• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery যার যেখানে নিয়তি/ কামদেব

kumdev

Member
435
397
79
সপ্তম পর্ব


সকাল সকাল সাজগোজ করে তৈরী হয়ে নিলাম।ঠিক ছিল আমার সঙ্গে তনিমা যাবে শেষ মুহুর্তে নির্মলা সুন্দরী বললেন,শোনো বউমা তুমি তো আজ রাতে ফিরবে না তনিমা রাতে বাইরে থাকতে পারবে না। তুমি বরং একাই যাও।তনিমার মুখ ভার হল সকাল থেকে কত আশা করছিল বিয়ে বাড়ী যাবে। বিয়ে বাড়ী সবাই ব্যস্ত থাকবে ভাল করে কথা বলা যাবে না।বরং বউভাতের সময় গিয়ে কটাদিন থেকে আসা যাবে।
আমি বললাম,ঠিক আছে আমিও রাতে ফিরে আসবো।তনিমা আমার সঙ্গে যাক।
--দেখো বউমা আমি কিন্তু রাগ করে বলছি না,অতনু নেই তুমি কটাদিন থেকে আসতে পারো।
আমি হেসে বললাম,আমিও রাগ করে বলছি না,আজ রাতেই ফিরে আসবো। কটাদিন থাকা বউভাতের সময় ভাবা যাবে।
শালোয়ার কামিজ পরেছে তনিমা,রাস্তায় নেমে তনিমা আমার কনুই চেপে ইশারা করতে তাকিয়ে দেখলাম উল্টদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে সজল।তনিমা বলল,বলতো এরকম হ্যাংলার মত দাঁড়িয়ে থাকলে ভাল লাগে? তুমি যদি না থাকতে কাছে এসে জিজ্ঞেস করতো,কোথায় যাচ্ছ তনু?
বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য।ছেলেটি নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে এদিকে চোখচুখি হলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অন্যদিকে।একটা মেয়ের মধ্যে কি পায় ছেলেরা, অনেক মেয়ের মধ্যে কেন বেছে নেয় একজনকে?তনিমা যখন পাত্তা দিচ্ছে না আরো তো কত মেয়ে আছে সময় নষ্ট না করে অন্য কোথাও চেষ্টা করতে পারে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,ওকে তোমার ভাল লাগে না?
--ভাল লাগার কথা হচ্ছে না। জানো বৌদি সজলরা ভাড়া বাড়ীতে থাকে।
বাস এসে গেছে উঠে পড়লাম।লেডিস সিটে দুটো ছেলে বসেছিল উঠে দাড়াতে আমরা বসে পড়ি।কাউকে উঠিয়ে নিজে বসতে ভাল লাগে না। ওরা যদি না উঠত আমি বলতাম না,লেডিস সিট উঠূন। তনিমার কথা নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। সজলরা ভাড়া থাকে নিজেদের বাড়ী নেই।একটি ছেলে বা একটি মেয়ের পারিপার্শ্বিক যোগ করে তার মান নির্ধারিত হয়।একটি মেয়ের কোনো ছেলেকে ভাল লাগল যখন জানল তার বাবা ডাক্তার বা আদালতের বিচারক ছেলেটির মান বেড়ে গেল আবার যদি দেখা যায় তার বাবা সাধারণ কেরাণী বা বাজারে মাছ বিক্রি করে তখন মেয়েটির চোখে তার মুল্য হ্রাস পেল।যেখানে বিচারের মাপকাঠিতে স্বার্থ জড়িত তাকে কি প্রেমের সম্পর্ক বলা যায়?
মণিদার বাবার বাজারে দশকর্মার দোকান ছিল সেজন্য কি আমি মণিদাকে অন্য নজরে দেখি?তা কেন বাড়ীর সবাই অবজ্ঞা করত আমিই বরং মণিদাকে কখনো ছোটো মনে করিনি।এখনো মেসেজ করে ইচ্ছে করলে ব্লক করে দিতে পারি কিন্তু করিনি।
তে-রাস্তার মোড়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম।কব্জি ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখলাম,চারটে বেজে গেছে। আমাকে দেখে সবাই হৈ-হৈ করে উঠল,ঐতো মণিমালা এসে গেছে।মা জিজ্ঞেস করল,এত দেরী করলি আমি ভেবেছিলাম সকালে এখানে খাওয়া দাওয়া করবি।তুমি তো অতনুর বোন?চলো উপরে চলো।
বড়দা রেজিষ্ট্রি বিয়ে করেছে,শ্বশুরবাড়ীতে বিধবা মা ছাড়া কেউ নেই সেজন্য আনুষ্ঠানিক ব্যাপারগুলো বাদ দেওয়া হয়ছে। তবে বউভাতের অনুষ্ঠান দুজনেরই হবে।বড়দার ঘরে দেখলাম চুল বেঁধে বসে আছে মৌমিতা বৌদি।বরযাত্রী যাবার জন্য তৈরী।ছোড়দার ঘরে তার বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে।বাবার ঘরে গিয়ে দেখলাম ধোপদুরস্ত ধুতি পাঞ্জাবি পরে বসে আছেন।অন্যদিন শুয়ে থাকেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি,বাবা তুমি যাবে?
বাবা হাসলেন বললেন,তুই এখন এলি ভেবেছিলাম সকালে আসবি।এই শরীরে আর কোথাও যাওয়া হবে না,বাড়ীতে লোকজন আসছে তাই ভদ্রস্থ পোষাক পরেছি।
মা ঢূকে বলল,তুই এখানে? ঐ মেয়েটা নীচে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে,পরের মেয়ে খেয়াল রাখিস।
মা তনিমার কথা বলছে। তনিমার বিচারের মাপকাঠি বেশ শক্ত ওকে নিয়ে কোনো ভয় নেই।উপর থেকে উকি মেরে দেখলাম ছোড়দার বন্ধুদের সঙ্গে গপ্পে মেতেছে।কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরে মনে পড়ল ফাল্গুণী বলেছিল 'তুই এখন এ বাড়ীতে অতিথি।' সেকথা এখন অনুভব করছি,কারো নজর নেই আমার দিকে।যে আসছে সবাই খোজ করছে বড় বৌদির।মা অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত।ভাবলাম মাকে সাহায্য করি,রান্না ঘরে যেতেই মা এমন করে উঠল যেন অনধিকার প্রবশ করেছি।মা বলল,এই কালিঝুলির মধ্যে তুই কি করতে এলি?যা বিশ্রাম করগে।বিয়ে হয়ে আমি পর হয়ে গেলাম? কাজ করিনা বলে আগে মা কত বকাবকি করত,বলতো নিজের সংসার হোক তখন বুঝবে।
ছোড়দাকে নিয়ে বড়দা আর ছোড়দার দুই বন্ধু একটা গাড়ীতে আগে আগে চলে গেল। পুরোহিত মশায়কে ফেলে গেছে বলে তিনি খুব বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বোঝাতে লাগলেন শুভ কাজে পুরোহিতের ভুমিকা কতখানি গুরুত্ব পুর্ণ এসব উপেক্ষা করার জন্য যত অনাসৃষ্টি কাণ্ড ঘটছে।আমার বিয়ের সময় কনে বউ হয়ে শেখানো মন্ত্র বলছিলাম তখন পুরোহিত মশায়কে যথযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়ছিল কি না জানা নেই।কিছু অনাসৃষ্টি কি ঘটেছে? শোরগোল পড়ে গেল বাস এসে গেছে।এবার পুরোহিত মশায় আগেভাগে গিয়ে জানলার ধারে বসলেন। তনিমা কোথায় বাসে উঠে দেখলাম ছোড়দার বন্ধুদের সঙ্গে মধ্যমণি হয়ে বসে আছে।ওর কোনো অসুবিধে হচ্ছ কিনা কিসে সুবিধে হয় তা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তনিমাও জারিয়ে জারিয়ে তাদের সেবা উপভোগ করছে। ডাকতে গিয়েও ডাকলাম না,আনন্দ করতে এসেছে আনন্দ করুক।ছল ছুতোয় কেউ কেউ গায়ে হাত দিচ্ছে,দেবেই সেবা কেন কোনো কিছুই মাগনায় পাওয়া যায় না। ফাল্গুণীদের বাড়ি বেশিদুর নয়,পৌছাতে বেশিক্ষণ লাগল না।
বাস থেকে নেমে মজা করে তনিমাকে বললাম,কে ভাড়াটে কে বাড়ীওলা তোমার কিছু জানা নেই।
তনিমা হেসে বলল,ধ্যেত তুমি না...আমি কি প্রেম করতে এসেছি নাকি?
খুজে খুজে বের করলাম ফাল্গুণী কোথায়।নাকে নথ পরিয়েছে বেশ লাগছে দেখতে।পাশে দাঁড়িয়ে একভদ্রমহিলা ফাল্গুণীর হাত থেকে উপহারগূলো নিয়ে গুছিয়ে রাখছে।আমি ওর পাশে দাড়ালাম। এক ভদ্রমহিলা হাসতে হাসতে এসে একটা শাড়ী ফাল্গুণীর হাতে দিলেন।
আমি সাহায্য করার জন্য হাত বাড়াতে শাড়ীটা সরিয়ে নিয়ে এমনভাবে তাকালো আমার দিকে আমি হাত সরিয়ে নিলাম। আমরা এক কলেজে পড়তাম পরস্পর বন্ধু ছিলাম একী সেই ফাল্গুণী?চোখের জল সামলে ধীরে ধীরে সেখান থেকে সরে এলাম।
UM58E0D-kv8VkkHosn9VMk8XKOJWfm9pGT3L5PVt-w6MfcOyfOXOF2hopFCNZw9qWFYkdWAGBY1cwKOPrksFLFPDR23jFiwjxZ5t195-QPOnsun0ozCFY_MWRj7Rc481ji2RRHe_FqrnKGpj4gjlzaIIpSe68QsY=s0-d-e1-ft

ছোড়দা বিয়ের পিড়িতে বসে,সবাই টুসিকে ধরাধরি করে ছাদনাতলায় নিয়ে গেল।কেউ আমাকে দেখছে না।মনে পড়ল আমাদের বাড়ী ফিরতে হবে বেশি রাত করা যাবে না।এদিক-ওদিক খুজে বের করলাম তনিমাকে।বিরক্ত হয়ে তনিমা বলল,এখনই?
--বেশি রাত হলে বাস পাওয়া যাবে না।
অনিচ্ছে সত্বেও তনিমা আমার সঙ্গে খেতে বসল। আমি একমাত্র বোন নিজের দাদার বিয়েতে এসেছি বলে মনে হল না। কেমন অনাহুত যেন খাবার জন্য এসেছি। তনিমার কোনো হেলদোল নেই,ওকে খাওয়াবার জন্য কয়েকটি ছেলে খুব ব্যস্ত।একজন বলল,এত তাড়াতাড়ি বসে পড়লেন?
--বাড়ী ফিরতে হবে। তনিমা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল।
--আপনার মোবাইল ফোন নেই?
--এবার ভাবছি কিনতে হবে।তনিমাটা হাদা নয় বুঝতে পারলাম।বেমালুম মিথ্যে বলে দিল।
খাওয়ার পর দেখলাম একটি ছেলে খামে মোড়া পান তনিমার হাতে দিয়ে ফিস ফিস করে বলল, মোবাইল নম্বর লেখা আছে।
তনিমা পান বের করে খামটা বুকে ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমরা সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে থাকি। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করছে না,কিরে চলে যাছিস থাকবি না? অভিমাণ হল।রাস্তায় কয়েকটা গাড়ী দাঁড়িয়ে কয়েকজন লোক। চমকে উঠলাম,মন না?অবাক হয়ে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পরনে জিন্সের প্যাণ্ট ছাপা টি-শারট।মুখে কোনো কথা নেই জিজ্ঞেস করি,তুমি এখানে?
নিরুত্তর মন।হেসে বললাম,ভুত দেখলে নাকি?
--উম হু,সম্বিত ফেরে বলে,ভুত না পেত্নী।কোথায় যাচ্ছো?
--বাড়ি যেতে হবে না?
--দাদার বিয়ে এখনই চলে যাবে?
চোখের জল সামলে ওর দিকে তা্কিয়ে হাসলাম।একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ীর দরজা খুলে বলল,ওঠো।
উঠবো কি উঠবো না স্থির করার আগেই তনিমা উঠে বসে ডাকল,এসো বৌদি।
মন তুমি খুব চালাক আমি উঠলেই তুমি আমার পাশে বসবে।আমি উঠে দরজা ঘেষে বসলাম যাতে পাশে বসতে না পারে। মন বলল,একটু ভিতরে ঢুকে বোসো।
--কেন?
--দরজা বন্ধ করলে তোমার লাগবে।
আমি সরে বসতেই ধুম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভারকে বলল, মেমেসাবকে বাড়ী পৌছে দিয়ে আসুন।
আমি জানলা দিয়ে হাত বের করে বললাম,বাই।
মন এগিয়ে এসে খপ করে হাত চেপে ধরে হাতের তালুতে চকাম করে চুমু খেল।পাশে তাকিয়ে দেখলাম অন্য জানলা দিয়ে হাত বের করে তনিমা অন্যদের টাটা করছে।মুখে হাসি মন হাত নাড়ছে।হাতটা মুখের কাছে নিয়ে যেখানে চুমু দিয়েছে সেখানে ঠোট রাখলাম।অসভ্য কোথাকার,আমি এখন পরস্ত্রী। তনিমা দেখলে কি ভাবতো? পিছনে হেলান দিয়ে বসলাম।একটু আগে বিয়ে বাড়ীর সব অনাদর অবজ্ঞা গ্লানি এক চুমুতে ধুয়ে মুছে সাফ।খুব হালকা লাগছে।
তনিমা ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে,উনি কে?
ড্রাইভার বলল,ম্যানিজার সাহিব।
--আপনাকে 'আপনি-আপনি' বলছিলেন?
--উনি সবাইকে বলেন।
--কোথাকার ম্যানেজার?
--টিসিএস।
তনিমাটা এত বকবক করে,ভাল লাগে না। তনিমা বলল,টিসিএস? আপনি অতনু চক্রবর্তিকে চেনেন?
--সবাইকে চিনি,আজই তো দেখা হল।
-- না না উনি এখন এ্যামেরিকায় আছেন।
--কত অতনু কাজ করে কজনকে চিনবো বলুন?
তনিমা দমে গেল।গাড়ী ফাকা রাস্তা পেয়ে ছুটে চলেছে।তনিমা আমাকে জিজ্ঞেস করল,বৌদি ওনাকে কিভাবে চিনলে?
--ছোড়দার বন্ধু।
--বেশ জলি ছেলেটা।
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বুজে থাকি।আমার বিয়েতে নেমন্তন্ন করেনি সমু নিজের বিয়েতে বলেছে। মন তখন ছিল বেকার এখন বড় চাকুরে।এটাই কি মানুষের আইডেন্টিটি?
কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ীর নীচে এসে গেল গাড়ী বললাম, ড্রাইভারসাহেব এখানে থামুন।
উপরে ঊঠতে নির্মলা সুন্দরী বললেন,যাক তোমরা এসেছো?
তনিমা বলল,মা আমাদের গাড়ী পৌছে দিয়ে গেল।নির্মলা সুন্দরী বললেন,তোমার কাছে কেউ শুনতে চেয়েছে। যাও শুয়ে পড়ো।
অনেকদিন পর অপ্রত্যাশিত ভাবে মনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।বেশ হ্যাণ্ডসাম দেখতে হয়েছে।লাইফ স্টাইল একেবারে বদলে গেছে।হাতের তালু চোখের সামনে মেলে ধরে দেখতে থাকি এইখানে মনের ঠোটের স্পর্শ লেগে আছে। একটা কথা মনে হল পাড়াতেই থাকে বরযত্রীর গাড়ীতে না এসে নিজে গাড়ী নিয়ে এল কেন?অন্যদের থেকে স্বাতন্ত্র রক্ষা করতে চায়?পয়সা বদলে দেয় মানুষের মন।
 
Last edited:
  • Like
Reactions: Cute pie

kumdev

Member
435
397
79


অষ্টম পর্ব


আজ বউভাত।জানলার ধারে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত মানুষের পথ চলা দেখছি। বাড়িতে দু-দুটো বউ সেখানেও ব্যস্ততা কিছুটা অন্য রকম।একদিন যে বাড়ীর সঙ্গে ছিল ওতপ্রোত সম্পর্ক বিয়ের পর সে বাড়ী আজ আর পাঁচটা বাড়ীর মত ধরাছোয়ার বাইরে।ইচ্ছে হলেই যে কোনো ঘরে আমি ঢুকতে পারবো না।সময়মতো চা পাইনি বলে চোটপাট করতে পারবো না। ফাল্গুণী চাকরি করে না মৌমিতা চাকরি করে কিন্তু একজায়গায় দুজনে এক। ডান হাত উল্টে দেখলাম মন এখানে ঠোট রেখেছিল।মাথায় খালি দুষ্টু বুদ্ধি। কাল রাতে মেসেজ আসেনি। এভাবে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে মেসেজ আসা।দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ চলে গেল একদিন ফিরে আসবে অতনু।সেই এক ঘেয়ে জীবনযাপন।দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এল।
সকাল থেকে এ বাড়ীতে অশান্তি। পশুপতি শাড়ী কিনে এনেছেন।দুটো শাড়ী একই রকম। নির্মলাসুন্দরী বেকে বসেছেন তিনি যাবেন না,শরীর ভাল নেই।তনিমা হতাশ কত আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল সবার সঙ্গে দেখা হবে আবার।সেই ছেলেটা যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিল।বৌদি বলছিল ছেলেটার নাম মণিশঙ্কর,দাদা নিশ্চয়ই চিনবে। তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। বোউদির সঙ্গে কথা বলার আছিলায় তার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে ছিল। ভেবেছিল বৌদি আলাপ করিয়ে দেবে। বৌদির উপরু খুব রাগ হয়।একটা কথা মনে পড়তে হাসি পেল,বৌদি বলল ভুত মণিশঙ্কর ভুল ধরিয়ে দিল মেয়েরা ভুত নয় পেত্নী হয়। ভুত হয় ছেলেরা।সজলকে এখনই বাতিল করার দরকার নেই,বেশি প্রশ্রয় না দিলেই হল।
পশুপতি বউকে বোঝায়,দেখো কুটুম বলে কথা তুমি না গেলে ভাল দেখায় না। বউমার যাওয়া আর তোমার যাওয়া কি এক হল?
--দেখো আমাকে জ্বালাতন কোর নাতো?আমি কি বেড়াতে যাচ্ছি?বিয়ে বাড়ী যেমন তেমন গিয়ে হাজির হলেই হল?বউমা শোনো।
আমি বেরিয়ে সামনে গিয়ে দাড়াতে নির্মলা সুন্দরী বললেন,তুমি বলছিলে না কদিন গিয়ে থাকবে?
--আমি একা যাবো না।
--অতনু নেই কে তোমায় নিয়ে যাবে বাছা?তুমি বলবে শাশুড়ীর শরীর ভাল না--।
--আমার শরীর ভাল না মা।
--তোমার আবার কি হল দিব্যি তো চরে বেড়াচ্ছিলে? তুমি কি আমাকে জব্দ করতে চাও?
--আমার শরীরের সঙ্গে আপনার জব্দ হওয়ার কি হল?
--মুখে মুখে তর্ক করবে না বলে দিচ্ছি।পদ্ম ঠিকই বলেছিল মেনিমুখোরা তলে তলে বেশি শয়তান।
--বাইরের লোকের সঙ্গে বাড়ীর বউকে নিয়ে কথা বলতে লজ্জা করল না?
--ব-উ-মা।পশুপতি গর্জে উঠলেন।তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছো তখন থেকে লক্ষ্য করছি।যাও ঘরে যাও,তোমাদের কাউকে যেতে হবে না।
--আমি কি বাড়াবাড়ি করলাম? মা-ই তো বললেন আমাকে নিয়ে ওনার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন।
--আমাকে ঘাটিও না বলছি,পরশু রাতে যে পৌছে দিল ছেলেটি কে?
--বাবা ছেলেটা আমাদের সঙ্গে আসেনি।তনিমা বলল।
--তুমি চুপ করো।বড়দের মধ্যে কথা বলতে আসবে না।
আমি আর দাড়ালাম না,এরা খুব নোংরা যত কথা বলবো তত ক্লেদ উঠবে।বন্ধু,কিসের বন্ধু যদি না দেখতাম। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে কোথায় রামায়ণ মহাভারত পড়বে তা না লুকিয়ে লুকিয়ে পর্ণোগ্রাফির বই পড়ে।ঘরে এসে বালিশে মুখ গুজে কেঁদে ফেললাম।
বাপের বাড়ী শ্বশুরবাড়ী কোনোটাই আজ নিজের বলে মনে হচ্ছে না।গভীর অন্ধকারে জোনাকির মত মিট মিট করে জ্বলছে একটি মুখ,অবজ্ঞা অবহেলায় আজও অম্লান। তাতেই আরো বেশি রাগ হয়, একটু মান-অপমান বোধও কি থাকতে নেই?কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যে বেলা। নির্মলা সুন্দরী বললেন,ভাত ঢাকা আছে খেয়ে নেও।
--আমার ক্ষিধে নেই।
--কি ব্যাপার বলতো?তোমার মতলবটা কি কোন রাগের প্রতিশোধ নিতে চাও বউমা?
--দোহাই আপনার,বিশ্বাস করুন আপনাদের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।
নির্মলা সুন্দরী দমে গেলেন কি ভেবে যাবার আগে বললেন,শোনো বউমা তুমি শান্তিতে থাকো তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই শুধু একটা অনুরোধ নিজে যা করে বেড়াও আমার মেয়েটাকে তার সঙ্গে জড়িও না।
নির্মলাসুন্দরী চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে ভাবি কি সব বলে গেলেন উনি? তনিমাকে কিসের সঙ্গে জড়ালাম আমি? আমার বিয়ের আগে থেকেই সজলের সঙ্গে তনিমার আলাপ।খাটের উপর পড়ে থাকা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ বক্স খুললাম। নতুন কোনো মেসেজ নেই।রাত বাড়তে থাকে সবাই ব্যস্ত বিয়ে বাড়ীতে হয়তো,ফাল্গুণী আর মৌমিতাকে সাজিয়ে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে।একে একে এসে তুলে দিচ্ছে তাদের হাতে উপহার।খুব অভিমাণ হয় কারো কি একবারও মনে হল না বাড়ীর একমাত্র মেয়ে মণিমালা বিয়েতে আসেনি। কেন এলনা গুরুতর কিছু ঘটতেও তো পারে। ফোন করে খবর নেবার প্রয়োজন বোধ করল না কেউ? ছোড়দা বড়দা বউ পেয়ে সব ভুলে গেছে? না,কারো মনে রাখার দরকার নেই আমিও আর কাউকে মনে করতে চাইনে। যা আছে আমার কপালে তাই হবে। উঠে রান্না ঘরে গিয়ে চা করছি নির্মলা সুন্দরী এসে জিজ্ঞেস করলেন,এত রাতে চা করছো,এ বেলাও কিছু খাবে না নাকি?
--আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না মা।
--ঠিক আছে ইচ্ছে না করলে থাক।খালি চা খেও না সঙ্গে মুড়ি বা বিস্কিট কিছু খেও।
শাশুড়ির সদয় ব্যবহার ভাল লাগে,জিজ্ঞেস করলাম,আপনি চা খাবেন?
--আমি? আচ্ছা দাও।কিছুক্ষণ পর চিন্তিত ভাবে জিজ্ঞেস করেন,আচ্ছা বউমা মেয়েটা এখনো ফিরল না কোথায় যেতে পারে বলতে পারো?
--তনিমা আপনাকে বলে যায় নি?
--আমাকে কি কিছু বলে,সারাক্ষণ মোবাইল কানে কি যে বকবক করে কার সঙ্গে কে জানে। অতনুকে পইপই করে বলেছিলাম ওকে ঐসব দেওয়ার দরকার নেই তা কেউ শোনে আমার কথা?
শাশুড়ীর প্রতি মায়া হয় বললাম,চিন্তা করবেন না এখুনি চলে আসবে।বাস ট্রামের যা অবস্থা।
--চিন্তা করছি না, কি জানো ছেলেদের গায়ে না পড়লেও মেয়েদের গায়ে ছাপ পড়ে যায়।
নির্মলাসুন্দরীকে এককাপ চা দিয়ে একটা বাটিতে মুড়ি আর চা নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম।মুড়ি চিবোতে চিবোতে ভাবতে থাকি ছাপ পড়ে ঠিকই আবার ছাপ তোলার নানা ওষুধ বেরিয়েছে বাজারে। পরক্ষণেই মনে পড়ল সঞ্চিতাদির কথা ,আমার দুসম্পর্কের দিদি।বিয়ের পর গর্ভবতী হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় চেক-আপের জন্য।তখন নাকি ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করেছিলেন,আগের সন্তান এ্যাবর্শন করিয়েছিলেন না নষ্ট হয়ে গেছিল?ব্যাস আসল ব্যাপার ফাঁস হতেই পত্রপাঠ বউকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়ি।সঞ্চিতাদি বাপের বাড়ীতে পুত্র সন্তান প্রসব করে।খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা সে যাত্রা ক্ষমা করে দিয়ে সঞ্চিতাদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
একেই বলে ভাগ্য,ছাপ বাইরে মোছা গেলেও ভিতরে থেকে যায়।আমার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রেগন্যান্সি হয়নি তার আগেই রোধ করা হয়েছিল। মুখটা মনে পড়ল, মন তখন পাগল হয়ে গেছিল। মুড়ি চিবোতে বেশ লাগছে।তনিমা কোথায় গেল?সজলের সঙ্গে যায় নি তো?তনিমা আসল কথা জানে না,ওর ধারণা ওকে দেখেই মন এগিয়ে এসেছিল।ব্যাপারটা ভাবতে বেশ মজা লাগে।কত বয়স হবে তনিমার? খুব কম হলেও তিন-চার বছরের ছোট হবে আমার থেকে?
তনিমার গলা পাচ্ছে,মনে হচ্ছে তনিমা ফিরেছে।জোরে জোরে কথা বলেছে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি ঘর থেকে।আমি শুয়েই থাকলাম। শাশুড়ী বলছেন,কি হল আবার?এবাড়ীতে দেখছি সবার ক্ষিধেতে অরুচি?
--জানো মা বৌদির বাপের বাড়ী হেভি সাজিয়েছে।
--তুই কি করে জানলি?
--ওদিকে একটা কাজে গেছিলাম দূর থেকে দেখলাম।
--একা একা অতদুর গেছিলি না আর কেউ সঙ্গে ছিল?
--কে আবার সঙ্গে থাকবে?তোমার যত বাজে কথা।বৌদি কি ঘুমিয়ে পড়েছে?
--জানিনা বাপু আজ সারাদিন কিছু খেল না,খানিক আগে চা করে নিয়ে গেল। অল্প একটু খা।
--ঠিক আছে খুব অল্প দেবে।কিছুক্ষণ নীরবতা শাশুড়ি সম্ভবত ভাত আনতে গেলেন।তনিমার গলা পাওয়া গেল,জানো মা দাদার অফিসের ম্যানেজার বৌদির দাদার বন্ধু।
--আগে তো শুনিনি,তুই এত খবর কোথায় পাস?
--আগে ইনফোসিসে ছিল,ইনফোসিস থেকে মোটা মাইনের অফার দিয়ে ওদের ব্যাঙ্গালোর অফিসের জন্য ডাকছে। কেন যাচ্ছে না জানো হি-হি-হি।
--এর মধ্যে হাসির কি হল?
--ফিঁয়াসেকে ছেড়ে যাবে না হি-হি-হি।
--সে আবার কি?
--লভার,লভার এখানে থাকে তাই ব্যাঙ্গালোর যাবে না।
খেয়েদেয়ে তনিমা দরজা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,বৌদি ঘুমিয়ে পড়েছো?
তনিমা যা বলল সত্যিই কি অতনুর অফিসের ম্যানেজার? আমি সাড়া দিলাম না,রাত দুপুরে গপ্প করার মত মেজাজ আমার নেই।তনিমা এত কথা জানলো কি করে? কে ওকে এত খবর দিল? মনের সত্যিই কি কোনো প্রেমিকা আছে? বন্দনাকেও বলেছিল এ কথা।যদি সত্যিই কোনো প্রেমিকা থাকে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মোবাইলে টুং করে শব্দ হল। অনেকদিন বাঁচবে মন। মেসেজ খুলে দেখলাম,আজ কেন এলেনা?
যাক একজন তবু যাইনি বলে খবর নিল। পরমুহুর্তে প্রেমিকার কথা ভেবে পটপট টাইপ করি,তুমি কেন মেসেজ করো?মাথার বালিশের কাছে ফোন রেখে গায়ে চাদর টেনে শুয়ে পড়লাম।টুং করে শব্দ হল,আবার কে? মেসেজ খুলে চোখের সামনে ধরলাম,আনন্দ পাই।সেদিন দুটো কথা বলে একটু ছুয়ে কি আনন্দ পেয়েছি তুমি জানোনা।
owGFisFylULN4dpTkPzKnwbxT6NWSviD9bFEs4Hl24Yvp3MOB5xkIY_eK-parZ6tpt3W-afoPdXh3zDKXJuiTzR54YsptReeKsPZ0YKJRxujv1qsXO18vjmByD1NZL0H4IocEV3Afn0zdwZiNGpNk_3A7X6YJIWG=s0-d-e1-ft

মোবাইল হাতে ধরে ভাবছি, দুটো কথা বলেই আনন্দ আর কিছু চাই না?আমি আবার টাইপ করি,কথা বলতে ইচ্ছে হলে ফোন করতে পারো।সেণ্ড বাটন টিপে দিয়ে মনে হল এটা কি ঠিক করলাম? ফোন বেজে উঠল খাল কেটে আমিই কুমীর ডেকে আনলাম। তাড়াতাড়ি ফোন কানে দিয়ে বলি,এত রাতে কি ব্যাপার?
--মণি অনেক রাত অবধি তোমার জন্য বিয়েবাড়ীতে ছিলাম,তুমি এলে না কেন?কোনো সমস্যা?
আমি কথা বলতে পারি না চোখ ঝাপসা হয়ে এল। আবার বলল,মণি চুপ করে থেকো না,কি হয়েছে আমাকে বলো।
--মন আমি ভাল নে-ই।গলা ধরে আসে।
--বুঝেছি তোমাকে আর বলতে হবে না। মণি তুমি কাল তোমাদের বাড়ীর কাছে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পার্কে এসো,আমি তোমাকে নিজের চোখে একবার না দেখলে শান্তি পাবো না।
আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি বললাম,ফুচকা খাওয়াতে হবে।
মনের সঙ্গে এইটুকু কথা বলে বেশ হালকা বোধ হচ্ছে।সকাল থেকে বহন করছিলাম একটা দম চাপা কষ্ট,বুকে কফ জমলে যেমন হয় এখন সহজে নিশ্বাস নিতে পারছি। নিজেকে আর একা অসহায় বোধ হচ্ছে না।প্রেমিকার জন্য ব্যঙ্গালোর যাচ্ছে না জিজ্ঞেস করতে হবে কে সেই প্রেমিকা যার জন্য মোটা মাইনের অফার উড়িয়ে দিয়েছে।খালি চ্যাংড়ামি।আচ্ছা যদি বলে,আছে একজন প্রেমিকা?তাতে কি আমার মন খারাপ হবে? কেন মন খারাপের কি আছে বিয়ে করবে না চিরকাল আমাকে মেসেজ করে যাবে?আমি জিজ্ঞেস করবো,তকে বিয়ে করছে না কেন? চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে,ডুবে যায় নিবিড় অন্ধকারে।
 

kumdev

Member
435
397
79


নবম পর্ব


ঘুম ভাঙ্গল একটু বেলা করে,যেন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম।কালকের রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করি। বিশ্বাস করতে পারিনা যা যা ঘটেছিল।ফোনে কথা বলেছি কতকাল পরে।আজ দেশবন্ধু পার্কে দেখা করার কথা।শাশুড়ী চা দিতে এলেন।আমি বললাম,আমাকে ডাকলেই পারতেন।
--তুমি কি এ জগতে ছিলে যে ডাকবো? কি কুম্ভকর্ণ ঘুমরে বাবা। আমি ডাকছি তনিমা ডাকছে ঘুম ভাঙ্গলে তো,অতনু ফোন করেছিল কতক্ষণ কথা বলল।
--অতনু ফোন করেছিল? কখন?
--এখন এ্যামেরিকায় গভীর রাত্রি।ফোন করেছিল তখন প্রায় পৌনে একটা।
শাশুড়ী এমনভাব করছে যেন এ্যামেরিকার সব কিছু তার নখদর্পণে।গরবিনী গলায় নির্মলা সুন্দরী বললেন,সবার জন্য গিফট কিনেছে।আর তো মোটে পাঁচটা মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে।আবার কে ফোন করল?শাশুড়ী ফোন ধরতে গেলেন।
শাশুড়ীর গলার স্বর মুহুর্তে বদলে গেল,আমি আপনাকে ফোন করবো ভাবছিলাম।..বউমার শরীর এমন খারাপ ফেলে যেতেও পারি না আবার...কি আর করবেন কপালে না থাকলে যা হয়..এখন ভাল আছে..কাল আবার আপনার জামাই ফোন করেছিল...কি আর বলবে দুঃখ করছিল থাকতে পারল না বলে...যাক ভালোয় ভালোয় মিটেছে এই শান্তি..আছা রাখছি?
মনে হচ্ছে আমাদের বাড়ী থেকে ফোন এসেছে। নির্মলাসুন্দরী বেমালুম মিথ্যে বলে গেলেন,গলা একটুও কাপলো না।আমাকে একবার দিতে পারতেন,দেবেন কেন মিথ্যের জাল যদি ছিড়ে যায়।বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করলাম ঘরে ফিরে দেখি তনিমা বসে আছে।শাশুড়ি বলছিলেন মেয়েটাকে যেন না জড়াই।বেশি প্রশ্রয় না দেওয়াই ভাল।কোথায় কি করে বসবে দোষ হবে আমার?
তনিমা আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,বৌদি তোমাকে হেববি দেখতে লাগছে।শিশির সিক্ত ফুলের মত।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম চুলে জলকণা চিক চিক করছে শিশির সিক্ত সম্ভবত সেই জন্য।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,কোথায় গেছিলে কাল?তোমার মা চিন্তা করছিলেন।
--ছাড়ো তো মার কথা।মার ধারণা আমি বুঝি সজলের সঙ্গে প্রেম করছি।আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি এখানে ছিপ ফেলে লাভ নেই।অন্য পুকুর দেখো।কি বলে জানো?হি-হি-হি ছেলেগুলো এমন ক্যালানে হয় বিরক্তিকর।
আমি উচ্চবাচ্য করিনা।তনিমা বলল,ভয় দেখায় আত্মহত্যা করবে।ওইসব দেবদাসী নাটকে তনিমা চক্কোত্তি ভুলছে না।
মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল,তুমি কি অন্য কাউকে পেয়েছো নাকি?
--এই তো বোউদি তুমিও মায়ের মত বলছো। কাউকে যদি নাও পাই তবু ওই সজল পাগলাকে পাত্তা দেবো ভেবেছো?
কদিন আগে যার চেষ্টা ছিল যেন তাকে কেউ অপমান না করে আজ সে সজল পাগলা? এই পরিবর্তনের পিছনে মনে হয় কিছু কারণ আছে।বয়স কম হলে বোঝানো যেত কয়েক বছরের ছোট আমার থেকে,বোঝাতে গেলে আমাকেই দু-কথা শুনিয়ে দেবে।বুঝতে পারি না আজ আমার ঘরে কি মনে করে?
--তোমার মা ফোন করেছিল।পা দোলাতে দোলাতে বলল তনিমা। আগড়ুম বাগড়ুম বলে মা ম্যানেজ করে দিয়েছে। গলার স্বর বদলে জিজ্ঞেস করে তনিমা,আচ্ছা বৌদি কাল যে তোমার যাওয়া হল না,খারাপ লাগেনি?
--যা খারাপ তা আমি মনে রাখি না।
--কত লোক আত্মীয় স্বজন এসেছিল সবার সঙ্গে দেখা হত--তোমার ছোড়দার সব বন্ধুদের তুমি চেনো?
মনে হচ্ছে তনিমা এবার আসল কথায় আসছে বললাম,কি করে চিনবো? মণিশঙ্করের কম্পিউটার ছিল না তাই ছোড়দার কম্পিউটারে এ্যাসাইনমেণ্ট ইত্যাদি করতে আমাদের বাড়ীতে আসতো তাই চিনি।
--অ।তনিমা হতাশ হল।বিয়ের দিন যারা তোমাদের বাড়ীতে এসেছিল তুমি তাদের কাউকে চেনো না?
--তুমি যাদের কথা বলছো ওদের কি করে চিনবো? ওরা ছোড়দার অফিস কলিগ।এসব জিজ্ঞেস করছো কেন বলতো?
--কেন জিজ্ঞেস করছি বলবো?তুমি কিছু মনে করবে নাতো?হাসতে হাসতে বলল তনিমা।
মেয়েটাকে যেমন ভেবেছিলাম তা নয় বেশ চালু আছে বললাম,তুমি কেন জিজ্ঞেস করছো বলবে তাতে আমি রাগ করবো কেন?
--ওদের মধ্যে কজন দারুণ স্মার্ট ছেলে ছিল এখন বুঝতে পারছি কেন তোমার সঙ্গে প্রেম হয় নি।
বুঝতে পারলাম কথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তনিমা রাণী নিজেকে চালাক ভাবতে চাও ভাবো কিন্তু তোমার বৌদিকে অত বোকা ভেবো না। তনিমার চোখে মুখে দুষ্টু হাসির ঝিলিক,বৌদি একটা সত্যি কথা বলবে?
কি জিজ্ঞেস করবে তনিমা? কাল রাতে শাশুড়ীর সঙ্গে অনেক কথা বলছিল সে সব তথ্য কে ওকে যোগান দিয়েছে জানি না।আমার সম্পর্কে নতুন কিছু জেনেছে নাকি? মন আগে এক অফিসে ছিল এখন অতনুর অফিসে এসেছে আমিই জানতাম না।ছোড়দা বলেছিল ভাল চাকরি পেয়েছে ঐ অবধি কোথায় কি চাকরি সে সব কিছু বলে নি।আমিও জানতে চাই নি,আর জেনেই বা কি লাভ?
--কি বৌদি ভয় পেয়ে গেলে? তনিমার চোখে এমনভাব যেন কি এক গুপ্ত রহস্য উন্মোচন করেছে।
--তোমাকে একটা কথা বলতে পারি জীবনে এমন কিছু করিনি যার জন্য আমি অনুতপ্ত।
তনিমা আমার কথা কি বুঝল জানি না বলল,তুমি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো বৌদি,আমি তা বলিনি।
--তুমি কিছুই বলোনি,আমি বলতে চাই জীবনকে আমি তোমার মত করে দেখি না।
তনিমা গম্ভীর হয়ে যায় বলে,বুঝেছি তুমি বলতে চাইছো সজলকে নিয়ে আমি খেলা করেছি।তুমিও কি জোর দিয়ে বলতে পারো,বিয়ের আগে তুমি কারো সঙ্গে প্রেম করো নি? কথাগুলো বলে গভীর আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে শোনার জন্য আমি স্বীকার করি কি না বা অন্য কোনো যুক্তি খাড়া করে বিষয়টা এড়িয়ে যাই।
অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু সে সব কথা তনিমাকে বলা কতটা সমীচীন দ্বিধা হয়।কেন না কথা বলে একজন কিন্ত যে শোনে নিজের মত অর্থ করে নেয়। কিন্তু ও যেভাবে তাকিয়ে আছে সহজে ছেড়ে দেবে না আমাকে তাই বললাম,শোনো তনিমা 'প্রেম' শব্দটা তুমি যে ভাবে চেনো আমি সেভাবে চিনতাম না।
--মানে? তুমি বলতে চাও প্রেমের বিভিন্ন রকম অর্থ?
আমি হাসলাম এই আশঙ্কাই করেছিলাম বলবো এক বুঝবে আর।তুমি আপেল খাও কামড় দেবার পর বুঝতে পারো আপেলটা খেতে কেমন কারণ আপেলের স্বাদ সম্পর্কে তোমার একটা ধারণা আছে কিন্তু প্রকৃতির উদ্যানে আপেল দেখে আদম-ইভ যখন আপেলে কামড় দিল অনুভব করেছিল অনাস্বাদিত আনন্দ, তাদের মধ্যে এনেছিল অভিনব রূপান্তর।
--দারুন বলেছো বৌদি।তনিমা উচ্ছসিত।
--সচেতনভাবে পরিকল্পনা করে ছক কষে কারো সঙ্গে প্রেম করার কথা ভাবিনি।কিন্তু কারো ব্যবহার কারো সাহচর্য কখনো আমাকে আবেগ তাড়িত করেনি বললে সেটা হবে মিথ্যাচার।সেই আবেগ সেই অনুভুতি আজও আমার অন্তরের মণিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত,সম্ভবত যতদিন বাঁচবো থাকবে অমলিন।
--বৌদি তুমি আমার চেয়ে ক-বছরের বড় জানি না কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছে তোমার পায়ের ধুলো নিই।
--চ্যাংড়ামো হচ্ছে?
--আর একটা প্রশ্ন প্লিজ বৌদি এটাই শেষ, ধরো যদি সেই প্রেমিক তোমাকে ছেড়ে যদি অন্য কাউকে ভালবাসে এই হারানোর বেদনা তোমাকে যন্ত্রণা দেবে না?
--হারালাম কোথায়?পুরানো আনন্দানুভুতি তো সম্পদ হয়ে আমার কাছে গচ্ছিত,কেড়ে নেবে সাধ্য কার?
গপ্প করতে করতে অনেক বেলা হয়ে গেল।মনে পড়ল বিকেলে মনের সঙ্গে দেখা হবার কথা। খেয়েদেয়ে ছোটো করে একটা ঘুম দিতে হবে।বাথরুমে গিয়ে সাবান মেখে শরীরের মালিন্য যতদুর সম্ভব সাফ করলাম।সমস্ত শরীর তন্ন তন্ন করে দেখতে থাকি--উন্নত বক্ষ ক্ষীণ কোটি পুরুষ্ট যোণী উত্তল নিতম্ব।
মন বিশ্বাস করো সেদিনের জন্য আমি তোমাকে দায়ী করিনি।সেদিন যা ঘটেছিল তা অনিবার্য,যখন মেলে ধরলাম নিজেকে তুমি যদি উপেক্ষা করতে সে হত আমার চরম অপমান নারীত্ব হত কলঙ্কিত,আমার অঞ্জলিকে সাদরে গ্রহণ করে আমাকে সম্মানিত করেছিলে বরং সেদিন যদি কিছু না ঘটলেই তা হত আমার পক্ষে মর্যাদাহানিকর।কোনোদিন তোমার দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারতাম না।
বিকেল বেলা আমাকে সাজগোজ করতে দেখে তনিমা বলল,বৌদি কোথাও বের হচ্ছো?
হালকাভাবে বললাম,ঘরে বসে বোর হয়ে যাচ্ছি যাই একটু পার্কের দিকে।মুটিয়ে যাচ্ছি একটু হাটাচলা করা দরকার।
--দেশবন্ধু পার্ক?চলো আমিও যাই ভাল্লাগে না ঘরে বসে থাকতে।
আশঙ্কাটা ছিল না তা নয় কিন্তু যদি আপত্তি করি সন্দেহ আরো বাড়বে বললা,তোমার বাবা কিন্তু পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।
--হ্যা হ্যা দেখেছি রিটায়ারড ক্লাব।হেসে বলল তনিমা।
অগত্যা তনিমাকে সঙ্গে নিয়ে হাটতে লাগলাম।তনিমা চেনে মনকে,কি করব ভাবছি।ফিরে যাব? ঘড়িতে পাঁচটা কুড়ি।তনিমার মধ্যে কেমন অস্থির ভাব।এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।পার্কে গেটের কাছে আসতে তনিমা বলল,বোউদি তুমি ফুচকা অলার কাছে দাঁড়াও আমি একটা জিনিস কিনে আসছি।তনিমা আরজিকর রোডের দিকে
চলে গেল।যাক ভাল হয়েছে এখন মন আসলে হয়।চমকে উঠলাম ফুচকা অলার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে মন।জিজ্ঞেস করলাম,কতক্ষণ?
--অনেক্ষণ ঐ গাড়ীর মধ্যে বসে ছিলাম তোমাকে আসতে দেখে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।সঙ্গে লেজুড় কেন?
মনের কথা শুনে হাসি পেলেও হাসলাম না বললাম,আনবো কেন নিজেই এসেছে।
খুব অস্বস্তি লাগছে যখন মণিদা-মণিদা করতাম তখন এমন হত না।ওর দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,বলো কেন আসতে বলেছো?
--তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হল,কতদিন দেখিনি তাই।
--ফুচকা খাওয়াবে না?
মন একটা একশো টাকার নোট ফুচকাঅলাকে দিয়ে বলল,মেমসাবকে ফুচকা দেও।
--বেশি করে ঝাল দেবে।আমি বললাম।
শালপাতার ঠোঙ্গা করে আমাকে দিল মনকে দিতে গেলে বলল,আমি না।
--তুমি খাবে না? আমি একা খাবো?
--তুমি খেলেই আমার তৃপ্তি।
ObOHnGHxzNg5YPIOKPPif2XwiPCKQDyMjGoGPTZG6lWAtPEG6O4NrbOO3u7mPB-x3Hxxfvw7MQhCOdLqkyy1EhskWO7IEg7_j6VzBAMEGkymugrShfEuk5GQHrhv=s0-d-e1-ft
--আহা ঢং।অনেকদিন পর ফুচকা খাচ্ছি ,কলেজের দিনগুলো মনে পড়ছে।ফুচকাওলা তেতুল গোলা জল ভরে ফুচকা ঠোঙ্গায় দিতে আমি মুখ তুলে হা-করে ফুচকাটা জিভের উপর রেখেছি মন অমনি মুখ থেকে ফুচকাটা টুপ করে তুলে নিজের মুখে পুরে দিল। ফুচকাওলা ফিক করে হাসল।ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে থমকে গেলেও সামলে নিয়ে বললাম,এটা কি হল?
--বলেছিলাম তুমি খেলেই আমার খাওয়া হয় তাই দেখিয়ে দিলাম।
--মুখ থেকে নিলে আমার যদি কোনো রোগ থাকে?
--মণি আমি তোমার সব নিতে চাই।তোমার রোগ শোক ভাল মন্দ আনন্দ বেদনা সব।
চোখে জল চলে এল বললাম,তুমি কি আমাকে কাঁদাতে এসেছো?
--রাতে ফোন করবো।ভাই বাকী পয়সা মেমসাবকে দিয়ে দিও। চলে গেল মন।
তনিমা হাপাতে হাপাতে এসে হাজির,একি বৌদি তুমি শুরু করে দিয়েছো?
বুঝতে পারি মন কেন চলে গেল।তনিমাকে বললাম, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?আমি ভাবলাম তুমি বুঝি আর আসবে না।তুমি কি কিনতে গেছিলে কিনেছো?
--কি কিনবো?
--ঐ যে বললে কি কেনার আছে।
--ও; হ্যা,দোকানটা আজ খোলেনি।বৌদি তুমি কটা খেলে?
--তোমার যে কটা খেতে ইচ্ছে হয় খাও।
--পাঁচটা?
--যা ইচ্ছে।
--ঠিক আছ দশটা?এই দশটা আমাকে দাও।আমার কাছে পয়সা নেই কিন্তু।
ফুচকাওলা দিতে থাকে ,খেতে খেতে তনিমা বলল,এইবার মনে পড়েছে।
আমি হাতের ফুচকা মুখে পুরে তনিমার দিকে তাকাই।তনিমা বলল,জানো বৌদি কোথায় দেখেছি কোথায় দেখেছি কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। তোমার ছোড়দার বন্ধু মণিশঙ্কর বাবুকে দেখলাম,নীল টি-শার্ট রাস্তার ধারে একটা গাড়ীতে উঠল।
--তুমি কথা বললে না কেন?
--দূর থেকে দেখেছি তার আগেই গাড়ী ছেড়ে দিল।
ভাগ্যিস আমাদের একসঙ্গে দেখেনি। ফুচকাওলা আমাকে চুরানব্বই টাকা ফেরত দিল।আমি বুঝতে পারলাম কৌশল করে মন আমাকে হাত খরচা দিয়ে গেল।
তনিমা বলল,বৌদি ঐ দেখো শুড্ডাদের ক্লাব।
মাঠের অন্যপ্রান্তে দূরে একটা বেঞ্চে কয়েকজন বয়স্ক লোক বসে কারো হাতে লাঠি।তনিমাটা ভীষণ ফাজিল বললাম,ওর মধ্যে তোমার বাবাও তো আছেন।
--বাবা কি শুড্ডা নয়?
--ছিঃ এভাবে কেউ বলে?
--অন্যের বাবাকে শুড্ডা বলা যাবে?দেখো বৌদি শুড্ডা ইজ শুড্ডা সে যার বাবাই হোক।
আমিও তো আজকালকার মেয়ে কিন্তু তনিমার মত এভাবে কথা বলতে পারিনা।মনের সঙ্গে আরও কিছু সময় থাকার ইচ্ছে ছিল তনিমার জন্য হলনা। অতদূর হতে গাড়ী নিয়ে এসে অপেক্ষা করছিল বেশি কথা নয় বা একটু ছোয়া নয় এক পলক দেখেই আশ মিটে গেল?কেমন অদ্ভুত লাগে।বিয়েতে আসেনি অথচ বাড়ীর কাছেই পার্ক সব খবর রাখে।মনে মনে হাসি পেল।
তনিমাকে দেখে অবাক হই ওতো চুপচাপ করে থাকা মেয়ে নয় জিজ্ঞেস করি কি ভাবছো?
--ভাবছি ভুল দেখলাম নাতো?
--কেন এরকম মনে হচ্ছে?
--ওর তো আরজি করের দিকে যাবার কথা মাণিকতলার দিকে গেল কেন?
--তাহলে দেখো কাকে দেখতে কাকে দেখেছো?
--আমার মনে হয় এখন বাড়ী ফিরছে না হয়তো কোনো কাজে ওদিকে গেল।
মনকে নিয়ে ও এত চিন্তা করছে কেন?মনে কোনো স্বপ্ন বাসা বাধেনি তো?সজলদের বাড়ি নেই মনেরও বাড়ী নেই বস্তিতে থাকে।অবশ্য মন অনেক হ্যাণ্ডসাম।আচ্ছা সজল কি বেকার তনিমাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি।
 

kumdev

Member
435
397
79
দশম পর্ব

রাতে খেতে বসে কথাটা তুললেন আমার শ্বশুর পশুপতি, বৌমা আজ পার্কে গেছিলে? আমি কিছু বলার আগেই জবাব দিল তনিমা,হ্যা বাবা পার্কে গিয়ে ফুচকা খেলাম,বৌদি খাওয়ালো।
পশুপতির মুখে বিরক্তি এ ব্যাপারে মেয়ের কথা বলায় বললেন,তুমি ছিলে? তোমাকে তো দেখিনি।আমার যেন মনে হল একটা ছেলে--তবে কি আমি ভুল দেখলাম?
নির্মলা সুন্দরী বললেন,তোমাকে হাজারদিন ধরে বলছি চোখটা দেখিয়ে চশমার পাওয়ার বদলাও। কে শোনে সে কথা।
--আমার সঙ্গে কমলবাবু ছিলেন উনিই আমাকে দেখালেন--।কথা শেষ না করে পশুপতি নীরবে খেতে থাকেন। নির্মলা সুন্দরী চশমা বদলের কথা বললেও লক্ষ্য করলাম ওর সন্দিহান দৃষ্টি আমার দিকে।
ওরাই আলোচনা সেরে ফেলল আমাকে কিছু বলতে হলনা।বুঝতে পারলাম পশুপতি মনকে দেখেছেন।কিন্তু কখন দেখলেন?উনি কি আমার পরে পার্কে গেছিলেন? আমার মুখ থেকে ফুচকা তুলে নেওয়া দেখেন নি তো?খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম,দরজা বন্ধ না করে ভেজিয়ে রাখলাম।আমার মনে হল পশুপতির দম শেষ হয়নি আমি উঠলেই আবার শুরু করবেন,কান খাড়া রাখলাম।
নির্মলা সুন্দরী বললেন,কি হল কি ভাবছো বলতো?শরীর খারাপ লাগছে?
পশুপতি গলা নামিয়ে বললেন,তুমি বৌমার দিকে একটু নজর রেখো।হুটহুাট করে বেরিয়ে যায়।
--তুমি মেয়েটার দিকে একটু লক্ষ্য রাখো,আমি বলে দিয়েছি বৌমা তুমি ওকে জড়িও না।
কারো অবর্তমানে কাউকে নিয়ে আলোচনা আমার অপছন্দ। আমাকে নিয়ে আলোচনা করছে সন্দিহান চোখে দেখছে সর্বক্ষণ এই রকম একটা পরিবেশ কতখানি দুর্বিষহ অবস্থায় না পড়লে কেউ বুঝতে পারবে না।পার্কে গিয়ে ফুচকা খেয়েছি--হ্যা পাশে মন ছিল তাতে কি হয়েছে? মনের জায়গায় অন্য খদ্দেরও থাকতে পারতো? আমাকে স্পর্শ করেনি বা এমন কথা বলেনি যা অন্য মহিলাকে বলা উচিত নয়।একটা ফুচকা আলগোছে মুখ থেকে তুলে নিয়েছে।নিতেই পারে,ফুচকার দাম ঐ দিয়েছে,আমি ভেবে পাই না কি এমন হল যাতে ফিসফিস করে আলোচনা করতে হবে?চেপে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
বেশ ছিলাম পুরানো অস্বস্তিটা ফিরে এসেছে আবার। ভাল লাগেনা কোনো কিছু কেন ভাল লাগে না বুঝতে পারি না। অতনু নেই বলে কি মন খারাপ? যখন ছিল তখনও এই রকম একটা হতাশার ভাব আমাকে ঘিরে থাকতো মায়ের কথা মনে পড়ছে,ছোড়দা ফাল্গুণীকে নিয়ে কি করছে এখন?মোবাইলটা নিয়ে মেসেজ বক্স খু্ললাম,নতুন কোনো মেসেজ নেই। মাথার কাছে রেখে শুয়ে পড়লাম।সবাই মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে,কোনো সাড়া শব্দ নেই।চোখ বুজে শুয়ে আছি ঘুম আসছে না। শোঁ-শোঁ নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি। মনের সম্পর্কে এত খবর তনিমা জানল কি করে? আর কি জেনেছে,আমার বিয়ের আগের কথা জানতে চাইছিল কেন?মনে হচ্ছে মোবাইল বাজছে,হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে নিয়ে কানে ধরে বললাম, হ্যালো?
--যাক তাহলে ঘুমিয়ে পড়োনি?
--ও মন?এত রাতে কি ব্যাপার?
--আগে করতাম,ভাবলাম তুমি কথা বলতে পারবে কিনা?
--আজ পার্কে শ্বশুর মশায় মনে হয় আমাদের দেখেছেন।
--কি করে বুঝলে?
--সে অনেক কথা পরে বলবো এখন বলো কি জন্য ফোন করেছো?
--মণি তুমি কেমন আছো?
কি বলবো ভাল আছি?সত্যিই কি আমি ভাল আছি?
--মণি তুমি কথা বলছো না কেন?
--আমি ভাল নেই মন।একদম ভাল নেই।
--কেন কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে?মণিশঙ্করের গলায় উদবেগ।
--কিছু হয়নি,কেউ কিছু বলেনি তবু--তবু আমার কিছু ভাল লাগছে না।
--বুঝেছি।
--তুমি কি ভাবছো আমি ইয়ার্কি করছি?
--না না মণি আমি তা বলিনি--আমার মনে হয় দ্বন্দ্ব মানে অন্ত্রর্দ্বন্দ্ব এর কারণ?
--তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
--সহজ করে বলি,মণি তোমার মনের দ্বিধা--একদিকে তোমার মায়ের ইচ্ছে আবার তোমার নিজের ইচ্ছে এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব।তুমি তোমার মায়ের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিলে অবদমিত সুপ্ত ইচ্ছে তোমাকে ক্ষত বিক্ষত করছে।
--হি-হি-হি।তুমি মনস্তাত্ত্বিক নাকি?
--তুমি হাসবে আমি জানতাম এটাই তোমার আসল কারণ,তুমি অশান্তি এড়িয়ে যাবার জন্য সত্যকে হেসে উড়িয়ে দিতে চাও।
বাইরে যেন কিসের শব্দ হল?বললাম,মন একমিনিট ধরো।পা টিপে টিপে দরজার কাছে গিয়ে শব্দ না করে ছিটকিনিটা নামিয়ে দরজা খুলতেই দেখি শায়া ব্লাউজ পরে দাঁড়িয়ে নির্মলা সুন্দরী।মনে হচ্ছে এইমাত্র চুদিয়ে এলেন। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি? কিছু বলবেন?
--না না বাথরুমে এসেছিলাম।আমতা আমতা করে বললেন শাশুড়ী।
--বাথরুম ঐ দিকে।
--হ্যা ঘুম চোখে বুঝতে পারিনি।তুমি ঘুমাও।
দরজা বন্ধ করে ফোন ধরে জিজ্ঞেস করি,মন তুমি আছো?
--হ্যা হ্যা মণি,তুমি কোথায় গেছিলে?
--তোমাকে বলছিলাম না আমি ভাল নেই?এইমাত্র শাশুড়ী দরজায় আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলেন।
--মণি এটা তোমার ভাল না থাকার কারণ নয়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা বাড়ীর বউ পার্কে অন্য লোকের সঙ্গে ঘুরবে কার ভাল লাগে বলো?তোমার রোগের কারণ অন্যত্র।
--আমার যা হবার তাই হবে এবার তুমি একটা কথা বলতো? তুমি সবাইকে বলো একটা মেয়ে তোমাকে ভালবাসে--কথাটা কি সত্যি?
--আমি মিথ্যে বলিনা।
মন খারাপ হয়ে গেল,ভেবেছিলাম বলবে মজা করে বলেছি।কথাটা মিথ্যে নয়? তাহলে এত রাতে আমাকে জ্বালানো কেন,তাকেই ফোন করতে পারত। ফোন কেটে দেব কিনা ভাবছি,মন জিজ্ঞেস করল,জিজ্ঞেস করলে না তো মেয়েটা কে?
--তুমি কি ভেবেছো এ কথা শুনে আমি ভেঙ্গে পড়বো? তুমি মণিমালাকে চিনতে পারোনি।
--শোনো মণি আমার সব কথা না শুনে তুমি ফোনটা রেখে দিও না। মেয়েটার বাড়ীর লোক সন্দেহবশে তাড়াতাড়ি মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিল অন্য ছেলের সঙ্গে।
--মেয়েটা রাজি হয়ে গেল?এ কেমন ভালবাসা?আপদ গেছে ভাল হয়েছে।তাহলে যা শুনেছে মিথ্যে নয়? আজ থাক পরে শুনবো তোমার প্রেম কাহিনী,রাখছি?
--শুভরাত্রি।

শুভরাত্রি বলে আমি রেখে দিলাম ফোন। মনকে একটি মেয়ে ভালবাসতো আমি জানতাম না। কে হতে পারে? তার নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি,মেজাজটা এমন বিগড়ে গেল।বললে হত প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে,বড় চাকরি পেয়ে গেছো,এবার বাউণ্ডেলের মত ঘুরে না বেড়িয়ে বিয়ে করে ফেলো।পরের বউয়ের পিছনে ঘুর ঘুর করে মিথ্যে সময় নষ্ট করার কি দরকার?কি বলছিল মন,দু-টো বিপরীত ইচ্ছের দ্বন্দ?
সকালবেলায় ঘুম ভাঙ্গলো মনটা ঝরঝরে।ব্রাশ করে চা নিয়ে বসেছি নির্মলা সুন্দরী কার সঙ্গে কথা বলছেন ফোনে ডাকলেন,বউমা ফোনে কথা বলো।
--হ্যালো?মা কেমন আছো?...আমি? মনে পড়ল শাশুড়ী বলেছিলেন, আমার শরীর ভাল নয় বললাম,এখন ভাল আছি। বাবা কেমন আছেন?...একরকম মানে ডাক্তার দেখাছে না?...এত ব্যস্ত সবাই?...অতনুর ফিরতে আরো মাস পাঁচেক....ফোন করেছিল তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম...আচ্ছা রাখি?
ফোন রেখে দেখলাম শাশুড়ী আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তারপর নিজের মনে বললেন,বিয়ের পর মেয়েরা আর বংশের কেউ নয়। ঘরে ঢুকে এলাম।বেশ সুন্দর ছিল সকালটা আবার যেন মলিন মেঘে ছেয়ে গেল।মন বলছিল আমার অবস্থার জন্য নাকি আমিই দায়ী। কথাগুলো অর্থহীন হলেও কেন ঘুরে ফিরে আসছে আমার মনে?
রোজ রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে মন ফোন করে।কতকথা হয় এলোমেলো অর্থহীন তবু শুনতে ভাল লাগে।ক্রমশ যেন নেশার মত হয়ে যায় বিছানায় শুয়ে থাকি অধীর প্রতীক্ষায় কখন বেজে উঠবে মোবাইল?একদিন মন বলছিল,মণি অশান্তি থেকে দূরে সরে গেলে শান্তি পাওয়া যায় না বরং অশান্তি আরো পেয়ে বসে।মুখোমুখি দাড়াও দেখবে যত ভয়ংকর মনে হয়েছিল অশান্তিকে সে তা নয় পালাবার পথ পাবে না।
সকাল হতেই শুরু হল অশান্তি। শ্বশুর মশায়কে চা দিয়ে চলে আসছি ডাকলেন,বউমা শোনো।
আমি দাড়ালাম কি বলবেন উনি?
--কাল রাতে ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
আড়ি পেতে শুনেছে বুঝলাম বললাম,ফোনে কথা বলা কি অপরাধ?শাশুড়ী মা কথা বলেন তনিমা কথা বলে আমি তো জিজ্ঞেস করিনি?
--তর্ক কোর না।বাড়ীতে তুমি কি করতে সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাইনা কিন্তু এখানে আমার ইচ্ছে তুমি ফোনে আর কথা বলবে না।
--আপনার ইচ্ছে?আমার ইচ্ছের কোনো মুল্য নেই? কার কার ইচ্ছে মেনে আমাকে চলতে হবে এ বাড়ীতে?
--বউমা।গর্জে উঠলেন শাশুড়ি,তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো ভুলে যেও না।বাড়ীর বাইরে যেতে গেলে জিজ্ঞেস করে যেতে হবে। এ বাড়ীর নিয়ম।
ঘরে এসে কাদলাম।আমার ইচ্ছেতে কান্নায় কেউ বাঁধা দেবে না নিশ্চয়ই।রাতে ফোন বাজতে কেটে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠোল,আবার কেটে দিলাম। তন্দ্রামত এসেছিল আবার ফোন বেজে উঠল,বিরক্ত হয়ে বললাম,আমাকে আর ফোন করবে না।কেন ফোন করো?
--একটা জরুরী কথা কাল একবার পার্কে এসো।
--আমার সময় হবে না। ফোন কেটে দিলাম।
সবাই খুশি সবার ইচ্ছে মত চলছি এ বাড়ীর নিয়ম ভাঙ্গছি না। আর কারো কিছু বলার নেই,মন বলছিল ওরা যে ব্যবহার করছে সেটা স্বাভাবিক।জরুরী কি কথা বলছিল শোনা উচিত ছিল।একটু বেশী রূঢ় ব্যবহার হয়ে গেল।মন তো কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি কার উপর রাগ কার উপরে ঝাড়লাম।মন ঠিকই বলেছিল আমি নিজের ভুলের জন্য নিজে ভুগছি।সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখা যায়?

 

kumdev

Member
435
397
79


একাদশ পর্ব



আমি এখন পিঞ্জিরাবদ্ধ পাখি।সবার ইচ্ছেতে চলতে হবে আমাকে আমার কোনো ইচ্ছে নেই।নিজেদের মেয়ে সারাদিন টো-টো করে চরে বেড়াচ্ছে তাতে দোষ নেই যত জুলুম পরের মেয়ের প্রতি।তনিমা এখন আমার জানলা,ওর মাধ্যমে দেখতে হয় বাইরের দুনিয়া।নানা খবর দেয় আমাকে। সকালে বুঝতে পারিনি কিন্তু বেলা যত বাড়তে থাকে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ আমাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরে।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে মনে হল কিছু একটা করতে হবে।
সাড়ে পাঁচটা বাজে এতক্ষণে মন নিশ্চয়ই হতাশ হয়ে চলে গেছে।শাড়ী পরলাম চুলে চিরুণী বোলালাম,একটু যাই পার্কে খানিক হেটে চলে আসবো।ঘর থেকে বেরিয়েছি নির্মলা সুন্দরীর গলা,কোথায় যাচ্ছো বউমা?
--একটু কাজ আছে।
--জানতে চাইছি কি কাজ?
--আমার মোবাইলে ব্যালান্স শেষ হয়ে গেছে টপআপ ভরতে হবে।
--ঠীক আছে তনিমা আসুক ওকে বোলো।
--ও কখন আসবে আমার এখনই দরকার। আর কি বলে শোনার অপেক্ষা না করেই সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলাম।
সহ্যের একটা সীমা থাকে। আমি কচি খুকি নই। হাটতে হাটতে এগোতে থাকি দেশবন্ধু পার্কের গেটের কাছে গিয়ে দেখলাম একটু দূরে গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে মন। গা জ্বলে গেল ভাবছে আমি ওর কথায় এসেছি। কড়া করে শুনিয়ে দেবার জন্য ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। গাড়ীর কাছে যেতে দরজা খুলে বলল,ওঠো।
মানেটা কি ও বললেই উঠতে হবে আমার ইচ্ছের কোনো দাম নেই? রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করতে চাই না আমি গাড়ীতে উঠে বসলাম।মন গাড়ীতে উঠতে গাড়ী ছেড়ে দিল। আমি অবাক হয়ে বলি,একি কোথায় যাচ্ছি? মন মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলল।মামার বাড়ী নাকি? ড্রাইভারের সামনে কিছু বললাম না। কিছটা গিয়ে গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়তে মন বলল,শিউজি আপনি নাস্তা পানি করে আসুন।আমরা একটু কথা বলছি।
মন বলেছিল জরুরী কি কথা বলবে,সত্যিই কি কিছু কথা আছে?নাকি ছুতো করে ডেকে আনা?
--মণি বিশ্বাস করো তোমাকে দারুণ দেখতে লাগছে।মন বলল।
--ওসব বাজে কথা রাখো,জরুরী কি কথা বলবে বলেছিলে?
--তার আগে বলো তোমার কাজ ছিল তবু তুমি এলে যে?
--তোমার কথায় আসিনি,আমি নিজের ইচ্ছেতে এসেছি।
--বুঝলাম আমি তোমাকে কাধে করে আনিনি আমার ইচ্ছেতে আসোনি কিন্তু আমার কাছে এসেছো।
আমি ডান পা সিটে রেখে ওর দিকে ঘুরে বসে বললাম,তুমি কি বলবে বলেছিলে সেটা শুনতে এসেছি তোমার সঙ্গে গল্প করতে আসিনি।
মণিশঙ্কর বা-পা তুলে আমার মুখোমুখি হয়ে বলল,মণি তুমি কি বদলাবে না?
--কত বদলাবো যে যা বলেছে তাই শুনেছি আর কত করবো?আমি ফুপিয়ে কেঁদে ফেললাম। মনে আমার মাথা বুকে চেপে শান্ত করতে লাগল।একটু পরেই নিজের বোকামী বুঝতে পেরে চোখ মুছে বললাম,সত্যিই কি তোমার কোনো জরুরী কথা আছে?
--আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি?
--তুমি এখন সিগারেট খাও? এখন ধরাও কিন্তু আমার দিব্যি রইল বেশি সিগারেট খাবে না।
মণিশঙ্কর সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলল,বিয়ের দিন সঙ্গে ছিল সে তোমার ননদ?
--হ্যা তনিমা আমার ছোট ননদ,কেন?
--একটি ছেলে নাম শুভদীপ একটা কল সেণ্টারে চাকরি করে।ছেলেটি ভাল নয়।
--ভাল নয় মানে?
--তোমার ছোড়দা চেনে ওর বিয়েতে এসেছিল।ফোনের মারফত মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নানাভাবে ভুলিয়ে শারীরি সম্পর্ক শুধু নয় ছবি তুলে ব্লাকমেল করে।তোমার ননদকে প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা যায়।
এবার জলের মত পরিস্কার কেন সজলকে আর পছন্দ নয়। বৌদির বিয়ের আগের কথা জানার এত কেন কৌতুহল? কি করে তনিমার কথা শাশুড়ীকে বলবো,কেউ কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? মনকে জিজ্ঞেস করি,আচ্ছা মন ওই যে শুভদীপ না কি সে কি আমার সম্পর্কে কিছু জানে?
--কি জানবে?জানার আছেই বা কি? আমার হাত ধরে নিজের বুকে চেপে বলল,একটা ব্যাপার সে আমার এখানে চাপা আছে।যেদিন আমাকে দাহ করা হবে সেদিন ছাই হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে শিউরে উঠলাম বললাম,আজেবাজে কথা বললে আমি এক্ষুণি নেমে যাবো।
মন আমার হাটূ চেপে ধরে বলল,স্যরি আর বলবো না।
আমার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি এল জিজ্ঞেস করলাম,মন সেই মেয়েটার কথা বল একসময় যে তোমাকে ভালবাসতো।
মন চুপ করে থাকে জিজ্ঞেস করলাম,কি ব্যাপার বলো,তুমি নাকি মিথ্যে বলোনা?
--ভাবছি।
--কিভাবে বানাবে তাই ভবছো?
--তা নয় কোথা থেকে শুরু করবো সেটা ভাবছি।
--একেবারে প্রথম থেকে কিছু বাদ দেবে না।
মন আমার দিকে তাকিয়ে সরলভাবে হেসে বলল,তোমাকে বলতে লজ্জা নেই,তুমি আবার কাউকে বলে দিওনা।
মনে মনে ভাবি কে না কে, জনে জনে তার কথা বলতে বয়ে গেছে আমার।আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি।
--মণি তুমি তো আমার অবস্থা জানো কিন্তু ওদের বাড়ীর অবস্থা সোশ্যাল স্টাটাস আমাদের থেকে উপরে।আমরা তে-রাস্তার মোড়ে আড্ডা দিতাম।আর মেয়েটি রোজ ভোরবেলা ঐখান দিয়ে বইয়ের গোছা বুকে চেপে স্কুলে যেত।লক্ষ্য করতাম যেতে যেতে আড়চোখে আমাকে দেখছে।নিজেকে তখন আর একটা সাধারণ ছেলে বলে মনে হতনা।মনে হত আমি বুঝি কোনো রাজা-উজির।
--দাড়াও মেয়েটার তো একটা নাম ছিল?
--তার নাম কি বলবো মালা,তোমার আপত্তি নেইতো?
--আমার আপত্তি থাকবে কেন?মালা না হয়ে যদি মণিমালাও হয় আমি আপত্তি করতে যাবো কেন?একই নামের কতজন হয়।আমাদের স্কুলে তিনজন মিতা ছিল।
--রোদ ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্কুল যাওয়া আসার পথে কেউ না থাকুক আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। রবিবার এলে মন খারাপ হত সেদিন স্কুল ছুটি মালার সঙ্গে দেখা হবে না।
মনে মনে হাসি লায়লা মজনু-র মজনু আমার কাছে বসে।তখন থেকে খালি দেখাদেখি,ও দেখতো আমি দেখতাম। কাহিনী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গোত্তা খাচ্ছে জিজ্ঞেস করলাম,মন এবার বলো কে প্রথম প্রস্তাব করেছিল? মানে বলে না 'আই লাভ ইউ' বা ঐরকম কিছু?
মন হাসল তারপর জানলা দিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল,আমরা কেউ কাউকে মুখ ফুটে ওকথা বলিনি।
--ওমা তাহলে কি করে বুঝলে?তুমি ভালবাসলেও মালাও যে তোমাকে ভালবাসে তা তো নাও হতে পারে।
--আমাদের দুজনের মধ্যে ছিল আভিজাত্যের প্রাচীর সেই বেড়া টপকে একটা বেকার সাধারণ ঘরের ছেলে সাহস পাইনি।মালাও সম্ভবত একই কারণে অন্তরে যে কথা লালন করত মুখে সে কথা প্রকাশ করতে পারেনি।
--এতো এক তরফা একে মোটেই প্রেম বলা যায় না।
--না এক তরফা নয়।মন জোর দিয়ে বলল,যখনই ওদের বাড়ী গিয়েছি উপর থেকে নীচে নেমে এসেছে,সামনে না এসে আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখত।কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ফরমাস করতো আমার বিরুদ্ধে কেউ বললে সে প্রতিবাদ করতো--এর পরও তুমি বলবে একতরফা?
আমি মনের বুকে দুম দুম করে ঘুষি মেরে বললাম,অসভ্য ছেলে আমার সঙ্গে ইয়ার্কি হচ্ছে? মালা কে আমি জানি না ভেবেছো?জানো মন ডলিপিসি তোমাকে আমাকে জড়িয়ে মা কে বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলেছিল।
--আর মাসীমা ভয় পেয়ে মেয়ের অন্যত্র বিয়ে স্থির করলেন। মা দুঃখ পাবে ভেবে মেয়েটি মেনে নেয় মায়ের ইচ্ছে,আমি সব জানি মণি।
--কি করবো বলো তার উপর বড়দা বেশি তাড়াহুড়ো করছিল।
--বোনটিকে ঘাড় থেকে নামিয়ে ঝাড়া হাত-পা হয়ে অফিস কলিগের সঙ্গে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছিল।
--তুমি এত জানো?
--সবাই জানে,তুমি সরল সাদাসিধে সংসারের প্যাচ পয়জার তুমি বোঝো না।তাই তো আমার তোমাকে নিয়ে চিন্তা।
--একটা কথা জিজ্ঞেস করছি অপ্রিয় হলেও সত্যি করে বলবে।গরীব বেকার দেখে মেয়েটি বলতে পারল না তার পরও তুমি কি করে বলবে প্রেম?তোমাকে ভালবাসতো?
--জানি প্রেম স্বার্থপরতা নয় সে এক হৃদয়ের সম্পর্ক,কিন্তু মণি প্রেম মানে আগুণে ঝাপ দেওয়াও নয়।তুমি সত্যি করে বলতো প্রতি মুহুর্তে তোমার আমার কথা মনে পড়ে কিনা?তোমার সুখে দুঃখে আমাকে অনুভব করো না? তুমি বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছো কই তাদের কথা কি এমন করে মনে পড়ে তোমার? যখন শুনলে দেবযানী আণ্টির সঙ্গে অবাঞ্ছিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছি আমি কেন তুমি কষ্ট পাবে?আজ আমি উপার্জন করছি গাড়ী করে যাতায়ত করছি আর তুমি এখানে ওদের খপ্পরে পড়ে নিত্য লাঞ্ছিত হচ্ছো তুমি জানো না মণি কি কষ্ট হয় আমার? সব থেকেও নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়।
আমি মনকে জড়িয়ে ধরে বলি,মন প্লিজ আর বোলনা--আমার ভাল লাগছে না।।
0

মন আমার গলা জড়িয়ে ধরে কম্পিত ঠোট ধীরে ধীরে আমার ঠোটের উপর রাখে।আমি জিভ ঠেলে দিলাম মুখের ভিতর। জানলার বাইরে নজর পড়ল বিস্মিতচোখে তাকিয়ে আছেন আমার শ্বশুর পশুপতি।চোখাচুখি হতে দ্রুত বাড়ীর দিকে পা বাড়ালেন। মনকে বললাম,অনেক দেরী হল আজ আসি?
মন দরজা খুলে বলল,কেমন থাকো আমাকে বলবে,কোনো কিছু লুকাবে না।আর হ্যা তোমার ননদের ব্যাপারটা আমি বলেছি বোলো না।
কোনো কথাই আমার কানে যাচ্ছে না।আমার চোখ যাকে খুজছে তাকে দেখতে পাচ্ছিনা,তাহলে কি পার্কে আড্ডায় চলে গেলেন? মুখের সামনে ভেসে উঠল নির্মলা সুন্দরীর ভয়াল মুখ। যা না হয়েছে তার বহুগুণ করে বাড়িয়ে ছেলেকে নালিশ করবে।অনেক বিশেষণ বর্ষিত হবে আমার উপর সব সহ্য করে যাওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে আমার?মনে মনে প্রস্তুত হই আমি। সিড়ি বেয়ে দোতলয়ায় উঠে দেখলাম তনিমাও ফিরে এসেছে। নিজের ঘরে ঢুকে ভাবছি চেঞ্জ করবো তনিমা এসে বলল,বৌদি তোমাকে বাবা ডাকছে।
বুঝলাম মেয়ের সামনে আমাকে অপদস্ত করা হবে। আমি শ্বশুর মশায়ের সামনে মাথা নীচু করে দাড়ালাম। উনি চেয়ারে বসে নির্মলা সুন্দরী খাটে পাছা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আর দরজায় হেলান দিয়ে তনিমা।
--বউমা আজও কি আমি ভুল দেখেছি? শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন পশুপতি।
আমি কোনো উত্তর দিলাম না,এর কোনো উত্তর হয় না।
--সঙের মত দাঁড়িয়ে রইলে কথা কানে যাচ্ছে না? নির্মলা বললেন।
--আমি তো বলিনি আগেরদিন আপনি ভুল দেখেছেন।
--লজ্জা করছে না মুখ নাড়তে?ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছটা মাস তর সইলো না,শরীরে তোমার এত জ্বালা?
এই বয়সে পদ্মমধুর রস খেতে আপনার লজ্জা করল না একথা বলতে রুচিতে বাধল বললাম,মা একটু ভদ্রভাবে কথা বলবেন।
--কি আস্পর্ধা দেখেছো ছেনাল মেয়ে আবার মুখে মুখে কথা,ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোন নাগরের সঙ্গে কথা বলো আমি জানি না ভেবেছো?
--আপনি কি কার সঙ্গে কি করেন কি বই পড়ে ন আমিও জানি।
--বোউদি মুখ সামলে কথা বলবে।বিয়ের আগে কার সাথে প্রেমপত্র চালাচালি করতে সে কথা কারো জানতে বাকী ণেই।তনিমা মায়ের পক্ষে দাঁড়ায়।
আমি হাসলাম বললাম,তনিমা তুমি শুভদীপকে চেনো?
--কে শুভদীপ?তনিমা থতমত খেয়ে যায়।
--কল সেণ্টারে চাকরি করে শুভদীপ।
--মোটেই না, ও আই টি ইঞ্জনীয়ার।
--চিনতে পেরেছো তাহলে?
--বৌদি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি শুভ সম্পর্কে আর একটা কথাও বলবে না। তনিমা ভয় দেখাল।
--দেখো তুমি দেখো কি সেয়ানা মেয়েছেলে নিজে পাঁক ঘেটে এখন আমার মেয়েটার গায়ে পাঁক মাখাচ্ছে।
--আঃ তোমরা একটু থামবে?পশুপতি বিরক্ত হলেন।
--শোনো এই মেয়ে যদি এ বাড়ি থাকে তাহলে আমি জল স্পর্শ করবো না বলে দিলাম।তুমি এই পাপ এখনই বিদায় করো।
--ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।এখন কি ট্যাক্সি পাওয়া যাবে?বুঝতে পারলাম আর উপায় ণেই।
--চলো আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি। পশুপতি বললেন।
--তুমি কোথায় যাবে? নির্মলা সুন্দরী স্বামীকে বাধা দিলেন।
--তুমি চুপ করো।রাস্তাঘাটে কিছু একটা হয়ে গেলে শেষে পুলিশের টানাটানি শুরু হবে।
পুলিশে টানাটানির ভয়,প্রথমে ভেবেছিলাম পশুপতি সহানুভুতিশীল।ট্যাক্সি দাড় করিয়ে পশুপতি পিছনের দরজা খুলে বললেন,এসো।
আমি কর্ণপাত না করে সামনের দরজা খুলে ড্রাইভারের পাশে বসলাম। পশুপতি বিরক্ত হয়ে পিছনে বসলেন। চিরকাল অন্যের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছি আর নয়। বাড়ীর সামনে গাড়ী দাড়াতে মিটার দেখে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম। পশুপতি গাড়ীতে বসে রইলেন,বুঝলাম উনি নামবেন না।ট্যাক্সি চলে গেল।
 

kumdev

Member
435
397
79

দ্বাদশ পর্ব


চক্রবর্তি বাড়ীর বন্ধ দরজার সামনে দাড়িয়ে মনে হল এই সেই পাড়া যেখনে আমার শৈশব কেটেছে ধুলো বাতাস মেখে বড় হয়েছি,স্কুল কলেজে বা বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে হাপিয়ে ওঠা মন বাড়ী ফিরে এই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আকুলিত হয়ে উঠত,দরজার ওপাশে আমার জন্য জমা আছে আদর স্নেহ ভালবাসা,আমার একান্ত আশ্রয় কখনো তিরস্কার জুটলেও তাতে ছিল না বিদ্বেষের বাষ্প। আজ সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেন এত সঙ্কোচ কিসের দ্বিধা চেপে ধরছে আমার হাত?টুসি যদি জিজ্ঞেস করে কি হয়েছিল
0
কেন চলে এলাম, তাহলে কি বলব?
সুটকেস পাশে নামিয়ে রেখে সসঙ্কোচে কড়া নাড়লাম।কোনো সাড়া নেই।আবার কড়া নাড়লাম এবার একটু জোরে।ভিতর থেকে আওয়াজ এল, খুলছি--খুলছি কে-এ-এ?
মনে হচ্ছে টুসির গলা।অবাক হয়ে যাবে আমাকে দেখে। উচ্ছসিত হয়ে বলবে,কিরে মণি তুইইই?
টুসি দরজা খুলে বিস্মিত চোখ মেলে বলল,ঠাকুরঝি তুমি এখন?
--কেমন আছিস ফাল্গুণী?
উপর থেকে মা জিজ্ঞেস করে,কে বউমা?
ফাল্গুণী গলা তুলে বলল,ঠাকুরঝি।
--কে ঠাকুরঝি?
--আপনার কটা মেয়ে?গলা নামিয়ে আমাকে বলল,ঠাকুরঝি কিছু মনে কোর না আমরা একসময় কলেজে পড়েছি ঠিকই এখন আমি তোমার দাদার স্ত্রী।তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে না।
আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে আমার সামনে ফাল্গুণী নয় যেন অন্য কেউ কথা বলছে।জানি না আমার জন্য এ বাড়িতে সাজানো আছে আরো কত বিস্ময়। প্রত্যুত্তর না দিয়ে উপরে উঠে গেলাম।
মা বলল,কিরে মণি কোনো খবর না দিয়ে এত রাতে?
--খবর না দিয়ে আসতে নেই?
--তুই একা আর কেউ আসেনি?
--পশুপতিবাবু এসেছিলেন।
--বেয়াই?কি বলছিস তুই?নীচে দাড় করিয়ে রেখেছিস?
--ব্যস্ত হয়োনা,আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছেন।
ঘরের ভিতর থেকে রমেশবাবু জিজ্ঞেস করলেন,লাবণ্য কার সঙ্গে কথা বলছো?
--মণি এসেছে।আচ্ছা মা সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? রাগারাগি করে আসিস নি তো?
--মা ওরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
--তাড়িয়ে দিয়েছে?লাবণ্যর মুখে কথা যোগায় না। অসহায়ভাবে মেয়েকে দেখে বলে,যা তোর বাবার সঙ্গে দেখা করে আয়।তুই খাবি তো?
--না মা আমার ক্ষিধে ণেই।
--খাবি তো বল,ভাত আছে।
--আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
বাবার ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কেমন আছো?
বাবা চোখ মেলে আমাকে দেখে হাসলেন।তুই কেমন আছিস মা?
--ভালো।কাল কথা বলবো এখন আসি?
ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতে আমি বেরিয়ে এলাম।বাইরে মা আমার অপেক্ষায় ছিল,আমাকে নিয়ে ঘরে নিয়ে বলল,তুই এই ঘরে থাকিস।কাপড় ছেড়ে নে,আমি আসছি।
শুয়ে অপেক্ষা করছি কখন মন ফোন করে?অন্ধকারে বুঝতে পারি মা আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল। আমি জানতাম আজ রাতে মা আমার পাশেই শোবে।আমি উঠে বসলাম।মা জিজ্ঞেস করে,কিরে উঠলি কেন?
এখন মনের ফোন আসার কথা।মাকে বললাম, একটু বাথরুম যাবো।
বাথরুমে মুততে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।কতক্ষণ হবে খেয়াল নেই, বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে মা,কিরে মণি কি করছিস?
মনে মনে হাসলাম মার আশঙ্কা ঠিক নয়।সে রকম কিছু করার মত আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়িনি,বাথরুম থেকে বেরিয়ে হেসে বললাম,ঘুম আসছিল না তাই চোখে মুখে একটু জল দিলাম।
আমরা দুজনে এসে শুয়ে পড়লাম।মোবাইলের সুইচ অফ,ফোন করলেও আর পাবে না। মা জিজ্ঞেস করে,অতনু এসব জানে?
--সে তো এখনও ফেরেনি এলে জানতে পারবে।
--অতনু জানে না তাহলে বেয়াই মশায় কি করে--।
মাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম,ছেলের বাপ হিসেবে এই অধিকার তার থাকবে না?
--তুই কি আমাদের কথা বলছিস? আমরা তোর ভালর জন্য করেছিলাম।
--ভাল তো দেখতে পাচ্ছো?মা প্লিজ আমার এখন এসব ভাল লাগছে না।
--হ্যা মা তুই ঘুমো।লাবণ্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।মনে মনে ভাবে বাড়ী পর্যন্ত এসে একবার দেখা করল না?এ কেমন ভদ্রতা? সকাল হোক তপুর সঙ্গে কথা বলে দেখছি কি করা যায়?
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তপেনের সঙ্গে কথা বলে লাবণ্য।তপেন কিছু বলার আগে মৌমিতা বলল,মা সুদেব আমাদের সহকর্মী আর সে তার শ্বশুরের পক্ষেই কথা বলবে।তাকে কিছু বলতে যাওয়ার মানে হয় না।কিছু মনে করবেন না ঠাকুরঝি হয়তো এমন কিছু করেছে যার জন্য তাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়ছে।আপনি পারবেন আমাকে বের করে দিতে?
--বউমা মণি কিছু করেনি আমি বলছি না কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই চুপি চুপি বাড়ী পৌছে দেওয়া এ কেমন ভদ্রতা?
অভিমানে লাবণ্যর চোখে জল এসে যায়।বৌমা পরের মেয়ে তার কথা ধরছে না কিন্তু তপু পেটের ছেলে মণি তার বোন চুপচাপ দাঁড়িয়ে বউয়ের কথা শুনল মুখে রা কাড়ল না?
আমার জন্য মায়ের এই দুর্ভাবনা আমাকে পীড়িত করে।ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে আছি।ফাল্গুণী উপরে উঠে এসেছে,গলা পাচ্ছি।
--কিছু বলবে বউমা?
--কি বলবো চিন্তায় সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।ও বলছিল অফিসে লোকজনকে মুখ দেখাবে কি করে?
--কেন লজ্জা পাবার মত কি এমন ঘটল?
--ঠাকুরঝিকে নাকি তাড়িয়ে দিয়েছে?যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলবো ঠাকুরঝি নিশ্চয়ই কিছু করেছে না হলে কেউ রাত দুপুরে--।
--বউমা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।বুঝতে পারছিনা তুমি এত সিয়োর হলে কিভাবে? তোমাকে একটা কথা বলবো? মণির উপর তোমার এত রাগ কেন বলতো বউমা,কই ওকেতো তোমার বিরুদ্ধে কোনোদিন কিছ বলতে শুনিনি।
রাগে আমার শরীর নিসপিস করছে ইচ্ছে হচ্ছিল বাইরে গিয়ে মাকে বলি আমার রাগ তোমার উপর,কেন তুমি আমার হয়ে এদের সঙ্গে কথা বলতে যাও? ফাল্গুণী আবার শুরু করে,জিজ্ঞেস না করলেও একটা কথা আমাকে বলতে হবে মা।বাড়ীতে ননদ ননদ-জামাই এলে সবারই আনন্দ হয়। চিরকালের জন্য তো নয় দু-দিন ভাল মন্দ খাওয়া সিনেমা দেখা কে না চায় বলুন। কিন্তু আপনারা আর ক-দিন এরপর তো আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে।
ঘর থেকে বাবা চিৎ কার করে উঠলেন,লাবণ্য।তুমি সমুকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলো।
মা ছুটে বাবার ঘরে গেল। শুনতে পাচ্ছি মা বলছে,কি হল তুমি অমন করছো কেন?
ঘরে বসে ফুসছি আমার বাবার যদি কিছু হয় ফাল্গুণি তোর সুখের সংসারে আগুণ জ্বালিয়ে দেব।বাবার গলা পেলাম,ঠিক আছে ভয় পাবার কিছু নেই,অত শীঘ্রী আমি যাচ্ছিনা। মণি কোথায়?
মোবাইল অন করতে টুং করে মেসেজ ঢুকল। মা ঢুকে বলল,তোকে ডাকছে তুই যা।
--কি হয়েছে মা?
--কি আবার হবে নিজের সর্বনাশ নিজে করেছো এবার বারোভুতের লাথি ঝ্যাটা খাও।
মায়ের উপর আমার রাগ হয় না। এসব কথা বলে মায়ের মন যদি একটু হালকা হয় হোক,সারা জীবন একলা হাতে সংসার সামলেছে ছেলে মেয়ে মানুষ করেছে বিনিময়ে যা পাচ্ছে তাতে সব মায়ের মন আনন্দে আপ্লুত হবে বই কি।আমি বাবার ঘরে গেলাম।আমাকে দেখে হাত বাড়িয়ে মাথার কাছে বসতে ইঙ্গিত করলেন। আমি বসে বাবার মাথায় হাত বোলাতে থাকি।বাবা চোখ বুজে আছেন প্রশান্তিতে একসময় বললেন,তুই ভুলেও ভাবিস না কারো দয়ায় এখানে আছিস।
--বাবা তুমি কথা বোলোনা।
--শোন মা এই বাড়ী আমার প্রতিটা ইট আমার টাকায় কেনা।
--বাবা তুমি চুপ করো।তোমার কষ্ট হচ্ছে।আমি পরে শুনবো আমি তো আছি।
--আমার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দেতো মা।রমেশবাবু বললেন।
আমি চাদর সরিয়ে বাবার বুকে হাত বোলাতে থাকি।বুঝতে পারি বাবা ঘুমোচ্ছেন।নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন না।মুখ দিয়ে ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। মা ঢুকল চা নিয়ে বাবাকে দেখে বলল,ঘুমোচ্ছে? তা হলে তুই নে।চায়ের কাপ আমাকে এগিয়ে দিল। মা বাবার পাশে বসে বলল, দেখতো রান্না ঘরে,ভাত উতল এলে আমাকে ডাকবি।
আমি চায়ের কাপ নিয়ে চলে এসে ঘরে ঢূকে মেসেজ খুললাম,সুইচ অফ কেন?আমার উপর রাগ করেছো?মন।
মনে মনে বলি আমার ঘর ভেঙ্গে দিয়ে এখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে 'রাগ করেছো?'লোকের ঘর ভাঙ্গতে খুব মজা তাই না?
ভাতের হাড়ির ঢকনা ফোস ফোস করে উঠছে নামছে আমি মাকে ডাকলাম না।যদি কোনোদিন আমার সংসার হয়? ন্যাকড়া দিয়ে হাড়ী ধরে একটা সসপ্যানে উপুড় করে দিলাম।গলগল করে ফ্যান বেরোতে থাকে।পিছনে তাকিয়ে দেখলাম দরজা ধরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখছে মা। চোখাচুখি হতে হেসে মা বলল,কাল রাতে খাসনি,স্নান করে আয় দাদাদের সঙ্গে খেয়ে নিবি।
স্নান সেরে ফিরে এসে দেখলাম টেবিলে চারটে থালায় খাবার দেওয়া হয়েছে।বড়দা বৌদি বসে গেছে মা বলল,তুইও বসে যা।
আমি বসে গেলাম। মৌমিতা আমাকে আড়চোখে দেখল।ছোড়দা এসে আরেক জায়গায় বসে গেল। কেউ কোনো কথা বলছে না কারণ সম্ভবত আমি।ফাল্গুণী এসে জিজ্ঞেস করল,মা আমি কোথায় বসবো?
--বউমা ওরা উঠলেই তোমাকে দিচ্ছি।তোমার তো আর অফিসের তাড়া নেই।
--আমার অফিস নেই,এদের সবার অফিস আছে?
ফাল্গুণীর উদ্দেশ্য আমি তাতে সন্দেহ নেই।মা বলল,ওভাবে কথা বলছো কেন? রাতে মণি খায়নি তাই বললাম তুই বসে যা।
--আপনি জানেন না বেলা করে খেলে আমার মাথা ধরে?ফাল্গুণী ছোড়দাকে উদ্দেশ্যে বলল, তোমাকে বলেছিলাম না এই শুরু হয়ে গেল।মুখ গোমড়া করে ফাল্গুণী নীচে নেমে গেল।
অর্ধেক খেয়েই ছোড়দা উঠে পড়ে।মা বলল,কিরে সমু তুই উঠলি?
--আমার পেট ভরে গেছে মা।বাবা ডাকছিলেন কেন?
--তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর।
ছোড়দা হাত মুখ ধুয়ে বাবার ঘরে ঢুকল কি কথা হয় শোনার জন্য সবার কান খাড়া। ছোড়দা বলল,বাবা তুমি ডেকেছো?
রমেশবাবু কাগজ পড়ছিলেন,কাগজ থেকে মুখ তুলে বললেন,ও তুমি? অফিস যাচ্ছো?
--হ্যা,তুমি নাকি খোজ করছিলে?
--সমু এখানে তোমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?
--অসুবিধের কি আছে?
--বউমাকে জিজ্ঞেস করে দেখো।অবশ্য অসুবিধে হলে আমার কিছু করার নেই,অন্যত্র দেখতে হবে তোমাদের।
--আর কিছু বলবে?
--হ্যা তোমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে তুমি এসো।
গভীর মুখে ছোড়দা বেরিয়ে আসতে মা বলল,সমু নীচে গিয়ে বউমাকে পাঠিয়ে দিস,খেতে দিচ্ছি।
বড়দা বড়বৌদি মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।
রাতে মা বলল,মণি তুই আজ একা এ ঘরে শোও,আমি তোর বাবার সঙ্গে শুচ্ছি?
আমি খুশি হলাম বললাম,ঠিক আছে মা।
মা যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলে,তুই বৌমার কথায় কিছু মনে করিস না মা।
মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মায়া হল মনে মনে বলি,মাগো তুমি যত চেষ্টাই করোনা অপমানের আঁচ থেকে মেয়েকে বাঁচানো আজ তোমার সাধ্যাতীত।আমি কিছু মনে করিনি, এতো আমার প্রাপ্য মাগো। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।সুইচ বন্ধ করার দরকার নেই, মাথার কাছে মোবাইল রেখে দিলাম। এখন ছোড়দা আর ফাল্গুণী নিশ্চয়ই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে সকালে ঘটনা।বাবার কথা শুনে বড়দাও কিছুটা সংযত। কাল ফোন করে পায়নি এখন করতে কি হয়েছে?ফোন বেজে ওঠে। অনেকদিন বাঁচবে মন।কানে ধরে বলি,হ্যালো?
--তোমার ননদ ফিরেচ্ছে?
--জানি না,ফিরলেও বলতে পারবো না আমি আমার ঘরে শুয়ে পড়েছি।কেন তনিমার কি হয়েছে?
--নলবন থেকে পুলিশে ধরেছে,শুভদীপও ছিল। বাদ দাও অন্যের কথা তুমি কেমন আছো?কাল সারারাত যতবার ফোন করছি শুনছি সুইচ অফ। জানো সারারাত ঘুমোতে পারিনি।
মজা লাগল বললাম,ডাক্তার দেখাও।
--তুমি খুব নির্মম।তুমি কি সবার প্রতি নির্মম নাকি আমার প্রতি?
--হি-হি-হি শুধু তোমার প্রতি।
--এটাই প্রেমের লক্ষণ।প্রেমিককে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া কিন্তু অন্যে কষ্ট দিলে একেবারে বাঘিনী।
--প্রেম নিয়ে তোমার দেখছি অনেক জ্ঞান।
--কেন ভুল বললাম?
আমি চুপ করে থাকি।মন জিজ্ঞেস করল,কিছু বলছো না যে?
--কি বলবো?
--যা খুশি,তোমার কথা শোনার জন্যই তো ফোন করি।
--শুধু কথা,আর কিছু চাও না?
--তুমি তো আমার তোমার কাছে কি চাইবো?
--একটা গান শুনবে?
--তুমি গান গাইবে? তোমার শাশুড়ী আড়ি পেতে নেই তো?
--থাকুক আমার গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে। কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। আমি গুন গুন করে গাইলাম, আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি বাহির পানে চোখ মেলেছি হৃদয় পানে চাইনি.....।গান শেষ হতে জিজ্ঞেস করলাম,কিছু বলছো না যে?
--আমি আর কি বলবো তুমিই তো সব বলে দিলে?
--কিছুই বলার নেই?
--বুকের বোতাম খোলো--খুলেছো?
--হ্যা খুলেছি।
--এবার বুকের দিকে দেখো।
আমি নিজের বুকের দিকে দেখলাম পাশাপাশি দুটি স্তন।
--কিছু দেখতে পাচ্ছো না?
--কি দেখতে পাবো?
--ভাল করে দেখো,ওখানে মনকে দেখত পাচ্ছো না?
শরীরে শিহরণ খেলে গেল।মন কাছে থাকলে দু-হাতে জড়িয়ে ধরতাম বুকে। ও পাশ থেকে শুনতে পেলাম,শুভ রাত্রি।
বালিশে মুখ গুজে কেঁদে ফেললাম।বুঝতে পারি না কেন কান্না পাচ্ছে।মানুষ কি কেবল দুঃখে কাঁদে? ওরা যখন দলবেধে যা না তাই বলে আমাকে আমার তখন তো কান্না পায়না।
 

kumdev

Member
435
397
79
ত্রয়োদশ পর্ব



শাশুড়ী আড়ি পেতে।শাশুড়ী আসবে কোথা থেকে? পাড়ার কোনো খবরই কি রাখে না মন? শুধু অফিস আর বাড়ী?তনিমার কথা কি বলছিল ভাল করে শোনা হয়নি। সকালে ছাদে উঠে ঘোরাঘুরি করি,ছাদ থেকে দেখা যায় তে-রাস্তার মোড় পর্যন্ত।একটা ছোট আড্ডা দেখা যায় বিয়ের পর ছোড়দা আর যায় না,মনকেও দেখি না।ছোড়দা বিয়ের পর অনেক বদলেছে কিন্তু ও তো বিয়ে করেনি। তে-রাস্তার মোড় থেকে গাড়ীতে উঠত শুনেছিলাম কদিন ধরে দেখছি,একদিনও নজরে পড়ল না গাড়ী।
মায়ের এখনো ধারণা রাগ পড়লে ওরা হয়তো ফোন করবে। আমার খারাপ লাগে তবু মায়ের ভুল ভাঙ্গাবার জন্য কিছু বলি না,থাক ওটুকু অবলম্বন নিয়ে নতুন করে দুঃখ দিয়ে কি হবে?মাঝে মাঝে জিগেস করে কবে ফিরবে রে অতনু।
প্রতিদিন ভোরে চা পৌছে দেবার দায়িত্ব ঘরে ঘরে সেটা কিছু নয় আমারই তো দাদা-বৌদি। কিন্তু খারাপ লাগে বড়বৌদি একদিনও দেখলাম না আমার হাত থেকে চা নিয়েছে,চা নিয়ে গেলেই বলে,টেবিলে রেখে যাও।নিজেকে কেমন অবাঞ্ছিত মনে হয়।রাতে মনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সারাদিনের গ্লানি কিছুটা লাঘব হয়।এক এক সময় মনে হয় বলে দিই সব কথা মনকে,কিন্তু সঙ্কোচ গলা চেপে ধরে, আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে আমি এখন বাপের বাড়ীতে মন এ কথা জানলে এতদিনের গড়ে ওঠা সম্পর্কের বাঁধন আলগা হয়ে যাবে না তো?যা সহজে পাওয়া যায় তার প্রতি আমাদের আকর্ষণ থাকে না।ইচ্ছেকে দমন করি যেমন চলছে চলুক মেনে নিচ্ছিলাম সব ধীরে ধীরে।বিশেষ করে বাবার শরীরের কথা ভেবে বাবার কানে যাতে না যায় তাহলে উত্তেজিত হতে পারে এই শঙ্কায় নীরবে সহ্য করছিলাম সব তাচ্ছিল্য অবজ্ঞা অপমান।এ সময় উত্তেজনা বাবার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
একদিন রাতে ফোন হাতে অপেক্ষা করছি,মনের সঙ্গে কথা ইদানীং অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে,না বললে ঘুম আসতে চায় না।বাথরুম পেয়ে গেল। বড়দার ঘর পেরিয়ে যেতে হয় বাথরুমে।বাথরুম সেরে ফিরছি কানে এল আমার নাম।আড়িপেতে শুনতে বা লুকিয়ে দেখতে আমার মর্যাদায় বাধে কিন্তু আমার নাম কানে যেতে কৌতুহল দমন করতে পারি না।সন্তপর্ণে দাদার দরজায় কান পাতলাম।
--বেশি মণি-মণি কোরনা তো?ওটা মিচকে শয়তান।বাবাকে না লাগালে ঠাকুর-পোকে সেদিন কেন বাবা ওরকম বললেন। কি হল করবে তো?
--একটূ পা দুটো ফাক করো...মণি কিন্তু খুব সরল।
--বোল না তো সরল? জানো এক-একজনের ল্যাওড়া বেশ বড় হয়,আহা কোথায় ঢোকাছো--দেখবে তো?
--তুমি কি করে জানলে?কারো ল্যাওড়া আগে দেখেছো?
--ছবিতে মানে ফিলমে দেখেছি।প্রায় আধ হাত লম্বা।
--বড় ল্যাওড়া নিতে তোমার ইচ্ছে হয়?
--খালি অসভ্য কথা।ইচ্ছে হলে পাচ্ছি কোথায়?কম্পিউটারে দেখছিলাম ল্যাওড়া নাকি বড় করা যায়?
--উ-উ-ম,ঢুকেছে?
oxpO6Usu-BqBRDDCPBmxeBfPe6XEh_X_jLbpTMTERbziVLQfEX1UPL0IwQNdFttJcCMpLhEylbO-TzieQGgNw3zBx2QDuqgpYrL5t8qZjoIckrYa7ectIBkdlnQWjNY=s0-d-e1-ft

--হ্যা ঢুকেছে।চুদতে চুদতে কথা বলো?
--ডাক্তার বলছিল হার্ট স্পেশালিষ্টকে দেখাতে।
--খবরদার বলছি ঐ ভুলটা কোরনা।শেষে যদি স্পেস মেকার বসাতে বলে একগাদা খরচা।আমি কিন্তু আমার টাকা তোমার বাবার পিছনে ঢালতে পারবো না আমার ছেলেমেয়েকে কে দেখবে?সাবু খেয়েছো নাকি?জোরে জোরে ঠাপাতে পারোনা।
--কথা বলবো না ঠাপাবো?
--কথা বলতে বলতে ঠাপালে অনেকক্ষণ ঠাপাতে পারবে, না হলে এতক্ষণ বেরিয়ে যেত।তুমি ঠাকুর-পোকে দিয়ে যা বলার বলাবে নিজে কিছু বলতে যাবে না।শুনলে তো বাবা কি বললেন?আঃ করোনা?
--মোউ-উ আর পারছি না এবার বেরোবে আঃ-আ-আ-আ।
--থেমো না করে যাও--করে যাও।উঃ-আ-উ-উ-হু-উ-উ।
--সুখ হয়েছে?
--সুখ?ঐ অলক্ষ্মীটা বিদায় না হলে আমার সুখ হবে না।আজ কিন্তু ওষুধ খাইনি।
আমি অলক্ষ্মী? আর দাড়াতে পারলাম না।আমার জন্য এদের সুখ উধাও।রমণেও সুখ পায় না? আমি গেলে সুখ ফিরে আসবে?ঘরে ফিরে এলাম। কেন যে দাড়িয়ে শুনত গেলাম?ছোট বেলার কথা মনে পড়ছে কত আদরের বোন ছিলাম আমি?ভাইফোটার দিন কত খাতির আমার। প্রতি বছর উপোস করে পবিত্র মন নিয়ে চন্দন ঘষে প্রদীপ ধুপ জ্বেলে আয়োজন করতাম,মা পাশে দাঁড়িয়ে শাঁখ বাজাতো।মঙ্গল কামনা করে ফোটা দিতাম।এতকালের সম্পর্ক একটা মেয়ে এসে কদিনে সব ওলট পালোট করে দিল। লক্ষ্মী বোন আজ অলক্ষ্মী?আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।
এ বাড়ীতে বাবা না থাকলেও আমার একটা ব্যবস্থা করে যাবেন আমি জানি কিন্তু মানুষের বিষদৃষ্টি ঘৃণা সম্বল করে বাড়তি বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার গ্লানি,কথাটা ভাবলে আতঙ্কে সারা শরীর হিম হয়ে আসে।কিছু একটা করতে হবে আমাকে।ফোন বাজছে মনে হল,পর্দায় ভেসে উঠেছে মন।
--কি ব্যাপার এত রাতে?
--ভেবেছিলাম ফোনই করবো না।
রাত দুপুরে বাজে বকবক করতে ইচ্ছে হল না বললাম,তা হলে করলে কেন?
--কেন করলাম তা যদি বুঝতে তাহলে তুমি এমন করতে পারতে না?
প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন?জিজ্ঞেস করি,কি করলাম আমি? হেয়ালি ভাল লাগছে না।
--আবার জিজ্ঞেস করছো কি করলাম আমি? তুমি শুধু নির্মম নও নিষ্ঠুর--মণি আমার ইচ্ছে করছে মানে কি বলবো তোমাকে হাতের কাছে পেলে--।
--কি করতে মারতে?
--মণি একমাসে এত কাণ্ড ঘটে গেছে তুমি কেন আমাকে কিচছু বলোনি কেন বুকে চেপে রেখেছো এত কষ্ট এত যন্ত্রণা--আমি কি কেউ না?
এবার বুঝতে পারি সব কোনো সুত্রে জেনেছে মন।ইচ্ছে করছে বলি মন তুমি আমার সব,নিজেকে সংযত করে বলি,সারা পাড়া জানে কি করে বুঝবো তুমি জানো না আর তোমাকে বললে কি করতে?চোখের জল চেপে রাখতে পারেনা।
--কি মুস্কিল আমি এখন ও পাড়ায় থাকি না।যাক আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য।কাল চারটের সময় তে-রাস্তার মোড়ে গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি চলে আসবে।
--এবার কি আমাকে তোমার ইচ্ছেতে চলতে হবে?
--না তুমি তোমার ইচ্ছে মত চলবে।আগে কখনো আমার ইচ্ছে তোমার উপর চাপিয়ে দিইনি আজও দেবোনা শুধু আমার ইচ্ছেটা জানিয়ে দিলাম।চারটের সময় গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকবে।
--মন শোনো মন...।যাঃ ফোন কেটে দিয়েছে।
খুব ক্ষেপে গেছে আগে কখনো এরকম ক্ষেপতে দেখিনি। খুব শান্ত স্বভাব মজা করে কথা বলে। মুঠোয় ফোন চেপে ধরে ভাবতে থাকি কি করবো? অনিশ্চিত জীবনে পাড়ি দেবো?কারো আদেশ নির্দেশ নয় বা কারো অনুরোধ উপরোধ নয় আমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।জল থেকে বাঁচতে আগুণে ঝাপ দেওয়া হবে না তো?শুয়ে পড়লাম,জানলা দিয়ে এক ঝলক শীতল বাতাস সারা শরীর ছুয়ে গেল।দম বন্ধ করা দুঃসহ ভাবটা আর নেই।চোখে ঘুম নেমে এল।
সকাল বেলা রান্না ঘরে উকি দিয়ে দেখলাম ষ্টোভের সামনে দাঁড়িয়ে মা,হাড়িতে ভাত ফুটছে।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম মাকে।
মা হাত চেপে ধরে বলল,আঃ কি হচ্ছে কি ,ছাড় এখুনি ভাত উতল এসে যাবে--ছাড়।
--মা আমি যদি চলে যাই?
--কোথায় যাবি? কিছুক্ষণ চুপকরে ভাতের হাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর আমার দিকে ফিরে বলল,ভাবছি অতনু ফিরুক আমি একবার কথা বলে দেখব। মেয়ে আমি তোমার হাতে দিয়েছি তোমার বাবাকে দেখে দিইনি।
হেসে বললাম,আর যদি না যাই চিরকাল এখানে থাকি?
--থাকবি।তোর বাবা তো বলে দিয়েছে এ বাড়ীতে মণির অধিকার সমান।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,তোকে কেউ কিছু বলেছে? তুই কাল থেকে কাউকে চা দিতে যাবি না সবাইকে এখানে এসে নিয়ে যেতে হবে।সব এক-একজন লবাবের বেটি।ভাত উতল এসেছে সর।হাড়ি নামিয়ে ভাত উপুড় দিয়ে লাজুক হেসে বলল,তোর বাবা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ছিল তবু সময় করে রান্না ঘরে এসে কুটনো কুটে দিয়ে আমাকে সাহায্য করতো।আর এরা কুটোটি নাড়বে না।
--বাবাকে মানা করতে না?
--করতাম না আবার,মানা করলে শুনছে কে?কি সুন্দর রুটি বেলতো একেবারে চাকার মত গোল।
মাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে যেন ফিরে গেছে অতীত যৌবনে। হেসে বলি,মা তুমি বাবাকে খুব খাটাতে?
মার চোখ ছল ছল করে ওঠে আঁচলে চোখ মুছে বলল,কি তরতাজা স্ফুর্তিবাজ ছিল, সেই মানুষটা আজ অথর্ব হয়ে পড়ে আছে। এখন যা আমাকে কাজ করতে দে।
চারজনে একসঙ্গে টেবিলে খেতে বসেছে,আমি আর এখন ওদের সঙ্গে বসি না।একদম শেষে সবার খাওয়া হলে আমি মার সঙ্গে খাই।অন্যের রান্না করা খাবার কেমন গপগপ করে গিলছে বড়বৌদি।কাল চুদিয়ে নাকি সুখ হয়নি। মৌমিতার উপর কোনো রাগ নেই।ফাল্গুণি ডাটা চিবোতে চিবোতে বলল,ডাটা চচ্চড়ী মা সুন্দর রাধেন।মনে মনে বলি বসে বসে আর কদ্দিন গিলবে এবার মাকে একটু সাহায্য করতে পারোতো? মানুষ এত বেহায়া কি করে হয় ভেবে পাই না।
একে একে সবাই বেরিয়ে গেল।ফাল্গুণী চলে গেল নীচে,মা আমাকে বিশ্রাম নিতে বলে বাবার ঘরে গেল শুতে।আমি ঘরে ফিরে আসি মনে পড়ল কাল রাতের কথা। বাবাঃ আবার রাগ আছে?মন এপাড়া ছেড়ে চলে গেছে জিজ্ঞেস করিনি কোথায় গেছে?
টালির হলেও এখানকার বাড়ী ওদের নিজের বাড়ী।সে বাড়ী কি এখন খালি পড়ে আছে?দেখা হলে জিজ্ঞেস করা যাবে।আমি কি আজ সত্যিই যাবো?একরাশ দ্বিধা আমার সামনে এসে দাড়াল।
মনের প্রতি ভালবাসা কি আমাকে টানছে নাকি এই দুর্বিষহ পরিবেশ থেকে পালাতে চাইছি? আমি ওকে আড়াল থেকে লক্ষ্য করতাম,স্কুলে যেতে আড়চোখে দেখতাম ওর কথা প্রতিদিন আমি ভাবি সব জানে। অবাক লাগে কি করে এতসব জানল মন?
হাসি পেল দেখা হলে জিজ্ঞেস করতে হবে।আজ দেখা হবে? আমি তন্ন তন্ন করে খুজি আমার ইচ্ছেকে।ওমা আমি তো শাড়ী বদলে ফেলেছি।মন বলেছিল,মণি তোমার মধ্যে দুই ইচ্ছের দ্বন্দ্ব সব ঘুলিয়ে দিয়ছে।নিজেকে নিজেই চিনতে পারছো না। কথাটা মন একেবারে ভুল বলেনি।শাড়ী একটু নীচে নামিয়ে দিলাম,মন নাভির মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খোচাতে ভালবাসে। ঘরের মধ্যে আর ভাল লাগছে না,ছাদের খোলা হাওয়ায় ঘুরে আসি। ঘরে থেকে বুঝতে পারিনি আকাশ ঢেকে গেছে মেঘে,বিষ্টি হতে পারে।একী কোনো অশুভ লক্ষণ?বুঝতে পারছি না কি করবো? মা যখন যা বলেছে করেছি বাবা যা বলেছেন করেছি,নিজে নিজে কিছু করতে গেলেই যত ঝামেলা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।তে-রাস্তায় নজরে পড়ল একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে।একি মনের গাড়ী?মনে করতে পারছি না মনের গাড়ী কেমন দেখত ছিল।দ্রুত নীচে নেমে এলাম ঘড়িতে দেখলাম চারটে বাজে প্রায়।কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসলাম।
কি লিখবো? বসে বসে ভাবতে থাকি। লিখলাম--মা,কটা দিন এখানে ভালই ছিলাম কিন্তু সংসারে বাড়তি বোঝা হয়ে থাকতে কে চায় বলো?আমি চললাম,কোথাও যদি নিজের জায়গা খুজে পাই।সবাই ভাল থেকো।বাবাকে আমার জন্য চিন্তা করতে মানা কোরো। প্রণাম নিও।ইতি-মণিমালা।
পা টিপে টিপে গিয়ে বাবার ঘরে উকি দিলাম,অঘোরে ঘুমোচ্ছে।বিছানার নীচে চিরকুটটা গুজে সুটকেস হাতে সিড়ি বেয়ে একেবারে রাস্তায়।গাড়ীটা মনের তো? কাছাকাছি যেতেই শিউপুজন গাড়ীর দরজা খুলে দাড়াল,আমাকে চিনতে পেরেছে? গাড়ীতে বসে জিজ্ঞেস করি,সাহেব কই?
--সাহেব অফিসে।
জানলা দিয়ে বাইরে তাকাই,এখান থেকে আমাদের বাড়ী দেখা যায় না। কল্পনা করতে পারি চিরকুট পেয়ে মা কি করবে,একবার বড়দাকে একবার ছোড়দাকে বলবে।ওরা অসহায়তা প্রকাশ করবে।বাড়ীর বদনাম হবে বলে থানা-পুলিশ করতে নিষেধ করবে।
--আমরা কি এখন অফিসে যাচ্ছি? জিজ্ঞেস করি।
--জ্বি।
শিউপুজন বেশি কথা বলে না।নীরবে গাড়ী চালাচ্ছে।আমাদের বাড়ীটা ক্রমশ দুরে--আরো দূরে চলে যাচ্ছে।এই প্রথম নিজের ইচ্ছেতে চলেছি, জানিনা কোথায় চলেছি?আমার যা সর্বনাশ তাতো হয়েইছে আর কিইবা হতে পারে।সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কিবা ভয়।
 
Last edited:

kumdev

Member
435
397
79



চতুর্দশ পর্ব

বৃষ্টি পড়ছে ঝিরঝিরে।উ্ল্টোডাঙ্গা ব্রিজের কাছে আসতে লক্ষ্য করলাম বাস স্টপেজের ভীড় থেকে জিন্স পরা একটি মেয়ে রাস্তার উপর এসে হাত নেড়ে গাড়ী থামাতে চেষ্টা করছে।শিউ পুজন গাড়ী থামিয়ে দিল। মেয়েটি জানলার কাছে মুখ এনে বলল,দরবাজা খুলো।
কি করবো আমি শিউপুজনের দিকে তাকাতে সামনের দরজা খুলে দিল। মেয়েটী দরজা না খোলায় একটূ বিরক্ত মনে হল।শিউপুজনের পাশে বসে বলল,বারিশ হোচ্ছে।
আবার গাড়ী চলতে থাকে।ব্যাপারটা কি হল বুঝতে পারছি না।মেয়েটিকে মনে হল নেপালি বা ঐরকম কিছু।বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল গাড়ী দেখে থামিয়ে উঠে পড়েছে।কিছুক্ষন পর মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।আমিও ভদ্রতা করে হাসলাম।মেয়েটি সাহস পেয়ে বলল,আমি নিমা ছেত্রী আপনি?
কি বলবো ভাবছি শিউপুজন বলল,মিসেস মুখার্জি আছেন।
শিউপুজনের কথাটা কানে খচ করে বাজে।শিউপুজন কিভুল কড়ে বলল? নিমা সঙ্কুচিত হয়ে বলল,স্যরি। বাস আসছে না অনেক্ষণ, আবার বারিশ আরম্ভ হয়ে গেল।
--ওকে অল রাইট।
নিমা আর কথা বলে না।দেখতে পুতুল-পুতুল হাসলে চোখ বুজে যায়।মনে হল এর আগেও এভাবে ঊঠেছে।তখন নিশ্চয়ই মনের পাশে বসতো।নিমা ছেত্রী ছাড়া আরও অনেক মেয়ে ওর সঙ্গে চাকরি করে? যখন জানতাম না আলাদা কথা এখন কেমন খুত খুত করছে।আবার মনে মনে হেসে ফেললাম যা থাকার তা থাকে আগলে রেখে যাওয়াকে ঠেকানো যায় না। অফিসের কাছে পার্কিংয়ে গাড়ী দাড় করাতে নিমা থ্যঙ্কু বলে বিদায় নেবার পর শিউ পুজন আমাকে অপেক্ষা করতে বলে কোথায় হারিয়ে গেল।
ফোনে প্রায় রোজ রাতে কথা হয়,বার কয়েক দেখা হয়েছে তখন আমি অন্য বাড়ীর বউ।আজ সব ছেড়ে একেবারে বেরিয়ে এসেছি।কেমন ব্যবহার করবে মন?আগের থেকে আজকের ব্যবহার বদলে যাবে?আশার কথা শিউপুজন তার পরিচয় দিয়েছে মিসেস মুখার্জি তার মানে মনই এরকম বুঝিয়েছে।কেন এলাম এখানে? আমার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না,বলতে পারবো না মা কষ্ট পাবে তাই এসেছি।অবচেতনে আমি মনকে ভালবাসি সেটাই সত্যি হবে হয়তো।
মন যখন গাড়ীতে চুমু খেয়েছিল নাভিতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খোচাচ্ছিল শুরশুরি লাগলেও আমার খারাপ লাগেনি।ঐতো মন আসছে ওর চোখ দুটো যেন কি খুজছে।আমাকে দেখতে পেয়ে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল মুখ।মনে মনে হাসি, ভেবেছে আমি দেখতে পাইনি।শিউপুজনকে দেখছি না কোথায় গেল?আমিও উদাসভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি,যেন ওকে দেখিনি।
অন্যদিকে তাকিয়ে দরজা খুলে আমার পাশে বসল।এখন বাগে পেয়েছে তাই আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমি না তাকিয়ে বুঝতে পারছি আমার তল পেটের দিকে ওর নজর।তর্জনীটা ঢোকাতে আমি বললাম,উহুম কি হচ্ছে কি?শিউপুজন আসছে।
মন জিজ্ঞেস করল,বাড়ীতে কি বলে বেরিয়েছো?
--বলেছি মনের কাছে যাচ্ছি।
মন হেসে ফেলে বলল,বোকার মত প্রশ্ন করেছি।এতক্ষণে বাড়ীতে হৈ-চৈ শুরু হয়ে গেছে কোথায় গেল মেয়েটা। শিউজি আবার কোথায় গেল? মণি দেখি তোমার মোবাইলটা।
আমি মোবাইল ওর হাতে দিয়ে বললাম,মোবাইল দিয়ে কি করবে?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে মোবাইলের সুইচ অফ করে দিল।আমি বললাম,অফ করলে কেন আমার যদি কাউকে ফোন করতে হয়?
মন ব্যাগ খুলে একটা বাক্স বের করে আমাকে দিল। খুলে দেখলাম বেশ বড় আকারের একটা এ্যানড্রয়েড ফোন।কোনো ডীজিট নেই জিজ্ঞেস করলাম,এইটা কিভাবে হ্যাণ্ডল করে আমি জানি না।
--টাচ স্ক্রিন।আমি শিখিয়ে দেবো।আমার বউকে প্রথম উপহার।
শিউপুজন এসে বলল,সাহেব আপনি এখানে আমি আপনার অফিসে গেছিলাম।
--মিস ছেত্রী আমাকে খবর দিয়েছে।চলুন পার্ক স্ট্রীট।
আবার গাড়ী চলতে শুরু করে।কি মতলব কিছু বুঝতে পারছিনা,মন কোথায় থাকে? ড্রাইভারের সামনে জিজ্ঞেস করতে সঙ্কোচ হল।গাড়ী একটা পারলারের সামনে দাড় করিয়ে বলল,নামো।
আশপাশে কোথাও বসতবাড়ী নেই জিজ্ঞেস করি,এখানে নামবো?
মন আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,আমার বউকে মনের মত করে সাজাবো আমার বহুদিনের সাধ।
বুকের মধ্যে কাঁপুনি বোধ করি চোখে প্রায় জল এসে যায় আরকি।নিজেকে ধিক্কার দিই মনের সম্পর্কে কি আবোল তাবোল ভাবছিলাম।পারলারে ঢূকে ঘণ্টাখানেক ধরে চুলছাটা শ্যাম্পু কারা ফেসিয়াল করার পর আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হলাম। একগোছা চুল বারবার কপালে এসে পড়ছে।বসে আছি মনের দেখা নেই।কিছুক্ষণ পর এসে বলল,স্যরি একটূ দেরী হয়ে গেল।আমরা আবার গাড়ীতে বসতে মন বলল,এবার বাড়ী।
নিজেকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে আয়নায়।মন জিজ্ঞেস করল ,কি ভাবছো মণি?
লাজুক গলায় বলি,ভাল লাগছে আমাকে দেখতে?
মন আমার দিকে তাকালো আমি চোখ নামিয়ে নিলাম মৃদুস্বরে বলল,মণি আমি দেখিনা,তোমাকে অনুভব করি হৃদয় মন দিয়ে প্রতিটি মুহুর্তে।
শীতল শিহরণ অনুভব করি সারা শরীরে মনে মনে বলি হায় ঈশ্বর তোমার এত করুণা?
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানাজানি হয়ে গেছে মণিমালা বাড়ীতে নেই।বাবাকে এখনই জানাবে না আমি বেশ অনুমান করতে পারি।চিরকুটটা কি মার নজরে পড়েছে?যেন দেখতে পাচ্ছি চিরকুটে চোখ বুলিয়ে গড়িয়ে পড়ল মায়ের চোখের জল।
মন বলল,কি হল নামো।
তাকিয়ে দেখলাম তিনতলা ফ্লাটের নীচে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ী।এখানে মনের ফ্লাট?আমি সুটকেস টানতে গেলে মন বলল,তোমাকে কিছু করতে হবে না,তুমি নামো।
মনের সঙ্গে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম। কলিং বেল টিপতে একজন বয়স্কা মহিলা দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়ে আমাকে দেখতে থাকেন।আমরা ভিতরে ঢূকতে মন মহিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে উচু গলায় বলল,তোমার কোনো কথা শুনিনা বলছিলে?এনে দিলাম।মহিলা হেসে আমার দিকে তাকালেন।
মন আমাকে বলল,অডিও গেছে কেবল ভীসুয়ালটা আছে।
শিউপুজন আমার সুটকেসটা পৌছে দিয়ে চলে গেল। মন এভাবেই কথা বলে আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম।বুঝলাম ইনি আমার শাশুড়ী নীচু হয়ে প্রণাম করলাম।আমার চিবুক ছুয়ে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,তোমার নাম কি?
--নাম শুনে কাম কি?মন বলল।
মনকে ধমক দিলাম,কি হচ্ছে কি?আমার নাম মণিমালা।
শাশুড়ী ছেলের দিকে তাকালেন, মন কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে বলল,মণিমালা।
--মণিশঙ্কর মণিমালা?সরল হাসি খেলে গেল মুখে বললেন,বোসো আমি চা করছি।
মনের সঙ্গে একটা ঘরে ঢুকলাম।দেওয়ালের একপাশে ছোট খাট আলমারিতে ঠাসা বই।তার পাশে ওয়ারড্রোব আয়না লাগানো পাল্লা।আয়নায় চোখ পড়তে চমকে উঠলাম কাকে দেখছি?নিজেকেই নিজে চিনতে পারছি না। কপালের উপর থেকে চুল পিছনে সরিয়ে দিলাম।শাশুড়ী চা নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,মনু কই?
আমি হাত থেকে চায়ের কাপদুটো নিয়ে তাকিয়ে দেখি মন পরনে ছাপা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি দরজায় দাঁড়িয়ে হাসছে। শাশুড়ী চলে যেতে আমার হাত থেকে কাপ নিয়ে বলল, চলো তোমার ঘরে।
একটা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আমার হাতে কাপ ধরিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে বলল,যাও।
আমি অবাক সুন্দর সাজানো ঘর।বন্ধ একটা দরজা খুলতেই ব্যালকণি।একপাশে ডবল বেড খাট একদিকে ড্রেসিং টেবিল।আমি মনের দিকে তাকাতে বলল,তোমার জন্য সাজিয়ে রেখেছি।আজ হোক কাল একদিন তুমি আসবেই আমি জানতাম।
বাড়ী থেকে বেরোবার সময় আশা নিরাশার শঙ্কায় দুলছিল মন।তবু কি এক অমোঘ আকর্ষণ আমাকে টেনে নিয়ে চলেছিল।মন ভালবাসে অনেকবার বলেছে কিন্তু এত ভালবাসে বুঝতে পারিনি।আমি বললাম,তুমি একটু বাইরে যাও আমি চেঞ্জ করে নি।তার আগে একবার বাথরুম যাবো।বাথরুম কোথায়?
আধুনিক বাথরুম কমোড শাওয়ার বাথটবও আছে।কাপড় তুলে বসলাম কমোডে। ওঃ কি সুখ চোখ বুজে এল। আয়নার সামনে দাড়াতে নজরে পড়ল তপেটের নীচে ঘন বালের জঙ্গল।মনের কি পছন্দ জানি না।যদি বলে সেভ করতে তখন পরিস্কার করে ফেলবো।ঘরে এসে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লাম।পশুপতি বাড়ীর দরজায় নামিয়ে চলে গেছিলেন সেদিনের অভ্যর্থনা মনে পড়ল নিজের বাড়ীতে মনে হচ্ছিল অতিথি আর আজ যেন মনে হচ্ছে নিজের বাড়ীতে এসেছি।মন সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে আমার জন্য শুধু আমার জন্য।
মনের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল,মন জিজ্ঞেস করল,খুব ক্লান্ত লাগছে?
--ওমা আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম?
--তুমি তো চেঞ্জ করোনি।ঠিক আছে এখন খেতে এসো, পরে কোরো।
টেবিলে খেতে দেওয়া হয়েছে।আমি অবাক হয়ে দেখছি সব একা একা করেছেন?আমি বললাম,আমার উচিত ছিল মাকে সাহায্য করা।
--শোনো মা এই ব্যাপারে খুব একগুয়ে।কতবার বলেছি একজন রান্নার লোকের কথা কিছুতেই শুনবে না।বলে মনু তুই আমাকে আগের বাড়ী রেখে আয়।আমি আর জোর খাটাই নি।
--তোরা কি বলছিস?শাশুড়ী জিজ্ঞেস করলেন।
--বলছি মা বউ পেয়ে খুব খুশি।
শাশুড়ী কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,কি বললি পরিস্কার করে বল।
--বললাম, মা বউ পেয়ে খুব খুশি।
শাশুড়ী কি ভেবে চলে গেলেন।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,বউ দিয়ে আমি কি করবো? আমাকে একটা নাতি দে।
--রাতারাতি সব হয় নাকি?সময় হলেই হবে।মন বলল।
কান লাল হয়ে এল লজ্জায়। মাথা নীচু করে খেতে থাকি।রান্না খুব খারাপ না শাশুড়ীর,তবে আমার কাছে আমার মায়ের রান্না আরো ভালো। ঘরে এসে শাড়ী খুলে ফেললাম।মন এসে আমাকে দেখে বলল,তুমি চেঞ্জ করছো?আচ্ছা শুয়ে পড়ো কাল দেখা হবে।
--কাল দেখা হবে মানে? তুমি এখানে শোবে না?
--এখন এখানে শোবো?
--ইয়ার্কি হচ্ছে?কবে বুদ্ধি হবে?মা যদি দেখে ছেলে একঘরে আর বউ আরেক ঘরে তাহলে কি হবে ভেবেছো?
--সত্যিই তো এটা তো আমার মাথায় আসেনি।কিন্তু যদি কিছু হয়ে যায়?
--হলে হবে তুমি এসো। মনকে ঘরে টেনে দরজা বন্ধ করে দিলাম।মন সোফায় বসতে বললাম,আচ্ছা মন আমি তোমাকে ভালবাসি এই বিশ্বাস তোমার কি করে হল?
--বালি সরিয়ে।
--মানে?
--গয়ায় গিয়ে দেখলাম দীর্ঘ একটা খাত,সবাই বলল এটা ফল্গু নদী।নদীতে জল কোথায়।ওরা বলল,নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধারা।আমি বালি খুড়ে দেখলাম তাই।বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই।তোমার ভালবাসা সেই ফল্গুধারার মত অন্তঃসলিলা।
মনের কথা শুনে মুগ্ধতায় ভরে যায় মন।
মন চিন্তিত স্বরে বলল,মণি ভদ্রলোক না ফিরলে ডিভোর্স হবে না আর ডিভোর্স না হলে আমরা রেজিষ্ট্রি করতে পারছি না।
--সে যখন হবার হবে আমরা রোজ একসঙ্গে শোবো যেমন স্বামী-স্ত্রী শোয়।
মন এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আমার গলায় মুখে বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, জামা খুলবে না?
--খলুবো?ঠিক আছে তুমি খুলে দাও।
পিছনে গিয়ে হুকগুলো খুলতে লাগল। কানের পাশে এসে লাগছে মনের গরম নিশ্বাস।বুকে গোজা দামী মোবাইলটা পড়ে যাচ্ছিল আমি লুফে নিয়ে বললাম, তুমি বলেছিলে কি করে হ্যাণ্ডল করতে হয় শিখিয়ে দেবে?
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল,দেবো সোনা দেবো, সব তোমায় শিখিয়ে দেবো।
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে খাটে উঠে বসলাম। মন আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে আমাকে শেখাতে লাগল। মন বলল,যখন আমি অফিসে যাবো তুমি গাড়ী নিয়ে শপিং করতে যাবে নাহলে ঘরে বসে মোবাইলে গেম খেলবে,দেখো কত রকমের গেম।
--তোমাকে ফোন করতে পারবো না?
--কেন পারবে না?তোমার যখন ইচ্ছে তখন করবে।তোমার জন্য আলাদা রিং টোন থাকবে।
--এসো এবার শুয়ে পড়ি।
মন আমাকে জড়িয়ে বুকে মুখ গুজে শুয়ে পড়ল।গরম নিশ্বাস বুকে লাগছে।ভেবেছিলাম মন হয়তো কিছু করবে। ওর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবি সেদিন ওরকম পাগলামী করল কেন? নাকি আমি জোর করেছিলাম আজ মনে করতে পারি না।এমন আচমকা সব ঘটে গেছিল কেউ কারো মধ্যে ছিলাম না। ওরটা কত বড় ভাবলে অবাক লাগে কি করে নিয়েছিলাম অত বড়?
 

kumdev

Member
435
397
79


পঞ্চদশ পর্ব


সপ্তা'খানেক কেটে গেল। মাকে আর ফোন করিনি মন খবর এনে দিয়েছে,সবাই ভাল আছে।সমুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ভাবখানা যেন কিছুই হয়নি। কয়েকটা ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্টে আমার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে।একটা ব্যাঙ্কের চেকবই সব সময় আমার সঙ্গে থাকে।মন বলেছে আমি যেন ওর কাছে টাকা না চাই।কিন্তু আমি তবু ওকে না জানিয়ে একদিনও টাকা তুলিনি। এখন মোবাইলে আমি বেশ চোস্ত।ঘরে বসে গেম খেলি।মজা করে একদিন নির্মলাসুন্দরীকে ফোন করেছিলাম পদ্মরাণির কথা বলতে খুব ঘাবড়ে গেছিলেন।বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন আমি কে,কোথা থেকে বলছি?হি-হি করে হেসে ফোন কেটে দিয়েছি।আজ একটু বের হবো,নিউ মার্কেটে যাবো।মনের কিছু আণ্ডার ওয়ার কিনতে হবে ওর সাইজ আটত্রিশ নিজের জন্য ইচ্ছে আছে সালোয়ার কামিজ কেনার,অনেকেই পরে, দেখি কেমন লাগে আমাকে।মন অফিস গিয়ে গাড়ী পাঠিয়ে দেবে।বাড়ীতে শাশুড়ী থাকলেও আমি নিঃসঙ্গ।এত জোরে জোরে কথা বলে কি গল্প করা যায়? নাতির কথা বলেন,এখন আর লজ্জা নয় বিরক্তিকর লাগে।আমি বলে দিয়েছি আমাকে না বলে আপনার ছেলেকে বলুন। একথা বলার পিছনে একটা কারণ আছে।মুখ বুক নাভি এমন কি গালের টোল পর্যন্ত কোনো কিছু বাদ রাখে না মন কিন্তু তার নীচে এ-কদিনও আর নামেনি।প্রথম প্রথম ভাবতাম এবার বুঝি কাপড় তুলবে অপেক্ষা করতাম রুদ্ধশ্বাসে কিন্তু হতাশ হয়েছি।আমি মেয়ে আমাকেই সব বলতে হবে? তাও শারীরিভাষায় প্রশ্রয় দিয়েছি কিন্তু একেবারে বেহায়া হওয়া কি সম্ভব? মনে মনে ভাবি ঠিক আছে তুমি পারলে আমি কেন পারবো না।দেখবো কতবড় ব্রহ্মচারী তুমি?
দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে উলঙ্গ করলাম।তলপেটের নীচে একথোকা বাল আয়নায় প্রতিফলিত।হাত দিয়ে বাল সরাতে চেরামুখ বেরিয়ে পড়ে।সেদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,মন খারাপ?
চেরামুখ বলল,আহা তোমারটা আমার উপর চাপাচ্ছো কেন?
আমি হেসে ফেলি,হাসলে আমার গালে টোল পড়ে। মনের খুব পছন্দ। ওয়ারড্রোব খুলে শাড়ী জামা পেটিকোট বের করলাম।গাড়ী আসার সময় হয়ে এল,এবার রেডি হতে হয়। প্যাণ্টি ব্রেসিয়ার সাড়ী জামা পরে আমি রেডি এখন গাড়ীর জন্য অপেক্ষা।একগোছা নোট আর চেক বইটা ব্যাগে ভরলাম।প্রথমে একবার পারলারে যেতে হবে তারপর নিউ মার্কেট।দরজা খুলে ব্যালকণিতে দাড়ালাম। এত দেরী করছে কেন?ঐ তো গাড়ী আসছে? দ্রুত শাশুড়ীর ঘরে গিয়ে বললাম,মা আমি আসছি?
কি বুঝলেন কে জানে উঠে বসে আমার মাথায় হাত দিয়ে হাসলেন। পায়ে চটি গলিয়ে নীচে নেমে এলাম।শিউপুজন গাড়ীর দরজা খুলে দিতে আমি ভিতরে ঢূকে বসে বললাম,পার্ক ষ্ট্রিট।ভিআইপিতে পড়ে দক্ষিণে ডানদিকে ঘুরে মাণিকতলা রোড ধরে চলল। এপিসি রোড ঘরে গাড়ী চলেছে।রাজা বাজার ছাড়াতে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ী।কি হল আবার?তাকিয়ে দেখলাম সারসার গাড়ী দাড়ীয়ে এখনই এত জ্যাম?রাস্তার ধারে দু-তিনটে ঘোড়ার গাড়ী দাঁড়িয়ে,গাড়ীতে চাপানো বড় বড় দুধের ক্যান। ঘোড়ার মুখে থলি লাগানো তাতে ঘাস বা ঐ জাতীয় কিছু আছে।কলকাতায় এই টাঙ্গা একসময় গুরুত্বপুর্ণ ছিল এখন ক্রমশ অবলুপ্তির পথে।মটর যানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয়।নজরে পড়ল একটা ঘোড়ার পিছনে দুপায়ের ফাক থেকে টিউব থেকে যেভাবে পেষ্ট বের হয় তেমনি ল্যাওড়াটা বের হচ্ছে।আমি আড়চোখে শিউপুজনকে দেখলাম।ডানদিকের জানলা দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে।আরি বাপ কি বিশাল ল্যাওড়া আমার মধ্যে ঢুকলে মরে যাবো।ছ্যর ছ্যর করে পেচ্ছাপ কর।কিছুক্ষণ পর আবার ছোট হতে হতে পেটের মধ্যে মিলিয়ে গেল।এত বড় ল্যাওড়া শরীরের মধ্যে মিশে গেল?
গাড়ী নড়ে উঠল।একটা রিক্সা গাড়ীর সামনে এসে পড়েছিল শিউপুজন চুতিয়া বলে মুখ খারাপ করল। গাড়ীতে মালকিন বসে সেদিকে খেয়াল নেই।আসলে 'চুতিয়া' শব্দটি অস্লীল ও মনে করে না। ঢিক ঢিক করে হ্যারিসন রোড পর্যন্ত গিয়ে আবার স্পীড নিল। জানলা দিয়ে ফুরফুর করে হাওয়া আসছে। গাড়ী চড়তে যেমেন আরাম কিন্তু যদি জ্যামে আটকে যায় তেমনি কষ্ট,ঘেমে গেছি।ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে থুপকে থুপকে ঘাম মুছলাম।পিছনে ঠেলে দিলাম কপালের চুল।
ঘোড়ার মত না হলেও মনের ল্যাওড়াও বেশ লম্বা আর মোটা। ভগবান আমাকে উজাড় করে দিয়েছে কোথাও কোনো খামতি রাখেনি। নিতে পারব কিনা সেটাই দেখার,অবশ্য একবার তো নিয়েছি।শিয়ালদার কাছে ফ্লাইওভার হচ্ছে সেইজন্য ট্রাফিক জ্যাম।মৌলালি পেরিয়ে গাড়ী চলেছে।
--পার্কষ্ট্রিট কোথায় মেমসাব?
--পার্লারে।
ডানদিকে বাঁক নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে গাড়ী ঢুকল।কিছুটা গিয়ে পার্লারের সামনে গাড়ী দাড়াতে নেমে পড়লাম।আগের দিনের মহিলার নাম যতদুর সম্ভব লিণ্ডা না কি নাম। সেই এগিয়ে এল জিজ্ঞেস করল,আপনি আগে এসেছিলেন না?
হেসে সম্মতি জানালাম।ঠিক মনে রেখেছে।আজ আগের দিনের মত অত সময় লাগল না।মিনিট পয়তাল্লিশ মত লেগেছে।গাড়ী নিউ মার্কেটের কাছে পার্ক করতেই নেমে মার্কেটে ঢুকে গেলাম।আমার শাশুড়ী থান পরে,থান পরলে কেমন বয়স্ক-বয়স্ক দেখায়।নীল ফিতে পাড় সাদা খোলের একজোড়া শাড়ী নিলাম। ভাবছি পরবেন তো?
না পরলে আবার বদলাতে আসতে হবে।হোসিয়ারি টারি মিলিয়ে পাঁচটা প্যাকেট হল।ঘড়িতে দেখলাম চারটে বেজে গেছে,মনকে আনতে যেতে হবে। নিউ মার্কেট থেকে বেরোচ্ছি মনে হল কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে।
শিউ পুজন কোথা থেকে এসে আমার হাত থেকে প্যাকেট গুলো নিয়ে নিল।পিছন ফিরে দেখি, ফাল্গুণী অবাক হয়ে আমাকে দেখছে।
ফাল্গুণীকে দেখে খুব খুশি হলাম তা নয়,বাবার খবর নেওয়া যাবে ভেবে জিজ্ঞেস করলাম,তুই একা?
--সমু আসবে বলেছিল এখন বলছে আসতে পারবে না।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার চেয়ে কোথাও বসলে হয়।বললাম,চল কোথাও একটু চা খাই।
দুজনে গাড়ীতে উঠলাম।ফাল্গুণী বলল,তুই চলে যাবার--।
শিউজিকে দেখিয়ে ইশারায় চুপ করতে বললাম।আমিনিয়া হোটেলের কাছে গাড়ী দাড় করিয়ে শিউজিকে বললাম,আপনি কিছু খেয়ে নিন। শিউজিকে টাকা দিয়ে আমরা হোটেলের একটা কেবিনে বসলাম।ফাল্গুণির মনে অনেক প্রশ্ন গিজগিজ করছে বুঝতে পারি। জিজ্ঞেস করতে পারছে না সঙ্কোচে।সেই ডমিনেটিং ভাব নেই।ঠাকুরঝি নয় আমাকে মণি বলে ডাকছে। বেয়ারা আসতে জিজ্ঞেস করলাম,কি খাবি বল।
--আজ শনিবার আমিষও চলতে পারে।
চিকেন স্টু আর তন্দুরি রুটী ফরমাস নিয়ে বেয়ারা চলে গেলে জিজ্ঞস করি,কি বলছিলি?
--তুই চলে যাবার পর মার রাগ পড়ল আমার উপর।বড়দিটা সেয়ানা ঘরে ঢূকে বসে আছে।মা থানায় খবর দিতে বলল,বড়দি বলল তাহলে কেলেঙ্কারীর সীমা থাকবে না।বড়দা বলল, মণি নিজের ইচ্ছেয় গেছে আমরা কি তাড়িয়ে দিয়েছি?
--বাবা কিছু বলেনি?
--সেইটাই তো অবাক ব্যাপার বাবা একেবারে চুপ।কাদছিল কি না মা বলতে পারবে।
--কেমন আছে বাবা?
--মোটামুটী।মাঝে মাঝে এমন করে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।আবার ঠিক হয়ে যায়।
আমার মনে পড়ল বাবার মুখটা।মুখে কিছু না বললেও বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন আমি জানি।বাবা অনেকটা আমার মত নিজের কষ্ট কাউকে শেয়ার করতে চায় না। জিজ্ঞেস করলাম,বাবাকে ডাক্তার দেখানো হয় না?
--দ্যাখ মণি অন্যের কথা বলতে আমার ইচ্ছে হয় না।তুই তো তোর ছোড়দার ইনকাম জানিস?ওরা দুজনে রোজগার করে তবু অফিসে লোন মুখে লেগে আছে।কিসের লোন?বিয়ে তো রেজিস্ট্রি করে হয়েছে।বড়দিটা ভীষণ কুচুটে তুই তো দেখেছিস?
আমার হাতে মোবাইল দেখে বলল,এটা কিরে,মোবাইল?
আমি ওর হাতে মোবাইলটা দিলাম একটু নাড়াচাড়া করে জিজ্ঞেস করে,খুব দামী,কিভাবে কল করে রে?
আমি মোবাইল নিয়ে জিজ্ঞেস করি,তোর নম্বরটা বল?
ফাল্গুণী নম্বর বলতে আমি ওর নম্বরের বাটন টিপলাম। ওর মোবাইল বেজে উঠল।
--দারুণ তো কত দাম?
--আমি কিনিনি আমাকে দিয়েছে।
খাওয়াদাওয়ার পর জিজ্ঞেস করি,তোকে কোথায় পৌছে দেবো উল্টোডাঙ্গা না শ্যামবাজার?
--তুই পৌছে দিবি?তা হলে আমাকে শ্যামবাজারে নামিয়ে দিস।
শ্যামবাজারে নেমে নীচু হয়ে ফাল্গুণী বলল, একদিন আয় না বাড়ীতে।
আমি চলে আসার পর কি কি ঘটেছে আমার সামনে ভেসে ওঠে ছবির মত। মা অসহায়ভাবে একবার বড়দাকে একবার ছোড়দাকে বলছে ওরা মাকে উলটো পালটা বোঝচ্ছে।থানায় খবর দেওয়ার কথা বললে বদনামের ছুতো দেখিয়ে মাকে বিরত করেছে।ঘরে শুয়ে শুয়ে লুকিয়ে চোখের জল ফেলেছেন বাবা।একরাশ নিরুত্তর প্রশ্ন নিয়ে ফাল্গুণী চলে গেল।আমি কোথায় কার কাছে আছি জানার আগ্রহ থাকলেও জিজ্ঞেস করতে সাহস হয়নি।টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছিল আমার কপালে সিন্দুর আছে কি না?সিন্দুর লাগালে স্বামীর মঙ্গল হয় কি না জানি না,নিয়মিত সিন্দুর পরি। মন খুব খুশি।একদিন মজা করে বলেছিল,রাস্তাঘাটে কখন কি হয় একটা দুশ্চিন্তা ছিল,এখন আর ভয় পাই না।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম,ভয় পাওনা কেন?
--এই সিন্দুর আমার রক্ষা কবচ। হাসতে হাসতে বলেছিল মন।
কথাটা শোনার পর সিন্দুরের প্রতি আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেছিল। আদো আদো গলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম,আমার রক্ষাকবচ কি?
মন আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে চেপে বলেছিল,আমার মণিকে কেউ আমার কাছে থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।
--তাই? দেখি এই ভালবাসা কতদিন থাকে?
গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়তে হুশ ফেরে শিউজি গাড়ী থেকে নেমে বলল,আমি আসছি মেমসাব।
শিউজির পিছন পিছন এসে গাড়ীতে উঠে আমাকে অবাক হয়ে দেখে।আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকি।
মন জিজ্ঞেস করল ,কি কিনলে?
--সব তোমাকে বলতে হবে?
মন গম্ভীর হয়ে যায়।শাশুড়ীর জন্য কেনা শাড়ীটা দেখিয়ে বললাম,মার জন্য কিনেছি,ভাল হয় নি?
চ্মকে উঠে বলল,তুমি কি পাগল?
--পাগলামীর কি হল?
--আবার তোমাকে বদলাতে যেতে হবে।মাকে তুমি চেনো না।তুমি কি ভেবেছো আমি চেষ্টা করিনি?
--ঠিক আছে আমি বদলে আনবো,তোমাকে ভাবতে হবে না।
বাসায় ফিরে শাশুড়ীকে শাড়ী দিয়ে বললাম,এখুনি পরে আসুন।
শাশুড়ী একবার শাড়ীর দিকে তাকায় একবার ছেলের দিকে তাকায়। মন উচু গলায় বলল,তোমাকে পরতে বলছে।
--আমি এইসব পরি?এতদিন পরলাম না আর কদিনই বা বাঁচবো।বউমা রাগ কোরনা এইটা তুমি নিয়ে যাও।
আমি নিজের ঘরে ফিরে এসে একটা কাগজে লিখলাম, "কাপড় পরলে নাতি দেবো।" তারপর শাশুড়ীর হাতে দিয়ে চলে এলাম।
মন বলল,তুমি মার ব্যবহারে কিছু মনে কোর না।পুরানো আমলের মানুষ ভীষণ জেদি--বুঝতেই পারছো।
আমি মনের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সালোয়ার কামিজ নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।চেঞ্জ করে বাইরে এসে দেখলাম মনের চেঞ্জ করা হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,কেমন লাগছে?
--আজকে কিনলে?
--হ্যা।কেমন লাগছে বললে নাতো?
--এমনি তোমার হিপ ভারী এতে আরো ফুটে উঠেছে।তুমি তো এসব আগে পরোনি।
এমন সময় শাশুড়ী চা নিয়ে ঢুকলেন,পরনে আমার কিনে দেওয়া শাড়ী। মন এমনভাবে তাকিয়ে যেন ভুত দেখছে।শাশুড়ী বললেন,তুমি আমাকে কথা দিয়েছো বউমা।
মন অসহায়ভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করে,আমি এতদিনে যা পারলাম না তুমি সেই শাড়ী পরিয়ে ছাড়লে? মণি তুমি মাকে কি কথা দিয়েছো?
আমি হেসে বললাম,পরে বলবো।
 
  • Haha
Reactions: Cute pie
Top