• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery ইনভেস্টিগেটর

Badboy08

Active Member
584
445
64
নির্জন এলার্মের শব্দে চোখ মেলতেই দেখল, রুপা ওর বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। কাচের জানলায় রোদ এসে পড়েছে, ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারের ক্লান্ত হলুদ রঙ।

আজ ওদের হামহাম ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার কথা। হামহাম পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়, মাধবপুর লেকও তাই। শুনেছে, মূল জনপদ থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে দুতিন ঘণ্টার পথ হেঁটে পৌঁছতে হবে ওখানে। কাল রাতেই ঠিক করেছিল, গাইডের সাহায্য নেবে ওরা।

রুপার ঘুমন্ত নিঃশ্বাস পড়ছে নির্জনের খোলা বুকে। চোখ কচলে ওর দিকে তাকাল নির্জন– কী নিখুঁত মুখের গড়ন! মোমের মতো গালে এই শীতেও লালচে ভাব, নিমীলিত চোখদুটো যেন তুলিতে আঁকা। কপালে চুমু দিল নির্জন।
“রুপা? উঠতে হবে তো। হামহামে যাবে না?”
ঘুমগলায় ভাঙ্গা স্বরে রুপা বলল, “আরেকটু প্লিজ! আর দশ মিনিট!”

“আটটা বাজে। দুতিন ঘণ্টা হাঁটতে হবে পৌঁছাতে, ফিরতে হবে আবার। এখন না উঠলে ওখানে আটকা পড়ে যাব যে!”
“আর দশ মিনিট প্লিজ!”

বুঝল, এভাবে জাগানো যাবে না ওকে। নির্জন মুখ তুলে চুমু দিতে লাগল ওর গলায়, ঘাড়ে। রুপার গলার নিঃসঙ্গ কালো তিলগুলো লক্ষ্য করে ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগল নির্জন, হাত বুলিয়ে দিল সারা দেহে।

পারিজার সাথে পরশু রাতে ঘণ্টা কয়েক কাটানোর পর, নির্জন বুঝে গিয়েছে, শরীরের অসম্মতিতে শুধুই মনের ক্ষুধা মেটাতে বারংবার মিলিত হওয়ার মানে নেই কোন। রস থাকতেই আসর ভাঙ্গতে হয়, কথাটা যে’ই বলুন, বহু ঘাটের জল খাওয়া অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছেন। পাহাড়ে অসংখ্যবার চুড়াই– উৎরাইয়ের পর, ক্লান্ত ছিল দুজনই। ঘুমানোর আগে তাই একবার শুধু মিলিত হয়েছিল ওরা, শেষবারের মতো শরীরকে ক্লান্ত করতে।

নির্জনের ঘুমঘুম ভাব যা একটু ছিল, উবে গেল রুপার সুকোমল স্তনের চড়ুইয়ের লেজের মতো ছোট্ট কালো বোঁটায় মুখ রাখতেই। স্তনবৃন্ত ভালো করে মুখে পুরে, চুষতে লাগল নির্জন। ডান হাত রুপার খোলা দেহের মসৃণ পেছল দেহের খানাখন্দ পেরিয়ে খুঁজে নিল যোনি। নির্জনের আঙ্গুলের ডগায় অনুভূত হলো বালের খসখসে ভাব। মাঘের বৃষ্টিহীন প্রান্তরের ঘাসের মতো বালে হাত ঘষতে ঘষতে পেল যোনিমুখের ঠাণ্ডা ভেজা স্পর্শ!

“উম্মম্ম… ঘুম থেকে উঠতেই শুরু হয়ে গেল!”, আদুরে গলায় বলল রুপা, কোমর মন্থর দুলিয়ে।

“আর একটু ঘুমাতে চাইলাম…উম্মম… আর কি ঘুম হয়!”, আবার বলল রুপা নিজের হাতটা নির্জনের ঈষৎকঠিন (!) ঈষদুষ্ণ বাড়ার উপর রেখে।

স্তন থেকে মুখ তুলে রুপার চোখদুটো দেখেই বুঝল নির্জন, ও এখন সম্পূর্ণ সজাগ! চট করে উঠে, লেপ সরিয়ে রুপার দুপায়ের মাঝে চলে গেল ও। রুপার পা দুটো ফাঁক করে, পাছা খামচে ধরে, মুখ লাগিয়ে দিল গুদে। আচমকা হতচকিয়ে গেলেও বুঝে উঠল সময় নিল না রুপা– নিজের মাথাটা নির্জনের দুপায়ের মাঝে নিয়ে মুখে পুরে নিল ওর কলার মতো ঝুলতে থাকা বাড়া!
“ও আল্লাহ! এইটা কী! এইটা কেমন কথা! আল্লাহ…”
ঠিক তখনই প্রচণ্ড আর্তচিৎকারে হতকিয়ে গেল নির্জন।

“ও আল্লাহ… এইটা কী!”, আবারও বলে উঠল কেউ কাঁপা কাঁপা গলায়। তারপরই করিডোর ধরে দৌড়ানোর ধপধপ আওয়াজ শোনা গেল। রুপার দেহ থেকে সরে এসে বিছানায় বসে পড়েছে ও, রুপাও কান খাঁড়া করে দূরাগত আওয়াজ শুনে বুঝতে চেষ্টা করছে এমন আর্তচিতকারের কারণ।
“কী হলো?”, শঙ্কিত গলায় বলল রুপা, নির্জনের দিকে অর্থহীন চোখে তাকিয়ে।

নির্জন চট করে প্যান্টটা পায়ে গলিয়ে ফুলহাতা একটা গেঞ্জি পরতে পরতে বলল, “কিছু একটা হয়েছে! তুমি জামাকাপড় পরে ফেলো!”
“আপনি যাবেন না এখন!”, ওর হাতটা টেনে ধরল রুপা, “আগে বুঝি কী হয়েছে!”

সিঁড়ি বেয়ে একসাথে অনেকে উঠে আসছে, শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে পুরো ফ্লোর জুড়েই। আর্তচিতকার করে উঠেছিল যে লোকটা, সে’ই বলছে, “এমন আর কোনদিন দেখি নাই! ও আল্লাহ… এইটা কী দেখলাম!”

রুপার কথা মানতে পারল না নির্জন। বিপদে পড়তে পারে কেউ– হার্ট এটাক কিংবা স্ট্রোক বা অন্যকিছু– সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে কারো–
ওদের দরজার সামনেই এসে পড়েছে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা দলটা, কথা বলছে নিজেদের মধ্যে সিলেটি ভাষায়, বুঝতে পারল না নির্জন।
“আমি দেখে আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নাও! আমি না বললে ঘর থেকে বের হবে না!”

রুপার মুখটা ছোট হয়ে এসেছে ভয়ে। ওর দিকে আশ্বাসের চাহনি নিক্ষেপ করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো নির্জন।

বাদল ব্যানার্জিকে দেখতে পেল নির্জন, হোটেলের চিফ স্টাফ কোর্ডিনেটর, সঙ্গে চারপাঁচ জন উর্দি পরিহিত বেয়াহা। ওরা সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তাহমিনা হায়াতের রুমের খোলা দরজার দিকে!

নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত কথা বলছে ওরা, বাদল ব্যানার্জি কানে লাগিয়েছে ফোন। গোলগাল ফোলা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে, টাকে জমেছে ঘাম। কিছু হয়েছে তাহমিনা হায়াতের?

পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল নির্জন, দাঁড়াল দরজার সামনে। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন হোটেল বয়েরর কাঁধের উপর দিকে যা দেখল নির্জন– মুখ থেকে তার অজান্তেই বেরিয়ে এলো, “মাই গড!”

চট করে সরে এলো নির্জন ৩০৮ নম্বর রুমের দরজা থেকে। বড় করে নিঃশ্বাস নিল একবার– মাথাটাকে ঠাণ্ডা করতে হবে, ভাবতে হবে সুস্থ মস্তিষ্কে।
নিজের রুমে ফিরে এলো নির্জন।

“তাহমিনা হায়াতের গলা কে যেন কেটে ফেলেছে! ছুরি দিয়ে!”, বলল নির্জন শূন্যদৃষ্টি মেলে।
“কী?”, বজ্রাহত গলায় বলল রুপা। “কী বালছাল বলছেন এসব!”
“সত্যি। শি ইজ কিল্ড!”

“ও মাই গড! ও মাই গড!”, চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে রুপার, কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সদ্য সংবাদটি।

“শান্ত হও, রুপা!”, বলল নির্জন জুতা পরতে পরতে। “তুমি ঘর থেকে বের হবে না! আর আমার ব্যাগ খুললে একটা কালো ছোট ব্যাগ পাবে– দাও আমাকে।”
নির্জনের কথাগুলো বুঝতে পারল না যেন রুপা। নিশ্চল অবাক চোখে, তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কথাগুলো আবার বলতেই চেতনা ফিরে পেল যেন, দ্রুত নির্জনের ব্যাগ খুলে খুঁজতে লাগল কালো থলি।

প্রথম দিনের বাদুরে টুপিটা মাথায় ভালোভাবে পরল নির্জন, যাতে একটা চুলও টুপির বাইরে না থাকে, হাতে পরে নিল রুপার হাতমোজা।
“প্রচণ্ড বাজে অবস্থা। আমি তোমাকে পরে ছবি দেখাব! এখন রুম থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই!”

থলিটা খুলে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটর ইউভি লাইটের টর্চটা হাতে নিল নির্জন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিয়ে গিয়েছিল সেও। সাধারণ একটা অভারসিস তদন্তে এসে, ব্যাপারটা এমন মোড় নেবে, কল্পনাও করেনি ও।

কিন্তু এখন নিজের করণীয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ ও আত্মবিশ্বাসী নির্জন। আর যা করা প্রয়োজন, করতে হবে পুলিশ আসার আগেই!
দরজার বাইরে বেড়ে গিয়েছে শোরগোল, চেঁচামেচি। এর মধ্যেই নির্ঘাত আরো অনেকে এসে পৌঁছেছে।

ঘর থেকে বেড়িয়েই ডান হাতের মোজা খুলে ফোনের ক্যামেরা অন করল নির্জন। প্রমাণ লোপাটের আগেই পুলিশের দায়িত্ব ক্রাইম সিন লক করে দেয়া। সে কাজ নির্জনের একতিয়ারে নেই, পুলিশের পৌঁছতে সময় লাগবে আরো অন্তত আধঘণ্টা। এর মধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে। আর ইনট্যাক্ট সিনের ছবি তুলে রাখতে হবে ওকে।

হোটেলের আরো কয়েকজন স্টাফ এসে জড় হয়েছে দরজার সামনে। সকলের মুখেই কেমন থমথমে ভাব, অবিশ্বাসী চাহনি। কেউ আর কথা বলছে না উচ্চস্বরে, তাকিয়ে আছে সকলেই বিস্মিত চোখে তাহমিনা হায়াতের ঘরের দিকে। কয়েকজন এর মধ্যেই ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর। ইতস্তত দাঁড়িয়ে কথা বলছে নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে। নির্জনের উপস্থিতি টেরই পেল না ওরা।

দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন হোটেল বয়েরর কাঁধের উপর দিয়ে ক্যামেরার ৬৪ মেগাপিক্সেল মুড অন করে একের পর এক ছবি তুলতে লাগল নির্জন।
তাহমিনা হায়াতের প্রাণহীন নগ্ন দেহ বিছানার ঠিক মাঝখানে শোয়ানো, গলায় ছুরির পোঁচ, প্রকটভাবে ফাঁক হয়ে আছে ভকালকর্ড। সাদা চাদরের বিছানা লাল হয়ে গিয়েছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তে।

রক্তের দাগ আর গলায় ছুরির পোচের চিহ্ন না থাকলে, মনে হতেই পারে, এক অপূর্ব দেহাবয়বের মধ্যবয়সী নারী নগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন কারো অপেক্ষায় থাকতে থাকতে! চোখ দুটো খোলা, যেন প্রচণ্ড বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন সিলিঙের দিকে, মুখে ব্যথার স্পষ্ট ছাপ।

ঘরের সবগুলো বাতি জ্বেলে দিয়েছে কেউ। অবাক হয়ে লক্ষ্য করল নির্জন, বিছানার বাইরে কোথাও এক ফোঁটা রক্ত নেই! হত্যাকারী কি মুছে ফেলেছে রক্ত? নাকি ছুরি চালানোর সময় তাহমিনা হায়াত ছিলেন বিছানাতেই। কয়েক ফোঁটা রক্ত তো এদিকে ওদিকে ছিটকে পড়ার কথা!

বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ভিডিও অন করল নির্জন। ফোনটা এমনভাবে হাতে রেখে দিল, যেন বুঝতে না পারে কেউ! ঘরের ভিতরে সামান্য ঢুকে, দেখতে লাগল চারপাশ।

নির্জনদের রুমটার সাথে এই রুমের কোন পার্থক্য নেই– ঠিক মাঝে বিছানা, পাশেই ড্রেসিং টেবল; তার বিপরীতে বিশাল একটা আলমারির উপরে এলইডি টিভি। বিছানার পেছন দিকের দেয়ালে বাথরুম– দরজা হাট করে খোলা।

হঠাত নারী কণ্ঠের চিতকারে চমক ভাঙল নির্জনের। পিছন ফিরতেই দেখল পারিজার দেহটা পরে যাচ্ছে মাটিতে– কেউ একজন ধরে ফেলল ওকে। জ্ঞান হারিয়েছে ও, লোকটা ওকে বসিয়ে দিল দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে।

হাফপ্যান্ট আর টপ্স পরিহিত অজ্ঞান পারিজা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে সকলের। নগ্ন মৃতা মধ্যবয়সীর দেহের চেয়ে জীবন্ত তরুণী বেশি আগ্রহ জন্ম দেয়। ঘরের ভেতরের লোকগুলোও বেরিয়ে গেল ওকে দেখতে।

এই সুযোগে ইউভি লাইট ফেলল নির্জন তাহমিনা হায়াতের দেহে– এসুযোগ পাবে আশা করেনি ও। সারাদেহে রশ্মি ফেলতে লাগল নির্জন, ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করল বেগুনি হয়ে যাওয়া দেহচিত্র। বিছানাতেও ফেলল আলো।

পারিজার থেকে সকলের মনোযোগ তাহমিনা হায়াতের নিথর দেহে ফিরে আসার আগেই, লাইট অফ করে বাইরে এলো নির্জন। বাড়তে শুরু করেছে লোকসমাগম। এরমধ্যেই সামনের লন থেকে অনেকেই তাকিয়ে আছে তিনতলার এই জটলার দিকে, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে অনেকে উপরের দিকে।
ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই রুপা বলল, “আমি বাইরে যাব! আমি দেখব!”

এবারে আর ওকে বাঁধা দিল না নির্জন।

বাথরুমে ঢুকে একটা পলিথিনের ভেতরে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটরটা ঢুকিয়ে মেঝেতে আছাড় মারল একটা, কয়েক টুকরো হয়ে গেল লাইটটা। আরো কয়েকবার আছাড় মেরে আরো ছোট করল টুকরোগুলোকে। তারপর সেই টুকরোগুলো কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করল নির্জন।

এবারে ভিডিও আর ছবিগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। হোটেলের ফ্রি ওয়াইফাই থাকলেও ফোনের ইন্টারনেট কানকশন অন করে বেনামে খোলা একটা আউটলুক একাউন্টের ওয়ানড্রাইভে আপলোড করল ভিডিও আর ছবিগুলোকে। একাউন্টের সমস্ত তথ্য ফোন থেকে সরিয়ে ডিলিট করে দিল ছবি আর ভিডিও স্টোরেজ থেকে।

নির্জন জানে, পুলিশের জেরা আর খানা তল্লাশির মুখে পড়তে হবে ওদেরও। কোনভাবে যদি পুলিশ বুঝতে পারে, তাহমিনা হায়াতের উপর নজর রাখতেই ওরা এসেছে ঢাকা থাকে, ফ্যাসাদে পড়তে হবে প্রচণ্ড!

‘খেচর’ শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই, যখন নির্জন জানত না ওকে শুধু পরকিয়া প্রেমের রহস্য আর বিয়ের ফ্যাক্ট চেক’ই করতে হবে সিংহভাগ সময়, কিনেছিল অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটিং কিট। শিখে নিয়েছিল তার ব্যবহার। এর আগে কোনদিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। কিটটা সবসময় ওর ঘরে আলমারির ভেতরেই থাকে, সঙ্গে শুধু রাখে এই ইন্সট্যান্ট ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটর ইউভি লাইটটা; সে ইনভেস্টিগেটর– সেটা নিজেকে মাঝেমাঝে মনে করিয়ে দিতে!

আজ কাজে লেগে গেল যে যন্ত্র! আর ভাঙতেও হলো আজই। কোনভাবে লাইটটা পুলিশের হাতে গেলে, রক্ষা ছিল না আর।
“আমি সকালের খাবার দিতে আসছিলাম। ম্যাডাম প্রতিদিন এই সময়ে খাবার দিতে বলছে! আইসা দেখি দরজা অল্প অল্প খোলা, লাইট জ্বলতাছে… কয়েকবার ডাকলাম, সাড়া দিল না। দরজা খুলতেই এই অবস্থা! এইটা কী দেখলাম, আল্লাহ! কী দেখাইলা খোদা তুমি আমারে!”

লোকটাকে ঘিরে ধরেছে অনেকেই, প্রশ্ন করছে একের পর এক। পুরো করিডরে পা ফেলার জায়গা নেই। হোটেলের প্রত্যেককেই যেন ভেঙ্গে এসেছে লাশ দেখতে। ৩০৮ নম্বর রুমের দরজায় তিনচার জন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে, আরো কয়েকজন মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছে ভেতরটা। রুমের ভেতরে এতক্ষণে লোক যে গিজগিজ করছে, সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ নির্জন।
 

Badboy08

Active Member
584
445
64
পারিজাকে কেউ হয়তো রুমে নিয়ে গিয়েছে। ওর খোঁজ একবার করবে, ভাবল নির্জন। পরে নাকচ করল সে চিন্তা, মাথাটাকে পরিষ্কার করতে হবে আগে- শান্ত হতে হবে, হতে হবে স্থির।

রুপাকে ভিড়ের মধ্যে খুঁজে নিয়ে, হাত ধরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো নির্জন। বলল, “পুলিশ আসবে! এসে আমাদের জেরা করবে। তুমি বলবে, তুমি আমার গফ, ঘুরতে এসেছি। কী কর জিজ্ঞেস করলে বলবে, বেকার, বিসিএসের প্রিপারেশন নিচ্ছো।”

কথাগুলো একটানা বলে থামল নির্জন। তারপর আবার বলল, “আর আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, ফ্রিল্যান্সিং করি। ওকে?”
নিশ্চল চোখে রুপা তাকিয়ে ছিল নির্জনের দিকে। জিজ্ঞেস করল, “যদি জানতে চায় কীসের কাজ করেন?”

ভাবল একটু নির্জন। তারপর বলল, “উম্মম… বলবে ডেটা এন্ট্রি, ফটোশপ, আর্টিকেল রাইটিং, পেইড রিভিউ – এগুলাই। আমার ফাইবারে, আপওয়ার্কে একাউন্ট আছে, সমস্যা নেই!”

ঠিক তখনই সাইরেনের শব্দ তুলে হোটেলের মূল গেট দিয়ে ঢুকল পুলিশ ভ্যান। সন্ত্রস্ত হয়ে গেলো কৌতূহলী লোকজন।
নির্জন নিকোটিনের অভাব বোধ করছিল অনেকক্ষণ যাবত। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে সিগারেট জ্বালল ও।

রুপা প্রায় উচ্চস্বরে বলে উঠল “আপনি স্বাভাবিক আছেন কী করে? আমি তো মেনেই নিতে পারছি না! আমাদের পাশের রুমে একজনকে খুন করে চলে গেছে কেউ! আমাদের পাশের রুমে!”

“আমি এখনো ভাবার সময় পাইনি, রুপা! তাই স্বাভাবিক থাকতে পারছি!”
নিচে নামার সময় প্রথমবারের মতো লক্ষ্য করল নির্জন, দুইতলা কিংবা তিনতলায় কোন সিসি ক্যামেরা নেই! একটা ক্যামেরা আছে শুধু হোটেলের রিসেপশনে।

পুলিশের দলটা এর মধ্যেই চলে গিয়েছে সিনে, একজন পুলিশ অফিসার কথা বলছে রিসেপশনিস্টের সাথে।

লনে এসে দাঁড়াল ওরা দুজন। কাল, ২২ কিংবা ২৪ ঘণ্টা আগে এই সময়েই কথা হয়েছিল তাহমিনা হায়াতের সঙ্গে। আর আজ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মরদেহ, নিজঘরেই নগ্ন অবস্থায়!

“আমাদের পাশের ঘরে!”, হাত পা ছুঁড়ে বলল রুপা, “আমরা যখন ঘুমাচ্ছিলাম তখন কেউ একজন তাহমিনা হায়াতের গলায় ছুরি চালিয়েছে! ও মাই গড!”
“আমরা বুঝতে পারিনি! একটা মাত্র দেয়াল ছিল মাঝে! তাহমিনা হায়াতকে চুদলেও আমরা বুঝি আর ওকে একজন মেরে ফেলল, বুঝিনি!”

আবারও বলল রুপা। ঘুমজাগা ভাব এখনো ওর মুখে- কিছুটা ফুলেছে মুখ, এলোমেলো হয়ে আছে চুলগুলো।

“আমরা খুব ক্লান্ত ছিলাম, রুপা!”, সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বলল নির্জন। “খুনি ছুরির একটানে তাহমিনা হায়াতের ভোকাল কর্ডটাই ফাঁক করে দিয়েছে- উনি শব্দ করার সুযোগটাও পাননি!”

হোটেলের মূল ফটকেও এসে দাঁড়িয়েছে অনেকে- শ্রমিক শ্রেণির, হয়তো কাজ করে চা বাগানেই, সাহস পাচ্ছে না ভেতরে আসার। সবার চোখ তিনতলার দিকে জনসমাগমের দিকে।

“কোথায় যেন পড়েছিলাম, নারীর খুনের ক্ষেত্রে ৯০% সময় স্বামীর হাত থাকে, কোন না কোন ভাবে। তাহমিনা হায়াতের বেলাতেও তাই দেখছি!”
“জুলফিকার আমান খুনটা করেছেন, বলতে চাচ্ছেন!”

“নিজে না করলেও, কাউকে দিয়ে হয়তো করিয়েছেন। যে লোক স্ত্রীর পেছনে ইনভেস্টিগেটর লাগাতে পারে, সেই লোকই কি এসাসিন এসাইন করতে পারে না? খুব কি অসম্ভব?”

“বাংলাদেশে এসাসিন? হলিউড মুভি পেয়েছেন?”, বক্রোক্তি করল রুপা।
“ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েব সম্পর্কে ধারণা এখন সবার আছে, রুপা”, সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বলল নির্জন।

“১৮ কোটির দেশ- প্রফেশনাল কিলার যে নেই, সে কথা হলফ করে বলা যায়?। একসময় মুরগি মিলন, কালা জাহাঙ্গীর, ব্যাঙ্গা বাবু এরা ঢাকায় রাজত্ব করত। ওরা সবাই কিলার পুষত। সবাই একেকজন গডফাদার, শীর্ষ সন্ত্রাসী। একটা ফোন কলেই কোটি কোটি টাকা চাঁদা দিত বড় বড় ব্যবসায়ীরা। কালা জাহাঙ্গীর এখনো ফেরার, ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে পর্যন্ত তার নাম আছে। যে দেশের এরা জন্মাতে পারে, সে দেশে এসাসিন নেই, এটা মানার মতো না!”
তাহমিনা হায়াতের মরদেহটা বারবার ভাসছে নির্জনের চোখে। সে ছবি সরাতেই এতগুলো কথা বলল নির্জন।

“চিন্তা করো! জুলফিকার আমান আমাদের এসাইন করেও পরে পিছিয়ে যেতে বললেন। হয়তো আমাদের সাথে যোগাযোগের পর এসাসিনদের সাথে কথে বলেছে। আমরা নজর রাখলে এসাসিনের অসুবিধা হতে পারে ভেবে আমাদের পিছিয়ে যেতে বলেছেন! পরশু এসে নিজেই অবস্থা দেখে গেছে। আর উনি চলে যেতেই খুন! ব্যাপারটা মিলে যাচ্ছে কিনা!”

“কিন্তু কিলার ঢুকবে কোনোদিক দিয়ে? ক্যামেরা আছে!”

হাসল নির্জন। বলল, “মুরগি মিলনকে আদালত চত্বরে হত্যা করা হয়েছিল, রুপা! অবশ্য সে উদাহরণ এখানে দেয়া চলে না। বললাম এটা বোঝাতে যে ওরা যে কোন কাজ করতে পারে! ছাদে গিয়েছিলে হোটেলের?”

“না! ছাদে যাওয়ার সুযোগ পেলাম কৈ!”, বলল রুপা, বাড়তে থাকা লোকসমাগমের দিকে তাকিয়ে।
“আমি গিয়েছিলাম। পুরো হোটেলে শুধু একটাই ক্যামেরা, রিসেপশনে। ছাদের ঠিক পাশেই বেশ কয়েকটা বড় বড় গাছ আছে। চাইলেই যে কেউ গাছ বেয়ে ছাদে উঠতে পারে। আর ছাদের দরজা খোলা থাকে সারারাত!”

“কিন্তু এরা প্রত্যেক ফ্লোরে ক্যামেরা লাগায়নি কেন!”, অবাক জিজ্ঞাসা রুপার।

“মনে হয়, প্রাইভেসির কথা ভেবে”, বলল নির্জন। “প্যাসেজে কতজন কতভাবে থাকে। কতধরণের লোক আসে- কেউ আনে বেশ্যা- কেউ চাইবে না সিসিটিভিতে ধরা পড়ুক!”

সিএনজি থামার শব্দে গেটের দিকে তাকাল নির্জন। অধ্যাপক মনোয়ার ওমর সিএনজি থেকে নেমেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে আরম্ভ করলেন রিসেপশনের দিকে।

***
“আপনারা তো পাশের রুমেই ছিলেন, কোন শব্দ পাননি?”
“না!”
“চিৎকারের শব্দ বা কোন আনইউজুয়াল শব্দ?”
“না!”
“শোনার কথা। পাশের রুমে একজনকে মেরে ফেলা হলো আর আপনারা বুঝলেন না?”
“আমরা কাল সারাদিন ঘুরে বেরিয়েছি, পাহাড়ে উঠেছি নেমেছি- অনেক ক্লান্ত ছিলাম।”
“আপনারা বিবাহিত নন, তাই তো? তা উনি আপনার কে হন?”
“প্রেমিকা!”
“বিয়ের আগেই হানিমুন! বেশ ভালোই!”
“এটা কোন অপরাধ নয়। আমরা দুজনই পূর্ণবয়স্ক।”
“সে কথা বলছি না। আপনারা কবে উঠেছেন হোটেলে?”
“পরশু সকালে।“
“তাহমিনা হায়াতও পরশু সকালে উঠেছেন। আপনারা পূর্ব পরিচিত?”
“না। একদম না!”
“একজন বয় বলেছে, আপনার সাথে নাকি তাহমিনা হায়াতকে কথা বলতে দেখেছে।“
“হ্যাঁ। কথা বলেছিলাম। স্ট্রেঞ্জার টক, যা হয় আরকি। এর বেশি কিছু নয়।”
“কী বলেছিলেন উনি আপনাকে?”
“মনে রাখার মতো তেমন কিছুই নয়। নামধাম, এসবই।“
“কী করেন আপনি?”
“ফ্রিল্যান্সার।“
“ফ্রিল্যান্সিং করে এমন অভিজাত হোটেলে থাকার সামর্থ হয়?”
“ফ্রিল্যান্সারদের সম্পর্কে আপনার ধারণা খুব কম বোধহয়। আমি আপনার চেয়ে অনেক বেশি টাকা আয় করি, এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ অন্তত!”
“আমার আয়ের হিসেব আপনার করতে হবে না। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন!”
“আচ্ছা!”

“আপনার প্রেমিকা- কী নাম বললেন? রুপা- কতদিনের পরিচয়? কী করেন উনি?”
“পরিচয় অনেকদিনের। রিলেশন বেশিদিনের নয়। ও চাকরির প্রিপারেশন নিচ্ছে।”
“আপনার আর মিস রুপার সম্পর্কটা ঠিক কী ধরণের?”
“আপনি খুনের চেয়ে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী দেখছি!”
“আপনি খুব বেশি কথা বলছে, মিস্টার নির্জন। সে প্রশ্ন করছি, সেটার উত্তর দিন!”

“আমরা বিয়ে করব ভাবছি। তাই নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ঠিক আছে কিনা দেখতে এখানে এসেছি। এখন ক্লিয়ার হয়েছে?”
“আপনাদের শ্রীমঙ্গলে আসার কারণটা শুধু এটাই?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। সেই সাথে ঘোরাও!”
“আপনি বলছেন, আপনার সাথে তাহমিনা হায়াতের সামান্য কথা হয়েছে। আর হোটেলের স্টাফ একজন বলল, আপনি নাকি রীতিমত গান গেয়ে শুনিয়েছেন ওকে!”

“আমি গান গাই, গিটারও বাজাই। আপনি শুনতে চাইলে, আপনাকেও শোনাতে পারি, শুনবেন?”
“সামান্য পরিচয়েই গানে গানে আড্ডা জমে?”
“ওরা গান গাইছিল। আমি গিয়ে যোগ দিয়েছি, এই যা!”
“কতদিনের থাকার প্ল্যান নিয়ে শ্রীমঙ্গলে এসেছেন?”
“সাত আটদিন! তবে এখন মনে হচ্ছে ট্যুরটাকে শর্ট করতে হবে!”
“তাহমিনা হায়াতকে সর্বশেষ কখন আপনি জীবিত অবস্থায় দেখেন?”
“কাল সন্ধ্যায়!”

“আর মৃত অবস্থায়? মানে কখন জানতে পারেন যে তাকে খুন করা হয়েছে!”
“আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই। একজনের চিৎকারে ঘর থেকে বেরিয়ে…”
“তার আগে কী করছিলেন আপনি?”
“কীসের আগে?”
“লাশটা দেখার আগে?”
“উই অয়্যার মেকিং লাভ!”
“মেকিং লাভ? ইউ মিন সেক্স?”
“ইয়েস! আই মিন সেক্স!”
“সেক্সের মাঝে উঠে আসেন নাকি শেষ করে?”
“এটা রিলেভেন্ট?”

“অবশ্যই। সব প্রশ্নই রিলেভেন্ট!”
“সেক্সের মাঝে উঠে এসেছি আমি!”
“কী দেখেছিলেন আপনি?”
“কয়েকজন বয় ওনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর একজন চিৎকার করে লোক জড়ো করছে। আর লাশটা বিছানার মাঝে পড়ে আছে।“
“আপনি রুমের ভিতরে ঢুকেছিলেন?”
“হ্যাঁ!”
“আপনি ছাড়াও আরো ক’জন রুমে ভেতরে গিয়েছিলেন?”
“তিন চারজন। শুরুর দিকে। আমি একজ্যাক্ট সংখ্যাটা বলতে পারছি না।“
“আপনি ভেতরে ঢুকেছিলেন কেন? বাইরে থেকেও দেখতে পারতেন!”
“কৌতূহল থেকে!”
“আপনি কি কাউকে লাশটা ছুঁতে দেখেছিলেন?”
“না।“

“আপনি লাশটাকে নগ্ন দেখেছিলেন?”
“হ্যাঁ!”
“কিন্তু আমরা এসে দেখেছি, কেউ একজন লাশটার গায়ে চাদর ঢেকে দিয়েছে। কে চাদর দিয়েছে, দেখেছেন?”
“না!”
“ওর ছাত্রীকে আপনি কতটুকু চেনেন?”
“খুব বেশি না। সামান্য আলাপ।“
“সামান্য আলাপ? আমি সিওর?”
“হ্যাঁ!”

“আমরা তাহমিনা হায়াতের ছাত্রীর সাথে কথা বলেছি। বলেছে, আপনাকে উনি চেনেনা। আপনি বলছেন, চেনেন। কার কথা সত্য?”
“তার সাথে আমার সামান্য আলাপ হয়েছে। ও প্রচণ্ড সুন্দরী। আমার মনে থাকারই কথা, তার হয়তো আমাকে মনে নাও থাকতে পারে!”
“ছাত্রীর সাথে ওনার সম্পর্ক কেমন ছিল বলে আপনার মনে হয়েছে?”
“ভালোই। খারাপ কিছুই আমার চোখে পড়েনি।“
“হোটেলে সন্দেহজনক কাউকে দেখেছিলেন?”
“না।“

“হুম…আপনার ঠিকানাটা লিখে দেবেন এখানে। ফোন নাম্বারটাও। আপনার সাথে আমরা যোগাযোগ করতে করতে পারি আবার। আশা করি সহযোগিতা করবেন!”
“কী জিজ্ঞেস করল তোমাকে?”
থানার কম্পাউন্ড থেকে বেরিয়ে প্রশ্ন করল নির্জন। তাহমিনা হায়াতের লাশ থানার কম্পাউন্ডেই রাখা হয়েছে, থানার বাইরে উপচে পড়ছে ভিড়। কয়েকজন সাংবাদিককেও ঘোরাফেরা করতে দেখল নির্জন।
“কী করি, কেন এসেছি, কিছু বুঝেছি কিনা, পূর্বপরিচিত কিনা এসব!”
 

Badboy08

Active Member
584
445
64
দুটো বেজে গিয়েছে, ক্ষুধায় পেট জ্বলছিল ওদের। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল ওরা। মালিক যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন রেস্টুরেন্টিতে শহুরে ভাব আনার, সফল হননি পুরোপুরি। তবে মফঃস্বলের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টের মতো নোংরা নয় অন্তত- নামটিও বেশ অভিনব- “সুখাদ্য”!

ফ্লোরের মাঝামাঝি অত্যালোকিত একটি কাচের টেবিলে বসতেই গত কয়েক মিনিট ভুলে থাকা খুনের ব্যাপারটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল আবার- নির্জন বলল, “মনোয়ার ওমরকে লক্ষ্য করেছিলে?”
“হ্যাঁ। কেন?”, বলল রুপা বিপরীতের চেয়ারে বসে।
“সিএনজি থেকে নামার সময় উনি একদম পরিপাটি ছিলেন!”
“তাতে কী?”

“প্রেমিকার অপমৃত্য সংবাদে- হোক সে প্রেম অবৈধ, যে কেউ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসবে। আর উনি এসেছেন চুল রীতিমত ব্যাকব্রাশ করে পরিপাটি হয়ে!”
“হয়তো ওর সকালে ওঠার অভ্যাস! খবরটা শোনার আগেই বাইরে বেরুনোর জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন!”

“হতে পারে। এটা একটা হাইপোথেসিস। তিনি হয়তো জানতেন, এমনটা হবে। তাই আগে থেকেই শেভটেভ করে তৈরি ছিলেন!”
মেন্যুতে হাঁসের মাংস দেখে দ্বিতীয়বার না ভেবেই অর্ডার করল নির্জন, নিজের জন্য। সঙ্গে বুটের ডাল, ডিম আর আলু ভাজি। রুপা বলল, “আমি, মনে হয় না, খেতে পারব। আমার কোনভাবেই লাশটার ছবি সরাতে পারছি না মন থেকে!”
“খেয়ে নাও, রুপা। আমাদের অনেক কাজ বাকি!”

বছর বারো তেরোর একটা ছেলে ট্রেতে খাবার এনে রাখল ওদের টেবিলে। ছেলেটির পরনে গরম পোশাক নেই- ফুলহাতা একটা সবুজ শার্টের নিচে পড়েছে লাল গেঞ্জি। খারাপ লাগল নির্জনের। জিডিপি বাড়ল, ব্যাঙ্কের রিজার্ভ বাড়ল, পার ক্যাপিটা ইনকাম বাড়ল আর এর গায়ে একটা জ্যাকেট চড়ল না!
“এই ঠাণ্ডায় কেউ নগ্ন হয় কখন, রুপা?”, মাংসের একটা টুকরো মুখে পুরে বলল নির্জন।
“কেন?”

“গোসল কিংবা সেক্সের সময়। মাস্টারবেশনের সময়ও নয়। তাহমিনা হায়াতের গলায় যখন ছুরিটা চালানো হয়, তখন তিনি নগ্ন ছিলেন। হত্যার পর তাকে নগ্ন করা হয়নি।”
“কীভাবে বুঝলেন?”, ভাতের দিকে তাকিয়ে বলল রুপা।
“খাচ্ছো না যে?”, রুপা খাবারের প্লেটে এখনো হাত দেয়নি দেখে বলল নির্জন।

“খুন করার পর জামা খুললে”, আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরল নির্জন, “রক্তে জামা ভেসে যেত। জামা খোলার সময় চুলে মুখে মাথায় রক্ত লেপ্টে যেত! তেমন কিন্তু হয়নি!”
“তারমানে মিলিত হওয়ার জন্য তাহমিনা হায়াত নগ্ন হয়েছিলেন আর সেই সময়ই তার প্রেমিক গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছে- এটা বলতে চাইছেন?”, বলল রুপা ভাতে ডাল মেখে।
“এটাও হাইপোথেসিস। আর এক্ষেত্রে সন্দেহ গিয়ে পড়ে মনোয়ার ওমরের উপর।”
“এমনটা হলে মনোয়ার ওমর বাঁচবে না, তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ডিএনএ পাওয়া যাবেই!”
“এখানে একটা সমস্যা আছে!”, বলল নির্জন।
রুপা মুখে কিছু না বলে, মুখ তুলে চাইল শুধু।

“এমনটা হয়েছে বলছি না, হওয়ার সম্ভাবনা আছে শুধু। আমি যতদূর জানি, রাতে মনোয়ার ওমর এই হোটেলে থাকতেন না, অন্য কোথাও থাকতেন, তাহমিনার স্বামী যেন কোন সন্দেহ না করেন তাই!“
“হ্যাঁ…”
“ধরে নাও, জুলফিকার আমান মানে তাহমিনার স্বামী চলে যাওয়ার পর মনোয়ার ওমর এসেছেন, মিলিত হয়েছেন এবং চলেও গেছেন। ওকে? খুনী তারপর এসে, ধরে নাও এসাসিন বা অন্যকেউ, কোনভাবে তার রুমে ঢুকে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করে চলে গেছে। তাহলে কিন্তু মনোয়ার ওমর ফেঁসে যাবেন কারণ তার ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভিক্টিমের সারা দেহে পাওয়া যাবে!”
“আপনি আবার সিনেম্যাটিকভাবে ভাবছেন!”, বিরক্ত হয়ে বলল রুপা।
“বাস্তবতা সিনেমার চেয়েও বেশি সিনেম্যাটিক, রুপা। আর সিনেমাতে তাই দেখানো হয়, যা বাস্তবে সম্ভব!”

“প্লিজ, থামুন এবারে। এমনিই লাশটার ছবি চোখে ভাসছে সবসময়, আর আপনি এসব শুরু করেছেন। নিতে পারছি না আর!”

হোটেলে ফিরতে ফিরতে চারটা বেজে গেল ওদের। সুস্থ স্বাস্থ্যবান শিশুর মতো সূর্য উঠেছিল সকালে, এখন আকাশ মেঘে ঢাকা, চোরা হাওয়া বইছে উত্তরের। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের বেয়ার গ্রিলসের কথা প্রমাণ করতেই যেন, ঝপ করে নামতে চাইছে সন্ধ্যা! কাঁপতে কাঁপতে রিসেপশনে পা দিতেই বাদল ব্যানার্জি এগিয়ে এসে রুপাকে বলল, ম্যাম, আপনাদের মালপত্র আমরা সেকেন্ড , ফ্লোরের ২০৪ নাম্বার রুমে এনে রেখেছি। পুলিশ তিনতলার বাম দিকটা সিলড করে দিয়েছে!”

এমনটা হবে জানত নির্জন। সেরুমে আর রাত্রিযাপনও সম্ভব নয় ওর পক্ষে, পাশের রুমেই গতরাতে একজন খুন হয়েছেন, জানার পর! ডেস্কের পেছনে “ড়”কে তার গিরিশৃঙ্গ তাক করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে, ভেবেছিল নির্জন। কিন্তু তার বদলে এক সুদর্শন কমবয়সী ছেলে ফর্মাল ড্রেসে দাঁড়িয়ে আছে। মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বাদল ব্যানার্জির পেছনে হাঁটতে লাগল ও।
সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বাদল ব্যানার্জি চলে যেতেই সুপ্রভার নাম্বার ডায়ল করল নির্জন।
“তোমাকে জুলফিকার আমানের খোঁজ নিতে বলেছিলাম। নিয়েছো?”

“হ্যাঁ! সুবলকে পাঠিয়েছিলাম ওর দোকানে। উনি আজ সকালে দোকানে এসেছিলেন। খুনের খবরটা পেয়েছিলেন দোকানেই!”
“পুলিশ জুলফিকার আমানকে ইনভেস্টিগেট করবে। আমাদের খেচরের কথাও উনি বলে দিতে পারেন। তোমার অফিসে যেদিন উনি এসেছিলেন, সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজটা আছে তো?“
“হ্যাঁ আছে!”

“হ্যাঁ। ওই ফুটেজটা কেটে ড্রাইভে আপ করে দিও। উনি যে নিজেই আমাদের কাছে এসেছিলেন, সেটার প্রমাণ রাখতে হবে একটা।”
রুপা গোসল করে ফিরে এলে হট সাওয়ার নিল নির্জন। তারপর বিছানায় এসে ল্যাপটপ অন করে ওয়ানড্রাইভ থেকে ডাউনলোড করল সকালবেলার ছবি আর ভিডিও।

“আমার মনে হয় না আমাদের আর শ্রীমঙ্গলে থাকা উচিত। খুনের তদন্তটদন্ত করা পুলিশের কাজ, আমাদের তো নয়!”

রুপা এমনটা বলবে, আগেই ভেবেছিল নির্জন, সুস্থ মগজের যে কেউ একথা বলবে। নিজেও ও ভেবেছে কথাটা। ফরেনসিক সায়েন্স এতোটা উন্নতি করেছে- খুনিকে আদালতে দোষী প্রমাণ করার জন্য ফরেনসিক এভিডেন্স যথেষ্ট। এখানে নির্জনের সত্যিই কিছু করার নেই।

“আমি আরেকটু ভালোভাবে ব্যাপারটা বুঝতে চাই, রুপা। এই যা। এতদিন পরকিয়া, অবৈধ প্রেম, রিয়েলস্টেটের ফ্যাক্ট চেক- এসব বালছাল করেছি। যখন শুরু করেছিলাম খেচর, এমন ভেতো ইনভেস্টিগেটর হব, কল্পনাও করিনি। আমি একটা ভালো কেইস চাই, একটা মাথা খাটানোর মতো কেইস। তাহলে অন্তত বলতে পারব, আমি ইনভেস্টিগেশন করি, রিয়েল ইনভেস্টিগেশন করি! আর এই প্রথম আমরা এমন কমপ্লিকেটেড কেইস পেলাম!”
“কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। কোন কিছু করার এক্সেসও নেই!”, বলল রুপা, ডেসপারেট গলায়।

“থাকতেও পারে! কে ভেবেছিল, শ্রীমঙ্গলে এসে এমন একটা কেইস পাব? এই কেইসে অনেক কিছুই থাকতে পারে যেটা সাদা চোখে ধরা পড়ছে না!”
হতাশ হয়ে হাত ছুড়ল রুপা, বলল না কিছু একটা বলতে গিয়েও।

ভিডিওটা চালু করে প্লেব্যাক স্পিড কিছুটা কমিয়ে দিল নির্জন। দেখল, রুপাও লাগিয়ে দিয়েছে চোখ। মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে দুজন হোটেল স্টাফ- একজন কমবয়সী, আরেকজন মধ্যবয়স্ক, তাকিয়ে আছে তাহমিনা হায়াতের ফাঁক হয়ে থাকা ভোকাল কর্ডের দিকে। কী যেন বলল মধ্যবয়স্ক লোকটি, শোনা গেল না ঠিক, কমবয়সী ছেলেটির চোখ বারবার চলে যাচ্ছে মৃতদেহের যোনিতে!

এবারে বেরিয়ে গেলো লোকদুটো, পারিজার আর্তস্বর স্পষ্ট শোনা গেল ভিডিওতে- নির্জন ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটরের আলো ফেলেছে তাহমিনা হায়াতের পায়ে- পজ করল নির্জন।

“এই যে আলোটা দেখছো, এই আলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকলে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।”, বলল নির্জন।
“আপনি যে এই লাইট ইউজ করেছেন, কেউ দেখেনি?”
“মনে হয় না। দেখলে পুলিশকে বলত, পুলিশ সেকথা জিজ্ঞেসও করত!”
ভিডিওটা আবার চালু করে দুই সেকেন্ড পর আবার পজ করল নির্জন।
“আঙ্গুলের কোন দাগ তো নেই!”, বলল রুপা।

ভিডিওতে তাহমিনা হায়াতের পেটে, বুকে ও তলপেটে আলো পড়েছে, কোথাও কোন দাগ দেখা যাচ্ছে না। ভিডিওটা আবার চালু করল নির্জন- আলোটা পড়েছে মুখে, মুখেও কোন দাগ নেই; এমনকি দাগ নেই হাতেও।
বিছানাতেও আলো ফেলেছিল নির্জন, সেখানে বেশ কিছু আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট।
“তাহমিনা হায়াতের দেহে কোন ফিংগারপ্রিন্ট নেই! আপনার ডিটেকশন লাইট কাজ করে তো?”
“কাজ না করলে বিছানাতেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেখা যেত না!”, বলল নির্জন।

“তবে কি কিলার একবারও তাহমিনা হায়াতকে টাচ করেনি? এটা কী করে সম্ভব!”, বিস্মিত হয়ে বলল রুপা।
“হয়তো পিঠের দিকে আছে, সেদিকে তো আলো ফেলতে পারিনি!”
“হতে পারে- এটা কী লেখা?”, হঠাত জিজ্ঞেস করল রুপা।
“কোথায়?”

“ভিডিওটা একটু পিছিয়ে নিন, একটা কাগজ দেখলাম ড্রেসিং টেবিলে…”
নির্জন কয়েক সেকেন্ড পিছিয়ে চালু করল ভিডিওটা। মধ্যবয়স্ক লোকটার পাশে, খাটের ডানদিকে একটা ড্রেসিং টেবিল, সেখানে আয়তকার একটা কাগজ- তাতে লেখা আছে কিছু।
“দেখা যাচ্ছে না!”
“ছবিগুলাতে দেখা যেতে পারে। ওয়েট!”

মোট ১৩টা ক্লিক করেছে নির্জন, একই জায়গা থেকে ঘরের বিভিন্ন প্রান্তকে ফোকাস করে- তবে ৬৪ মেগাপিক্সেলের বড় ল্যান্ডস্কেপে ধরা পড়েছে পুরো ঘরটাই, প্রতিটি ছবিতেই।
একটা ছবিতে ড্রেসিং টেবিলটা এসেছে ভালোমতো। জুম করল নির্জন টাচবারে বৃদ্ধা আর তর্জনি রেখে- সাদা আয়তকার পৃষ্টাটার মাঝবরাবর লেখা-
“আর কোন ফুল নয়, রৌদ্রতৃপ্ত সূর্যমুখী নয়,
তপ্ত সমাহিত মাংস, রক্তের সন্ধানে ঘুরে ফেরে।”
“কবিতা? তাহমিনা হায়াত কবিতা পড়তেন?”, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুপা।

“তপ্ত সমাহিত মাংস, রক্তের সন্ধানে ঘুরে ফেরে”, স্পষ্ট করে উচ্চারণ করল নির্জন। “আর কোন ফুল নয়, রৌদ্রতপ্ত মাংস নয়?”
“কার কবিতা? আপনি তো কবিতা পড়েন- এটা পড়েননি আগে?”
রুপার মুখের দিকে তাকাল নির্জন, ওর চোখে ঘোর। বলল, “আর কোন ফুল নয়, রৌদ্রতপ্ত সূর্যমুখী নয়- শব্দুগুলো প্রচণ্ড ক্যাপভেটিং। কোন এলেবেলে কবির কবিতা এটা নয়!”
“তাহলে কার? শামসুর রাহমানের?”, জিজ্ঞেস করল রুপা।

নিরুত্তর থেকে কবিতার লাইনদুটো বারংবার সশব্দে উচ্চারণ করতে লাগল নির্জন- ক্রোমের কার্চবারে লিখল লাইনদুটো।
“এটা ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা”, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল নির্জন।
“বিনয় মজুমদার!”
“হ্যাঁ। বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ!”
“পুরো কবিতাটা নেই? নাম দেখুন তো কবিতাটার!”
একটা লিংকে ক্লিক করল নির্জন।
“মুক্ত ব’লে মনে হয়; হে অদৃশ্য তারকা, দেখেছো
কারাগারে দীর্ঘকাল কী-ভাবে অতিবাহিত হ’লো।“

সেখানে আছে পুরো কবিতাটাই কিন্তু কবিতার নামটা দেয়া নেই! আরো কয়েকটা লিংকে ক্লিক করেও নামটা খুঁজে পেল না নির্জন।
“বইটা আমার সংগ্রহে আছে, আজিজ থেকে কিনেছিলাম। কিন্তু এখানকার কোন বইয়ের দোকানে কি এই বই পাওয়া যাবে?”, রুপার দিকে তাকিয়ে বলল নির্জন।

“তার দরকার নেই। এই বইয়ের পিডিএফ পাওয়া যাবে অবশ্যই। সেটাই নামিয়ে নিন।”

ইবুক কোনকালেই পছন্দ ছিল না নির্জনের। কোন ইবই’ই শুরু করে শেষ করতে পারেনি ও, ধরে রাখতে পারেনি মনোযোগ। বইয়ের “মায়ের মতো ভালো” পাতার সাথে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর আলোকরশ্মি নিঃসরণকারী স্ক্রিনের তুলনা চলে? আর এখন কিছু ওয়েবসাইট লেখকের রয়্যালিটি দূরে থাক, লেখকের অনুমতি পর্যন্ত না নিয়ে ইবুক আপলোড করে দিচ্ছে ইচ্ছেমতো। কোন বই সামান্য আলোচিত হলেই কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসছে এসব ওয়েবসাইটে- ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পেশাদার লেখক ও প্রকাশক।

উপায় না থাকায় একটা ওয়েবসাইট থেকে বইটি ডাউনলোড করল নির্জন।

কয়েকটা পাতা স্ক্রল(!) করে নির্জন বলল, “কবিতাগুলোর নাম দেননি কবি। যে তারিখে কবিতাগুলো লিখেছে, সেটাই কবিতার নামের জায়গায় লেখা, সেটাই নাম!”

কাব্যটা মাত্র তিন ফর্মার। যেহেতু কবিতার প্রথম শব্দটা নির্জন জানে- মুক্ত- প্রতিটা কবিতার শুধু প্রথম শব্দটিই পড়ছে ও।
বেশিক্ষণ খুঁজতে হলো না ওকে, পেয়ে গেলো কয়েক মিনিটের মধ্যে। আর কবিতার নামটা দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেল ওর!

২৭ জানুয়ারি ১৯৬২!
“আজকের তারিখ!”, বলে উঠল রুপা।
বিস্মিত হতভম্ভ নির্জন তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে তারিখটার দিকে।
 

Badboy08

Active Member
584
445
64
[এতদিন পর নতুন পর্ব দেয়ার জন্য সত্যিই দুঃখিত। ব্যক্তিগত কিছু কারণে আটকে গিয়েছিলাম। ছাড়া ছাড়া করে দিলে পাঠক গল্পের খেই হারিয়ে ফেলবে এমনও ভয়ও ছিল। এবারে তাই অনেকটা অংশ লিখে একসাথেই দিলাম। যারা এরমধ্যে মেইল করে তাগদা দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, তাদের কাছে আমি প্রচন্ডভাবে কৃতজ্ঞ।
-নির্জন ]
“এটার মানে কী!”, বিস্মিত রুপার প্রশ্ন।
কবিতার নামটা দেখে এতটাই হতভম্ভ হয়ে গিয়েছে নির্জন, জবাব দিতে পারল না ও। “তপ্ত সমাহিত মাংস”- শব্দ কয়েকটি আঘাত করতে লাগল মাথায়।

“জানি না, রুপা। এটার মানে বোঝার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এই কাগজটা কে রেখেছে, সেটা জানা!”
“তাহমিনা হায়াত নিজেই রাখেননি তো?”, বলল রুপা ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে।
“তাহমিনা হায়াত কবিতার পাঠক কি? আমার মনে হয় না! তাহলে কথায় অন্তত প্রকাশ পেত!”, একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বলল নির্জন।
“কথায় প্রকাশ পাওয়ার কি আছে? এটা তো ঢোল পিটিয়ে বলার মতো বিষয় নয়!”, একটা ছবির দিকে তাকিয়ে বলল রুপা।

“বিনয় মজুমদার কিন্তু শামসুর রাহমান বা সুনীল নন, রুপা। পশ্চিমবাংলার কথা জানি না, কিন্তু বাংলাদেশে তার পাঠক হাতেগোণা। ওপারবাংলার গদ্য যেভাবে এদেশে আসে, কবিতা তো সেভাবে আসে না। নিবিষ্ট পাঠক ছাড়া, সাধারণ পাঠক বিনয় মজুমদারের কবিতা পড়া দূরে থাক, নামটাও জানবে না!”
“তাহমিনা হায়াত হতে পারেন না তেমন?”, ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল রুপা।
“হতেন পারেন না, বলছি না, তবে সম্ভাবনা কম। তাহমিনা হায়াতের কথা বলার ধরণটা খেয়াল করেছো? কারণে অকারণে ইংরেজি ব্যবহার করেন! কবিতা বাদ দাও, নিয়মিত গল্প উপন্যাস পড়লেও তাকে এভাবে ইংরেজির কাছে হাত পাততে হতো না!”
“এটা দেখুন!”
আরেকটা ছবি জুম করেছে রুপা- এই ছবিতে পৃষ্ঠাটার লেখাগুলো পড়া না গেলেও, কাগজটা দেখা যাচ্ছে।
“কাগজটার উপর একটা বডি লোশনের বোতল রাখা!”

নির্জন সিগারেটের ছাই এশট্রেতে ফেলে, তাকাল ছবিটার দিকে। ড্রেসিং টেবিলে বহুজাতিক কোম্পানির বেশকিছু পণ্যের পাশে ছোট্ট কাগজটা রাখা- উড়ে না যায়- বোধহয় তাই, কাগজটার উপরে রাখা হয়েছে বডি লোশনের বোতলটা।

“একটা জিনিস ভেবেছো?”, আবারও বলল নির্জন, “মাত্র দুইটা লাইন কেন কেউ একটা পাতায় প্রিন্ট করবে? করলে পুরো কবিতাটাই করার কথা নয় কি? দুইটা মাত্র লাইন তো হাতেও লেখা যেত!”
“ভালো প্রশ্ন!”
নির্জন লেপটাকে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে বলল, “এটা তাহমিনা হায়াত করেননি!”
“তাহলে কে করেছে? খুনি?”
“হয়তো”, বলল নির্জন, “হয়তো ও একটা ক্লু রেখে গেছে, এমন একটা ক্লু যেটা সাদা চোখে কারো নজরে পড়বে না! এ কারণেই হাতে না লিখে, প্রিন্ট করেছে লাইনদুটো, যাতে হাতের লেখা চিহ্নিত হওয়ার ভয় না থাকে!”
“কিন্তু কেন করবে এমনটা!”
“প্রশ্নটা সেখানেই!”
কবিতাটা আরেকবার পড়ল নির্জন।
“অদৃশ্য তারকা, আজ মুক্ত ব’লে মনে হয়; ভাবি,
বালিশে সুন্দর ফুল তোলা নিয়ে এত ক্লেশ।“

চতুর্দশপদী কবিতা- খেয়াল করেছে নির্জন, বাকিগুলোও তাই। কবির ১৯৬১ সালের ৮ মার্চ থেকে ৬২ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত লেখা নির্বাচিত কিছু কবিতা স্থান পেয়েছে “ফিরে এসো, চাকা” কাব্যে।
“বিনয় মজুমদার জানুয়ারিতে লেখা একটা মাত্র কবিতা “ফিরে এসো, চাকা”য় রেখেছেন!”
“হ্যাঁ, একটাই।“, বলল রুপা, “এটা কোইন্সিডেন্স কীভাবে হয়?”

“এদেশে কাল্ট মর্যাদা পাওয়া একটা কাব্যের জানুয়ারিতে লেখা একটামাত্র কবিতার মাঝের দুটো লাইন পাওয়া গেছে খুন হওয়া এক নারীর ড্রেসিং টেবিলে- লাইনদুটোর মধ্যে “তপ্ত সমাহিত মাংস” শব্দকয়েকটি আছে- কবিতাটার নাম ২৭ জানুয়ারি, ১৯৬২ এবং ঐ তারিখেই করা হয়েছে খুনটা!”

নির্জন সিগারেটে লম্বা টান দিল আরেকটা, ধোঁয়ার রিং ছুঁড়ে বলল, “জুলফিকার আমান সফল ব্যবসায়ী, তিনি কাঁচা মেধা নিয়ে ঢাকায় এতবড় ব্যবসা দাঁড় করাননি। তাহমিনা হায়াতকে খুন করার কোন দরকার নেই তার, যেখানে তিনি ডিভোর্স দিতে পারেন চাইলেই।“
“মনোয়ার ওমরই বা কেন কাজটা করবেন?”, বলে উঠল রুপা, “অন্যের বৌয়ের মধু চাকছেন, নিজে অবিবাহিত, মেরে ফেলার মতো বোকামি তিনি করবেন না!”
“এটা খুনের প্যাটার্ন হতে পারে!”
“মানে? কীসের প্যাটার্ন?”, চমকে জিজ্ঞেস করে রুপা।
“এক কাপ কফি হলে ভালো হয়না?”
রুপা রিসেপশনে ফোন করে দুকাপ কফি পাঠাতে বলল রুমে।
“কীসের প্যাটার্নের কথা বলছেন আপনি?”
“খুনী কেন এই কবিতার লাইনদুটো রেখে যাবে? মেবি হি ইজ প্লেয়িং আ গেইম! হয়তো ও আগেও খুন করেছে এবং খুনগুলো করেছে “ফিরে এসো, চাকা”র কবিতাগুলো লেখার তারিখেই! নাউ হি’জ রিভিলিং হিজ রিক্রেট!”
“আপনি সিরিয়াল কিলারের কথা বলছেন!”
“হ্যাঁ!”

“কিন্তু কেন? সিরিয়াল কিলার খুন করলেই বা কেন এই কাজটা করবে?”, অবিশ্বাসী গলায় প্রশ্ন করল রুপা।
নির্জন কিছু বলতে যাবে, বেজে উঠল ডোরবেল। নির্জন উঠে নিয়ে এলো কফির মগদুটি, সার্ভিসকে বিদায় জানালো দরজা থেকেই।
বিছানায় লেপের নিচে ফিরে, কফিতে চুমুক দিয়ে নির্জন জিজ্ঞেস করল, “জোডিয়াকের কথা জানো?”
“রাশি? আমি ওসবে বিশ্বাস করি না!”
“আমি জোডিয়াক কিলারের কথা বলছি!”
“কফিটা সুন্দর”, কফিতে চুমুক দিয়ে বলল রুপা। “না, জোডিয়াকের নাম শুনিনি কোনদিন!”

“জোডিয়াক ক্যালিফোর্নিয়ার এক সিরিয়াল কিলার যে এপর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধরার সম্ভাবনাও নেই আর, এতদিনে মরেটরে গেছে। তাকে নিয়ে অনেক থিওরি প্রচলিত আছে, একজন তো নিজের বাপকেই জোডিয়াক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। জ্যাক দ্যা রিপারের মতো অবস্থা অনেকটা!”
থামল নির্জন। ধোঁয়া ওঠা কফিকে চুমুক দিয়ে তাকাল রুপার বন্দুকের মতো তাক করে থাকা কৌতূহলী চোখের দিকে।

“অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের মতো জোডিয়াক খুন করে চুপ থাকত না। খুন করে সেই খুনের ডিটেইলস জানাত পুলিশকে ফোন করে, পত্রিকায় চিঠি লিখে! আবার চিঠির সাথে সাইফারও থাকত, চিঠিতে জানিয়ে দিত- সেটার সমাধান করতে পারলে ওর আসল পরিচয় জানা যাবে!”
“মাই গড! ওকে ধরতে পারেনি কেন? ডিসাইফার করতে পারেনি সাইফারগুলো?”

“ওর সব চিঠি ডিসাইফার করা যায়নি। যে কয়েকটা করা গিয়েছিল, সেসবে ওর পরিচয় ছিল না। নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে রীতিমত ত্রাশ সঞ্চার করেছিল জোডিয়াক। ওকে নিয়ে ডেভিড ফিঞ্চারের সিনেমা আছে একটা, জোডিয়াক নামেই, দেখতে পারো!”
কফির কাপটা পাশের ছোট্ট ডেস্কের উপর রেখে, আরেকটা সিগারেট জ্বালল নির্জন।
বলল, “জোডিয়াক এই কাজগুলো কেন করেছিল বলে তোমার মনে হয়? খুন করেই পুলিশকে ফোন করা, পত্রিকায় চিঠি লেখা, নিজের পরিচয় জানিয়ে ক্রিপটিক ম্যাসেজ পাঠানো- কেন করেছিল এসব?”
“আমি কী জানি!”

“কারণটা ধরতে পারলে, তাহমিনা হায়াতের খুনির কবিতা রেখে যাওয়াটা ব্যখ্যা করতে পারবে।“
রুপা অপেক্ষা করল নির্জনের উত্তরের জন্য। এ কয়েকদিনে ও বুঝে গিয়েছে, মাঝেমাঝে কথায় পেয়ে বসে নির্জনকে, তখন যে প্রশ্নগুলো করে, সেসবের উত্তরের ধার ধারে না ও, নিজেই জবাব দিয়ে দেয় সময়মতো।
“ইনভেস্টিগেটরেরা ধরে নিয়েছে, জোডিয়াক এটেনশন সিকার। তাই ও পত্রিকায় চিঠিগুলো লিখেছে- সফলও হয়েছে তাতে। গোটা নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া ওর ভয়ে কাঁতর ছিল! অথবা…”
কফিতে চুমুক দিল নির্জন।

“ও অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছিল। রিমোর্স- এর চেয়ে ভালো জ্বালানি আর নেই! হয়তো ও চাইছিল, ওর শাস্তি হোক, ও ধরা পড়ুক! ইড, ইগো, সুপারইগোর যুদ্ধে মূলত এটা হয়। অথবা…”
“অথবা কী?”, প্রশ্ন করল রুপা।
“অথবা ও পুলিশের সাথে খেলছিল। আমেরিকার গর্ব করার মতো পুলিশ এডমিনিস্ট্রেশন ওর কাছে হেরে যাচ্ছে বারংবার, এটা দেখে ও নিজের পুরুষাঙ্গ মনের খায়েসে চুলকানোর মতো আনন্দ পাচ্ছিল! কিংবা-”
“আবার কিংবা!”

“কিংবা পুলিশকে জোডিয়াক মিসলিড করতে চেয়েছিল। পুলিশ আর প্রেস যদি ওর সাইফার আর চিঠিতেই মত্ত থাকে, তাহলে ও নিজেকে ঢাকার সুযোগ পাবে সেই সুযোগে!”
“বুঝলাম। তার সেটার সঙ্গে তাহমিনা হায়াতের খুনের সম্পর্ক কী?”
নির্জন হেসে বলল, “এজন্যেই আমার একজন ডক্টর ওয়াটসনের দরকার, সবটা খুলে বললে গাম্ভীর্য টেকে?”
“এসেছে আমার শার্লোক! করেন তো পরকিয়ার রহস্য সমাধান- তার জন্য আবার সাগরেদ চাই!”, বলল রুপা, “যা বলছিলেন খুলে বলুন!”

সোজা হয়ে বসল এবারে নির্জন, টিকঠিক করতে থাকা দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল, “মনের সবক’টা জানালা খুলে দাও, ওকে? এবার ভাবো কারণগুলো। আমাদের কিলার এটেনশন সিক করতে অথবা পুলিশকে মিসলিড করতে কিংবা খুনের প্যাটার্ন বাতলে নিজেকে ধরিয়ে দিতে অথবা গেইম খেলতে কবিতাটার লাইনদুটো রেখে যেতে পারে না কি? এটা কি এতোটাই অসম্ভব?”
রুপা জবাব দিল না কোন।

“এই লিডটা ধরে আমরা যদি এগোই না, হয় কিলার পর্যন্ত পৌঁছব নয়তো চলে যাব উল্টো পথ ধরে টেকনাফের বদলে তেঁতুলিয়ায়!”, বলল নির্জন, “এই খুনের ইনভেস্টিগেশনের সূত্র এই কবিতার লাইনদুটোই, অন্তত আমাদের কাছে!”
রুপা কিছু বলার আগেই ফোনটা বেজে উঠল নির্জনের। নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে, ফোন কানে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
“তোমার ফোনে কল ঢুকছিল না কেন? দুপুর থেকে কতবার ট্রাই করলাম!”

১৩
সন্ধ্যার মেদুর অন্ধকারে কুয়াশা মিশছে একটু একটু করে- লনের ফ্লাডলাইটের আলোয় ভাসছে কুয়াশা, ট্রাকের চাকার পেছনের উড়ন্ত ধূলিকণার মতো। দূরের চা বাগানের ভেতরের বজ্রাহত নিথর সান্ত্রী গাছগুলো দাঁড়িয়ে- বোঝা যাচ্ছে শুধু তাদের কালো অবয়ব। একটা খেঁকশিয়াল ডেকে উঠল কাছে কোথাও।
লনে এখন দাঁড়িয়ে নেই কেউ। সকালে তাহমিনা হায়াতের খুনের পর অনেকেই চলে গিয়েছে হোটেল ছেড়ে; যারা থেকে গিয়েছে সাহস করে, তারা এখন রুমের ভেতর উষ্ণ কম্বলের নিচে। সিলেটে বিরাজ করছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, যুগান্তরের খবর- তার রেশ পড়েছে শ্রীমঙ্গলেও।
“আজ পূর্বাচলে একটা ফ্ল্যাটের বায়না করে এলো মোমিন, জানো? দুই কোটি টাকা ডাউনপেমেন্ট। কিছুদিনের মধ্যেই ওখানে শিফট করব!”

ফোনের ওপাশে ভ্যাজরভ্যাজর করে যাচ্ছে সাইফা, সেদিকে নির্জনের খেয়াল নেই। ও তাকিয়ে আছে এল শেইপড বিল্ডিংটার তৃতীয় ফ্লোরটার দিকে- তাহমিনা হায়াতের রুমের দরজা খোলা- কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে সামনের বারান্দায়।

“তোমার স্বামীকে এভাবে টাকা ওড়াতে বারণ কর, সাইফা। রিটায়ারমেন্টের পর নির্বাচন করতে হবে না? দল থেকে নমিনেশন কিন্তু ১০/১৫ কোটিতেও এখন হচ্ছে না!”
পার্লামেন্টে অবসরপ্রাপ্ত সচিব আর সেনাসদস্যের আধিক্য মাথায় রেখে খোঁচাটা মারল নির্জন, সাইফা ধরতে পারল না।
বলল, “নির্বাচন তো করবে কিন্তু কোন দলের হয়ে করবে, সেটা হলো চিন্তার কথা!”
পুলিশের একটা ভ্যান সাইরেন না বাজিয়ে এসে দাঁড়াল হোটেলের গেটে। পুলিশের বড় কোন কর্তাই হবেন- একজন সিপাই অথবা কন্সটেবল খুলে দিল ভ্যানের গেট তার নামার জন্য- গটগট করে চলে গেলেন তিনি রিসেপশনের দিকে। তাহমিনা হায়াতের রুমেও সৃষ্টি হলো কিছুটা চাঞ্চল্য। যে পুলিশটা রেলিং এ হেলান দিয়ে সিগারেট ফুঁকছিল, সে আধফোঁকা সিগারেটটা ফেলে দাঁড়াল সোজা হয়ে।

“এত চিন্তার কী আছে? তোমার স্বামীর তো আর আদর্শ টাদর্শ নেই। যে দল নমিনেশন দেবে, সে দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে। এখন আদর্শের রাজনীতি কেউ করে?”
পুলিশের সেই কর্তাটাকে নির্জন এবারে দেখল তিন তলায়, হাঁটছেন দৃপ্ত ভঙ্গিতে- তার পেছনে আরো কয়েকজন পুলিশ চলেছে মোসায়েবের মতো। সবার পেছনে মিস্টার ব্যানার্জি; বিনয়ের মূর্ত প্রতীক ব্যানার্জি হাতদুটো পেছনে রেখে হাঁটছে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের পেছন পেছন চলা তেলবাজ ফার্স্টবয়ের মতো।
“এত ঠাণ্ডা! এই ঠাণ্ডায় চোদা দরকার ছিল আর তুমি বাল কত দূরে! ধুর!”
ঠাণ্ডার কথায় নির্জনের খেয়াল হলো, থরথর করে কাঁপছে ও। গোসলের পর আর জ্যাকেট চাপায়নি, গায়ে শুধু একটা শার্ট, তার নিচে তাঁতের গেঞ্জি।

পুলিশের কর্তাটি ঢুকল তাহমিনা হায়াতের রুমে। নির্জনের ঠোঁটে ফুটে উঠল ব্যঙ্গাত্মক হাসি। “কিপ দ্যা ক্রাইম সিন আনচেঞ্জড”- পড়েছিল ও পুলিশিং এর উপরে লেখা একটা বইয়ে। খুনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, স্পটের ক্ষতি না করা, খুনের সময় যেমন ছিল, তেমনই রাখা- পুলিশের প্রধানতম দায়িত্ব- অন্তত ফরেনসিক এভিডেন্স সংগ্রহ না হওয়া পর্যন্ত। আর সরকারের এই মহান চাকরটি গটগট করে ঢুকে পড়লেন ক্রাইম সিনে, সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে।
তাহমিনা হায়াতের ঘরের দিকে চোখ রেখেই বলল নির্জন, ফোনের ওপাশে থাকা সাইফাকে, “দূরে আছি বলেই তো আমার অভাববোধ করছো, সাইফা। কাছে থাকলে, মোমিন সাহেবের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে যেতাম!”
আরো বেশ কয়েকমিনিট তিন তলার আলোকিত অভিশপ্ত ঘরটার দিকে নজর রেখে, কাঁপতে কাঁপতে অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে কথা বলে রুমে ফিরে এলো নির্জন।

নির্জনকে দেখে রুপা বলল, “সংবাদ২৪৭ তাহমিনা হায়াতকে নিয়ে নিউজ করেছে। একটা টিভি চ্যানেলও করেছে নিউজ, দেখলাম ইউটিউবে!”
রুমের ভেতরের উষ্ণতায় নির্জনের কাঁপুনি কমল কিছুটা। হাতের আঙ্গুলগুলো জমে গিয়েছে যেন- আর কিছুক্ষণ ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত হাত থেকে ফোনটা পড়ে যেত।
“পড়ে শোনাও”, বলল নির্জন যান্ত্রিক কণ্ঠে।
স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখে পড়তে লাগল রুপা স্পষ্ট উচ্চ স্বরে-
“শ্রীমঙ্গলে অধ্যাপিকার রহস্যজনক মৃত্যু!”
“শ্রীমঙ্গলের অদূরে হোটেল নিসর্গের একটি রুমে আজ সকালে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, মৃতার নাম তাহমিনা হায়াত (৩৮), তিনি ঢাকার ইউরেশিয়া ইউনিভার্সিটি ওফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির অধ্যাপিকা ছিলেন।
বেশ কয়েকদিন ধরে সেই হোটেলে অবস্থান করছিলেন তাহমিনা হায়াত। আজ সকালে হোটেলের এক কর্মচারি তার নির্দেশমত সকালের খাবার পৌঁছে দিতে গেলে, তাকে মৃত আবিষ্কার করে। পরে খবর পেয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এই খুনের ব্যাপারে শ্রীমঙ্গলে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। খুনের ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) পলাশ রেহমান বলেন, “গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হোটেলে পৌঁছে তার নগ্ন দেহ উদ্ধার করি। হত্যা করার আগে তাকে রেইপ করা হয়েছে কিনা সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। শরীরের অন্য কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে, বাকিটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে জানা যাবে!”
এঘটনায় এপর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি কাউকে। পলাশ রেহমান বলেন, “কাউকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। হোটেল কতৃপক্ষ ও হোটেলের কয়েকজন রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।”
এ বিষয়ে ইউরেশিয়া ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির উপাচার্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের তরফ থেকে এপর্যন্ত কোন মন্তব্য পায়নি সংবাদ২৪৭।”
আরো বেশ কয়েকটি নিউজপোর্টালের খবর পড়ে শোনাল রুপা, সবগুলোতেই প্রায় একই কথা লেখা।
“কী বুঝলেন? কী মনে হচ্ছে?”, জিজ্ঞেস করল রুপা।
নির্জন এর মধ্যেই ঢুকে গিয়েছে লেপের নিচে- বলল, “ঠিক এই কাজটাই তোমাকে করতে হবে, রুপা!”
“মানে?”

“এটা যদি সত্যি সিরিয়াল কিলারের কাজ হয়ে থাকে, যে সম্পর্কে আমি অনেকটাই নিশ্চিত, তাহলে একটা এমও- মোডাস অপারেন্ডি- সোজা বাংলায় অপরাধের নির্দিষ্ট ধরণ, পাওয়া যাবেই।“
“প্রত্যেক খুনের ক্ষেত্রেই কি এমও থাকে?”, জিজ্ঞেস করল রুপা।
“আরে না, বোকা। বেশিরভাগ খুনই তো হয় ঝোঁকের মাথায়, এমেচারদের দ্বারা। তাদের আবার ধরণের কী আছে? সাধারণত যারা সিরিয়াল অফেন্ডার, ধরো ডাকাত কিংবা চোর, তাদের প্রত্যেককের একটা ধরণ আছে অপরাধের; সিরিয়াল কিলারদের তো থাকেই!”
থামল নির্জন। তারপর জিজ্ঞেস করল আবার, “তাহমিনা হায়াতের খুনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো কোনগুলো, একটু বলত।”
ল্যাপটপটা কোল থেকে সরিয়ে রেখে ভাবল কিছুক্ষণ রুপা। তারপর বলল, “গলায় ছুরির একটা মাত্র পোঁচ, তাহমিনা হায়াতের নগ্ন দেহ, হোটেল রুম আর কবিতার লাইনদুটো।”

“দারুণ”, হাতের আঙ্গুলগুলো নিজের মাথায় চালিয়ে বলল নির্জন, “গলায়, ঠিক ভোকাল কর্ডের ওপর ছুরির পোঁচ, এটা মোডাস অপারেন্ডি হতে পারে। এমেচারের কাজ এটা নয়, খুনের উত্তেজনায় তাহলে আরো কয়েক জায়গায় কোপ মারত। কিলার একটা মাত্র ছুরির পোঁচ দেয়ার পর, আর কোন আঘাত করার প্রয়োজনবোধ করেনি। হয়তো বসে বসে নিবিষ্ট হয়ে তাহমিনা হায়াতের মৃত্য যন্ত্রণা উপভোগ করেছে। এটা কোনভাবেই ওর প্রথম খুন হতে পারে না, ঠিক এমন স্টাইলেই ও আরো খুন করেছে!”

“রেইপের ব্যাপারটা আপনি মাথাতেই আনছেন না কেন?”, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুপা।
“আনছিনা কারণ”, বলতে লাগল নির্জন, “তাহমিনা হায়াতের বুকে, পেটে, স্তনে কোন আঙ্গুলের বা হাতের ছাপ আমি পাইনি। রেইপ করলে তাহমিনা হায়াতের সারা দেহে তার হাতের ছাপ থাকত। আর এটা যদি সত্যিই সিরিয়াল কিলারের কাজ হয়ে থাকে, তবে ও রেইপ করার মতো ভুল করবে না।“
রুপা অধৈর্য হয়ে বলল, “নগ্ন হওয়ার ব্যাপারটাকে কীভাবে ব্যখ্যা করবেন?”
“প্রশ্নটা সেখানেই”, বলল নির্জন। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলল, “এটাকে যে ব্যখ্যা করা যায় না, তা নয়। এক্ষেত্রে টেড বান্ডিকে টেনে আনতে হয়।“

“এর নামটা শুনেছি। ইউটিউবে একে নিয়ে ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম বোধহয়।“
“শোনারই কথা”, বলল নির্জন। “টেড বান্ডি হয়তো আমেরিকার ইতিহাসের মোস্ট ইনফ্যামাস সিরিয়াল কিলার! ও ছিল প্রচণ্ড সুদর্শন ও বুদ্ধিমান। স্কলারও। আইন নিয়ে পড়াশুনা করেছে। টেড ওর দৈহিক সৌন্দর্য আর স্মার্টনেসকে কাজে লাগিয়ে মেয়েদের পটাত, তারপর তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলত। ক্যানিবেলও ছিল, একপ্রকার!”
“ইয়াক! মাংস খেত?”
“হ্যাঁ। ধরা পড়ার পর টেড বান্ডির ফ্রিজে বেশ কয়েকজন নারীর দেহের অংশ পাওয়া যায়!”
“ভাবা যায় না!”, বলল রুপা।
“সাইকোপ্যাথেরা সিডাকসান বিদ্যা ভালোই জানে। অনুতাপ থাকে না বলে, সফলতার জন্য যা কিছু করতে পারে ওরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলও হয়। টেড বান্ডি আইনের ছাত্র ছিল। ওকে ধরা হলে কোর্টে নিজেকে নিজেই ডিফেন্ড করেছিল টেড। আর এত ভালো ডিফেন্ড করেছিল নিজেকে যে, পড়েছি, জাজ নাকি মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “You’d have made a good lawyer.. I’d have loved to have you practice in front of me. But you went another way, partner.””
“অবিশ্বাস্য!”

“আমাদের কিলার এমন নয় কীভাবে বুঝলে? হয়তো তাহমিনা হায়াতকে ও স্টাডি করেছে, তাকে পটিয়েছে, সিডিউস করেছে, তারপর এসেছে এই রুমে। হয়তো তাহমিনা হায়াত নিজেই তাকে তার রুমে ইনভাইট করেছে!”
“মাথা ঘুরছে আমার। ব্যাপারটাকে আপনি এত কমপ্লিকেটেড করে ফেলছেন কেন?”
“আমি কঠিন করছি না, রুপা। ব্যাপারটা কমপ্লিকেটেডই, আমি ব্যাখ্যা করে সহজ করতে চাইছি!”
ফোন আবারও বেজে উঠল নির্জনের। সুপ্রভার নামটা স্ক্রিনে দেখে রুপা বলল, “প্রভাপু আমার বদলে এখানে এলেই আমাকে লাশটা দেখতে হতো না!”
ফোনটা রিসিভ করে নির্জন বলল, “কিছু পেলে?”
সুপ্রভাকে ভালোমতোই চেনে নির্জন। তাহমিনা হায়াতের খুনের পর ও যে চুপ করে বসে থাকবে না, সে ব্যাপারে নির্জন নিশ্চিন্ত। এতক্ষণে হয়তো তাহমিনা হায়াতকে নিয়েই ঘাটছিল সুপ্রভা, কিছু একটা নজরে আসায় ফোন দিয়েছে নির্জনকে।

“আমি তাহমিনা হায়াতের ফেসবুক আইডিটা ঘাটছিলাম। একটা ব্যাপার নজরে এলো। ২০১৭ সালে মাদ্রাসায় শিক্ষকের দ্বারা শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। পোস্টটার কেমন্ট সেকশনে অনেকে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। ধর্ষণের হুমকিও ছিল।“
“হুমকি ধর্ষককে না দিয়ে যে প্রতিবাদ করল তাকেই দিল!”
“টিপিকাল ব্যাপার। মেয়েদের বেলায় যেমন পোশাকের দোষ ধরা হয়। আসল কথায় আসি- বেশ কয়েকজন হুমকি দিয়েছিল। যারা হুমকি দিয়েছিল, তাদের সবার প্রোফাইল চেক করেছি। তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি শ্রীমঙ্গল; নাম জিহাদুল ইসলাম!”

“ইন্টারেস্টিং!”, বলল নির্জন। “আচ্ছা তুমি আমাকে ঐ ছেলের আইডির লিংকটা পাঠিয়ে দাও!”
সুপ্রভার কথাটা রুপাকে বলতেই ও বলল, “সরাসরি ডেথ থ্রেট দিল আর পুলিশ কিছু করল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোথায় থাকে এসব ক্ষেত্রে?”

নির্জন জবাবে বলল না কিছুই। চোখের উপরের দিকটা দপদপ করছে ওর, মনে হচ্ছে কপালে হাতুড়ি মারছে কেউ। তখন ওভাবে শুধুই শার্ট গায়ে বাইরে গিয়ে ঠিক করেনি নির্জন, বুঝল- ঠাণ্ডা লাগলেই মাঝেমাঝে এমন হয় ওর। মাথাব্যথার উপশম নিকোটিনে হয় না জেনেও, একটা সিগারেট জ্বালল। অভ্যাসবশত।
“আপনি এখনো সিরিয়াল কিলার থিওরিতেই পড়ে আছেন?”, ঠাট্টা করল রুপা।
“হ্যাঁ!”, বলল নির্জন। “মৌলবাদীরা এভাবে খুন করে না!”
“সেটা ঠিক অবশ্য। ওরা পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পালায়। এত নিখুঁতভাবে ওরা কাউকে মারেনি!”
“একদম”, বলল নির্জন। “ধর্মানুভূতি লাগলে ওরা ম্যানিয়াক হয়ে যায়। আর তখন অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই কোপায়। তাহমিনা হায়াতকে যদি কোন ফান্ডামেন্টালিস্ট ফ্যানাটিকই মারত তবে তাকে হোটেল রুমে না মেরে বাইরে কুপিয়ে মারত। এই স্টাইলটা ওদের সাথে যায় না!”

“কী যেন নাম বলল, প্রভাপু? জিহাদুল ইসলাম? ও তাহলে সাসপেক্ট লিস্ট থেকে বাদ?”
“আমার সাসপেক্ট লিস্ট থেকে বাদ বটে। তবে পুলিশ ওকে খুঁজে বের করবে নিশ্চয়ই। খুনটা সে করলে ধরা পড়বেই। কিন্তু আমি সেই দিকটা ইনভেস্টিগেট করতে চাইছি, যে দিকটায় পুলিশ নজর দেবে না!”
সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে নির্জন তাকাল রুপার দিকে। রুপা আবারও ল্যাপটপটা চালু করেছে, তার উজ্জ্বল আলোয় রঙিন আভা পড়েছে মুখে; রুপার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ, কপালে বিরক্তি, ভেজা ঠোঁটদুটো রাগে বিড়বিড় করছে যেন।

সারাটা দিনের কথা ভাবতে লাগল নির্জন সিগারেটে ভেসে ভেসে। “কত দীর্ঘ দু-জনার গেল সারাদিন, আলাদা নিঃশ্বাসে-“ কার কবিতা? অমিয় চক্রবর্তী? সত্যিই দিনটা দীর্ঘ হলো খুব। কত অল্প সময়ে ঘটে গেল কতকিছু! পাল্টে গেল কতকিছু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে!
ঘড়িতে কেবল সাড়ে সাতটা। শীতে সুবিশাল রাতের বয়স মাত্র দুঘণ্টা। গতকাল এই সময়েই লনে ফ্লাড লাইটের আলোয় ব্যাটমিন্টন খেলছিল কয়েকজন; কেউ কফি কেউ সিগারেট হাতে হাস্যোজ্জ্বল উচ্চ কণ্ঠে আড্ডা মারছিল অনেকে। আর আজ কী নীরব! একটা রাত যেন চুষে টেনে নিয়েছে সব আনন্দ হৈ হুল্লোড় তার অসীম কৃষ্ণগহ্বরে!
আটটা! ঠিক সকাল আটটায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গেছিল নির্জনের। তারপর জাগিয়েছিল ও রুপাকে। রুপার যোনির শরাবান তাহুরার স্বাদ নিচ্ছিল যখন, শুনেছিল সেই বুক হিম করা আর্তচিতকার! ক’টা বাজছিল তখন? সাড়ে আটটা? আত’টা পনেরো?
“কী দীর্ঘ রাত শীতের!”
“হ্যাঁ?”

আত্মমগ্ন চিন্তার ছটা কখন মুখে উচ্চারিত হয়েছে বুঝতে পারেনি নির্জন। রুপার প্রশ্নে সচকিত হলো ও। বলল, “লাশটাকে পাওয়া গেছে আটটার পর। কতোটা সময় পেয়েছে কিলার, ভাবতে পারো?”
“অনেক সময়!”, স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে বলল রুপা। “পালানোর সময় তার নিশ্চয়ই কোন প্রবলেম হয়নি। এত শীতে এমন পাহাড়ি রাস্তায় কারো থাকার কথা নয়- কারো চোখে পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল না একদম!”
প্রায় ফুরিয়ে আসা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে রুপার দিকে ফিরল নির্জন। রুপার এই ক্লান্ত মুখের সঙ্গে ওর নির্মল বাসন্তী মুখের তুলনা করে মায়া হলো ওর। খুব বাজে গেল ওর দিনটা- সাধারণ একটা ইনভেস্টিগেশনে এসে ওকে জড়িয়ে পড়তে হলো এমন ফ্যাসাদে!
রুপার কাঁধে মাথা রাখল নির্জন। রুপা বালেশে হেলান দিয়ে বসে ছিল- ল্যাপটপটা সরিয়ে রাখল ও, নির্জনকে এভাবে কাছে ঘেঁষতে দেখে। বলল, “কী?”

“তুমি না চাইলে তোমাকে এর মধ্যে জড়াব না, রুপা। আমি একাই পারব!”
রুপা নির্জনের মুখের বেশ কয়েক সপ্তাহ না কামানো দাড়িতে হাত বুলিয়ে দিল। বলল, “আমি চেষ্টা করব আপনাকে সাহায্য করতে!”
দু’পা দিয়ে নির্জন জড়িয়ে ধরল রুপার কোমর। একটা হাত পাছায় রেখে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে বলল, “সকালের অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করা দরকার!”
“করুন! কে বারণ করছে?”
রুপার নরম পাছা খামচে ধরল নির্জন। গুঙিয়ে উঠল রুপা। নির্জন বাম হাতে স্তন মর্দন করতে করতে বলল, “আমাদের “ফিরে এসো, চাকা” কাব্যের তারিখগুলো মিলিয়ে মিলিয়ে গুগোলে সার্চ করতে হবে রুপা। এই তারিখের আর কোন খুন হয়েছে কিনা বের করতে হবে খুঁজে!”
নির্জনের প্যান্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিল রুপা। হাতে নিল ওর ক্রমশ শক্ত হতে থাকা বাড়া। বাড়ায় হাত বুলিয়ে বলল রুপা, “এখন ওসব বাদ দিন না!”

বাদ দিতেই চেয়েছিল নির্জন- তাহমিনা হায়াতের ব্যপারটা মাথা থেকে দূরে সরাতেই রুপার দেহে আশ্রয় নিয়েছে সে, কিন্তু কোনোভাবেই চিন্তাটাকে সরিয়ে দিতে পারছে না।

রুপা নিজেই স্তন অবমুক্ত করে দিল ওর নির্জনের মুখের সামনে, নির্জনের মাথাটা ঠেসে ধরল স্তনের মাথায়। ডান স্তনের বোঁটাটা মুখে পুড়ল নির্জন, দু ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষতে লাগল ও। নির্জনের লালায় পিচ্ছিল হয়ে উঠল রুপার বৃন্তাংশ। বাম হাত রুপার পাজামার ভেতরে পাঠিয়ে অনুভব করতে লাগল নিম্নাংশের উষ্ণ কোমলতা। নির্জনের হাতকে জায়গা করে দিতে দুপা ফাঁক করল রুপা- নির্জন হাতটা এনে রাখল ওর যোনির ওপর। বালের জঙ্গলে পথ হারাতে লাগল ওর আঙ্গুল!
“উম্মম… ভালো লাগছে!”, অস্ফুট বলল রুপা।
রুপার যোনি ভিজতে শুরু করেছে এর মধ্যেই- রগড়ে দিল নির্জন। তারপর যোনি-পাপড়ি মেলে ধরল দু’আঙুলে- মধ্যমা আর অনামিকা ঢুকিয়ে দিল ভেতরে।

“উফফ…নাহ… এখন ফিংগারিঙ্গে পোষাবে না… উম্মম… চুদুন আমাকে…প্লিজ!”
সময় নিতে চেয়েছিল নির্জন; ইচ্ছে ছিল রুপার দেশের আনাচে কানাচে চোরাগলিতে ঘোরাঘুরি করে পাড় করবে ঘণ্টাখানেক- সে ইচ্ছের গুঁড়ে বালি।
যোনি থেকে হাত সরিয়ে দ্রুত নিজের প্যান্টটা খুলে ফেলল নির্জন। রুপার প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত নামিয়ে নিজেকে ওর দুপায়ের মাঝে স্থাপন করল নির্জন। নির্জনের ব্যালাস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপনের জন্য প্রস্তুত!
রুপা নির্জনের পূর্ণ উত্থিত বাড়াটা ডান হাতে নিয়ে যোনিতে লাগিয়ে দিল- নির্জন সামান্য কোমর চালাতেই পিচ্ছিল আঁধার সুড়ঙ্গে ঢুকে ট্রেন- বেজে উঠল গার্ডের বাঁশি!
“উফফফ… আস্তে আস্তে ঢোকান…”

ধিমা তালে, মাঝারি লয়ে কোমর ওঠানামা করতে লাগল নির্জন। রুপা নিজেই ওর প্যান্টটা পুরোটা খুলে ছুঁড়ে ফেলেছে মেঝেতে। দুপায়ের বেড়িতে জড়িয়েছে ও নির্জনের কোমর, আর দুহাত রেখেছে ওর পাছায়।
দ্রুত না ঠাপালেও জোড়াল ঠাপ দিচ্ছে নির্জন- বাড়াটা পুরো বের করে গেঁথে দিচ্ছে পূর্নশক্তিতে- প্রতিঠাপে আর্তনাদ করছে খাটটা।

“আপনি এত ভালো চুদেন কেমন করে? উম্মম… কতজনকে চুদেছেন এপর্যন্ত… আঃ… হ্যাঁ?”
হাসি পেল নির্জনের। বাংলা একটা পানুতে এমন কথা শুনেছিল ও। পানুর মেয়েটি মদ্যপ অবস্থায় চোদা খেতে খেতে ছেলেটিকে ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছিল! কনসেন্ট ছাড়া ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া- ব্যাপারটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না সে। কিন্তু তেমন ভিডিও দেখতে ওর খারাপ লাগে- এটাও বুকে হাত দিয়ে ও বলতে পারবে না! “আম আ ফাকিং হিউম্যান বিইং আফটার অল!”, মনে মনে বলল নির্জন।
“কী? বলছেন কেন কেন?”, হিসহিসিয়ে প্রশ্ন করে রুপা।
নির্জন জবাব দেয় না। দু হাতে খামচে ধরে ও রুপার দুলতে থাকা স্তন!
“আউচ! ছিঁড়ে ফেলবেন নাকি আমার দুধদুইটা!”
 

Badboy08

Active Member
584
445
64
রাতের খাবারের পর ল্যাপটপের সামনে বসল ওরা। রাত জাগতে হতে পারে ভেবে নির্জন রিসেপশনে বলে একটা ফ্লাক্সে কফি আনিয়ে নিয়েছে; সাথে হালকা কিছু খাবার। দশটা বাজে কেবল- ঢাকায় থাকলে হয়তো এতক্ষণে বাইরে থেকে ফিরত নির্জন। কিন্তু এখানে দশটা মানে অনেক রাত। জেলা কিংবা উপজেলা শহরগুলো রাত দশটার মধ্যেই শুনশান হয়ে যায়- রাস্তায় কুকুর ডাকে। এখন হয়তো চিত্র পাল্টেছে কিছুটা, কিন্তু এই পাহাড়ি জায়গায় তার প্রভাব পড়েনি।

রুপা বলল, “কীভাবে কী করব এখন?”
এখন বেশ উৎফুল্ল লাগছে রুপাকে- কিছুক্ষণ আগের আর্থস্যাটারিং অর্গাজমের প্রভাবেই হয়তো- মুখে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা, চোখদুটোয় প্রত্যাবর্তন করেছে সহজ কৌতূহল।
নির্জন বলল, “গুগোলের সার্চবারে ‘খুন’ লিখে সার্চ করতে হবে। কয়েক হাজার রেজাল্ট পাব এতে। কিন্তু ঘাবড়াবার প্রয়োজন নেই!”
“তাহলে?”

“আমাদের প্রয়োজন ‘ফিরে এসো, চাকা” কাব্যের তারিখগুলোতে আর কোন খুন হয়েছে কিনা সেটা জানা। আমরা শুধু সেই তারিখের খবরগুলোই পড়ব। সার্চ রেজাল্ট এলে আমরা নিউজ অপশনে ক্লিক করব। তারপর “টুলসে” ক্লিক করলেই নির্দিষ্ট তারিখের খবর পাওয়ার অপশন চলে আসবে। সেখানে সাল আর তারিখ বসিয়ে দিলেই সেই দিনে কোন খুন হয়েছে কিনা সারাদেশে, জানা যাবে। দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি!”

নির্জন ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর সবগুলো খুন সম্পর্কিত খবর বের করল সার্চ করে।
রুপা বলল, “প্রতিদিন সারাদেশে কম তো খুন হয় না। ঐ তারিখগুলোতে আরো অনেক খুব হতে পারে। আমাদের কিলারের খুন কিনা সেটা বুঝব কী করে?”

বিরক্ত হলো নির্জন এই প্রশ্নে। বলল, “এতক্ষণ কী বোঝালাম তোমাকে তাহলে? এমও- মোডাস অপারেন্ডি মিলিয়ে। ২১ সেপ্টেম্বর ধরো ঢাকা কিংবা রংপুরে কুপিয়ে এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে স্বামী কিংবা স্বামীকে স্ত্রী- এটা তো আমাদের কেইসে রিলেভেন্ট নয়। আমাদের কিলারের হত্যার স্টাইলের সাথে মিললেই তবে সেটাকে পড়ব!”
“তবুও তো কম নিউজ পড়তে হবে না!”, বলল রুপা। “কতগুলো কবিতা আছে, কতগুলো তারিখ আর শুধু এবছরের খবর খুঁজলে তো হবে না। হয়তো গত দশবছরের খবর ঘাঁটতে হবে!”

নির্জন হাসল। বলল, “ইনভেস্টিগেশন তো শুধু সাসপেক্টের উপর নজর রাখা নয়, রুপা। পেপারওয়ার্কও ইনভেস্টিগেশনের অংশ। আর কোন উপায় নেই- করতেই হবে। আর ভাবো, আমরা এই কেইস ইন্টারনেটের যুগে না পেয়ে শার্লোক হোমস কিংবা ব্যোমকেশের যুগে পেলে কী হতো! তখন তো আর একটা ক্লিকেই সব খবরের কাগজের নিউজ সামনে চলে আসত না। পত্রিকা অফিসে বসে প্রত্যেকটা দিনের খবর ঘাঁটতে হতো!”
“আর সে দায়িত্ব আমাকে দিলে আমি সেদিনই ইস্তফাপত্র দিয়ে দিতাম আপনাকে!”, বলল রুপা শক্ত মুখে।

স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে লেপ্টে থাকা ময়লা শামুকের গতিরে রাত গড়িয়ে চলতে লাগল। বর্ষার অঝোর বৃষ্টির পর যেভাবে টিপটিপ করে আকাশ কাঁদে, সেভাবেই শিশির ঝরছে বাইরে। এতক্ষণ করিডোরে মাঝেমাঝেই সার্ভিস বয়দের পায়ের মৃদ্যু আওায়াজ আসছিল- এখন বন্ধ হয়েছে তাদের আসা-যাওয়াও। এঘরের স্থায়ী বাসিন্দা মোটা ধেড়ে টিকটিকিটা শুধু ভাবলেশহীন ঝুলে আছে দেয়ালে ঝুলন্ত টিকটিক করতে থাকা ঘড়িটার পাশে খাদ্যের আশায়। রুপা ও নির্জন তাকিয়ে ল্যাপটপের জ্বলজ্বলের স্ক্রিনের দিকে- চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে খবরের হেডলাইনগুলোর উপর। দেশে খুনের হার এতো বেশি, আগে ভাবেনি নির্জন। প্রতিদিনই প্রায় দেশের আনাচে কানাচে হত্যা কিংবা হত্যাচেষ্টা হয়েছে একাধিক জায়গায়। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন আর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের কারণ দাম্প্যত্যকলহ অথবা জমি সংক্রান্ত বিরোধ যার সঙ্গে এই কেইসের দূরতম সম্পর্কও নেই।

রাত সাড়ে এগারোটায় যখন নির্জন প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছে আর ধরিয়েছে আরেকটা সিগারেট, তখন রুপা বলল, “এই খবরটা দেখুন। ২০১২ সালের ২৬ আগস্টের খবর-”

ক্লান্তিতে চোখ বুজেছিল নির্জন- চট করে তাকাল স্ক্রিনের দিকে, সিগারেটে টান দিয়ে পড়তে লাগল, “কাওরান বাজারের হোটেল গ্রাসল্যান্ড থেকে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার, হোটেল ম্যানাজার ও দুই কর্মচারী আটক!”

নিউজটায় ক্লিক করল রুপা। দেশের একটা নির্ভরযোগ্য সংবাদ সংস্থার খবর, খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ নেই কোন।
খবরটা নির্জনকে শুনিয়ে পড়তে লাগল রুপা।

“আজ ভোরে রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকার হোটেল গ্রাসল্যান্ডে এক তরুণীর মৃতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। খুনি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় হোটেলের ম্যানাজার কল্লোল গোমেজ ও শান্ত ইসলাম নামের এক কর্মচারীকে।
পুলিশের সূত্র থেকে জানা যায়, তরুণীকে হত্যার পর ম্যানাজার কল্লোল গোমেজ ও আব্দুর রহমানকে মাঝরাতে মৃতদেহটি সরাতে দেখে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ থানায় খবর দিলে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মধুসূদন দত্ত জানান, “আমরা মাঝরাতে খবরটি পাই। হাতেনাতে ধরা হয়েছে তাদের। যদিও তারাই খুনটা করেছে কিনা সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই এখনো। তারা বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় একজন এসে একটি রুম এক রাতের জন্য ভাড়া নেয়। মাঝরাতে সন্দেহ হলে ওরা রুমের ভেতরে ঢুকে মৃতদেহটি আবিষ্কার করে। ভয়ের চোটে তারা মৃতদেহটি সরানোর ব্যবস্থা করে। এটা তাদের বক্তব্য- সত্যটা হয়তো ফারদার ইনভেস্টিগেশনের পর জানতে পারব আমরা।”

তরুণীর হ্যান্ডব্যাগ থেকে পাওয়া আইডিকার্ড থেকে মেয়েটির পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। নাম হালিমা সিদ্দিকা। সে ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।“
আরো একটি নিউজপোর্টাল এই মৃত্যুর খবর ছেপেছে “হোটেল গ্রাসল্যান্ডে ইডেল মহিলা কলেজ শিক্ষার্থীর নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার, আটক দুই!”

ক্লিকবেইট শিরোনাম জেনেও ক্লিক করল নির্জন। এখানে পাওয়া গেল কিছু নতুন তথ্য-
“ঢাকার কাওরান বাজার এলাকার হোটেল গ্রাসল্যান্ডে ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর নগ্ন মেতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। আটক করে সন্দেহভাজন দুজন হোটেল কর্মচারীকে।

জানা যায়, মৃতার নাম হালিমা সিদ্দিকা (২১), সে ইডেন মহিলা কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে হোটেল রুমে। হোটেলের দুই কর্মচারী মৃতদেহটি আবিষ্কার করে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে।

সন্দেহভাজন আটকৃতরা হলেন হোটেলের ম্যানাজার কল্লোক গোমেজ ও শান্ত ইসলাম। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি জানান, “এ ধরণের ঘটনা অনভিপ্রেত। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। খুনি ধরা পড়বেই!”
নির্জন বলল, “এমও মিলে গেল যে!”
রুপা বলল, “আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে যে এটা আমাদের কিলাররেই কাজ?”

নির্জন সিগারেটে টান দিয়ে বলল, “নিশ্চিত মোটেও নই তবে এই নিউজটা ইন্ট্রিগিং। এই পেইজটা সেইভ করে রাখো।“
সার্চবারে ফিরে গিয়ে অন্য একটা তারিখ বসাল রুপা, শুরু করল ২০১০ সাল থেকে।
রাত ভোর হওয়ার আগে মোট ৬ টা কেইস খুঁজে বের করল নির্জন যার সঙ্গে তাহমিনা হায়াতের কেইসের পুরোটা না হলেও সত্তরভাগ অন্তত মিল আছে।
নির্জন বলল, “আমাদের ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে কাল, রুপা। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে ঢাকায়। আমরা শ্রীমঙ্গলে বসে এর কিনারা করতে পারব না!”
“আমার হামহাম দেখা তাহলে হলো না এবারে!”, হতাশ হয়ে বলল রুপা, ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে।
“হামহাম হারিয়ে যাচ্ছে না, রুপা। কিন্তু আমাদের হোটেলকিলার ধরা না পড়লে হয়তো আরেকজনের প্রাণ হারিয়ে যাবে!”
আলো নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মিষ্টি গলার একটা পাখির ঘুমঘুম উসখুস ডাক শুনতে পেল নির্জন।

***
বিকেলের আলো তখনও ছিল আকাশে যাই যাই করেও থেকে যাওয়া অতিথির মতো। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছল ওরা চারিদিকে সন্ধ্যার তেলেজলে আঁধার নেমে আসার পর, ট্রেন আসার মিনিট কয়েক আগে। রোগাক্রান্ত কুকুরের পশমের মতো কুয়াশা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে ওখানে।
ব্যাগগুলো রুপার জিম্মায় রেখে টিকিট কাটতে গিয়েছিল নির্জন- প্যান্টের পকেটে ভাইব্রেট করে উঠল ফোন।
“খবর পেয়েছেন কিছু?”, বলল সুপ্রভা ফোনের ওপাশ থেকে।
কাউন্টারে ঢাকার দুটো এসি টিকিটের কথা বলে নির্জন বলল সুপ্রভাকে, “কীসের খবর?”

“কাল আপনাকে যার কথা বলেছিলাম, জিহাদুল ইসলাম, ওকে আজ পুলিশ গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ থেকে।“
“অনলাইনে খুন, ধর্ষণের হুমকির জন্য যদি গ্রেফতার করতে শুরু করে পুলিশ, তাহলে আরো অন্তত এক হাজার হাজতখানা তৈরি করতে হবে নতুন করে!”, বলল নির্জন টাকাটা কাউন্টারে দিয়ে, রুপার দিকে হাঁটতে হাঁটতে।
“ওকে কিন্তু তাহমিনা হায়াতের খুনি সন্দেহেই আটক করেছে, খবরে দেখলাম!”
সিলিট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস এসে দাঁড়িয়েছে প্ল্যাটফর্মে। রুপার হাতে টিকিট দুটো দিয়ে, ব্যাগদুটো হাতে নিয়ে সুপ্রভাকে বলল, “এই জিহাদি জাহিদুলকে হুমকি দেয়ার জন্য আটক করলে ঠিকাছে। তবে খুনের ক্ষেত্রে… নাহ- পুলিশের সময় নষ্ট হবে শুধু!”
“হয়তো। আমি শুধু খবরটা আপনাকে জানালাম!”

ফেরার পথে কেবিন নেয়ার ইচ্ছেটা বহুকষ্টে দমন করেছে নির্জন। ট্রেনে সেক্স করার বহুদিনের একটা ফ্যান্টাসি আছে ওর, এবারে সেটা পূরণ হলো না। এই ইনভেস্টিগেশন আরো কতদিন চালিয়ে যেতে হবে ও জানে না। টাকা খরচ করতে হবে ভেবেচিন্তে। ইনভেস্টিগেশনটা ও চালিয়ে যাচ্ছে নিজের তাগিদে, অর্থ যোগান দেয়ার কেউ নেই। ভাগ্য ভালো, জুলফিকার আমান পনেরো দিনের সার্ভেইল্যান্স কস্ট দিয়েছেন। যেহেতু ওদের ফিরে যেতে হচ্ছে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই, নির্জন ঠিক করেছে এই টাকাটা ও তাহমিনা হায়াতের হত্যারহস্য উদ্ঘাটনেই খরচ করবে।
“এইতো সেদিনই ট্রেনে করে এলাম। আবার ফেরত যাচ্ছি সেই বালের জায়গাটায়। ভাল্লাগে?”

বেশ উচ্চস্বরে বলল কথাটা রুপা। সামান্য দূরেই এক চশমাচোখের ভদ্রলোক ‘কালের কণ্ঠ’ পড়ছিলেন, নারী কণ্ঠে বাল শব্দটা শুনেই বোধহয় তাকালের বিস্মিত চোখে। তারপর নাকটা একবার ফুলিয়ে চোখ ফেরালেন পত্রিকার পাতায়।
নির্জন নিচুস্বরে বলল, “আমি তোমাকে আবার নিয়ে আসব, কথা দিলাম, রুপা। মন খারাপ করো না।“
রুপা বলল, “এখন ঢাকায় কী করবেন? ঐ ছয়টা খুন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন?”
কামরার ভেতর জ্যাকেটের দরকার নেই; নির্জন জ্যাকেট খুলে একটা চাদর দুজনের গায়ের উপর ফেলে জড়িয়ে ধরল রুপাকে। বলল, “হ্যাঁ। তবে কাল যে ছ’টা কেইস ঘাঁটতে হবে ভেবেছিলাম, তার মধ্যে থেকে তিনটার এই কেইসের সাথে মিল আছে কিন্তু মনে হচ্ছে না ওসব আমাদের কিলারের কাজ!”
রুপাও নির্জনের দেহে চেপ্টে লেগে গেল। বলল, “কেন?”

“কারণ এই তিনটা খুনে ছুরির ব্যবহার হয়নি। আমাদের কিলার কিন্তু ছুরি চলাতে এক্সপার্ট- অন্তত আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেই তিনটা খুনের একটায় গলা টিপে, একটায় বালিশ চাপা দিয়ে এবং আরেকটায় সিলিং এ ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর সেসব খুনের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই ধরাও পড়েছে ইতোমধ্যে। ঐ তিনটা কেইসে তাই সময় নষ্ট করার মানেই হয় না কোন!”
“আর বাকি তিনটা কেইস?”, নির্জনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল রুপা।
“এই কেইসগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং, রুপা। মারাত্মকভাবে ইন্টারেস্টিং!”
রুপা কোন প্রশ্ন না করে তাকিয়ে রইল নির্জনের দিকে। নির্জন ওর কৌতূহলী চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলল, “এই তিনটা কেইসেই ভিক্টিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে হোটেল রুমের ভেতর। একই প্যাটার্নে বলব না। তাহমিনা হায়াতের মতো শুধুই ভোকাল কর্ডে ছুরির পোঁচ ছিল না, দেহের অন্যান্য অঙ্গেও ছিল। আর তাদের সবাইকে পাওয়া গিয়েছে নগ্ন অবস্থায়, তাদের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর!”
“আল্লাহ! এসব আপনি কখন জানলেন?”

ট্রেন একটা স্টেশনে থেমেছে। জানলার কাচের ভেতর দিকে তাকিয়ে স্টেশনের নাম জানার ব্যর্থ চেষ্টা করে নির্জন বলল, “তোমার ঘুম থেকে ওঠার আগে। ন’টার দিকেই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, তারপর অনেক ঘেটে এসব বের করেছি!”
“এসব কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি?”
নির্জন চোখ বন্ধ করল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। তারপর চোখ খুলে বলল, “হয়েছে একজনকে। ইডেন কলেজের ছাত্রী হালিমাকে হত্যার অভিযোগে হোটেল গ্রাসল্যান্ডের এক কর্মচারীর জেল হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় বিনা অপরাধে জেলে ভুগছে সে। আর বাকিদুটো কেইস এখনো আনসলভড এবং ওপেন। এতদিনে ওসব কেইসকে কোল্ড কেইস বলা যেতে পারে!”
“বুঝেছি!”, অস্ফুটে বলল রুপা।
আশেপাশে একবার নজর বুলিয়ে নির্জন চাদরের নিচে রুপার স্তনে হাত রাখল। ফোঁস করে উঠল রুপা, বলল, “কী করছেন? কেউ দেখবে-“
বাঁহাতে স্তনটি ভালো করে পুরে নিয়ে নির্জন বলল, “কেউ দেখবে না!”
রুপা নির্জনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল, “আজ রাতে আমি আপনার বাসায় থাকব- সারারাত সুযোগ পাবেন। এখন ভদ্র হয়ে বসে থাকুন!”

রুপার তার বাসায় আজ রাত থেকে যাওয়ার কথা শুনে সামান্য খুশী হলেও, হতাশ হলো বেশি। ট্রেনে সেক্স করতে না পারি, টেপাটিপি করার ফ্যান্টাসিটাও পূরণ হবে না? কেবিন নিলেই ভালো হতো, ক’টাকাই বা লাগত বেশি!
আরামদায়ক সিটে হেলান দিয়ে নির্জন শরীরকে এক্সাইলে পাঠিয়ে ভাবতে লাগল তাহমিনা হায়াতের কেইসটি নিয়ে।
“এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে/ বেদনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হলো ফল।”
 

Badboy08

Active Member
584
445
64
“গ্রাসল্যান্ডের কেইসটা ছাড়া বাকি দুটো কেইস নিয়ে কোন কিনারা পাচ্ছি না, জানো?”

পরদিন সকালে সুপ্রভাকে পান্থপথের বাসা থেকে পিক করে বলল নির্জন। ট্রেনে, কাল রাতে নির্জনের বাসায় থাকার কথা বললেও কমলাপুরে এসে মন বদলেছিল রুপা- পথক্লান্ত নির্জন ব্যাগ কাঁধে ফিরে গিয়েছিল নিজের ঠান্ডা বিছানায়, একা।

আজ সকালে উঠেই সুপ্রভার খোঁজে চলে এসেছে নির্জন। দশটায় ঠিক সুপ্রভার ফার্মগেটের অফিসে আসতে বলেছে ও ঝন্টুকেও।

পান্থপথ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে নির্জনের জিএসএক্স আর, প্রিলিয়ন সিটে ঘুম জাগা ফোলা মুখে বসে আছে সুপ্রভা, আজো বসেছে সিটের দুদিকে দু’পা দিয়ে। নির্জনের মুখে এসে পড়েছে সকালের তাজা রোদ। যাই যাই করতে থাকা শীতের রোদে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে- শীতের রোদের কিশোরী কোমল ভাবটিও হয়েছে উধাও। ঢাকায় মানুষের কাছে ঋতু এতদিন ছিল তিনটি- শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা; তাদের মধ্যে প্রথমটি নিখোঁজ হতে শুরু করেছে এর মধ্যেই।

“আমি ভাবছিলাম কাল থেকে, আপনি বলার পর”, নীরবতা ভাঙ্গাল সুপ্রভা, “অনেকদিন আগের কেইস- ঘটনা দুটোর পর হোটেলগুলো নাম পর্যন্ত চেঞ্জ করে ফেলেছে!”

সিগন্যাল আদতে নেই- লাল, নীল বাতি সব ট্রাফিক পুলিশের হাত! পুলিশের হাতের ইশারা পেতেই এক্সিলারেট করল নির্জন- দ্রুত যেতে পারলে হয়তো ফার্মগেট মোড়ে আর হয়তো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।

“যেভাবেই হোক, খোঁজ চালিয়ে যেতেই হবে, সুপ্রভা। আমরা না করলে, আমার মনে হয় না, পুলিশ এই কেইসের কোন সুগতি করতে পারবে।”, রাস্তার দিকে চোখ রেখে বলল নির্জন গলা উঁচু করে।

পার্কিং লটে বাইকটি রাখল নির্জন। এরমধ্যেই সবগুলো দোকান খুলে গিয়েছে। ঢাবির আইবিএ হোস্টেলের সামনের চায়ের দোকানগুলোর সামনে বেশ ভিড়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে সুপ্রভা বলল, “একটা ঘটনা তো ২০০৯ সালের। হোটেল রজনীগন্ধার খুনটা। আপনি বলেছেন হোটেলের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এই নামের হোটেলই নেই এখন আর তার কর্মচারীকে পাবেন কোথায়?”

সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল সুপ্রভা। নির্জন বলল, “কোন একটা উপায় ঠিক বেরিয়ে আসবে, দেখে নিও!”

সুপ্রভার অফিসে এসেই দেখল, সুপ্রভা এই ক’দিনে তার অফিসের ভোল পাল্টে দিয়েছে। দেয়ালে বেশ কয়েকটা পেইন্টিং, বড় টেবিলটার উপর যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু শো-পিস, ওয়াশরুমের দরজার পাশের দেয়ালে ঝুলন্ত নতুন বছরের একটা সূর্যাস্তের ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার। যে চেয়ারটায় সুপ্রভা বসে, তার ঠিক পেছনেই ঝুলছে পেন্সিলে আঁকা মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি আবক্ষ ছবি।

নির্জন বলল, “তুমি মাইকেলের ভক্ত জানতাম না তো!”

নিজের চেয়ারে বসে একটা সিগারেট জ্বালল সুপ্রভা, হেসে বলল, “আমি আসলে ওর “কপোতাক্ষ নদ” ছাড়া কিছুই পড়িনি। একজন গিফট করেছে ছবিটা। কোথায় ঝোলাব ভেবে না পেয়ে অফিসেই টাঙ্গিয়ে দিলাম!”

নির্জনকেও একটি সিগারেট এগিয়ে দিল সুপ্রভা। সিগারেটে আগুন দিয়ে ও বলল, “সেই একজন তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে দেখছি!”

চমকে তাকাল সুপ্রভা নির্জনের দিকে। আরক্ত মুখে একরাশ লজ্জা- বলল, “কী করে বুঝলেন?”

“প্রত্যেকটা ছবিতেই একজনের সিগনেচার। গিফট করেছে, মানে তুমি বাকি ছবিগুলোও কেনোনি। কোন চিত্রকর এতগুলো ছবি তাকেই গিফট করে যাকে তার মনে ধরেছে!”

সুপ্রভা চুপচাপ থাকল কিছুক্ষণ আনত মুখে। নির্জন তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে সরাসরি। যেমন দেখে গিয়েছিল কয়েকদিন আগে- চোখের নিচে রাতজাগা ক্লান্তি, কালচে ভাব- তেমনটা আর নেই। তপ্ত দুপুরের কামাতুর ঘুঘু কিংবা কবুতরের ডাকের মতো বেশ সুখী সুখী ভাব উপচে পড়ছে চোখেমুখে।

সুপ্রভা চোখ তুলতেই, চোখাচোখি হয়ে গেল নির্জনের সাথে। নির্জন চোখ ফিরিয়ে নিল না, বলল, “এই শিল্পীর সাথে একদিন পরিচয় করিয়ে দিও। আলাপ করব!”

“আলাপ করিয়ে দেয়ার মতো নয় আসলে”, বলতে লাগল সুপ্রভা। “উনি আমার প্রেমে পড়লেও আমি পড়িনি এখনো। লোকটার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বুড়োর প্রেমে পড়তে বয়েই গেছে আমার!”

বার্ধক্যের সাথে বয়সের সম্পর্ক নিয়ে জ্ঞানগর্ভ একটা বক্তৃতা দেবে- যুক্তিগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিল নির্জন মনে মনে, তখনই ঝন্টু এসে দাঁড়াল সুপ্রভার অফিসের সামনে। নির্জনকে দেখেই মনখোলা দরাজ গলায় বলে উঠল, “শার্লোক চলে এসেছে দেখছি। কী দাদো, এই দুতিনদিনেই চেহারায় ভালোই চেকনাই এসে গেছে! হাহা, খেলা হলো ভালো?”

শেষের ইঙ্গিতটা কানে খট করে লাগলেও, হাত বাড়িয়ে দিল নির্জন। হ্যান্ডশেক করে বলল, “চেকনাই আর দেখলি কি, শালা! তাহমিনা হায়াতের খুনটা না হলে, আর কয়েকটা দিন শ্রীমঙ্গলে থাকতে পারলে দেখতি, ব্রাডলি কুপার হয়ে ফিরতাম!”

কুশলাদি বিনিময়ের পালা শেষে ঝন্টু বলল, “এবারে তোর সিরিয়াল কিলার থিওরিতে আয়। কাল রাতে হোটেল গ্রাসল্যান্ড, রজনীগন্ধা ইত্যাদি কী সব বলছিলি- বেজায়গায় আটকে গিয়েছিলাম- বুঝিনি ঠিকমতো। খুলে বল তো!”

স্টেশন থেকে বাসায় ফিরে লম্বা স্নানের পর হাতপা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে ফোন করেছিল নির্জন ঝন্টুকে। ছাত্র জীবনের অভ্যাসটা আবার যে ফিরিয়ে এনেছে ঝন্টু, ফোনের ওপাশের লোকজনের চিতকার চেঁচামেচি শুনেই বুঝেছিল নির্জন। জুয়ার ঠেকে বসেছিল ঝন্টু- কিছু অল্পবয়সী মেয়ের কণ্ঠও শুনেছে সে। বিস্তারিত না বলে তাই সংক্ষেপেই তাহমিনা হায়াতের ব্যাপারটা কিছুটা বুঝিয়ে আজ সুপ্রভার অফিসে আসতে বলেছিল ওকে।

নির্জন চেয়ারে হেলান দিয়ে ঝন্টুকে তাহমিনা হায়াতের হত্যা ও বিনয় মজুমদারের কবিতার তারিখের সম্পর্ক বিষয়ে বিশদ ধারণা দিয়ে বলল, “ঠিক এই ধরণের আরো তিনটা কেইস আমরা পেয়েছি। হোটেল গ্রাসল্যান্ডের কথা তো তোকে বললামই। আর দুইটা ঘটনা ঘটেছে হোটেল রজনীগন্ধা ও হোটেল আব্দুল আউয়ালে।“

“কী হয়েছিল?”, প্রশ্ন করল ঝন্টু।

নির্জন বলতে লাগল, “হোটেল রজনিগন্ধ্যার খুনটা হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ মার্চ। বলে রাখি, ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যের প্রথম কবিতাটা কিন্তু এই ৮ মার্চ, ১৯৬০ এ লেখা। গয়না তালুকদার নামের এক নারীর গলাকাটা মৃতদেহ পাওয়া যায় হোটল রজনীগন্ধার থার্ড ফ্লোরের ৩০৯ নাম্বার রুমে। তারা সারা দেহে ছুরির প্রচুর আঘাত ছিল। পুলিশ ৮ মার্চ রাতেই লাশটি উদ্ধার করে। পুলিশের ভাষ্য মতে, গয়না তালুকদার সেদিন বিকেল পাঁচটায় একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে হোটেলে ওঠেন। রাত ন’টার দিকে দরজার নিচ দিয়ে রক্তের স্রোত করিডরে বেরিয়ে এলে পুলিশ এসে তার মরদেহ আবিষ্কার করে- সঙ্গের লোকটি কখন বেরিয়ে গেছে, কেউ জানে না। গয়না তালুকদার একটা এনজিওর বড় পদে চাকরি করতেন, প্রচুর টাকা বেতনও পেতেন এবং ছিলেন বিবাহিত। খুনি এখনো অধরা!”

“আরেকটা?”, চেয়ারে হেলান দিয়ে প্রশ্ন করল ঝন্টু।

নির্জন উঠে একটা গ্লাসে পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলল। তারপর ঝন্টুর কৌতূহলী মুখের দিকে ফিরে বলতে লাগল, “তারপরের খুনটা ২০১১ সালের। এটা হয়েছে হোটেল রবিয়ুল আউয়ালে। তারিখটা গুরুত্বপূর্ণ- কেন সেটা না বললেও নিশ্চয়ই বুঝেছিস- ১১ অক্টোবর। হোটেল রবিউল আউয়ালের ৪র্থ ফ্লোরের একটি রুমে সারা সানজিদা নামের এক মডেলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বলা বাহুল্য, সারা সানজিদার গলায় ছুরির পোঁচ ছিল আর সারা দেহে বেশ কয়েক জায়গায় ছুরির দাগ ছিল। তার খুনিও ধরা পড়েনি এখনো!”

ঝন্টু বলল, “সিসিটিভি ফুটেজ ছিল না?”

এপ্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নিল নির্জন। খানিকক্ষণ ভেবে বলল, “মনে হয় ছিল না। থাকলে খুনি এতদিন জেলের ভেতরে থাকতো। এখন সব হোটেলেই সিসিটিভি থাকলেও, তখনও সেটা এখনকার মতো এভেইলেবল হয়নি। কিংবা কিলার খুঁজে খুঁজে সেসব হোটেলেই গিয়েছে, যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। হোটেল গ্রাসল্যান্ড, রজনীগন্ধা কিংবা রবিউল আউয়াল- কোনটাই কিন্তু নামকরা হোটেল নয়। গলি ঘুপচির হোটেল- অল্প ভাড়ার। আর জঙ্গি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে হোটেল গুলোতে এনআইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন এত বাঁধাধরা ব্যাপার ছিল না। আর যেহেতু এনআইডি কার্ডের ফটোকপিও এলাউ করা হয়, তাই ভুয়া ফটোকপি দিয়ে যে কেউ এই যুগেও হোটেলে উঠতে পারবে। তাই সিসিটিভি ফুটেজ কিংবা এনআইডি নাম্বার- কোনটারই সাহায্য পুলিশ পায়নি বলেই আমার মনে হয়।“

থামলো নির্জন। ঝন্টু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে প্রশ্ন করল, “পুলিশও কী মনে করে হোটেল রবিয়ুল আউয়াল, হোটেল গ্রাসল্যান্ড আর হোটেল রজনীগন্ধার খুনি একজনই?”

নির্জন একটা সিগারেট জ্বালিয়েছিল। একটা টান দিয়ে উত্তর দেবে, কথা বলে উঠল সুপ্রভা। বলল, “আমার মনে হয় না, পুলিশ এমনটা ভেবেছে!”

সোজা হয়ে বসে ছিল সুপ্রভা। এবারে সামনের টেবিলে ঝুঁকে বলল, “খুনের সালগুলো খেয়াল করুন। ২০০৯, ২০১১, ২০১২। অনেক বড় গ্যাপ। ঘটনাগুলো ঘটেছেও ছড়ানো ছিটানো এরিয়ায়। তিনটা আলাদা থানায়। খুন তিনটি এক সুতোয় গাঁথার মতো কোন ক্লু কিন্তু কিলার রাখেনি। সর্বশেষ যে খুনটার খোঁজ আমরা পেয়েছি, তার প্রায় ৭ বছর পর তাহমিনা হায়াতের মরদেহের পাশে যদি কিলার ইচ্ছাকৃতভাবে কবিতার লাইন দুটো রেখে না যেত, তাহলে আমরাও কিন্তু এই খুনগুলোকে একই ব্যক্তির কাজ বলে মনে করতাম না!”

“আরেকটা ব্যাপার হলো”, বলতে লাগল নির্জন, “পুলিশের রিসোর্সের অভাব। বেশিরভাগ খুনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসতে এত দেরি হয় যে কেইসগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। আর ততদিনে তদন্তকারী ওসির বদলি হয়ে যায়। আর কোর্টেও এত লাখ লাখ কেইস ঝুলে আছে, এই অনেকদিন ঝুলে থাকা কেইসগুলো নতুন করে গুরুত্ব পায় না, তার আগেই আরো বেশ কয়েকটা খুন খারাবি হয়ে যায়। ঢাকার ক্রাইম রেট তো গোথাম সিটির চেয়ে কম নয়!”

“বুঝলাম!”, বলল ঝন্টু শ্বাস ফেলে। “এখন কী করব আমরা? আমি তো অলরেডি একটা কেইসে ফেঁসে আছি। একটা মেয়ের পিছনে ঘুরুছি গত ৭ দিন, ওর বাবা লাগিয়েছে মেয়ে নেশা করে কিনা জানতে!”

হাসল নির্জন। বলল, “এসব মামলা তো বাবা আজীবন ডিল করে এলি। আগামীতেও হাজার হাজার পাবি, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাহমিনা হায়াতের খুনের মতো কেইস লাখে একটাই মেলে, অনেক ভাগ্যে!”

ঝন্টু বলল, “আমাকে কী করতে হবে সেটা বল। আমার ভাই মাস শেষে টাকা পেলেই হলো- কেইস ঐতিহাসিক নাকি ম্যান্দামারা, এতে আমার কিছু যায় আসে না!”

নির্জন বলল, “তোকে শুধু একজন কয়েদির সাথে আমার আর সুপ্রভার দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে!”
“কয়েদি?”

“হ্যাঁ!”, বলল নির্জন। “হোটেল গ্রাসল্যান্ডের কর্মচারি শান্ত ইসলামের সাথে। ও বেচারা অকারণেই জেলে আছে আরেকজনের দোষ ঘাড়ে নিয়ে। এখন মেবি আছে কাশিমপুর কারাগারে। পারবি না, দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে?”
“চেষ্টা করে দেখতে পারি। পনেরো দিন পর পর কারাবন্দীর সাথে ৩ ঘণ্টার জন্য দেখা করার পার্মিশন মেলে। সর্বোচ্চ ৫ জন দেখা করতে পারে, যতদূর জানি। দেখা করাতে পারব, তবে জানি না কবে সেটা!”

“আপনার অসাধ্য কিছু নেই, ঝন্টু ভাই”, সশব্দ হেসে বলল সুপ্রভা। “আপনি চাইলে বাঘের দুধও এনে দিতে পারবেন- এই ক্ষমতা আপনার আছে!”

সুপ্রভার প্রশংসায় তেলতেলে একটা হাসির রেশ এসে উড়ে বসল ঝন্টু টায়ারকালো ঠোঁটে।

***
সুপ্রভার অফিসে বসেই গতমাসে খেচরের আয় ব্যয়ের হিসেব, ওদের সবার বেতন, জমানো টাকা, হাতে থাকা কেইস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে বেজে গেলো দুপুর একটা। সার্ভেইলেন্স কস্ট বাড়ানো উচিত হবে কিনা, এটা নিয়ে একপ্রকার বাকবিতণ্ডাও হয়ে গেল ঝন্টু আর নির্জনের মধ্যে। আলোচনা স্থগিত রেখে নির্জন যখন বেরুলো অফিস থেকে, তখন সূর্য মাঝ গগণে- অফিসের সামনে রাস্তায় ফার্মগেট মোড় পর্যন্ত বিশাল জ্যাম। হাজার হাজার রিক্সা, বাইক, বাস আর সিএনজির একটি তৃপ্ত অজগর যেন শুয়ে আছে রাস্তায়, পেটে ক্ষুধা না থাকার নড়াচড়ার কোন ইচ্ছে নেই। আটকে থাকা কার আর সিএনজিগুলো অকারণেই থেকে থেকে হর্ন দিয়ে পরিবেশটা অসহ্য করে তুলেছে।

শ্রীমঙ্গল থেকে ফেরার পর থেকেই নির্জন পারিজার সঙ্গে দেখা করার কথা বারংবার ভেবেছে। শেষবার পারিজাকে দেখেছে নির্জন, তাহমিনা হায়াতের নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে- তাহমিনা হায়াতের অবস্থা দেখেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল ও। ও কি ফিরেছে ঢকায়? এখন, ওর সঙ্গে ফোন করে দেখা করতে চাইলে, ও কি রাজী হবে? এত বড় একটা দুর্ঘটনার মাত্র দু’দিন পর?

তাহমিনা হায়াতের মৃত্যুর আগের ঘটনাগুলো একমাত্র পারিজাই সবচেয়ে ভালোভাবে বলতে পারবে, কারণ সে নিজের অনিচ্ছাতেও প্রায় সারাক্ষণ ওর সাথেই ছিল। কিন্তু পারিজা কি চাইবে নির্জনের কাছে মুখ খুলতে যার সঙ্গে তার মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরিচয়?

পারিজাকে ফোন করার চিন্তাটা মাথা থেকে দূরে ঠেলে দিল নির্জন।

জ্যাম ছাড়তে শুরু করেছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লেগুনাটি ভোঁস ভোঁস করে ছাড়ছে কালো ধোঁয়া। কয়েক সেকেন্ডের জন্য নির্জনের মনে হলো, নরকে আছে ও! মানুষ! মানুষ! হাজার হাজার, লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষ শহরটিকে রৌরব করে তুলেছে।

জ্যাম ছাড়তেই দ্রুত এক্সিলারেটর ঘোরাতে লাগল নির্জন। এই আগুন, রোদ আর কালো ধোঁয়া থেকে দূরে চলে যেতে হবে ওকে। একটু কোমল হাওয়া চাই, একটু চাই নির্জনতা, একটু শান্তি, শান্তি, শান্তি। কার, লেগুনা আর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকা সিএনজিগুলোকে ওভারটেক করে ছুটতে থাকে ওর বাইক। মাথায় হেলমেড নেই, হাতে নেই গ্লাভস।

জানে, এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় ও দুর্ঘটনার মুখে পড়বে। কিন্তু গতি কমায় না নির্জন। এই জ্যামে, এত শব্দে- প্যাঁ পু ছ্যাঃ চু- আর কিছুক্ষণ থাকলেই দম বন্ধ হয়ে যাবে ওর। তার চেয়ে এই মৃত্যুই ভালো!

কিন্তু নিরাপদেই বাসার সামনে এসে পৌঁছে গেল নির্জন।
“বলেছি, এভাবে নয়, দৃশ্যের নিকটে এনে দিয়ে
সকলে বিদায় নাও; পিপাসার্ত তুলি আছে হাতে,
চিত্রণ সফল হলে শুনে নিও যুগল ঘোষণা।“

কাল রাতে পড়া কবিতার লাইনগুলো নির্জন বিড়বিড় করতে থাকে। অস্ফুটে। কী বোঝাতে চেয়েছিলেন বিনয় মজুমদার? কবিতাগুলো, কী অদ্ভুত, পাগলের প্রলাপের মতো মনে হলেও, ছাড়া যায় না পড়তে শুরু করলে। প্রতিটা করিতাই যেন নারী শরীর- একজনে আঁশ মেটে না, মেটে না! মনে হয়, সবার ভেতর- যার গল্প জানি না, যাকে চিনি না, যার গন্ধ অপরিচিত- ঢুকে যাই!

নির্জন বাইকটা বেইজমেন্টে রেখে সিঁড়ি ভাঙ্গতে থাকে।
“তপ্ত লৌহদণ্ড জলে প্রবিষ্ট হবার শান্তি আচম্বিতে নামে!”
কবিতার লাইনটি অস্ফুট উচ্চারণ করেই হাসে উঠল নির্জন। নিঃশব্দে। লৌহদণ্ড, প্রবিষ্ট, শান্তি- যেন একটি ক্রম। আর সেই ক্রমটা এক কর্মেই সুসম্পন্ন হয়!

“কোন পরিচিত নাম বলার সময় হলে মাঝে মাঝে দেখি
মনে নেই, ভুলে গেছি; হে কবিতারাশি, ভাবি ঈষৎ আয়াসে
ঠিক মনে এসে যাবে, অথচ…অথচ…সে এক বিস্মিত,
অসহ্য সন্ধান”

সিঁড়িগুলো ওর চোখের সামনে ক্যাসেটের ফিতার মতো ঘুরতে থাকে। পা বাড়ায় নির্জন, এক এক করে। “তাহমিনা হায়াত- হোটেল নিসর্গ; হালিমা সিদ্দিকা- হোটেল গ্রাসল্যান্ড; হোটেল রজনীগন্ধা…”

“এই এই? বিড়বিড় করে কী বলছো? ফোন ধরছিলে না কেন? কতবার ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে?”
অকস্মাৎ নারী কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে নির্জন; বিচলিত হয়।
“উপরে কৈ উঠছিলে? আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি, দেখোনি?”

চোখ তুলে তাকাল নির্জন। আত্মমনন থেকে বাস্তবে ফিরতে সময় লাগে ওর। নির্জন দেখে, সাইফা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটাও বুঝতে পারে, কীভাবে এত উপরে উঠে এসেছে ও, নয় তলায়, ও বুঝতে পারেনি। শুধু উঠেই আসেনি, নিজের ফ্লোর ভুলে আরো উঠতে শুরু করেছিল!

“সাইফা? তুমি? কখন এলে?”, সাইফার মুখের দিকে তাকিয়ে হতবুদ্ধি নির্জন পরপর তিনটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
“কখন এলাম? কাল রাতে ম্যাসেজ দিয়ে দুপুর দুইটায় আসতে বলেছিলে মনে নেই? এখন ক’টা বাজে? কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি জানো? কয়েকজন সিঁড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল- কী ভেবেছে কে জানে!”

নির্জনের দিকে তাকিয়ে শাসনের ভঙ্গিতে বলতে লাগল সাইফা। এখনো কোমরে হাত, চোখদুটো বিরক্তিতে কুঁচকে আছে। কপালে জমা কয়েক বিন্দু ঘাম।

“তুমি আমার ম্যাসেজের কোন উত্তর দাওনি। তাই ভেবেছি, আসবে না!”, কৈফিয়ত দেয়ার চেষ্টা করল নির্জন, পকেট থেকে অভ্যস্ত হাতে চাবি বের করে দরজা খুলতে খুলতে।
“রিপ্লাই দিব মানে?”, এবারে সাইফার কণ্ঠস্বর তারা সপ্তকে পৌঁছে।

“তখন আমি বাবুকে পড়াচ্ছিলাম। মোমিন আমার পাশে শুয়ে। ঐ সময়ে আমি ম্যাসেজের উত্তর দিব? কমন সেন্স নাই? আর হোয়াটসএপে ম্যাসেজ না দিয়ে কোন আক্কেলে ফোনে ম্যাসেজ দিয়েছো?”
ঘরের ভেতরে ঢুকে হ্যান্ডব্যাগটি বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সাইফা। নির্জন জুতো খুলে সামনে এসে দাঁড়াল অপরাধীর মতো। কিছু বলে না। ওর মনে হয়, সাইফাকে ওর কিছুই বলার নেই।
“খেয়েছো?”, নির্জনের অপরাধী মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সাইফা।

নির্জন দেখে, সাইফার রাগ কমতে শুরু করেছে। কপালের বিরক্তির রেখা সূর্যাস্তের দিকে উড়তে থাকা বুনোহাঁসের মতো বিলীয়মান।
“হ্যাঁ। সুপ্রভার অফিসেই খেয়ে এসেছি!”

সাইফা মুখ ঘুরিয়ে ঘরটা দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলে, “কোথায় ভাবলাম, এসে একটু গল্প করব। তুমি রাগ বাড়িয়ে দিলে। ভালো লাগে?”

শার্টের বোতাম খুলে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে নির্জন বলে, “তুমি ততোক্ষণে রাগটা কমাও। আমি ফ্রেস হয়ে আসি। প্রচণ্ড গরম লাগছে!”

জন্মদিনের পোশাকে শাওয়ারের নিচে দাঁড়াতেই নির্জনের শরীরে কাঁপুনি জাগে। শীত যে এখনো অন্তত ক্যালেন্ডারের পাতায় আছে, পানির উষ্ণতাই তা বলে দেয়। দাঁত চিপে ধরে থাকে নির্জন। “ঝিনুক, নীরবে সহো!”
ওয়াশরুম থেকে ফিরে নির্জন দেখে, সাইফা বিছানার ঠিক মাঝখানে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে রিডার্স ডাইজেস্টের পাতা উল্টাচ্ছে। পরনে টকটকে লাল শাড়ি, হাফ স্লিভলেস ব্লাউজ, খোলা চুল। মধ্যবয়সী স্বাভাবিক পেটের মেদ ঘুরে ঘুরে পাঁক খেয়ে যেন গভীর গর্ত তৈরি করেছে একটা- উদ্ভাসিত নাভির সামান্য উপরেই ব্লাউজ।

বাঙালি নারীর চেয়ে সুন্দর কোন শিল্প আছে আর পৃথিবীতে?

দু’মিনিটের ছোট শাওয়ার নিয়েছে নির্জন। চুল ভেজা, শরীরে তখন জল ঘামের মতো আটকে আছে। সাইফার পাশে বসে, ওর হাত থেকে ম্যাগাজিনটা কেড়ে নিয়ে বলল, “কতক্ষণ সময় আছে তোমার আজ, সাইফা?”

হাত ঘড়িটির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ও বলল, “সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত আজ ফ্রি। প্রকাশকের সঙ্গে দেখা করার কথ বলে এসেছি!”

প্রকাশকের কথায় মনে পড়ে যায় নির্জনের, বইমেলার দিন চলে এসেছে। প্রশ্ন করল “এবার বইমেলাতেই তোমার বই আসছে?”

“হ্যাঁ, এবার মেলাতেই!”, দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর করল সাইফা।

“এইতো সেদিন নাকি উপন্যাসটা শুরু করলে?”, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নির্জন।

সাইফা নির্জনের বিস্মিত চাহনিকে আমলে নেয় না। বলে, “তোমাকে বলেছি না কাহিনীটা? প্রকাশকের ভালো লেগেছে। আমার লেখাও প্রায় শেষ। কাল পরশু পাণ্ডুলিপি জমা দিলে ৭/৮ তারিখের মধ্যেই বই মেলায় চলে আসবে। এখন তো প্রিন্ট করতে সময় লাগে না। প্রচ্ছদ করেছে ডনহাতি হাজরা!”

“উপন্যাস লেখা শেষ হওয়ার আগেই প্রচ্ছদ রেডি?”, নির্জনের বিস্ময়ের পারদ আরেকটু উপরে ওঠে।
“আমি কাহিনী বলে দিয়েছি। সেই অনুসারে প্রচ্ছদ করেছে। সমস্যা কোথায়?”

নির্জন আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না। প্রকাশকেরা যে টাকা পেলে যা কিছু প্রকাশ করে, জানত নির্জন। কিন্তু এতটা অধঃপাতে গিয়েছে দেশের প্রকাশনা জগত, ভাবেনি ও। দেশের মেয়েরা কেন আমলা বরের জন্য এভাবে বোধ-বুদ্ধি জন্মানোর পর থেকেই পা ফাঁক করে থাকে, এতদিনে পুরোপুরি বুঝতে পারে নির্জন। ক্যাডারকে বিয়ে করলে এমনকি লেখক হওয়াটাও হাতের মোয়া- চাইলেই হওয়া যায়!

নির্জন একটা সিগারেট জ্বালে। সাইফা ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে, অনুভব করে নির্জন। ধোঁয়া ছেড়ে ওর দিকে তাকাতেই সাইফা বলে, “কী এসব প্রশ্ন করছো আসল কাজ বাদ দিয়ে?”
আসল কাজ? হাসল নির্জন। জিজ্ঞেস করে, “মোমিন সাহেবের খবর কী?”
সাইফা বিরক্ত হয়ে বলল, “তুমি প্রতিবার ওর কথা জিজ্ঞেস করো কেন বলতো?”

উত্তর দেয়ার আগে ভেবে নেয় নির্জন। তারপর বলে, “আমি ওর কথা বলে নিজেকে মনে করিয়ে দেই, অন্যের বৌকে চুদছি। তাহলে বেশি জোশ আসে গায়ে!”

সাইদা এবারে একটু হাসে। বলে, “আমারও! আমারও জোশ আসে! এই যে তোমার কাছে এসেছি, এটা অবৈধ- অবৈধ কাজ করছি ভাবতেই একটা অন্যরকম ফিল আসে!”

নির্জনের কাঁধে এবারে হাত রাখে সাইফা। ওর হাতটা কাঁধ বেয়ে নেমে আসে বাহুতে। সাইফা বলে, “এখন কী? করবে না?”

“সিগারেটটা শেষ করি আগে!”, একটা টান দিয়ে বলে নির্জন।

নির্জনের দিকে তাকিয়ে আবারও একবার হাসে সাইফা। তারপর চোখ নামিয়ে বলে, “খুব করতে ইচ্ছে করছে। তুমি যাওয়ার পর আর একদিনও ও করেনি।”

সিগারেট হাতে রেখেই উঠে দাঁড়ায় নির্জন। খুলে ফেলে ট্রাউজার্স। খুলতেই হবে জেনে শর্টস আর পরেনি ও। ঠাণ্ডায় চুপসে যাওয়া বাড়াটি আত্মপ্রকাশ করে সলাজ। নির্জনের প্রায় মেদহীন শরীরের দিকে ক্ষুধার্ত তাকিয়ে থাকে সাইফা, চোখ একবারও সরায় না।

“সিগারেটটা ফেলছো না কেন?”, ক্ষিপ্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে সাইফা।
“আজ শাড়ি খুলতে সমস্যা নেই তো?”, সিগারেট না ফেলে জিজ্ঞেস করে নির্জন
ঠোঁট চাটে সাইফা। মুখে অদ্ভুত এক হাসি এঁকে বলে, “না। আজ নেই। আজ আমাকে ন্যাংটা করে চোদো!”
“সেদিন আমাকে শাড়ি খুলতে বারণ করেছিলে। আজ আমি খুলব না। তুমি নিজেই সব খোল আমার সামনে। আমি চেয়ারে বসে বসে দেখব!”

নির্জনের এমন অদ্ভুত খেয়ালে প্রথমে একটু অবাক হলেও, হাসি মুখেই উঠে দাঁড়ায় সাইফা। ফেলে নেয় বুকের আঁচল।
নির্জন ব্যালকোনির চেয়ারটি টেনে এনে বসে; ছোট ছোট টান দেয় সিগারেটে।
সাইফা ব্লাউজের বোতামগুলো খুলতেই কালো ব্রাতে ডাকা স্তনদুটো বেরিয়ে আসে। সাইফার স্তন সামান্য ঝুলেছে কিন্তু পুস আপ ব্রা’র কল্যাণে এখন একদম সোজা।
ব্রা’টাও খুলে ফেলতে চাইলে, বারণ করে নির্জন। বলে, “ব্রা থাক। তুমি নিচে খোল!”

শাড়িটা এবারে পুরোটা ছুঁড়ে দেয় সাইফা মেঝেতে। সায়ার দড়িতে একটা টান দিতেই তা আলগা হয়ে যায়। সাইফা বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে দড়িটা ছেড়ে দেয়। সায়াটি খুলে পরে ওর দেহ থেকে বৃষ্টির মতো।
নির্জন ওঠে না। বসে থেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে এই দৃশ্য।

দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে রেখে সাইফা সলজ্জ চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর ধপধপে সাদা দুটো ঊরু ক্রসের ভঙ্গিতে রাখা- ব্যর্থ চেষ্টা করেছে ভোদাকে ঢাকার। ক্লিন শেইভড ভোদার ক্লিট কাঁপছে সামান্য।

উঠে দাঁড়ায় নির্জন। কয়েক পা এগিয়ে বসে হাঁটু গেড়ে। সাইফার কাঁপতে থাকা ভোদার দিকে তাকিয়ে সিগারেটে শেষটান দেয়। সাইফা এবারে নির্জনের মাথাটার চুল খামচে ধরে। মাথাটাকে টেনে নিয়ে আসে ভোদায়।
নোনতা স্বাদ নিতে নিতে নির্জন সাইফার মুখ থেকে বের হওয়া কালবৈশাখীর শব্দ শোনে।
“আঃ নির্জন… চাটো… উফফফ!”
 

bjue

New Member
3
0
1
ব্যাস্‌ গল্প অসমাপ্ত অবস্থায়ই শেষ। আর কোনওদিন শেষ হবে বলে মনেও হয় না।
 

Zayna

New Member
38
17
9
লেখক এক্টিভ থাকার পরেও গল্প অসমাপ্ত কেন?
 
Top