- 6,471
- 12,061
- 143
Part IX | নবম পর্ব।
আধার নেমে এসেছে। অনুদিকে এক ঘোরের মধ্যে মনে হয়। দুজনে বসে আছি পাশাপাশি। রুপাই নাকি রূপকথা বলে? অদ্ভুত লাগে অনুদির কথা। জিজ্ঞেস করি ,তুমি রুপাইয়ের কথা শুনতে পাও?
অনুদি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন, শোনা যায় না উপলব্ধি করতে হয়। দুই পাড়ে নিত্য ঘটে চলেছে কত অত্যাচার অবিচার অনাচার তার নীরব সাক্ষী এই রুপাই। রুপাই আমাদের মায়ের মত তা সত্বেও অকৃতজ্ঞ-পাষণ্ড সন্তানদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি রুপাই।স্নেহ-মমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে।
নতুন কথা শুনছি।এইসব কথা যেন আমার বুকে চাপা ছিল এতদিন।অনুদির কথায় যেন দরজা খুলে গেল।
--তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? অসুবিধে থাকলে বলিস না।
--কি কথা বলো,তোমাকে আমি সব কথা বলতে পারি।
--ব্রজবালার সঙ্গে তোর কেমন সম্পর্ক ছিল?
--জানো অনুদি বোজোদি আমাকে খুব ভালবাসতো--।
--তা নয় তুই কিছু করিস নি তার সঙ্গে?
অনুদি কি ইঙ্গিত করছে? অনুদি আর পাঁচজনের মত নয়।বোজোদির কথা মনে পড়ল।জানো অনুদি, বোজোদি বলতো, গোসাই তোমার-আমার একদিন মিলন হবে। বিশে-কেলোরা আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়ে বাবার কাছে মার খাইয়েছে।জানো আমার মা বিশ্বাস করেনি এমন কি দময়ন্তীও--।
--তুই কোন মেয়ের সঙ্গে কোনদিন কিছুই করিস নি?
কি জানতে চাইছে অনুদি? হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছে কেন? কিছু কি শুনেছে?
--থাক তোকে বলতে হবেনা।অনুদি প্রসঙ্গ বদলাতে চায়।
অনুদি নদীর দিকে তাকিয়ে বলে, তোর মধ্যে কোন হিপোক্রিসি নেই তুই খুব সরল। তোর এই গুণ মেয়েদের আকর্ষণ করে বেশি।
--কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি কথাটা বলিনি।
--মিথ্যে করে বানিয়ে বলতেও পারিস নি।
--বলিনি, শুনলে আমাকে ঘেন্না করবে।বিশ্বাস করো আমি না, রেবতী বউদি জোর করে--।
--কে রেবতী?
--পলাশপুরে থাকে অতুলদার বউ। অতুলদা তাকে সুখি করতে পারেনি। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি আচমকা--।
--ওই একবার? আর কখনো কারো সাথে--।
--মলিনাবৌদি--
অনুদি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,যার স্বামী জেলে আঁছে?
--হ্যাঁ। একদিন একটা পুটুলি আমাকে রাখতে দিল। কদিন পর সেই পুটুলি ফেরত দিতে গেলাম--।
--কি ছিল পুটুলিতে?
--তখন জানতাম না পরে জেনেছি--সোনা ছিল।
--ও ঐজন্য পুলিশ কিছু পায়নি?তুই খুব ঝুঁকির কাজ করেছিস অবশ্য না জেনে--।
--মলিনাবৌদি কি রকম আকুতি-মিনতি করতে লাগল তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। ভীষণ কষ্ট হল আমি না করতে পারলাম না। অনুদি তোমার খুব ঘেন্না হচ্ছে তাই না?
অনুদি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে তারপর স্মিত হেসে আমাকে আচমকা বুকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ চুমু দিয়ে বলল, আমার কাছে তোর সম্মান অনেক বেড়ে গেল। তুই এক নতুন অভিজ্ঞতা তোকে কথা দিতে হবে আমি যা বলবো তুই করবি?
--কঠিন কাজ না হলে করবোনা কেন?
অনুদির বুকের উষ্ণতায় মন সতেজ হয়ে উঠল।
--এবার ওঠ,তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরতে হবে। পরশুদিন একটা বই প্রকাশ উপলক্ষে বাড়িতে কয়েকজনকে ডেকেছি--অনেক কাজ বাকি।
--কি হবে সেখানে?
--কবিরা আসবে, কলকাতা থেকেও আসবে কবিতা-পাঠ আলোচনা--তুই আসবি?
--আমি কি করবো?আমি কি কবিতা লিখি?
--শুনতে ভাল লাগেনা? শুনবি--।চল, এখান থেকে স্টেশন বেশি দূর না।
অনুদির হাত আমার কাঁধে একটা সুন্দর গন্ধ অনুদির গায়ে। একসময় অনুদি বলে, তুই আজ আমাকে যা বললি আর কাউকে বলবি না। তুই জানিস ব্রজবালাকে কে খুন করেছে?
--মলিনাবৌদি বলেছে নকুড়দালাল রেপ করে খুন করেছে।
--মলিনা কি করে জানলো?
--সঙ্গে কেলোরা ছিল।ওদের সঙ্গে বৌদির খুব ভাব।বোজোদি কারও কোনো ক্ষতি করেনি।
--মলিনাকে এড়িয়ে যাবি,কোথা থেকে বিপদ আসে কে বলতে পারে।
আমার কাঁধে অনুদির ঝোলা তার উপর কাঁধে অনুদির হাত চলতে অসুবিধে হচ্ছে।কিছুক্ষণ নীরবে চলার পর অনুদি জিজ্ঞেস করে, তুই কাউকে কোনদিন ভালবেসেছিস?
--ওসব বিলাসিতা আমাকে মানায় না।
--না মানাবার কি আছে?
--বারে আমার কি টাকা আছে?টাকা না থাকলে কে আমাকে ভালবাসবে বলো?
--তুই এত জানলি কি করে?
--দাদাকে দেখলাম না? বড়লোকের মেয়ে দেখে সব ভুলে গেল।
--সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে অনুদি।
মনে মনে ভাবি অনুদির দুঃখের ভাগ আমি কোনোভাবে আমি কি নিতে পারিনা? অনুদি বড় চাপা নিজের দুঃখের ভার কাউকে শেয়ার করতে চায় না। বড় রাস্তায় পড়তে অনুদি কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বলল, দে আমার ব্যাগ দে।
ট্রেনে উঠে অনুদি গম্ভীর অন্য চেহারা। হিজলতলিতে নেমে বলল, পরশু আসবি কিন্তু অনেক কথা আছে।
রিক্সার প্যাক প্যাক ধ্বনিতে মুখর স্টেশন চত্বর। মা বলেছে বেশি দেরি করবিনা। দ্রুত পা চালালাম বাড়ির দিকে। মেয়েদের বুকের উষ্ণতা কি প্রেরণা সঞ্চার করে? রুপাইয়ের তীরে অনুদির বুকে মাথা রেখে সেরকম অনুভূতি হল। রমেশদার বাড়ির কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম। জানলায় দাঁড়িয়ে মলিনাবৌদি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখলেই আমাকে ডাকতে পারে।অনুদি বলেছে এড়িয়ে চলতে আমি একটু ঘুরে অন্য পথ ধরলাম।
সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। তাই কি? জানি না অনুদি কোন ভালবাসার কথা বলল। বোজোদি আমাকে ভালবাসতো, খাওয়াতো কিন্তু কোনোদিন হাত পেতে কিছু চায়নি। বলতো গোসাই তোমারে চোখে দেখলেই আমার শান্তি। শুধু চোখের দেখাতেই কি শান্তি পাওয়া যায়? আর কোনো চাহিদাই নেই? অনেকক্ষন না দেখলে বা ফিরতে দেরী হলে মা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। ফিরলে অনুযোগ করতো, সারাদিন কোথায় থাকিস,মার কথা মনে পড়েনা? বেলা হচ্ছে দেখে কি দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
আধার নেমে এসেছে। অনুদিকে এক ঘোরের মধ্যে মনে হয়। দুজনে বসে আছি পাশাপাশি। রুপাই নাকি রূপকথা বলে? অদ্ভুত লাগে অনুদির কথা। জিজ্ঞেস করি ,তুমি রুপাইয়ের কথা শুনতে পাও?
অনুদি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন, শোনা যায় না উপলব্ধি করতে হয়। দুই পাড়ে নিত্য ঘটে চলেছে কত অত্যাচার অবিচার অনাচার তার নীরব সাক্ষী এই রুপাই। রুপাই আমাদের মায়ের মত তা সত্বেও অকৃতজ্ঞ-পাষণ্ড সন্তানদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি রুপাই।স্নেহ-মমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে।
নতুন কথা শুনছি।এইসব কথা যেন আমার বুকে চাপা ছিল এতদিন।অনুদির কথায় যেন দরজা খুলে গেল।
--তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? অসুবিধে থাকলে বলিস না।
--কি কথা বলো,তোমাকে আমি সব কথা বলতে পারি।
--ব্রজবালার সঙ্গে তোর কেমন সম্পর্ক ছিল?
--জানো অনুদি বোজোদি আমাকে খুব ভালবাসতো--।
--তা নয় তুই কিছু করিস নি তার সঙ্গে?
অনুদি কি ইঙ্গিত করছে? অনুদি আর পাঁচজনের মত নয়।বোজোদির কথা মনে পড়ল।জানো অনুদি, বোজোদি বলতো, গোসাই তোমার-আমার একদিন মিলন হবে। বিশে-কেলোরা আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়ে বাবার কাছে মার খাইয়েছে।জানো আমার মা বিশ্বাস করেনি এমন কি দময়ন্তীও--।
--তুই কোন মেয়ের সঙ্গে কোনদিন কিছুই করিস নি?
কি জানতে চাইছে অনুদি? হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছে কেন? কিছু কি শুনেছে?
--থাক তোকে বলতে হবেনা।অনুদি প্রসঙ্গ বদলাতে চায়।
অনুদি নদীর দিকে তাকিয়ে বলে, তোর মধ্যে কোন হিপোক্রিসি নেই তুই খুব সরল। তোর এই গুণ মেয়েদের আকর্ষণ করে বেশি।
--কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি কথাটা বলিনি।
--মিথ্যে করে বানিয়ে বলতেও পারিস নি।
--বলিনি, শুনলে আমাকে ঘেন্না করবে।বিশ্বাস করো আমি না, রেবতী বউদি জোর করে--।
--কে রেবতী?
--পলাশপুরে থাকে অতুলদার বউ। অতুলদা তাকে সুখি করতে পারেনি। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি আচমকা--।
--ওই একবার? আর কখনো কারো সাথে--।
--মলিনাবৌদি--
অনুদি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,যার স্বামী জেলে আঁছে?
--হ্যাঁ। একদিন একটা পুটুলি আমাকে রাখতে দিল। কদিন পর সেই পুটুলি ফেরত দিতে গেলাম--।
--কি ছিল পুটুলিতে?
--তখন জানতাম না পরে জেনেছি--সোনা ছিল।
--ও ঐজন্য পুলিশ কিছু পায়নি?তুই খুব ঝুঁকির কাজ করেছিস অবশ্য না জেনে--।
--মলিনাবৌদি কি রকম আকুতি-মিনতি করতে লাগল তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। ভীষণ কষ্ট হল আমি না করতে পারলাম না। অনুদি তোমার খুব ঘেন্না হচ্ছে তাই না?
অনুদি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে তারপর স্মিত হেসে আমাকে আচমকা বুকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ চুমু দিয়ে বলল, আমার কাছে তোর সম্মান অনেক বেড়ে গেল। তুই এক নতুন অভিজ্ঞতা তোকে কথা দিতে হবে আমি যা বলবো তুই করবি?
--কঠিন কাজ না হলে করবোনা কেন?
অনুদির বুকের উষ্ণতায় মন সতেজ হয়ে উঠল।
--এবার ওঠ,তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরতে হবে। পরশুদিন একটা বই প্রকাশ উপলক্ষে বাড়িতে কয়েকজনকে ডেকেছি--অনেক কাজ বাকি।
--কি হবে সেখানে?
--কবিরা আসবে, কলকাতা থেকেও আসবে কবিতা-পাঠ আলোচনা--তুই আসবি?
--আমি কি করবো?আমি কি কবিতা লিখি?
--শুনতে ভাল লাগেনা? শুনবি--।চল, এখান থেকে স্টেশন বেশি দূর না।
অনুদির হাত আমার কাঁধে একটা সুন্দর গন্ধ অনুদির গায়ে। একসময় অনুদি বলে, তুই আজ আমাকে যা বললি আর কাউকে বলবি না। তুই জানিস ব্রজবালাকে কে খুন করেছে?
--মলিনাবৌদি বলেছে নকুড়দালাল রেপ করে খুন করেছে।
--মলিনা কি করে জানলো?
--সঙ্গে কেলোরা ছিল।ওদের সঙ্গে বৌদির খুব ভাব।বোজোদি কারও কোনো ক্ষতি করেনি।
--মলিনাকে এড়িয়ে যাবি,কোথা থেকে বিপদ আসে কে বলতে পারে।
আমার কাঁধে অনুদির ঝোলা তার উপর কাঁধে অনুদির হাত চলতে অসুবিধে হচ্ছে।কিছুক্ষণ নীরবে চলার পর অনুদি জিজ্ঞেস করে, তুই কাউকে কোনদিন ভালবেসেছিস?
--ওসব বিলাসিতা আমাকে মানায় না।
--না মানাবার কি আছে?
--বারে আমার কি টাকা আছে?টাকা না থাকলে কে আমাকে ভালবাসবে বলো?
--তুই এত জানলি কি করে?
--দাদাকে দেখলাম না? বড়লোকের মেয়ে দেখে সব ভুলে গেল।
--সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে অনুদি।
মনে মনে ভাবি অনুদির দুঃখের ভাগ আমি কোনোভাবে আমি কি নিতে পারিনা? অনুদি বড় চাপা নিজের দুঃখের ভার কাউকে শেয়ার করতে চায় না। বড় রাস্তায় পড়তে অনুদি কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বলল, দে আমার ব্যাগ দে।
ট্রেনে উঠে অনুদি গম্ভীর অন্য চেহারা। হিজলতলিতে নেমে বলল, পরশু আসবি কিন্তু অনেক কথা আছে।
রিক্সার প্যাক প্যাক ধ্বনিতে মুখর স্টেশন চত্বর। মা বলেছে বেশি দেরি করবিনা। দ্রুত পা চালালাম বাড়ির দিকে। মেয়েদের বুকের উষ্ণতা কি প্রেরণা সঞ্চার করে? রুপাইয়ের তীরে অনুদির বুকে মাথা রেখে সেরকম অনুভূতি হল। রমেশদার বাড়ির কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম। জানলায় দাঁড়িয়ে মলিনাবৌদি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখলেই আমাকে ডাকতে পারে।অনুদি বলেছে এড়িয়ে চলতে আমি একটু ঘুরে অন্য পথ ধরলাম।
সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। তাই কি? জানি না অনুদি কোন ভালবাসার কথা বলল। বোজোদি আমাকে ভালবাসতো, খাওয়াতো কিন্তু কোনোদিন হাত পেতে কিছু চায়নি। বলতো গোসাই তোমারে চোখে দেখলেই আমার শান্তি। শুধু চোখের দেখাতেই কি শান্তি পাওয়া যায়? আর কোনো চাহিদাই নেই? অনেকক্ষন না দেখলে বা ফিরতে দেরী হলে মা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। ফিরলে অনুযোগ করতো, সারাদিন কোথায় থাকিস,মার কথা মনে পড়েনা? বেলা হচ্ছে দেখে কি দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
Last edited: