..........পর্ব...............১৪...............
আজকের রাতটা মনে হচ্ছে বেশ দীর্ঘ ৷ মাত্র রাত ১১.৩০ মিনিট ৷ এখন গাছ থেকে নামা নিরাপদ নয় ৷ যদিও তারা চলে গেছে ৷ কিন্তু শংকরের কিছু সাঙ্গো পাঙ্গো এখনো বনের এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ,আমাকে ধরার জন্য ৷ তাই আমি সেই ডালটায় শুয়ে শুয়ে সকালের অপেক্ষা করতে লাগলাম ৷
গাছের ডালে শুয়ে পর্যাবেক্ষণ করতে করতে কখন যে চোখের পাতা দুটি বন্ধ হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি ৷ হয়ত ক্লান্তি আর ভয়ে চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ৷
হঠাৎ পাখির ঝাপটার আওয়াজে চোখটা খুলে গেলো ৷ আমার মাথার ঠিক উপরের ডালটায় একটা পাখির বাসা ৷ সেখানে পাখিটা কোথা থেকে যেন উড়েঁ এসে বসেছে ৷ পুরো বনটাই যেন ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝিঁ...ঝিঁতে মুখোরিত ৷
এমন বিপদে চোখটা যে কিভাবে লাগলো বুঝতে পারলাম না ৷ গাছের ফাঁক দিয়ে চাদেঁর আলো উঁকি মারছে ৷ পুরো বনটাই শান্ত ৷ ঠিক আমাদের গ্রামের বনটার মত ৷ এমন বনের বড় বড় গাছের ডালে ঘুমানোটা আমার জন্য দুধ ভাত ৷
হাতের কম দামী ঘড়িটার সুইচ টিপে, আলো জ্বালিয়ে দেখে নিলাম কয়টা বাজে ৷ মাত্র ২.30 মিনিট ৷ উফফ এই রাত মনে হয় শেষ হবে না ৷ বিপদের রাত গুলো বুঝি এমনি হয় ৷ যেটায় না পড়লে বোঝা যায় না ৷ আমি অধৈর্য হয়ে পড়েছি ৷
নাহ,,,,,,আর এভাবে গাছে থেকে সকালের অপেক্ষা করতে পারবো না ৷ মনে হয় এখান থেকে রাতের অন্ধকারে বের হয়ে যাওয়াটাই ভালো হবে ৷ যাদের চোখ রাতের বেলায়ই শকুনের মত,দিনের বেলায় সেটা আরো দূর দৃষ্টি সমপন্ন হবে ১০০% ৷
কে জানে! ঐ জানোয়ার গুলো বনের কোথায় কোথায় ওত পেতে বসে আছে ৷ যা করতে হবে সাবধানে ৷ যদি ধরা পড়ি তো আমার জীবন কাব্য এখানেই শেষ ৷
আমি এগুলো ভাবতে ভাবতে গাছ থেকে নিচে নেমে এলাম ৷ জয় ব্যাগটা কোথায় রেখেছে সেটা আমার মনে আছে ৷ এই ব্যাগেই আছে লেপটপটি, যেটা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে ৷ আচ্ছা ! ব্যাগটা কি নিয়ে যাবো সাথে ?
ধূর ! নিয়ে কি করবো ? যাকে ব্যাগটা দিবো সেইই তো জয়কে ফাঁসিয়ে দিয়েছে ৷ না থাক ! ওটা নেয়া দরকার নেই এখন ৷ আগে এখান থেকে বেঁচে ফিরে ৷ তারপর ভেবে দেখবো ৷ এমন চিন্তা করেই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ৷
কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছি বোঝার উপায় নেই ৷ গ্রামের বনটা হলে কোন চিন্তাই ছিলো না ৷ সেখানের প্রতিটি লতা পাতা আমার চেনা জানা ৷ কিন্তু এখানের হিসেব ভিন্ন ৷ চাঁদের আলোটা কখনো কখনো মাটি স্পর্শ করেছে ৷ সেটার সাহায্যেই এগিয়ে যাচ্ছি থমকে থমকে সাবধানতার সাথে ৷
কিছু দূর যেতেই পিছন থেকে সটাং করে আমার ঘাড়ের উপরে আঘাত করলো কেউ একজন ৷ হুমড়ি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লাম মাটিতে ৷ ব্যাথায় ঝাপসা দেখতে লাগলাম চোখে মুখে ৷
কিরে শালা ! ভেবেছিস চলে গেছি, তাই না ? আমরা জানতাম তুই আশে পাশে কোথাও লুকিয়ে আছিস ৷ এমনকি এটাও জানতাম তুই বের হবি সেখান থেকে ৷ কিন্তু এতো পরে বেরহবি সেটা বুঝতে পারি নি ৷ তারপর সে অন্যদেরকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো ৷
আমি ব্যাথায় পড়ে রইলাম ঘাড়ে হাত রেখে ৷ এমন আচঁমকা আক্রোমনে আমি প্রস্তুত ছিলাম না ৷
মাদারচোদ ! এক ঘা খেয়ে এই অবস্হা ! ছোট্ট বেলা তোর মা তোকে দুধ দেইনি মনে হয় ৷ তোর মাদারচোদ বাবটা হয়তো সব চুষে খেয়ে ফেলেছে ৷ যার কারনে তুই এমন হয়েছিস ৷ এই বলে খেক খেক করে হাসতে লাগলো ৷
তার কথা গুলো আমার অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিলো ৷ মৃত বাবা আর সতী সাবিত্রি মায়ের নামে এমন কথা শুনে নিজের ব্যাথা এক নিমিষে শেষ হয়ে গেলো ৷ চোখের পলকে শুয়া অবস্হায় ঘুরে , তার বিচিঁতে মারলাম এক লাথি ৷ উপ,,করে বিচিঁতে হাত রেখে ক্যাং ধরে রইলো ৷ আমি মাটি থেকে উঠে শুরু করলাম এলো পাথারি নাকে মুখে লাথি আর ঘুসি ৷
আচমকা আক্রোমনে গুন্ডা লোকটা দিশেহারা হয়ে পড়লো ৷ সে বুঝতেই পারেনি তাকে এমন লাথি খেতে হবে ৷ আমার লাথিগুলো খেয়ে সে বুঝতে পারলো যে,একেকটা লাথি হয়ত একশো কিলোর উপরে হবে ৷
আমি তাকে লাথি মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেললাম। কুত্তা ! বাবা মায়ের নামে নোংরা কথা ৷ নে শালা নে .. বলে
অজ্ঞানটাকেই মারতে লাগলাম ৷ হঠাৎ টর্চের আলো পড়লো আমার দিকে ৷ টর্চের আলো পড়তেই আমি ঘাড় ধরে দৌড়াতে লাগলাম ৷ তারাও আমার পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলো ৷
আমি গিয়ে একটা ঝোপে লুকিয়ে পড়লাম ৷ আর হাতে একটা ডাল নিলাম ৷ তিন জন গুন্ডা এসে ঝোপের পাশে দাড়িয়ে গেলো ৷ তারপর তিনজন আলাদা হয়ে ঝোপের দিকে এগোতে লাগলো ৷
একজন আমার দিকে আসতেই আমি ঝোপ থেকে বেরহয়ে তার মাথায় উপর আঘাত করে ,সেখান থেকে দৌড় দিয়ে পালাতে লাগলাম ৷ কিন্তু সেখান থেকে বেরহওয়াটাই আমার জন্য কাল হলো ৷
তাদের হাতে যে পিস্তল ছিলো সেটা আমার অজানা ছিলো ৷ তাদের মধ্যে হতে একজন ঠা ঠা করে আমার দিকে এলোপাথারি গুলি ছুড়তে লাগলো ৷ আমি দ্বিকবিদিক হয়ে এদিক সেদিক ছুটতে লাগলাম ৷ কিন্তু রেহাই পেলাম না ৷
একটা গুলি আমার পায়ের মাংস পিন্ড ছিড়ে নিয়ে বাহির হয়ে গেলো ৷ গুলি খেয়ে নিজের খেই হারিয়ে বনের উচু টিলা থেকে গড়াতে গড়তে একেবারে নিচে ৷ মনে হয় আমার পা ভেঙে গেছে ৷ মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে ৷ আমার শক্তি শেষ হয়েগেছে ৷ মনে হচ্ছে মৃত্যুদূত এসে উপস্হিত হয়েছে আমার সামনে ৷
ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে নিজেকে আড়লে নেয়ার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম ৷ গায়ের শক্তি একেবারেই ন্বিঃশেষ হয়ে গেছে ৷ চিৎ হয়ে পড়ে রইলাম বড় একটি গাছের সামনে ৷ মনে হয় আর বাঁচার আশা নেই ৷
চোখ দুটো বড় করে পৃথিবীটাকে শেষ বারের মত দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম ৷ জোস্না রাতে চাদেঁর আলোটা ঠিক আমার কপাল বরাবর ৷ একটু সিন্গ্ধ আলো দিয়ে হয়ত স্বান্তনা দিচ্ছে৷ চাদেঁর আলো দেখা অবস্হায় চোখের পাতা দুটি বুজে আসছে পিট পিট করে ৷ এমত অবস্হায় মমতাময়ী মা আর আদরের ছোট ভাইয়ের চেহারাটা ভেসে উঠলো মনের পর্দায় ৷
জানি না কি হবে আমার পরিবারের ৷ যাকে নিয়ে তারা সপ্ন দেখছে, আজ তার করুণ দশা ৷ মনে হয় আর মায়ের কোলে ফেরা হবে না ৷ এমনকি মরার পরে লাশটাও দেখবে না স্নেহময়ী মা ৷ বনের হিংস্র জানোয়ার গুলো খুবলে খুবলে ছিড়ে খাবে ৷ আহঃ ! আমার মত খেটে খাওয়া, সহজ সরল মানুষের সাথে এমন হবে ভাবতেই পারিনি ৷ এমনকি আমার প্রিয় মাও না ৷ এমন জানলে কি আর মরার শহরে মরতে আসতে দিতো নাকি ?
হঠাৎ একটি আবছা কালো ছায়া আমার উপরে এসে পড়লো, এটা যে তাদেরই একজন হবে বুঝতে বাকি রইলো না ৷ প্রায় নিভে আসা চোখটা ঘুরিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করলাম ৷ ইশ,,,,,যদি মরার আগে শালাকে দুটো গালি দিতে পারতাম তাহলে মনটা একটু শান্তি পেত ৷
কিন্তু একি ! এ তো দেখছি একটা বুড়ো লোক ৷ মাথায় জোটলা চুল ৷ হাতে একটা সাপের মত লাঠি ৷ আরে বাবা ! এ তো দেখছি লেংটা ৷ না,,না,,মনে হয় একটা ছোট্ট কাপড় পড়া আছে ৷ ঠিক লেংগুটির মত ৷
এমন কিংভুতকিমাকার লোক আবার কোথথেকে আসলো ৷ ভয় পেয়ে গেলাম প্রথমে ৷ কিন্তু পরক্ষনই ভাবলাম, ধ্যাত ! এখন কি আর ভয় পাবার সময় নাকি ? আমি তো একটু পর মরেই যাবো ৷ ভয় পাওয়ার কি আছে ? কিন্তু এ লোকটা এখানে কি করছে ?
কি রে,,,,,,, আরো কয়েকদিন বিচরণ করতে চাস নাকি এই ভব দেশে ? কিংভুতকিমার লোকটি করকশ শব্দ করে জিজ্ঞস করলো৷
যাহ শালা,,,,এই তো দেখছি আমাকে বাঁচানোর কথা বলছে ৷ তার কথা শুনে আশা জেগে উঠলো আহত মনে ৷ বিড় বিড়় করে তার কাছে বাচাঁর আকুতি জানালাম ৷ যদিও আমি নিজেই শুনতে পাইনি কি বলেছি তাকে ৷ চোখটা প্রায় বুজে আসছে ৷
কি,,রে,,,মুরগীর ঝোল দিয়ে ভাত খাবি ? এই বলে ফোকলা দাত বের করে হাসতে লাগলো ৷
আমার সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছে ৷ তার ফোকলা দাতের হাসি দেখার সুযোগ আর হলো না ৷ কানের কর্ণ কুহুরে অট্ট হাসির আওয়াজটি বেজেঁ উঠল কয়েকবার ৷ ততক্ষণে আমার দু চোখ বুজেঁ গেছে অস্তমিত সূর্যের ন্যায় ৷
প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত
জীবনের নতুন বাঁকে, আসবে নতুন সাঁজ ৷
শুরু হবে নুতুন খেলা,থাকবে নারে লাঁজ ৷
তুলো ধনা হবে এবার,ছাড়টা পাবে কে ?
মা কেও যে আনতে হবে, নয়া কৌশলে ৷
,,,,,,,,,,,,************,,,,,,,,,**********,,,,,,,,,,,,