• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery আগুণের পরশমণি : কামদেব

thanda_hawoa

New Member
1
0
16
বেশ ভালই এগোচ্ছে গল্পটি । কিন্তু আপডেটের জন্য অপেক্ষা করতে করতে তাল কেটে যাচ্ছে।
 

kumdev

Member
437
397
79
দ্বাত্রিংশতি পরিচ্ছেদ



আজ রবিবার অফিস কাছারি বন্ধ। সুরেশবাবু পয়সা দিয়ে একটা কাগজ নিলেন।কাগজ সামনে মেলে ধরে পড়ার চেয়ে বেশী হচ্ছে আলোচনা।সবার বগলে বাজারের ব্যাগ,বাজার করে বাসায় ফিরবে।ম্যডামকে বাজারে ঢুকতে দেখেছে,তার দিকে একবার তাকায় নি।
আরণ্যক হাসে,দপুরে দেখা হবে।
কি যে দিনকাল হচ্ছে।মেয়েরা এখন শাড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছে।বিনয় আঢ্যের গলায় আক্ষেপ।
সব পশ্চিমী প্রভাব বুঝলেন না মেম সাহেব হতে চায়।সুরেশ বাবু তাল দিলেন।
কথাগুলো আরণ্যকের কানে যেতে মনে মনে হাসে।
যাই বলুন আমাদের শাড়ীর কোনো তুলনা হয়না।অজিতবাবু বললেন।একটা কাপড়ে কি সুন্দর সারা শরীরের আব্রু রক্ষা করে।
আরে মশাই এখন বেআব্রু হবার দিকে ঝোক।বিনয় আঢ্য বললেন।
আরণ্যক টুকটাক খদ্দের সামসাতে ব্যস্ত তারই মধ্যে কাকুদের আলোচনা বেশ উপভোগ করে।ওরা আরণ্যকের উপস্থিতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।আরণ্যক ভাবে এখনো বের হল না কি এত বাজার করছে?
শীতলবাবু বললেন,আমাদের সময় মনে আছে আমার দিদি যে স্কুলে পড়ত সেখানে কড়া নিয়ম ফ্রকের ঝুল হতে হবে হাটুর নীচ পর্যন্ত,হাটু দেখা গেলেই ক্লাস করতে হবেনা বাড়ী পাঠিয়ে দিত।
ধুর মশাই সে দিনকাল কি আর আছে।এখন দিদিমণিরাই শালওয়ার কামিজ পরছে।
তা যা বলেছেন আমাদের সময় বয়স্করা ছিল পাড়ার অভিভাবক।সামনে কেউ সিগারেট পর্যন্ত খেতো না।এখন বলতে যাও শুনিয়ে দেবে আপনার বাবার পয়সায় খাচ্ছি?
সিগারেট কি বলছেন,চোখের সামনে মেয়ে নিয়ে ঘুরছে।
আরণ্যক ভাবে এত বেলা হল মান্তুদের কি হল।ওরা এলে এগুলো বিদায় হবে।
পশ্চিমী কালচার সমাজটাকে উচ্ছন্নে নিয়ে যাবে।
ও কথা বলবেন না।ওদের অনেক ভাল দিকও আছে--না মানে--।
আলোচনায় ছেদ পড়তে আরণ্যক চোখ তুলে তাকালো।বাজার থেকে মিস ব্রাউন বেরিয়েছেন।ওদের দৃষ্টিগুলো ম্যাডামকে তীরের মত বিদ্ধ করছে।
শুনেছিলাম ম্যারেড কিন্তু বয়স তো খুব বেশী নয়।
কলেজে নাকি অধ্যাপনা করেন।
চাবুকের মত ভেরি স্মার্ট-।
আরণ্যক নিজেকে সামলাতে পারেনা বলল,দেখুন কাকু দোকানের সামনে এসব করলে আমি কিন্তু আপনাদের সম্মান রাখতে পারব না।
কি করলাম?বলেছি স্মার্ট--।
শুধু স্মার্ট বলেছেন--।
পিকলু এসে আরণ্যককে সামলে বলল,ঠিক আছে কাকু আপনি শুধু স্মার্ট বলেছেন।দেখুন কাকু আপনারা গুরুজন আপনাদের সম্মান করি।এবার বলুন কোন মহিলা স্মার্ট আর কোন মহিলা আন স্মার্ট সেটা দেখা কি আপনার কাজ?
অজিতবাবু ছাড়ুন তো আসুন যত বাজে ঝামেলা।পিকলু বাদ দেতো আমাদের ঘাট হয়েছে।
ওরা বাজারে ঢুকে গেল।
পিকলু রনোর দিকে তাকিয়ে হাসলো।
পিকলু তুই ছিলিস না--।
তোর এত গায়ে লাগছে কেন?
আরণ্যক থতমত খায়,সামলে নিয়ে বলল,শালা সকাল থেকে কানের কাছে--।
পিকলু হেসে ফেলে রনোর উত্তেজনা দেখে,হাসি থামিয়ে বলল,তোর সামনে পড়ে আছে বিশাল জীবন।কাকুরা জীবনের কিনার অবধি পৌছে গেছে।ইচ্ছে করলেই আমাদের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে না।তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার মত একটু কচলাকচলি।যে মুখগুলো রোজ দেখছিস কোনদিন দেখবি এদের মধ্যে একটা মুখ নেই।
আরণ্যকের মনটা খারাপ হয়ে যায়।পিকলু অনেক পরিণত বুদ্ধি,বিয়ের পর মানুষ আরো পরিণত হয়।
কিরে কি ভাবছিস?
মনটা অনেক দূর চলে গেছিল পিকলুর কথায় হুশ হয় উদাস গলায় বলে,তুই ঠিকই বলেছিস।আমাদেরও বয়স হচ্ছে আমরাও একদিন ঐ বয়সে পৌছে যাব সেদিন কম বয়সী ছেলেরা আমাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে।
মান্তু এসে রনোর কথা শুনে বলল,শুধু ছেলেরা নয় মেয়েরাও ফিরে দেখবে না।তখন তোর এই মেয়েপটানো চেহারা থাকবে নাকি?
তুই থামতো,আমাদের মধ্যে কি নিয়ে কথা হচ্ছিল তুই জানিস?
কিরে পিকলু বিশুর ব্যাপারের কথা রনোকে বলিস নি?ওইতো শুভ নির্মলদা আশিস উত্তম সবাই এসে গেছে।
পিকলু বলল,নির্মলদা আমাদের কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তুমিই বলো।
আমি বলব?নির্মল এদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ্য।
হ্যা-হ্যা তুমি বল।শুভ তাল দিল।যারা জানেনা তারাও জেনে নেও।
নির্মল গলা খাকারি দিয়ে শুরু করল,সবাই শোনো।বিশুর বিয়েতে আমরা ম্যারেড আনম্যারেড সবাই একসঙ্গে যাব।বিশে বারবার বলেছে আমরা যেন কোনো উপহার না নিয়ে যাই কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত করেছি সবাই মিলে একটা ভালো গিফট দেব।যারা ম্যারেড তাদের জন্য ধার্য হয়েছে একশো আর আনম্যারেডদের জন্য পঞ্চাশ টাকা।
পিকলু বলল,রনোরটা বলো।
হ্যা রনোর যেহেতু কোনো আয় ণেই ওকে কিছু দিতে হবেনা।এবার মান্তু চা বল।গলা শুকিয়ে গেছে।
আমি পঞ্চাশ টাকা দেব।আরণ্যক বলল।
তুই কি করে দিবি?
আরণ্যক হাত তুলে বলল,আমার কাছে আছে।
আছে মানে সেই আলমারি বিক্রীর টাকা এখনো শেষ হয়নি?
হবে কি করে আমি কিছু খরচ করি?
রনোকে জিদ থেকে টলানো যাবে না সবাই জানে।কেউ কিছু বলল না।
জাতও গেল পেটও ভরল না।ঘুম থেকে উঠে রাধা টের পেল গুদের মুখ চ্যাট চ্যাট করছে।বাথরুমে গিয়ে কাপড় তুলে হাত দিয়ে দেখল রক্ত জমে।শালা লালু প্রসাদ তখনই সন্দেহ হয়েছিল।কোথায় গুদ উপচে পড়বে তা না টেরই পেলনা।খুব আশায় ছিল তার মাসিক বন্ধ হয়ে যাবে।তাহলে সেকি আর কোনদিন মা হতে পারবে না?কি নিয়ে কাটাবে সারাটা জীবন। এখন ভরসা সেই ফার্টিলিটি সেণ্টার।বাজারের ছেলেটার মুখটা মনে পড়ল।খুব পছন্দ হয়েছিল।বাইরে হাড্ডা কাট্টা চেহারা হলে কি হবে ভিতরে ভীতুর ডিম।মেয়েমানুষের গলা শুনলে লোকে ফোন ছাড়তে চায়না এ ব্যাটা খালি বলে রাখছি--রাখছি।
রান্নার মাসী চলে গেছে।আজ রামের অফিসের তাড়া ণেই।বিছানায় আধ-শোয়া হয়ে কাগজ পড়ছে।রাধা পাশে এসে বসতে কোলে মাথা এলিয়ে দিল।রামের মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে রাধা বলল,তুমি আমাকে ভালবাসো?
কাগজ সরিয়ে রেখে রাধার দিকে তাকিয়ে বলল,হঠাৎ এই প্রশ্ন?তোমার শরীর ভাল আছে তো?
আমার কোনো বাচ্চা হল না।
রামনারায়ণ উঠে বসে বউয়ের মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলল,দেখো রাধু খারাপ তো লাগে।তোমার খারাপ লাগে না?
আমার কিন্তু নিয়মিত মাসিক হয়।এইতো আজ হল।
বুঝতে পারছি সবই ঠিক আছে।বুঝতে পারছি না কেন হচ্ছে না।আর দেরী করা ঠিক হবে না,আমাদেরও বয়স হচ্ছে।আমি খোজ খবর নিচ্ছি সামনের রোববার ক্লিনিকে চলো দেখি কি বলে।
বেলা হয়েছে তুমি স্নান করে নেও।
বদ্যিনাথের হোটেল থেকে বেরিয়ে সকালের কথা মনে হল।সবাই একসঙ্গে যাবে মানে বউরাও থাকবে।ভেবে একটু অস্বস্তি হয়।চুপচাপ সারাক্ষণ মুখ বুজে থাকতে হবে। আজ ম্যাডাম বাসায় আছে তাড়াতাড়ি পা চালায় আরণ্যক।সকালের ব্যাপারটা হয়তো খেয়াল করেনি।তিনতলায় উঠে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে স্টাডি রুমে ঢুকে গেল।
বইগুলোর দিকে নজর পড়তে দেখল অন্য বই,আগের বইগুলো কোথায়?
ইলিনা ঢুকে বললেন,আনু সকালে বয়স্ক মানুষগুলোর সঙ্গে কি হয়েছিল?
এইরে খেয়াল করেছে।কি বলবে আরণ্যক ভেবে পায়না।
শোনো আনু বাতাসে বিভিন্ন পদার্থ মিশে তা থেকে আমরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকুই গ্রহণ করি।অবাঞ্ছিত পদার্থকে গুরুত্ব দিতে যাব কেন?সব কথা গায়ে মাখতে নেই।
আরণ্যক মুগ্ধ হয়ে শোনে।পিকলু একভাবে বলেছিল ম্যাম বলল,অন্যভাবে।আরণ্যক বলল,বইগুলো দেখছি না।
আমি সরিয়ে দিয়েছি।এখন থেকে এগুলো পড়বে।
কিন্তু এভাবে পড়লে তো পাস করতে পারবো না।
পাস ফেল নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।তুমি পড়ে যাও।আর যদি ভাল না লাগে চলে যেতে পার।আমি ধরে নেব মানুষ চিনতে আমার ভুল হয়েছিল।
ইলিনা ব্রাউন চলে গেল।পরীক্ষা দেব আমি আর পাস-ফেল নিয়ে ভাববে আরেকজন।আরণ্যক ভাবল চলে যাবে।আবার পরমুহূর্তে কিছু ভেবে মনে হল সব কথা গায়ে মাখার দরকার কি।নতুন বইগুলো টেনে নিল।
মেনকা সান্যাল ঘুমিয়ে পড়েছেন।সহেলী ভাবল বাথরুম সেরে এসে সেও একটু গড়িয়ে নেবে। বাথরুমে ঢুকে পায়জামার দড়ি খুলে বসে পড়ল।আঃ-আ-আ।আসার সময় দেখে এসেছে ছ্যার খাটে বসে আছে,ঘুমায় নি।ছ্যারের জন্যি খারাপ লাগে,কত টাকা খরচ করতিছে বউয়ের জন্যি কিন্তু বউটা এখনো লুলা কথা বলতি পারে না।প্রস্রাবের পর গুদে জলের ঝাপটা দিয়ে উঠে পায়জামার দড়ি বেধে বাথরুম হতে বেরিয়ে এল।
সত্যপ্রিয় চোখ বুজে বসে আছে।
ছ্যার বসে আছেন?
সত্যপ্রিয় চোখ খুলে সামনে সহেলীকে দেখে বললেন,ও তুমি?মাথাটা ভীষণ ধরেছে ঘুম আসছে না।
মাথা ধরেছে শুনে চলে যাওয়া কি ঠিক হবে?সহেলী বলল,টিপে দেব?
টিপে দেবে?তা হলে তো ভালই হয়,দাও।সত্যপ্রিয় শুয়ে পড়ল।
সহেলী খাট ঘেষে দাঁড়িয়ে দু-হাত মাথা টিপতে লাগল।
সত্যপ্রিয় আয়েশে আ-হা-আ-আ শব্দ করে।
ভাল লাগতিছে?সহেলী পিঠে ছ্যারের হাতের স্পর্শ অনুভুত হয়।
তোমার স্বামীর কোনো খবর পেলে?
আর খবর।আমাদের তো লাবম্যারেজ--।
লাব নয় বলো লাভ।
ঐহল--লাব।
ব-নয় ভ।বলো লাভ।
লাভ।সেইজন্যি ওর কথা মনে পড়লি খারাপ লাগে।কত বুঝাইছি কালাবাবুর দল ছাড়ো তা শুনলি তো? সহেলী টের পায় ছ্যারের হাত তার কোমরে চাপ দিচ্ছে।খারাপ লাগে না।রেবতীকাকীর কথা মনে পড়ল।শিক্কিত মানুষে আলাদা আনন্দ।
তোমার আর আমার অবস্থা একই।রগের কাছে ভাল করে টেপো।
সহেলী টিপতে টিপতে বলল,কি যে বলেন ছ্যার কুথায় আপনি কত শিক্কিত আর আমি--।
শিক্কিত নয় বলো শিক্ষিত।
ঐ হল শিখ্যিত।
জানো সহেলী শিক্ষিত হও কিম্বা অ-শিক্ষিত,গরীব হও কি বড়লোক একটা ব্যাপারে সবাই এক।
কোন ব্যপারে ছ্যার?সহেলীর টেপা বন্ধ হয়ে যায়।
শরীরের জ্বালা বোঝোনা?একথা বলে হাত বাড়িয়ে সহেলীর মাথাটা টেনে ওর ঠোট জোড়া সত্যপ্রিয় মুখে নিয়ে চুষতে লাগল।
পাশের ঘর থেকে আওয়াজ আসে,স-স-গর-র-র-র-এ-এ-এ---।
উম-ম-ম ছাড়েন ছাড়েন,ম্যাডামের ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
মেনকার গোঙ্গানী তারও কানে এসেছে,সহেলীকে ছেড়ে দিয়ে সত্যপ্রিয় বলল,রাগ করলে?
লাজুক হেসে সহেলী বলল,আপনি খুব অসভ্য।
হেমন্তে দিন ছোট হয়ে এসেছে।ইলিনা উঠে লাইট জ্বেলে রান্না ঘরে গেল।মাংসের কিমা দিয়ে স্যাণ্ডউইচ করল।আনুর চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে।একটা ট্রেতে স্যাণ্ডউইচ চা সাজিয়ে স্টাডি রুমে ঢুকে অবাক হবার ভান করে বলল,একী তুমি যাওনি?
আরণ্যক বই গোছাতে গোছাতে বলল,ভেবেছিলাম চলে যাব, লেখাপড়া আমার জন্য নয়।তারপর মনে হল একটা মানুষ আমার জন্য এত ভাবে এত করে ঘরের চাবিটা পর্যন্ত বিশ্বাস করে তুলে দিয়েছে সে কি একটা বলল সেটাই বড় হয়ে গেল।সব কথা গায়ে মাখার কি দরকার।
মুচকি হেসে ইলিনা বলল,এইতো আনু সোনার বুদ্ধির দরজা খুলেছে।এগুলো কতক্ষণ ধরে দাড়ীয়ে থাকব?
আরণ্যক হাত বাড়িয়ে ট্রেটা নামিয়ে একটা স্যাণ্ডুইচে কামড় দিয়ে চিবোতে চিবোতে ভাবে,ম্যাডামের অনেক গুণ।দোকানের মত খেতে হয়েছে।
 
  • Like
Reactions: Zayna

Zayna

New Member
38
18
9
Nice update😘
 

kumdev

Member
437
397
79
ত্রয়োস্ত্রিংশতি পরিচ্ছেদ




ঘণ্টা পড়তেই ইলিনা ব্রাউন ক্লাসে যাবার জন্য তৈরী হতে থাকে।এটাই আজ তার শেষ ক্লাস।চক ডাস্টার তার তেমন লাগেনা তবু চক ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে যাওয়া তার অভ্যেস।পিজি মানে পলি গুহ এসে বললেন,মিস ব্রাউন ক্লাসে যাচ্চেন?
হ্যা কিছু বলবেন?
পিজি এদিক-ওদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বললেন,ঠিক আছে ক্লাসটা করে আসুন।আপনার সঙ্গে একটা ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই।
কি ব্যাপার বলুন না?
আপনি ক্লাসটা করেই আসুন।এক্টু সময় লাগবে।
কিছু মনে করবেন না পলিদি,ক্লাস শেষ হলেই ছুটতে হবে।আজ আমি সময় দিতে পারব না।
পিজি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,কি ব্যাপার বলুন তো বিয়ে-থা করেন নি---।
ইলিনা হেসে বলল,না মানে আজ একজন গেস্ট আসার কথা।
মিথ্যে বলার জন্য ইলিনার একটু খারাপ লাগে।আসি পলিদি।ইলিনা ক্লাসে চলে গেলেন।
পিজিকে দেখে নিলীমা সিকদার এগিয়ে এসে বললেন,মিস ব্রাউন কি বলছিল?
তেমন কিছুনা।আগে দেখতাম ছুটির পরও লাইব্রেরীতে কত সময় কাটাতো ইদানীং দেখছি ছুটি হতেই বাড়ী ফেরার তাড়া।
ছাড়ুন তো পলিদি মেম সাহেবদের ব্যাপার আলাদা।কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে কে জানে।
পলি গুহ হেসে ফেলেন।নিলীমা অনেক জুনিয়র ইতিহাসের অধ্যাপিকা।মিস ব্রাউনকে অন্য চোখে দেখে তিনি জানেন বললেন, যাঃ নিলীমা কিযে বলোনা মিস ব্রাউন খুব কণ্ট্রোল্ড লাইফ লিড করে আমি লক্ষ্য করেছি।বলছিল বাড়িতে কে একজন গেস্ট আসবে।
গেস্ট মানে বুঝেছেন?
পলি গুহ কথা বাড়ায় না।
স্টাফ রুমে ঢুকে সোমা মুখার্জীর পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,গুরুদেবের কাছে গেছিলেন?
এসএম নিলীমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন কি জানতে চায়।মিস ব্রাউনকে ছাড়াই একা গেছিলেন।বললেন,হ্যা ঘুরে এসেছি।
আচ্ছা সোমা দীক্ষা নিতে গেলে কি করতে হয়?নীচু গলায় জিজ্ঞেস করে নিলীমা।
কেন আপনি দীক্ষা নেবেনআঃ?
স্বামীকে না জানিয়ে দীক্ষা নেওয়া যাবে?
কেন আপনার স্বামী আপত্তি করবে?
নিলীমা হাসল বলল,আমার স্বামীর কথা শুনলে আপনার হাসি পাবে।গুরু তো গুরু কোনো পুরুষ মানুষের কাছে তার বউ যাক পছন্দ করেনা।
পুরুষ তো পুরুষই সে গুরু হোক কি যেই হোক মিসেস মুখার্জী হাড়ে হাড়ে সেদিন টের পেয়েছে।বলল,কিন্তু পরে যদি জানতে পারে?
সেটাই তো ভাবছি।গুরুর কাছে বসে উপদেশ শুনব গুরুকে আমার সমস্যার কথা বলব আমার অনেকদিনের সাধ।আচ্ছা গুরুদের অনেক ক্ষমতা তাই না?
কিছু তো অলৌকিক ক্ষমতা থাকেই।
আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?
সোমা মুখার্জী এক মুহূর্ত ভেবে বলল, আপনাকে বলছি কিন্তু কথা দিতে হবে কাউকে বলবেন না।
আমাদের মধ্যে কথা কাউকে বলব কেন?
তাহলে শুনুন একদিন গুরুজীকে প্রণাম করতে গেছি ঘরে কেউ ছিল না।গুরুজী চোখ বুজে বসে আছেন,সামনে দুধের বাটি তাতে লিঙ্গ ডোবানো।বিশ্বাস করবেন না চোখের সামনে বাটির দুধ শেষ হয়ে গেল!
সেকি লিঙ্গ দিয়ে দুধ পান করলেন?লিঙ্গটা কত বড়?
লিঙ্গটা বেশী বড় নয় ইঞ্চি পাচ-ছয় হবে।লিঙ্গ দিয়ে মূত্র ত্যাগ করে জানতাম কিন্তু দুধ পান জন্মে শোনেনি।সত্যি সাধনায় কি না সম্ভব।
ভাবছি ওকে বলে যদি দীক্ষা নেওয়া যায়।
ক্লাস শেষ হতে স্টাফ রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।পলিদি হয়তো ক্ষুন্ন হয়েছেন।জরুরী কাজ কিছু নয় ছুটি হলেই মনে হয় আনুটা কি করছে?নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে একী কেবল সহানুভূতি নাকি আর কিছু?উত্তর খুজে পায় না।কলেজ থেকে ফিরে দেখেছে বইপত্র গুছিয়ে চলে গেছে তবু আশা যদি একটু দেরী করে।ইলিনা লক্ষ্য করেছে সব সময় তাকে নজরে নজরে রাখে।একদিন বলল, ম্যাম আপনি বাজারে যাবেন না।
বোকার মত কথা।লোকজন তাকে দেখে নানা মন্তব্য করে সেটা ওর পছন্দ নয়।ইলিনার মজা লাগে বলল,বাজার না করলে খাবো কি?
আমি যদি আপনার বাজার করে দিই?
এই গোলামী মানসিকতা ইলিনার ভাল লাগে না বলল,কেন তোমাকে দিয়ে আমি বাজার করাবো কেন?
আনুর মুখটা কালো হয়ে গেল।
বাস আসতে উঠে পড়ল ইলিনা।একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে বলল।ইলিনা বসে ঘড়ি দেখল,বাস যদি জ্যামে নাও আটকায় পয়তাল্লিশ মিনিট লাগবেই।
ছুটে চলেছে বাস।জানলা দিয়ে ফুরফুর হাওয়া ঢুকছে।আনু হয়তো এখনো বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।
নিশীথ এসে গোলমাল করায় এগিয়ে এসেছিল।তার আগে দোকানে বসে থাকতে দেখেছে।পুজোর সময় একদিন আলাপ।ভীড়ের মধ্যে সারাক্ষণ আগলে আগলে রাখছিল।মেয়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোধ লক্ষ্য করেছে।মনে হয়েছে ছেলেটি মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়।কেন যেন মনে হয়েছিল ছেলেটির জন্য কিছু করা উচিত।যদি লেখাপড়া করে দাড়াতে পারে ভাল লাগবে।বই পড়ার ঝোক আছে কিন্তু এলোমেলো উদ্দেশ্যহীন। তার প্রতি ছেলেটির দুর্বলতা টের পেয়েছে।চলে যেতে বললেও যায়নি।আচ্ছা ওকে নিয়ে এত ভাবছে কেন?ইলিনার অবাক লাগে।
পলিদি কি বলতে চাইছিলেন এখন মনে হচ্ছে শুনলে হতো।তাড়াতাড়ি এসে দেখা তো হয়না।ওর জন্য একটা মিথ্যে বলতে হল। ঘুরেফিরে আবার ওর কথা এসে গেল,ইলিনা বিরক্ত হয়।
বাসটা দাড়িয়ে গেল কেন,বেশ তো চলছিল।জানলা দিয়ে মুখ বের করে দেখল সামনে গাড়ীর সারি।দশ মিনিটের জার্নিতে পাচ মিনিট ট্রাফিক জ্যাম বিরক্তিকর।বসে বসে ঘামো।
আমার ভায়রার এক ছেলে জার্মানী মেয়ে বিয়ে করেছে।সে মেয়েটিরও শাড়ি খুব পছন্দ।
আর আমাদের মেয়েরা--।ল
কথাটা কানে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ইলিনা।পঞ্চাশের উপর বয়স ভদ্রলোক।তারই পাশে রড ধরে দাড়িয়ে,বুঝতে অসুবিধে হয়না তাকে দেখেই ভায়রার ছেলের বউয়ের কথা মনে পড়েছে।সে যে বাংলা বুঝতে পারে ওরা জানেনা, মনে মনে হাসে ইলিনা।বাস নড়ে উঠল।স্বস্তি ফিরে এল যাত্রীদের মধ্যে।
বাইরে তাকিয়ে ইলিনা দেখতে থাকে।এত বেলা হয়ে গেল দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।
বাস থেকে অটোয় চেপে বসল।মাইক বাজছে কোথাও।ইদানীং কিছু হলেই মাইক চাই। মনে পড়ল আগুনের পরশমণি গানটা।গানটার কথা ভাবলে মনের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হয়।চালতাবাগান আসতে কয়েকজন নেমে গেল ইলিনা আজ নামল না।বাজারের কাছে নেমে নজরে পড়ে দোকান খোলা।দোকান পেরোতে গিয়ে আড়চোখে দেখল আনুকে নজরে পড়ল না।আছে আশপাশে কোথাও।
স্কুল থেকে বিচ্ছুকে নিয়ে বাসায় ফিরছে রেবতী।ভেবেছিল লোকটা বাড়ীতে আসবে,আসেনি।তারপর স্কুলেও আসেনি।নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি লোকটা দাদাকে চেনে।সেইজন্য হয়তো আসেনি।
পিসি আমি এখন একাএকা বাড়ী যেতে পারি।বিচ্ছু বলল।
জানি তো খুকনসোনা এখন কত্ত বড় হয়ে গেছে।রেবতী ভাবে ছেলেটা বড় হয়ে গেলে তাকে হয়তো কাজ খুজতে হবে অন্যত্র।
সিড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে ইলিনা চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল।স্টাডিতে আলো জ্বলছে নিভিয়ে যায়নি।ওকে বলতে হবে।ব্যাগ রেখে স্টাডিতে উকি দিতে অবাক আনু যায়নি।বেশ সাজগোজ করে এসেছে।
তুমি এখনো যাওনি?দোকান খুললো কে?
আমি আজ ছুটি নিয়েছি দাদা নিজেই খুলেছে।আরণ্যক বলল।
ছুটি নিয়েছো কেন?চ
আমার এক বন্ধুর বিয়ে বরযাত্রী যাব।
আরণ্যকের মোবাইল বেজে উঠতে বিরক্ত হয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?...রিয়া সেন আপনার বাবার নাম কি বলুন তো...।
ইলিনা ফোনটা নিয়ে কানে লাগিয়ে হ্যালো বলতে ওপাশ থেকে প্রশ্ন,আপনি কে বলছেন?
ইলিনা বলল,আমি ওর গার্ল ফ্রেণ্ড।ফোন কেটে দিল।
ম্যাডামের কথা শুনে আরণ্যকের মজা লাগে হেসে বলল,যদি জানতো ফরেনার কথা বলছে তাহলে ভিরমি খেতো।
কেন ফরেনার তোমার পছন্দ নয়?
আমি ঐ রিয়া সেন না কি তার কথা বলেছি।
আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি যা সত্যি তাই বলবে।
আমি মিথ্যে বলিনা।
সত্যিটা শুনতে চাই আমাকে পছন্দ করো কিনা?
রাগ করবেন নাতো?আরণ্যকের মনে দ্বিধা।
রাগ করব কেন?সত্য সব সময় আমার প্রিয় নাও হতে পারে।কি হল বল।
আমি পড়তে রাজি হয়েছি আপনার জন্য।আপনার সঙ্গে কথা বলতে আপনার কথা শুনতে আমার ভাল লাগে।আজকে আপনার সঙ্গে দেখা হবে বলে অপেক্ষা করছিলাম।
ইলিনা গম্ভীর হয়ে গেল।
ম্যডাম আমি তাহলে আসি?
একটু বোসো চা করছি।
ইলিনা বেরিয়ে গিয়ে পোশাক বদলায়।মনের মধ্যে অনুভূত হয় গুঞ্জন ধ্বনি।
কথাগুলো কি খারাপ বললাম?আরণ্যক ভাবে।ম্যাডামের সাহচর্য ভাল লাগে।যা সত্যি তাই বলেছি রাগ করল তো বয়েই গেল। মনে হচ্ছে পড়াশুনার পাট চুকলো।
ইলিনা ব্রাউন দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকল।এক কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,দেখি তোমার মোবাইলটা।
মোবাইল নিয়ে বলল,আমার নম্বর সেভ করে দিলাম।যখন আমার কথা শুনতে ইচ্ছে হবে ফোন করবে।
আরণ্যক স্বস্তি বোধ করে ম্যাডাম রাগ করেনি।শান্তিতে চায়ে চুমুক দিতে লাগল।
বিয়ে কোথায়?মনের অস্থিরতা কাটাতে ইলিনা জিজ্ঞেস করে।
ঠিক জানিনা।চালতা বাগানের মোড়ে বাস আসার কথা।ঐখানে সবাই আসবে।
আরণ্যক লক্ষ্য করে ম্যাডামের পা-গুলো বেশ লম্বা সুডৌল ইচ্ছে করে পেন্সিল নিয়ে আঁকতে বসে যাই।বাইরে থেকে যতই ওজস্বিনী মনে হোক ভেতরে অত্যন্ত কোমল।আমার ছন্নছাড়া বয়ে জীবনের প্রতি কেন এত দরদ।
ইলিনা ব্রাউন ইচ্ছে করেই লুঙ্গিটা হাটুর উপর অবধি তুলে বসেছে।লক্ষ্য করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে দেখছে।অবাক লাগে রমণী শরীর দেখেও চোখে লালসার আগুন জ্বলে উঠল না বরং মুগ্ধতার স্নিগ্ধ আলো।কামনায় গড়ে ওঠা সম্পর্ক বড়ই পলকা।মনের উসখুস ভাবটা ডানা মেলে দিল ইলিনা ব্রাউন বলল,আনু তুমি বলছিল আমার কাছে থাকতে ভাল লাগে।
না না ম্যাডাম তা বলিনি।আপনাকে দেখলে অলস মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়।জিয়ন কাঠির কথা শুনেছেন যার ছোয়ায় মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হয়।
মনে পড়ল সেই গানটা--আগুণের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে।ইলিনা সরাসরি বলে ফেলল,তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
আরণ্যক হতবাক সেকি ঠিক শুনেছে?চাঁদ আকাশেই সুন্দর তাকে নাগালে পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি।এই অবাস্তব প্রশ্নের কি উত্তর দেবে।
কি হল কিছু বলছো না যে?
কি বলব আমার গলা শুকিয়ে উঠছে।
আমাকে তোমার পছন্দ নয়?
আপনাকে পছন্দ নয় এতবড় মিথ্যে বলার শক্তি বিধাতা আমাকে দেয়নি।আমি অন্যকথা ভাবছি।
আবার কি কথা আমাকে বলা যাবে না?
যার কোনো ঠাই নেই একপয়সা আয় নেই সে বউকে কোথায় রাখবে কি খাওয়াবে তার ঠিক নেই।ম্যাডাম আপনি মজা করছেন নাতো?
এইটা তোমার চ্যালেঞ্জ বউকে খাওয়াতে হবে,তার একমাত্র উপায় পড়াশুনা করে পাস করতেই হবে।আর শোনো ম্যাডাম-ম্যাডাম করবে নাতো।
তাহলে কি বলব ম্যাম?
আমার নাম ইলিনা ব্রাউন।আমার কাছে এসো।
আরণ্যক কাছে যেতে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে মাথাটা নিজের কাধে চেপে ধরে ইলিনা ব্রাউন।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর ইলিনা ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল,কেমন লাগছে?
জিয়ন কাঠির ছোয়ায় শরীরের প্রতিটি কোষ জেগে উঠছে।
আমাকে কি বলবে?
তোমাকে বলব লিনা।
বাঃ সুন্দর নাম।আজ থেকে আমাদের মধ্যে কোনো পর্দা থাকবে না।
মোবাইল বেজে উঠতে ইলিনা ওকে বাহু বন্ধন মুক্ত করে দিল।আরণ্যক মোবাইল কানে লাগিয়ে বলল,আমি তো রেডি বাস এসে গেছে..... হ্যা আসছি,পাচ মিনিট।ইলিনা ব্রাউনের দিকে তাকিয়ে বলল,আসি লিনা?
ইলিনা দু-গাল ধরে টেনে আরণ্যকের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে আরণ্যক হাতের পাঞ্জায় কোমর খামচে ধরল।
 

kumdev

Member
437
397
79

চতুস্ত্রিংশতি পরিচ্ছেদ



বাস ভরে গেছে। বাসের একদিকে বয়স্করা অন্যদিকে বিশুর বন্ধুর লোকজন।পিকলু বুদ্ধিকরে জানলার ধারে রুমাল দিয়ে জায়গা রেখেছিল।আরণ্যক রুমাল সরিয়ে বসল।কিচির মিচির আলাপ চলছে।মেয়েরা থাকলে কিচির মিচির হবেই।আরণ্যকের পিছনে পিকলু তার বউকে নিয়ে বসেছে।ঘাড় ঘুরিয়ে রুমাল ফেরত দিতে গিয়ে বউয়ের সঙ্গে চোখাচুখি হল।পিকলু বলল,পারমিতা তুমি তো রনোকে চেনো।
পারমিতা মুচকি হেসে সম্মতি জানাল।
কিরে আর কেঊ বাকী নেইতো?পিছন থেকে কে যেন জিজ্ঞেস করল।
আমাদের সবাই উঠেছে।পিক্লু বলল।
বাস স্টার্ট নিয়ে চলতে শুরু করে।জানলা দিয়ে হাওয়া ঢোকে,বাসের গুমোটভাবটা কেটে যায়।
শালা দু-দুটো প্রেম কেটে গিয়ে শেষে এখানে বিয়ে হচ্ছে।পিকলু বলল।
ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্য।পাশ থেকে পারমিতা বলল।
মঙ্গল কি অমঙ্গল জানিনা সবে তো দু-বছর হল।
কি বললে?তোমার কি অমঙ্গল হয়েছে শুনি?পারমিতা ফোস করে উঠল।
পিকলুর বিয়ে হয়েছে দু-বছর।বউকে রাগাবার জন্য মজা করে।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খুনসুটি আরণ্যক উপভোগ করে।
আমার কথা তো তুমি শুনলেই না,আমি বলতে চাইছি বিয়ে কার যে কোথায় হবে সব বিধাতার মর্জি।
পিকলুর কথাটা আরণ্যককে স্পর্শ করে।সেও কি কখনো কল্পনা করেছে ইলিনা ব্রাউন তার বউ হবে?যেমন রূপ তেমনি গুণ।যে করেই হোক তাকে লিনার যোগ্য হতেই হবে।আঙুলের আংটিটায় হাত বোলায়।
সানাইয়ের আওয়াজ কানে আসে।বিয়ে বাড়ীর কাছাকাছি এসে পড়েছে মনে হচ্ছে।রাস্তার একপাশে সারি সারি গাড়ী পার্কিং করা।মেয়ের বাড়ী অবস্থাপন্ন মনে হল।বাস থামতেই কয়েকজন লোক অভ্যর্থনা করতে এগিয়ে এল।
দোতলায় বিশাল ডাইনিং হল।তিন তলায় অভ্যাগতদের বসার জায়গা।একপাশে একটা ঘরে সাজানো চেয়ারে বসে আছে কনে।তাকে ঘিরে আছে কয়েকজন মহিলা।
মান্তু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,বিশের বউয়ের নাম কি যেন--?
বৈশালী।এখনো বৌ হয়নি।আশিস বলল।
মেয়েরা সব বউয়ের ঘরে ঢুকে আলাপ শুরু করে দিল।
আশিস ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ বৈশালীকে দেখে বলল,আমার মনে হয় চিনির থেকে সুন্দরী,কিরে রনো তোর কি মনে হয়?
আচ্ছা যে এখানে নেই খামোখা তাকে টেনে আনা কেন?
কেন আনবে না কেন তুই তো জানিস বিশুকে কিভাবে চাকরের মত খাটিয়েছে।শালা বেইমান মাগী।
আজ একটা শুভদিনে কি এইসব আলোচনা করার সময়?
লিনার কথা মনে পড়ল।পরিচিতজনের কাছে স্বামীর কি পরিচয় দেবে।মনে মনে আরণ্যক প্রতিজ্ঞা করে যে করেই হোক লিনা এই লজ্জা ঘোচাবে।কলেজে যাতে বুক ফুলিয়ে বলতে পারে আমার স্বামী এই!
আচমকা সবার মধ্যে চঞ্চলতা লক্ষ্য করে।শাখ বাজছে উলুধ্বনি শোনা যাচ্ছে।খোজ নিয়ে জানা গেল বর এসেছে।বিশ্বনাথ চক্রবর্তী এসে গেছে।কনেবৌকে ফেলে সবাই নীচে চলে গেছে। বর দেখার তীব্র আকাঙ্খ্যা বুকে চেপে বসে কনে ,তার নীচে যাবার উপায় নেই।
আরণ্যক কি করবে একা একা দাঁড়িয়ে চারদিক দেখছে।শাখের আওয়াজ বাড়তে থাকে।টোপর মাথায় বিশুকে নিয়ে কয়েকজন মহিলা উপরে উঠে এল।চোখাচুখি হতে হাসল প্রমীলা বাহিনী এড়িয়ে কথা বলতে পারল না।বিয়ে বাড়ীতে মেয়েদের প্রাধান্য। একটা ঘরে বিছানা পাতা সেখানে বিশুকে বসিয়ে দিল।ধুতি-পাঞ্জাবীতে বিশুকে বেশ লাগছে।
একটি ভীড় থেকে বেরিয়ে কনেবৌয়ের কাছে নীচু গলায় বলল,ভালই হয়েছে মালটা।
বৈশালী লাজুক গলায় বলল,ধ্যেৎ।
মেয়েদের জটলার কাছে নজরে পড়ল শুভ দাড়িয়ে চা খাচ্ছে।মেয়েগুলো তার দিকে তাকাচ্ছে?আরণ্যক ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে দেখল কাকে দেখছে নিশ্চিত হবার জন্য।দাড়িয়ে থেকে অস্বস্তি বোধ হয়।একা আসলে খেয়েদেয়ে বেরিয়ে যেত।এখন খেলেও সবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।কারো যাবার তাড়া নেই।বরযাত্রীর এই ঝামেলা সবাইকে যা করার একসঙ্গে করতে হবে।কোথায় গেল সবাই,শুভ ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।নীচে খেতে বসে যায়নি তো?তা কিকরে হবে কয়েকজনের বউতো উপরে কনেবৌয়ের ঘরে গপ্পে মেতে আছে।
একবার নীচে যাবে কিনা ভাবে।মেয়েদের মধ্যে শুভটা কি করছে।তাকে দেখতে পাচ্ছে না নাকি?
মেয়েদের জটলা হতে এসে আরণ্যককে এককাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলল,আমি সুদেষ্ণা মিত্র।বৈশালীর বন্ধু।
সুদেষ্ণা দেখতে মন্দ না,আরণ্যক হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে ভদ্রতার খাতিরে বলল,আমি আরণ্যক সোম বিশু মানে বরের বন্ধু।
সুন্দর নাম।খুব বোর লাগছে?
না না ঠিক আছে।আরণ্যক মৃদু হাসল।
সুদেষ্ণার যাবার লক্ষণ নেই।এতো দেখছি ঝামেলা,কি করবে আরণ্যক।চুপচাপ চায়ে চুমুক দিতে থাকে।
সুদেষ্ণা বলল,কোনো দরকার হলে বলবেন।যেতে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসল।
সুদেষ্ণা চলে যেতে শুভ এসে জিজ্ঞেস করে, কি বলছিল রে?
কে সুদেষ্ণা?
উরি শালা নামও জেনে গেছিস?
না জানার কি আছে এসে বলল,আমি সুদেষ্ণা।
অনেক্ষণ থেকে তোকে ঝারি করছিল।তোর প্রেমে পড়ে গেছে।বল কথা বলব?
হ্যা বল।একটা দোকানে পেটভাতায় কাজ করে কোনো উপার্জন নেই।
শুভ করুণ চোখে রনোকে দেখে।আরণ্যক মনে মনে হাসে।লিনার কথা জানলে কি হবে?

বর বিয়ের পিড়িতে বসে গেছে দু-আশে পুরোহিত আর মেয়ের বাবা।আরণ্যক স্বস্তি বোধ করে ,মেয়েরাও এসে জড়ো হয়েছে।শেখরকে দেখে একজন বলল,এইতো কবি এসে গেছে।
শেখর একটু কবিতা-টবিতা লেখে সেজন্য বন্ধুরা ওকে কবি বলে ডাকে।
তা কবি কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম ফুল বনে কাউকে লাগে কিনা মনে।
পাশেই ছিল শেখরের বউ শ্রীলেখা পিঠে চিমটি কেটে বলল,বাড়ী চলো ফুল বন দেখাচ্ছি।
মান্তু মজা করে বলল,বলেছিস বেশ বাড়ীর ফুলে মধু শেষ?
শ্রীলেখার মুখ লাল হয়।
শেখর বলে,বাড়ির ফুলে সুস্বাদু মধু আছে ভরা কিন্তু সর্বক্ষণ রয়েছে কড়া পাহারা।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল।শ্রীলেখাও সে হাসিতে যোগ দেয়।
উলু ধ্বনি উঠতে দেখা গেল কনেকে আনা হচ্ছে।বিয়ে শুরু হয়ে গেল।
রাত বাড়ছে সবাই খাবার জন্য নীচে নেমে গেল।আরণ্যকের কেউ ণেই সেজন্য বিশু রাতে থাকার জন্য বলেছিল।সকালে দোকান খুলতে হবে বলে এড়িয়ে গেল। ফেরার জন্য মন অস্থির। খাওয়া-দাওয়া শেষে বাসে উঠে দেখল রাত দশটা পেরিয়ে গেছে।
কে একজন বলল,কবি বউ কেমন দেখলে?
শেখর বলল,ওহে তাঁতি ভাই পেয়েছো এবার তাঁত চালাও সুখে মাকু সারারাত।
বাস ছেড়ে দিল। মাকু চালাও কথাটা বুঝতে পেরে ইলিনার কথা ভেবে আরণ্যকের কান লাল হয়।চালতা বাগানের মোড়ে নেমে দোকানে পৌছাতে পৌনে এগারোটা।মোবাইলে নম্বর টিপে কানে লাগায়।রিং হচ্ছে দ্রুত কেটে দিল।বিছানা করে আরণ্যক শুয়ে পড়ল।মনে ভাসে ইলিনা ব্রাউনের মুখ।লিনা তার বউ বিশ্বাস করতে পারছে না।ফোন বেজে উঠতে কানে লাগিয়ে শুনতে পেল,ফোন করে কেটে দিলে কেন?
না মানে এত রাতে--
যখন ইচ্ছে হবে ফোন করবে।তুমি কোথায়?
দোকানে,এইমাত্র ফিরেছি।
আচ্ছা বিশ্রাম করো।
 

kumdev

Member
437
397
79

পঞ্চত্রিংশতি পরিচ্ছেদ




দেখতে দেখতে প্রায় তিন মাস কেটে গেল।আরণ্যক নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশুর বিয়েতে কত রকম আচার অনুষ্ঠানের ঘটা দেখার পর নিজের বিয়েটা নিয়ে সংশয় দানা বেধে আছে।বৈশালীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে।বিশুর কথায় একদিন মান্তুকে নিয়ে গেছিল ওদের বাসায়।আলাপ করে খারাপ লাগেনি।একটা মজার ঘটনা মনে পড়ল।একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,ঠাকুর-পো সুদেষ্ণাকে আপনার কেমন লাগে?
আচমকা প্রশ্নে অবাক হয়ে আরণ্যক জিজ্ঞেস করে,সুদেষ্ণা কে?
দুষ্টু হেসে বৈশালী বলল,বিয়ে বাড়ীতে এত কথা হল এর মধ্যে ভুলে গেলেন?
মনে পড়ল শুভ যে মহিলার কথা বলছিল।আরণ্যক বলল,মনে পড়েছে আপনার বন্ধু সুদেষ্ণা।ভালই সামান্য দু-একটা কথা হয়েছিল--।
ওর সঙ্গে আরো কথা বলতে ইচ্ছে হয়?
শুভও এরকম বলছিল।এখানেই থামানো দরকার।আরণ্যক বলল,বিশু আমার কথা কিছু বলেনি?
বৈশালী হেসে বলল,বলেনি আবার আপনি খুব সাহসী ভয় ডর নেই গুণ্ডা মস্তানরাও আপনাকে ভয় পায়।
এর মধ্যেই এসব বলা হয়ে গেছে।বিশু আমাকে এভাবেই দেখে।পিকলু হয়তো অন্য রকম বলতো।এক একজন মানুষ এক একজনকে
তারমত করে দেখে।আরণ্যক আশপাশ দেখে মান্তুটা আবার কোথায় গেল?
দেখুন আমি চাকরি-বাকরি তেমন কিছু কসরিনা।পেট ভাতের বিনময়ে একটা দোকানে কাজ করি।
ধ্যেৎ খালি ইয়ার্কি।
ইয়ার্কি না বিশুকে জিজ্ঞেস করবেন।
বৈশালীর মুখে ছায়া নেমে আসে।আলাপের স্পৃহা দপ করে নিভে গেল।
মান্তু এসে বলল,বিশুকে মানা করলাম তবু মিষ্টি আনতে গেল।
আপনারা কথা বলুন।বৈশালী সুযোগ পেয়ে হাফ ছেড়ে বাচল।
আরণ্যক কিছু মনে করেনা।এসব তার গা-সওয়া হয়ে গেছে।
মান্তু পাশে বসে বলল,কিরে বিশুর বউকে কেমন লাগল?
ভালই তো।
মান্তু বিরক্ত হয়ে বলল,তোর কাছে খারাপ কি বলতো?
আরণ্যক হেসে বলল,আমাদের ভাল মন্দতে কি যায় আসে বল।বিশু বউকে নিয়ে সুখে থাকলেই হল।
সেটা ঠিক।তবে বউটা সেয়ানা আছে।
চাকরি করে,পাচ জনের সঙ্গে বাইরে মিশতে হয় বোকাহাবা হলে হবে।
বেলা হল আরণ্যক গোছগাছ শুরু করে। ইলিনা ব্রাউন এদের থেকে আলাদা।এখন হয়তো কলেজে বেরোবার তোড়জোড় করছে।আরণ্যকের মনে হল পাস করতে না পারলে মুখ দেখাবার জো থাকবে না।ও বলে পাস ফেল নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।যত দিন যাচ্ছে তত নতুন মনে হয় ইলিনাকে কোনোদিন ও বুঝি পুরানো হবে না।ইলিনা ব্রাউন তার বউ স্বপ্নেও ভাবে নি কখনো কেবল বিয়েটা নিয়ে একটা খটকা খচখচ করে মনে।এসব নিয়ে ভাবতে চায় না,পাসটা করতে পারলে জীবনটা অন্যরকম হবে।দোকানে কাজ করি শুনে সেদিন বৈশালীর আচরণ মহূর্তে বদলে গেছিল। কেউ ব্যক্তিকে মর্যাদা দেয় কারো কাছে ব্যক্তির চেয়ে তার অলঙ্কারের গুরুত্ব বেশী।আরণ্যক অবশ্য ব্যক্তির সঙ্গে অলঙ্কারকেও সমান মূল্য দেয়।
সকাল থেকে গা-টা কেমন ম্যাজ ম্যাজ করছে।চিবুকের নীচে গলায় স্পর্শ করে তাপটা বোঝার চেষ্টা করে।আজ আর কলেজ যেতে ইচ্ছে করেনা।রান্না না করেই এক কাপ চা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল ইলিনা ব্রাউন।একবেলা না খেলে কিছু হবে না।আনুকে একবার ফোন করার কথা মনে এলেও ফোন করেনা।যাক শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেই ফেলল।স্বামীটা তার যেমন সহজ সরল তেমনি গোয়ার গোবিন্দ একরোখা, বউকে কলিজার মত রক্ষা করবে সে ব্যাপারে ইলিনা ব্রাউন নিশ্চিত।বিয়ের সঙ্গে সেক্সের সম্পর্ক ওতপ্রোত।তাহলেও ইলিনা ব্রাউন প্রাণপণ নিজেকে সংযত রেখেছে।তার ধারণা সেক্সের তীব্র একটা আসক্তি আছে।একবার স্বাদ পেলে মরীয়া হয়ে উঠবে। আনু আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ুক তার ইচ্ছে নয়।আনুর সামনে একটা লক্ষ্য আছে,ক্ষুদ্র স্বার্থের বশে ওকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।যত কষ্ট হোক ইলিনা সহ্য করবে।
চা খাওয়া হলে একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়ল ইলিনা ব্রাউন।কিভাবে ধীরে ধীরে আনুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল সেই দিনগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে ভাল লাগছে।কলেজে সহকর্মীদের দেখেছে শিক্ষিত হয়েও আচার সংস্কারের বাধন ছিড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি।সেদিক থেকে আনুর দৃষ্টি ভঙ্গী অনেক স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট।তার জন্ম পরিচয় জানার পর বেশ বলেছিল।পদ্ম পাকে জন্মায়,পাঁক পদ্মের অতীত।আমি পদ্মের সুষমাকে ভুলে পাঁক ঘাটতে রাজী নই।তাছাড়া দেখো জন্ম তো কারো ইচ্ছাধীন নয়।তোমার শিক্ষা তোমার কৃতিত্বের কোনো মূল্য নেই আমি এভাবে ভাবতে পারব না।কথাগুলো শুনতে শুনতে চোখে জল এসে গেছিল।সঠিক স্থানে তার মন মজেছে এই সত্য সেদিন উপলব্ধি করেছিল।
বদ্যিনাথের হোটেল থেকে এদিক-ওদিক একবার দেখে আরণ্যক চালতা বাগানের পথ ধরে এগোতে থাকে।রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে।আরণ্যকের মাটির দিকে তাকিয়ে চলার অভ্যেস যাতে কারো সঙ্গে চোখাচুখি না হয়।কিরে কেমন আছিস,কোথায় চললি জাতীয় খাজুরে আলাপ পছন্দ নয়।দেখা হলেই এসব জিজ্ঞেস করতে হবে?ভাল ণেই বললে কি তুমি ভাল করে দেবে?
সমাগমের নীচে এসে পিছন ফিরে একবার দেখে সিড়ি দিয়ে একেবারে তিনতলায় উঠে এল।ফ্লাট বাড়ীতে কেউ কারো খবরর রাখে না। কে এল কে গেল একবার উকি দিয়ে দেখার সময় নেই কারো।চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে নজরে পড়ে লিনার ঘরের দরজা ভেজানো।তাড়াতাড়িতে দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে।স্টাডিতে ষেতে গিয়ে কিভেবে ভেজানো দরজা ঠেলে ভিতরে উকি দিয়ে অবাক।লিনা কলেজ যায়নি?অসময়ে শুয়ে আছে কি ব্যাপার?শরীর খারাপ হলে তাকে একবার জানাতে পারতো।আরণ্যকের অভিমান হয়।
কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,তুমি কলেজ যাওনি?
ইলিনা ব্রাউন উঠে হেলান দিয়ে বসে বলল,সকাল থেকে শরীরটা কেমন ম্যাজ-ম্যাজ করছিল--।
আমাকে একটা খবর দিতে পারোনি?
একটা ট্যাবলেট খেয়েছি এখন ঠিক আছে।তুমি আমার কাছে একটু বোসো।
আরণ্যক পাশে বসে বলল,সকালে কি খেয়েছো?
বললাম না শরীরটা ম্যাজ-ম্যাজ করছিল রান্না করতে ইচ্ছে করল না--।
আরণ্যক খাট থেকে নেমে বলল,তার মানে সারাদিন কিছু খাওনি?
কি মুষ্কিল একবেলা না খেলে কিছু হবে না।তুমি বোসো তো।
মা বলতো কিছু মুখে নাদিলে পিত্তি পড়বে কিছু মুখে দে বাবা।আরণ্যক বলল,আমি এখুনি আসছি।
ইলিনা ব্রাউনের মুখে তৃপ্তির হাসি।লোক চিনতে তার ভুল হয়নি।মনে হল বাইরে থেকে খাবার আনতে গেল।আবেগ তড়িত হয়ে ভুল করল নাতো?এমন মনে হয়নি তা নয় কিন্তু যত দেখছে বুঝতে পারছে সব সন্দেহ অমূলক।মনে হচ্ছে পাগলাটা ফিরে রান্না ঘরে কিছু করছে।কি করছে কি আনলো কে জানে।ইলিনা চুপচাপ বসে থাকতে পারে না।তার শরীর এখন পুরোপুরি সুস্থ।খাট থেকে নেমে লুঙ্গিটা ভালো করে কোমরে বেধে নিল।মনে হচ্ছে আজ আর পড়াশুনা কিছু হবে না।দেখতে দেখতে সময় হয়ে এল।পড়াশুনার সময় আরেকটু বাড়াতে পারলে ভালো হতো।সন্ধ্যেবেলা দোকান খুলতে হয়।বাড়াবো বললেই তো হবে না।একটা সুবিধে আনুর অনেক বিষয়ে পড়াশুনা আছে।জন্মদাতা ফেলে পালিয়ে গেছে,মা সন্তানকে স্বীকার করেনা।নিজেকে অপাংক্তেয় হতভাগ্য মনে হতো।সব থেকেও কেউ নেই তার।বিধাতা তাকে সব দিক দিয়ে বঞ্চিত করেছে।আনুর মতো এমন মানুষ পেয়ে বিধাতার প্রতি আর কোনো ক্ষোভ নেই।আনু যেন পাথর কঠিণ আশ্রয়।বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়া যায়।
হাতে একটা প্লেটে আগুনে স্যাকা কয়েক টুকরো স্লাইস ব্রেড নিয়ে আরণ্যক ঢুকে বলল, তোমাকে নামতে কে বলল?
আয় এ্যাম কোয়াইট ওকে,আনু তুমি বিশ্বাস করো--।
আরণ্যক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নজরে পড়তে ইলিনা বলল,ঠিক আছে আমি খাটে বসছি।
ইলানা ব্রাউন খাটে উঠে বসতে আরণ্যক প্লেট এগিয়ে দিল।প্লেট হাতে নিয়ে রুটির দিকে তাকিয়ে মুখটা ব্যজার হয়ে যায় বলে,একী একদম পুড়িয়ে ফেলেছো।
অস্বস্তি জড়ানো গলায় আরণ্যক বলল,আগুনে সেকতে গিয়ে একটু পুড়ে গেছে।আগুনের স্পর্শে সব পরিশুদ্ধ হয়ে যায়।
এই শুকনো রুটি খেতে হবে?আদুরেে গলায় বলে ইলিনা।
তুমি খাও আমি চা করে আনছি।আরণ্যক চলে গেল।
ইলিনা মনে মনে ভাবে,গড ইজ মোস্ট মার্সিফুল।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।জামার হাতায় চোখ মুছলো।রুটিতে কামড় দিয়ে চিবোতে থাকে।ক্ষিধের মুখে ভালই লাগে।আনু ইজ গডস গিফট ইন মাই লাইফ।এত সহজ সরল অন্তরে এত শক্তি ধরে ভেবে অবাক লাগে।
দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকলো আরণ্যক,প্লেট খালি দেখে বলল, এর মধ্যে খাওয়া হয়ে গেল?আর আনবো?
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে ইলিনা বলল,না দরকার নেই।তুমি এবার আমাকে ছুয়ে পাশে বোসো।
আরণ্যক ইতস্তত করে।
কি হল তুমি তো আমার হাজব্যাণ্ড--।
হ্যা মানে আমাদের তো সেভাবে বিয়ে হয়নি তাই--।
মানে মন্ত্র পড়ে বিয়ে হয়নি তাই তো--রাবিশ।আমি খাইনি শুনে তোমার কেন খারাপ লেগেছে?আচ্ছা ঠিক আছে আমার কাছে আসতে হবে না,আমার কাছ থেকে চলে যাও--আমি কেউ নই তাহলে কেন আসো--।
ঠিক আছে বাবা বসছি।পাশে বসতে বসতে বলল,তুমি ভীষণ জেদী।
ইলিনা ডান হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল,আমার তো একটাই জায়গা জেদ আবদার করার মত।
ইলিনার স্পর্শে এক অনাস্বদিত অনুভূতি অনুভব করে মনে।আরণ্যক বলল,আজ আর পড়াশুনা হল না।
আগুণের পরশমণি গানটা শুনেছো?
রবীন্দ্র সঙ্গীত কেন শুনব না।
গানটা শুনলে তোমার কেমন মনে হয়?
অদ্ভুত প্রশ্ন আরণ্যক চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,তোমার চা খাওয়া হয়েছে?দাও কাপটা রেখে আসি।
খাট থেকে নেমে কাপ প্লেট নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।
কথা বলতে বলতে ইলিনা ব্রাউন লক্ষ্য করছিল এত কাছে পেয়েও কোনো সুযোগ নেয়নি আনু।পুরুষ মানুষ সম্পর্কে এতকালের লালিত ধারণা চুরচুর করে ভাঙ্গতে থাকে।ইলিনা লুঙ্গিটা উরু অবধি তুলে এমনভাবে বসল,লুঙ্গির ফাকে গুদ বেরিয়ে থাকে।
রান্না ঘরে কাপ ধুতে ধুতে ভাবে লিনার গানটা ভাল লেগেছে।রবীন্দ্র সঙ্গীত তারও খুব প্রিয়,শুনতে শুনতে মনটা কোথায় হারিয়ে য়ায়।
আরণ্যক ফিরে এসে বলল,জানো লিনা রবীন্দ্র সঙ্গীত আমার খুব প্রিয়,শুনলে মন ভাল হয়ে যায়।
ইলিনা লক্ষ্য করে তার গুদের দিকে নজর নেই।আরণ্যক বলল,আজ তো পড়াশোনা হলনা আমি বরং ও ঘরে গিয়ে একটু গড়িয়ে নিই।
ইলিনা ভ্রু কুচকে তাকালো।
কিছু বলবে?
স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকে কখন?যখন কোনো কাজ থাকে যেমন আমি যখন কলেজ যাই তোমাকে তো নিয়ে যেতে পারব না।তবে সেপারেশন হয়ে গেল আলাদা--।
দ্যাখো লিনা আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা পছন্দ করিনা,যা বলার সরাসরি বললেই হয়।
ইলিনা হেসে ফেলে ইশারায় কাছে ডাকে।আরণ্যক এগিয়ে এলে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রেখে বলল,আমার সোনাটার সঙ্গে একটু মজা করতে পারবো না?
কথায় কথায় সেপারেশন বলবে না,আমার কষ্ট হয়।
আচ্ছা আর বলব না,তুমি বোসো।
আরণ্যক খাটের একপাশে বসলে ইলিনা বলল,আগুণের পরশমণি গানটার অর্থটা আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারবে?অর্থ নাবুঝলেও গানটা শুনলে আমার মনের মধ্যে কেমন যেন হয়।
আরণ্যক চোখ বুজে কি যেন ভাবে।চোখ খুলে বলতে থাকে,কবি একসময় বলেছিলেন সুর গানের কথাকে পরিস্ফূট করবে।পরবর্তীকালে তিনিই বলেছেন কথা গৌন সুরের বাহনমাত্র।সঙ্গীতে সুরটাই প্র্রধান।
ইলিনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে আনুর দিকে তাকিয়ে থাকে।
এইযে তুমি বলছিলে শুনলে তোমার মন আলোড়িত হয় এখানেই সঙ্গীতের মাহাত্ম্য--
বুঝলাম তাহলেও কথার তো একটা অর্থ থাকবে?
আরণ্যক হেসে বলল,তা তো থাকবে।আমার সামান্য পড়াশুনা তাও ছেদ পড়ে গেছিল।তোমার সংসর্গে নতুন করে শুরু করেছি।
তোমার সংসর্গে কথাটা ইলিনাকে স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করল,তবু তোমার কি মনে হয়?
একটা কথা আছে পরশমণি যা ছোওয়ালে নাকি লোহা সোনায় রূপান্তরিত হয়।এখানে আগুণকে পরশমণি বলা হয়েছে সেই পরশমণির স্পর্শে আমাদের মনের মালিন্য কলুষ মুছে মনকে পবিত্র দীপ্তিময় উজ্জীবিত করে তুলুক।
আমি কি তোমার পরশমণি?
জানিনা।তবে আরণি নামে একটা গাছের কথা শোনা যায়।আদিম যুগের মানুষ দুটি আরণি কাঠ পরস্পর ঘষে আগুণ জ্বালাতো।মনে রাখবে দুটি কাঠের ঘর্ষণে--তুমি আমার জীবনে সেই আরণির মত।তোমার সঙ্গ না পেলে আমাকে অর্থহীন জীবনের ভার বয়ে বেড়াতে হতো--।
পরাগ সংযোগে সৃষ্টি।এককভাবে একটি নারী অথবা পুরুষ সম্পূর্ণ নয়।কথাগুলো মনে আন্দোলিত হয়।ইলিনার তাকিয় দেখে আনুকে বেশ ক্লান্ত মনে হল বলল,তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো।
তোমার কষ্ট হবে,আমাকে একটা বালিশ দেও।
তোমার দেওয়া কষ্ট আমার কাছে আনন্দ হয়ে ধরা দেয়।
আরণ্যকের ক্লান্ত লাগছিল কথা না বাড়িয়ে ইলিনার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল।ইলিনা কোমরে লুঙ্গির বাধন খুলে দিয়ে পিঠে হাত বোলাতে থাকে।যোণীতে নিঃশ্বাসের স্পর্শ অনুভূত হতে থাকে।যোণী হতে নিঃসৃত গন্ধে এক মাদকতা আরণ্যকের শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড় মনকে অবশ করে দেয়।ইলিনা বড় বড় শ্বাস পড়ছে দেখে বুঝতে পারে ঘুমিয়ে পড়েছে।
 
Top