- 427
- 395
- 79
চতুস্ত্রিংশতি পর্ব
সুভদ্রা গাড়ীতে বসে কাচ তুলে দিল।ব্যাগ খুলে সিগারেট বের করে ধরিয়ে পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে থাকে। একটু আগের ঘটনায় বিচলিত বোধ করে।মনের মধ্যে নানা ভাবনা কুণ্ডলি পাকাতে থাকে। অনেক আগেই বৈদুর্য সংকেত দিয়েছিল সেই বুঝতে পারে নি।ধীরে ধীরে বৈদুর্যের প্রতি ক্রোধ প্রশমিত হয়।সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে গোদেলিয়েভের প্রতি।চারু বলছিল ম্যাসাজের কথা তার মানে বৈদুর্যকে দিয়ে ম্যাসাজ করায় ভদ্রমহিলা?মি.চ্যাটার্জি বাপির বন্ধু ছিলেন,স্বামী মারা যাবার পর একাকিনী বিদেশিনী দেশ ছেড়ে পড়ে আছেন সেজন্য একটা দুর্বলতা ছিল।এখন রাগে গা জ্বলছে। বয়স তো কম হয়নি তাহলে এত জ্বালা কিসের?এতো এক্সপ্লয়টেশন। আর গাধাটাও হয়েছে তেমনি এই কি তার কাজ নাকি?কতবড় বংশের ছেলে,ওর দাদু ড.মুখার্জিকে আজও শিক্ষাঙ্গণে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। মেয়েদের হোষ্টেলে ফাইফরমাশ খাটছে তার নাতি।মনে পড়ল পরীক্ষা দিয়েছিল,রেজাল্ট বের হয়নি?আচ্ছা মিমি তুমি বৈদুর্যকে নিয়ে একটু বেশি ভাবছো না?কথাটা মনে হতে একটু লজ্জা পায় সুভদ্রা।
যার যা কপালে আছে তাই হবে বয়ে গেছে সুভদ্রা মুখার্জির কারো কথা ভাবতে।দরজা বন্ধ করে কি করছিল ওরা?মাম্মী আর বৈদুর্যকে দেখেছিল একবার।সেই প্রথম আর সেই শেষ।নারী পুরুষের মিলনের কথা শুনেছে দেখেছে ঐ একবারই।ইদানীং বৈদুর্যের মধ্যে লক্ষ্য করেছে একটা চাকরির জন্য অস্থিরতা।তার পিছনে কারণ সম্ভবত এইসব।বৈদুর্যের প্রতি মায়ায় মন আচ্ছাদিত হয়।
গাড়ীর কাচে একটা মুখ উকি দিচ্ছে,ভাল করে দেখে চিনতে পারলো সুভদ্রা,দরজা খুলে আপাদ মস্তক চোখ বুলায়।কেমন সরল নিরীহ চোখ মুখ।জিজ্ঞেস করল,যে যা বলে তুমি তাই করো কেন?
--তুমি ঠিকই বলেছো।আসলে আমি জোর করে কিছু বলতে পারি না।
--কেন তুমি পুরুষ মানুষ না?
--মিমিদি পুরুষ মহিলা না আসলে মনের জোর--তোমার মত মনের জোর ছিল আমার মায়ের।তোমার মত জিদ্দি।
সুভদ্রা হাসি দমন করে জিজ্ঞেস করল,তোমার মা খুব জেদি ছিল?
--ছিল না?শুনেছি আমার দাদু কত নিষেধ করেছিল কিন্তু মা এক কাপড়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
--আমি কি খুব জেদি?
--জেদিই তো,তুমি কারো কথা শোনো?
--ঠিক আছে এবার গাড়ীতে ওঠো।সুভদ্রা হেসে বলল।
--মিমিদি তুমি গোদেলিয়েভের সঙ্গে দেখা করবে না?
--বললাম না ভিতরে এসো।
বৈদুর্য ভিতরে ঢুকে জড়োসড়ো হয়ে বসল।
--পরীক্ষা দিয়েছিলে না?
খবরটা মিমিদিকে আগেই দেওয়া উচিত ছিল,কি বলবে এখন?
সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে,রেজাল্ট বের হয়নি?
রেজাল্ট অনেক আগেই বেরিয়েছে,মিমিদির অফিসে গেছিল বলতে কিন্তু দেখা হয়নি বলে জানাতে পারেনি।সে কথা কি বিশ্বাস করবে?
--কি ধেড়ি্যেছো?পড়াশুনা না করে এইসব করলে ধ্যাড়াবে না তো কি হবে?
বৈদুর্য মিটমিট করে হাসে।
--আবার হাসি হচ্ছে? হাসতে লজ্জা করে না?সারা জীবন মেয়েদের ফাইফরমাস খেটে মরবে--বড় হতে ইচ্ছে করে না?
বৈদুর্যের হাসি বন্ধ হয়ে যায়।তার মায়ের কথা মনে পড়ল,মাও এই কথা বলতো।বাবা লেখাপড়া করে দাদুর মত হতে হবে তোকে।
--কি বলছি কানে যাচ্ছে না?
--মিমিদি আমি পাস করেছি--ডিসটীংশন মার্ক্স পেয়েছি।
সুভদ্রা ঠিক শুনছে তো? অবাক হয়ে পাশে বসে থাকা বৈদুর্যকে দেখল। অভিমান হয় বলে,চোরের মত ওখানে কেন বসে?কাছে এসো।বৈদুর্য কাছে ঘেষে বসতে সুভদ্রা বলল,আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করো নি?
--বিশ্বাস করো মিমিদি আমি তোমাকে বলতে অফিসে গেছিলাম।তুমি গণেশবাবুকে জিজ্ঞেস কোরো।
গনেশ বলছিল কে একজন দেখা করতে এসেছিল।সুভদ্রা আচমকা বৈদুর্যের মাথা টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরল।নরম কোমল ঘামের গন্ধ মাখা বুকে মাথা এলিয়ে দিল বৈদুর্য। আহা! কি শান্তি!
সুভদ্রা মাথাটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল,সোজা হয়ে বোসো।রাস্তায় লোকজন দেখছো না?
--বারে আমি কি করলাম?তুমি শুধূ জেদি না খাম খেয়ালি।
সুভদ্রা গাড়ীতে স্টার্ট দিতে বৈদুর্য বলল,একি আমি আগে নামি?
--নামতে হবে না,চুপ করে বসতে বলেছি।
বৈদুর্য মরীয়া হয়ে বলে,মিমিদি এখন সবার ফেরার সময় হয়ে এল।আমাকে না দেখলে হৈ-চৈ করবে।ওদের জানো না?
--করুক।তুমি তো জানো আমি কেমন জেদি?
--মিমিদি আমার চাকরি থাকবে না।
--অমন চাকরি থাকার থেকে না থাকাই ভাল।বজ্জাত মহিলা।
--তাহলে আমি খাবো কি?করুণ মুখ করে বলে।
গাড়ী চলতে শুরু করেছে।সুভদ্রা বলল,চুপ করে থাকতে বলেছি।গাড়ী চালাবার সময় বকবক করতে নেই।
--তুমি গোদেলিয়েভকে বজ্জাত বললে?জানো মিমিদি মানুষটা বড় দুঃখী।
--খুব দরদ দেখছি গোদেলিয়েভের প্রতি?
--তুমি ভাল করে ভেবে দেখলে বুঝতে পারবে এদেশে মেয়েরা কত অসহায়।
সিগন্যালে গাড়ী দাড়াতে সুভদ্রা আড়চোখে বৈদুর্যকে দেখে। করুণ মুখ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।আবার গাড়ী চলতে শুরু করে।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করলো, কি ভাবছো?আমি খুব খারাপ?
--সত্যি কথা বলবো?
সুভদ্রা ভাবে আবার কি কথা বলতে চায়? বৈদুর্য চুপ করে থাকে,কিছু বলে না।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করল,কি বলবে বলছিলে?
--না থাক,তুমি রাগ করবে।
--ন্যাকামো আমার ভাল লাগে না,যা বলার আছে বলো।
--তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে।তুমি যখন আমাকে বুকের উপর চেপে ধরলে আমার মায়ের কথা মনে পড়ল।
এর মধ্যে মা এল কেন?সুভদ্রা ঘাড় ঘুরিয়ে বৈদুর্যকে দেখে।লাজুক মুখ করে বসে আছে।
--মাকে মনে পড়ল কেন? স্টিয়ারংএ হাত রেখে জিজ্ঞেস করল সুভদ্রা।
--খুব ছোটো বেলায় দেখেছি জানো মিমিদি মা তোমার মত চোটপাট করতো কিন্তু মনটা খুব নরম।
--আমাকে নরম ভেবোনা।
--মা সব সময় তোমার মত বলতো 'পড়-পড়।'
সুভদ্রা অবাক হয়ে বৈদুর্যকে দেখে বয়স হলেও মনটা একেবারে শিশুর মত। জ্যোতস্নায় সমুদ্র যেমন আলোড়িত হয় তেমনি সুভদ্রা অন্তর গভীরে সুপ্ত মাতৃ হৃদয় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। পরনে জামা পায়জামা এলোমেলো চুল কপালে এসে পড়েছে। সুভদ্রা বা-হাত দিয়ে কপালের চুল সরিয়ে দিল। ছলছল করে উঠলো বৈদুর্যের চোখ। গাড়ী ভিআইপি-তে একটা অভিজাত রেডীমেড গারমেণ্ট দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল।
--আমি এখান থেকে হেটে চলে যেতে পারবো। বৈদুর্য মনে করলো মিমিদি তাকে মুক্তি দিল।
সুভদ্রা গাড়ী থেকে নেমে বলল,আমার সঙ্গে চলো।
সুভদ্রা দোকানে ঢুকলো বৈদুর্য তাকে অনুসরণ করে।একজন কর্মচারী এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,বলুন ম্যাডাম?
বৈদুর্যকে দেখিয়ে বলল,এর প্যাণ্ট...।
কথা শেষ হবার আগেই লোকটি ফিতে বের করে বৈদুর্যের কোমরের মাপ নিতে লাগলো।বৈদুর্য অবাক হয়ে মিমিদিকে দেখে।লোকটি চলে যেতে বৈদুর্য ফিসফিস করে বলল,আমার কাছে টাকা নেই কিন্তু।
বৈদুর্যের কথায় কর্ণপাত না করে সুভদ্রা ব্যাগ খুলে পুর্ণবাবুর দেওয়া খাম খুলে গুনে দেখল তিন হাজার টাকা।
বৈদুর্য মরীয়া হয়ে বলল,মিমিদি রাগ কোরো না,আমি নিতে পারবো না।
সুভদ্রা ভ্রু কুচকে তাকালো,বৈদুর্য অপরাধীর মত কাচুমাচু মুখে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। অভিমানের সুরে সুভদ্রা বলল,এই তোমার আমাকে মায়ের মত লাগে?ঠিক আছে, আমারই ভুল হয়েছে।
সুভদ্রা টাকাটা ব্যাগে ভরতে গেলে বৈদুর্য হাত চেপে ধরে বলল,মিমিদি তুমি রাগ করেছো?আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।ত্যোমার যা ইচ্ছে তাই করো।তোমাকে আমি কিছু বলব না।
ইতিমধ্যে কর্মচারিটি কয়েকটা প্যাণ্ট নিয়ে এসে বলল,আসুন স্যার।
সুভদ্রা হেসে বলল,হা-করে দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও ওর সঙ্গে।যেটা পছন্দ সেটা পরে দ্যাখো।
মুচকি হেসে বৈদুর্য বলল,তোমার কোনটা পছন্দ তুমি বলো।
সুভদ্রা প্যাণ্ট গুলো দেখে দুটো পছন্দ করে বলল,এইদুটো পরে দ্যাখো।
একজোড়া প্যাণ্ট শার্ট পছন্দ করে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে গাড়ীতে এসে বসলো। কর্মচারীটি একটা প্যাকেট এনে দিয়ে যেতে সুভদ্রা গাড়ীতে স্টার্ট দিল।গাড়ী ভি আই পি রোড ধরে ছুটে চলল।ভেসে বেড়ানো জীবন কোথায় চলেছে ভাসতে ভাসতে। মিমিদির গম্ভীর মুখ দেখে কিছু বলতে ভরসা পায় না।এই প্যাণ্ট দেখে গোদেলিয়েভ নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে কে দিয়েছে?তাহলে কি বলবে?কতলোক ফুটপাথ ধরে হেটে চলেছে তার মধ্যে গাড়ীতে করে যেতে বেশ ভাল লাগে।কিন্তু এতদুর থেকে ফিরতে হবে ভেবে মনে পড়ল তার পকেটে পয়সা নেই।কথাটা মিমিদিকে বলা দরকার।
সুভদ্রা গাড়ীতে বসে কাচ তুলে দিল।ব্যাগ খুলে সিগারেট বের করে ধরিয়ে পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে থাকে। একটু আগের ঘটনায় বিচলিত বোধ করে।মনের মধ্যে নানা ভাবনা কুণ্ডলি পাকাতে থাকে। অনেক আগেই বৈদুর্য সংকেত দিয়েছিল সেই বুঝতে পারে নি।ধীরে ধীরে বৈদুর্যের প্রতি ক্রোধ প্রশমিত হয়।সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে গোদেলিয়েভের প্রতি।চারু বলছিল ম্যাসাজের কথা তার মানে বৈদুর্যকে দিয়ে ম্যাসাজ করায় ভদ্রমহিলা?মি.চ্যাটার্জি বাপির বন্ধু ছিলেন,স্বামী মারা যাবার পর একাকিনী বিদেশিনী দেশ ছেড়ে পড়ে আছেন সেজন্য একটা দুর্বলতা ছিল।এখন রাগে গা জ্বলছে। বয়স তো কম হয়নি তাহলে এত জ্বালা কিসের?এতো এক্সপ্লয়টেশন। আর গাধাটাও হয়েছে তেমনি এই কি তার কাজ নাকি?কতবড় বংশের ছেলে,ওর দাদু ড.মুখার্জিকে আজও শিক্ষাঙ্গণে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। মেয়েদের হোষ্টেলে ফাইফরমাশ খাটছে তার নাতি।মনে পড়ল পরীক্ষা দিয়েছিল,রেজাল্ট বের হয়নি?আচ্ছা মিমি তুমি বৈদুর্যকে নিয়ে একটু বেশি ভাবছো না?কথাটা মনে হতে একটু লজ্জা পায় সুভদ্রা।
যার যা কপালে আছে তাই হবে বয়ে গেছে সুভদ্রা মুখার্জির কারো কথা ভাবতে।দরজা বন্ধ করে কি করছিল ওরা?মাম্মী আর বৈদুর্যকে দেখেছিল একবার।সেই প্রথম আর সেই শেষ।নারী পুরুষের মিলনের কথা শুনেছে দেখেছে ঐ একবারই।ইদানীং বৈদুর্যের মধ্যে লক্ষ্য করেছে একটা চাকরির জন্য অস্থিরতা।তার পিছনে কারণ সম্ভবত এইসব।বৈদুর্যের প্রতি মায়ায় মন আচ্ছাদিত হয়।
গাড়ীর কাচে একটা মুখ উকি দিচ্ছে,ভাল করে দেখে চিনতে পারলো সুভদ্রা,দরজা খুলে আপাদ মস্তক চোখ বুলায়।কেমন সরল নিরীহ চোখ মুখ।জিজ্ঞেস করল,যে যা বলে তুমি তাই করো কেন?
--তুমি ঠিকই বলেছো।আসলে আমি জোর করে কিছু বলতে পারি না।
--কেন তুমি পুরুষ মানুষ না?
--মিমিদি পুরুষ মহিলা না আসলে মনের জোর--তোমার মত মনের জোর ছিল আমার মায়ের।তোমার মত জিদ্দি।
সুভদ্রা হাসি দমন করে জিজ্ঞেস করল,তোমার মা খুব জেদি ছিল?
--ছিল না?শুনেছি আমার দাদু কত নিষেধ করেছিল কিন্তু মা এক কাপড়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
--আমি কি খুব জেদি?
--জেদিই তো,তুমি কারো কথা শোনো?
--ঠিক আছে এবার গাড়ীতে ওঠো।সুভদ্রা হেসে বলল।
--মিমিদি তুমি গোদেলিয়েভের সঙ্গে দেখা করবে না?
--বললাম না ভিতরে এসো।
বৈদুর্য ভিতরে ঢুকে জড়োসড়ো হয়ে বসল।
--পরীক্ষা দিয়েছিলে না?
খবরটা মিমিদিকে আগেই দেওয়া উচিত ছিল,কি বলবে এখন?
সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে,রেজাল্ট বের হয়নি?
রেজাল্ট অনেক আগেই বেরিয়েছে,মিমিদির অফিসে গেছিল বলতে কিন্তু দেখা হয়নি বলে জানাতে পারেনি।সে কথা কি বিশ্বাস করবে?
--কি ধেড়ি্যেছো?পড়াশুনা না করে এইসব করলে ধ্যাড়াবে না তো কি হবে?
বৈদুর্য মিটমিট করে হাসে।
--আবার হাসি হচ্ছে? হাসতে লজ্জা করে না?সারা জীবন মেয়েদের ফাইফরমাস খেটে মরবে--বড় হতে ইচ্ছে করে না?
বৈদুর্যের হাসি বন্ধ হয়ে যায়।তার মায়ের কথা মনে পড়ল,মাও এই কথা বলতো।বাবা লেখাপড়া করে দাদুর মত হতে হবে তোকে।
--কি বলছি কানে যাচ্ছে না?
--মিমিদি আমি পাস করেছি--ডিসটীংশন মার্ক্স পেয়েছি।
সুভদ্রা ঠিক শুনছে তো? অবাক হয়ে পাশে বসে থাকা বৈদুর্যকে দেখল। অভিমান হয় বলে,চোরের মত ওখানে কেন বসে?কাছে এসো।বৈদুর্য কাছে ঘেষে বসতে সুভদ্রা বলল,আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করো নি?
--বিশ্বাস করো মিমিদি আমি তোমাকে বলতে অফিসে গেছিলাম।তুমি গণেশবাবুকে জিজ্ঞেস কোরো।
গনেশ বলছিল কে একজন দেখা করতে এসেছিল।সুভদ্রা আচমকা বৈদুর্যের মাথা টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরল।নরম কোমল ঘামের গন্ধ মাখা বুকে মাথা এলিয়ে দিল বৈদুর্য। আহা! কি শান্তি!
সুভদ্রা মাথাটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল,সোজা হয়ে বোসো।রাস্তায় লোকজন দেখছো না?
--বারে আমি কি করলাম?তুমি শুধূ জেদি না খাম খেয়ালি।
সুভদ্রা গাড়ীতে স্টার্ট দিতে বৈদুর্য বলল,একি আমি আগে নামি?
--নামতে হবে না,চুপ করে বসতে বলেছি।
বৈদুর্য মরীয়া হয়ে বলে,মিমিদি এখন সবার ফেরার সময় হয়ে এল।আমাকে না দেখলে হৈ-চৈ করবে।ওদের জানো না?
--করুক।তুমি তো জানো আমি কেমন জেদি?
--মিমিদি আমার চাকরি থাকবে না।
--অমন চাকরি থাকার থেকে না থাকাই ভাল।বজ্জাত মহিলা।
--তাহলে আমি খাবো কি?করুণ মুখ করে বলে।
গাড়ী চলতে শুরু করেছে।সুভদ্রা বলল,চুপ করে থাকতে বলেছি।গাড়ী চালাবার সময় বকবক করতে নেই।
--তুমি গোদেলিয়েভকে বজ্জাত বললে?জানো মিমিদি মানুষটা বড় দুঃখী।
--খুব দরদ দেখছি গোদেলিয়েভের প্রতি?
--তুমি ভাল করে ভেবে দেখলে বুঝতে পারবে এদেশে মেয়েরা কত অসহায়।
সিগন্যালে গাড়ী দাড়াতে সুভদ্রা আড়চোখে বৈদুর্যকে দেখে। করুণ মুখ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।আবার গাড়ী চলতে শুরু করে।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করলো, কি ভাবছো?আমি খুব খারাপ?
--সত্যি কথা বলবো?
সুভদ্রা ভাবে আবার কি কথা বলতে চায়? বৈদুর্য চুপ করে থাকে,কিছু বলে না।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করল,কি বলবে বলছিলে?
--না থাক,তুমি রাগ করবে।
--ন্যাকামো আমার ভাল লাগে না,যা বলার আছে বলো।
--তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে।তুমি যখন আমাকে বুকের উপর চেপে ধরলে আমার মায়ের কথা মনে পড়ল।
এর মধ্যে মা এল কেন?সুভদ্রা ঘাড় ঘুরিয়ে বৈদুর্যকে দেখে।লাজুক মুখ করে বসে আছে।
--মাকে মনে পড়ল কেন? স্টিয়ারংএ হাত রেখে জিজ্ঞেস করল সুভদ্রা।
--খুব ছোটো বেলায় দেখেছি জানো মিমিদি মা তোমার মত চোটপাট করতো কিন্তু মনটা খুব নরম।
--আমাকে নরম ভেবোনা।
--মা সব সময় তোমার মত বলতো 'পড়-পড়।'
সুভদ্রা অবাক হয়ে বৈদুর্যকে দেখে বয়স হলেও মনটা একেবারে শিশুর মত। জ্যোতস্নায় সমুদ্র যেমন আলোড়িত হয় তেমনি সুভদ্রা অন্তর গভীরে সুপ্ত মাতৃ হৃদয় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। পরনে জামা পায়জামা এলোমেলো চুল কপালে এসে পড়েছে। সুভদ্রা বা-হাত দিয়ে কপালের চুল সরিয়ে দিল। ছলছল করে উঠলো বৈদুর্যের চোখ। গাড়ী ভিআইপি-তে একটা অভিজাত রেডীমেড গারমেণ্ট দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল।
--আমি এখান থেকে হেটে চলে যেতে পারবো। বৈদুর্য মনে করলো মিমিদি তাকে মুক্তি দিল।
সুভদ্রা গাড়ী থেকে নেমে বলল,আমার সঙ্গে চলো।
সুভদ্রা দোকানে ঢুকলো বৈদুর্য তাকে অনুসরণ করে।একজন কর্মচারী এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,বলুন ম্যাডাম?
বৈদুর্যকে দেখিয়ে বলল,এর প্যাণ্ট...।
কথা শেষ হবার আগেই লোকটি ফিতে বের করে বৈদুর্যের কোমরের মাপ নিতে লাগলো।বৈদুর্য অবাক হয়ে মিমিদিকে দেখে।লোকটি চলে যেতে বৈদুর্য ফিসফিস করে বলল,আমার কাছে টাকা নেই কিন্তু।
বৈদুর্যের কথায় কর্ণপাত না করে সুভদ্রা ব্যাগ খুলে পুর্ণবাবুর দেওয়া খাম খুলে গুনে দেখল তিন হাজার টাকা।
বৈদুর্য মরীয়া হয়ে বলল,মিমিদি রাগ কোরো না,আমি নিতে পারবো না।
সুভদ্রা ভ্রু কুচকে তাকালো,বৈদুর্য অপরাধীর মত কাচুমাচু মুখে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। অভিমানের সুরে সুভদ্রা বলল,এই তোমার আমাকে মায়ের মত লাগে?ঠিক আছে, আমারই ভুল হয়েছে।
সুভদ্রা টাকাটা ব্যাগে ভরতে গেলে বৈদুর্য হাত চেপে ধরে বলল,মিমিদি তুমি রাগ করেছো?আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।ত্যোমার যা ইচ্ছে তাই করো।তোমাকে আমি কিছু বলব না।
ইতিমধ্যে কর্মচারিটি কয়েকটা প্যাণ্ট নিয়ে এসে বলল,আসুন স্যার।
সুভদ্রা হেসে বলল,হা-করে দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও ওর সঙ্গে।যেটা পছন্দ সেটা পরে দ্যাখো।
মুচকি হেসে বৈদুর্য বলল,তোমার কোনটা পছন্দ তুমি বলো।
সুভদ্রা প্যাণ্ট গুলো দেখে দুটো পছন্দ করে বলল,এইদুটো পরে দ্যাখো।
একজোড়া প্যাণ্ট শার্ট পছন্দ করে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে গাড়ীতে এসে বসলো। কর্মচারীটি একটা প্যাকেট এনে দিয়ে যেতে সুভদ্রা গাড়ীতে স্টার্ট দিল।গাড়ী ভি আই পি রোড ধরে ছুটে চলল।ভেসে বেড়ানো জীবন কোথায় চলেছে ভাসতে ভাসতে। মিমিদির গম্ভীর মুখ দেখে কিছু বলতে ভরসা পায় না।এই প্যাণ্ট দেখে গোদেলিয়েভ নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে কে দিয়েছে?তাহলে কি বলবে?কতলোক ফুটপাথ ধরে হেটে চলেছে তার মধ্যে গাড়ীতে করে যেতে বেশ ভাল লাগে।কিন্তু এতদুর থেকে ফিরতে হবে ভেবে মনে পড়ল তার পকেটে পয়সা নেই।কথাটা মিমিদিকে বলা দরকার।