• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Romance কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী [ পিনুরাম ] (Completed)

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#9)

পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার আভাস। লাল হয়ে উঠেছে আকাশ আর তার সাথে লাল হয়ে উঠেছে গঙ্গার জল। ধিরে ধিরে চারদিকে আঁধার নেমে এসেছে। মাথার ওপরে পাখিরা এক এক করে বাসায় ফিরে চলেছে। গঙ্গার পাড়ে বসে দুজনে আইসক্রিম কিনে খেতে শুরু করল।

আইসক্রিম খেতে খেতে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “মনি নৌকায় চাপবে?”

মনিদিপা জিজ্ঞেস করল, “কেন রে, এখন আবার নৌকায় কেন? অন্ধকার হয়ে আসছে, বাড়ি ফিরতে হবে না।” মনিদিপা জানত না ঠিক ভাবে দেবেশের মতলব টা কি।

বাঁ হাতে মনিদিপার পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বলল, “নৌকায় শুধু আমি আর তুমি, ব্যাস আর কেউ নয়। গঙ্গার ওপরে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে খেতে বেশ একটা প্রেম প্রেম খেলা যাবে।”

কথাটা শুনে থমকে গেল মনিদিপা, “কি যে বলিস না তুই। না আমি যাব না।”
আরও নিবিড় করে টেনে নিল দেবেশ। মনিদিপার মনে একটা প্রেমের আভাস জেগে উঠল। দেবেশ আস্তে করে মনিদিপার বুকে হাত দিল। কেঁপে উঠল মনিদিপা।
ওর দিকে ভ্রূকুটি চোখে তাকাল, “এই যাঃ কি করছিস লোকজন আছে যে।”

দেবেশ ওর কথার দিকে কোন কান দিল না, টপের ওপর দিয়েই মনিদিপার সুগোল স্তন নিয়ে হাল্কা টেপাটিপি শুরু করে দিল। মনিদিপার গা গরম হয়ে উঠল দেবেশের হাতের ছোঁয়ায়, চোখ পাতা যেন হাতের চাপে ভারী হয়ে উঠেছে।

ফিসফিস করে বলে উঠল মনিদিপা “প্লিস ছেড়ে দে আমাকে, এযে দিনের আলো আর সবাই আছে, সবাই দেখতে পাবে যে... প্লিস দেবেশ করিস না... আমার লক্ষ্মী ছেলে ... দেবু প্লিস... ” মনিদিপা একটু ঠেলে সরিয়ে দেয় দেবেশের হাত।

দেবেশ ওর কানে কানে বলল, “কেউ দেখবে না মনি, অন্ধকার হয়ে আসছে আর সব কাপল করে এই রকম। প্লিস হাত সরিয়ে দিয় না।”

নিজের অজান্তেই মনিদিপার শরীর ঢিলে হয়ে গেল, হাত চলে গেছে দেবশের কোলে। দেবশের সাহস যেন আরও বেড়ে গেল। মনিদিপার পেলব থাইয়ের মাঝে হাত ঢুকিয়ে দিল দেবেশ। চেপে ধরল জিন্সের ওপরে দিয়ে মনিদিপার যোনীদেশ। উত্তপ মনিদিপা যোনীর ওপরে দেবশের হাতের ছোঁয়া পেয়ে যেন আরও পাগল হয়ে উঠল। কিন্তু এখন অন্ধকার হয়নি, তার ওপরে চারদিকে লোকজন ত আছেই। দুহাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল দেবেশের হাত, যাতে আর বেশি কিছু করতে না পারে। কিন্তু দেবেশের অনেক শক্তি, ধরা হাত নিয়েই জিন্সের ওপর দিয়ে মনিদিপার যোনীর ওপরে চাপ দিতে থাকল।

“উম্মম কি মস্ত মাগি রে... মাই নয়ত যেন ডাব ঝুলছে... এই রকম ডাঁসা মাল পেলে একবার নৌকায় চড়া যায়” হটাত করে ওদের কানে এইরকম একটা আওয়াজ এল। ধড়মড়িয়ে দুজন দুজন কে ছেড়ে দিল, পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল কয়েটা ছেলে ওদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।

কান মাথা গরম হয়ে গেল মনিদিপার। বুকের মধ্যে যেন ঝড় শুরু হয়ে গেল মনিদিপার। সব রাগ গিয়ে পড়ল দেবশের ওপরে, “কেন ছেলেটা একটু সবুর করতে পারেনা, আমি কি শুধু মাত্র একটা ভোগের পুতুল?” রেগে মেগে ওখান থেকে উঠে হাটা দিল। মনিদিপার রাগ দেখে প্রথমে একটু থমকে গেছিল দেবশ। তারপর যখন দেখল যে সত্যি মনিদিপা ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখন ওর পেছনে দৌড়াতে শুরু করল।

দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল, “কি হল মনি?”

মনিদিপার চোখ ফেটে জল এসে গেছে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে সজোরে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিল দেবেশের গালে। চিৎকার করে উঠল, “তুই শুধু আমাকে ভোগের জিনিস পেয়েছিস তাই না। সময় নেই, জায়গা নেই, শুধু আমার শরীরটাকে নিয়ে খেলতে পারলে যেন তোর শান্তি হয়। আমার পোড়া কপাল, কেন যে আমি মরতে তোকে রাতে আমার বাড়িতে ডেকেছিলাম। তুই ত আজ আমাকে বাজারে নামিয়ে আনলি দেবেশ।”

গাল লাল হয়ে গেছে মনিদিপার চড় খেয়ে। উত্তর দেবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে দেবেশ, সত্যি ওর কামনার আগুন অনেক বেশি বেড়ে গেছে, মনিদিপা ওর কাছে এখন শুধু মাত্র একটা কামনার বাসনার শরীর। কি বলবে দেবেশ, ও যে মনিদিপাকে এখন ভালবাসেনি। শুধু ওর যৌবন রস পান করার জন্য ওর দিকে এগিয়ে গিয়েছে।

“তোর কাছে কোন উত্তর নেই ত? তুই একটা কুকুর। আর কোনদিন আমার সামনে আসবি না তুই।” কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল মনিদিপা তারপরে ওকে ছেড়ে রাস্তার দিকে দৌড়ে চলে গেল।

দেবেশ কিছুক্ষণ স্থানুর মতন দাঁড়িয়ে রইল, কি করবে কি বলবে ভেবে পেলনা। কিছুক্ষণ বাদে দৌড়ে গেল মনিদিপাকে ধরার জন্য। রাস্তায় গিয়ে দেখল যে, মনিদিপা ওর সামনে দিয়ে একটা টাক্সি চেপে চলে গেল। রাতের অন্ধকারে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে রইল দেবেশ। কি করতে কি করে ফেলল ও, সাধের রমণীর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে এই রকম ভাবে সবার সামনে খুলে দিল। কি করল, এই ভুলের শাস্তি মনে হয় নেই, এর মনে হয় ক্ষমাও নেই। রাগে দুঃখে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির পথ ধরল। নিজের চুল ছিঁড়তে বাকি, বাড়ি গিয়ে মনিদিপার পায়ে পড়ে যাবে, কাকুতি মিনতি করবে যে, “মনি ফিরে এস আমার কাছে।” মেয়েদের মন বোঝা বড় কঠিন, তাও একবার যাবে ও মনিদিপার কাছে।

অনেক রাত করে বাড়ি ফিরল দেবেশ, বাড়ি গিয়ে কি অবস্থা হবে সেই নিয়ে মনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে চলেছে। মনিদিপাদি যদি বাবা মাকে বলে দেয় তাহলে ওর বাড়িতে থাকা বন্ধ হয়ে যাবে, বাবা মা ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে নিশ্চয়। বাড়ি ফিরে দেখল মা এক মনে টি ভি দেখছে, কারুর মুখে কোন বিকার নেই।

মা ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কিরে মনি তোকে কোথায় ট্রিট দিল?”

মায়ের গলার আওয়াজ শুনে ধড়ে প্রান ফিরে এল দেবেশের, না তাহলে এখন কিছু অঘটন ঘটে যায় নি। মাথা নিচু করে উত্তর দিল, “না মানে এই এখানে সেখানে ঘুরে কাটালাম।”

মা জিজ্ঞেস করল ওকে, “কই মনি ত এলনা তোর সাথে?”

“না ওর একটু মাথা ব্যাথা করছিল তাই বাড়ি চলে গেছে।” অকাট মিথ্যে কথা বলে নিজের ঘরে চলে গেল দেবেশ।
 
  • Sad
Reactions: Khokababu

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#10)

একা একা বিছানার ওপরে শুয়ে রইল, কিছুই আর ভাল লাগছে না ওর। কামনার আগুনে পুড়ে একি করে ফেলল দেবেশ। মনিদিপাকে অনেক হেনস্থা করেছে ও সবার সামনে, আজ ওর পায়ে পরে ক্ষমা চেয়ে নেবে আর কোন দিন ওর সামনে যাবে না।
রাতের আঁধারে চুপি চুপি মই লাগিয়ে মানব জেঠুর ছাদে উঠল দেবেশ। সিঁড়ির দরজা বন্ধ দেখে, পাইপ বেয়ে দুতলায় নামল। চোরের মতন বারান্দা দিয়ে পাটিপে টিপে, মনিদিপার ঘরের দিকে এগোল। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আস্তে করে কড়া নাড়ল দেবেশ। কোন আওয়াজ নেই, আবার কিছুক্ষণ পরে কড়া নাড়ল দেবেশ। এবারে যেন পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল।

দরজা খুলে হাঁ করে তাকিয়ে রইল মনিদিপা, সামনে কাকুতি ভরা চোখে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দেবেশ।

ওই মুখ দেখে আরও রেগে গেল মনিদিপা, চোখ ফেটে জল চলে এল, বুকের পাঁজর একটা একটা করে যেন কেউ ভেঙ্গে দিচ্ছে। চাপা স্বরে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “তুই একটা স্বার্থপর, নিজের খিদে ছাড়া আর কিছু জানিস না তুই। তুই আমাকে নিয়ে অনেক খেলা করেছিস। আমি তোকে মন দিয়ে...” আর কথা শেষ করতে পারল না... হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল মনিদিপা। দেবেশের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিল, ওকে উত্তর দেবার সময় দিলনা পর্যন্ত। চিৎকার করে উঠল মনিদিপা, বন্ধ দরজার পেছন থেকে, “চলে যা তুই আমার সামনে থেকে, আর কোনোদিন আমার সামনে আসবি না তুই... তুই আমার মান সন্মান সব নিলাম করে দিয়েছিস আজ। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারছিনা, নিজেকে এত ছোটো মনে হচ্ছে।”

বন্ধ দরজার সামনে কিছুক্ষণ হাঁ করে জড় ভরতের মতন দাঁড়িয়ে রইল দেবেশ। ওর শরীরের সব রক্ত যেন কেউ শুষে নিয়েছে। হাঁটার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে। বন্ধ দরজার সামনে হাত জোড় করে নিচু স্বরে বলল দেবেশ, “মনিদি আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও আমি তোমার জীবনের সব থেকে বড় পাপী। আমি আর তোমার সামনে কোন দিন আসব না মনিদি।”

মনিদিপা দরজার ওপার থেকে দেবেশের কান্নার সুর শুনে, মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল, “একি করেছে ও, শেষ পর্যন্ত একটা লম্পট ছেলে কে মন দিয়ে ফেলছে, তাও আবার নিজের থেকে ছোটো। একি ভুল করে ফেলেছে। একি ভালবাসা না যৌন ক্ষুধা।” ককিয়ে ককিয়ে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “আমি তোকে ভালবাসি রে দেবেশ... আমার মতন পাপী আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। আমি যে তোকে প্রান দিয়ে ভালবাসি।”

এই নিশুতি রাতে, দূর থেকে ভেসে এল একটা গান---

জড়িয়ে ধরেছি যারে সে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়

মন তার নেমে এল চোখের পাতায়
ভালবাসা এসে বুকে দাগ দিয়ে যায়
ভুল দিয়ে মালা গেঁথে
ভুল দিয়ে মালা গেঁথে পরাল আমায়
তবু বোঝা গেল না’ত সে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়

----------------------------

বন্ধ দরজার পেছনের সেই আওয়াজ কোনদিন দেবেশের কানে পউছাল না। যেরকম ভাবে পাইপ বেয়ে এসেছিল, ঠিক সেই রকম ভাবে আবার নিজের ঘরে চলে গেল দেবেশ। সারা রাত ঘুমতে পারল না, বিছানায় পড়ে ছটফট করতে থাকল।

সারাদিন দেবেশের মনের মধ্যে শুধু মনিদিপাদির কথা ঘুরে বেরাল, মন আর কিছুতে টিকতে চাইছেনা। আগে মনিদিপাদির কাছে যাবার জন্য মন আকুলি বিকুলি করত এখন মনিদিপাকে ছেড়ে মন আকুলি বিকুলি করছে। বিকেল বেলা কলেজ থেকে ফিরে দেখে বাড়িতে মনিদিপার মা, মানে জেঠিমা বসে মায়ের সাথে গল্প করছে।

জেঠিমা ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি রে কাল তোদের কি কোন ঝগড়া হয়েছিল?”

দেবেশের মনে হল যেন কেউ পেরেক দিয়ে ওর পা মেঝের সাথে গেঁথে দিয়েছে। মাথা নিচু করে উত্তর দিল, “কই না তো।”

জেঠিমা উত্তর দিল, “ও বাবা, কি জানি মেয়ের কি হল, কাল রাতে একদম মন মড়া ছিল। রাতে কিছু খায়নি আবার সকাল বেলাও না খেয়ে বেড়িয়ে গেছে। আজ বলছিল দেরি হবে। এই বারাসাত থেকে কলকাতা, রোজ রোজ যাওয়া, তাই নাকি ও আরও কয়েক জন মিলে ওর অফিসের কাছে একটা ফ্লাট ভাড়া করে থাকবে।”

মা জেঠিমা কে জিজ্ঞেস করল, “মনি বলল আর তুমি ওকে ছেড়ে দিলে? কি যে কর তুমি দিদি।”

জেঠিমা উত্তর দিল, “তুই ত আর জানিশ না ওকে, ওর যা জিদ।”

মা হেসে উত্তর দিল, “মনি আমার সোনার টুকরো মেয়ে, সাত রাজার এক মানিক। আমার যদি কোন বড় ছেলে থাকত তাহলে তোমার মনিকে আমি আমার বাড়ির বউমা করে নিতাম।”

মায়ের কথা শুনে দেবেশের বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেল, চোখ জ্বালা করতে শুরু করে দিল। তাহলে ওর মনিদিপাদি আর ওর হাতের নাগালের কাছে থাকবে না। চিরদিনের মতন হারিয়ে যাবে, আর মায়ের মনে যে এত সাধ ছিল তা কি আর ও জানত। এখন আর কি হবে।

দিন দুই এই রকম ভাবে কেটে গেল দেবেশের, জীবনটা কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেল ওর। একদিন খবর এল যে মানব জেঠুর বড় ছেলে প্রদিপ কোন পাঞ্জাবি মেয়েকে বিয়ে করে চণ্ডীগড়ে ঘর জামাই হয়ে চলে গেছে। দেবেশের মনে সেই ঘটনাটা তেমন কিছু দাগ কাটল না কেননা প্রদিপ কে ও কোনদিন দেখতে পারত না।

ব্যাথা লাগল সেদিন, যেদিন কলেজ থেকে ফিরে শুনল যে মানব জেঠু বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় মনিদিপাদির সাথে ভাড়া বাড়িতে থাকবে। সারারাত ধরে দেবেশ কেঁদে বালিশ ভাসিয়ে দিল, দেয়ালে মাথা ঠুকেও কোন কিছুর উপায় করতে পারল না। আর তিন মাস পরে ওর জয়েন্ট আই আই টি পরীক্ষা, কিন্তু সব ছেড়েছুরে ওর মন বৈরাগী হয়ে গেছে। মন বলছে শেষ পর্যন্ত ও বাবার দোকানে গিয়ে বসবে। মনিদিপাদি কে কথা দিয়েছিল যে ও আই আই টি পড়বে, কিন্তু যখন ওর জীবন থেকে প্রান প্রেয়সী মনিদিপা চলেই গেছে তাহলে আর কার জন্য ও জয়েন্ট আই আই টি দেবে।

এই ভাবে আরও দেড় মাস কেটে গেল। একদিন কলেজ থেকে ফিরে বাবার মুখে শোনে যে মানব জেঠুর নাকি খুব শরীর খারাপ। মাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে মানব জেঠুর হার্ট এটাক হয়েছে। তার ওপরে নাকি বুকে পেস মেকার বসাতে হবে। বাবা দৌড় দিয়েছে কলকাতায়। দেবেশের যাবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না, কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে ও মনিদিপার সামনে।

কিছুদিন পরে খবর এল যে, পেস মেকার বসানর পরেও মানব জেঠু দেহ রক্ষা করেছেন। সেই কথা শুনে দেবেশের পায়ের তলায় ভুমিকম্প হয়েছিল। না মানব জেঠুর জন্য নয়, মনিদিপাদির কথা ভেবে, দেবেশ আর থাকতে পারেনি। বাবাকে নিয়ে দৌরে গেল গরিয়াহাটায় মনিদিপার বাড়িতে।

চৌকাঠে পা রেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল দেবেশ। চোখের সামনে, সাধের মূর্তি মনিদিপাদি যেন কালি মেখে বসে আছে। সেই ফর্সা গোলগাল চেহারার মনিদিপাদি আর নেই, এক কাঠের পুতুল ভাসা ভাসা চোখে নিয়ে বাবার মৃতদেহের পাশে বসে। আস্তে করে হাঁটু গেড়ে মনিদিপাদির পেছনে গিয়ে বসল দেবেশ। আলত করে কাঁধে হাত ছোঁয়াল। পুরনো হাতের পরশ পেয়ে মনিদিপার হৃদয় কেঁদে উঠল।
 
  • Sad
Reactions: Khokababu

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#11)

অনেকক্ষণ পরে পেছনে তাকিয়ে দেবেশ কে দেখে, হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল মনিদিপা, “আমার সব শেষ হয়ে গেল রে দেবু।”

ওর চোখের জল দেখে বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেল। দুহাতে মনিদিপাকে জড়িয়ে ধরল দেবশ। কিন্তু কি সান্ত্বনা দেবে, যে যাবার তিনি ত চলে গেছেন ওদের ছেড়ে, চিরকালের জন্য। তাকে ত আর দেবেশ ফিরিয়ে আনতে পারবে না। মনিদিপাকেই বাবার মুখে আগুন দিতে হয়েছিল, ওর মা ওর দাদাকে আসতে বারন করে দিয়েছিল। যে ছেলে বাবার অসময়ে দেখতে আসতে পারেনি সে ছেলে বাবার মুখে কি আগুন দেবে। বাবার মুখে আগুন দেবার পরে মনিদিপা অজ্ঞান হয়ে গেছিল। দেবেশ ওকে কোলে তুলে মুখে চোখে জল ছিটিয়ে আবার সুস্থ করে তুলেছিল।

তিনদিনের কাজের পরে দেবেশ বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে আসার আগে দেবেশ মনিদিপাকে বলেছিল, “আমাকে ডাক দিও মনি, আমি তোমার জন্য পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকব।”

তার উত্তরে মনিদিপা মাথা নেড়ে বলল, “না, আমার জীবনে কারুর দরকার নেই। আমি আমার জীবন নিজে থেকে তৈরি করে নিতে পারব। তুই ভাল থাকিস আর ভাল করে পড়াশুনা করে বড় হস। আমার কথা আর চিন্তা করিশ না তুই। তোর সামনে এক বিশাল পৃথিবী পরে আছে, দু হাতে তাকে জড়িয়ে ধরিস আর আমাকে মন থেকে ভুলে যাস।” তারপরে কানে কানে বলেছিল, “আমরা খেলার ছলে অনেক দূর এগিয়ে গেছিলাম, সেগুলো সব একটা ভয়ানক স্বপ্ন ভেবে আমাকে মাফ করে দিস, যদি পারিস।”

হাত ধরে কেঁদে উঠেছিল দেবেশ, “তুমি আমাকে পর করে দিচ্ছ মনি। আমি কি নিয়ে থাকব জীবনে। আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসি, যে।”

মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, “তুই আমাকে না আমার শরীরকে ভালবেসে ছিলিস। আজ’ত তুই আমাকে দেখবি’ও না আর কেউ দেখবে না। তুই চলে যা রে, বেশিক্ষণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি আত্মহত্যা করব।”

চোখের জল ফেলতে ফেলতে ফিরে এল দেবেশ। প্রানের মনিদিপাদি কে ফিরিয়ে আনতে পারল না আর।

নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করল, ভাবল সুকন্যার প্রেমে পরে ও মনিদিপাদি কে ভুলে যাবে। কিন্তু বাধ সাধল সেই পুরনো স্মৃতি। যাই করতে যায় না কেন, সবসময়ে চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় মনিদিপাদির কান্না ভেজা দু চোখ। সুকন্যার সাথে আর ওর ভালবাসা হল না, হলনা কিছুই করা। পড়াশুনা এক রকম গতানুগতিক ভাবে এগিয়ে চলছে। রোজ সকালে উঠে কলেজ যাওয়া, বিকেল বেলা কলেজ থেকে বাড়ি ফেরা। রাতের বেলা পাশের বাড়ি দেখা। মানব জেঠু বাড়ি বিক্রি করে দেবার পরে সেইখানে এক প্রমটার এক পাঁচ তলা ফ্লাট বাড়ি বানাচ্ছে। বাড়ির সাথে সাথে মনিদিপাদির স্মৃতি জড়িয়ে ছিল, সেটাও ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেল একদিন।

কিছুদিন পরে বেশ রাত করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরে দেখে বসার ঘরে মা জেঠিমা আরও অনেকে বসে, সবার চোখে জল। দুজনে যেন অনেকক্ষণ ধরে হাউ হাউ করে কেঁদেছে। জেঠিমা দেবেশকে ঢুকতে দেখে আরও জোরে কেঁদে উঠল।
কাঁপা গলায় বলল, “বাবারে... আমার মনি আর নেই...”

কথাটা ঠিক কানে যায় নি দেবেশের। মাথা ঘুরে পরে গেল দেবেশ, কি হয়েছে, জেঠিমা কি বলছে, মনিদিপাদি নেই মানে? কি হয়েছে মনিদিপাদির। বাড়ির চাকর ওর চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে জ্ঞান ফেরাল।

মায়ের পাশে বসে মাকে জিজ্ঞেস করল, “ও মা, কি হয়েছে মনিদিপাদির?”

মায়ের দুটি লাল চোখে জল, টলমল করছে, “হ্যাঁ রে বাবা, আমার সাধের মনিদিপা আর এই পৃথিবীতে নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে মেয়েটা। আমার মেয়েটা কত ভাল ছিল রে......”

বাবার দিকে তাকাল দেবেশ, “কি হয়েছে মনিদিপাদির?”

ওর বাবা উত্তর দিল, “মনিদিপা আত্মহত্যা করেছে।”

দেবেশের মনে হল যেন ওর কানের ওপরে কেউ সজোরে এক থাপ্পড় মেরেছে। মাথা ভোঁভোঁ করে উঠল, “কেন কি হয়েছে? কে করল আত্মহত্যা, তোমরা কি করে জানলে?”

ওর বাবা উত্তর দিল, “মনিদিপা অনেক ভাল মেয়েরে। ওর মতন ত মেয়েই হয় না মনে হয়। মানবদার শরীর খারাপের জন্য ওর অনেক টাকার দরকার ছিল, আমাকে একবারের জন্যও বলল না ও। এই একটা চিঠি পাওয়া গেছে ওর ব্যাগ থেকে।”

“মানে?” জিজ্ঞেস করল দেবেশ।

উত্তরে ওর বাবা ওকে জানাল, “আজ খুব সকালে মনিদিপা বলে বেড়িয়ে ছিল যে অফিসের কাজে বম্বে যাচ্ছে। তারপরে ন’টা নাগাদ কেউ গঙ্গার ঘাটে একটা ব্যাগ কেউ কুড়িয়ে পায়, আর তার সাথে মনিদিপার পরনের জামাকাপড়ের কিছু অংশ। লাশ পাওয়া যায়নি, হয়ত গঙ্গার জলে ভেসে গিয়েছে কোথাও। ওর ব্যাগ আর জামা কাপড় দেখে পুলিস ওর অফিসে খবর দেয়। তারপরে অফিসের লোকেরা তোর জেঠিমাকে খবর দেয়। ব্যাগের ভেতরে একটা সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল বাবাকে, “কি লেখা ছিল তাতে।”

****************************************
ও মা, মা গো,
বাবার শরীর খারাপের সময়ে অনেক টাকার দরকার হয়েছিল, তার জন্য আমি অনেকের কাছে হাত পেতে টাকা ধার করেছি। সেই টাকা শোধ করার মতন আমার আর শক্তি নেই। বাবাই যখন রইলেন না ত সেই টাকা শোধ করে কি করব। এদিকে পাওনাদারদের তাগাদা, আর আমি একা একটা মেয়ে। এই বিশাল পৃথিবীতে কাউকে ভরসা করে কিছু বলতে পারলাম না, কাউকে ঠিক ভাবে ভালবাসতে পারলাম না। ও মা, তুমি কেঁদো না যেন, মা গো। তোমার পাগলি মেয়ে তোমাকে আর মুখ দেখাতে পারবে না বলে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে, মা। মা গো তুমি কেঁদো না, নরেশ কাকুর কাছে চলে যেও মা, নরেশ কাকু তোমাকে ফেলবে না।
আর আমার বিয়ের জন্য যে হার টা বানিয়ে ছিলে সেটা দেবেশ কে দিও, বোলো ও যখন বিয়ে করবে তখন যেন ওর বউকে দেয়। আর ওকে বোলো যে ও যেন পড়া শুনা করে, আই আই টি যেন পায়। আমার ভালবাসা ওর সাথে সবসময়ে থাকবে।
কাকিমা কে বোলো, পরের জন্মে আমি ঠিক কাকিমার বাড়ির বউ হয়ে আসব। মা গো, আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি বড় পাপী অভাগী মেয়ে, মা। পরের বারে ভাল মেয়ে হয়ে তোমার কোলে ঠিক ফিরে আসব। মা গঙ্গা যেন আমাকে নিজের করে নেয়, মা।
ইতি তোমার অভাগী কলঙ্কিনী মেয়ে, মনিদিপা।
****************************************
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#12)

চিঠির কথা শোনার পরে দেবেশের দিগবিদিগ জ্ঞান হারিয়ে গেল। কি করবে আর, যার প্রেমে শেষ পর্যন্ত পড়ল সেই ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সারা রাত কাঁদার পরে সকাল বেলা চোখ মুছে মনিদিপাদির গলার হার হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেল যে আই আই টি ও পাবেই। কারুর সাধ্যি নেই ওর আই আই টি রুখে দেবে। ওর সাথে আছে জেঠিমার দেওয়া মনিদিপার সোনার হার।

এক মাস বাকি আর পরীক্ষা দেবার। পুরপুরি বদলে গেল দেবেশ ঘোষাল। লোহার মূর্তি হয়ে গেছে দেবেশ। কোন ঝড় ঝঞ্জা ওকে ওর পথ থেকে নাড়াতে পারছে না। এই রকম মনব্রিতি নিয়ে জোড় কদমে শুরু করে দিল পড়াশুনা। রোজ রাতে একবার করে ওই সোনার হার টা দেখে আর পড়তে বসে দেবেশ। পরীক্ষা দিল দেবেশ এবং দিল্লি আই আই টি তে, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পেয়ে গেল।

কিছু দিনের মধ্যে ওকে বারাসাতের গলি ছেড়ে, তিলোত্তমা কোলকাতা ছেড়ে পাড়ি দিতে হল দিল্লি। সব সময়ের সাথী মনিদিপার গলার হার। মনিদিপা আর নেই, তবে যদি কাউকে পায় কোনদিন তাকে পড়িয়ে দেবে দেবেশ। এই ভেবে সবসময়ে নিজের কাছে রেখে দিল ওই হার। ওই সোনার হার হয়ে গেল ওর রুদ্রাক্ষ মালা, ওর জীবনের সঙ্গী।


দিল্লী তে পড়ার সময়ে অনেক মেয়ের সানিধ্যে এসেছে দেবেশ, কিন্তু কাউকে ঠিক মনে ধরাতে পারেনি। সবার মধ্যে যেন মনিদিপাকে খুঁজে বেড়ায় ও।

বছর ঘুরে গেল, দেখতে দেখতে তিনটে বছর কেটে গেলে। পুরান স্মৃতির ওপরে অনেক ধুল জমে গেল। মনিদিপা এখন শুধু মাত্র একটি সোনার হার ছাড়া আর কিছু না। ও এখন আর মনিদিপাকে খোঁজে’না, খোঁজে এক ভালবাসার পাত্রী কে।

কলকাতার বাড়িতে এখন বাবা মা আর জেঠিমা থাকেন। গরমের ছুটির পরে কলকাতা থেকে ফিরছে দেবেশ। স্টেসান থেকে অটো নিয়ে হস্টেলের দিকে যাচ্ছে। ঠিক আই আই টি গেটের সামনে অটো একটা মেয়েকে ধাক্কা মেরে দিল। বিশেষ কিছু যদিও হয়নি মেয়েটার, তবুও ভদ্রতার খাতিরে নেমে গিয়ে সাহায্য করতে চাইল মেয়েটাকে। মেয়েটার মুখ দেখে দেবেশ থ। রিতিকা উপাধ্যায়, ওদের অঙ্কের প্রফেসার শ্যামল উপাধ্যায়ের মেয়ে, এল এস আর এ পরে। সারা আই আই টি মেয়েটার সৌন্দর্যের পেছনে পরে আছে।

দেবেশ জিজ্ঞেস করল রিতিকাকে “বেশি লাগেনি ত?”

মুখ তুলে তাকাল রিতিকা, “কি যে বল না, অটো ওয়ালা গুলো একদম দেখে চালায় না।”

দেবেশ বলল, “রিতিকা, তোমার কিন্তু দোষ ছিল। তুমি রাস্তা না দেখে পার হচ্ছিলে আর অটো ধাক্কা মেরেছে। যাইহোক বেশি লাগেনি মনে হয়, চল তোমাকে আমি বাড়িতে ছেড়ে দিচ্ছি।”

রিতিকা একজন অচেনা ছেলের মুখে নিজের নাম শুনে ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমাকে চেন?”

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “হ্যাঁ তোমাকে কে না চেনে। তুমি উপাধ্যায় স্যারের ছোটো কন্যে আর এল এস আর এ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। আই আই টির সবাই তোমাকে চেনে আর আমি ত ইলেক্ট্রিকালের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র তাই আমিও তোমাকে চিনি।”

ওর যা দেমাক তার সামনে কোন ছেলে আজ পর্যন্ত এত সাহস করে কিছু বলতে পারেনি। দেবেশের এত সাহস দেখে রিতিকা হেসে ফেলল, “ওকে চল তাহলে আমাকে বাড়ি পউছে দাও। আজ আমার ক্লাস মিস হল আরকি।”

অটো তে বসে দেবেশ রিতিকাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ত ইংলিশ নিয়ে পড়ছ তাই না?”

“বাঃবা, আমার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানো দেখছি।” রিতিকা ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি সুন্দরী আর ফেমাস তাই তোমার ব্যাপারে ত সবাই রিসার্চ করে। সেইখান থেকে আমিও কিছু শুনে ফেলেছি।”

হেসে জিজ্ঞেস করে রিতিকা, “তুমি আমার ওপরে রিসার্চ করনি?”

মাথা নাড়ায় দেবেশ, “না আমি করিনি, করার দরকার পড়েনি তাই করিনি।”

প্রশ্ন করল রিতিকা, “সবাই করে রিসার্চ তুমি কেন করনি?”

একদম অকাঠ সত্যি কথা বলে ফেলল দেবেশ, “তুমি ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে তাই করিনি।”

এইরকম ভাবে কেউ যে কথা বলতে পারে সেটা রিতিকার ধারনা ছিলনা। হাঁ করে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে।

“মুখ টা বন্ধ কর নাহলে মাছি ঢুকে যাবে” আলত করে চিবুকে আঙ্গুল ছুঁইয়ে মুখ বন্ধ করে দিল।

রিতিকা ত আর থ বনে গেল, কি সাহস ছেলের বাঃবা, প্রথম দেখায় চিবুকে হাত।
প্রফেসার কোয়ার্টার এসে গেল। রিতিকা অটো দাঁড় করিয়ে নেমে গেল, সাথে দেবেশ ও নামল।

মিষ্টি হেসে দেবেশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল রিতিকা, “থ্যাঙ্ক ইউ ফর হেল্প। আমি মনে রাখব।”

একটু থেমে তারপরে হ্যান্ড সেক করল দেবেশ, “ওকে বাই।”

পেছন ফিরে চলে যাচ্ছিল দেবেশ, এমন সময়ে পেছন থেকে রিতিকার ডাক, “হ্যালো তোমার নামটা ত জানা হল না। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে তুমি সত্যি আই আই টি তে পড়।”

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “সন্দেহ থাকলে কাল ইলেক্ট্রিকালের প্রাক্টিকাল ক্লাসে চলে এস যখন খুশি আমাকে পেয়ে যাবে। পেয়ে গেলে তবে আমি আমার নাম বলব তার আগে নয়।”

রিতিকার সামনে কোন ছেলে নিজের নাম না জানিয়ে ওই রকম ভাবে চলে যাবে সেটা রিতিকার ঠিক হজম হল না, “ছেলেটা ত বড় বেয়াদপ। আমাকে অমান্য করা, আমার মতন সুন্দরীকে অমান্য করা। ঠিক আছে দেখে নেব আমি।”

দেবেশ হাসতে হাসতে হোস্টেলের দিকে হাটা লাগাল আর মনে মনে রিতিকার সুন্দর ফর্সা গোল মুখখানির ছবি এঁকে নিল। উফ কি একটা মেয়ে, যেমন দেখতে তেমন যেন দেমাক। হবে নাই বা কেন, বাবা আই আই টির প্রোফেসর, মা যে এন ইউ তে পড়ায়, দিদি সুইজারল্যান্ডএ থাকে, এই রকম মেয়ে কি আর বারাসাতের দেবেশকে ঘাস দেবে।
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#13)

সকাল বেলা প্রাক্টিকাল ক্লাস শুরু হল। এমন সময়ে দরজার কাছ থেকে রিতিকার মুখ উঁকি মারতে দেখে দেবেশ থ। ক্লাসের সব ছেলের চোখ চলে গেল দরজার দিকে। উফ আহ সবার মুখ থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে, কেউ টিটকিরি দিচ্ছে, কি মাল মাইরি, উপাধ্যায় স্যার কি খেয়েছিলেন কে জানে কিন্তু ওর মা নিশ্চয়ই দুধ খেয়ে ছিল তাই মেয়ে এত ফর্সা আর সুন্দরী।

ওই সব কথা শুনে দেবেশের হাসি পেয়ে গেছিল। রিতিকা দরজা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে, শর্মা স্যার বেড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস কিছু করল রিতিকাকে। রিতিকার চোখ তখন কাউকে খুঁজে চলেছে। এমন সময়ে দেবেশের চোখের ওপরে রিতিকার চোখ পরে। রিতিকার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে ওকে দেখে। শর্মা স্যার কে কানে কানে কিছু বলে রিতিকা চলে গেল।
শর্মা স্যার দেবেশের দিকে হেটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার প্রাক্টিকাল কত দূর?”

“স্যার এইত সবে শুরু করলাম।” দেবেশ উত্তর দিল।

“আচ্ছা, সে ত দেখছি, তা যাও আজ তোমার ডাক পড়েছে” মিচকি হেসে দেবেশকে বলল শর্মা স্যার।

ক্লাসের বাকি ছেলেদের মাথায় বাজ পড়েছে যেন, হাঁ করে তাকিয়ে দেবেশের দিকে। এর মাঝে ভিশাল এসে কানে কানে জিজ্ঞেস করল, “আবে শালে, কত মাল ফেলেছিশ তুই ওর ওপরে যে ও তোকে বাইরে ডাকছে। সারা আই আই টি যার দিবানা সে কিনা তোর সাথে। তুই শালা ডুবে ডুবে জল খাস ত মাইরি।”

ভিশালের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল দেবেশ, “কামিনা, তোর মতন আমি নই, দেখ রিতিকা আমাকে জুত মারে কিনা।”

ওদিকে স্নেহা আওয়াজ দিল, “জান, যদি রিতিকা ধোঁকা দেয় তাহলে আমার দিল হাজির আছেরে।”

স্নেহার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল আর দেবেশের কান লাল হয়ে গেল। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে স্নেহা ওর পেছন ছারে নি, তবে হ্যাঁ শুধু মাত্র ইয়ার্কি ঠাট্টা করত ওরা, কোনদিন কোন সিরিয়াস হয় নি দেবেশ বা স্নেহা।

ক্লাস থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে রিতিকা। আজ যেন আরও সুন্দরী দেখাচ্ছে ওকে। গাড় নীল রঙের জিন্সের ক্যাপ্রি আর ওপরে ছোটো হাতার সাদা টপ। কচি বয়সের ছাপ মুখে তবে সারা অঙ্গে যৌবনের মাদকতার প্রলেপ লাগান। তাই যে কোন ছেলে ওকে দেখলে পিছলে পরে যায়। বুকের কাছে কলেজের ব্যাগ ধরে রেখেছে, যেন ওর বুক নিয়ে দেবেশ খেলবে তাই সেটাকে আড়াল করে রেখেছে।

রিতিকা যেন আদেশ করল দেবেশ কে, “হ্যাঁ কি হল, এবারে তোমার নাম বল।”

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “আমার নাম জানার জন্য একদম ক্লাসে এসে হাজির, তাহলে ত নামটা আরও বলব না।”

চোখে সেই এক রকমের ভ্রুকুটির চাহনি, “না আমি আসতে চাইনি। মাম্মা আমাকে বলল যে যে তোকে গাড়ি করে বাড়ি দিয়ে গেল তার নামটা পর্যন্ত জানলি না, তাই আমি তোমার নাম জানতে এসেছি।”

মাথা নাড়ল দেবেশ, “হুম তার মানে ম্যাডাম আমার নাম শুধু মাত্র মায়ের আদেশ মানার জন্য জানতে এসেছে।”

“হ্যাঁ” রিতিকা এবারে বেশ জোর করে উত্তর দিল, “বলবে না, আমি চলে যাব।”

“তুমি চলে গেলে আমার ত কিছু ক্ষতি হবেনা...” দেবেশ সেই একই সুরে উত্তর দিল। মেয়েটার তাবড় ত বড় বেশি।

রিতিকা দেখল দেবেশ কিছুতেই দমছে না, তাই একটু নম্র হয়ে প্রশ্ন করল, “প্লিস তোমার নামটা বল না, ড্যাড না হলে মন খারাপ করবে।”

হেসে দিল দেবেশ, “আগে ছিল মাম্মা এখন ড্যাড, ব্যাপারটা’কি বলত।”

ইস... ধরা পরে গেছে রিতিকা, মিচকি হেসে বলল, “ছাড় মিস্টার আননেমড, কালকের হেল্পের জন্য থ্যাংকস।”

“ক’বার ধন্যবাদ জানাবে আমাকে, কাল জানিয়েছ আজ আবার।” দেবেশ মুচকি হেসে রিতিকা কে জিজ্ঞেস করল।

“বাপ রে, ধন্যবাদ জানাতে ও তোমার পারমিশান নিতে হবে নাকি।” খিলখিল করে হেসে উঠল রিতিকা। হাসি দেখে দেবেশের হৃদয় ধুক করে উঠল। ডান দিকে একটা গজ দাঁত হাসিটাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।

রিতিকা ডান হাত দেবেশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ওকে বাবা, নো সরি নো থ্যাঙ্ক ইউ। সো ফ্রেন্ডস।”

দেবেশ হাত মেলাল রিতিকার সাথে, “ওকে ডান... ফাস্ট ফ্রেন্ডস... আমি দেবেশ ঘোষাল। ইলেক্ট্রিকাল ফাইনাল ইয়ার।”

“বেশ নাম, আমার মনে থাকবে।” রিতিকা হেসে জবাব দিল। মাথা নাড়াল দেবেশ। রিতিকা হাত নাড়িয়ে বলল, “বাই আমি যাচ্ছি আজ, কলেজের দেরি হয়ে যাবে। কাল দেখা করব আমার কলেজের বাইরে।”

দেবেশ উত্তর দিল, “বাঃ রে, আমার ক্লাস’টা মাটি করে এখন যাওয়া হচ্ছে। বেশ যাও তবে কাল হবে না পরশু হবে।”

প্রশ্ন করল রিতিকা, “কেন কাল কি হয়েছে?”

হেসে জবাব দিল দেবেশ, “আরে না, কাল উপাধ্যায় স্যারের ক্লাস আছে, মিস করা যাবেনা।”

রিতিকা একটু লজ্জায় পরে গেল, “ড্যাড খুব কড়া তাই না?”

মজা করে বলল দেবেশ, “সেটা তার মেয়েকে দেখলেই বোঝা যায়।”

লাজুক হাসি হেসে রিতিকা বলল, “ওকে বাই”

এবারে রিতিকা আর দাঁড়িয়ে না থেকে হাত নাড়িয়ে চলে গেল।

দেবেশের মনের মধ্যে আবার একবার প্রেমের ভাব জেগে উঠল। প্রেম করা’ত ভুলে গেছিল দেবেশ, রিতিকার হাসি আর দুষ্টু মিষ্টি ভাব আবার করে দেবেশের মরু হ্রিদয়ে ফুল ফোটাল। আর ক্লাস করল না দেবেশ। বিছানার ওপরে সারা রাত ধরে শুয়ে শুয়ে হাতে সোনার হার নিয়ে ভাবতে লাগল, রিতিকা কি সেই মেয়ে যার গলায় এই হার পরাবে। এখন ঠিক করে জানে না দেবেশ।

দু’দিন পরে রিতিকার কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে দেবেশ সিগারেটে টান দিচ্ছিল। এমন সময়ে পেছন থেকে হাতের ছোঁয়া, “কতক্ষণ ওয়েট করছ?”

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল রিতিকাকে। “বেশি না এই মিনিট দশেক হবে।” জবাব দিল দেবেশ।

“ত এখন কি?” জিজ্ঞেস করল রিতিকা।

দেবেশ মিচকি হেসে বলল, “আমি ডেকেছি নাকি তোমাকে? তুমি’ত আমার সাথে দেখা করার জন্য বললে।”

অভিমান হয়ে গেল রিতিকার, “ও তাই বুঝি, আমি ডেকেছি। ঠিক আছে আমি আর যাবনা।” হাত নাড়িয়ে একটা অটো দাঁড় করাল রিতিকা। “এখন সময় আছে মিস্টার ঘোষাল। নিয়ে না গেলে আমি অটো’তে করে সোজা বাড়ি। তাড়াতাড়ি বল।”
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#14)

রিতিকাকে অটোর মধ্যে ঠেলে দিয়ে নিজে উঠে গেল দেবেশ। অটো ওয়ালা কে বলল, “সাউথ এক্স চলো।”

মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করল রিতিকা, “এতক্ষণ বুঝি খেলা চলছিল আমার সাথে।”

“না রে আমি কারুর সাথে খেলি না যা করি সোজা সুজি করি।” দেবেশ রিতিকার প্রশ্নের জবাবে বলল।

সি সি ডি তে পাশাপাশি বসে কফি খেতে খেতে রিতিকা জিজ্ঞেস করল, “ত এর পরে কি?”

উত্তর দিল দেবেশ, “এর পরে চাকরি। নেক্সট সেমেস্টারে ক্যাম্পাস হবে, সেখান থেকে কিছু একটা পেয়ে যাব। যদি পারি ত ফিরে যাব কলকাতা।”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রিতিকা, “দিল্লী এলে আই আই টি পড়লে, এর পরেও ফিরে যাবে কলকাতায়?”

“কেন বলত?” প্রশ্ন করল দেবেশ।

“না মানে এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম” রিতিকা একমনে কফিতে চুমুক দিতে দিতে উত্তর দিল, “এই ধর কাউকে দিল্লী’তে পেয়ে গেলে মানে কোন গার্ল ফ্রেন্ড তাও তাকে ছেড়ে দিয়ে কলকাতা চলে যাবে তুমি?”

দেবেশ বেশ বুঝতে পারল যে রিতিকা একটু ঝুঁকেছে ওর দিকে, আর দেবেশ’ত আগে থেকে হাত বাড়িয়ে তৈরি, পড়লেই লুফে নেবে যেন। চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল দেবেশ, “মনের মতন সাথি পেলে আমি তার সাথে যেখানে খুশি যেতে পারি।”

উত্তর’টা শুনে রিতিকার মন খুশিতে ভরে উঠল, “সত্যি?”

মাথা নাড়াল দেবেশ, “হ্যাঁ সত্যি।”

শুরু হয়ে গেল, দেবেশ আর রিতিকার প্রেম। সারা কলেজ ক্যাম্পাস জেনে গেল যে, উপাধ্যায় স্যারের মেয়ে রিতিকা দেবেশের প্রেমে পড়েছে। শুধু জানেনা উপাধ্যায় স্যার আর তার স্ত্রী। সন্ধ্যে বেলায় পার্টি, কখন সাউথ এক্সের বারে বসে একসাথে ড্রিঙ্কস করা বা কোন ডিস্কওথেকে গিয়ে জড়াজড়ি করে নাচা। সব শুরু হয়ে গেল রিতিকা আর দেবেশের মধ্যে।

একদিন বিকেল বেলায় দুজনে হাত ধরে একটা নামি মলের ভেতর ঘুরছিল। রিতিকা ওকে বলে, “পরের সপ্তাহে ড্যাড আর মাম্মা দিদির কাছে স্বুইজারল্যান্ড যাচ্ছে এক সপ্তাহের জন্য।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল রিতিকাকে, “হুম স্বুইজারল্যান্ড বেশ সুন্দর জায়গা, ত আমাকে কেন জানাচ্ছ?”

রিতিকা ফিসফিস করে কানে কানে বলল, “তার মানে আমি একা বাড়িতে, বুঝলে বুদ্ধু। শুধু চাকর থাকবে আর ড্রাইভার আর কেউ না।”

রিতিকার মতলব টা বুঝে ফেলল দেবেশ, রিতিকাকে একা পাবার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিল, নাগালের সামনে চলে এল সেই সুদিন। তাও রিতিকাকে রাগানর জন্য বলল, “ওকে আমি ড্রাইভার কে বলে দেব রাতে যেন তোমার রুমের মেঝেতে শোয়।”

দুমদুম করে দেবেশের বুকে কিল মারতে শুরু করল রিতিকা, “আই হেট ইউ, আই হেট ইউ... শেষ পর্যন্ত কিনা আমার কপালে জুটবে একটা ড্রাইভার। তুমি ভাবলে কি করে।”

দেবেশ রিতিকার কোমরে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল, “আরে না বেবি, বল কোথায় যাবে।”

“তুমি আমাকে নিয়ে যাবে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রিতিকা। ও ভাবতে পারেনি যে দেবেশ ওকে নিয়ে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা পর্যন্ত করতে পারে।

“তেরে লিয়ে ত জান ভি হাজির হ্যায় জানাম, ব্যাস একবার ত বোল।” কপালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বলল দেবেশ।

রিতিকা দেবেশ কে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস কর, “হানি তুমি ড্রাইভ করতে জানো?” মাথা নেড়ে জবাব দিল দেবেশ “হ্যাঁ”, “তাহলে চল সারিস্কা, এই পাশেই আছে বেশি দুরে নয়, শুধু আমি আর তুমি আমি ড্রাইভারকে পটিয়ে গাড়ি চেয়ে নেব।”
“ওকে বেবি ডান। নেক্সট সান্ডে তাহলে আমরা সারিস্কা যাচ্ছি।” দেবেশ রিতিকার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে জবাব দিল।

একদিকে রিতিকার মন ছটফট করছে যে কবে রবিবার আসবে আর একদিকে দেবেশের মন ছটফট করছে যে কবে রবিবার আসবে। দু’জন দু’জানার আলঙ্গনে একে অপরকে সমর্পণ করে দেবে। একা থাকলে দেবেশ কি করবে সেই উত্তেজনায় রিতিকার রাতের ঘুম চলে গেল। বারে বারে নিজেকে আয়নায় দেখতে থাকে, কোথাও যেন মোটা হয়ে যায় না বা কিছুতে যেন কিছু কাটেনা। বাবা মা শনিবার রাতে প্লেনে চাপলেই, রবিবার সকাল বেলায় ও চলে যাবে দেবেশের বাহু পাশে। দেবেশ ত পাক্কা যে রিতিকা নিজেকে উজাড় করার জন্য যাচ্ছে, আর দেবেশ কেন থেমে থাকবে, ওর হাথেখড়ি ত অনেক আগেই হয়ে গেছে।

রবিবার দুপুরে রিতিকাকে নিয়ে দেবেশ রওনা দিল সারিস্কা উপাধ্যায় স্যারের গাড়ি চেপে। রিতিকা ঘুরতে যাবে তাই অনেক খোলা মেলা পোশাক পড়েছে। একটা বাদামি জিন্সের ক্যাপ্রি আর সাদা ট্যাঙ্কটপ। ক্যাপ্রি’ত রিতিকার কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত চামড়ার সাথে লেপটে গেছে, আর উপরের ট্যাঙ্কটপ’টা রিতিকার স্তনের আয়তন আর কোমল পেটের সাথে লেপটে রয়েছে। দেবেশ একবার রাস্তার দিকে তাকায় একবার জুলু জুলু চোখে পাশে বসা যৌবনে ভরপুর রিতিকাকে দেখে। ওই রকম এক কচি মেয়েকে দেখে দেবেশের’ত গাড়ি চালাতে চালাতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবার যোগাড়।

পাশে বসে রিতিকা বেশ বুঝতে পারে দেবেশের মনের ভাব, মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে দেখছ? ওই রকম ভাবে না দেখে গাড়ি চালাও ঠিক করে নাহলে আমাকে’ত আর দেখতে পাবে না তার বদলে যমের ষাঁড় আসবে আমাদের নিতে।”

প্রেম ঘন স্বরে দেবেশ রিতিকাকে বলল, “বেবি আই লাভ ইউ...”

রিতিকা দেবেশের গলা জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, “হানি আই লাভ ইউ টু মাচ।”

সন্ধ্যে হয়ে গেল সারিস্কা পৌঁছতে। আই আই টি পেয়েছে বলে দেবেশের বাবা ওকে অনেক টাকা দেয় হাত খরচের জন্য। পয়সার বিশেষ অভাব নেই দেবেশের। রিসোর্ট আগে থেকে বুক করা ছিল তাই বিশেষ বেগ পেতে হল না।

রাতের খাবারের পরে একা কামরায় দেবেশ আর রিতিকা। দুজনে যেন প্রহর গুনছে কে আগে কার ওপরে ঝাঁপাবে। দেবেশ দিল্লী থেকেই কনডমের প্যাকেট নিয়ে এসেছিল, জানত যে কাজে লেগে যাবে হয়ত কম পড়তে পারে। ঘরের মধ্যে একটা নীলচে আলো জ্বলছে। দেবেশ স্নান সেরে কোমরে একটা তোয়ালে পেচিয়ে বিছানায় বসে একটা সিগারেটে টান দিচ্ছে। রিতিকা, বাথরুমে স্নান করছে আর গান গাইছে।

দেবেশ ডাক দিল রিতিকাকে, “বেবি আর কত দেরি তোমার, আমি খুব টায়ার্ড, এবারে ঘুমিয়ে পড়ব কিন্তু।”
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#15)

ঝলসে উঠল রিতিকা, “না বেবি আমার হয়ে গেছে। আমাকে ছেড়ে তুমি কি’করে ঘুমাতে পার আমি দেখে নেব।”

বেশ কিছুক্ষণ পরে বাথরুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে এল রিতিকা, পরনে ফিনফিনে একটা স্লিপ, ঠিক পাছার কাছে এসে থেমে গেছে। দু’হাত মাথার ওপরে তুলে দেবেশের দিকে মিচকি হেসে তাকিয়ে আছে রিতিকা, “হানি আই এম রেডি টু সিল্প।”

রিতিকা সিল্পের নিচে ব্রা পড়েনি। স্লিপের ভেতর থেকে পরিস্কার ভাবে সুগোল স্তনের আকার পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে ফুটে ওঠা স্তনের বোঁটা। এই দৃশ্য দেখে তোয়ালের ভেতর দেবেশের বাবাজি’ত একদম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এক’পা এক’পা করে রিতিকা বিছানার দিকে এগোচ্ছে আর ঠোঁটে লেগে আছে অজানা আনন্দের হাসি। দেবেশ কাম জ্বালায় জ্বলে গেল, তোয়ালের ফাঁক দিয়ে দেবেশের ফুলে থাকা লিঙ্গ’টা বেড়িয়ে পড়ল। রিতিকা চোখের সামনে তপ্ত লৌহ শলাকা দেখে কেঁপে উঠল।

দেবেশ আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে রিতিকাকে বাহু পাশে জড়িয়ে ধরল। রিতিকার হাত দেবেশের পিঠের ওপরে চলে গেল আর নখ দিয়ে আলতো করে আঁচরে দিল দেবেশের চওড়া পিঠ। দেবেশের লিঙ্গ রিতিকার ছোটো গোল পেটের ওপরে ধাক্কা মারছে। গরম শলাকার স্পর্শ পেয়ে রিতিকার সারা শরীর কেঁপে উঠছে বারে বারে। দেবেশ রিতিকার মুখ হাতের মাঝে নিয়ে ওপর দিকে করল, মাথা নামিয়ে আনল রিতিকার গোলাপি ঠোঁটের ওপরে। রিতিকার শ্বাস ঘন হয়ে উঠেছে, দেবেশ আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল রিতিকার মধুময় ঠোঁট জোড়ার ওপরে, সাথে সাথে রিতিকা নিজেকে ঠেলে দিল দেবেশের বুকের ওপরে, পিষে দিল নিজের কোমল তুলতুলে স্তন জোড়া। রিতিকা পাগলের মতন দেবেশের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে চুমু খাচ্ছে আর চুসছে। দেবেশের হাত চলে গেল রিতিকার নধর পাছার ওপরে, তুলতুলে নরম কচি পাছা, মসৃণ ত্বক গরম হয়ে উঠেছে প্রেমের খেলাতে। দেবেশ থাবায় করে রিতিকার পাছা ধরে কাছে টেনে নিল যার ফলে লিঙ্গ’টি গিয়ে ধাক্কা মারল রিতিকার নাভি’তে। রিতিকার হাত, দেবেশের কোমরে, তোয়ালে খুলে ফেলল রিতিকা। দেবেশ খামচে ধরল রিতকার নগ্ন পাছা, নিচে কিছুই পড়েনি রিতিকা, আগে থেকে তৈরি যেন। রতিক্রীড়ায় যেন কাপড় খুলতে বিশেষ সময় না নেয় সেই প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল রিতিকা। দেবেশ রিতিকার শরীর থেকে এক টানে স্লিপ টা খুলে ফেলল, চোখের সামনে নগ্ন লিঙ্গ আর নগ্ন যোনি। এক ওপরের সাথে মিলিত হবার জন্য উন্মুখ।

রিতিকাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিল দেবেশ, তারপরে উঠে এল রিতিকার কোমল নধর শরীরের ওপরে। পা ফাঁক করে দেবেশ কে আহ্বান জানাল রিতকা, লিঙ্গ সোজা গিয়ে রিতিকার সিক্ত যোনি মুখে ধাক্কা খেল। রিতিকার চোখে প্রেমের জল, সারা শরীরে প্রত্যেক’টি রোমকুপ খাড়া হয়ে গেছে ওর। আজ ও এক মত্ত খেলায় খেলবে দেবেশের সাথে।

দেবেশ কোমর উচু করে লিঙ্গ’টি চেপে ধরল রিতিকার যোনির মুখে, সিক্ত যোনির ফোলা ফোলা পাপড়ি লিঙ্গের লাল মাথার স্পর্শে গরম হয়ে উঠেছে। বড় বড় চোখ করে তাকাল দেবেশে মুখের দিকে, ঠোঁটে কামনার আগুন, ঠোঁট দুটি আলতো করে খুলে প্রেমঘন স্বরে বলল, “নিয়ে নাও আমাকে, আমি আজ থেকে তোমার দেবেশ...”

দেবেশ আস্তে আস্তে লিঙ্গটি রিতিকার যোনি গর্ভে আমুল প্রবেশ করিয়ে দিল। ফুলে থাকা পাপড়ি আর যোনির দেয়াল যেন ফেটে উঠলো শক্ত শলাকার উত্তপ্ত ছোঁয়ায়। একটু ব্যাথায় ককিয়ে উঠল রিতিকা, নিচের ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নিল। দেবেশের হাতেখড়ি ঠিক যেমন করে হয়েছিল দেবেশ বেশ পাকা পোক্ত খেলয়ারের মতন করে রিতিকার কোমল শরীর নিয়ে খেলতে শুরু করে দিল। একবার দেবেশ নিচে, একবার রিতিকা নিচে, সারা রাত ধরে আস্তে আস্তে খেলে নিজেদের সর্ব শক্তি টুকু নিঃশেষ করে এক ওপরের বাহুপাশে নিবিড় আলিঙ্গনে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরপর দুই রাত তিন দিন দেবেশ রিতিকা ঘর ছেড়ে আর বের হলনা, নিজেদের শরীর নিয়ে দিন রাত খেলে গেল।

শেষ রাতে খেলার পরে, দেবেশের চওড়া বুকের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে আছে রিতিকা। তর্জনীর নখের ডগা দিয়ে দেবেশের বুকের ওপরে বিলি কেটে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল, “হানি, এবারে ত আর কলকাতা যাবে না।”

আদর করে জড়িয়ে ধরল রিতিকাকে, “না বেবি তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবনা।”

রিতিকা দেবেশ কে বলল, “বাবাকে বলতে হবে, তার আগে একটা খুব বড় চাকরি পেতে হবে হানি।”

দেবেশ আসস্থ সুরে উত্তর দিল, “বেবি আই আই টি থেকে পাশ করে সবাই ভাল চাকরি পায়, এত চিন্তা করছ কেন।”

“উম্মম সেই জন্য’ত আমি তোমাকে এত ভালবাসি।” বুকের ওপরে চুমু খেল রিতিকা।

ঠিক মঙ্গলবারে দিল্লী পৌঁছে গেল ওরা। যথারিতি নিজের নিজের কলেজে ব্যাস্ত হয়ে গেল, প্রেমের গঙ্গায় জোয়ারে এল। সারা ক্যাম্পাস জেনে গেছে যে উপাধ্যায় স্যারের হবু ছোটো জামাই দেবেশ ঘোষাল। তা নিয়ে রিতিকার বা দেবেশের কারুর বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই।

দেখতে দেখতে এসে গেল ফাইনাল সেমেস্টার। সামনে ক্যাম্পাস শুরু হবে কয়েক দিন পরে। দেবেশ খবর নিয়ে জানল বিদেশি কিছু কম্পানি আসছে ক্যাম্পাসে। তার মধ্যে একটা ইউরোপিয়ান কম্পানি আছে।

একদিন বিকেল বেলায় দুজনে একটা রেস্তুরেন্তে বসে ছিল। কথার কথায় ক্যাম্পাসিঙ্গের কথা উঠল। রিতিকা জিজ্ঞেস করল ওই ইউরোপিয়ান কম্পানির কথা।

দেবেশ বলল, “হ্যাঁ একটা ইটালিয়ান কম্পানি আসছে জানি, তবে তাতে কি হবে।”

রিতিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেল, উতসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় কোথায় নেবে...”

“দুটি পোস্ট ফ্রান্সে একটা সুইজারল্যান্ড।” উত্তর দিল দেবেশ।

সুইজারল্যান্ডের নাম শুনে রিতিকার দু’চোখ চকচক করে উঠল, “হানি, তোমাকে সুইজারল্যান্ডের চাকরি টা পেতে হবেই হবে।”

“কেন গো?” জিজ্ঞেস করল দেবেশ।

এ যেন এক অধবুত আব্দার শুরু করল রিতিকা, “হানি আমার দিদি সুইজারল্যান্ডে থাকে তাই আমি চাই তুমি আমার জন্য ওই চাকরি টা পাও, প্লিস প্লিস হানি...”

দেবেশ হেসে বলল, “আর যদি না পাই তাহলে কি আমাকে বিয়ে করবে না।”

রিতিকার মন মুষড়ে গেল দেবেশের কথা শুনে, “না মানে, বাবাকে জানাতে হলে একটু বড় পোস্ট বা ভাল কম্পানি হওয়া চাই তাই আমি তোমার কাছে আব্দার করলাম। না হলে তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে রাখবে সেখানে আমি থাকব।”
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#16)

রিতিকার শুকনো মুখ দেখে দেবেশের মন কেঁদে উঠল। অনেক দিন আগে এই রকম আরেক জনের মন কাঁদিয়ে ছিল দেবেশ, সে তাকে ছেড়ে চির দিনের জন্য চলে গেল। তাই এবারে দেবেশ আর কোন ভুল করবে না।

রিতিকাকে আসস্থ করে বলল, “তোমার জন্য আমি সুইজারল্যান্ডের চাকরি যোগাড় করে নেব।”

“উম্মম...” গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল রিতিকা, “আই লাভ ইউ হানি... তুমি সুইজারল্যান্ডের চাকরিটা পেলেই আমি বাবাকে জানিয়ে দেব। বাবার আপত্তি থাকবে না তাতে।”

রাতের বেলা বড় ধন্দে পরে গেল দেবেশ, এত বড় পোস্ট কি’করে হাতান যায়। রিতিকা কে যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে যেনতেন ভাবে ওই চাকরি ওর চাই, কিন্তু কি করে পাবে। বিদেশের ইন্টারভিউ আর দেশি ইন্টারভিউর মধ্যে পার্থক্য আছে। দেশি’ত ও একবারে মাত করে দেবে কিন্তু বিদেশি কি করে মাত করবে।

পরের দিন থেকে লেগে পরে গেল খবর যোগাড় করতে, পয়সার কোন ঘাটতি রাখল না দেবেশ। লোক লাগিয়ে, বিদেশে কল করে জেনে নিল কে আসছে ইন্টারভিউ নিতে। জানা গেল যে ওদের মধ্যে যে প্যানেল হেড সে একজন ভারতীয়, সাউথ ইন্ডিয়ান, নাম এন.যে.রামাচন্দ্রন। নামটা বেশ ডাকসাইটে, শুনেই ত প্রথমে ঘাবড়ে গেল দেবেশ। এবারে মাথার মধ্যে খেলতে শুরু করে দিল যে কি করে এই বাঘা তেঁতুল কে বশে করা যায়, এর নরম জায়গায় ধাক্কা মারতে হবে। দিনে দিনে পাক্কা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে দেবেশ।

আজকাল রিতিকা দেখছে যে দেবেশ বেশ আনমনা থাকে। একদিন জিজ্ঞেস করল, “হানি তোমার কি হয়েছে, তুমি আজকাল এত কম কথা বল কেন আমার সাথে? সাথে থাকলেও মনে হয় যেন তুমি নেই।” রিতিকার মনের ভেতরে ভয় ঢুকে গেল, দেবেশ অন্য কাউকে পছন্দ করে নেয়নি ত, “সত্যি করে বল আমাকে।”

দেবেশ আর লুকাতে পারল না, ওর মাথার মধ্যে যা কিছু চলছিল সবকিছু রিতিকাকে জানিয়ে দিল, “এবারে কি করব বল।”

অনেকক্ষণ ভেবে দেখল রিতিকা, “রামাচন্দ্রন নামটা শোনা শোনা মনে হচ্ছে, দাড়াও আমি কালকে ড্যাডির কাছ থেকে জেনে নেব।”

পরের দিন রিতিকা খবর নিয়ে আনল যে, রামাচন্দ্রন বম্বে আই আই টি পাশ আউট। এবারে দেবশের চাই রামাচন্দ্রনের নাড়ির খবর যা হাতে পেলে দেবেশ রামাচন্দ্রনকে নিজের বশে করতে পারবে।

যে বছর রামাচন্দ্রন বম্বে আই আই টি থেকে পাশ করে ছিল, পয়সা আর লোক লাগিয়ে সেই বছরের সবার নাম বের করে নিল। তার মধ্যে একজন জানাশুনা পেয়ে গেল, মিস্টার ধিলন, এখন তিনি চণ্ডীগড়ে থাকেন। ব্যাস আর পায় কে দেবেশ’কে। একদিন চণ্ডীগড় গিয়ে দেখা করল মিস্টার ধিলন এর সাথে, পরিচয় দিল দিল্লী আই আই টি থেকে এসেছে। নিজের আই কার্ড দেখানর পরে বিশ্বাস করে নিল ভদ্রলক। বেশ জাতায়াত শুরু করে দিল দেবেশ। ধিরে ধিরে ধিলন কে হাতের মুঠোয় নিয়ে এল দেবেশ।

দেবেশ আজকাল বেশি কথা বলেনা রিতিকার সাথে, ওর মনের ভেতরে শুধু এখন ওই সুইজারল্যান্ডের চাকরি পাওয়া, না পেলে রিতিকাকে হয়ত পাবেনা ও।
একদিন ধিলনের সাথে কথা বলতে বলতে রামাচন্দ্রনের কথা ওঠাল দেবেশ। কথায় কথায় জেনে নিল যে রামাচন্দ্রনের একটু মেয়ের দিকে ঝোঁক আছে। ব্যাস একটা ফাঁক খুঁজছিল দেবেশ, কি করে রামাচন্দ্রনকে বাগে আনার, কাজ হাসিল হয়ে গেল ধিলনের কাছে। যা জানতে এসেছিল সেটা জেনে নিল। এবারে বাকি থাকে, রামাচন্দ্রনের সাথে কথা বলে পরিস্কার হয়ে নেওয়া।

একদিন ফোন লাগাল ইটালি, কথা বলল রামাচন্দ্রনের সাথে, “স্যার আমি দেবেশ ঘোষাল, আই আই টি দিল্লী থেকে বলছি।”

গম্ভির উত্তর এল, “হ্যাঁ বল।”

জিজ্ঞেস করল দেবেশ, “স্যার, আপনি নেক্সট সপ্তাহে দিল্লী আসছেন আমাদের ক্যামাপাসে।”

আবার গুরু গম্ভির আওয়াজ, “হ্যাঁ আসছি।”

এবারে সোজা কোথায় এসে গেল দেবেশ, “স্যার আমার ওই সুইজারল্যান্ডের চাকরি’টা চাই।”

কথা শুনে প্রথমে ঘাবড়ে গেল রামাচন্দ্রন, কি বলে ছেলেটা, “কি জিজ্ঞেস করছ তুমি জানো?”

দেবেশ একদম তৈরি ছিল উত্তর নিয়ে, “হ্যাঁ স্যার আমি জানি আমি কি চাইছি।”

রামাচন্দ্রন দেখল যে ছেলেটা বেশ পোক্ত মনে হচ্ছে, আওয়াজ একটু নিচে করে উত্তর “হুম, পারি ত, কিন্তু একটা কিন্তু আছে।”

দেবেশ তৈরি ছিল যে কখন মাছ জালে আসে, “স্যার আপনি যা বলবেন সেটা পেয়ে যাবেন।”

হেসে ফেলল রামাচন্দ্রন, “হুম তাহলে তুমি আমার সম্বন্ধে খবর নিয়েছ।”

এদিকে দেবেশও হেসে ফেলল, “স্যার মানে আমার ফিয়াঞ্চের খুব সখ যে আমি সুইজারল্যান্ডে চাকরি করি তাই আমি সবকিছু দিতে প্রস্তুত।”

জিজ্ঞেস করে রামাচন্দ্রন, “ওকে তবে দেখ যেন উপহারটা খুব ভাল আর দামী হয়, আমার চয়েস একটু হাই ক্লাস, পারবে ত?”

দেবেশ বেশ কনফিদেন্ট হয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ স্যার, একদম ঠিক পাবেন, যদি না পান তাহলে আমার চাকরির দরকার নেই।”

রামাচন্দ্রন ওকে বলল, “ওকে তাহলে গুড নাইট, দিল্লীতে দেখা হবে। ওখানে নেমে আমি জানিয়ে দেব আমি কোন হটেলে উঠব।”

দেবেশ বিদায় জানাল, “ওকে স্যার, গুড নাইট।”

দেবেশ রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে, “কাজ অনেক টা এগিয়ে গেছে, যাক এবারে আসল হচ্ছে হাইক্লাস রমনি যোগাড় করা”

রিতিকা একদিন দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “হানি তুমি যা খবর জানতে চেয়েছিলে সেটা পেয়েছ?”

মাথা নারল দেবেশ, “বেবি তুমি এত চিন্তা করোনা, আমি সব কিছু ঠিক করে দেব।”

রিতিকা একটু ভয়ে ভয়ে দেবেশকে বলল, “আমার মাঝে মাঝে ভয় করে হানি।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “বেবি কি ভয় তোমার?”

রিতিকা দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “এই তুমি কি করে করবে। ওই লোকটার উইক পয়েন্ট জেনেছ কি?”

দেবেশ বিশেষ কিছু রিতিকার কাছ থেকে লুকায় না আজকাল, তবে রিতিকা ওর পুরান কথা কোনদিন জানতে চায়নি আর দেবেশও বলেনি ওর পুরান কথা। আজ দেবেশের মনে হল যে রিতিকাকে জানিয়ে দেয় ও কি করতে চলেছে।

সব শুনে রিতিকা হাঁ, “কি তুমি এই করবে?”
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#17)

“বেবি, আমি নিজে’ত করছিনা, এটা হচ্ছে একটা খেলা হাই প্রোফাইল খেলা। জিততে হলে তোমাকে খেলতে হবে।” জানিয়ে দিল দেবেশ।

রিতিকা কি বলবে কিছু বুঝে পেলনা, তাও জিজ্ঞেস করল, “কোথা থেকে নিয়ে আসবে তুমি?”

উত্তর দিল দেবেশ, “এখন ঠিক নেই তবে এতদুর যখন নিয়ে এসেছি আগেও সব কিছু করে নেব আমি।”

দেবেশ রিতিকাকে নিয়ে আগে নিয়মিত একটা ডিস্কও তে যেত, সেখানে যেতে যেতে অনেক লোকের সাথে ওর আলাপ হয়ে গেছিল। সেখান থেকে একজনের সাথে আলাপ হল। সে নিয়ে গেল দেবেশকে একটা অফিস ঘরের মধ্যে। একের পর এক ফটো দেখাল আর জানাল তাদের এক রাতের দাম। কোনটা বিশেষ পছন্দ এলনা দেবেশের। সব যেন বাজারে পাওয়া যায় এই রকম দেখে মনে হল। লোকটা দেবেশের পকেট জাচাই করার জন্য কত দিতে পারবে জিজ্ঞেস করল। দেবেশও মরিয়া হয়ে উত্তর দিল যে এক লাখ থেকে দেড় লাখ খরচ করতে রাজি আছে। ওর কোথা শুনে, লোকটা ওকে জানাল যে রাজন নামে একটা ছেলে আছে সে কিছু বলতে পারে।

একদিন রাজন কে ফোন করল দেবেশ, “হ্যালো, মাইসেলফ দেবেশ। তোমার নাম্বার আমি মিস্টার জিমির কাছ থেকে পেয়েছি।”

ওদিকে গুরু গম্ভির আওয়াজ, “ওকে, বলুন কি চান।”

একটু আমতা আমতা করে দেবেশ বলল, “আমার সার্ভিসের দরকার।”

জানিয়ে দিল রাজন, “হুম, এখন খালি নেই।”

দেবেশ ত মরিয়া, “আরে শুনুন ত আমার কথা আগে।”

রাজন উত্তর দিল, “হ্যাঁ বলুন শুনছি। আপনার চাই কি?”

দেবেশ বলল, “না ঠিক আমার নয় তবে একটু দেখুন না প্লিস।”

রাজন উত্তর দিল, “দেখুন আগে থেকে বলে দিচ্ছি দেড় লাখ লাগবে। পঁচাত্তর আগে দিতে হবে, পঁচাত্তর অন দা স্পট। সবকিছু ক্যাস। রাজি থাকলে জানাবেন আর ম্যাডাম শুধু শুক্রবার রাত নাহয় শনিবার রাতে ফাঁকা থাকেন অন্য সময়ে নয়।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “আগেভাগে আপনাকে টাকা দিয়ে দেব তারপরে আপনি টাকা নিয়ে চোট হয়ে গেলে?”

রাজন রেগে গেল দেবেশের কথা শুনে, “ধুর মশাই আপনাকে আমার নাম্বার কে দিয়েছে, আপনি ফোন রাখুন। ফালতু লোকেদের সাথে আমি কথা বলিনা।”

দেবেশ রাজন’কে শান্ত করার জন্য বলল, “আরে না না, আপনি রেগে গেলেন কেন। টাকা আমি দেব তবে আপনার ম্যাডামের একটা ছবি না দেখলে আর প্রোফাইল না জানলে কি করে জানব যে দেড় লাখ আমার জলে যাবেনা।”

রাজন একটু শান্ত হয়ে বলল, “দেখুন ম্যাডাম এই সব করেন না, খুব হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্ট ছাড়া ম্যাডাম কিছু করেন না।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “নাম কি? বয়স কত?”

রাজন উত্তর দিল, “মনীষা শর্মা, বয়স সাতাশ, খুব সুন্দরী আর শিক্ষিতা। স্মোক করেন না, ড্রিঙ্কস শুধু ক্যাভিয়ার বা রেড ওয়াইন তাও মাঝে মধ্যে। হ্যাঁ আর এক’কথা ফাইভ স্টার হোটেল চাই, ম্যাডামের নামে রুম বুক করা থাকবে, ম্যাডাম নিজের সময় মতন চলে আসবেন।”

রাজনের কথা শুনে ত দেবেশের মাথা ঘুরে গেল, যাক দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

ফাইনাল সেমেস্টারের ক্লাস শেষ হতে চলেছে। ক্যাম্পাসিং শুরু। এরমাঝে একদিন রামাচন্দ্রনের সাথে দেখা করে জেনে নিল যে রামাচন্দ্রন, নেহেরু প্লেসের কাছে একটা পাঁচ তারা হোটেলে উঠেছেন। দাবার প্রত্যেক চাল একদম ঠিক ঠিক ভাবে এগোচ্ছে।

এরমাঝে একদিন রাজনের সাথে দেখা করে দেবেশ পঁচাত্তর হাজার টাকা দিয়ে দিল। রিতিকা নাছরবান্দা, টাকা দেবার দিনে ওর সাথে গেছিল তবে দুরে দাঁড়িয়ে ছিল রিতিকা।

টাকা হাতে নিয়ে রাজন দেবেশের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনাকে দেখে ত মনে হচ্ছে না যে আপনি...”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “না রাজন, আমি না, আমার এক বস আছে তার জন্য...”

হেসে দিল রাজন, “কি করে বস, ভাল লোক না হলে ম্যাডাম যাবেন না। আপনি পয়সা ফেরত নিয়ে যেতে পারেন।”

দেবেশ হাসতে হাসতে উত্তর দিল, “আরে না না, আমার বস ফ্রান্স থাকে, আই আই টি পাশ করা।”

রাজন টাকা নিয়ে ওর সাথে হাত মিলিয়ে চলে গেল, “বেশ ত, তাহলে হোটেলের লবিতে দেখা হবে এই ফ্রাইডে, কি বলেন।”

দেবেশ ফিরে এল রিতিকার কাছে। রিতিকা ওকে জিজ্ঞেস করল, “হানি সব কিছু ঠিক।”

মাথা নাড়ল দেবেশ, “হ্যাঁ বেবি সব কিছু ঠিকঠাক, দাবার ঘুঁটি একদম জায়গা মাফিক পড়ছে।”

আর এক সপ্তাহ বাকি, তার পরের সপ্তাহে দেবেশের ইন্টারভিউ। শুক্রবার দিন ঠিক করা হল রামাচন্দ্রনের সাথে কথা বলে। দেবেশ মনীষা শর্মার নামে একটা রুম বুক করল ওই পাঁচ তারা হোটেলে। শুক্রবার ঠিক সময়ে বাকি টাকা নিয়ে হটেলের লবিতে পৌঁছে গেল। লবিতে ঢুকে দেখল যে রাজন ওর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে।

ওকে দেখে রাজন হাসল, “কি মিস্টার দেবেশ, কেমন আছেন?”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “মনীষা কোথায়?”

রাজন উত্তর দিল, “ম্যাডাম চেক ইন করে নিয়েছেন। এখন কফি সপে বসে আছেন। আপনি আমাকে বাকি টাকা দিয়ে দিলে ব্যাস আপনার কাজ শেষ, ম্যাডামের কাজ শুরু।”

দেবেশ মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “একবার কি ম্যাডাম কে দেখা যায়।”

রাজন ওর কথা শুনে হেসে উঠল, “আরে নিশ্চয়ই দেখা যায়।” তারপরে দেবেশের হাত থেকে টাকার খাম’টা নিয়ে কফি সপের দিকে আঙ্গুল দিয়ে এক মহিলা কে দেখিয়ে দিল। দেবেশ চোখ তুলে দেখল ওই মহিলাকে, চোখে বড় বড় কালো চশমা, নিজের পরিচয় লুকানর জন্য নিশ্চয়। বেশ ফর্সা আর গোলগাল চেহারা, শরীরে কোথাও এই টুকু টোল খায়নি। পরনে কালো রঙের শাড়ি ওপরে রুপালি সুতর কাজ, শাড়িটা বেশ দামী মনে হচ্ছে, আর হাত কাটা আঁটো ব্লাউস গায়ে। দূর থেকে মুখখানি ভাল দেখা গেল না কিন্তু মনে হল ভীষণ সুন্দরী।

 
Top