3rd part
তৃপ্তি চা নিয়ে ঘরের ভিতরে গিয়ে নিজের স্বামীকে কপালে চুমু দিয়ে হালকা আদর করে ডেকে দিল। আশিক হুটোপাটা করে ওঠে বসে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিতেই তৃপ্তি তাড়াতাড়ি রুম থেকৈ বের হয়ে গিয়ে সরাসরি পূজার সামগ্রী রেডি করে নিয়ে ঠাকুরের সামনে বসে পূজা আর্চণা করে ঘরদোর ঝাড়– দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না শুরু করে দিল। অল্প সময়ের মধ্যে রান্না করে সবাইকে খেতে ডাক দিল। সবাই তৃপ্তির ডাক শুনে যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। সবাইকে খেতে দিয়ে শাশুড়ির তাড়া খেয়ে নিজেও স্বামীর পাশে খেতে বসল। সবাই খাচ্ছে তখন হঠাৎ শিখা বলে উঠল
-কি ব্যাপার বাবা মা তোমাদের কাছে কি ব্যবসা এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে কবে থেকে?
বাবা- কেন মা ? হঠাৎ এই কথা বললি ?
দিদি- যদি তাই না হয় তাহলে বাবু (আশিক) কেন এত তাড়াতাড়ি বাহিরে যাচ্ছে বৌমাকে রেখে?
বাবা- না মা ওটা হলো ওদের ভবিষ্যৎ এর জন্য। তাছাড়া ওটা কমপ্লিট হয়ে গেলে আমরা অন্য জায়গায় শিফ্ট হতে পারবো। আর তোরও তো বিয়ের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে তাই না। যদিও বা আমার এই জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই যদি তোর বৌমা এইসব ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করে।
দিদি- কি ব্যাপারে বাবা?
বাবা- দেখ সবে মাত্র বিয়ে করেছে আর আমাদের এই সোসাইটিতে তোর বৌদির আলাদা একটা পরিচয় আছে সেটা ভেবে দেখেছিস? তারা কিভাবে একসেপ্ট করবে তৃপ্তিকে বা আশিককে। ওদের তো নিজের জীবন নিজেদের মতো গড়তে চাইবে।
তৃপ্তি- না বাবা আমিও এই জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাই না। আর আমার পরিচয় এর কথা বলছেন আমি যখন এক মুসলিম পরিবারের মানুষ হয়ে আপনাদেও ধর্মকে আপন করে নিয়েছি, নিজের ছেলে, স্বামীকে ফেলে রেখে আপনাদের বাড়িতে এসে উঠেছি তাও কি বলবেন যে আমি আপনাদের পরিবারের কেউ নই?
বাবা- না মা আমি এই কথাটি মিন করে বলি নাই। আমি বলতে চাচ্ছি যে এখন না হয় মান্নান ভাই সাহেব বাহিরে আছে উনি যখন ফিরবেন তখন কি হবে ব্যাপারটা ভেবে দেখেছ? আর তোমার ছেলে না হয় তোমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে তাতে কোন সমস্যা নাই কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীরা কি বলবে যখন তোমাকে এই রূপে দেখবে কারন তোমার আর আশিকের বিয়ে আমরা না বাহিরে রিসর্টে করে এসেছ আর পাশাপাশি বাড়ি হওয়াতে তুমি চুপিসারে আমাদের এখানে আসছো এবং আমাদের তুমি যতোই সম্মান করে থাকো না কেন আশিকের কি ইচ্ছা করে না বৌ নিয়ে একটু বাহিরে ঘুরতে যেতে বা ইত্যাদি ইত্যাদি।
তৃপ্তি- না বাবা আপনার কথাটি ঠিকই আছে। কিন্তু আমার পোড়া কপাল।
এইবলে তৃপ্তি কাঁদতে লাগলো। ওর কান্না করা দেখে সবাই ওর চারপাাশে দাড়িয়ে সান্তনা দিতে লাগলো।
তমালিকা মানে তৃপ্তির বর্তমান শাশুড়ি তৃপ্তিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতেই তৃপ্তি আরো অঝরো কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো
তৃপ্তি- মা বিশ্বাস করেন আমি উনাকে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি সাথে সাথে আমি আপনাদের আর এই পরিবারের সবাইকে ভালোবাসি। আমি আপনাদের ছাড়া থাকতে পারবো না।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর তৃপ্তি নিজের চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাড়ালো আর একটু মুচকি হেসে বলল-
তৃপ্তি- আপনারা কিছু চিন্তা করবেন না। আমি এই সমস্যা সমাধান করে দিবো। আর আশা করি দুই চার দিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমার ভালোবাসা যদি সত্যিই হয়ে থাকে তবে আমি এই বাড়িতে চিরোতরে ফিরে আসবো।
এইবলেই তৃপ্তি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসলো যদিও বা সবাই ওকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করল তবুও সে চলে আসলো।নিজের বাড়ির দরজা নক করতেই তৃপ্তির ছেলে শাকিল দরজা খুলে দিয়েই ওর মাকে টেনে ঘরের ভিতরে নিয়ে বসালো আর জিজ্ঞসা করল
শাকিল- কি ব্যাপার মা কি হলো? এতো সকালবেলা চলে আসলে নতুন শশুর বাড়ি থেকে (একটু ইয়াকি মার্কা হাসি দিয়ে)
তৃপ্তি- সবসময় ইয়ার্কি করবি না শাকিল। একটা ব্যাপারে ফিরে আসলাম। আমি সব কিছু তোর বাবাকে বলতে চাই। এমন লুকোচুরির সম্পর্কে আমি আর থাকতে চাই না। আমি মন খুলে উনাকে নিয়ে বাঁচতে চায় আর এতে যদি আমার বদনামও হয় তাহলে তা মাথা পেতে মেনে নিব, কিন্তু এভাবে ধুকে ধুকে, লুকিয়ে আর নাহ। তাছাড়া পাড়া প্রতিবেশীদের ও জানাতে হবে এ ব্যাপারে। আর আমি আশা করি আমাদের কলোনীর যে সংস্তৃতি, সমপ্রীতি, সহবস্থান তাতে সবাই প্রথমে একটু একটু মানা করলেও পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি বাবা মাকে কথা দিয়ে এসেছি যে আমার ভালোবাসা সত্যি আরসকল বাধা বিপত্তি দুর করেই আমি আমার প্রাণের প্রিয় মানুষের গৃহিণী হবো।
তারপর এই কথা গুলো শেষ হতেই শাকিল বলে উঠল
শাকিল- মা তুমি যেটা ভালো মনে কর তাই কর। আমি তোমার সাথেই আছি আর থাকবো।
এই কথা শুনে তৃপ্তি তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল
তৃপ্তি- এইতো আমার লক্ষী ছেলে মায়ের মনের কথা বুঝতে পেরেছে। আমি গর্বিত তোর মতো ছেলেকে গর্ভে ধারন করে।
এই বলে তৃপ্তি ফোন দিল তার ১ম স্বামী বা প্রাতœন স্বামী মকবুল সাহেবেকে। আর বলল
তৃপ্তি- শুনেন কেমন আছেন
মকবুল- ভালো তা হঠাৎ এই সময় ফোন দিলে কি সমস্যা?
তৃপ্তি- তা একটু আছে। যদি পারেন তাহলে আজকে বিকালের মধ্যে চলে আসেন। জরুরী কথা আছে। আর এটা আমার জীবন মরনের প্রশ্ন। আপনাকে আসতেই হবে।
মকবুল- জীবন মরন মানে বুঝলাম না।
তৃপ্তি- ওতো কিছু ফোনে না বুঝলেও চলবে। আসতে বললাম আসেন।
মকবুল- আচ্ছা আসতেছি।
এই বলেই ফোন কেটে গিয়ে মকবুল সাহেব হাতের কাজ সেরে দুপুরের আগেই বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দিলেন।
মকবুল সাহেব বাড়ি ফেরার আগে আমরা তৃপ্তিদের কলোনীর বর্ণনা শুনি। শহরের মাঝেই শহর। মানে শহরের একপাশে অনেকটা ঘিঞ্জি পরিবেশের লোকালয় মানে অতিরিক্ত বসতি আর ষর বাড়ি গুলো এমন ভাবে তৈরী যে যদি ইচ্ছা হয় তাহলে এক বাড়ির ছাদ থেকে অন্য বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় যাওয়া যাবে। মানে বেশির ভাগ বাড়ির কোন প্রাচীর বা পাঁচিল নাই। প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার লোকের বসবাস। গরমরে সময় বা শীতকালেও অনেক পরিবারের লোকজন বাসার ছাদে ঘুমায়। এলাকায় ঘুড়ি ওড়ানো খুবই জনপ্রিয় খেলা ওই কারনে। এলাকায় ৫টি মসজিদ, ৩টি মন্দির, ১টি গির্জা রয়েছে। বংশ পরম্পরায় সবাই এখানে মিলে মিশে বসবাস করে। সবার উৎসবে সবাই শরিক হয়। আর ৯০ শতাংশ বিয়ে শাদি প্রায় নিজ এলাকায় হয়ে থাকে। মানে প্রায় নিজেদের পরিচিতদের মধ্যে। তাই বাহিরের লোকজন তেমন একটা নাই এখানে। শহরের সকল সুবিধাই আছে। খবুই সুখী একটা পরিবেশ।
এখর শুধুই মকবুল সাহেবের অপেক্ষা।