দেখতে দেখতে বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলো।বরযাত্রীর সব লোকজন কে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হলো। পিকুর মা বাবা আমাকে বলে গেলো জয় তুমি দাড়িয়ে থেকে সবাই কে খাওয়াও। দেখো কোনো কিছুর যেনো কমতি না থাকে। আমি বললাম আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না সব ভালোভাবেই হবে।খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। এরপর পুরোহিত খবর দিলো বরকে নিয়ে আসো লগ্নের সময় হয়ে এসেছে।
আমি আর আমার মামা গিয়ে পিকুকে নিয়ে আসলাম। পিকুকে নিয়ে ছাদনাতলায় বসানো হলো। এরপর
পটবস্তু - পুরোহিত বললো আচ্ছা কন্যা সম্প্রদান কে করবেন? তখন বাবা সামনে এসে বললো যেহেতু নুরজাহান এর বিয়ের সব দায়িত্ব আমার তাই কন্যা সম্প্রদান ও আমিই করবো।পুরোহিত বললো তাহলে তো খুবই ভালো কথা। আপনি তাহলে বর কে প্রথমে পটবস্তু দান করুন। বাবা পুরোহিত এর কথা মতো পিকুর হাতে নতুন জামাকাপড় তুলে দিলো। এর মাধ্যমে পটবস্তু পর্ব শেষ হলো।
তারপর
পুরোহিত বললো লগ্ন বয়ে যাচ্ছে তো তাড়াতাড়ি কনে কে ছাদনাতলায় নিয়ে আসুন। পিকুর মা বললো জয় তুমি আর তোমার বাবা গিয়ে নুরজাহান কে নিয়ে আসো। আমি আর বাবা গেলাম মায়ের কাছে। মা দেখলাম নানীর সাথে বসে আছে। নানী মা কে শিখিয়ে দিচ্ছে কি কি করতে হবে। মা নানীর কাছে বলছে সে কি বড় ভূল করে ফেললো কিনা। আমাদের সবাইকে ছেড়ে কিভাবে ভারতে থাকবে। মা এর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। নানী মা কে বুকে টেনে নিয়ে বললো আর কেদে কি করবি মা। যা ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে।এখন আর এসব ভেবে কি হবে।আমাদের চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন জামাই নতুন সংসার নিয়ে ভাবতে থাক।একটু পরেই তো তোকে চলে যেতে হবে। জয় আর ওর বাপের চিন্তা মাথা থেকে ছেটে ফেল। আর শোন নতুন শশুরবাড়ি গিয়ে সব কিছু মেনে চলবি।শাশুড়ীর কথার অবাধ্য হবি না। পিকুর সেবা করবি সব সময়। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কয়েকটা সন্তান নিয়ে নিবি।জয়ের বাপের সাথে বিয়ে হওয়ার পর তো আর জয় ছাড়া সন্তান নিতে পারলি না। মা বললো কি করবো আমি তো চেয়েছিলাম ই তুমি তো জানোই। নানী হুম সব জানি। আমরা মায়ের ঘরে ঠুকে বললাম মা লগ্ন বয়ে যাচ্ছে তাই তোমাকে এখন যেতে হবে। মা এটা শুনে আমাকে আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো। আমরা ও কাদতে লাগলাম। এভাবে কিছু সময় পার হলো। বাইরে থেকে পিকুর মায়ের চেচামেচি শুনতে পেলাম। উনি ঘরের ভেতর এসে বললো তোমাদের পাঠালাম নুরজাহান কে নিতে আর তোমরা এসে এখানে কান্নাকাটি শুরু করেছো এসব নাটকের কি সময় এখন। আমার ছেলেটা কে কি তোমরা লগ্নগ্রস্ঠা করবে নাকি। এসব নেকামি এখন বাদ দাও।আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করলাম আর ভাবতে লাগলাম পিকুর মায়ের যে ব্যবহার দেখছি তাতে করে আমার মায়ের দ্বিতীয় সংসারে যে কি সুখ অপেক্ষা করছে কে জানে। মা কে আমি আর বাবা হাতের উপর বসিয়ে নিয়ে ছাদনাতলার দিকে যেতে লাগলাম। মা পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঠেকে আছে। মা কে নিয়ে ছাদনা তলায় বসানো হলো। যেখানে আগে থেকেই বসা ছিলো মায়ের বর পঙ্কজ সিং আর পুরোহিত মশাই।
শুভদৃষ্টি
সম্পাদনা
শুভদৃষ্টি: বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখেন। সেই অনুযায়ী মা তার মুখের উপর থেকে পানপাতা সরিয়ে নিলো। পুরোহিত বললো নুরজাহান চোখ খুলে তোমার হবু বরের দিকে তাকাও। মা নিজের চোখ খুলে তাকালো পিকু আর মা দুজন দুজনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এভাবেই শুভদৃষ্টি সম্পূর্ণ হলো।
এরপর পুরোহিত বাবা কে বললো আপনি এদিকে আসুন। বাবা এগিয়ে গেলো। পুরোহিত বললো আপনি এবার কন্যা সম্প্রদান করুন।
সম্প্রদান:বাবা যেহেতু আমার মায়ের বিয়ের সব দায়িত্ব নিয়েছেন সেহেতু বাবা এই মুহূর্তে আমার মায়ের পিতার আসনে বসলেন। সেই নিয়ম অনুয়ায়ী কন্যার পিতা কন্যাকে জামাতার হাতে সম্প্রদান করেন বেদমন্ত্রে।মানে বাবা আমার মা কে পিকুর হাতে তুলে দিলেন।পিকু ও (বর) জানান যে তিনি আমার মায়ের ( কন্যার) ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলেন। পুরোহিত বললো নুরজাহান আর পিকু তোমরা চৌধুরী সাহেব এর হাতে হাত রাখো। দুজন বাবার হাতে হাত রাখলো এরপর পুরোহিত প্রথমে বাবাকে মন্ত্র পাঠ করালো এরপর পিকুকে ও পাঠ করালো
বিবাহের মন্ত্র হল
" যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।।"
যজ্ঞ
সম্পাদনা
যজ্ঞ: মা ও পিকু (বর -কনে) পবিত্র অগ্নির সামনে বসে পুরোহিতের সাথে মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। অগ্নিদেবকে মা পিকুর বিয়ের ঐশ্বরিক সাক্ষী করা হলো।
মালা বদল
সম্পাদনা
মালা বদল: পুরোহিত পিকু ও মা কে দাড় করিয়ে দুজনের হাতে দুটো মালা দিলো। এরপর বললো তোমরা মালা বদল করো।মা আর পিকু হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী মালা বদল করলো। এই মালা বদলের রীতির মাধ্যমে মা ও পিকু দুজন দুজনাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন।এরপর পুরোহিত বললো পিকু নববধু কে তুমি শাখা পলা মঙ্গলসুতো পড়িয়ে দাও নিজ হাতে।পিকু আমার মায়ের হাতে শাখা পলা পড়িয়ে দিলো। মায়ের গলায় মঙ্গলসুতো পড়িয়ে দিলো।। পুরোহিত বললো নুরজাহান দেবী এসব যেনো কখনো তোমার থেকে আলাদা না হয় তাহলে তোমার স্বামীর অমঙ্গল হবে।
এরপর পুরোহিত বললো এবার তোমরা বর কনে সাত পাকে ঘুরে আমার সাথে মন্ত্র যপ করবে।
সাত পাক
সম্পাদনা
কন্যা (মা) পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে সাতপাক করছে
সাত পাক: স্বামী-স্ত্রী ৭টি পাকে ৭টি প্রতিশ্রুতি দেয়-
প্রথম পাকে পিকু ভবিষ্যতের সন্তানদের যত্ন নেওয়ার অঙ্গীকার করলো
দ্বিতীয় পাকে স্ত্রী-কে সমস্ত রকম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিলো পিকু
তৃতীয় পাকে পরিবারে উন্নতির জন্য অর্থ উপার্জনের প্রতিশ্রুতি দিলো পিকু
চতুর্থ পাকে পিকু পরিবারের কল্যাণের ভার স্ত্রীর হতে অর্পন করলো
পঞ্চম পাকে এবার মা তার স্বামীর প্রতি বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দিলো
ষষ্ট পাকে পিকু আর মা নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস রাখার প্রতিশ্রুতি নেন।
সপ্তম পাকে মা ও পিকু স্বামী ও স্ত্রী বন্ধু থাকার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হন।
সপ্তপদী
সম্পাদনা
সপ্তপদী গমন:বাঙালি হিন্দু বিবাহের সপ্তপদী ভারতের অন্যান্য অনেক অঞ্চলের জনপ্রিয় "ফেরে"র থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে ধারাবাহিকভাবে সাতটি পান পাতা রাখা হলো। এই পাতার উপর( মা) কনে একের পর এক(পিকুকে) বরকে অনুসরণ করে পা ফেলে। (পিকু)বর এগিয়ে যাওয়ার সময় তার পা দিয়ে একটি বিশেষ পাথর "নোড়া"কে (সাধারণত মসলা গুঁড়ো করা ও বাটার জন্য ব্যবহৃত হয়) সরাতে লাগলো।এভাবে সম্পূর্ণ হলো মা ও পিকুর বিয়ের সপ্তপদী।
অঞ্জলি / লাজহোম : কন্যা ও বর খৈ অগ্নাহুতি দেন। প্রচলিত বাংলায় একে বলে খৈ পোড়া। বৈদিক যুগে মানুষ নানা ধরনের শক্তির উপাসনা করতেন। অগ্নিও তাদের মধ্যে অন্যতম।
পিকু মা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মায়ের দুহাতে হাত রেখে অগ্নাহুতি দিতে লাগলো। এভাবেই মা আর পিকু তাদের বিয়ে উপলক্ষে অগ্নিদেবতার উপাসনা করতে লাগলো। অঞ্জলি শেষ হলো।
এখন বাকি রইলো শুধু ১ পর্ব মা ও পিকুর বিয়ের
সিঁদুর দান ও ঘোমটা:
বিবাহের মূল অনুষ্ঠানের শেষ রীতি অনুসারে বর কন্যার সিঁথিতে সিঁদুর লেপন করেন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরেন। পিকুর হাতে পুরোহিত মশাই পিকুদের বংশের ঐতিহ্যবাহী সিধুর কৌটো ধরিয়ে দিলো। পিকু এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মা ঘোমটা দিয়ে আছে পেছনে দাড়ানো পিকুর মা আর বৌদি।
সিঁদুর দানের সময় কনের মাথা বরের পরিবারের দেওয়া নতুন শাড়ি দিয়ে ঢাকা থাকে। এটিকে ঘোমটা বা "লজ্জা বস্ত্র " বলা হয়।পিকুদের বাড়ি থেকে দেওয়া লাল পাড়ের সাদা শাড়ি দিয়ে মায়ের মাথা ঢেকে দেয়া হয়েছে। পিকু মায়ের কাপড় টা একটু উপরের দিকে তুলে মায়ের মুসলিম সীঁথিতে লাল রক্তিম সিধুর পড়িয়ে দিলো আমার হিন্দু বন্ধু পঙ্কজ। মায়ের সীঁথিতে সিধুর অনুভব করার সাথে সাথে মা চোখ বুঝে জোড়ে নিঃশ্বাস নিলো আর মায়ের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। মায়ের স্বপ্ন পূরন হলো অবশেষে। সারা বাড়িতে ঢাকঢোল সাঙ বাজতে লাগলো। সব হিন্দু মহিলারা পিকুর মা কাকি বৌদি সহ সবাই উলুউলু দিতে লাগলো। মা এর সীথিতে সিধুর দেয়ার পর আবার লজ্জাবস্ত্র দিয়ে ঠেকে দেয়া হলো। এবার মাকে হাত ধরে পিকু নিয়ে গেলো ফটো শেষন করতে।পিকু আর মা সবার সাথে ছবি তুললো। এরপর কাপল পিক তুলতে লাগলো। আমি গিয়ে দেখলাম বাবা কোথাও নেই। বাবা কে খুজতে খুজতে গিয়ে পেলাম তার ঘরে।গিয়ে দেখি বাবা মায়ের কাপড় বুকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।আমি গিয়ে বাবাকে বুঝিয়ে কান্না থামালাম।বাবাকে বললাম বাবা চলো এখন যেতে হবে মা কে বিদায় দেয়ার সময় হয়ে এলো। সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।
পিকুর মা পিকুর কাছে গিয়ে বললো তোদের ফটোসেশান হলো রে পিকু আমাদের যেতে হবে তো ভোরের প্রথম প্রহরে আমাদের ইমিগ্রেশন পার হতে হবে যে। পিকু এই তো হলো মা। আমরা এসে দেখি বরপক্ষের সবাই অপেক্ষা করছে বিদায়ের। অনেকে গাড়িতে গিয়ে বসেছে। পিকুর মা বললো জয় তোমরা আমাদের বিদায় দাও এবার। আমি হ্যা সেটা তো দিতেই হবে।পিকু আর মা ফটোসেশান শেষ করলো। পিকুর মা বললো নুরজাহান তুমি রত্না কে আর পায়েল (পিকুর বোন) কে নিয়ে তোমার ঘরে গিয়ে দেখো তো তোমার সব কিছু ঠিকঠাক মতো গাড়িতে তুলা হয়েছে কিনা। মা তার ঘরে গিয়ে সব কাপড়চোপড় অন্যান্য সব কিছু লাগেজে ভরে লোক দিয়ে গাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। এরপর তারা আবার নিচে নেমে আসলো। এবার বিদায়ের ক্ষণ চলে এসেছে। বাবা এগিয়ে এসে পিকুকে সবার সাথে এক এক করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। পিকু সবাই কে নমস্কার করছে।সবার শেষে পিকুর সাথে পরিচয় করানো হলো আমার নানী আর দাদী কে। পিকু আর মা দুজন ই তাদের পা ছুয়ে প্রনাম করলো।নানী মা কে পিকুর হাতে তুলে দিয়ে বললো নুরজাহান আমার খুব আদরের মেয়ে তাই ওর কোনো ইচ্ছে আমরা কেউই কোনোদিন অপূর্ণ রাখি নি। আজ পৃথিবীর সকল নিয়ম উপেক্ষা করে আমাদের সবার প্রিয় নুরজাহান কে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি বাবা তুমি ওকে সারাজীবন আগলে রেখো। ওকে তুমি কোনোদিন কষ্ট দিও না। মেয়েটা আমাদের সবাই কে কোনদিন থাকেনি আর আজ সেই মেয়ে নিজের সাজানো গোছানো সংসার স্বামী ছেলেকে রেখে শুধুমাত্র তোমার ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সব ছেড়ে এমনকি যেটা অসম্ভব নিজ ধর্মকে ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম থেকে হিন্দু সনাতনী ধর্মের অনুসারী হয়েছে এতকিছু ত্যাগ করেছে শুধু তোমার জন্য বাকি জীবনটা শুধু তোমার সাথে থাকতে চেয়েছে তোমার সংসার করবে বলে এসব করেছে তাই আমাদের সবার অনুরোধ তুমি কখনো নুরজাহান কে ছুড়ে ফেলে দিও না। মা এসব শুনে ঘোমটার নিচে কান্না করে যাচ্ছে। পিকু মায়ের হাতটা ধরে নানীকে বললো মা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন আমি নুরজাহান কে কোনো কষ্ট দিবো না। নুরজাহান আমার কাছে সব চাইতে সুখে থাকবে। এরপর পিকু বাবার কাছে গিয়ে বললো আঙ্কেল আমাদের অভিশাপ দিবেন না প্লিজ আপনি আমাদের আশীর্বাদ করুন।বাবা কাদতে কাদতে বললো আমি তোমাদের দোয়া করি তোমরা সুখী হও। আমার শুধু একটা অনুরোধ তুমি নুরজাহান কে কোনোদিন কষ্ট দিও না। আমার থেকে বেশি ভালো রেখো নুরজাহান কে।আমি জানি তুমি সেটা পারবা। এবার শেষ নিয়ম পালন করতে হবে মা কে।
কনকাঞ্জলি :
মা সবার থেকে বিদায় নিতে লাগলো।আমাকে বললো বাবু তুই ভালো থাকিস নিজের দিকে খেয়াল রাখিস। তোর বাবা কে তোর হাতে তুলে দিয়ে গেলাম।মা পিকুর হাতে আমার হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো পঙ্কজ আমি জয়কে তোমার হাত তুলে দিলাম আজ থেকে তুমি ওর দ্বিতীয় বাবা।আর জয় আমি জানি পিকু আর তুই একই বয়সি আর তোরা বন্ধু তবুও আজ থেকে এর চেয়ে গভীর সম্পর্কের বাধনে তোরা বেধে গেছিস। তুই আজ থেকে পঙ্কজ কে নিজের বাপের আসনে বসিয়ে নিবি।তুই পঙ্কজ কে আজ থেকে বাবা বলে ডাকবি। মনে রাখিস ও কিন্তু তোর মায়ের স্বামী। আমি ঠিক আছে মা তুমি যেমন চাইবে তাই করবো।
মা এবার দরজার চৌকাঠের সামনে গিয়ে দাড়ালো পেছনে নানী কে দাড় করানো হলো এরপর মা তার পেছনের দিকে কিছু চাল তিনবার কুলা দিয়ে ছুড়ে মারলো সব গিয়ে নানীর আচলে আর গায়ে পড়লো। মা কাদতে কাদতে তার মুখ দিয়ে বললো তোমাদের রিন শোধ করে দিয়ে গেলাম।এভাবেই কনকাঞ্জলি শেষ হলো।
পিকু মায়ের হাত ধরে গাড়িতে উঠতে লাগলো। মা শুধু কাদছে আমি আর বাবা নানী সবাই কাদছি।বাবা বললো জয় তুই ষ্টেশন পর্যন্ত যা তোর মা কে এগিয়ে দিয়ে আয়। এদিকে মা কাদতে কাদতে সেন্স হারিয়ে ফেললো। পিকু মা কে সবার সামনে পাজা কোলে করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলো। আমি ও গাড়ি নিয়ে ওদের পেছনে যেতে লাগলাম।
ষ্টেশনে এসে পৌছালাম। মায়ের এখনো তেমন সেন্স নাই। মা পিকুর বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।
মা নতুন বউ সেজে আমার হিন্দু বন্ধু পঙ্কজ এর সাথে ট্রেনে করে চলে গেল ভারত । মা আমার সাথে কথা বলল না এমনকি খোজ ও নিল না। বলেও গেল না নতুন স্বামী পেয়ে মা একদম মা সব ভুলে গেছে। নতুন সংসার পাততে চলেছে আমার মা ।এসবের স কারন ও যথেষ্ট আছে মা এর তেমন সেন্স নাই সে খুব ক্লান্ত। সারাদিন উপোস আছে ।
মায়ের সাথে কথা হল না।
আমার মাকে বহন কারী ট্রেন টার দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইলাম। ট্রেন টা চলতে চলতে একটু পর আর দেখা যাচ্ছে না। ট্রেনটা যতদূর যাচ্ছে মনে হচ্ছে আমার মা আমার থেকে ততদূরে চলে যাচ্ছে এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। চোখের জল মুছতে মুছতে গাড়ির দিকে রওনা দিবো।
স্টেশন থেকে বাসায় ফিরব ভাবলাম।পথে রাজু ও রমেস এর সাথে দেখা। রাজু ও রমেস আমার বাল্য বন্ধু।ওরা শুনলাম চট্টগ্রাম থেকে ফিরলো ওরা ওখানেই পড়াশোনা করে।রমেস প্রথম কথাতেই বললো
রমেস - কি রে মায়ের বিয়ে একা একা খেয়ে নিলি। দাওয়াত দিলি না।
আমি- আরে বাইরের কাউকে দি নাই রে দোস্ত। আর মায়ের বিয়ে বলে কথা।সবাই কে বলা যায় নাকি।
রাজু- আরে তোর মা ও তো মানুষ বিয়ে করবে না । এতে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।
রমেস- তোর ই কপাল , মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে দেখতে পাইলি।
রাজু - শুনলাম তোর নতুন বাবা নাকি হিন্দু। তোর মা মুসলিম হয়েও হিন্দু কে বিয়ে করল??
আমি- যার সাথে বিয়ে হয়েছে ও মা কে অনেক ভালোবাসে ।আর ও আমার বন্ধু ছিলো।ওরা কি বলিস তাই নাকি বন্ধু হয়ে বন্ধুর মাকেই বিয়ে করে ফেললো বাহ দারুন তো ব্যাপার টা।
রাজু- তাই বলে হিন্দু কে?
রমেস- আরে হিন্দু হয়েছ তো কি হয়েছে?
আমাদের ধর্মের হিন্দু মেয়েরা মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে না।? মুসলিম ও হয়ে যায় ।তাহলে জয় এর মা হিন্দু কে বিয়ে করতে পারবে না কেন?
রাজু- তাও এটা তো পাপ।
আমি- এত পাপ টাপ বুঝি না ভাই। আমি মায়ের সুখ দেখতে চাই।
রমেস - তা তোর মা হিন্দু হবে না মুসলিম থাকবে।
আমি- পঙ্কজ এর পরিবার কট্টর হিন্দু। মাকে মুসলিম থাকতে দিবে না। মা ও থাকবেনা। হিন্দু হয়ে যাবে।অলরেডি মা হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেছে তার নতুন নাম হয়েছে
রাজু- এটা কেমন কথা।
আমি- আরে ধর্ম নিয়ে কি যায় আসে। আমার মা দ্বিতীয় সংসার করতে পারবে এটাই তো আসল।
রমেস- তোর মা ই প্রথম মনে হয় হিন্দু কে বিয়ে করে হিন্দু হচ্ছে।
রাজু- তোর মা তো কিছুদিন দেখতে পারত। তোর বাবা শুনেছি অসুস্থ সে তো সুস্থ হতেও পারে তাই না।
রমেস- তো কি হয়েছে ।ওই বুড়োর সাথে থাকার চেয়ে এটাই ভালো করেছে।ওর বাপের তো বয়স হয়েছে এমনিতেই কিছুদিন পরে মারা যাবে তখন
ওর মা সাদা শাড়ী পরে বিধবা থাকতো এর থেকে এটা ভালো না এখন শাখা সিঁদুর লাল শাড়ি পড়ে সংসার করবে এটাই ভালো।
আমি- আমি আমার মা কে খুব ভালোবাসি। মায়ের সুখ ই আমার জন্য সব।
মা ও আমার নতুন বাবা আসুক তোদের ডাকব বাসায়। এখন যায় রে খুব ক্লান্ত।
বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় একা আমি। বিছানায় শুয়েই মায়ের কথা ভাবছি । এখন মা কি করছে।
তো পড়ে আমি জেনেছি মা কিভাবে গেল এবং নিজের কল্পনায় তা নিজের ভাষায় লিখছি।
ট্রেনে মা পিকুর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কালনা রেলওয়ে স্টেশন এ ট্রেন থামতেই পিকু আমার মাকে
-ও নুরজাহান।উঠো চলে এসেছি আমরা ।
পিকু মায়ের থেকে ১৫ বছরের বয়সে ছোট। সে এখন আমার মা কে বিয়ে করে তুমি বলার অধিকার পেয়ে গেছে। আমার মা এখন পুরোপুরি আমার বন্ধু পঙ্কজ এর । মা আড়মোড়া ভেঙে উঠল। ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ করা হলো সবার।
বিয়েতে যারা এসেছিলো তারা আগেই বডারে আসা পিকুদের পক্ষের মাইক্রোবাস নিয়ে বাসায় রওনা দিল।