির লোমগুলো ভিজে একত্রে মিলিত হয়ে আটকে রয়েছে আর তাই থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল চুইয়ে চুইয়ে তার উরুর ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পরছে | সেই দৃশ্য দেখে রুদ্র এতটাই মোহিত হয়ে পড়ল যে স্থান কাল পাত্র বিচার না করেই নিজের অজান্তেই নিজের লিঙ্গ খাঁড়া করে ফেলল । আরও কিছু দেখার আশাতে নিজের মাথাটা আরও একটু ওপরে তুলতেই নিজের চোখের সামনে দীপার স্তনের বৃন্তগুলোকে
সতেজ খাঁড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল রুদ্র |
অন্যদিকে নিজের মন সন্তুষ্ট করে দীপা বুঝল যে তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়াতে আর কোনও বিপদ নেই আর সাথে সাথে পাশে ঘুরে সে বলে উঠল ঃ
"চল...চল এবার...ইটস সেফ" আর তারপরই রুদ্রর দিকে চোখ পড়তেই রুদ্রর সেই অবস্থা দেখে বলল "মা গো মা...এখনও ? এই সবের মধ্যেও..? পারিস বটে তুই...."
"হ্যাঁ নাহলে কি করবো বোলো তো...চোখের সামনে তোমার এই অপ্সরার মতন রূপ দেখে যে কেউই মোহিত হয়ে যাবে, কি বল তিস্তা...?" তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র
"হ্যাঁ...সত্যি তাই, আমিও তো....." বলতে গিয়ে থেমে গেলো তিস্তা
"হমম বুঝেছি...তোদের এই ঠাট্টা রঙ্গ তামাসা শেষ হয়ে গেলে বলিস আমাকে তবে যাইহোক এইবার ওই দিকে যাওয়া যেতে পারে...আশা করি আর কোনও বিপদ হবে না আমদের..." বলে পায়ের কাছ থেকে নিজের ব্যাগটা তুলে সেটা কাঁধে লাগাতে যেতেই তাকে তিস্তা বাধা দিয়ে উঠল তিস্তা ।
"না...ওটা আমি নিয়ে যাচ্ছি.....তুমি এই টর্চটা নাও আর আমাদের কে রাস্তা দেখাও । আমরা তোমার পেছন পেছন যাব " বলে দীপার হাতে বড় শেলের টর্চটা ধরিয়ে দিলো তিস্তা । তিস্তা কথা শুনে দীপা নিজের মাথা নাড়িয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে হাঁটা লাগাতে আরম্ভ করল তবে টর্চের আলোর তেমন কোন প্রয়োজনই হল না | মাথার ওপর সেই লম্বা লম্বা গাছ-গুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের ডাল পালার মধ্যে দিয়ে আলো ভেসে আসছিলো তাতে তাদের সামনের যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছিল | সেইদিকে তাকিয়ে মন হল কেউ যেন তাদের সহায়তার জন্যই সেই ভাবে তাদের পথে আলো ফেলে সেই জায়গাটাকে আলোকিত করেছে , তাই আর অপেক্ষা না করে দীপা সেই পথ ধরে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো | দীপা এগিয়ে যেতেই তিস্তা নিজেদের সব মাল পত্র গুলকে একত্রে নিজের কাঁধে তুলতে দেখে তার কাছ থেকে অর্ধেক মাল-পত্র নিজের কাঁধে তুলে নিলো রুদ্র । :
"একি...তুমি নিচ্ছ কেন? আমি পারবো তো...কেন? আমি...? " তিস্তা বলে উঠল
"না...আমি থাকতে তোমাকে একা একা এত কিছু নিতে দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা আর এই প্যাকসগুল কি এমনি এমনি হয়েছে নাকি...বলে নিজের পেটের কাছে শক্ত হয়ে ওঠা পেশীর দিকে ইশারা করল রুদ্র...."
"বাবা! ঠিক আছে যাও...কিন্তু সাবধানে, তোমার ছোট ভাই এখনও শুতে যায়নি" বলে দুষ্টু হেসে অর্ধেক জিনিস রুদ্রর সামনে রেখে দীপার দিকে এগিয়ে যেতে আরম্ভ করল তিস্তা | রুদ্রর গায়ে রাক্ষসের জোর থাকলেও সেই খাঁড়া অবস্থাতে ওর হাটতে এতটাই অসুবিধা হচ্ছিল যে সে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে লাগল |
দেখতে দেখতে তিনজনই দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে বুঝল যে সেফ হাউসটা আসলে দুতলা | ওরা যে জায়গাতে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা নিচু হওয়ার জন্য সেই ব্যাপারটা আগে ওরা কেউই ঠিক করে ঠাহর করতে পারেনি । তবে এতক্ষণেও চারপাশে কারুর সারা শব্দ না পেয়ে দীপা বুঝেই গেছিলো যে সেখানে তারা ছাড়া আর কেউই ছিল না তাই এবার আর হাতের টর্চটা জ্বালাতে আর কোনও দ্বিধা বোধ করল না সে | টর্চটা জ্বালিয়ে সেই দরজার ওপর আলো ফেলতেই তিনজনে লক্ষ করল যে সেফ হউসের দরজাটা সাধারণ কোন দরজার মতন নয় | দেখে অনেকটা গ্যারাজের শুটারের মতন মনে হলেও সেটায় হাত দিতেই সেটাকে খুবই শক্ত পোক্ত মনে হল | দীপা টর্চের আলোটা আরও একটু নিচের দিকে ফেলতেই সেই দরজার গায়ে গোটা কতক চাবি ঢোকা বার জায়গা দেখতে পেলো ওরা |
"লকস..." পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল
"কিন্তু এতগুলো...এতগুল লক কেন? আর চাবি? এগুলোর চাবি কোথায় ?" চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো দীপা |
"চাবি!! দাড়াও...দাড়াও" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে রুদ্রর কাছ থেকে নিজের সেই ব্যাগ-প্যাকটা চেয়ে নিলো তিস্তা, তারপর সেটার চেন খুলে আস্তে আস্তে ব্যাগের ভেতরে থাকা সব চাবিগুলো বের করল তিস্তা | তারপর নিচে মাটির ওপর একটা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর সব চাবিগুলোকে সাজিয়ে রাখল |
"গ্রেট..." তিস্তার সেই ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা দেখে বলে উঠল রুদ্র
এরপর একটার পর একটা চাবি প্রথম লকের মধ্যে ঢুকিয়ে ঘোরাতে আরম্ভ করল তিস্তা | চাঁদের আলোটা হঠাৎ মৃদু হয়ে আসতে দেখে দুটো টর্চই জ্বালিয়ে সেই দিকে ধরে রইল দীপা | দূরে কোথাও থেকে শেয়াল ডাকার আওয়াজ ভেসে আসতেই সাথে সাথেই দরজার প্রথম লকটা ফট করে খুলে গেলো |
"গ্রেট, দ্যাট মিন্স...আমরা ঠিক রাস্তাই অবলম্বন করেছি..." পাশ থেকে বলে উঠল দীপা
"হমম..কিন্তু দীপা দি, এইরকম করে একটার পর একটা চাবি করতে করতে তো অনেক সময় চলে যাবে..."
"সে যাক না..এখন আমাদের কাছে অঢেল সময়...তোর যত ইচ্ছা সময় লাগুক না কেন আমাদের কোনও কিছুতেই অসুবিধা নেই...তুই তোর মত লেগে থাক" তিস্তাকে উৎসাহিত করে বলে উঠল দীপা
খিদেতে তাদের পেট চুঁইচুঁই করলেও খাওয়ার কোন পরিকল্পনা ওদের মধ্যে দেখা গেল না সেই সময় । আরও আধঘণ্টার প্রচেষ্টায় আরও একটা লক খুলে যেতেই দীপার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল কিন্তু আসল মুশকিলটা ঘটলো তার পরেই | তৃতীয় আর অন্তিম লকটা অনেক্ষনের চেষ্টার পরেও কিছুতেই খুলতে পারলো না তিস্তা আর সেই অক্ষমতার জন্য আস্তে আস্তে অধৈর্য হয়ে উঠতে লাগল সে |
"ফাক! ফাকিং বিচ....ফাক !" রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে উঠল তিস্তা " ইটস নট ওপেনিং...ফাকিং লক খুলছেই না তো কিছুতেই...কেন খুলছে না ? মাদারফাকিং কি!!!" বলে হাতের চাবিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো তিস্তা | একটার পর একটা চাবি ট্রাই করার পরেও কোনও ফল না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়লো তিস্তা | রাগে আর বেদনায় ভেঙে পরে নিজের মাথা নিচু করে মাটির ওপর বসে পড়লো সে আর তার দুচোখের কোন বেয়ে অশ্রু ধারা বেরিয়ে এসে গড়িয়ে মাটির ওপর পড়তে লাগল | তিস্তাকে ওইরকম ভেঙে পড়তে দেখে রুদ্র ওর পাশে গিয়ে বসল, তারপর ওকে নিজের কাছে টেনে নিলো
"এই তিস্তা...ওইরকম ভেঙে পরনা প্লিজ...মন খারাপ করার কিচ্ছু হয়নি...দেখবে এখুনি সব ঠিক হয়ে যাবে..."
রুদ্রর কথা শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তিস্তা বলল "কি করে..? কি করে ঠিক হবে রুদ্র...? তুমি দেখতে পেলে না যে আমাদের একটাও চাবি দিয়ে কাজ হল না...? এরপর...এরপর আর কিসের আশা করব আমি বলতে পার রুদ্র...আমি যে বসের কথাটা রাখতে পারবোনা রুদ্র"
"অ্যাই তিসু...এত তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে হার মেনে নিলে কি করে হবে ? পেশেন্স ইস দা কি টু সাকসেস তাই বিলিভ ইন ইয়োরসেলফ, বিলিভ ইন আস...প্লিজ" তিস্তার মাথায় হাত বুলতে বুলতে বলে উঠল রুদ্র
"বাবাহ! এই একটু আগেই তুমি নিজেই অধৈর্য্য হয়ে পরছিলে না...? "
" হ্যাঁ আর তখন তুমি আর দীপা আমাকে বোঝালে আর এখন আমি তোমাকে বোঝাচ্ছি...বিকজ উই আর অ্যা টিম তিস্তা । আমাদের...আমাদের কে একটা গাড়ির মতন ভাবো তিস্তা...ধর দীপা হল স্টিয়ারিং তুমি হলে ইঞ্জিন আর আমি...."
"তুমি গিয়ার..." বলে হেসে উঠল তিস্তা
"হ্যাঁ আর সেই জন্যই আমি মনে করি যে, যে কোনও কাজে সফল হওয়ার জন্য টিমের প্রত্যেক সদস্য কেই টিমের সাথে কাজ করা উচিত..." রুদ্রও বলে উঠল
"কিন্তু..রুদ্র, চাবি কোথায়...? এই সব মরাল সাইন্সের কথা শুনতে ভালো লাগলেও, আরেকটা চাবি...কোথা থেকে পাবো আমরা...???" তিস্তা বলে উঠল
"এই তিস্তা রুম নম্বর ৯এর চাবি তোর কাছে আছে না...?" হঠাৎ পেছন থেকে দীপার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো আর সাথে সাথে সেই দিকে ঘুরে তিস্তা বলে উঠল ঃ
"রুম নম্বর ৯....? মানে সেলেব্রেশন হোটেলের চাবি...? " তিস্তার কথায় দীপা নিজের মাথা নাড়াল ।
"হ্যাঁ....আছে, কিন্তু...সেটা দিয়ে তুমি কি করবে...?"
"কি করবো সেটা এক্ষুনি দেখতে পাবি...তবে ডে চাবিটা" বলে তিস্তার দিকে নিজের হাত বাড়াল দীপা | মাটি থেকে উঠে নিজের ব্যাগের কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে সেই চাবিটা বের করে দীপার হাতে ধড়িয়ে দিল তিস্তা । চাবিটা হাতে পেতেই পর মুহূর্তেই সজোরে দরজার সেই তৃতীয় লকের ভেতর ঢুকিয়ে ঘোরাল দীপা আর সাথে সাথে খটাং করে একটা আওয়াজ করে চাবিটা ঘুরে গেলো, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমেই দরজা যে কে সেই একই অবস্থাতে দাঁড়িয়ে রইলো |
"চাবিটা...চাবিটা ঘুরল কিন্তু..." দীপা বলে উঠল
"তার মানে..?"
"তার মানে ওই চাবিটাই ছিল ওই শেষ লকের চাবি...আর সেই জন্যই ওই পাশ থেকে ওই যান্ত্রিক আওয়াজটা ভেসে এলো" রুদ্র বলে উঠল
"সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু...দরজা কি খুলল...?" বলে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল তিস্তা তারপর হাতে করে জোর দিয়ে ঠেলা মারতে লাগল । তিস্তাকে একা একা সেই দরজা ঠেলতে দেখে রুদ্রও ওর সাথে সাথে শরীরের সমস্ত জোর লাগিয়ে দরজাটা ঠেলতে চাইল কিন্তু কোনও উপায়েই সেই দরজা নাড়াতে পারলো না | অনেক্ষন ধরে অনেক ভাবে চেষ্টা করে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে আবার মাটির উপর বসে পড়ল ওরা |
"নিশ্চয়ই......দরজাটা জ্যাম হয়ে গেছে, অনেকদিন নিশ্চয়ই খোলা হয়নি..." তিস্তা বলে উঠল
"তাহলে? তাহলে এখন উপায় কি...? " ভয়ে বলে উঠল দীপা | ভয়ের ব্যাপারটা দীপার খুব সহজে আসত না কিন্তু আজকে, এই অসহায় অবস্থায় এই জঙ্গলের মধ্যে এই রাত বিড়েতে তাকে ঘিরে ধরতে লাগলো...তবে সে ভয় বাঘ ভাল্লুকের নয়, অনিশ্চয়তার |
"আই রিয়েলই ডোন্ট নো দীপা দি...আই রিয়েলই ডোন্ট নো, ফাক!!!" বলে চেঁচিয়ে উঠল তিস্তা | নিজেদের লক্ষ্যের এত কাছে এসেও হেরে যাওয়াটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলনা সে | নিজের রাগকে আর সংযত না রাখতে মাটি থেকে উঠে মাটির ওপর একের পর এক লাথি মারতে আরম্ভ করল সে । তবে সেদিন তিনজনের মধ্যে রুদ্র সব থেকে শান্ত অবস্থাতে ছিল কারণ সে আঁচ করতে পারছিলো যে পাণ্ডে-জি নিশ্চয়ই সেখানে কোনও একটা কারসাজি করে রেখেছেন |
"ফাক!!! ফাক!!! " বলে আবার ভীষণ জোরে চেঁচিয়ে উঠল তিস্তা আর তার সাথে নিজের পা দিয়ে মাটির ওপর সজোরে একটা লাথি মারল | তবে এইবার আচমকাই লাথি মারার সাথে সাথেই যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল তিস্তা আর সেই ব্যাথার টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল| তিস্তাকে হঠাৎ পরে যেতে দেখে রুদ্র আর দীপা দৌড়ে এসে ওকে মাটি থেকে তুলল |
"তিস্তা...অ্যাই তিস্তা? তোর লাগেনি তো...? " দীপা প্রশ্ন করে উঠল আর সাথে সাথে নিজের হাতের টর্চটা জ্বালিয়ে তিস্তার পায়ের ওপর ফেললো | টর্চের আলো তার পায়ের ওপর পড়তেই সে দেখল যে তিস্তার গোড়ালির কাছটা একটু কেটে গেছে আর তাই থেকে হালকা রক্ত বেরোচ্ছে...
"একি...এতো রক্ত বেরোচ্ছে!!! কি করিস বলতো তুই? এত কিসের রাগ তোর? এইবার কি হবে বলতো? এসব যেনে বুঝে এই রকম কে করে...? " তিস্তার দিকে একটার পর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে দিতে বলে উঠল দীপা | তবে যন্ত্রণাটা যে প্রবল সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তাই সে আর কোনও উত্তর না দিয়ে দীপাকে জড়িয়ে মাটির ওপর বসে পড়ল | তিস্তাকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে রুদ্র বলে উঠল
"কিসে লাগল তোমার বল তো? এখানে তেমন কোনও কিছু দেখতে..." বলতে গিয়েই থেমে গেল রুদ্র । হঠাৎ একটা জিনিসের ওপর তার নজর পড়তেই তার চোখ সেইখানেই আটকে গেলো | সাথে সাথে দীপার দিকে ঘুরে শক্ত গলায় সে বলে উঠল ঃ
"দীপা..টর্চটা...টর্চটা দাও..."
রুদ্রর কাছ থেকে আবার টর্চের কথা শুনে দীপা আরও বেশি ক্ষেপে উঠল " কেন ? টর্চ নিয়ে কি করবি তুই...?"
"যা করবো একটু পরে নিজেরাই দেখতে পাবে, তাই কথা না বাড়িয়ে টর্চটা দাও আমায়..." আবার শক্ত ভাবে বলে উঠল রুদ্র | অন্যথা কোনও উপায় না দেখতে পেয়ে রুদ্রকে টর্চটা দিতে বাধ্য হল দীপা তবে রুদ্রর হাতে টর্চটা দিতেই সে সেটাকে জ্বালিয়ে, তার আলোটাকে মাটির ওপর ফেলল ঠিক সেই জায়গাটার ওপর যেখানে একটু আগেই তিস্তা লাথি মারতে গিয়ে জখম হয়ে ছিল | আলোটা সেই খানে ফেলে সেই জায়গাটার ওপর হাত দিতেই সাথে সাথে শক্ত কিছু একটা অনুভব করল রুদ্র |
ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেই সে নিজের হাতের টর্চটা মাটির ওপর রেখে নিচের দিকে ঝুঁকে হাতে করে সেই জায়গাটার ওপর থেকে মাটি সরাতে আরম্ভ করল । রুদ্রকে সেই রূপ উত্তেজিত হয়ে মাটি খুরতে দেখে দীপা প্রথমে একটু অবাক হলেও পরো মুহূর্তে সেও বুঝতে পারল যে তার রু ই তাদের কে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারবে । ওই রুদ্রও নিজের মত মাটি সরিয়ে যেতে লাগল এমন সমায় হঠাৎ ওর একটা ধাতব জিনিস ওর হাতে ঠেকল | রুদ্রও সাথে সাথে টর্চের আলো সেই জায়গাটার ওপর ফেলতেই ওর মুখ হাসিতে ভরে উঠল ।
"দীপা!!! তিস্তা!! শিগগিরি!!..শিগগিরি এসো তোমরা এখানে...!!!" উত্তেজিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল রুদ্র । রুদ্রর কণ্ঠে সেই উত্তেজিত ভাব অনুভব করতেই দুজনে সাথে সাথে রুদ্রর পাশে এসে দাঁড়াল আর দাঁড়াতেই সেই জিনিসটা দেখতে পেলো |
"এটা....কি এটা...?" সেই জিনিসটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল দীপা
"জানি না...তবে এখুনি যেনে যাব...তোমরা প্লিজ একটু হাত লাগাও আমার সাথে..." রুদ্রও বলে উঠল । রুদ্রর কথা শুনে বাকি দুজনও মাটির ওপর বসে হাত লাগিয়ে সেই জায়গাটা আরও একটু পরিষ্কার করতে লাগল । যতই না মাটি সরে যেতে লাগল ততই সেই জিনিসটা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠতে আরম্ভ করল এমন সময় রুদ্র নিজের হাত তুলে ওদের থামতে বলল ।
"এই জিনিসটার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্য তোমাকে আশঙ্কা ধন্যবাদ তিস্তা...ভাগ্যিস তুমি লাথি মারাতে উদ্যত হয়েছিলে নাহলে এখানেই হয়তো..." তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র তবে তিস্তা সেই ব্যাপারের সিকে ভাগ বুঝতে না পেরে বোকার মতন রুদ্রর দিকে ফ্যালফ্যাল করে খালি চেয়ে রইল ।
"রু... হোয়াট ইস দিস...?" দীপা বলে উঠল
"বলছি..." বলে এইবার পুরোপুরি মাটির ওপর বসে পড়ল রুদ্র, তারপর হাতে করে আরও একটু মাটি সরিয়ে টর্চের আলোটা সেই জায়গাটার ওপর ফেলল | আলো পড়তেই ওরা দেখল যে ঠিক একটা ঘড়ির মতন দেখতে সেই জিনিসটাকে তবে সেটা পুরোপুরি কালো রঙের | জিনিসটার পাশে পাশে খাঁজ কেটে কেটে কিসব লেখা দেখা যাচ্ছিল তবে সেগুলো কি সেটা ঠিক করে বুঝতে পারল না রুদ্র । আস্তে আস্তে সেই উঁচু হয়ে থাকা লেখার ওপর আঙুল বলাতেই সে বুঝল যে সেগুলো আসলে নম্বর...থিক যেমন ঘড়িতে থাকে সেইরকম তবে জিনিসটার মাঝখানটায় ঘড়ির কাঁটার জায়গায় একটা ছোট খাঁজকাটা জিনিস দেখতে পেল রুদ্র |
"কিরে রু...কি জিনিস এটা? কোনও বম..."
"না..." এক বাক্যে উত্তর দিয়ে সেই জিনিসটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো রুদ্র | সে দেখল যে জিনিসটায় ঘড়ির মতন ডায়াল থাকলেও এক থেকে বারো অবধি না থেকে তাতে এক থেকে নয় অব্দই রয়েছে । "মাত্র নটা ঘর...কেন? নটার সঙ্গে কিসের সম্পর্ক..." সেই লোহার ডায়ালের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে প্রশ্ন করে উঠল রুদ্র ।
"নয়ের সাথে সম্পর্ক... কোথায় যেন নটা দেখেছি..." ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রুদ্রর মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল , ধাঁধার সঙ্কেতটা এতক্ষণে বুঝতে পেরে সে নিজের মনে মনে হেসে উঠল |
"দীপা, কুইক....তিস্তার ব্যাগ-প্যাক থেকে...ওই..ওই নোটবুকটা বার করো, পাণ্ডে-জির নোটবুকটা" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল রুদ্র | রুদ্রর কথা শুনে প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেল দীপা কিন্তু পরক্ষণেই ওর কথাটা বুঝতে পেরে দৌড়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে সেই নোটবুকটা বার করে আনল সে |
"এইতো...এইতো!! এইবার? এইবার কি করবো?" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল দীপা
"এইবার? এইবার সেই পেজটা খোলো, সেই পেজটা যেটাতে তোমার লালুর ফোন নম্বর লেখা আছে...." হাসি মুখে বলে উঠল রুদ্র
"মানে...? আমার লালু? কে লালু? রুদ্র এখন প্লিজ মস্করা করিস না, আমার মাথা কাজ করছে না একদম...আমি" প্রায় কেঁদে ফেলে বলে উঠল দীপা
দীপার সেই করুন অবস্থা দেখে রুদ্র বলল "কাঁদার কিছু হয়নি দীপা আর আমি মস্করাও করছি না । তোমাকে সেই পেজটা খুলতে বললাম যাতে পাণ্ডে-জি 'ল্যালো'...." তবে রুদ্র নিজের কথা শেষ করার আগেই দীপা সেই ব্যাপারটা বুঝে ফেলল আর সাথে সাথে সেই পেজটা খুলে রুদ্রর সামনে তুলে ধরল |
"ইয়েস ! এইতো... এইটাই, এইবার ওই ল্যালোর পরে যেটা লেখা আছে সেগুলো আমাকে একটা একটা করে বল"
"কোনগুলো? এই...এই সংখ্যাগুলো...?" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল দীপা
"হমম"
"এইতো দুই তিন...তারপর পয়েন্ট..." দীপার বলার সাথে সাথে রুদ্র সেই সংখ্যাগুল অনুযায়ী সেই সামনের লিভারটা আরম্ভ করল । তিস্তা চুপ করে পাশে বসে রুদ্রর সেই কেরামতি দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিল ।
"ছয়..আট..পাঁচ..পাঁচ..শূন্য..আট..আট...তারপর..."
"দাড়াও.." রুদ্র বলে উঠল । রুদ্রর কথা শুনে দীপা তার দিকে তাকাতে সে আবার বলে উঠল "যদি আমার একটুও বুদ্ধি থেকে থাকে তাহলে আশা করি এইবার কিছু একটা হবে " বলে সেই লিভারটা চেপে ধরল রুদ্র আর সাথে সাথে ঘটাং করে একটা আওয়াজ ভেসে এলো দরজার দিক থেকে |
আওয়াজটা রুদ্রর কানে আসতেই ওর মুখ হাসিতে ভরে উঠল ঃ "ইয়েস !!! এইবার তার পরের সংখ্যাটা বোলো "
" দাঁড়া এই...এইতো আট ছয় দিয়ে আবার একটা পয়েন্ট তারপর সাত...তিন...শূন্য..পাছ..শূন্য..আট আর...আর শূন্য..." বলে রুদ্রর দিকে তাকাল দীপা । উত্তেজনায় বসে তার নিশ্বাস প্রশ্বাসের বেগ এতোটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সে স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পাচ্ছিল না ।
শেষর শূন্যটা দিকে শেষ বারের জন্য লিভারটা ঘুরিয়ে নিজের মাথা তুলে বাকি দুজনের দিকে তাকাল রুদ্র "ব্যাস...আমাদের কাজ শেষ" বলে আবার লিভারটা চেপে ধরল রুদ্র আর সাথে সাথেই হঠাৎ আগের মতন ঘটাং করে একটা আওয়াজ ভেসে এলো তবে সেটা আগের বারের চেয়ে অনেকটাই জোরে আর দেখতে দেখতে সামনের দরজাটা খুলে গেল |
"ওয়েলকাম...ওয়েলকাম টু দ্যা সেফ হ্যাভেন...." শান্ত গলায় বলে উঠল রুদ্র
সব কিছু এত তাড়াতাড়ি আর চোখের নিমিষের মধ্যে হয়ে গেলো যে দীপা আর তিস্তা বুঝতেই পারলো না যে তাদের স্বপ্ন আজকে সত্যি হয়ে উঠেছে | দীপা আস্তে আস্তে ঝুঁকে মাটির ওপর টর্চটা তুলে সেই দরজার দিকে আলো ফেলতেই দেখল...সেফ হউসের দরজাটা সত্যিই খুলে গেছে | সেই অন্ধকার দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দীপার চোখ থেকে জল বেরিয়ে তার গাল বেয়ে নেমে এলো | " উই...ডিড ইট" ফিসফিস করে বলে উঠল সে আর সাথে সাথে পাশ থেকে তিস্তার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে এলো :
"উই ডিড ইট!!! আমরা পেরেছি!!! আমরা পেরেছি !! আমরা পেরেছি!!! " বলে হঠাৎ রুদ্রর ওপর ঝাঁপিয়ে পরে ওকে অষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে মুখে ঘাড়ে পাগলের মতন এলো পাথারই চুমু খেতে আরম্ভ করলো তিস্তা | সত্যিই তার জায়গায় কেউ থাকলে সেও সেইরকমই করত । এতদিন ধরে সাধনা করার পর আজকে শেষমেশ নিজেদের লক্ষ্যভেদ করার আনন্দে সে ভুলেই গেল যে একটু আগেই তার পায়ে চোট লেগেছে । রুদ্রও সেই ঠাণ্ডার আবহাওয়াতে একটা সুন্দরি নারীর শরীরের উষ্ণতা উপভোগ করে তিস্তাকে পাল্টা চুমু খেতে আরম্ভ করল |
"আমরা পেরেছি...কিন্তু কি করে...? কি করে করলি তুই এই কাজটা রু...? হাউ ডিড..." দীপা বলে উঠল । তখনও অবিশ্বাসে সেই একই দিকে তাকিয়ে ছিল দীপা |
"মমম...ওই মমম ওইটা...মমম ঘড়িটার ডায়াল...লটা..মমমম লকারের মতন উহঃ..." তিস্তাকে চুমু খেতে খেতে বলে উঠলো রুদ্র
"মানে? ওই কম্বিনেশন লকের মতন? সেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যেটা খুলতে হয়? ব্যাংকের সেফে যেমন থাকে...?" দীপা প্রশ্ন করে উঠল
"মমম হমম...মমমম..আহঃ আস্তে তিসু" উত্তেজিত হয়ে তিস্তা রুদ্রর ঠোঁটে কামড়ে দিলো
"কিন্তু তুই কি করে বুঝলি যে ওইটাই এইখানে লাগবে...? মানে নোটবুকে তো আরও অনেক কিছুই...অনেক নাম্বারই লেখা আছে...তুই শিওর কি করে হলই..." রুদ্রর দিকে ঘুরে বলে উঠল দীপা
"শিওর...মমম মানে প্রথমে মমম আমি শিওর ছিলাম না মমম...তিস্তা আস্তে....কিন্তু যখন ওই...ওই ডায়ালে বারোটার জায়গায় নটা সংখ্যা দেখলাম তখন আমি বুঝলাম যে ওই সংখ্যাগুলোই আমাদের ভেতরে ঢোকার চাবি কাঠি....মমমম দুটো জায়গাতেই নটা নটা সংখ্যা লেখা আছে দেখো মমমম...আহহ! তিস্তা....ওখানে এখন হাত দিয়ো না....মমম আহঃ....আর তাই এই জায়গাটার কো-অর্ডিনেটসটাই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল....মমমম"
"তারমানে এই নোটবুকে লেখা এই ল্যাটিটিউড আর লংগিটিউডটাই ভেতরে ঢোকবার পাস-কোড...? কিন্তু এই পয়েন্টগুলর কি করলি...?" আবার প্রশ্ন করে উঠল দীপা কিন্তু এইবার আর কোনও উত্তর পেল না রুদ্রর কাছ থেকে |
নিজের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম হাসিল হয়ে যাওয়ার ফলে আজকে নিজেকে খুব মুক্ত বোধ করছিল তিস্তা আর সেই মুক্তি উদযাপন করার এর থেকে ভালো সুযোগ আর পেল না সে । দুজন দুজনকে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে একে অপরের মুখের ভেতর জীব ঢুকিয়ে কামের জোয়ারে ভেসে যেতে লাগল । তাদের সেই উত্তপ্ত উত্তেজিত রূপ দেখে দীপা হঠাৎ বলে উঠল "এই ! এই তিস্তা...এখানে নয়...এখানে নয়..আমরা এখানে সেফ নোই...ভেতরে চল অন্তত...প্লিজ " বলে তিস্তার হাত ধরে টানল সে
"প্লিজ ...মম আঃ আহহহ প্লিজ দীপা...উহঃ দীপা দি...আমি পাচ্ছিনা আর....আজকে প্লিজ..." কামোত্তেজনায় আগুনে পুড়তে পুড়তে কাতর কণ্ঠে বলে উঠল তিস্তা |
"না...না...এখন যদি এখানে কেউ এসে পরে, তাহলে কিন্তু সব পেয়েও আমাদের সব কিছু হারাতে হবে তিস্তা, তাই প্লিজ ভেতরে চল আগে "
দীপার মুখ থেকে হঠাৎ হারানোর কথা শুনতে আবার তিস্তার মনের ভেতর তার সেই কর্তব্য-বোধ জেগে উঠল আর সাথে সাথে রুদ্রকে ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল |
"হ্যাঁ...আমা...আমাদের মমম...আগে ভেতরে যাওয়া....উচিত..., রুদ্র.....সরি..বাট.." হাঁপাতে হাঁপাতে কোনও মতে বলে উঠল তিস্তা
"নো...নো প্রব্লেম" হতাশ কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র, তারপর সেও মাটি থেকে উঠে নিজের হাত পা ঝেড়ে নিলো |
"তাহলে...এবার ভেতরে ঢোকা যাক নাকি...? " রুদ্রকে উঠে দাঁড়াতে দেখে দীপা বলে উঠল | দীপার কথায় বাকি দুজনে মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই আস্তে আস্তে সেই দরজার দিকে পা বারাল ওরা | তবে সেই আগের মতোই রুদ্র দীপার হাত থেকে টর্চটা কেড়ে নিয়ে নিজে আগে সেই দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল, তারপর পেছনে ঘুরে বাকি দুজনকে ভেতরে আসতে বলল | বাইরে থেকেই অন্ধকার মনে হলেও দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘিরে ধরল ওদের | রুদ্রও টর্চটা জ্বালিয়ে এইদিক ওইদিক আলো ফেলতে ফেলতে এগিয়ে চলল সামনের দিকে | ভেতরে ঢুকে প্রথম যে জিনিসটার ওপর ওর চোখ পড়ল সেটা হল একটা লিভারের মতন দেখতে জিনিস | ঠিক বাইরে মাটির মধ্যে যেমন ছিল সেই রকমই কিন্তু আকারে অনেকটাই ছোট ।
দরজার ঠিক পাশেই সেই রকম একটা জিনিসটা থাকতে দেখে রুদ্র বুঝল যে সেটা নিশ্চয়ই দরজার লক | টর্চের আলোটা সেই জিনিসটার ওপর ফেলে আস্তে করে তার লিভারটা ঘোরাতেই নিমেষের মধ্যে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো আর সাথে সাথে একটা যান্ত্রিক আওয়াজ ওদের কানে ভেসে এলো...ঠিক যেমন দরজাটা খোলার সময় হয়েছিল সেই রকমই | দরজাটা বন্ধ হয়ে যেতেই ওরা আস্তে আস্তে সামনে করিডোরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল | ঘরের ভেতরটা অন্ধকার হলেও করিডরের ওপরে মানে সিলিঙে থাকা ছোট স্কাই লাইট দিয়ে চাঁদের মৃদু আলো ভেসে আসতে দেখল ওরা | করিডোরের দেওয়ালের ওপর আলো ফেলতে ফেলতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল রুদ্র এমন সময় হঠাৎ "এইতো!!!" বলে চেঁচিয়ে উঠল সে ।
"এইতো...এইতো ইলেকট্রিক বোর্ড রয়েছে এখানে....." বলে টর্চটা ডান হাত থেকে বাঁ হাতে নিলো রুদ্র ," এর মানে মেন্ সুইচটাও নিশ্চয়ই এটার ভেতরেই থাকবে " বলে আস্তে আস্তে সেই ইলেকট্রিক প্যানেলের দিকে এগিয়ে গেলো রুদ্র | সেখানে গিয়ে সেই প্যানেলটা খুলতেই বিভিন্ন রঙের অজস্র সুইচ দেখতে পেলো সে | রুদ্রকে সুইচে হাত দিতে দেখে দীপা বলল ঃ
"রু... সাবধানে কিন্তু...অনেকদিন ওখানে কেউ হাত দায়নি , তাই শর্ট হয়ে যাওয়ার চান্স আছে কিন্তু...যাই করিস সাবধানে করিস " | তবে দীপা কথার কোন গ্রাহ্য না করে রুদ্র সোজাসুজি মেন্ সুইচটা ওপরে তুলে দিলো আর সাথে সাথে সেই প্যানেলের থাকা বাকি সুইচগুলোর ওপরে লাল রঙের আলো জ্বলে উঠল | ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রথম একটা সুইচ টিপতেই দূরে কোথাও কোনও একটা ঘর থেকে এক চিলতে আলো ভেসে এলো আর সাথে সাথে সেই সুইচটার ওপর সবুজ রঙের আলো জ্বলে উঠল |
ব্যাপারখানা এইবার ঠিক করে বুঝতে পেরে রুদ্র হঠাৎ পেছনে ঘুরে দীপা আর তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল "লেট্ দা পার্টি বিগিন..." আর সাথে সাথে একটার পর একটা সুইচ টিপে দিলো রুদ্র সেই প্যানেলের সব আর দেখতে দেখতে বাড়ির প্রত্যেকটা আলো জ্বলে উঠল |
"ওহ মাই গড!!!" আলো জ্বলে উঠতেই দীপা চেঁচিয়ে উঠলো খুশীতে
"ইয়েস!! ইয়েস!! ইয়েস!!!!" উল্লাসে ফেটে পড়ল তিস্তা আর তার সাথে সাথে দীপাকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে আরম্ভ করল সে | তিস্তাকে সেই রকম আনন্দ করতে দেখা দেখি দীপাও আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওর সাথে লাফাতে আরম্ভ করল |
"তারমানে পাণ্ডে-জি এই জায়গাটাকে রিসোর্টের বর্ণনা দিয়ে কোনও ভুল করেননি...কি বল দীপা...? " সামনে করিডরের দেওয়ালে লাগানো সব বহুমূলের আসবাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র | সত্যিই খুব নিখুঁত পরিকল্পনা করে বানানো হয়ে ছিল বাড়িটাকে আর তার ওপর চারিদিক দিয়ে গাছ পালায় ঘিরে থাকার জন্য কোনও মতেই এই জায়গা কারুর দ্বারা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ছিল।
এরই মধ্যে ঘুরে ঘুরে ভেতরের সব ঘরগুলো দেখতে লাগল ওরা | প্রথমত, সবাই মিলে কিচেনে গিয়ে সেখানকার জিনিসপত্র নেরে চেরে দেখতেই পেটি পেটি মিনারেল ওয়াটারের বাক্স দেখতে পেলো আর তারই পাশেই পেটি পেটি ক্যান্ড খাবারও দেখল | ওপরের দিকের পাল্লা-গুল খুলতেই বিভিন্ন রকমের মসলা আর খাবারের দ্রব্য চোখে পড়ল ওদের । রুদ্র এগিয়ে গিয়ে নিচে ঝুঁকে সামনের ড্রয়ার খুলতেই রান্না করার গ্যাস, ওভেন আর হিটার দেখতে পেলো । তবে সেই কিচেনটাকে সাধারণ কিচেন বললে পুরো পুরি ভুল হবে | মডুলার টপ থেকে আরম্ভ করে ডিশ ওয়াসার পর্যন্ত এমন অনেক কিছুই ওদের চোখে পড়ল যে সবের নাম তারা আগে কোনদিনেও শোনেনি আর নিজের আগ্রহ সংযত না রাখতে পেরে এইটায় ওইটায় হাত দিতে নাড়াচাড়া করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রুদ্র |
"এ...রু তবে এই বাড়িটা কোথা থেকে কারেন্ট পাচ্ছে ? ...মানে জলের নিচ দিয়ে কি কোনও লাইন এসেছে...?" দীপা পাশ থেকে বলে উঠল
"না...তবে ইলেকট্রিক প্যানেলটা দেখে আমার যতদূর আন্দাজ করছি...এই বাড়ির টেরেসে বা পেছনে কোথাও নিশ্চয়ই সোলার প্যানেল বসানো আছে আর তাই থেকেই এই ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হচ্ছে...মানে দিনের বেলাটা সেলগুল নিজেদের পুরো চার্জ করে নেয় আর রাতের বেলা সেগুল সেটা ডিসচার্জ করে দায়....দ্যাখো না আজকে ঘরের আলো-গুলর জোর কম মনে হচ্ছে তো...কালকে রাতে দেখবে কত জোর হয়ে যায় এগোল..."
"ওহ! তারমানে এখানে ইলেক্ট্রিসিটি পুরোপুরি আন-লিমিটেড...? " অবাক হয়ে বলে উঠল দীপা
"একদম...আর সামনেই একটা জলাশয় আছে তাই জলেরও কোনও অভাব হবে না...এভ্রিথিংগস আন লিমিটেড..." বলে উঠে রুদ্র আস্তে আস্তে দীপার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো | তারপর হঠাৎ তার কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে ওকে তুলে কিচেনের কাউন্টারের ওপর বসিয়ে ওকে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরল রুদ্র |
"আমরা শেষমেশ পেরেছি দীপা, আমাদের প্ল্যান সার্থক হয়েছে..." দীপার কাঁধে নিজের মাথা রেখে বলে উঠল রুদ্র | দীপাও সস্নেহে তাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেলো তবে ওদের অজান্তেই দুটো নগ্ন শরীরে পেষণে ওদের রক্ত কোষগুলো উষ্ণ হয়ে উঠতে আরম্ভ করল | স্নেহ ভালোবাসা ভরা আলিঙ্গনে হঠাৎই কামের জোয়ার এসে ধাক্কা দিতে আরম্ভ করল আর তাদের অজান্তেই একে অপরকে পাগলের মতন চুমে খেতে আরম্ভ করল ওরা | রুদ্রর লিঙ্গ ততক্ষণে খাঁড়া হয়ে গিয়ে দীপার বালে ভরা যোনিতে খোঁচা মারতে আরম্ভ করে দিয়েছিলো | দীপার ঠোঁটের ওপর থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে ওর ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে খেতে আস্তে আস্তে নিজের মাথাটা নিচে নামিয়ে দীপার মাইয়ের বোঁটা নিজের মুখে নিয়ে চুষতে আরম্ভ করল রুদ্র | এতদিন পর আবার নিজের শরীরে কামের জোয়ার ফিরে পেয়ে তাতে ভেসে যেতে আরম্ভ করল দীপা আর রুদ্রর চুলের মুঠি ধরে ওর মুখটা আরও জোরে চেপে ধরল নিজের ভারী মাইয়ের ওপর | সবে মাত্র ওদের নৌকা পাল তুলেছে ভাসার জন্য এমন সময় দূর থেকে একটা চিৎকার শুনে ওদের ঘোর কেটে গেলো । রুদ্রর বাহু থেকে নিজেকে মুক্ত করে আস্তে আস্তে সেই কাউনটার নেমে পড়ল দীপা তারপর হঠাৎ আবার সেই আওয়াজটা শুনতে পেল । আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সেই আওয়াজ অনুসরণ করে দৌড়ে গেলো ওরা |
কিচেনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে করিডোরে পৌঁছতেই আবার সেই চিৎকার শুনতে পেলো ওরা কিন্তু এইবার সেই গলার আওয়াজটা অনেকটাই স্পষ্ট, তিস্তার গলার আওয়াজ | রুদ্র আর দীপা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই আওয়াজের দিকে দৌড়ে যেতে লাগল |
"ওহ দীপা দিইইই!!!.....রুদ্রোওওওও!!! তোমরা কোথায় আছো!!!! " তিস্তার চেঁচানোর চোটে ভয়ে করিডোর দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে একদম শেষের ঘরের সামনে আসতেই ঘরের মধ্যে তিস্তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ওরা, তবে তাকে দেখে ভয় কম আহ্লাদিত বলে মনে হল ওদের | আস্তে আস্তে সেই ঘরের মধ্যে ঢুকে বিরক্ত হয়ে দীপা বলে উঠল ঃ
"কি হল কি? অত চেঁচাচ্ছিলি কেন ? কি হয়েছে....? বাঘ পরেছে নাকি...? "
দীপার কথা শুনে তিস্তা হাসি মুখে বলে উঠল ," বাঘ পরবে কেন দীপা দি তবে কেন ডাকছি সেটা নিজেরাই দেখো" আর তার সাথে সাথে নিজের আঙুলে করে ইশারা করলো সেই ঘরের জিনিসপত্রের দিকে | রুদ্র সেই দিকে এগিয়ে যেতেই বুঝল যে এই ঘরটা আসলে একটা আরমারি |
"এইটা...এইটা অস্ত্রাগার...? " অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রুদ্র
"ইয়েস...ইট ইস..." বলে সামনের লোহার বড়ো আলমারির পাল্লাটা খুলে দিল তিস্তা আর পাল্লা খুলতেই তাকে সাজানো একের পর এক রাইফেল দেখতে পেলো রুদ্র...তারপর তার পাশের আলমারিটা খুলতেই হ্যান্ড-গান, পিস্তল আর রিভলভার দেখতে পেলো সে | দীপা সেই দিকে এগোতেই পায়ের কাছে কিছু একটা ঠেকার অনুভূতি পেলো, নিজের মাথা নামিয়ে সেই দিকে তাকাতেই পর পর প্রায় পনেরোটা কার্টুন দেখতে পেলো সে |
"এ গুলোতে কি..."
"ওগুলোতে ম্যাগাজিন আছে দীপা দি আর ওই পাশের গুলোতে বুলেটস আছে...."
"মানে পাণ্ডে-জি সব কিছুরই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন এখানে....?" দীপা বলে উঠল
"শুধু ব্যবস্থা নয়, এখানে যা সব জিনিসপত্র, অস্ত্র-শস্ত্র, গোলাবারুদ রয়েছে তাতে একটা ছোট সেনাবাহিনীর পক্ষে পর্যাপ্তর থেকেও বেশী....শালা আবার গ্রেনেড লঞ্চারও রয়েছে..." পেছন দিকের দেওয়ালের ওপর লাগানো একটা লম্বা মোটা বন্দুকের মতন জিনিসের দিকে ইশারা করে বলে উঠল রুদ্র |
"বাপরে বাপ! পাণ্ডে-জি কি আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করার প্ল্যান করছিলেন নাকি তিস্তা...?" ঠাট্টার সুরে বলে উঠল দীপা
"না...না...দীপা দি, দিস আর ফর সিকিওরিটি পারপাসেস ওনলি...." নিজের হাত নাড়িয়ে বলে উঠল তিস্তা, তারপর হঠাৎ ঘরটার আরও একটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা কাঠের আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবার বলে উঠল "বাট আই থিংক দ্যাট ওই সব জিনিসের থেকে এইগুলো তোমার বেশী পছন্দ হবে দীপা দি..." আর সাথে সাথে সামনের সেই আলমারির পাল্লাটা টেনে খুলে দিলো তিস্তা |
রুদ্র আর দীপা আস্তে আস্তে সেই আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওদের চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল | সেই পুরো আলমারি জুড়ে ভর্তি রয়েছে তাক তাক টাকার বান্ডিল আর তারই নিচের দিকে জ্বলজ্বল করে রয়েছে তালের পর তাল সাজানো সোনার বিস্কিট | দীপা আর রুদ্র এত টাকা পয়সা জীবনেও নিজের চোখে দেখেনি তাই অবাক হয়ে সেই দিকে একদৃষ্টে হয়ে তাকিয়ে রইলো ওরা | দীপা আস্তে আস্তে আলমারির সামনে গিয়ে নিচ থেকে একটা সোনার বিস্কিট বের করে সেটাকে নিজের হাতে তুলে ধরতেই সাথে সাথে তার চোখের কোন বেয়ে এক ফোটা জল সেই সোনার বিস্কিটের ওপর পড়ল | সারাজীবন অত খাটা খাটনি অত কষ্ট সহ্য করে আজ এত টাকা পয়সার মুখ দেখে ওর মন ভারি হয়ে এলো তবে বাকি দের কিছু বুঝতে দিলো না সে । সোনার টুকরোটা যথাস্থানে রেখে দিয়ে তিস্তার দিকে তাকিয়ে দীপা বলল :
"তোর পায়ের ব্যথাটার কি হল...? রক্ত বেরোচ্ছে না আর?"
"না....না...ওসব কিছুনা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে...." তিস্তা বলে উঠল
দেখতে দেখতে পুরো বাড়িটা ঘুরতে অনেক সময় লেগে গেলো ওদের আর সত্যি বলতে প্রত্যেকটা ঘরে ঢুকে প্রথম দশমিনিট অবাক হয়ে সেই ঘরের আসবাব আর জিনিসপত্র এক দৃষ্টি তাকিয়ে দেখতে লাগল ওরা | বাড়িটা দুতলা হলেও তার সেই অদ্বিতীয় স্ট্রাকচারের জন্যে সামনের দিক থেকে দেখলে সেটাকে একতলা বলে মনে হবে আর তাই জন্যই অতটা সিকিওর এই বাড়িটা | তবে আশ্চর্যের বিষয় হল যে বাইরে থেকে এমনি দুতলা দেখা গেলেও নিচের দিকে মানে বেসমেন্টে আরও একটা তলা ছিল সেই বাড়িটার | জলের সংলগ্ন স্থলে থাকার জন্য বাড়ির সেই বেসমেন্টে একটা ছোট বোট হাউস ছিল যেটার সঙ্গে বাইরের লেকের একটা কানেকশন ছিল | বোট-হাউসের প্লাটফর্মের সাথে বাধা দুটো ছোট ছোট বোটও দেখতে পেলো ওরা আর তার পাশেই বাইরে জলপথে যাওয়ার সেই দরজাটাকে |
প্রায় আরও দুঘণ্টা ধরে সেই বাড়ির ভেতরে অভিযান চালিয়ে শেষমেশ সব কিছুই দেখে ফেলল ওরা | বাড়িটার দুটো ফ্লোর, নিচের ফ্লোরে মানে একতলায় ছিল একটা ড্রয়িং কাম থিয়েটার রুম আর তার ঠিক পাশেই ছিল কিচেন-ও-ডাইনিং রুম | করিডোর দিয়ে গিয়ে তার পাশের রুমটা ছিল ওয়াশরুম | তার পাশে মানে একদম শেষের রুমটা ছিল সেই অস্ত্রাগার বা আরমারি | সেই রুমের মুখোমুখি লাগোয়া যে সিঁড়িটা ওপরে চলে গেছে সেই সিঁড়ি দিয়ে ওপরের ফ্লোরে গেলে ছিল আবার একটা লম্বা করিডোর তবে নিচের করিডরের চেয়ে আয়তনে অনেকটাই ছোট | সেই করিডোর দিয়ে হেটে সামনে গেলেই পর পর তিনটে বড়ো বড়ো বেডরুম ছিল আর শেষে একদম সিঁড়ির গায়ে আরও একটা কিচেন রুম একদম তবে সেটা নিচেরটার চেয়ে অনেকটাই ছোট |
সেই ফ্লোরের শেষের দিকে যে সিঁড়িটা ছিল সেটা সোজা চলে গেছে ওপরে টেরেসের দিকে | রুদ্র আস্তে আস্তে সেই ওপরের যাওয়ার সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে সামনের দরজার লিভার ঘুরিয়ে দরজাটা খুলতেই বাড়ির সেই বিরাট টেরেসটা দেখতে পেলো আর এটাও বুঝতে পারল যে ওর আন্দাজি ঠিক | টেরেসের একপাশ জুড়ে পর পর দশটা সোলার প্যানেল বসানো ছিল আর তার পাশেই একটা ছোট ইলেকট্রিকাল বাক্স বসানো ছিল | রুদ্র আস্তে আস্তে টেরেসে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই সামনের সেই অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেলো | গাছের আড়াল থাকলেও তারই মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলো সেই চাঁদর আলোতে আচ্ছাদিত সেই লেকটাকে | একা একা সেই দৃশ্য কিছুক্ষণ উপভোগ করে হঠাৎ বাকিদের কথা মনে পরতেই দৌড়ে সিঁড়ির কাছে এসে রুদ্র বলে উঠল ঃ
"এই...এই তোমরা কোথায় আছো? উপরে এসো তাড়াতাড়ি...একবার দেখে যাও সিনটা...হেব্বি লাগবে"
তিস্তা আর দীপা তখন ওপরের কিচেনে এইটা ওইটা দেখছিল তবে হঠাৎ রুদ্রর গলার আওয়াজ শুনে ওরাও সিঁড়ি বেয়ে টেরেসে উঠে এলো আর সেই দরজা দিয়ে ঢুকে বাইরে বেরোতেই সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেলো ওরা |
দীর্ঘ দিন ধরে ভয়ঙ্কর সব ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পর তারা যে আজ অবশেষে এইখানে পৌঁছতে পেরেছে, নিজেদের আপনজনদের সাথে তাতেই যেন দীপার মন খুশিতে ভোরে উঠতে লাগল | রুদ্রকে সামনের কার্নিশের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দীপাও আস্তে আস্তে গিয়ে তারই পাশে সেই কার্নিশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো | পায়ের তলাটা হালকা ভেজা ভেজা অনুভব করে সেই দিকে তাকাতেই দীপা দেখল যে ছাতের মেঝেটা ভিজে রয়েছে | "তারমানে আমরা ভেতরে ঢুকতেই বৃষ্টি এসেছিলো...কিন্তু কোনও আওয়াজ তো পেলাম না আমরা...তাহলে কি পুরো বাড়িটাই সাউন্ড-প্রুফ...?" নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করে উঠল দীপা
সেই সব প্রশ্ন নিজের মন থেকে আস্তে আস্তে ঝেরে ফেলে মাথা তুলে সামনে তাকাতেই সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেল দীপা | পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বল আলো পরে বিস্তৃত সেই লেকের জলটাকে রূপোলী রঙের দেখতে লাগছিলো । এতই অপরূপ সেই দৃশ্য ছিল যে সেটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন কোনও শিল্পী নিজের তুলি দিয়ে সেই দৃশ্য এঁকে দিয়েছে | দীপা আস্তে আস্তে নিজের মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাতেই সেই লম্বা লম্বা গাছের মধ্যে দিয়ে আকাশে ভোরে থাকা সহস্র কোটি তারা জ্বলজ্বল করতে দেখল | এমন দৃশ্য সে শহরে থাকতে আগে কোনদিনও দেখেনি।
বাড়ির চারপাশের জঙ্গল থেকে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক অনবরত শোনা যাচ্ছিলোই আবার তারই সাথে সাথে দূর থেকে হুতুম পেঁচার ডাকও ওদের কানে ভেসে আসতে লাগল | "দ্যাখো..দ্যাখো ওই জোনাকিগুলোকে, কি সুন্দর তাইনা..." হাত তুলে সেই অন্ধকার জঙ্গলের বুকের দিকে ইশারা করল তিস্তা আর সত্যিই এক ঝাঁক জোনাকিকে উড়ে বেড়াতে দেখল ওরা | কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে সেই রকম অবস্থা হল ওদের | সেই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই মোহিত হয়ে গেলো ওরা যে অবাক হয়ে সেই দিকেই তাকিয়ে রইলো | কতক্ষণ সেই রকম দাঁড়িয়ে ছিল ওরা সেটা ওরা বুঝতেই পারলো না এমন সময় নীরবতা ভঙ্গ করে পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল :
"তোমরা একটু দাড়াও....আমি আসছি এখুনি..." বলে পেছন ফিরে দরজা দিয়ে নিচে চলে গেল রুদ্র |
রুদ্রকে নিচে চলে যেতে দেখে তিস্তা আস্তে আস্তে দীপার পেছনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল | সেই ঠাণ্ডা শীতল আবহাওয়ায় হঠাৎ আরেকটা শরীরে উষ্ণতা অনুভব করে দীপা কেঁপে উঠল | তিস্তা আস্তে আস্তে নিজের শরীরটা দীপার শরীরে সাথে চেপে ধরতেই দীপা অনুভব করল যে তিস্তার স্তনের বোঁটাগুলো শক্ত হয়ে তার পিঠে নিজেদের জানান দিচ্ছে | দীপার কানের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে তিস্তা ফিসফিস করে বলে উঠল "দীপা দি....আমরা অবশেষে পেরেছি, আমি বসকে নিরাশ করিনি....বল? বস থাকলে আজকে খুবই খুশি হতেন তাইনা......? "
"উহঃ হ্যাঁ...হ্যাঁ সোনা...." বলে আস্তে আস্তে পেছনে ঘুরে তিস্তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুম্বনে হারিয়ে গেলো দীপা | সেই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সবে মাত্র একে ওপরের সঙ্গ ভালো লাগতে আরম্ভ করেছে এমন সময় হঠাৎ দরজার দিক থেকে রুদ্রর পায়ের আওয়াজ ভেসে এলো ওদের কানে | না চাইতেও একে ওপরকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের প্রতি সংযম এনে আবার আগের মতন সোজা হয়ে দাঁড়াল ওরা |
"এই দ্যাখো! এই দ্যাখো কি নিয়ে এসেছি!!" উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র তারপর আস্তে আস্তে আবার ওদের পেছনে এসে দাঁড়ালো |
"কি ওটা...?" রুদ্রর হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা
"আরে বুঝতে পাড়ছও না?? আরে এটা সেই টালিস্কারটা যেটা সেলেব্রেশন হোটেল থেকে নিয়ে এসেছিলাম আমরা..." বলে তিস্তার দিকে তাকিয়ে চোখ মারল রুদ্র
"মানে...? ওটা কি করে এলো এখানে...? ওটা তুই কোথায় ঢুকিয়েছিলি...? " নিজের ভুরু দুটো কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে রুদ্রর দিকে তাকাল দীপা
তবে দীপার প্রশ্ন শুনে রুদ্র হাসি হাসি মুখ করে দীপার কাছে গিয়ে বলে উঠলো "বলছি...কিন্তু আগে বোলও আমায় মারবে না ....? প্লিজ..."
"মারব...? কেন মারতে যাবো কেন তোকে...? তোকে তো আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম কোথায় নিয়েছিলি ওটা...সেটার সঙ্গে মারামারির প্রসঙ্গ কি করে আসছে..." দীপা বলে উঠল
"ঠিক আছে, তাহলে বলি...তোমার ব্যাগে..." বলেই দীপাকে জাপটে ধরল রুদ্র
"মানে...? আমার ব্যাগে মানে...? ছাড় আমায়! ছাড়...শালার ছেলে কোথাকার ! ওই জন্যই আমার ব্যাগটা অত ভারী লাগছিলো...তাই জন্যই শালা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলি না ব্যাগ ভারি হয়ে যাওয়ার কথা...?" কপট রাগ দেখিয়ে রুদ্রকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলে উঠল দীপা
"আরে সরি...সরি বলছি তো...প্লিজ....দীপু প্লিজ" আদুরে সূরে বলে উঠল রুদ্র
"না...না...না... ছাড় আমায়...আমি তোর সাথে আর কোনোদিন কথা বলব না ....যাহ্!!!" দীপা বলে উঠল
"ঠিক আছে যাও কথা বলতে হবে না তোমাকে...এমনিতেও কথা বলা ছাড়া আর কিছুই তো করোনা আমার সাথে...বাট যাই হোক না কেন, আই থিংক দ্যাট আজকে আমরা এটা ডিসার্ভ করি..." বলে হাতের বোতলটা ওপরে তুলে ধরল রুদ্র তারপর সেটাকে নামিয়ে এনে মাথার ক্যাপটা খুলতেই আবার বলে উঠল "এইরে দেখেছো তো! গ্লাস টাস আন্তে ভুলেই গেছি একদম..."
"ধুররর!! ও সব গ্লাস টাস লাগবে না আজকে আমাদের, আমি একাই পুরোটা মেরে দিতে পারবো আজকে" ফুর্তিতে বলে উঠল তিস্তা |
"ব্যাস তাহলে তো হয়েই গেল....এই নাও প্রথমে তুমি এক ঢোঁক খাও তারপর আমি খাবো" বলে তিস্তার হাতে বোতলটা দিতেই মুখ ভর্তি করে এক ঢোঁক খেলো তিস্তা তারপর রুদ্রকে বোতলটা ফেরত দিয়ে দিলো
"থ্রি চিয়ার্স টু আস এন্ড টু আওয়ার হাইডওয়ে!! হিপ হিপ হুররে!!!! হিপ হিপ হুররে!!! হিপ হিপ হুররে!!!" বলে বোতল থেকে এক ঢোঁক মদ খেলো রুদ্র তবে অভ্যাস না থাকায় আর পানীয়টা অত্যধিক ঝাঁজালো থাকার ফলে এক ঢোঁক খেয়েই ওর গলা জ্বলতে আরম্ভ করল | পাশে দীপাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে উঠল :
"একি...একি কাণ্ড...? আমাদের আসল মদারুই এইরকম চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন!!! এই নাও সোনা...এই নাও তোমার অমৃত..." বলে দীপার হাতে বোতলটা দিতে যেতেই দীপা বাধা দিয়ে বলল :
"না রে রু......আমি খাবোনা আজকে...সরি..."
"একি!! একি কথা...? এজে ভূতের মুখে......" পাশ থেকে বলে উঠল তিস্তা
"আরে খাও না...নিজেই তো বয়ে নিয়ে এলে এতোটা পথ, সেই খাটনির একটু ফল ভোগ করো না....। রাগটা না হয় বিছানাতেই দেখিও" হেসে বলে উঠল রুদ্র
"ইসসস!!! ছোট লোক কোথাকার...বাট রু! প্লিজ...আজকে আমি খাবোনা, আমার অ্যাসিড হয়ে গেছে তাই....." দীপা বলে উঠল
"আচ্ছা ঠিক আছে যাও....মাফ কিয়া তবে তাতে আমাদেরই ভালো হল...কি বলও তিস্তা...?" তবে তিস্তার কাছ থেকে কোনও উত্তর এলো না | উত্তর না পেয়ে সেই দিকে তাকাতেই ওরা দেখল যে তিস্তা টেরেসের ওপর শুয়ে পড়েছে | তাকে দেখা দেখি ওরাও টেরেসের ওপর শুয়ে পড়ল আর শুয়ে ওপরে আকাশের দিকে ঝিকমিক করা তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো | কিছুক্ষণ ঐরকম শুয়ে থাকার পর রুদ্র হঠাৎ "হুউউ" বলে কেঁপে উঠতেই দীপা বলে উঠল :
"এই!!! এখুনি নিচে চল....এখানে এই অবস্থাতে শুয়ে থাকলে কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে যাবে...এমনই শীতকাল তার ওপর জলে ভেজা হয়েছে তার ওপর আবার বৃষ্টিও হয়েছে....ওঠ!! এখুনি ওঠ..." দীপা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতেই ওকে দেখা দেখি তিস্তাও মেঝে থেকে উঠে পড়লো | অন্যথা আর কোনও রাস্তা না দেখতে পায়ে রুদ্রও উঠে পরে নিচে যাওয়ার সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল |
দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজাটার লিভার বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে আরম্ভ করল রুদ্র তবে সিঁড়ি দিয়ে নামার সাথে সাথে দীপা আর তিস্তার পাছার নড়ন চরণ দেখে রুদ্র আবার মোহিত হয়ে পড়ল । হা করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলো ওদের পাছার দুলুনি | সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাঁদিকে ঘুরে সামনের করিডোর দিয়ে প্রথম রুমটার সামনে আসতেই দীপা বলে উঠল ঃ
"আয় এখানে আয়", তারপর রুমের ভেতরে ঢুকে দেওয়াল হাতড়ে ঘরের লাইটটা জ্বালাও দীপা |
রুমের আলো জ্বলে উঠতেই ওরা দেখল যে বাকি দুটো বেডরুমের থেকে সেই রুমটা আয়তনে অনেকটাই বড়ো আর তার ফলে এমনি বিছানার জায়গায় একটা বিরাট কিং সাইজড বেড রাখা রয়েছে | বিছানাটা দেখেই ওদের তিনজনর ক্লান্তি যেন দিগুণ হয়ে গেল তাই আর এক বিলম্ব দেরি না করে দীপা আর তিস্তা বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো | রুদ্র ঘরের আলোটা নিভিয়ে এক লাফে বিছানাতে উঠে ওদের মাঝখানে গিয়ে শুয়ে পড়লো | বিছানাতে তার পিটটা ঠেকতেই তার মনে হল যেন সেটা মকমলের তৈরি । এপাশ ওপাশ নড়ে ছড়ে শেষ মেষ সোজা হয়ে শুতেই ওপরে ঘরের সিলিঙের দিকে চোখ পড়ল রুদ্র । সে দেখল যে নিচের করিডোরের মতন সেই রুমেও স্কাই-লাইট করা রয়েছে | সেই স্কাই-লাইট দিয়ে হালকা জ্যোৎস্নার আলো এসে ভরিয়ে তুলতে লাগল তাদের সেই ঘরটাকে | অনেক্ষন ধরে সেই একই দিকে তাকিয়ে থাকার পর আস্তে আস্তে নিজের মাথা ঘুরিয়ে তিস্তার দিকে তাকাতেই সে দেখল যে তিস্তাও তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে |
"কি দেখছ...?"
"তোমায়..." তিস্তা বলে উঠল । তিস্তার ঠোঁটে একটা হাসির রেখা দেখতে পেলো রুদ্র |
"তিস্তা..?" রুদ্র বলে উঠল
রুদ্রর প্রশ্ন শুনে সে "হ্যাঁ " বলে উঠতেই সাথে সাথে নিজের ঠোঁটের ওপর রুদ্রর ঠোঁট অনুভব করল সে | তিস্তার নরম শরীরের ওপর আস্তে আস্তে নিজের হাত বোলাতে বোলাতে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে লাগলো তার শরীরটাকে | তিস্তাও উত্তেজনার বসে রুদ্র মাথায় হাত দিয়ে বোলাতে লাগল |
অন্যদিকে সেই প্রেম-লীলার খেলা শুয়ে শুয়ে তাদের উপভোগ করতে লাগলো দীপা | চোখের সামনে দুটো নর নারীকে সেই আদিম খেলায় লিপ্ত হতে দেখে তার শরীরও গরম হয়ে উঠতে লাগল | রুদ্রকে তিস্তার মাইয়ের বোঁটায় কামড়াতে দেখে দীপার নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো আর তার সাথে সাথে তার সুন্দর গর্বিত স্তনের কালো বৃত্তের মধ্যে থাকা স্তনবৃন্তগুলো খাঁড়া হয়ে নিজেদের জানান দিতে লাগলো | নিজের অজান্তেই নিজের আঙ্গুলটা আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামাতে নামাতে নিজের লোমে ভরা যোনির উপরে নিয়ে গিয়ে আটকে গেল দীপার । নিজের ওপর আর সংযম রাখতে না পেরে আলতো করে নিজের যোনির ফাটলের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিল দীপা আর সাথে সাথেই কামের আগুনে কুঁকড়ে গিয়ে নিজেই নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরল | তবে পরক্ষনেই হঠাৎ একটা কথা মনে পরে যেতেই নিজের কামাতুর দেহকে সামলে নিয়ে আবার ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল
"রুদ্র...তিস্তা...আয় আমার কাছে একবার " দীপার মুখ থেকে সেই কথা শুনে দুজনেই সেই দিকে তাকাল, তারপর আস্তে আস্তে দীপার কাছে ঘেঁষে এলো ওরা | রুদ্রর হঠাৎ মনে হল যেন তিস্তার সাথে ওই রূপ ঘনিষ্ঠ হতে দেখে দীপার আবার কষ্ট হচ্ছে...তাই ওর কাছে গিয়েই ওর ঠোঁটে আবার একটা গভীর চুমু খেলো রুদ্র | দীপাও সেই চুম্বন অনুভব করে রুদ্রর মনের কথা বুঝতে পারল, তারপর হঠাৎই রুদ্রর ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে বলে উঠল "আজকে তোদের দুজনকেই কিছু কথা বলতে চাই...আশা করি তোরা শুনতে ইচ্ছুক আছিস..." । দীপার কথা শুনে দুজনেই নিজেদের মাথা নাড়িয়ে উঠতেই দীপা বলল...
"তুই...তুই আমাকে ভালবাসিস তো রুদ্র ?" রুদ্রর দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে সেই প্রশ্ন করল দীপা |
দীপার মুখ থেকে সেই প্রশ্ন শুনে আবার সেই আগের দিনের কথা মনে পরে গেলো রুদ্রর | সে জোর দিয়ে বলে উঠল "হ্যাঁ, আমি তোমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি দীপা..."
"ঠিক...আর তিস্তাকে...? " বলে তিস্তার দিকে তাকাল দীপা
"আমি...আমি, তিস্তাকেও খুব ভালোবাসি..." রুদ্র বলে উঠল
"হমম... কিন্তু এটা কি তুই জানিস যে তিস্তাও তোকেও ততটাই ভালোবাসে...?" আবার তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা
"কি ? তিস্তা আমাকে...? সত্যি...? সত্যি তুমি...?" তিস্তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র
"হ্যাঁ...হ্যাঁ রুদ্র আমি তোমাকে ভালোবাসি...তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না রুদ্র..."
"কিন্তু তিস্তা আমি....আমি যে দীপাকে...." রুদ্র বলে উঠল
"আমি জানি রুদ্র আর সেই জন্যই আমি আমার ভালোবাসা ভাগ করে নিতে রাজি আছি " তিস্তা বলে উঠলো
"মানে....?"
"মানে...আমি জানি যে তুমি দীপা দিকে সব থেকে বেশি ভালোবাসো, তাই তুমি দীপার দি আর দীপা দি তোমারি থাকবে....আমি শুধু চাই তোমাকে দীপা দির সাথে ভাগ করে নিতে...তোমার একটু ছোঁয়া পেতে....সেই একটুকু ছোঁয়া পেলেই আমি ধন্য হয়ে যাবো রুদ্র...." স্কাই-লাইট দিয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোতে তিস্তা চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ধারা গড়িয়ে পড়তে দেখল রুদ্র | তিস্তার সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা যে শুধুমাত্র দৈহিক নয় সেটা এইবার বুঝতে আর বাকি রইল না রুদ্রর |
"দেখ রুদ্র দেখ, মেয়েটা...মেয়েটা তোকে কতটা ভালোবাসে...." পাশ থেকে দীপা বলে উঠল
"কিন্তু আমি তোমাকেও খুব ভালোবাসি দীপা দি..." দীপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল তিস্তা |
"হমমম....সে তো আমি জানি সোনা...তুই আমাকে কতটা ভালবাসিস...আমিও তোকে..."
"না দীপা দি, আমি সেই ভালোবাসার কথা বলছি না...আমি এই ভালোবাসার কথা বলছি" বলে দীপার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে একটা গভীরে চুম্বন খেলো | তবে রুদ্র সেই প্রথম ওদের দুজনকে প্রেমে লিপ্ত হতে দেখে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো আর নিজের অজান্তেই ওর কণ্ঠ দিয়ে একটা প্রশ্ন বেরিয়ে এলো : "মানে...?"
রুদ্রর মুখ থেকে সেই প্রশ্ন শুনে দীপার ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে তিস্তা বলে উঠল "রুদ্র...আমি...আমি লেসবিয়ান, আমি সমকামী..."
তিস্তার কাছ থেকে সেই উত্তর পেয়ে তিস্তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রুদ্র তারপর দীপার দিকে তাকাতেই দীপাকে নিজের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতে দেখল |
"কিন্তু...? মানে...তুমি...মেয়েদের প্রতি....তাহলে আমায়...? কি করে...?"
" রু প্লিজ শান্ত হ সোনা....আসলে আমি এই সব কিছুই জানতাম, ও আমাকে প্রথমদিনই জানিয়েছিল এই ব্যাপারটা | তবে ও এটাও জানিয়েছিল যে প্রথম দেখাতেই ও তোর ভালোবাসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল আর এটাও বলেছিল যে আমায় দেখলেই ওর শরীরে কামে ভোরে যায় | আমি এই সব কিছুই জানতাম...বিশ্বাস কর...শুধু জানতাম না একটা কথা, যে কথাটা একটু আগে ও আমাদের সামনে বলল" তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ "ফাক! ফাক! আই আম কনফিউজড..." বলে বিছানাতে উঠে বসল রুদ্র | তার মুখের সেই কথা শুনে দীপা ও তিস্তা দুজনেই একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে আরম্ভ করল | "তবে কি..রুদ্র আমাদের কে মেনে নেবে না....?" "তবে কি রু আমাকে তিস্তার সাথে ভাগ করে নেবে না....?" নিজেদেরকে প্রশ্ন করে উঠল দীপা ও তিস্তা এমন সময় রুদ্র বলে উঠল :
"আমি এখন খুবই কনফিউজড হয়ে গেছি...তবে ফার্স্ট অফ অল টেল মে....এখানে সবাই একে অপরকে ভালোবাসে...তাইতো? মানে আমি তোমাকে আর তিস্তাকে ভালোবাসি তুমি আমাদের দুজনকে ভালোবাসো আবার তিস্তাও আমাদের দুজনকে ভালোবাসে...?"
"মমম....মানে...মানে হ্যাঁ অনেকটাই তাই...." দীপা কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল
"ওকে! সো তাতে...তাতে কি প্রবলেম থাকতে পারে...? মানে আমরা এখানে এক সাথে তিনজনেই থাকবো আর আমাদের মধ্যে ভালোবাসার প্রেমের সম্পর্ক থাকবে তাতে...তাতে আমার কি অসুবিধা থাকতে পারে...? আর যত বেশী ততই ভালো তাইনা...? আর এখন কোনও সোসাইটিও নেই আর কোনদিন থাকবেও না..." রুদ্র বলে উঠল
"মানে...?" দীপা আর তিস্তা একসাথে বলে উঠল
"মানে? মানে আর কি হবে আমি আমার প্রেমিকাদের সাথে এখানে থাকবো...আর কেউ যদি কিছু বলতে আসে আমি তার গাঁড় মেরে দেব...."
"মানে ? তার মানে...তার মানে, তুমি আমাকে মেনে নিচ্ছ রুদ্র ?" রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল তিস্তা "কিন্তু...কিন্তু রুদ্র, আমি...আমি যে সমকামী....তুমি পারবে তোমার দীপাকে আমার সাথে ভাগ করে নিতে..?"
"দীপার ভালোবাসা যেমন ভাগ করবো তেমন তোমার ভালোবাসারও ভাগ পাবো আমি তিস্তা আর লেসবিয়ান টেসবিয়ান ওসব নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই । দুনিয়া যাই বলুক না কেন তুমি যেটাতে খুশি থাকবে তুমি সেইটাই করবে.... "
"ওহহহ রুদ্র!!! " বলে রুদ্রর ওপর ঝাঁপিয়ে পরে ওকে নিজের বুকে চেপে ধরল তিস্তা আর তারি সাথে তার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ধারা ঝরে পড়তে লাগল | আজকে তিস্তার বড়ই খুশির দিন কারণ আজকে তার প্রেমিক প্রেমিকা তাকে প্রথমবারের জন্য আপন করে নিয়েছে, আর এর থেকে বেশী আর কিছুই চাওয়ার ছিল না তার...
"এ মা! আবার কাঁদে কেন...? বললাম তো ভালবাসি তবে তিস্তা আমার যতদূর আন্দাজ...তুমি লেসবিয়ান নও তুমি বাইসেক্সুয়াল..." তিস্তার মাথায় হাত বুলতে বলতে বলে উঠল রুদ্র
রুদ্রকে অত সহজে সব কিছু মেনে নিতে দেখে দীপারও চোখে জল চলে এলো, "তাহলে...তোকে আমি ঠিক মানুষ করতে পেরেছি বল, রু..." ধরা গলায় পাশ থেকে বলে উঠল দীপা
"ওহহহ দীপা!!! কাম অন...এসো...আমার কাছে এসো..." বলে দীপাকেও নিজের বুকে টেনে নিলো রুদ্র | সারা দিনের ক্লান্তিকর ভয়ঙ্কর ঘটনার পর নিজের দুই সঙ্গিনীকে নিজের দুই বাহুতে শক্ত করে ধরে এই প্রথম স্বস্তির নিদ্রায় মগ্ন হয়ে পড়ল রুদ্র ।