- 13
- 12
- 4
ইংরেজি লিংক চাই। গল্প টা অনুবাদ করা হয়েছিল।
গল্পের নাম
নীল সাহেবের কুঠি
“আপনারা কি এখানে থাকবেন বলে ঠিক করে নিয়েছেন”, সামনে বসে থাকা দম্পতির দিকে জিজ্ঞাসু চাহুনি নিয়ে চেয়ে রইলেন বাড়িটির বর্তমান মালিক রমাপদ মল্লিক। মাঝবয়সী দম্পতির মধ্যে পুরুষটির নাম অপরেশ পুরকায়স্থ আর তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি সুনন্দা পুরকায়স্থ। সুনন্দার পাশে অপরেশকে খুব একটা খারাপ মানায় না, কিন্তু খুবই গোবেচারা গোছের স্বামী বলে মনে হয়। চেহারা মিনিট খানেক ধরে জরিপ করে নেবার পর রমাপদ বলতে শুরু করে, “আসলে আমি আর আমার স্ত্রী…মানে…আমার প্রাক্তন স্ত্রী এই বাড়িটাকে কিনে একটু মেরামত করে বিক্রি করে দেবার কথা ভেবেছিলাম, শেষপর্যন্ত সেটা আর হয়ে উঠলো না।”
“আমাদেরও প্ল্যান কিছুটা সেইরকমেরই…দেখা যাক কি হয়”, অপরেশ রমাপদর হাত থেকে কাগজখানা নিয়ে সাইন করে দিলো, “মেরামতির সাথে সাথে ভাবছি আমরা থেকেও দেখব।”
রমাপদও কাগজখানাতে নিজের জায়গাগুলোতে সাইন করে প্রশ্ন করলো, ”আপনাদের ছেলে মেয়ে নেই?”
“আমাদের তিনটে সন্তান রয়েছে”, সুনন্দা উত্তর দেয়, “বড়ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুয়েক আগে, সে আর আমাদের সাথে থাকে না, আলাদা বাসা করে নিয়েছে, ওর পরে যমজ আছে”।
- “যমজ মেয়ে আছে আপনাদের?”, রমাপদ জিজ্ঞেস করে।
“না। একটি মেয়ে আর একটি ছেলে”, সুনন্দা জবাব দেয়, আর অবাক হওয়ার সুরে পালটা প্রশ্ন করে, “আপনি এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
একটু অপ্রস্তুত হয়ে রমাপদ বলে, “না না…এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম, কিছু মনে করবেন না”। তারপর একটু থেকে ধীর গলায় বলে, “এই বাড়িটা কিন্তু আপনাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে, আর আপনাদের মধ্যেকার সম্পর্কগুলোরও”।
কোনরকম ভাবে জলদি জলদি কাগজগুলোতে সাইন করে দিয়ে আজকের মতন বিদায় নিতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সুনন্দা। বেরনোর সময়টাতে সুনন্দা পেছন ফিরে রমাপদ’র দিকে তাকালো, একি লোকটা এরকম পাগল পাগল চাহুনি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেন? বিড়বিড় কি করে কি সব বলে চলেছে, মনে মনে হচ্ছে ওর পানেই যেন গালিগালাজ করে চলেছে। এইরকম অদ্ভুত লোকের সাথে পাল্লা পড়েনি কোনদিন। বিশাল বাড়িটার গন্ডি থেকে বেরনোর সময় একটা ঠান্ডা বাতাস কেন সুনন্দার কানে কানে কিছু বলে গেল, বাড়িটা কেনার সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল সেটা সময়ই বলবে।
***
“বুঝলে, এই বাড়িটার না একটা অন্যরকম ব্যাপারস্যাপার আছে”, একটা তৃপ্তির হাসি নিয়ে অপরেশ ওর স্স্ত্রীকে বলে। ইংরেজ জমানার এই জমিদার বাড়িটার জৌলুষ এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে, কিন্তু চেষ্টা করলেই এটার মেরামতি করে কোন মালদার পার্টিকে বিক্রি করে দেওয়া যাবে, নিদেনপক্ষে হোম-স্টে করে দিলে কলকাতা থেকে টুরিস্টদেরও আনাগোনা লেগে থাকবে। ছাদের উপরে দুটো কামান এখনও নিজেদের মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“তোমার কিরকম মনে হচ্ছে?”, অপরেশ নিজের বউকে জিজ্ঞেস করে।
-“আমার তো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, এত বড় বাড়িটা আমরা জলের দামে পেয়ে গেলাম”, সুনন্দা এগিয়ে এসে স্বামীর পাশে দাঁড়ায়। নিজের হাতটা বেড় দিয়ে বরের কোমরে রেখে ওর গালে চুমু দিয়ে বলে, “আই এয়াম প্রাউড অফ ইউ”, পেছনে ফিরে ওদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আওয়াজ দিয়ে ডাকে, “কি রে তোরা নামবি না? দেখে যা আমাদের বাড়িটা কেমন?”
“আসছিই…”, এই বলে সন্তু নিজের ফোনটা পকেটস্থ করে গাড়ি থেকে নামে, “ওয়াও! আর সাব্বাস, এত্ত বড় বাড়ি, এতো পুরো রাজপ্রাসাদ”। সন্তু’র আসল নাম সম্বিৎ, ভালোবেসে ওর মা-বাবা ওকে সন্তু বলেই ডাকে। ছোট খাটো পাতলা গড়নের ছেলেটাকে দেখলেই পড়াকু বলে মনে হয়। একঝাঁক কোঁকড়ানো চুল কপাল থেকে সরিয়ে মা’কে জিজ্ঞেস করে, “কতগুলো রুম আছে এখানে?” বাড়িটা থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না সন্তু, বিভিন্ন রকম কারুকার্য ওকে আশ্চর্যরকম ভাবে টানছে। এর আগে এরকম বনেদী বাড়ি নিজের চোখে দেখেনি। ছবিতে সে বাওয়ালির রাজবাড়ি দেখেছে, কিন্তু এই প্রাসাদোপম বাড়িটাকে একটু সাজালে ওকেও হার মানাবে।
“সব মিলিয়ে বাইশটা ঘর আছে, সন্তু”, সুনন্দা গিয়ে ছেলের পাশে দাঁড়ায়, আর বলে চলে, “সাতটা বেডরুম, পাঁচটা টয়লেট, চারটে বসার ঘর, একটা লাইব্রেরী,একটা রান্নাঘর, একটা ডাইনিং হল,একটা বৈঠকখানা আর প্রবেশের সময় মস্ত উঠোনখানা তো রয়েছেই”।
মনে মনে হিসেব করে কিন্তু মেলে না, সন্তু জিজ্ঞেস করে, “উহু, একুশখানা ঘর হচ্ছে আমার হিসেবে”, মায়ের টানা টানা বাদামী চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আরেকটা ঘর কোথায়
গল্পের নাম
নীল সাহেবের কুঠি
“আপনারা কি এখানে থাকবেন বলে ঠিক করে নিয়েছেন”, সামনে বসে থাকা দম্পতির দিকে জিজ্ঞাসু চাহুনি নিয়ে চেয়ে রইলেন বাড়িটির বর্তমান মালিক রমাপদ মল্লিক। মাঝবয়সী দম্পতির মধ্যে পুরুষটির নাম অপরেশ পুরকায়স্থ আর তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি সুনন্দা পুরকায়স্থ। সুনন্দার পাশে অপরেশকে খুব একটা খারাপ মানায় না, কিন্তু খুবই গোবেচারা গোছের স্বামী বলে মনে হয়। চেহারা মিনিট খানেক ধরে জরিপ করে নেবার পর রমাপদ বলতে শুরু করে, “আসলে আমি আর আমার স্ত্রী…মানে…আমার প্রাক্তন স্ত্রী এই বাড়িটাকে কিনে একটু মেরামত করে বিক্রি করে দেবার কথা ভেবেছিলাম, শেষপর্যন্ত সেটা আর হয়ে উঠলো না।”
“আমাদেরও প্ল্যান কিছুটা সেইরকমেরই…দেখা যাক কি হয়”, অপরেশ রমাপদর হাত থেকে কাগজখানা নিয়ে সাইন করে দিলো, “মেরামতির সাথে সাথে ভাবছি আমরা থেকেও দেখব।”
রমাপদও কাগজখানাতে নিজের জায়গাগুলোতে সাইন করে প্রশ্ন করলো, ”আপনাদের ছেলে মেয়ে নেই?”
“আমাদের তিনটে সন্তান রয়েছে”, সুনন্দা উত্তর দেয়, “বড়ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুয়েক আগে, সে আর আমাদের সাথে থাকে না, আলাদা বাসা করে নিয়েছে, ওর পরে যমজ আছে”।
- “যমজ মেয়ে আছে আপনাদের?”, রমাপদ জিজ্ঞেস করে।
“না। একটি মেয়ে আর একটি ছেলে”, সুনন্দা জবাব দেয়, আর অবাক হওয়ার সুরে পালটা প্রশ্ন করে, “আপনি এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
একটু অপ্রস্তুত হয়ে রমাপদ বলে, “না না…এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম, কিছু মনে করবেন না”। তারপর একটু থেকে ধীর গলায় বলে, “এই বাড়িটা কিন্তু আপনাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে, আর আপনাদের মধ্যেকার সম্পর্কগুলোরও”।
কোনরকম ভাবে জলদি জলদি কাগজগুলোতে সাইন করে দিয়ে আজকের মতন বিদায় নিতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সুনন্দা। বেরনোর সময়টাতে সুনন্দা পেছন ফিরে রমাপদ’র দিকে তাকালো, একি লোকটা এরকম পাগল পাগল চাহুনি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেন? বিড়বিড় কি করে কি সব বলে চলেছে, মনে মনে হচ্ছে ওর পানেই যেন গালিগালাজ করে চলেছে। এইরকম অদ্ভুত লোকের সাথে পাল্লা পড়েনি কোনদিন। বিশাল বাড়িটার গন্ডি থেকে বেরনোর সময় একটা ঠান্ডা বাতাস কেন সুনন্দার কানে কানে কিছু বলে গেল, বাড়িটা কেনার সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল সেটা সময়ই বলবে।
***
“বুঝলে, এই বাড়িটার না একটা অন্যরকম ব্যাপারস্যাপার আছে”, একটা তৃপ্তির হাসি নিয়ে অপরেশ ওর স্স্ত্রীকে বলে। ইংরেজ জমানার এই জমিদার বাড়িটার জৌলুষ এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে, কিন্তু চেষ্টা করলেই এটার মেরামতি করে কোন মালদার পার্টিকে বিক্রি করে দেওয়া যাবে, নিদেনপক্ষে হোম-স্টে করে দিলে কলকাতা থেকে টুরিস্টদেরও আনাগোনা লেগে থাকবে। ছাদের উপরে দুটো কামান এখনও নিজেদের মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“তোমার কিরকম মনে হচ্ছে?”, অপরেশ নিজের বউকে জিজ্ঞেস করে।
-“আমার তো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, এত বড় বাড়িটা আমরা জলের দামে পেয়ে গেলাম”, সুনন্দা এগিয়ে এসে স্বামীর পাশে দাঁড়ায়। নিজের হাতটা বেড় দিয়ে বরের কোমরে রেখে ওর গালে চুমু দিয়ে বলে, “আই এয়াম প্রাউড অফ ইউ”, পেছনে ফিরে ওদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আওয়াজ দিয়ে ডাকে, “কি রে তোরা নামবি না? দেখে যা আমাদের বাড়িটা কেমন?”
“আসছিই…”, এই বলে সন্তু নিজের ফোনটা পকেটস্থ করে গাড়ি থেকে নামে, “ওয়াও! আর সাব্বাস, এত্ত বড় বাড়ি, এতো পুরো রাজপ্রাসাদ”। সন্তু’র আসল নাম সম্বিৎ, ভালোবেসে ওর মা-বাবা ওকে সন্তু বলেই ডাকে। ছোট খাটো পাতলা গড়নের ছেলেটাকে দেখলেই পড়াকু বলে মনে হয়। একঝাঁক কোঁকড়ানো চুল কপাল থেকে সরিয়ে মা’কে জিজ্ঞেস করে, “কতগুলো রুম আছে এখানে?” বাড়িটা থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না সন্তু, বিভিন্ন রকম কারুকার্য ওকে আশ্চর্যরকম ভাবে টানছে। এর আগে এরকম বনেদী বাড়ি নিজের চোখে দেখেনি। ছবিতে সে বাওয়ালির রাজবাড়ি দেখেছে, কিন্তু এই প্রাসাদোপম বাড়িটাকে একটু সাজালে ওকেও হার মানাবে।
“সব মিলিয়ে বাইশটা ঘর আছে, সন্তু”, সুনন্দা গিয়ে ছেলের পাশে দাঁড়ায়, আর বলে চলে, “সাতটা বেডরুম, পাঁচটা টয়লেট, চারটে বসার ঘর, একটা লাইব্রেরী,একটা রান্নাঘর, একটা ডাইনিং হল,একটা বৈঠকখানা আর প্রবেশের সময় মস্ত উঠোনখানা তো রয়েছেই”।
মনে মনে হিসেব করে কিন্তু মেলে না, সন্তু জিজ্ঞেস করে, “উহু, একুশখানা ঘর হচ্ছে আমার হিসেবে”, মায়ের টানা টানা বাদামী চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আরেকটা ঘর কোথায়