• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Romance কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী [ পিনুরাম ] (Completed)

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#18)

রাজন ফোন করল মনীষা কে, “ম্যাডাম ডান।”

কফি মাগে চুমুক দিয়ে উঠে পড়ল মনীষা, রাজনের দিকে তাকিয়ে একটু মাথা নাড়ল। তারপরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের দিকে চোখ গেল মনীষার। দেবেশকে দেখে মনীষার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, এই রকম সুবিধাবাদী ক্লায়েন্ট দেখলে যেন গা জ্বলে যায় ওর। কিছু না বলে মাথা নিচু করে হেঁটে চলে গেল লিফটের দিকে। দেবেশ হাঁ করে তাকিয়ে থাকল মনীষার দিকে। এত দূর থেকে মুখ খানি ঠিক করে দেখা যাচ্ছে না, যে টুকু দেখা যাচ্ছে তাতে দেবেশ ভাবল, “কি সুন্দরী লাস্যময়ী এই মনীষা।” ওর চলনে কেমন যেন একটা মাদকতা লেগে আছে।” হাটা’টা বেশ মনে ধরে গেল দেবেশের। “এইরকম ভাবে কি কেউ হাঁটত?” চিন্তা করে খুঁজে পেল না দেবেশ।

সকাল বেলা রামাচন্দ্রনের ফোন এল, “হ্যালো দেবেশ, ইউ হ্যাভ ডান এ গুড জব। আমি দেখব আমি কি করতে পারি।”

তিন দিন পরে দেবেশের ইন্টারভিউ হল আর রামাচন্দ্রন স্যারের দৌলতে সুইজারল্যন্ডের চাকরি’টা হয়ে গেল।

রিতিকা এবং দেবেশ দুজনে বেশ খুশি, আজ অনেক দিন পরে মনটা খুব হাল্কা লাগছে দেবেশের। রিতিকাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে, মুখে, বুকে চুমু খেয়ে নিল দেবেশ। এত দিনের সাধ ছিল আই আই টি পড়বে, তারপরে সাধ ছিল মনিদিপাদির সোনার হারের জন্য একটা গলা খোঁজার, সেটার সময় হয়ে এসেছে। রিতিকার গলায় পরাবে জেঠিমার দেওয়া সোনার হার।

একদিন বাড়িতে ফোন করল দেবেশ, বাবা মাকে জানাল এই সুখবর। বাড়ির সবাই খুব খুশি ওর চাকরি পেয়েছে শুনে, তবে তার সাথে সাথে একটু মনে দুঃখ যে ছেলে বাড়ি ছেড়ে দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাবে। এই’ত বিধাতার বিধান, ডিম ফুটে পাখীর ছানা বের হবার পরে, যতক্ষণ না উড়তে শেখে ততক্ষণ সে মায়ের কোল ছারেনা, যেদিন পাখি উড়তে শেখে সে দিন পাখি নিজের বাসা বানানর জন্য উড়ে চলে যায়।

একদিন দেবেশ রিতিকাকে বলল, “ডার্লিং এবারে আমাদের সেলিব্রেট করা উচিত।”

রিতিকা জিজ্ঞেস করল, “কি রকম সেলিব্রেট হানি?”

দুষ্টু হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “বাঃ রে, সারিস্কার কথা বেমালুম ভুলে গেছ।”

ফর্সা মুখখানি লাল হয়ে গেল রিতিকার, চোখ নামিয়ে দেবেশের বুকের ওপরে মাথা রেখে উত্তর দিল, “কবে সেলিব্রেট করবে হানি?”

চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে মুখ তুলে ধরল দেবেশ, “শুক্রবার রাতে, এবারে এক ফাইভ স্টার হোটেলে কাটাব। সেদিন আমার তোমাকে কিছু দেবার আছে।”

রিতিকা খুব খুশি, “কি দেবে তুমি আমাকে?”

দেবেশ ওকে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল, “একটা সারপ্রাইস দেব তোমাকে, আমার জীবনের সব থেকে বড় আশীর্বাদ বা ভালবাসা দেব তোমাকে।”

কথাটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না রিতিকা, তাও খুশি এই শুনে যে, অবশেষে দেবেশ ওর বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবে।

রিতিকা বাড়িতে বলে বের হল যে ও কোন বান্ধবির বাড়িতে রাত কাটাবে, এদিকে দেবেশ রুম বুক করে রেডি।

শুক্রবার এল, যথা সময়ে দেবেশ আর রিতিকা রুমে ঢুকে পড়ল। ধিরে ধিরে এক প্রস্থ আদর খাওয়া হয়ে গেল। বিছানার ওপরে এলিয়ে শুয়ে আছে নগ্ন রিতিকা। দেবেশ ভাবল একবার রাজন কে ফোন করে, একবার ত ওকে ধন্যবাদ জানান উচিত।

দেবেশ, “হ্যালো রাজন ভাই, কেমন আছেন?”

রাজন, “কে দেবেশ নাকি? আরে বাঃবা অনেক দিন বাঁচবেন আপনি। বেশ কয়েক দিন ধরে আপনার ফোন লাগাচ্ছি কিন্তু আপনাকে পাচ্ছি না।”

দেবেশ ওর কথা শুনে থমকে গেল, “কেন আমাকে আপনি খুজছেন কেন?”

রাজন, “আরে আপনার জন্য একটা মেসেজ আছে, আপনি কোথায় আছেন বলুনত? ম্যাডামের মেসেজ খুব জরুরি, আপনাকে দেবার কথা ত অনেক আগেই ছিল কিন্তু আপনাকে না পেয়ে আমি ত মহা মুশকিলে পরে গেছিলাম।”

দেবেশ ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, মনীষা ওকে কি মেসেজ দিতে পারে। ভেবে কূলকিনারা পেল না দেবেশ। রাজন কে হোটেলের নাম আর রুম নাম্বার জানিয়ে দিয়ে চুপ করে রিতিকার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে বসে গেল। ব্যাগ থেকে বের করে নিল সেই সোনার হার, আজ রাতে রিতিকাকে গলায় পড়িয়ে দেবে দেবেশ আর কাল উপাধ্যায় স্যারের সাথে কথা বলবে।

রিতিকা ফোনে ওর কথা শুনে জেগে উঠেছে। ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দু হাত বাড়িয়ে ডেকে নিল কাছে, “হানি কাছে এস না প্লিস এত দুরে কেন আজ?”

কি করবে দেবেশ, মাথার মধ্যে ঘুরছে মনীষার মেসেজ। রাতের ডিনারের পরে রিতিকার গলায় সোনার হার পড়িয়ে দেবে।

ঠিক এমন সময়ে দরজায় কেউ ঠকঠক করল, রিতিকা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে চাদরে ঢেকে নিল। দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে আসস্থ করে বলল “বেবি ভয় পেয় না আমি আছি।”

দরজা খুলে সামনে দেখল রাজন দাঁড়িয়ে, হাতে একটা ঝকমকে কাগজে মোড়া একটা বেশ বড় বাক্স। দেবেশের হাতে বাক্সটা দিয়ে রাজন জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি মনীষা ম্যাডাম কে চিনতেন?”

“না,” মাথা নাড়ল দেবেশ, “কোথাও দেখেছি বলে’ত মনে পরে না।”

ওর দিকে চোখ মেরে হেসে রাজন বলল, “যাই হক, বেস্ট অফ লাক আপনি যার জন্য হস্টেল ছেড়ে হোটেলে আছেন।”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ধন্যবাদ।”

রাজন একটু বেশ তাড়াহুড় করে চলে গেল। দেবেশ কূলকিনারা পাচ্ছে না যে এই বাক্সে কি থাকতে পারে। একটানে খুলে ফেলল বাক্স, ভেতরের জিনিস দেখে দেবেশের মুখ হাঁ হয়ে গেল। এটাকি কোন রকমের ঠাট্টা নাকি। একটা লাল ছোটো প্যান্টি। প্যান্টিটা হাতে নিয়ে দেখল যে ওটা মনীষার যোনি রসে ভিজে শুকিয়ে গেছে। মাথা গরম হয়ে গেল দেবেশের, তারপরে বাক্সের ভেতরে চোখ গেল, দেখল একটা কাগজ আর একটা বেশ বড় প্যাকেট।

কাগজটা বের করে চোখের সামনে মেলে ধরল দেবেশ। ওই কাগজে যা লেখা সেটা পরে দেবেশের মাথা ঘুরে গেল, মনে হল যেন কেউ সপাটে ওর গালে এক থাপ্পর মেরেছে। দেবেশ কোন রকমে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে নিল।
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#19)

ওই কাগজে লেখা, “উইথ লাভ ফর এভার ইওরস, মনিদিপা চৌধুরী।”

প্যাকেট’টা খুলে দেখল যে ওতে কড়কড়ে হাজার টাকার নোটের তাড়া, দেড় লাখ টাকা। কিছুই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না দেবেশ। চোখের সামনে মনীষার মুখ আর তার সাথে মনিদিপার মুখ কিছুতেই মিলয়ে নিতে পারছে না। কিন্ত এই কাগজ মিথ্যে নয়, ওই হাতের লেখা ও ভাল ভাবে চেনে। ওই হাতের লেখা দেখে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে এল দেবেশের, একি করল সে। একজন কে পেতে গিয়ে আরেক জনের শরীরের সাহায্য নিল। সামনে রিতিকা, যে ওকে বিয়ে করবে, হাতে মনিদিপার চেক, সেই ভালবাসার পাত্রি মনিদিপা, যে এমনকি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে আর রিতিকাকে বরন করে নেবার সুযোগ দিয়েছে। রিতিকা ওর রজনীগন্ধা, সুন্দর কোমল নির্মল ফুল আর মনিদিপা ওর হাসনাহেনা, মাদকতায় ভরা এক ভালবাসা।

না আর ভাবতে পারছে না দেবেশ, হাতের মুঠিতে কাগজ’টা প্রাণপণে শক্ত করে ধরে আরেক হাতের মুঠিতে সোনার হার। নিজের কপালে করাঘাত করল দেবেশ। হৃদয় ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল, “মনিদিপআআআআআ...” না সে নাম ঠোঁটে এল’না ওর, বুকের আর্তনাদ, বুকের মাঝেই রয়ে গেল। মেঝের ওপরে বসে পড়ল দেবেশ।

রিতিকা দেবেশের জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল খুব বড় একটা অঘটন ঘটে গেছে। বিছানার চাদর জড়িয়ে নেমে এল দেবেশের পাশে, বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে রিতিকার, কি হল দেবেশের।

রিতিকা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, হানি?”

রিতিকার গলা শুনে পৃথিবীতে ফিরে এল দেবেশ। কি বলবে রিতিকাকে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে দেবেশ। রিতিকা ওর হাত থেকে কাগজ’টা নিয়ে দেখল ওতে কি লেখা আছে। লেখা পড়ে রিতিকার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে গেল। বুকের মাঝে কেউ যেন দুমদাম করে হাতুরি মারতে শুরু করে দিল।

কান্না ভেজা গলায় জিজ্ঞেস করল রিতিকা, “এটা কি দেবেশ?”

কি উত্তর দেবে রিতিকাকে, কাঁপতে কাঁপতে দেবেশ বলল, “আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না, রিতিকা?”

দেবেশের কথা শুনে রিতিকার মুখ শুকিয়ে গেল, কেউ যেন ওর সারা শরীরের রক্ত শুষে নিয়েছে। বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠল রিতিকা, “কি হয়েছে তোমার দেবেশ, আমাকে বল।”

রিতিকার দিকে তাকিয়ে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “আমি খুব বড় পাপী রিতিকা। আমায় বিয়ে করলে তুমি সুখী হবে না। তুমি চলে যাও আমাকে ছেড়ে।”

রিতিকা জড়িয়ে ধরল দেবেশকে, “কি যাঃতা বলছ তুমি, তোমার চোখ দেখে আমার ভয় করছে হানি। কি হয়েছে তোমার?”

দেবেশ দাতে দাঁত চিপে রিতিকার হৃদয় ভেঙ্গে দিল। চেঁচিয়ে উঠল দেবেশ, “আই হেট ইউ রিতিকা, তুমি সুবিধা বাদি মেয়ে। আমি সুইজারল্যান্ডের চাকরি পেলে তবে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না হলে তুমি আমাকে করতে না। এই রকম সুবিধা বাদি তুমি। আই হেট ইউ রিতিকা।” কথাগুল বলতে দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু ওকে ওর মনিদিপাকে খুঁজতে হবে, এই হার মনিদিপার গলার, এই হার আর কাউকে ও পরাতে পারবে না, মরে গেলেও পারবেনা।

দেবশের কথা শুনে রিতিকা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল, “না হানি আমার সুইজারল্যান্ড চাই না, প্লিস ওই রকম ভাবে আমাকে ফেলে দিও না। তুমি আমাকে যেখানে রাখবে সেখানে থাকতে আমি রাজি। তোমার সাথে আমি কলকাতা যেতেও রাজি।”

দেবেশ দেখল রিতিকাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না, বুক ফেটে যাচ্ছে দেবেশের। নিরুপায় হয়ে দেবেশ শেষ পর্যন্ত হাতের মুঠি খুলে ওকে সোনার হার’টা দেখাল।

রিতিকার চোখে জল নিয়ে দেবেশের হাত থেকে সোনার হার’টা নিয়ে নিল।

কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল “এটা কি?”

দেবেশ কান্না জড়িত স্বরে উত্তর দিল, “এটা আমার ভালবাসা। আমার জেঠিমা আমাকে দিয়েছিল আর বলেছিল যে আমি যেন আমার বউয়ের গলায় পড়িয়ে দেই। আজ রাতে এই হার তোমার গলায় পড়িয়ে চিরকালের জন্য নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম আমি। এই হার আমার প্রথম ভালবাসা, মনিদিপার। মনিদিপা সুইসাইড করে আর আমাকে ওর এই হার দিয়ে যায়। আজ আমি আমার মনিদিপা কে খুঁজে পেয়েছি। রামাচন্দ্রনের সাথে যে মনীষা রাত কাটিয়ে ছিল সে আমার মনিদিপা। মনিদিপা বেঁচে আছে, আমি ওর হার আর কারুর গলায় দিতে পারব না। এই হার আমি তোমাকে পড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না, রিতিকা। রিতিকা আমি পাপী, আমাকে ক্ষমা কর।”

রিতিকার পায়ে লুটিয়ে পড়ল দেবেশ। সোনার হার হাতে নিয়ে পাথর হয়ে গেল রিতিকা। ওর গা হাত পা, ঠান্ডা হয়ে গেছে দেবেশের কথা শুনে। হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে রিতিকার। দু’চোখে যেন অস্রু নয়, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেকক্ষণ পরে চোখের জল মুছে রিতিকা সোনার হার’টা দেবেশের হাতে দিল। দেবেশ তাকিয়ে রইল রিতিকার লাল চোখের দিকে।

হৃদয় ভাঙ্গা এক হাসি দিয়ে রিতিকা দেবেশকে বলল, “আজ রাতের জন্য একবার’টি এই হার আমার গলায় পড়িয়ে দাও, হানি। আমি কাল সকালে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো।”

কাঁপা হাতে দেবেশ রিতিকার গলায় ওই সোনার হার পড়িয়ে দিল। দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে নরম বিছানায় উঠে গেল। শেষ বারের মতন প্রান ঢেলে নিজেকে উজাড় করে দিল, রিতিকা। চোখে জল নিয়ে, দেবেশ নিজেকে সপে দিল রিতিকার প্রেমঘন বাহু পাশে। যেন এই রাতের আর শেষ নেই।

এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে রিতিকার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল দেবেশ। সারা রাত দেবেশ কে জড়িয়ে কেঁদে গেল রিতিকা। পুব আকাশে সূর্য উঠছে, ঘরের মধ্যে নতুন সূর্যের আলো, কিন্তু রিতিকার হৃদয় আজ কালো মেঘ। খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে কপালে চুমু খেল, ঠোঁটে চুমু খেল, বুকে চুমু খেল রিতিকা, পাছে দেবেশ জেগে যায়। গলা থেকে খুলে নিল সোনার হার আর পড়িয়ে দিল দেবেশের গলায়। ঠিক বাঁ বুকের ওপরে যেখানে হৃদয় খানি ধুকপুক করছে, সেখানে চুমু খেল রিতিকা।

একটা কাগজে লিখল, “আই উইল রিমেম্বার ইউ ফরেভার। আমার শুভেচ্ছা আর ভালবাসা তোমার সাথে থাকবে। আমার সামনে আর কোনদিন এসো না। নিজের ভালবাসার খোঁজে যাও, হানি।”

তারপরে আর পেছন ফিরে তাকাল না, নিজের জামা কাপড় পরে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#20)

সকালে উঠে দেখে বিছানায় রিতিকা নেই, ওর গলায় ঝুলছে সোনার হার। ফাঁকা বুক নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল দেবেশ। হাতে রিতিকার ছোট্ট চিঠি। অনেক্ষন পরে রাজন কে ফোন করল দেবেশ, কিন্তু রাজন ফোন উঠাল না, বারে বারে ফোন করল। কিন্তু রাজন আর ফোন ধরল না। কিছুদিন পরেও ফোন করে দেখল যে নাম্বারটা আর চলছে না। এত কাছে এসেও মনিদিপাকে হারিয়ে দিল দেবেশ।

সারা দিল্লী তোলপাড় করে খুঁজতে চেষ্টা করল মনীষা’কে, কিন্তু এ নারী যে অধরা। কোন নাইট ক্লাব বা ডিস্কোতে কেউ ওই নামের কোন মেয়ে কে চেনেনা। রাজনের ফোন আর পেল না দেবেশ।

একদিন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে দেবেশ, পাশে একটা বইয়ের দোকানে একটা মেয়েদের পত্রিকায় দেখল মনীষা শর্মার নাম। নামটা দেখে চমকে গেল দেবেশ, যাক একটা কিছু পেয়েছে অবশেষে। এবার মনীষা ওরফ মনিদিপা কে খুঁজে বের করবেই। ফোন করল সেই পত্রিকার অফিসে। সেখানে গিয়ে জানতে পারল যে মনীষা শর্মা কিছুদিন আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। দেবেশ ঠিক বুঝে গেল যে মনিদিপা আবার ওর হাতের নাগাল থেকে বেড়িয়ে চলে গেছে। এতদিন পরে ও বুঝল যে জারনালিস্ট মনীষা কেন নিজেকে এত ঢেকে রেখেছিল সেই রাতে।

সুইজারল্যান্ডের চাকরি নিলনা দেবেশ তবে ফ্রান্সের একটা খুব বড় কম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেল।

গলায় আজ’ও সোনার হার’টা ঝুলছে। আজও দেবেশের বুকের কাছে জানান দেয় যে মনিদিপা কোথাও লুকিয়ে আছে। এখন থেকে দিন গোনার পালা শুরু আর লুকোচুরির খেলা শুরু। আবার কবে দেখা হবে মনিদিপার সাথে। কিন্তু আর দেখা হয় না। দেবেশ বিদেশে চলে গেল।

দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। প্রত্যেক বছরে একমাস ছুটি নিয়ে দেবেশ বাড়ি যায়।

মা প্রত্যেক বার জিজ্ঞেস করে, “কিরে বিয়েটা কবে করবি? এবারে ত করে ফেল।”

প্রত্যেক বার একই উত্তর দেয় দেবেশ, “আরে মা, এখন যা’কে খুজছি তাকে পাইনি।”

তিন বছর পরে একদিন, দেবেশের আই-আই-টি র বন্ধু অনির্বাণের ফোন এল। জানাল যে, বেশ কয়েক জন মিলে দিল্লীতে একটা গেট টুগেদার করবে। ওকে আসতেই হবে। অনেক নাছরবান্দার করার পরে দেবেশ রাজি হল গেটটুগেদার’এ যাবে। ভালই হবে এবছরের বাড়ির ট্রিপ’টাও একসাথে সারা হয়ে যাবে।

তিন বছর পরে, দিল্লী ফিরে সেই পুরান আই.আই.টি ক্যাম্পাসে ঢুকে অনেক দিন পরে ভাল লাগল দেবেশের। দেখা হল অনেক পুরান বন্ধুদের সাথে। অনির্বাণ, ভিশাল, নিলাঞ্জন আর ধিমান। অনির্বাণ এখন বাসেল থাকে, ভিশাল লন্ডনে, ধিমান কায়রো আর নিলাঞ্জন দিল্লীতেই থাকে। দেবেশকে দেখা মাত্রই ভিশাল ওকে জড়িয়ে ধরল।

দেবেশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে কি হল তোর?”

ভিশাল একটু হেসে উত্তর দিল, “না ইয়ার কিছু’না, আসল কথা হচ্ছিল যে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”

অনির্বাণ প্রস্তাব দিল যে হৃষীকেশ যাবে র্যাফটিং করতে। বেশ হইহুল্লর হবে এই ভেবে সবাই এক কথায় রাজি হয়ে গেল।

একদিন আগেই ওরা পৌঁছে গেছিল হৃষীকেশে। রাতের বেলা গঙ্গা নদীর তীরে বসে পাঁচ বন্ধু হাতে বিয়ারের বোতল নিয়ে বসে। বেশ হাসি ঠাট্টা মজা চলছে।

অনির্বাণ ওকে জিজ্ঞেস করল, “মাল কবে বিয়ে করবি, সাতাশ ত হল। আমাদের ত সবার বিয়ে হয়ে গেল শুধু তুই বাকি।”

কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “আমার মনে হয় না বিয়ে হবে?”

অনির্বাণ ওকে একটু ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করল, “কেন রে? রিতিকা ডিচ করেছে তাই আর বিয়ে করবি না।”

গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল দেবেশ, “না রিতিকা আমাকে ডিচ করেনি। রিতিকা অনেক অনেক ভাল মেয়ে। আমার নিজের কিছু প্রবলেম ছিল যার জন্য আমি আর রিতিকা আলদা আলদা পথে চলে যাই।”

ওর গলার আওয়াজ শুনে সবাই চুপ করে গেল। ভিশাল বলল, “আরে ইয়ার, পুরান কথা ঘেঁটে আর কি হবে। চল চল ওসব কথা ছাড়, কাল সকালে উঠে র্যাফটিংএ যেতে হবে চল সবাই শুয়ে পড়ি।”

সকালবেলায় ওরা বেড়িয়ে পড়ল র্যাফটিং করতে। দুপুরবেলা পর্যন্ত গঙ্গায় র্যাফটিং করে সবাই ক্লান্ত হয়ে ফিরল। সবাই নিজের নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়েছে। দেবেশ ক্লান্ত থাকা স্বতেও ঘুমতে পারল না। অনেকদিন পরে ওর রিতিকার কথা মনে পরে গেল আর তার সাথে মনে পরে গেল গলায় ঝোলা মনিদিপার সোনার হার।

একটু খানি মনমরা হয়ে গেল দেবেশ, “আর কি আমি মনিদিপাকে খুঁজে পাব না?”

কাউকে কিছু না জানিয়ে ও গঙ্গার ঘাটের দিকে হাঁটা দিল। পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যে হয় হয়। দেবেশ চুপ করে বসে রইল গঙ্গার ঘাটে, এক মনে বয়ে চলা গঙ্গার জলের দিকে তাকিয়ে আছে। কতো লোকে কতো রকমের মানত করে এই মা গঙ্গার কাছে, অনেকের সেই মনকামনা পূরণ হয় অনেকের হয় না। দেবেশ বুক ভরে বড় একটা নিস্বাস নিল, না ওর ভাগ্য অত ভাল নয় যে মা গঙ্গা ওর কথা শুনবে।

ঠিক এমন সময়ে ওর চোখ গেল কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে। মহিলা ওর দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে তাই ওই মহিলার মুখ দেখতে পাচ্ছে না দেবেশ। মহিলার পরনে একটা ঘিয়ে রঙের দামী ঢাকাই জামদানি শাড়ি। মাথার চুল এল খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে এলিয়ে আছে। মহিলার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা আর বেশ সুন্দরী দেখতে। মহিলার হাতে একটি পুজোর থালা। মহিলাটি পুজো সেরে একটু ঝুঁকে গঙ্গার জল নিজের মাথায় ছিটিয়ে নিল।

দেবেশ একমনে মহিলাকে দেখে চলেছে। দেখতে’ত বাঙালি বলেই মনে হচ্ছে দেবেশের। মহিলার রুপ আর সাজ যেন দেবেশকে টেনে ধরে রেখেছে, চোখের পলক যেন পড়ছে না দেবেশের।

মহিলাটি ধিরে ধিরে পেছন ফিরল আর দেবেশের চোখ সোজা মহিলার মুখের ওপরে। দেবেশ স্তানুর মতন দাঁড়িয়ে পড়ল। বুকের ধুকপুকানি থেমে গেছে, এই মুখ সে চেনে, এই চোখ সে চেনে। বড় কাছ থেকে দেখেছে ওই কাজল কালো চোখ। সামনে দাঁড়িয়ে মনীষা ওরফে মনিদিপা। বুকের মাঝে তোলপাড় করে উঠল। এক পা এগিয়ে যে মনিদিপার দিকে যাবে সেই শক্তি টুকু নেই।

 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#21)

মনিদিপা মাথা তুলে এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াল, হটাত করে চখাচুখি হয়ে গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের সাথে। পা বাড়াতে ভুলে গেল মনিদিপা। কেউ যেন ওর পায়ের পাতার ওপরে পেরেক দিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে। নড়বার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে মনিদিপা। ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে উঠল মনিদিপার, আস্তে আস্তে করে দুটি চোখ জলে ভরে গেল। পৃথিবীটা ওর দুই ভেজা চোখের সামনে বনবন করে ঘুরছে। মনিদিপার মাথা ঘুরতে শুরু করল, আর যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।

লুটিয়ে পরে যাবার আগেই দৌড়ে গিয়ে দেবেশ দু হাতে জড়িয়ে ধরল মনিদিপাকে। পুজোর থালা মাটিতে পরে গেল, ঝনঝন শব্দে গড়াতে গড়াতে পুজোর থালা গঙ্গার জলে ভেসে গেল। দেবেশ মনিদিপার জলে ভরা কাজল কালো চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে ধিরে ধরে চোখ খুল্ল মনিদিপা, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে। একটু অপ্রস্তুত লাগল নিজেকে অত লোকের সামনে একজনের বাহুর মধ্যে নিজেকে পেয়ে, আস্তে করে দেবেশের আলঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দু’চোখে বন্যা নেমেছে মনিদিপার। বারে বারে চোখ মুছছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করার ইচ্ছে হচ্ছে মনিদিপার, “কেন এসেছ আমার সামনে আবার আমাকে ব্যাথা দিতে। কেন আমার জীবন থেকে চলে যেতে পার না তুমি, দেবেশ?” না মনিদিপা ওই কথা ওর ঠোঁটে আনতে পারেনি। চোখের জল মুছে ম্লান হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল দেবেশকে, “কেমন আছো দেবেশ? তিন বছর আগে যা ছিলে তার থেকে একটু যেন রোগা হয়ে গেছ।”

এতদিন পরে ওই আওয়াজ শুনে দেবেশের বুক কেঁপে উঠল। চোখের জ্বালা করছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি অনেক বদলে গেছ, মনি।”

মনিদিপা ঠোঁট কামড়ে ধরল, সাত বছর পরে ওই নামে আবার কেউ ওকে ডাকল আজ। সত্যি অনেক বদলে গেছে, মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার জীবন’টাই এইরকম। তোমার খবর বল, আজকাল ত মনে হয় সুইজারল্যান্ডে আছো তাইতো?”

দেবেশ মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দিল, “অনেক কিছু খবর রাখ দেখছি।”

মনিদিপা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “কেউ কেউ রাখে কেউ কেউ রাখে না।”

দেবেশ মাথা নেড়ে জানাল, “না মনি, আমি সুইজারল্যান্ডে থাকিনা, আমি বোরদে, ফ্রান্সে থাকি।”

এবারে অবাক হবার পালা মনিদিপার, একভাবে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে কতবছর পরে একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখছে। মনিদিপার হাত ধরল দেবেশ, হাতের ছোঁয়া পেয়ে যেন গলে যাবে মনিদিপা, একটু কেঁপে উঠল ওর হাতের পরশ পেয়ে। দেবেশ বলল, “এসো আমার সাথে।”

জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মনিদিপা, “কোথায় যাবো?”

দেবেশ হেসে জবাব দিল, “একটু হাটতে আপত্তি নেই নিশ্চয়?”

মাথা নাড়ল মনিদিপা, “না তা নেই।” বলেই হেসে ফেলল। সেই মুক্ত সাজান দাঁতের পাটি দেখে দেবেশের মন খুশিতে ভরে গেল।

দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করল। কারুর মুখে কথা নেই, দুজনের বুকে এক অজানা শূন্যতা আর ভাললাগা দুটোই ভর করে রয়েছে। দুজনেই যেন ভাবছে কে আগে কিছু বলবে।

অনেকক্ষন পরে দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “দিল্লীতে কোথায় থাক?”

মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “আমি তিন বছর হল দিল্লী ছেড়ে দিয়েছি।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “কেন? তুমি ত একটা পত্রিকায় লিখতে তাই না?”

মনিদিপা উত্তর দিল, “হ্যাঁ লিখতাম। কিন্তু আর থাকতে পারলাম না তাই দিল্লী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হল।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “এখন কোথায় থাকো তুমি?”

“কেন আমাকে শেষ করে দিয়েও তোমার এখন শান্তি হয়নি।” না কথাটা বলল না মনিদিপা, কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল, “আমি যেখানে আছি ভাল আছি তুমি আর জেনে কি করবে?”

উত্তরটা দেবেশের মনে বড় ব্যাথা দিল। মনিদিপার অধিকার আছে সে ব্যাথা দেবার। আবার দুজনেই চুপ। নিজেদের মাঝে একটু ব্যাবধান রেখে হাঁটতে থাকল। দেবেশ ভাবছে যে কি কথা বলা যায়, কি প্রশ্ন করবে মনিদিপাকে, কি হয়েছিল মনিদিপার এই প্রশ্ন করবে? ওদিকে মনিদিপা ভাবছে যে, কেন আবার দেবেশের সাথে দেখা হল, ভাল’ত ছিল মনীষা হয়ে এক নতুন জীবন নিয়ে। কিন্তু দেবেশ এখানে কি করছে? এতদিনে নিশ্চয় বিয়ে করেছে।

মনিদিপা দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “তা হৃষীকেশ-এ কেন?”

মনিদিপার আওয়াজ শুনে দেবেশের ধড়ে প্রান ফিরে এল, “অনেক দিন পর পুরান বন্ধুদের সাথে দেখা হল আর এই বন্ধুদের সাথে র্যাফটিং করতে এখানে আসা।”

হাসি থামাতে পারল না মনিদিপা, “ফ্রান্স থেকে এখানে র্যাফটিং করতে আসা? বাপরে তোমার ফ্রান্সে নদী নালা নেই নাকি?”

হাসি শুনে খুব ভাল লাগল দেবেশের, ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল দেবেশ, “না, সেই রকম নয়, আমার বন্ধুরা সবাই বিদেশে থাকে। একটা গেটটুগেদার হয়ে গেল আর র্যাফটিং’ও হয়ে গেল।”

আবার দুজনেই চুপ, কে কাকে কি জিজ্ঞেস করবে এই নিয়ে দুজনেই মনের মধ্যে প্রশ্নের অভিধান খুলে বসেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “মনি যাবে আমার সাথে?” জিজ্ঞেস করার পরেই দেবেশের হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গেল, মনিদিপা কি উত্তর দেবে এই ভেবে।

মনিদিপার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেল। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় নিয়ে যাবে?”

দেবেশ উত্তর দিল, “আমার হোটেলে চল একটু বসে গল্প করব।”

হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “গল্প করার জন্য’ত অন্য কোথাও বসা যেতে পারে, কিন্তু হোটেলে কেন নিয়ে যেতে চাও আমাকে?”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ভয় নেই খেয়ে নেব না আমি।”

মনিদিপা বলল, “আচ্ছা চল, তবে বেশিক্ষণ বসব না। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে জিনিস গুছাতে হবে। কাল সকাল বেলা আমি চলে যাব তাই।”
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#22)

মনিদিপার চলে যাবার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল দেবেশের। একপা এগিয়ে এল মনিদিপার দিকে। ওই সুন্দর ফর্সা কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে করছে খুব, ইচ্ছে করছে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। দেবেশ সামলে নিয়ে হেসে বলল, “ঠিক আছে, রুমে ত আগে চল, এত দিন পরে দেখা একটু গল্প করবে না আমার সাথে।”

দুজনেই পা বাড়াল হোটেলের দিকে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, এই বিশাল তীর্থস্থলে চারদিকে লোকের বন্যা। এই ভিড় ভর্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনিদিপার খুব ইচ্ছে করছিল দেবেশের বাহু জড়িয়ে ধরে, আর দেবেশ ভাবছিল একবার মনিদিপার হাতটা ধরে, কিন্তু দুজনের মনে ইতস্তত ভাব, মনিদিপা চুপচাপ দেবেশের পেছন পেছন হাঁটতে লাগল।

রুমে ঢুকতে গিয়ে ভিশালের সাথে দেখা হল। কেউই কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করল না, শুধু চোখে চোখে একটু কথা হয়ে গেল।

হোটেলের রুমে ঢুকে দেবেশ মনিদিপাকে বসতে বলল। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকার পরে দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “এতদিনে বিয়ে করেছ নিশ্চয়।”

এতক্ষণ নিস্পলক চোখে মনিদিপাকে দেখছিল দেবেশ। সেই মাদকতা ময় রুপের বদলে এক স্নিগ্ধা রূপবতী মহিলা ওর সামনে বসে। সেই চোখ, সেই ঘন কালো চুল, গায়ের রঙ্গে যেন একটু আলতা লাগান। ওর কথা শুনে যেন সম্বিৎ ফিরে পেল।

মনিদিপার কথার উত্তর না দিয়ে পালটা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কথা শুনি, মনি। কেন মরার ভান করলে তুমি আর কেন এত দিন লুকিয়ে ছিলে আমাদের কাছ থেকে?”

মনি ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, “সত্যি তুমি শুনতে চাও?” মাথা নাড়ল দেবেশ, “হ্যাঁ।”

মনিদিপা বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল, “আমার কলঙ্কিত বস্তাপচা কাহিনী নাই বা শুনলে।”

দেবেশ বলল, “একা বয়ে বেড়াতে চাও নিজের কষ্ট, আমাকে সাথেও নেবে না।”

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল, “আমি এক রকম মরেই আছি দেবেশ। দাদা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেল, ফিরে তাকাল না আর। বাবার অসুখের সময়ে দাদা একবারের জন্যও কাছে এসে দাঁড়াল না। আমি কাকুর কাছে টাকা চাইতে যেতে পারলাম না, পাছে তোমার সামনে পড়ে যাই আর টাকা দেবার ছলে আমি যদি তোমার কেনা বাঁদি হয়ে যাই। তোমার ওপরে আমার প্রচন্ড ঘৃণা জন্মে গেছিল, সেই ভেবে আমি আর গেলাম না।”

বলতে বলতে মনিদিপার চোখে জল চলে এল। কথা শুনে দেবেশের কান লাল হয়ে গেল।

“বাবার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল। নারসিং হোমের খরচ, ডাক্তারের খরচ, তারপরে পেসমেকার কিনে লাগানোর খরচ। বাড়ি বিক্রির সব টাকা শেষ, আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম টাকা যোগাড় করতে করতে কিন্তু ভেঙ্গে পড়িনি। এদিকে ওদিকে, এর কাছে, তার কাছে হাতে পায়ে ধার টাকা যোগাড় করেছি। সবাইকে কথা দিয়েছিলাম যে টাকা আমি শোধ করে দেব।”

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “কিন্তু বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন, আমি আর থাকতে পারলাম না। আগে তুমি তারপরে বাবা, আমি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছিলাম। এই জীবনের প্রতি মন বিষিয়ে গেছিল। প্রতিদিন পাওনাদারদের খোঁচা থেকে বাঁচতে গিয়ে ভাবলাম যে আমি আত্মহত্যা করব। মা যদি গরিয়াহাটে থাকত তাহলে পাওনাদাররা মাকে ছেড়ে দিত না তাই ভাবলাম যে মাকে তোমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। নরেশ কাকু আর বাবা এক মায়ের পেটের ভাই নয় কিন্তু আমি জানতাম যে মাকে কাকু ফেলতে পারবেনা। দু এক বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করছিলাম আমি কিন্তু মরতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম যে পাওনাদারদের সব পাওনা শোধ করতে হবে আর মেয়েদের পয়সা আয় করার রাস্তা হচ্ছে শরীর। আমি নেমে গেলাম নিজের চোখে আর নিজের আত্মহত্যার ভান করে পালিয়ে গেলাম সবার কাছ থেকে।”

দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল ওর এই কথা শুনে। মনে হল যেন একবার বলে, “কেন মনি কেন, একবারের জন্যও আমার কাছে আসনি কেন মনি।” গলা শুকিয়ে গেছে দেবেশের, কথা বের হল’না। চোয়াল শক্ত করে শুনে যেতে লাগল মনিদিপার কথা।

“চাকরি ছেড়ে দিলাম, দু’বছর কলকাতায় ছিলাম। এক বান্ধবী আমাকে রাস্তা দেখাল, আমি পয়সা রোজগার করে বেশ কিছু পাওনাদারদের টাকা মিটিয়ে দিলাম। তারপরে একদিন চলে এলাম দিল্লী, এখানে নাকি অনেক টাকা। একটা চাকরি নিলাম এখানে। প্রথমে ছোটো ছোটো পত্রিকায় লিখতাম। তারপরে কাজ পেলাম এক নামি পত্রিকায়। প্রথমে ভাবলাম যে আর এই কাজ করবনা, কিন্তু অতীত পেছন ছাড়ল না আমার। একবার দেখা হয়ে যায় এক পুরান ক্লায়েন্টের সাথে, অনেক টাকার অফার দিল। না ব্লাকমেল করেনি আমায়, পাওনাদারদের কিছু টাকা তখন বাকি ছিল। খুব হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্ট না হলে যেতাম না, আর যে দেড় লাখ টাকা দিতে পারে সে আশা করি ভালোই হবে। রাজন অনেক সাহায্য করেছে আমাকে, নিজের দিদির মতন দেখত আমায়। অনেক ক্লায়েন্ট ও ফিরিয়ে দিত যদি কথা বলে পছন্দ না হত। এমনকি টাকা ও ফিরিয়ে দিয়েছে অনেক বার। পাওনাদাদের সব টাকা মিটে গেল, কিন্তু আমি সার্কিট ছেড়ে যেতে পারলাম না।”

“তিন বছর আগে, সেই রাত, আমার শেষ কাজ ছিল। রাজন তোমার কথা আমাকে বলেনি বলেছিল একজন টাকা দেবে আর আমাকে তার বসের সাথে যেতে হবে। বসের ব্যাপারে তুমি রাজন কে যা বলেছিলে তাই আমাকে জানাল। সব শুনে আমি রাজি হয়েছিলাম। হোটেলে তোমাকে দেখে আমি থমকে যাই। আমি রামচন্দ্রন কে কথার ছলে তোমার সব কথা জেনে নেই। তারপরে রাজন কে বলেছিলাম যে আমি আর কাজ করবনা। তোমাকে যেন টাকা ফিরিয়ে দেয়। তোমার কাছে আমার শুরু আর তোমার কাজের জন্য নিজের শেষ। আমি দিল্লী ছেড়ে দিয়ে উত্তরকাশি চলে এলাম, সেখানে এক ছোটো স্কুলে পড়াতে শুরু করলাম। অনেকদিন পরে যেন নিজের ছায়া থেকে একটু অব্যাহতি পেলাম আমি।”

মনিদিপার কথা শুনে দেবেশ কি করবে ভেবে পেল না। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মনিদিপার সামনে।

মনিদিপার বাজুতে হাত রেখে টেনে দাঁড় করাল নিজের সামনে। মনিদিপা দেবেশের এই আচরনে অবাক হয়ে গেল। জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে দেবেশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।এক এক করে জামার বোতাম খুলল দেবেশ। মনিদিপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেবেশের দিকে আর ভাবছে যে, কি করতে চলেছে দেবেশ, কিছুই বুঝতে পারছেনা। হটাত করে জামা কেন খুলছে, একা পেয়ে কি আবার সেই লম্পট পুরানো দেবেশ ফিরে এসেছে। আসন্ন উৎকণ্ঠায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মনিদিপা।

জামার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এল সোনার হার। ঠোঁট কেঁপে উঠল মনিদিপার, খুব ইচ্ছে করল যে দেবেশ কে জড়িয়ে ধরে আর ওই বুকে মাথা রেখে কাঁদে। মনিদিপা ছুয়ে দেখল হারটা। দেবেশ গলা থেকে হার’টা খুলে মেলে ধরল মনিদিপার সামনে।
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#22)

মনিদিপার চলে যাবার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল দেবেশের। একপা এগিয়ে এল মনিদিপার দিকে। ওই সুন্দর ফর্সা কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে করছে খুব, ইচ্ছে করছে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। দেবেশ সামলে নিয়ে হেসে বলল, “ঠিক আছে, রুমে ত আগে চল, এত দিন পরে দেখা একটু গল্প করবে না আমার সাথে।”

দুজনেই পা বাড়াল হোটেলের দিকে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, এই বিশাল তীর্থস্থলে চারদিকে লোকের বন্যা। এই ভিড় ভর্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনিদিপার খুব ইচ্ছে করছিল দেবেশের বাহু জড়িয়ে ধরে, আর দেবেশ ভাবছিল একবার মনিদিপার হাতটা ধরে, কিন্তু দুজনের মনে ইতস্তত ভাব, মনিদিপা চুপচাপ দেবেশের পেছন পেছন হাঁটতে লাগল।

রুমে ঢুকতে গিয়ে ভিশালের সাথে দেখা হল। কেউই কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করল না, শুধু চোখে চোখে একটু কথা হয়ে গেল।

হোটেলের রুমে ঢুকে দেবেশ মনিদিপাকে বসতে বলল। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকার পরে দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “এতদিনে বিয়ে করেছ নিশ্চয়।”

এতক্ষণ নিস্পলক চোখে মনিদিপাকে দেখছিল দেবেশ। সেই মাদকতা ময় রুপের বদলে এক স্নিগ্ধা রূপবতী মহিলা ওর সামনে বসে। সেই চোখ, সেই ঘন কালো চুল, গায়ের রঙ্গে যেন একটু আলতা লাগান। ওর কথা শুনে যেন সম্বিৎ ফিরে পেল।

মনিদিপার কথার উত্তর না দিয়ে পালটা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কথা শুনি, মনি। কেন মরার ভান করলে তুমি আর কেন এত দিন লুকিয়ে ছিলে আমাদের কাছ থেকে?”

মনি ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, “সত্যি তুমি শুনতে চাও?” মাথা নাড়ল দেবেশ, “হ্যাঁ।”

মনিদিপা বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল, “আমার কলঙ্কিত বস্তাপচা কাহিনী নাই বা শুনলে।”

দেবেশ বলল, “একা বয়ে বেড়াতে চাও নিজের কষ্ট, আমাকে সাথেও নেবে না।”

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল, “আমি এক রকম মরেই আছি দেবেশ। দাদা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেল, ফিরে তাকাল না আর। বাবার অসুখের সময়ে দাদা একবারের জন্যও কাছে এসে দাঁড়াল না। আমি কাকুর কাছে টাকা চাইতে যেতে পারলাম না, পাছে তোমার সামনে পড়ে যাই আর টাকা দেবার ছলে আমি যদি তোমার কেনা বাঁদি হয়ে যাই। তোমার ওপরে আমার প্রচন্ড ঘৃণা জন্মে গেছিল, সেই ভেবে আমি আর গেলাম না।”

বলতে বলতে মনিদিপার চোখে জল চলে এল। কথা শুনে দেবেশের কান লাল হয়ে গেল।

“বাবার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল। নারসিং হোমের খরচ, ডাক্তারের খরচ, তারপরে পেসমেকার কিনে লাগানোর খরচ। বাড়ি বিক্রির সব টাকা শেষ, আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম টাকা যোগাড় করতে করতে কিন্তু ভেঙ্গে পড়িনি। এদিকে ওদিকে, এর কাছে, তার কাছে হাতে পায়ে ধার টাকা যোগাড় করেছি। সবাইকে কথা দিয়েছিলাম যে টাকা আমি শোধ করে দেব।”

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “কিন্তু বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন, আমি আর থাকতে পারলাম না। আগে তুমি তারপরে বাবা, আমি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছিলাম। এই জীবনের প্রতি মন বিষিয়ে গেছিল। প্রতিদিন পাওনাদারদের খোঁচা থেকে বাঁচতে গিয়ে ভাবলাম যে আমি আত্মহত্যা করব। মা যদি গরিয়াহাটে থাকত তাহলে পাওনাদাররা মাকে ছেড়ে দিত না তাই ভাবলাম যে মাকে তোমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। নরেশ কাকু আর বাবা এক মায়ের পেটের ভাই নয় কিন্তু আমি জানতাম যে মাকে কাকু ফেলতে পারবেনা। দু এক বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করছিলাম আমি কিন্তু মরতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম যে পাওনাদারদের সব পাওনা শোধ করতে হবে আর মেয়েদের পয়সা আয় করার রাস্তা হচ্ছে শরীর। আমি নেমে গেলাম নিজের চোখে আর নিজের আত্মহত্যার ভান করে পালিয়ে গেলাম সবার কাছ থেকে।”

দেবেশের বুক ফেটে যাচ্ছিল ওর এই কথা শুনে। মনে হল যেন একবার বলে, “কেন মনি কেন, একবারের জন্যও আমার কাছে আসনি কেন মনি।” গলা শুকিয়ে গেছে দেবেশের, কথা বের হল’না। চোয়াল শক্ত করে শুনে যেতে লাগল মনিদিপার কথা।

“চাকরি ছেড়ে দিলাম, দু’বছর কলকাতায় ছিলাম। এক বান্ধবী আমাকে রাস্তা দেখাল, আমি পয়সা রোজগার করে বেশ কিছু পাওনাদারদের টাকা মিটিয়ে দিলাম। তারপরে একদিন চলে এলাম দিল্লী, এখানে নাকি অনেক টাকা। একটা চাকরি নিলাম এখানে। প্রথমে ছোটো ছোটো পত্রিকায় লিখতাম। তারপরে কাজ পেলাম এক নামি পত্রিকায়। প্রথমে ভাবলাম যে আর এই কাজ করবনা, কিন্তু অতীত পেছন ছাড়ল না আমার। একবার দেখা হয়ে যায় এক পুরান ক্লায়েন্টের সাথে, অনেক টাকার অফার দিল। না ব্লাকমেল করেনি আমায়, পাওনাদারদের কিছু টাকা তখন বাকি ছিল। খুব হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্ট না হলে যেতাম না, আর যে দেড় লাখ টাকা দিতে পারে সে আশা করি ভালোই হবে। রাজন অনেক সাহায্য করেছে আমাকে, নিজের দিদির মতন দেখত আমায়। অনেক ক্লায়েন্ট ও ফিরিয়ে দিত যদি কথা বলে পছন্দ না হত। এমনকি টাকা ও ফিরিয়ে দিয়েছে অনেক বার। পাওনাদাদের সব টাকা মিটে গেল, কিন্তু আমি সার্কিট ছেড়ে যেতে পারলাম না।”

“তিন বছর আগে, সেই রাত, আমার শেষ কাজ ছিল। রাজন তোমার কথা আমাকে বলেনি বলেছিল একজন টাকা দেবে আর আমাকে তার বসের সাথে যেতে হবে। বসের ব্যাপারে তুমি রাজন কে যা বলেছিলে তাই আমাকে জানাল। সব শুনে আমি রাজি হয়েছিলাম। হোটেলে তোমাকে দেখে আমি থমকে যাই। আমি রামচন্দ্রন কে কথার ছলে তোমার সব কথা জেনে নেই। তারপরে রাজন কে বলেছিলাম যে আমি আর কাজ করবনা। তোমাকে যেন টাকা ফিরিয়ে দেয়। তোমার কাছে আমার শুরু আর তোমার কাজের জন্য নিজের শেষ। আমি দিল্লী ছেড়ে দিয়ে উত্তরকাশি চলে এলাম, সেখানে এক ছোটো স্কুলে পড়াতে শুরু করলাম। অনেকদিন পরে যেন নিজের ছায়া থেকে একটু অব্যাহতি পেলাম আমি।”

মনিদিপার কথা শুনে দেবেশ কি করবে ভেবে পেল না। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মনিদিপার সামনে।

মনিদিপার বাজুতে হাত রেখে টেনে দাঁড় করাল নিজের সামনে। মনিদিপা দেবেশের এই আচরনে অবাক হয়ে গেল। জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে দেবেশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।এক এক করে জামার বোতাম খুলল দেবেশ। মনিদিপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেবেশের দিকে আর ভাবছে যে, কি করতে চলেছে দেবেশ, কিছুই বুঝতে পারছেনা। হটাত করে জামা কেন খুলছে, একা পেয়ে কি আবার সেই লম্পট পুরানো দেবেশ ফিরে এসেছে। আসন্ন উৎকণ্ঠায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মনিদিপা।

জামার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এল সোনার হার। ঠোঁট কেঁপে উঠল মনিদিপার, খুব ইচ্ছে করল যে দেবেশ কে জড়িয়ে ধরে আর ওই বুকে মাথা রেখে কাঁদে। মনিদিপা ছুয়ে দেখল হারটা। দেবেশ গলা থেকে হার’টা খুলে মেলে ধরল মনিদিপার সামনে।
 

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#23)

দেবেশ বলল, “না মনি আমি বিয়ে করিনি।”

কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল মনিদিপা, “কেন করনি দেবু? আমি ত মরেই গেছিলাম।”

দেবেশ কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে মনিদিপার কপালে কপাল ঠেকাল দেবেশ। ঠোঁট কাপছে মনিদিপার, চোখে জল টলমল।

মনিদিপার চোখে চোখ রেখে ওর গলায় সোনার হারখানি পড়িয়ে দিয়ে বলল, “এই হার তোমার মনি, এই হার আর কারুর গলায় শোভা পেতে পারেনা মনি। তুমিই ত বলেছিলে মনি, যেদিন আমি আমার ভালবাসা খুঁজে পাব সেদিন যেন তাকে আমি এই হার পড়িয়ে দেই। আজ তাকে পড়িয়ে দিলাম, মনি।”

দু’হাতে খামচে ধরল দেবেশের জামা। অস্ফুট চিৎকার করে উঠল মনিদিপা, “না দেবু, একি করলে তুমি। আমি পতিতা কলঙ্কিনী নারী, সমাজে তোমার পাশে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমি লুকিয়ে আছি অনেক ভাল আছি দেবু।”

দুহাতে আঁজলা করে তুলে নিল মনিদিপার মুখ, গাল বেয়ে বয়ে চলেছে চোখের জল। দেবেশ ওর কম্পিত ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বলল, “না মনি ওই কথা বল না। আমি তোমার পাপী, আমাকে ক্ষমা করে দাও মনি। আমি কোনদিন তোমাকে দুঃখ দেব না। তুমি কে সেটা আমি জানি। এই পৃথিবী যা জানে বা যা দেখেছে সেটা মিথ্যে।”

মনিদিপার বুক ভেঙ্গে ভালবাসার কান্না এসে গেল, প্রাণপণে জড়িয়ে ধরল দেবেশকে, “এতদিন পরেও তুমি আমাকে কাঁদাতে এসেছ।”

“না মনি না, আর আমি তোমাকে কাঁদাব না।” দেবেশ বারে বারে মনিদিপার কপালে গালে চুমু খেতে খেতে বলল।

দুজনাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রইল। দেবেশের আলিঙ্গনের মাঝে বদ্ধ হয়ে মনিদিপা একটু খানি কেঁপে উঠল। মুখ উচু করে দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু তুমি আমার অতীত থেকে আমাকে কি করে লুকিয়ে রাখবে?”

দেবেশ ঠিক এই প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিল। মনিদিপা কে বিছানার ওপরে বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে উত্তর দিল, “বুকের মাঝে মনি। আমি ফ্রান্সে থাকি, সেখানে তোমাকে কেউ চিনবে না।”

মনিদিপার মনের ভেতরে নতুন ভয় ভর নিল, “আমার মা, কাকিমা কাকু? তারা ত জানে আমি মরে গেছি, তারা যখন জানতে পারবে তাদের কি বলবে তুমি?”

দেবেশ বলল, “আমার সাথে কলকাতা চল আমি সব সামলে নেব।”

মনিদিপা আঁতকে উঠল, “না দেবেশ না, আমি কলকাতা যাবনা। কি মুখ নিয়ে যাব আমি ওদের সামনে, দেবেশ?”

দেবেশ বলল, “মনি, তোমার পাশে আমি আছি। আজ থেকে তোমার সব ভয়, সব দুঃখ কষ্ট আমার। কেউ তোমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না, মনি। কিন্তু একবার তোমাকে কলকাতা যেতেই হবে। সাত বছর আগে তোমার সাথে সাথে জেঠিমাও মারা গেছিলেন। তোমাকে দেখে জেঠিমা মা সবাই বেঁচে উঠবে।”

মনিদিপা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু দেবু, ওরা যদি আমাদের সম্পর্ক না মেনে নেয়?”

দেবেশ অভয় দিয়ে বলল, “মনি, সে চিন্তা তোমার নয় আমার। আমার ওপরে আস্থা আছে তোমার?”

দেবেশের মুকের দিকে তাকাল মনিদিপা, না এবারে ওর চোখ সত্যি কথা বলছে। মনিদিপা নির্ভয়ে দেবেশের সাথে যেতে পারে। দেবেশের মাথা নিজের বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, “তোমার সাথে আমি যমের বাড়ি যেতেও রাজি আছি।”

দেবেশ একটু মজা করে, মনিদিপার বুকে নাক ঘষে জিজ্ঞেস করল, “রাতের ডিনার কি বাইরে খাবে না রুম সার্ভিস ডেকে নেব।”

সাত বছর পরে মনিদিপা যেন আবার নিজেকে খুঁজে পেল। দুম করে একটা কিল মেরে বলল, “তোমার দুষ্টুমি আর গেল না, বল। তোমার বন্ধুরা কি বলবে আর আমার হোটেল থেকে জিনিস পত্র ত আনতে যেতে হবে নাকি?”

দেবেশ উত্তর দিল, “ধুর বাবা, ঠিক আছে চল।” কিছুক্ষণ পরে দেবেশ বলল, “আমিও নিজের জিনিস গুছিয়ে নেই।”

তারপরে দেবেশ নিজের জিনিস গোছাতে সুরু করল, সেই দেখে মনিদিপা ওকে জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার, তুমি কেন জিনিস গোছাচ্ছ?”

দেবেশ উত্তর দিল, “আজ রাতেই আমারা বেড়িয়ে পরি। কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব তারপর সকালের ফ্লাইট ধরে কলকাতা।”

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মনিদিপা, “মানে? এখুনি।”

দেবেশ মনিদিপার হাত ধরে অনুরধ করল, “হ্যাঁ মনি, এখুনি। আমার আর দেরি করতে মন চাইছে না। চল মনি, কলকাতা চল।”

মনিদিপা কাতর চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল, “দেবু, আমার কিন্তু খুব ভয় করছে, কি হবে দেবু...”

ওকে আসস্থ করে উত্তর দিল, “মনি আর চিন্তা করোনা, প্লিস।”

ওরা দুজনে বেড়িয়েই দেখল যে রুমের সামনে বাকি চারজন দাঁড়িয়ে আছে। দেবেশকে দেখে অনির্বাণ বলে উঠলো, “কিরে ভাই বৌদি কে পেয়ে আমাদের কথা বেমালুম ভুলে গেলি? একবার বউদির সাথে আলাপ করিয়ে দিবি না।”

ভিশাল মনিদিপার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “আমি ভিশাল, এই গাধাটার সাথে আইআইটি তে পড়তাম” তারপরে বাকিদের সাথেও আলাপ করিয়ে দিয়ে বলল, “আপনাদের দুজনের একটা ছবি তুলবো আমি, প্লিস একটা রোম্যান্টিক পোস দেবেন।”

মনিদিপা লজ্জায় লাল হয়ে দেবেশের দিকে তাকিয়ে রইল। দেবেশ প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল তারপরে মনিদিপার কে জড়িয়ে ধরে বলল, “মনি, লজ্জা পেয় না।”

দেবেশের হাতে ব্যাগ দেখে অনির্বাণ ওকে জিজ্ঞেস করল, “কিরে কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”

মনিদিপার দিকে তাকিয়ে দেবেশ উত্তর দিল, “হ্যাঁ রে আমাকে কলকাতা যেতে হবে, তাই রাতেই বেড়িয়ে যাবো।”

নিলাঞ্জন একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে জিজ্ঞেস করল, “যাঃ মাল, ভাবলাম কিনা আজ রাতে একটু মজা হবে। আবার তোদের সাথে কবে দেখা হবে তার নেই ঠিক।”

দেবেশ বলল, “না ভাই আবার দেখা হবে তোদের সাথে, নাহলে এবারে আমার বাড়িতে, বোরদে’তে সবার নিমন্ত্রন রইল।” দেবেশ ওর বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে বেড়িয়ে পড়ল।

হোটেল থেকে মনিদিপার জিনিস পত্র নিয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিল দিল্লীর দিকে। রাতের অন্ধকার কেটে গাড়ি এগিয়ে চলেছে দিল্লীর দিকে। ল্যাপটপ বের করে অনলাইন প্লেনের টিকিট কেটে নিল দেবেশ। সারাটা রাত দেবেশের কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকল মনিদিপা। অনেকদিন পরে বুকের মাঝে অনেক হালকা লাগছে ওর।

মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে দেবেশ ওর মনের সব কথা বুঝে ফেলল, মনিদিপাকে কাছে টেনে বলল, “মনি চিন্তা কর না আর।”

মিষ্টি হাসি হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “না আর ভয় নেই আমার, তুমি আছো ত আমার সাথে।”
 
  • Love
Reactions: Khokababu

Arunima R Chowdhury

Arunima Roy Chowdhury
104
20
18
(#24) Final Part

**************************************
“দেবু, শুতে আসবে, না টি.ভি গিলবে? আর একবার ডাকবো, না এলে রাতে কিন্তু কাউচে শুতে হবে।”

“ডারলিং ব্যাস আর একটু খানি। দেপারদিউ’র মুভি, প্লিস।”

“সেসব আমি জানি না, তোমার কাছে টি.ভি. আগে না বিবি আগে?”

“অভিয়াস্লি তুমি, তাও একটা বার প্লিস।”

“আমাকে একদম ভালোবাসো না তুমি, আমি ত এখন পুরান হয়ে গেছি তাই না।”

“কি আবার হল, এই রাতে কি আবার শুরু করবে নাকি।”

“আমি বলেছিলাম আমার অলিভ অয়েল চাই... মনে নেই ত...।”

“অঃ একদম ভুলে গেছি।”

“দেখলেত, ভালবাসলে ভুলতে না। বউয়ের কথা মনে থাকে না তাই বউয়ের জিনিস আনার প্রয়োজন বোধ কর না।”

“উফফ... বাবা একটা অলিভ অয়েল আনতে কি ভুলে গেছি তাই নিয়ে মহাভারত শুরু করে দিলে।”

“আমি মহাভারত শুরু করিনা সোনা, তুমি এক একটা যা কাজ কর তাতে ত আর চুপ করে থাকা যায় না।”

“আবার কি করলাম আমি।”

“গত উইক এন্ডে বলেছিলাম যে আমাকে নিয়ে একটু রু ক্যাথেরিনে যেও। নিয়ে গেছিলে? না, তোমার’ত ওয়াইন পার্টি ছিল, সেটা বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল।”

“আরে বাবা বোঝো না কেন, দিউদোনের পার্টি না গেলে আবার...”

“তোমার সব পার্টিতে আমাকে যেতে হবে আর আমি যখন বলি আমার কিছু একটা করে দিতে তখন তোমার কাজ পরে যায়, সেটা কি ঠিক?”

“তোমার কোন পার্টি’তে আমি যাই নি, বল।”

“সবসময়ে শুধু পার্টি মাথায় ঘোরে তাই না। ফ্রিতে মদ গিলতে পেলেই হল।”

“সোনামনি আমার, আমি কোথায় ড্রিঙ্ক করি?”

“তুমি করোনা, ওই সব বোতল গুলো যেন আমি শেষ করেছি। আচ্ছা, আমি তোমাকে বলেছিলাম অফিস ফেরত একবার ফ্লেউরেত কে দেখে আসতে, গেছিলে তুমি?”

“যাঃ বাবা তুমি গেছিলে’ত হসপিটালে, আবার আমি গিয়ে কি করব।”

“বাঃবা একটা বাচ্চা কে দেখতে যেতে পারনা তুমি? অদ্রে তোমার কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।”

“আচ্ছা তাই নাকি। ঠিক আছে কাল না হয় যাব।”

“আর গিয়ে কাজ নেই, কাল সকালে ওরা লিওন চলে যাবে।”

“কেন? কি হল আবার।”

“না না, বেশি কিছু না। কাল সকালে হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যাবার পরে ওরা লিওন যাচ্ছে।”

“অঃ তাই বল। তা ফিরছে কবে।”

“তোমাকে আগেই জানিয়েছিলাম, হপ্তা দুই পরে ওরা ফিরবে। মরন আমার, কিছুই মাথায় থাকে না।”

“উম্মম... তুমি আছো’ত আমাকে মনে করিয়ে দেবার জন্য।”

“হ্যাঁ বিনা পয়সার বাঁদি পেয়েছ’ত আমাকে।”

“না ডার্লিং... আই রিয়ালি লাভ ইউ।”

“হয়েছে অনেক হয়েছে, এবারে টি.ভি.টা বন্ধ করে শুতে আসো, সকাল চারটেতে উঠতে হবে। মা, মামনি আসছে, সেটা খেয়াল আছে ত নাকি সেটাও ভুলে খেয়েছ।”

“না না... সেটা ভুলিনি।”

“কাল অফিস ফেরত একবার রু রেমিতে গিয়ে দেখ’ত লবস্টার পাও কিনা। এখানে ত মামনি’কে আর চিংড়ি মাছ খাওয়াতে পারব না, তা লবস্টার খেয়ে দেখুক।”

“পারলে একটু ওয়াইন দিয়ে রান্না করো, বেশ দারুন লাগবে।”

“পাগল হলে! ওয়াইন! ওরা খেতে পারবে না। আর মামনি জানতে পারলে তোমার মাথা ফাটিয়ে দেবে।”

“আর তুমি একটা কিস করো তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।”

“অনেক হয়েছে প্রেমালাপ, এবারে এক লাত্থি মারব।”

“ওকে বেবি, আসছি...” (টি.ভি অফ) “আবার আজকে পায়ের দিকের জানালা’টা খুলে রেখেছ?”

“উম্মম্মম্মম্ম...... ছাড়ো ছাড়ো... ইসসস... কর কি তুমি... না তোমার সাথে সত্যি পারা গেল না আর...”

“একবার ব্যাস প্লিস, একটা ছোট্ট কিসি...”

“এই দেখ, প্যালাসের, ওই ডান দিকের তৃতীয় লাইট’টা ওরা ঠিক করে দিয়েছে।”

“যা বাবা, তুমি রোজ রাতে কি লাইট গোনো নাকি?”

“হ্যাঁ গো, খুব ভাল লাগে। ওর রিফ্লেক্সান’টা যখন গারওননের জলের ওপরে পরে তখন খুব সুন্দর লাগে, ঠিক মনে হয় গঙ্গার পাশে আছি।”

“তুমি পার বটে, মনি।”

“হুম্ম... চল আজ সারারাত ধরে দুজনে মিলে প্যালেসের লাইট গুনি।”

“খুব রোম্যান্টিক মুডে আছো আজ, কি ব্যাপার? একটু আগে’ত শুতে যাবার কথা বলছিলে।”

“ওকে হানি... চলে এসো...”
**************************************

দুজনে মিলে গারওননের তীরে সেই প্যালেসের আলো আবার করে গুনতে লাগল...

এটা মনে হয় পঞ্চাশ বার .....


**************************************


সমাপ্ত
 
Last edited:

Khokababu

Mr Fantastic
11
6
3
Wonderful ! চমৎকার সুন্দর গল্প। যতবার পড়ি ততবারই প্রথম পড়ার মতো শিহরিত হই !
 

ENC NEW

New Member
5
1
3
গল্পটা পড়ার মজাই যেন মিটে না বারবার পড়তে ইচ্ছে করে।
 
  • Like
Reactions: Monkey D. Dragon
Top