• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Thriller বজ্রাঘাত

soukoli

Member
389
58
29
১১।।

গলাটা শুকিয়ে উঠেছিল পৃথার… একটু থামে সে… বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়… ঘরের বড় আলো জ্বেলে ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে জল খায় একটু… ফিরে আসার সময় দেওয়ালে ঘড়িটার দিকে তাকায় সে… রাত আড়াইটে… ফিরে আসে ঘরে।

‘কটা বাজে জানো? আড়াইটেএএএ…’ ছবিটা উদ্দেশ্যে বলে ওঠে… ‘তোমার ঘুম পাচ্ছে?… প্লিজ… ঘুমিও না এখন… আর একটু থাকো… কাল তো রবিবার, বলো… বেলা করে উঠলেও হবে… তাই না? আর একটু থাকো, প্লিজ…’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় ঘরের টেবিলের দিকে… ওখানে রেখে দেওয়া গ্লাসের মধ্যে আবার খানিকটা ওয়াইন ঢেলে নেয়… নিয়ে গ্লাসটাকে এক হাতে ধরে, অন্য হাতের মধ্যে সিগারেট প্যাকেট আর লাইটারটা নিয়ে বিছানার কাছে ফিরে আসে। বিছানার সাইড টেবিলটার ওপরে প্যাকেট আর লাইটারটা রেখে দিয়ে, ফিরে যায় দেওয়ালের কাছে, সুইচ বোর্ডের কাছটায়… বড় আলোটাকে নিভিয়ে ফের ধীর পায়ে এসে দাঁড়ায় বিছানার কাছে… ঘরটা নিলাভো স্বপ্নিল আলোয় আবার ডুবে যায়… গ্লাসের তরলে একটা চুমুক দিয়ে উঠে আসে বিছানায়… বালিশটাকে খাটের হেড বোর্ডের হেলানে রেখে নিজে ঠেস দিয়ে বসে তাতে আরাম করে… চোখ বন্ধ করে খানিক থেকে ফের চুমুক দেয় গ্লাসে… তারপর শুরু করে…

ওই রকম একটা চরম ক্লাইম্যাক্স হবার পর আমার সম্ভব ছিল না জেগে থাকার… ঘুমিয়েই পড়েছিলাম বোধহয়… আর এর মধ্যে আমার হলেও রিকির হয়নি সেটা তো জানিই, ও নিশ্চয়ই তারপর দিদির সাথে ইন্টারকোর্স করেছিল… অবভিয়াস সেটা… অবস্য সেটা আমার দেখার ব্যাপার নয়… আমি কিছু আর জানি না।

কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম জানি না, ঘুমের মধ্যে মনে হল কেউ যেন আমার বুকের একটা নিপিল নিয়ে চুষছে… প্রথমটা ভেবেছিলাম হয়তো স্বপ্ন দেখছি… সারা শরীরটা সিরসির করে উঠছিল… ভিষন ভালো লাগছিল, ইচ্ছা করছিল না চোখ খুলতে… বুকের ওপরে অনুভূতিটা আরো খানিকটা পেতে মন চাইছিল… খানিক পরে বুঝলাম, ওটা স্বপ্ন নয়… সত্যি… কিন্তু ঘুম ভাঙলেও চুপ করে শুয়ে থাকলাম আমি চোখ বন্ধ করে… একটুও না নড়াচড়া করে… কি ঘটে দেখার আশায়… একটু শীত শীত করছিল… নেকেড গায়ের ওপরে কোন চাঁদর না থাকার কারনে।

বুঝতে অসুবিধা হয় নি আমার, নিপিল যে চুষছে, সে আর কেউ নয়, রিকি… হাতের মুঠোয় আমার ওই টিনি ব্রেস্টটাকে কাঁচিয়ে, চেপে ধরে চুষে চলেছে জিভ বুলিয়ে নিপিলের ওপরে… ইচ্ছা করছিল হাত বাড়িয়ে ওর মাথাটাকে আরো ভালো করে চেপে ধরি নিজের বুকের ওপরে… কিন্তু অনেক কষ্টে সে ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলাম। রিকি বদলে নিল আমার বুকটাকে… চুষতে লাগল অপর নিপিলটা মুখে নিয়ে… সেই সাথে হাতের মধ্যে ব্রেস্টটাকে ধরে চটকাতে থাকলো আলতো হাতে… কোন বাধা দিলাম না আমি… ঘুমের ভান করে চুপ করে শুয়ে আরাম খেতে থাকলাম ওই ভাবে… শুধু আমার নিঃশ্বাসটার গভীরতা বেড়ে চলল ধীরে ধীরে… ওটা আমার বশে ছিল না আর তখন।

রিকি আমার বুকটা ছেড়ে হাতটাকে বাড়িয়ে দিল দুই পায়ের ফাঁকে… মুঠো করে ধরল আমার ওখানটা… ব্যথা হয়ে আছে জায়গাটা… হাত পড়তে যেন আরো ব্যথাটা বেড়ে গেল… প্রায় বলেই ফেলছিলাম ওখানে হাত না দিতে… কিন্তু অনেক কষ্টে আটকালাম নিজেকে… কিছু বলা মানেই তো বুঝে যাবে যে আমি জেগে রয়েছি… আটকে রাখলাম ঠিকই, কিন্তু রিকি বোধহয় বুঝতে পেরে গিয়েছিল যে আমার ঘুম ভেঙে গেছে… একটু ঝুঁকে আমার কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি জানি তুমি জেগে আছ পৃথা… কিন্তু কোন আওয়াজ করবে না, কেমন… চুপ করে শুয়ে থাকো লক্ষ্মী মেয়ের মত… বুঝেছ?’

এবার আর চোখ বন্ধ করে রাখার কোন মানেই হয় না আমার কাছে, রিকি যখন বুঝেই গেছে যে আমি জেগে রয়েছি… তাই চোখ খুলে তাকালাম ওর দিকে… ঘরে বোধহয় আলো আর নেভানো হয় নি আগে, তাই ঘুম চোখ খুলতেই প্রথমে চোখটা ঘরের উজ্জল আলোয় ধাঁধিয়ে গেল একটু… বার দুয়েক চোখ পিটপিট করে আলোটা চোখে সইয়ে নিয়ে তাকালাম রিকির দিকে, ওর মতই ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘দিদি? দিদি কোথায়?’

ইশারায় অন্য পাশটায় দেখিয়ে দিল রিকি… মুখ ফিরিয়ে দেখি আমার অন্য দিকটায় শুয়ে দিদি অকাতরে ঘুমাচ্ছে… গায়ে ওপরে কম্বল জড়ানো, কিন্তু বোঝা যায় যে কম্বলের নীচে দিদির গায়ে একটা সুতোও নেই… কম্বলের ওপর থেকেই দিদির শরীরটা ফুটে উঠেছে… ফের ওর দিকে মুখ ফেরালাম… বললাম চাপা গলায়… ‘তুমি এই রকম করছ, দিদি যদি জানতে পেরে যায়? ও যদি জেগে যায়, তখন?’

‘সেই জন্যেই তো বললাম তোমাকে চুপ থাকতে…’ সেও চাপা গলায় উত্তর দেয় আমাকে। তারপর আবার প্রশ্ন করে… ‘কেন? তোমার ভালো লাগে নি… তখন?’

ওর দিকে ফিরে শুই আমি… রিকির চোখে চোখ রেখে খানিক তাকিয়ে থাকি… তারপর মাথা হেলাই… হ্যা…

রিকি হাত বাড়িয়ে আমার গালটা ধরে মুখটাকে একটু তুলে ধরে… নিজের মুখটা এগিয়ে এনে আমার ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে ওর ঠোঁটটাকে… আহ্‌… কি ভালো যে লাগলো… আমি না বলতেও ফাঁক করে ধরলাম আমার মুখটাকে… ও আমার ঠোঁটটা ওর মুখের মধ্যে টেনে নিয়ে চুষতে থাকল… আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি কোন স্বপ্ন রাজ্যে ভেসে চলেছি… চোখ বন্ধ করে রইলাম আমি… ও আমার নীচের ঠোঁটটা নিয়ে খানিক চুষলো, তারপর ওপরের ঠোঁটটা… তারপর আমার মুখের মধ্যে ওর জিভটাকে ঢুকিয়ে দিল… টাচ্‌ করল আমার জিভটাকে… আমি কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মত নিজের জিভটাকে বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে… ও আমার জিভটাকে ওর মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চুষতে লাগল… খেলা করতে লাগল নিজের জিভের সাথে নিয়ে। রিকির হাতগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছিল আমার সারা শরীরে… আমার অ্যাস চিকস্‌ এর নরম তালটা ধরে টিপে ধরছিল কেমন সুন্দর করে… আরামে আমি নিজের কোমরটাকে এগিয়ে, বাড়িয়ে ধরলাম ওর কোলের কাছে… তলপেটের ওপরে শক্ত কিছুর টাচ্‌ পেলাম মনে হলো যেন… হাত নামিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে গেলাম, কি?… হাতে ঠেকলো যেটা… উফ্‌… সারা শরীরটা কেমন করে উঠল… এটা… এটা তো রিকির পেনিস… আমার মেয়েলি ছোট্ট হাতের মুঠোর মধ্যে, শক্ত করে ধরলাম পেনিসটাকে… ইশ্‌… কি গরম ওটা… মনে হল যেন আমার হাতের তালুটা পুড়ে যাবে, এত গরম… তাও… ছাড়তেও পারছিলাম না… ওটাকে নিয়ে হাতের মুঠোর মধ্যেই অল্প অল্প নাড়াতে লাগলাম… ওপর নীচে করে… হাতের সাথে সাথে পেনিসের ওপরের ছালটা কেমন যেন হড়কে হড়কে নেমে যেতে লাগল… বেশ লাগছিল ওটাকে নিয়ে খেলা করতে… ওর মুখ থেকে জিভটা বের করে নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম… ‘একটু দেখবো? ওটাকে?’

‘হুউ…’ ছোট্ট করে সন্মতি এল রিকির কাছ থেকে।

আমি উঠে বসলাম কুনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে খুব সাবধানে, যাতে কোন ভাবেই না দিদির ঘুম ভেঙে যায়… দেখি রিকিও আমার মতই তখনও নেকেড হয়েই রয়েছে… গায়ে কোন জামা নেই… আমি উঠে বসে ঝুঁকে পড়লাম ওর পায়ের কাছে… রিকি চিৎ হয়ে শুলো… ওর তলপেটের ওপরে একটা কালো সাপের মত পড়ে রয়েছে দেখি ওর পেনিসটা… ইস্‌… দেখেই কেমন করে উঠল শরীরটা যেন… হাত বাড়িয়ে দুটো আঙুল দিয়ে ওটাকে তুলে ধরলাম… তারপর আঙুল ছেড়ে মুঠো করে ধরলাম হাতের মধ্যে… ধরে একটু নাড়ালাম এদিক ওদিক… কেমন আমার হাতের মধ্যে বাধ্য হয়ে নড়তে লাগলো যেদিকে নিয়ে যেতে চাই সেই দিকেই… তারপর আস্তে আস্তে ওটার ছালটাকে ধরে নামাতে লাগলাম নীচের দিকে… মাথার দিকটায় দেখি কেমন ফুল ফোটার মত চামড়াটা সরে গিয়ে একটা পিঙ্ক রঙের গোল মাংসপিন্ড বেরিয়ে আসছে… মাথার ওপরটায় একটা ছোট্ট চেরা মত… চেরার ঠিক নীচ থেকে একটা চামড়া জুড়ে রয়েছে পেনিসের চারদিকের ছালটার সাথে… পুরো চামড়াটা সরে যেতে দেখি কেমন যেন দেখতে… অনেকটা যেন মাশরুমের মত… কিন্তু মাশরুমের মত রঙ নয়, বরং কালচে, পুরো পেনিসটা, আর মাথাটা মাশরুমের মতই গোল, নীচের দিকে একটা খাঁজ… তারপর আবার নেবে গেছে সোজা হয়ে… মুখ তুলে একবার দেখলাম রিকির দিকে… দেখি ও আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে… চোখাচুখি হতে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করল… ‘কেমন? জিনিসটা? পছন্দ হয়েছে?’

ওর দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট করে স্মাইল দিলাম আমি… তারপর আবার তাকালাম হাতের মধ্যে ধরা পেনিসটার দিকে… মাথার ছোট্ট ছেঁদাটা দিয়ে কেমন একটু জল মত বেরিয়ে রয়েছে যেন… অন্য হাতের আঙ্গুল বাড়িয়ে মাথাটায় ঠেকালাম… ওই জল মতটার ওপরে… পেনিসটার মাথাটায় আমার আঙ্গুল পড়তেই কেমন কেঁপে উঠল রিকি… বুঝলাম ওই জায়গাটা নিশ্চয়ই খুব সেন্সিটিভ… নচেৎ এই ভাবে কেঁপে উঠবে কেন ও? জলটা হাতে লাগতে দেখি কেমন হড়হড়ে আর চটচটে… ওটাকে ওর পেনিসের মাথায় আলতো আঙ্গুলের ছোয়ায় মাখিয়ে দিতে লাগলাম… ছেঁদাটা দিয়ে যেন আরো খানিকটা জল বেরিয়ে এল… সেটাকেও বুলিয়ে দিতে লাগলাম পেনিসটার মাথায়… রস লেগে আলো পড়ে চকচক করতে লাগলো পেনিসের ওই পিঙ্ক রঙের মাথাটা… আবার মুখ তুলে তাকালার রিকির দিকে… ও তখনো আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেখি, হাত দুটোকে মাথার নীচে ধরে মাথাটাকে তুলে রেখে… ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম… ‘একবার মুখ দিয়ে দেখবো, কেমন?’

ইশারায় সন্মতি দিল ও ঘাড় নেড়ে।

আমি ফিরে তাকালাম পেনিসটার দিকে… তারপর সামনের দিকে ঝুঁকে বসলাম… একটা অদ্ভুত গন্ধ… খারাপ নয়… জিভটাকে বার করে বাড়িয়ে দিলাম পেনিসটার মাথা লক্ষ্য করে… আলতো করে ঠেকালাম ওটায়… রিকি কেঁপে উঠল যেন ফের… মুখ তুলে ওর দিকে একবার তাকালাম আমি… দেখি স্থির দৃষ্টিতে ও এদিকেই তাকিয়ে রয়েছে… মিচকি হাসলাম ওর দিকে তাকিয়ে, তারপর আমি মুখ ফিরিয়ে ফের নজর দিলাম ওর পেনিসের দিকে… জিভটাকে আরো বেশি করে এবার বের করে এগিয়ে দিলাম ওটার মাথার দিকে… একবার ভালো করে চেটে দিলাম মাথাটায়… আহ্‌… কানে এলো রিকির চাপা শিৎকার… মনে মনে বুঝতে পারলাম ওর ভালো লাগছে তার মানে… আরো উৎসাহিত হয়ে উঠলাম… আরো ঝুঁকে গেলাম… জিভটা দিয়ে এবারে পুরো মাথাটাকেই বোলাতে লাগলাম বারবার… ছেঁদা থেকে বেরিয়ে আসা রসটা জিভে লাগতে খারাপ লাগলো না মোটেই… চাটতে চাটতেই হটাৎ কি মনে হলো, হাঁ করে পেনিসের মাথাটাকে পুরে নিলাম মুখের মধ্যে… চুষতে লাগলাম মুখের মধ্যে পুরে… ওটার ওপরে জিভ চালিয়ে… রিকি হাত বাড়িয়ে খামচে ধরল আমার থাইটাকে… কিন্তু আমার সে দিকে খেয়াল নেই আর… মনের সুখে তখন চুষে চলেছি ওর পেনিসটাকে মুখের মধ্যে নিয়ে… হাতের আঙুলগুলো পেনিসের গায়ে বেড় দিয়ে ধরে ওপর নীচে করে নাড়াচ্ছি… রিকি নীচ থেকে কোমরটাকে তুলে তুলে ধরতে লাগলো আমার মুখের মধ্যে। একটা সময় মনে হল আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে, এই ভাবে মুখের মধ্যে পুরে রাখলে… ওটাকে বের করে দিলাম মুখ থেকে… ওটার মাথার থেকে একটা লালার সরু সুতো ঝুলে থাকলো আমার ঠোঁটের সাথে… হাতের পীঠ দিয়ে মুখের লালা মুছে তাকালাম ওর দিকে… হেসে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আরাম লাগছিল তোমার?’

মৃদু হেসে চাপা গলায় উত্তর দিল, ‘ভিষন… থামলে কেন?’

‘নাঃ… হাফিয়ে গিয়েছিলাম…’ বলে উঠলাম আমি ফিসফিসিয়ে।

‘তাহলে থাক, আর করতে হবে না…’ বলল রিকি।

‘না, না, ঠিক আছে… আর একটু চুষি? বেশ লাগছে…’ প্রশ্ন করলাম রিকিকে।

ও হাসলো একটু… বলল, ‘ইচ্ছা করছে যখন… চোষ…’

নতুন উদ্যমে আবার মাথা নামিয়ে মুখের মধ্যে পুরে নিলাম পেনিসের মাথাটাকে… হাতের বেড়ে ওটাকে ধরে চুষতে লাগলাম আবার… চুষতে চুষতে হাতটা গিয়ে পড়লো ওর পেনিসের গোড়ার কাছটায়… ওখানটায় একটা কেমন নরম নরম কিছু ঠেকলো হাতে… পেনিসটাকে মুখ থেকে বের করে নজর ফেরালাম ওই জায়গাটায়… একটা থলি মত রয়েছে… নরম… ওখানকার চামড়াটা বেশ লুজ্‌… হাত বাড়িয়ে ওটা ধরতেই দেখি ওর ভেতরে শক্ত মত কিছু রয়েছে… হাত দিয়ে ধরে টিপতেই রিকি কঁক্‌ করে উঠল… তাড়াতাড়ি উঠে বসল ও… আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম… ‘এটা কি?’

ও হাসলো… বললো… ‘এটাকে বিচি বলে… এখানেই আমাদের মাল, মানে বীর্য তৈরী হয়ে জমা থাকে…’

‘বিচি!’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করি আমি… ‘বীর্য? সেটা আবার কি?’

হাসে রিকি… বলে, ওটাই তো আসল… ওই বীর্য থেকেই তো বাচ্ছা হয়… এই টুকুও জানো না? কলেজে পড়ো?’

ইশ্‌… কি লজ্জা লাগলো কি বলবো… সত্যিই তো… কলেজের মেয়ে আর এটা জানিনা… আসলে জানি না বলা ভূল… জানতাম ঠিকই… কিন্তু তখন কেন যে ভুলে গিয়েছিলাম… বোকার মত ওকে প্রশ্নটা করলাম… মাথা নামিয়ে বললাম, ‘না, মানে জানতাম, আসলে হটাৎ জিজ্ঞাসা করলে তো, তাই কেমন বোকা হয়ে গিয়েছিলাম… আসলে শুনেছি… কখনও দেখি নি তো চোখে তাই একটু গন্ডগোল হয়ে গিয়েছিল আর কি…’

‘হু… বুঝলাম… কিন্তু ওটাকে ধরে এত জোরে টেপাটিপি করলে তো মারা পড়বো আমি…’ বলে রিকি।

‘ও, তাই? সেটা অবস্য জানতাম না… খুব সেন্সিটিভ এটা, না?’ বিচিটাকে হাতের তালুতে ধরে আলতো করে টিপতে টিপতে প্রশ্ন করলাম আমি।

‘হু… খুব সেন্সিটিভ… যদি কেউ কখনও তোমাকে জোর করে কিছু করতে আসে, এটার ওপরে মারবে বা টিপে দেবে, সে আর তোমাকে কিছু করার সাহস করবে না, বা ক্ষমতাও থাকবে না, বুঝেছ?’

শুনে খুব খুশি হলাম আমি… ‘এই রকম একটা অস্ত্র তাহলে আছে আমাদের, মেয়েদের… বাহ! বেশ তো!’

‘হু, অস্ত্র ঠিকই… কিন্ত সেটা আবার সব সময় ব্যবহার করে ফেলো না যেন… তাহলে নিজেই আরাম থেকে বঞ্চিত থাকবে… বুঝেছ? খুব সাবধানে ব্যবহার করবে’ জ্ঞান দেবার মত করে বলে রিকি আমাকে।

আমিও বাধ্য মেয়ের মত মাথা হেলাই… ‘ওটা আর একবার চুষবো?’ প্রশ্ন করি আমি।

হাসে রিকি… ‘প্রথম দিনেই এত ভালো লেগে গেছে? ঠিক আছে… আরো একটু চুষে নাও…’ ফিসফিসিয়ে বলে আমাকে।

আমি আবার মাথা নীচু করে পেনিসটাকে ধরে টেনে ছালটা ছাড়িয়ে মুখের মধ্যে পুরে নিই… বেশ লাগছিল চুষতে… বুঝতে পারি এই ভাবে চোষার ফলে রিকিও আরাম পাচ্ছে… আর একটা পুরুষ মানুষকে আরাম দিতে পারছি ভেবে নিজের কেমন গর্ব বোধ হচ্ছিল… নিজের ওপরে একটা কনফিডেন্স আসছিল যেন… মুখটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চুষতে থাকি পেনিসের মাথাটাকে মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে।

হটাৎ ‘ওঁক’ করে কোঁকিয়ে ওঠে রিকি… আমি তাড়াতাড়ি পেনিসটাকে মুখ থেকে বের করে ওর দিকে প্রশ্ন ভরা চোখে তাকাই… ভাবি আবার কি ভুল করে ফেললাম রে বাবা…

ও বলে, ‘আস্তে… সাবধানে চোষো… আমাদের ওটার মাথাটা খুব সেন্সিটিভ… শোনো, যখন কোন ছেলেদের বাঁড়া চুষবে, তখন খেয়াল রাখবে যেন চোষার সময় তোমার দাঁতটা না লাগে বাঁড়ার মাথাটায়… বুঝেছ? তাতে আমাদের, মানে ছেলেদের খুব লাগে…’

শুনে আবার মাথা নাড়লাম… তারপর নীচু হয়ে পুরে নিলাম পেনিসটাকে ফের মুখের মধ্যে… এবার খুব সাবধানে চুষতে লাগলাম ওটাকে… খেয়াল রাখলাম কোনভাবেই যাতে না আমার দাঁতটা লেগে যায় মাথায়…

দূর… এত সাবধানে কিছু করা যায় নাকি… একটু বিরক্তই হয়ে উঠলাম… রিকির পেনিসটাকে মুখ থেকে বের করে দিয়ে উঠে বসলাম সোজা হয়ে…

রিকি প্রশ্ন করল, ‘কি হলো? হয়ে গেল? আর চুষবে না?’

‘নাঃ… কেন আরো চুষতে হবে?’ প্রশ্ন করলাম ওকে।

‘আচ্ছা… থাক… পরে অন্য সময় হবে’খন… এবার এসো তো… আর একবার চুদি তোমায়…’ বলে রিকি আমাকে টেনে নিল ওর বুকের ওপরে… আমিও দিব্বি দুই পা দুই দিকে রেখে ওর কোলের ওপরে উঠে পড়লাম… প্রায় থেবড়ে বসে পড়লাম ওর কোলে… আমার বাটএর নীচে খোঁচা মারছিল ওর পেনিসটা… কি বলবো তোমায়, অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছিল… আমি নিজের কোমরটাকে নাড়িয়ে ভালো করে সেট করে নিলাম ওর পেনিসটাকে আমার আস চিকস্‌ এর খাঁজের মধ্যে… তারপর ঝুঁকে গেলাম ওর দিকে আর একটু… রিমি হাত বাড়িয়ে আমার ব্রেস্টগুলো ধরে টিপতে লাগলো মনের সুখে… উমমম… গলা নামিয়ে গুঙিয়ে উঠলাম আমি… ওই ভাবে ব্রেস্টগুলো নিয়ে চটকালে, কার না আরাম হয়? আর ওপরে নিজের শরীরের নীচে ওর পেনিসের ছোঁয়া… আপনা থেকেই চোখ বন্ধ হয়ে এল আমার… বুকদুটো বাড়িয়ে দিয়ে ওর থাইয়ের ওপরে হাতের সাপোর্ট রেখে মাথাটা হেলিয়ে দিলাম পেছন পানে।

আমাকে ওই ভাবে চোখ বন্ধ করে আরাম পেতে দেখে বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠল রিকি… ঝুঁকে একটা নিপিল মুখে তুলে নিয়ে চুষতে আরম্ভ করল ও… আহহহহহ… শিঁটিয়ে উঠলাম আরামে… সোজা হয়ে বসে ওর পীঠের ওপর হাত রেখে বোলাতে লাগলাম… বুকটাকে আরো এগিয়ে, বাড়িয়ে দিলাম ওর মুখের দিকে, প্রায় নিজের বুকটাকে ওর মুখের মধ্যে গুঁজে দেবার প্রচেষ্টায়।

রিকির হাতটা আমার থাইয়ের ওপরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল… হাত বোলাতে বোলাতে এগিয়ে নিয়ে এসে আমাদের দুজনের শরীর মধ্যে দিয়ে পায়ের ফাঁকটায় ঢোকানোর চেষ্টা করল ও… ‘ব্যথা তো… ওখানটায় খুব ব্যথা হয়ে রয়েছে…’ ফিসফিসিয়ে হাত না দিতে বারন করি ওকে।

‘তাহলে করবে কি করে?’ বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করে রিকি।

‘থাক না… করার দরকার কি? ওদিকে দিদি যদি জেগে যায়… তার থেকে ছেড়ে দাও বরং…’ বলি রিকিকে। বলি, কিন্তু মিথ্যা বলবো না, তখন মনের মধ্যে আরো একবার ওই ইন্টারকোর্সের স্বাদটা পেতে ভিষন ইচ্ছাও করছিল…

সেটা বোধহয় রিকিও বুঝতে পেরেছিল… বলল, ‘আচ্ছা, এক কাজ কর… আমি শুচ্ছি… তুমি বরং এই ভাবেই আমার ওপরে উঠে থেকে করার চেষ্টা করো…’

ও বলতেই আমার মনে পড়ে গেল এই ঘরে তখন ঢোকার সময় দিদিকে দেখেছিলাম কি ভাবে ও রিকির কোমরের ওপরে বসে করছিল… মনে পড়তেই ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো আমার… বেশ দিদির মত করা যাবে’খন… মনে মনে ভাবলাম আমি… মাথা হেলিয়ে বললাম, ‘হ্যা, সেই ভালো বরং… ওই ভাবেই একবার চেষ্টা করে দেখি, করতে পারি কি না… তুমি বরং শুয়ে পড়ো চিৎ হয়ে…’ বেশ বিজ্ঞের মত বলে উঠলাম আমি… বলে ওর শরীর থেকে নেমে বসলাম পাশে।

রিকি একটু দিদির কাছ থেকে একটু সরে শুয়ে পড়ল চিৎ হয়ে, মাথার নীচে বালিশটা টেনে নিয়ে… একবার তাকালাম দিদির দিকে… দিদির নিঃশ্বাস পড়ছে এক ভাবে… মানে দিদি সত্যিই ঘুমাচ্ছে… রিকির দিকে তাকালাম… রিকি চোখটাকে একবার বন্ধ করে ফের তাকালো আমার দিকে… যেন চোখের ইশারায় আমাকে আস্বস্ত করল সে… আমিও মাথা নেড়ে হাঁটুর ওপরে ভর রেখে উঠলাম… তারপর খুব সাবধানে একটা পা তুলে রিকির কোমরের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখলাম ওর শরীরের ওপাশটায়… খেয়াল রাখলাম যাতে কোনভাবেই না আমার পা ঠেঁকে যায় দিদির গায়ে… তারপর নিজের শরীরটাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পা মুড়ে বসলাম ওর কোমরের ওপরে আবার আগের মত করে… আমার শরীরের নীচে তখন রিকির পেনিসটা ফের ঢুঁ মারছে… ঠিক আমার ভ্যাজাইনার মুখটার সাথে ঠেঁকে… চাপ দিতেই বুঝলাম আমার ওখানকার মুখটায় বেশ ব্যথা এখনও… আমি মুখটাকে কাঁচুমাচু করে কোন নিঃশব্দ ইশারায় ওকে বললাম, ‘ওখানে এখনো ব্যথা তো!’

একবার ফিরে দিদির দিকে তাকায় রিকি, তারপর ফিসফিসিয়ে বলে, ‘দেখ না চেষ্টা করে, খারাপ লাগবে না…’ বলে আমার দেহের নীচের দিকে হাত দুটোকে ঢুকিয়ে দিয়ে তুলে ধরে আমাকে একটু নিজের শরীর থেকে… তারপর চাপা গলায় বলে… ‘আমার বাঁড়াটাকে হাতে ধরে নিজের গুদের মুখে সেট করে নাও…’

আর বলতে হয় না আমাকে দ্বিতীয়বার… হাঁটুর ভরে নিজের শরীরটাকে একটু এগিয়ে নিই সামনের পানে… তারপর হাতটাকে নীচে ঢুকিয়ে ধরি ওর পেনিসটাকে মুঠো করে… এনে ঠেঁকাই আমার ওটার মুখটায়… একটু লাগে… মুখ তুলে তাকাই ওর দিকে… ঘাড় নাড়ে রিকি… বুঝি আমি ঠিকঠাকই করছি… মাথা নিচু করে ফের দেখার চেষ্টা করি পায়ের ফাঁকটায়… খুব একটা কিছু দেখা যায় না যদিও… আন্দাজ করে নিয়ে বার কতক ঘসে নিই ভ্যাজাইনার মুখে… ভেতরে ইতিমধ্যেই তখন রস জমে উঠেছে আবার… ওটার মুখ থেকে বেরিয়ে এসে পেনিসটার মাথাটায় মেখে যায় ওই রস… বেশ হড়হড়ে হয়ে ওঠে ওটার মাথাটা… কোমরটাকে আগুপিছু করে নিয়ে সেট হয়ে বসি… তারপর আলতো করে চাপ দিই শরীরের, পেনিসটার ওপরে… উফফফ… লাগে খুব… মুখ তুলে ফের তাকাই রিকির দিকে… নিঃশব্দ ইশারায় বোঝাবার চেষ্টা করি… ‘ব্যথা তো খুব… লাগছে… ঢোকাতে পারছি না…’

মুখ কাঁচুমাচু করে রিকিও অনুনয় করে ইশারায়… ‘দেখো না চেষ্টা করে… ঠিক পারবে…’

আবার মুখ ফেরায় নিজের পায়ের ফাঁকের দিকে… দমটাকে বন্ধ করে নিই এবার… তারপর পেনিসটাকে আমার ওখানকার মুখটার সামনে রেখে ঝট করে বসে পড়ি চাপ দিয়ে শরীরের… হড়কে ঢুকে যায় পেনিসটা আমার ভ্যাজাইনার মধ্যে এক ধাক্কায়… ‘ওওওও মাআআআআ…’ ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠি প্রচন্ড জোরে…

ধড়মড় করে দিদি উঠে বসে বিছানায়… বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে… আর আমরা চোর ধরা পড়ার মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি… দুজনেই… রিকির পেনিসটা আমার শরীরের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে গেঁথে রয়েছে তখন।

‘এটা কি হলো? আমি ঘুমাচ্ছি, আর তার ফাঁকে দুজনে মিলে চোদাচুদি করছিস? লজ্জা করে না?’ আমার দিকে তাকিয়ে প্রায় খেঁকিয়ে উঠল দিদি…

আমি যে তখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না… তবে কি উঠে পড়বো রিকির ওপর থেকে? নাকি… প্রায় ফ্যাল ফ্যাল করে খানিক তাকিয়ে থেকে হটাৎ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম দিদির সামনে… প্রচন্ড ভয়ে আর লজ্জায়।

আমাকে ওই রকম কেঁদে উঠতে দেখবে, সেটা সম্ভবত দিদি ঠিক ঠাওর করতে পারে নি… উল্টে ওই কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল একটু… তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে আমার পীঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে সে, ‘এ বাবা, বোকা মেয়ে… কাঁদছিস কেন আবার… আমি আবার কি বললাম… আরে… চুপ কর চুপ কর… কাঁদার কি হল?’

আমি দু-চোখ ভরা জল নিয়ে বলতে থাকলাম, ‘সরি দিদি, আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে… আমি আর কক্ষনো করবো না… তুই বিশ্বাস কর… কি করে হল, আমি জানি না… হয়ে গেল… প্লিজ দিদি রাগ করিস না আমার ওপরে… আমি এক্ষুনি নেবে যাচ্ছি… প্লিজ দিদি… প্লিজ…’ বলে উঠে পড়তে গেলাম রিকির ওপর থেকে… রিকি বেচারা তো তখন না পারছে উঠতে, না পারছে শুয়ে থাকতে… ওর আরো অবস্থা খারাপ… দিদির কাছে এই ভাবে আমার সাথে ধরা পরে গিয়ে কি বলবে, সেটাই বোধহয় ভেবে পাচ্ছিলো না।

দিদি এগিয়ে এসে ধরে ফেলে, আমাকে উঠতে দেয় না রিকির ওপর থেকে… জড়িয়ে ধরে বলে… ‘দূর বোকা মেয়ে… আমি তো এমনি বললাম, চোদাচ্ছিস… বেশ করছিস… একশো বার চোদাবি… ইচ্ছা হয়েছে যখন তখন নিশ্চয়ই চোদাবি… আমাকে বলার কি প্রয়োজন? হু? আমি শুধু বলেছি কারণ আমি বাদ পড়ে যাচ্ছিলাম, তাই… সেই জন্য… পাগলী কোথাকার একটা…’ বলে আমার কাছে ঝুঁকে আমার ঠোঁটের ওপরে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে নেয় সে… হাত গুলো বাড়িয়ে আলতো হাতে আমার ব্রেস্টগুলো ধরে চাপ দেয়… একটু নেড়ে দেয় আদর করে…

রিকিও বোধহয় দিদির হাবভাব দেখে একটু ধাতস্থ হয়ে ওঠে… কিছু বলতে যায় ও… কিন্তু তার আগেই দিদি ওর দিকে ফিরে ওর কথা থামিয়ে দেয়… ‘থাক… তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না… যা বোঝার আমি ঠিক বুঝেছি… ও বাচ্ছা মেয়ে… কিন্তু তুমি ধাড়ী খোকা… ওকে নিশ্চয়ই সিডিউস করেছিলে করার জন্য… না?’

রিকি তবুও বলার চেষ্টা করে, ‘না… মানে…’

এবার দিদিও হেসে ফেলে ফিক করে… ‘আর মানে মানে করতে হবে না… পাশে এরকম একটা ডাগর শালী শুয়ে আছে… আবার সে কিনা ন্যাংটো হয়ে… তাকে তুমি চুদবে না… সেটাও আমাকে বিশ্বাস করতে বলো? আর যদি না করতে, তাহলে ভাবতাম, তুমি ইম্পোটেন্ট… বুঝেছ?’

এবার একটু সাহস পায় রিকি… হেসে বলে… ‘হ্যা… মানে… ওই আর কি…’

দিদি আমার দিকে ফেরে… ‘নে… ঢুকিয়েছিস যখন… এবার কর… চোদ শালাকে… নিঙড়ে নে ওর রস…’

আমিও এবার একটু সাহস পেলাম যেন… হাতটাকে রিকির বুকের ওপরে রেখে কোমরটাকে সামান্য তুলে ধরলাম ওপর করে… তারপর ফের নামিয়ে দিলাম শরীরটাকে রিকির ওপরে… আহহহহ… ওখানকার মুখটা বড্ড টাটিয়ে রয়েছে… আবার ভিষন ব্যথা লাগল… ব্যথার চোটে আমার ওখানকার ভেতরের রসও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে মনে হল… দিদির দিকে ফিরে বললাম, ‘না রে দিদি… পারবো না… বড্ড ব্যথা করছে… ভিষন টাটিয়ে রয়েছে ওখানটা…’

দিদি এগিয়ে আমার বুকের একটা নিপিল মুখে নিয়ে একবার চুষে দিয়ে বলল… ‘এই তো দেখ, আমি তোর মাইয়ের বোঁটাগুলো চুষে দিচ্ছি… তাতে আরাম পাবি… কর না… আমি তো আছি…’

ও উৎসাহ দেয় ঠিক কথা… কিন্তু তবুও… আরো একবার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি, না, সম্ভব নয়… আজ কিছুতেই আর আমি পারবো না… বড্ড লাগছে ওখানে… ওকে বলি, ‘নারে দিদি… পারছি না… আজ থাক…’ বলে সত্যিই নেমে পড়ি রিকির ওপর থেকে… মুখ নামিয়ে দেখি সত্যিই আমার ওখানটা বেশ লাল হয়ে রয়েছে… সরে বসি ওদের কাছ থেকে তফাতে খানিকটা।

দিদি আর জোরাজুরি করে না আমাকে… আমি সরে যেতেই নিজেই চড়ে বসে রিকির ওপরে… একটু নিজের শরীরটাকে তুলে হাত দিয়ে রিকির পেনিসটা ধরে নিজের ভ্যাজাইনার মুখে সেট করে নেয়… তারপর পেছন দিকে পেছিয়ে গিয়ে বসে… ওর বসার কায়দায়, কেমন সট্‌ করে পেনিসটা ওর ওখানটায় ঢুকে যায় এক বারেই… দিদির মুখ দিয়ে একটা ভালো লাগার আওয়াজ বেরিয়ে আসে… ‘আহহহহ…’ রিকির উদ্দেশ্যে বলে ও, ‘ওহ্‌, কি বানিয়েছ গুরু জিনিসটাকে… আমার গুদটা যেন ভরে গেল আবার…’ তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, ‘ইশ… মিস করলি তো… আর একবার আরাম পেতিস…’

আমি হেসে বলে উঠি… ‘না বাবা… কোন দরকার নেই… উফ্‌, কি যে লাগছিল কি বলবো তোকে… ওখানটা এখনও কি ভিষন টাটিয়ে রয়েছে…’

নিজের কোমরটাকে রিকির ওপরে চড়ে আগুপিছু করতে করতে বলে দিদি, ‘ও নিয়ে চিন্তা করিস না… প্রথমবার করলে ওরকম একটু আধটু ব্যথা হয়… কাল সকালে আমি ওখানে অ্যান্টসেপ্টিক ক্রীম লাগিয়ে দেব… ঠিক হয়ে যাবে…’ বলতে বলতে স্পীড বাড়ায় শরীর রগড়ানোর… ঝুঁকে পড়ে হাতদুটোকে ভর রাখে রিকির বুকের ওপরে… তীব্র বেগে শীলবাটার মত করে এগিয়ে পিছিয়ে চলে নিজের কোমরটাকে… আমি ওখানে বসে একবার দিদির দিকে তাকাই আর একবার রিকির দিকে… দুজনেরই মুখের ভাব দেখতে দেখতে বদলে যেতে থাকে যেন… বোঝাই যায়, ওরা দুজনেই ভিষন আরাম পাচ্ছে এই ভাবে করতে… কি মনে হয়… এগিয়ে গিয়ে দিদির দুলতে থাকা ব্রেস্টের একটায় হাত রাখি… দিদি মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে… না থেমে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, ‘টেপ না… টেপ… চোষ বোঁটাগুলো… উফফফফ… বড্ড আরাম হচ্ছে রে… খুব জল ঝরছে গুদের থেকে… দেখ না দেখ… ওর কোলটা পুরো ভেসে গেছে আমার গুদের রসে… উমাহহহ… কি আরাম… এই জন্যই রিকিকে আজ রেখেছি এখানে… মনের সুখে চোদাবো বলে… বল… ভালো করি নি… তুই ও তো একবার বেশ চুদিয়ে নিলি… তোর ফার্স্ট টাইম… তোরও সিল ভেঙে গেল বল… আরাম পেয়েছিলিস না… হু?… জানি পেয়েছিলিস… আমিও যখন প্রথম করিয়েছিলাম… খুব আরাম পেয়েছিলাম… এবার থেকে দেখবি… আর লাগবে না তোর… শুধু আরাম পাবি… দেখবি কি আরাম হয় চোদালে… বারবার করাতে ইচ্ছা করবে আমার মত… উফফফফ… রিকি… নীচ থেকে তোলা দাও না… উফফফফ… মাগো… বড্ড আরাম হচ্ছে রে…’ পাগলের মত বকে চলে ও।

আমি দিদির এক নাগাড়ে ওই রকম পাগলের মত প্রলাপ বকে যাবার মধ্যেই, কি মনে হয় ওর পেছন দিকে চলে যাই, গিয়ে পেছনে থেকে দুই হাত বাড়িয়ে ওর বড় বড় ব্রেস্টদুটোকে হাতের মুঠোয় ধরে খুব জোরে জোরে টিপতে থাকি… তাতে বোধহয় দিদির আরো আরাম বেড়ে যায়… বেড়ে যায় ওর গলার আওয়াজ… ‘ইশশশশ… হ্যা তিতির হ্যা… কি সুন্দর করে টিপছিস মাইগুলো… টেপ টেপ… গায়ের জোরে টেপ… বোঁটাগুলো টেনে টেনে ধর না… উফফফফফ… মাআআআআ… আমার আবার খসছে… আহহহহহ… রিকি… কি ভিষন আরাম হচ্ছে গো… উমমমমম…’

হটাৎ রিকি দেখি আমাকে ইশারা করে সরে যেতে… আমিও ওর শরীরের ওপর থেকে সরে বসি সাইডে… হাত বাড়িয়ে দিদির কোমরটাকে ধরে এক ঝটকায় শুইয়ে দেয় বিছানায়… তারপর ওর পা দুটোকে তুলে ফাঁক করে ধরে নিজে সেট হয়ে বসে ওর সেই পায়ের ফাঁকে… নিজের পেনিসটাকে দিদির ওখানটার মধ্যে সেট করে রেখে কোমর দুলিয়ে চাপ দেয়… আর তারপর গদাম গদাম করে করতে থাকে দিদিকে… দিদি নিজের পা দুটোকে মুড়ে বুকের কাছে টেনে ধরে রাখে… আর রিকি প্রায় মিনিট তিনেক ধরে এক নাগাড়ে ওকে করে যায়… দিদি পাগলের মত মাথাটাকে এদিক ওদিক করে হেলাতে থাকে… সারা বিছানায় ছড়িয়ে থাকে ওর বড় বড় চুলগুলো… হটাৎ রিকি কেমন কঁকিয়ে ওঠে দেখি… আরো দুই একবার কোমর ওঠা নামা করিয়েই চেপে ধরে দিদির শরীরের সাথে… ওর বাটটা কেমন ঝিনিক দিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছিল মাঝে মাঝেই… ওই ভাবে চেপে ধরে থাকা সত্তেও… দিদিও আরামে কেমন গোঁ গোঁ করে ওঠে রিকির সাথেই… তারপর দুজন দুজনের শরীরটাকে এক সঙ্গে চেপে ধরে রাখে বেশ খানিকক্ষন, শেষে রিকি এলিয়ে পড়ে দিদির ওপরে… দিদিও নিজের পা দুটোকে ছেড়ে মেলে দেয় দুই দিকে… রিকিকে নিজের বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে চুপ করে… আর আমি ওদের পাশে বসে দেখতে থাকি ওরা কি ভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাচ্ছে… বুঝি যে ওদের দুজনেরই এক সাথে ক্লাইম্যাক্স হয়ে গেল। কেন জানি না… ভিষন ভালো লাগে আমার… দিদিকে এই ভাবে আরাম পেতে দেখে… এগিয়ে গিয়ে হাত বোলাতে থাকে ক্লান্ত দিদির মাথায়।

গ্লাস তুলে চুমুক দিতে গিয়ে দেখে পৃথা কথায় কথায় কখন গ্লাসটা খালি হয়ে গিয়েছে… ছবিটাকে বিছানায় রেখে উঠে পড়ে সে… এগিয়ে যায় টেবিলের কাছে… টেবিল থেকে বোতলটা তুলে গ্লাসে ঢালতে গিয়ে দেখে আর একটু খানিই অবশিষ্ট পড়ে রয়েছে বোতলে… আজ প্রায় পুরোটাই শেষ করে ফেলেছে ওয়াইনের বোতলটা… ফিরিয়ে রেখে দিতে গিয়েও আবার তুলে নেয় বোতলটাকে… বোতলের মধ্যের শেষ তরলটুকুও ঢেলে নেয় গ্লাসে… ‘দূর… আর এইটুকুই বা রেখে কি হবে… কাল আর একটা কিনে আনা যাবে’খন’… বলে গ্লাসটা নিয়ে ফিরে আসে বিছানার কাছে… উঠে হেলান দিয়ে বসে হেডবোর্ডটায়… গ্লাসের তরল চুমুক দিকে টেনে নেয় রেখে দেওয়া ছবিটাকে নিজের হাতের মধ্যে।
 

soukoli

Member
389
58
29
১২।।

কথায় কথায় নেশাটা কমে এসেছিল… কিন্তু নতুন করে ওয়াইনটা পেটে পড়তেই আবার চাগাড় দিয়ে উঠলো সেটা…… বেশ হাল্কা লাগে মাথাটা… ভালো লাগাটা ছেয়ে থাকে মনের মধ্যে… সেই সাথে নিজেকে তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে মেলে ধরতে পেরে নিজেকেও যেন খুব হাল্কা মনে হয় পৃথার… দরকার ছিল… এটার খুব দরকার ছিল… এই ভাবে ভেতরের সমস্ত কিছু উগরে দেওয়ার… মনে মনে ভাবে। হাতে ধরা ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে… কে জানে, এটা হয়তো এক ধরণের পাগলামীই তার… কিন্তু এই পাগলামীটাও তার একেবারেই নিজস্ব… সম্পূর্ণভাবে শুধুই তার… এ পাগলামী সে জানে এই চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমা বদ্ধ থাকবে চিরদিন… বাইরের পৃথিবীর কেউ জানবেও না তার মনের মানুষের কথা হয়তো, কখনও। হয়তো এটাই প্রয়োজন, সমস্ত মানুষেরই… মনের মধ্যে কোথাও একটা এই রকম পাগলামী রেখে দেওয়ার… যাতে ভেতরের জমে থাকা সমস্ত ভার সেই মানুষটার কাছে উগড়ে দিয়ে নিজে হাল্কা হওয়া যায়।

ভালোবাসা… পৃথা কি সত্যিই কখনও ভেবেছিল যে ও কখনও কারুর প্রেমে পড়বে? কই, ভাবে নি তো? কতই না ঘুরেছে জীবনে… কতই না মানুষের সাথে আলাপ হয়েছে তার… হয়তো শারীরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে কারুর সাথে… কিন্তু মন?… আগে তো কখনও সে এই ভাবে ভাবেই নি… নিজেও খুব সহজ খোলা মেলা জীবন কাটিয়েছে… সেই ভাবেই বড় হয়েছে ও… কিন্তু কি যে ঘটে গেল ছবির ওই মানুষটাকে দেখে কে জানে… তাও কি না এমন একজনের প্রেমে পড়ে গেল, যে নেই… যার কোন অস্তিত্বই নেই তার চারপাশে… তবুও সেই তাকেই সে মনটা দিয়ে ফেলল। ও জানে, মা যদি ওর এই পাগলামী জানতে পারে, কি যে করবে কে জানে… নাঃ, কেউ জানবে না… দ্বিতীয় কোন প্রানীও জানবে তার মনের কথা… কোনদিনও না… এ শুধু তার… শুধুই তার… হয়তো ছবির মানুষটাও জানতে পারবে না কখনো!

ভাবতে ভাবতে হাতের মধ্যে ধরা ছবিটার দিকে তাকায় পৃথা… গাঢ় গলায় বলে ওঠে… ‘তুমি শুনতে পাচ্ছো? বুঝতে পারছো কি করেছ আমার মনটার… হ্যা, হ্যা… এটাই সত্যি… আমি শুধু তোমার… এই তিতির শুধু তোমার… আর কারুর হবে না কখনও। জানি তুমি হয়তো বলবে, এখনও জীবনটা পড়ে রয়েছে… ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেকের সাথে আলাপ হবে… কারুর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে… ব্যাগারা, ব্যাগারা… অনেক কিছুই বলতে পারো তোমার তিতিরকে, কিন্তু একটা জিনিস শুনে রাখ… যেই আসুক কখনও আমার জীবনে, কিন্তু তুমি… তুমি সারা জীবন আমার থাকবে… শুধুই আমার… আর কারুর না… আমার এই বুকের মধ্যে রেখে দেবো তোমাকে… এই ভাবে…’ বলতে বলতে ছবিটা চেপে ধরে নিজের পায়রার মত নরম বুকগুলোর ওপরে, পরম ভালোবাসায়… ধরেই থাকে চেপে নিজের বুকের সাথে।

নেশার প্রকপে বেশ ভারী হয়ে উঠেছে চোখদুটো… মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে… বরং চোখগুলোকে বন্ধ করে মাথাটা বালিশে হেলান দিয়ে রাখলে বেশ ভালো লাগছে… তাই মাথাটাকে বালিশের ওপরে হেলিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে পৃথা… বিড় বিড় করে বলতে থাকে… ‘তুমি কি ভাবো? আমি বুঝতে পারি না? সব বুঝতে পারি… জানো… আমরা মেয়েরা না যেটা সহজেই বুঝে যাই… তোমরা সেটা ভাবতেই পারো না… বোঝা তো দূরের কথা… বুঝেছ? আরে বাবা… গন্ধটা? তোমার গায়ের গন্ধটা কোথায় যাবে?… প্রতিটা পল আমি অনুভব করি তোমার উপস্থিতি আমার চারপাশে… সত্যি… বলি না কেন? ইচ্ছা হয় না… ওটা একেবারে আমার ভেতরের অনুভূতি… হ্যা… নিশ্চয় ভাবছ নেশার ধুমকিতে ভুলভাল বকছি… না গো… নেশা হয়েছে ঠিকই… কিন্তু ভুল বকছি না… আমি বুঝতে পারি… যখনই ঘরে ফিরি… তুমি থাকো… ঠিক আমার কাছটাতে… তাই তো বিশ্বাস কর… আমার এতটুকুও একা থাকতে ভয় লাগে না এখানে… আমি তো জানি, আমার জন্য তুমি আছো… তাই না গো?’

মাথাটা বালিশ থেকে জোর করে প্রায় তুলে চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই হাতের গ্লাসটাকে মুখের কাছে এনে তরলে চুমুক দেয় সে… তারপর ফের পেছন দিকে হেলিয়ে রেখে বলে… ‘আচ্ছা… একটা প্রশ্ন করবো… বৌদি জানে আমার কথা… প্লিজ… বৌদিকে রাগ করতে বারণ করো, কেমন… আসলে কি জানো… আমি চাই নি কিন্তু এই ভাবে মনটা আমার তোমাকে দিয়ে ফেলি… কিন্তু কি করে যে কি হয়ে গেল… কে জানে? বৌদির কাছে না আমার হয়ে সরি বলে দিও… কেমন… বলো যে পৃথা একদম খারাপ মেয়ে নয়… ও খুব ভালো মেয়ে… সত্তি সত্তি খুব ভালো মেয়ে… তোমাকে খুব ভালোবাসে… বলো… হ্যা… প্লিজ বৌদিকে রাগ করতে বারণ করো… বলবে তো আমার হয়ে?’

খানিক চুপ করে থাকে পৃথা… তারপর ফের বলে ওঠে প্রায় অস্ফুট স্বরে… ‘খুব গায়ে পড়া মেয়ে ভাবছ… না? অবস্য তোমাকে দোষ দেওয়া যায় না… ভাবাটাই স্বাভাবিক… এই ভাবে তুমি না চাইতেও তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে যাচ্ছি… এতে নিশ্চয়ই আমাকে ভিষন সহজ লভ্য একটা মেয়ে ভেবে নিয়েছ… ঠিক যেমন রমেশ ভেবেছিল… ভেবে… ও… তোমাকে তো রমেশের কথাই বলা হয় নি এখনও… আসলে বোলতাম ঠিকই… এবারেই তো রমেশের কথায় আসতাম… দাঁড়াও… একটা সিগারেট ধরিয়ে নিই আগে…’ বলতে বলতে ছবিটা বিছানায় রেখে উঠে বসে পৃথা… উঠে গিয়ে টেবিল থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা খুলে সিগারেট নিতে যায়… ‘এ বাবা… আর মাত্র তিনটে পড়ে রয়েছে… ঠিক আছে… এখন একটা খাই… কালকের পটির জন্য একটা থাকলেই হবে… সেখানে দুটো থাকবে… যথেষ্ট…’ সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে নেয়। কি মনে করে নিজের বুকের ওপরে হাত রাখে পৃথা… নরম বুকদুটোকে হাতের তালুতে ধরে ওজন নেবার মত করে তুলে ধরে সে… ‘বেশ ভারী হয়েছে ব্রেস্টদুটো… আজ তারিখ কত হলো? কে জানে… আজ আর ধুমকিতে মনেও পড়ছে না তারিখের কথা, আর সেই সাথে ক’দিন ধরে মাঝ মধ্যেই তলপেটটা কেমন টেনে খিঁচে ধরছে… মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই শরীর খারাপ হবে…’ ভাবতে ভাবতে ফিরে আসে বিছানায়… সাথে অ্যাস্ট্রেটা আনতে ভোলে না…

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে গ্লাস থেকে আরো খানিকটা ওয়াইনে সিপ করে সে… তারপর সিগারেটএ একটা টান দিয়ে ভালো করে উঠে বসে…

সেবার আমাদের চৌরিখ্যাঙ্গ বেস ক্যাম্প অবধি এক্সপীডিশন ছিল… হুমমমম… অগস্ট মাস ছিল বোধহয়… দারুন ওয়েদার ওই সময়টায় ওখানে… আমরা সব শুদ্ধু ছিলাম যত দূর মনে পড়ছে প্রায় জনা কুড়ির দল… চৌরিখ্যাঙ্গ জানো তো… ওটা এভারেস্টের সাউথের দিকে পড়ে… কত?… প্রায় ধরো সাড়ে পাচ হাজার মিটার হাইট হবে… নেপাল হয়ে যেতে হয়… দুর্দান্ত জায়গা… আমরা শুরু করেছিলাম ইয়োকসাম থেকে… সেখান থেকে স্যাচেন… তারপর বাখিম… বাখিম পৌছে ওখান থেকে যেতে হয়েছিল শোকা… শোকা থেকে ফেড্যাং হয়ে জংগ্রি… তারপর চৌরিখ্যাঙ্গ… একদম নির্ঝঞ্ঝাট গিয়েছিলাম, জানো… পথে কোন বিপদ আপদ, কিচ্ছু হয় নি। পুরো রুটটা আমরা কি দারুন মজা করতে করতে গিয়েছিলাম তোমাকে কি বলবো… এতটুকুও কষ্ট মনে হয় নি ওই পুরো পথটা… ওই টিমেই আমাদের টিম লিডার ছিল রমেশ… একেবারে স্টাউট চেহারা… একটু কম কথা বলতো… মাউন্টেনিয়ারিংএর ব্যাপারে একেবারে চৌখশ ছেলে… আর তুমি তো বুঝতেই পারছো… আমি কেমন বাচাল মেয়ে… সবার সাথেই হইহই করতে ভালোবাসি… এর পেছনে লাগছি… ওর পেছনে লাগছি… প্রত্যেককে খুব জ্বালাতাম… অবস্য তাতে কারুর আমার প্রতি কোন অবজেকশন ছিল না… বেশ এঞ্জয়ই করতো ওরা… বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল সবার সাথে… ওই টিমে তো দুজন সুইডিশ মেয়েও ছিল… আমার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। সবই ঠিক চলছিল… কিন্তু গন্ডগোলটা হল ফেরার সময়। জংগ্রি থেকে রুটটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে… একটা ফিরে গেছে আবার ফেড্যাংএর দিকে আর ওখান থেকেই আর একটা রুট ঘুরে চলে গেছে গোয়েছালার দিকে। আমরা জংগ্রি এসে এগোবো… হটাৎ উঠল ঝড়… সে ঝড় তোমাদের এখানকার মত নয়… একবারে তুষার ঝড়… সে যে কি জিনিস না দেখলে বুঝতে পারবে না… চতুর্দিক সাদা… কিচ্ছুটি নজরে আসে না… কে যে কোথায় ছিটকে গেলাম সেই মুহুর্তে জানি না… যখন ঝড় থামলো তখন দেখি শুধু আমি আর রমেশ… আর কেউ কোথাও নেই… এদিকে অন্ধকার নেমে আসবে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই… পাহাড়ে অন্ধকার নামে একেবারেই ঝুপ করে… বেশ বুঝতে পারছিলাম আমরা দুজনে যে আসল রুট থেকে সরে এসেছি… এখন ফেরত যাওয়া এই সময় সম্ভব নয়… রমেশ অনেক করে চেষ্টা করল রেডিওতে ওদের ধরতে… কিন্তু সিগন্যালও পাচ্ছিলো না… সে এক বিদিগিচ্ছিরি অবস্থা… আমি তো জীবনেও এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি… সেটাই আমার প্রথম বেস ক্যাম্প এক্সপীডিশন্‌… রমেশকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এখন কি হবে?’

ও কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মাথা ঠান্ডা করে রেখেছে দেখি… যেন কোন টেনশনই নেই ওর মধ্যে… কি রকম নিরুদ্বিগ্ন গলায় বলল, ‘ডোন্ট ওয়রি… একটা রাত একটু কষ্ট করতে হবে… কাল সকাল বেলায় আমরা আবার ঠিক রুটে ফিরে যাবো… এখন এগোনো সম্ভব নয়… আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার হয়ে যাবে… তখন এগুতে গেলে অনেক বিপদ… তার চেয়ে আজকের রাতটা এখানে ক্যাম্পিং করে কাটিয়ে দেওয়ায় যাবে’খন।’

ও টিম লিডার… তার ওপরে যথেষ্ট এক্সপীরিয়েন্সড্‌… তাই ওর ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমার দ্বিতীয় পথও নেই… আমরা পীঠ থেকে সব মাল পত্র নামিয়ে ওখানেই টেন্ট খাটিয়ে ফেললাম… ও তাও বেশ কয়েক বার ট্রাই করে গেল রেডিও সিগন্যাল পাবার আশায়… কিন্তু কোথায় কি… ঝড় না হলেও, আবহাওয়া এতটাই খারাপ যে কিছুতেই সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল না… অগত্যা… সে রাতের জন্য তৈরী হলাম টেন্টে থাকার জন্য।

সাথে তো আমাদের ড্রাই ফুড থাকেই… সেটা দিয়েই মোটামুটি ডিনার করে নিলাম টেন্টের মধ্যে বসে… রমেশের হোভারস্যাকে রামের বোতল ছিল… ও মাঝে মধ্যেই একটু একটু করে মারছিল বোতলটার থেকে… আমি প্রথমে ঠিক চাইতে পারিনি… কিন্তু এত ঠান্ডা যে কি বলবো… মনে হচ্ছিল যেন হাত পা জমে যাবে… গায়ের ওপর অত মোটা সুট্‌ থাকা সত্তেও… ওই বাড়িয়ে দিল বোতলটা আমার দিকে… বলল… ‘এটার থেকে একটু মেরে নাও… ঠান্ডাটা কাটবে একটু…’

আগে কখনও কোনদিন লিকার টেস্ট করি নি… মুখে নিতেই মনে হল যেন বমি হয়ে যাবে… ইশ্‌… কি তেঁতো… ওই টুকু মুখে পড়তেই যেন মনে হল গলাটা জ্বলে গেল আমার… তাড়াতাড়ি রমেশের হাতে বোতলটা ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ইশ্‌, কি বিচ্ছিরি খেতে… আমি খেতে পারবো না…’

রমেশ কিন্তু বোতলটা ফিরিয়ে নিল না আমার হাত থেকে… বলল… ‘যতই খারাপ লাগুক… তবুও… একটু একটু করে খাও… নয়তো এই ঠান্ডায় জমে যাবে… অসুধের মত করে অন্তত খেয়ে নাও…’

ও বলা সত্তেও, ভেবেছিলাম খাবো না… কিন্তু সত্যিই এত ঠান্ডা লাগছিল যে ওর কথা আর ফেলতে পারলাম না… বোতলটা নিয়ে ফের চুমুক দিলাম আরো একবার… মিথ্যা বলবো না… এবারে আর অতটা খারাপ লাগলো না… গন্ধটা নাকে লাগলো ঠিকই… কিন্তু টেস্টটা আগের মত অতটা বিচ্ছিরি মনে হল না… তারপর আরো বেশ কয়একবারই চুমুক মারলাম বোতল থেকে।

এরপর কথায় কথায় আরো কতবার যে চুমুক মেরেছি ওর হাত থেকে নিয়ে খেয়াল নেই… কিন্তু খানিক পর থেকেই বুঝলাম সেই আগের মত ঠান্ডা আর কিন্তু লাগছে না আমার… বরং মোটা পশমের জামার ভেতরে বডিটা বেশ হিটেড হয়ে উঠেছে… খুব বকবক করছিলাম, জানো… সেটা যে নেশার ধুমকিতে সেটা অবস্য বুঝিনি… মাথাটাও বেশ ভার ভার লাগছিল আমার… মনটা যেন খুব খুশি হয়ে গিয়েছে।

খানিক পর রমেশ আমাকে বলল, ‘শুয়ে পড়… শুধু শুধু বসে থেকে লাভ কি? কাল খুব সকালে বেরিয়ে পড়তে হবে…’

আমিও কোন দ্বিমত না করে শুয়ে পড়লাম স্লিপিংব্যাগটা খুলে নিয়ে… ওটার ভেতরে আর ঢুকলাম তখনই… কারণ রামের এফেক্টএ তখন গরম না লাগলেও, ঠান্ডাও লাগছে না আর। শুয়েই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম… যতই হোক… সারাদিনের পীঠের ওপর অতটা লোড নিয়ে ট্রেকিংএর ক্লান্তি তো আছেই… তার ওপর অতটা রাম পেটে গেছে… ভাবলাম পরে যদি ঘুম ভাঙে, ঠান্ডা লাগে, তাহলে না হয় ব্যাগের মধ্যে ঢুকে যাব’খন।

কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম বলতে পারবো না… হটাৎ মনে হল আমার জামার ফাঁক গলিয়ে বুকগুলো কেউ ধরে টিপছে… ধড়মড় করে উঠে বসার চেষ্টা করলাম আমি… কিন্তু পারলাম না… আমার শরীরের ওপরে তখন রমেশ চেপে বসে আছে… জোর করে শুইয়ে দিল আমাকে… দেখি কখন আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে জ্যাকেটের চেনটা টেনে নামিয়ে দিয়েছে… ভেতরের মোটা জামাটাও তুলে দিয়েছে গলা অবধি… ব্রাটাও খোলা… উদলা ব্রেস্টগুলো হাতের মুঠোয় ধরে জোরে জোড়ে চটকাচ্ছে… আমি চেষ্টা করলাম ওকে সরিয়ে দিতে… কিন্তু ওর শক্তির কাছে আমি যেন তুচ্ছ… আর তার ওপরে পেটে রামের প্রভাব… ইচ্ছা থাকলেও যেন হাত পায়ে সে জোর পাচ্ছিলাম না… বার বার করে চিৎকার করে ওকে বারণ করতে লাগলাম… আমার সাথে ওই রকম না করতে… কিন্তু ওর মধ্যে তখন যেন কি এক আসুরিক শক্তি ভর করেছে… আমার হাত দুটোকে মাথার ওপরে চেপে ধরে মুখ নামিয়ে একটা নিপিল মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চোঁ চোঁ করে চুষে যেতে থাকলো… উফফফ… কি বলবো তোমাকে জানি না… সেটা রামের এফেক্ট না চোষার… আমার সারা শরীরটা যেন আমার বশে নেই… কি অদ্ভুত ভালো লাগতে লাগল… মুখে যতই না না বলি না কেন… জোর করে বাধা দেবার শক্তি বা ইচ্ছা, কোনটাই যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি… কেমন ওর কাছে নিজের শরীরটাকে ছেড়েই দিয়েছিলাম… আর সেই সুযোগে ও আমার ব্রেস্ট বদলে বদলে চুষে যেতে থাকলো আমার নিপিলগুলোকে… পরে কখন আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হাতের মুঠোর ব্রেস্টগুলো চেপে ধরে চটকাতে শুরু করেছে জানি না… আমি কিন্তু হাত তুলেই রইলাম ওর মলেস্টেশনের কাছে… বাধা দেবার কথাও যেন ভুলে গিয়েছিলাম সেই মুহুর্তে… একটা ভিষন ভালো লাগা ছেয়ে ফেলেছিল আমার দেহটাকে।

এর ফাঁকেই ও আমার ট্রাউজারটা বেল্ট থেকে খুলে হিঁচড়ে টেনে নামিয়ে দেয় খানিকটা… একটা পায়ের থেকে খুলে নেয় ওটাকে… সেই সাথে প্যান্টিটাও খুলে ফেলে এক ঝটকায় ওই প্যান্ট খোলা পা দিয়ে… আমি তখন বাধা দেব কি… ওর সাথে যেন আমিও সঙ্গত করে যাচ্ছিলাম… শরীর থেকে পোষাকগুলো খুলে ফেলতে সাহায্য করছিলাম দেহটাকে তুলে ধরে… তখন আমার পরনের একটা পায়ে প্যান্টের পা আর প্যান্টির অংশটা আটকে রয়েছে… দুই দিকে আমার পা দুটোকে ধরে ছরিয়ে দিয়ে আমার ওপর আবার উঠে পড়ল… শুয়ে পড়ল বলা যেতে পারে আমার শরীরটার ওপরে… হাত বাড়িয়ে নিজের ট্রাউজারের চেনটাকে টেনে নামিয়ে দিয়ে বের করে নিয়ে এল ওর পেনিসটা… আমি বুঝতে পারছি এবার কি হতে চলেছে… কিন্তু বাধা দেবার চেষ্টাও করলাম না… ততক্ষনে আমার মধ্যে সেন্স ফিরে এসেছে… ভেবে দেখলাম… এখন যদি বাধা দিই… কোন ফল হবে না… ওই রকম একটা ডেসার্টেড জায়গায় কেউ নেই আমাকে বাঁচাবার… অথচ কাল রমেশের সাহায্যেই আমাকে ফিরতে হবে… তাই চুপ করে পড়ে রইলাম আমি… আর ও, ওর পেনিসটাকে আমার ভ্যাজাইনার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল… আহহহহ… কোঁকিয়ে উঠলাম আমি… কি করবো… তখনও তো ওখানটা শুকনোই… সেই ভাবে তো ভেজেই নি… তাই ও ভাবে ঢোকাবার চেষ্টা করলে হয় না কি?

রমেশও বোধহয় বুঝলো যে এ ভাবে হবে না… দেখি ফের উঠে বসল ও… তারপর আমার নীচের দিকে নেমে গিয়ে পা দুটোকে দুই দিকে টেনে আরো ফাঁক করে দিয়ে গুঁজে দিল ওর মুখটাকে আমার ওখানটায়… আহ্‌… ওখানে রমেশের মুখ পড়তেই যেন কারেন্ট মারল আমার শরীরের মধ্যে… আমি নিজের থেকেই পা দুটোকে বুকের কাছে টেনে তুলে ফাঁক করে মেলে ধরলাম ওর মুখের সামনে… রমেশ প্রাণ ভরে চুষে চলল আমার ভ্যাজাইনাটাকে… জিভ দিয়ে চেটে দিতে লাগল ওটাকে ওপর থেকে নীচ অবধি… জিভটাকে নাড়াতে লাগলো আমার ক্লিটটার ওপরে… আমার মনে হল যেন পাগল হয়ে যাব আরামে… আমি হাত বাড়িয়ে খামচে ধরলাম রমেশের মাথাটা আমার ওখানটায়… নিজেই কোমরটাকে তুলে ধরলাম নীচ থেকে… বুঝতে পারছিলাম… ওখান থেকে ভিষন ভাবে রস বেরুতে শুরু করেছে ততক্ষনে… হড়হড়ে হয়ে উঠেছে ওটার পুরো ভেতরটাই… শেষে নিজেই বলে উঠলাম… ‘আর চুষতে হবে না… নাও স্টার্ট ফাকিং মী… আই অ্যাম ওয়েট এনাফ… পুট ইট ইন্সাইড মী…’

এতটা বোধহয় ও’ও আশা করে নি… আমাকে এই ভাবে বলতে দেখে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো ও… তারপর আর দ্বিতীয়বার আর কিছু বলতে হল না… উঠে এসে নিজের পেনিসটাকে আবার সেট করল আমার ওখানটায়… এবারে আর লাগল না আমার, একেবারেই… এক নিমেশে ঢুকে গেল রমেশের পেনিসটা আমার ওখানটার মধ্যে… উফ্‌… ওই রকম একটা ফাঁকা জায়গায়… বরফের মাঝে… টেন্টের মধ্যে… সত্যিই বলছি… কি ভিষন ভালো লাগছিল করতে… যতটা পারলাম পা দুটোকে দুই পাশে মেলে ধরে ওর ইনসার্সনটা নিতে থাকলাম নিজের শরীরের মধ্যে… ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি দুই হাতে… পা দুটোকে কম্বোলের ওপরে ভর রেখে তুলে তুলে ধরতে লাগলাম কোমরটা ওর কোমরের দিকে… কিন্তু বেশিক্ষন সুখটা পেলাম না, জানো?… আমার হবার আগেই ও হটাৎ শক্ত হয়ে গেল… ঠেসে ধরল ওর কোমরটাকে আমার শরীরের সাথে… অনুভব করলাম গলগল করে ইজ্যাকুলাট করছে আমার মধ্যে… আমি পা দিয়ে ওর শরীরটাকে কাঁচি মেরে ধরলাম… চেষ্টা করলাম নিজের শরীরটাকে ওর সাথে যতটা সম্ভব ঘসে আরামটাকে নিয়ে আসা যায়… কিন্তু ও ইজ্যাকুলেট করেই কেমন নেতিয়ে গেল… কেমন যেন পুরো ব্যাপারটা শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেল… তারপর আমাকে ছেড়ে উঠে পড়ল।

আমি ওই ভাবেই আরো বেশ খানিকক্ষন শুয়ে রইলাম… মনে মনে ভাবলাম যদি আমাকে এই ভাবে দেখে আরো একবার করে… কিন্তু কোথায় কি… ও ওর স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে শুয়ে পড়ল… একবারের জন্যও আমার দিকে ফিরে তাকালোও না।

আমি আস্তে আস্তে উঠে বসে একটা রুমাল বের করে ভ্যাজাইনাটাকে মুছে নিলাম… হড়হড়ে রসে ভরে গেল রুমালটা… সেটাকে ফেলে দিলাম ছুড়ে এক পাশে… তারপর জামা প্যান্ট পড়ে আমিও স্লিপিংব্যাগের মধ্যে ঢুকে শুয়ে পড়লাম… শুয়ে পড়লাম ঠিকই কিন্তু ঘুম আর এলো না… জেগেই কাটিয়ে দিলাম বাকি রাতটা।

সকালে উঠে রমেশ একেবারে নরমাল… যেন কিছুই ঘটে নি রাত্রে… রেডিও চালিয়ে সিগন্যাল পাবার চেষ্টা করল একটু… সিগন্যালটা পেয়েও গেল… আমাদের লোকেশন জানিয়ে মেসেজ করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল… ‘নাও… গেট রেডী… উই হ্যাভ টু মুভ ফাস্ট… দে আর ওয়েটিং ফর আস…’ বলে নিজের হ্যাভারস্যাক গুছিয়ে নিতে লাগল…।

আমিও আর একটাও কোন কথা তুললাম না রাতের ব্যাপারে… চুপচাপ নিজের লাগেজ গুছিয়ে নিলাম… টেন্ট ভেঙে ফোল্ড করে আমরা রওনা হয়ে গেলাম টিমের উদ্দেশ্যে।

মুখে কিছু না বললেও, রমেশ নিশ্চয় ভেতর ভেতর একটু টেন্সডই ছিল… আমরা যখন টিমের সাথে মিট করলাম, ও দেখি একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে আমাকে… কিন্তু আমি ব্যাপারটায় আর কোন গুরুত্ব দিই নি… কেনই বা দেবো… আমিও যেন কিছুই হয় নি, এই ভাবেই বাকিদের সাথে মিশে গিয়েছিলাম… কয়েক জন অবস্য আমাকে প্রশ্ন করেছিল যে রাত্রে কোন অসুবিধা হয়েছে কি না সেই জন্য… আমি এড়িয়ে গিয়েছি তাদের প্রশ্ন… কি হতো বলো তো ব্যাপারটা নিয়ে জল ঘোলা করে? আর এটা তো ঠিক, আমারও তো সমর্থন ছিল… প্রথম দিকে না হলেও… পরে তো আমিও রমেশের সাথে কোয়াপোরেট করেছি… মেলে দিয়েছিলাম নিজেকে ওর কাছে… ও সুখ দিতে পারেনি আমাকে, সেটা ওর অপারগতা… অ্যাম আই রং? হোয়াট ডু ইয়ু থিঙ্ক?

বাড়ি ফিরে যে একেবারে টেনশনে ছিলাম না তা বলবো না… মা’কে কিছু বলতেও পারছি না… অথচ এক্সপীডিশন থেকে বাড়ি ফিরতে প্রায় আরো দিন সাতেক লেগে গিয়েছিল… এর মধ্যে কোন কন্ট্রাসেপ্টভ পিল খাবো… সেটাও সম্ভব হয় নি। কিছু দিন পর পিরিয়েড হতে যেন নিশ্চিন্ত হলাম… একটা বিরাট বোঝা নেবে গিয়েছিল মাথা থেকে… আসলে যদিও জানি যে আমার মোটামুটি সেফ টাইমই চলছিল… আগের পিরিয়েডটা বেশ অনেক দিন আগেই হয়েছে… তবুও… টেনশন তো হয়ই… না?

কথা বলতে বলতে বড় বড় হাই ওঠে পৃথার… হাতের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখে তখনও গ্লাসের নীচে একটু ওয়াইন পড়ে রয়েছে… কি মনে করে আর খায় না সেটা… গ্লাসটাকে কোনরকমে পাশে হেলে, রেখে দেয় বেডসাইড টেবিলটার ওপরে… সিগারেট অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল… তাই অ্যাশট্রেটাও ঠেলে কাছ থেকে খানিক দূরে সরিয়ে দেয় বিছানায়… তারপর হড়কে নেমে যায় নীচের পানে… বালিশটাকে কোন রকমে মাথার নীচে টেনে নিয়ে ঢলে পড়ে পাশ ফিরে… হাত পা ছড়িয়ে এলিয়ে দেয় শরীরটাকে নাইট ল্যাম্পের নিলাভো রঙে রাঙানো বিছানার ওপরে… জড়ানো গলায় কোনরকমে বলে ওঠে… ‘গুড নাইট সোনা… আর পারছি না… এবার একটু ঘুমাবো…’

ছবিটাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে যায় গভীর ঘুমের রাজ্যে… ওই ভাবেই বেঁকে চুড়ে পড়ে থাকে বিছানার ওপরে… ঘরের নিলাভো আলোয় সাদা বিছানার ওপরে একেবারে জন্মদিনের পোষাকে… দেখে যেন মনে হতে লাগলো একটা নীল পরি শুয়ে রয়েছে রাতের শেষে।

ঘুমের মধ্যেই পৃথা শুনতে পায় একটা গভীর স্বর বহু দূর থেকে তার নাম ধরে খুব চাপা গলায় থেমে থেমে যেন ডাকছে… ‘তিতির… তিতির… ঘুমালে?’

‘উ…’ সাড়া দেয় পৃথা… ঘুমের মধ্যেই…

তার মনে হয় যেন স্বরটা তাকে বলছে… ‘এ ভাবে ঘুমালে হাতে ব্যথা হবে তো… ভালো করে শোও…’

‘হু…’ বলে ফিরে চিৎ হয়ে যায় পৃথা… বুকের মধ্যে তখনও ধরা থাকে ছবিটা।

তার মনে হয় কেউ যেন আস্তে আস্তে, খুব সাবধানে ওর বুকের ওপর থেকে হাত ছাড়িয়ে ছবিটাকে টেনে বের করে নিচ্ছে… হাতের মুঠো আলগা করে দেয় ঘুমের মধ্যেই… হাতগুলোকে শরীরের দুই পাশে মেলে ভালো করে শোয়… বিড়বিড় করে বলে… ‘আমি জানতাম তুমি আছো… আই ক্যান ফিল ইয়ু… তোমার গায়ের ওই ভিষন অ্যাট্রাক্টিভ ম্যানলী গন্ধটা… আই ক্যান স্মেল ইয়ু…’

বলে ঘুমের ঘোরে… কিন্তু কোন উত্তর পায় না…

‘ইয়ু আর স্টিল দেয়ার… না?’ ফের বিড়বিড় করে ওঠে পৃথা… নেশা আর ঘুম যেন জড়িয়ে ধরেছে তাকে… ‘টাচ মী… প্লিজ… জাস্ট টাচ মী ওয়ান্স… ওন মাই টিটি…’

পৃথার কথায় কি সত্যিই কোন কায়াহীন হাত ইতস্থতঃ করে তাকে ছুঁতে?

আবার ঘুমের মধ্যেই বলে ওঠে পৃথা… ‘প্লিজ হানি… প্লিজ… জাস্ট টাচ মাই টিট্‌… আই ওয়ান্ট টু ফীল্‌ ইয়ু ওন মী… প্লিজ…’

এবার যেন সত্যিই তার মনে হয় একটা হাতের ছোয়া লাগে মেলে রাখা বুকের একটায়… খুব আলতো… কিন্তু ভিষন ভাবে যেন সত্যি… চোখ বন্ধ থাকলেও ঠোটের ওপরে একটা নরম হাসি ভেসে ওঠে পৃথার… ‘হুম্‌… ইয়েস… জাস্ট লাইক দ্যাট… আহ্‌… আই ক্যান ফীল ইয়ু… নীড দেম… নীড মাই টিট্‌স…’

অশরীরি হাত আলতো চাপ দেয় যেন তার খোলা বুকে… ভিষন… ভিষন ভালো লাগায় ভরে যায় পৃথার মনটা… বিড় বিড় করে আবার বলে ওঠে সে… ‘নাও… সাক ইট… সাক মাই নিপি… আই ওয়ান্ট ইয়ু টু ডু দ্যাট… সাক ইট… লিক ইট উইথ ইয়োর টাং…’

পৃথার মনে হয় তার সুগঠিত বুকের একটা বোঁটা ভিজে ওঠে একটু… একটা অদ্ভুত উষ্ণ ভেজা ছোয়া লাগে নিজের বুকের বোঁটাটায়… ‘আহ্‌, আই লাভ ইয়ু হানি… লাভ ইয়ু…’ বলতে বলতে আরো গভীর ঘুমের মধ্যে ঢলে পড়ে সে… হারিয়ে যায় ঘুমের অতলে…
 

soukoli

Member
389
58
29
১৩।।

ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে পৃথার… খানিকক্ষন চুপ করে শুয়ে থাকে বিছানায়… মাথাটা এখনও বেশ ভার হয়ে রয়েছে… কালকে একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল ওয়াইনটা… চুপ করে শুয়ে ভাবতে থাকে… ‘নাঃ… উঠি… শুয়ে থাকলে হবে?’ ভাবলেও, আরো খানিকক্ষন শুয়েই থাকে বিছানায়… মাথা তুলে দেওয়ালের ঘড়িটা দিকে তাকায়… প্রায় সাড়ে দশটা… ইচ্ছা না করলেও প্রায় জোর করেই শরীরটাকে টেনে তুলে বসে… নামতে যায় বিছানার থেকে… ‘আরে? মশারী আবার কখন খাটালাম?’ অবাক হয় তার চারপাশে মশারী টাঙানো দেখে… মনে করতে পারে না কখন সে মশারী টাঙিয়েছে বলে… থ’ হয়ে খানিক বসে থাকে মশারীর দিকে তাকিয়ে… কিছুতেই মনে করতে পারে না সে কখন টাঙালো মশারীটা… তারপর কাঁধ শ্রাগ করে… ‘নাঃ… সত্যিই বড্ড নেশা হয়ে গিয়েছিল কাল রাত্রে… নিজেই কখন মশারী টাঙিয়েছি খেয়াল করতে পারছি না…’ ভাবতে ভাবতে মশারীর কোনটা তুলে বেরিয়ে আসে… দেওয়ালের কোনায় বাঁধা দড়ির ফাঁস টান দিয়ে খুলে দেয়। হাঁটা লাগায় বাথরুমের দিকে।

একটা গোল গলার সবুজ রঙের ঢোলা ব্যাগী টি-শার্ট চাপিয়ে নেয় আদুর গায়ের ওপরে… টি-শার্টটা এতই বড় যে সেটা তার পুরো শরীরটাই ঢেকে দেয় কাঁধ থেকে প্রায় থাইয়ের মাঝামাঝি অবধি… মনে হয় হেমের থেকে যেন গড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে ফর্সা দুটো গোল পুরুষ্টু পা… টুথ ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ফিরে আসে ঘরের মধ্যে… দরজার ছিটকিনিটা খুলে গিয়ে দাঁড়ায় বেডরুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটায়… বাইরের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে ছেড়া ছেড়া মেঘের দল… মেঘের আড়ালে রোদের লুকোচুরি… বেশ সুন্দর লাগছে বাইরেটা… একটা ঠান্ডা ভেজা হাওয়া বইছে… জোলো হাওয়াটা খোলা বারান্দায় দাঁড়ানো পৃথার সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে মুখে যেন একটা নির্মল প্রলেপ বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে… দাঁত মাজতে মাজতে তাকিয়ে থাকে বারান্দার ঠিক সামনেই থাকা ঝাঁকড়া গাছটার পানে… ডালের ওপরে বসে দুটো শালিক কি রকম খুনসুটি করছে নিজেদের মধ্যে… তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে ও।

শালিকদুটো যেন ওকে দেখতে পেয়েই লজ্জায় ফুড়ুৎ করে উড়ে পালিয়ে গেল কোথাও… ঘাড় তুলে বারান্দার গ্রীলটা ধরে একটু ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করে পৃথা… শালিক দুটো কোথায় গেল, যদি দেখা যায়… পায় না দেখতে… বাড়ীর দেওয়ালটা তার দৃষ্টিটাকে আড়াল করে দিয়েছে… আর বার দুয়েক খোঁজার চেষ্টা করে সে, তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে বারান্দা থেকে সরে এসে ফের ফিরে যায় বাথরুমে… ফেনা ভরা মুখটা ধুতে।

গুন গুন করে গান করতে করতে গিয়ে ঢোকে কিচেনে… চায়ের জলটা গ্যাস জ্বেলে চাপিয়ে দেয়… কিচেনের স্ল্যাবের ওপরে পেড়ে রাখে চায়ের কাপ, ছাঁকনি, চায়ের কৌটটা… অপেক্ষা করে চায়ের জলটা ফুটে ওঠার। গুন গুন করে গান করা ছেড়ে হটাৎই গলা তুলে গাইতে শুরু করে সে…

বিকশিত প্রীতি কুসুম হে

পুলকিত চিত কাননে ।।

‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রানেশ হে,

আনন্দ বসন্ত সমাগমে ।।

জীবনলতা অবনতা তব চরণে ।

হরষীত উচ্ছসিত হে

কিরণমগন গগনে ।।

গানটা পৃথা বরাবরই বেশ ভালই গায়… আগে স্কুল কলেজে পড়ার সময় অনেক ফাংশানও করেছে… মায়ের মতই গানের গলা পেয়েছে … মায়ের কাছেই তালিম নেওয়া… বাইরে কোথাও অবস্য কারুর কাছে যেতে হয়নি… রোজ সকালে মায়ের সাথে তানপুরাটা নিয়ে বসতো দুজনে… ভোরটা শুরু হতো ওদের দুজনের গানে… বাবা খুব পছন্দ করতো ওদের সকালবেলায় রেওয়াজ করাটা… উৎসাহ দিত সবসময় ওকে। পাড়ার লোক অবাক হয়ে যেত ওর এই রকম ছেলে মার্কা স্বভাব চরিত্রের মাঝে এমন মিষ্টি গানের গলা শুনে… বলতো, ‘সত্যিই তিতির, তোর গান না শুনলে তোকে দেখে কেউ ভাবতেও পারতো না যে এত সুন্দর তোর গানের গলা’। আসলে একটা অদ্ভুত দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলে পৃথা… একাধারে সে যেমন কোমল নমনীয় আবার প্রয়োজনে অসম্ভব দৃঢ়চেতা, নিজের ওপরে অটল আত্মবিশ্বাসী… জীবনের প্রতিটা ছন্দের সাথে পা মিলিয়ে চলতে ভালোবাসে সে… একাধারে সে অত্যাধুনিক আবার অপর দিকে মূল্যবোধ হারায়নি কোন ভাবেই। তাই চট করে সবাই ওকে ঠিক মেলাতে পারেনা আর পাঁচটা সাধারণ মেয়েদের সাথে… আর সেটা দেখে মনে মনে বেশ উপভোগও করে সে লোকের এই রকম দ্বিধাগ্রস্থ মানসিকতাটার।

গানের মাঝেই খেয়াল করে চায়ের জল ফুটে উঠেছে… চা পাতা দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়… গ্যাসটা নিভিয়ে রান্নাঘরের তাকের দিকে চোখ ফেরায় সে… ‘ইশ্‌, কি অবস্থা কিচেনের তাকগুলো… সময়ও পাচ্ছি না যে একটু ঘর দোর গুলো ঝাঁড় পোঁচ করবো…’ ভাবতে থাকে পৃথা। ‘একটা লোক দেখতেই হবে… না হলে বাড়ির সব কাজ একার দ্বারা সম্ভব নয়… কিন্তু পাবো কোথায়? বিশ্বাসী লোক ছাড়া আমার চলবে না… কারণ যেই কাজ করুক না কেন তার হাতেই থাকবে সংসারটা… আমাকে তো বেরুতেই হবে… আর যদি বিশ্বাসী না হয়… তাহলে আমার অ্যাবসেন্সএ ঝেড়ে ফাঁক করে দিয়ে চলে যাবে… না বাবা… ও রিস্ক নেওয়া যাবে না… তার থেকে কাজের লোক না থাকে তাও ভি আচ্ছা… দেখি, একবার সুশান্তকে বলে… না, না, সুশান্তকে বলাটা ঠিক হবে না… ও অনেক করেছে আমার জন্য… এবার যদি ওকে কাজের লোক খুঁজে দিতে বলি… ওটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে… তাছাড়া ওই বা কি করে অত দূরের থেকে কাজের লোক এখানকার জন্য পাবে… আরে বাবা, রিয়েলিটি বলেও তো একটা কথা আছে, না কি?’ আপন মনেই ভেবে চলে পৃথা।

চায়ের মাগটা নিয়ে ড্রইংরুমের সোফার ওপরে এসে বসে পৃথা… সকাল বেলায় ও বরাবরই চা’টা খায় একটা বড় মাগ’এ… এরপর একটা সিগারেট… এটা না হলে নাকি ওর পটি ঠিক মত হয় না… আর সেটা না হলে তো পুরো দিনটাই মাটি… পা দুটোকে সেন্টার টেবিলটার ওপরে তুলে দিয়ে ক্রশ করে রাখে… টি-শার্টটা হড়কে উঠে আসে উপরে দিকে… সুঠাম পুরুষ্টু থাইয়ের প্রায় পুরোটাই উন্মুক্ত হয়ে মেলে থাকে… সে দিকে কোন হুস থাকে না পৃথার… আর থাকবেই বা কেন… একা ফ্ল্যাটে কেই বা দেখতে যাচ্ছে ওকে, যে ও কি ভাবে রয়েছে… ঢেকে না খুলে? অর্ধেক সময় তো কিছু না পড়েই ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে… এখন তাও তো গায়ে একটা কিছু চাপিয়েছে… এই না যথেষ্ট…

গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে পৃথা… ‘আচ্ছা… সত্যিই তো… আমার যত দূর মনে পড়ছে কাল আমি ঘুমিয়ে পড়ার সময় কই মশারী তো টাঙাইনি… তাহলে… না, না… নিশ্চয়ই টাঙিয়ে ছিলাম… হ্যা… সেটাই হবে… এখানে যা মশা… কাল এসি চালাই নি রাত্রে… তাই হয়তো এক সময় মশারী টাঙিয়েই শুয়ে পড়েছিলাম আবার… তা না হলে এতক্ষনে হয়তো আমাকে টেনেই নিয়ে চলে যেত মশা… জানলাটাও তো খোলা ছিল, না?… তবে?… আমিই টাঙিয়েছি… এখন মনে পড়ছে না… আর পড়বেটাই বা কি করে… কাল বেশ ভালই টেনে ছিলাম… কে জানে, বোতলে আর কিছু পড়ে আছে কি না… না থাকলে একটা এনে রাখতে হবে… অন্য দিন ফেরার পথে মেট্রো থেকে নেমেই যে দোকানটা আছে, সেখান থেকে কিনে আনি… কিন্তু এখানে কোথায় পাবো কে জানে.. আচ্ছা… একটা কাজ করলে হয় না… হেব্বি মজা হবে কিন্তু… অলোকবাবুকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয় যে এখানে আশে পাশে কোথায় এফ-এল শপ আছে… আমি মদের দোকান খুজছি শুনলে নিশ্চয়ই আক্কেল গুড়ুম হয়ে যাবে ভদ্রলোকের… মুখটা কি রকম হবে?’ ভাবতে ভাবতেই হো হো করে হেসে ওঠে পৃথা। তার প্রানখোলা হাসিটা যেন পুরো ফ্ল্যাটের আনাচে কানাচে একটা মুক্ত বাতাসের মত ঘুরে বেড়াতে থাকে… ঘরের প্রতিটা কোনায় ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হতে থাকে হাসির আওয়াজ।

চা খেতে খেতেই উঠে দাঁড়ায়… আধ-খাওয়া কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে দরজার দিকে এগিয়ে যায়… লকটা খুলে সামান্য ফাঁক করে দরজার পাল্লাটা… পুরো খোলা সম্ভব নয়… দরজার আড়ালে যে ভাবেই থাকুক না কেন সে, কিন্তু এই পোষাকে বাইরে বেরোয় কি করে, কেউ যদি সেই মুহুর্তে সিড়ি দিয়ে ওঠে বা নামে? তখন? বা, অলোকবাবুও তো বেরুতে পারে তার ফ্ল্যাট থেকে… ভাবতে ভাবতে উঁকি মারে দরজার ওপাশে… মাটিতে সেদিনকার কাগজটা পড়ে থাকতে দেখে একটু সাবধানে নীচু হয়… তারপর হাত বাড়িয়ে কাগজটাকে নিয়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফিরে এসে আবার পুরানো জায়গায় বসে, পা দুটোকে সেন্টার টেবিলের ওপরে তুলে দিয়ে। চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে খেতে খেতে চোখ বোলায় খবরের কাগজের হেডলাইনগুলো ওপরে… কয়এক’টা পাতা ওল্টাবার পর ‘নাঃ, সেই একই খবরের কচকচানি…’ মনে মনে বলে কাগজটাকে রেখে দেয় পৃথা, টেবিলের ওপরে। চায়ের কাপটা হাতে রেখেই দেহটাকে এলিয়ে দেয় সোফার ওপরে আড়াআড়ি ভাবে… চোখ দুটোকে বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে চায়ের কাপে ছোট ছোট সিপ করতে করতে।

শোবার ঘর থেকে মোবাইল বাজার আওয়াজ ভেসে আসে… রিংটোনের আওয়াজে চোখ মেলে তাকায়… ভুরু কুঁচকায়… ‘এখন আবার কে ফোন করছে?’ ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে উঠে দাঁড়ায়… শরীর বেঁকিয়ে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙে… মোবাইলটা বেজেই চলে একটানা… এবার একটু ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যায় বেডরুমের দিকে… ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটার ওপরে… স্বগক্তির মতই বলে ওঠে, ‘মোবাইলটা বাজছে, ধরতে পারোনি? আমাকে উঠে আসতে হল সেই… যত্ত ফাঁকিবাজ… একটাও যদি কিছু আমাকে হেল্প করে… খালি চুপ করে থাকলে হবে?’ বলতে বলতে টেবিলের ওপরে ছবিটার পাশ থেকে মোবাইলটা তুলে নেয় হাতে… স্ক্রিনের ওপরে নামটা দেখবার আগেই কেটে যায় ফোনটা… ‘দূর বাবা… ফোনটা আবার কেটে গেল…’ ব্যাজার মুখে মিসড কলটা দেখার জন্য বোতাম টেপে… দেখে একটা অচেনা নাম্বার… ভুরুটা আরো কুঁচকে যায়… একবার ভাবে কল ব্যাক করবে, পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত বদলায়… মোবাইলটাকে ফের রেখে দিয়ে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ফের বেজে ওঠে মোবাইল… তাড়াতাড়ি করে তুলে কানে লাগায়… ‘হ্যালো…’।

ও প্রান্ত থেকে ভরাট পুরুষ কন্ঠস্বর ভেসে আসে… ‘হ্যালো, ইস দিস মিস মুখার্জি…’।

‘ইয়েস… পৃথা হেয়ার… মে আই নো হু ইজ অন দ্য লাইন প্লিজ…’

‘ওহ… হাই, মিস মুখার্জি… গুড মর্নিং… দিস ইজ প্রনব… প্রনব কর্মকার…’

‘সরি, মিঃ কর্মকার… আই কান্ট রেকগনাইজ ইয়ু… কুড ইয়ু প্লিজ লেট মী নো হাউ কাম ইয়ু…’

পৃথার কথা শেষ করার আগেই ও প্রান্ত থেকে প্রনব নামে ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘ইয়া, ইয়া, মিস মুখার্জি… আকচুয়ালি আই লুক আফটার দ্য ফ্ল্যাট হুইচ ইয়ু হ্যাভ টেকেন অন রেন্ট… সো…’

এবার পৃথার মনে পড়ে যায়, আরে, ঠিকই তো, এই ভদ্রলোকের কাছ থেকেই তো ও ফ্ল্যাটটা নিয়েছে ভাড়া… তাই তাড়াতাড়ি সে বলে ওঠে, ‘ও হ্যা, হ্যা, মিস্টার কর্মকার, সরি, মনে পড়েছে, ইশ, অ্যাই অ্যাম রিয়ালি সরি… আসলে হটাৎ করে ফোনটা পেতে ঠিক রিকল করতে পারিনি… আই অ্যাম এক্সট্রীমলি সরি, মিঃ কর্মকার…’

‘না, না, এ ভাবে বলবেন না… আপনিই বা কি করে মনে রাখবেন… আসলে আমার অন্য নাম্বারটা হয়তো আপনার কাছে সেভ করা আছে, এটা আর একটা নাম্বার থেকে ফোন করছি, আমারই অন্যায় হয়েছে একটা আননোন নাম্বার থেকে আপনাকে ফোন করা…’

‘ঠিক আছে, মিঃ কর্মকার, আমি না হয় এই নাম্বারটাও সেভ করে রেখে দেব’খন… তা…’ একটু থামে পৃথা… তারপর বলে, ‘তা… কিছু যদি না মনে করেন… হটাৎ করে আমাকে ফোন করছেন কেন, জানতে পারি?’

‘আসলে আমার আজকে সন্ধ্যেবেলায় আপনার ওখানে আসার কথা ছিল, কিন্তু বিশেষ কারণে সন্ধ্যেবেলায় হবে না, তাই যদি আজ, একটু পরেই আসি, তাহলে কি আপনার খুব অসুবিধা হবে, সেটা জানার জন্যই আমার ফোন করা… অবস্য আপনার অসুবিধা থাকলে না হয় অন্য দিন আসব’খন…’

‘ওয়েট ওয়েট মিঃ কর্মকার… জাস্ট আ সেকেন্ড… আমি ঠিক বুঝলাম না… আপনার আজকে সন্ধ্যেবেলায় আসার ছিল, মানে…?’ ভুরু কোঁচকায় পৃথা কথার মাঝে।

‘স্ট্রেঞ্জ… আমি আপনার ওখানে যাবো, সেটা আপনি জানেন না? কিন্তু আমার সাথে তো বেশ কিছুদিন আগেই সুশান্তবাবুর কথা হয়ে গিয়েছে যে, যে ডকুমেন্টএ আপনার কয়’একটা সিগনেচার করা বাকি আছে সেটা আমি গিয়ে করিয়ে নিয়ে আসবো… সরি মিস মুখার্জি… আমি জানতাম না যে ইয়ু আর নট অ্যাওয়াড় অফ ইট…’ বলে থামেন ভদ্রলোক।

এবার পৃথার অপ্রস্তুত হবার পালা, ‘ওহ হো, সরি মিঃ কর্মকার… সম্ভবত সুশান্ত বোধহয় ভুলে গিয়ে থাকবে আমাকে জানাতে… আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি ফর…’

‘ওহ নো মিস মুখার্জি, হোয়াই ইয়ু আর ফিলিং ব্যাড আবাউট ইট… আই থিঙ্ক ইটস আ মিয়ার মিস কমুউনিকেশন… ওকে… নো প্রবলেম… আই শ্যাল মেক ইট অন সাম ওদার ডে… হোয়েন এভার ইয়ুল বি ফ্রী… হাউজ দ্যাট, মিস মুখার্জি?’

‘না, না, মিঃ কর্মকার, ইটস ওকে… ইয়ু ক্যান কাম ডাউন টুডে ইটসেলফ… আই অ্যাম ফ্রী… আপনি কখন আসতে চান বলুন… আই’ল বি দেয়ার…’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে পৃথা।

‘কিন্তু দেখুন মিস মুখার্জি… আমি চাইনা এ ভাবে এসে আপনাকে অপ্রস্তুতে ফেলতে… আসলে ডকুমেন্টটাতে আপনার সই না হলে রেন্ট এগ্রিমেন্টটা কমপ্লিট হচ্ছে না, তাই আসতে চাইছিলাম, বাট ইফ ইয়ু ডোন্ট লাইক মি টু কাম টু ইয়োর প্লেস… দেন আই ক্যান কাম ডাউন টু ইয়োর অফিস ওলসো… ইফ ইয়ু সে সো…’

‘না, না, মিঃ কর্মকার… একি বলছেন… আপনি আমার ল্যান্ডলর্ড… আপনি আসতে চাইছেন, সেখানে আমি আপনাকে বারণ করি কোন ধৃষ্টতায়… প্লিজ, মিঃ কর্মকার, সত্যি বলছি, আমি জানতাম না আপনার আসার কথা, তা না হলে ওই ভাবে আপনাকে প্রশ্ন করতাম না… আপনি আসুন না, আই অ্যাম টোটালি ফ্রী টুডে… আমার কোথাও বেরুবার নেই… আমিও চাই ডকুমেন্টেশন যদি কিছু বাকি থেকে থাকে সেটা কমপ্লিট করে নিতে… অ্যাজ আই ডোন্ট নো হোয়েদার ইয়ু নো অর নট, বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইয়ুর প্লেস… সো…’

‘আরে দাড়ান দাড়ান মিস মুখার্জি… দ্য ফ্যাক্ট ইজ, আই অ্যাম নট ইয়োর ল্যান্ডলর্ড… আমি জাস্ট অর্নবের হয়ে ওর প্রপার্টিগুলোর দেখভাল করি, ব্যস, নাথিং এলস্‌… তাই, প্লিজ ডোন্ট কল মি ল্যান্ডলর্ড… ইটস টোটালি রং…’

ভুরু কোঁচকায় পৃথা, ‘ঠিক বুঝলাম না মিঃ কর্মকার… ইয়ু আর নট মাই ল্যান্ডলর্ড… মিন্স্‌? অর্নবের প্রপার্টি… মানে? ইয়ু ডোন্ট ওন দিস প্লেস?’

‘আপনি ঠিকই শুনেছেন মিস মুখার্জি… আপনি যে ফ্ল্যাটে রয়েছেন সেটা যদিও আমি আপনাকে ভাড়া দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু ওটার মালিক আমি নই, ওটার মালিক অর্নব, অর্নব বাসু… আমি ওর হয়ে একটু দেখাশোনা করি ওর সমস্ত প্রপার্টিগুলো, ব্যস, এই আর কি… বাই দ্য ওয়ে… আপনি যখন বলছেন যে আজ এলে আপনার অসুবিধা নেই, তখন এক কাজ করি বরং, আমি আর একটু পর না হয় আপনার ওখানে চলেই আসি… সাক্ষাতেই সমস্ত কথা হবে’খন? কি বলেন মিস মুখার্জি? কোন অসুবিধা নেই তো?’

একটু আনমনা হয়ে পড়ে পৃথা, ঘাড় ঘুরিয়ে বেড সাইডের টেবিলের ওপরে থাকা ছবিটার লোকটিকে একবার দেখে নেয়, ‘অ্যা? হ্যা… ন্‌…না না, ঠিক আছে মিঃ কর্মকার… সেই ভালো… আপনি চলেই আসুন বরং… আমারও কিছু ব্যাপারে একটু ক্লারিফিকেশনএর প্রয়োজন আছে, সেটা আপনার কাছেই মনে হচ্ছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে… বেশ, আপনি চলেই আসুন বরঞ্চ, আই’ল বি ওয়েটিং ফর ইয়ু…’

‘ওকে দেন, মিস মুখার্জি… থ্যাঙ্কস… আই’ল বি অ্যাট ইয়োর প্লেস উইদিন অ্যান আওয়ার… টিল দেন…’

‘উ… হু… ওকে… ঠিক আছে… রাখছি।’ ছবির মধ্যের লোকটির চোখে চোখ রেখে কলটা কেটে দেয় আনমনে। কথায় কথায় অনেক জিজ্ঞাস্য তার মাথার মধ্যে ভিড় করে আসছে। আজ মনে হচ্ছে অনেক কিছুর উত্তর সে পেয়ে যাবে… হ্যা… পেতেই হবে তাকে… এই সমস্ত উত্তরের থেকে তার অনেক কিছু নির্ভর করছে, যেটা তার থেকে ভালো আর কে জানে?
 

soukoli

Member
389
58
29
১৪।।

দরজায় বেলের আওয়াজে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় পৃথা। প্রনববাবুর আসার কথা শোনার পরই তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছিল সে।

‘ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই হ্যাংওভারটা কাটছিলই না প্রায় বলতে গেলে… অবস্য সেটা আর হবে নাই বা কেন? প্রায় ওয়াইনের পুরো বোতলটাই তো এক রাতের মধ্যে সাবাড় করে দিয়েছিলাম… তার ফল তো একটু হলেও ভুগতে হবে বৈকি…’ মনে মনে ভাবতে থাকে পৃথা, আলমারী খুলে একটা হাল্কা গোলাপী রঙের কুর্তি আর ঢোলা সালোয়ার বের করে পড়ে নিতে নিতে… মনের মধ্যে এক গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে রেডি হয়ে থাকার জন্য। সদ্য স্নান করা ভিজে ঝাঁকড়া চুলগুলো একটা ক্লিপ দিয়ে মাথার ওপরে আটকে নেয় সে। ইচ্ছা না থাকলেও একটা ওড়না নিয়ে গায়ের ওপরে ফেলে রাখে, ভালো করেই জানে ওড়না ছাড়া কুর্তির ওপর দিয়ে ব্রা পড়া থাকলেও, বুকের বোঁটাগুলো কি রকম ফুটে উঠে থাকতে পারে তার, অপরিচিত আগুন্তুকের সামনে তাই সেই ভাবে থাকাটা যে দৃষ্টিকটু, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও বাঁধে না কি সেটা? যতই নিজেকে দুঃসাহসিক প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করুক সে, আদতে তো তার ভেতরে সেই চিরন্তন বাঙালী মেয়ের নমনীয় লাজলজ্জা, ভালো, মন্দ, শিক্ষা, আত্মমর্যাদা… সমস্তটাই বিরাজমান।

বেল বাজতেই দ্রুত পায়ে বেডরুমের মধ্যে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে, একবার ভালো করে নিজেকে দেখে নিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, এগিয়ে যায় দরজার দিকে। আই হোলের মধ্যে চোখ রাখে পৃথা… নজরে আসে দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে। লম্বা, স্বাস্থবান… গোল মুখ, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোখে রোদচশমা। পরনে ধোপদূরস্ত সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী। হাতের মধ্যে রোল করা একটা কাগজ। ভদ্রলোক বলেই মনে হয় পৃথার… ঠিক তথাকথিত বাড়িওলা মার্কা দেখতে নয়। নব ঘুরিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায় পৃথা।

দরজার খোলার আওয়াজে সচকিত হয়ে চোখ থেকে রোদচশমাটা নামিয়ে সামনের পানেই তাকিয়ে ছিলেন ভদ্রলোক সম্ভবত, তাই দরজা খুলতেই পৃথার সাথে চোখাচুখি হয় তাঁর… মৃদু হেসে দু-হাত তুলে নমস্কার করে বলে ওঠেন, ‘নমস্কার, আমি… আমিই প্রনব কর্মকার… আমার সাথে আপনার…’

ওনার কথা শেষ হবার আগেই পৃথা প্রতিনমস্কার জানিয়ে বলে ওঠে, ‘ও, হ্যা, হ্যা… নমস্কার… বুঝতে পেরেছি… আসুন, আসুন… ভিতরে আসুন…’ বলে সরে দাঁড়ায় দরজার থেকে… ভদ্রলোক পৃথার গা বাঁচিয়ে ঘরের মধ্যে পা রাখেন।

পৃথা দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে পাশের ফ্ল্যাটের দরজাটা ততক্ষনে ফাঁক হয়ে গিয়েছে… ওপাশে অলোকবাবুর কৌতুহলী মুখ। পৃথার সাথে চোখচুখি হতে গাল চোঁয়ানো হাসি ঝরে পড়ে আলোকবাবুর, ‘কেউ এলো বুঝি?’

‘হ্যাঅ্যাঅ্যা…’ অলোকবাবুর কথা নকল করে সেই ভাবেই টেনে উত্তর দেয় পৃথা এক গাল হেসে… তারপর বলে, ‘এবার বন্ধ করি দরজাটা? আপনিও আপনার দরজাটা বন্ধ করে দিন, কেমন?’

‘ওহ… হ্যা, হ্যা… নিশ্চয়, নিশ্চয়…’ তাড়াতাড়ি বলে নিজের দরজাটা বন্ধ করে দেন অলোকবাবু, পৃথাও আর দেরি না করে দরজা বন্ধ করে ফিরে দাঁড়ায়। ভদ্রলোককে তখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শশব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে, ‘আরে, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন, বসুন বসুন…’ বলে সোফার দিকে হাত তুলে দেখায় সে। ভদ্রলোক দরজার কাছটায় নিজের পায়ের কোলাপুরী চটিটা খুলে রাখেন, দেখেই বোঝা যায় যথেষ্ট দামী চটিটা। ভদ্রলোক ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে বসে সোফায়, ঘাড় তুলে মুখ ফিরিয়ে দেখতে থাকে ঘরটাকে ভালো করে।

‘অনেক দিন পর এলাম, জানেন… কত যে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই ফ্ল্যাটে…’ এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

ফ্রিজ থেকে জলের বোতল বের করে একটা গ্লাসে ঢেলে নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে ভদ্রলোকের উল্টো দিকের সোফায় বসতে বসতে পৃথা বলে, ‘ও, তাই… আগে খুব আসতেন বুঝি?’

হাতে ধরা কাগজের রোলটাকে নিজের পাশে, সোফার ওপরে রেখে টেবিলের ওপর থেকে জলের গ্লাসটা তুলে নিয়ে খানিকটা জল ঢকঢক করে খেয়ে নেন, তারপর গ্লাসটাকে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে পৃথার দিকে সোজাসুজি তাকান ভদ্রলোক, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেও গরমটা কমছে না একটুও, থ্যাঙ্কস, জলটার জন্য।’ তারপর যেন পৃথার কথার প্রশঙ্গ টেনে বলে, ‘হ্যা, ঠিক বুঝেছেন, অনেকবার এসেছি এই ফ্ল্যাটে… কতবার তার কোন হিসাব নেই… দিনের পর দিন, একটা সময় তো এইটাই প্রায় বলতে গেলে আমাদের ঘর বাড়ি ছিল… কখন আছি আর কখন নেই তার কোন ঠিক ছিল না… থাকলেই হল… এই রকমই ছিল ব্যাপারটা।’

ভদ্রলোকের কথার ফাঁকে ভালো করে আপদমস্তক দেখে নিচ্ছিল পৃথা। বেশ ফর্সা, আর ভালোই স্বাস্থবান, বরং বলা চলে বেশ হৃষ্টপুষ্ট আরকি, কিন্তু হাইটটা ভালো হবার ফলে খারাপ লাগে না, নয়তো একটু বেঁটে হলেই গোলগাল ফুটবলের মত লাগত। সেটা কেমন লাগতো ভাবতেই নিজের অসাবধানেই একটা হাসির ঝিলিক খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের কোন। পরক্ষনেই ত্রস্ত হয়ে ওঠে সে, আশ্বস্ত হয়, ভদ্রলোক নিজের খেয়ালে থাকায় তার ওই মিচকি হাসিটা না দেখাতে পাওয়ায়। উঠে দাঁড়ায় সে।

‘একটু চা খাবেন তো?’ প্রশ্ন করে পৃথা, কিচেনের দিকে এগুতে উদ্যত হয়।

হাত তুলে তাকে থামায় ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি, ‘না, না, মিস মুখার্জি, এই অবেলায় আর চা করতে হবে না আপনাকে… শুধু শুধু আমার জন্য আবার কেন চা করতে যাবেন আপনি?’

‘আরে তাতে কি হয়েছে, আপনি এসেছেন কষ্ট করে, আর একটু চা করে দিতে অসুবিধা হবে আমার? আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি। আপনি একটু বসুন…’ বলে দ্রুত পা চালিয়ে কিচেনের দিকে চলে যায় সে। আগেই চায়ের সরঞ্জাম রেডি করে রেখে দিয়েছিল, গ্যাস জ্বালিয়ে চায়ের জলটা চাপিয়ে দেয়। তাক থেকে বিস্কিটের কৌটটা বের করে প্লেটে চার পাঁচটা বিস্কিট সাজায়। একটু অপেক্ষা করে চায়ের জলটা ফোটার। ভদ্রলোকের কথাগুলো ভাবতে থাকে সে ওখানে দাঁড়িয়ে। ‘আগে অনেক এসেছিলেন ভদ্রলোক, সেটাই তো বললেন… অবস্য আসতেই পারেন, সেটাই তো স্বাভাবিক, নয়কি, উনি তো সকালেই বললেন ওই অর্নব না কে… আচ্ছা… তবে কি…’

ভাবানার মধ্যেই চায়ের জল ফুটে ওঠার শোঁ শোঁ শব্দে চটকা ভাঙে… চায়ের পাতা চামচে মেপে দিয়ে নব ঘুরিয়ে বার্নারটা নিভিয়ে দেয়। কাপ, আরো একটা ডিস, আর ছাঁকনিটা জোগাড় করে স্ল্যাবের ওপরে রাখে। ট্রে’টাকে মুছে নেয় কিচেনের কাপড়টা দিয়ে।

‘আপনি শুধু শুধু চা’য়ের জন্য ব্যস্ত হলেন, মিস মুখার্জি… না হলেও চলতো…’ কানে আসে ভদ্রলোকের কথা ড্রইংরুম থেকে বলে উঠতে।

‘না, না, কোন অসুবিধা হচ্ছে না মিঃ কর্মকার, ঠিক আছে, এই তো হয়ে গেছে, এক্ষুনি আসছি…’ উত্তর দেয় পৃথা… দুটো চায়ের কাপে ঢেলে নেয় চা’টাকে, তারপর ট্রে’য়ের ওপরে চায়ের কাপ, প্লেট আর সুগার পট সাজিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে সে। সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখা ফাঁকা জলের গ্লাসটাকে একটু পাশে সরিয়ে দিয়ে ট্রে’টাকে নামিয়ে বলে, ‘আমি কিন্তু র’টি করলাম, অসুবিধা হবে না তো আপনার?’

সোফার ওপরে সোজা হয়ে উঠে বসে বলে ওঠেন ভদ্রলোক, ‘আরে, না, না, নো প্রবলেম, এই এত বেলায় আপনি চা করেছেন, এটাই তো অনেক।’

‘না, এ আর এমন কি, এই টুকু তো চা’ই করা…’ কাপের মধ্যে পট থেকে এক চামচ চিনি নিয়ে দিয়ে বলে পৃথা, ‘এক চামচই তো?’

‘হ্যা, হ্যা, এক চামচই…’

হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা এগিয়ে দেয় পৃথা ভদ্রলোকের দিকে, উনিও সামনের দিকে ঝুঁকে প্লেটটা ধরে নেন। পৃথা বিস্কিটটা এগিয়ে দিয়ে নিজের কাপটা ট্রে থেকে তুলে নিয়ে নিজের সোফায় পিছিয়ে এলিয়ে বসে… ও চিনি ছাড়াই পছন্দ করে চা’টা খেতে… ছোট সিপ দেয় গরম চায়ের কাপে।

ভদ্রলোকও আবার নিজে পিছিয়ে বসে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে চামচটা নেড়ে গুলতে থাকে চিনি… তাঁর মুখ দেখে পৃথার মনে হয় উনি সম্ভবত কিছু ভাবছেন, তাই কিছু না বলে ডান পায়ের ওপরে বাঁ পা’টাকে ক্রস করে রেখে চুপচাপ চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে থাকে।

‘বাঃ, চা’টা বেশ ভালো তো?’ একটা সিপ দিয়ে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

পৃথার বুঝতে অসুবিধা হয় না এটা উনি আসলে চা’য়ের প্রশংসা করছেন না, কোন কথার বলার আছে, তাই এই ভাবেই শুরু করতে চাইছেন। কোন উত্তর দেয় না সে, পরের কথার জন্য অপেক্ষা করে চুপ করে।

‘আচ্ছা…’ গলাটাকে একটা খাকারি দিয়ে পরিষ্কার করে নেন ভদ্রলোক, ‘বলছিলাম, ইয়ে… মিস মুখার্জি… আপনি… মানে, আপনার এখানে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

‘অসুবিধা? ঠিক কি ধরনের অসুবিধা বলতে চাইছেন বলুন তো?’ পালটা ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘না, মানে, এই আর কি… আপনি তো শুনেছি এই শহরে নতুন, তাই ওই আর কি, বলছিলাম যে…’ কুন্ঠিত গলায় বলেন ভদ্রলোক।

‘এ বাবা, অসুবিধা কি বলছেন… সত্যি বলতে কি আমি তো ভাবতেই পারিনি যে কোলকাতায় এসে এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পেয়ে যাবো, আর সেটাও এত সহজে… বরং সে দিক দিয়ে বলতে গেলে আমি যথেষ্ট লাকি… এই রকম একটা সাজানো গোছানো ফ্ল্যাট, তাও আবার এত কম রেন্টএ, এ তো যে কোন কারুর কাছেই ভিষন লোভনীয়, তাই না?’ বলতে বলতে সোজা হয়ে উঠে বসে পৃথা।

‘হ্যা, সেটা সত্যি… কোলকাতায় এত কম রেন্টএ এমন একটা ফার্নিসড ফ্ল্যাট সচরাচর পাওয়া একটু দুষ্করই বটে… আসলে…’ বলতে বলতে থেমে যায় ভদ্রলোক।

‘আসলে?’ কথাটায় টান দেয় পৃথা।

‘না, মানে ওই আর কি… আসলে এই ফ্ল্যাটটা তো সহজে কেউ ভাড়া নিতে চাইছিল না, তাই কম রেন্টএই দিতে হল।’ কথাটা শেষ করেন ভদ্রলোক।

‘আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?’ এবার প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, হ্যা, বলুন না…’ ভদ্রলোক সশব্যস্ত হয়ে বলে ওঠেন।

‘না, মানে, আমি আগেও শুনেছি, এখন আপনিও বলছেন যে, এই ফ্ল্যাটটা নাকি সহজে কেউ ভাড়া নিতে চাইছিল না, কিন্তু এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট, আমি ঠিক মেলাতে পারছি না ব্যাপারটা…’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘হ্যা, কিছুটা আপনি ঠিকই শুনেছেন… তবে আপনাকে আমি বলতেই পারি যে, যেটা শুনেছেন সেটা নেহাৎই একটা বাজে রটনা, আসলে সেই রকম কিছু কোন ব্যাপারই নেই… লোকে শুধু শুধুই বিনা কারণে উল্টোপাল্টা কথা শুনে ভয়ে ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিতে চাইতো না… নয়তো বলুন না, আপনার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে এখানে… প্রায় এতো দিন তো থাকলেন… বলুন?’

‘না, তা হচ্ছে না ঠিকই… বরং আমি তো ভিষন ভাবে আপ্লুত, এই রকম একটা ফ্ল্যাট পেয়ে… কিন্তু তবুও… লোকে কি শুধু শুধুই ভয় পেতো?’ ফের জিজ্ঞাসা করে পৃথা। ‘আর তাছাড়া আমি শুনেছি আগেও বেশ কয়একটি ফ্যামিলি এসেছিল এই ফ্ল্যাটে, তারা নাকি দিন দুয়েকের বেশি থাকতেই পারেনি? সেটাই বা কেন?’

‘আসলে, তারা ঠিক আপনার মত এত ভালো ছিল না…’ কাঁচুমাচু মুখে উত্তর দেবার চেষ্টা করেন ভদ্রলোক।

‘আমার মত ভালো ছিল না? সেটা আবার কেমন কথা?’ অদ্ভুত লাগে প্রনববাবুর উত্তরে পৃথার।

‘ওহ… না, না, আমি ঠিক সেই ভাবে কথাটা বলতে চাই নি… প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদার ওয়াইজ… আসলে আমি বলতে চেয়েছি যে আপনি একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ… একা থাকেন… তাই আর কি…’ কি বলবেন ঠিক বোধহয় বুঝে উঠতে পারেন না ভদ্রলোক।

‘আচ্ছা, সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমাকে একটা কথা বলুন তো, আপনি তখন ফোনে বললেন যে আপনি ওই কি যেন নাম… অর্নব না কি… তার প্রপার্টিটা দেখাশোনা করেন… তাহলে কি এই ফ্ল্যাটটাও ওনারই?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

কথার প্রসঙ্গান্তর ঘটতে বোধহয় একটু আশ্বস্ত হন প্রণববাবু, তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে, ‘হ্যা, ঠিকই তো… এ সব কিছুই অর্নবের, আমার কিছুই নয়, আমি শুধু অর্নবের হয়ে দেখাশোনা করি মাত্র…।’

‘ও, তা আপনার এই মিঃ অর্নব না কে, তিনি কি করেন, তিনি কি এই শহরেই থাকেন নাকি অন্য কোন শহরে অথবা বিদেশে থাকেন?’ হাত থেকে খালি চায়ের কাপটা ট্রেতে রাখতে রাখতে প্রশ্ন রাখে পৃথা।

নিজের খালি কাপটাও এগিয়ে রেখে দেন ট্রে’র ওপরে, তারপর সোফায় হেলে বসে পকেটে হাত ঢোকান প্রণববাবু, পরক্ষনেই কি মনে করে পৃথার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘সরি, আমি একটা সিগারেট ধরাতে পারি… ইফ ইয়ু ডোন্ট মাইন্ড…’

‘হ্যা, হ্যা… নো প্রবলেম… প্লিজ… ক্যারি অন…’ বলে উঠে দাঁড়িয়ে সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে সব কাপগুলো আর আগের জলের গ্লাসটাকে ট্রে’টার মধ্যে রেখে নিয়ে এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে। সিঙ্কের মধ্যে এঁটো কাপ গুলো রেখে দিয়ে ফিরে আসে সে। আসার পথে বেডরুমে ঢুকে নিজের সিগারেটএর প্যাকেটটা আর লাইটারটা তুলে নেয়… প্রণববাবু সিগারেট ধরাচ্ছে দেখে তার নিজেরও সুবিধা হয়। সোফায় বসে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে লাইটার জ্বালায়… লাইটারটাকে সেন্টার টেবিলের ওপরে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে হেলান দেয় সোফায়… এক রাশ ধোয়া ছাড়ে নাক মুখ দিয়ে। প্রণববাবুও সিগারেটএর ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে লক্ষ্য করতে থাকেন পৃথাকে। চোখা চুখি হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নেন। মিচকি হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটে… বুঝতে অসুবিধা হয় না তাকে এই ভাবে ওনার সামনে এত সহজ ভাবে সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেখে একটু অপ্রস্তুতই হয়েছেন ভদ্রলোক… এখনও পুরুষেরা মেয়েদের সিগারেট ধরাতে দেখলে প্রথমে একটা ঝটকা খায়… তাই বুঝেও কিছু বলে না সে, সিগারেটএ আর একটা লম্বা টান মেরে বলে ওঠে, ‘কই, বললেন না তো… আপনার এই অর্নব না কে, সে কোথায় থাকেন? এখানেই বা থাকেন না কেন?’

‘বলছি… তবে আমার মনে হয় তার আগে আমাদের আগে কাজটা সেরে নেওয়া উচিত, আসলে যে জন্য আসা আমার, সেটা ফেলে রেখে কি লাভ, তাই না…’ বলে পাশ থেকে রোল করা কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে এগিয়ে দেন পৃথার দিকে।

পৃথা ওনার হাত থেকে কাগজের রোলটা নিয়ে খুলে ধরে চোখের সামনে…

‘ওই যে, দেখুন, তৃতীয় পাতার নীচে আপনার সইটা বাদ পড়ে গেছে, ওটা একটু করে দেবেন কাইন্ডলি…’ পৃথাকে কাগজটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

‘আমি একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারি এটাতে?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়ই… দেখে নিন না ভালো করে…’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন প্রণববাবু।

রেন্ট এগ্রিমেন্টই বটে… পৃথা মুখার্জি আর অর্নব বাসুর মধ্যে… সাধারণতঃ আগডুম বাগডুম যা যা এই ধরনের এগ্রিমেন্টএ থাকে, তাই রয়েছে… তবে একটা জায়গায় গিয়ে সে থমকায়… ভালো করে পড়ে মুখ তোলে ভুরু কুঁচকে… ‘আচ্ছা… এখানে তো কোন রেন্ট ডিউরেশন মেনশন করেন নি… মানে বলতে চাইছি সাধারণত আমি যা শুনেছি, এই ধরনের এগ্রিমেন্ট সামথিং এগারো মাস বা ওই ধরনের একটা টাইম পিরিয়েডের মধ্যে হয়… কিন্তু সেটা তো এখানে নেই… ব্যাপারটা কি? আমার তো মনে হচ্ছে আগে যে এগ্রিমেন্টটায় আমি সই করেছিলাম সেটাতে একটা ওই ধরনেরই টাইম পিরিয়েড মেনশেন্ড ছিল… কিন্তু এটাতে তো দেখছি সেই ক্লজটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন?’

‘হ্যা… মানে… না… মানে… হ্যা, ওই আরকি… আপনি ঠিকই ধরেছেন… আগে যখন এগ্রিমেন্ট করার কথা হয়েছিল তখন ওই টাইম পিরিয়ডটা মেনশন্ড করা হয়েছিল, কিন্তু পরে আর কি ওটা আর রাখি নি…’ আমতা আমতা করে উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘রাখেন নি, সেতো দেখতেই পাচ্ছি… কিন্তু হোয়াই? কেন?’ কাগজের ওপরে চোখ বোলাতে বোলাতে ফের প্রশ্ন করে পৃথা।

‘না, ভাবলাম, আপনি বাইরের থেকে এসেছেন, আর তাছাড়া আপনার যখন এই ফ্ল্যাটটা এত ভালো লেগে গিয়েছে, তখন থাক না ওই সব… আপনার যত দিন খুশি… যত মাস… যত বছর খুশি আপনি থাকুন না এখানে… যেদিন ভালো লাগবে না… সেদিন না হয় ছেড়ে চলে যাবেন… আমাদের কোন আপত্তি নেই তাতে…’ অ্যাস্ট্রের মধ্যে সিগারেটএর বাড্‌সটা চেপে গুঁজে দিতে দিতে কোন রকমে উত্তর দেন প্রণববাবু, পৃথার চোখের দিকে না তাকিয়ে।

‘আমাদের?’ ভুরু কুঁচকে মুখ তোলে পৃথা।

‘না, মানে, সরি, আমার… ওই আর কি…’ তাড়াতাড়ি নিজের ভুলটা সংশোধন করে ওঠেন ভদ্রলোক।

‘ভাড়া অ্যাপ্রিশিয়েষনএর ক্লজটাও তো দেখছি বাদ দিয়েছেন… কি মশাই… এই একই ভাড়ায় সারা জীবন থাকব নাকি আমি?’ এবার একটু হেসেই ফেলে পৃথা।

পৃথাকে হাসতে দেখে বোধহয় একটু মনে বল পান প্রণববাবু, তিনিও হেসে বলেন, ‘থাকুন না… আপনার তাতে কি… যদি মনে হয় বাড়াবেন, দেবেন’খন বাড়িয়ে… আপনার সুবিধা মত… আমি বলার কে?’ বলতে বলতে বুক পকেট থেকে একটা পেন বের করে খাপ খুলে, পেনটা বাড়িয়ে দেন পৃথার দিকে।

পৃথা হাতে ধরা সিগারেটএ একটা টান দিয়ে, সেটাকে অ্যাস্ট্রের ধারে রেখে হাত বাড়িয়ে প্রণববাবুর পেনটা নিয়ে নেয়… তারপর পাতা উল্টে তৃতীয় পাতায় গিয়ে সই করে, পৃথা মুখার্জি, সই এর নিচে তারিখে সেই দিনের উল্লেখ করতে ভোলে না… তারপর পেন আর কাগজের রোলটা ফিরিয়ে দেয় প্রণববাবুর হাতে, নিজে সোফায় আবার হেলান দিয়ে বসে আরাম করে, অ্যাস্ট্রের সাইড থেকে সিগারেটটা তুলে নিয়ে।

প্রণববাবু পৃথার হাত থেকে এগ্রিমেন্টটা নিয়ে ভালো করে রোল করতে থাকেন আবার, আর পৃথা উল্টো দিকের সোফায় হাতের আঙুলের ফাঁকে সিগারেটটা ধরে ওনাকে দেখতে থাকে চুপচাপ।

হটাৎ কেন জানা নেই, পৃথার গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে ওঠে… ঝট করে সে মাথা ঘোরায় ডাইনে, তারপর বাঁয়ে… তার মন যেন বলে ওঠে এই মুহুর্তে ঘরের মধ্যে শুধু সে আর প্রণববাবু নন, আরো একজন কোন তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত রয়েছে… কিন্তু সেটা শুধু সে অনুভব করতে পারছে মাত্র, দেখতে পাচ্ছে না। ভুরু কুঁচকে যায় তার। তবে কি…



১৫।।

হটাৎ করেই উঠে দাঁড়ায় পৃথা, দ্রুত পায়ে গিয়ে ঢোকে বেডরুমে, বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়ে একবার দেখে, তারপর সেটা হাতে নিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, সোফার ওপরে বসে ছবিটাকে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে এগিয়ে দেয় প্রণববাবুর দিকে, বলে, ‘আচ্ছা, এই ছবিটা কাদের? এরা কারা? আমি এখানে আসার পর ছবিটাকে বেডরুমে দেখতে পাই, কিন্তু আর কোথাও এদের ছবি পাইনি… ইনিই কি…?’

পৃথার প্রশ্নের ফাঁকেই ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়ে দেখতে শুরু করেছিলেন প্রণববাবু, তাই পৃথার কথা শেষ হবার আগেই বলে ওঠেন, ‘হু… এটাই অর্নব, আর ওর পাশে ওর স্ত্রী, লিন্ডা… এটা ওদের হানিমুনে গিয়ে তোলা ছবি… সম্ভবত অন্য কাউকে দিয়ে তুলিয়েছিল।’

কেন জানে না পৃথা, ওর বুকের মধ্যেটায় কেমন একটা ঝড় ওঠে… বুকের মধ্যে যেন হৃদপিন্ডটা অকারণেই কেমন ধক ধক করে বাজতে থাকে… গলার মধ্যেটায় কি কারনে যে শুকিয়ে ওঠে, বোঝে না সে… গলাটা একবার খেকারি দিয়ে ঝেড়ে নিয়ে বলে, ‘ও’… তারপর একটু চুপ থেকে ফের বলে ওঠে, ‘তা, এখন এনারা কোথায়?’

খানিক স্থির দৃষ্টিতে পৃথার পানে তাকিয়ে থাকেন প্রণববাবু, তারপর মাথা নেড়ে ধীর কন্ঠে বলেন, ‘সেটা এই ভাবে বলা সম্ভব নয়… সেটা বলার জন্য সময়ের প্রয়োজন… অনেকটা পিছিয়ে যেতে হবে আপনার এই উত্তরটা দেবার জন্য।’

প্রণববাবুর কথায় একটু বিস্মিত হয় পৃথা, ‘ঠিক বুঝলাম না… এনারা কোথায়, সেটা বলতে এতটা অসুবিধার কি রয়েছে এর মধ্যে?’

‘না, ঠিক অসুবিধা নয়, কিন্তু সেটা এক কথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়… এই আর কি।’

‘আপনার যদি বলতে কোন দ্বিধা থাকে, তাহলে আপনাকে জোর করবো না, থাক তবে… আমারও যে খুব জানার প্রয়োজন তা নয়, জাস্ট কিউরিওসিটি বলতে পারেন… ঠিক আছে, অসুবিধা থাকলে বলতে হবে না… অবস্য আমার জিজ্ঞাসা করাটাই সম্ভবত একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছে… আসলে অনেক দিন ধরেই আপনার এই অর্নববাবুর ছবিটা আমার বেডরুমে রয়েছে তো, প্রায় সবসময়ই চোখে পড়ে, তাই আর কি জিজ্ঞাসা করছিলাম, ঠিক আছে, নো প্রবলেম, আপনাকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চাইনা আমি…’ বলে সোফায় হেলান দিয়ে ফিরে বসে পৃথা। মনে মনে বেশ নিরাশই হয়, কিন্তু মুখে সেই ভাবের প্রকাশ করে না।

আরো কিছুক্ষন চুপ করে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আসতে আসতে সেটা নামিয়ে রাখে সেন্টার টেবিলটার ওপরে প্রণববাবু, ছবিটার সামনেটা ঘুরিয়ে দেয় পৃথার দিকে… পৃথারও চোখ গিয়ে পড়ে ছবির মধ্যের ছেলেটি, মানে অর্নবের ওপরে। তার মনে হয় যেন ছবির মধ্যে থেকেই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অর্নব, তাকেই যেন দেখছে… ঠোঁটের কোনে কি স্মিত একটা হাসি? না, না, ওটা নিশ্চয়ই ওরই মনের ভুল। ছবির দুজনকেই আরো ভালো করে একবার দেখে নেয় পৃথা, তারপর চোখ তুলে তাকায় প্রণববাবুর দিকে।

ততক্ষনে প্রণববাবু পকেট থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা বার করে নিয়েছেন হাতে, পৃথার সাথে চোখাচুখি হতে প্যাকেটটা খুলে এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি দেখলাম আপনিও গোল্ড ফ্লেকই খান, তবে আপনারটা লাইট আর এটা রেগুলার কিংস, নেবেন নাকি?’

না বলে না পৃথা, সামনে ঝুঁকে এসে হাত বাড়িয়ে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট টেনে বের করে নেয়… তারপর ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে লাইটার জ্বালায়… তারপর ফের পিছিয়ে হেলান দিয়ে বসে সোফায়, পায়ের ওপরে পা’টাকে ক্রস করে তুলে রেখে… হাল্কা ধোঁয়া ছাড়ে মুখ থেকে।

প্রণববাবুও নিজের ধরানো সিগারেটএ একটা টান দিয়ে ভালো করে বসেন সোফাতে, তারপর বলতে শুরু করেন, ‘অর্নবের কথা বলতে গেলে আমাকে একটু পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু বছর। অর্নবের সাথে আমার বন্ধুত্ব এক বা দুই দিনের নয়, সেই ছোট বেলা থেকে। আমরা একই সাথে বড় হয়েছি। আমরা দুজনেই কিন্তু কেউই কোলকাতার ছেলে নই, আমাদের বাড়ি রায়পুর, ছত্তিসগড়ে, অবস্য এখন সেটা ছত্তিসগড়, আগে ছিল না। আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হলেও, অর্নবের বাবা কিন্তু যথেষ্ট বিত্তবান। রায়পুরে ওদের বিশাল বাড়ি রয়েছে। ওর বাবা একটা বিরাট ইস্পাত কারখানার মালিক, তাই ও কোনদিনই অভাব কি জিনিস, জানতো না। কিন্তু বড় লোকের ছেলে বলে যে বখে যাওয়া, তা কিন্তু নয়। বরং বলবো ও একেবারেই ওর বাবার স্বভাবের বিপরীত। হয়তো মায়ের মতই হয়ে থাকবে। খুব ছোটবেলায় মাকে হারায়। বাবা বিয়ে করেন আবার। অর্নবের সৎমা কিন্তু ওকে নিজের করেই টেনে নিয়েছিলেন, মায়ের অভাব কোনদিন বুঝতে দেন নি। অথচ বাবার কাছ থেকে ও সেই অর্থে ভালোবাসা বা স্নেহ পায় নি বললেই হবে। অর্নবের বাবা ছিলেন বরাবরই একটু অন্য স্বভাবের, ব্যবসা, অর্থ, প্রতিপত্তি… এই সবই বেশি ভালোবাসতেন কাকাবাবু, মানে অর্নবের বাবা। আমরা ওনাকে কাকাবাবুই বলতাম। ভিষন রাশভারী ছিলেন ভদ্রলোক। তাঁর কথাই শেষ কথা ছিল সর্বদাই। নিজের ব্যবসা নিয়েই থাকতেন সবসময়, সংসারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ওই টাকা দিয়েই খালাস হয়ে যেত।

আমরা বড়লোক না হলেও আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে সেই সময়ের শহরের সবচেয়ে ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। অর্নবের সাথে আমার আলাপ স্কুলে, একই ক্লাসে পড়তাম আমরা। খুব চৌখস ছেলে ছিল অর্নব… কি লেখাপড়ায়, আর কি খেলাধুলায়। কোনদিন সেকেন্ড হয় নি কোন পরীক্ষাতেই। মনে আছে, বোর্ড এক্স্যামেও ফার্স্ট হয়েছিল ও, ছবি বেরিয়েছিল কাগজে। কিন্তু তাতে ওর থেকে যেন আমরা মানে ওর বন্ধবন্ধবেরা বেশি গর্ব অনুভব করেছিলাম সেই ঘটনায়। ওকে নিয়ে অনেকদিন ধরে আমরা সবাই মিলে প্রায় উৎসবে মেতে উঠেছিলাম। খেলাধূলাতেও ও ছিল আমাদের ক্যাপ্টেন। কত ইন্টারস্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে যে জিতিয়েছে আমাদের স্কুলকে তার ইয়ত্তা নেই। তাই ও শুধু মাত্র আমাদের বন্ধুদের মধ্যেই নয়, ও ছিল আমাদের স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও অতি প্রিয়।

ধীরে ধীরে ক্লাস টুলেভ পাশ রলাম। যথারীতি খুব ভালো রেসাল্ট করল এবারের পরীক্ষাতেও। মনে আছে, স্কুলে থাকতে মেয়েদের মধ্যেও ও ছিল হিরো। ওর কাছাকাছি আসার জন্য মেয়েদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগীতা চলতো। আমরা দেখতাম আর মজা করতাম এই সব নিয়ে খুব। আসলে ওর চেহারাটা ভিষন সুন্দর ছিল, যত বয়স বেড়েছে, ততই যেন রাজপুত্রের মত দেখতে হয়ে উঠেছিল। যেমন লম্বা, তেমনি গায়েগতরে। ওই বয়সেই হাইট ছিল প্রায় ছয়ের ওপরে, সেই সাথে একেবারে পেটানো বেয়াম করা চেহারা। টকটক করছে গায়ের রং, তেমনি সুন্দর দেখতে, চোখ নাক মুখ কাটা কাটা… সত্যিই যেন রাজপুত্র। ওকে দেখলে মনে হত যেন পূর্ন যুবক। অথচ মনের মধ্যে কোন অহঙ্কার ছিল না কোন কিছু নিয়েই… এত যে বড়লোকের ঘরের ছেলে, কে বলবে দেখলে, আমাদের বাড়িই পড়ে থাকত নির্দিধায়… কতদিন হয়েছে দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পথে, চলে এসেছে আমাদের বাড়ি, মায়ের কাছ থেকে অক্লেশে ভাত চেয়ে খেয়ে গিয়েছে। আমারই এক এক সময় খারাপ লাগতো আমাদের বাড়ির সাধারণ খাবার ওকে খেতে দিচ্ছি ভেবে, কিন্তু ওর মধ্যে তা নিয়ে কোন হোলদোল ছিল না। ওই রকম সাধারণ খাবার, তাই একেবারে চেটেপুটে খেয়ে উঠে যেত। উল্টে মায়ের কাছে আমাকেই বরং মাঝে মধ্যে কথা শুনতে হতো যদি কোনদিন খাবার নিয়ে অশান্তি করেছি তো, অর্নবের দৃষ্টান্ত টেনে মা বলতো, ‘ওকে দেখে কিছু তো শিখতে পারিস…’। সত্যিই, ওকে দেখে অনেক কিছুই শেখার ছিল আমাদের। সেই সাথে ওর নির্ভিক মানসিকতা। ভাবতে পারবেন না, কি অক্লেশে ঝাপিয়ে পড়তে পারতো যদি কেউ কখনও কোন বিপদে পড়েছে শুনেছে। একবার আমাদের এক বন্ধু ফিরছিল কোচিং করে। বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। তখন বোধহয় ক্লাস টুয়েল্ভে উঠেছি… হ্যা, তাই হবে। তা, সেই বন্ধুটি তখন সদ্য প্রেমে পড়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ওদের সেই প্রেম পর্ব। আমরা, মানে বন্ধুরা ওদের এই ব্যাপারটা সবাই প্রায় জানতাম। বেশ উৎসাহও দিতাম ওকে এই নিয়ে। বুঝতেই পারছেন, তখন সদ্য কৈশোরে পা রেখেছি, তাই কাছের কেউ প্রেম করছে, সেটা জানার পর আমাদের অ্যাড্রেনিলের পরিমানও যেন বেড়ে থাকতো। ও মেয়েটির সাথে দেখা করে ফিরলেই আমারা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তুলতাম, জানার জন্য, কি বলল, কি করল, এই সব আর কি।’

বলতে বলতে প্রণববাবু থামেন একটু। পৃথার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেন, ‘বোর করছি না তো? আসলে কি বলুন তো, এই সব কথাগুলো জমে ছিল বুকের মধ্যে। হটাৎ করে আপনার প্রশ্নে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।’

পৃথাও প্রত্যুত্তরে হাসে। ‘না, না… বোর হবো কেন, শুনতে ভালোই লাগছে। আমিই তো জিজ্ঞাসাটা করেছিলাম। বলুন আপনি…’

‘একটু জল হবে?’ পৃথাকে অনুরোধ করেন ভদ্রলোক।

‘হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়… দাড়ান, আনছি এক্ষুনি…’ বলে উঠে দাড়ায় পৃথা। ‘ঠান্ডা দিই?’

কিচেন থেকে একটা গ্লাস এনে ফ্রিজ খুলে জল বের করে ঢেলে বোতলটাকে ফিরিয়ে ঢুকিয়ে রাখে আবার। ফিরে এসে প্রণববাবুর হাতে গ্লাসটা এগিয়ে দেয় পৃথা।

‘থ্যাঙ্কস্‌, আসলে কথায় কথায় তেষ্টা পেয়ে গিয়েছিল…’ হাসি মুখে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

উত্তরে শুধু স্মিত হাসে পৃথা, মুখ তুলে তাকায় দেওয়াল ঘড়িটার পানে, প্রায় দেড়’টা বাজে, বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। দুপুর বেলায় তার বাড়িতে অতিথি এসেছে, সেখানে না খাইয়ে ছাড়ে কি করে সে? মনে মনে ভাবে পৃথা। কিন্তু এখন রান্না করা সম্ভব নয়, ভদ্রলোককে এই ভাবে বসিয়ে রেখে, তার চেয়ে বরং কিছু অর্ডার করে দিলেই হয়। নিজের সিদ্ধান্তে নিজেই খুশি হয় পৃথা। প্রণববাবুর দিকে ফিরে বলে সে, ‘মিঃ কর্মকার, বেলা তো অনেক হলো, তাই বলছিলাম যে আজকে কিন্তু আপনি আমার এখানেই লাঞ্চ করে যাবেন।’

শুনে শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন ভদ্রলোক, ‘এ বাবা, না, না, তা কি করে হয়? আমি তো শুধু মাত্র এগ্রিমেন্টাতে সই করাতেই এসেছিলাম। ছি ছি, দেখুন তো, কি অন্যায়, আমার জন্য আপনার বোধহয় অসুবিধা হয়ে গেল। সত্যিই তো, অনেক বেলা হয়ে গেছে। না, না। আজ বরং আমি উঠি। সই তো হয়েই গিয়েছে। আর একদিন না হয় আমি আসব’খন। তখন না হয় বাকি কথা হবে, কেমন?’ বলে উঠে দাঁড়াতে উদ্যত হন প্রণববাবু।

ওনাকে উঠতে দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে পৃথা, ‘না, না… উঠছেন কেন? আমি আমার জন্য বলিনি এ ভাবে। আর তাছাড়া এই দুপুর বেলায় আপনাকে না খাইয়ে ছাড়িই বা কি করে বলুন, যতই হোক, বাঙালী তো আমরা, নাকি? আমার মা শুনলে তো আমাকে এক হাত নিয়ে নেবে যদি আপনি এই ভাবে দুপুর বেলায় না খেয়ে চলে যান।’

ততক্ষনে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভদ্রলোক, ‘আপনি শুধু শুধু কুন্ঠিত হচ্ছেন মিস মুখার্জি, কোন অসুবিধা নেই এতে। আর তাছাড়া আজ দেখুন রবিবার, বাড়িতেও আমার ফ্যামিলি অপেক্ষা করছে আমার জন্য, সেখানে আমিই বা কি করে এখানে লাঞ্চ করে ফিরি বলুন। প্লিজ মিস মুখার্জি, অন্য আর একদিন না হয় খাওয়া যাবে’খন। আজকে বরং থাক।’

‘আমি বুঝতে পারছি যে আপনার ফ্যামিলি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, হয়তো ফিরে গিয়েই ওনাদের সাথে আপনি লাঞ্চ করবেন বলেই ঠিক করেছিলেন, কিন্তু এ ভাবে আপনি যদি না খেয়ে আমার বাড়ি থেকে চলে যান, তাহলে আমারও তো ভালো লাগবে না, বলুন। প্লিজ, একটু আমাকে টাইম দিন, আমি এক্ষুনি কিছু অর্ডার করে দিচ্ছি। বেশি সময় লাগবে না, বিশ্বাস করুন।’ বলে ওঠে পৃথা।

‘না, না, আপনি ভুল বুঝছেন আমায়। আসলে সত্যিই আমার এখন যাবার দরকার। আমি বললাম তো, আমি আর একদিন না হয় আসব’খন। আগে থাকেতেই না হয় সেদিন ঠিক করে আসবো। প্লিজ, আজকে আর এটা নিয়ে জোরাজুরি করবেন না। সত্যিই, অনেকটাই বেলা হয়ে গিয়েছে কথায় কথায়।’

পৃথা বুঝতে পারে, আজ যদি প্রণববাবু ফিরে যান, তার অনেক কথাই না জানা থেকে যাবে, যেটা সে কিছুতেই হতে দিতে পারে না। তাকে জানতেই হবে এই অর্নব সম্বন্ধে সমস্ত না জানা কথা। জানতেই হবে। এবারে প্রায় হাত জোড় করেই দাড়িয়ে পড়ে সে প্রণববাবুর সামনে, ‘প্লিজ মিঃ কর্মকার, প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড… আজ আমার জানার খুব প্রয়োজন এই অর্নববাবুর সম্বন্ধে… আই ওয়ান্ট টু নো এভরি ডিটেলস অ্যাবাউট হিম… তাই আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, এক্ষুনি যাবেন না আপনি, প্লিজ ফিনিশ ইয়োর স্টোরি… প্লিজ…’

এবার যেন একটু চুপ করে যান ভদ্রলোক। এক দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে থাকেন পৃথার পানে, তারপর ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু কেন মিস মুখার্জি, হোয়াই ডু ইয়ু ওয়ান্ট টু নো অ্যাবাউট অর্নব? এই যে একটু আগেই বলছিলেন যে ইয়ু আর নট ইন্টারেস্টেড টু নো এনিথিং… দেন?’

প্রণববাবুর প্রশ্নে একটু অপ্রস্তুত হয় পৃথা, মাথা নিচু করে বলে, ‘সেটা আপনাকে আমি ঠিক বোঝাতে পারবো না, বাট ইটস ট্রু, দ্যাট আই ওয়ান্ট টু নো হিম, প্লিজ মিঃ কর্মকার, আপনি বসুন, টেল মি অ্যাাবাউট অর্নব।’

খানিক চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রণববাবু, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, ‘বেশ, আপনি যখন অর্নবের ব্যাপারে এতটাই ইন্টারেস্টেড, দেন… ওকে… আমি বরং একটা আমার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিই… কি বলেন।’

ভদ্রলোকের কথায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে পৃথার মুখটা… তাড়াতাড়ি ঘাড় হেলিয়ে বলে ওঠে, ‘হ্যা, হ্যা মিঃ কর্মকার, সেই ভালো… আপনি বরং জানিয়ে দিন, আমিও দেখি কিছু অর্ডার করে দিই… আপনি চাইনিজ খান তো?’

হেসে ফেলেন ভদ্রলোক, ‘রবিবারের দুপুরের মাংস ভাত ছেড়ে চাইনিজ… বেশ… তাই হোক… হয়তো এটাই ছিল আজকে আমার কপালে…’ বলে হা হা করে হেসে ওঠেন।

পৃথাও প্রণববাবুর হাসিতে হেসে ফেলে।

4

১৬।।

ড্রইংরুমে ছবিটা হাতে নিয়ে চুপ করে সেটার দিকে তাকিয়ে বসেছিল পৃথা। প্রণববাবু বাথরুমে গিয়েছেন কিছুক্ষন আগে, তাই ওই সময়টায় ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়েছিল সে। ‘অর্নব, যাক, তোমার নামটা তাহলে এতদিনে জানতে পারলাম’ মনে মনে বলে পৃথা, ‘তুমি যে বিবাহিত, সেটা তো বুঝেইছি, ওটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ ছিল না আগেও… কিন্তু নামটা জানার খুব ইচ্ছা ছিল… শুধু নাম নয়… আমি আরো জানতে চাই তোমার সম্বন্ধে… আরো… সব কিছু… জানি এটা একেবারেই আমার ছেলেমানুষি… আমার এই কৌতুহল তুমি জানতে পারলে নিশ্চয়ই হাসবে… রাগ করবে কি? কেন? রাগ করার কি আছে? আমার তোমার ব্যাপারে জানার ইচ্ছা হতেই পারে… কি? পারে না?… লিন্ডা… মানে তোমার বউ রাগ করবে তাতে? দূর… সেই বা জানছে কি করে? তাই না?… সত্যিই অর্নব… কি অদ্ভুত না? হয়তো তুমি কতওও দূরে কোথায় নিজের বউয়ের কাছে বসে রয়েছে… শুধু বসেই বা রয়েছ বলি কি করে? হয়তো এই মুহুর্তে আদর খাচ্ছ বউয়ের কোলে মাথা রেখে… আর তোমারই ফ্ল্যাটে বসে তোমার কথা চিন্তা করছে একেবারে অপরিচিত একটা মেয়ে… তুমি জানতেও পারছ না… থাকনা… নাই বা জানলে আমার কথা… আমিই শুধু না হয় জেনে রাখি তোমায়… কি মনে হচ্ছে তোমার? ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়? সে তো আগেই স্বীকার করে নিয়েছি… যেদিন প্রথম এই ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখি তোমাকে, ছবিতে… সেদিনই যে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম… সেটা তুমি পাগলামী বলো আর যাই বলো… এটা শুধুই আমার… শুধু আমার অনুভূতি… তুমি জানতেও পারবে না… অস্বীকার করবো না… একটু যে লিন্ডাকে হিংসা হয় না তা নয়… একটু কেন… বেশ হিংসা হচ্ছে… ইশ… ও কি লাকি বলো তো… তোমাকে সব সময় কাছে পায়… আর আমি শুধু তোমায় ছবিটাতেই দেখি… কোন দিনও পাব না তোমায়… না?’ ভাবতে ভাবতে কেমন যেন সিরসির করে শরীরটা… আবার সেই অদ্ভুত অনুভূতি… তার মনে হয়, কেউ যেন তার পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে… তাকেই দেখে যাচ্ছে এক মনে… বারে বারে কেন যে এই ধরণের অনুভূতিটা তার হয় কে জানে… নিশ্চয়ই মনেরই ভূল।

গলার খ্যাকারিতে চটকা ভাঙে পৃথার… কখন প্রণববাবু বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন কে জানে… লজ্জা পেয়ে যায় ও… গালের ওপরে লালিমার রেশ লাগে… হাতের ছবিটাকে তাড়াতাড়ি করে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে দিয়ে প্রণববাবুর দিকে মুখ তুলে হাসে… সে হাসিতে যেন কোন বাচ্ছা মেয়ে লুকিয়ে কিছু করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার হাসি।

প্রত্যুত্তরে ভদ্রলোক মুচকি হেসে নিজের বসার জায়গায় ফিরে গিয়ে বসে পড়েন… ‘দেখছিলেন ছবিটা?’ প্রশ্ন করেন পৃথাকে।

‘হ্যা, মানে ওই আর কি…’ বলতে বলতে চোখ নামিয়ে নেয় পৃথা… লজ্জা করে এ ভাবে ধরা পড়ে যাওয়াতে।

হাতে লেগে থাকা জলটা রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন প্রণববাবু, ‘যেটা বলছিলাম তখন… তা সেই বন্ধুটি চুটিয়ে প্রেম করছে… আর আমরা মানে ওর সমস্ত বন্ধুরা ওকে উৎসাহ দিয়ে চলেছি… যত রকম ভাবে তাকে সাহায্য করা যায় সেটা করতে কারুর কোন বিরাম ছিল না… বেশ কাটছিল আমাদের… বাধ সাধল মেয়েটির দাদা… একদিন এসে বেধড়ক মেরে গেল ছেলেটিকে… সে বেচারা আমাদের কাছে এসে কাঁদো কাঁদো মুখে হাজির… প্রেমিকার দাদার হাতে মার খেয়ে ফিরেছে… আমরা তো শুনে খেঁপে উঠলাম… যতই হোক, এ যেন আমাদের সকলের একটা প্রেস্টিজ ফাইট… দল বেঁধে চললাম মেয়েটির দাদাকে শাসাতে… টগবগ করে ফুটছে তখন আমাদের রক্ত… কি সাহস… আমরা থাকতে কি না আমাদের বন্ধুর গায়ে হাত?’

‘খুব বন্ধু বৎসল ছিলেন আপনারা… না?’ হেসে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, তা বলতে পারেন… তখন বন্ধুই ধ্যান জ্ঞান… সব কিছু… বোঝেনই তো… কিই বা বয়স তখন…’ হাসতে হাসতে উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘তারপর?’ তাড়া দেয় পৃথা।

‘তারপর আমরা সবাই মিলে গিয়ে দেখা করলাম মেয়েটির দাদার সাথে… কিন্তু সামনে দেখে তো আমাদের সবার অবস্থা খারাপ… এ যে দেখি একেবারে বেয়ামবীর… এই চেহারা… যেমনি বুকের ছাতি… তেমনি হাতের গুলি… তখন কে গিয়ে কথা বলবে সেটাই ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না আমরা… প্রত্যেকেরই তখন উৎসাহে ভাঁটা পড়ে গিয়েছে… কেন এলাম সেটাই ভাবছি তখন… ঠিক সেই সময় অর্নব এগিয়ে গেলো লোকটির দিকে… কোমরে হাত রেখে লোকটির চোখে চোখ রেখে তর্ক করতে লাগল বন্ধুর হয়ে… এক কথা দু কথা বলতে বলতে শুরু হয়ে গেলো হাতাহাতি… অর্নবও কম যায় না… দুম করে দিল এক ঘুঁসি লোকটার নাকের ওপরে… গলগল করে রক্ত বেরুতে শুরু করে দিল… হটাৎ করে লোকটা একটা লাঠি নিয়ে চালিয়ে দিল… সেটা গিয়ে সোজা লাগল অর্নবের কপালে… আর একটু হলেই হয়তো ওর চোখটাতেই আঘাতটা লাগতো, কপাল গুনে সেটা হয় নি… কিন্তু বেশ ভালো মত কেটে গিয়েছিল… কিন্তু অর্নবকে কে থামায় তখন… সেই লাঠি নিয়েই বেধড়ক পেটাতে লাগল ওই রকম একটা বেয়াম করা লোককে… শেষে হার স্বীকার করতে বাধ্য করল… দুজনেরই তখন রক্তাক্ত অবস্থা… জামা কাপড় ছিড়ে রক্তারক্তি…’

‘সেই কাটা দাগটা বোধহয় এখনও রয়েছে কপালে…?’ খাটো গলায় প্রশ্ন করে পৃথা, ছবিটার দিকে তাকিয়ে।

‘হ্যা, ঠিক ধরেছেন… ভুরুর ওপরে ওই দাগটা থেকেই গেলো ওর…’ উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘খুব সেক্সি… দাগটা…’ গলাটাকে আরো খাদে নামিয়ে বলে ওঠে পৃথা।

‘অ্যা? কিছু বললেন?’ প্রশ্ন করে প্রণববাবু।

‘নাঃ… কিছু না… তারপর বলুন…’ মাথা নেড়ে বলে পৃথা।

‘পড়াশোনায় খুব ব্রিলিয়েন্ট ছাত্র ছিল অর্নব, জানেন… জয়েন্টএ ভালো র‍্যাঙ্ক করে আই আই টি কানপূরে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ চান্স পেয়ে গিয়েছিল। ওখানেও খুব ভালো রেসাল্ট করেছিল… প্লেসমেন্ট পেলো ডাও’তে… কানাডায়।’ বলতে থাকেন প্রণববাবু। ‘কানাডায় চাকরিতেও খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করে ফেলেছিল… প্রায় বছর পাঁচেকের মধ্যেই চলে গেল সানফ্রান্‌সিস্কোতে… একেবারে কম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাম চিফ্‌ ইন্টিগ্রেটিং অফিসার হয়ে… দু হাতে কামাতে থাকলো… সেই সাথে বিশাল সন্মান।’ বলে একটু থামলেন ভদ্রলোক। পৃথাও কিছু না বলে চুপ করে রইলো।

‘এত পয়সা, এত সন্মান… কিন্তু বদলালো না অর্নব একটুও… নিয়ম করে আমাদের সবার সাথে যোগাযোগ রেখে যেত ওখান থেকে… প্রত্যেকের সাথে। এর মধ্যে বাবা মারা গেলেন ওর… আর তার কিছু দিন পর মা’ও। ইন্ডিয়াতে ফিরে সমস্ত সম্পত্তি বেচে দেবে ঠিক করল। অনেক করে বোঝালাম ওকে… ও’র বক্তব্য, কি হবে এখানে এত কিছু রেখে? ফিরবে তো না আর এখানে… ওর ইচ্ছা ছিল বিদেশেই সেটেল্ড করে যাবার… কিন্তু তবুও শেষে দুম করে আমাকে ধরে বসল… বলল, প্রণব, তোকেই দেখতে হবে আমার সব কিছু। আমার তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা… আরে… আমি বোঝাতে গেলাম যাতে ও না বিক্রি করে, কিন্তু তাই বলে আমাকে ফাঁসাবে, সেটা তো ভাবি নি… কিন্তু ও বললো, দেখ, তুই যদি না আমার এই প্রপার্টি দেখভাল করিস, তাহলে আমি বেচে দিয়ে চলে যাবো… এবার তোর সিদ্ধান্ত… আমি তা’ও অনেকবার বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ভবি ভোলার নয়… শেষে আমাকে ওর সমস্ত প্রপার্টির এক্সিকিউটর করে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বানিয়ে দিয়ে ফিরে গেল বিদেশে।’

‘সেই থেকেই সামলাচ্ছেন আপনি?’ মৃদু কন্ঠে বলে পৃথা।

‘সেই রকমই বলতে পারেন।’ বলে ভদ্রলোক।

‘ওহ্‌, এই তাহলে আপনার বন্ধুর গল্প…’ বলে পৃথা… মনে মনে যেন একটু হতাশই হয় সে… হয়তো আরো কিছু আশা করেছিল সে।

টেবিলের ওপরে থাকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন প্রণববাবু, ‘সেটা হলে তো ভালোই হত মিস মুখার্জি…’

‘মানে? সেটা নয়? আরো…’ বলতে যায় পৃথা।

পৃথার প্রায় মুখের কথা থেকেই বলে ওঠেন প্রণববাবু, ‘হ্যা, আরো… এবারে ফিরে গিয়ে আরো বেশি করে কাজে ডুবে গেল অর্নব। শুধু কাজ, কাজ আর কাজ। ওকে দেখার মত কেউ নেই। এমনিতেই দেখতে রাজপুত্রের মত ছিল, এই কদিন ওখানকার জল হাওয়ায় যেন আরো রূপবান হয়ে উঠল… কোন এক পার্টিতে আলাপ হল ওর সাথে লিন্ডার, লিন্ডা হেল্মস্ট্যাগ, সুইডেনএর মেয়ে…’

লিন্ডার নামটা শুনে একটু নড়ে চড়ে বসে পৃথা… চোখটা তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে তার।

‘অপরূপ সুন্দরী…’ ফের বলতে থাকেন প্রণববাবু, ‘সেটা হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছেন ছবিতে দেখে… সামনে দেখলে সত্যিই চোখ ফেরানো মুস্কিল… ভগবান সম্ভবত অনেক সময় নিয়ে মেয়েটিকে গড়েছিলেন…’

একটু নড়ে বসে পৃথা… চোখ চলে যায় ছবির পানে… আড় চোখে একবার দেখে নেয় ছবির লিন্ডাকে… সত্যি… কথাটা অস্বীকার করা যায় না… কিন্তু… কিন্তু সেই বা কম কিসে? সেও তো সুন্দরী… সবাই তো তাই বলে? প্রণববাবুর কি তাই মনে হয় না? তার সামনে এই ভাবে অন্য একটা মেয়েকে সুন্দরী বলাটা ঠিক হজম করতে পারে না পৃথা… কিন্তু মুখটাকে যথা সম্ভব অভিব্যক্তিহীন করে রাখার চেষ্টা করে… বুঝতে দেয়না তার মনের মধ্যে গড়ে উঠতে থাকা মেয়েলী হিংসার রেশটুকু… আনমনে কপাল থেকে ঝুলে আসা চুলের গোছা নিয়ে পাকায় আঙুলের ফাঁকে…

‘অর্নবও তাই হয়তো প্রথম দেখাতেই চোখ ফেরাতে পারেনি… আর তাছাড়া সেও তো রূপবান… ওদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি… সময় লাগে নি একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হতে… তারপর থেকে প্রায় ওদের দেখা গিয়েছে সমস্ত জায়গায়… একে অপরের সাথে ঘুরে বেড়াতে… বেশ চলছিল ওদের প্রেমপর্ব… আমাকে অর্নব মাঝে মধ্যেই জানাতো ওদের কথা… ভালো লাগতো শুনে… ভাবতাম যাক, অর্নবটার একটা হিল্লে তো হলো। এরমধ্যে আমিও বিয়ে করলাম… ওকে খবর পাঠালাম আসার জন্য… কিন্তু ও আসতে পারলো না… অবস্য আসা যে ওর পক্ষে সম্ভব হবে না সেটা আমিও জানতাম… কারণ ও যা ব্যস্ত মানুষ, আর যা গুরু দ্বায়ীত্ব ওর ওপরে, সেখানে হটাৎ করে ইন্ডিয়ায় আসা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কিছু মনেও করিনি। আমার বিয়ের পরে পরেই ও জানালো যে ও’ও লিন্ডাকে বিয়ে করতে চলেছে… করেও ফেলল তার পরই… ওই যে ছবিটা… ওটা ও আমাকেই পাঠিয়েছিল অ্যারাকানসাস থেকে… ওদের হানিমুনে গিয়ে…’

সিগারেটএর প্যাকেটটা হাতে তুলে এগিয়ে ধরে প্রণববাবুর দিকে… ভদ্রলোক প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট টেনে নিয়ে বলেন, ‘থ্যাঙ্কস্‌’, বলে ধরিয়ে টান দেন সিগারেটএ। পৃথাও একটা সিগারেট বের করে জ্বালায় ঠোটের ফাঁকে রেখে… ধোঁয়া ছেড়ে বলে, ‘তারপর…’

‘বছর গড়িয়ে যায়… ভিষন সুখি দুটো মানুষ… একে অপরকে ছেড়ে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারে না… যেন মেড ফর ইচ আদার… সব চলছিল ঠিকঠাক… কিন্তু ভগবানের বোধহয় অন্য কিছু ভাবা ছিল… সহ্য হলো না ওদের এত প্রেম… হটাৎ করে ধরা পড়লো লিন্ডার শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ… হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা… সাধারণ ভাষায় যাকে বলে লিভার ক্যান্সার… যখন ধরা পড়লো… আর কিছু করার নেই… একেবারে লাস্ট স্টেজ… ধরা পড়ার পর আর মাস দুয়েক বেঁচে ছিল বোধহয় লিন্ডা… পাগলের মত চেষ্টা করেছিল অর্নব ওকে বাঁচাতে… কিন্তু পারলো না।’

শুনে স্তব্দ হয়ে যায় পৃথা… এটা সে কোন মতেই আশা করেনি… এই কিছুক্ষন আগেই মেয়েটিকে হিংসার চোখে দেখছিল ও… কিন্তু এটা শোনার জন্য কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিল না… জলে ভরে আসে তার চোখদুটি… ধরা গলায় বলে, ‘কি বলছেন মিঃ কর্মকার? লিন্ডা মারা গিয়েছে?’

‘হ্যা মিস মুখার্জি… অর্নবদের দাম্পত্য জীবনের মেয়াদ ঠিক এক বছরের ছিল…’ মৃধু কন্ঠে বলেন প্রণববাবু।

ছি ছি… কত কিই না ভাবছিল সে… মনে মনে নিজের প্রতিই বিরক্ত হয় এই ভাবে না জেনে অন্য কারুর সম্বন্ধে কিছু ভেবে নেওয়ার জন্য… লজ্জিত হয় নিজের এই অভব্যতায়… মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকে।

‘দুম করে চাকরীটা ছেড়ে দিল অর্নব তারপরই, জানেন… ছেড়ে দিয়ে সোজা চলে এলো ইন্ডিয়ায়… আমার সাথে যোগাযোগ করল… কি সান্তনা দেবো বলুন তো এই রকম একটা ঘটনার পর? অর্নব যেন একেবারে বদলে গেল… আগের সেই সদা চঞ্চল ছেলেটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেল… বেশ কিছুদিন বসে রইল নিজের বাড়িতে, নিজেকেই বন্দি করে… অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিল না… বুঝতে পারছিলাম, ও কিছুতেই মন থেকে এই ভাবে লিন্ডার মৃত্যুটা মেনে নিয়ে পারছে না… আর সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রায় বছর খানেক চুপচাপ বসে রইল বাড়িতে… আমি কত করে বললাম, ফিরে যখন এসেছিস, তখন না হয় তুইই তোর ব্যবসা পত্তর দেখাশুনা কর… তাতে ব্যবসারও ভালো হবে, আর মনটাও একটু ব্যস্ত থাকাতে ভালো থাকবে… কিন্তু রাজি করাতে পারিনি কিছুতেই।

সময়… সময় মানুষকে অনেক সাহায্য করে, জানেন মিস মুখার্জি… ধীরে ধীরে একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে লাগল অর্নব… প্রথম দিকের সেই পাগল পাগল মনোভাবটাও একটু একটু করে কেটে যেতে লাগলো… আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম… নিজের পৈত্রিক ব্যবসাটা তখনও না দেখা শোনা করা শুরু করলেও, নিজেকে আর অতটা বন্দি করে রাখতো না… তবে মাঝে মধ্যেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেত… বেরিয়ে পড়তো ব্যাগ গুছিয়ে… ঘুরে বেড়াতো নানা জায়গায়… হটাৎ হটাৎ করে চলে যেত যেদিকে মন যায় সেদিকে মাস দু-মাসের জন্য… আসলে সত্যি বলতে কি, টাকার তো কোনদিনও অভাব ছিল না, তাই সেদিকটায় ভাবতে হয়নি ওকে কখনও। ইচ্ছা হলেই বেড়িয়ে পড়তো… আবার বেশ কিছুদিন পর ফিরে আসতো। প্রথম প্রথম চিন্তা করলেও, পরে আর ওর এই নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করতাম না… ওকে ওর মতই থাকতে দিতাম… আমিই তখনও দেখাশোনা করে যেতাম ওর সমস্ত কিছু।’

কেন জানে না পৃথা, ওর ও অর্নবের এই পরিবর্তন শুনে ভালো লাগে… যেন একটু নিশ্চিন্ত হয় সে মনে মনে… ম্লান হেসে বলে, ‘যাক, তাহলে অর্নববাবু নিজেকে শেষের দিকে সামলে নিতে পেরেছিল যা’হোক…’ নিজের মনের মধ্যে তৈরী হওয়া খানিক আগের গ্লানিটার কিছুটা যেন প্রশমিত হয় প্রণববাবুর এই তথ্যে।

‘হ্যা, মোটামুটি সামলে নিতে পেরেছিল বলা যেতে পারে… আগের মত সবসময় হাসি ঠাট্টার মধ্যে না থাকলেও, প্রথম দিকে ফিরে একেবারে যে রকম ভেঙে পড়েছিল, সেটার থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে এসেছিল অনেকটাই।’ বলে থামলেন ভদ্রলোক। তারপর একটু নিজেকে যেন গুছিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন, ‘হটাৎ একদিন দুম করে আমাকে বলল, প্রণব, চল, কোলকাতা যাবো… আমি তো শুনে আকাশ থেকে পড়লাম… বললাম, কোলকাতা? কেন? শুনে বলল, এ ভাবে চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগছে না রে, ওখানে গিয়ে একটা কিছু করবো… তুইও বৌদিদের নিয়ে চল আমার সাথে। ততদিনে আমারও বাবা মা গত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বৌ, বাচ্ছা, তাদের স্কুল, এ ভাবে হটাৎ বললে হয় নাকি? অনেক করে বোঝালাম, কিন্তু কে শোনে কার কথা… বরাবরই ও ওই রকম, একবার যখন মাথায় ঢুকেছে, তখন সেখান থেকে ওকে সরানো কার সাধ্য… শেষে সত্যিই একদিন আমরা সবাই মিলে চলে এলাম কোলকাতায়… ওখানকার ব্যবসা সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে… হাতে বেশ ভালো কিছু টাকা পেয়েছিল… তাই দিয়ে ও এখানে একটা বড় কেমিক্যাল ফ্যাক্টারি শুরু করল… নিজে থাকার জন্য এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিল আর আমাদের জন্য আর একটা ফ্ল্যাট কিনে দিল। চাইলে ও একটা বাড়িই কিনে নিতে পারতো, কিন্তু সে দিকে গেলো না, বলল, না রে প্রণব, আমার মত একার লোকের জন্য এই রকম ছোট ফ্ল্যাটই ভালো। নতুন ব্যবসায় আমাকে ওর পার্টনার করে নিল… ইনভেস্টমেন্ট ওর… আমাকে শুধু সাথে থাকতে হবে। অর্নবের দূরদর্শিতায় আর অধ্যবশায় ব্যবসা দেখতে দেখতে ফুলে ফেঁপে উঠল… দেখতে দেখতে বছর তিনেক গড়িয়ে গেল… আমাদের প্রডাক্ট প্রচুর বিদেশে যেতে লাগল…’

‘তাহলে এখন উনি কোথায়?’ চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে পৃথা।

‘সেই কথাতেই আসছি এবার… ঘটনাটা খবরের কাগজেও বেরিয়েছিল তখন… হয়তো দেখেও থাকবেন… সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল, একদিন এক ক্লায়েন্ট মিট করতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল অর্নব… যাচ্ছিল বর্ধমানের দিকে… সেদিন আমারও সাথে যাবার কথা ছিল, কিন্তু সকাল থেকে আমার ছেলেটার ধূম জ্বর হওয়াতে আমি আর ওর সাথে যেতে পারিনি…’ বলে থামলেন প্রণববাবু।

উৎকন্ঠিত গলায় প্রশ্ন করে পৃথা… ‘তারপর? তারপর কি হলো প্রণববাবু?’

‘খুব বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন… আমিও ওকে যেতে বারণ করেছিলাম, কিন্তু কথা শুনলে তো… হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল… আমার সামনে দিয়েই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল… আর তারপর…’

‘তারপর…’ গলা শুকিয়ে আসে পৃথার…

‘আর তারপর আর কোন খবর নেই…’ বলে চুপ করেন ভদ্রলোক।

‘মানে? খবর নেই মানে?’ একটু যেন গলার স্বরটা জোরে শোনায় পৃথার… ‘আবার কি উনি বেড়াতে চলে গিয়েছিলেন?’

‘নাঃ… এবারে আর বেড়াতে যাবার জন্য নিরুদ্দেশ নয়… রাস্তার ধারে ওর গাড়িটা পাওয়া যায়… জ্বলে কালো হয়ে গিয়েছিল… পরে পুলিশ তদন্ত করে জেনেছিল যে আশপাশের লোক দেখেছিল যে বৃষ্টির মধ্যে হটাৎ একটা বাজ পড়ে ওই গাড়িটার ওপরে… গাড়িটা তখন ওই রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে ছিল সম্ভবত… কেন, তার উত্তর দেবার আর কেউ নেই… লোকজন দৌড়ে গিয়েছিল সাহায্য করার জন্য… কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ… জ্বলেপুড়ে খাঁক হয়ে গিয়েছিল গাড়িটা…’ বলে চুপ করেন ভদ্রলোক।

গলার মধ্যেটায় কি একটা দলা পাকায় পৃথার… ঘরের মধ্যের সমস্ত কিছু যেন ঘুরছে চোখের সামনে… খুব কষ্ট করে বলে ওঠে সে, ‘আর… আর অর্নববাবু?’ কেমন যেন কান্নাটা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে বুকের ভেতর থেকে তার, অনেক কষ্টে চেপে রাখে সে ভদ্রলোকের সামনে।

‘জানি না… গাড়িটা এতটাই জ্বলে গিয়েছিল যে অর্নবের বডিটাও আর পাওয়া যায় নি… একেবারে মুছে গেল বরাবরের জন্য… হারিয়ে গেল সে…’ বলে চুপ করেন প্রণববাবু।

পৃথাও থম মেরে চুপ করে বসে থাকে সোফায়… কথা সরে না তার মুখ থেকেও… এ কি করে সম্ভব… একটা গোটা জলজ্যান্ত মানুষের এই পরিণতি হতে পারে নাকি? কিছুতেই যেন মেলাতে পারে না সে… অর্নবকে নিয়ে সে কল্পনার জাল বুনেছিল ঠিকই, কিন্তু সেও জানতো যে সেটা অবাস্তব… সেটা ছিল নিছকই নিজের মত করে নিজেকে আনন্দ দেওয়ার… হয়তো সেটা ভালোবাসা নয়, সামান্য মোহো… হিংসা হয়েছিল লিন্ডার ভাগ্য দেখে এই রকম একটা মানুষকে নিজের করে পেয়েছে বলে ঠিকই… কিন্তু তাদের যে শেষে এই পরিণতি হয়েছিল সেটা সে কিছুতেই মানতে পারে না… না, না, একি করে হয়… একটা মানুষ এই ভাবে…

দরজায় বেল বাজার আওয়াজ হয়… কিন্তু কানে যায় না পৃথার… ডুবে থাকে সে আপন চিন্তায়… আবার বেল বাজতে প্রণববাবু মৃদু গলায় বলেন, ‘মিস মুখার্জি… বেল বাজছে… সম্ভবত কেউ এসেছে…’

‘এ্যা? হ্যা…’ সম্বিত ফেরে পৃথার… ধীর পায়ে উঠে যায় দরজার দিকে… তখনও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছে সে… দরজা খুলে দেখে ওর অর্ডার দেওয়া খাবার নিয়ে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার ওপারে।



১৭।।

প্রণববাবু ঘুরে যাবার পর বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে, এক সন্ধ্যায়, ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঘরে ঢোকে পৃথা তড়িঘড়ি… ‘ইশ… খুব ভুল হয়ে গেছে আজকে…’ মনে মনে ভাবে… সকালবেলায় বেরুবার সময় সাধারণত যে ব্যাগটা নিয়ে অফিসে যায়, সেটা আজকে নেয় নি, আর তার ফলে ছাতাটাও বের করতে ভুলে গিয়েছিল ওই ব্যাগটা থেকে। ফেরার পথে এই রকম ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে কে জানতো… একেবারে চুপচুপে ভিজে গিয়েছে… কতক্ষন অটোর জন্য দাঁড়িয়েছিল… এমন জায়গায় অটো স্ট্যান্ডটা যে একটু যে শেডের তলায় দাঁড়াবে, তারও যো নেই… দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে ওকে…

পায়ের জুতোটাকে কোনরকমে খুলে হাতের ব্যাগটাকে সোফার ওপরে ছুড়ে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড়ায়… এ ভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে ড্রইংরুমের মেঝেটা ভিজে নোংরা হয়ে যাবে শুধু শুধু… পরে তো তাকেই সেই কাদা পরিষ্কার করতে হবে। বাথরুমে যাবার পথেই জামার বোতামগুলো খুলতে থাকে দ্রুত হাতে, ঢুকেই বাথরুমের দরজাটাকে আলগোছে টেনে ভিজিয়ে রেখে গা’য়ের থেকে টেনে জামাটা খুলে ফেলে দেয় বালতিটার মধ্যে… হাত দেয় জিন্সের বোতামে… ভিজে গিয়ে একেবারে সেঁটে গিয়েছে পায়ের সাথে জিন্সটা… বোতাম আর চেন খুলে কোমর থেকে দেহটাকে বেঁকিয়ে চুরিয়ে নেড়ে নেড়ে টেনে নামায় শরীর থেকে প্যান্টটাকে… ‘ইশ… কি কুক্ষনেই না আজকেই জিন্স শার্ট পরে অফিসে গিয়েছিলাম… কুর্তি হলে তাও একটু হালকা হত… এতো একেবারে ভিজে ভারী হয়ে উঠেছে…’ জিন্সটারও জায়গা হয় বালতির মধ্যে… নজর পড়ে নিজের শরীরে পরে থাকে ব্রা প্যান্টির দিকে… ‘দেখ কি অবস্থা… ও গুলোও তো দেখছি ভিজে গিয়েছে… মরণ আর কি… বৃষ্টি হবার আর সময় হলো না… আর একটু পরে নামতে পারতো… ততক্ষনে বাড়ি পৌছে যেতাম… ক’দিন ধরেই গা’টা ম্যাজম্যাজ করছে, তার ওপর এই ভাবে ভিজলাম, জ্বর না আবার এসে যায়…’ হাত ঘুরিয়ে অভ্যস্থ হাতে ব্রায়ের হুকটা আলগা করতে করতে ভাবে পৃথা।

প্যান্টিটা খুলে দাঁড়ায় শাওয়ারের নিচে… কলটা খুলতেই ছাদের রিজার্ভারের জমা ঠান্ডা জল ছিটিয়ে পড়ে নগ্ন দেহের ওপরে… হটাৎ করে গায়ের ওপরে এসে পড়া ঠান্ডা জলে কাঁপুনি ধরে যায় তার… ‘উউউহুহুহুহু…’ করে চিৎকার করে ওঠে… ভিষন শীত করতে থাকে তার… হাত দুটোকে জড়ো করে ধরে বুকের ওপরে… একটু একটু করে জলের ঠান্ডা ভাবটা সয়ে যেতে থাকে শরীরের তাপমাত্রার সাথে… সেও স্বাভাবিক হয় যেন একটু… এবার ভালো করে জলের ধারার নীচে দাঁড়িয়ে শরীরের ওপরে জলটা নিতে থাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে… চোখদুটো বন্ধ করে রাখে আরামে… নিরাবরণ নিটোল তম্বী শরীরটা বেয়ে জলের ধারা মাথার থেকে নেমে ধেয়ে যায় মাটির দিকে।

বাথরুম থেকে বড় তোয়ালেটা সারা শরীরে জড়িয়ে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় ড্রইংরুমের মধ্যে… তোয়ালের খুঁটটা গুঁজে রাখে পায়রার মত দুটো নরম বুকদুটোকে ঢেকে রেখে… শেষ প্রান্তটা গিয়ে হাঁটুর অনেক ওপরেই শেষ হয়ে যায়… নিটোল কাঁধদুটো থাকে সম্পূর্ণ নিরাবরণ… ‘সর্বনাশ… বাইরের দরজাটাই বন্ধ করি নি? দেখেছ অবস্থা!’ বাইরের দরজাটার দিকে তাকিয়ে নিজের ভুলে আঁতকে ওঠে পৃথা… দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ফাঁক হয়ে থাকা দরজাটার দিকে… হাতের চাপে ঢেলে দেয় দরজাটাকে… ইয়েল লকের খট করে আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে যায় দরজাটা… ‘ইশ… দেখেছ কান্ড আমার… যদি কেউ ঢুকে পড়তো এখন? এ বাবা… আমিও তো একেবারে ন্যাংটো হয়ে চান করছিলাম…’ যেন নিশ্চিন্ত হতেই একবার উঁকি মারে আধো অন্ধকার কিচেনের মধ্যে… তারপর গিয়ে আলো জ্বালে বেডরুমে… ভালো করে চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয় একবার… খেয়াল করে ঘরের লাগোয়া বারান্দার দরজার ছিটকিনিটার দিকে… ‘নাঃ… বাবাহঃ… কেউ ঢোকে নি… ইশ… কি ভুলটাই না করে বসেছিলাম…’ ঘুরে দাঁড়ায় আয়নার সামনে… নিজেই নিজেকে ভেঙচি কাটে আয়নার প্রতিফলনের মধ্যে দিয়ে… জানলার ওপারে তখন অঝরে ঝরে চলেছে বৃষ্টি।

কড়্‌… কড়্‌… কড়াৎ… মেঘে ঢাকা সন্ধ্যের কালো আকাশটাকে চিরে বিকট শব্দে বাজটা পড়ল… আকস্মিক বাজের শব্দে চমকে উঠলো পৃথা… তারপরই ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেল… একটা নিশ্ছিদ্র কালো অন্ধকার ওকে যেন জড়িয়ে ধরল চতুর্দিক থেকে…

চুপ করে খানিক এক ভাবে দাঁড়িয়ে রইল ওখানটাতেই… একটু একটু করে অন্ধকারটা চোখের মধ্যে সয়ে আসতে লাগলো… জানলা দিয়ে আসা বাইরের সন্ধ্যের আলোয় অস্পষ্ট ভাবে চোখে পড়তে লাগলো ঘরের মধ্যেটা… ধীর পদক্ষেপে খুব সাবধানে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো ড্রইংরুমের মধ্যে… ‘ইশ… এখানেটা তো আরো বেশি অন্ধকার… নিশ্চয় বাজ পড়ে কোথাও কোন ট্রান্সফর্মার উড়েছে… নয়তো এই ভাবে কারেন্ট যেতো না…’ একা একা কথা বলে… হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে… তাকের ওপর থেকে মোমবাতি আর দেশলাইটা পেড়ে জ্বালায় সেটি… মোমের নরম আলোয় ভরে যায় কিচেনটা… সাবধানে হাতে জ্বলন্ত মোমবাতিটা ধরে ফিরে আসে ড্রইংরুমে… এগিয়ে গিয়ে বাইরের দরজার লকটাকে তুলে দেয় ভালো করে… তারপর গুটিগুটি পায়ে মোমবাতির শিখাটাকে হাতের তেলোর আড়াল করে এগিয়ে চলে বেডরুমের দিকে। বেডরুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই জানলা থেকে ঠান্ডা এক ঝলক বাতাস হৈ হৈ করে ঢুকে দুম করে নিভিয়ে দেয় মোমবাতিটাকে… ‘যাহঃ… দূর… ভাল্লাগে না…’ নিভে যাওয়া মোমবাতিটাকে হাতের মধ্যে ধরে স্বগক্তি করে পৃথা… সেটাকে বেডসাইড টেবিলের ওপরেই রেখে দিয়ে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে অফ্‌ করে দেয় ঘরের আলোটাকে তারপর এগিয়ে যায় ঘরের জানলাটার কাছে… জানলার পাল্লাদুটো খুলে দেয়… বাইরের থেকে ঠান্ডা বাতাসের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ছাট এসে লাগে ওর চোখে মুখে… ভালো লাগায় মনটা ভরে যায়… জানলার ফ্রেমটায় হাত রেখে মুখটাকে যথাসম্ভব বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে… মুখের ওপরে জলের ঝাপটা নিতে থাকে মনের আনন্দে।

ওই ভাবে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে মাথাটাকে হেলিয়ে জানলার ফ্রেমে ঠেস দিয়ে… অন্ধকার ঘরের মধ্যে একলা সে… কেমন যেন আস্তে আস্তে মনটা ভারী হয়ে ওঠে… প্রণববাবু ফিরে যাবার পর থেকেই মাঝে মধ্যেই আজকাল কিছু ভালো লাগে না তার… থেকে থেকে বুকের মধ্যেটায় একটা না চেনা বোঝা চেপে বসে যেন… হারিয়ে ফেলে নিজেকে এক দুঃসহ চাপা কষ্টের আবর্তে…

জানলার ফ্রেমে মাথা রেখেই মৃধু স্বরে গুনগুন করে গান ধরে আপন মনে…

শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে

তোমারি সুরটি আমার মুখের ‘পরে, বুকের ‘পরে।।

পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে দুই নয়ানে-

নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে পড়ুক প্রানে।

নিশিদিন এই জীবনের সুখের ‘পরে দুখের ‘পরে

শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।

যে শাখায় ফুল ফোটে না, ফল ধরে না একেবারে,

তোমার ওই বাদল-বায়ে দিক জাগায়ে সেই শাখারে।

যা-কিছু জীর্ণ আমার, দীর্ণ আমার, জীবনহারা,

তাহারি স্তরে স্তরে পড়ুক ঝরে সুরের ধারা।

নিশিদিন এই জীবনের তৃষার ‘পরে, ভুখের ‘পরে

শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।।

কেন জানা নেই, পৃথার চোখের কোল দিয়ে আনমনে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনা জলের ধারা। গানটা শেষ করে চুপ করে আরো খানিকক্ষন ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে বৃষ্টির ছাঁটের মুখে… চোখের উষ্ণ জলের সাথে মিশে যায় বৃষ্টির ঠান্ডা জল। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কখন গায়ের থেকে তোয়ালেটা মাটিতে খসে পড়ে গিয়েছে, খেয়ালও নেই তার… ওই ভাবেই নগ্ন দেহে দাঁড়িয়ে থাকে সে বাইরের পানে তাকিয়ে। সেদিনের পর থেকে কিছুতেই সরিয়ে রাখতে পারছে না অর্নবকে মনের মধ্যে থেকে… একি হয়ে গেলো… একটা কল্পসুখের মধ্যে সে ভেসে ছিল, কিন্তু হটাৎ করে যেন তাকে টেনে হিঁচড়ে বাস্তবের কঠিন মাটির ওপরে আছড়ে ফেলে দিয়ে গেলেন ওই ভদ্রলোক… প্রণববাবু… তার জীবনের সব প্রাণচ্ছলতা যেন কি করে নিমেশে উবে গেল এক ফুৎকারে… তার মনে হচ্ছিল যেন জীবনের সমস্ত রঙ গন্ধ কেউ এক লহমায় মুছে দিয়ে গিয়েছে… একটা বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।

হটাৎ করে ওর সেই অস্বস্থিটা যেন ফিরে আসে… সিরসির করে ওঠে নগ্ন শরীরটা… মনে হয় অন্ধকার ঘরের মধ্যে কারুর উপস্থিতি… অনুভব করার চেষ্টা করে নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ… বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই পৃথার মধ্যে এই অনুভূতিটা আরো বেশি করে চেপে বসেছে… শুধু অনুভূতিই বা এখন আর বলে কি করে সে? হাতে গরম বেশ কিছু প্রমাণও তো পেয়েছে ইতিমধ্যেই। ওর জায়গায় যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো, ও নিশ্চিত, এতদিনে পাততাড়ি গুটিয়ে পালাতো ফ্ল্যাট থেকে সে। কিন্তু ও সেটা হতে দিতে পারে না। এত সহজে পিছিয়ে যাবার মেয়ে, পৃথা নয়। প্রথম প্রথম খেয়াল করতো ওর অনুপস্থিতিতে কিচেনে রাখা বিস্কিটের কৌটোটা হয়তো ঠিক জায়গায় নেই, বা ফ্রীজে রাখা রান্না করে রেখে দেওয়া খাবারের ঢাকাটা খোলা… গায়ে মাখেনি সেটা নিয়ে আগে, ভেবেছে হয়তো তারই ভুল, কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ততই ব্যাপারটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ কমে এসেছে। শেষে ইচ্ছা করেই দেখে রাখতো ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কোনটা কি ভাবে রয়েছে, ফিরে দেখেছে যে, হ্যা, ঠিক যা ভেবেছে তাই, সরে গিয়েছে আগের অবস্থান থেকে খাবারের জিনিসগুলো। শুধু এটাই নয়, বাইরের থেকে ঘরে ঢুকলেই ওর মনে হতো যেন ওর অনুপস্থিতিতে ঘরের মধ্যে কেউ ছিল, দরজার চাবী ঘোরাবার আওয়াজে সরে গিয়েছে। প্রমাণস্বরূপ কতদিন হয়েছে ঘরে ঢুকে দেখেছে যে ফ্যানটাকে ঘুরতে, কিন্তু ও একেবারেই সুনিশ্চিত যে বেরুবার সময় ও সমস্ত সুইচ অফ করে দিয়েই বেরিয়েছিল। অস্বীকার করবে না পৃথা, প্রথম দিকে বেশ ভয় ভয়ই করতো তার, কিন্তু যত দিন গেছে, তত বুঝেছে, যেই থাকুক না কেন তার এই ফ্ল্যাটে, আর যাই করুক সে, কিন্তু তার ক্ষতি কক্ষনো করবে না… কেন জানে না পৃথা, একটা বিশ্বাস বুকের মধ্যে বাসা বেঁধে ছিল… তাই এটা নিয়ে কোন শোরগোলও আর করে নি, কতকটা ইচ্ছা করেই। বিশেষ করে সুশান্তকে তো এই ব্যাপারে কোন কথাই বলে নি ও। কারণ পৃথা জানতো যে সুশান্ত যদি এই সব ঘটনা জানতে পারে, আগে ওকে এই ফ্ল্যাটটার থেকে সরাবে, আর সেটা ও কোন মতেই চায় না… কেন চায় না, সেটা তো ওর থেকে আর ভালো কেউ জানে না। শুধু আগের মত বেখায়াল থাকে না। আজকাল চান করার সময় বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করতে ভোলে না, বা রাত্রেও আগের মত একেবারে নগ্ন দেহে ঘুমায় না। শোবার সময় ব্রা প্যান্টি না পড়লেও, একটা পাতলা স্লিপ গায়ে তুলে নেয়। ব্যাপারটা ভৌতিক না কি অন্য কিছু, তার উত্তরও সঠিক ভাবে নেই ওর কাছে… প্রণববাবুর কাছ থেকে অর্নবের শেষ পরিসমাপ্তির কথা শোনার পরও যেন এখন একটা কোথাও ক্ষীণ আশা বুকের মধ্যে বাসা বেঁধে রয়েছে তার…

তাই, এখনো ওই অনুভুতিটা হতেই শিরদাঁড়া দিয়ে কেমন একটা সিরসিরানি বয়ে যায় তার… মেয়েলি স্বজ্ঞায় হাতটা চলে যায় নিজের বুকের ওপরে… হাত পড়তেই খেয়াল হয় নিজের শরীরটা নিরাবরণ… তার অজান্তে কখন তোয়ালেটা শরীর থেকে খসে পড়ে গিয়েছে… একবার ভাবে তোয়ালেটা তুলে জড়িয়ে নেয় শরীরে… কিন্তু পরক্ষনেই সে ইচ্ছা ঝেড়ে ফেলে দেয় মনের থেকে… ওই রকম নগ্ন ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে… ইচ্ছা করে নিজের এই নিটোল নগ্ন শরীরটাকে ঘরের মধ্যে উপস্থিত কায়াহীনের সামনে মেলে ধরে রাখতে… ইন্দ্রীয়টা সজাগ হয়ে ওঠে আরো… বোঝার চেষ্টা করে ঘরের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিটাকে।

হটাৎ কানে আসে ড্রইংরুম থেকে বেজে ওঠা মোবাইলের আওয়াজ… প্রায় চমকে ওঠে সে এই ভাবে হটাৎ করে আওয়াজ পেয়ে… ধড়াস করে ওঠে বুকের মধ্যেটায়… কিন্তু তারপরই হেসে ফেলে নিজের বোকামী দেখে… মাটির থেকে তোয়ালেটা হাতে তুলে নিয়ে ওই অবস্থাতেই দ্রুত এগিয়ে যায় মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ লক্ষ্য করে। অন্ধকারের মধ্যেই সোফাটার অবস্থান আন্দাজ করে হাতের মধ্যে ধরা তোয়ালেটাকে ছুড়ে দেয়… তারপর হাতড়ায় সেন্টার টেবিলের ওপরে মোবাইলটার জন্য… বেজেই চলেছে, কিন্তু কোথায় সেটা? বিরক্ত হয়ে ওঠে মনটা… পরক্ষনেই মনে হয় যে মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বেরই করা হয় নি ঘরে ঢোকার পর… সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এগোতে যায় সোফার দিকে… মনে পড়ে ঘরে ঢুকে সোফার ওপরেই ছুড়ে রেখে দিয়েছিল কাঁধের থেকে ব্যাগটা, গা’য়ের থেকে ভিজে জামা খোলার তাগিদে। ‘উফফফ্‌…’ যেতে গিয়ে পায়ে ধাক্কা লাগে সেন্টার টেবিলের কোনাটায়… আরো যেন বিরক্তি ছেয়ে ধরে মনের মধ্যে… ব্যথা পাওয়া জায়গায় হাত বোলাতে বোলাতেই এগিয়ে যায় সোফার দিকে… হাতের আন্দাজে কিছুক্ষন আগে ছুড়ে রাখা তোয়ালের নিচ থেকে টেনে বের করে ব্যাগটা… চেন খুলে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করে কলার নামের ওপরে চোখ রাখে পৃথা… ‘বাপী?…’ নিমেশে যেন মনের মধ্যে জমে থাকার শত বিরক্তি গুলো কোন এক জাদুর স্পর্শে উবে যায় সাথে সাথে… মুখটা চকচক করে ওঠে এক অপার্থিব ভালো লাগায়… কল রিসিভ করে কানে তোলে ফোনটাকে… ‘হ্যা বাপী… বলো…’ গলার স্বরে আদুরে আভাস মিশে যায়।

‘এতক্ষন কোথায় ছিলিস রে মা? সেই তখন থেকে ফোন বাজছে?’ ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে পৃথার বাবার উদবিগ্ন স্বর।

‘আর বোলো না বাপী, এখানে এই কিছুক্ষন আগে ঝুপ করে লোডশেডিং হয়ে গেলো, তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না ফোনটা… সেই জন্যেই তো ফোনটা তুলতে দেরী হলো…’ বলে পৃথা। ফোনটা কানে নিয়ে ফিরে আসে বেডরুমে… খাটের ওপরে বালিসটাকে টেনে বেডরেস্টে রেখে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে বলে ‘হটাৎ তুমি ফোন করলে? তোমরা ঠিক আছো তো?’ এবার পৃথার উদবিগ্ন হবার পালা।

‘হ্যা রে মা, আমরা ঠিক আছি… আসলে তুই ফোন করিস নি আজকে সন্ধ্যেবেলায়, তাই তোর মা একটু অস্থির হয়ে উঠছিল, সেই জন্য ভাবলাম একবার ফোন করে দেখি… এই নে, মায়ের সাথে কথা বল…’ বোঝা গেল কথাগুলো বলে ফোনটা এগিয়ে দিলেন নিজের স্ত্রী’য়ের দিকে।

‘ইশ… সত্যিই তো… মাকে ফোন করতে একদম ভুলে গিয়েছি…’ মনে মনে ভাবে পৃথা। আসলে প্রতিদিনই নিয়ম করে অফিস থেকে ফিরে একবার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে পৃথা, এটা অবস্য ওর মায়েরই কড়া নির্দেশ… মেয়ে যতক্ষন না বাড়ি ফিরে ফোন করে, ততক্ষন যে ওনারা দুশ্চিন্তায় থাকে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পৃথা এই নিয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে, ও বড় হয়েছে, এখন এই রকম দুশ্চিন্তা করার কোন মানেই হয় না, কিন্তু তবুও, শোনেন নি ওর মা, মেয়ে যতই বড় হোক না কেন, তবুও, সে এত দূরে থাকে, সেখানে একবার ফিরে ফোন করলে যে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না সেটা ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েকে। অগত্যা, সেটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে কোলকাতায় আসা ইস্তক… প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মাকে একবার ফোন করে কথা বলতেই হয় তাকে। কিন্তু আজকে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েই সব কিছু গন্ডগোল হয়ে গিয়েছে… ভিজে জামা ছেড়ে চান করে হয়তো ফোন করতো, কিন্তু তার মধ্যে লাইটটাও গেছে নিভে… তাই মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছে ফোন করার ব্যাপারটা।

‘তুই কি রে তিতির? একটা ফোন করতে এত অনিহা… জানিস আমরা কত টেনশন নিয়ে বসে থাকি তোর ফোনের অপেক্ষায়… এটা আর কবে বুঝবি বলতো… একটা ফোন করতে পারিস না? বুঝবি বুঝবি… যখন মা হবি তখন বুঝবি যে বাবা মা কি রকম টেনশন করে সন্তানদের জন্য… আর কি ভাবে বোঝাবো তোকে…’ একের পর এক সুনামীর মত মায়ের অভিমান ভেসে এসে আছড়ে পড়তে থাকে পৃথার কানের মধ্যে… তাকে কিছু বলার সুযোগই দেন না…

শেষে একটু গলাটা তুলেই বলে ওঠে পৃথা, ‘আরে বাবা, তুমি থামবে? আগে শুনবে তো কেন ফোন করি নি…’

‘হ্যা, আর কি শোনাবি… ওই তো বলবি অফিসের এত কাজের চাপ যে ফোন করতেই ভুলে গিয়েছি… সেটাই তো হয় রে… সন্তান যখব বড় হয় তখন এই ভাবেই বাবা মায়েদের ভুলে যায় তারা…’ শেষে দিকে সম্ভবতঃ গলাটাই ধরে আসে পৃথার মায়ের…

‘আরে বাবা, না না, সে সব কিচ্ছু নয়… আজকে অফিস থেকে ফেরার পথে একেবারে ভিজে গিয়েছিলাম… তাই…’ আর কথা শেষ করতে পারে না পৃথা… তার আগেই প্রায় ঝাপিয়ে পড়েন তার মা, ফোনের মধ্যেই…

‘সে কি রে তিতির… তুই বৃষ্টিতে ভিজেছিস… কি করে?… কেন ছাতা ছিল না… তাও ভিজলি কি করে? এখনও ভিজে কাপড়েই রয়েছিস না কি রে? এ বাবা, সেটা আগে বলবি তো… ঠান্ডা লাগে নি তো? টেম্পারেচার নিয়েছিস… জ্বর এসে যায় নি তো?…’ এবার শুরু হয় উদবিগ্ন প্রশ্নের ধারা।

‘আরে না, সেই রকম কিছ নয়… আজকে ছাতাটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম… তাই আসার সময় একটু ভিজে গিয়েছি… তাও অনেক আগে…’ বলে বোঝাতে যায় মাকে…

‘অনেক আগে ভিজেছিস… এখনও সেই ভিজে জামা কাপড়েই রয়েছিস নাকি? শিগগির ছেড়ে ফেল ভিজে কাপড় জামা… এই জন্যই চিন্তা হয় তোকে নিয়ে… তোকে বরাবর বলেছি ভিজে জামা কাপড়ে থাকবি না… এই জন্যই চাইনি দূরে গিয়ে একা থাকিস… কিন্তু শুনলে তো মেয়ে মায়ের কথা… আর শুনবেই বা কেন? মায়ের কথা তো… তার মূল্যই বা কতটুকু…’

‘তুমি এবার থামবে? নাকি ফোনটা রাখবো?’ এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করে পৃথার… একে মনটা ভালো নেই, তার ওপরে মায়ের এই অনর্থক বকবকানি… ভালো লাগে?

এবার আর কোন কথা আসে না ফোনের ওপার থেকে… পৃথাও বোঝে ঝাঁঝিয়ে ওঠাটা একটু কাজ দিয়েছে হয়তো, আর তা না হলে অভিমানে মুখ ভার হয়েছে মায়ের… গলার স্বরটাকে স্বাভাবিক করে বলে সে, ‘না, মা, রাগ করছ কেন? আমি তো ভিজে জামা কাপড় সব ছেড়েই ফেলেছি… আর দেখ, চানও করে নিয়েছি সঙ্গে সঙ্গে… সত্যিই… বিশ্বাস করো…’

মেয়ের কথায় একটু আস্বস্থ হন ভদ্রমহিলা, গলাটা নামিয়ে বলেন, ‘ঠিক তো মা, চান করে নিয়েছিস তো… আজকে আর রাতে আর ফ্যান চালিয়ে শুস না… লক্ষ্মী মা আমার… দেখ… তুই ওখানে একা আছিস, খুব চিন্তায় থাকি রে মা…’

হেসে ফেলে পৃথা… ‘উফ্‌ এত চিন্তা করো না মাদার ইন্ডিয়া… তোমার তিতির এখন বড় হয়ে গেছে… সেই ছোট্টটি আর নেই… এখন নিজেই সব কিছু একা সমলাতে পারে… বুঝলে?’

‘ছাই বড় হয়েছিস… এখনও তো খাইয়ে না দিলে খাস না… সেখানে কত যে বড় হয়েছিস তা আমার জানা আছে…’ বলে ওঠেন পৃথার মা।

‘তুমি এখনও ঝগড়া করবে আমার সাথে?’ আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা।

মেয়েকে এই ভাবে বলতে শুনে আর রাগ করে থাকতে পারেন না ওর মা, ‘না রে মা, রাগ নয়, চিন্তা হয়… একা একা থাকিস তো… তাই… একটু সাবধানে থাকিস, কেমন… আর যদি শরীর খারাপ লাগে ডাক্তার দেখিয়ে নিতে ভুলিস না… আমাদেরও সাথে সাথে ফোন করিস… এই নে… বাবা আবার ব্যস্ত হচ্ছে, কথা বল বাবার সাথে…’

হটাৎ ড্রইংরুমের আলোটা জ্বলে ওঠে… কারেন্ট চলে আসে… আগেই বেডরুমের আলোর সুইচটা নিভিয়ে রাখাতে ঘরের আলোটা আর জ্বলেনি তাই… তবুও ড্রইংরুমের থেকেই বেশ খানিকটা আলো এসে ঘরটাকে আলোকিত করে তোলে… ঘরের আলো জ্বালাবার আর খুব প্রয়োজন হয় না।

বাইরে তখনও নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েই চলেছে… ঝিরঝিরে বৃষ্টির জলের ছাট এসে ঢুকছে ঘরের মধ্যে… পৃথা বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে যায় জানলার কাছে, শার্সিগুলো বন্ধ করে দেয় টেনে… দিয়ে ফিরে আসে বিছানায় আবার।

‘ভিজে গেছিস শুনলাম তোর মায়ের কাছে… এখন ঠিক আছিস তো?’ বাবার গলা পায় ফোনের মধ্যে।

‘হ্যা বাপী, আমি ঠিক আছি… তোমরা চিন্তা করো না…’ বলে থামে একটু, তারপর হটাৎ করে মনে পড়ে যেতে বলে ওঠে, ‘বাপী, তোমার প্রেশারের অসুধটা আনিয়েছিলে? ওটা তো শেষ হয়ে যাবার কথা এত দিনে।’

‘হ্যা, হ্যা, আনিয়ে নিয়েছি, তোকে আর ওখানে বসে আমার অসুধের কথা চিন্তা করতে হবে না রে মা… তুই একটু সাবধানে থাকিস, তোর মা বড্ড চিন্তা করে তোকে নিয়ে।’

‘হুম… আমার মা শুধু চিন্তা করে, আর আমার মিষ্টি বাপী এক্কেবারেই ভাবে না তার প্রিন্সেসকে নিয়ে, তাই তো?’ হাসতে হাসতে বলে বাবার কথার জবাবে।

‘না, মানে, আমারও চিন্তা হয় না যে তা নয়, তাও…’ আমতা আমতা করেন ভদ্রলোক।

‘থাক, জানা আছে আমার, আমার বাপীর কাছে আমি কি… আচ্ছা, এবার রাখো… কারেন্ট এসে গেছে…’ হাসতে হাসতে বলে পৃথা।

‘সেকি রে, এতক্ষন কারেন্ট ছিল না?’ প্রশ্ন করেন পৃথার বাবা।

‘না তো… আর সেই সাথে কি বৃষ্টি হচ্ছে বাপী কি বলবো… সেই সন্ধ্যে থেকে নেমেছে, সমানে চলছে… এই এত্তো বড় বড় ফোঁটা… জানলা বন্ধ করে দিতে হয়েছে, এত ছাঁট আসছে…’ হাত নেড়ে বলতে থাকে নিজের বাবাকে।
 

soukoli

Member
389
58
29
‘দেখিস মা, সাবধানে থাকিস… কেমন… এবার রাখি?’ বলেন ভদ্রলোক।

‘হ্যা, হ্যা, রাখো… তোমরাও সাবধানে থেকো… কেমন… লাভ ইয়ু বাপী… মাকেও চিন্তা করতে বারণ কোরো…’ বলে ফোনটা কেটে দেয় পৃথা।

‘নাঃ, আজ আর রাত্রে কিছু খাবো না… ভাল্লাগছে না… চোখগুলোও কেমন জ্বালা জ্বালা করছে, কে জানে, জ্বর আসবে কি না? মা শুনলে তো লাফাতো… ভাজ্ঞিস কিছু বলি নি… দেখি, শুধু একটু হরলিক্স গুলে খেয়ে শুয়ে পড়বো… কাল সকালে যা হোক দেখা যাবে’খন…’ ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে… মাথাটা কেমন ভার লাগে… হাতের তেলোটা উলটে ছোয়ায় কপালে, একটু যেন গরম মনে হয়। কিচেনে যাবে মনে করেও আর যায় না, বাথরুমের দিকে এগোয়। কোমডের ওপরে বসে হিসি করে হাল্কা হয় খানিকটা, তারপর উঠে হাতে জল নিয়ে পরিষ্কার হয়ে ফিরে আসে আবার বেডরুমেই। আসার পথে ড্রইংরুমের আলোটাও নিভিয়ে দেয়। মনে হয় কেমন যেন শীত শীত করছে… ঘরের ফ্যানটার রেগুলেটর ঘুরিয়ে একটু কমিয়ে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা গোল গলার টি-শার্ট বের করে পড়ে নেয় গায়ে… তারপর বালিশটা টেনে শুয়ে পড়ে বিছানায়… হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা অর্নবের ছবিটায় একবার আলতো করে হাত বোলায়… ‘একটু পরে না হয় উঠে হরলিক্সটা করে নেবো’খন’ ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে পৃথা।



১৮।।

‘ওহ্‌ মা…’ চোখ বন্ধ অবস্থাতেই গুঙিয়ে ওঠে পৃথা… মাথার ওপরে ঠান্ডা জলের ধারা খারাপ লাগে না… কানে আসে চুল থেকে বালতির মধ্যে ঝরে পড়া জলের শব্দ… চোখটা খুলে দেখার চেষ্টা করে… কিন্তু পারে না… অসম্ভব ভারী হয়ে রয়েছে চোখের পাতাদুটো… ইচ্ছা করলেও খুলতে পারে না সে দুটোকে… আর সেই সাথে ঘরের মধ্যে জ্বলতে থাকা আলোটাও বড্ড চোখে লাগে তার… চোখ বন্ধ করে থাকাটাই বেশি ভালো লাগে… ঠোটদুটোও শুকিয়ে উঠেছে… জিভটা বের করে চেটে ঠোটটাকে ভিজিয়ে নেবার চেষ্টা করে সে… ‘আহ্‌… উম্‌…’ ফের গোঙায় পৃথা… মাথাটা মনে হচ্ছে যেন যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে একেবারে…

চোখ বন্ধ থাকলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না সেই এই মুহুর্তে বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে রয়েছে… পা থেকে গলা অবধি একটা চাঁদর টানা… মাথাটা ঝুলছে বিছানা থেকে বাইরের দিকে… আর কেউ একজন তার মাথাটাকে নিজের হাতের তেলোর মধ্যে পরম মমতায় ধরে রেখে তপ্ত কপালের ওপর দিয়ে ঠান্ডা জল ঢেলে চলেছে এক ভাবে… ঘাড়ের নীচে একটা তোয়ালে গোঁজা… হয়তো বিছানাটা যাতে না ভিজে যায়, সেই প্রয়াশে…

জলের ধারা বন্ধ হয় একটু পরে… যেই তার মাথাটা ধরে থাকুক, খুব সাবধানে নিজের কোলের ওপরে তুলে নিয়ে ঘাড়ের নিচ থেকে তোয়ালেটা টেনে বের করে মাথার জল মুছিয়ে দিতে থাকে পরম মমতায়… পৃথা মুখে কিছু না বলে চুপ করে চোখ বন্ধ করেই শুয়ে থাকে ওই ভাবে। মাথা মোছানো শেষ হলে সাবধানে আবার বিছানায় সোজা করে বালিশের ওপরে মাথাটা ফিরিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয় তাকে… ভিজে তোয়ালে দিয়ে তার ঘাড়, মুখ আলতো হাতে মুছিয়ে দিতে থাকে আগুন্তুক… কে… কে সেবা করছে তার? মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে পৃথা… কিন্তু মাথার মধ্যে এতই যন্ত্রনা হচ্ছে যে ইচ্ছা করে না সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে… চুপচাপ নিজের তপ্ত অসুস্থ শরীরটাকে সমর্পন করে দেয় আগুন্তুকের হাতে। ফ্যানের হাওয়াটা ভেজা চুলের ওপরে লেগে বেশ ভালো লাগে। চোখ বন্ধ করেই খেয়াল করে ধীরে ধীরে তার গায়ের থেকে চাঁদরটা কেউ সরিয়ে কোমর থেকে গায়ের টি-শার্টটা গুটিয়ে খানিকটা ওপর দিকে গুটিয়ে তুলে দিলো… মানে এখন তার উর্ধঙ্গ সম্পূর্ন উন্মুক্ত আগুন্তুকের সামনে… চুপচাপ অপেক্ষা করে সে পরবর্তি কি পদক্ষেপ নেয় সেটা দেখার… আদুল গায়ের ওপরে ভেজা তোয়ালের ছোঁয়া পায়… খুব আলতো হাতে তার সারা গা মুছিয়ে দিতে থাকে আগুন্তুক… নগ্ন নরম অথচ সুগঠিত বুকের ওপর দিয়ে তোয়ালের পরশটা বয়ে যায়… আনমনেই বোঁটাদুটো কেমন অসভ্যের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় বুকের ওপরে, আগুন্তুকের চোখের সামনে… কেমন যেন লজ্জা লাগে তার হটাৎ… লজ্জা লাগে কিন্তু তার সাথে অদ্ভুত একটা ভালো লাগাও মিশে থাকে… বাধা দেয় না… চুপ করে শুয়ে উপভোগ করে আরামের রেশটুকু… ‘উম্‌… আহ্‌’ ফের গুঙিয়ে ওঠে সে… মাথার মধ্যেটায় এখনও যেন যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে…

তোয়ালের ছোঁয়া সরে যায় শরীর থেকে… গায়ের টি-শার্টটা ফের নেমে দেহটাকে ঢেকে দেয় কোমর অবধি… চাদর ফিরে আসে গায়ের ওপরে গলা কাছটায়… এবার কপালের ওপরে এক টুকরো ভেজা কাপড়ের উপস্থিতি অনুভব করে পৃথা… একটা হাত… এলোমেলো হয়ে থাকা চুলের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগে… বিলি কেটে দিতে থাকে খুব ধীরে, আলতো হাতের ছোয়ায়… দূর থেকে যেন ভেসে আসে একটা স্বর… ‘তিতির… তিতির?’

‘উম্‌?’ চোখ বন্ধ করেই সাড়া দেয় পৃথা।

‘কষ্ট হচ্ছে, খুব?’ কানে আসে গাঢ় স্বরে করা প্রশ্ন।

‘মাথাটা… মাথাটায় ভিষন যন্ত্রনা করছে… আহ্‌…’ থেমে থেমে উত্তর দেয় পৃথা।

কপালের ওপরে কাপড়ের টুকরো পালটায়… ফের আর একটা নতুন জলে ভেজা টুকরো এসে লেপটে যায় তপ্ত কপালের ওপরে…

‘এই তো… আর একটু পরেই সকাল হয়ে যাবে… তখন সব ঠিক হয়ে যাবে…’ আশ্বাস দেয় অচেনা গলার স্বর… শুনে আর কিছু বলে না পৃথা… চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে… কপালের পাশের রগের ওপরে চাপ পড়ে শক্ত আঙুলের… ‘আহ্‌… হুম্‌…’ ভালো লাগে এই ভাবে কপালের রগে টিপ দেওয়াতে…

একটু চুপ থেকে বলে ওঠে পৃথা… ‘খুব জ্বালাচ্ছি… না?’

এবারে কিন্তু আর কোন উত্তর আসে না… যদিও তখনও পৃথার কপালের ওপরে আগুন্তুকের হাতের ছোয়া লেগে রয়েছে… তাই জ্বরের মধ্যেও স্মিত হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের ওপরে… ‘কি? উত্তর দেবে না?’ অত কষ্টের মধ্যেও শান্ত গলায় ফের প্রশ্ন করে সে।

কোন উত্তর আসে না… কিন্তু কপালের ওপর থেকে ভেজা কাপড়ের টুকরো বদলায়… মাথার চুলে অচেনা আঙুল বিলি কাটে… হাল্কা হাতের মুঠোয় চেপে চেপে ধরে চুলগুলো… টান দেয় অল্প অল্প… পৃথার আরাম হয় খুব এতে… চোখ বন্ধ করেই হাসি মুখে সেই আরাম উপভোগ করতে থাকে চুপটি করে শুয়ে… বোঝে, এখন আর কোন উত্তর সে পাবে না… কিন্তু তার যা বোঝার আজ সব বোঝা হয়ে গিয়েছে… পরম নিশ্চিন্তে আবার ঢলে পড়ে ঘুমের কোলে।



১৯।।

‘ঠিক আছে, আমি তো এই অসুধটা লিখে দিলাম, এটা আনাবার ব্যবস্থা করুন…’

‘এটা এক্ষুনি আনিয়ে নিচ্ছি… কি মনে হচ্ছে আপনার?’

বেশ কয়একটা অপরিচিত গলার স্বরে চোখ মেলে পৃথা… চোখ খুলেই ফের বন্ধ করে নেয় সাথে সাথে, কাঁচের জানলার শার্শির ভিতর দিয়ে ঘরের মধ্যে এসে পড়া দিনের উজ্জল আলো চোখের ওপরে পড়ার ফলে… তারপর আবার ধীরে ধীরে চোখ খোলে সে… বিছানার পাশে প্রণববাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে, আর তাঁর সাথে আরো একজন অপরিচিত বেশ বয়ষ্ক ভদ্রলোক… ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় প্রণববাবুর পানে…

‘এই তো উনি উঠে পড়েছেন…’ পৃথাকে চোখ খুলতে দেখে বলে ওঠেন প্রণববাবু, তারপর তাকে উদ্দেশ্যে করেই বলেন, ‘আর চিন্তা করার কিছু নেই মিস মুখার্জি… ডাক্তারবাবু আপনাকে দেখে নিয়েছেন, অসুধ পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে…’

‘ডাক্তার?’ প্রশ্ন ভরা চোখে তাকায় অপরিচিত ভদ্রলোকের দিকে।

‘হ্যা মা… আমি ডাঃ বসাক… তুমি একটু হাতটা বের করো তো… একটা ইঞ্জেকশন দেবো… ইঞ্জেকশনে আশা করি তোমার কোন ভয় নেই…’

ডাক্তারের কথার কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বাঁ হাতটাকে চাঁদরের নিচ থেকে বের করে এগিয়ে দেয় পৃথা… ফের তাকায় প্রণববাবুর পানে… প্রণববাবু হাত তুলে ওকে আস্বস্থ করে ইশারায়… ততক্ষনে টি-শার্টের হাতাটাকে বাহুর ওপরে খানিকটা তুলে স্পিরিটে ভেজা তুলো ঘসতে শুরু করে দিয়েছেন ওই ডাক্তার।

ইঞ্জেকশন দেওয়া হলে, সোজা হয়ে দাঁড়ান ডাক্তারবাবু, প্রণববাবুর দিকে ফিরে বলেন, ‘আর কোন ভয় নেই, সামান্যই জ্বর… আমিও একটা প্যারাসিটামল ইঞ্জেক্ট করে দিলাম, তাতে একটু তাড়াতাড়ি কাজ হবে, আশা করছি দুই একদিনের মধ্যেই একেবারে ঠিক হয়ে যাবে… সামান্যই ঠান্ডা লেগে জ্বর… তবে এই অসুধগুলো আনিয়ে নিন…’ তারপর পৃথার দিকে ফিরে বলে, ‘কোন চিন্তা নেই মা, সব ঠিক হয়ে যাবে, কেমন? নরমাল থাকবে… কোন অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করবে…’ বলে নিজের ব্যাগ গোছাতে থাকেন।

‘উনি আজকে কি স্নান করবেন?’ ফের প্রশ্ন করেন প্রণববাবু।

‘হ্যা, হ্যা… করবে না কেন? তবে আজকের দিনটায় একেবারে ঠান্ডা জলে না করে একটু ইষদ্‌উষ্ণ জল করে নেবেন’খন…’ বলে ব্যাগ গুছিয়ে দরজার দিকে এগোতে থাকেন… ওনার সাথে প্রণববাবুও এগিয়ে যান… পৃথা বিছানায় শুয়ে চুপচাপ দেখতে থাকে ওদেরকে।

ডাক্তারকে দরজা অবদি এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসে প্রণববাবু পৃথার কাছে, ‘আমি তাহলে অসুধগুলো আনাবার ব্যবস্থা করি গিয়ে… আপনি একটু শুয়ে রেস্ট নিন…’ বলে ফিরে যেতে উদ্যত হন।

‘এক মিনিট মিঃ কর্মকার… আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো আমাকে, আমার জ্বর, সেটা আপনি জানলেন কি করে?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

পৃথার প্রশ্ন একটু থমকান ভদ্রলোক, আমতা আমতা করে বলেন, ‘না, মানে, ওই তো… সকাল বেলায় আপনার মেসেজ পেয়েই তো জানতে পারলাম…’

‘আমার মেসেজ পেয়ে?’ অবাক হয়ে তাকায় পৃথা। উঠে বসার চেষ্টা করে সে। এখন অনেকটাই আগের থেকে ভালো লাগছে তার।

তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে পৃথার পেছন থেকে বালিশটাকে টেনে খাটের রেস্টবোর্ডের ওপরে কাত করে রাখেন প্রণববাবু, পৃথা পিছিয়ে গিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসে ফের জিজ্ঞাসা করে, ‘আমার মেসেজ পেয়েছিলেন? সেটা কি করে সম্ভব? আমি কখন আপনাকে মেসেজ করলাম, আর আপনাকেই বা করব কেন?’

কাঁধ শ্রাগ করে ভদ্রলোক বলেন, ‘সে আমি কি করে জানবো বলুন, তবে এই তো দেখুন না…’ বলতে বলতে নিজের পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে মেসেজ লিস্ট খুলে পৃথার সামনে তুলে ধরেন উনি।

পৃথা চোখ সরু করে দেখে সত্যিই তার নাম্বার থেকেই মেসেজটা গিয়েছে — ফিলিং ফিবারিশ… প্লিজ কাম শার্প… — অবিশ্বাসী চোখে ফের তাকায় প্রণববাবুর দিকে… নিজেই বিড়বিড় করে বলে ওঠে, ‘আমি করলাম মেসেজ? কিন্তু… কখন?’ ফের তাকায় সামনে মেলে রাখা মেসেজটার দিকে… তারপরই যেন হটাৎ করে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়… মুখটা সহসা উজ্জল হয়ে ওঠে… স্মিত হেসে ঘাড় নেড়ে বলে, ‘হুম… বুঝেছি… আর কিছু বলতে হবে না…’।

প্রণববাবুও ফের যাবার জন্য ঘোরেন… কিন্তু পেছন থেকে পৃথার আবার প্রশ্ন ভেসে আসে, যেন নিজে কিছু ব্যাপারে সঠিক হবার জন্যই প্রশ্নটা তাঁকে করা, ‘আচ্ছা মিঃ কর্মকার, আর একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল…’

‘হ্যা, বলুন…’ আর একটা কোন অস্বস্থিকর প্রশ্ন আসছে বুঝে গোবেচারার মত মুখ করে ঘুরে দাঁড়ান ভদ্রলোক…

‘আপনাকে দরজা কে খুলে দিল মিঃ কর্মকার?’ চোখটাকে তীক্ষ্ণ করে তাকিয়ে থাকে প্রণববাবুর মুখের পানে পৃথা।

‘দরজা…’ ঢোক গেলেন ভদ্রলোক… ‘না… মানে… বোধহয় খোলাই ছিল… মনে হয়…’ কোন রকমে আমতা আমতা করে জবাব খোঁজার চেষ্টা করেন।

আর কিছু বলে না পৃথা… ঠোঁটের হাসিটা আরো খানিকটা শুধু চওড়া হয় তার মুখের… সারা শরীরটা একটা ভিষন ভালো লাগায় ভরে ওঠে… অসম্ভব হাল্কা লাগে নিজেকে… শরীরের সমস্ত কষ্ট যেন নিমেশে উধাও হয়ে গিয়েছে… বেডরুম থেকে দ্রুত পায়ে প্রণববাবুকে বেরিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখের দৃষ্টিতে মিশে থাকে কৌতুক।

ভদ্রলোক বেডরুম থেকে বেরিয়েই ফের ফিরে আসেন, সাথে একটি মেয়ে… ‘ওহ! মিস মুখার্জি… এ হচ্ছে কাজল…’

পৃথা জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় মেয়েটির দিকে… ছোট্ট খাট্টো চেহারার গোটা কুড়ি বছরের মেয়েটি… গায়ে একটি কম দামী হলেও বেশ পরিষ্কার চুড়িদার পরে রয়েছে… মুখটা বেশ মিষ্টি… মাথায় সিদুরের হাল্কা চিহ্ন প্রমাণ দেয় যে মেয়েটি বিবাহিত… এত অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছে?… অবস্য এদের আর্থসামাজিক অবস্থানে সেটাই স্বাভাবিক… পৃথা নজর করে মেয়েটিও এক নজরে তাকিয়ে রয়েছে তারই দিকে…

‘এ… কে? মিঃ কর্মকার?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘মানে, ও আগে এই ফ্ল্যাটেই অর্নবের কাছে কাজ করতো… খুব বিশ্বাসী… এই কাছেই থাকে… অনেক ছোট বেলায় এসেছিল… এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছে, বিয়েও হয়ে গিয়েছে… খুব ভালো মেয়ে… মাঝের কিছুদিন ওই ইন্সিডেন্টটা ঘটার পর আমরা আসতে বারণ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু আজ তাই ওকে আবার সাথেই নিয়ে এসেছি… আজ থেকে ও আপনার কাছেই কাজ করবে… আপনার কোন অসুবিধা হবে না… খুব কাজের মেয়ে… সব কিছু সামলে নেবে…’ এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেন ভদ্রলোক।

‘কিন্তু আমি একা থাকি… সেখানে ও…’ কথা শেষ হয় না পৃথার, তার আগেই প্রণববাবু বলে ওঠেন, ‘আপনি একা থাকেন বলেই তো ওকে আনা… আপনার হাতে হাতে থাকবে… দেখবেন আপনার খুব উপকারে লাগবে… এমনিতেই বুঝতে পারি যে এই ভাবে সংসারের কাজ করার অভ্যাস নেই আপনার, আর তাছাড়া আপনি অফিস করেন, সেখানে এই ধরনের একটা হেল্পিং হ্যান্ড আপনার খুব উপকারে লাগবে…’ বলেই কাজলের দিকে ফিরে বলেন, ‘দিদিমনিকে সব সময় দেখাশুনা করবি, বুঝেছিস… ওনার যেন কোন অসুবিধা না হয়… যা বলবেন, মন দিয়ে শুনবি… কেমন?’

ঘাড় হেলায় কাজল, প্রণববাবুর কথায়।

‘না, সে তো না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমি তো অফিস বেরিয়ে যাবো… ও কি সারাদিন থাকবে?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘না, না, ও সকালে আসবে, আপনি বলে দেবেন কখন আসলে সুবিধা হবে আপনার… সেই মতই সময় করে এসে কাজ করে দিয়ে যাবে… রান্নাটাও খুব ভালো করে ও… সেটাও সামলে নেবে… আর সন্ধ্যেবেলাতে আপনি অফিস থেকে ফিরলে না হয় ও আরো একবার আসবে’খন…’ বলেন প্রণববাবু।

‘আমার দরকার খুব একটা যে ছিল তা নয়… একাই তো বেশ চালিয়ে নিচ্ছিলাম… হ্যা, মাঝে অবস্য ভাবছিলাম যে একটা লোক পেলে ভালো হয়, কিন্তু… আচ্ছা, ঠিক আছে… তবে সকালে আসলেই হবে, সন্ধ্যেবেলায় আর আসার প্রয়োজন নেই… আমি একা মানুষ… এক বেলা একটু হাতে হাতে কাজ করে দিলেই হবে…’ বলে কাজলের দিকে ফিরে বলে, ‘কি পারবে তো?’

ঘাড় হেলিয়ে বলে ওঠে মেয়েটি, ‘হ্যা, হ্যা, দিদিমনি, দেকবেন আপনার কোন অসুবিদা হবে না… আপনি যেমনটি বলবেন, আমি ঠিক তেমনটি করে দেব…’

‘হু… বুঝলাম… তা মাইনে কত নেবে?’ মনে মনে ভাবে পৃথা, এটাই আসল প্রশ্ন।

‘ও নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না… ওটা ওর সাথে আমার কথা হয়ে গিয়েছে…’ তাড়াতাড়ি করে উত্তরটা দেয় প্রণববাবু।

ভুরু কোঁচকায় পৃথা, ‘আমার কাজ করবে আর ওর মাইনে নিয়ে আমি চিন্তা করবো না, মানে? সেটা আবার হয় নাকি?’

‘না, মানে… সেটা বলতে চাইনি ঠিক… আসলে ও আগে যা মাইনে তে কাজ করতো, সেটাই ও পাবে… তাতেই ও রাজি…’ কাঁচুমাচু মুখে উত্তর দেয় ভদ্রলোক।

‘না, সেটা কত, সেটা তো আমাকে জানতে হবে… মাইনেটা তো আমি দেব… আপনি তো আর নয়…’ বলে পৃথা।

‘হ্যা, সেটা তো বটেই… ওই দেড় হাজার টাকা ও পেতো আগে…’

‘দেড় হা-জা-র? এটা একটু বেশিই নয় কি প্রণববাবু?’ টাকার অ্যামাউন্টটা শুনে একটু যেন অসন্তুষ্ট হয় পৃথা।

‘না মানে, ও আগে এটাই তো পেতো, তাই… তবে সব কাজই ও করবে… সব… রান্নাটাও করে দেবে আপনাকে…’ কাজলের হয়ে সাফাই গায় প্রণববাবু। ওনার কথার ধরন দেখে পৃথার যেন মনে হয় কাজলকে কাজে রাখার ব্যাপারটায় ওনার ওপরে আর কারুর কড়া নির্দেশ রয়েছে, তাই যে করেই হোক কাজলকে কাজে বহাল করতেই হবে। তারপরই দুম করে বলে বসেন, ‘আচ্ছা, আপনি ওকে পাঁচশ টাকাই দেবেন’খন…’

অবাক হয় পৃথা, ‘একেবারে দেড় হাজার থেকে পাঁচশতে নেবে গেলেন… ব্যাপারটা কি হলো? বাকি টাকাটা কে দেবে? আপনি?’

‘সে আপনাকে ভাবতে হবে না… ওটা ঠিক হয়ে যাবে…’

‘না, না, মিঃ কর্মকার, ঠিক হয়ে যাবে মানে? ও আমার কাজ করবে আর মাইনের বাকি টাকা অন্য কেউ দেবে… এটা আবার কেমন কথা?’ চোখ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

পৃথার মনে হল যেন ভদ্রলোককে কেউ ফাটা বাঁশের মধ্যে আটকে দিয়েছে… ব্যাপারটা নিয়ে এতটা জল ঘোলা হবে, সেটা বোধহয় উনি ঠিক আশা করেন নি… তাই কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না… ওনার অবস্থা দেখে মনে মনে হাসে পৃথা, কিন্তু মুখের সিরিয়াস ভাবটা সরায় না… এবার কাজলের দিকে ফিরে বলে, ‘ঠিক আছে… বুঝেছি… তুমি ওই দেড় হাজারই পাবে… ওটাই আমি দেব… তবে ঠিক মত কাজ করবে তো? আর হ্যা, রান্না সবসময় করার দরকার নেই, ওটা আমিই করে নেবো’খন… আমার রান্না করতে ভালোই লাগে, শুধু একটু হাতে হাতে এগিয়ে দিলেই হবে, বাকিটা আমিই সামলে নেব।’

এত্তো বড় একটা ঘাড় নেড়ে বলে ওঠে কাজল, ‘এক্কেবারে দিদিমনি… কোন এদিক সেদিক হবে না… এক্কেবারে ফাস্ট কেলাস কাজ পাবেন…’

ওর ফাস্ট কেলাস বলার ধরনে আর হাসি চেপে রাখতে পারে না পৃথা, ফিক করে হেসে ফেলে। ওকে হাসতে দেখে প্রণববাবুও হাসেন।

‘একটা কথা ভাবছিলাম মিঃ কর্মকার, কাজল যে আমার কাছে কাজ করবে, তাহলে ও অন্য বাড়ির কাছ কি হবে? প্রশ্ন করে পৃথা।

প্রণববাবু কিছু বলার আগেই উত্তরটা দেয় কাজলই, ‘ও সব তুমি চিন্তা কোরো না দিদিমনি, আমি সব সামলে নেব… আজকে তো ফোন করে বলেই দিয়েচি যে আমি আজ যাবো না… আমার পেট খারাপ হয়েচে… আর কাল থেকে আমি সব ঠিক করে নেব… আগে সকালে এসে তোমার কাজ সারবো, তারপর অন্য বাড়ি যাবো…’

‘কিন্তু আমার তো ব্যাপারটা খারাপ লাগছে না… অন্য বাড়ির লোকেরাও অপেক্ষা করবে তোমার জন্য… আর এই ভাবে হুট করে যদি…’ বলার চেষ্টা করে পৃথা।

‘বলচি তো দিদিমনি… সব আমার ওপরে ছেড়ে দাও… দাদাবাবুর বাড়ি আগে আসবো… তারপর সব…’ হাত তুলে মাথা নেড়ে আশ্বস্ত করে কাজল। পৃথাও আর কথা বাড়ায় না।

‘আমি তাহলে আসি মিস মুখার্জি… কাজল রইলো তাহলে, কেমন…’ বলে প্রণববাবু দ্রুত বেরিয়ে যান বেডরুম থেকে… পৃথার কানে আসে বাইরের দরজাটার বন্ধ হয়ে যাবার আওয়াজ।

গায়ের চাদরটাকে সরিয়ে বিছানার থেকে নামতে উদ্যত হয়… ঘুম ভাঙার পর থেকে ঘরের মধ্যে এত লোক থাকার ফলে সকালের বাথরুমটা আর তার সারা হয়ে ওঠে নি এখনও, তলপেটটা ভারী হয়ে রয়েছে… একবার না গেলেই নয়… কিন্তু চাঁদর সরাতে গিয়েই থমকায়… ঘরের মধ্যে কাজল এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর সে কাল যখন শুয়েছিল, তখন শুধু মাত্র টি-শার্টটাই গায়ে চাপিয়েছিল, তার মানে… ভাবতে ভাবতে চাঁদরের খুটটা ধরে তুলে ভেতর দিকে নজর ফেলে… কিন্তু যা দেখে তাতে আর তাকে কাজলে সামনে অস্বস্তিতে পড়তে হবার কোন কারণ পায় না… পায়ে ওর একটা প্রিন্টেড পাতলা কটন পায়জামা পরা… তারমানে পরে কেউ… আবার একটা হাসি খেলে যায় ঠোঁটে… আর কিছু না ভেবে এবার নিশ্চিন্দে শরীরের ওপর থেকে চাঁদরটা সরিয়ে দিয়ে পা নামায় বিছানার থেকে… তারপর মেঝের দিকে তাকিয়ে খোঁজে কিছু…

‘কিচু খুঁজচো দিদিমনি?’ প্রশ্ন করে কাজল।

‘উ… না…’ আনমনে উত্তর দেয় পৃথা… আসলে ও খোঁজার চেষ্টা করছিল কালকের রাতে এনে রাখা বালতিটা… যেটাতে ওর মাথা ধুইয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্বরের সময়… কিন্তু সেটার দেখা পায় না, শুধু শুকিয়ে যাওয়া কিছু জলের রেশ পড়ে থাকতে খেয়াল করে মেঝেতে। সন্তর্পনে উঠে দাঁড়ায় বিছানার থেকে… কিন্তু উঠে দাঁড়াতেই টলে যায় মাথাটা… বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে এই একটা রাতের মধ্যেই।

দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ধরে নেয় কাজল পৃথাকে… ‘সাবধান দিদিমনি… তোমার সলিলটা একোনো খুব দুব্বল…’

কাজলের তৎপরতা দেখে ভালো লাগে পৃথার… হেসে বলে, ‘হু, ঠিক বলেছ… বুঝতে পারিনি এতটা দুর্বল হয়ে গেছি… থ্যাঙ্কস্‌…’

‘বাব্বা… থ্যাঙ্কুয়ের কি আচে গো? তুমি টলে গেলে, আর আমি ধরবো না? কলঘরে যাবে তো? চলো, আমি তোমায় নিয়ে যাই…’

‘না না, তোমাকে আবার যেতে হবে না… আমি নিজেই যেতে পারবো ঠিক…’ বলে ফের চেষ্টা করে এগোবার… কিন্তু কাজল পৃথার হাত ছাড়ে না… ‘না না দিদিমনি… একোন পারবে না… তুমি আমাকে এত পর পর ভাবচো কেন? দেকো, আমি কিন্তু এ বাড়িতে নতুন না… একানের সব কিচু আমার চেনা… তুমি কোনো চিন্তা কোরো না… আমি একা হাতে তোমার সংসারটা কেমন গুচিয়ে দিই দেকবে… কোন বোলতি থাকবে না…’

‘আমার সংসার গুছিয়ে দেবে…?’ কাজলের কথায় হেসে ফেলে পৃথা… আর কথা বাড়ায় না… ধীর পায়ে বাথরুমের দিকে অগ্রসর হয় কাজলের হাত ধরে। ওকে একেবারে বাথরুমের মধ্যে নিয়ে যায় কাজল, হাত বাড়িয়ে দেওয়ালটাকে ধরে পৃথা বলে, ‘এবার তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও কাজল, আমি ঠিক আছি…’

‘ঠিক বলচো তো দিদিমনি… পারবে তো?’ তবুও নিসন্দেহ হতে চায় কাজল।

‘হ্যা রে বাবা হ্যা… তুমি যাও দিকি…’ হাসি মুখেই ধমকায় কাজলকে। কাজল ওকে ছেড়ে বাথরুমের বাইরে এসে দাঁড়ায়, ‘আমি একানেই দাঁড়িয়ে রইলুম… তোমার হলে বলো, আবার নিয়ে যাবো…’

কোমর থেকে পায়জামাটা নামিয়ে কোমডে বসে পৃথা… বসার সাথে সাথেই ছরছর শব্দে জমে থাকা শরীরের জল বেরিয়ে আসে… এই রকম শব্দ হওয়াতে কেমন লজ্জা লাগে ওর… আগে একা থাকতো, তাই যেমন খুশি তেমনি ভাবেই চলতো… কিন্তু এখন বাথরুমের বাইরেই কাজল দাঁড়িয়ে… যদি হিসি করার আওয়াজ শোনে? অস্বস্তি হয় তার, কিন্তু কি আর উপায়!

ফ্ল্যাশের আওয়াজ পেতেই কাজল দরজা ঠেলে বাথরুমে ঢোকে… তখনও ও নিজের পায়জামাটা তোলার সুযোগ পায় নি… দুম করে কাজল ঢুকে পড়াতে থতমত খেয়ে যায়… ওকে এই রকম অপ্রস্তুত হতে দেখে কাজলের কিন্তু কোন হোলদোল দেখা যায় না… এগিয়ে এসে ঝুঁকে পায়জামাটাকে ধরে পৃথাকে পড়তে সাহায্য করে… মনে মনে খুশিই হয় পৃথা। কাজল ওকে ধরে থাকে, আর পৃথা বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁতটা মেজে মুখ ধুয়ে নেয়। তারপর মুখ ধোয়া হলে কাজলকে ধরে ধীর পায়ে ফিরে যায় বেডরুমে।

পৃথাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের চাঁদরটাকে টেনে দেয় কাজল। তারপর বন্ধ জানলার দিকে এগিয়ে গিয়ে খুলে দেয় শার্শিগুলো… বাইরে তখন আর বৃষ্টি নেই… ঝলমলে রোদ উঠেছে… জানলাটা খুলে দিতেই সকালের মিঠে বাতাসে ঘরটা ভরে যায়। জানলার কাছ থেকে সরে এসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কাজল… পৃথা চুপ করে শুয়ে ভাবতে থাকে কাল রাত থেকে এখন অবধি ঘটনার প্রবাহটাকে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই ফের ফিরে আসে কাজল ঘরের মধ্যে, ‘ঘরে তো সে রকম কিছুই নেই দেকলাম, ফ্রীজও ফাঁকা…আমাকে পঞ্চাশটা টাকা দাও তো…’ বলতে বলতে বিছানার পাশে, পৃথার সামনে এসে দাঁড়ায় সে।

‘টাকা নিয়ে কি করবে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘চিকেন আনতে হবে না? আর পাঁউরুটিও আনবো… তোমাকে উনি একোন জ্বরের মুখে ভালো মন্দ খাওয়াতে বলে গেচেন… তাই একোন সকালে তোমাকে চিকেন সুপ বানিয়ে দেব… আর সেই সাথে টোস্ট… তাই একটু বাইরে যেতে হবে ও গুলো আনতে… দাও… টাকা দাও…’ বলে ওঠে কাজল।

পৃথার বুঝতে অসুবিধা হয় না ইতিমধ্যেই কাজল ওর কথামতো সংসারের দ্বায়িত্ব তুলে নিয়েছে… এখন থেকে ওর কথা মতই চলতে হবে তাকে নাকি? কিন্তু কোন বিরক্ত আসে না মনের মধ্যে তার কাজলের এই স্বতস্ফুর্ততায়, সে বলে, ‘বাইরের ঘরে দেখ আমার ব্যাগটা আছে, নিয়ে এসো…’

ঘর থেকে বেরিয়ে হাতে ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসে… ‘আচ্চা দিদিমনি, তুমি আমাকে সেই ফাস্ট থেকে তুমি তুমি করচো কেন বলতো? তুই করে বলতে পারো না? আমাকে তো দাদাবাবু তুই করেই বলতো…’

‘তোমার দাদাবাবু বলতো বলেই আমাকে বলতে হবে?’ হেসে বলে ওঠে পৃথা।

‘হ্যা, বলবে, আর তাচাড়া তুই বলে বললে না বেশ আপন আপন সোনায়… ওই তুমির মধ্যে সেটা থাকে না…’ মাথা নেড়ে নেড়ে বলে কাজল।

‘তাই? তুই বললে আপন শোনায়?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘সোনাই তো… আমার তুই করে বললেই বেসি ভালো লাগে…’

‘বেশ.. তাই না হয় বলবো… আবার যখন তোমার দাদাবাবু বলতো… তখন আমাকে তো বলতেই হবে, তাই তো?’ বলে পৃথা।

‘ডাকতোই তো দাদাবাবু তুই করে… হেব্বি ভালো লোক ছিল, জানো…’ মাথা নেড়ে বলে কাজল।

‘তাই? খুব ভালো লোক ছিল?’ একটু কৌতুহলী হয়ে ওঠে পৃথা।

‘ছিলই তো… কোনদিন কক্কোনো আমাকে বোকতো না… আমিই তো বলতে গেলে সামলাতাম সব কিচু… দাদাবাবু সংসারের কিচ্চুটি দেকতো না…’

‘মানে তুই গিন্নি ছিলিস, বল্‌…’

‘এ মা, না, না, সেই রকম নয় গো…’ তাড়াতাড়ি হাত নেড়ে প্রতিবাদ করে ওঠে কাজল।

হাসে পৃথা… ‘বুঝেছি… আমাকে আর বোঝাতে হবে না তোকে, তুই বরং টাকাটা নে… আর পালা…’

পৃথার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কাজল। হটাৎ মনে হতে পৃথা হাঁক পাড়ে, ‘বেরিয়ে গেছিস নাকি?’

ও ঘর থেকে কাজলের গলা আসে, ‘না দিদিমনি, এই বেরুচ্চি, কিচু লাগবে?’

‘দেখ টেবিলের ওপরে বোধহয় আমার মোবাইলটা আছে, একটু দিয়ে যা না…’

মোবাইল নিয়ে ঘরে ঢুকে পৃথার দিকে বাড়িয়ে দেয় কাজল। ওর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে হেসে বলে ‘থ্যাঙ্কস্‌’।

‘আবার ওই সব… বলেচি না ও সব থ্যাঙ্কু ট্যাঙ্কু আমায় বলবে না…’ বলতে বলতে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে…

‘ফ্ল্যাটের চাবিটা যাবার সময় নিয়ে যেতে ভুলিস না…’ গলা তুলে বলে ওঠে পৃথা

‘আচ্চা…’ কাজলের উত্তর আসে ড্রইংরুম থেকে, দরজা বন্ধ হয়ে যাবার শব্দ হয়।

মোবাইলটাকে পাশে রেখে একটু অপেক্ষা করে বিছানায় শুয়ে চুপ করে… তারপর মৃদু গলায় ডাক দেয়, ‘অর্নব… আছো?’

কোন উত্তর আসে না।

খানিক চুপ করে থাকে আরো পৃথা, তারপর ফের ডাকে, ‘অর্নব… আমি জানি তুমি আছো এই ঘরেই… একটু এসো না… ডাকছি তো…’

কোন উত্তর নেই।

আরো কয়’এক মুহুর্ত কেটে যায়… আর ডাকে না পৃথা, বিছানায় শুয়ে শুধু চুপ করে অপেক্ষা করে… তাকিয়ে থাকে বেডরুমের দরজার পানে। নিশব্দ ফ্ল্যাটের মধ্যে শুধু মাত্র ড্রইংরুমের বড় দেওয়াল ঘড়িটার টিকটিক আওয়াজটা ভেসে বেড়ায়।

হটাৎ বিছানার পায়ের কাছটার ফাঁকা জায়গাটা ভারী কিছুর চাপে দেবে, নেমে যায় খানিক… যেমন কারুর দেহের ভারে হয়ে থাকে। পৃথার মুখটা উজ্জল হয়ে ওঠে।



২০।।

বিছানার একটু ভেতর দিক করে সরে শোয় পৃথা… ‘আমি জানতাম তুমি আসবে… তুমি অশরিরী কি অশরিরী নও… সে কন্ট্রোভারসারির মধ্যে আমি যেতে চাই না… শুধু জানি তুমি আছো… এবং ভিষন ভাবেই আছো… আমি প্রতিটা মুহুর্তে তোমায় অনুভব করতে পারি… তাই তুমি আমার ডাক অস্বীকার করতেই পারো না… সে ব্যাপারে আমি একশ শতাংশ সুনিশ্চিত…’ পাশের খালি জায়গাটায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘অত দূরে বসেছ কেন… এখানটায় এসে বসো…’

বিছানার চাঁদরে কোন ভাঁজ পড়ে না সে বলার পরও, ‘কই, এখানটায় এসো…’ বালিশ থেকে মাথাটা একটু তুলে আবার ডাক দেয় পৃথা।

এবার বিছানার পায়ের কাছের জায়গাটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে… দেবে যায় তার পাশের জায়গাটা। হাসি ছড়িয়ে পড়ে পৃথার মুখে… বালিশে মাথাটা ফের রেখে দিয়ে ডান হাতটাকে শূন্যে তুলে ধরে বলে, ‘আমার হাতটাকে ধর…’

ওই ভাবে শূণ্যেই থাকে পৃথার হাত, কেউ ধরে না এগিয়ে এসে। ‘কই… ধরবে না? আমি কিন্তু এতক্ষন হাতটা তুলে ধরে রাখতে পারছি না… এখনও দূর্বল আমি…’ গলার স্বরে আদর মিশে থাকে তার।

এবার পৃথার হাতের তালুটা একটা নিরাকার সবল পুরুষালী হাতের মুঠোয় ধরা পড়ে… পৃথার সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলে যায় যেন… মনে হয় হাত নয়, সে ভুল করে খোলা কোন বিদ্যুতের তারে হাত ছুঁইয়ে কারেন্ট খেল… মাথার মধ্যেটায় কেমন বোঁ বোঁ করতে শুরু করে দেয়… পেটের মধ্যে মনে হয় হাজারটা প্রজাপতি ছটফট করছে… বুকের মধ্যে হৃদপিন্ডটার গতি নিশ্চয় চার কি পাঁচ গুন বেড়ে গিয়েছে… গলার মধ্যেটা কেমন শুকিয়ে আসে… নাকের পাটা ফুলে বড় বড় নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করে… বুকটা হাপড়ের মত ওঠে, নামে… কপালের ওপরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে… একি হচ্ছে ওর মধ্যে? এরকম কেন হচ্ছে তার? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে মনে মনে… নাকি সেটা করতেও ভুলে গিয়েছে ওই পরশের আবেশে? সাধারনতঃ মেয়েদের যে লজ্জা শরম এসে এই সময় ভীড় করা উচিত, কই, সেই রকম কোন অনুভূতি তো তার মধ্যে আসছে না, আসার কথাও নয়, কারণ ওই ধরণের মেয়েলী আচার আচরণ সে কোনদিনই করে উঠতে পারে নি, কিন্তু তাই বলে এখন কি হলো তার? কেমন যেন ওর সারা শরীরটায় থরথর করে কাঁপন ধরে। খানিক আগের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসিটাও কোথায় উধাও হয়ে যায়… একি স্বপ্ন? নাকি বাস্তব? এত দিন… এত দিন ধরে যেটা ও মনের গভীরে নিয়ে নাড়াচাড়া করে এসেছে প্রতি নিয়ত… সেটা সত্যিই… সত্যিই আজ তার হাতটা অর্নবের হাতের মুঠোয়… উফ্‌… এবার নিশ্চয় ও পাগল হয়ে যাবে আনন্দে… বাঁ হাতটা তুলে রাখে তার ডান হাতটাকে মুঠো করে ধরে রাখা নিরাকার হাতটার ওপরে… আহঃ… এই তো… কর্কশ একটা পুরুষালী হাত… এটা আঙুলগুলো… এটা হাতের পীঠ… কবজি… বুড়ো আঙুল… বাঁ হাতটাকে ওই না দেখতে পাওয়া অদৃশ্য হাতটার ওপরে বুলিয়ে বুলিয়ে অনুভব করতে থাকে পৃথা। হাতটাকে ছুয়ে দেখার সময় কিছুতেই নিজের হাতদুটোকে স্থির রাখতে পারে না সে… থরথর করে কেঁপেই চলেছে তার হাতদুটো… এটা কি জ্বরের দুর্বলতায়? নাকি মানসিক অস্থিরতায়? কেমন সমস্ত কিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে আজ পৃথার… কাঁপা হাতেই অদৃশ্য হাতটাকে ধরে টেনে রাখে নিজের গালের ওপরে… চোখ বন্ধ হয়ে আসে আপনা থেকেই… গালের ওপরে হাতটাকে নিয়ে বুলিয়ে অনুভব করতে থাকে সেটার স্পর্শ নিজের ত্বকের ওপরে… আহ্‌… একি অপার্থিব অনুভুতি… আগে তো কতজনের ছোয়াই না সে পেয়েছে নিজের মুখের ওপরে… বাবা, মা, বন্ধু, বান্ধব… কিন্তু কই… এই রকম তো অনুভূতি কখনও হয়নি তার… এই রকম কাঁপুনি তো কেউ ধরাতে পারে নি তার শরীরে… তবে আজ কেন এমন হচ্ছে? কেন কিছুতেই নিজেকে নিজের বশে ধরে রাখতে পারছে না সে? তবে কি… তবে কি… আর ভাবতে পারে না… তার সমস্ত বোধ বুদ্ধি কেমন হারিয়ে যাচ্ছে… গালের ওপর থেকে হাতটাকে তুলে খুলে, মেলে ধরে আন্দাজ করে, তারপর সেই খোলা হাতের তালুটার মধ্যে নিজের মুখটাকে গুঁজে দেয়… আহঃ… কি প্রশান্তি… জোরে শ্বাস টেনে গন্ধ নেয় সেই না দেখা হাতের… হাতের তালুটাকে চেপে ধরে নিজের তপ্ত ঠোঁট দিয়ে… পাগলের মত চুমু খেতে থাকে একের পর এক… খেয়েই চলে… প্রান ভরে… নিজের মুখেরই লালা লেগে, মেখে যায় হাতের তালুর মধ্যে… লাগুক… ভিজে যাক তার লালায় হাতটা… যা খুশি সে করতে পারে… সম্পূর্ণ অধিকার আছে তার যা খুশি করার… এ শুধু তার… শুধু তার… মনে মনে ভাবে পৃথা… লালায় ভিজে ওঠা হাতটাকে নিয়ে নিজের সারা মুখে মাখিয়ে দিতে থাকে বুলিয়ে বুলিয়ে… আজ বোধহয় পাগলই হয়ে যাবে সে।

ধীরে ধীরে ওই ভাবেই হাতটাকে নিজের দুই হাতের মুঠোয় ধরে রেখে আস্তে আস্তে নামায় নীচের পানে… নাক, ঠোঁট, চিবুক, গলা হয়ে হাতটাকে নামিয়ে নিয়ে আসে নরম বুকের ওপরে… চেপে ধরে দুটো কোমল গোল মাংসপিন্ডের মাঝে। এবার কেঁপে ওঠার পালা বোধহয় অদৃশ্য হাতের… নরম স্তনের স্পর্শ পেতেই গুটিয়ে, সরে যাবার চেষ্টা করে নিরাকার হাতটা… সরে যাবার চেষ্টা করে পৃথার মুঠো ছাড়িয়ে নিয়ে সসংকোচে… কিন্তু পৃথা মুঠো আলগা করে না… সরাতেও দেয়না হাতটাকে নিজের বুকের ওপর থেকে… জোর করে চেপে রাখে… টি_শার্টের ওপর দিয়েই ছুইয়ে রাখে নিজের নরম স্তনদুটোতে… পৃথার অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন অনুভূত হয় হাতের ওপরে… হাতটাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে চোখ খুলে তাকায় পৃথা… শূন্যের পানে… চোখের মধ্যে তখন একরাশ ভালোবাসা উপচে পড়ছে… আর চোখ থেকে চুইয়ে বেরিয়ে এসে সেই সৃষ্টিছাড়া ভালোবাসাটা মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে সারা মুখমন্ডলে।

একটা ভরাট গলার স্বর ফিসফিসিয়ে বলে পৃথার খুব কাছ থেকে… ‘হাতটা ছাড়ো তিতির…’

‘না… ছাড়বো না…’ জেদি গলায় উত্তর দেয় পৃথা… মুঠোয় ধরে থাকা অদৃশ্য হাতটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে নিজের বুকের ওপরে… একটা স্তন দেবে যায় হাতের চাপে।

‘এ রকম পাগলামী করতে নেই… ছাড়ো এবার…’ আবার অনুরোধ করে অশরীরি।

‘না বললাম তো…’ হাতটাকে ধরে রগড়ায় নিজের নরম বুকের ওপরে… উত্তেজনায় শক্ত নুড়ি পাথরের মত হয়ে ওঠা বোঁটাটা যেন বিঁধে যেতে থাকে সেই অদৃশ্য হাতের তালুতে।

‘কি চাও?’ প্রশ্ন করে নিরাকার গলার স্বর।

‘তোমায়…’ ছোট্ট উত্তর দেয় পৃথা।

‘কিন্তু এ যে হয় না… এ হতে পারে না… সেটা বোঝার চেষ্টা করো… তুমি যা চাইছো… সেটা কোনদিনই সম্ভব হবে না…’ বোঝাবার ভঙ্গিতে ফের বলে ওঠে স্বরধ্বনি।

‘কেন হবে না? কিসের অসুবিধা? তুমি তো এখন বিবাহিতও আর নও… তাহলে কেন তুমি আমার হবে না?’ চোখ সরু করে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘সেটা কথা নয় তিতির… বিবাহিত হওয়া না হওয়াটাই শেষ কথা নয়…’ উত্তর দেয় না দেখা অর্নব।

‘তবে? আমি কি দেখতে কুৎসিত?’ অভিমান ভীড় করে আসে পৃথার গলায়।

‘তুমি আমার দেখা সব থেকে মিষ্টি একটা মেয়ে… কে বলে তুমি কুৎসিত? তোমার থেকে এত সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়?’ শান্ত গলায় বলে অর্নব।

‘লিন্ডার থেকেও সুন্দর?’ প্রশ্নটা বেরিয়ে আসে পৃথার মুখ থেকে।

একটু চুপ করে থাকে সেই অশরীরি খানিক, তারপর গাঢ় স্বরে বলে, ‘লিন্ডা বিদেশী ছিল… ও এখন আর বেঁচেও নেই, তাই ওর ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না… আর তা ছাড়া ওর সৌন্দর্য আর তোমার সৌন্দর্যের মধ্যে অনেক ফারাক… বলতে আমার দ্বিধা নেই, ও ছিল সত্যিই প্রকৃত সুন্দরী… কিন্তু সৌন্দর্যের সাথে যখন অসম্ভব মিষ্টতা আর নিষ্পাপতার মিশেল ঘটে, তখন আর সেটা শুধু সুন্দরের সঙ্গায় পড়ে থাকে না… তুমি তাই…’

‘তাহলে হাতটা টেনে নিতে চাইছ কেন?’ গলা নামিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা, গালের ওপরে লালীমার আভা খেলা করে।

‘তুমি যা চাইছ, সেটা হবার নয় বলেই হাতটা টেনে নিতে চাইছি… এটা তোমাকেও বুঝতে হবে…’ ফের বোঝাবার চেষ্টা করে অশরীরি।

‘আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না… আমি যা চাই, তুমি সেটা কি বুঝেছ?’ একটু গলার স্বর তোলে পৃথা।

কোন উত্তর দেয় না অশরীরি… চুপ করে থাকাই বোধহয় শ্রেয় বিবেচনা করে।

‘কি হলো? কিছু বলছো না যে? শোনো… আমি শুধু তোমাকে চাই… শুধু তোমায়… আমি চাই শুধু তোমার হতে… একেবারে… সারা জীবনের জন্য… শুধু তো-মা-র…’ শেষের কথাটা বেশ জোরের সাথে টেনে টেনে বলে পৃথা।

এরপরও কোন উত্তর আসে না অশরীরির থেকে। অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে পৃথা… হাতের মুঠোয় ধরা অদৃশ্য হাতটাকে ধরে ঝাঁকিয়ে বলে ওঠে… ‘কি হোলো… বলো কিছু… এই ভাবে তুমি চুপ করে থাকতে পারো না…’ বলতে বলতে হাঁফাতে থাকে উত্তেজনায়।

‘দেখো… তুমি অসুস্থ… এখনো অনেক দুর্বল… সবে তোমার জ্বরটা ছেড়েছে… এখন এই ভাবে উত্তেজনা তোমার পক্ষে ঠিক নয়… আমরা পরে না হয় এই নিয়ে কথা বলবো…’ শান্ত গলায় বোঝায় শরীরহীন স্বর।

‘না… পরে নয়… আজ… এক্ষুনি…’ জেদি গলায় বলে ওঠে পৃথা… অর্নবের না দেখা হাতটা তুলে গালের ওপরে ছোয়ায়… নিজের ত্বকের ওপরে অর্নবের স্পর্শে এক অপরিসিম ভালো লাগায় ভরে ওঠে মনটা।

এবার আর হাতটা টেনে নেবার প্রয়াশ করে না অশরীরি… একটুক্ষন চুপ থেকে ফের বোঝানোর সুরে বলে, ‘তুমি যা চাইছ, সেটা হয় না তিতির… আমি… আমি…’ বলতে বলতে থেমে যায়।

‘কি আমি? বলো…’ অধৈর্য পৃথা তাড়া দেয়।

‘দেখো তিতির… আজ আমি যদি একটা সাধারণ স্বাভাবিক আর পাঁচটা লোকের মত হতাম, তাহলে অন্য কথা ছিল… কিন্তু আমি যে থেকেও নেই… বুঝতে পারছ, আমি কি বলতে চাইছি?’ শেষের কথাটা বলার সময় গলাটা ধরে আসে কায়াহীনের।

‘এই তো তুমি আছো… আমার পাশে… আমায় ছুঁয়ে… তবে কেন বলছো তুমি নেই?’ বাচ্ছা মেয়ের মত অবুঝ গলায় প্রশ্ন করে পৃথা।

‘আমার এ থাকা যে না থাকার থেকেও কতটা নির্মম, তুমি বুঝবে না তিতির… এ যে কত কষ্টের সেটা কি করে বোঝাই তোমায়…’ ধরা গলায় বলে ওঠে না দেখা শরীরের স্বর।

তাড়াতাড়ি অর্নবের হাতটাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে পৃথা… শূন্যে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাতড়ায়… হাত ঠেকে একটা লোমশ প্রশস্ত বুকের ওপরে… হাত বোলায় হাতের নাগালে পাওয়া অদৃশ বুকটায়… অনুভব করতে থাকে সেই না দেখতে পাওয়া শরীরটাকে… পেশিবহুল লোমশ বুক, হাত, কাঁধ, গলা… হাতে ঠেঁকে ঝুলতে থাকা মোলায়েম বড় বড় দাঁড়ির গোছায়… দুহাত তুলে আঁচলা করে ধরে মুখটাকে… তারপর আবার ডান হাতের তালু ঘসতে থাকে সেই মুখটার ওপরে… দাঁড়ি, ঠোঁট, গোঁফ, নাক, চোখ, ভুরু, কপাল, চুল… নিজের চোখটাকে বন্ধ করে ছবিতে দেখা অর্নবের মুখটাকে ভাসিয়ে রাখে চোখের সন্মুখে… আহ্‌… এই তো আমার অর্নব… এই তো… দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের নিরাররণ শরীরটাকে… মুখটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখে তার সেই প্রশস্ত বুকের ওপরে… ‘আহহহহ… কি শান্তি… আমার অর্নব… উম্‌ম্‌… শুধু আমার…’ জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলে ওঠে পৃথা… নিজের মুখটা ঘসতে থাকে ওই লোমশ বুকটায়… ‘মন খারাপ করো না গো… আর কোন কষ্ট তোমায় পেতে দেবো না… আমি তো আছি… আমি তোমাকে আর মন খারাপ করার সুযোগ দেবো না… দেখে নিও.. শুধু তুমি আমাকে নাও… আমাকে তোমার করে নাও অর্নব… আমি যে আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না…’ বলতে বলতে আরো এগিয়ে বসে পৃথা, নিজের শরীরটাকে প্রায় ঢুকিয়ে দেয় সেই অশরীরির শরীরের মধ্যে… নিজের বুকের ওপরের ব্রা-হীন নরম গোল সুগঠিত মাংসপিন্ডদুটো একেবারে চেপে বসে যায় বিদেহী পুরুষালী নগ্ন পেটের ওপরে।

এই ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরার ফলে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না অশরীরি… চেষ্টা করে নিজের শরীরটাকে পৃথার আলিঙ্গন থেকে পেছিয়ে নিতে, কিন্তু যে ভাবে পৃথা ওকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে, তাতে ওর পক্ষে সম্ভব হয়না নিজেকে বাঁচাতে… খুব কুন্ঠিত গলায় বলে, ‘এই রকম পাগলামী করে না তিতির… ছাড় আমায়… তুমি এখনও অসুস্থ… শুয়ে পড়ো…’

‘না ছাড়বো না… আমার অর্নবকে আমি পেয়ে গিয়েছি… আর ছাড়বো না কোনদিন…’ লোমশ বুকের মধ্যে মুখটাকে গুঁজে বলে ওঠে পৃথা… শ্বাস টেনে ঘ্রাণ নেয় নিজের কাছে পাওয়া প্রিয়তমের শরীরের।

‘কিন্তু এই রকম ভাবে কি একটা সম্পর্ক তৈরী হতে পারে? তুমিই বলো?’ বলে অর্নব।

‘পারে… নিশ্চয়ই পারে…’ জেদি গলায় বলে ওঠে পৃথা… মুখটাকে ঘসে বুকের লোমে… আজ তার মনে হয় যেন পৃথিবীটাই পুরো পেয়ে গিয়েছে এই বুকটার মধ্যে।

‘না… পারে না…’ এবার একটু দৃঢ় কন্ঠেই বলে অশরীরি… ‘এটা হয় না… বোঝো তুমি… আমার কোন শরীর নেই… আমি শুধুই শূণ্য… সেখানে তুমি এই নিরাকারের সাথে জীবনটাকে জড়াতে পারো না… এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই তিতির…’ বলে এবার পৃথার বাহুদুটোকে হাতের মুঠোয় ধরে প্রায় জোর করেই নিজের শরীর থেকে টেনে আলাদা করে দেয়…

জলে ভরে ওঠে পৃথার চোখদুটো… শুধু একবার চোখ তুলে শূন্যের পানে তাকিয়ে মুখটা নামিয়ে নেয়।

‘তুমি কাঁদছ?’ শশব্যস্ত হয়ে ওঠে অশরীরি… ‘প্লিজ কেঁদো না…’

মুখে কিছু বলে না পৃথা, চুপ করে মাথা নামিয়ে বসে থাকে সে, গাল বেয়ে টসটস করে গড়িয়ে পড়ে জলের ফোঁটা।

‘আছা পাগল মেয়ে তো…’ বলে নিজেই আবার পৃথার বাহু ধরে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে… বাঁধ ভেঙে যায় যেন… অশরীরির বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে এবার হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে পৃথা… কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে তার শরীর।

মাথায় হাত রেখে চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে দিতে স্বর বলে ওঠে, ‘লক্ষ্মীটি… কাঁদছো কেন তিতির… আমি কি বলেছি যে তাতে এত দুঃখ পেলে?’

ফোঁপাতে ফোঁপাতে কান্না জড়ানো গলায় পৃথা বলে ওঠে, ‘আমাকে তোমার থেকে সরিয়ে দিলে কেন?’ বলে ফের হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে দেয়।

‘আরে আমি তো…’ বলতে গিয়ে চুপ করে যায় অশরীরি… তারপর একটু থেমে বলে, ‘আচ্ছা, অন্যায় হয়ে গেছে… এবার থামো… এই তো… তুমি আমার বুকের মধ্যেই আছো… আর কেঁদো না তাহলে…’ বলে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে পৃথাকে নিজের শরীরের সাথে… পৃথাও দুহাতের বেড়ে আঁকড়ে ধরে অদৃশ্য শরীরটাকে, নতুন করে মুখটাকে গুঁজে দেয় লোমশ বুকের মধ্যে… বেগ থামলেও, তখনো মাঝে মধ্যে শরীরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে কান্নার ধমকে… ‘তুমিই আমার অর্নব? তাই না?’ ফোঁপানোর মাঝেই প্রশ্ন করে পৃথা।

‘কেন? সন্দেহ হচ্ছে?’ এবার অশরীরির গলায় কৌতুকের মিশেল।

‘না… আমার কোন সন্দেহ নেই… তবুও তোমার মুখ থেকে একবার অন্তত শুনতে ইচ্ছা করছে… বলো না… তুমিই অর্নব… তাই না?’ আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে আসে পৃথার গলার স্বর।

‘আমি তো মিথ্যাও বলতে পারি… নিজেকে অর্নব বলে চালিয়ে দিতে পারি… তুমি সত্যিটা বুঝবে কি করে?’ প্রশ্ন করে অশরীরি।

‘সেটা আমার ওপরেই ছেড়ে দাও না… আমি তো ইতিমধ্যেই সুনিশ্চিত হয়েই গিয়েছি… তাও… তোমার মুখ থেকে একবার শুনতে ইচ্ছা করছে আমার…’ আরো গভীর হয় পৃথার গলার স্বর।

‘হুম… আমিই তোমার সেই অর্নব… যাকে তুমি এতদিন ওই ছবিটাতেই দেখেছ… সেই আমি…’ খানিক চুপ থাকার পর গাঢ় স্বরে উত্তর দেয় অশরীরি।

হটাৎ কানে আসে বাইরের দরজায় চাবি খোলার আওয়াজ… দুজনেই দুজনকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে… ‘কাজল ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে…’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে কায়াহীন অর্নব। পৃথা হাতড়ে অর্নবের হাতটাকে ধরে নিজের হাতের মধ্যে… তারপর তাড়াতাড়ি করে ফিরে যায় বালিশের দিকে, হাতটাকে সাথে টেনে নিয়ে গিয়ে।

‘আমার হাতটা ছাড়ো এখন…’ ফের ফিসফিস করে বলে ওঠে অর্নব।

‘নাঃ… নাঃ… তুমি যাবে না… তুমি এখানেই থাকবে… আমার পাশে… আমাকে ছুয়ে থাকবে…’ বলতে বলতে টান দেয় অর্নবের হাতে পৃথা।

অর্নব প্রায় বাধ্য হয়েই এগিয়ে যায় পৃথার দিকে… ‘আমি তো আছিই… এবার ছাড়ো…’

‘তুমি আমার বিছানার ওই দিকটায় চলে এসো চট করে… এসো…’ তাড়া দেয় পৃথা।

নিরুপায় অর্নব পৃথার শরীর টপকে বিছানার ভিতর দিকে গিয়ে বসে।

পৃথা আন্দাজ করে সরে যায় অর্নবের পানে… ওর অদৃশ্য বুকের ওপরে নিজের কাঁধটাকে ছুঁইয়ে রাখে।

ঘরে ঢোকে কাজল, আর ওর পেছন পেছন ঢোকেন প্রণববাবুও… ‘এই নাও দিদিমনি… তোমার টাকার ফেরত… ছ’টাকা ফিরেচে… আমি কিন্তু মুর্গির মাংস, পাঁউরুটি, গাজর, পেঁপে আর বিন্‌ নিয়ে এয়েচি।’ বলে ওঠে পৃথাকে লক্ষ্য করে… তারপর পৃথার দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এই রকম বেঁকে বসেচো কেন দিদিমনি? বালিসটা ঠিক করে দেব?’

‘না, না, ঠিক আছি আমি… তোকে কিছু করতে হবে না…’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে পৃথা। নিজেও একটু সরে ভালো করে শোয় বালিশের ওপরে… কিন্তু এমন ভাবে থাকে যাতে একটু হলেও অর্নবের ছোঁয়া লেগে থাকে তার শরীরের সাথে। প্রণববাবুর সামনে রয়েছে বলে গায়ের ওপরে চাঁদরটাকে গলা অবধি টেনে দেয়, যতই হোক, টি-শার্টের ভেতরে ব্রা পরে নেই সে, বুকগুলো বিশদৃশ্য দেখাচ্ছে হয়তো।

‘এই যে মিস মুখার্জি… আপনার অসুধ… এই টেবিলের ওপরেই রাখলাম… প্যাকেটটার ভেতরে প্রেসক্রিপশনটাও আছে, আমি কাজলকে বরং বুঝিয়ে দিচ্ছি কখন কোন অসুধটা দিতে হবে।’

‘আরে আপনি এত ব্যস্ত হবেন না মিঃ কর্মকার… আমি দেখে নেব’খন… আর আপনি কেন শুধু শুধু আবার ওপরে উঠলেন, কাজলের হাত দিয়েই তো পাঠিয়ে দিতে পারতেন…’ বলে পৃথা।

‘পারতাম হয়তো, তবুও… আসতেই হলো…’ পৃথার মনে হলো কথাটা তাকে নয়, অন্য কাউকে খোঁচা মেরে বললেন প্রণববাবু। শুনে বুঝতে অসুবিধা হয় না পৃথার, কার উদ্দেশ্যে কথাটা ভদ্রলোক বললেন, তাই ফিক করে হেসে ফেলে।

‘হাসছেন যে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক।

‘না, আপনার অবস্থা দেখে…’ এবার হাসি আরো ছড়ায় মুখের ওপরে।

ব্যাপারটা না বুঝে মাথা চুলকান ভদ্রলোক।

পৃথা কাজলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তা হ্যারে, একটু মিঃ কর্মকারকে চা করে দিবিনা?’

‘এ বাব্বা, হ্যা তো…’ বলে একটা এত্ত বড় জিভ কাটে কাজল, ‘আমি এক্কুনি করে আনচি…’ বলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

‘আমার জন্য আপনার ওপর দিয়ে খুব ঝড় গেলে যাহোক… অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে…’ কৃতজ্ঞ চোখে তাকায় ভদ্রলোকের পানে পৃথা।

‘না না, এ আর কি… আপনি একা থাকেন, সেখানে এতো আমার কর্তব্য…’ বলেন প্রণববাবু।

‘শুধুই কর্তব্য?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

ভুরু কুঁচকে তাকান পৃথার দিকে ভদ্রলোক, ‘মানে? বুঝলাম না ঠিক…’

‘না বলছি শুধুই কর্তব্যের খাতিরে করলেন, নাকি…’ বলে থামে পৃথা।

‘না, মানে, এটা আর কি… আপনি অসুস্থ হলে…’

‘হ্যা, সেটাই তো বলছি, আমি অসুস্থ হলে আর সেই ইন্সট্রাক্সনটা যদি বন্ধুর কাছ থেকে যায়, তাহলে তো করতেই হবে… তাই না?’ হেসে বলে পৃথা।

‘মানে?…’ এবার থতমত খাবার পালা ভদ্রলোকের।

‘অবাক হবার কিছু নেই মিঃ কর্মকার… আপনি যার ইন্সট্রাক্সনে আমার এত উপকার করছেন, উনি এই মুহুর্তে আমার পাশেই বসে রয়েছে…’ মুচকি হেসে বলে পৃথা।

‘অ্যাঁ?…’ এদিক ওদিক তাকান প্রণববাবু… তারপর নজর রাখেন পৃথার পেছন দিকে।

‘হ্যা… ঠিক দিকেই তাকিয়েছেন… আমি জানি আপনি জানেন অর্নব এখন কোথায়… তাই না মিঃ কর্মকার…’

‘না, মানে…’ মুখটা কাঁচুমাচু করে তাকায় পৃথার দিকে প্রণববাবু।

‘মানে আপনার বন্ধু আমার কাছে ধরা পড়ে গেছে মিঃ কর্মকার… সে আমার হাতে বন্দি হয়ে গেছে… আর তার পালাবার পথ নেই…’ হাসতে হাসতে উত্তর দেয় পৃথা।

কথাটা শুনে একটু খানি চুপ করে থাকেন ভদ্রলোক, তারপর হাঃ হাঃ করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন… ‘জানতাম… আমি জানতাম… ও আপনার কাছেই ফাঁসবে… বেশ করেছেন মিস মুখার্জি… সারা জীবন বন্দি করে রেখে দিন আমার বন্ধুটাকে… আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না এতে… উফ্‌, একটা কাজের মত কাজ করেছেন ব্যাটার জন্য… অনেক ভুগিয়েছে আমায়… এবার আপনার কাছেই বন্দি হয়ে থাকুক একেবারে…’

পৃথার ঠিক পেছন থেকে চাপা স্বরে বলে ওঠে অর্নব, ‘হ্যা, তুই তো খুশি হবিই… হবি না… বন্ধুর সর্বনাশেই তো বন্ধু খুশি হয়… ব্যাটা স্বার্থপর…’

‘আরে ভাই, এই খুশিটার জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি বল তো…’ বলে ওঠে প্রণববাবু।

‘আরে মাকাল, আস্তে কথা বল, কাজল রয়েছে, ও শুনলে ভিমরি খাবে… ভাববে তোরা ভুতের সাথে কথা বলছিস…’ ফের চাপা গলায় ধমকায় অশরীরি অর্নব।

‘না, সেটা ঠিক বলেছিস… সরি রে ভাই…’ এবার প্রণববাবুও গলা নামান।

তারপর পৃথার দিকে ঘুরে হাতটাকে বাড়িয়ে দিয়ে ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে ধরে বলে ওঠেন, ‘থ্যাঙ্কস্‌ মিস মুখার্জি… অসংখ্য ধন্যবাদ… আমার এই বন্ধুটার ভিষন দরকার ছিল একটা কাঁধের… বড্ড অভাগা ও… অনেক কষ্ট পেয়েছে… ওর পাশে থাকার জন্য আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার সীমা রইল না…’

স্মিত হাসে পৃথা, বলে, ‘চিন্তা করবেন না মিঃ কর্মকার, আজ থেকে আপনার বন্ধুর পাশে আমি সর্বদা থাকবো… কথা দিলাম।’

পেছন থেকে অদৃশ্য অর্নব বলে ওঠে, ‘হ্যাঃ, নিজেই রুগী, ও দেখবে আমাকে…’

কপট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকায় ঘাড় ফিরিয়ে পৃথা, তারপর হেসে ফেলে বলে, ‘দেখো… দেখি কি না…’

ঘরের বাইরে কাজলের পায়ের শব্দ শোনা যায়।

টেবিলের ওপরে প্রণববাবুর জন্য চা আর বিস্কুটের ট্রে নামিয়ে প্রণববাবুর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, ‘প্রণবদাদাবাবু, দেকো তো, সেই আগের মতই চা করেচি কি না… ঠিক আপনি যেমনটি খেতেন, চিনি কম দিয়ে, সেই রকমই করেচি… একটুও কিচু ভুলি নি, হ্যা…’

ট্রে’এর ওপর থেকে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে চুমুক দিয়ে মুখ তোলেন ভদ্রলোক, ‘নাঃ, সত্যিই, এখনও ভুলিসনি দেখছি…’ তারপর আরো একটা চুমুক দিয়ে বলেন, ‘তা একদিনেই তো দেখছি দিদিমনির সংসারটা ধরে নিয়েছিস…’

‘নেবো না? আরে এটা দাদাবাবুর ফ্ল্যালাট, দাদাবাবু একোন নেই তো কি হয়েচে… দেকবেন, কেমন গুচিয়ে রাকি সংসারটাকে… কাজল এসে গেচে… দিদিমনির আর কোন চিন্তা নেই…’ বলেই ফেরে পৃথার পানে, ‘দিদিমনি, একন একটু চিকেন সুপ করে দিই?… আর সাথে পাঁউরুটির সেঁকা… খেয়ে তাপ্পর অসুদ খেও… বুজেচ… আর দুপুরে চিকেন ইস্টু করে রেকে দিয়ে যাবো, সেই জন্য গাজর, বিন, নিয়ে এয়েচি’ বলে আর দাঁড়ায় না, বাইরের দিকে যাবার জন্য পা বাড়ায়।

‘হ্যারে কাজল, প্রণবদাদাবাবুর জন্য কিছু ব্রেকফাস্ট করবি না? উনিও সেই সকাল থেকে না খেয়েই রয়েছেন…’ পেছন থেকে বলে ওঠে পৃথা।

কাজল উত্তর দেওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি করে প্রণববাবু আধখাওয়া চায়ের কাপটা ট্রে’এর মধ্যে রাখতে রাখতে উঠে দাঁড়ান, ‘না, না, মিস মুখার্জি… আমার এখন আর দাঁড়াবার সময় নেই, আমি ফিরেই স্নান করে অফিস বেরুবো… ব্যাটা সব দ্বায়ীত্ব তো আমার ঘাড়েই দিয়ে রেখেছে, না?’

‘তাও, ব্রেকফাস্টটা অন্তত করে যান… বেলা অনেক হয়ে গেল আমার জন্য…’ পৃথা অনুরোধ করে।

‘হবে না মিস মুখার্জি, ওদিকে গিন্নি রেডি হয়ে রয়েছে আমার ব্রেকফাস্ট নিয়ে, এখন আমি যদি এখান থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে যাই তাহলে যুদ্ধের দামামা বাজবে… তার থেকে এখন আমি পালাই…’

প্রণববাবুর বলার ধরণে হেসে ফেলে পৃথা আর কাজল দুজনেই। হাসতে হাসতেই পকেট থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা বের করে খুলে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে রেখে জ্বালাবার জন্য লাইটার বের করে, কিন্তু তারপরই থমকে যান, ‘নাঃ, রুগির ঘরে সিগারেট ধরানো ঠিক হবে না, থাক, পরে খাবো’খন… বলে ফের প্যাকেটের মধ্যে সিগারেটটা ঢুকিয়ে রেখে নিজের পকেটে চালান করে দেন।

‘একটা কথা বলবো মিঃ কর্মকার, এবার অন্তত ওই ফর্মাল সম্বোধনটা ছাড়ুন, আমাকে পৃথা বলে ডাকলেই বেশি খুশি হবো…’ স্মিত হেসে বলে পৃথা।

‘হু, বলতে পারি, যদি আমাকে মিঃ কর্মকার থেকে প্রণবদায়ে নামাতে পারেন, তবেই’ হাসতে হাসতে উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘তাহলে তো আমিও বলতে পারি ছোট বোনকে কেউ আপনি আঁজ্ঞে করে?’ ঘুরিয়ে বলে ওঠে পৃথা।

মাথা নাড়েন ভদ্রলোক, ‘ঠিক, ঠিক, সেটাও একেবারে ঠিক কথা বলেছেন… থুড়ি… বলেছ… বেশ… আর আপনি আজ্ঞে নয়… একেবারে তুমি… ঠিক আছে? কিন্তু উল্টো দিকে তোমাকেও তাহলে ওই আপনি আঁজ্ঞেটা ছাড়তে হবে কিন্তু…’

‘আচ্ছা, আচ্ছা, তাই হবে, আর আপনাকে…’ বলেই জিভ কাটে পৃথা… ‘তোমাকে আর আটকাবো না… তবে একদিন কিন্তু বৌদিকে নিয়ে আসতে হবে… বৌদির সাথে আলাপ করাবে না?’

‘আরে তুমি কি বলছো? তোমার বৌদি যদি শোনে আজকের ঘটনাটা, ওকে আর আসতে বলতে হবে না, দেখ না, আজ সন্ধ্যেবেলাতেই না নাচতে নাচতে চলে আসে… তোমাকে আর নতুন করে ইনভিটেশন পাঠাবার দেখবে দরকার পড়বে না…’ বলে হা হা করে হেসে ওঠেন প্রণববাবু।

কাজল কিছু না বুঝেই সেও হাসতে থাকে প্রণববাবুর হাসিতে।

‘তুই কেন হাসছিস রে ব্যাটা?’ ওর দিকে কপট চোখ পাকিয়ে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

‘ও মা, তুমি হাসচো, তাই তো হাসলাম… আমি আবার কি দোস করলাম?’ বলে বেরিয়ে যেতে যায় ঘর থেকে।

‘ওরে শোন শোন…’ পেছনে ফের ডাকে পৃথা। পৃথার ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ায় কাজল।

‘স্যুপ কতটা করবি?’

‘কেন? তুমি একা খাবে, এক বাটিই করবো… আর সেই সাতে দু পিস পাঁউরুটি সেকে দেবো…’ সহজ গলায় বলে কাজল।

‘এক বাটি না, তুই বরং তিন বাটি করিস… একটা তোর জন্য আর বাকি দু বাটি আমাকে এখানে দিয়ে যাস… আর তার সাথে ছ’পিস ব্রেড টোস্ট করিস…’ বলে আড় চোখে প্রণববাবুর দিকে তাকায় পৃথা।

‘দু বাটি?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে কাজল।

‘না, মানে…’ কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারে না পৃথা।

‘আসলে দিদিমনি কাল রাত থেকে কিছু খায়নি তো, তাই এখন একটু বেশি করে খেতে হবে, আর অত অসুধ খাবে তো, সেই জন্য… তোকে বলছে যখন তুই করে দে না, এত প্রশ্নের কি আছে রে বাবা?’ বলে পরিস্থিতি সামলায় প্রণববাবু।

‘হ্যা, সেটাও ঠিক… কাল রাত থেকে খায় নি দিদিমনি, না? তবে আমি ও’সব সুপটুপ খাবো না, ও সব আমার সয়ে না, আমি বরং ক’টা পাঁউরুটিই খেয়ে নেব’খন, ও তোমায় ভাবতে হবে না।’ বলে মাথা নাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

ঘরের মধ্যে দুজনেই হেসে ওঠে।

পৃথার পেছন থেকে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব, ‘তুমি একাই দু বোউল স্যুপই খাবে? পারবে?’

ওর কথায় দুজনে আরো জোরে হেসে ওঠে… পৃথা ঘাড় ঘুরিয়ে অর্নবের মত করে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘না, মশাই, শুধু আমার খাবার কথা চিন্তা করলে তো হবে না, আমার আর একজন আছে, যার সকাল থেকে তার তিতিরের জন্য পেটে কিচ্ছুটি পড়ে নি, তাই তার জন্যও স্যুপের অর্ডারটা দিয়ে দিলাম, বোঝা গেল? প্রণবদা বুঝে গেলো, আর এই লোকটা বুঝলো না… ইশ… এই নাকি ও আমাকে সামলাবে…’

অর্নব কিছু বলার আগেই প্রণববাবু বলে ওঠেন, ‘আপনারা দুজন দুজনকে সামলাও, আমি পালালাম, পরে দেখা হবে…’ তারপর পৃথার পেছনদিকে শূন্যতার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই মর্কট, পরে আমাকে ফোন করিস, বুঝলি…’

পৃথার পেছন থেকে ভেসে আসে গম্ভীর স্বরে… ‘হুম’।

5

২১।।

পৃথা কিছ বলার জন্য উদ্যত হয়, কিন্তু তার আগেই পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে ওঠে… হাতে তুলে নিয়ে দেখে সুশান্ত… ‘ওহ্‌ ও… একবার অফিসে ফোন করা উচিত ছিল অনেক আগেই…’ সুশান্তর নামটা মোবাইল স্ক্রিনের ওপরে দেখে ভাবে পৃথা… ‘হ্যালো…’

‘আরে, তুমি এখনও অফিসে এলে না? মেট্রোর প্রবলেম নাকি? এদিকে ম্যানেজার বলছিল…’ ওপার থেকে সুশান্তর উদ্বিগ্ন গলা ভেসে আসে।

‘সরি সুশান্ত, আমার আগেই ফোন করা উচিত ছিল, আসলে…’ বলতে শুরু করে পৃথা।

‘কেন কি হয়েছে? আসবে না আজকে?’ প্রশ্ন ভেসে আসে সুশান্তের… ‘কাল তো কিছু বললে না যে ছুটি নেবে বলে… এদিকে…’

‘না, আসলে আমার গতকাল রাত থেকে একটু জ্বর মত হয়েছে, তাই আজকে আর ভাবছি অফিস যাবো না… একটু আজ রেস্ট নিয়ে নিই… কাল চেষ্টা করবো যাবার… তুমি একটু ম্যানেজারকে ইনফর্ম করে দিও না প্লিজ… আমি কাল গিয়ে বরং একটা মেল করে দেবো…’ বলে পৃথা।

‘জ্বর হয়েছে… আরে আমাকে আগে বলো নি কেন? আমি আসবো… ডাক্তার দেখাতে হবে তো…’ ব্যস্ত গলায় উদ্বেগের আভাস পাওয়া যায়।

‘না, না, আমি এখন মোটামুটি ঠিক আছি, ডাক্তার এসেছিল, দেখেছে আমাকে, ওই সামান্য জ্বর শুধু, অসুধ দিয়ে গেছে, কাল মনে হচ্ছে যেতে পারবো…’ তাড়াতাড়ি চেষ্টা করে সুশান্তের উদ্বেগটা কাটাবার।

কানের মধ্যে অর্নব ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, ‘তুমি কথা বলো, আমি একটু আসছি…’

তাড়াতাড়ি করে ফোনটাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে পৃথা, যাতে তার কথা সুশান্তের কানে না যায়, সেও ফিসফিসিয়েই বলে ওঠে, ‘না… কোথায় যাচ্ছ… আমার পাশেই থাকো…’ চোখ পাকায় ঘাড় ফিরিয়ে।

‘আরে, আমি আসছি… একটু বাথরুমে যাবো… তুমি কথা বলো না…’ ফের সেই ভাবে বলে ওঠে অর্নব।
 

soukoli

Member
389
58
29
‘আচ্ছা… যাও… কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবে… আমি একা থাকবো না… মনে থাকে যেন…’ খাটো গলায় বলে পৃথা।

‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আসবো…’ বলে পৃথাকে টপকে বিছানার অপর দিকে চলে যায় অর্নব… পৃথা শুধু অনুভব করে বিছানার একপাশ থেকে অপর পাশে একটা মৃদু বাতাসের সরে যাওয়া, আর সেই সাথে বিছানার চাঁদরের ওপরে খানিকটা অংশ কুঁচকে যাওয়াটা। ওই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মোবাইলটাকে বুকের ওপরে থেকে তুলে কানে লাগায়… সুশান্ত তখন কিছু বলে চলেছে সম্ভবত।

‘অ্যা? বলো…’ সুশান্তের কথায় মনোযোগ দেবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘কি হলো, হটাৎ করে চুপ করে গেলে, কেউ এসেছে?’ প্রশ্ন করে সুশান্ত।

‘অ্যা… না… ওই কাজল…’ কোন রকমে বলে ওঠে পৃথা।

‘কাজল? সে আবার কে?’ অবাক হয় সুশান্ত।

‘আমার কাজের মেয়ে… আজ থেকেই জয়েন করেছে…’ বলে পৃথা।

‘আরে এই ভাবে হুটহাট কারুকে রেখো না… তুমি এখানে চেনো না শোনো না… এরা খুব একটা বিশ্বাসী হয়না… তোমার লোকের দরকার, আগে বলতে পারতে…’ ফের চিন্তিত হয়ে ওঠে সুশান্ত।

‘আরে না, না, অচেনা নয়… কাজল আগে এই ফ্ল্যাটেই কাজ করতো… খুব ভালো মেয়ে…’ আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে পৃথা।

‘তুমি বুঝছো কি করে যে ও ভালো না মন্দ… আগে কখনো ওকে দেখেছ?’ এবার যেন একটু বিরক্তই হয় পৃথার এই রকম একটা হটকারী সিদ্ধান্তে।

মুচকি হাসে পৃথা… যেখানে অর্নব আছে, সেখানে ওর চেনা বা জানার প্রয়োজন কি? ‘না আমার চেনা নয় ঠিকই, কিন্তু প্রণবদার চেনা… উনিই তো আজ সকালে সাথে করে ডাক্তার আর কাজলকে নিয়ে এসেছিলেন…’

‘প্রণবদা… সেটা আবার কে?’ একটু অবাক হয় সুশান্ত।

‘আরে প্রণবদা মানে প্রণব কর্মকার… আমার ফ্ল্যাটের বাড়িওয়ালা…’ বলে ওঠে পৃথা।

শুনে যেন একটু মনোক্ষুণ্ণ হয় সুশান্ত… ‘ওঃ… মিঃ কর্মকার নিয়ে এসেছেন…’ বলে একটু থামে, তারপর প্রশ্ন করে, ‘কিন্তু উনি তোমার জ্বরের কথা জানলেন কি করে? একেবারে ডাক্তার সাথে নিয়ে চলে এলেন?’

‘আসলে আমিই ওনাকে মেসেজ করেছিলাম আমার জ্বর হয়েছে বলে, তাই উনি সাথে করে ডক্টর নিয়েই এসেছিলেন…’ বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘হটাৎ আমাকে কিছু না বলে ওনাকে মেসেজ করলে?’ এবার যেন মনোক্ষুণ্ণতাটা আর একটু বাড়ে সুশান্তের গলায়… ‘আমি তো ভেবেছিলাম এই শহরে আমি ছাড়া তোমার নিজের বলতে কেউ নেই…’

‘না, না, আমাকে ভুল বুঝনা, তুমি তো এই শহরে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু… সেটা আমি অস্বীকার করছি না… আসলে…’ বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘না, সেতো দেখতেই পাচ্ছি… আজকাল অসুস্থ হলে আমার বদলে বাড়ীওয়ালাকে মেসেজ করছ…’ স্বরে একটু রূঢ়তা প্রকাশ পায়।

‘আরে চটছো কেন… আসলে ভাবলাম তুমি অত রাত্রে ঘুমাচ্ছ হয়তো, তাই আর ডিস্টার্ব করতে চাইনি…’ কোন রকলে বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘পৃথা, আমি ঘুমাচ্ছি বলে তুমি আমাকে মেসেজ না করে বাড়ীওয়ালাকে মেসেজ করছ, কেন উনি কি সারা রাত জেগে থাকেন?’ এবার একটু যেন গলার স্বর চড়ে সুশান্তর।

কি করে বোঝাই তোমায় যে আমি মেসেজটা করিনি, করেছে অর্নব… আমি কি ছাই তখন জানতাম যে অর্নব এই সব কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে? মনে মনে ভাবে পৃথা। মুখে বলে, ‘আরে তা নয়… আসলে হটাৎ করে প্রণববাবুর নামটা সামনে পেলাম, তাই ওনাকেই মেসেজটা করে দিয়েছিলাম, তোমার নাম তো ‘এস্‌’ দিয়ে, তাই ওটা পরের দিকে আসে, তাই না? পরে আমি তোমাকে জানাতামই’ ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে পৃথা।

‘কিন্তু কল্‌ লিস্টে তো আমার নামটাই থাকার কথা… সেখানে তো প্রণববাবুর নামটা আসার কথাই নয়…’ আরো কিছু বলতে চায় সুশান্ত কিন্তু তার আগেই পৃথা এবার একটু অসুন্তুষ্ট গলাতেই বলে ওঠে, ‘আমি তো বুঝতে পারছি না যে আমি কাকে ডাকবো তা নিয়ে এত কেন কথা উঠছে… আমি তো প্রণববাবুকে ডেকে কোন অপরাধ করি নি… আর তাছাড়া উনি তো এসে আমার উপকারই করেছেন, সাথে ডক্টর পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন…’

পৃথার গলার ঝাঁঝে চুপ করে যায় সুশান্ত… তারপর একটু শান্ত গলায় বলে, ‘না, মানে আসলে…’

‘আসলে কিছুই নয় সুশান্ত… তুমি যেটা ভাবছ সেটা নয়… আমার নিশ্চয়ই সেই স্বাধীনতাটুকু আছে, যে আমি আমার বিপদে কাকে ডাকবো আর ডাকবো না…’ একটু একটু করে সে মনে মনে বিরক্তই হয়ে উঠতে থাকে সুশান্ত এই রকম একটা ন্যাগিং নেচারের জন্য। হটাৎ কাঁধের ওপরে হাতের চাপ পড়ে… মুখ তুলে শূন্যের পানে তাকায় পৃথা… কানে আসে অর্নবের খুব খাটো গলা, ‘কুল… মাথা ঠান্ডা রাখো… ভুলো না, ওই ছেলেটি আসলে তোমার শুভাকাঙ্খি… সেই জন্যই এতটা উতলা হয়ে উঠছে… ও কি করে জানবে বলো প্রণব কেমন?’

ওপার থেকে সুশান্তের গলা কানে আসে, ‘সরি… আমারই ভুল হয়েছিল… আসলে তুমি একা থাকো তো, তাই চিন্তা হয়…’

অর্নবের কথায় পৃথার মাথাটাও ততক্ষনে একটু ঠান্ডা হয়ে এসেছে, ‘না, না সুশান্ত, আমিও সেই ভাবে বলতে চাইনি… আসলে তুমিও বোঝ, তখন জ্বরের মধ্যে কাকে কি মেসেজ করেছি, আমিও ঠিক খেয়াল করে করিনি… যাই হোক, তুমি একটু আজ অফিসে ম্যানেজ করে নিতে পারবে তো?’ কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘হ্যা… সে আমি দেখে নেবো… তুমি চিন্তা করো না… তুমি রেস্ট নাও… ডক্টর কি বললেন?’ প্রশ্ন করে সুশান্ত।

‘না, সে রকম কিছু নয়, ওই একটু ঠান্ডা লেগেই জ্বরটা এসেছিল, অসুধ দিয়ে গেছেন, এখন মোটামুটি আগের থেকে ঠিক আছি।’ এবার অনেকটাই ঠান্ডা শান্ত গলায় উত্তর দেয় পৃথা।

‘যাক, তাহলেই ভালো… কিন্তু ঠান্ডাটা লাগালে কি করে?’ প্রশ্ন করে সুশান্ত।

‘কাল ফেরা পথে একটু ভিজে গিয়েছিলাম, তাই বোধহয়…’ উত্তর দেয় পৃথা।

‘কাল ভিজে গিয়েছিলে? কেন ছাতা আনো নি কাল?’ এবার আবার উদবিগ্ন হয়ে ওঠে সুশান্ত।

‘হ্যা, আসলে কাল ছাতাটা ব্যাগে ভরতে ভুলে গিয়েছিলাম, আর ফেরার পথে হটাৎ করে অমন বৃষ্টি নামতে একেবারে ভিজে চান করে গিয়েছি, সেখান থেকেই বোধহয় জ্বরটা এসে থাকতে পারে…’ বলে পৃথা।

‘ইশ… কি করো না তুমি… এই বর্ষার সময় কেউ ছাতা ভোলে… যাই হোক, এখন রাখছি… দেখি সন্ধ্যেবেলায় তোমার ওখানে যাব’খন…’ বলে ওঠে সুশান্ত।

‘হ্যা, হ্যা, এসো না… আর পারলে আসার সময় মৌসুমীকেও এনো না… ভালো লাগবে… অনেকদিন আসে নি ও…’ বলে পৃথা।

‘আবার মৌসুমী কেন… আমিই না হয় আসবো…’ বলে সুশান্ত।

‘কেন? মৌসুমীকে আনতে অসুবিধা কোথায়? মেয়েটাকে অনেকদিন দেখিনিও… ও আসলে ভালো লাগবে…’ জোর করে পৃথা।

‘না, মানে ভাবলাম এখন তোমার শরীরটা খারাপ, তাই শুধু আমি গেলেই…’ বলতে বলতে চুপ করে যায় সুশান্ত।

‘না, না, তুমি এলে আমার অসুবিধা কিছু নেই… কিন্তু তোমার সাথে মৌসুমী এলে আরো ভালো লাগতো, এই আর কি… বড্ড মিষ্টি মেয়েটা…’ সুশান্তের কথার রেশ টেনে বলে ওঠে পৃথা।

কানের মধ্যে অর্নব ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে ফের, ‘এবার ফোনটা রাখো… সবে জ্বরটা ছেড়েছে, এখন ফোনে এত কথা বলা ঠিক নয়… পরে ও এলে না হয় গল্প কোরো…’

অর্নবকে তার প্রতি এমন কনসার্ন হতে দেখে মনে মনে ভিষন খুশি হয় পৃথা, মাথা দোলায় সে, তারপর সুশান্তের উদ্দেশ্যে ফোনে বলে, ‘আচ্ছা, এখন রাখি কেমন, পরে না হয় এলে কথা হবে, এখন আর বেশি কথা বলতে ইচ্ছা করছে না…’

ও পাশ থেকে সুশান্ত ব্যস্তমস্ত হয়ে বলে ওঠে, ‘হ্যা, হ্যা, সেই ভালো… পরে দেখা হলেই কথা হবে’খন… আর তুমি চিন্তা করো না, আমি ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি… তুমি রেস্ট নাও…’

‘ওকে, থ্যাঙ্কস্‌… রাখি…’ বলে আর কথা বাড়ায় না, ফোনটাকে কানের থেকে নামিয়ে কেটে দেয় কলটা… তারপর মুখ তুলে শূন্যের পানে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘বাবুর কি হিংসা হচ্ছিল, ফোনে অন্য ছেলের সাথে কথা বলছিলাম বলে?’

‘না, না, হিংসার কি আছে, তোমার শরীরটা এখন যথেষ্ট দুর্বল, তাই বারণ করছিলাম, নয়তো আমি বাধা দেবো কেন?’ একটু যেন আহত হয় পৃথার কথায়।

‘আহা, অমনি খারাপ লেগে গেল… দূর বোকা… আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম… বরং তুমি বারণ করার সাথে সাথে দেখো ফোনটা কেটে দিয়েছি… কি? ভালো করি নি?’ হেসে বলে পৃথা।

হয়তো উত্তরে অর্নব কিছু বলতো, কিন্তু তার আগেই ঘরে কাজল ঢোকে… ‘একা একা কার সাথে বোকচো দিদিমনি?’ প্রশ্ন করে সে।

থতমত খেয়ে যায় পৃথা… কাজলের কথাটা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল সে… তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘দূর… একা একা বকবো কেন? এই তো ফোনেই কথা বলছিলাম…’

‘না, মানে আমার যেন মনে হোলো তুমি হাওয়ার দিকে তাকিয়ে কতা বলচো…’ পৃথার দিকে যেন একটু সন্দিহান চোখেই তাকিয়ে প্রশ্ন করে কাজল।

‘কি দেখতে কি দেখেছিস… ছাড়… কি বলতে এসেছিস বল…’ কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘না বলচি সুপটা করেচি… এখানে একসাতেই দু বাটি দিয়ে যাবো না আগে এক বাটি দিই, তারপর তোমার খাওয়া হলে বলবে আমি আর এক বাটি দিয়ে যাবো…’ বলে কাজল।

‘না, না, তুই দুটো বোউলই দিয়ে যা এখানে… আর দুটো চামচও দিস…’ নির্দেশ দেয় পৃথা।

‘কিন্ত এক সাতে দিলে যে ঠান্ডা হয়ে যাবে… তকোন আর খেতে ভালো লাগবে?’ ব্যাপারটা কেমন লাগে যেন কাজলের।

‘সে আমি বুঝবো’খন, তুই দুটো বোউলই দিয়ে যা না… এত গিন্নিগিরি করলে কি করে হয় বলতো?’

‘আমার কি… ঠান্ডা হয়ে গেলে ঠান্ডাটাই খাবে… তকোন কিন্তু আমাকে বলতে পারবে না যে আমি বলিনি…’ পরামর্শ দিতে ছাড়ে না কাজল।

‘আচ্ছা, সেটা আমিই বুঝবো না হয়… তুই দে তো…’ ফের বলে পৃথা।

ব্যাপারটা পছন্দ না হলেও বাধ্য হয়ে যেন রাজি হয় কাজল, ঘাড় হেলিয়ে বলে, ‘আচ্চা… তাই দিচ্চি…’ বলে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে পৃথা।

কাজল ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে, চাপা গলায় অর্নব বলে ওঠে, ‘আমি কিন্তু তোমার সামনে এই ভাবে খেতে পারবো না…’

‘খেতে পারবে না মানে… ইয়ার্কি নাকি? সেই সকাল থেকে কিচ্ছু খাওনি…’ খাটো গলায় কপট রাগান্বিত ভাবে বলে পৃথা।

‘সেটা নয়… আসলে তোমার সামনে খেতে অসুবিধা আছে…’ বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।

‘কেন, কিসের অসুবিধা?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘তুমি বুঝছ না, এই ভাবে আমি কারুর সামনে খেতে পারি না… আমার অস্বস্থি হয়… আসলে ওই রকম ভূতের মত খেতে দেখলে তুমি…’ বলতে বলতে চুপ করে যায় অর্নব।

‘বুঝেছি… কিচ্ছু হবে না… আমি ভয়ও পাবো না, আর খারাপও ভাববো না… তুমি আমার সামনেই খাবে… এতদিন নিজে নিজে যা পেরেছো করেছো… কিন্তু আর নয়… এবার থেকে আমার সামনেই তোমাকে খেতে হবে… আমিই তোমার গার্জেন এখন থেকে… বুঝেছ…’ চাপা গলায় বলে পৃথা।

‘কিন্তু…’ আরো কিছু বলতে যায় অর্নব, কিন্তু পৃথা তাকে থামিয়ে দেয়, বলে, ‘কোন কিন্তু নয়… আমি যখন বলেছি তুমি আমার সামনে বসেই খাবে, তখন তাই খাবে… বুঝেছ?’

আর কোন উত্তর দেয় না অর্নব। এই জেদী মেয়েকে বোঝানোর কম্মো তার নয়, সেটা সে বুঝে গিয়েছে, তাই চুপ করে যাওয়াই শ্রেয় মনে করে সে। ঘরে কাজল ঢোকে একটা ট্রে’তে দু-বোউল স্যুপ আর একটা প্লেটে কড়করে টোস্ট নিয়ে… খাটের ওপরে পৃথার সামনে রেখে বলে, ‘আমি খাইয়ে দিই দিদিমনি?’

ওরে বাবা, তাহলে তো সর্বনাস… মনে মনে ভাবে পৃথা। তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘আরে, না, না, তুই খাওয়াবি কি? আমিই খেয়ে নেবো… তোকে ভাবতে হবে না…’

‘কিন্তু তোমার তো সলিলটা খারাপ, বলো… তুমি কি নিজের হাতে খেতে পারবে?’ উদ্বিগ্ন গলায় বলে ওঠে কাজল।

‘হ্যা রে বাবা, ঠিক পারবো… এখন তো ঠিকই আছি… তোকে ভাবতে হবে না… তুই এখানে রেখে যা তো…’ তাকে তাড়াবার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে পৃথা।

‘ঠিক আচে, খাও তাহলে, আমি তাহলে এখানে তোমার কাচেই বসি… কেমন…’ বলে চেয়ারটা টেনে বসার উদ্যগ করে কাজল।

ওকে বসতে দেখে ব্যস্ত হয়ে ওঠে পৃথা, ‘আরে না, না, তোকে এখানে বসতে হবে না, তুই গিয়ে বরং খেয়ে নে… আমি ঠিক খেয়ে নিতে পারবো…’

‘ঠিক আচে তো, তুমি নিজেও খাও না, আমি সুদু একানে বসে থাকবো…’ বলে সত্যিই বসে পড়ে সে চেয়ারের ওপরে।

‘না, না, আমি একাই খাবো… আসলে কেউ সামনে থাকলে আমার খেতে ভালো লাগে না… তুই বরং এখন গিয়ে তোর খাবারটাও খেয়ে নে…’ আপ্রাণ কাজলকে ঘর থেকে তাড়াবার চেষ্টা করে পৃথা… মনে মনে ভাবে, ‘উফ্‌ কি জ্বালা, প্রণববাবু কি বাঁশটা আমাকে দিয়ে গেল… দিব্বি একা ছিলাম…’

‘সত্তি থাকবো না?’ যেতে ঠিক যেন মন চায় না কাজলের… ‘তোমার খাওয়া হলে ডেকো তা হলে… তোমাকে অসুদ দিতে হবে…’

‘হ্যা, হ্যা, আমি ডাকবো তোকে… চিন্তা করিস না অত… যা, তুইও গিয়ে খেয়ে নে…’ বলে ওঠে পৃথা।

অনিচ্ছা সত্ত্যেও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় কাজল, তারপর আরো একবার পৃথার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘অসুবিধা হলে ডেকো… কেমন…’

মাথা নাড়ায় পৃথা, ‘হ্যা, হ্যা, একটু অসুবিধা হলেই ডাকবো তোকে… চিন্তা করিস না…’

‘কিন্তু তুমি নেমন্ত বাড়ী গিয়ে সবার সামনে কি করে খাও?’ ফের প্রশ্ন করে কাজল।

‘না, মানে সেটা তো নিমন্ত্রন বাড়ী, তাই বাধ্য হয়েই সবার সামনে খাই আর কি, এখানে তো একা, তাই একা একা খেতেই ভালো লাগে…’ আপ্রাণ বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘তোমার মায়ের সামনেও তুমি খাও না? ওকানেও বাড়িতে একা একা খাও?’ ফের জিজ্ঞাসা করে কাজল।

‘হ্যা রে, বাড়ীতেও আমি একাই খাই… মায়ের সামনেও খাইনা…’ বাধ্য হয়েই মিথ্যা বলতে হয় পৃথাকে… অথচ সে এখনও এত বড় বয়সেও মায়ের হাত থেকে খেতে পারলে সব থেকে বেশি খুশি হয়।

‘ওওও…’ বলে ব্যাজার মুখ করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কাজল… ঠিক দরজার কাছে পৌছে একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে, ‘কোন অসুবিধা হলে ডেকো কিন্তু দিদিমনি… আমি রান্নাঘরেই আচি… কেমন?’

মাথা নেড়ে হ্যা বলে পৃথা… কাজলও আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। একটা বড় হাঁফ ছাড়ে পৃথা।

ট্রে’টাকে একটু সরিয়ে রেখে চাপা গলায় বলে ওঠে পৃথা, ‘নাও, এবার খেয়ে নাও…’

‘আমার তোমার সামনে খেতে অস্বস্তি হবে তিতির, তুমি বরং খেয়ে নাও, আমি পরে খেয়ে নেবো…’ আরো একবার বোঝাবার উদ্দেশ্যে বলে অর্নব।

‘এই লোকটা কিছুতেই শোনে না তো…’ বলে চুপ করে পৃথা… সেও বোঝে যে তার সামনে কেন অর্নব খেতে চাইছে না… এই রকম একটা শূন্যের মধ্যে খাবারগুলো ঢুকে যেতে দেখলে ওর অদ্ভুত লাগতে পারে, আর সেই জন্যই অর্নবের এত অনিহা ওর সামনে খেতে। তাই শেষে ও বলে, ‘ঠিক আছে, তোমাকে আমার সামনে খেতে হবে না, এক কাজ কর, আমি ট্রে’টাতে তোমার স্যুপটা আমার পাশে দিয়ে দিচ্ছি… আর আমি তোমার দিকে পেছন করে বসছি… তুমি খাও, আমি তাকাবো না… তাহলে হবে তো?’

আর কিছু বলে না অর্নব… পৃথাও বোঝে এতে কাজ হয়েছে… নিজের বুদ্ধিমত্তায় মুচকি হাসে সে… তারপর নিজের স্যুপের বোউলটা আর দু-পিস টোস্ট তুলে নিয়ে ট্রে’টাকে ওর একটু পেছন দিকে ঠেলে দেয়। মন দেয় নিজের খাবারে… একটু পর কানে আসে বোউলের সাথে চামচের টুংটাং আওয়াজ। মনটা খুশিতে ভরে ওঠে তার।



২২।

‘কাল তাহলে সকাল সকালই চলে আসিস…’ ঘরের মধ্যে কাজল ঢুকতে বলে ওঠে পৃথা।

‘তুমি কাল আপিস যাবে?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে কাজল।

‘হ্যা রে… যেতে তো হবেই… আজ তো কামাই হয়ে গেল অফিসটা।’ উত্তর দেয় পৃথা।

‘কটার সময় বেরোও?’ জিজ্ঞাসা করে কাজল।

‘আমি তো মোটামুটি আটটা সোয়া আট্টার মধ্যেই বেরিয়ে যাই… কেন রে?’ জানতে চায় পৃথা।

‘না, তাহলে আমি ছ’টার মধ্যেই চলে আসবো… কেমন? তাতে হবে না?’ জিজ্ঞেস করা কাজল।

‘হ্যা, হ্যা… ছ’টার মধ্যে এলেই এনাফ… ঠিক আছে তাই আসিস… আয় তাহলে এখন…’ উত্তর দেয় পৃথা।

তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কাজল।

‘আর কিছু বলবি?’ বালিশ থেকে মাথাটা একটু তুলে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘না, মানে, বলছিলাম…’ বলে একটু চুপ করে… তারপর একটু ভেবে নিয়ে বলে, ‘আমি আজকে দুপুরটা থেকেই যাই না দিদিমনি…’ বলে ওঠে কাজল।

‘কেন রে? কি দরকার তোর থাকার আবার?’ অবাক হয় পৃথা।

‘না, মানে তোমার সলিলটা এতোটা খারাপ… সেকানে তোমাকে একা রেকে যেতে মন চাইচে না…’ কাজলের মুখের মধ্যে সত্যিকারের উদবেগের ছায়া দেখে পৃথা… ভালো লাগে ওর এই ধরণের মানবিকতার প্রকাশে।

হেসে বলে সে, ‘দূর পাগলী… সামান্য তো জ্বর হয়েছে… এত চিন্তা করছিস কেন… আমি ঠিক পারবো…’ মনে মনে বলে আমার সাথে তোর দাদাবাবু আছে, তোর আর কিসের চিন্তা কাজল… সেই আমাকে সামলে রাখবে।

‘দেকো… আমি আর কি বলবো… আচ্চা… সোনো… আমি মুর্গির ইস্টু করে রেকে গেলাম… মোটামুটি দু-বেলাই হয়ে যাবে তোমার… একটু বেসি করেই করেচি… রাতে একটু গরম করে নিও… নাকি একবার আসবো সন্দের দিকে? এসে খাবার গরম করে দিয়ে যাবো… বলো… আমি কিন্তু কাচেই থাকি… বললে এসে যাবো… আমার কোন অসুবিদা হবে না…’ গড়গড় করে বলে থামে কাজল।

‘না রে বাবা, তোকে আর আসতে হবে না… আমি ঠিক করে নেবো… তুই পালা এখন…’ বলে পৃথা।

‘আচ্চা… তাহলে আসি…’ বলে চলে যেতে উদ্যত হয়… তারপর আবার কি ভেবে বলে ওঠে, ‘আরে তুমি আমার নাম্বারটাই তো নাও নি… ওটা নিয়ে নাও… অসুবিদা হলেই একটা ফোন করে দেবে, দেখবে তোমার কাজল ঠিক এসে গেচে…’ মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে।

‘হ্যা, ভালো মনে করিয়েছিস… তোর নাম্বারটা বলতো…’ বলে নিজের মোবাইলটায় কাজলের নাম্বারটা সেভ করে নেয় পৃথা।

অনেক অনিচ্ছা নিয়ে বেরিয়ে যায় কাজল, যাবার সময় বাইরের দরজা টেনে দিয়ে যেতে ভোলে না, একবার শুধু গলা তুলে বলে যায়, ‘পরে পারলে উঠে দরজা বন্ধ করে দিও দিদিমনি… আমি শুধু টেনে দিয়ে গেলাম…’ ইয়েল লক থাকার ফলে সে নিয়ে চিন্তা নেই পৃথার।

‘বেলা অনেক হয়েছে… এবার উঠে স্নানটা করে নাও… এর পর করলে কিন্তু ঠান্ডাটা আবার লেগে যাবে…’ পৃথার কানে আসে একদম পাশ থেকে অর্নবের গলা।

হাসি মুখে মুখ তুলে তাকায়… ‘কেন, স্নানটা করিয়ে দেবে?’

‘না, মানে সেটা বলি নি…’ অপ্রস্তুত জবাব অর্নবের… ‘বারোটা বাজতে যায়… এর পরে স্নান করা উচিত নয়, তাই বলছিলাম…’

‘জানি… কিন্তু উঠতে ইচ্ছা করছে না… মাথাটা এখনও বেশ ভার, জানো…’ জানায় পৃথা।

‘তবুও, দেখো… স্নান করলে একটু ভালো লাগবে… আমি গিজারটা চালিয়ে দিয়েছি… মাথায় জল দিও না, একটু গায়ে জলটা দাও… ফ্রেশ লাগবে…’ বলে ওঠে অর্নব।

‘বাব্বা… অনেক কিছুই জানো দেখছি?’ হেসে বলে পৃথা।

‘একটু তো জানতেই হয়… এতদিন তো নিজেকেই নিজে দেখাশোনা করতে হতো…’ অর্নব বলে।

‘ইশ… সত্যিই… একলাটি কি ভাবে থাকতে বলোতো…’ মুখটা করুন হয়ে ওঠে পৃথার।

‘খারাপ কি? একাই রাজা ছিলাম ঘরে… যেমন খুশি তেমনিই থাকতাম…’ হাসির আওয়াজ আসে।

‘ও… আচ্ছা… আমি এসে খুব অসুবিধা করে দিয়েছি, না?’ ছদ্ম রাগ প্রকাশ পায় কথায়।

‘আমি কি তা বলেছি?’ তাড়াতাড়ি সাফাই গায় অর্নব।

‘বললেই তো… একা রাজা ছিলে ঘরে… যা খুশি তাই করতে পারতে… এখন আমি আসাতে নিশ্চয়ই খুব অসুবিধা হয়ে গেল…’ কথার প্রসঙ্গে জবাব দেয় পৃথা।

‘আচ্ছা, আচ্ছা, হয়েছে… আমার বলা অন্যায় হয়েছে… আর একটা নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না…’ কথা ঘোরাবার প্রয়াশ করে অর্নব।

‘ও… মানে আমি ঝগড়ুটে… এটাই বলতে চাইছ তো?’ অন্য ভাবে চেপে ধরার চেষ্টা করে পৃথা।

‘যা বাব্বা… সেটা আবার কোথায় বললাম?’ গলার স্বরে কাঁচুমাচু হয়ে ওঠার ভাব।

‘এই তো বললে আমি ঝগড়া করছি…’ চোখ পাকিয়ে শূন্যের পানে তাকিয়ে বলে পৃথা।

‘চলো… এতক্ষনে কিন্তু বাথরুমে জল রেডি হয়ে গেছে… এবার যাওয়া উচিত…’ পৃথার কথার উত্তর না দিয়ে বলে ওঠে।

‘ইশ… তুমি আমায় স্নান করিয়ে দেবে নাকি?’ পৃথার গালের ওপরে লালিমার আভা খেলে যায় চকিতে।

‘না, না, আমি তা বলি নি, আমি শুধু তোমাকে বাথরুম অবধি এগিয়ে দিতে চেয়েছি…’ বলে ওঠে অর্নব।

‘কেন? স্নান করিয়ে দিলেই বা কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে শুনি?’ ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘এ বাবা, সে কি করে হয়… আমি তোমাকে বাথরুমে পৌছে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করবো…’ ফের আত্মপক্ষ রক্ষা করার চেষ্টা করে অর্নব।

‘কেন, আমি বললেও স্নান করিয়ে দেবে না?’ মিচকি হেসে প্রশ্ন করে পৃথা, বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে… কিন্তু দাঁড়াতেই মাথাটা একটু টলে যায় যেন।

একটা অদৃশ্য বলিষ্ঠ হাত এসে পৃথার বাহু ধরে ফেলে… পৃথা আস্তে করে হেলে যায় হাতটাকে আন্দাজ করে… দেহটা গিয়ে সাহারা পায় চওড়া একটা প্রসস্ত লোমশ বুকের ওপরে… মুখের হাসিটা আরো চওড়া হয় তার। অদৃশ্য হাতটা তার দেহটাকে বেড় দিয়ে ধরে রাখে, যাতে কোনভাবে পড়ে না যায় পৃথা।

হটাৎ করে ঘুরে দাঁড়ায় পৃথা… দুহাত দিয়ে না দেখা শরীরটাকে হাতের বেড়ে আঁকড়ে ধরে মুখটা গুঁজে দেয় ওই লোমশ নগ্ন বুকটার মাঝে… মুখ ঘষে লোমশ বুকটায় মেঝের ওপরে দাঁড়িয়ে… তার হাতটা ঘুরে বেড়ায় চওড়া না দেখা পীঠের ওপরে… পেশল বুকের একটু নীচেই চেপে বশে পৃথার পরনের টি-শার্টটার নিচে থাকা ব্রা-হীন নরম গোলাকার দুটো মাংশপিন্ড… চকিতে যেন আপন উত্তেজনায় বেড়ে উঠতে থাকে বুকের বোঁটাদুটো।

‘চলো… এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?’ ফিসফিসিয়ে তাড়া দেয় অর্নব… অস্বস্তি হয় তার পৃথার শরীরটার নিজের দেহের সাথে লেগে থাকার ফলে… শরীরের ওপরে ওই নরম দুটো বুকের সংস্পর্শে এসে।

‘উম্‌, কি ভালো যে লাগছে…’ বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে জানায় পৃথা। পীঠের ওপর থেকে ডান হাতটাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে তুলে দেয় ওপর দিকে, অর্নবের মুখ লক্ষ্য করে, হাতটা ঠেকে দাড়ির জঙ্গলের ঢাকা গালের ওপরে… সেই দাঁড়ির জঙ্গলের ওপরেই হাত বোলাতে বোলাতে আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা, ‘অর্নব, আমায় একটু আদর করবে? ভিষন আদর খেতে ইচ্ছা করছে তোমার কাছে… করো না…’ বলতে বলত নিজের শরীরটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে সামনের অদৃশ্য দেহটার সাথে, নরম বুকদুটো আরো চেপে বসে সুঠাম পেটের ওপরে। নিজের তলপেটের ওপরে ছোঁয়া লাগে জড়িয়ে থাকা দেহটার দুই পায়ের ফাঁকে ঝুলতে থাকা একটা বিশেষ অঙ্গের সাথে… তলপেটটাকে আরো চেপে ধরে সে… পীঠের ওপর থেকে বাঁ হাতটাকে সরিয়ে নিয়ে এসে রাখে সুঠাম একটা নগ্ন নিতম্বের ওপরে… পরশ পায় সেখানেও লোমের আধিক্যের।

পৃথার বাহুদুটো ধরে সবল হাতে টেনে নিজের শরীর থেকে আলাদা করে দেয় অর্নব… ‘না তিতির না, এ হয় না… এটা হতে পারে না… তুমি যা চাইছ সেটা কখনো, কোনদিনও হবার নয়… প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড…’ প্রায় হাঁফাতে থাকে অর্নব… নিজেই বুঝতে পারে আর একটু হলেই নিজের শরীর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করে দিত… তখন কি ভাবে সামলাতো নিজেকে? কি করে পারতো এই অসীম হাতছানী উপেক্ষা করতে?

‘কেন হয় না অর্নব? হোয়াই?’ করুন চোখে মুখ তুলে তাকিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা… এই ভাবে তাকে টেনে আলাদা করে দেওয়ার ফলে আহত হয় তার মনটা… নিথর হয়ে তার দেহের দুই পাশে ঝুলতে থাকে হাত দুটো।

‘দোহাই তিতির… একটু বোঝার চেষ্টা করো… আমি আগেও বলেছি… তুমি যে ভাবে আমাকে চাইছ, সে ভাবে তোমার কাছে যাবার ক্ষমতা আমার নেই… আমি যে দেহ-হীন… আমার কোন অস্তিত্বই যে নেই… সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না?’ বোঝাবার আকুল চেষ্টা করে অর্নব। ‘কি বলবে লোককে? কি বলবে তোমার বাবা মা কে? একটু বোঝার চেষ্টা করো তিতির, আমি যে থেকেও নেই… কেউ মেনে নিতে পারবে না আমাদের মধ্যের সম্পর্ক… আর তোমার জীবনটাকে আমি এই ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে পারি না… কখনই না…’

‘আমায় ভালোবাসো না অর্নব? আমি তোমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য নই?’ ভেজা চোখে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘ভালোবাসলেও আমি কিছু করতে পারি না তিতির… আমি মনে প্রাণে চাইলেও অপারগ… আমি যে অদৃশ্য… নিরাকার… সেখানে তোমায় কি করে এই ভূল সম্পর্কের মধ্যে রাখি বলো… এর থেকে তুমি বরং একটু নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করো… দেখো, আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে… তোমার এত ব্রাইট ফিউচার… সেখানে আমার মত একটা লোকের সাথে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে কেন নষ্ট করবে তুমি?’ গাঢ় গলায় বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।

হটাৎ মাথাটা জ্বলে ওঠে পৃথার… শরীরটাকে ঝটকা দিয়ে অর্নবের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় সে… আর এই ভাবে শরীরে ঝাকুনি লাগতে নিজের মাথাটা বোঁ করে ঘুরে যায়… টলে ধপ করে পড়ে যায় বিছানার ওপরে… প্রায় চিৎ হয় পড়ে…

ওকে এই ভাবে পড়ে যেতে ভয় পেয়ে যায় অর্নব, তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে ওর কাঁধের ওপরে হাত রাখে… শরীরে অর্নবের স্পর্শ পেতে আরো যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে পৃথা… হাতের ঝটকায় কাঁধের ওপরে থাকা অদৃশ্য হাতটাকে সরিয়ে দিয়ে চোয়াল চেপে বলে ওঠে, ‘ডোন্ট… ডোন্ট টাচ্‌ মী… আই ডোন্ট রিকোয়াএর এনি অফ ইয়োর কনসার্ন… লীভ মী… লীভ মী অ্যালোন… বলে বিছানায় উপুড় হয়ে যায়… মুখটা গুজে রাখে বিছানার নরম তোষোকের মধ্যে… বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে সে।

আবার পৃথার পীঠের ওপরে আলতো করে হাত রাখে অর্নব… ‘প্লিজ তিতির… রাগ কোরো না… ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড… আমি যেটা বলছি…’

শেষ করতে দেয় না অর্নবের কথার… মুখটাকে ঘুরিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে শূণ্যের পানে তাকিয়ে… ‘বললাম তো… আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি অফ ইয়োর কনসার্ন… প্লিজ লীভ মী অ্যালোন…’ বলে ফের মুখটা গুঁজে দেয় বিছানায়।

‘কেন এমন ছেলেমানুষি করছ তিতির… আমি পারলে কি তোমার মত এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে ফিরিয়ে দিতাম বলো… তোমার মত একটা মেয়েকে জীবনে পাওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার… কিন্তু কি করবো বলো… ইচ্ছা থাকলেও তো সব কিছু জীবনে পাওয়া সম্ভব হয় না… কিছু কিছু জিনিস কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়… ভাবো না আমার সাথে তোমার কোনদিন দেখাই হয় নি… একটা ফাঁকা ফ্ল্যাটে রয়েছ তুমি… যেখানে আমার কোন অস্তিত্বই নেই… দেখবে অনেক সহজ হয় যাবে পুরো ব্যাপারটা… আসলে…’

অর্নবের কথার ফাঁকেই ঘুরে উঠে বসে পৃথা… ওকে উঠে বসতে দেখে চুপ করে যায় অর্নব… মুখ তুলে একটুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেশ… তারপর হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে… ‘আমি জানি কেন তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারছো না… আসলে তুমি ভাবছ আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে… তাই না… একটা বাজে, নষ্ট মেয়ে… আমি জানি দ্যাট ডে আই হ্যাড কনফেসড এভ্রিথিং টু ইয়ু, আন্ড ইয়ু নো নাউ মাই ডার্ক সাইড… আই অ্যাম আ ব্যাড গার্ল টু ইয়ু… আ স্লাট… ইস ইন্ট ইট… ইয়ু থিঙ্ক আই অ্যাম আ স্লাট… আ রটন পার্সন… দ্যাটস হোয়াই ইয়ু কান্ট লাভ মী… ইয়ু হেট মী অ্যাকচুয়ালি… আই ডোন্ট ডিসার্ভ ইয়োর লাভ…’ বলতে বলতে আরো হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে পৃথা… কাঁদতে কাঁদতে ফের গড়িয়ে পড়ে বিছানার ওপরে… বেঁকে চুড়ে পড়ে থাকে দেহটা বিছানায়… কান্না দমকে ফুলে ফুলে উঠতে থাকে তার নরম কোমল শরীরটা।

পৃথার পাশে বিছানার খালি জায়গাটায় অর্নব বসে জোর করে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে… দুহাতে আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে থাকা দেহটা… ওর লোমশ বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে চলে পৃথা… ‘আমি খুব খারাপ… আমি জানি আমি খুব খারাপ… আমি ভার্জিন নই… সেটা তুমি জেনে গেছ… আর তাই আমাকে আর তোমার করে নিতে পারছো না… আমি আর কক্ষনো তোমার হতে পারবো না…’

পৃথাকে শক্ত করে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওর এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলের ওপরে চুমু খায় অর্নব… তারপর খানিকটা সময় চুপ করে নিজের মুখটা ওর মাথার মধ্যে ডুবিয়ে রেখে অপেক্ষা করে কান্নাটা একটু স্তিমিত হবার… তারপর যখন বোঝে যে পৃথার কান্নাটা একটু ধরে এসেছে… তখন শান্ত গলায় বলে, ‘তুমি এত বোকা মেয়ে, তা তো জানতাম না… আমি তো ভেবেছিলাম খুব সাহসী একটা মেয়ে… কিন্তু এখন তো দেখছি একেবারে বাচ্ছা তোমার ভেতরটা… এই মানসিকতায় একটা অচেনা অজানা শহরে এলে কি করে? হু?’

আস্তে আস্তে নিজেও দুহাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে পৃথা… ওর বুকের মধ্যে মুখ রেখে ছোট্ট করে বলে, ‘জানি না…’

‘বোকা মেয়ে… আমি বলেছি তুমি বাজে, তুমি খারাপ? হু?’ মাথার চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে দিতে শান্ত গলায় বলে অর্নব… ‘আচ্ছা আমাদের দুজনের বয়শের ডিফারেন্সটাও দেখবে না… আমার মত একটা বুড়োর সাথে নিজের জীবনটা জড়াবে? সেটা কি ঠিক?’

অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তোলে পৃথা… তুলে তাকায় ওপর পানে… ওই কান্না ভেজা চোখেও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে তার… ‘তুমি বুড়ো? হি হি…’ বলে ফের মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের পেশল বুকের মধ্যে… অস্ফুট স্বরে বলে, ‘কে বলে তুমি বুড়ো?’ বলতে বলতে দুহাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের শরীরটাকে… এবার আর বাধা দেয় না অর্নব… শরীরের ওপরে নরম দুটো মাংসপিন্ডের ছোঁয়া পেতেও।

‘বুড়ো নই? তোমার সাথে আমার বয়সের কত ফারাক তোমার খেয়াল আছে? শুধু ওই ছবিতে আমাকে দেখলেই হবে? ওটা কত বছর আগের তোলা… তারপর কতগুলো দিন… মাস… বছর পেরিয়ে গিয়েছে সেটা জানো তুমি… আজ প্রায় পঞ্চাশের কোঠায় আমি… তোমার বয়সের ডবলেরও বেশি… সেখানে কি করে তোমার জীবনটাকে আমি জেনে শুনে নষ্ট করতে পারি? বলো তো?’ পৃথার চুলে বিলি কাটে অর্নব।

‘আমার বুড়ো আমার কাছে… তোমাকে কে এত মাথা ঘামাতে বলেছে শুনি?’ অর্নবের বুকের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা… লম্বা শ্বাস টেনে অর্নবের গায়ের পুরুশালী গন্ধ নেয় সে… অনেকটাই এতক্ষনে সামলে নিয়েছে সে নিজেকে… অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা রাখার পরে অভিমানটাও এখন আর নেই।

‘এটা কিন্তু তোমার পাগলামী…’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব।

‘আমার পাগলামী… তোমার তাতে কি?’ ফিসফিসায় পৃথা, অর্নবের বুকের লোমের ওপরে এঁকে দিতে থাকে ছোট ছোট চুম্বন।

নিজের বুকের ওপরে পৃথার তপ্ত ঠোঁটের ছোয়ায় শরীরটা সিরসির করে ওঠে অর্নবের। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে সে… ‘বাহ… আমাকে নিয়ে ঘটনা, আর আমার কিছু নয়? এ কেমন কথা? আর তাছাড়া তুমি আমাকেই বা কতটুকু চেন? বলো? আমার শরীরের কথা, বয়সের কথা, সব না হয় ছেড়েই দিলাম, কিন্তু কতদিন আর তুমি আমাকে চিনেছ? কিছুই না… শুধু ওই প্রণবের কিছুক্ষনের কথাতেই আমাকে চিনে গেলে? আমিও তো একটা বাজে, খারাপ লোক হতে পারি? আগে সেটা জানতে চাইবে না? একটা ছবিতে আমাকে দেখে আর প্রণবের কথা শুনেই আমাকে ভালোবেসে ফেললে? এত বোকামী কেউ করে? আমি তো তোমার ক্ষতিও করতে পারি? সেটা ভাববে না?’

অর্নবের কথা শুনে ওর থেকে ঝট করে আলাদা হয়ে বসে পৃথা… মুখ তুলে হি হি করে হাসতে শুরু করে সে… ওর এই ব্যবহারে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কি হলো… এত হাসার কি হলো এতে? আমি আবার হাসির কথা কি বললাম?’

হাসতে হাসতেই মাথা নাড়ে পৃথা, হাসি মাখা মুখে বলে, ‘হাসবো না… জোক অফ দ্য ইয়ার…’ বলে আরো হি হি করে হাসতে থাকে… হাতের পীঠ দিয়ে জমে থাকা চোখের জলটুকু মুছে নেয় সাথে সাথে।

‘আশ্চর্য তো… হেসেই চলেছে… কি ভুলটা বললাম আমি?’ ফের প্রশ্ন করে অর্নব।

এবার হাসিটা থামায় পৃথা, মুখটাকে খানিক তুলে তাকিয়ে থাকে শূণ্যের পানে, যেখানে অর্নবের অদৃশ্য দাড়ি গোঁফে ভরা মুখটা বর্তমান… ‘মশাই… আমি মেয়ে… একটা ছেলে সে কতটা ভালো আর কতটা খারাপ… সেটা আমরা অনেক আগেই বুঝে যাই… বুঝেছেন?’

‘সে তো বুঝলাম… কিন্তু তুমি আমাকে দেখেছ কোথায় যে আমার সম্বন্ধে তোমার এত বড় ধারণা হয়ে যাবে? হু? দেখেছ তো ওই ছবিটায় শুধু… তাও সেই কত বছর আগের তোলা… আর তাছাড়া এতদিনে ওই ছেলেটা একটা শয়তান লোকে পরিণত হয়ে ওঠে নি, সেটাই বা কি করে এত জোর দিয়ে বলছ?’ প্রশ্ন করে অর্নব।

এবার আসতে আসতে পৃথার মুখটা সিরিয়াস হয়ে ওঠে যেন… ধীর কন্ঠে বলে, ‘যে লোকটা একটা মেয়েকে একদম ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে দিনের পর দিন পেয়েছে… পেয়েছে সেই মেয়েটিকে একেবারে অসহায় অবস্থায়, এমন কি সময় সময় মেয়েটি ছিল একেবারে নগ্ন… আবার কখন সে ছিল নেশায় ডুবে… কিন্তু সেখানে কখনও, কোন অবস্থাতেও, একবারের জন্যও তার এতটুকু ক্ষতি করার চিন্তাও করেনি, একবারের জন্যও ছুঁয়েও দেখেনি… সুযোগ নিতে কাছে আসে নি… তাকে শয়তান বলবো? তাকে… তাকে বিশ্বাস করব না?’ বলে থামে সে… গভীর দৃষ্টি ফেলে শূণ্যের পানে… তারপর মুখটাকে ফের গুঁজে দেয় অর্নবের বুকের মধ্যে… লোমশ বুকে মুখটাকে বারে বারে ঘষতে ঘষতে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আমি যে সেই লোকটাকে আমার নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি গো… বোঝ না?’

অর্নবের মুখ থেকে কথা সরে না আর… কি বলবে সে? আর কি ভাবে বোঝাবে এই পাগলী মেয়েটাকে? কি ভাবে নিরস্ত্র করবে তার জীবনের সাথে জড়িয়ে না ফেলতে… সেও যে অস্বীকার করতে পারে না যে নিজেও কখন মনটা দিয়ে ফেলেছে এই মিষ্টি মেয়েটাকে… কিন্তু ভেবেছিল সেটা লোকানোই থাকবে শুধু তার নিজের ভেতরে… প্রকাশ্যে আসবে না কখনও… কিন্তু এই মেয়েটা তার সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে… কিছুতেই পারছে না নিজেকে সরিয়ে রাখতে মেয়েটির থেকে…

দুজনে দুজনকে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে বসে থাকে… ঘড়ির কাঁটা সরে যায় টিকটিক শব্দ করতে করতে… দুটো শরীর যেন একে অপরের সাথে ছুঁয়ে থেকে নিশব্দ আলোড়নহীন তাদের ভালোবাসার আদানপ্রদানে ব্যস্ত হয়ে থাকে… ধীরে ধীরে অর্নবের একটা হাত উঠে এসে থামে পৃথার পীঠের ওপরে… আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে থাকা পৃথাকে… টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে আর একটু ভালো করে… পৃথাও হারিয়ে যায় অর্নববের বুকের মধ্যে অক্লেশে… পরম আবেশে।



২৩।।

‘তিতির…’ কিছু বলতে শুরু করেছিল অর্নব, কিন্তু তার আগেই ঝটিতে বুকের মধ্যে থেকে উঠে বসে পৃথা… হাত তুলে চেপে ধরে অর্নবের নিরাকার মুখটাকে… ‘ব্যস… আর একটাও কথা নয়… যা সংশয় ছিল তোমার মনের মধ্যে, আজ সেটার সব কিছু দূর হয়ে গেছে… আর নতুন করে তোমাকে ভাবার সুযোগ দেবো না আমি… দেবো না কোন সুযোগ নতুন করে আমাকে তোমার হতে বাধা দেবার… আমি তোমার… শুধু তোমার… আর এটাই শেষ কথা… শুধু আমার নয়, আমাদের, তোমার আর আমার, দুজনেরই… বুঝেছে…’ বলতে বলতে চোখদুটো চকচক করে ওঠে পৃথার নিরন্তর ভালোবাসায়।

আর কিছু বলার চেষ্টাও করে না অর্নব, সে বুঝে গেছে, এই মেয়েকে আর বুঝিয়ে লাভ নেই… এ মেয়ে তার হওয়া থেকে কিছুতেই বিরত থাকবে না, তা সে যতই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক আর অবাস্তব হোক না কেন… এ মেয়ে নিজের মন প্রাণ সব কিছু তার কাছে সমর্পণ করে বসে আছে, একে ফেরানোর সাহস বা শক্তি, কোনটাই আর তার নেই। চেষ্টার তো কসুর করে নি, কিন্তু আজ নিজের কাছেই হেরে গিয়েছে সে।

‘এই… কি ভাবছ?’ অর্নবের মুখ থেকে হাত নামিয়ে তার বাহু ধরে নাড়া দেয় পৃথা… ‘চুপ করে গেলে যে?’

‘যা বাব্বা, তুমিই তো চুপ করে থাকতে বললে, মুখ চেপে ধরলে যাতে না কিছু বলি…’ বলে হাসে অর্নব।

‘আহা, সেটা তো ওই সব উল্টো পালটা কথা যাতে না বলো, তার জন্য মুখ চেপে ধরেছিলাম, অন্য কথা বলতে কি বারণ করেছি আমি?’ গাঢ় স্বরে বলে পৃথা।

‘আমার যে সমস্ত কথা গুলিয়ে গেছে তিতির… কি যে বলবো, বুঝে উঠতে পারছি না…’ বলে ওঠে অর্নব… হাত বাড়িয়ে পৃথার ঝাঁকড়া চুলগুলোকে গোছা করে মাথার পেছনদিকটায় ধরে একটু নাড়িয়ে দেয়।

‘আহহহহ…’ কঁকিয়ে ওঠে পৃথা।

থতমত খেয়ে যায় অর্নব… তাড়াতাড়ি পৃথার চুলের গোছাটা ছেড়ে দিয়ে বলে, ‘লাগলো তিতির?’

‘হুম…’ মাথা হেলিয়ে উত্তর দেয়ে পৃথা, ‘মাথার ভেতরটা ঝনঝন করে উঠল যেন…’

‘ইশ… ছি ছি… আমার একদম খেয়াল ছিল না… সরি, এক্সট্রীমলি সরি… তোমার এখন দুর্বল শরীর… এই ভাবে চুল ধরে নেড়ে দেওয়া উচিত হয় নি…’ বিনীত গলায় ক্ষমা চায় অর্নব।

‘অত বিনয় দেখাতে হবে না মশাইকে… একটু চুল ধরে নেড়েছ তো কি হয়েছে?’ নিজেই চোখ পাকায় পৃথা। তারপর কি ভেবে বলে, ‘তবে জানো, মায়ের মুখে শুনেছিলাম মেয়েদের চুলের মুঠি ধরে টানতে নেই…’

‘তাই? কেন? কি হবে তাতে? মাথার থেকে চুল খুলে যাবে?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব।

‘না গো, সত্যিই… মহাভারতে ছিল না, দ্রৌপদীর চুল ধরে দুঃশাসন টেনেছিল, তাই তাদের বংশ একেবারে লোপ পেয়ে গিয়েছিল… সেই জন্যই তো মা বলে, মেয়েদের চুলের মুঠি ধরে ছেলেরা টানলে নাকি ক্ষতি হয়।’

‘ইশ… তাহলে তো আরো একবার টেনে দিতে হয় দেখছি… আমার তো আর কোন বংশ নেই যে তার লোপ পাবে, যা ছিল তা তো অনেকদিন আগেই সব মুছে গিয়েছে… বাকি রইলাম আমি, সে তো তাহলে ভালোই হবে, তাড়াতাড়ি এই ধরাধাম ছেড়ে রওনা দিতে পারবো… কি বলো?’ মজা করে বলে অর্নব।

‘এ ভাবে একদম বলবে না আর… কোনদিন… খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু বলে দিলাম তাহলে…’ রেগে গিয়ে ঝেঁকে ওঠে পৃথা… হাত বাড়িয়ে দুমদুম করে কিল মারতে থাকে অর্নবের বুকের ওপরে… তাড়াতাড়ি করে অর্নব ওর হাত দুটো ধরে নেয়… বলে, ‘আচ্ছা, বাবা, আচ্ছা… বলবো না… হয়েছে?’

‘ভিষন বাজে লোক একটা… খালি বাজে বাজে কথা বলে…’ মুখটা ভার করে তোলে পৃথা।

‘ওহ! বাবা, সরি… বললাম তো… আর বোলবো না…’ পৃথার চিবুকটা ধরে নেড়ে দেয় একটু।

‘এই রকমভাবে বলার জন্য তোমায় শাস্তি পেতে হবে…’ ভুরু নাচিয়ে বলে ওঠে পৃথা।

‘বাবা… একটা কথা বলার জন্য শাস্তি… এতো দেখছি লঘু দোষে গুরু দন্ড…’ অর্নব হাসতে হাসতে বলে।

‘এই তুমি ছত্তিসগড়ের লোক না?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা… তো? তাতে কি হলো?’ অবাক হয়ে ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

‘না, তুমি এত ভালো বাঙলা প্রবাদ জানলে কি করে?’ আবার জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘আরে ছত্তিসগড়ের হলে কি হবে, আমি তো পুরোপুরিই বাঙালী… কেন আমাকে কি বিহারী ভেবেছিলে?’ হাসতে হাসতে উত্তর দেয় অর্নব।

নিজেই বোঝে একটা বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলেছে সে, তাই লজ্জা পেয়ে যায় অর্নবের হাসিতে… ফর্সা গালটা লালের আভায় রেঙে ওঠে… ‘আহা, এত হাসার কি আছে এতে?’ বলে মাথা নিচু করে লজ্জায়।

‘বাবা, এমন একটা সাহসী মেয়ে, সে আবার লজ্জাও পায়? বাহঃ… লজ্জা পেলে তো বেশ দেখতে লাগে! এমন সুন্দর মুখের গালগুলো কেমন লাল লাল হয়ে ওঠে…’ বলে অর্নব।

অর্নবের কাছে নিজের রূপের প্রশংসা পেয়ে মনটা গলে যায় পৃথার… একটা ভিষন ভালোলাগায় ভরে ওঠে বুকের মধ্যেটায়… গালদুটোর সাথে কানের লতিতেও লালের আভা পড়ে… তাড়াতাড়ি ঝুঁকে পড়ে মুখ লুকায় অর্নবের বুকের মধ্যে… ‘ইশ… অমন ভাবে বলছো কেন…’ গলার স্বরে আদর ঝরে পড়ে তার।

অর্নব ওর ছেলেমানুষি রূপটা দেখে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মধ্যে আরো বেশি করে, মাথার ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে… অর্নবের আদরে যেন আরো গলে যেতে থাকে পৃথা ওর বুকের মধ্যে… মনে মনে ভাবে, আজ সে জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া পেয়ে গিয়েছে।

‘তিতির… এবার চলো… চানটা করে নিতে হবে তো… অনেক বেলা হয়েছে… খালি আদর খেলে হবে? চলো চলো… ওদিকে গিজার কতবার চালু হয়েছে আর বন্ধ হয়েছে কে জানে… এবার ওটা জ্বলে যাবে… দেখো…’ তাড়া দেয় অর্নব, প্রায় জোর করেই বুকের ওপর থেকে তুলে সরায় পৃথাকে।

অর্নবের থেকে সরে সোজা হয়ে বসে, বলে, ‘হ্যা, হ্যা… চলো… চানটা করে নিই… সেই তখন থেকে বলছি যে চলো… শুনছেই না লোকটা…’ হাসতে হাসতে বলে ওঠে পৃথা।

‘ওই দেখো… এ দেখি উল্টে আমাকেই ডাঁটে… নিজেই বসে বসে আদর খাচ্ছিল আর এখন আমাকেই ধমকাচ্ছে… কি মেয়েরে বাবা…’ অবাক গলায় বলে অর্নব।

‘এই লোকটা আমায় আদর করবে আর আমি আদর খাবো না? আমি কি অতই বোকা নাকি? হু?’ ঘাড় বেঁকিয়ে বলে ওঠে পৃথা, আর তারপরই পরণের টি-শার্টটার হেমটা ধরে ঝট করে মাথা গলিয়ে খুলে ফেলে গা’য়ের থেকে সেটাকে।

পৃথার কান্ড দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে অর্নব, ‘আরে, আরে… একি করছ…’

‘চান করবো কি জামা কাপড় পড়েই? নাকি?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘ন…ন…না… মানে সেটা বলি নি… তবে… এই ভাবে… এখানেই… আমার সামনে…’ আমতা আমতা করে অর্নব… চোখের সামনে একটা তম্বী মেয়ের অর্ধনগ্ন দেহটাকে দেখে বুকের মধ্যেটায় কেমন দম আটকে আসে… ভরা দিনের আলোয় পৃথাকে এতটা সামনে থেকে এই ভাবে দেখে বুকের মধ্যেটায় ধকধক করে ওঠে হৃদপিন্ডের গতি… চেষ্টা করেও সরাতে পারে না চোখদুটোকে পৃথার শরীরটার ওপর থেকে… সত্যিই সুন্দরী… প্রকৃত সুন্দরী বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই… আর সেই সৌন্দর্যের সাথে যখন দূরন্ত যৌবনের সংমিশ্রণ ঘটে যায়, সেই দেহটার ওপর থেকে চোখ সরায় কি করে সে? পৃথার বুকের ওপরে থাকা স্তনদুটো যেন হাতছানি দিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে… ফর্সা সুগোল স্তন… বয়েসের সাথে একেবারে ঠিক পরিমাপের… আর সেই স্তনদুটোর ওপরে গাঢ় বাদামী বলয়… যার মধ্যে থেকে জাগে রয়েছে দুটো আরো গাঢ় রঙের লালচে বাদামী স্তনবৃন্ত… একেবারে সুঠাম পেট… এতটুকুও চর্বির লেশমাত্র নেই সেখানে… একটা হাল্কা লোমের আভাস স্তনবিভাজিকার মাঝখান থেকে সরাসরি নেমে গিয়েছে সেই মসৃন পেটটা বেয়ে নাভীর পানে… এত পেতে থাকা পেটের ওপরে কি সুন্দর গভীর নাভী… কিন্তু নাভীটা একটু লম্বাটে ধরণের… ঠিক গোল নয়… নাভীর নীচ থেকে ফের শুরু হয়েছে লোমের আভাসটা… তলপেট বেয়ে গড়িয়ে আরো নেমে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে পরে থাকা সুতির পায়জামাটার কোমরের ব্যান্ডের আড়ালে… যদি ওটা না থাকতো… চমক ভাঙে পৃথার গলার আওয়াজে… তাড়াতাড়ি করে চোখ তুলে নেয় পৃথার মুখের পানে…

‘আহা… ন্যাকা… আমাকে যেন ন্যাংটো দেখেন নি উনি… এই প্রথম দেখছেন… কি লজ্জা দেখ বাবুর…’ বলতে বলতে ইচ্ছা করে নিজের যুবতী বুকদুটোকে হাতের তেলোয় নীচ থেকে কাঁচিয়ে তুলে ধরে… মুঠোর ফাঁক থেকে ফর্সা ত্বকের নরম মাংসের সাথে লালচে বাদামী রঙের শক্ত হয়ে থাকা বুকের বোঁটা দুটো উঁচিয়ে থাকে অর্নবের চোখের সামনে… হাল্কা চাপ দেয় হাতের মুঠোয় পৃথা… এই ভাবে পৃথা নিজের স্তনটাকে ধরে মর্দন করছে দেখে দম আটকে আসে অর্নবের…

‘অর্নববাবু কি চোখ বন্ধ করে নিয়েছেন, নাকি তার তিতিরের বুকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছেন? হু?’ চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘এত সুন্দর জিনিসের থেকে কি চোখ ফেরানো যায়? সম্ভব?’ গাঢ় স্বরে উত্তর দেয় অর্নব।

‘বলছো? পছন্দ হয়েছে তাহলে?’ মুচকি হাসে পৃথা।

‘পছন্দ না হয়ে কি উপায় আছে?’ জবাব আসে অর্নবের।

‘হাত দুটো দাও…’ বলে নিজের বুকটা ছেড়ে সামনের পানে হাত বাড়ায় পৃথা… ওর হাতের মধ্যে নিজের হাতদুটো তুলে দিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কেন? কি করবে?’

‘দেখতেই পাবে…’ ফের চোখ নাচিয়ে উত্তর দেয় পৃথা। তারপর অর্নবের হাত দুটো টেনে এনে নিজের নরম বুকদুটোর ওপরে রাখে… কর্কশ কড়া পড়া পুরুশালী হাতের তেলোর ছোয়ায় আবেশে নিজেরই চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে পৃথার… ‘আহহহহহ…’ মুখ দিয়ে আপনা থেকেই শিৎকার বেরিয়ে আসে তার… ভালো করে চেপে ধরে হাতের তেলোদুটোকে নিজের বুকের ওপরে… অনুভব করে এক একটা নরম মাংসপিন্ড প্রায় পুরোটাই ঢুকে গিয়েছে অর্নবের হাতের তেলোর মধ্যে… নুড়ি পাথরের মত শক্ত হয়ে ফুলে ওঠে বুকের বোঁটাদুটো হাতের তেলোর মধ্যেতেই। চোখ বন্ধ করে হাতদুটোকে ঘসে নিজের বুকের ওপরে… সারা শরীরে একটা অদম্য রোমাঞ্চ খেলে বেড়ায় তার… সারা দেহ সিরসির করতে থাকে… গায়ের চামড়ায় কাঁটা দেয়… কেমন অদ্ভুত ভাবে বেঁকে যায় মুখটা, ঠোঁটদুটো ফাঁক হয়ে যায় একটু… নাক দিয়ে নয়, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেবার প্রয়োজন হয় পৃথার… বুকের ভেতরে হাজারটা দামামা বাজতে থাকে যেন… মনে হয় হৃদপিন্ডটা এবারে লাফিয়ে উঠে হয়তো মুখের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসবে… হাতদুটোকে আরো চেপে ধরে বুকের ওপরে… মাথাটা হেলে যায় পেছন দিকে খানিকটা… ঢোঁক গেলে বারে বারে…

‘কি হয়েছে?’ প্রশ্ন করে অর্নব, গলা কেঁপে যায় তারও যেন…

‘আহহহ… নাহঃ… কিছু না…’ অর্নবের প্রশ্নে মাথাটাকে আবার সামনে এনে তাকায়, কিন্তু চোখের মধ্যে যেন তখন কোথা থেকে এক রাশ কামনা এসে ভীড় করেছে… লাল হয়ে উঠেছে চোখের মণিদুটো… গলা শুকিয়ে আসে তার… ফের চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে আরামে।

অর্নব বুঝতে পারে, আর বেশিক্ষন এই ভাবে থাকলে, দুজনেই হারিয়ে যাবে একে অপরে মধ্যে… তাই প্রায় জোর করেই বলে ওঠে, ‘এখন থাক এসব… এবার চলো…’ বলে নিজের হাতটা টেনে নেবার চেষ্টা করে।

‘নাহঃ… নাহঃ…’ অর্নব হাত টেনে নিচ্ছে বুঝে প্রায় আঁতকে ওঠে পৃথা, আরো জোরে চেপে ধরে হাতদুটোকে নিজের বুকের ওপরে… প্রায় চেপ্টে যায় হাতের চাপে বুকের নরম মাংসদুটো যেন… হাতের তালুতে ফোঁটে বোঁটাদুটো… ‘আর একটু… আর একটু থাকনা এখানে… প্লিজ…’ ফিসফিসিয়ে অনুনয় করে ওঠে পৃথা।

মেনে নেয় অর্নব… আর না মেনে উপায়ই বা কি… তারও তো অসম্ভব ভালো লাগছে পৃথার ওই নরম বুকের ওপরে হাত রেখে… যেন দুটো মাখনের তাল তার হাতের তালুর মধ্যে গলে যাচ্ছে আপন আলাপনে…

‘একটু চাপ দাও না… টেপো না এগুলোকে…’ ফিসফিসিয়ে বলে পৃথা।

মুঠো শক্ত করে একটু, চাপ দেয় নরম বুক দুটোর ওপরে… উফফফ… নিদারুন ভালো লাগায় অর্নবেরও মনটা ভরে ওঠে যেন… ইচ্ছাই করে না ছেড়ে দিতে… কত দিন… কত বছর পর এই ভাবে হাতের মুঠোয় একটা নারী শরীরের কোমল অঙ্গকে ধরল… অনুভব করে ধীরে ধীরে ফনা তুলে ধরছে তার পৌরষ… হারিয়ে যেতে থাকে সে শারিরীয় সুখের অতলে।

আকস্মাৎ, প্রায় জোর করেই হাতদুটো টেনে নেয় পৃথার বুকের ওপর থেকে অর্নব… ‘নাঃ… আর না… হয়েছে… এবার চান করতে যেতে হবে…’ বলে ওঠে সে।

‘উফফফ… কি রষকষহীন লোকরে বাবা…’ বিরক্ত হয়ে ভুরু কোঁচকায় পৃথা… পরক্ষনেই মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, ‘এই শোনো… একবার শুধু তোমাকে এই ভাবে জড়িয়ে ধরবো… প্লিজ… প্লিজ… একবার… ভিষন ইচ্ছা করছে… প্লিজ না বোলো না… একবার… শুধু একবার… তারপর দেখো আমি বাধ্য মেয়ের মত চান করতে চলে যাবো… আর কিছু আবদার করবো না… ধরি না গো… ধরবো… ধরবো?’

পৃথার ছেলেমানুষিতে না হেসে উঠে পারে না অর্নব, আর বারণই বা করবে কি মুখে, তার মনেও যে পরম আকাঙ্খা পৃথার এই যুবতী নগ্ন দেহটাকে নিজের শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরার… পৃথার নবীন শরীরটার ওম নিজের শরীরে মেখে নেবার… মৃদু গলায় বলে, ‘আচ্ছা, এসো… কিন্তু, একটুখানিই কিন্তু…’ বলে হাত মেলে ধরে দুই ধারে।

‘হ্যা হ্যা… একবারই… বলে উঠে হাঁটুতে ভর দিয়ে এগিয়ে যায় সামনের পানে…’ চোখে না দেখতে পেলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না পৃথার দুই ধারে মেলে রাখা অর্নবের হাতের হাতছানি। আন্দাজ করে এগিয়ে যায় সে, হাঁটু ঠেকে অর্নবের বাবু হয়ে বসে থাকা হাঁটুর সাথে। এবার সোজাসুজি উঠে দাঁড়ায় বিছানায়… ওর কান্ড দেখে অবাক হয় অর্নব, বোঝার চেষ্টা করে পৃথা কি করতে চাইছে… কিন্তু বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয় না তাকে… পৃথা হাত বাড়িয়ে হাতড়ায় একটু… নাগালের মধ্যে পেয়ে যায় অর্নবের বলিষ্ঠ কাঁধটাকে… দুটো হাত নিয়ে দুই কাঁধের ওপরে রেখে দেহের ভরটার ভারসাম্য বজার রাখে… তারপর পা তুলে অর্নবের কোলের দুইপাশে একটা একটা করে রেখে ধীরে ধীরে বসে পড়ে একেবারে অর্নবের কোলের ওপরে, হাঁটু মুড়ে… পাতলা সুতির পাজামায় ঢাকা দুটো পুরুষ্টু মাংসল থাই চেপে বসে অর্নবের নগ্ন উরুর দুইপাশে… দুহাত দিয়ে অর্নবের বিদেহী শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে নিজের দেহটাকে সাঁটিয়ে দেয় অর্নবের লোমশ বুকের ওপরে… পৃথার নরম বুকদুটো চেপে বসে অর্নবের চওড়া ছাতির ওপরে… মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের ঘাড়ে… অর্নবের গালের দাড়িগুলো ঝাপটা দেয় তার মুখের ওপরে… কিন্তু সে দিকে তখন তার কোন খেয়াল নেই… সে তখন চোখ বন্ধ করে নিজের শরীরের সাথে তার একান্ত প্রিয়ের শরীরের স্পর্শ নিতে ব্যস্ত।

পৃথা এই ভাবে এসে তার কোলের ওপরে একেবারে বসে পড়বে, এটা সম্ভবত আশা করেনি অর্নব, তাই একটু সময় লাগে তার ধাতস্থ হতে… তারপর একটা সময় আসতে আসতে হাত দুটোকে দুইপাশে দিয়ে ঘিরে বেড় দিয়ে ধরে পৃথার কোমল শরীরটাকে… বুকের কাছে আরো শক্ত করে টেনে নেয়… পৌরষ তখন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে পড়েছে তার… সেই অনভিপ্রেত ঋজুতার অনুভুতি স্পর্শ করে পৃথাকেও… অনুভব করে অর্নবের পৌরষের উপস্থিতি পরণের পায়জামা ভেদ করে নরম বর্তুল নিতম্বের নীচে… অর্নবের কানের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, ‘ইয়ু আর হার্ড…’

পৃথার কথা শুনে গুঙিয়ে ওঠে অর্নব… ‘আই অ্যাম অলসো ওয়েট… ডাউন দেয়ার…’ ফিসফিসিয়ে জানায় পৃথা।



২৪।।

অর্নবের গলাটাকে বাঁহাতে পেঁচিয়ে ধরে ডান হাতটা ঘুরিয়ে পেছন দিকে নামিয়ে দেয় পৃথা… হাতের মুঠোয় ধরা পড়ে অর্নবের ঋজু পৌরষটা, যেটা এই মুহুর্তে তার নরম নিতম্বের নীচে চাপা পড়ে একটু খানি মুখ বার করে রয়েছে দুই পায়ের ফাঁকে… মুঠোর চাপ দেয় সামান্য… অনুভব করার চেষ্টা করে হাতের মধ্যে থাকা তার প্রিয়তমের কাঠিন্যটাকে।

‘উমমম… কি করছো…’ গুঙিয়ে ওঠে অর্নব এই ভাবে আকস্মাৎ আক্রমনের শিকার হয়ে… তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে পৃথার হাতটা নিজের পুরুষাঙ্গের ওপর থেকে টেনে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে… ‘বদমাইশি করে না… ছাড়ো ওটা…’

মুঠোয় ধরা পুরষাঙ্গটার মাথাটায় আঙুল বোলায় পৃথা… জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করে যাতে অর্নব ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিতে না পারে… ‘উমমম… ইয়ু আর রিয়েলি হার্ড… আই লাইক ইট…’

এবারে সত্যিই জোর করেই হাতটা নিজের পুরুষাঙ্গের ওপর থেকে সরিয়ে দেয় অর্নব, বলে ‘বদমাইশ মেয়ে… অনেক হয়েছে… এবার চান করতে চলো…’

হাতটা ছাড়িয়ে দিতে তুলে নিয়ে আসে ফের ওপরে, ‘আচ্ছা, তুমি দাড়ি কামাও না কেন? তোমায় দাড়ি ছাড়া ভিষন সুন্দর দেখতে লাগে…’ ছবিতে থাকা মুখটা মনে করে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘মাথার মধ্যে এত দুষ্টুমী বুদ্ধি গজগজ করে, আর এই টুকু বুঝতে পারো না?’ হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে অর্নব…

‘ও… আমার মাথায় খালি দুষ্টুমী বুদ্ধি দেখেছ? না?’ চোখ পাকায় পৃথা, তারপর ফের প্রশ্ন করে সে, ‘বলো না, কেন দাড়ি রেখেছ?’

‘আরে, আমি দাড়ি কামাবো কি করে? নিজেকে কি আয়নায় দেখতে পাই যে দাড়ি কাটবো? তারপর কাটতে গিয়ে একটা কেলেঙ্কারি হোক আর কি মুখটুক কেটে ফেটে… সত্যিই বাবা, মাঝে মাঝে যে কোথায় যায় তোমার বুদ্ধিগুলো কে জানে? এই জন্যই বলি, মাথার মধ্যেই দুষ্টুমীটাকে একটু কমাও…’ উত্তর আসে বিদেহী অর্নবের থেকে।

‘ওওওওও…’ মুখটাকে সরু করে বলে ওঠে সে, তারপর দুই হাত বাড়িয়ে দেয় আন্দাজ করে অর্নবের গাল লক্ষ্য করে পৃথা… হাতের নাগালে অর্নবের গালের বড় বড় দাড়িগুলো ঠেকতেই মুঠোর মধ্যে ধরে হাল্কা করে দেয় এক টান…

‘আআআ…’ ব্যাথায় কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব… তাড়াতাড়ি হাত তুলে ছাড়িয়ে নেয় দাড়ির থেকে পৃথার হাতদুটোকে… বলে, ‘উফফফফ… কি হচ্ছেটা কি বদমাইশি… এই ভাবে কেউ দাড়ি টানে? লাগে না?’

খিলখিল করে হেসে ওঠে পৃথা… ‘বেশ করেছি… শোধ বোধ বাঘের পোঁদ…’

‘ওটা আবার কি?’ অবাক প্রশ্ন অর্নবের।

‘তখন আমার চুলের মুঠি ধরে নেড়ে দিয়েছিলে, তাই আমিও শোধ নিলাম… তাই শোধ বোধ বাঝের পোঁদ… হি হি…’ হাসতে হাসতে বলে সে।

‘এতো গুন্ডা মেয়ে… উফফফ… আগে যদি জানতাম…’ রাগ দেখায় অর্নব।

‘কি? কি? কি করতে শুনি আগে জানলে?’ চোখ পাকায় পৃথা অর্নবের গলা জড়িয়ে ধরে রেখে তার কোলের ওপরে বসে… কোমরটাকে দোলায়, আগু পিছু করে।

‘আগে জানলে এই ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দিতাম না এই মেয়েটাকে…’ বলে অর্নব… হাত দিয়ে থামাবার চেষ্টা করে এই ভাবে কোমর দোলানোর… যে ভাবে নরম নিতম্বটা ঘসা খাচ্ছে তার পুরুষাঙ্গের ওপরে, তাতে অস্বস্থি বাড়াটাই স্বাভাবিক।

‘ইশ… না দিলেই হলো… আর তুমি দিয়েছ নাকি? আমি তো ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছি প্রণবদার কাছ থেকে… তুমি তখন কোথায় ছিলে মশাই? হু?’ অর্নবের গলা থেকে হাত নামিয়ে কোমরে রাখে পৃথা… থেমে যায় তার কোমর দোলানো।

‘বাব্বা, দেখ, একেবারে কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে শুরু করেছে, কি ঝগড়ুটে মেয়েরে বাবা…’ ছদ্ম রাগ দেখায় অর্নব।

‘কি? আমি ঝগড়ুটে?’ বলে আবার হাত তোলে অর্নবের দাড়ি লক্ষ্য করে।

‘এই… না, না… একদম না…’ বলে তাড়াতাড়ি মুখটা পিছিয়ে নিয়ে পৃথার হাতদুটো ধরে নেয় সে।

‘তাহলে সরি বলো…’ ফের কোমরের ওপরে হাত চলে আসে।

‘ইশ… ঝগড়া করবে উনি, আর সরি বলতে হবে আমাকে…’ বলে ওঠে অর্নব।

‘ফের?’ আবার হাত তোলার উদ্যগ করে পৃথা।

‘আছা, আচ্ছা, সরি সরি… ঘাট হয়েছে’ বলে তাড়াতাড়ি ক্ষমা চায়।

‘হু হু বাবা, দেখেছ… ক্ষমা চাইতেই হলো আমার কাছে… কেমন?’ বলে অর্নবের কোলের ওপরে বসেই শরীরটাকে ফের আগুপিছু করা শুরু করে সামনে পেছনে করে… যার ফলে আবার নিতম্বের নীচে চাপা পড়ে থাকা পুরুষাঙ্গটা ঘসা খেতে থাকে পায়জামার আড়ালে থাকা পাছার দুটো দাবনার মাঝে আর ভিজে ওঠা যোনির পাপড়িগুলোতে চাপা পড়ে… নিজের শরীরের সাথে এই ভাবে দৃঢ় পুরুষাঙ্গের স্পর্শে সিরসির করে ওঠে তার… আরামে চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে আসে পৃথার।

অর্নব প্রমাদ গোনে… এবারে পৃথাকে সামলাতে না পারলে আর কিছু আটকানো যাবে না, তখন সে হয়তো নিজেকেই আর সামলাতে পারবে না… ভাবতে ভাবতে প্রায় জোর করেই পৃথাকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নেমে যায় বিছানার থেকে।

‘কোই গেলে?’ প্রশ্ন করে পৃথা… শূন্যে হাতড়ায় অর্নবের দেহের স্পর্শ পাবার আশায়।

‘আমি বিছানায় আর নেই… এখানে নেমে এসেছি… এবার তুমিও নামো… চান করতে যাও…’ পৃথার পেছন থেকে বলে অর্নবের।

ঘুরে বসে আওয়াজ লক্ষ্য করে পৃথা, ‘তুমি এই ভাবে নেমে গেলে কেন?’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে সে।

‘না নামলে তোমার দুষ্টুমী থামাতে পারতাম না… যা বদমাইশি শুরু করেছিলে, তাতে…’ বলতে বলতে থমকায়।

‘কি? তাতে কি?’ কোমরে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘তাতে আর কিচ্ছু না… এবার চলো তো… লক্ষ্মী মেয়ের মত চান করে আসবে… এরপর তোমাকে লাঞ্চ করে অসুধ খেতে হবে… এই রকম শুধু বদমাইশি করলেই হবে?’ বলে অর্নব।

চুপ করে বসে কিছু একটা ভাবে পৃথা… তারপর বিছানার ওপরে সটাং উঠে দাঁড়ায়… পরক্ষনেই যেটা করে সেটার জন্য অর্নব একেবারেই প্রস্তুত ছিল না… ঝট করে পরনের পায়জামাটা কোমরের কাছটায় ধরে একটানে শরীর থেকে নামিয়ে দেয়… একেবারে খুলে ফেলে দেয় বিছানার অপর দিকে… তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ নাচায়… ‘এবার চলো…’

চোখের এইবার একেবারেই নগ্ন হয়ে যাওয়া পৃথার শরীরটা দেখে ঢোঁক গেলে অর্নব… মনে মনে ভাবে, ভাগগিস আমাকে ও দেখতে পাচ্ছে না… ছি ছি… ওর শরীরটার দিকে এই ভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছি জানতে পারলে কি বিচ্ছিরি ভাবতো আমার সম্বন্ধে… ভাবে, কিন্তু চোখ সরাতে পারে না পৃথার নগ্ন দেহটার ওপর থেকে… প্রায় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে সুঠাম দেহটার দিকে… আগেও যে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখেনি পৃথাকে তা নয়, কিন্তু সেটা হয় ছিল দূরের আড়াল থেকে অথবা নিঝুম রাতের আলো আধারির মধ্যে। কিন্তু এই ভাবে দিনের স্পষ্ট আলোয় হাতের নাগালের মধ্যে থেকে এত সুন্দরী মেয়ের এই রকম হিল্লোল তোলা শরীর দেখে সে তো কোন ছাড়… দূর্বাসাও চমকে যেত নিশ্চয়। খানিক আগেই দেখা নগ্ন সুগোল দুটো স্তনের সাথে এখন সামনে প্রকাশ পাওয়া দুটো সুঠাম পুরুষ্টু মাংসল থাই সমেত পা, আর সেই অত্যন্ত লোভনীয় পায়ের ফাঁকে হাল্কা লোমের আড়ালে ফুলে উঁচু হয়ে থাকা যোনিবেদীটা… দেহের আড়াল থেকে উঁকি মারা নিতম্বের স্ফিতি… সব দেখতে দেখতে কেমন নেশা ধরে যায় তার…

‘কি হোলো? বাক্কি বন্ধ্‌?’ পৃথার গলার আওয়াজে চটকা ভাঙে অর্নবের।

‘অ্যাঁ?’ বলে ওঠে সে।

‘অ্যাঁ কি? বলছি যে আমাকে দেখে তো বাবুর কথা সরছে না দেখছি… কি? পছন্দ হয়েছে?’ কোমরে হাত রেখে পা দুটোকে একটু ফাঁক করে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘তু…তুমি চান করতে যাবে?’ তোতলায় একটু কথা বলতে গিয়ে, কিন্তু এবারে যদি না সামাল দিতে পারে, তা হলে যে কোন কিছু ঘটে যেতে পারে মুহুর্তের মধ্যে, নিজেই ভয় পায় সে সম্ভাবনার কথা ভেবে অর্নব।

‘যেতে পারি… কিন্তু আমার দুটো শর্ত আছে…’ বলে বিছানার ওপরে ওই রকম পাদুটোকে ফাঁক করে দাঁড়িয়ে শরীরটাকে দোলায় ডাইনে বাঁয়ে।

চোখ সরাতে পারে না অর্নব কিছুতেই পৃথার ওমন লোভনীয় শরীরটার থেকে… অনেক কষ্টে প্রশ্ন করে, ‘আবার কি শর্ত?’

হাত তুলে একটা আঙুল সামনে রেখে বলে পৃথা, ‘শর্ত এক, আমাকে চান করাবে তুমি… আমি নিজে চান করবো না… কি? রাজি?’

‘আমি চান করাবো? ইয়ার্কি নাকি? তুমি কি বাচ্ছা মেয়ে যে চান করিয়ে দিতে হবে?’ জিজ্ঞাসা করে অর্নব… সে জানে, এখনই যদি এই রকম শুরু করে পৃথা, তাকে বাথরুমে স্নান করার সময় আরো কাছে পেয়ে কি করতে পারে…

হাতের তালুদুটো দুইপাশে ছড়িয়ে ধরে কাঁধ তুলে শ্রাগ করে পৃথা উত্তর দেয়, ‘তাহলে চান করবো না… ব্যস… হয়ে গেলো…’

‘আচ্ছা, এটা কি ধরণের ছেলেমানষি হচ্ছে? হু? এই ধেড়ে মেয়েকে এখন চান করাতে হবে? এটা হয়?’ কাঁচুমাচু গলায় বলে অর্নব।

‘হয় না যদি, তাহলে এখন হঅঅঅবেএএএএ… আমি তো আর নিজে চান করবো না… আমাকে করিয়ে দিতে হবে… এবার দেখো… কি করবে তুমি… ইটস ইয়োর চয়েস বেবী…’ সেই একই রকম হাত তুলে কাঁধ ঝাকিয়ে বলে পৃথা।

‘হুম, বুঝলাম, তা তোমার দ্বিতীয় শর্তটা কি শুনি…’ জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

‘আগে প্রথম শর্তটাতে রাজি কি না শুনি, তারপর তো দ্বিতীয় শর্তের কথা আসবে…’ কথার ফাঁকে ইচ্ছা করে শরীরটাকে আবার দোলায় পৃথা… সামনে দাঁড়ানো অদৃশ্য লোকটার মধ্যে কি হচ্ছে, সেটা নিজে না দেখতে পেলেও, মনের আয়নায় বুঝতে অসুবিধা হয় না তার, আর সেটা ভেবেই আরো মজা পায় সে।

একটু চুপ থেকে প্রায় বাধ্য হয়েই মেনে নিয়ে বলে, ‘আচ্ছা, সেটা না হয় দেখছি কি করা যায়…’

‘নো বেবী নো… নো পরে টরে… এখনই বলতে হবে… আমাকে চান করিয়ে দেবে কি দেবে না… ইয়েস অর নো… ওনলি টু অপশনস্‌…’ বলে ফের দেহটাকে দোলায় ডাইনে বাঁয়ে কোমরে হাত রেখে।

‘বড্ড জেদী মেয়ে…’ বলে ওঠে অর্নব, তারপর প্রায় হাল ছেড়েই শেষে মানতে বাধ্য হয়, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে, আমিই না হয় চান করিয়ে দেবো… এবার খুশি তো… তাহলে চলো…’

‘আঃ… হাঃ… অসুবিধা আছে…’ বলে ঠোঁটদুটোকে সরু করে চুমুর মত করে পৃথা।

‘আবার কি হলো… বললাম তো যে ঠিক আছে, আমিই চান করিয়ে দেবো, তাহলে আবার কি অসুবিধা?’ প্রশ্ন করে অর্নব।

‘আমার দ্বিতীয় শর্ত রয়েছে এখনও…’ চোখ নাচিয়ে বলে পৃথা।

‘ও… বলো তোমার দ্বিতীয় শর্ত…’ মাথা চুলকায় অর্নব, কথার মাঝে চোখ ঘোরে পৃথার শরীরটার ওপরে নীচে… হাজার চেষ্ট সত্তেও কিছুতেই চোখটা সরিয়ে নিতে পারে না দোলাতে থাকা হিলহিলে দেহটার ওপর থেকে।

‘তুমি জানো আমার জ্বর হয়েছিল… কি তাই তো?’ শরীর দোলানো থামিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, হয়েছিলই তো… তো?’ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা রাখে অর্নব।

‘আমার জ্বর হয়েছিল আর সেই জন্য আমি খুব দুর্বল… ঠিক কি না?’ উত্তর দেবার বদলে ফের প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, সে তো হবেই দুর্বল, জ্বর হলে তো দুর্বল হয়ই মানুষ, এ আর এমন কি কথা?’ অর্নব বোঝার চেষ্টা করে পৃথার অভিসন্ধি।

‘তাহলে মেনে নিচ্ছ তো যে আমি দুর্বল?’ ফের জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘সে তো তাই জানতাম… হ্যা, তো কি হলো তাতে?’ এবার একটু যেন তটস্থ হয়ে ওঠে অর্নব, একটু যেন বুঝতে পারে যে কি বলতে চলেছে পৃথা।

ফের শরীরটাকে আগের মত করে দোলাতে শুরু করে বলে পৃথা, ‘তাই… আমাকে… তোমায়… কোলে করে বাথরুমে নিয়ে যেতে হবে, আমি হেঁটে যাবো না… বুঝেছ?’

‘কো… কোলে…!!!’ বিশ্ময় ঝরে পড়ে অর্নবের গলায়… ‘এই ধেড়ে মেয়ে উঠবে কোলে… তুমি কি পাগল হয়ে গেছ একেবারেই?’ বলে হা হা করে হাসতে থাকে।

পৃথার শরীর দোলানো ততক্ষনে থেমে গিয়েছে… কোমরে হাত রেখে চুপ করে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে অর্নবের হাসি থামার… তা থামতে বলে ওঠে… ‘হয়েছে?… যতটা হাসবার হেসে নিয়েছো? নাও এবার আমাকে নিয়ে চলো চান করাতে…’

‘তিতির… তুমি কি বলছ জানো?’ প্রশ্ন করে অর্নব।

‘কি আশ্চর্য, আমি বলছি, আর জানবো না যে কি বলছি? আমি কি বাচ্ছা মেয়ে নাকি?’ চোখ পাকিয়ে বলে পৃথা।

‘বাচ্ছা ছাড়া আর কি বলবো তোমায়? এখন এই বয়শে এসে আমার কোলে উঠবে তুমি? এটা কোন একটা আবদার হলো…?’ বলতে বলতে ফের হেসে ফেলে অর্নব।

‘ঠিক আছে, ছেড়ে দাও… নিতে হবে না আমাকে… এই আমি শুয়ে পড়লাম… আমি চানও করবো না, খাবারও খাবো না… আর অসুধও খাবো না… তোমার যা ইচ্ছা তাই করো তুমি…’ বলে সত্যি সত্যিই শুয়ে পড়ার উদ্যগ করে বিছানায়।

ওকে এই ভাবে ফের শুয়ে পড়তে দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে অর্নব, ‘আরে তুমি দেখি সত্যিই শুয়ে পড়ছ… আচ্ছা দাঁড়াও বাবা দাঁড়াও…’

অর্নবের কথায় থমকায় পৃথা… চোখ তুলে তাকায় একবার… মনে মনে ভাবে, হু হু বাবা, কেমন গেঁড়াকলে ফেলেছি তোমায়… নাও, এবার তোমার আদরের তিতিরকে কোলে তুলে নিয়ে যাও… যাবে না মানে… তোমার ঘাড় নেবে কোলে… আমিও পৃথা মুখার্জি… বুঝলে!!!

‘একটু এগিয়ে এসো এদিকে…’ কতকটা বাধ্য হয়েই বলে অর্নব।

বিজয়ীর হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের ওপরে… ফিক করে হেসে ওঠে সে… তারপর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় বিছানার কিনারে… দুটো হাত তুলে দেয় শূণ্যের পানে… পরক্ষনেই হটাৎ করে তার শরীরটা ভেসে যায় শূণ্যে… ‘ওহ! মা গো…’ ভয়ে কোঁকিয়ে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয় পৃথা… তাড়াতাড়ি একটা হাত ছোঁড়ে সামনের পানে… স্পর্শে বোঝে অর্নবের গলা… প্রাণপনে আঁকড়ে ধরে হাতের মধ্যে পেঁচিয়ে… তারপর আস্তে আস্তে চোখ খোলে… দেখে তখনও সে শূণ্যে ভেসে রয়েছে… উপলব্ধি করে একটা সবল হাতের পরশ তার ঘাড়ের নীচে, আর ঠিক একই রকম ভাবে তার দুটো পা’য়ের হাঁটুর নীচ থেকে সাপোর্ট দিয়ে পুরো দেহটাকে ধরে রেখেছে অপর আর একটি সবল হাত।

‘কি? ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?’ কানে আসে অর্নবের প্রশ্ন।

ঘাড় নেড়ে হ্যা বলে পৃথা… তারপর তার অপর হাতটাকে তুলে জড়িয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে ভালো করে দুই হাতে… নরম বুকদুটো ছুঁয়ে থাকে অর্নবের চওড়া পেষল অদৃশ্য বুকের ওপরে।

আর ভয় পায় না সে… বরং বেশ মজা লাগে এই ভাবে অর্নবের হাতের মধ্যে উঠে শূন্যে ঝুলে থাকাতে… খিলখিল করে হেসে ওঠে… গলা জড়ানো অবস্থাতেই মুখ তুলে চুমু খায় দাড়ি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অর্নবের গালের ওপরে… ‘লাভ ইয়ু বেবী… লাভ ইয়ু সো সো মাচ…’

‘এখন দেখছি পাগলীটার মুখে খুব হাসি ফুটেছে… আর কিছুক্ষন আগেই তো আঁৎকে উঠেছিলে… চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলে ভয়…’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব… পৃথার দেহটা অবলীলায় শক্তিশালী হাতের ওপরে তুলে এগিয়ে যায় ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমের দিকে।

খিলখিল করে হেসে ওঠে একটা বাচ্ছা মেয়ের মত… পা দোলায় অর্নবের গলাটাকে জড়িয়ে ধরে রেখে… আর তার কোন ভয় করে না… ও এখন নিশ্চিন্ত… একটা প্রকৃত পুরুষের হাতে নিজেকে সঁপে দিতে পেরে… বদমাইশি করে হাত তুলে ধরতে যায় অর্নবের দাড়িটা আবার… অর্নব ধমকায় তাকে, ‘আহ… আবার দুষ্টুমী… ফেলে দেবো কিন্তু এবার হাত থেকে…’

ফের খিলখিলিয়ে ওঠে পৃথা… ‘দাও না… তোমার তিতিরের লাগবে… আমার কি? তারপর তুমিই দেখবো আগে দৌড়েছো অসুধ আনতে…’

‘সব বুঝে গেছ দেখছি…’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব… ততক্ষনে বাথরুমের সামনে পৌছিয়ে গিয়েছে তারা… ভেতরে ঢুকে সাবধানে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় পৃথাকে বাথরুমের মধ্যে… তারপর বালতি এগিয়ে রাখে কলের নীচে… দুটো কল খুলে দেয় জলের… একটা গীজারের আর অপরটা ঠান্ডা জলের।

পৃথা অবাক হয়ে দেখে কেমন বালতিটা হাওয়া ভেসে এগিয়ে গেল কলের কাছে, জলের কলটার প্যাঁচ ঘুরে গেলো… জল পড়তে শুরু করল… দেখতে দেখতে ফের খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে।

‘হাসির কি হলো আবার?’ প্রশ্ন করে অর্নব।

‘হি হি… তুমি বালতিটা কলের নীচে পাতলে, কেমন ভূতের মত মনে হলো… যেন নিজের থেকেই ওটা এগিয়ে গেল… সত্যিই অর্নব, যদি না জানতাম, আমি হয়তো হার্টফেল করেই পড়ে থাকতাম এখানে…’ বলে আরো হাসতে থাকে সে।

পৃথার হাসিতে যোগ দেয় অর্নবও, বলে, ‘ইশ… ব্যাপারটা তো আগে ভেবে দেখি নি…’

মুখ ফিরিয়ে চোখ অবাক চোখে তাকায় পৃথা, ‘আগে ভাবলে কি হতো?’

‘না, মানে আগে ব্যাপারটা মাথায় এলে এই রকম ভয় দেখিয়ে একটা পেত্নিকে তাড়াতাম এখান থেকে, তাহলে তাকে আর কোলে তুলে ঘুরে বেড়াতে হতো না আমায়…’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব।

চোখ সরু হয়ে যায় পৃথার… কোমরে হাত দিয়ে বলে ওঠে, ‘কি? আমি পেত্নি?’ বলে হাত তুলে দুম দুম করে কিল বসাতে থাকে অর্নবের গায়ে।

‘না, না, তুমি নও… তুমি নও…’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে অর্নব।

হাত থামিয়ে কটমট করে তাকায় পৃথা… ‘আমি ছাড়া আর কোন পেত্নি এসেছিল তোমার কাছে, এই ফ্ল্যাটে শুনি?’

‘কেন? আর কেউ আসতে পারে না?’ জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

‘না… আর কেউ আসতে পারে না…’ বলে দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের বিদেহী শরীরটাকে… বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে দিয়ে বলে, ‘এই পেত্নিটা ছাড়া আর কেউ তোমার জীবনে আসবে না… আসলে খুন করে দেবো না…’

‘তাই? একেবারে খুন করে দেবে?’ হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

‘হু…’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় পৃথা… মুখটাকে গুঁজে রাখে অর্নবের নগ্ন বুকের মধ্যে।

‘পাগলী একটা… আচ্ছা… হয়েছে… এবার ছাড়… জলটা দেখতে দাও আমায়…’ বলে পৃথাকে বুকের থেকে সরিয়ে জলে হাত রেখে তাপ পরীক্ষা করে।

সন্তুষ্ট হলে মাগের মধ্যে নিয়ে পৃথার গায়ে ঢালে… বেশ আরাম লাগে গায়ের ওপরে উষ্ণ জলের ছোয়ায়… চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখে কি ভাবে মগটা শূণ্যে ভেসে ভেসে বালতির থেকে জল তুলে তার গায়ে ঢেলে দিচ্ছে… ঢেলে দেওয়া জলগুলো কাঁধের ওপর থেকে গড়িয়ে তার তম্বী শরীরটা বেয়ে নেমে যায় নীচের পানে… ভিজিয়ে তোলে মাতাল করে দেওয়া দেহের প্রতিটা চড়াই উৎরাই।

‘কই… গা’টা একটু ডলে নাও… আমি জল ঢেলে দিচ্ছি তো…’ চটকা ভাঙে অর্নবের গলার স্বরে।

‘আমি তো অসুস্থ… আমি কি করে গা ডলবো… ওটা তুমিই ডলে দাও…’ মুচকি হেসে বলে পৃথা, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে অর্নবের সামনে ভিজে গায়ে।

‘সেটাও আমাকেই করতে হবে?’ অপ্রস্তুত অর্নব জিজ্ঞাসা করে।

ঘাড় হেলায় পৃথা, ‘তুমি করবে না তো আর কোন ভূত আছে যে সে করবে? এই পেত্নিটার তো এই ভূতটাই আছে, না?’ হেসে উত্তর দেয় সে।

আর কথা বাড়ায় না অর্নব, কারণ এখনও হয়তো জ্বর রয়েছে শরীরে পৃথার, তাই বেশিক্ষন জলে ভিজিয়ে রাখা যাবে না… মাগটাকে এক হাতে ধরে অন্য হাতটা বাড়ায় পৃথার পানে… রাখে কাঁধের ওপরে… রগড়াতে থাকে কাঁধ… আসতে আসতে হাত নামতে থাকে শরীর বেয়ে… বুকের ওপরে এসে কয়’এক সেকেন্ডের জন্য যেন থমকে যায়… তারপর তাড়াতাড়ি নেমে যায় পেটের দিকে।

অর্নবের অস্বস্থি উপভোগ করে পৃথা… পেটের ওপরে হাত পৌছাতেই পা দুটোকে দুই পাশে সরিয়ে ফাঁক করে মেলে ধরে নিজের জঙ্ঘাটাকে… হাসে মুখ চেপে মুচকি মুচকি… অপেক্ষা করে হাতটার স্পর্শ পাবার নিজের শরীরের সবচেয়ে গোপনতম অঙ্গের ওপরে… কিন্তু পেটের ওপরেই যেন অনন্তকাল ঘোরাঘুরি করতে থাকে অর্নবের হাতটা… কিছুতেই নামতে চায় না পৃথার অভিষ্ট লক্ষবস্তুর ওপরে… শেষে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে তার… নিজেই হাতটাকে ধরে চেপে ধরে পায়ের ফাঁকে, যোনিবেদীটার ওপরে… ফিসফিসিয়ে বলে… ‘এখানটাও তো রগড়ানোর দরকার… নাকি?’ কানে আসে অর্নবের ভারী নিঃশ্বাসের আওয়াজ… সেই নিঃশ্বাসের শব্দে ভিজে ওঠে তার নারী অঙ্গ।

সেকেন্ড’এর কয়’এক ভগ্নাংশর জন্য সম্ভবত হাতটা থমকে লেগে থাকে পৃথার পাতলা লোমে ঢাকা কোমল যোনির সাথে… শরীরের গভীর থেকে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসা রসে ভিজে ওঠে অদেখা হাতের আঙুলগুলো… পরক্ষনে ঝটিতে সরে যায় সেখান থেকে… পৃথা অনুভব করে খুব দ্রুত হাতটা তার পুরুষ্টু মাংসল থাইদুটো রগড়াতে রগড়াতে নেমে যাচ্ছে নীচের পানে… মুচকি হাসে সে, কিন্তু আর কিছু বলে না মুখে।

‘এবার পেছন ফেরো দেখি… তাড়াতাড়ি করতে হবে, বেশিক্ষন এই ভাবে জল গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার ঠিক নয়…’ কানে আসে অর্নবের গলা।

দেহে হিল্লোল তুলে ঘুরে দাঁড়ায় পৃথা… দম বন্ধ হয়ে আসে অর্নবের যেন… মাথার চুলগুলো কাঁধের খানিকটা নেমেই থমকে গিয়েছে… আর সেই চুলের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে নিটোল ফর্সা পীঠ… পীঠের ঠিক ডানদিকের ডানার ওপরে একটা লাল তিল, বেশ বড়… অর্নবের ইচ্ছা করে তখনই জিভটা নিয়ে ছোয়ায় তিলটার ওপরে… পীঠের ঢাল নেমে গিয়েছে বাঁক খেয়ে নীচের দিকে… কোমরের শেষে দুই পাশ থেকে শরীরটা অস্বাভাবিক ভাবে স্ফিত হয়ে গিয়েছে… শুরু হয়েছে নিতম্ব… স্পর্শ না করেও বোঝা যায় সেদুটির কোমলতা… আর সেই বর্তুল নিতম্বের তালদুটির মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে গভীর অববাহিকা… টাল খেয়ে হারিয়ে গিয়েছে দুই পায়ের ফাঁকের আড়ালে… যেখান থেকে শুরু হয়েচে সুঠাম পুরুষ্টু দুটো উরু… নির্বাক অর্নব স্থায়ুর মত ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে পৃথার রূপশোভার দিকে তাকিয়ে।

‘কোই… কি হলো… শুধু দেখবে? না কি কাজের কাজ কিছু করবে?’ তাড়া দেয় পৃথা, ঠোঁটের কোনে লেগে থাকে তার প্রশ্রয়ের হাসি।

সম্বিত ফেরে অর্নবের… তাড়াতাড়ি সাফাই গায় নিজের পরে… ‘না, এই তো… সবে তো ফিরলে…’

‘এই সবেটা তো প্রায় মিনিট দুয়েক হয়ে গেল… এতক্ষন দেখতে লাগে আমাকে? কম তো দেখনি এর আগে…’ হাসতে হাসতে বলে পৃথা।

‘মোটেই না… এই তো সবে ঘুরলে তুমি…’ বলে হাত চালায় পীঠের ওপরে… বেশ কয়একবার হাত ফেরে পীঠের তিলটার ওপরে… তারপর ধীরে ধীরে নামতে থাকে আরো নীচের পানে… নিতম্বের ওপরে পৌছবার পর নিজেকে ধরে রাখা যেন ভিষন কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে তার পক্ষে… হাতটা প্রায় ডুবে যায় নরম নিতম্বের তালের মধ্যে… হাতের চাপে তলতল করে দুলে উঠতে থাকে দাবনার এক একটা তাল… যতটা সম্ভব দ্রুত শেষ করে মগের মধ্যে জল তুলে ঠেলে দেয় পৃথার গায়ে… তারপর দেওয়ালের হ্যাঙ্গার থেকে তোয়ালে টেনে নিয়ে মুছিয়ে দিতে থাকে জলে ভিজে ওঠা পৃথার গা’টা… অর্নবের দিকে ফিরে দাঁড়ায় ফের সে… মুখ তুলে তাকিয়ে থাকে সামনের পানে এক দৃষ্টিতে… যদিও চোখে পড়ে না অর্নবের মুখ… কিন্তু বুঝতে অসুবিধা নয় না কি চলছে এই মুহুর্তে ওই না দেখা চোখের মধ্যে… আর যত ভাবে সেটা… ততই চওড়া হয় ঠোটের ওপরে লেগে থাকা হাসি।

যতটা দ্রুত সম্ভব শেষ করে পৃথার গা মোছানো… শেষ হলে একটা শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে যেন অর্নব। তোয়ালেটাকে ঘুরিয়ে, জড়িয়ে দেয় পৃথার গায়ের ওপরে… তারপর একবার ইতস্থত করেও তোয়ালেটার প্রান্তটা ধরে গিঁট বেঁধে দেয় পৃথার বুকের ঠিক মাঝখানে।

এতক্ষন পৃথা একটাও বাক্য ব্যয় করে নি… চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল গা মুছিয়ে দেবার পুরোটা সময়ই… কিন্তু তোয়ালের গিঁট বাঁধা শেষ হতেই হাতটা বাড়িয়ে দেয় সামনের পানে… অর্নবের পৌরষের নিদর্শন যেখানটা থাকতে পারে, সেটা আন্দাজ করে… খপ করে হাতের মুঠোয় ধরে ফেলে পুরুষাঙ্গটাকে… চমকে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে… কিন্তু পৃথার হাতে মুঠোর মধ্যে পুরুষাঙ্গটা বাঁধা পড়ে থাকার দরুণ পারে না… ‘এই… একি করছ?’ প্রায় ছটফটিয়ে ওঠে অর্নব।

ততক্ষনে আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে পৃথা… হাতের মুঠোয় ধরা পুরুষাঙ্গটাকে আরো ভালো করে চেপে ধরে… সেটার কাঠিন্য উপভোগ করে নিজের হাতের তালুবন্দি করে… ‘ইয়ু আর স্টিল হার্ড…’ ফিসফিস করে বলে সে।

‘প্লিজ… ছাড়ো…’ অনেক কষ্টে যেন অনুণয় করে অর্নব।

‘দাঁড়াও না… এটাকে একটু ছুঁয়ে বুঝতে দাও না কেমন…’ হাতের মুঠোয় নিয়ে কচলায় শক্ত পুরুষাঙ্গটা… দ্বিতীয় হাতটাকেও এগিয়ে নিয়ে আসে সে… দুই হাতের মুঠোয় বন্দি হয়ে যায় অর্নবের পৌরষ।

‘না… প্লিজ…’ কাতর গলায় ফের অনুনয় করে অর্নব… নিজেকে সামলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।

আন্দাজের ভর করে একটা হাত বাড়িয়ে দেয় আরো সামনের দিকে… ছোঁয়া পায় অর্নবের পেশল তলপেটের… যেখানের লোমের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে পুরুষাঙ্গটা… মুঠো পাকায় পুরুষাঙ্গের গোড়ায়… তারপর অপর হাতটাকে এবার এনে ধরে পুরুষাঙ্গটাকে বেড় দিয়ে ঠিক আগের হাতের মুঠোর ওপরে… অনুভব করে দুটো মুঠোর পরেও আরো খানিকটা বেরিয়ে রয়েছে সেটার অংশ… খুশি হয় মনে মনে… ফিসফিসিয়ে বলে, ‘ইয়ু আর কোয়াইট বিগ… কোয়াইট বিগ বেবী… অ্যান্ড ইটস ফ্যাট আলসো’ পুরুষাঙ্গটার গা’টার বেড়ে মুঠো দুটোকে আগু পিছু করে ওটার চামড়াটাকে নাড়াতে থাকে… চোখে দেখে না, কিন্তু অনুভব করে হাতের মুঠোর মধ্যে সেটার স্পর্শ… সামনের হাতের মুঠোর আঙুল খুলে তুলে ঠেকায় পুরুষাঙ্গটার মাথায় আন্দাজ করে… সেখানে আঙুলের ছোঁয়া পড়তেই সিঁটিয়ে ওঠে অর্নব… ‘আহহ… নাহ… প্লিজ… ছাড়ো…’

গুরুত্ব দেয় না অর্নবের কাতর কন্ঠের, সেই মুহুর্তে তার কটা চোখের মণিতে কালোর ঝিলিক… মুঠোর মধ্যে পুরুষাঙ্গটাকে ধরে ওটার চামড়াটাকে আগুপিছু করতে করতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে বাথরুমের জলে ভেজা মেঝেতেই… নাকের মধ্যে বন্য গন্ধ ঝাপটা মারে… একবার মুখ তুলে তাকায় পৃথা… জানে দেখা যাবে না কিছুই, গেলে আরো খুশি হতো হয়তো… মনে মনে এই মুহুর্তে অর্নবের মুখের ওপরে খেলতে থাকা অভিব্যক্তিগুলো দেখার খুব ইচ্ছা করছে… কিন্তু কি আর করা যাবে… এই সই… ভাবতে ভাবতে মুখ নামিয়ে জিভটাকে বের করে সামনে বাড়িয়ে দেয়… নরম ভেলভেটি একটা কিছুর সাথে স্পর্শ পায় এগিয়ে দেওয়া জিভটার… কানে আসে অর্নবের হাল্কা ছোট্ট শিৎকার, ‘আহহহ…’ হাসে মনে মনে… তারপর ফের জিভ ছোয়ায় না দেখা পুরুষাঙ্গটার মাথায়… এবারে যেন জিভের ডগায় অনুভূত হয় ছোট্ট একটা ছিদ্রের মুখ… জিভটাকে ধীরে ধীরে বোলাতে থাকে গোলাকৃত মাথাটার ওপরে… ভারী নিঃশ্বাসএর শব্দে ভারী হয়ে ওঠে বাথরুমের মধ্যেটা… সেটা অর্নবেরই, বোলে দিতে হয় না তাকে… মুখটাকে ফাঁক করে ঠোঁট দুটোকে ইংরেজির ‘ও’ এর মত করে ঠেলে দেয় নিজের মাথাটা… দুটো ঠোঁটের সামনে লেগে থাকে সেটা… ভেতরে যায় না… আটকায়… পৃথা বোঝে আরো বেশি করে হাঁ করতে হবে তাকে… অতটুকু মুখ খুললে ঢুকবে না ওটা… এবার আর ‘ও’ নয়, বেশ বড় করেই হাঁ করে মুখের মধ্যে পুরে নেয় অদৃষ্য পুরুষাঙ্গের মাথাটাকে… বন্ধ করে দেয় মুখের হাঁ… ‘ন…না… ছাড়োওওও…’ ফিসফিসায় অর্নব… আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজের শরীরটাকে পিছিয়ে নেবার… কিন্তু যে ভাবে মুঠোয় পৃথা তার পুরুষাঙ্গটাকে ধরে রেখেছে, সেখানে ওই ভাবে টেনে পিছিয়ে যেতে সক্ষম হয় না…

মুখের মধ্যে মাথাটাকে পুরে নিয়ে জিভ বোলায় সেটার চারিপাশে পৃথা… সেই সাথে দুইহাতের মধ্যে চেপে ধরে আগুপিছু করে চলে পুরুষাঙ্গের চামড়াটাকে…

কতদিন… না, না, ভুল… দিন নয়… বছর… কত কত বছর পর এই অনুভূতিটা পাচ্ছে আজ অর্নব… সারা শরীরটা তার বাঁধ ভাঙা সুখে ভরে উঠতে থাকে যেন… মাথাটাকে হেলিয়ে দেয় পেছন দিকে, হাতটাকে দেওয়ালের ওপরে ভর রেখে… না চাইতেও কোমর থেকে দেহের নিম্নাংশটা এগিয়ে বাড়িয়ে ধরে পৃথার দিকে আরো একটু… উফফফ… আরো… আরো চায় তার মনের মধ্যেটায়… অনেক কিছু শেখার বাকি মেয়েটার… কিন্তু এখন এই মুহুর্তে যেটা করছে, সেটাই বা কম কি? তাতেই তো সে পাগল হয়ে যাচ্ছে… এ ভাবে বেশিক্ষন নিজেকে সামলে রাখা সম্ভব নয় সেটা বুঝতে পারে… এত দিন পর এই সুখ পেয়ে কিই বা করার আছে তার? মন চায় আরো বেশিক্ষন সুখটার আবেশ পেতে, কিন্তু অন্ডকোষে ইতিমধ্যেই কম্পন শুরু হয়ে গিয়েছে… কতক্ষন নিজেকে ধরে রাখতে পারে সেটাই সন্দেহের… দেহের পাশে ঝুলে থাকা হাতটাকে আনমনেই তুলে রাখে পৃথার মাথার ওপরে… ‘আহহহ…’ মুখ দিয়ে আপনা থেকেই বেরিয়ে আসে সুখোশিৎকার… ‘উমমম…’ চোয়াল চেপে চাপার চেষ্টা করে মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকা আওয়াজটাকে… লজ্জা করে মেয়েটার সামনে নিজের সুখের অনুভূতিটার ধরা পড়ে যাওয়ার… কিন্তু সে কি করবে? এত দিন বাদে মেয়েটির মুখের মধ্যের ওই উষ্ণ ভেজা অনুভূতি… এযে সে চাইলেও এড়াতে পারছে না…

দুপাশ থেকে ঠোঁট দুটো দিয়ে চেপে ধরেছে ততক্ষনে পৃথা… পুরুষাঙ্গটাকে দুহাতের মুঠোয় ভালো করে ধরে রেখে মাথাটাকে সামনে পেছনে করে নাড়াতে শুরু করে সে… উত্তেজিত দৃঢ় পুরুষাঙ্গটা মুখের মধ্যে যাতায়াত করতে থাকে তার তৈরী করা ছন্দে তালে তাল মিলিয়ে… লালা ভেজা জিভের ওপরে খেলে বেড়ায় সেটা… মাথাটাকে আরো সামনে ঠেলে দেয় সে… মুখের আরো গভীরে পুরে নেয় অর্নবের ঋজু পৌরষটাকে… গলার একেবারে আলটাগরায় গিয়ে ঠেকে সেটার নরম মাথাটা… ওয়াক উঠে আসে… গলার মধ্যে থেকে দলা করে থুতু উঠে এসে ভিজিয়ে তোলে পুরুষাঙ্গটাকে আরো বেশি করে… চেপে রাখা ঠোঁটের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে কিছুটা লালা নিজের তোয়ালে বাঁধা তম্বী বুকের ওপরে… আইসক্রীম খাওয়ার মত করে চুষতে থাকে মুখের মধ্যে রেখে ওই দৃঢ় অঙ্গটাকে… অনুভব করে তিরতিরে কাঁপন সেটার চামড়ার আড়ালে, শিরা উপশিরায়…

নাঃ… আর পারে না নিজেকে ধরে রাখতে অর্নব… পৃথার সাংঘাতিক চোষণের ফলে নিজের সংযমের সব বাঁধ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়… মুঠোয় খামচে ধরে হাতের নাগালে থাকা পৃথার চুলটাকেই… কোঁকিয়ে ওঠে… ‘ওহহহ… আহহহহ… ননননআআআ…’ বার খানেক ঝিনিক দিয়ে কেঁপে ওঠে গোটা পুরুষাঙ্গটা পৃথার মুখের মধ্যে…

অর্নবের গোঙানী পৃথার কানেও পৌছেছে… সেই সাথে অনুভব করে সে মুখের মধ্যে থাকা পুরুষাঙ্গটার কাঁপন… বুঝতে অসুবিধা হয় নি তার যে যেকোন মুহুর্তে বেরিয়ে আসবে অর্নবের শরীরের মধ্যে জমে থাকা উষ্ণ বীর্য… চট করে একটা হাত তাই পুরুষাঙ্গর থেকে সরিয়ে নিজের বুকের ওপরে তোয়ালের বাঁধনটা খুলে দেয়… বাঁধন ছাড়া তোয়ালে গড়িয়ে সরে যায় শরীর থেকে… খুলে পড়ে মেঝেতে, তার দেহের পাশে… মুখ থেকে পুরুষাঙ্গটাকে বের ওটার মুখটাকে তাক করে নিজের নরম বুকটার দিকে… ও দেখতে চায় অর্নবের শরীরের ওই বীর্য কি ভাবে ছিটকে এসে পড়ে নিজের বুকের ওপরে…

পৃথাকে নিজের তোয়ালে খুলে তার লিঙ্গটাকে নিজের বুকের দিকে তাক করে ধরা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না অর্নবের পৃথার অভিসন্ধি… আর সেটা বুঝে যেন আরো বেশি করে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সে… থরথর করে কেঁপে ওঠে তার অদৃশ্য অন্ডকোষটা… আর পারে না…

হটাৎ করে শূন্য থেকে তীব্র গতিতে এক ঝলক বর্নহীন তরল আঠালো উষ্ণ পদার্থ এসে আঘাত হানে পৃথার খোলা নগ্ন বুকের ওপরে… পরক্ষনেই আরো একবার… তার মনে হয় যেন যেই খানটায় এসে ওই পদার্থটা পড়েছে, সে জায়গাটা যেন পুড়ে গেলো… এত গরম সেটা… আর বেরোবেনা ভেবে একটু তুলে ধরে লিঙ্গটাকে মুখের সামনে… আর তখনই আরো এক দলা বীর্য বেরিয়ে আসে ছিটকে… এসে সোজা গিয়ে পড়ে সামান্য হাঁ করে থাকা মুখের একেবারে মধ্যে… লেগে, মেখে যায় ওই পাতলা ঠোঁটগুলোয়… প্রায় চমকেই ওঠে পৃথা… এই তৃতীয় আঘাতটার জন্য তৈরীই ছিল না সে… হাতের মুঠোয় পুরুষাঙ্গটাকে ধরে রেখে জিভটাকে বের করে ঠোঁটের ওপরে একবার ঠেকায়… স্বাদ নেয় বীর্যের… খারাপ লাগে না… বেশ রোমাঞ্চকর লাগে পুরো ব্যাপারটা… কি ভেবে মাথাটাকে সামনে এগিয়ে ফের পুরে নেয় মুখের মধ্যে হাতের মুঠোয় ধরে থাকা পুরুষাঙ্গটার মাথাটাকে… ওটার ছিদ্র থেকে চুইঁয়ে বেরিয়ে আসা বীর্যগুলো চেটে নেয় জিভ দিয়ে…
 

soukoli

Member
389
58
29
এই ভাবে পৃথাকে তার লিঙ্গের মাথা থেকে বীর্য চেটে খেয়ে নিতে দেখে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে অর্নব… বিশ্বাসই করতে পারে না পৃথার মত এত সফিস্টিকেটেড মেয়ে এই ভাবে তার সামনে বসে তারই লিঙ্গ থেকে বেরুনো বীর্য চেটে চেটে খেতে পারে… ফের কুঁচকে ওঠে অন্ডকোষটা তার… ভাবতে ভাবতেই আরো খানিকটা বীর্য তার লিঙ্গের শিরা বেয়ে উঠে আসে… গড়িয়ে পড়ে পৃথার মুখের মধ্যে…

থামে না পৃথা… চুষেই চলে লিঙ্গের মাথাটা… আরো, আরো বেরিয়ে আসছে ওই স্বাদহীন ভালোবাসা… আরো লালায়িত হয়ে ওঠে সে… মুখের মধ্যে লিঙ্গের মাথাটাকে পুরে রেখে চোঁ চোঁ করে টেনে চুষে চলে… তারপর যখন বোঝে যে না, আর এখন বেরুবে না কিছু… ধীরে ধীরে মুখ থেকে বের করে দেয় পুরুষাঙ্গটাকে… মেঝেতে বসেই হাঁফাতে থাকে ঘটনার প্রত্যাঘাতে… ক্লান্ত সে… অবসন্ন দেহ নিয়ে।

ক্লান্ত অর্নবও… এই ভাবে বীর্যস্খলনে… দেওয়ালে হাত রেখে হাঁফায় খানিকক্ষন… তারপর ধীর কন্ঠে বলে, ‘এবার ওঠো… ঘরে চলো… আর বেশিক্ষন এই ভাবে থাকলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে…’

মাথা নেড়ে শায় দেয় পৃথা, চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মত উঠে দাঁড়ায় সে… অর্নব মেঝের ওপরে পড়ে থাকা তোয়ালেটা তুলে পরম ভালোবাসায় মুছে দেয় বুকের মুখের ওপরে লেগে থাকা বীর্যগুলোকে, তারপর তোয়ালেটাকে জড়িয়ে দেয় তার গায়ে… খুঁটটা গুঁজে দেয় নরম বুকের মাঝে… তারপর আর বলতে হয় না পৃথাকে… এক লহমায় দুই হাতের মধ্যে তুলে নেয় পৃথার সুঠাম শরীরটাকে… শূণ্যে ভেসে ওঠে পৃথা… এবার আর ভয় পায় না সে… শুধু হাতটা তুলে গলাটা জড়িয়ে ধরে দুই হাত দিয়ে তার প্রিয়তমের… মুখটা গুঁজে দেয় লোমশ চওড়া পেশল ছাতির মধ্যে… পাঁজাকোলা করেই পৃথাকে নিয়ে ফিরে যায় অর্নব তাদের শোবার ঘরের দিকে… বুকের সাথে চেপে বসে থাকে পৃথার নরম স্তন।

6

২৫।।

খাটের ব্যাকরেস্টে বালিশটা রেখে হেলান দিয়ে বসে পৃথা… ‘আমার গায়ে একটু চাঁদরটা টেনে দেবে?’ অর্নবের উদ্দেশ্যে বলে সে।

অর্নব চাদরটা পৃথার গায়ে টেনে দিতে গিয়ে খেয়াল করে চোখদুটো ফের একটু লালচে হয়ে উঠেছে… দেখে উদবিগ্ন হয়… পৃথার কপালে হাত রেখে বলে ওঠে, ‘দেখছো… তোমার দুষ্টুমীর জন্য ফের মনে হচ্ছে জ্বর আসছে… তখন বারণ করেছিলাম ওই রকম অতক্ষন বাথরুমে আদুর গায়ে না থাকতে…’

অর্নব তার প্রতি এতটা কন্সার্নড দেখে খুশি হয় মনে মনে পৃথা, ম্লান হেসে বলে, ‘আহা… সব দোষ আমার, না? আর বাবুর যে আরামে চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটার বেলায়?’

‘তুমি দেখেছিলে যে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কি না? হু?’ ফিরিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব।

‘না মশাই… এ সব চোখে দেখতে লাগে না… বোঝা যায়… বুঝেছ?’ হেসে উত্তর দেয় পৃথা।

‘হু, বুঝলাম…’ বলে অর্নব।

‘কি বুঝেছ?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘বুঝলাম যে আমার তিতির সব থেকে বুদ্ধিমতি… মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে রাজ্যের দুষ্টুমী…’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব… তারপর বলে, ‘তুমি চুপটি করে শুয়ে থাকো… আমি তোমার খাবারটা নিয়ে আসি… এবার না খেলে অসুধ খেতে দেরী হয়ে যাবে…’ বলে আর দাঁড়ায় না, কিচেনের দিকে চলে যায়… পৃথাও বোঝে ঘরে অর্নব আর নেই, তাই চোখ বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে থাকে।

কিছুক্ষন আগেই যেটা ঘটল সেটাই একা বিছানায় চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে পৃথা… তাকে পাঁজাকোলা করে বাথরুম থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিছানার ওপরে শুইয়ে দিয়েছিল অর্নব… ওর তাকে এই ভাবে সন্তর্পনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার মধ্যেও যেন অফুরাণ ভালোবাসা মেখে ছিল, ছিল তার প্রতি সতর্কতা, যত্ন আর সেই সাথে প্রগাঢ় ভালোবাসা… কত যত্নে আর সাবধানে ধীরে ধীরে নামিয়ে দিয়েছিল তাকে বিছানায় ও… মনের মধ্যে ভালো লাগাটা যেন আরো বেশি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার… কি করেই না ভালো লেগে পারে? সে ভুল করে নি… এটা ঠিক যে প্রথম যখন সে ছবিতে অর্নবকে দেখে, তখন তাকে দেখে যেটা এসেছিল মনের মধ্যে, সেটা ক্ষনিকের মুগ্ধতা, নিছক একটা আকর্ষণ… কিন্তু সেটা কখন যে একটু একটু করে ভালোবাসায় বদলে গেল তা সে নিজেই হয়তো জানে না… সেটা সে প্রথম উপলব্ধি করে যেদিন প্রণববাবুর কাছ থেকে অর্নবের কথা শোনে… অর্নবের ওই পরিণতি শুনে বুকের মধ্যেটায় কেমন ভেঙে চুড়ে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল তার… একটা চাপা কান্না বুকের মধ্যে থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, তাও কার জন্য, না যে লোকটিকে ছবিতে ছাড়া এক লহমার জন্যও কখনও সামনে চোখের দেখাও দেখিনি… সেদিন রাতে প্রণববাবু চলে যাবার পর বিছানায় শুয়ে সারা রাত শুধু কেঁদেছিল সে… একটুকরো খাবারও দাঁতে কাঁটতে পারে নি… মনে হচ্ছিল যেন একটা ভালো লাগা শুরু হবার আগেই ভদ্রলোক এসে টেনে হিঁচড়ে তাকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন… হ্যা… সেদিনই ও বুঝেছিল অর্নবকে সত্যি সত্যিই মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিল, তার ভালোবাসাটা শুধু মাত্র ছবি দেখে মোহো নয়, কিন্তু ভালোবেসেও যে সে ভালোবাসা পেলো না। সব বুঝেও মন তার কিছুতেই মানতে চাইছিল না… কেন জানে না সে, মনের কোথাও, কোন এক কোনায় তার তখনও বিশ্বাস ছিল যে এতটা অভাগী সে হতে পারে না… জীবনে কোনদিন সে কখনও কারুর থেকে এতটুকুও আঘাত পায় নি… ভিষন আদরে বড় হয়েছে… বাড়ীর সকলের নয়নের মণি ছিল… তার বাবা, মা, আত্মীয় সজন, সবাই তিতির বলতে অজ্ঞান… আর সেই পৃথা জীবনে প্রথমবার কারুকে ভালোবাসলো আর সেটা সে এই ভাবে হারালো? এটা হয় না… হতে পারে না… সে যে কারুকে কখনও কোনদিনও জ্ঞাতার্থে আঘাত করে নি… তাহলে ভগবান কেন তাকে এ সাজা দেবে? না, মানতে পারেনি সে… আর পরবর্তি কালে একটু একটু করে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিল যে এই ফ্ল্যাটে কারুর উপস্থিতি… প্রথম প্রথম যে একেবারে ভয় পায় নি তা নয়… পেয়েছে… ভিষন ভাবেই পেয়েছে… ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতো সে একা, একদম একা ফ্ল্যাটে থাকতে, কিন্তু মুখে প্রকাশ করতো না। পরে বুঝল যে, যেই থাকুক, সে তার কোন ক্ষতি চায় না। নিশ্চিন্ত হল পৃথা, বরং বলা যেতে পারে, সেটা বোঝার পর থেকে আরো নিশ্চিন্তে থাকতে শুরু করল সে… সে বুঝেছিল তার বিপদে আপদে এই বিদেহীই হতে পারে তার সাহারা। কিন্তু কি করে বুঝল যে এ আর কেউ না, অর্নব? সেটা বুঝতে পারে গতকাল… শুধু বোঝেই না, একেবারে একশ শতাংশ সুনিশ্চিত হয়… অর্নব ছাড়া তার অসুস্থতায় এই ভাবে সেবা আর কেউ করবে না… তার মনের ভালোবাসা যে ততদিনে প্রশারিত হয়ে গিয়েছে অর্নবের মধ্যেও… তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে অর্নব? নাকি না ভালোবেসে থাকা যায়?

‘কি ভাবেই না হুকুম চালাই লোকটার ওপরে… বেশ করি… চালাবো না কেন শুনি? অর্নব আমার, আমার সব… তার ওপরে আমি যেমন খুশি হুকুম চালাবো… ইশ… শুনবে না বললেই হবে নাকি? দেখি কেমন না বলে?’… ভাবে মনে মনে… এ ঘরে ওকে নিয়ে আসার পর ওকে অর্নব বলেছিল তাড়াতাড়ি গায়ে কিছু পড়ে নিতে, নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে… উত্তরে চুপ করে বসেছিল সে বিছানার ওপরে। ওকে এই ভাবে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল অর্নব, ‘কি হোলো? চুপ করে গেলে যে? বলছি গায়ে কিছু পড়ে নাও… ঠান্ডা লেগে যাবে তো!’

গম্ভীর হয়ে উত্তর দিয়েছিল পৃথা, ‘না এনে দিলে কি করে পড়বো?’

পৃথার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল অর্নব, ‘ও, হ্যা, তাই তো… তা কি পড়বে?’

‘তুমি যে ভাবে আমাকে দেখতে চাও, সেটাই…’ গলায় গাম্ভীর্য ধরে রেখে উত্তর দিয়েছিল পৃথা।

আলমারী খুলে পৃথার একটা ফ্রেশ গোল গলার গেঞ্জি আর পাতলা ঢলা সর্স্টস্‌ এনে তুলে ধরে বলেছিল, ‘নাও, এই দুটো পড়ে ফেলো… আমি…’

‘জানো না আমি অসুস্থ… না পড়িয়ে দিলে পড়বো কি করে?’ গম্ভীর গলায় বলেছিল পৃথা, বলেছিল আর মনে মনে উপভোগ করছিল অর্নবের অবস্থার।

‘আ…আমি পড়াবো?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।

‘হুম… আর কে আছে ঘরে? শুনি?’ সোজা সাপটা জবাব আসে পৃথার থেকে।

অর্নবের বুঝতে বাকি থাকে না, পৃথার মাথায় তখনও বদমাইশী গিজগিজ করছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলেছিল, ‘বুঝলাম, তা মহারানীর একটু উঠে দাঁড়ানো হোক…’

তড়াক্‌ করে লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়েছিল পৃথা বিছানার ওপরে… নিজের সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরটাকে অর্নবের চোখের সামনে দোলাতে শুরু করে দিয়েছিলে ডাইনে বাঁয়ে… মুখের ওপরে লেগেছিল বিজয়ীনির হাসি।

অর্নব সেটা দেখে মুচকি হেসেছিল কি না জানে না পৃথা, তার ভালো লেগেছিল কিনা, সেটাও সে বলতে পারবে না হয়তো, কিন্তু ওর এই ধরনের ছেলেমানুষী লোকটা যে ভাবে বর্দাস্ত করে, ওর সব রকম আবদার যে ভাবে মেনে নিচ্ছে, তাতে পৃথা যে মনে মনে ভিষন খুশি, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গেঞ্জী পড়িয়ে, সর্স্টস্‌ পড়াবার পর পৃথার ইচ্ছা ছিল একটু আদর করে তার অর্নবকে, কিন্তু সেটা বোধহয় আগেই আন্দাজ করেছিল অর্নব, তাই তাড়াতাড়ি করে তাকে বিছানায় শুইয়ে চাঁদর ঢেকে দিয়ে খাবার আনার বাহানায় পালিয়ে গিয়েছিল কিচেনের দিকে… খিল খিল করে হেসে উঠেছিল পৃথা, অর্নবের ওই ভাবে পালিয়ে যাওয়া দেখে… মনে পড়তেই মিচকি হাসতে থাকে সে।

‘খাবার হাজির…’ অর্নবের গলার স্বরে ছেদ পড়ে পৃথার ভাবনায়… ‘কি ভেবে মিচকি মিচকি হাঁসা হচ্ছে শুনি?’

‘ওহঃ… এনেছ?’ চোখ খুলে তাকায় পৃথা… ‘একি? শুধু আমার এনেছ কেন? তোমার?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে সে, বিছানার ওপরে কাগজ পেতে রেখে তার ওপরে একটা প্লেটে খানিকটা ভাত আর ধোঁয়া উঠতে থাকা মাংসের স্ট্যুএর বাটি দেখে… মনে মনে খুশি হয় কি সুন্দর ভাবে গরম করে তার খাবারটা নিয়ে এসেছে বলে।

‘আর জেদাজেদি করবে না এখন… চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মত আগে তুমি খেয়ে নেবে, তারপর আমি খাবো… আমার খাওয়া নিয়ে তোমাকে এখন ভাবতে হবে না… বুঝছ? তোমার খাওয়া হলে অসুধ খেতে হবে, সেটা মাথায় রেখো…’ অর্নবের গলার স্বরে একটা বেশ অভিভাকত্ব মিশে থাকার দরুন আর কথা বাড়ায় না পৃথা… বাধ্য মেয়ে মত মাথা নিচু করে বলে, ‘আচ্ছা, দাও…’

‘দাও আবার কি? দিয়েছি তো… খেতে শুরু করো…’ বলে অর্নব।

ওই ভাবেই চুপ করে বসে থাকে খাটের ওপরে বাবু হয়ে পেছনের বালিশে হেলান দিয়ে… উত্তর দেয় না কোন।

‘কি হলো আবার… খাও…’ তাড়া দেয় পৃথাকে অর্নব।

মুখটা ভার করে বলে পৃথা, ‘আমি খাবো?’

‘হ্যা… তুমিই তো খাবে, আর কে খাবে আবার?’ ঠিক ঠাওর করতে পারে না অর্নব পৃথার কথার।

ফের চুপ করে বসে থাকে পৃথা হাত গুটিয়ে।

তাড়া লাগায় অর্নব, ‘আরে ঠান্ডা হয়ে যাবে তো খাবারটা… খেতে শুরু করো…’

মুখের ভারটাকে ধরে রেখে আদুরে সুরে বলে ওঠে পৃথা, ‘আমি তো অসুস্থ… নিজের হাতে খাবো কি করে?’

‘তিতির… তুমি এতটাও অসুস্থ নও যে নিজের হাতে খেতে পারবে না… এটা কি ঠিক হচ্ছে?’ প্রশ্ন করে অর্নব।

গাল ভারী করে পৃথা বলে, ‘আমার একটু হোক কি বেশী, শরীর খারাপ হলেই মা খাইয়ে দিতো আমাকে… ভাল্লাগে না…’

‘হু… বুঝলাম গাল ভারী করার কারণটা… আদর দিয়ে দিয়ে মেয়েকে কি করেছে বাবা মা, সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে… তা আমাকে এখন কি করতে হবে শুনি? খাইয়ে দিতে হবে, তাই তো?’ বলে ওঠে অর্নব।

ঢকঢক করে ঘাড় নাড়ে পৃথা… তারপর ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমাকে আদর দিয়ে বাবা মা কি করেছে? হু?’

‘রীতিমত প্যাম্পার করেছে… এ ছাড়া আর কি?’ বলে অর্নব… উঠে আসে বিছানায় পৃথার পাশে।

‘ইশ… তুমি জানো না… আমি বাপীর প্রিন্সেস… আর বাপী আমার কিং… বুঝেছ? আর মায়ের কাছে আমি এখনও সেইইইই ছোট্ট তিতির… তুমি জানো?’ বলতে বলতে চোখ চকচক করে ওঠে পৃথার… ‘না বলবো না, লজ্জা করছে…’ গালের ওপরে লালের আভা পড়ে তার।

‘কি? শুনিই না…’ বলে পৃথার পেছনে রাখা বালিশটাকে একটু ঠিক করে দেয় অর্নব…

ভালো করে হেলান দিয়ে বলে পৃথা, ‘তুমি আমাকে খেঁপাবে না তো পরে?’

কপালের ওপরে ঝরে পড়া কিছু চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে অর্নব, ‘না, খেঁপাবো না, বলো…’

‘হি হি… আমি এখনও বাপী আর মায়ের কাছে রোজ আদর খাই… না… ভুল বললাম, এখন না… এখন তো এখানে চলেই এসেছি… কিন্তু জানো, এখনে আসার আগে অবধি… রোজ… রোজ আদর খেতাম… সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে… নয়তো আমার ঘুমই আসতো না… রোজ শুতে যাবার আগে, মা আমার ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে, আদর করে দিয়ে গেলে তবে আমি ঘুমাতাম…’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।

‘মা ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিতো মানে?’ প্রশ্ন করে অর্নব।

‘দিতোই তো… আমিতো শুতে যাবার আগে গা ধুতাম, অবস্য শীত কালে গায়ে জল লাগাতাম না, আমি আবার ভিষন শীতকাতুরে… কিন্তু অন্য সময় শুতে যাবার আগে গা ধুয়ে ঘরে এসে, মা, মা, বলে চেঁচাতাম, মা হাতের কাজ ফেলে আগে আমার কাছে আসতো। তারপর আমি চুপ করে বসে থাকতাম, আর মা আমাকে ড্রেস পরিয়ে দিয়ে, বিছানা ঠিক করে শুইয়ে দিত, তারপর আদর করে তবে যেতে পারতো ঘর থেকে। বুঝেছ মোশাই… কেমন আদরে মানুষ আমি?’ বলতে বলতে হেলান দেয় অর্নবের দেহের ওপরে… প্রায় ঢুকে যায় ওর বুকের মধ্যে।

‘হু… সে তো দেখতেই পাচ্ছি… মা বাবার দুলালী…’ বলতে বলতে খাবারের প্লেটটা টেনে নেয় সামনে… পৃথা এক মনে তাকিয়ে দেখে কেমন অদ্ভুত ভাবে না দেখা হাতের সাহায্যে তরকারীর সাথে ভাত মাখা হয়ে যাচ্ছে… তারপর গ্রাস তৈরী হয়ে গেল… প্লেট থেকে হাওয়া ভেসে উঠে এলো তার মুখের সামনে… লক্ষ্মী মেয়ের মত হাঁ করে সে… ভাতের গ্রাসটা ঢুকে যায় তার মুখের মধ্যে।

‘কিন্তু… এখন তো আর সে আদর পাবে না… এখন তাহলে কি হবে তিতিরের?’ ফের গ্রাস তৈরী করতে করতে বলে অর্নব।

‘ইশ… কে বলে পাবো না… তুমি আছো না?’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকায় পৃথা।

‘আমি আছি তো কি?’ ফের আরো একটা গ্রাস তুলে মুখের সামনে ধরে অর্নব।

খাবারটা মুখে পুরে উত্তর দেয় পৃথা, ‘তুমি আদর করবে আমাকে… রোজ… তুমি ঘুম পাড়িয়ে দেবে…’ বলতে বলতে মুখ ঘোরায়… মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের অদৃশ্য লোমশ পেশল বুকের মধ্যে… মুখ ঘসে বুকের লোমের ওপরে…

‘ইশশশ… দেখেছ বদমাইশী… এঁটো মুখটা ঘসে দিল আমার গায়ে… কি পাজি রে বাবা…’ বলে ওঠে অর্নব।

হি হি করে হেসে ওঠে পৃথা নিজের দুষ্টুমীতে… মাথাটাকে বুকের ওপরে কাত করে রেখে খেতে থাকে অর্নবের হাত থেকে সে।



২৬।। (ক)

‘এই, বললে না তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে!’… ড্রইং রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে পৃথা। গাঢ় নীল রঙের লম্বা প্রায় পায়ের গোছ অবধি ঝোলা কুর্তি পরনে। কুর্তির বুকের কাছে কমলা সুতোর কাজ করা, সামনে তিনটে বোতাম, যার মধ্যে দুটো খোলা রয়েছে, যেখান দিয়ে শরীরের ফর্সা চামড়ার খানিকটা উঁকি মারছে আর তার সাথে গলায় ঝুলতে থাকা সরু সোনার একটা চেন চিকচিক করছে ঘরের আলোয়… চেনের অংশটা গলার দুই পাশ থেকে বাঁক খেয়ে নেমে হারিয়ে গিয়েছে পরনের কুর্তির বুকের আড়ালে। পুরুষ্টু পায়ের সাথে চেপে বসে আছে কুর্তির বুকের ওপরে থাকা নক্সার রঙের সাথে মেলানো কমলা লেগিংস। অবাধ্য চুলগুলোকে একটা ক্লিপ দিয়ে পেছনে আটকানো… প্রসাধন যতসামান্যই… যতটুকু না করলে নয়… ঠোঁটের ওপরে হাল্কা লিপস্টিকের পরশ, আর কপালের ওপরে দুই ভুরু মাঝে ছোট্ট একটা কমলা রঙের টিপ… এতেই যেন কোন এক মোহিনীর মত ড্রইংরুমের মধ্যে ঢুকলো সে… মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্নব… কে বলবে মেয়েটা আজ সকালেও এত অসুস্থ ছিল!

‘ভালো…’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব।

গলার স্বরে পৃথা বোঝে এখন অর্নব সোফায় বসে তার দিকেই নিশ্চয় তাকিয়ে রয়েছে… ওকে দেখছে ভেবে মনে মনে খুশি হয় সে। কিন্তু অর্নবের উত্তরে মোটেও খুশি হয় না পৃথা, ঠোঁট ওল্টায়… ‘শুধু ভালো? ব্যস?’ মনে মনে আরো কিছু শোনার অপেক্ষা করে সে।

‘সুন্দরীকে যতই প্রশংসা করো না কেন, সে প্রশংসা কুলায় না… সেটা জানো না?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।

‘ইশ… সুন্দরী না ছাই… আমাকে তো পেত্নী বলেছিলে সকালে, ভুলে গেছ?’ গাল ফুলে ওঠে তার।

‘আমি?’ আশ্চর্য হয় অর্নব… ‘আমি আবার কখন তোমায় পেত্নী বললাম? এত সাহস আমার আছে নাকি?’ অর্নবের স্বরে মজা মেখে থাকে।

‘বলোনি? তখন বাথরুমের আমাকে চান করাবার সময় বললেনা আমি পেত্নী? এখন কথা ঘোরানো হচ্ছে না?’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় সোফার দিকে… হাত বাড়িয়ে খপ করে হাতের মুঠোয় ধরে নেয় অর্নবের গালের ওপরে থাকা লম্বা দাড়ির খানিকটা… নিয়েই টান মারে একটু… ‘আ…আ…আ…’ ব্যথায় কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব… দাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ায় পৃথা।

‘উফ… কি ডাকাত মেয়ে রে বাবা… এই রকম স্যাডিস্ট জানলে…’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব।

‘কি? আমি স্যাডিস্ট? বোলতে পারলে?’ অভিমানে গাল ভারী হয় পৃথার।

‘এটাকে স্যাডিসিজম্‌ ছাড়া আর কি বলবো? হ্যা? এই ভাবে কেউ দাড়ি টানে?’ নিজের গালে হাত বোলাতে বোলাতে উত্তর দেয় অর্নব।

‘বেশ করবো… আমার অর্নবকে নিয়ে আমি যা খুশি তাই করতে পারি… বুঝেছ?’ কোমরে হাত রেখে বাচ্ছা মেয়ের মত শরীর দোলায় সে।

‘তাহলে আমিও বেশ করেছি পেত্নী বলেছি… পেত্নী কে পেত্নী বলবো না তো কি অপ্সরা বলতে হবে?’ রাগায় অর্নব পৃথাকে।

‘ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি… ভূত একটা…’ বলে আবার মুখটা আন্দাজ করে হাত বাড়াতে যায় সে…

তাড়াতাড়ি করে ওর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে ধরে ফেলে অর্নব… ‘এই আর নয়… খুব লেগেছে…’ বলে ওকে একটু টান দেয় সামনের পানে হাতটা ধরেই।

নিজের শরীরটাকে নির্দিধায় এগিয়ে দেয় পৃথা… সোফার আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে অর্নবের মাথাটাকে ধরে নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে… বলে, ‘ইশ… সরি সোনা… খুব লেগেছে না…’

পৃথার নরম বুকের ছোয়া পেতেই অর্নব নিজেকে তাড়াতাড়ি ওর বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নেয় মাথাটা। পৃথাকে টেনে পাশে সোফায় বসায় ও হাতের মুঠোয় তখন শক্ত করে ধরে রাখে ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে। শরীর এলিয়ে দিয়ে অর্নবের অদৃশ্য কাঁধের ওপরে মাথা রাখে পৃথা… ‘আদর খেতে ইচ্ছা করছে ভিষন…’ ফিসফিসিয়ে বলে অর্নবের কানের মধ্যে।

‘সেটা তো সব সময়ই করে চলেছে… কখন করে না? শুনি?’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব।

‘উমমম্‌, ইচ্ছা করলে আমি কি করবো?’ আদুরে গলার জবাব আসে পৃথার কাছ থেকে।

‘হুম… সে তো বুঝলাম… কিন্তু একটু পরেই তো তোমার কলিগ আসবে ওর বৌকে নিয়ে, তখন?’ হাতটাকে পৃথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে টেনে নেয় ওকে নিজের বুকের ওপরে… একটু একটু করে নিজের ওপর থেকে সেল্‌ফ কন্ট্রোলটা যে অর্নব হারিয়ে ফেলছে তাতে বোঝার বাকি থাকে না আর।

অর্নবের বুকের মধ্যে আরো সেঁদিয়ে যায় পৃথা, গুনগুনিয়ে বলে, ‘আসুক না, যখন আসবে তখন দেখা যাবে…’ আলতো করে মুখটাকে কাত করে রাখে বুকের ওপরে… কানে শোনে না দেখা শরীরের হৃদ্‌ স্পন্দন… বুকের লোমগুলো আঙুলের ফাঁকে আলতো করে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা, ‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? কিছু মনে করবে না?’

‘কি কথা? আমি জীবিত না মৃত? সেটা?’ মৃদু হেসে প্রশ্ন করে অর্নব ফিরিয়ে।

অর্নবের হাসি অনুভব করে পৃথা, লজ্জা পায় সে, ‘ইশ্‌, তুমি বুঝলে কি করে আমি কি জিজ্ঞাসা করতে চাইছিলাম?’ বুকের ওপরে আঁচড় কাটতে কাটতে প্রশ্ন করে সে।

‘এত কাছে রয়েছে ছুঁয়ে, আর সেটা বুঝবো না?’ ফের হাসে অর্নব।

‘ইশ্‌, সব বুঝতে পারে যেন আমার কথা…’ পৃথার গলার স্বরে আদর মিশে যায় আরো… ‘বুঝতেই যদি পারো, তাহলে আরো আগে কেন আমার কাছে ধরা দাও নি? এতদিন একা রেখেছ কেন আমাকে? হুম?’

‘ধরা তো আমি কোনদিনই দিতে চাই নি… তুমি তো জোর করে আমাকে ধরে ফেললে…’ অর্নবেরও যেন গলার স্বর ভারী হয়ে আসে।

‘ইশ্‌, ধরা না দিয়ে কোথায় যাবে মশাই… এই তিতিরকে না ভালোবেসে থাকতে পারতে?’ আরো যেন ঢুকে যেতে যায় পৃথা অর্নবের বুকের মাঝে।

‘সেই জন্যই তো যখন ওই ভাবে ডাকলে, আর থাকতে পারি নি সরে, এগিয়ে গিয়ে ধরেছিলাম তোমার হাতটা…’ হাতের বেড় আরো ঘন হয় পৃথার কাঁধের ওপরে।

অর্নবের বুকের ওপর থেকে হাতটা তুলে তার গালের ওপরে রাখে পৃথা, আলতো করে হাত বোলায় অর্নবের গালের ওপরে থাকা নরম লম্বা দাড়ির ওপরে, ‘কই, বললে না তো তুমি…’ পৃথার কথা শেষ হবার আগেই দরজায় বেলের শব্দ হয়… চকিতে দুজনে সোজা হয়ে বসে।

‘যাও… তোমার কলিগ এসেছে বোধহয়… আমিও উঠি…’ বলে ওঠার চেষ্টা করে অর্নব।

তাড়াতাড়ি করে অর্নবের বুকের ওপরে হাত রাখে পৃথা, ‘না… না… তুমি যাবে না… এখানেই থাকবে… আমার পাশে…’

‘আরে পাগলী… আমি তো অন্য ঘরেই থাকবো…’ বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।

‘না… তুমি অন্য ঘরে নয়… এই ঘরেই থাকবে, আমার কাছে…’ আবদার করে পৃথা।

ফের বেল বাজে দরজায়।

‘আরে যাও… ও বেচারা বাইরে অপেক্ষা করছে, দরজাটা খুলে দাও…’ বলে ওঠে অর্নব।

‘আগে তুমি বলো, এই খানেই আমার পাশে থাকবে… যাবে না…’ ফের আবদার করে ওঠে পৃথা।

হাসে অর্নব… ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা… আমি তোমার পাশেই থাকবো… হয়েছে? এবার তো যাও, দরজাটা খুলে দাও…’

‘না, শুধু পাশে নয়… সারাটা’খন আমাকে ছুঁয়ে থাকবে… বলো থাকবে…’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।

‘আচ্ছা, তাই হবে… আমি তোমাকে ছুঁয়েই থাকবো… হয়েছে? এবার তো দরজাটা খোলো…’ হাসে অর্নব পৃথার ছেলেমানুষী দেখে।

অর্নবের অদৃশ্য গলাটা জড়িয়ে ধরে পৃথা, না দেখা দাড়ি ভরা গালটায় চুমু খেয়ে হেসে বলে, ‘সোনা আমার…’ বলে উঠে যায় দরজার দিকে… হাত তুলে এতক্ষন অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা ঘসার ফলে ক্লিপের থেকে বেরিয়ে আসা অবাধ্য খুলে আসা চুলগুলোকে ঠিক করতে করতে… অর্নব সোফায় বসে অপলক তাকিয়ে থাকে পৃথার হেঁটে যাওয়ার দিকে, তাকিয়ে তাকে নির্নিমেশ গাঢ় কুর্তির আড়াল থেকে সুস্পষ্ট ফুটে ওঠা উত্তাল নিতম্বের দোলদুলিয়মান ছন্দের পানে… আজ দুপুরেই বাথরুমের চান করার সময় যে ভাবে উদ্দাম হয়ে উঠেছিল মেয়েটা, রাতের বিছানায় কি ঝড় তুলবে সেটা ভাবতেই রক্তচাপ বেড়ে ওঠে অর্নবের।



দরজার ইয়েল লকটা তুলে পাল্লাটা খুলে ধরে পৃথা, চৌকাঠের ওপারে দাঁড়িয়ে সুশান্ত… দেখে স্মিত হাসে পৃথা, মাথাটা একটু নেড়ে সম্বোধন করে, ‘হাই…’

‘হাই…’ প্রত্যুত্তর আসে সুশান্তর কাছে থেকে… এদিক ওদিক উঁকি মারে পৃথা, কাউকে খোঁজে, তারপর সুশান্তের দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, ‘মৌসুমী আসে নি?’ বলতে বলতে পাশে সরে দাঁড়ায় সে… জায়গা করে দেয় সুশান্তকে ঘরে আসার।

ঘরের ভেতরে ঢুকলে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ফিরে দাঁড়ায় পৃথা, ওর হাতে একটা লাল গোলাপের বোকে তুলে দিয়ে হেসে বলে সুশান্ত, ‘গেট ওয়েল সুন, পৃথা…’

সুশান্ত হাত থেকে ফুলের বোকেটা নিতে নিতে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে পৃথা, ‘বাব্বা, একেবারে ফুল দিয়ে উইশ করছো… আরে বাবা সামান্য তো জ্বর হয়েছিল, তার জন্য আবার ফুল আনার কি দরকার ছিল… আমার তো আর বিরাট কিছু হয় নি…’

‘না, তা না…’ অপ্রস্তুত হাসে সুশান্ত।

‘মৌসুমী আসলো না?’ জিজ্ঞাসা করতে করতে এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের সেন্টার টেবিলের দিকে, সেখানে ফুলের বোকেটা রেখে ফিরে খালি ওয়ান সিটার সোফার দিকে ইঙ্গিত করে বসতে ইশারা করে বলে, ‘তোমাকে যে বললাম, ওকেও সাথে করে আনতে, খুব ভালো লাগতো ও এলে।’

‘না, মানে আনলাম না…’ ইতস্থত করে সুশান্ত… ‘কেন… আমি… আমি একা এসেছি বলে তোমার খারাপ লাগছে?’ সোফায় বসতে বসতে উত্তর দেয়… চোখদুটো যেন বারেক ঘুরে যায় পৃথার মাথা থেকে পা অবধি… চোখটা বার বার ঘুরে যায় কুর্তির খোলা দুটো বোতামের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া মাখনের মত মসৃন ফর্সা চামড়াটার ওপরে… এত কাছ থেকে এই প্রথম পৃথাকে দেখছে তা নয়, আগেও বহুবার পৃথাকে দেখেছে সে এতটাই বা কেন এর থেকেও অনেক বেশি কাছ থেকে, অফিসে, কাজের ফাঁকে, কিন্তু তখন তাদের আশেপাশে কারুর না কারুর উপস্থিতি সর্বদাই ছিল, কিন্তু আজ এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে দেখার গুরুত্বটা যেন অনন্য… চটক ভাঙে পৃথার কথায়…

‘দূর… আমি কি সেই বললাম? তুমি আমার কলিগ তার ওপরে এত ভালো বন্ধুত্ব আমাদের, সেখানে খারাপ লাগালাগির কি আছে আবার?’ নিজেও সুশান্তের উল্টো দিকের সোফায় বসতে বসতে বলে পৃথা… সোফায় বসে ডান পায়ের ওপরে বাঁ পা’টাকে তুলে দেয়… তারপর কুর্তির নীচটাকে তুলে ভালো করে ঢেকে রাখে নিজের সুঠাম পা’খানি… দুই পাশটায় মাথা ঘোরায় বারেক… মনে মনে খোঁজে তার প্রিয়তমকে… কাঁধের ওপরে ছোঁয়া পায় অদৃশ্য হাতের পরশের… উজ্জল হয়ে ওঠে পৃথার মুখটা… ঘাড়টাকে সামান্য কাত করে নিজের গাল ছোঁয়ায় কাঁধের ওপরে থাকা হাতের পীঠে।

‘এখন কেমন ফিল করছো? প্রশ্ন করে সুশান্ত… তারও চোখে যেন ধরা পড়ে পৃথার হটাৎ বেড়ে যাওয়া মুখের ঔজ্জল্য… একটু দ্বিধাগ্রস্থ সে… এটা কি তবে তার উপস্থিতির কারনেই? মনে মনে নিজেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে প্রশ্নের ফাঁকে।

‘অ্যাঁ? কি বলছো?’ সতর্ক হয় পৃথা… এই ভাবে বাইরের লোকের সামনে এতটা ছেলেমানুষী করা উচিত নয় তার।

‘বলছি হাউ ইয়ু আর ফিলিং নাও…’ পুনরাবৃত্তি করে প্রশ্নের সুশান্ত।

‘ওহ! ফাইন… নো প্রবলেম অ্যাটঅল… ডঃ বসাকের অসুধ দারুন কাজ করেছে, একটু যে উইকনেস নেই সেটা বলবো না, তবে মাচ বেটার… প্রণবদা খুব ভালো একজন ডক্টরকে নিয়ে এসেছিল…’ গড়গড় করে বলে পৃথা।

‘প্রনবদা? কে?’ ভুরু কোঁচকায় সুশান্ত।

‘কেন? আমাদের প্রণব কর্মকার…’ উত্তর দেয় পৃথা। মনে মনে নিজেকেই দোষে সে… আরো সতর্ক হওয়া উচিত… এই ভাবে দুম করে প্রণবদা বলে ফেলা মোটেই উচিত হয় নি তার…

‘ওহ! উনি আবার তোমার দাদাও হয়ে গেছেন দেখছি…’ একটু স্লেশাত্মক ভঙ্গিতেই বলে ওঠে সুশান্ত।

‘না, মানে যতই হোক, উনি বয়োজ্যেষ্ঠ তো, তাই না? সেই হিসাবেই দাদা বললাম আর কি…’ তাড়াতাড়ি সামলাবার চেষ্টা করে পরিস্থিতির।

‘তা হটাৎ করে ওনাকেই কেন ফোন করতে গেলে সকালে? আমাকেও তো করতে পারতে? আমি কি আসতাম না?’ গলার স্বরে একটু ক্ষোভ প্রকাশ পায় সুশান্তের।

‘আরে তা তুমি আসবে না কেন, আমি কি জানি না যে তোমাকে ডাকলেই তুমি আসবে, সেটা নয়, আসলে প্রণববাবুর ফার্স্ট লেটার পি আর তোমার ফার্স্ট লেটার এস, তাই বোধহয় জ্বরের ঘোরে আমি পি দেখে প্রণববাবুকেই কল করে দিয়েছিলাম, আসলে তখন কাকে কি করছি সেটা তো আর মনে করে করি নি, সেটাই হয়ত হবে, বুঝেছ!’ পরিস্থিতি আবার সামলাবার চেষ্টায় পৃথা।

‘তার পরেও তো ফোন করতে পারতে, আমি না ফোন করলে তো জানতেও পারতাম না যে তোমার জ্বর হয়েছে…’ সুশান্তর গলায় ক্ষোভ যেন একটু একটু করে বৃদ্ধি পায়।

‘আরে তা নয়… তখন আমার কি অবস্থা বলো… জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তখন… কি করে জানাবো তোমায়?’ এবার পৃথাও একটু বিরক্ত হয় সুশান্তের এই ধরনের আতিসজ্যে… ইচ্ছা করে ভিষন অর্নবের হাতটাকে টেনে নিজের হাতের মুঠোয় ধরতে, কিন্তু নিজেকে সামলায় অনেক কষ্টে… ঘাড় কাত করে ফের গাল ঠেকায় অর্নবের হাতের পীঠে… মনের মধ্যে তৈরী হওয়া বিরক্তিটা যেন নিমেশে উবে যায় অর্নবের পরশ পেয়ে।

‘যাক, মিঃ সহায় কি বললেন? ওনাকে ইনফর্ম করেছিলে তো?’ কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা, ওদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কথা টেনে আনে প্রসঙ্গে।

‘আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি ঠিকই…’ গলার ক্ষোভ তখন মেখে রয়েছে বোঝা যায়।

‘দেখো… তুমি এটা যে করবে সেটা বলে দিতে হয় না সুশান্ত… তুমি না থাকলে বলো তো এই ভাবে আমি একা এত বড় একটা শহরে থাকতে পারতাম? পারতাম এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পেতে?’ মনে মনে নিজের কথার আর একটু প্রসারিত করে ভাবে, ‘পারতাম আমার অর্নবকে পেতে? আমার সোনাটাকে…’

‘আমি তো আমার সবটা দিয়ে তোমায় সাহায্য করতে চাই পৃথা, চাই সবসময় তোমার পাশে থাকতে…’ এবার একটু বিগলিত হয়ে ওঠে সুশান্ত… গলার স্বর গাঢ় হয়।

‘তাই তো তোমার দিকে বন্ধুত্বর হাত বাড়িয়ে রেখেছি… তুমি আছো বলেই না আমি নিশ্চিন্তে আছি…’ বলে আর কথা বাড়ায় না পৃথা, বলে ওঠে, ‘যাক… কি খাবে বলো?’

‘না, না, তুমি আবার কি করবে? তোমার শরীর খারাপ… আমার কিছু চাই না…’ বলে ওঠে সুশান্ত।

‘সেকি বললে হয় নাকি? গৃহস্থের অকল্যাণ হবে না? আজ সত্যিই বেশি কিছু অফার করতেও পারবো না, কিন্তু একটু চা তো করে দিতেই পারি… তাই না?… তুমি বরং একটু বোসো… আমি এক্ষুনি দু-কাপ চা করে নিয়ে আসছি…’ বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় পৃথা।

সুশান্তের চোখটা পৃথার আপদমস্তক শরীরের ওপরে একবার বুলিয়ে যায়… ‘না, না, ছেড়ে দাও না, শুধু শুধু আমার জন্য আবার চা করতে যেতে হবে না…’ মনে মনে চায় যতক্ষন অন্তত রয়েছে সে, শুধু পৃথার সামনেই থাকে… ওই চা করতে যাওয়ার সময়টুকুও চোখের সামনে থেকে হারাতে চায় না যেন।

‘আরে এত কিন্তু কিন্তু করছ কেন? আমরাও তো…’ বলতে গিয়ে থমকায় পৃথায়… তারপর তাড়াতাড়ি নিজেকে শুধরে নিয়ে বলে, ‘মানে, আমিও তো চা খাইনি এখনও… তোমার সাথে খাবো বলেই অপেক্ষা করছিলাম… শুধু শুধু নিজের জন্য চা বানাতে ইচ্ছা করে বলো… তুমি খেলে আমারও তাহলে খাওয়া হয়… এই আর কি…’

‘ওহ!… আমার জন্যই চা না খেয়ে অপেক্ষা করছিলে…’ বেশ খুশির ছোয়া লাগে সুশান্তর গলার স্বরে… ‘করো তাহলে…’

‘এই তো… এক্ষুনি হয়ে যাবে… দু কাপ করতে আর কতক্ষন লাগবে… তুমি ততক্ষন টিভিটা দেখো, আমি চা করে নিয়ে আসি…’ বলে রিমোট টিপে দেওয়ালে লাগানো টিভিটা চালিয়ে দিয়ে রিমোটটা এগিয়ে দেয় সুশান্তের হাতে, তারপর এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে।

আলো জ্বেলে কিচেনে ঢুকেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা… আজ একটা ব্লান্ডার করেই ফেলছিল… সেই বা কি করবে, সর্বক্ষন যদি মাথার মধ্যে অর্নব বসে থাকে, তাহলে তার কি দোষ? নিজেই নিজের পক্ষে সাফাই গায় মনে মনে… হাত বাড়ায় তাকের ওপর থেকে কাপ প্লেট নামাবার জন্য।

হিসাব করে তিন কাপের মত চায়ের জল রেডী করে পৃথা… অর্নবও তো বেচারী খায় নি চা এখনও… মনে মনে ভাবে সে… গ্যাসের বার্নার জ্বালিয়ে চায়ের জল চাপাতে চাপাতে… কাবার্ড খুলে চা, চিনি বের করে রাখে পাশে… দুধ তো নেই, র’টিই বানাতে হবে… জোগাড় করে বিস্কিট, প্লেটের ওপরে সাজায় সুন্দর করে।

ড্রইংরুমে বসে খানিক টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে এদিক সেদিক তাকায় সুশান্ত… একটা অস্বস্থি হয় যেন তার… কেন জানি তার মনে হয় ঘরে সে ছাড়াও আর কারুর উপস্থিতি সে উপলব্ধি করতে পারছে… মনে মনে ভাবে, ‘বলেছিলাম পৃথাকে এই ফ্ল্যাটটা না নিতে… কি সব শুনেছিলাম এই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে… কিন্তু এটাই নেবার জন্য এমন জিদ করল… নাঃ… ভালো লাগছে না…’ ভেবে উঠে দাঁড়ায়… তারপর ধীর পায়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে যায়।

কিচেনের মধ্যে পৃথা সেই মুহুর্তে পেছন ফিরে চা করতে ব্যস্ত… নিশব্দে কিচেনের দোড়গোড়ায় গিয়ে দাঁড়ায় সুশান্ত… এক মনে তাকিয়ে থাকে পৃথার কর্মব্যস্ত শরীরটার পানে… মাথার ওপরে চুলগুলো চূড়া করে তুলে রাখার কারণে ঘাড়টা সম্পূর্ন উন্মুক্ত… পরণের গাঢ় নীল কুর্তিটা কাঁধ থেকে সুঠাম পীঠের ওপর দিয়ে ঢাল খেয়ে নেমে গিয়েছে নীচের দিকে… কোমরের কাছ থেকে একটা উত্তাল বাঁক নিয়ে বর্তুল ভারী নিতম্বের ওপরে টাইট হয়ে বসে রয়েছে কুর্তির নীচের অংশটা… এতটাই টাইট যে কিচেনের বৈদ্যুতিক আলো পড়ে কুর্তির আড়ালে থাকা পরনের প্যান্টিটার দুটো রেখা একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে কুর্তির কাপড়ের ওপর দিয়ে… দেহের প্রতিটা নড়াচড়ায় যেন নিতম্বটা ছলকে ছলকে উঠছে আপন খেয়ালে… মাঝে মধ্যেই কুর্তিটার পাশের কাপড়ের চেরাটা সরে গিয়ে বেরিয়ে দৃশ্যমন্য করে তুলছে পায়ের সাথে চেপে বসে থাকা লেগিংস মোড়া পুরুষ্টু পায়ের থাই, পায়ের গোছ… নিঃশব্দে আর একটু এগিয়ে দাঁড়ায় সুশান্ত… একেবারে পৃথার পেছনে… এতটাই কাছে যে চোখের সামনে পৃথার ঘাড়ের ওপরে হাল্কা রোঁয়ার রেশ চোখে পড়ে তার… কেমন যেন নদীর ধারার মত সেই লোমের সারিগুলো দুইপাশ থেকে গড়িয়ে এসে নেমে গিয়েছে পীঠের অববাহিকা বেয়ে… সোনার সরু হারটা সেই ঘাড়ের ওপরে আরো জৌলুশ বাড়িয়ে তুলেছে যেন… করে তুলেছে পৃথাকে আরো যৌন আবেদনময়ী। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চোখের সামনে উন্মুক্ত থাকা পৃথার ওইটুকু শরীরের ফর্সা অংশটার দিকে… ওই ঘাড়টুকুই যেন তার শরীরের অঘোষিত বিজ্ঞাপন… দেহের প্রতিটা কোণ আর বাঁকের ছবির।

হটাৎ ঘাড় ঘোরায় পৃথা, ঘুরিয়েই এত কাছে সুশান্তকে দেখে চমকে যায়… ‘একি? তুমি?’

চকিতে সুশান্তও কয়’একপা পিছিয়ে দাঁড়ায় পৃথার থেকে খানিক তফাতে… ‘না, মানে একা ভালো লাগছিল না বসে থাকতে, তাই…’ সাফাই দেয় নিজের উপস্থিতির।

‘ওহ! ভালো করেছ উঠে এসে… এই তো, আমারও চা হয়ে গেছে… শুধু ছাঁকলেই হবে…’ ফের ফিরে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে পৃথা…

তিনটে কাপে চা ছেঁকে, দুটো কাপ আর বিস্কিটের প্লেট ট্রের ওপরে রেখে হাতে তুলে ঘোরে সে, ‘চলো… ও ঘরেই যাই…’

‘তিন কাপ করলে?’ একটা কাপ কিচেন স্ল্যাবের ওপরে রেখে দেওয়াটা নজর এড়ায় না সুশান্তর।

‘না, ওই করলাম, একেবারে করে রাখলাম, ইচ্ছা হলে পরে একটু গরম করে নেবো’খন…’ বলতে বলতে সুশান্তকে প্রায় সাথে নিয়েই ড্রইংরুমে ফিরে আসে পৃথা… সেই জানে কেন তৃতীয় কাপ সে রেডি করে রেখে এলো… তার সোনাটার জন্য… ড্রইংরুমে ঢুকে শুধু মুখের ইশারা করে কিচেনের দিকে দেখিয়ে দেয় পৃথা… তার মানে যে বোঝার সে ঠিক বুঝে যাবে।



২৬।। (খ)

সোফায় বসে পা’য়ের ওপরে পা তুলে দেয় পৃথা… চা’য়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুশান্তকে ফের মৌসুমীর প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করে, ‘তোমাকে বললাম সাথে মৌসুমীকেও আনো, কেন আনলে না বলো তো… কতদিন দেখি নি মেয়েটাকে… বড্ড ভালো মেয়ে…’

‘না ভাবলাম এত বকে, তোমার শরীর খারাপ, তাই আর কি… আর এত মৌসুমী মৌসুমী করছ কেন বলো তো?’ উত্তর দেয় সুশান্ত, ‘কেন? আমি শুধু একা তোমার কাছে আসতে পারি না? নাকি আজকাল আর আমায় ভালো লাগছে না?’ গলায় আগের ক্ষোভ যেন ফিরে আসে সুশান্তর।

‘আরে, তুমি বন্ধু, তোমার আসায় কি অসুবিধা… কিন্তু সেটা নয়… ওর সাথেও একটু গল্প করা যেতো, এই আরকি…’ বলে পৃথা… ‘যাক, তোমাদের বিয়ের কত দূর?’

‘জানি না… সে নিয়ে ভাবছিও না কিছু এখন…’ বেজার মুখে উত্তর দেয় সুশান্ত।

‘কেন? তুমি তো বলেছিলে যে তোমাদের মোটামুটি সব কিছুই ঠিকঠাক হয়ে আছে, খুব শিগগিরি বিয়ে হবে… এখন আবার কি হলো? এনি প্রবলেম?’ ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে পৃথা… চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে।

‘না, ওদের দিক থেকে কোন প্রবলেম নেই… আমিই ভাবছি…’ বলতে বলতে থামে সুশান্ত… নিজের কাপে চুমুক দিতে থাকে চুপ করে।

‘তোমার আবার কি প্রবলেম? দিব্বি তো সব কিছুই ঠিক ছিল? অফিসও তো ঠিকঠাকই আছে…’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘না, মানে…’ একটু ইতস্থত করে সুশান্ত… তারপর কেটে কেটে বলে, ‘তোমাকে… দেখার পর থেকে… আমি ঠিক… কি করবো বুঝতে পারছি না…’

‘হোয়াট ডু ইয়ু মিন আমাকে দেখার পর থেকে?’ ভুরু কোঁচকায় পৃথা… ‘বুঝলাম ঠিক…’

‘না, মানে, অ্যাকচুয়ালি… আই থিংক… আমাকে আরো একবার ভাবতে হবে… আদৌ মৌসুমীর সাথে সম্পর্কটা নিয়ে এগোবো কি না…’ চোখ নামিয়ে উত্তর দেয় সুশান্ত।

‘হোয়াট?’ একটু বেশ জোরেই কথাটা বলে পৃথা… ‘আর ইয়ু ম্যাড? হোয়াটস দ্য প্রবলেম উইথ দ্যাট গার্ল? অ্যান্ড হাউ অ্যাম আই প্লেসড্‌ হেয়ার?’

‘না, মানে, ইয়ু কান্ট সে দ্যাট আই অ্যাম আ ব্যাড চয়েস… ক্যান ইয়ু?’ পৃথার মুখের পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সুশান্ত।

‘ঠিক বুঝলাম না, ব্যাড চয়েস বলতে হোয়াট ডু ইয়ু ওয়ান্ট টু মিন?’ প্রশ্ন করে পৃথা… হাতে ধরা চায়ের কাপটা টেবিলের ওপরে নামিয়ে সোজা হয়ে বসে।

‘সি পৃথা… দ্য ট্রুথ ইজ…’ বলতে গিয়ে থমকায় সুশান্ত।

‘কাম অন সুশান্ত… হোয়াট দ্য ট্রুথ ইজ… টেল মি…’ তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুশান্তের পানে পৃথা।

‘না, মানে… মানে… অ্যাাকচুয়ালি…’ বলতে বলতে ফের থমকায় সুশান্ত।

সুশান্তর এই ব্যবহারে অধৈর্য হয়ে ওঠে এবার পৃথা… হাতের একটা আঙুল তুলে বলে সে, ‘লুক… ইয়ু মাস্ট স্পিক আউট দ্য ট্রুথ… আরে ইয়ার… উই আর ফ্রেন্ডস… দেন হোয়াই ইয়ু আর ফ্লাম্বলিং লাইক দ্যাট? কাম অন… টেল মি… আই অ্যাম ওলয়েজ দেয়ার টু হেল্প বোথ অফ ইয়ু… মৌসুমীর সাথে কোনো প্রবলেম হয়েছে?’ প্রশ্ন করে সে।

‘না, না… ওর সাথে কোন প্রবলেম হবে কেন…’ উত্তর দেয় সুশান্ত থেমে থেমে।

‘দেন? বাড়ির থেকে? শুড আই স্পিক ইয়ুথ ইয়োর পেরেন্টস?’ ফের জানতে চায় পৃথা।

‘না, সেটাও নয়… বাড়িতেও কোন প্রবলেম নেই…’ বলে সুশান্ত।

‘দেন হোয়ের ইজ দ্য প্রবলেম? হোয়াই আর ইয়ু বিহেভিং লাইক দিস?’ প্রশ্ন করে পৃথা… হাত দুটোকে দুই দিকে মেলে কাঁধ শ্রাগ করে।

উত্তর দেয় না কিছু সুশান্ত… চুপ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে থাকে… মাঝে মাঝে শুধু চোখ তুলে বারেক তাকায় পৃথার দিকে।

‘কি হলো? কিছু বলছো না?’ অধৈর্য পৃথা ফের জিজ্ঞাসা করে।

‘কি বলবো বলো তো…’ শেষ হয়ে যাওয়া চায়ের কাপটা টেবিলের ওপরে নামিয়ে রাখতে রাখতে উত্তর দেয় সুশান্ত।

‘কি বলবো মানে? হা… ইফ ইয়ু ডোন্ট ওয়ান্ট টু ইনভোল্ভ মী ইন দিস, দেন দ্যাটস ডিফারেন্ট, বাট ইয়ু হ্যাভ টোল্ড দ্যাট আই অ্যাম দ্য ইশু ফর ইয়োর প্রবলেম… ইন দ্যাট কেস…’ বলতে বলতে থামে পৃথা… একটা সিগারেট ধরাতে পারলে খুশি হতো, কিন্তু সে জানে, অর্নব তাকে এখন একটাও সিগারেট খেতে দেবে না… দেয়ও নি সকাল থেকে… দুপুরে খাবার পর অনেক রিকোয়স্ট করেছিল একটা সিগারেটএর জন্য, কিন্তু দৃঢ় গলায় অর্নব ওকে জানিয়ে দিয়েছিল যে আজ একটা সিগারেট পাবে না সে… রাগ করা দূরঅস্ত, খুশি মনে মেনে নিয়েছিল অর্নবের সে শাসন… কিন্তু, এখন এই পরিস্থিতিতে একটা সিগারেট হলে খুব ভালো হতো… যাক, কি আর করা যাবে, ও ভালো মতই জানে অর্নব আসে পাশেই আছে, সিগারেট ধরালে এখন কিছু বলতে পারবে না, কিন্তু পরে ভিষন বকবে… তাই আর চেষ্টা করে না সিগারেটের দিকে হাত বাড়াতে… ‘ইন দ্যাট কেস… অ্যাটলিস্ট ইয়ু মাস্ট ক্লিয়ার ইয়োর সেলফ…’ শেষ করে পৃথা নিজের কথা।

‘আই অ্যাম ইন লাভ উইথ ইয়ু পৃথা…’ মুখ তুলে কথাটাকে যেন বুকের মধ্যে থেকে ঠেলে বের করে দেয় সুশান্ত।

‘হোয়াট?’ প্রায় চেঁচিয়েই ওঠে পৃথা।

‘ঠিক শুনেছ… আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি পৃথা… অ্যান্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইয়ু… শুধু তোমাকে…’ হাতদুটো জোড় করে বলে সুশান্ত।

‘ইয়ু আর নট সিরিয়াস… সুশান্ত… রাইট… ইয়ু আর জাস্ট জোকিং… তাই না?’ অবিশ্বাসী গলায় প্রশ্ন করে পৃথা… সুশান্তের বদল আগেই তার নজরে এসেছিল, বলেও ছিল অর্নবকে এই ব্যাপারে, কিন্তু সুশান্ত যে ওকে একেবারে প্রপোজ করে বসবে, এতটা আশা করে নি সে।

‘না পৃথা, জোক নয়… আমি সত্যিই বলছি… আই অ্যাম ইন লাভ উইথ ইয়ু…’ বোঝাবার আকুল চেষ্টা করে সুশান্ত।

মাথা নাড়ে পৃথা… ‘না না সুশান্ত… এটা হয় না… অলরেডি একটা মেয়ের সাথে তোমার জীবন জড়িয়ে গেছে… সে তোমার আশায় বসে আছে, আর তুমি…’

‘আই ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট হার… লেট হার ফাইন্ড সাম আদার পার্সন… অ্যান্ড আই ডোন্ট থিংক শী কুড বী মাই টাইপ…’ নিজের সপক্ষে বলে সুশান্ত।

‘সেটা আগে বলো নি কেন তুমি?’ দৃঢ় স্বরে প্রশ্ন করে পৃথা… ‘তোমার তো এটা লাভ ম্যারেজ নয়… তাহলে যখন তোমার সম্বন্ধ দেখা হচ্ছিল, এই মেয়েটাকে তোমার বাড়ির লোক পছন্দ করেছিল, তুমিও পছন্দ করেছিলে… তখন কেন এটা ভাবো নি? আর আজ এমন কি হলো যে হটাৎ করে মনে হলো তোমার যে মৌসুমী ইজ নট অফ ইয়োর টাইপ? আর ইয়ু ম্যাড? একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করার অধিকার কে দিলো তোমায়? হুঁ?’

‘তখন তো তোমায় দেখি নি আমি?’ ব্যাকুল গলায় বলে সুশান্ত।

‘ওহ! মাই গড! নট মী…’ সোফায় হেলান দিয়ে মাথা তুলে বলে ওঠে পৃথা… ‘সুশান্ত… ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড…’ ফের সোজা হয়ে বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘দেয়ার ইজ নাথিং টু আন্ডার্স্ট্যান্ড… আই হ্যাভ আলরেডি টোল্ড ইয়ু… আই অ্যাম ইন লাভ উইথ ইয়ু… অ্যান্ড দ্যাটস্‌ ফাইনাল…’ গলার স্বরে জোর বাড়ে সুশান্তর।

‘এটা হয় না সুশান্ত… হয় না…’ মাথা নাড়ায় পৃথা… ‘তুমি যেটা চাইছ, সেটা আমার পক্ষে কোনদিনই সম্ভব নয়…’

‘কিন্তু কেন?’ প্রায় জোরেই চেঁচিয়ে ওঠে সুশান্ত… ‘কেন নয়? আমি ছেলেটা খারাপ? আমার সম্বন্ধ কখনো, কোন দিন কিছু খারাপ শুনেছ? দেন? হোয়াই নট… অসুবিধা কোথায়? ইয়ু আর সিঙ্গল… আই অ্যাম অলস সেম… তাহলে?’ উত্তেজিত সুশান্ত হাত নাড়ে জোরে জোরে।

‘ইটস নট দ্যাট ইয়ু আর ব্যাড… সে প্রসঙ্গ আসছেই বা কেন… আই নো ইয়ু আর আ ভেরি গুড পার্সন… তোমার মত বন্ধু এই অচেনা শহরে এসে পেয়ে আমি সত্যিই ধন্য… আমি স্বীকারও করি সেটা… কিন্তু আমাদের মধ্যের সম্পর্কটা শুধু মাত্রই বন্ধুত্বের… উই আর গুড ফ্রেন্ডস… বাট ইয়ু কান্ট ফল ইন এনি রিলেশনশিপ… সেটা হয় না…’ শান্ত গলায় ফের বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘আই অ্যাম আ গুড পার্সন, আ গুড ফ্রেন্ড… তাহলে কিসের অসুবিধা? ভালো বন্ধু বা অফিসের কলিগ, তারা কি কখনও কোথাও রিলেশনএ বাঁধা পড়েনি? এটা কি নতুন?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে সুশান্ত।

ফের মাথা নাড়ায়… ‘তুমি আমাকে ভুল বুঝছ সুশান্ত… আমি সেটা বলতে চাই নি… আমি জানি কলিগ বা বন্ধুও একে অপরকে ভালোবাসতেই পারে, বিয়েও করে, এটা নতুন কিছু নয়… বাট ইন মাই কেস… আমার পক্ষে সম্ভব নয় সেটা… নট অ্যাট অল…’

‘কেন নয়… আমি সেটাই তো জানতে চাইছি… কোথায় অসুবিধা তোমার? মৌসুমীর কথা ভাবছ… আমি নিজে ওকে বলে দেবো যে ওকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়… তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই তোমার… বলো…’ মাথা নেড়ে সুশান্ত বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথাকে।

‘দেখ সুশান্ত, মৌসুমী তো একটা ব্যাপার বটেই… আমি কখনই চাইবো না একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়েকে এই ভাবে ঠকাতে… সেখানে আমার পক্ষে তোমার সাথে রিলেশনশিপ তৈরী করার সুযোগ থাকলেও তোমায় ফিরিয়ে দিতাম… আমি কখনই এগোতে দিতাম না তোমায়, দ্যাটস ফর হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর… কিন্তু এ ছাড়াও, আমি তো তোমাকে বলেই ছিলাম আগে, দ্যাট আই অ্যাম কমিটেড… আই আম ইন লাভ ইয়ুথ সামওয়ান এলস্‌…’ শান্ত গলায় বলে পৃথা।

‘আই ডোন্ট বিলিভ ইন ইয়োর স্টোরি… আমি বিশ্বাস করি না ইয়ু আর কমিটেড টু এনি বডি… ইটস্‌ অল বোগাস…’ উত্তেজিত সুশান্ত বলে ওঠে।

‘না সুশান্ত, এটাই সত্যি… বিলিভ মী…’ বোজাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘ইটস আ লাই… আই নো… সেদিন তুমি আমাকে বলার পর আই হ্যাভ স্পায়েড অন ইয়ু… কোনদিন তোমাকে অফিস থেকে বেরোবার পর কখনো কোথাও কারুর সাথে দেখা করতে দেখি নি… তুমি অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি ফেরো… ইয়েস… আই নো… শুধু তাই নয়… অফিসেও সারা দিন আমি তোমার ওপরে লক্ষ রেখে গিয়েছিলাম, না, সেখানেও আজ অবধি এমন কারুর ফোন তুমি রিসিভ করো নি বা তুমি নিজেও করো নি যেখান থেকে বোঝা যায় যে ইয়ু আর ইন রিলেশন উইথ এনি ওয়ান… তাই বলছি… ডোন্ট ট্রাই টু মেক ফুল আউট অফ মী… ওকে? আমাকে বোকা বানাতে এসো না…’ চিবিয়ে চিবিয়ে বলে সুশান্ত।

‘আমি তোমায় বোকা বানাচ্ছি না সুশান্ত…’ হাত তুলে ফের বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা… ‘আমি জানি না কতটা তুমি দেখেছ, বা জেনেছ, কিন্তু আমি সত্যিই কমিটেড টু সাম ওয়ান…’

‘টু হেল উইথ ইয়োর কমিটমেন্ট…’ বলে হটৎ উঠে দাঁড়ায় সুশান্ত সোফার থেকে… এক লহমায় পৌছে যায় পৃথার সামনে… সামান্য ঝুঁকে ঝপ করে খামচে ধরে পৃথার কাঁধ দুখানি… ধরে ঝাঁকাতে থাকে পৃথার শরীরটাকে… ‘টু হেল উইথ ইয়োর কমিটমেন্ট… আই লাভ ইয়ু অ্যান্ড ইয়ু উইল বী ওনলি মাইন… ব্যস… দ্যাটস্‌ ইট… আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা…’

পৃথা আশা করে নি সুশান্ত ওই ভাবে তার ওপরে ঝাপিয়ে পড়বে… চমকে গিয়ে পিছিয়ে যাবার চেষ্টা করে সোফার ওপরে… আর তার ফলে টান পড়ে সুশান্তর হাতের মুঠোয় ধরে থাকা পৃথার পরনের কুর্তিতে… একটানে পটাস্‌ করে জামার দুটো বোতাম ছিড়ে ছিটকে যায় শরীর থেকে… বুকের কাছটায় ফাঁক হয়ে যায় কুর্তিটা বেবাক… জামার আড়ালে থাকা ফর্সা শরীরটা বেরিয়ে পড়ে সুশান্তর চোখের সন্মুখে… কালো ব্রা’য়ে ঢাকা সুডোল স্তনের লোভনীয় বিভাজিকা তখন উন্মুক্ত… গলার সরু সোনার চেনটায় আটকানো ছোট্ট হৃদয়ের আদলের লাল পাথরের পেন্ডেন্টটা যেন দুটো নরম স্তনের আদর খেতে ব্যস্ত।

স্তব্দ হয়ে বসে থাকে পৃথা… কেমন যেন হতবাক হয়ে যায় এই অতকির্ত আক্রমনে… সেকেন্ড খানেক ভাবার চেষ্টা করে কি ঘটে গেল… আর সেই মুহুর্ত ধরে সুশান্তও চোখের মনিতে অসীম লোভ নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার সামনে উন্মুক্ত পৃথার লোভনীয় স্তনবিভাজিকার দিকে… যেন নরম বুকদুটো সুশান্তকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে মনে হয় তার… তারপরই পৃথা কিছু করার আগেই ঝুঁকে পড়ে সামনের পানে… নিজের মুখটা গুঁজে দেয় পৃথার ওই আকর্ষনীয় বিভাজিকায়… ঘসতে থাকে মুখটা নরম বুকের ওপরে…

ছটফট করে ওঠে পৃথা নিজের শরীরের ওপরে সুশান্তের লোভী স্পর্শে… সম্বিত ফিরে আসে তার… দু হাত দিয়ে ঠেলে সরাবার চেষ্টা করে সে… কিন্তু এমন বেখাপ্পা ভাবে সোফার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে যে কিছুতেই হাত দুটোকে ছাড়িয়ে ঠেলতে পারে না সুশান্তকে… অন্য সময় হলে খুব সহজেই হয়তো এই ধরণের আক্রমন প্রতিহত করত ক্যারাটে জানা পৃথা, কিন্তু এখন সেটাই করে উঠতে পারছে না বলে আরো বিরক্ত হয়ে ওঠে নিজের ওপরেই… এমনিতেই জ্বরে আক্রান্ত হবার পর একটু দুর্বলই বলা চলে, তারওপরে এই ভাবে বেকায়দায় ধরা পড়ে রয়েছে সে, বার বার করে অনুনয় করে সে, ‘এরকম কোরো না সুশান্ত… প্লিজ কোরো না… ছাড়ো আমায়… প্লিজ… আমাদের সুন্দর সম্পর্কটাকে এই ভাবে নষ্ট করে দিও না… ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড… প্লিজ… ছাড়ো আমায়…’

কে শোনে কার কথা… যত সময় গড়ায়, লোভ আরো চেপে বসে সুশান্তের ওপরে… স্তন বিভাজিকায় মুখ ঘসতে ঘসতে একটা হাত পৃথার কাঁধ থেকে নামিয়ে খপ করে চেপে ধরে নরম স্তন একটা… কচলাতে থাকে সেটাকে হাতের মুঠোয় ধরে… হাতের তেলোয় স্পর্শ লাগে পৃথার স্তনবৃন্তের।

হটাৎ করে ঘটে যায় ঘটনাটা যেন… সুশান্ত কিছু বোঝার আগেই সে ছিটকে গিয়ে পড়ে পাশের সোফার ওপরে… পৃথার শরীরের ওপর থেকে…

এই ভাবে দূরে গিয়ে ছিটকে পড়াতে প্রথমটায় একটু হকচকিয়ে যায় সুশান্ত… তারপর ভাবে নিশ্চয়ই পৃথা ওকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে থাকবে… পৃথার থেকে আঘাত পেয়েছে ভেবে আরো ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে মনে মনে… রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে ফের উঠে ঝাপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে সে পৃথার ওপরে… কিন্তু এগোবার আগেই একটা সজোরে ঘুসি এসে পড়ে ওর চোয়ালে… যেন হাওয়ার থেকে কোন অশরীরি কঠিন হাতের আঘাত হানে তার মুখের ওপরে… এবার সে ছিটকে গিয়ে পড়ে সোফা আর সেন্টার টেবিলের মাঝে, মেঝের ওপরে… ঠোঁটের পাশটায় বেশ কেটে যায়… গড়িয়ে পড়ে রক্ত… নিমেশে কালশিটে পড়ে যায় গালের পাশটায়, হনুর ওপরে… হতদ্যম হয় বসে থাকে সে মেঝের ওপরে… ভাবার চেষ্টা করে ঘটনাটা কি… তখনই কানে আসে একটা গমগমে গলা… যেন ঘরের মধ্যেটায় বাজ পড়ে… ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে সে স্বর… ‘ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ হার… আদার ওয়াজ আই’ল্ ব্রেক ইয়োর হেড… জাস্ট গেট আউট ফ্রম দিস প্লেস… আউট…’ শেষের ‘আউট’ কথাটা এতটাই জোরে যে প্রায় হৃদকম্প শুরু হয়ে যায় সুশান্ত… একবার তাকায় উল্টো দিকের সোফায় অপ্রস্তুত হয়ে বসে থাকা পৃথার দিকে, তারপর পড়ি কি মড়ি করে উঠে দৌড় লাগায় দরজার দিকে… কোনরকমে দরজাটা খুলে একেবারে ফ্ল্যাটের বাইরে… পেছন ঘুরে তাকাবার চেষ্টাও করে না সে… উর্ধশ্বাসে সিড়ি ভেঙে নামতে থাকে… এক একবারে দুটো তিনটে সিড়িও টপকায়… হোঁচট খায় ল্যান্ডিংএর কাছটায়… তবুও থামে না… উঠে ফের দৌড় মারে নীচের পানে… একেবারে রাস্তার দিকে।

অলোকবাবু পাশের ফ্ল্যাটের মধ্যে একটা ঝটাপটি শুনেছিলেন, তাই তাড়াতাড়ি নিজের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিলেন ব্যাপারটা বোঝার আশায়, কিন্তু যে ভাবে হটাৎ করে পৃথার ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলে ছেলেটি দৌড়ে বেরিয়ে এসেই দিগবিদিক না তাকিয়ে পালালো, হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন সেই দিকে… ল্যান্ডিংএর পরে চোখের আড়ালে সুশান্তের দেহটা চলে গেলে মুখ ফেরান পৃথার খোলা দরজাটার দিকে… আগেও এই ফ্ল্যাটের সম্বন্ধে নানান কথা শুনেছেন উনি, কিন্তু কোনদিন নিজের থেকে দেখা বা অনুভব করা হয় নি তার… তাই ছেলেটিকে এই ভাবে উর্ধশ্বাসে পালাতে দেখে মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন জেগে ওঠে তাঁর… তবে কি যেটা উনি শুনেছেন… কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয় যে তাহলে মেয়েটি কি ভাবে রয়েছে, আবার একা!… গুলিয়ে যায় মাথার মধ্যে তাঁর… মেলে না কোন উত্তর… তাই আরো ভালো করে জানার আশায় সবে এক পা বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু তার আগেই খোলা দরজাটা দুম্‌ করে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর মুখের ওপরে… হতাশ হয়ে খানিক ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকেন, তারপর যখন বোঝেন যে কিছু জানা যাবে না এখন, ধীর পায়ে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে যান।



২৭।।

আলুথালু পোষাকে সোফার ওপরে হতদ্যম হয়ে বসে তাকিয়ে থাকে দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়া সুশান্তর শরীরটা দিকে পৃথা… তখনও যেন ঠিক ধাতস্থ হয়ে উঠে পারে নি সে… কথায় কথায় হটাৎ করে কি ঘটে গেল ব্যাপারটা… এরকমটা তো সে স্বপ্নেও আশা করে নি… আশা করে নি সুশান্তর কাছ থেকে এই ধরণের ব্যবহার… ওর আচার আচরণে সে সন্দিহান ছিলই, কিন্তু তাই বলে ওকে একা পেয়ে এই ভাবে ঝাপিয়ে পড়তে পারে? ওকে যে সত্যি সত্যিই বন্ধু বলেই ভেবেছিল সে… আজ না হয় ওর অর্নব আছে, কিন্তু যদি না থাকতো পাশে? তখন? জীবনে কাউকেই কি বিশ্বাস করা যায় না? ছেলেরা কি কখনই একটা একলা মেয়েকে শুধু মাত্র বন্ধু বলে ভাবতে পারে না? একটু হেসে কথা বললে, একটু ভরসা করে কাছে এগিয়ে গেলেই ভাবে এটা মেয়েদের দুর্বলতা? এক তুষার ঝড়ের রাতে, সুদূর হিমালয়ের কোলে রমেশ ওকে ব্যবহার করেছিল… শুধু মাত্র নিজের যৌন ক্ষুদা নিবৃত্তি করেছিল একলা তাকে টেন্টের মধ্যে পেয়ে… একবারের জন্য ওর প্রতি সহৃদয়তা দেখায় নি… প্রয়োজন মনে করেনি জাগিয়ে তোলা পৃথার যৌনক্ষুধা নিরশনের… আপন ক্ষুধা মিটতেই ছেড়ে উঠে গিয়েছিল জ্বলতে থাকা পৃথার অতৃপ্ত শরীরটা ছেড়ে দিয়ে… আর আজও একান্ত বন্ধু ভাবা সুশান্ত তাকে একা ফ্ল্যাটের মধ্যে পেয়ে দ্বিধা করে নি ঝাপিয়ে পড়তে… কেন? কেন? কেন এমন ঘটে… পুরুষ জাতটাই কি তবে এই রকমই… অপর দিকের মানুষটার মানসিকতা বোঝার এতটুকুও চেষ্টা করে না কখনও? প্রয়োজন বোধ করে না জানার মেয়েটির মনের চাহিদা কি? সেটা যৌনাত্বক নাকি বন্ধুত্বপূর্ণ? কেন এমন হয়? এর পর অফিসে গিয়ে কি করে ও মুখ দেখাবে সুশান্তর কাছে? সুশান্তই বা কি সাহস নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াবে? কথা বলবে? হাসবে? আর মৌসুমী… একটা প্রাণবন্ত মেয়ে… সে যদি জানতে পারে সুশান্তর এই আচরণের কথা? বিয়ের আগেই কি ভাববে নিজের হবু জীবন সঙ্গীর সম্বন্ধে? যার সাথে সে সারাটা জীবন কাটাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রয়েছে?

দুম্‌ করে ফ্ল্যাটের দরজাটা বন্ধ হয়ে যেতে চটক ভাঙে পৃথার চিন্তায়… ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সে সোফা ছেড়ে… তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় দরজা লক্ষ করে… মাঝ পথেই তার শরীরের সাথে ধাক্কা লাগে অর্নবের কায়াহীন দেহটার… দুহাত দিয়ে অর্নবকে জড়িয়ে ধরে… মুখটা তুলে তাকায় না দেখা অর্নবের মুখের পানে… একরাশ প্রশ্ন মেখে থাকে যেন তার ছলছল চোখের কোনে… তারপর আস্তে আস্তে নিজের মুখটাকে ডুবিয়ে দেয় অদৃশ্য লোমশ বুকটার মধ্যে… আঁকড়ে ধরে দু হাত দিয়ে প্রাণপনে… পরক্ষনেই বাঁধ ভেঙে যায় তার… অর্নবের বুকের মধ্যে ডুকরে ওঠে পৃথা… ফোঁপাতে থাকে মুখটাকে বারংবার পেশল বুকের ওপর ঘসতে ঘসতে… অব্যক্ত কন্ঠে নানান প্রশ্ন করে চলে সে… তারপর ফোঁপানোর জায়গা করে নেয় বাঁধ ভাঙা কান্না। ওর মাথার চুলের ওপরে হাত বোলায় অর্নব… সেও একটা হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে পৃথাকে, নিজের বুকের মধ্যে… মুখে কিচ্ছু বলে না, কাঁদতে দেয় নিজের প্রিয়াকে মন খুলে… এতেই সে হাল্কা হবে, জানে অর্নব… হাল্কা হওয়ার প্রয়োজন পৃথার… এই মানসিক আঘাত থেকে সেরে উঠতে।

ওই ভাবেই প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরে জড়িয়ে ধরে রাখে পৃথাকে নিজের শরীরের মধ্যে অর্নব, একটু একটু করে কান্নার দমক কমে আসে… শেষে আবার ফোঁপানোতে রূপান্তরিত হয়ে শেষ হয় কান্নাটা… তবুও, আরো খানিক সময় নেয় সে… তখন ছাড়ে না তার আদরের তিতিরকে নিজের বুকের ভেতর থেকে… একটা সময় নিজের থেকেই পৃথা বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে চায় উপর পানে, অর্নবের অদৃশ্য মুখ লক্ষ্য করে, ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আমি যে সত্যিই ওকে আমার খুব ভালো বন্ধু ভাবতাম গো… বিশ্বাস করো… কেন এমন করলো ও আমার সাথে?’

পৃথার মাথাটাকে ধরে ফের নিজের বুকের মধ্যে চেপে নেয় অর্নব, পৃথাও ছোট্ট আদুরে মেয়ের মত গুঁজে দেয় নিজের নরম শরীরটাকে অর্নবের বিশাল চওড়া দেহের আলিঙ্গনে… নিজের গালটা পৃথার মাথার সাথে ঠেকিয়ে ধীর গলায় বলে অর্নব, ‘কিচ্ছু হয় নি… যেটা ঘটেছে, সেটা সাময়িক, দেখবে কাল সব ঠিক হয়ে যাবে…’

‘সাময়িক?’ অর্নবের বুকের মধ্যে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হু, সাময়িক, আর কিচ্ছু নয়… আসলে তোমার প্রতি ওর মনের অবচেতন কোনায় একটা মোহ জন্ম নিয়েছিল, এ সেটারই বহিরপ্রকাশ মাত্র… এটা ঘটত না যদি না তোমার জ্বরে ওকে ডাকতে, যে হেতু তুমি প্রণবকে ডেকেছ বলে ও শুনেছে, তাই ওর মধ্যে একটা প্রতিহিংসা তৈরী হয়েছিল… আর তোমাকে যেহেতু প্রথম থেকে ওই গাইড করেছে, তাই আজ নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি, একটা আউট বার্স্ট ঘটে গিয়েছে মাত্র…’ পৃথার মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে অর্নব।

অর্নবের হাতে আদর খেতে খেতে যেন সব কষ্ট কেমন উবে যেতে লাগল তার, দুহাত বাড়িয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে অর্নবের শরীরটাকে নিজের দুই হাতের মধ্যে… নরম বুকদুটো চেপে বসে অর্নবের পেশল পেটের ওপরে… গালটাকে কাত করে বুকের ওপরে রেখে বলে পৃথা, ভাবে, কি সহজেই না সমস্যাটাকে বিশ্লেষণ করে দিলো মানুষটা… ‘কিন্তু অফিসে গেলে ও যদি কিছু বলে?’

‘বলবে না কিছু… দেখে নিও… হটাৎ আবেগের বশে করে ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু অতটা ক্ষতিকারক ছেলে ও নয়… অন্তত আমার এক্সপিরিয়েন্স তাই বলে… আর ওর সে সাহসও নেই কারুর কোন ক্ষতি করার, সেটা করার মতও বুকের পাটার দরকার, সেটা ওর নেই… তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো ওর থেকে…’ পৃথাকে নিজের শরীরের সাথে আরো গভীর ভাবে লেপটে যেতে প্রশ্রয় দিতে দিতে বলে অর্নব…

ভিষন ইচ্ছা করে অর্নবের ঠোটের ওপরে নিজের ঠোটটা চেপে ধরতে, আশা নিয়ে মুখ তোলে পৃথা, গ্রীবা উচু করে তাকায় উপর পানে অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে… নিজের পাতলা ঠোঁটদুখানি মেলে দেয় অর্নবের পানে… ঠোঁটের পাপড়ি দুটো ফাঁক হয়ে যায় সামান্য… ভেতরের ঝকঝকে সাদা সুন্দর সাজানো দাঁতের সারি চোখে পরে…

টিং টং… টিং টং… দরজার ঘন্টিটা বেজে ওঠে তখনই। ভুরু কুঁচকে যায় বিরক্তিতে পৃথার… শরীরটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে অর্নবের অদেখা দেহের সাথে বাচ্ছা মেয়ের মত… ঠোঁট দুটো তখনও মেলে রাখে ওপর পানে করে…

‘বেল বাজছে তো!’ অর্নব ফিসফিসিয়ে মনে করিয়ে দেয়।

‘বাজুক… আগে আমাকে একটা চুমু খাও তারপর দেখবো কে এসেছে…’ আদুরে জেদ দেখায় পৃথা।

টিং টং… টিং টং… ফের দরজার বেল বাজে।

অর্নব বোঝে, একটা চুমু না নিয়ে এ মেয়ে ছাড়বে না তাকে, দরজাও খুলবে না সে… তাই মাথা নামিয়ে চট করে একটা চুমু এঁকে দেয় পৃথার নরম পাতলা ভিজে ঠোঁটের ওপরে… তারপর বলে, ‘হয়েছে? এবার যাও, দেখ কে এসেছে…’

গাল ভারী হয়ে যায় পৃথার… কয়’এক পলক তাকিয়ে থাকে মুখ তুলে, তারপর, ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, ‘আজ রাত্রে তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে… তখন দেখবো কি করে পালাও…’ বলতে বলতে রাতের অভিসারের কল্পনায় মিচকি হেসে ওঠে সে… সদ্য চুমু খাওয়া ঠোঁট দুখানি যেন চকচক করে ওঠে সম্ভাব্য সঙ্গমের আবেশে।

অনিচ্ছা সত্তেও অর্নবকে ছেড়ে এগিয়ে যায় দরজার দিকে, পেছন থেকে অর্নব নির্নিমেশ তাকিয়ে থাকে প্রতি পদক্ষেপে ছলকে উঠতে থাকা গাঢ় রঙের টাইট কুর্তির আড়ালে ঢাকা নরম নিতম্বের দুটো দাবনার দিকে… প্রকারান্তে পৃথার বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়া রাতের ঘটনার কথা চিন্তা করে তার রক্তেও যেন কামাগ্নির মাতন লাগে।



‘কখন থেকে বেল মারচি, খুলচিলে না, তুমি কি সুয়ে চিলে?’ দরজা খুলতেই কাজল গড়গড় করে বলতে শুরু করে দেয়… পৃথাকে সরিয়ে নিজেই দরজার পাল্লা বন্ধ করে দেয় সে… ‘তোমার সলিলটা একন ঠিক আচে তো? দেকি দেকি…’ বলে পৃথার কপালে হাতের পীঠ ঠেকায়… ‘নাঃ… জ্বর নেই দেকচি… কিন্তু তোমার এই অবস্তা কেন গো? জামা কাপড় সব কেমন ঘেঁটে রয়েচে, মাতার চুলগুলো এলোমেলো… চোখদুটোও তো দেকচি লাল লাল ঠেকচে, কাঁদচিলে নাকি?’

‘কাঁদতে যাবো আবার কেন রে?’ নিজের মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি ঠিক করতে করতে কাজলের প্রশ্নের সাফাই দেয় পৃথা… কাজলের সন্দিহান চোখ থেকে বাঁচতে দ্রুত পায়ে গিয়ে ঢোকে বাথরুমে, বেসিনের কল খুলে চোখে মুখে জলের ঝাপটে দিয়ে টাওয়েল রড থেকে তোয়ালেটা টেনে নিয়ে মুখ মোছে… বেসিনের ওপরে লাগানো আয়নায় নিজের মুখটা একবার দেখে নিয়ে বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে, তাড়াতাড়ি বেডরুমে ঢুকে একটা ওড়না নিয়ে আড়াআড়ি ফেলে রাখে কাঁধ থেকে বুকের ওপরে, ছিঁড়ে খুলে যাওয়া কুর্তির বোতামের জায়গাটাকে আড়াল করার চেষ্টায়।

‘কেউ এয়েচিলো?’ কিচেনের থেকে প্রশ্ন আসে কাজলের।

‘অ্যাঁ… হ্যা… ওই আমার এক বন্ধু…’ ড্রইংরুমে এসে সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে সুশান্তর আর তার এঁটো কাপ প্লেটগুলো তুলে নিতে নিতে জবাব দেয় পৃথা… ‘কেন?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে সে।

‘না, চা করেচো দেকচি, তাই জিজ্ঞাসা করলাম…’ কিচেনের মধ্যে থেকে কাজলের বাসন ধোবার আওয়াজ আসে। পৃথা কিচেনে ঢুকে কাজলের পাশ কাটিয়ে সিঙ্কএর মধ্যে হাতের কাপ প্লেট নামিয়ে রাখতে রাখতে বলে, ‘তুই এখন আসবি, বলিস নি তো?’

‘ও মা, তোমার জ্বর হয়েচে, আর আমি আসবো না? আমি কি সেই রকম মেয়ে নাকি গো?’ তাক থেকে লিকুইড ভিমএর বোতলটা নামাতে নামাতে উত্তর দেয় কাজল… ‘তুমি না বললে কি হবে, আমি তো জানি, তোমার সলিলটা কত দুব্বল, একটু রান্না না করে দিলে রাতে খাবে কি সুনি? সেই জন্যই তো দাসবাবুদের গিন্নিকে বলে দিলুম যে আজ সন্দে বেলায় আর যাবো না… একটু চালিয়ে নিতে… ঠিক করি নি? বলো?’

‘এসেছিস ভালোই হয়েছে, কিন্তু অন্যদেরও তো অসুবিধা হলো… তাই না?’ কুন্ঠিত গলায় বলে পৃথা।

‘ও মা… এই লাও… তোমার অসুক, আর আমি যাবো অন্য বাড়ি কাজ করতে, তাই আবার হয় নাকি?’ কথার মধ্যে কাজলের হাত কিন্তু থামে না… যন্ত্রচালিতের মত দুপুরের রেখে দেওয়া বাসনগুলো ঝটপট মেজে ফেলতে থাকে সিঙ্কের মধ্যে রেখে… ‘দুপুরে ঠিক মত খেয়েচিলে তো? একা একা থাকতে অসুবিদা হয় নি?’ কাজলের প্রশ্নের ঢেউ ভেসে আসতে থাকে পৃথার দিকে।

মাথা নেড়ে হাসে পৃথা, ‘না রে… কোনো অসুবিধা হয় নি… আমি ঠিকই ছিলাম…’ মনে মনে ভাবে, ঠিক না থেকে উপায় আছে? থাকতে দেবে নাকি ওই লোকটা… সব সময় আগলে রেখেছে না… অর্নবের কথা মাথায় আসতেই মুখটা উজ্জল হয়ে ওঠে তার যেন… ঠোঁটের কোনে হাসি খেলে যায় মুচকি… তখনও যেন ঠোঁটের ওপরে অর্নবের চকিত স্পর্শ লেগে রয়েছে মনে হয় তার… হাত তুলে নিজের ঠোঁটের ওপরে ছোয়ায় সে।

‘অসুদ খেয়েচিলে?’ প্রশ্ন করে কাজল।

‘অ্যাঁ?’ চটকা ভাঙে পৃথার… ‘কি বলছিস?’

‘বাব্বা… কি এত ভাবচো গো?… বলচি অসুদ খেয়েচিলে দুপুরে ঠিক মতো?’ ফের প্রশ্ন করে কাজল।

‘হ্যা, হ্যা… খাবো না কেন? আমি কি বাচ্ছা মেয়ে?’ উত্তর দেয় পৃথা তাড়াতাড়ি…

‘হ্যা… সে তো দেকতেই পাচ্চি… বাচ্চা মেয়ে কি না… তুমি বাচ্চা নয় তো কি গো? একনো তোমার আড় ভাঙে নি…’ বাসন মাজা প্রায় শেষ করে এনেছে ততক্ষনে কাজল।

‘এই… বাচ্ছা কি রে? আমি তোর থেকেও বড়, সেটা জানিস?’ কপট রাগ দেখায় পৃথা।

‘সেতো বয়সে… আসল জায়গায় তো একনো আদুরে বাচ্চা মেয়েই রয়েচো…’ হাসতে হাসতে উত্তর দেয় কাজল।

ভুরু কুঁচকে কোমরে হাত রাখে পৃথা, লক্কা পায়রার মত ঘাড় বেঁকিয়ে বলে সে, ‘কি বলচিস রে? আসল জায়গা মানে? কি বোঝাতে চাইছিস?’

‘হি হি… তোমার তো একনো সিলই ভাঙে নি গো… আর আমার বিয়ে হয়েচে পেরায় দু বচর হয়ে গেলো… তাহলে তুমি আমার কাচে বাচ্চা হলে না?’ হাসতে হাসতে দেহ দুলিয়ে উত্তর দেয় কাজল।

চকিতে না চাইতেও পৃথার চোখটা একবার ঘুরে বেড়ায় কাজলের শরীরটার ওপরে… রোগা পাতলা হলেও খুব একটা খারাপ চেহারার নয় মেয়েটা… বুক পাছায় বেশ ভালোই চর্বির প্রলেপ রয়েছে লেগে… হয়তো নিয়মিত সহবাসের ফলেই ফুলে উঠেছে শরীরের বিশেষ জায়গাগুলো… কেন জানে না সে, কেমন হটাৎ করেই মনের মধ্যে একটা ক্ষীণ সন্দেহ খোঁচার মত বিঁধে যায়… ‘অর্নব যখন একা থাকতো… কাজলও তো কাজ করতো শুনেছে…’ পরক্ষনেই তাড়াতাড়ি ঝেড়ে ফেলে মনের মধ্যে থেকে কথাটাকে… ‘ছি, ছি… এ কি ভাবছে সে? তার অর্নবকে নিয়ে সে সন্দিহান হচ্ছে? না, না… এ কখনই সম্ভব নয়…’ নিজেই মাথা ঝাকিয়ে অঙ্কুরের বিনাশ করে দিতে চায় যেন সদ্য তৈরী হতে থাকা ওই বিচ্ছিরি সম্ভাবনাটাকে… তাড়াতাড়ি করে কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে সে… ‘তোর কতদিন হলো বিয়ে হয়েছে বলছিস?’

‘এই তো… পরের মাসে আমার দু বচর কমপিলিট হবে…’ মাটির ওপরে থেবড়ে বসে পড়ে বলে কাজল, হাত বাড়িয়ে ক’টা আলু নিয়ে বটি দিয়ে কাটতে বসে সে… ‘আমি একটু আলু দিয়ে বাটি চচ্চড়ি করে দিয়ে যাচ্চি… জ্বরের মুকে ভালো লাগবে, দেকো…’ বটির ফলায় অভ্যস্থ হাতে আলুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে সে।

‘তোর বিয়ের সময় দাদাবাবু ছিল?’ কেন জানে না, না চাইতেও ফের ওই প্রসঙ্গেই আবার ঢুকে পড়ে পৃথা, নিজেরই অজান্তে।

‘চিলো তো… দাদাবাবুই তো আমার বিয়ে দিলো… বরটা তো দাদাবাবুর অপিসেই কাজ করে… খুব ভালো ছেলে… জানো… খুব আদর করে আমায়… অন্য সোয়ামীদের মত মদও খায় না, মেয়েছেলেরও দোস নেই… অপিস সেস হলেই সোজা বাড়ি চলে আসে…’ হাতের কাজ করতে করতেই বলে যায় কাজল। তারপর হটাৎ কি মনে হতে মুখ তোলে পৃথার পানে, ‘তুমি কবে বিয়ে কচ্চো দিদিমনি? তোমাকে দেকেও তো লাগচে খুব আদর খাবার সক হয়েচে…’

কাজলের কথায় খানিকটা হকচকিয়ে যায় পৃথা, এই ভাবে সরাসরি আক্রমন আসবে সবে মাত্র কাজে যোগ দেওয়া কাজলের কাছ থেকে, সেটা ঠিক আশা করেনি… কথাটা কানে যেতেই তার অজান্তেই কানের লতিদুটো লাল হয়ে গরম হয়ে ওঠে… ছদ্ম রাগে চোখ পাকায়… ‘আমার বিয়ে নিয়ে পড়তে কে বলেছে তোকে শুনি?’

‘কে আবার বলবে? মনে হলো তাই বললুম…’ নিজের হাতের কাজে ফের মনোনিবেশ করে কাজল… হাত চালাতে চালাতেই বলে সে, ‘তবে যাই বলো দিদিমনি… আমার দাদাবাবুর সাথে কিন্তু তোমাকে বেস মানাতো…’

আরো গরম হয়ে ওঠে কান পৃথার… বুকের মধ্যেটায় হৃদপিন্ডটা যেন অনর্থক একটু বেশিই ধকধক করছে তার… উৎসুক গলায় প্রশ্ন করে, ‘কোন দাদাবাবুর সাথে আবার বলছিস রে?’

‘কোন দাদাবাবু আবার কি গো… একটাই তো আমার দাদাবাবু আচে… অর্নবদাদাবাবুর কতা বলচি… আজ যদি দাদাবাবু থাকতো একানে, তবে তোমার সাতে খুব মানাতো… ওই একটা কি বিচ্চিরি বাইরের দেসের মেয়েছেলেকে বিয়ে করেচিল… আমাদের দেসে কি মেয়ের অভাব চিলো, বলো? এই তো… তুমিই কতো সুন্দর… একেবারে যেন পরিটি… দেকেই ভালোবাসতে ইচ্চা করে…’ কাজলের হাতের সাথে কথাও চলে গড়গড়িয়ে।

কাজলের কথায় বাধা দেয় না পৃথা… কানের লতিতে রক্তিমাভা নিয়ে মাথা নিচু করে উপভোগ করে কাজলের কথাগুলো… মন চায় আরো এই ধরনের কথা শুনতে কাজলের কাছ থেকে… ‘তোর ওই অর্নবদাদাবাবুর সাথে আমাকে সত্যিই মানাতো?’ ফের প্রশ্ন করে যাচাই করে নিয়ে চায় সে কাজলের বক্তব্যটাকে।

হাতের আলু কাটা ততক্ষনে শেষ হয়ে গিয়েছে কাজলের, বটিটাকে পাশে সরিয়ে রেখে উঠে দাড়ায় সিঙ্কের কাছে, কল খুলে কাটা আলুগুলো ধুতে ধুতে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় পৃথার পানে, ‘বিসসেস হচ্চে না তো… হবেই বা কি করে… তুমি তো আর আমার দাদাবাবুকে দেকো নি… তাই এত বার এই ভাবে পেসনো করচো… যদি দেকতে, হা করে তাকিয়ে থাকতে আমার দাদাবাবুর দিকে…’ বলতে বলতে ফের মন দেয় হাতের কাজে।

‘আচ্ছা… খুব সুন্দর ছিল তোর দাদাবাবু?’ ফের টিজ করার চেষ্টা করে পৃথা… বেশ মজা পায় কাজলের সাথে অর্নবের ব্যাপারে কথা বলে… প্রসঙ্গটা যেন থামাতেই ইচ্ছা করে না তার।

‘তুমি যেমন একেবারে লম্বা ছিপছিপে, সুন্দর দেকতে… আমার দাদাবাবুও তেমনিই চিলো… হেই লম্বা… আমার থেকেও এত্তো বেশী…’ বলে নিজের মাথার ওপরে হাত তুলে দেখায় কাজল… ‘আর তেমনি গতর খানা… হেই বুকের ছাতি… তুমি হলে সেই ছাতির মদ্দে একেবারে সেদিয়ে যেতে… বুজেচো?’

‘তাই?’ মেকি অবিশ্বাস ফোটাবার চেষ্টা করে গলার স্বরে… মনে মনে বলে, ‘তোর দাদাবাবুর ওই হেই বুকের ছাতির মধ্যেই তো সেঁদিয়ে আদর খাচ্ছিলাম এতোক্ষন… তুই মুখপুড়ী না এলে তো আরো অনেক আদর খেয়ে ফেলতে পারতাম, পাগল হয়ে যেতে পারতাম আদরে আদরে…’ ভাবতে ভাবতেই সারা শরীরের মধ্যে একটা শিহরণ খেলে যায় পৃথার… বুকের মধ্যে হাজারটা দামামা বেজে ওঠে এক সাথে… মাথার মধ্যে ফিরে আসে রাতের সম্ভব্য কামকেলির ছবি… গরম হয়ে ওঠে কানের লতিদুটো তার… লাল হয়ে ওঠে নাকের পাটা… কুর্তির নীচে, ব্রায়ের আড়ালে থাকা নরম সুগোল বুকের বোঁটাগুলো যেন বিদ্রোহ ঘোষনা করতে চায় দাঁড়িয়ে উঠে।

‘আমার সাথে তোর দাদাবাবুর মানাবে, সেটা কি করে বুঝলি?’ প্রশ্ন করতে করতে প্রায় গলা বুজে আসে যেন তার…

‘সেটা কি আর বলে দিতে হয় দিদিমনি? দাদাবাবুকে দেকেচি, তোমায় দেকচি… যেন দুটিতে একেবারে জোড়া হবার জন্যই এসেচো… যেমন আমার দাদাবাবু চিলো, ঠিক তেমনি তুমিও তো… কি সুন্দর তোমার সলিল… এত সুন্দর তোমায় দেকতে, এত সুন্দর তোমার বুক, পাছা…’ পৃথার একেবারে সামনে এসে দাঁড়ায় কাজল, ভালো করে দেখতে দেখতে বলে তাকে।

কাজলের কাছে এই ভাবে নিজের দেহের বর্ননা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে সে, অন্য সময় হলে তার দেহের বর্ননা একটা কাজের মেয়ের থেকে পেলে কি বলতো জানে না সে, কিন্তু এই মুহুর্তে কাজলের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও যেন লজ্জা করে তার… ‘যাহঃ… কি যে বলিস না তুই…’

‘সত্যিই বলচি গো দিদিমনি… তুমি যদি আগে আসতে… তাহলে থড়ি দাদাবাবু ওই মেমসাহেব বিয়ে করতো… তোমাকেই বিয়ে করে সারাক্ষন আদর করতো…’ হাসতে হাসতে বলে কাজল ফের ফেরে নিজের কাজে।

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো পৃথা, কিন্তু ঘাড়ের ওপরে গরম নিঃশ্বাস পড়তেই তার সারা দেহটা যেন অসাড় হয়ে আসে… অর্নব… কখন চুপি চুপি এসে দাঁড়িয়েছে তার পেছনে সে জানতেও পারে নি… ‘ইশ… তবে কি ও এই সব কথাগুলো শুনছিল?’ ভাবতেই লজ্জায় আরো লাল হয়ে ওঠে সে… দুটো বলিষ্ঠ অদৃশ্য হাত তার দেহটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে… হাতের তেলোদুটো এসে থামে ঠিক তলপেটটার ওপরে… কোমল বর্তুল নিতম্বের ওপরে চাপ পড়ে ইষৎ দৃঢ় হয়ে উঠতে থাকা অর্নবের লোভনীয় পৌরষ… পৃথার মনে হয় এবার সে নিশ্চয় হাঁটু ভেঙে বসে পড়বে… দেহের ওপরে অর্নবের পুরুষালী স্পর্শে যেন হাঁটুর জোরটা কেমন জেলির মত নরম হয়ে পড়ছে আস্তে আস্তে… নিজের শরীরটাকে হেলিয়ে দেয় পেছন দিকে, অর্নবের চওড়া ছাতির ওপরে, উদ্বেল নিতম্বটাকে ঠেলে চেপে রাখে অর্নবের দুই পেশল উরুর মাঝে… একবার আড় চোখে তাকায় কাজলের দিকে… কাজল মন দিয়েছে রান্নার কাজে… মনে মনে কাজলকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে… ‘এই দেখ মুখপুড়ী… তোর দাদাবাবু আমাকে কেমন আদর করছে… আদরে আদরে পাগল করে দিচ্ছে একবারে…’

‘তবে…’ কিছু বলতে হটাৎ তখনই মুখ ঘোরায় কাজল, পৃথাকে ওই ভাবে পেছন দিকে হেলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেমন অবাক হয়ে যায়… ‘ওকি দিদিমনি, তুমি ওই ভাবে হেলে দাঁড়িয়ে আচো কেনো?’

ঝট করে পৃথার শরীর থেকে হাত সরিয়ে সরে দাঁড়ায় অর্নব… পৃথাও তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাঁড়ায়… ‘ক…কি ভাবে?’

‘না কেমন হেলে গিয়েচিলে পেচন দিকে…’ সন্দিহান চোখে তাকায় পৃথার পানে।

‘ও… ও কিছু না… আড়মোড়া… আড়মোড়া ভাঙছিলাম আর কি…’ বলে তাড়াতাড়ি কাজলকে দেখিয়ে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গিমা করে, তারপর ফিরে বেরিয়ে আসে কিচেন থেকে… এসে ড্রইংরুমে ধপ করে বসে পড়ে সোফায়… ‘ইশ… আর একটু হলেই কাজলের কাছে ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম… ছি ছি… কি কেলেঙ্কারিটাই না করছিলাম…’ মনে মনে ভাবে পৃথা… ‘আমার কি দোষ শুনি? দোষ তো যত ওই লোকটার… বদমাইশ একটা… পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদর করলে আমার ওই অবস্থা হবে না? দাঁড়াও… আজ পাই তোমায় রাতে… তখন দেখাবো…’ নিজেই মনে মনে সাফাই গায়… ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় এদিক সেদিক… খোঁজে অর্নবকেই যেন… আরো কিছু ভাবতে যাচ্ছিল, কিন্তু হটাৎ করে ভুরু কুঁচকে ওঠে তার… পায়ের ফাঁকে কেমন চেনা এক অস্বস্তিকর অনুভূতি অনুভব করে সে… কিছু একটা গড়িয়ে বেরিয়ে আসার ভিষন পরিচিত অনুভব… তাড়াতাড়ি করে সোফার থেকে উঠে দাঁড়ায়… দ্রুত পায়ে গিয়ে ঢোকে বাথরুমে… পরণের কুর্তিটার হেমটাকে নিজের থুতনির নিচে চেপে ধরে কোমর থেকে লেগিংস আর প্যান্টিটাকে এক সাথে নামিয়ে চোখ রাখে প্যান্টির মাঝের কাপড়ে… চোখে পড়ে জায়গাটার রঙ ভিজে গাঢ় লালচে হয়ে ওঠার… দেখেই চোখ কুঁচকে যায় এক রাশ বিরক্তিতে… ‘ওফ… ভগবান… আজই হবার ছিল?’ ভাবতে ভাবতে প্রায় কান্না এসে যায় তার চোখে… যেন সম্ভাব্য এক সুখানুভূতি পাবার আগেই কেউ জল ঢেলে দিয়েছে সেই সুখে… আবার মুখ নামিয়ে তাকায় প্যান্টির দিকে… ‘নাঃ… কোন ভুল নেই… হয়েই গিয়েছে…’ বিরক্ত মুখে লেগিংস আর প্যান্টি সাবধানে খুলে ফেলে দেহ থেকে, প্যান্টিটা বাথরুমের এক কোনায় নামিয়ে রেখে লেগিংস হাতে বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে… বেডরুমে গিয়ে কাবার্ড খুলে, তাকের পেছন থেকে পাকেটটা টেনে বের করে নেয় পৃথা।

7

২৮।।

‘তুমি কি ঘরে?’ শোবার ঘরের আলতো করে ভিজিয়ে বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে আওয়াজ পেয়ে জিজ্ঞাসা করে ড্রইংরুম দাঁড়িয়ে পৃথা।

অনেকদিনই আর বৃষ্টি হচ্ছে না… তাই যথেষ্ট ভ্যাপসা গরম হয়ে উঠেছে শহরের আবহাওয়াটা ফের… রাতে এসি ছাড়া শোয়ার কথা চিন্তাই করা যায় না এখন… কিন্তু জ্বরএর জন্য এসিও চালাবে না অর্নব, আগেই বলে দিয়েছে…

‘হ্যা, কেন? আসবো?’ অর্নবের স্বর ভেসে আসে।

‘না, না… আওয়াজ পেলাম, তাই ভাবলাম তুমি ঘরে আছো কি না…’ উত্তর দেয় পৃথা, একবার মুখ তুলে ঘরের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতে ধরা সিগারেটএর প্যাকেটটা দেখে… ‘একটা কথা বলবো? রাগ করবে না তো?’ খানিক ইতস্থত করে ফের মুখ তুলে প্রশ্ন করে সে।

‘কেন? কি কথা?’ অর্নবের গলার স্বরটা এগিয়ে বেডরুমের দরজার কাছে পৌছায়… পৃথার বুঝতে অসুবিধা হয় না ওর কথায় ঘর থেকে বেরিয়ে অর্নব ওর সামনে এগিয়ে আসছে।

‘বলছি, একটা সিগারেট খাবো গো? প্লিজ… অনেকক্ষন খাইনি তো, তাই… প্লিজ…’ অনুনয় করে না দেখা অর্নবের দিকে তাকিয়ে।

‘খেতেই হবে? আজকের দিনটা বাদ দিলে হয় না?’ অর্নবের স্বরটা এবার একেবারেই পৃথার সামনে এসে বাজে… অর্নবের গায়ের পুরুষালী গন্ধটা নাকে লাগে পৃথার…

‘দেখো… তোমার কথা শুনে আজ সারা দিন একটাও খাইনি… এখন বড্ডো খেতে ইচ্ছা করছে… খাই না গো?’ ফের অনুরোধ করে সে।

‘কিন্তু তোমার যে জ্বরটা সবে ছেড়েছে… কালকে কি অবস্থা হয়েছিল বলো তো? আজকের দিনটা থাক না…’ বলে অর্নব… বলিষ্ঠ হাতের পরশ লাগে পৃথার কাঁধের ওপরে।

ঘাড় কাত করে গাল ছোয়ায় হাতের পীঠের ওপরে পৃথা… নিজের কোমল গালটা ঘসে সেই হাতের পীঠের ওপরে… তারপর মুখ তুলে গাল ভারী করে বলে ওঠে, ‘ভাল্লাগে না… একটা সিগারেট খাবো, তার পারমিশন নেই… আজ ভাবলাম মনের সুখে করবো, সেটাও ভগবানের ইচ্ছা হলো না, আজই শরীর খারাপ হতে হলো… আমার সবই ইচ্ছাতেই সবাই শুধু না বলে… চাই না… যাও… খাবো না…’ বলে হাতের মধ্যে ধরা সিগারেট প্যাকেটটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যায় সেন্টার টেবিল লক্ষ্য করে… কিন্তু অর্নবের অদৃশ্য গায়ে সেটা ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।

অর্নব নীচু হয়ে সিগারেট প্যাকেটটা তুলে রেখে দেয় টেবিলটার ওপরে, তারপর পৃথার সামনে ঘুরে ওকে নিজের বুকের ওপরে টেনে নেয় দুহাতের আলিঙ্গনে… পৃথা বাধ্য মেয়ের মত ভারী গাল নিয়ে মাথা রাখে অর্নবের নিরাকার বুকের ওপরে… অবিন্যস্ত চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে বিলি কাটে আদর করে… ‘লক্ষ্মী সোনা… কি করবে বলো? এখানে তোমার নিজের হাতে কিছু নেই…’

‘আ হা… লক্ষ্মী সোনা… বলো? নিজের হাতে তো কিছু নেই?’ মুখ তুলে অর্নবকে ভেঙচে ওঠে পৃথা… ‘ভাল্লাগে না… হু হু…’ বলে আবার মুখ লুকায় লোমশ বুকের মাঝে… ডান হাত তুলে আঙুল দিয়ে অর্নবের পুরুষালী বুকের লোমগুলোকে আন্দাজ করে সরিয়ে স্পর্শ করে ছোট্ট বোঁটাটার ওপরে… সেটাকে নখ দিয়ে আলতো করে খুঁটতে খুঁটতে বলে, ‘কত আশা করেছিলাম বলো, আজকে তোমার কাছে আদর খাবো… আর কি হলো দেখো…’

অর্নব কিছু উত্তর না দিয়ে চুপ করে জড়িয়ে ধরে থাকে পৃথাকে নিজের বুকের মধ্যে…

অর্নবের থেকে কোন উত্তর না পেয়ে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে পৃথা… আঙুলের ডগায় থাকা অর্নবের বুকের বোঁটাটাকে দুই আঙুলের চাপে চিমটি কেটে ধরে হটাৎ করে… ‘আআআ… কি করছ?’ কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব…

‘আমার কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন? হুঁ?’ ফের আদর করে আঙুল বোলাতে থাকে ব্যথা দেওয়া বোঁটার ওপরে… ‘বলো না… আমার শরীরটা এখনই কেন খারাপ হলো… উ…’

‘ভালোই হয়েছে তো… অন্তত আর কিছুদিন আমাকে আর একটু চেনার সময় পেলে… সব কিছুই এত তাড়াহুড়ো না করাই ভালো… বুঝেছ?’ পৃথার চুল থেকে খুব ধীরে, যেন স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে হড়কে অর্নবের হাতটা নেমে আসে পৃথার মসৃন পীঠের ওপরে… পীঠের মাঝ বরাবর এসে থেমে যায় হাতের অগ্রগতি… সেই মুহুর্তে পৃথার পরনের পাতলা গেঞ্জী কাপড়ের স্লিপটার ওপর দিয়ে পৃথার শরীরের ওম্‌ নিতে থাকে নিজের হাতের তালুর মধ্যে।

‘আ হা… আমার জ্যাঠামশাই রেএএএএ…’ সুর টেনে বলে ওঠে পৃথা… মুখটাকে লোমের মধ্যে ঘসে নেয় বার খানেক… ‘এই বদমাইশ, বিচ্ছিরী, অসভ্য লোকটাকে আর নতুন করে কি চিনবো? হু?’

‘আমি বদমাইশ?’ পৃথার মাথার চুলে মুখ ডুবিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব।

‘হু’… অর্নবের বুকের মধ্যে মুখ রেখে উত্তর দেয় পৃথা।

‘আমি বিচ্ছিরী?’ প্রশ্ন করে অর্নব ফিরিয়ে… হাতটা তার ফের সচল হয়ে ওঠে… আরো খানিকটা নেমে যায় পৃথার পীঠ বেয়ে নীচের পানে… ঠিক কোমরের ওপরে নিতম্বের উদ্বাম ঢেউ যেখানটায় শুরু হয়েছে, সেখানে গিয়ে থামে… পাতলা সুতির কাপড়ের স্লিপ্‌সটার হেমও শেষ হয়েছে ঠিক সেই খানটাতেই… হাতের তালুতে স্পর্শ লাগে পৃথার পরিধেয় পাতলা সুতির সর্টস এর ইলাস্টিক ব্যান্ড আর স্লিপ্‌সটার হেমটার মাঝে থাকা মসৃণ ত্বকের… খুব ইচ্ছা করে স্লিপ্‌সটা তুলে হাতটাকে ওটার মধ্যে পুরে দেবার… অনেক কষ্টে সংবরণ করে নিজের সেই ইচ্ছাটাকে…

পৃথাও অনুভব করে অর্নবের হাতের স্পর্শ নিজের শরীরের চামড়ায়… গুনগুনিয়ে ওঠে সে বুকের মধ্যে থেকে… ‘ইশ… বিচ্ছিরীই তো…’

‘আবার অসভ্যও?’ ফের প্রশ্ন করে অর্নব… হাতের পাঞ্জাটা ঘুরে বেড়ায় পৃথার কোমরের ওপরে…

‘ভিষন… ভিষন… ভিষন… অসভ্য লোক একটা…’ বুকের ওপর থেকে মুখটা তুলে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে ওঠে পৃথা… ডান হাতটা ঘুরিয়ে নিজের শরীরের পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে অর্নবের হাতটাকে ধরে… তারপর সেটাকে নামিয়ে দেয় নিজের বর্তুল তুলতুলে কোমল নিতম্বের দাবনার ওপরে… চেপে ধরে অর্নবের হাতটাকে নিজের সেই লোভনীয় নিতম্বের মাংসল দাবনার ওপরে… হাতের মুঠোয় ধরে অর্নবের হাতের তেলোটাকে ঘসতে থাকে দাবনার ওপরে… ‘অসভ্য একটা… উমমম…’ কামঘন চোখে মুখ তুলে তাকায় সে অদৃশ্য অর্নবের পানে… নিজের শরীরটাকে আরো ঘন করে নিয়ে আসে অর্নবের শরীরের সাথে… উরু সন্ধিটাকে চেপে দেয় অর্নবের পুরুষালী উরুর ওপরে… অর্নব ছোঁয়া পায় প্যান্টির আড়ালে থাকা দুই উরুর ফাঁকে বাঁধা প্যাডটার… পাতলা ঠোঁটের কোয়া দুটো ফাঁক হয়ে যায় খানিক… ফিস ফিসিয়ে ওঠে… ‘আর সেই অসভ্য লোকটা শুধু আমার… আমার… আমার… আর আমার…’ বলতে বলতে অর্নবের হাতটাকে নিজের নিতম্বের ওপরে চেপে রেখে পায়ের আঙুলের ওপর ভর রেখে শরীরটাকে আরো খানিক তুলে ধরে অর্নবের পানে… চোখের পাতা দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিয়ে ঘাড়টাকে সামান্য কাত করে দিয়ে অপেক্ষা করে সে… ঠোঁটের কোয়া ফাঁক হয়েই থাকে একই ভাবে…

অর্নব নিজের মাথাটাকে নীচু করে একটু… একরাশ দাড়ি ভরা মুখের আড়ালে থাকা পুরুষালী মোটা ঠোঁট চেপে ধরে পৃথার এগিয়ে বাড়িয়ে মেলে ধরা ঠোঁটের ওপরে… ভিজে যায় দুজনেরই ঠোঁটজোড়া একে অপরে মুখের লালায়… অনুভব করে নিজের বুকের ওপরে চেপে বসা পৃথার কোমল দুটো মাংসের পিন্ডর চেপে বসে থাকার… হাতের তালুর মধ্যে থাকা পৃথার পরিধেয় সর্টস আর প্যান্টি আড়ালে থাকা ওই নরম নিতম্বের দাবনার একটাকে প্রায় খামচে ধরে সে… তার মুখের মধ্যেই শিৎকার দিয়ে ওঠে অস্ফুট স্বরে পৃথা, ‘উমমমম… হুমমমমম…’ অর্নবের হাতের ওপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে দুহাত দিয়ে আলিঙ্গন করে ধরে থাকে তার প্রিয়তমের গলাটাকে… নিজের বুকটাকে আরো চেপে ধরে তার বুকের সাথে… ভারী হয়ে আসে দুজনেরই নিঃশ্বাস… উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে ওঠে নিশ্বাসএর তাপমাত্রা… একটু একটু করে স্ফিত হয় উঠতে থাকা অর্নবের পৌরষের স্পর্শ লেগে থাকে পৃথার বাড়িয়ে চেপে ধরে থাকা মসৃন উরুর ওপরে।

এক মিনিট… নাকি পাঁচ মিনিট… নাকি আধ ঘন্টা… একে অপরে সাথে এই ভাবে কতক্ষন ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার হিসাব থাকে না… যেন ওদের এই ভাবে প্রগাঢ় আলিঙ্গনের বাঁধা পড়তে দেখে সময়ও থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে… স্তব্দ হয়ে গিয়েছে চতুর্দিক… শুধু ঘরের দেওয়াল ঘড়িটা মৃধু শব্দে বলে চলেছে… টিক টিক টিক টিক… আর সেই সাথে মিলিয়ে দুটো প্রেমঘন শরীরের হৃদস্পন্দন…

এক সময় মুখ তোলে পৃথার ঠোঁটের ওপর থেকে অর্নব… দুজনেই হাঁফায় খানিক… বড় বড় নিঃশ্বাস নেয় শ্বাস টেনে… এক রাশ ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকে পৃথার তুলে ধরা মুখটার পানে অর্নব… কি সুন্দর, নিস্পাপ অথচ কতই না কামনামেদূর মুখমন্ডল… প্রাণ ভরে তাকিয়ে থাকে তার প্রেয়সীর মুখের পানে সে…

পৃথারও বোধহয় বুঝতে অসুবিধা হয় না অর্নবের তার দিকে নির্নিমেশ তাকিয়ে থাকার… প্রায় অস্ফুট স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে সে… ‘লাভ মী সোনা… লাভ মী প্লিজ… আই ওয়ান্ট টু গেট ড্রাউন্ড ইন ইয়োর লাভ… প্লিজ… টেক মী…’

আজ কিছু করা সম্ভব নয়, সেটা অর্নব ভালো করেই জানে, তবুও, পৃথার কথার কোন প্রতিবাদ করে না সে, সামান্য ঝুঁকে, অবলীলায় পৃথার শরীরটাকে নিজের বলিষ্ঠ দুই হাতের ওপরে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় মাটির ওপর থেকে… বয়ে নিয়ে চলে শোবার ঘরের পানে… পৃথা পরম নিশ্চিন্তে নিজের মুখটাকে গুঁজে রাখে অর্নবের বুকের মাঝে… দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে থাকে আলতো স্পর্শে তার প্রিয়তমের গলাটাকে… একটা পাখির পালকের মত ভেসে থাকে শূন্যে।



২৯।।

সামান্য ঝুকে বিছানার ওপরে আলতো করে মেলে দেয় পৃথার শরীরটাকে অর্নব… প্রেমাস্পদের কাছ থেকে সম্ভাব্য আদরের অভিলাশে একটা সদ্য ঝরা পাতের মত বিছানার ওপরে শুয়ে তিরতির করে কাঁপতে থাকে পৃথার মেদহীন পেলব মেয়েলী সম্পদে পরিপূর্ণ দেহটা… নিজের চোখগুলোকে চেপে বন্ধ করে রাখে সে… চোখ মেলে দেখার কিছু নেই… অনুভব করতে চায় নিজের শরীরের ওপরে একটা দুর্দান্ত পুরুষালী দেহের পরশ শুধু… অভিষ্ট সুখানুভূতির পরশ পেতে নরম বুকদুটো পাতলা স্লিপএর আড়ালে ওঠে, পড়ে… উঁচিয়ে, প্রস্ফুট হয়ে থাকে উত্তেজিত স্তনবৃন্তদুটি… একান্ত পেষনের কামনায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে যেন স্বকিয়তায়…

নিজের হাতদুখানি তুলে, মেলে ধরে দুই দিকে… প্রকৃষ্ট আহ্বানের ইঙ্গিত সেখানে… তিরতির করে কাঁপে বন্ধ চোখের পাতা… ফাঁক হয়ে থাকে পাতলা অধর… প্রেমিকের অধরের সাথে মিলিত হবার পরম প্রেরণায়… ঘাম জমে নাকের পাটার দুই পারে… উত্তেজনায় রাঙা হয়ে ওঠে নাকের পাটা, কানের লতি… উষ্ণ বাতাস পৃথার নিঃশ্বাসে…

অর্নব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চোখের সামনে শুয়ে থাকা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়েটির পানে… তার দেখা সব চেয়ে সুন্দর পবিত্র নিষ্পাপ অথচ অসম্ভব কামুকি মেয়ে… নারী সে এই প্রথম দেখছে না… আজ তার বয়সের মধ্য গগনে দাঁড়িয়ে বিশ্বের বহু ধরনের নারী দেখার সৌভাগ্য হয়েছে… গ্রাম্য, শহুরে, দেশি, বিদেশী, শান্ত, অশান্ত, কামুক, শৈতী, কি নয়? সে নিজে অপত্নিক… যৌনতা তার কাছে নতুন কিছু নয়… নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বের বহু বহু জায়গায় সঙ্গমের আনন্দে মেতেছে কত যে বার, তার কোন ইয়ত্তাই নেই হয়তো… কোথায় নয়? শৈলাবাসে, সমুদ্র সৈকতে, নির্জন বনভূমির অভ্যন্তরে আবার কখনও বা ব্যস্ত শহরের নির্জন কোন রাত্রিবাসের নিভৃত একান্ত ঘরের আড়ালে… কখনো কানাডার প্রচন্ড শীতের মধ্যে আবার কখনো বা মরুভূমির প্রচন্ড তাপপ্রবাহ গায়ে না মেখে… লিন্ডা তাকে যৌনসুখের শিখরে পৌছিয়ে দিয়েছিল… তার শরীর থেকে টেনে বার করে নিয়েছিল যৌনসুখের অপার নির্যাস… অস্বীকার করে না সে, তার স্ত্রীই শিখিয়েছিল একটা নারী শরীরকে কি ভাবে একটু একটু করে উত্তেজিত করে তুলতে হয়… প্রতি পল ধরে ধরে সেই নারী শরীরটাকে তুলে নিয়ে যেতে হয় শারিরীয় সুখের একেবারে শীর্ষে… ভরিয়ে দিতে হয় কি ভাবে আদর আর সোহাগে সেই নারীর দেহের প্রতিটা ইঞ্চি বাই ইঞ্চি… তাই লিন্ডাকে হারাবার পর আর কখনও সে কল্পনাতেও আনে নি অপর কোন নারীকে তার জীবনে… কিন্তু এই মেয়েটা কি ভাবে তার সব সেই প্রতিজ্ঞা গুলো নিমেশে ভাসিয়ে উড়িয়ে দিয়ে গেলো… কবে? কি করে? কখন? দৃষ্টির আড়াল থেকে নিজের কায়াহীনতার সুযোগ নিয়ে সে শুধু এই মিষ্টি মেয়েটার উচ্ছলতা, প্রাণবন্ততা, তারুণ্যে ভরা দেহটাকে দেখে গিয়েছে… আর একটু একটু করে কখন যে এতটা আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল, নিজেই সম্ভবত জানে না অর্নব… যেদিন তার উপস্থিতি, তার অবয়বহীন দেহটার প্রমাণ পেয়ে গেল… আপন করে নিলো এক ডাকে… পারে নি সে… পারে নি সেই ডাকে না সাড়া দিয়ে… মনে মনে শঙ্কা থাকা সত্বেও, অনেক অনিচ্ছা থাকা সত্বেও ধরা দিতে বাধ্য হয়েছিল মেয়েটির বাহুডোরে… শুধু কি এই মোহময়ীর ডাক শুনেই? তারও কি প্রবল ইচ্ছা জন্মায় নি মেয়েটিকে প্রথম দিন দেখেই, তাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে? তার শরীরের ওম নিজের দেহের ওপরে গ্রহণ করতে… আজ সে কথা অস্বীকার করে কোন মুখে? ইচ্ছা ছিলো ষোল আনাই, কিন্তু সেই সাথে ভয়ও ছিল তার… ভয় ছিল যদি তার এই কায়াহীনতা মেয়েটি মেনে না নিতে পারে? ভয়, আতঙ্কে সরে যায় তার থেকে? পালিয়ে যায় এই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে… তাই যথা সম্ভব, সর্বদা চেষ্টা করে গেছে মেয়েটির থেকে দূরে দূরে থাকতে… কিন্তু অসুস্থ মেয়েটিকে না ছুঁয়ে থাকবে কি করে সে? তাই সেদিন আর দূরে থাকতে পারে নি… এগিয়ে এসে বুকে তুলে নিয়েছিল সে… শুশ্রষা করেছিল রাতের গভীরে… ভোর হতেই প্রনবকে ফোন করে ডাক্তার আনার কথা বলে দিয়েছিল… কিন্তু তখন কি জানতো মেয়েটি এই ভাবে তাকে নিজের করে টেনে নেবে? না, ভাবে নি… শুধু ভেবেছিল প্রণব এসে গেলেই আবার সে লুকিয়ে থাকবে তার প্রিয়ার চোখের আড়ালে… ধরা ছোঁয়ার বাইরে… কারণ মন চাইলেও সে নিজেকে বার বার বুঝিয়েছিল যে এ হয় না… অনেক ছোট মেয়েটি তার থেকে… কি করে এই প্রাণচ্ছল মেয়েটির জীবন তার মত এক অবয়বহীনের কাছে টেনে নেবে সে? তাই পৃথা যখন ওকে নিজের কাছে টানতে চেয়েছিল, জানাচ্ছিল নিজের প্রাণের কথাগুলো… বারংবার তাকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে গিয়েছিল… বোঝাবার চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখে নি অর্নব… কিন্তু পেরেছিল কি? না, পারে নি… হেরে গিয়েছিল মেয়েটির বুকভরা ভালোবাসার কাছে… শুধু তাই কেন? সে হেরে গিয়েছিল নিজের প্রতিজ্ঞার কাছে… দুহাত বাড়িয়ে টেনে নিয়েছিল পৃথাকে নিজের বুকের মাঝে… স্নিগ্ধ হয়ে গিয়েছিল তার এতদিনকার কায়াহীন একাকিত্বের জীবনটা… কিন্তু এরপর?

‘কোই… কি হোলো? আসলে না এখনও?’ পৃথার প্রশ্নে চিন্তায় ছেদ পড়ে অর্নবের… দেখে পৃথা তখন দুহাত তুলে মেলে রেখেছে তাকে নিজের বুকের সান্নিদ্ধে পাবার প্রতিক্ষায়…

বাড়িয়ে দেওয়া একটা হাতকে নিজের হাতের মধ্যে ধরে পৃথার পাশে বিছানায় বসে পড়ে অর্নব, তারপর পৃথার অপর হাতটাকে তার ধরা অন্য হাতটার সাথে মিলিয়ে দুটোকে পৃথার বুকের ওপরে জড়ো করে ধরে তার মুখের ওপরে একটু ঝুঁকে বসে সে… গাঢ় গলায় বলে, ‘আজ তোমার ঘুমের বড়ো দরকার তিতির… আজ সারাটাদিন তুমি একটুও দুচোখের পাতা এক করো নি… এখন একটু ঘুমাও… লক্ষ্মীটি…’

পট করে পৃথার দুচোখের পাতা খুলে যায়… কুঁচকে যায় নাকটা সামান্য… অর্নবের অবয়বহীন মুখটার দিকে পলক খানেক এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে সে… ‘আমি এমনি বলেছি জ্যাঠামশাই?’ চোয়াল চেপে বলে ওঠে সে… পরক্ষনেই… বুকের ওপরে তার হাতদুটো মুঠোয় ধরে থাকা অর্নবের হাতটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সরে যায় বিছানার আরো ভিতর দিকে, অর্নবের শরীরের গা বাঁচিয়ে… মুখ ঘুরিয়ে পেছন ফিরে শুয়ে থাকে সে… গজগজ করতে থাকে অস্ফুট স্বরে, ‘হু… কাকে বলেছি কি করতে… এমনি বলেছি একটা অসভ্য, বিচ্ছিরি লোক… আমার জীবনেই এসে জুটেছে… আসতে হবে না আমার কাছে… চাই না ওই বিচ্ছিরি লোকটাকে… একবার আসুক… ডাকুক তিতির বলে… দেখবে তখন তিতির কি রকম… ঠিক আছে… কথাই বলবো না… ছোবও না কোনদিন… ছুঁতেও দেবো না আমাকে… দেখবে তখন কেমন লাগে… চাই না… চাই না ওই বাজে লোকটাকে… ইশ… মুখ দেখতেও ইচ্ছা করে না… এক গাল দাড়ি… গায়ে লাগলে খালি সুড়সুড় করে… আসুক না আমার কাছে… কামড়ে দেবো ঠিক…’ গজগজ করে যায় পাশ ফিরে শুয়ে সে।

অর্নব একটা কথাও বলে না… চুপ করে হাসি মুখে দেখতে থাকে তার প্রেয়সীর পেছন ফিরে শুয়ে থাকা অভিমানী শরীরটাকে… পৃথার কথায় রাগ তো দূরের কথা আরো মজা পায় সে… পৃথার বুকের মধ্যের এখন বর্তমান ছেলেমানুষীটা দেখে ভালো লাগে তার… আস্তে আস্তে পৃথার গা বাঁচিয়ে সেও শুয়ে পড়ে কাত হয়ে বিছানায়… তারপর খুব ধীরে নিজের শরীরটাকে ঘসে সরিয়ে নিয়ে যায় পৃথার পানে… একদম কাছে সরে গিয়ে আলতো করে একটা হাত ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরে পৃথার শরীরটাকে পেছন থেকে… তার নিতম্বটাকে টেনে নেয় নিজের কোলের মধ্যে…

ঝটকা মেরে অর্নবকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে পৃথা… ‘যাও… আসতে হবে না আমার কাছে… একদম ছোঁবে না আমাকে…’

বলিষ্ঠ হাতের আলিঙ্গনে চেপে রাখে পৃথাকে নিজের বুকের মধ্যে সে… আরো বেশি করে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে তাকে… মুখটা গুঁজে দেয় পৃথার মসৃণ কাঁধ আর গলার মাঝখানটায়…

‘উউউউ… হি হি হি…’ সুড়সুড়ি লেগে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে পৃথা… ‘এখন এসেছ কেন? হু? করতে হবে না আদর… আমি ঘুমাবো এখন…’ ফের মনে পড়ে যেতে রাগটাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে সে।

‘এই মেয়েটার এত্তো অভিমান?’ ছোট করে পৃথার গলায় চুমু খেয়ে বলে অর্নব।

সিরসির করে ওঠে পৃথার সারা দেহ… ‘আহহহহ… কি করো…’ নিমেশে যেন শিথিল হয়ে যায় শরীরটা পৃথার…

‘আমার তিতিরকে আদর করছি…’ ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয় অর্নব।

‘যাও… চাই না তোমার আদর…’ গাল ভারী করে বলে ওঠে পৃথা।

‘সত্যিই চাই না… একটুও না…’ পৃথার গলার ওপরে ছোট ছোট চুমু খেতে খেতে বলে অর্নব…

কাঁধ কুঁচকে তুলে ধরে পৃথা… ‘চাই নাই তো… একদম করবে না আমাকে আদর… আমি তোমার কেউ নই…’ মুখ বলে, কিন্তু নিজের শরীরটাকে আরো চেপে ধরে পেছন দিকে অর্নবের বুকের সাথে… নিতম্বটাকে ঠেলে দেয় অর্নবের জঙ্ঘার দিকে।

হাতের তালুর মধ্যে মুঠো করে ধরে পৃথার নরম একটা স্তনকে… হালকা হাতের চাপ দেয় মুঠোয়… ‘আহহহ… উমমমম…’ গুঙিয়ে ওঠে পরম আবেশে পৃথা… হাত তুলে নিজের বুকের সাথে অর্নবের হাতটাকে আরো ভালো করে চেপে ধরে সে… ‘ইশশশশসসস… কি করছ…’ গুনগুনিয়ে বলে ওঠে মৃদু স্বরে…

‘আদর…’ ফিসফিসায় অর্নব… গলার চামড়ায় হালকা দাঁত বসিয়ে চাপ দেয়…

‘ওমমম… মাআহহহ…’ নিজের হাতের মুঠো আরো শক্ত করে পৃথা… অর্নবের হাতটাকে ধরে রগড়ায় নিজের বুকের ওপরে… ‘অসভ্য লোক একটা…’ ফিসফিস করে সেও বলে ওঠে… সারা শরীরের মধ্যে তখন আলোড়ন উঠছে যেন তার… পা দুটোকে ঘসে একে অপরে সাথে নিজের নিতম্বটাকে বারে বারে পেছন দিকে চেপে ধরে…

অর্নব ঘাড়ের ওপর থেকে মুখটাকে তুলে এনে চুমু খায় কানের পেছনে… ‘উউউমমম…’ কানে আসে চাপা গোঙানি পৃথার… আরো শক্ত করে ধরে তার হাতটাকে নিজের নরম হাতের মুঠোয়… কানের লতিটায় জিভ বের করে ঠেকায় সে… জিভের ডগায় তুলতুলে নরম কানের লতিটা ধরে নাড়িয়ে দেয় অল্প অল্প… ‘ইশশশশ… কি করছহহহ…’ ফের গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা… কোমর কুঁচকে নিতম্বটাকে ঘসার চেষ্টা করে অর্নবের কোলের মধ্যে… একটু একটু করে কি ভিষন ভাবে সে ভিজে উঠছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার… দেহের দুষিত রক্ত আর শরীরের কামজ রস মিলে মিশে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসছে তার শরীরের ফাটল বেয়ে… সাংঘাতিক ভাবে ভিজে উঠছে প্যান্টির ওই বিশেষ জায়গাটা… কিন্তু সে দিকে তার এখন কোন হুস নেই… ভিজে যাক যত পারে… কেয়ার করে না সে… দূরন্ত গতিতে তৈরী হতে থাকা ওই ভিষন ভালোলাগাটাকে সে হারাতে চায় না এক মুহুর্তের জন্যও… আর এক হাত তুলে এনে দুইহাতের মুঠোয় চেপে ধরে অর্নবের হাতটাকে নিজের নরম বুকের ওপরে… মাথাটাকে আরো কাত করে দেয় অর্নবের মুখের সামনে… ‘আহহহহ… কি করছহহহহ…’ শিৎকার বেরিয়ে আসে তার মুখ থেকে… চোখ বন্ধ হয়ে যায় পরম আবেশে…

কানের লতি চুষতে চুষতে জিভটাকে ঢুকিয়ে দেয় পৃথার কানের মধ্যে… ঘোরাতে থাকে হাল্কা ভাবে সেখানে রেখে… কানের মধ্যের ভেজা অনুভুতিটা পাগল করে তোলে পৃথাকে… ‘ওওওহহহ মাহহহহ… ইশশশ…’ ফের গুঙিয়ে ওঠে সে… আর তার শরীর যেন নিতে পারে না এই শিহরণ… ঝট করে ঘুরে শোয় অর্নবের দিকে ফিরে… এক রাশ ভালোবাসা মাখা চোখ তুলে তাকায় কায়াহীন অর্নবের মুখের পানে… পলক খানেক তাকিয়ে থাকে সে… তারপর গুঁজে দেয় নিজের মুখটাকে ভালোবাসার মানুষটার লোমশ বুকের মধ্যে… ‘একটা বিচ্ছিরি লোক… অসভ্য একটা…’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে… দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে না দেখতে পাওয়া অথচ ছুঁয়ে থাকতে পারা অর্নবের শরীরটাকে… অর্নব হাতের আলিঙ্গনে আরো টেনে নেয় তার আদরের তিতিরকে নিজের বুকের মধ্যে… পৃথার মাথার ওপরে চিবুকটা রেখে হাত বোলায় প্রেয়শীর পীঠের ওপরে… ‘আদর খাওয়া হয়েছে তো? এবার ঘুমাবে তো আমার সোনা?’

প্রায় খামচে ধরে অর্নবের উদলা পীঠটাকে… নিজের জঙ্ঘায় অনুভব করে স্ফিত হয়ে ওঠা তার প্রেমিকের পৌরষ… চেপে এগিয়ে দেয় সর্টস প্যান্টের আড়ালে ঢাকা নিজের জঙ্ঘটাকে আরো… ‘আমার সোনা…’ বিড়বিড় করে বলে সে অর্নবের বুকের মধ্যে… তারপর চোখ বন্ধ ঢলে পড়ে ঘুমের কোলে, পরম নিশ্চিন্তে।
 

soukoli

Member
389
58
29
৩০।।

‘কখন উঠলে?’ কানের পাশে মৃদু স্বরে অর্নবের গলা পেয়ে চিন্তার জাল ছেঁড়ে পৃথার… জানলা দিয়ে ভোরের আলো তখন সবে ফুটে উঠে উঁকি মারছে ঘরের মধ্যে… বিছানা থেকেই চোখে পড়ে আকাশের গায়ে বেগুনি রঙের ছোঁয়া…

‘উম?… এই তো… খানিক আগেই… চেঞ্জ করে এলাম… প্রথম দুটো দিন বড্ড হয়… বারে বারে চেঞ্জ না করলে ভেসে যায় একেবারে…’ নিজের শরীরটাকে আরো অর্নবের কোলের মধ্যে ঠেলে দিয়ে উত্তর দেয় পৃথা, আড়মোড়া ভাঙে হাত তুলে।

‘কি চিন্তা করছিলে শুয়ে শুয়ে?’ প্রশ্ন করে অর্নব, ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে প্রেয়শীকে।

‘কতওওওও কি…’ মৃদু হেসে উত্তর দেয় পৃথা… না দেখা অর্নবের দিকে ফিরে শোয় সে… হাত তুলে রাখে অর্নবের দাড়িভরা গালের ওপরে… ‘গুড মর্নং সোনা…’ বলে ঠোঁটটা এগিয়ে রাখে অর্নবের দাড়ির আড়ালে থাকা ঠোঁটের ওপরে… হাল্কা করে চুমু খায়।

‘কি ভাবছিলে, কই, বললে না তো?’ পৃথার এলোমেলো চুলের মধ্যে বিলি কাটতে কাটতে ফের জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

‘তোমার কথা…’ ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয় সে।

‘আমার কোন কথা? সবই তো শুনেছ প্রণবের কাছ থেকে… কিছুই তো বাকি নেই আর… তাহলে?’ ফের জিজ্ঞাসা করে অর্নব… চুলের থেকে হাত নামিয়ে খেলা করে কানের লতি নিয়ে।

সিরসির করে ওঠে পৃথার শরীরটা কানের লতিতে হাত পড়তে… ঘাঁড় কাত করে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে… ‘ইশশশ… সুড়সুড়ি লাগছে তো…’

কান ছেড়ে পীঠের ওপর হাত রেখে আরো ঘন করে টেনে নেয় পৃথার শরীরটাকে নিজের বুকের মধ্যে অর্নব… লোমশ আদুল বুকের মধ্যে মুখ গোঁজে পৃথা… মুখ ঘষে… আহ… কি নিশ্চন্তের পরশ এখানে… মনে মনে ভাবে সে।

পৃথার চুলের মধ্যে মুখ রেখে ফের প্রশ্ন করে অর্নব, ‘কই… বলো… কি ভাবছিলে?’

‘তুমি খারাপ ভাববে না?’ জিভ তুলে আলতো করে ঠেকায় মুখের সামনে লোমের আড়ালে থাকা ছোট্ট বুকের বোঁটাটায়…

এ ভাবে বুকের বোঁটায় ভেজা জিভের ছোঁয়া পড়তে অর্নবের শরীরও সিরসিরিয়ে ওঠে, কিন্তু চুপ করে থাকে সে, কিছু বলে না, পৃথার মাথার মধ্যে মুখ গুঁজে প্রশ্রয়ে হাসি হাসে নিঃশ্বব্দে…

পৃথাকে চুপ করে থাকতে দেখে অর্নব বলে, ‘তোমার কি জিজ্ঞাস্য, সেটা জানি আমি… তুমি ভাবছ যে আমাকে ছুঁতে পারছ, অথচ আমি জীবত না মৃত সেটাই এখন তোমার কাছে পরিষ্কার নয়… তাই তো? অনেকদিন ধরেই প্রশ্নটা তোমার মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে… ঠিক কি না?’

অর্নবের কথা শুনে বুকের মধ্যেটা মুচড়ে ওঠে পৃথার… এটাই তার জিজ্ঞাস্য ঠিকই, কিন্তু সেটা জিজ্ঞাসা করে অর্নবকে হারাতেও যে সে চায় না কোন মতেই… তাই তো এত দ্বন্দ তার মনের মাঝে… প্রশ্নটা বার বার উঠে এলেও পরিস্থিতির চাপে হয়তো চাপা পড়ে গিয়েছে… সেও আর চাপ দেয় নি প্রশ্নটাকে নিয়ে… আগে যখন অর্নবকে পায় নি, তখন তার বিচরণ ছিল কল্পনার জগতে, নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছে তার প্রেমিককে… কিন্তু আজ সেই মানুষটার বুকের মধ্যে ঢুকে থাকার সময় কেমন যেন মাঝে মধ্যেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় তার… তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত ভাবতেই কেমন দিশেহারা ঠেকে সব কিছু… কি করে বোঝাবে তার প্রেমাষ্পদকে মনের মধ্যে গড়ে ওঠা অনুভূতিটাকে?

‘আমি তোমার মতই একেবারে জীবত একটা মানুষ, তিতির…’ পৃথার মুখটাকে হাতের আঁজলায় নিজের পানে তুলে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে অর্নব… ‘তুমি যাকে ছুঁয়ে আছো… সে মৃত কোন ব্যক্তি নয়… রক্তমাংসে গড়া একটা মানুষ… কিন্তু আজ আমি কায়াহীন… শরীরটা পড়ে রয়েছে… কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পায় না… কিন্তু তোমার মত কেউ যদি এসে ছোঁয়… আমার স্পর্শ পেতে পারে সে… বুঝতে পারে আমার অস্তিত্ব…’ বলে চুপ করে অর্নব।

‘কি…কিন্ত… কি করে?’ ধরা গলায় প্রশ্ন করে পৃথা… চোখে ভাসে অপরিসীম জিজ্ঞাসা… ‘তবে যে সেদিন প্রণবদা বললো তোমার গাড়ি…’ আর শেষ করতে পারে না সে বাক্যটাকে… গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠে…

‘কি বলেছিল প্রণব… আমার গাড়িটা জ্বলে গিয়েছিল… তাই তো? আমাকে তারপর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি… আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিনের পর থেকে… তাই না?’ নিচু গলায় বলে অর্নব।

ইতিবাচক মাথা নাড়ে পৃথা… প্রণবদার কাছ থেকে কথাটা শোনার পর তার মনের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ভুলতে পারে নি, এখনও…

পৃথার মাথাটাকে ফের নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নব… চিবুকটা তার মাথার চুলে রেখে বলে… ‘হুম… ঠিকই বলেছিল প্রণব… ঠিক সেটাই হয়েছিল… কিন্তু সবটা বলে নি সেদিন, অবস্য ওরও দোষ নেই, আমারই বারণ ছিল, না বলার… তাই সে আর তোমার কাছে খুলে ধরে নি বাকিটা’…

‘কি হয়েছিল?’ নিজের গালটা বুকের ওপরে রেখে প্রশ্ন করে পৃথা… ডান হাতের বেড় থাকে অর্নবের শরীরটাকে জড়িয়ে… আঙুলগুলো খেলা করে বেড়ায় তার প্রেমিকের পীঠের ওপরে।

‘সব ঠিকঠাকই চলছিল সেদিন… বেশ ভালোই যাচ্ছিলাম বর্ধমানের দিকে… মোটামুটি দূর্গাপুর হাইওয়ের রাস্তাও খারাপ নয়, আর আমি গাড়িটা বেশ ভালোই চালাই…’ পৃথার মাথায় চিবুক রেখে বলে চলে অর্নব… ‘তখন বৃষ্টিটা একটু ধরেও এসেছিল… টিপটিপ করে পরছিল… গাড়ির উন্ডস্ক্রিন সেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে উঠলেও, চালাতে কোন অসুবিধাই হচ্ছিল না আমার…’ বলতে বলতে থামে সে… পৃথা চুপ করে এক মনে শুনে চলে অর্নবের কথা… কথার মাঝে কোন ডিস্টার্ব করে না সে…

‘সেদিন তাড়াহুড়োয় বেরুবার সময় বোধহয় টয়লেট করতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই বেশ অনেকক্ষন ধরেই টয়লেট পাচ্ছিল, কিন্তু ওই ফাঁকা হাইওয়েতে কোথায় টয়লেট পাই… ভাবতে ভাবতে হটাৎ মাথায় এলো, এই বৃষ্টির মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টয়লেট করে নিলেই হলো, কে আর কি বলবে? তাই যেমন ভাবা তেমন কাজ, গাড়িটাকে লেন থেকে সরিয়ে এনে দাঁড় করিয়ে দৌড়োই কাছেই থাকা একটা গাছ লক্ষ্য করে… নিশ্চিন্তে হাল্কা হই ওটার আড়ালে… তারপর ফিরেই আসছিলাম… কিন্তু গাড়ির প্রায় কয়’এক গজ বাকি থাকতেই আমার মনে হল যেন পুরো পৃথিবীটাই ঝলসে উঠল… আর সেই সাথে একটা কান ফাটানো আওয়াজ… আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশের অগভীর খালটায়… প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারালাম… আর কিচ্ছু জানি না…’ ফের থামে অর্নব… বুকের মধ্যে থাকা পৃথা অনুভব করে সেদিনের কথা বলতে বলতে উত্তেজনায় তার হৃদপিন্ডটা কি অস্বাভাবিক ভাবে দ্রুত চলছে… যেন বুকের মধ্যে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে… আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে নিজের মুখটাকে চেপে রাখে প্রেমাষ্পদের বুকের মধ্যে সে।

‘যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখি আমি তখনও পড়ে আছি ওই খালটার জলের মধ্যেই… মাথার মধ্যেটায় তখনও যেন ঝিমঝিম করছে আমার… সারা গায়ে হাতে কি অসহ্য যন্ত্রনা… অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম আমি… প্রায় টলতে টলতে ঢাল বেয়ে এগোতে থাকলাম রাস্তার দিকে… গাড়িটা যেখানে দাঁড় করিয়েছিলাম…

কিন্তু একি!… গাড়িটা পুড়ে একেবারে ছারখার হয়ে গিয়েছে… একটা কালো অঙ্গারে পরিণত হয়েছে সেটা… আর সেটাকে ঘিরে শ’খানেক লোকের জটলা… সবাই মিলে কি যেন খুজছে আতিপাতি করে… চতুর্দিকে চিৎকার চ্যাঁচামিচি… ওদের চিৎকারটা যেন আমার মাথার মধ্যে তখন হাতুড়ি পেটার মত দুমদুম করে লাগছে… কোন রকমে দুহাত কানের ওপরে চেপে আরো এগিয়ে গেলাম গাড়িটার কাছটায় টলতে টলতে… কিন্তু যাবো কি, কাউকে ঠেলে এগোতেই পারছি না, এতো ভীড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে… তাও চেষ্টা করলাম সামনের লোকটাকে সরিয়ে এগোবার… কিন্তু লোকটা কি অদ্ভুতভাবে আমাকে সরিয়ে দিল… এমন ভাবে পেছন না ফিরেই হাতের ধাক্কা দিল, যেন আমাকে দেখতেই পেল না সে… আমি ঘুরে আর একদিক দিয়ে গাড়ির কাছে পৌছবার চেষ্টা করলাম… কিন্তু সেখানেও সেই একই ব্যাপার… কেউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না… আমি যে ওদের পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করছি সেটাই যেন কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না… আমি যে আদৌ ওখানে আছি সেটাই যেন কেউ বুঝতে চাইছে না অদ্ভুতভাবে… কি মনে হলো আমার তখন, সামনের যে লোকটার কাঁধের ওপরে হাতটা রেখেছিলাম, সেই হাতের দিকে নজর করলাম… আর যা দেখলাম, তাতে প্রায় হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম আমি… একি! আমার হাত কই… আমি তো সামনের লোকটাকে পুরোটাই দেখতে পাচ্ছি… তার দেহের কোন অংশই তো আমার হাতের আড়ালে চলে যায় নি! তবে!… তাড়াতাড়ি লোকটার কাঁধ থেকে হাতটাকে তুলে নিজের সামনে মেলে ধরলাম… না! নেই তো! কিচ্ছু নেই! সব ফাঁকা! সব… সব ফাঁকা… একেবারে স্বচ্ছ… হাতটার মধ্যে দিয়ে আরপার সব কিছু দেখা যাচ্ছে… কেমন শিউরে উঠলাম একটা অচেনা ভয়ে… ভয় জিনিসটা কোনদিনই আমার মধ্যে ছিল না… কিন্তু সেদিন ভয় কি, তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম যেন… থরথর করে আমার সারা শরীরটা কাঁপছিল… একি দেখছি আমি?… না, না… দেখছি না, দেখছি না… আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না… সব একেবারে ট্রান্সপারেন্ট… স্বচ্ছ… যত দেখছিলাম, তত যেন আরো ভয় চেপে ধরছিল আমাকে… এ আমার কি হলো? অনেক ইতস্তত করে ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে নিজের শরীরটার দিকে তাকালাম আমি… আঁৎকে উঠলাম… আমি নেই!… আমি আছি অথচ আমি নেই… সেদিন যে আমার কি অবস্থা হয়েছিল আজ মুখের কথায় সবটা হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না আমি… তখন নিজেকে সত্যিই মৃত মনে হচ্ছিল আমার… মনে হচ্ছিল যে তবে কি মৃত্যুর পর মানুষের এই অবস্থাই হয়? কিন্তু পরক্ষনেই ভেবেছি, তাই বা কি করে হবে? মরেই যদি যাই, তাহলে আমি লোকগুলোকে ছুঁলাম কি করে?… হ্যা, তাই তো… তাড়াতাড়ি নিজেরই একটা হাত আর একটা হাত দিয়ে চেপে ধরলাম… এই তো… ধরতে পারছি তো আমার হাতটাকে… দুহাত বোলাতে লাগলাম নিজের শরীরের ওপরে… ঠিক যেমন ছিল তেমনই রয়েছে… মুখ, গাল, চোখ, গলা, বুক, কোমর, পা… হাতের মধ্যে স্পর্শ পাচ্ছি ছেঁড়া ছেঁড়া জামা কাপড়গুলোও… সব… সব… তাহলে কেন আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না!… শুধু কি আমিই আমাকে দেখতে পাচ্ছি না? নাকি কেউই দেখতে পাচ্ছে না আমায়? ভয়ে গলা শুকিয়ে উঠল আমার… এক পা দু পা করে পিছিয়ে এলাম আমি ভীড়টার থেকে… যেন ওখানে থাকলে সবাই দেখে ফেলবে আমায়… হাসবে আমার দিকে তাকিয়ে… কিম্বা ভয় পাবে হয়তো আমার একটা বিভৎস মুর্তি দেখে… জামা কাপড় পরা অথচ কায়াহীন মানুষটাকে দেখে… জানি না… ভাবতেও পারছিলাম না কি করবো আমি তখন… হটাৎ মাথায় খেলে গেলো কথাটা… তাড়াতাড়ি করে ফের ঢাল বেয়ে নেমে যেতে লাগলাম ওই খালটার দিকে… নামতে গিয়ে পা হড়কে গেলো আমার… হুমড়ি খেয়ে পড়লাম বৃষ্টি ভেজা কাদা মাটির ওপরে… প্রায় গড়িয়ে, হিঁচড়ে নেমে গেলাম ওপর থেকে একেবারে নীচের দিকে… খালে ধারে গিয়ে… হয়তো ছড়ে কেটে গেলো কত জায়গায়তেই আমার… কিন্তু সেই দিকে তখন কোন হুস নেই… যা খুশি হয় হয়ে যাক… হামা দিয়ে এগিয়ে গেলাম জলটা লক্ষ্য করে… হুমড়ি খেয়ে পড়লাম জলের ঠিক ওপরটায়… নিজেকে দেখবো বলে… কিন্তু না… আমি নেই… জলের ওপরে আমার কোন ছায়া নেই… জলের ওপরে তখন মেঘলা আকাশের প্রতিচ্ছবি… কিন্তু আমার কোন প্রতিচ্ছবির চিহ্ন পর্যন্ত নেই সেই নোংরা খালের জলটার ওপরে… ওই জলের মধ্যেই চিৎ হয়ে শুয়ে রইলাম আমি… নির্নিমেশ তাকিয়ে রইলাম খোলা মেঘলা আকাশটার দিকে… মাথার মধ্যে তখন আর কিচ্ছু নেই… সব শূণ্য… খালি… আমার শরীরের সমস্ত অনুভূতিগুলো যেন লোপ পেয়ে গিয়েছে… মনে হচ্ছিল চতুর্দিকে শুধু মাত্র শশানের নিরাবতা… রাস্তার ধারে আমার গাড়ীটা ঘিরে ধরে এত হইচই… তখন কিছুই আর আমার কানে এসে পৌছাচ্ছে না… খোলা আকাশের নিচে শুয়ে তখন শুধু একজনকেই মনে পড়ছিল বার বার… লিন্ডা… শুধু লিন্ডার মুখটা ভেসে উঠছিল আমার চোখের সামনে।

লিন্ডার কথা মনে আসতেই যেন সমস্ত আড়গল ভেঙে গেলো… উঠে বসে মুখ ঢেকে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলাম আমি… বারে বারে ভগবানের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, কেন ভগবান, কেন? কেন তুমি আমার থেকে লিন্ডাকে কেড়ে নিলে… তা না হলে তো আজ আমাকে এই ইন্ডিয়াতে ফিরেও আসতে হতো না, আর এই দুর্বিশহ অবস্থার মধ্যেও পড়তে হতো না… ইচ্ছা করছিল চিৎকার করে লিন্ডার নাম ধরে ডাকি… কিন্তু সেখানেও তো ভয়… ওরা… ওই ওরা, যারা আমার গাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তারা যদি শুনতে পায়… শুনতে পাবে অথচ দেখতে পাবে না… ছেঁড়া জামা কাপড় পরা শরীরহীন লোকটাকে দেখে… হয়তো ডাইন ভেবে ঢিল ছুড়লো… আমার সেই মুহুর্তের যা অবস্থা, তাতে তাড়াতাড়ি পালাতেও তো পারবো না… নীরবে, নিঃশব্দে কেঁদেছিলাম আমি ওই খালের ধারে বসে, এক নাগাড়ে… সকলের দৃষ্টির আড়ালে…’ বলতে বলতে থামে অর্নব… প্রায় হাঁফাতে থাকে সে যেন সেদিনের সেই বিভৎস কথার পুণরাবৃত্তি করতে করতে।

পৃথা মুখে কিছু না বলে নিরবে অর্নবের বুকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে উঠে বসে, তারপর ধীরে বিছানার থেকে নেমে গিয়ে টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতলটা তুলে নিয়ে ফিরে আসে বিছানায়… এগিয়ে দেয় অর্নবের পানে… অর্নব উঠে বসে পৃথার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে প্রায় পুরো বোতলের জলটাই খেয়ে শেষ করে দেয়… তারপর পৃথার হাতে বোতলটা ফিরিয়ে দিতে দিতে বলে… ‘থ্যাঙ্কস্‌…’

খালি বোতলটা ফের টেবিলের ওপরে রেখে বিছানায় ফিরে উঠে বসে পৃথা… আন্দাজে হাত বাড়ায় সামনের পানে… হাত রাখে অর্নবের বুকের ওপরে… তারপর ওর শরীরটা ছুঁয়ে থেকে আরো ঘন হয়ে এসে বসে সে… ‘তারপর?’ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে… আজ চায় ও অর্নব সব বলুক, বলে হাল্কা হোক… কারণ সে বুঝতে পারে একটা ভারী পাথর অর্নবের বুকের মধ্যে চেপে বসে রয়েছে, সেটা তাকে না বলা অবধি হাল্কা হতে পারবে না…

খানিক চুপ করে থাকে অর্নব… তারপর ধীর গলায় বলতে শুরু করে… ‘কতক্ষন ওই ভাবে ওই খানে শুয়ে ছিলাম জানি না… কখন দিনের আলো ঢলে গিয়ে রাত নেবে এসেছিলো, তারও খেয়াল করি নি… একটু একটু করে নিজের মধ্যে ফিরে এলাম আমি… উঠে বসলাম মাটির ওপরে… কেউ কোথাও নেই… ফাঁকা প্রান্তরের মধ্যে আমি একা… ছায়াহীন কায়াহীন এক অদ্ভুত জীব… দ্য ইনভিজিবিল ম্যান… সিনেমায় সে চরিত্র কত মজাদার… কত রোমান্টিক… কত সুবিধার হয় তো… কিন্তু বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সে অভিজ্ঞতা যে কি ভয়ঙ্কর… ভাষায় প্রকাশ করা যায় না… আরো খানিক চুপ করেই বসে রইলাম ওখানটায়… ভাবতে লাগলাম, কি করব এবার আমি… গাড়ির মধ্যেই আমার পার্স আর মোবাইলটা ফেলে এসেছিলাম, তাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সমস্ত দিক দিয়ে… সাথে এক কানাকড়িও নেই… কপর্দক শূণ্য যাকে বলে…

কি মনে হতে গায়ে পরা জামা কাপড় গুলো খুলে ছেড়ে রাখলাম… তারপর ফের নিজের দিকে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলাম নিজেকে… নাহ!… কিচ্ছু নেই… সম্পূর্ণ অদৃশ্য একটা মানুষ… চুপ করে বসে ভাবতে লাগলাম, কি করবো এবার…

হটাৎ দেখি একটা নেড়ি কুকুর আমার দিকে এগিয়ে আসছে… প্রথমটায় ও আমাকে খেয়াল করে নি বোধহয়… কিন্তু একটু কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়ায়… নাঁক তুলে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে খানিক… আর তারপরই শুরু করে দেয় চিলচিৎকার… এক নাগাড়ে ঘেউ ঘেউ করে চেঁচাতে থাকে আমাকে লক্ষ্য করে… দূর থেকেই… আমি প্রমাদ গুনলাম… এই ভাবে যদি কুকুরটা চিৎকার করতে থাকে তাহলে বিপদে পড়বো আমি… মাটির থেকে একটা ঢেলা তুলে ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে… একেবারে অব্যর্থ টিপ… গিয়ে লাগলো সজোরে কুকুরটার পায়ে… কেঁউ কেঁউ করে দৌড়ে পালিয়ে গেল ওটা… আমিও আর না বসে থেকে উঠে দাঁড়ালাম… হাঁটা দিলাম কলকাতার দিকে… শুধু যাবার সময় একবার করুন চোখে আমার পরে থাকা পোড়া গাড়িটার দিকে নজর দিলাম।’

পুরানো কথা বলতে বলতে চুপ করে অর্নব, পৃথা তাকে না দেখতে পেলেও উপলব্ধি করে এই মুহুর্তে সেই ভয়ানক স্মৃতিগুলো মনে পড়তে ভিষন ভাবে অস্বস্থির মধ্যে রয়েছে অর্নব… হাত তুলে রাখে তার বুকের ওপরে… মৃদু স্বরে বলে, ‘থাক সোনা… আর বলতে হবে না… আমি বুঝেছি… আর আমার কোন জিজ্ঞাস্য নেই…’

‘না তিতির… আমাকে শেষ করতে দাও… অনেক দিন পর আমার বুকের ভেতরে জমে থাকা না বলতে পারা কথাগুলো বলে আমাকে একটু হাল্কা হতে দাও… ভিষন ভাবে দরকার সেটার…’ উত্তর দেয় অর্নব।

আর বাধা দেয় না পৃথা… অর্নবের কাছে আরো ঘন হয়ে সরে বসে… মাথাটাকে হেলাতে গিয়ে অনুভব করে তার চওড়া বুকের পেশিটাকে… অক্লেশে নিজের মাথা হেলিয়ে রেখে বলে, ‘বেশ… তুমি বলো, আমি শুনবো… তোমার সব কথা শুনবো আমি… তুমি বলো…’

‘ঠিক কোন জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছিল বলতে পারবো না, কিন্তু সেখান থেকে সম্পূর্ণটা পায়ে হেঁটে যখন কলকাতায় পৌছলাম, তখন পরের দিন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে… খিদে, তেষ্টায় ক্লান্ত আমি… একটা কাউকে ফোন করবো, তারও কোন উপায় নেই… সত্যি বলতে আরামে বড় হয়েছি, তাই ওই ভাবে না খেয়ে দেয়ে, এক নাগাড়ে হেঁটে ক্লান্ত বিদ্ধস্থ সম্পূর্ণ ভাবে… কোন রকমে প্রণবের বাড়ি পৌছে দরজায় বেল টিপলাম… আর বেল টিপে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, ওর দোরগোড়াতেই বসে পড়লাম হতদ্যম হয়ে… যখন দেখলাম দরজা খুলে প্রণব আমাকে না দেখতে পেয়ে ফের দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে, ওর নাম ধরে বাধ্য হয়ে ডেকে উঠলাম।

প্রথমটায় ও বিশ্বাসই করতে চাইছিল না… অনেক কষ্টে ওকে সমস্ত ঘটনাটা বুঝিয়ে বললাম… ও আমাকে তাড়াতাড়ি ধরে নিয়ে গেল ওর ফ্ল্যাটের ভেতরে… ওর আর ওর স্ত্রীর একান্ত শুশ্রষায় একটু একটু করে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম… তাও প্রায় ছিলাম ওদের বাড়ি অনেকদিন… শেষে যখন মোটামুটি বেশ ভালো হয়ে উঠেছি, তখন ওকে বলেই আমি আবার ফিরে এলাম আমার এই ফ্ল্যাটে… সেদিন থেকেই আমি এই ভাবেই ভূতের মত রয়েছি… একা… কায়াহীন…

প্রণবকে আমিই বলেছিলাম যে সবাইকে বলতে যে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছি… আসলে আমি চাইনি কারুর সামনে এসে দাঁড়াতে… এই ভাবেই সবার আড়ালে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’ চুপ করে অর্নব… বড় বড় নিঃশ্বাস পড়ে তার… পৃথার ছুয়ে থাকা গালটা ওঠা পরা করে শ্বাস নেবার তালে তাল মিলিয়ে।

‘তাহলে ফ্ল্যাট রেন্টএ কেন দিতে চাইলে তুমি?’ মৃদু স্বরে প্রশ্ন করে পৃথা… মুখটাকে অর্নবের বুকের মধ্যে রেখে।

হাত তুলে পৃথার মাথার ওপরে রাখে অর্নব, ‘ভালো প্রশ্ন করেছ… তা না হলে তোমায় কি করে পেতাম সোনা?’

‘কিন্তু সে তো পরে, আমি তো এসেছি অনেক পরে, তার আগেও তো শুনেছি আরো খান দুয়েক ফ্যামেলি এসেছিল এখানে থাকতে… কিন্তু থাকতে পারে নি… কেন?’ বুকের লোম গুলো আঙুলে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হুম… আসলে কি জানো… একা থাকতে থাকতে না কেমন হয়ে পড়েছিলাম আমি… যদিও প্রণব, বৌদি, ওরা প্রায় আসতো আমার কাছে, প্রণব তো প্রতিদিন এসে আমায় খাবার দিয়ে যেতো… কিন্তু তাও… কতক্ষন একটা মানুষ চার দেওয়ালের মধ্যে নির্বান্ধ পড়ে থাকতে পারে? তুমিই বলো… তাই প্রণবের সাথে পরামর্শ করেই ঠিক করেছিলাম ফ্ল্যাটটা রেন্টএ দেবো… আমি না হয় রাতের দিকে কোন রকমে সোফার ওপরে ঘুমিয়ে থাকবো… কেউ তো আর দেখতে পাবে না আমায়… আর সকাল বেলা ঠিক ম্যানেজ করে নেবো… সিগারেট খাই না, মদও কতদিন খাই নি তার ঠিক নেই… তার ইচ্ছাও চলে গিয়েছে…’ বলে অর্নব।

‘তারপর…’ গুনগুনায় পৃথা।

‘তারপর আর কি… এলো একটা ফ্যামিলি… আগে থেকেই আমাদের ঠিক করা ছিল এমন কাউকে দেবো ভাড়া যারা সারাদিন ফ্ল্যাটে থাকবে না… তাতে আমিও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। সেই মতই একটা ফ্যামিলি এল… স্বামী আর স্ত্রী… দিন দুয়েক ছিল বেশ… তারপর দেখি, ও বাবা, ওরা আসলে স্বামী স্ত্রীই নয়… এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে মেয়েছেলের কারবার ফাঁদার জন্য… বাইরে থেকে মেয়েরা আসতো, আসতো আরো খদ্দের, আর তাদের চলতো লীলাখেলা, এই ঘরের মধ্যে…’ বলতে থাকে অর্নব।

‘আর তুমি ওদের ওই সব দেখতে?’ ঝট করে অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে তাকায় পৃথা… সরু হয়ে ওঠে চোখ…

‘ওই দেখ… মেয়ের কি হিংসা… তা আমার সামনে যদি কেউ ওই সব করে তা দেখবো না?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব।

‘না… দেখবে না…’ চোয়াল শক্ত করে বলে ওঠে পৃথা, তারপরই হাত দিয়ে দুমদুম করে অর্নবের বুকের ওপরে কিল মারতে থাকে… ‘কেন? কেন দেখছে ওদের ওই সব করতে… ইশ… এমনি বলেছি একটা অসভ্য লোক… ছি ছি… কত মেয়েকে ন্যাংটো দেখেছে… একদম কথা বলবে না আমার সাথে…’ বলে উঠে নেবে যেতে যায় বিছানা ছেড়ে…

অর্নব তাড়াতাড়ি খপ করে পৃথার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়… ‘দূর পাগলী… দেখেছি সেটাও যেমন সত্যি, তেমনি ওদের তো তাড়িয়েও দিয়েছি… তার বেলায়?’

‘সত্যিই তুমি তাড়িয়ে দিয়েছিলে?’ একটু শান্ত হয় পৃথার অভিমান।

‘হ্যা তো… এমন ভূতের ভয় দেখিয়েছি যে বাপ বলে দুই দিনেই পালিয়ে গিয়েছে ফ্ল্যাট ছেড়ে…’ হা হা করে হাসতে হাসতে বলে অর্নব।

পরম ভালোবাসায় দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে পৃথা… ‘আমার সোনাটা তো… তাই…’ চুমু খায় দাড়ি ভরা গালের ওপরে… পরক্ষনেই কি মনে হতে ফের প্রশ্ন করে, ‘তুমি ওই সব মেয়েদের একেবারে ন্যাংটো দেখেছো?’

‘রাগ করবে না?’ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

‘করবই তো! তাও বলো… বলো না… তুমি ওদের সবাইকে একেবারে ন্যাংটো দেখেছো?’ আদুরে সুর মেখে যায় পৃথার গলার স্বরে।

‘হুম… দেখেছি… সব দেখেছি ওদের…’ উত্তর আসে অর্নবের।

‘ওরা আমার থেকেও ভালো ছিল?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা… ‘আমার যা আছে, তার থেকেও ওদেরটা ভালো ছিল?’

পৃথাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয় অর্নব, নীচু হয়ে ওর গালের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, ‘ইশ… আমার তিতির সব থেকে সুন্দরী… সব থেকে মিষ্টি… আমার তিতিরের যা আছে, তা কারুর নেই… কারুর না…’

‘সত্যিই?’ প্রশ্ন করে পৃথা… গলার স্বরে ভালোবাসা ঝরে পড়ে…

‘হুম… একেবারে সত্যি…’ পৃথার কপালে চুমু খেয়ে বলে অর্নব…

‘আই লাভ ইয়ু সোনা… লাভ ইয়ু…’ হাঁটুতে ভর রেখে উঠে বসে দুহাত দিয়ে অর্নবের গলাটাকে জড়িয়ে ধরে বলে পৃথা… অর্নবের ঘাড়ের ওপরে ঠোট রাখে গুঁজে… নিজের নরম বুকটাকে ঠেলে চেপে ধরে অর্নবের ছাতির ওপরে… একেবারে পিশে দেয় নিজের বুকটাকে সেখানে… ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমায় প্রথম যখন দেখলে… ভালো লেগেছিল?’

‘তোমায় দেখে মহিত হয়ে গিয়েছিলাম… একটা মেয়ে এত সুন্দর, এত নিষ্পাপ, এত প্রাণবন্ত হতে পারে, জানতাম না… লিন্ডাও তোমার মত এত প্রাণবন্ত কিন্তু ছিল না…’ বলে অর্নব, হাত রাখে পৃথার পীঠের ওপরে।

‘সত্যিই বলছো… আমাকে দেখেই তোমার ভালো লেগেছিলো?’ ফের যেন নিজেকেই সংশা দেবার প্রয়াশ করে পৃথা।

‘হ্যা সোনা… প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়… তাই তো সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমাকে…’ আরো ঘন করে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে অর্নব।

হটাৎ করে ভিষন লজ্জা করতে থাকে পৃথার… মুখটাকে আরো ভালো করে অর্নবের ঘাড়ের মধ্যে গুঁজে দিয়ে বলে, ‘ইশশশশ… আমাকেও তো ন্যাংটো দেখেছো!’

‘শুধু কি তাই? নিজে নিজে কত দুষ্টুমী করতে সেটাও তো দেখতাম…’ হাসে অর্নব।

‘ইশশশশ মা… তুমি আমাকে মাস্টার্বেট করতেও দেখতে? ইশশশশ… তুমি একটা ভিষন বাজে লোক…’ গাঢ় গলায় বলে পৃথা… বলে, কিন্তু ওর ভেতরটা যেন ভালোবাসায় ভরে উঠতে থাকে… ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘দেখে তোমার ইচ্ছা করতো না আমায় আদর করার?’

‘করতো তো… ভিষন করতো…’ উত্তর দেয় অর্নব।

‘করো নি কেন? কেন আসো নি আরো আগে আমার কাছে… আদরে আদরে ভাসিয়ে দাও নি কেন আমায়?’ মুখ ঘসে পৃথা অর্নবের ঘাড়ে… দুহাত দিয়ে খামচে ধরে অর্নবের পীঠটাকে…

‘তুমি ভয় পেতে, তখন কাছে এলে, তাই তো দূর থেকেই তোমায় দেখতাম… আর…’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব…

‘আর?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা… ‘আর কি?’

‘আর কিছু না…’ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় অর্নব।

‘আমি জানি…’ ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা…

‘জানো? কি জানো?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে অর্নব।

‘আমাকে মাস্টার্বেট করতে দেখে তুমিও নিজেকে ঠিক রাখতে পারতে না… তুমিও মাস্টার্বেট করতে… ঠিক কি না? বলো?’ পৃথার দুটো চোখ চকচক করে ওঠে দুষ্টুমীতে।

‘ক…কে বললো সেটা?’ এবার অপ্রস্তুত হবার পালা অর্নবের।

‘আমি জানি মশাই… তোমার সামনে একটা মেয়ে মাস্টার্বেট করবে, আর তুমি কি সাধু পুরুষ? দেখেও চুপ করে তাকিয়ে থাকবে? হুম? আমি সব বুঝি… বুঝেছ?’ পৃথার ঠোঁটে দুষ্টুমীর হাসি মেখে থাকে।

‘পাজি মেয়ে… সব বোঝে…’ হাসতে হাসতে পৃথার পীঠের ওপর থেকে হাতটা নামিয়ে ওর নরম পাছার দাবনাদুটোকে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে চটকে দেয় একবার… পরক্ষনেই হাতটাকে সরিয়ে নেয় সেখান থেকে…

‘উমমম… টেপো না… চটকাও না ওখানটায়…’ অর্নবের ঘাড়ের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা।

‘কথায় কথায় অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে… সে খেয়াল আছে… এখন এই সব করলে হবে? এক্ষুনি হয়তো কাজল এসে যাবে… নাও, চলো ওঠো…’ বলে তাড়া দেয় অর্নব।

‘না… আগে ওখানটায় টেপো… চটকে দাও ভালো করে একবার, তারপর ছাড়বো তোমায়…’ নিজেকে অর্নবের কাছে আরো ঘন করে এগিয়ে ধরে বলে পৃথা।

‘কিন্তু…’ ফের ইতস্থত করে অর্নব…

ধৈর্য হারায় পৃথা… ঝট করে অর্নবের গলা ছেড়ে পেছনে নিয়ে গিয়ে অর্নবের হাতদুটোকে ধরে, তারপর নিজের গোল গোল পাছার দাবনার ওপরে চেপে ধরে বলে, ‘এই নাও… তোমার হাতের মধ্যে তুলে দিলাম… এবার টিপে টিপে চটকাও এই দুটোকে… আরো নরম করে দাও চটকে…’

হাতের মধ্যে ধরা নরম তাল দুটোর স্পর্শে নিজের পৌরষে কাঁপন ধরে অর্নবের… আলতো করে চাপ দেয় পাছার নরম দাবনায়… ফের হাত তুলে অর্নবকে শক্ত করে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে পৃথা, ‘এত আলতো করে নয়… আরো জোরে… চেপে ধরো…’

এবার আর বলতে হয় না অর্নবকে… হাতের মধ্যে তুলে দেওয়া পৃথার ওই নরম নিতম্বের তালদুটোকে শক্ত করে খামচে ধরে… চটকে ধরে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে… আর সেই সাথে খুজে নেয় পৃথার ঠোটটাকে… নিজের ঠোট চেপে ধরে সেখানে… চুষতে থাকে পৃথার পাতলা ঠোঁটের ওপরেরটাকে নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে… ‘উমমমম…মমমম…’ অর্নবের মুখের মধ্যে গুনগুনায় পৃথা পরম আবেশে… সে জানে, আজ আর কিছুই হবে না শরীর খারাপের কারনে, তবুও… যতটা আদর পাওয়া যায়, সেটাই নিংড়ে বের করে নিতে চায় অর্নবের থেকে… ভরে নিতে চায় তার শরীরের মধ্যে…



৩১।।

‘অফিসে গিয়ে সুশান্তের কি ভাবে মুখোমুখি যে হবো… কি বিচ্ছিরি একটা কান্ড ঘটে গেলো কাল।। কিন্তু আমার কি দোষ… সে যদি নিজের থেকেই মন গড়া কিছু স্বপ্ন দেখে থাকে… আমি কি করতে পারি… ভাজ্ঞিস অর্নব ছিল… তা নয় তো অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারতো… যাকে সে এতটা বিশ্বাস করেছিল… বন্ধু ভেবেছিল… তার থেকে এই ব্যবহার পাবে… আশা করেনি কখনো… তবে… তবে সম্পূর্ন দোষ কি সুশান্তকে দেওয়া যায়? না বোধহয়… ঠিক যায় না… এখনও আমাদের সমাজ সেই জায়গায় পৌছাতে পারেনি… পারে নি একটা মেয়ের সহজ আচরণকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারাকে… এটা অবস্য আমাদের এই আর্থসামাজিক ব্যবস্থাই দায়ী… দায়ী এখন আমাদের সমাজে ছেলেদের স্কুল আর মেয়েদের স্কুল আলাদা থাকার ফলে… আমি নিজে কনভেন্টে পড়েছি, তাই আমার ওপজিট জেন্ডারের সাথে মিশতে কোনো অসুবিধা হয় না, সহজ ভাবেই মানিয়ে নিতে পারি… কিন্তু, হয়তো সুশান্ত সেই সুযোগ পায় নি, তাই আমার সাবলীলতাকে, সহমর্মীকতাটাকে অন্য মানে করে বসেছিল… দুম করে শুধু শুধু অপরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা উচিত নয়… দেখি… অফিসে গিয়ে সুশান্তর সাথে খোলাখুলিই কথা বলবো… কে জানে আবার, আমার সাথে কথা আদৌ বলবে কি না… অর্নব যে রকম ধরে পিটিয়েছে… ইশ… তখন আমি খেয়াল করি নি… কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেশ ভালোই মেরেছে… জানি তো… আমার সোনাটা… ওর তিতিরের গায়ে কেউ হাত তুললে কি করবে… ইশ… বাপীকে কবে যে জানাতে পারবো অর্নবের কথা… মনে হচ্ছে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে জানিয়ে দিই আমার সোনাটার কথাটা… আচ্ছা… বাপী শুনলে কি বলবে? মা তো জানি শুনেই ভিমরী খাবে… ইশ… মায়ের মুখটা কেমন হবে শুনে ভাবলেই হাসি পাচ্ছে… হয়তো শুনে বিছানা নেবে মা… নাঃ… আমি কিছু বলবো না বাবা মাকে… ও সব বাপীর ওপরেই ছেড়ে দেবো… আমার বাপী ঠিক করে দেবে সব কিছু… মাই কিং…’ গাড়ির জানলার বাইরে মুখ রেখে চুপ করে ভাবতে ভাবতে চলে পৃথা।

গাড়িটা হটাৎই ব্যবস্থা হয়েছে… বরং আরো ভালো করে বলা ভালো এটা অর্নবের হুকুম, পৃথাকে আর এই ভাবে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলা ফেরা নাকি করা চলবে না। ঘটনাটা ঘটেছিল সকালেই। অর্নবের কাছে আদর খাচ্ছিল পৃথা তাদের কথার শেষে… অবস্য অর্নব যে খুব একটা অ্যাকটিভ ছিল তা নয়, বরং নিজের পিরিয়েড হওয়া সত্বেও, ইন্টারেস্টটা ছিল পৃথারই বেশি… ইন্টারকোর্স করা যাবে না জেনেও এতটুকুও ছাড়তে চায়নি অর্নবকে নিজের শরীরের থেকে দূরে… যতটা আদর খাওয়া সম্ভব সেটা আদায় করে নিচ্ছিল ভোরের আলো গায়ে মেখে… কিন্তু বাধ সাধে কাজলের আবির্ভাবে… প্রায় বাধ্য হয়েই অর্নবকে ছেড়ে দরজা খুলতে উঠে যায় বেজার মুখে… যেতে যেতে কানে আসে অর্নবের খুকখুক হাসি… তাতে আরো মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল যেন তার… দরজাটা খুলেই কড়া চোখে তাকিয়েছিল কাজলের দিকে…

‘আজ একটু সকাল সকাল এলুম… বুজলে…’ ঘরে ঢুকেই বলে কাজল।

আরো যেন খিঁচড়ে যায় মেজাজটা কাজলের কথায়… তার থেকে বাবা কেউ ছিল না, সেটাই ভালো ছিল, প্রণবদা ঘাড়ের ওপরে একটা জ্বালা গছিয়ে দিলো আমার, মনে মনে গজগজ করে পৃথা… ‘তা হটাৎ করে তাড়াতাড়ি আসতে কে বলেছিল? আমি?’ কোমরে হাত রেখে প্রশ্ন করে পৃথা… শেষ না হওয়া আদরটা যেন তখন তাকে শান্তি দিচ্ছে না…

‘ও মা… তুমি রাগ কচ্চো… আমি তো ভাবলুম তুমি খুশি হবে… যা বাওয়া…’ পৃথার মেজাজ দেখে অবাক হয় কাজল।

সাথে সাথে নিজেকে সংযত করে পৃথা… ছি ছি… এই ভাবে সে কাজলের ওপর রাগ দেখাচ্ছে কেন? সত্যিই তো, ওর কি দোষ… বরং ওর জন্যই তো বেচারী তাড়াতাড়ি এসেছে… ও জানবে কি করে একটা বদমাইশ লোক তাকে আদর করছিল?… মনে মনে ভাবে সে… ‘না, না, রাগ কোথায় করলাম, এসে তো ভালই করেছিস… আমাকেও তো আজ অফিস যেতে হবে… কাল যায় নি… কত কাজ পড়ে আছে…’ বলে পৃথা কাজলকে।

‘তোমার না কাল জ্বর হয়েচিলো? আজ আপিস যাবে, মানে?’ ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে কাজল পৃথাকে… ভাব দেখে পৃথার মনে হয় বাড়ির কত্রী ও নয়, কাজলই।

‘আমার কি মুখ দেখে অফিস পয়সা দেয়? জ্বর হয়েছে বলে বাড়ি বসে থাকলে চলবে? হু?’ বাথরুমের দিকে ফিরে যেতে যেতে উত্তর দেয় পৃথা।

‘অ… বাব্বা… সত্যিই বাবা… মেয়েটার সলিল খারাপ, তাও আপিস যেতে হবে… এই আপিসের লোকগুলোর না একটুও মন নেই, জানো… এত খাটায় কেউ…’ বলতে বলতে খেয়াল করে যাকে উদ্দেশ্য করে সে বলে চলেছে, সেই দিদিমনি বাথরুমের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে, তার কথা আদৌ শুনেছি কি শোনে নি বুঝতে পারে না সে… তাই আর অপেক্ষা না করে কিচেনে ঢুকে কাজে লেগে পড়ে।

অর্নবও বারন করেছিল তাকে আজ অফিস যেতে, বুঝিয়েছিল আজকের দিনটা বাদ দিতে, কিন্তু ওই বা কি করে, ওর’ও কি ইচ্ছা করছিলো নাকি অর্নবকে ছেড়ে অফিসের কচকচানির মধ্যে ঢুকতে, কিন্তু ও জানে, যতই সে ন্যাশানালাইজড ব্যাঙ্কএ চাকরী করুক না কেন, লোকে হয়তো ভাবে যে সরকারী ব্যাঙ্ক মানেই সেখানে লোকে শুধু শুধু সময় কাটায় আর মাসের শেষে টাকা গুনে বাড়ি নিয়ে আসে, কিন্তু বাস্তবে যে কি ভিষন চাপের মধ্যে থাকতে হয় তা পৃথা চাকরী জয়েন করার পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে… সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি হাঁফ ফেলার ফুরসৎ থাকে না এক একদিন… কতদিন হয়েছে, কাস্টমারের চাপে লাঞ্চ পর্যন্ত স্কিপ করতে হয়েছে নির্দিধায়… ম্যানেজারের ঘরের সিসি টিভি ক্যামেরার চোখ সারাক্ষন তাদের ওপরে তাকিয়ে রয়েছে… এতটুকু গল্প করা দূর অস্ত, নিজের মোবাইলের মেসেজ চেক করবে, তারও সুযোগ হয়নি কতদিন… তাই অনেক কষ্টে অর্নবকে বুঝিয়েছে সে… শেষে তাকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছে অর্নব যে প্রতি দু-ঘন্টা অন্তর সে ফোন করে জানাবে যে কেমন আছে… অর্নবের ছেলেমানুষি দেখে মনে মনে হেসেছে… নাঃ… শুধু হাসেই নি সে… খুশিতে মনটা ভরে গিয়েছিল… মা এই রকম ছেলেমানুষি করে, তার প্রতিটা খেয়াল রাখে, সেটা যেন খুবই স্বাভাবিক… সেখানে কোন অস্বাভাবিকত্ব নেই, কিন্তু এই অজানা, অচেনা শহরে তাকে এই ভাবে যত্নে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখার লোক রয়েছে, সেটা ভাবতেই যেন প্রজাপতির মত হাওয়ায় ডানা মেলতে ইচ্ছা করে… ভেসে বেড়াতে ইচ্ছা করে ছোট্ট ডানায় ভর মেলে… আহহহ… এযে কি পরম পাওয়া, যে না পেয়েছে সে এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারবে না… এই ভাবে বিরক্ত হতে সে হাজার সহস্রবার রাজি… রাজি এই ভাবে শাসনের মধ্যে থাকতে… নিজের সব কিছু উজার করে তুলে দিতে এই লোকটার হাতের মধ্যে।

সাতটার মধ্যেই কাজ সেরে চলে গিয়েছিল কাজল, আর সেও অর্নবের তত্বাবধানে গিজারের গরম জল মিশিয়ে, ছদ্ম রাগ দেখাতে দেখাতে স্নান সেরে তৈরী হয়েছিল অফিসের জন্য… হ্যাঙ্গার থেকে সালওয়ার কামিজ নামিয়ে তৈরী হচ্ছিল সে, আর তার খাবার নিয়ে পেছন পেছন ঘুরছিল অর্নব, থেকে থেকে খাইয়ে দিচ্ছিল তাকে… নিজেকে কেমন রানীর মত লাগছিল আজ তার… ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা আনমনে… গাড়ির সিটে মাথাটা হেলিয়ে ভাবতে থাকে সে।

হাতে নেওয়া সালওয়ার কামিজটা পছন্দ হয় নি অর্নবের… বলেছিল, ‘এটা কেন পরছ? এটা তো কাচা নয়? এখন জ্বরের সময় কাচা পোষাক পরাই তো ভালো…’ অবাক হয়েছিল পৃথা… কোনটা তার পরা আর কোনটা নয়, সেটাও খেয়াল রেখেছে মানুষটা? যদি সত্যিই দেখতে পেতো লোকটাকে চোখে, তাহলে ওর চোখের মধ্যে চোখ রেখে দেখতো সে, কত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে তার ওই চোখ জোড়ায়… ভালো লেগেছিল তার ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ করেনি মুখে… বলেছিল… ‘আচ্ছা, তুমি কি আমার সব জানো?’

অবাক গলায় প্রশ্ন করেছিল অর্নব, ‘কেন? তোমার আবার না জানা কি আছে আমার?’

‘দূর বোকা… আমার শরীর খারাপ হয়েছে জানো না? আবার কাচা একটা জামা ভাঙবো নাকি? এটাই পরে চালিয়ে দিই… সেই তো কাচতেই হবে এগুলো… তখন না হয় অন্য পরা যাবে’খন…’ হাসতে হাসতে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল সে।

‘শরীর খারাপ হওয়ার সাথে পোষাকের কি রিলেশন?’ জিজ্ঞাসা করেছিল তার প্রিয়তম।

‘হ্যা, মশাই… রিলেশন আছে বৈকি… শরীর খারাপ হলে আর নতুন কিছু ভাঙিনা তখন… পরা ড্রেস পরেই চালিয়ে দিই… বুঝলে বুদ্ধুরাম…’ উত্তর দিয়েছিল পৃথা।

‘এটা মানতে পারলাম না আমি… এ আবার হয় নাকি? পিরিয়েড হলে আবার কেউ পুরোনা না কাচা ড্রেস পরে নাকি আবার? এ সব যত কুসংস্কার…’ বলেছিল অর্নব… বলার সময় ভুরু কুঁচকেছিল কি না কে জানে?

‘হয়তো তাই… কুসংস্কারই হবে, কিন্তু কি করবো সোনা… বরাবর এটাই দেখে এসেছি যে… মা কে ও তো দেখছি এটাই করতে, তাই নতুন করে আর সংস্কার ভাঙার কথা মনে আসে নি কখনও…’ বলার ফাঁকে ততক্ষনে প্যান্টি পরে ব্রায়ের স্ট্র্যাপে হাত গলিয়ে দিয়েছে সে… ‘একটু লাগিয়ে দাও তো স্ট্র্যাপটা…’ ব্রায়ের কাপটা নিজের সুগোল বুকের ওপরে চেপে ধরে কাঁধের ওপর দিয়ে ঘাড় তুলে বলেছিল পৃথা… ঘাড়ের ওপরে গরম নিঃশ্বাসের অনুভূতিতে সিরসির করে উঠেছিল শরীরটা তার… অক্লেশে হেলিয়ে দিয়েছিল দেহটাকে পেছনদিকে, অর্নবের চওড়া ছাতির ওপরে… ঘন আলিঙ্গনে টেনে নিয়েছিল তাকে অর্নব… জড়িয়ে ধরেছিল পেছন থেকে… প্যান্টি পরিহিত নরম বর্তুল নিতম্বের ওপরে তখন ইষৎ স্ফিত হয়ে ওঠা অর্নবের পৌরষের ছোয়া… আপনা থেকেই চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পৃথার… আবেশে… পুরুষালী কর্কশ হাতের ছোয়া নগ্ন তলপেটের, প্যান্টির ইলাস্টিক ব্যান্ডটার ওপরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে দিয়েছিল… ‘আহহহহ… প্লিজ অর্নব… এরকম করলে অফিস যাবো কি করে?’ গুনগুনিয়ে উঠেছিল সে তার ইষৎ ফাঁক হয়ে যাওয়া ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে… ‘এমন ভাবে আদর করলে যে আর অফিস যেতে ইচ্ছা করবে না সোনা…’ ফিসফিসিয়ে উঠেছিল আদরে গলে যেতে যেতে… তার মনে হচ্ছিল যেন সমস্ত শরীরটা একটু একটু করে শিথিল হয়ে যাচ্ছে… অবস হয়ে পড়ছিল হাতগুলো… বুঝতে পারছিল বুকের ওপরে ধরে রাখা ব্রা সমেত হাতটা এক্ষুনি নেমে যাবে হয়তো তার বুকটাকে অর্নবের হাতের জন্য ছেড়ে দিয়ে… ‘প্লিজ… সোনা… এমন কোরো না এখন… প্লিজ…’ মুখ বলেছিল, কিন্তু মন চেয়েছিল আরো, আরো আদর… ভেসে যেতে চেয়েছিল সে আদরের সমুদ্রে… কানে এসেছিল অর্নবের গাঢ় কন্ঠস্বর… ‘তোমাকে এই ভাবে দেখে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না যে…’ দুটো তপ্ত ঠোটের স্পর্শ এসে লেগেছিল তার নগ্ন ঘাড়ের ওপরে… তলপেটের ওপরে ঘুরে বেড়ানো হাতটা আরো উঠে এসেছিল ওপর পানে… সুগোল স্তনদুটোর তলায় খেলা করে বেড়াচ্ছিল সে হাতের পাঞ্জাদুটো… ‘মমমম… আহহহহ… প্লিজ… এখন না… পরে… প্লিজ…’ গুঙিয়ে উঠেছিল পৃথা সম্ভাব্য আদর পাবার প্রবল আকাঙ্খায়… অনুভব করেছিল হাতের পাঞ্জাদুটো তার ধরে রাখা ব্রায়ের কাপের তলা দিয়ে বেয়ে উঠে আসছে আরো ওপর দিকে… তার নরম স্তনের দিকে… নিজের হাতের চাপ আলগা করে জায়গা করে দিয়েছিল অর্নবের হাতকে… চোখ বন্ধ করে আরো এলিয়ে দিয়েছিল শরীরটাকে পেছন পানে… বুঝতে পেরেছিল তার হাঁটু তার সাথে সহযোগীতা করছে না… কতক্ষন তার পক্ষে এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়ে সে জানে না… সে ভিজে উঠছিল… ভিষন দ্রুত… তার প্যান্টির মধ্যে থাকা স্যানিটারী ন্যাপকিনটা ভরে যাচ্ছিল যত না শারীরিয় দূষিত রক্তে, তার অধিক বেশি দেহের কামঘন রসের আধিক্যে… নাঃ… আর নয়… এবার পাগলটাকে থামাতেই হবে… তা না হলে আর অফিস যেতে পারবে না সে… প্রায় জোর করেই নিজের মনকে বোঝায় সে… ঘুরে দাঁড়িয়েছিল অর্নবের মুখোমুখি… মুচকি হেসে বলেছিল, ‘পাগল একটা… এখন এই রকম দুষ্টুমী করলে হবে? হু? আমাকে যেতে দেবে না?’

মুখে কোন উত্তর দেয়নি অর্নব… ঘাড় কাত করে মুখটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে চেপে ধরেছিল নিজের তপ্ত ঠোট জোড়া পৃথার পাতলা ঠোটের ওপরে… মুখের মধ্যে জিভটা পুরে দিয়েছিল সে… খুঁজে নিয়েছিল প্রিয়ার জিভটাকে… খুজে পেতে খেলা করে বেড়াতে শুরু করেছিল জিভদুটো একে অপরে সাথে… পৃথার প্যান্টি ঢাকা নরম বর্তুল পাছার দাবনাদুটোকে দুই হাতের তেলোয় খামচে ধরেছিল প্রায়… তুলতুলে নরম সুগোল দাবনাদুটো নিষ্পেশিত হচ্ছিল অর্নবের পুরুষালী কড়া হাতের তালুর মধ্যে… সেই ভাবে ধরেই পৃথার শরীরটাকে টেনে চেপে ধরেছিল সে নিজের দৃঢ় হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গের ওপরে… দুটো মসৃণ উরুর মাঝে প্রায় সেঁদিয়ে গিয়েছিল সেই শক্ত হয়ে এগিয়ে বাড়িয়ে থাকা অর্নবের পৌরষটা… ‘উমমমম…’ অর্নবের মুখের মধ্যে গুঙিয়ে উঠেছিল পৃথা… নির্দিধায় নিজের থেকেই ঠেসে এগিয়ে দিয়েছিল আপন জঙ্ঘাটাকে প্রেমিকের কোলের দিকে… হাত তুলে জড়িয়ে ধরেছিল প্রিয় মানুষটাকে প্রগাঢ় আলিঙ্গনে… চোখ বন্ধ করে নিজেকে সমর্পিত করেছিল প্রিয়তমের ছাতির পরে… ঘর্ষন খাচ্ছিল লোমশ ছাতির ওপরে ব্রা খসে পড়া বুক দুটো… ‘নাহহহ… আহহহ… এবার ছাড়ো প্লিজ… আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না এরপরে আর… প্লিজ সোনা… আর নআআআআহহহ…’ ঠোটের ওপরে থেকে নিজের ঠোটটা ছাড়িয়ে নিয়ে কোনরকমে অনুনয় করে উঠেছিল পৃথা… মন তখন দূরন্ত গতিতে আরো মিলে যেতে চাইছিল তার প্রিয়তমের দেহের সাথে… কিন্তু বাস্তবিক সেটা সম্ভব নয় সে জানতো… একে তার শরীরের বাধা, তার ওপরে অফিসের তাড়া… শেষে প্রায় বেরসিকের মতই জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে সরিয়ে নিয়েছিল অর্নবের থেকে তফাতে… আলমারীর গায়ে হেলান দিয়ে প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে না দেখা প্রেমিকের পানে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠেছিল, ‘ডাকাত একটা… সব লুঠ করে নেবার তাল…’ বলতে বলতেই অনুভব করে উষ্ণ নিঃশ্বাস অর্নবের, নিজের মুখের ওপরে… ‘এই না… আর না… লক্ষ্মী সোনা… আর তো দুটো দিন… তারপর তুমি যেমন খুশি তেমনি আদর কোরো তোমার তিতিরকে… তখন আর কোন বাধা থাকবে না… প্লিজ সোনা… আজকে ছেড়ে দাও…’ কাতর কন্ঠে বলে উঠেছিল সে… বলেছিল ঠিকই মুখে, কিন্ত হাত বাড়িয়ে ফের আলিঙ্গনের বেঁধে নিয়েছিল তার প্রিয়তমকে… নিজের নরম বুকটাকে চেপে ধরেছিল অর্নবের পুরষালী লোমশ বুকের ওপরে… ‘আমাকে অফিস যেতে দেবে না সোনা?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করেছিল পৃথা… প্রশ্ন করলেও, নিজের ঠোটটাকে এগিয়ে দিয়েছিল শূণ্যপানে… অর্নবের অবস্থান বুঝে… আর তখনই বাইরের দরজায় অনাহুতের মত বেলের আওয়াজ কানে আসে… টিং টং… টিং টং…

একরাশ বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে গিয়েছিল পৃথার… কাজল তো নিজের কাজ করে চলে গিয়েছে… তবে আবার কে? প্রশ্ন বহুল চোখে তাকিয়েছিল নিরাকার অর্নবের পানে… তারপর তাড়াতাড়ি হাউসকোটটা হ্যাঙ্গার থেকে টেনে নিয়ে গায়ে পড়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়েছিল দরজা খুলতে।

আই হোলে চোখ রেখে এক অপরিচিত অল্প বয়সি যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল পৃথা… দেখে ইতঃস্থত করেছিল খানিক, তারপর মনে পড়ে গিয়েছিল যে সে একা নয়, তার সাথে অর্নবও রয়েছে… তাই নির্দিধায় দরজা খুলে মেলে ধরেছিল সে… ‘কাকে চাই?’ গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করেছিল আগুন্তুকের দিকে তাকিয়ে।

‘মিস মুখার্জি…’ ইতস্থত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করেছিল আগুন্তক।

‘আমি… কি চাই?’ ফের প্রশ্ন করেছিল পৃথা।

‘আজ্ঞে, আমি ইসমাইল, আমাকে সাহেব গাড়ি দিয়ে পাঠালেন…’ উত্তর এসেছিল আগুন্তুকের থেকে।

‘সাহেব গাড়ি দিয়ে পাঠালেন মানে? কোন গাড়ি? কার গাড়ি? কোন সাহেব পাঠিয়েছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না…’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘না… মানে কর্মকার স্যর গাড়ি পাঠিয়েছেন… আপনার কাছে…’ ফের ইতস্থত উত্তর এসেছিল ছেলেটির কাছ থেকে।

আরো কিছু হয়তো প্রশ্ন করত পৃথা, কিন্তু তার আগেই ভেতরের ঘর থেকে অর্নবের গলা ভেসে এসেছিল, ‘ওকে বলো নীচে ওয়েট করতে…’

অর্নবের গলার স্বরে পৃথা একবার ঘাড় ফিরিয়ে পেছন পানে ঘরের দিকে তাকিয়ে নিয়ে, কি ভেবে আগুন্তুকের উদ্দেশ্যে সে বলে উঠেছিল, ‘আচ্ছা, তুমি নীচে ওয়েট করো…’

ছেলেটিও আর অপেক্ষা করে নি, তরতর করে নেমে গিয়েছিল সিড়ি বেয়ে… পৃথা দরজা বন্ধ করার আগে একবার নজর বুলিয়ে নিয়েছিল পাশের ফ্ল্যাটের দিকে… দেখে মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়েছিল সে, ‘নাঃ, আজ আর দরজা খুলে দেখছে না… নিশ্চয় অন্য কাজে ব্যস্ত আছে… তা না হলে এতক্ষনে দরজা খুলে মুখটা উঁকি মারতোই…’ ভাবতে ভাবতে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল সে।

‘তোমার গাড়ি এসে গিয়েছে… তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও…’ প্রায় ঘাড়ের কাছে অর্নবের গলা পেয়ে ফিরে দাঁড়ায়।

‘এই দাঁড়াও… দাঁড়াও… আমার গাড়ি মানে? এ সব আবার কি?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করেছিল পৃথা।

‘তোমার গাড়ি মানে তোমার গাড়ি…’ হাসতে হাসতে উত্তর এসেছিল অর্নবের কাছ থেকে।

ঘরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে গায়ের থেকে হাউসকোটটা খুলে ফেলতে শুরু করেছিল সে… সাথে প্রশ্ন করেছিল, ‘আরে ব্যাপারটা তো খুলে বলবে? হটাৎ আমার জন্য প্রণবদা আবার গাড়ি পাঠালো কেন? আমার আবার কবে থেকে গাড়ির প্রয়োজন হলো?’ কথা শেষে ততক্ষনে সে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল… তাদের খানিক আগের আদরের ঠেলায় হাত থেকে খসে পড়ে থাকা ব্রাটা মাটির থেকে তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করে দিয়েছিল ফের।

এবার আর দুষ্টুমী করে নি অর্নব… পেছন থেকে পৃথার মসৃণ পীঠের ওপরে ব্রায়ের হুকটা লাগিয়ে দিতে দিতে উত্তর দিয়েছিল, ‘আমার তিতিরের শরীর খারাপ, আর সে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অফিস যাবে? আর আমি ঘরে বসে সেটা দেখবো?’

ব্রায়ের হুকটা লাগানো হলে ফিরে দাড়িয়েছিল সে, ‘এ বাবা, এটা ঠিক নয়… আমার জন্য প্রণবদা অফিসের গাড়ি পাঠিয়ে দেবে… ছি ছি… এটা যেন কেমন…’ বিব্রত মুখে বলে উঠেছিল পৃথা।

‘প্রণবদা কি নিজের গাড়ি পাঠিয়েছে?’ চোখের সামনে শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরিহিত পৃথার তম্বী শরীরটা দেখতে দেখতে কয়’একপা এগিয়ে এসেছিল অর্নব… সেটা অনুভব করে তাড়াতাড়ি মুচকি হেসে হাত তুলে তাকে আটকে বলে উঠেছিল পৃথা, ‘এই… আর দুষ্টুমী নয় কিন্তু…’

‘তোমাকে কি অসম্ভব সেক্সি দেখতে লাগছে, সেটা তুমি জানো?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করেছিল অর্নব।

‘বদমাইশ ডাকাত একটা…’ খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিল পৃথা অর্নবের কথায়… মনে মনে ভিষন খুশি হয়েছিল সে… তাড়াতাড়ি করে নিজের বুকের ওপরে হাত চাপা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল অর্নবের নাগাল থেকে… বিছানার ওপরে পড়ে থাকা কুর্তিটা তুলে গলিয়ে নিয়েছিল গলার থেকে… ‘পাজি, অসভ্য বুড়ো একটা…’ হাসতে হাসতে বলে উঠেছিল পৃথা পরণের পোষাকটাকে ভালো করে নিজের শরীরের ঢাকতে ঢাকতে।

‘কোই… বললে না তো… প্রণবদা হটাৎ কেন আমার জন্য গাড়ি পাঠালো? এই ভাবে অন্য লোকের গাড়ি ব্যবহার করতে কিন্তু আমার একদম ভালো লাগে না… আর তাছাড়া আমাকে তো সেই পাবলিক ট্রান্সপোর্টেই যাতায়াত করতে হবে বলো… সেখানে একদিন দু-দিন এই ভাবে গাড়ি চড়ে লাভ কি?’ বিছানায় বসে পা’টাকে লেগিংসের মধ্যে গলিয়ে দিয়ে বলে উঠেছিল পৃথা।

‘একদিন দুই-দিনএর জন্য কে বললো তোমায়?’ অর্নবের প্রশ্ন ভেসে এসেছিল বিছানার ওই ধার থেকে।

বিছানার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে লেগিংসটাকে কোমরের কাছে টেনে ঠিক করতে করতে প্রশ্ন করেছিল, ‘সে আবার কি? আমি কি সারা জীবনই প্রণবদার অফিসের গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াবো?’

হাল্কা হাসির আওয়াজ কানে আসতে মুখ তুলে তাকিয়েছিল পৃথা… ‘প্রথমত হ্যা… তুমি এবার থেকে গাড়িতেই যাতায়াত করবে… আর দ্বিতীয়তঃ গাড়িটা আমার… বুঝেছ? তাই তুমি চড়বে না তো কে চড়বে? হু?’ উত্তর দিয়েছিল অর্নব।

‘তোমার গাড়ি?’ একটু অবাকই হয়েছিল পৃথা।

‘কেন? আমার গাড়ি থাকতে নেই?’ ফিরিয়ে প্রশ্ন করেছিল অর্নব।

‘না… তা বলছি না…’ আমতা আমতা করেছিল পৃথা।

‘বলছো না… কিন্তু মনের মধ্যে থেকে দ্বিধাটাও তো যাচ্ছে না…’ বলেছিল অর্নব।

‘না… মানে…’ তাও ইতস্থত করেছিল পৃথা।

‘আরে বাবা, প্রণবের অফিস মানে তো আমারও অফিস, নাকি? আর আমার তো আরো একটা গাড়ি ছিল, আগের গাড়িটা পুড়ে যাওয়া সত্তেও, এই গাড়িটা ওর কাছেই রাখা থাকতো, আমার বেরোনোর প্রয়োজন হলে প্রণব নিয়ে চলে আসতো, এখন থেকে তুমি এটায় চড়বে… এখানে এতো সংশয়ের কি, সেটাই তো বুঝতে পারছি না… নিজের বরের গাড়ি কি অন্য লোকে চড়বে?’ এবার একটু বিরক্তির সুরেই বলেছিল অর্নব।

অর্নবের কথায় থমকে গিয়েছিল পৃথা, তারপর ফিক করে হেসে ফেলেছিল… বিছানা ঘুরে এগিয়ে গিয়েছিল অর্নবের গলার স্বর লক্ষ্য করে… দুহাত বাড়িয়ে অর্নবের গলাটা জড়িয়ে ধরে বলে উঠেছিল… ‘ইশ… এই লোকটাই আগে তো আমাকে নিজের বলে মানতেই চাইছিল না… আর এখন দেখো… বিয়ের আগেই বউকে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে…’

পৃথার কথায় দুজনেই এক সাথে হেসে উঠেছিল…

গাড়ির বন্ধ কাঁচের এপার থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওঠে পৃথা, সকালের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে।

8

৩২।।

‘এখন কি রকম আছিস পৃথা?’ অফিসে ঢোকার মুখেই অভিজিতদার সাথে দেখা… অভিজিত হালদার, ওদের ব্রাঞ্চএর হেড ক্যাশিয়র… প্রশ্ন শুনে হাসি মুখে তাকায় পৃথা… ‘ভালো আছি অভিজিতদা… ওই একটু ঠান্ডা লেগে জ্বর মত হয়েছিলো আর কি…’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় বায়োম্যাট্রিক অ্যাটেন্ডেন্সএর মেশিনটা দিকে।

আঙুল ছুইয়ে ঘুরে দাড়াতে অপর্নার সাথে মুখোমুখি… অপর্না, সুশান্তের সাথেই মার্কেটিং ডিপার্টেমেন্টএ রয়েছে, ওকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘এই সুশান্ত এসেছে রে অফিসে?’

‘হ্যা, এই খানিক আগেই দেখলাম তো সুশান্তকে… ওই দিকেই আছে বোধহয়… আরে জানিস, কে জানে কি করে ও মুখটুখ একেবারে ফাটিয়ে এসেছে… বেশ ফুলে আছে… তুই তো ছিলিস না কাল, থাকলে হয়তো জানতে পারতিস… তোর সাথে তো ভালো বন্ধুত্ব ওর…’ খবর দেয় অপর্না।

‘হ্যা… সেটাই… দেখি জিজ্ঞাসা করে… তুই জানতে চাস নি?’ তৈরী হয়ে নিতে চায় পৃথা, সুশান্তের মুখোমুখি হবার আগেই।

‘জিজ্ঞাসা করেছিলাম তো… বললো যে কোথায় পড়ে গিয়েছিল… কে জানে বাবা… দেখ অফিসের পর কার পেছনে লাগতে গিয়েছিল, দিয়েছে কেলিয়ে…’ বলেই শরীর দুলিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে, পরক্ষনের সাবধান হয়ে যায়, যতই হোক, অফিস তো… মুখ চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে নিজের কাজে চলে যায় অপর্না। ওর ‘কেলিয়ে দিয়েছে’ কথাটা শুনেই অর্নবের সাথে ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে যেন… তাড়াতাড়ি করে সামলে নেয় নিজেকে… এগিয়ে যায় নিজের টেবিলের দিকে।

টেবিলে দাঁড়িয়ে কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামাতে গিয়ে চোখে পড়ে দূরের কিউবিকিল্‌এর মধ্যে বসে সুশান্ত মাথা নিচু করে কিছু লিখছে… সম্ভবত কোন রিপোর্ট বা ওই ধরনের কিছু হবে… পৃথার খুব ইচ্ছা করে গিয়ে সুশান্তর সামনে দাঁড়ায়… প্রতিদিনকার মত হাই বলে আসে… কিন্তু নিজেকে সংযত করে সে… মনে মনে ভাবে, ‘না… এখন নয়…’ কারণ সে জানে না তাকে দেখে সুশান্তর কি রিঅ্যাকশন হবে… তার থেকে আর একটু সময় নেওয়া উচিত বলে মনে করে পৃথা… চেয়ারে বসে জলের বোতল খুলে গলা ভেজায়।

‘এখন কেমন বোধ করছেন, মিস মুখার্জি?’ ঘাড়ের কাছে ম্যানেজারের গলার আওয়াজে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় পৃথা… ‘এই তো স্যর… এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো… সরি… কাল হটাৎ করে জ্বর এসে যাওয়াতে আসতে পারলাম না…’ সাওয়াল করে পৃথা স্বপক্ষে।

‘না, না, ইটস্‌ ওকে, শরীর খারাপ হলে আসবেন কি করে… আমি রতনের হাত দিয়ে কিছু ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছি, কয়এক’টা ক্লায়েন্টের লোন অ্যাপ্রুভ করে দিয়েছি আমি, সে গুলো একটু দেখে নিয়ে প্রসেসএ ফেলে দিবেন…’ অবাঙালী ম্যানেজার সহায় পৃথাকে বলে আর দাঁড়ান না… এগিয়ে যান নিজের কেবিনের দিকে… সেই দিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিয়ে হাঁফ ছাড়ে পৃথা… ‘যাক… ম্যানেজার খচে যায় নি তার এই রকম ভাবে হটাৎ কামাই করাতে…’ মনে মনে ভাবে সে।

প্রথম হাফটা কোথা দিয়ে উড়ে গেলো, সেটার আর খেয়াল থাকে না পৃথার… একটা পর একটা লোন এগ্রিমেন্ট চেক করে সেটাকে প্রসেসএ ফেলতেই কখন লাঞ্চএর সময় হয়ে গেছে জানতেই পারে নি সে… সম্বিত হয় কাকলির ডাকে… ‘কি রে পৃথা, লাঞ্চ করবি না? নাকি কাজ খাবি আজ?’

হেসে মুখ তুলে তাকায় সহকর্মীনির পানে… ‘না রে, এই তো… তুই কি লাঞ্চ এনেছিস?’

আরো বেশ কয়একজন জুটে যায় তাদের সাথে… এক সাথে বেরিয়ে যায় ব্রাঞ্চ থেকে যেখান থেকে ওরা সাধারণতঃ লাঞ্চ করে থাকে সেই দিকে… অন্য দিন ওদের সাথে সুশান্তও থাকে, কিন্তু আজ সে আর সঙ্গ নেই নি তাদের… দেখতো পায় নি সে… কখন কাজের অজুহাতে বেরিয়ে গিয়েছে অফিস থেকে কে জানে।

সুশান্তের সাথে অবশেষে দেখা হয় পৃথার একেবারে শেষ বেলায়, অফিস ছুটির সময় বেরিয়ে এসে… বিল্ডিংএর পোটিকোর থেকে তখন সবে গাড়িতে উঠতে যাবে, দেখে লিফটের থেকে সুশান্ত বেরিয়ে আসছে… মুখ নীচু করে ড্রাইভার ছেলেটিকে গাড়িটাকে একটু সাইড করে রাখতে বলে সে এগিয়ে যায় সুশান্তের দিকে… একেবারে সামনে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায় সে… ‘তুমি আজ সারাদিন আমাকে এ্যাভোয়েড করে চলছো কেন বলো তো?’ চোখে পড়ে বাঁ চোখের নীচে কালশিটের দাগটা… ঠোটের কোনাতেও খানিকটা কেটে গিয়েছে…

‘নাঃ… কোথায় এ্যাভোয়েড করলাম, কাজ ছিল তাই হয়তো কথা হয় নি… ক্লায়েন্ট ভিজিট ছিল, তাই বেরোতে হয়েছিল…’ না চাইলেও সুশান্তের চোখ ঘুরে যায় পৃথার বুকের ওপর দিয়ে… কামিজের আড়াল থেকে দুটো গোলাকৃত মুঠিভর স্তনের আভাস স্পষ্ট সেখানে… আর সেই সাথে দিব্বি ফুটে রয়েছে কাপড় ভেদ করে স্তনবৃন্তের ইষৎ আভাস… তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়… চোখের নীচের কালশিটের জায়গাটা কেমন টনটন করে ওঠে তার… তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে যায় সে…

খপ করে হাত বাড়িয়ে সুশান্তের সার্টের স্লীভটা ধরে টান দেয় পৃথা… ‘এই ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছ যে?’ প্রায় জোর করেই সুশান্তকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়… ঘাড় তুলে তাকায় তার মুখের দিকে… ‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে…’

পৃথার ওই কটা চোখের মণির মধ্যে কেমন সন্মোহন আছে যেন… মুহুর্তের জন্য সুশান্ত কেমন বিহবল হয়ে পড়ে… বুকের মধ্যেটায় দুলে ওঠে তার… জোর করে নিজের চোখদুটোকে সরিয়ে নেয় পৃথার ওই রকম সন্মোহীনি চোখের নজর থেকে… মুখটাকে অন্য দিকে ফিরিয়ে বলে, ‘আমার সাথে আবার কি কথা… আমি তো…’

সুশান্তের কথা শেষ করতে দেয় না পৃথা… ওই ভাবেই তার সার্টের শ্লিভটা ধরে রাখে হাতে মুঠোয়… টান দিয়ে বলে, ‘এখানে, এই ভাবে পোর্টিকোয় দাঁড়িয়ে কথা হয় না, চলো, ওই দিকটায় যাই…’ বলে শার্টের শ্লিভ ছেড়ে ঘুরে হাঁটতে শুরু করে গাড়ির দিকে।

দু-পা হেঁটেই ঘাড় ফেরায় সে… দেখে সুশান্ত তখনও সেই জায়গাতেই দাড়িয়ে রয়েছে… দেখে ফের তাড়া দেয়, ‘কোই… এসো… ওই দিকটায় যাবো…’ বলে ফিরে আবার হাঁটা লাগায় পৃথা।

অনিচ্ছা সত্তেও আর কথা বাড়ায় না সুশান্ত… ধীর পদক্ষেপে পা বাড়ায় পৃথাকে অনুসরণ করে… যেতে গিয়ে চোখ আটকে যায় সামনে হেঁটে চলা পৃথার দুলদলিয়মান পাছার দাবনা দুটোর ওপরে… বুকটা ধড়াস করে ওঠে তার… দেহের সাথে চেপে বসা গাঢ় রঙের কামিজটা যেন পৃথার পাছার দাবনাদুটোকে আরো বেশি করে প্রস্ফুটিত করে তুলেছে… তার প্রতিটা পদক্ষেপের সাথে পাছার দাবনা দুটো গভীর এক বিভাজিকায় ভাগ হয়ে গিয়ে তলতলে নরম দুটো চর্বির তাল নিজস্ব ছন্দে ছলকে ছলকে উঠছে… কি অপূর্ব তাদের গঠন… সাদা লেগিংসে মোড়া দুটো পুরুষ্টু থাইয়ের সাথে একেবারে সামাঞ্জস্য ভাবে দুটো বর্তুল নিতম্ব… প্যাসেজ ওয়ের এলিডি আলো পড়ে লেগিংস কুর্তির ওপর দিয়েও সুস্পষ্ট প্যান্টি লাইনটা, ওই দুই নরম চর্বির পিন্ডের ওপরে যেন নক্সা কেটে সাজিয়ে তুলেছে।

পৃথা চলতে চলতেই একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নেয় সুশান্তকে… তার নজর যে কোন খানে সেটাও বুঝে যায় ওই এক লহমাতেই… মুখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে ফেলে সে… নাঃ মেন উইল বি অলওয়েজ মেন… মনে মনে ভাবে সে… তারপর খানিক ইচ্ছা করেই আরো একটু নিজের পাছাটা দুলিয়ে হাঁটতে থাকে… হাঁটার তালে তালে ঝটকা দেয় নিজের পাছার দাবনায়… মাথার মধ্যে দুষ্টুমীর পোকাটা কিলবিলিয়ে ওঠে যেন…

একেবারের গাড়ির সামনে এসে ঘুরে দাঁড়ায় পৃথা, ‘নাও… ওঠো… আমরা বরং একটা কফি শপে গিয়ে বসি… কি বলো? একটু নিশ্চিন্তে কথা বলা যাবে…’

‘উঠবো মানে? এ… এটা কার গাড়ি? তোমার?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে সুশান্ত।

‘হুমমমম… বলতে পারো… আমি যখন তোমায় উঠতে বলছি… তখন ধরেই নাও না আমারই গাড়ি… নাও… ওঠো…’ বলে নিজে ঘুরে গাড়ির বাঁদিকের দরজা লক্ষ্য করে এগিয়ে যায়… ইসমাইল ছেলেটি দৌড়ে এগিয়ে এসে পৃথার দিকের দরজা খুলে ধরে… পৃথা ভেতরে ঢুকে ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে ‘থ্যাঙ্কস্‌’ তারপর খেয়াল করে সুশান্ত তখনও অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে এদিকেই… গলা তুলে তার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, ‘কি হোলো, ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, না কি উঠবে?’

সম্বিৎ ফেরে সুশান্তের, ধীর পায়ে এগিয়ে এসে গাড়ির ওপর দিকের দরজা খুলে উঠে বসে ভেতরে… ইসমাইল নিজের সিটে ফিরে গিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ম্যাডাম, কোথায় যাবেন? বাড়ি?’

‘না, এক্ষুনি বাড়ি যাবো না… তুমি বরং এই কাছেই একটা সিসিডি আছে, ওখানেই চলো আগে…’ বলতে বলতে ব্যাগ খুলে মোবাইলটা বের করে নেয় হাতে… ডায়াল প্যাডে নাম্বার টিপে কল লাগায়… অপেক্ষা কর খানিক, তারপর বলে ওঠে… ‘হ্যা… আমি বলছি… আমার ফিরতে একটু দেরী হবে… হ্যা হ্যা… গাড়ি আছে সঙ্গে… চিন্তা করো না… না, না… খুব দেরী হবে না… ওই একটু কাছেই একটা সিসিডি আছে, সেখানেই যাচ্ছি… ফেরার সময় তোমার কিছু আনতে হবে?… আচ্ছা… ঠিক আছে… বাই… রাখছি…’ বলে ফোনটা কেটে ফের নিজের ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে সে।

পুরো ফোনালাপটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে সুশান্ত… ফোনের ওপারের কথা শুনতে না পেলেও, স্বরের খানিকটা কানে এসে পৌছানোর ফলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ওপারের কন্ঠটি কোন পুরুষের… এবং যথেষ্টই ভরাট সে স্বর… মানে কোন পরিণত বয়সের পুরুষই হওয়া সম্ভব… পৃথার কথা শেষ হতে দেখে মুখ ফিরিয়ে বাইরের দিকে তাকায় সে… গাড়ি ততক্ষনে চলতে শুরু করে দিয়েছে… সন্ধ্যের অন্ধকার সরিয়ে রাস্তা আলোকিত হয়ে উঠেছে আশপাশের দোকানের থেকে উপচে পড়া নানা রঙের বৈদ্যুতিক আলোয়…

গাড়ির এসির ঠান্ডা পরিবেশে বসে হাজারটা প্রশ্ন ভীড় করে আসে সুশান্তের মনের মধ্যে… কার গাড়ি?… কার সাথে কথা বললো পৃথা?… কথার ধরণ শুনে মনে হয় ফোনের ওই পারে যে রয়েছে, সে পৃথার খুবই কাছের… তবে কি?… কিন্তু?… পৃথাই বা কি বলতে চায় তাকে? গতকাল সন্ধ্যেবেলায় যে ঘটনা সে ঘটিয়েছে, তারপর সত্যিই বলতে মুখ নেই পৃথার সামনে দাঁড়াবার… পৃথা যদি নিজের থেকে এগিয়ে এসে ওর সাথে কথা বলতো, ওর সাহস হতো না আর কোনদিন পৃথার সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবার… আবার অন্য দিকে দেখতে গেলে গতকাল ওর সাথেও যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার ব্যাখ্যাও কিছুতেই খুঁজে পায় নি সে, সারাটা রাত হাজার ভেবেও… কে তাকে আঘাত করল?… নাঃ… সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে… নিশব্দে মাথা নাড়ে সুশান্ত।

পৃথা কোন কথা বলে না… সেও উল্টোদিকের জানলার ভেতর দিয়ে বাইরের পানে চেয়ে থাকে চুপ করে… নিজেকে গুছিয়ে নিতে চায় কথা শুরুর আগে… সুশান্তকে সামনে দেখে দুম করে বলে ফেলেছে সে ঠিকই, যে সে ওর সাথে কথা বলতে চায়, কিন্ত আসলে কি বলবে সেটাই তো জানা নেই তার… তাই কি ভাবে শুরু করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না… গতকাল সন্ধ্যেবেলায় যেটা ঘটেছে, তারপর অন্য কোন মেয়ে হলে হয়তো আর কোনদিন সুশান্তকে তার চোখে চোখ তুলে তাকানো দূর অস্ত, হয়তো তার পরিধীর মধ্যেই আসতে দিতো না কোনমতেই… কিন্তু সে সেই ধরণের মেয়ে নয়… আবেগপ্রবণতায় সে বাস্তব পরিস্থিতি ভোলে না, সে জানে, আজকে তার পাশে যতই অর্নব থাকুক না কেন, অর্নবের গন্ডীটা সীমিত… তার শারীরিক অক্ষমতায় হুট করে লোক সমাজে বেরিয়ে এসে তাকে সাহায্য করা সম্ভব নয়, তাই সেখানে তার কর্মক্ষেত্রে একটা অস্বস্থিকর পরিস্থিতি তৈরী হয়ে থাকুক, সেটা সে কোন মতেই চায় না… বরং সুশান্তের সাথে ব্যাপারটাকে মিটিয়ে নিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে অটুট রাখতেই হবে..

‘ম্যাডাম… সিসিডি এসে গেছে…’ ইসমাইলের গলার স্বরে সম্বিৎ ফেরে পৃথার… ‘ও, ঠিক আছে, তুমি পার্কিং দেখে গাড়ি রাখো, আমরা একটু আসছি…’ বলে সুশান্তর দিকে ফেরে… ‘চলো… গিয়ে বসি একটু…’

‘হু… চলো…’ ছোট্ট উত্তর দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় সুশান্ত।

ইসমাইল তাড়াতাড়ি ঘুরে এসে পৃথার দিকের দরজা খুলে ধরে, পৃথা নেমে গেলে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ফের ফিরে যায় নিজের সিটের দিকে… গাড়ি চালিয়ে চলে যায় পার্কিং লটের পানে, পৃথা আর সুশান্ত ঢোকে সিসিডির মধ্যে।

সামনের একটা ফাঁকা টেবিল দেখে দুজনে গিয়ে বসে, শপের ছেলেটি এগিয়ে এসে মেনু কার্ড বাড়িয়ে দেয়… পৃথা মেনু কার্ডটা সুশান্তের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘কি খাবে?’

‘যা হোক একটা কিছু বলে দাও না…’ দায়সারা উত্তর দেয় সুশান্ত… রুমাল দিয়ে নিজের চোখের নিচের কালশিটেটাকে আড়াল করে শপের ছেলেটির সামনে… এই ভাবে খুলে রাখতে অস্বস্থি হয় তার।

‘তাও… কিছু তো বলো…’ বলে নিজে ঝুঁকে পড়ে মেনু কার্ডের ওপরে… ভালো করে দেখে নিয়ে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে, ‘আই’ল টেক আ ট্রপিকাল আইসবার্গ…’

ছেলেটি শুনে ঘাড় হেলায়… তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সুশান্তের দিকে তাকায় সে…

সুশান্ত একবার মেনু কার্ডের ওপরে চোখ রেখেই বলে ওঠে, ‘আই’ল হ্যাভ ওয়ান ক্যাপুচিনো… লার্জ…’

‘ওকে স্যর… এনিথিং এলস্‌ ইয়ু ওয়ান্ট টু অর্ডার?’ প্রশ্ন করে ছেলেটি…

মাথা নাড়ে দুজনেই এক সাথে প্রায়… ‘নো নো… দ্যটস্‌ অল…’

ছেলেটি চলে যেতে পৃথা চুপচাপ মেনু কার্ডের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে… সুশান্তও কোন কথা বলে না আগ বাড়িয়ে।

নাঃ… এই ভাবে চলবে না… একটা কিছু বলতেই হবে… শুরুটা আমাকেই করতে হবে বুঝতে পারছি… ভাবে পৃথা মনে মনে… তারপর মুখ তুলে তাকায় সুশান্তের দিকে… সবে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সুশান্তই কথা শুরু করে… ‘সরি… আই অ্যাম রিয়েলি সরি ফর ইয়েস্টার্ডেজস ইন্সিডেন্স…’ বলে চুপ করে।

পৃথা নিজের হাতটা তুলে আলতো করে টেবিলের ওপরে রাখা সুশান্তের হাতের ওপরে রাখে… রেখে মৃদু চাপ দেয় সেই হাতে… ‘ইটস্‌ ওকে… আই আন্ডার্স্ট্যান্ড… ওটা নিয়ে ভেবো না… ওটা আমিও জানি যে হটাৎ করেই আবেগের বশে ঘটে গিয়েছে… আই ক্যান ফিল ইট…’

এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘটনাটা পৃথা দেখবে, সেটা আশা করেনি সুশান্ত… ‘তুমি… তুমি আমাকে খুব খারাপ ভেবেছ… না?’

‘উ… হু… খারাপ?… হ্যা… অস্বীকার করবো না… কালকে তুমি চলে যাবার পর সত্যিই আমি ভিষন ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম… আসলে জানো সুশান্ত… এই শহরে আসার পর থেকে তোমাকে ভিষন ভাবে একজন ভালো বন্ধু বলে মেনে এসেছিলাম… তাই সেখানটায় আঘাত পড়তে, খারাপ তো লাগবেই? তাই না?’

‘এখন আর আমাকে বন্ধু ভাবতে পারছো না… তাই না?’ ধরা গলায় মৃদু স্বরে প্রশ্ন করে সুশান্ত।

‘ভাবছি সুশান্ত… তোমাকে এখনও আমার বন্ধুই ভাবছি… আর ভাবছি বলেই না তোমায় ধরে নিয়ে এলাম…’ সুশান্তের হাতের পীঠে নখ দিয়ে আকিবুকি কাটে পৃথা… ‘আসলে…’

‘আমি আর কক্ষনও এই ধরণের ব্যবহার করবো না কোনদিন… ঠিক…’ পৃথা কথা থামিয়ে বলে ওঠে সুশান্ত… ‘আমিও তোমাকে হারাতে চাই না… হারাতে চাই না তোমার বন্ধুত্ব…’

সুশান্তের হাতটাকে নিজের মুঠোয় ধরে চাপ দেয় পৃথা… ‘থ্যাঙ্কস্‌… আমিও তোমাকে চাই… বন্ধু হিসাবে… আমার পাশে…’

সুশান্তের বুক থেকে একটা যেন বিরাট বোঝা নেবে যায় পৃথার আশ্বাসে… মৃদু হাসি ফুটে ওঠে ঠোটের কোনে… ‘থাকবো পৃথা… তবে আজ থেকে আর তুমি নয়… তুই করে বলতে হবে দুজন দুজনকে… বন্ধুরা কি তুমি করে বলে?’

সুশান্তের কথায় পৃথাও এবার হেসে ফেলে… ‘বেশ তো… তাহলে তুই করে বললেই হয়… যাই বলো… তুইটা কিন্তু আরো আপন শোনায়… তাই না?’

‘আবার বলো?’ শুধরে দেয় সুশান্ত… তাতে দুজনেই হেসে ওঠে এক সাথে।

এর মাঝেই ওদের কফি সার্ভ করে দিয়ে যায় ছেলেটি… দুজনেই খানিক চুপ করে থাকে সেই সময়টায়… তারপর ছেলেটি চলে গেলে সুশান্ত বলে ওঠে, ‘আসলে কি হয়েছে জানিস তো…’ বলতে গিয়ে থমকায় সে।

পৃথা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।

‘না… হটাৎ করে তুই করে বলছি তো… তাই কেমন খট করে লাগলো কানে…’ হেসে বলে সুশান্ত।

পৃথা হাসে, কিন্তু কিছু বলে না উত্তরে।

‘যাক… যেটা বলছিলাম… আসলে কি হয়েছে জানিস তো… এই বাংলা মিডিয়ামে পড়েই এই অবস্থাটা হয়েছে… আগে তো কখনও কোন মেয়ের এতটা সান্নিধ্যে আসিনি… তাই তোর এতটা খোলামেলা ব্যবহার দেখে গুলিয়ে ফেলেছিলাম, কোনটা প্রেম আর কোনটা বন্ধুত্ব… সরি রে… প্লিজ ক্ষমা করে দিস আমায়…’ বলে সুশান্ত… এবার নিসংকোচে পৃথার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় তুলে নিয়ে।

‘আর এতো বার সরি সরি বলতে হবে না… ছাড় তো…’ কাঁছ শ্রাগ করে বলে ওঠে পৃথা।

‘একটা প্রশ্ন করবো… যদি কিছু মনে না করিস…’ ইতস্থত করে সুশান্ত।

‘বন্ধুত্বের মধ্যে আবার কিন্তু কিন্তু হয় নাকি? বল না?’ সহজ গলায় জানতে চায় পৃথা।

‘তুই হটাৎ করে গাড়ি পেলি কোথা থেকে? মানে এটা কার গাড়ি?’ সসঙ্কোচে প্রশ্ন করে সুশান্ত।

ওর প্রশ্নের ধরনে ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা, সে ইতিমধ্যেই অপেক্ষায় ছিল এই প্রশ্নটা আসবে জেনে… তাই শুনে মুখ তুলে তাকায় সুশান্তের দিকে, তারপর, একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘ওটা… ওটা আমার বরের গাড়ি…’

‘বরের…’ কথাটায় হোঁচট খায় যেন সুশান্ত… জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় পৃথার পানে।

‘হুম… বরের… ঠিকই শুনেছো… সরি শুনেছিস…’ নিজের ভুলেই হেসে ফেলে পৃথা।

কিন্তু পৃথার ভুলের ধার দিয়ে যায় না সুশান্ত… ‘কিন্তু…’ ফের প্রশ্ন করে সে।

‘আর কোন কিন্তু নয়… ছাড় এসব কথা… এখন বল তুই কি বাড়ি ফিরবি?’ কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা।

‘হ্যা, বাড়িই ফিরবো… তবে… তার মানে তুই যে বলেছিলিস যে তুই কমিটেড…’ ফের প্রশ্ন করে সুশান্ত… ব্যাপারটা কিছুতেই ওর মাথা থেকে যায় না… মনের মধ্যে আরো অনেক ধরনের প্রশ্ন ভীড় করে থাকে।

নিজের গ্লাসের শেষ আইসক্রীমটুকু খেয়ে চেয়ারের ব্যাকরেস্টএ গা এলিয়ে দেয় পৃথা… ‘হু… ঠিকই শুনেছিস… আমি যার সাথে কমিটেড… তারই গাড়ি এটা… আর সেই আমার বর… আমি তো তোকে আগেই তাই বলে রেখেছিলাম… তুই’ই তো বিশ্বাস করতে চাইছিলিস না…’

‘ওহ!…’ বলে একটু থামে সুশান্ত… তারপর সসঙ্কোচে প্রশ্ন করে, ‘তুই তোর ফ্ল্যাটে কি সেফ? না, মানে বলছিলাম যে…’ কথা বলতে বলতে নিজের ডান হাতটা টেবিলের ওপর থেকে উঠে এসে ছোয় চোখের নীচে পড়া কালশিটেটায়… ব্যথাটা এখনও রয়েছে ওখানটায়… হয়তো সময়ের সাথে দাগ মুছে যাবে ঠিকই… কিন্তু বুকের মধ্যের দাগটা? সেটা কি কখনও মুছবে? সম্পর্কের ডাকটা তুমি থেকে তুইতে বদলে গেলেও… আর কালকের ঘটনাটা? সেটারই বা কি ব্যাখ্যা? কে ছিল ওখানে? পৃথাকি জানে সেটা? নাকি জানে না? সব গুলিয়ে যায় সুশান্তের মাথার মধ্যে… কোন সঠিক উত্তর খুঁজে পায় না সে হাজার ভেবেও… গতকাল থেকে ক্রমাগত সে ভেবেই চলেছে এটাকে নিয়ে, কিন্তু এখন অবধি তার কোন সদুত্তর সে বের করতে পারে নি…

সুশান্তের কথা শেষ করতে দেয় না পৃথা, ফ্ল্যাটের কথা উঠতেই তার মুখের রঙ কেমন যেন বদলে যায়… সেখানে যেন হাজারটা রামধনূ খেলা করতে শুরু করে… উজ্জল হয়ে ওঠে পুরো মুখটা… হাসি মুখে বলে সে… ‘দুশো শতাংশ সেফ… তুই এ নিয়ে কিছু ভাবিস না…’ বলেই তাকায় সুশান্তের কাপের দিকে, ততক্ষনে কথায় কথায় সুশান্তেরও কফি খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই ঝট করে উঠে দাঁড়ায় পৃথা… আর বেশি ওকে এই ব্যাপারটা নিয়ে ময়না তদন্ত করতে দেওয়া উচিত হবে মনে মনে করে না সে… ব্যাগ খুলে টাকা বের করে টেবিলের ওপরে রেখে দিয়ে বলে, ‘নে… আর বসে থাকতে হবে না, এবার চল, যাওয়া যাক… আমাকেও ফিরতে হবে…’ ইচ্ছা করেই প্রসঙ্গের ইতি টানতে চায় সে… নতুন করে আর অপ্রস্তুত হতে রাজি নয় পৃথা।

পৃথাকে টাকা দিতে দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে সে, ‘আরে তুই পেমেন্ট করছিস কেন?’

‘তো? আমি তোকে ডেকে এনেছি, তুই নস… তাই আমি পেমেন্ট করবো, যেদিন তুই আমাকে নিয়ে আসবি সেদিন তুই দিবি… সিম্পল্‌…’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে ওঠে পৃথা।

আর কথা বাড়ায় না সুশান্ত… এতদিনে বুঝে গিয়েছে, এই মেয়ের সাথে তার পেরে ওঠা সাধ্য নয়… তাই হাল ছেড়ে দেয়… ওরা দুজনেই বেরিয়ে আসে সিসিডি থেকে… পৃথা এদিক ওদিক মুখ তুলতেই রাস্তার উল্টো দিক থেকে ইসমাইল চেঁচিয়ে বলে, ‘এই যে ম্যাডাম, এখানে, আপনি দাঁড়ান, আমি গাড়ি ঘুরিয়ে আসছি…’

পৃথা, সুশান্তের সাথে ফুটপাতে এসে দাঁড়ায়… সুশান্ত বলে, ‘আমি বরং এখান থেকে চলে যাবো, তোকে আর আমার সাথে যেতে হবে না, তোর রাস্তাটা তো একেবারে উল্টোদিকে… তুই বরং চলে যা…’

‘ঠিক… আমার পথ তোর উল্টো দিকেই বটে’, অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে পৃথা… যাতে সুশান্তর কানে না পৌছায়, সেই ভাবে…

গাড়িটা ঘুরিয়ে ওর কাছে আসতে সুশান্তই এগিয়ে গিয়ে পৃথার জন্য দরজাটা খুলে ধরে… পৃথা গাড়ির মধ্যে উঠে বসলে, দরজাটা ঠেলে বন্ধ করে দিয়ে জানলা কাছে মুখটা এনে নীচু স্বরে বলে সে, ‘একটা অনুরোধ করবো… রাখবি?’

চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকায় পৃথা সুশান্তের দিকে…

একটু ইতস্থত করে কথাটা বলার আগে, তারপর গলা নামিয়ে বলে সে, ‘মৌসুমীকে গতকালকের ব্যাপারে কিছু বলিস না…’

তাড়াতাড়ি হাত তুলে সুশান্তের হাতটা ধরে নেয় পৃথা… ‘ছি ছি… তুই ভাবলি কি করে যে এসব আমি মৌসুমীকে বলবো… ডোন্ট ওয়োরি… কেউই জানবে না… আই প্রমিস…’

ম্লান হাসে সুশান্ত… ‘থ্যাঙ্কস্‌’… বলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়… ইসমাইল হুস করে গাড়ি চালিয়ে ওর সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়… যতক্ষন গাড়িটা দেখা যায়, সেই দিকেই চুপ করে তাকিয়ে থাকে সে, মনের মধ্যে লক্ষ প্রশ্ন নিয়ে।
 

soukoli

Member
389
58
29
৩৩।।

বেশ ভালোই বৃষ্টি নেমেছে… বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আজ প্রায় সারাটা দিনই অঝোর ধারায় ঝরে চলেছে… এটা নাকি নিম্নচাপের বৃষ্টি, তাই হয়তো বেশ কিছুদিন টানা চলবে… অন্য সময় হলে কি হতো জানে না সে, বাড়ি ফিরতে নিশ্চয়ই খুব অসুবিধায় পড়তে হতো, কিন্তু এখন পৃথা গাড়িতেই ফেরে, তাই বৃষ্টি পড়া নিয়ে আর তার কোন দুশ্চিন্তা হয় না আজকাল।

অফিস থেকে প্রায় উড়তে উড়তে ফিরেছে পৃথা… অফিসেও সারাদিন কাজে মন দিতে পারে নি… আজ সকালেই নিজেকে ভালো করে পরিষ্কার করে স্নান সেরেছিল, মাথায় শ্যাম্পু করেছিল প্রায় দিন চারেক পর… প্রায় রোজই শ্যাম্পু করে চুলে সে, কিন্তু শরীর খারাপের ক’দিন আর মাথায় সাবান লাগায় না, কি করবে, মায়ের বারণ যে… সেই ভাবেই বড় হয়েছে।

আজ সে অফিসে ট্রাউজার পরে গিয়েছিল, গায়ে একটা ট্যাঙ্ক টপ আর তার সাথে পাতলা শাগ চাপিয়ে নিয়েছিল নিজের লোভনীয় বুকদুটোকে লোকচক্ষুর সামনে থেকে আড়াল করার প্রচেষ্টায়… অফিসে তো সবাই তাকে খুব খেঁপাচ্ছিল, ডেটিং আছে বলে, ও শুধু মনে মনে হেসেছে… হুম… ডেটিংই বটে… আজ দীর্ঘ দিন বাদে সে নিজেকে উজাড় করে দেবে তার সব থেকে প্রিয় মানুষটার কাছে… মিশে যাবে ওই কায়াহীন অস্তত্বটার বুকের মধ্যে… যত ভেবেছে ততই ভিজে গিয়েছে সে… ক্ষণে ক্ষণে রসক্ষরণে ভিজে গিয়েছে তার প্যান্টির ওই বিশেষ জায়গাটা… তাই অফিস থেকে বেরুবার আগে ব্যাগের মধ্যে রাখা ভি-ওয়াশ দিয়ে নিজের যোনিটাকে ধুয়ে নিতে ভোলেনি…

আজ কি ভিষন হাল্কা লাগছে নিজেকে পৃথার… আর সেই সাথে পেটের মধ্যে কেমন যেন হাজারটা প্রজাপতি বিনবিন করে উড়ে বেড়াচ্ছে সর্বক্ষন… আজ সে জীবনের প্রথমবার মিলিত হবে, সেটা নয়… কিন্তু আগের আর আজকের মধ্যে বিস্তর ফারাক… প্রথমবারেরটা ছিল অজাচিত, নিছক মজা করার ছলে, আর দ্বিতীয়বারের যেটা ঘটেছিল, সেখানে সেটা এতটাই আকস্মিক, যে ভালো করে উপলব্ধি করার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সমস্ত ব্যাপারটাই… নিছক ভালো লাগাটুকুও তৈরী হওয়ার আগে… তাই আজকে যদি কিছু হয়, সেটা হবে তার জীবনের একটা বৈশিষ্টপূর্ণ ঘটনা… আর সেইটার জন্যই তার অধীর অপেক্ষা… যত সময় গড়িয়েছে, ততই উতলা হয়ে উঠেছে তার মন… বার বার ঘড়ির কাটার দিকে নজর দিয়েছে সে… অপেক্ষা করেছে কখন সে বাড়ি ফিরতে পারবে সেই আশায়… আজ সে ফেরার পথে গাড়ির মধ্যে বসেই মায়ের সাথে যা কথা বলার সেরে নিয়েছে… বাড়ি ফিরে যাতে আর কেউ ডিস্টার্ব করতে পারে তাকে, কোনভাবেই… তারপর সুইচ টিপে বন্ধ করে দিয়েছে মোবাইলটাকে… আজ পৃথিবী একদিকে, আর সে আর দিকে… শুধু তার প্রেমাষ্পদকে সাথে নিয়ে…

অর্নবের সাথে পরিচিত হবার পর সাধারনতঃ আজকাল অফিস থেকে ফিরে বেল টেপে দরজায়, চাবি খুলে ঢোকার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু আজ সেটা করে না, চুপিচুপি চাবি ঘোরায় দরজার ফুটোয়… কিন্তু নাঃ… নিরাশ হয় সে… দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধই রয়েছে, চাবি ঘুরিয়ে খোলার উপায় নেই… প্রথম প্রচেষ্টাটা বিফলে যেতে একটু খারাপ লাগে তার ঠিকই, কিন্তু দমে না, নেলপালিশ পরা সরু আঙুল তুলে চাপ দেয় ফ্ল্যাটের কলিং বেলে আলতো ভাবে… টিং টং… কানে ভেসে আসে দরজার ওপারে বেজে ওঠা দরজার ঘন্টি… আজ এই শব্দটাও যেন তার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভালো লাগার রেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে… কেন জানে না সে, বুকের মধ্যেটায় কেমন ধক ধক করে ওঠে তার… কেন যে অকারণেই কানের লতিটা গরম হয়ে উঠছে আজ দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে… ভাবতেই কেমন লজ্জা ঘিরে ধরে মুখটায়… আরো কি বেশি লাল হয়ে উঠেছে মুখটা? দরজা খোলার অপেক্ষায় দাড়িয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে জুতোটাকে আড়াআড়ি সোজা করে আঁচড় কাটে মেঝেতে…

দরজার পাল্লা খুলে মেলে যায় একপাশে… ধক করে ওঠে পৃথার বুকটা… ঢোক গিলে নেয় ঘরের মধ্যে ঢোকার আগে… অন্য দিনে মাথা সোজা রেখেই সে ঢুকে যেত হয়তো ঘরের মধ্যে, কিন্তু আজ কেন সে কিছুতেই তুলতে পারে না মাথাটা তার? কেন এত লজ্জা লাগছে তার মনের মানুষটার না দেখা চোখে চোখ রাখতে? নাকের পাটাতেও কি লালিমার ছোয়া পড়েছে? সসংকোচে ভাবে পৃথা… দরজার পাশে নিজের পায়ের জুতো খুলে রাখতে রাখতে… তার ওই জায়গাটা আবার ভিজে উঠছে? কি রকম অদ্ভুত অস্বস্থি হয় পৃথার… মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে বুকের মধ্যে ভীড় করে আসা সম্ভাব্য আদরের সম্ভাবনাটাকে… প্রথম যেদিন অর্নবকে পেয়েছিল… সেদিন তো কই নিজের এত লজ্জা লাগে নি… ঘটনার স্রোতে গা ভাসিয়ে খুলে ফেলে দিয়েছিল পরনের পোষাক অবলীলায়… অর্নবের চওড়া লোমশ ছাতিতে চেপে ধরেছিল নিজের নরম মুঠিভর বুকদুটোকে… তখন? তখন স্বাভাবিকই তো লেগেছিল তার নিজের আচার আচরণ… তারপর সেই চান করার মুহুর্তে বাথরুমের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে যখন অর্নবের পৌরষের মুখোমৈথুন করে দিয়েছিল, তখন তো কই, এত লজ্জা মেখে থাকেনি তার আচরণে… তবে আজ কেন বুকের মধ্যে মনে হচ্ছে যেন হাজারটা পায়রা এক সাথে ঝটপট করছে বাইরে মুক্তি পাবার আশায়?

‘তোমার কি শরীরটা খারাপ লাগছে?’ আপন কল্পনায় মজে থাকা পৃথা, ঘাড়ের কাছে অর্নবের গলার স্বরে প্রায় চমকে ওঠে…

‘অ্যাঁ?… কিছু বললে?’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে সে।

‘বলছি, তোমার কি শরীরটা খারাপ? কি ভাবছ বলতো আসার পর থেকে?’ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করে অর্নব।

ফর্সা গালদুটো আরো লাল হয়ে ওঠে পৃথার… সে যে আজ পরম মিলনের আশায় বুক বেঁধেছে… ‘কই? কিছু না তো…’ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় সে… তারপর দ্রুত অর্নবের সামনে থেকে সরে যায়, প্রায় দৌড়িয়েই ঢুকে যায় বাথরুমে… অর্নব অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে পৃথার এই ভাবে পালিয়ে যাওয়ার দিকে… এই ক’দিনের দেখা তার তিতিরের ব্যবহারের সাথে আজকে পৃথাকে যেন মেলাতে অসুবিধা হয় অর্নবের… কি হলো মেয়েটার? মনে মনে ভাবে সে।

বাথরুমে ঢুকে আলোটা জ্বেলে ছিটকিনিটা আটকে দেয় দরজার… সাধারনতঃ অন্য দিন দরজাটা সে ভিজিয়েই দেয় বাথরুমে ঢুকে, লক করার দরকার পড়ে না… কিন্তু আজ বড্ডো লজ্জা করছে দরজা খুলে রাখতে…

বাথরুমের বেসিনের ওপরে রাখা আয়নার মধ্যে দিয়ে নিজের পানে তাকায়… তাকিয়ে থাকে প্রায় কয়’এক সেকেন্ড একই ভাবে নিজের প্রতিকৃতির পানে… তারপর জিভ বের করে ভেঙচায় নিজেকে, আয়নার মধ্যে দিয়ে… হেসে ফেলে আয়নার প্রতিফলনে নিজের মুখের বিকৃত মুখাবয়ব দেখে… হাসতে হাসতেই গায়ের থেকে শাগটা খুলে রডে ঝুলিয়ে রাখে… ট্রাউজারের বোতাম খুলে শরীর থেকে নামিয়ে দেয়… সেটারও জায়গা হয় শাগটার পাশে, রডের ওপরে… হাত তুলে এক টানে পরে থাকা ট্যাঙ্ক টপটাও সরিয়ে দেয় সে দেহের থেকে… তারপর ফের আয়নার মধ্যে দিয়ে নিজের শরীরটার দিকে তাকায়… ফর্সা সুঠাম দেহে স্ট্র্যাপহীন প্যাডেড ব্রা আর ছোট্ট একফালি প্যান্টিতে তার শরীরটা যেন কামনার জ্বলন্ত উদাহরণ… শরীরের নিরাবরণ ত্বকে বাথরুমের বৈদ্যুতিক আলো পিছলিয়ে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে… মনে মনে নিজের ত্বকের চিকণতায় কেমন গর্ব অনুভব করে… মুখ নামিয়ে তাকায় নিজের শরীরের দিকে… ভালো করে দেখতে থাকে ব্রায়ের আড়ালে থাকা উন্নত বুক, নির্মেদ পেট, সুগভীর নাভী, পুরুষ্টু উরু, আর সেই দুই উরুর মাঝে প্যান্টির ত্রিকোণাকৃত সাটিনের কাপড়ে আড়ালে থাকা স্ফিত জঙ্ঘা… উমমম… নিজেই নিজেকে দেখতে দেখতে কেমন কামনামেদুর হয়ে ওঠে সে… ডান হাতটা তুলে বোলায় অর্ধনগ্ন গায়ে… পিচ্ছিল দেহের ওপরে হাতটা অবলীলায় ঘুরে বেড়ায় নরম শরীরের এধার থেকে ওধারে… কোমর থেকে দেহটাকে বেঁকিয়ে ধরে সামান্য… আয়নায় প্রতিফলিত হয় প্যান্টি পরিহিত উত্তল নিতম্বের খানিকটা… প্যান্টি তার সেই সুগোল নিতম্বের সবটাকে ঢেকে উঠতে পারে নি… দাবনার খানিকটা মাত্র ঢেকেই ছেড়ে দিয়েছে বাকি অংশটাকে উন্মক্ত করে… সেই উন্মক্ত অংশটার ফর্সা চামড়ার সাথে প্যান্টির গাঢ় রঙের অদ্ভুত সুন্দর বৈপরিত্য… পৃথা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে বাঁ হাতটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখে নিতম্বের ওপরে… আলতো করে হাত বোলায় সেখানটায়… তারপর হাতের চাপে একটু নাড়া দেয়… দুলে ওঠে নিতম্বের দাবনাটা ওই সামান্য চাপেই… উমমম… ভালো লাগার অভিব্যক্তি বেরিয়ে আসে পৃথার ঠোঁটের ফাঁক গলে…

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাতের আঙুল গলিয়ে দেয় প্যান্টির ব্যান্ডের মধ্যে… এক লহমায় সেটিকে খুলে নামিয়ে দেয় শরীর থেকে… পুরুষ্ট দুই থাইয়ের মাঝে হাল্কা কালো লোমে ঢাকা ফর্সা যোনিদেশ প্রস্ফুটিত হয় আয়নার ভেতর দিয়ে চোখের সম্নুখে… ডান হাতের চেটোটা রাখে… হাত বোলায় নরম যোনিকেশে… সিরসির করে ওঠে নিজের শরীরটা আপনা থেকে… পা দুটোকে সামান্য ফাঁক করে দেয় সে… হাতটাকে নামিয়ে দেয় দুই উরুর সন্ধিস্থলে একেবারে… মুঠোর মধ্যে চলে আসে পুরো যোনিটাই… হাল্কা মুঠোয় রেখে চাপ দেয়… আঙুলে শরীর নিসৃত দেহরস লেগে যায়… পরোয়া করে না… আয়নার মধ্যে দিয়ে তাকায় নিজের জঙ্ঘার দিকে… মনে মনে ভাবে, এই ভাবেই কি মুঠোয় ধরবে অর্নব আজকে এটা? ভাবতেই যেন একটা শিহরণ বয়ে যায় তার সারা শরীর বেয়ে… হাতের লোমে কাঁটা দেয় কেমন… চোখ বন্ধ করে নেয় সে… মনে মনে কল্পনা করার চেষ্টা করে এই মুহুর্তে যেন তার হাত নয়, ওটা অর্নবের হাত… ইশশশশ… চাপা শিৎকার বেরিয়ে আসে তার মুখ থেকে… মুঠো করা হাতের একটা আঙুল তুলে ছোঁয়া দেয় যোনির মুখটায়… আহহহহ… সিরসির করে ওঠে তার শরীরটা ফের… ইশশশ… আরো যেন রস বেরুচ্ছে ওখানটা দিয়ে… অনুভব করে পৃথা… হাতের আঙুলে রসের পরিমান বেড়ে যাওয়া উপলব্ধি করে সে…

হাতটা যোনির ওপর থেকে চট করে সরিয়ে বুকের ওপর থেকে ব্রাটা খুলে ফেলে দেয় পাশে… নিমেশে ব্রা মুক্ত হয়ে যেন চলকে ওঠে দুটো সুগঠিত মুঠিভর বুকের মাংসপিন্ড… মুখ নামিয়ে তাকায় পৃথা নিজের বুকের দিকে… উত্তেজিত হয়ে বুকের বোঁটাগুলো কি রকম উঁচিয়ে রয়েছে… আঙুলের বেড়ে চেপে ধরে ইশৎ লালচে বাদামী রঙের শক্ত হয়ে ওঠা বোঁটাদুটোকে… আলতো টানে টেনে ধরে বুকের থেকে… ইশশশশ… শরীরটা কেমন করে যেন এই ভাবে টান দিতে… মুঠোয় কাঁচিয়ে ধরে দুটো নরম স্তনকেই নিজের দুই হাতের মুঠোয়… চাপ দেয়… চটকায়… শিহরিত হয় শরীর… উমমম… মৃদু শিৎকার করে ওঠে আয়না ভেতর দিয়ে মুঠোয় ধরে রাখা বুকের দিকে তাকিয়ে… আহহহহ… এই ভাবেই হয়তো অর্নব ওর বুক গুলো নিয়ে খেলা করবে… টিপবে ওর কড়া হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে… উফফফ… চোখ বন্ধ করে ফেলে এই কথা ভেবেই, আমেজে… সড়সড় করে ওঠে যোনির ভেতরটা বড্ডো… ডান হাতটাকে বুকের ওপর থেকে নামিয়ে ফের মুঠো করে ধরে যোনিটাকে… চাপ দেয় মুঠোয় পুরে… হাতের একটা আঙুল ফের বাড়িয়ে দেয় যোনির মুখের দিকে… ঠেকায় যোনির ঠিক মুখটায় থাকা ভগাঙ্কুরটার ওপরে… উফফফফ মাহহহহ… চাপা গলায় গুঙিয়ে ওঠে আরামে… আঙুলটাকে আরো চেপে ধরে ভগাঙ্কুরটার ওপরে… চক্রাকারে ধীরে ধীরে ঘোরায় সেখানে… পা দুটো যেন আপনা থেকেই আরো খানিকটা সরে গিয়ে মেলে যায় নিজের উরুসন্ধিটা… কোমর ঠেলে খানিক এগিয়ে, বাড়িয়ে ধরে সামনের পানে… বাঁহাতের তালুতে ধরা সুগঠিত স্তনটায় চাপ বাড়ায় সে… মাথা নিচু করে তাকায় নিজের যোনির পানে… আঙুলটাকে ভগঙ্কুর থেকে সরিয়ে রাখে যোনির মুখটায়… তারপর আলতো হাতের চাপে ম্যানিকিওর করা নেলপালিশ রাঙানো আঙুলটা ঢুকিয়ে দেয় নিজের যোনির মধ্যে… উফফফফফ… মাগোওওও… ফের চাপা শিৎকার বেরিয়ে আসে তার মুখ দিয়ে… মনে মনে ছবি আঁকে এই ভাবেই হয়তো অর্নব তার ভগাঙ্কুর নিয়ে খেলা করবে, তারপর তার শক্ত হয়ে ওঠা পৌরষটা ঢুকিয়ে দেবে তার শরীরের মধ্যে… এই ভাবে… ভাবতে ভাবতেই আরো ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেয় নিজের আঙুলটাকে… আঙুলের ফাঁক গলে দেহের উষ্ণ রস গড়িয়ে বেরিয়ে আসে চেটোর মধ্যে… বাথরুমের আলো পড়ে হাতের সেই খানটা কেমন চকচক করে ওঠে যেন… আবেশে চোখ যেন বুঝে আসে পৃথার… ফাঁক হয়ে যায় পাতলা ঠোঁটের পাতা… ইশশশশ… কি আরাম… আসতে আসতে হাতের আঙুলটাকে নাড়াতে থাকে যোনির মধ্যে পুরে রেখে… একটু করে বের করেই পরক্ষনেই ফের ঢুকিয়ে দেয় শরীরের আরো গভীরে… মাহহহহ… মুখ থেকে বেরিয়ে আসে আরামে শিৎকার… চাপা স্বরে…

‘করোহহহহ সোনাআআআহহহহ… করোহহহহ…’ ফিসফিস করে বলে ওঠে পৃথা… হাতের আঙুলটার গতি বেড়ে যায় থেকে থেকে… সেই সাথে পুরো শরীরটাকেই নামিয়ে দিতে থাকে হাতের ওপরে… যেন নীচ থেকে আর যোনির মধ্যে তার আঙুল নয়, অর্নবের দৃঢ় পুরুষাঙ্গটাই যাতায়াত করছে রসে মাখামাখি হয়ে… মাথা নামিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে সে… বাঁ হাতটা বুক ছেড়ে খামচে ধরে সামনে থাকা বেসিনের ধারটাকে নিজের দেহের ভার সামলাবার তাগিদে… নিজের শরীরটাকে আরো জোরে জোরে ওঠা নামা করায় নিজের হাতের ওপরে হাতের ছন্দে… গুঁজে গুঁজে দেয় আঙুলটাকে বেশ জোরে জোরে… ‘ইশশশশশ… কি আরাআআআমমম হচ্ছেএএএ…’ ফের ফিসফিসায় পৃথা… দাঁত দিয়ে দাঁত চেপে ধরে রাখে বাথরুমের বাইরে যাতে তার এই শিৎকার বেরিয়ে না যায়, সেই প্রচেষ্টায়… কিন্তু যে ভাবে থেকে থেকে ঝিনিক দিয়ে উঠছে যোনিটা… উফফফফ… এই সুখটা কতক্ষন সে চেপে রাখতে পারবে, সেটারই ভয় পায় … আরামে মাথা হেলিয়ে দেয় পেছনে… বন্ধ করে নেয় চোখ দুটো চেপে… ‘ওহহহ… হুমমম… আসছেএএএএ… আর একটু করো না সোনাআআআহহহহ…’ ফের ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে নিজেকে… স্বমৈথুনের তাড়শে… তলপেটটা যে ভাবে কাঁপছে তার, আর বেশিক্ষন নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না বোঝে পৃথা… আরো গতি বাড়িয়ে দেয় আঙুলের… বেসিনের ধারটা খামচে ধরে এবার প্রায় প্রবল গতিতে চালাতে থাকে হাতটাকে নিজের যোনির মধ্যে… আজ সে সেফ… হয়তো তার দেহের মধ্যেই অর্নব ওর তপ্ত লাভার মত বীর্য ঢেলে দেবে… ভরিয়ে দেবে তার এই যোনিটা… চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছবিতে দেখা অর্নবের ভুরুর ওপরের কাটা দাগটা… আর সেটা মনে পড়তেই মাথার মধ্যে হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ খেলে যায় যেন পৃথার… নাক কান দিয়ে গরম হল্কা বেরিয়ে আসতে থাকে… যোনির দেওয়ালে থাকা শিরা উপশিরা গুলো ঘসা খায় আঙুলের সাথে… কেঁপে ওঠে পুরো শরীরটাই থরথর করে… যোনি দিয়ে প্রায় কামড়ে ধরে নিজের আঙুলটাকে যথাসম্ভব… ‘ওহহহ মাআআহহহহ… উহহহ…’ এবার আর চাপা নয়… প্রবল শিৎকার দিয়ে ওঠে সে… যোনিটা বার দুয়েক খাবি খেয়ে ওঠে হাতের চেটোর মধ্যে… একরাশ ঘন আঠালো ফেনিত রস আঙুল বেয়ে বেরিয়ে এসে ভরিয়ে তোলে হাতের তালু… কিছুটা রস ছিটকে গিয়ে লাগে মসৃণ সুঠাম থাইয়ের ওপরে…

‘তুমি ঠিক আছো?’ বাইরে থেকে অর্নবের উদ্বিগ্ন গলার স্বর ভেসে আসে…

রসঙ্খলনে ক্লান্ত পৃথা প্রথমে উত্তর দিতে পারে না… হাতটাকে ওই ভাবে যোনির মধ্যে রেখেই হাঁফাতে থাকে অন্য হাতে বেসিনটাকে ধরে… মাথাটা ঝুলে যায় বুকের ওপরে… ঝরে পড়ে মাথার খুলে রাখা ঝাঁকড়া চুলের রাশি, মুখের চারপাশ… যেন জাল বিস্তার করে তার মুকটাই ঢেকে দিতে চায় তারা…

‘কি হোলো, তিতির… তুমি ঠিক আছো?’ ফের প্রশ্ন করে অর্নবে… গলার স্বরে উদ্বেগ স্পষ্ট বোঝা যায়…

ধীরে ধীরে মাথা তুলে আয়নার মধ্যে দিয়ে তাকায় নিজের দিকে পৃথা… চুলগুলো আলুথালু হয়ে একটা অদ্ভুত চেহারা তৈরী হয়েছে যেন তার… চোখগুলো লাল, কপালের ওপরে ঘামের প্রলেপ… বড় বড় নিঃশ্বাস নেবার ফলে ফুলে ফুলে উঠতে থাকা নাকের পাটা… গলাটা ভেতরটাও শুকিয়ে গিয়েছে একেবারে… অনেক কষ্টে গলা খেকারি দিয়ে বলে ওঠে সে… ‘হ্যা… হ্যা… এই তো… ঠিক আছি আমি…’

‘না কেমন যেন জোরে চিৎকার করে উঠলে, তাই ভাবলাম…’ দরজার ওপাশ থেকে ফের প্রশ্ন করে অর্নব।

অর্নবের উদ্বিগ্ন স্বরে মৃদু হেসে ফেলে পৃথা… মনে মনে বলে, তুমি তো আমায় আরাম দিচ্ছিলে সোনা… চিৎকার করবো না? মুখে বলে, ‘না, ও কিছু না… আমি ঠিক আছি…’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়… যোনির মধ্যে থাকা আঙুলটাকে নিজের নাকের কাছে এনে গন্ধ শোঁকে… তারপর শাওয়ারের কলটা খুলে জলের নীচে গিয়ে দেহটাকে মেলে দেয়… সুঠাম শরীরটা বেয়ে জলের ধারা নেবে যায় মেঝের দিকে… একটু একটু করে শান্ত হতে থাকে উতপ্ত দেহটা…



৩৪।।

তোয়ালে দিয়ে ভালো করে গায়ের জল মুছে হ্যাঙ্গার থেকে গোলাপী নরম টেডি বাথরোবটা টেনে নামিয়ে নেয় পৃথা… গায়ে পড়ে কোমরের কাছে ফিতে বেঁধে মাথার চুলগুলোকে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে… দরজার সামনেটায় দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে অর্নব কোথায় আছে… ‘ঘরেই আছে মনে হচ্ছে…’ মনে মনে ভাবে পৃথা… তারপর লঘু পায়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় ড্রইংরুমে… দেওয়াল টাঙানো টিভির ঠিক নীচেই টেবিলটার ওপরে রাখা সাউন্ড সিস্টেমটা চালিয়ে ড্যারেন বারেনবোইমের কম্পোজিশনএর পিয়ানো নাম্বার সিলেক্ট করে রিমোট টিপে… তারপর ভলুইমটাকে একেবারে কম করে এমন ভাবে সেট করে যাতে বেডরুমে থাকলেও শোনা যায় সঙ্গীতের সুর… সারা ফ্ল্যাটটাই সেই হাল্কা পিয়ানোর সঙ্গীতের মুর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে… ড্রয়িংরুমের আলো নিভিয়ে দেয় সুইচ টিপে… শুধু মাত্র বেডরুমের দরজা পেরিয়ে একটা হাল্কা আলোর পরশ বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমটায় মায়াবী আলো আঁধারী সৃষ্টি করে…

তার পরণের ছোট্ট বাথরোবটার নীচে সে একেবারে নিরাবরণ… নগ্ন… বাথরোবটা কোমর থেকে খানিকটা নেবেই শেষ হয়ে গিয়েছে… থাইয়েরও সম্পূর্ণটা ঢেকে উঠতে পারেনি তার… ঘরে মধ্যে বাজতে থাকা ওই হাল্কা সঙ্গীতের শব্দ আর সেই সাথে আলো আঁধারী পরিবেশ… পৃথার বুকের মধ্যেটা ফের ঝড় ওঠে যেন… চুপচাপ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে সেন্টার টেবিলটার পাশে… নিজেকে তৈরী করে নিতে থাকে পরবর্তী সম্ভাব্য ঘটনার সন্মুখিল হবার আকাঙ্খায়…

সবে ঘুরতে যাবে, তার আগেই ঘাড়ের কাছে কারুর উপস্থিতি অনুভব করে পৃথা… সাথে সাথে সারা শরীর সিরসির করে ওঠে… পেছনে কে এসে দাঁড়িয়েছে, বুঝতে অসুবিধা হয় না… সারাটা দিন যার সান্নিধ্য পাবার আশায় দিন কাটিয়েছে, তার উষ্ণ উপস্থিতিতে হটাৎ করেই ভিষন লজ্জা করে… দ্রুত হয়ে ওঠে নিঃশ্বাস… ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পেছন পানে… হু… সেই বটে… একেবারে তার ঠিক পেছনটায় এসে দাঁড়িয়েছে… এতটাই কাছে যে তার নিঃশ্বাসটাও ঝরে পড়ছে পৃথার ঘাড়ের ওপরে…

ঘুরে দাঁড়ায় পৃথা… মিউজিক সিস্টেম রাখা টেবিলের কিনারায় নিজের দেহটাকে ভর রেখে… নরম সুগোল পাছার দাবনাটা কেটে চেপে বসে যায় সেই টেবিলের ধার ঘেসে… আর এই ভাবে ঘুরে দাঁড়াবার ফলে বাথরোবের সামনেটা খানিকটা খুলে ফাঁক হয়ে যায়… শরীরের উপরি ভাগে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে নরম স্তনদুটোর খানিকটা করে… গভীর স্তনবিভাজিকা… কিন্তু ঢাকার প্রয়াশ করে না সে… খুলে ফাঁক হয়ে থাকতে দেয় গায়ের বাথরোবটাকে… মুখ তুলে তাকায় সামনের পানে… সে জানে যে তার সামনে শুধু শূণ্যতা থাকলেও ঠিক ওর সামনেই অর্নব দাঁড়িয়ে আছে… তার উপস্থিতি যে ভিষন ভাবেই বুঝতে পারছে তার মেয়েলী শরীরের অনুভূতি দিয়ে… এবং এই মুহুর্তে তাকে বলে দিতে হবে না যে অর্নবও তারই দিকে, এই ছোট্ট বাথরোবে ঢাকা শরীরটার প্রতিটা ইঞ্চি, প্রতিটা চড়াই উৎরাইএর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে… তাকে পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষন করে চলেছে নিঃশব্দে… বুঝতে পেরে কেমন নিজে আরো বেশি করে দূর্বল হয়ে পড়ে… একটা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে যায় শরীর বেয়ে… কেঁপে ওঠে তার সারা দেহটা… থরথর করে… ‘কি দেখছে অর্নব? আমাকে?’ মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করে পৃথা… ভাবতে ভাবতে নাকের পাটা ফুলে ওঠে তার… নাকের রসারন্ধ্রে এসে পৌছায় অর্নবের গায়ের সেই বিশেষ পুরুষালী গন্ধটা… হাতের তালুতে খামচে ধরে টেবিলের কিনারা… ভিজে যাচ্ছে সে… ভিজে উঠছে তার জঙ্ঘা… উপলব্ধি করে ভেজা অনুভূতি… নিজের থাইদুটোকে একে অপরে সাথে চেপে ধরে… পা নাড়াতে জঙ্ঘার কাছে বাথরোবটা খানিক ফাঁক হয়ে গিয়ে পুরুষ্টু থাইয়ের প্রায় উরুসন্ধি অবধি প্রকাশিত হয়ে পড়ে… সেটা বুঝতেই আরো একবার কেঁপে ওঠে সে… আজ কেন তার এমন হচ্ছে? কেন সে এত দ্রুত ভিজে যাচ্ছে? এই প্রথম তো তাকে নগ্ন দেখছে না অর্নব? আগেও তো কতবারই না দেখেছে… কত রকম ভাবে… তবে আজ কেন তার এই রকম হচ্ছে… কিছুতেই শরীরের কাঁপনটা থামাতে পারছে না? ভাবে পৃথা মনের মধ্যে… কেন জানে না সে, সোজা হয়ে দাঁড়াতেও যেন ভয় করে, একটা অদ্ভুত লজ্জা তাকে আষ্টে পৃষ্টে চেপে জড়িয়ে ধরেছে… অথচ এই কিছুদিন আগেই সেই না অর্নবকে কত ভাবেই প্রলুব্ধ করার চেষ্টা… শুধু তাই বা কেন? আজ সকাল থেকেই সে যে কি পরিমাণ এই মিলনের কথা কল্পনা করে উন্মুখ হয়ে ছিল… খানিক আগেই অর্নবকে কল্পনা করেছে নিজের শরীরের গভীরে যখন সে অফিস থেকে ফিরে বাথরুমে গিয়েছিল গা ধুতে…

হটাৎ নিজের দুই গালে দুটো কর্কশ পুরুশালী হাতের স্পর্শ পায় পৃথা… আঁজলে করে তার মুখটা তুলে ধরেছে অর্নব… ফের কেঁপে ওঠে তার তম্বী শরীরটা… অর্নবের স্পর্শে… ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে যায় কেমন সাথে সাথে… মুখ দিয়ে শ্বাস টানে সে… আহহহআ…

অর্নবের হাতের একটা আঙুল এসে ছোঁয় পৃথার ফাঁক হয়ে থাকা পাতলা ঠোঁটে… আলতো স্পর্শে ঘুরে ফেরে ঠোঁটের ওপরে সেই আঙুলটা… ঠোঁটের প্রতিটা কোনায়… দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে পৃথা… আপনা থেকেই চোখ মুদে আসে সেই পরশে… নাকের পাটা আরো ফুলে ওঠে যেন… কানের লতিদুটো গরম হয়ে ওঠে… বন্ধ চোখের আড়ালে ছটফট করে চোখের তারাদুটো… প্রাণপনে আরো জোরে খামচে ধরে সে টেবিলের কিনারাটাকে হাতের মুঠোয়…

অর্নবের নিঃশ্বাসের ঝাপটা এসে পড়ে পৃথার মুখের নরম ত্বকের ওপরে… হহহহহ… বড় একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে তার মুখ থেকে… বোঝে অর্নব আরো ঝুঁকে এসেছে তার মুখের ওপরে… চোখ বন্ধ রেখে অপেক্ষা করে সে… কিসের? তা জানে না… তবুও দম বন্ধ রেখে অপেক্ষায় থাকে পরবর্তী পর্যায়ের… নরম দাড়ির লোমগুলো ঘরের ফ্যানের হাওয়ায় উড়ে এসে পড়ে তার মুখে, গলায়… সিরসির করে সেই নরম দাড়ির ছোয়া পেয়ে, শরীরটা… তবুও সে কিছু করে না… ওই ভাবেই কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে টেবিলটাকে হাতের মুঠোয় চেপে ধরে…

‘উম…’ নিজের ঠোঁটের ওপরে অর্নবের পুরু ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই ফের একটা জোরে নিঃশ্বাস টানে বুকের ভেতরে… আলতো… খুব আলতো স্পর্শ করে অর্নব তার ঠোঁটে… কিন্তু সেই আলতো ছোয়াতেই যেন পেটের মধ্যে হাজারটা প্রজাপতি ছটফটিয়ে ওঠে পৃথার… তীব্র উত্তেজনার ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে শরীরের মধ্যে… কত দিন… কতগুলো দিন এই আদরটা পাবার আশায় সে অপেক্ষা করেছে… আর অর্নব যখন সত্যিই তার সাথে মিলিত হবার জন্য এগিয়ে এসেছে, সে কেমন অদ্ভুত ভাবে কুঁকড়ে যাচ্ছে… কেন? কেন?… বার বার নিজেকে প্রশ্ন করে পৃথা বন্ধ চোখের আড়ালে থেকে।

ঠোঁটের আলতো ছোয়া এবার বদলে যায় প্রগাঢ় চুম্বনে… একটু একটু করে পৃথার ঠোঁটের পাটি হারিয়ে যেতে থাকে অর্নবের মুখের মধ্যে… উমমম… গলে যাচ্ছে পৃথা… একটু একটু করে গলে যাচ্ছে সে অর্নবের চুম্বনের স্পর্শে… উমমম… বুকের মধ্যে হাজারটা দামামা বেজে ওঠে… একটু একটু করে সেই বুকের মধ্যে তৈরী হওয়া ভয়টা কেটে যাচ্ছে কি? নিজের মুখটাকে আরো বাড়িয়ে দেয় সে অর্নবের পানে… শিথিল করে দেয় ঠোঁটটাকে যাতে আরো বেশি করে তার মুখের মধ্যে চুষে, পুরে নিতে পারে সেটাকে তার প্রিয়তম… শিথিল হয়ে আসে টেবিলের কিনারা ধরে রাখা হাতের মুঠিটাও আস্তে আস্তে… ‘নাও সোনা… নাও… নাও আমাকে…’ মনের মধ্যে নিরুচ্চারে অনুরোধ করে ওঠে পৃথা…

অনুভব করে অর্নবের কর্কশ পুরুষালী হাত, ঘুরে বেড়াচ্ছে তার গলা, কাঁধ, বাহু, কব্জি… আহহহহ… পৃথার বুঝতে অসুবিধা হয় না বাথরোবটার ফিতা এখন অর্নবের হাতের মধ্যে… টান পড়ে সে বাঁধনে… খুলে যায় ফাঁস… আলগা হয়ে যায়… খুলে ফাঁক হয়ে যায় সামনের অংশ… উমমমম… অর্নবের মুখের মধ্যেই গুঙিয়ে ওঠে সে…

অর্নব তার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে তাকায় পৃথার বুকের পানে… বেডরুম থেকে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসা আলোয় তৈরী ড্রইংরুমের মধ্যের আলোআঁধারির মধ্যে দেখতে পায় বাথরোবটা খুলে গিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়া পৃথার সুগোল মুঠীভর স্তন… যেন নির্মেদ শরীরটাকে অদ্ভুত সুন্দর ভাবে অলংকৃত করে পৃথার ওই স্তনদুটি… অর্নব মাথা ঝোঁকায় পৃথার বুকের ওপরে… একটা স্তনের ওপরে মুখ রাখে আলতো করে… ওহহহহ… হাঁফ ধরার মত কঁকিয়ে ওঠে পৃথা, নিজের বুকের ওপরে অর্নবের মুখের ছোঁয়া পেতেই… হাত তুলে খামচে ধরে অর্নবের মাথার পেছন দিকের চুলের গোছা… ধরে পুরো মাথাটাই চেপে ধরে নিজের বুকের ওপরে… ইশশশশ… ভুরু কুঁচকে যায় তার… চেপ্পে বন্ধ করে রাখে চোখের পাতা… অনুভব করে অর্নবের মুখটা ওর স্তনটার ওপরে ঘুরে বেড়ানোর… হ্যা… ঘসছে মুখটাকে স্তনের ওপরে… সেই সাথে ছোট ছোট চুমু এঁকে দিচ্ছে স্তনের প্রতিটা ইঞ্চিতে… মাহহহহহ… আরো জোরে খামচে ধরে হাতের মুঠোয় থাকা চুলের গোছা… অর্নবের গাল থেকে ঝুলতে থাকা নরম বড় বড় দাড়ির লোমগুলো তার পেটের ওপরে বুলিয়ে যেতে থাকে… ইশশশশ… আর একটু… আর একটু এগোলেই স্তনের বোঁটাটা অর্নবের মুখের কাছে পৌছে যাবে… তীব্র আকাঙ্খায় অপেক্ষা করে সেখানে অর্নবের মুখের স্পর্শ পাবার… তার মনে হয় যেন বুকের বোঁটায় অর্নবের একটু পরশ পাবার জন্য কি ভিষন ভাবে শক্ত হয়ে জেগে রয়েছে ওই বোঁটাদুটো…

কিন্তু অর্নব এগোয় না আর স্তনের বোঁটার দিকে… ফিরে যায় সে স্তনবিভাজিকায়… উমমমম… বিরক্তি প্রকাশ পায় পৃথার স্বরে এই ভাবে ওর স্তনের বোঁটাকে এড়িয়ে ফিরে যাবার জন্য… নিজের শরীরটাকে একটু বেঁকিয়ে চেষ্টা করে ফের অর্নবের মুখটাকে তার বুকের বোঁটার ওপরে ফিরিয়ে আনার… কিন্তু অর্নব তাও এড়িয়ে যায় পৃথার সে প্রচেষ্টাটাকে… স্তনবিভাজিকার থেকে মুখ ফেরায় অন্য স্তনটার দিকে… ছোট ছোট চুম্বন সেখানেও আঁকতে থাকে সেটারও প্রতিটা ইঞ্চি ধরে… তারপরই হটাৎ করে মুখের মধ্যে পুরে নেয় বুকের বোঁটাটাকে… আর সেটা এতটাই আকস্মিক ভাবে ঘটে যে প্রায় আঁতকে ওঠে পৃথা… ওহ মাহহহআআআ… ইশশশশ… কঁকিয়ে ওঠে সে নিজের বুকের বোঁটায় অর্নবের মুখের উষ্ণ ভেজা ছোঁয়া পেয়ে… অনুভব করে বোঁটার মাথাটায় জিভ নিয়ে খেলা করছে অর্নব… না, না… পুরো বোঁটাটাই তো চুষছে দুই ঠোঁটের ফাঁকে ধরে… নাহ তো… জিভটা ঘুরে বেড়াচ্ছে বোঁটার চারপাশে… এক সময় এক এক রকমের অনুভূতিতে পৃথা প্রায় পাগল হয়ে ওঠে সুখে… আরো যেন বেড়ে শক্ত হয়ে ওঠে তার স্তনের বোঁটাটা অর্নবের মুখের মধ্যেই… দু হাত তুলে চুলগুলোকে খামচে চেপে ধরে অর্নবের মুখটাকে নিজের নরম বুকটার ওপরে সে…

অর্নবের হাত চুপ করে থাকে না… সেগুলো ততক্ষনে পৃথার কোমরের ওপরে ঘুরে বেড়ায়… চাপ দেয় তার শরীরটার নরম মাংসে… তারপর পৃথার কোমরটা দুই হাতে ধরে দেহটাকে টেনে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয় টেবিলের থেকে সরিয়ে… কোমর থেকে হাত আসতে আসতে হড়কে এগিয়ে যায় পৃথার নরম উত্তাল নিতম্ব লক্ষ্য করে… দুই হাতের তালু গিয়ে পৌছায় সেই তুলতুলে নরম নিতম্বের ওপরে… হাল্কা… একদম হাল্কা স্পর্শ ঘুরে বেড়ায় নিতম্বের দাবনাদুটোর ওপরে…

একটা বুক ছেড়ে ততক্ষনে অপর বুকের দখল চলে গিয়েছে অর্নবের মুখের মধ্যে… সেখানেও বেশ কিছুক্ষন ধরে চলে বুকের শক্ত হয়ে ওঠা বোঁটাটাকে মুখের মধ্যে নিয়ে খেলা… তারপর সেটাকে ছেড়ে আসতে আসতে নামতে থাকে ছোট ছোট চুম্বনের আকারে দেহের নীচের দিকে… পেট… তলপেট বেয়ে অর্নবের মুখটা নেমে যায় আরো, আরো নীচের পানে… দম বন্ধ হয়ে আসে যেন পৃথার… শরীরটা সেই সাথে শিথিল হয়ে উঠতে থাকে আরো… হাতের মুঠোতে আর যেন জোর পায় না সে… আলগোছে শুধু ফেলে রাখে হাতদুটোকে অর্নবের মাথার ওপরে… অনুভব করতে থাকে তার শরীরের ওপরে অর্নবের ছোঁয়ার…

অর্নব পৃথার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে… তারপর তার সুঠাম উরুদুটোতে দুইহাতের টান দেয় দুইদিকে… আলতো করে ঠোঁট ছোয়ায় মসৃণ তেলা মাংসল থাইয়ের ওপরে… সারা শরীরটা কেঁপে ওঠে ওই ছোঁয়া পেয়ে… আহহহ… এবার কি করতে চলেছে অর্নব, চোখে না দেখলেও বুঝতে ভুল হয় না তার… আর সেটা ভাবতেই যেন আরো বেশি করে ভিজে ওঠে তার গোপনাঙ্গ… যোনি থেকে তার দেহজ তীব্র গন্ধ ঝাপটা মারে অর্নবের নাকে… কেমন যান্ত্রিকতায় নিজের পা দুটোকে ফাঁক করে মেলে দেয় সে দুই দিকে… চোখ খুলে নীচের পানে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে অর্নব এরপর কি করতে চলেছে… ভিষন ইচ্ছা হয় তার, যদি একবার দেখতে পারতো অর্নবকে সশরীরে বসে থাকতে তার পায়ের ফাঁকটায়… ভাবতে ভাবতেই কাঁপন ধরে উরুর পেশিতে… অনুভব করে অর্নবের উষ্ণ ঠোটের পরশ তার থাইয়ের ভেতরের অংশে… সেখানে থেকে একটু একটু করে বেয়ে উঠে আসার… আহহহহ… একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে… ঘরের মধ্যে বাজতে থাকা সঙ্গীতের মুর্ছনা আর কানে এসে পৌছয় না… কানদুটোর মধ্যে কেমন বোঁ বোঁ করে নির্নিমেশ উত্তেজনার পারদের ওঠা নামায়…

‘আহহহহ… উমমমম…’ গুঙিয়ে ওঠে পৃথা… অর্নবের বাড়িয়ে ধরা জিভটা তার যোনির ওষ্ঠের সাথে ছোঁয়া পেতেই… কেঁপে ওঠে তার পুরো শরীরটা থরথর করে… আরো একটু পা দুটোকে ফাঁক করে মেলে ধরে নিজের যোনিদেশ অর্নবের মুখের সামনে… ফের তার চুলের ওপর থেকে হাত সরিয়ে খামচে ধরে টেবিলের কিনারাটাকে দুই হাতের মুঠোয়… ইশশশশ… হাল্কা শিৎকারটা বেরিয়ে আসে মুখের মধ্যে থেকে আনমনেই…

অর্নব জিভটাকে দিয়ে অল্প অল্প নাড়া দেয় যোনি থেকে ইষৎ বেরিয়ে থাকা পাপড়িগুলোতে… জিভে এসে লাগে পৃথার শরীরের ভেতর থেকে গড়িয়ে বেরিয়ে আসা রসের স্বাদ… উমমম… তার মুখ দিয়েও একটা হাল্কা গোঙানী বেরিয়ে আসে… হাত ফেরে সুঠাম উরুর ওপরে… ঘুরে গিয়ে ছোঁয়া নেয় নরম নিতম্বের… আলতো করে নাড়িয়ে যেতে থাকে জিভটাকে যোনির মুখটায়… ভেতর থেকে রসক্ষরণের মাত্রা তাতে আরো যেন বৃদ্ধি পায়… বেরিয়ে এসে ভরিয়ে তুলতে থাকে অর্নবের জিভের উপরিভাগ… গড়িয়ে ঢুকে যায় মুখের মধ্যে… এবার জিভটাকে সরু করে চাপ দেয় যোনিদ্বারে… পাপড়ি দুটো অক্লেশে সরে গিয়ে জায়গা করে দেয় সেটিকে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য… অর্নব ঠেলে দেয় জিভটাকে পৃথার শরীরের অভ্যন্তরে… তার নাকটা গিয়ে ঠেকে শরীরের রসে পিচ্ছিল হয়ে থাকা ভগাঙ্কুরটার ওপরে… কানে আসে পৃথার চাপা শিৎকার… আহহহ ইশশশশ মমমমম… পৃথার শরীরের কাঁপন অনুভব করে নিজের মুখের ওপরে…

হটাৎই পৃথার পায়ের ফাঁক থেকে উঠে দাঁড়ায় অর্নব… এই ভাবে যোনির ওপর থেকে মুখ সরিয়ে নেওয়ার ফলে খারাপ যে লাগে না পৃথার তা নয়… কিনুত মুখের কিছু বলে না… নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দেয় তার প্রেমিকের হাতে সে… আজ সে শুধু আদর নেবে… অর্নবের মত করে…

অর্নব দু হাত বাড়িয়ে দৃঢ় আলিঙ্গনে বেঁধে নেয় পৃথার নরম পেলব শরীরটাকে নিজের চওড়া ছাতির ওপরে… নরম মাংসপিন্ডদুটো চেপে বসে তার সেই লোমশ ছাতির ওপরে… বিঁধে যায় যেন শক্ত খাড়া হয়ে থাকা স্তনএর বৃন্তদ্বয়… মাথা নামিয়ে মুখের মধ্যে তুলে নেয় পৃথার পাতলা ঠোঁটের একটাকে… চুষতে থাকে সেটাকে মুখের মধ্যে পুরে… কর্কশ হাত ফেরে পৃথার নরম মেয়েলী শরীরটার ওপরে… পীঠে, নিতম্বে, পেটে, ফের ফিরে আসে নিতম্বের ওপরে… নিজের কোমল ত্বকের ওপরে অর্নবের কড়া হাতের একেবারে বৈপরীত্য স্পর্শ পেতেই শরীরটা সিরসির করে ওঠে পৃথার… উমমমম… গুঙিয়ে ওঠে সে অর্নবের মুখের মধ্যেই… হাত ফিরিয়ে জড়িয়ে ধরে তার প্রেমাষ্পদকে… নিজের দেহটাকে আরো ভালো করে ঠেলে, এগিয়ে দেয় অর্নবের বুকের মধ্যে… মুখের মধ্যে থেকে জিভটাকে বের করে ভরে দেয় অর্নবের মুখের মধ্যে… দুজনের জিভ একে অপরের সাথে খেলে বাড়ায় অর্নবের মুখের মধ্যেই… এক ছন্দে…

পৃথার থেকে মুখটা ছাড়িয়ে নিয়ে তাকায় অর্নব… সে জানে পৃথা দেখতে পাচ্ছে না তার তীক্ষ্ণ চোখদুটিকে… কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না তার যে সে দেখতে না পেলেও অনুভব করছে গভীর ভালোবাসা দিয়ে… ‘আই ওয়ান্ট টু মেক লাভ টু ইয়ু… আই ওয়ান্ট টু বি ইন ইয়ু… সারাউন্ডেড বাই ইয়ু…’ গভীর গলায় ফিসফিসিয়ে বলে অর্নব…

অর্নবের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিটা শব্দ যেন মধু ঢেলে দেয় পৃথার কানে… কেঁপে ওঠে সে… এই ক্ষনটির জন্যই তো তার এতদিনকার অপেক্ষা… উত্তর দিতে গিয়ে পারে না প্রথমে… গলা বুঝে আসে তার আবেগে… ঢোক গিলে গলাটা পরিষ্কার করে, অনেক কষ্টে সেও ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়, ‘আ…আই… আই ওয়ান্ট ইয়ু টু মেক লাভ টু মী…’ বলতে বলতে তার সারা শরীরটা কেঁপে ওঠে আরো একবার থরথর করে… গরম হয়ে ওঠে কানের লতীগুলো লাল হয়ে… অর্নবের পীঠের ওপরে থাকা হাতটা দিয়ে খামচে ধরে পেশিগুলো…

পৃথার কোমরটা দুই পাশে ধরে অবলীলায় ওকে তুলে বসিয়ে দেয় টেবিলটার ওপরে… পৃথাকে কিছু বলতে হয় না… পাদুটোকে তুলে পায়ের পাতা রাখে টেবিলের কিনারে… হাঁটু দুটো দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে মেলে ধরে তার দেহের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদটাকে অর্নবের জন্য… পীঠের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে এসে চেপে ধরে তার বাহুদুটোকে… মাথা নীচু করে তাকায় নিজের যোনির পানে… জায়গাটা অর্নবের মুখের লালায় আর তার নিজের দেহের রসে ভিষন ভাবে ভিজে রয়েছে… বেডরুম থেকে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসা ওই অতটুকু আলোতেই চকচক করছে… তাকে বলে দিতে হয় না, কি ভিষন ভাবে সে নিজেও তার শরীরের ভেতরে ভিজে তৈরী হয়ে রয়েছে অর্নবের পৌরষের প্রবেশের কামনায়…

পুরো শরীরটায় একটা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে যায়, যোনি মুখে শক্ত পুরুষাঙ্গের ছোঁয়া পেতেই… আহহহ… বড় করে একটা নিঃশ্বাস টানে মুখ দিয়ে… খামচে ধরে অর্নবের বাহুটাকে হাতের মুঠোয়… আস্তে… অতি ধীরে… একটু একটু করে ঢুকতে থাকে তার যোনির মধ্যে অর্নবের উত্থিত দৃঢ় অঙ্গটা… যোনির মধ্যে উপস্থিত প্রতিটি শিরা উপশিরা দিয়ে সেই প্রবেশ অনুভব করে পৃথা… আহহহ… ফের একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় সে… স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিজের যোনির দিকে… একবারের জন্যও চোখ সরায় না সেখান থেকে… উপলব্ধি করে কেমন করে তার যোনির পেশিগুলো সরিয়ে দিয়ে একটু একটু করে ঢুকে যাচ্ছে তার অদৃশ্য মানুষটার কামদন্ড… উত্তেজনায় আরো জোরে চেপে ধরে হাতের মুঠোয় ধরে থাকা বাহুদুটোকে… হয়তো তার ফলে হাতের নখ বিঁধে যায় সেখানে… নাহহহহঃ… আহহহহ… লাগছেহহহহ… পুরুষাঙ্গের মাথাটা শুধু মাত্র প্রবেশ করেছে তার যোনির মধ্যে… তাতেই কোঁকিয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রনায়… বুঝতে অসুবিধা হয় না যোনির মুখের নীচের দিকে একটু চিরে গিয়েছে হয়তো এত স্থুল জিনিসটা তার ওই প্রায় কুমারী যোনির মধ্যে প্রবেশের প্রচেষ্টায়… যতই সে ভিজে উঠুক না কেন, যতই সে আগে অন্য পুরুষের সাথে মিলিত হোক না কেন… তবুও… এখনো সে বলতে গেলে প্রায় কুমারীই… হয়তো স্বতীচ্ছদ আর তার যোনির মধ্যে উপস্থিত নেই… কিন্তু সেই অর্থে কতটুকুই বা সে পেয়েছে সঙ্গমের স্বাদ?… তাই যোনির মধ্যে অর্নবের ওই রকম একটা স্থুল পুরুষাঙ্গের প্রবেশের ফলে ছটফটিয়ে ওঠে যন্ত্রনায়… মনে পড়ে যায় তার সেই প্রথম মিলনের স্মৃতি… সেদিনও সে পারেনি রিকির সাথে মিলিত হতে, এই যন্ত্রনার ফলে… মুখ বিকৃত করে ফিসফিসিয়ে ওঠে পৃথা… ‘আহহহহ… ভিষন লাগছে সোনা… বড্ডো জ্বালা করছে ওই জায়গার মুখটায়…’

পৃথার কথা শুনেই থমকে যায় অর্নব… ওর শরীরের মধ্যে যত দূর ঢুকেছে তার পুরুষাঙ্গটা, ততটাই রেখে থেমে যায় সে… ‘স্বাভাবিক…’ মনে মনে ভাবে… ‘বলতে গেলে প্রায় কুমারীই এখনও মেয়েটা… যতই নিজের হাতে স্বমৈথুন করুক না কেন… কোথায় একটা বা দুটো আঙুল, তাও মেয়েলী, আর কোথায় তার এই রকম মোটা একটা পুরুষাঙ্গ… লাগা তো খুবই স্বাভাবিক…’ মাথা নীচু করে পৃথার ঠোঁট তুলে নেয় নিজের মুখের মধ্যে… চুষতে থাকে পাতলা ঠোঁটটাকে নিজের মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে… চুষতে চুষতেই জিভটাকে পুরে দেয় পৃথার মুখের মধ্যে… খেলা করে জিভ নিয়ে নিজের জিভের সাথে… অনুভব করে আলতো হয়ে যাওয়া তার বাহুর ওপরে পৃথার হাতের চাপ… নিজের ডানহাতটাকে তুলে রাখে নরম বুকটার ওপরে… প্রায় পুরো স্তনটাই যেন তার পুরুষালী বিশাল থাবার মধ্যে হারিয়ে যায়… আলতো হাতে হাতের তালুর মধ্যে থাকা স্তনটাকে টিপতে থাকে একটু একটু করে… অর্নবের মুখের মধ্যেই গুঙিয়ে ওঠে পৃথা… ‘উমমমম…’ পৃথার আদুরে গোঙানী শুনে হাসে মনে মনে অর্নব… নিজের পুরুষাঙ্গের ওপরে আলতো কামড় উপলব্ধি করে যোনির পেশির… বোঝে যে ধীরে ধীরে পৃথার হটাৎ পাওয়া ব্যথা কমে আসছে… তার পুরুষাঙ্গের পরিধীর সাথে মানিয়ে নিচ্ছে যোনিটা… আরো খানিক সময় দেয় সে… বাঁ হাতটাও তুলে আনে পৃথার বুকের ওপরে… সেটার সাহায্যে পৃথার অপর স্তনটাও চেপে ধরে হাতের মুঠোয়… দুই হাতের মধ্যে দুটো স্তন এক সাথে নিয়ে মর্দন করতে থাকে নানা ভাবে… কখন টেপে, কখন হাতের তালুর চাপে রেখে শুধু মাত্র চক্রাকার ভাবে ঘোরায়… ফের হাতের মুঠো ধরে চাপ দেয়… মাঝে মাঝে স্তনের বোঁটাদুটোকে আঙুলের ফাঁকে চেপে ধরে হাল্কা হাল্কা টান দেয়… ‘উমমমমম…’ ফের গুঙিয়ে ওঠে পৃথার অর্নবের মুখের মধ্যে… নিজেই উপযাযক হয়ে জিভটাকে এগিয়ে, বাড়িয়ে দিতে থাকে তার জিভের দিকে… দুজনের মুখের লালা উপচে গিয়ে গড়িয়ে বেয়ে পড়ে খানিক পৃথার ঠোঁটের কোনা দিয়ে… নিজের মুখের মধ্যে টেনে নেয় পৃথার জিভটাকে… সেটাকে চুষতে থাকে নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে…

পৃথা আলতো করে কোমরটাকে এগিয়ে দেয় অর্নবের কোলের দিকে… আগের সেই ব্যথাটা আর নেই… বরং এখন ওর ঐ জায়গাটার মধ্যে পুরে রাখা শক্ত পৌরষটা কেমন একটা ভালো লাগা সৃষ্টি করছে… ইচ্ছা করছে যেন আর একটু যদি ওখানটায় অর্নব তার ওটাকে নিয়ে ঘসে, হয়তো আরাম লাগতে পারে… অর্নবের বাহুর থেকে হাত নামিয়ে নেয় কোমরের কাছে… তারপর নিজেই অর্নবের কোমরটা দুই হাতের মধ্যে ধরে টান দেয় নিজের দিকে… ‘হুমমম…’ অর্নবের মুখের মধ্যে মুখ রেখে আওয়াজ দেয় সে… বোঝাবার চেষ্টা করে আর একবার চেষ্টা করার জন্য… সেও তো এইটার জন্যই উন্মুখ হয়ে ছিল… তাই এত সহজে আজ হাল ছাড়তে চায় না কোনমতেই…

পৃথার ইশারা বুঝতে অসুবিধা হয় না অর্নবের, তাও সে এতটুকুও চেষ্টা করে না কিছু করার… ঠিক যে ভাবে পৃথার শরীরের মধ্যে গেঁথে রয়েছে তার পুরুষাঙ্গটা, সেই ভাবে থাকতে দেয় ওটাকে… শুধু সে পৃথার মুখ ছেড়ে মাথা নামায় পৃথার বুকের পানে… হাত সরিয়ে সামনে থাকা বাম স্তনটার বোঁটা মুখের মধ্যে পুরে নেয় একেবারে… চুষতে থাকে চুকচুক করে… জিভ বোলায় বোঁটাটার চারিধারে… ‘ওহহহহহ মাআআআআহহহ…’ গুঙিয়ে ওঠে পৃথা নিজের বুকের বোঁটায় এই ভাবে চোষন পড়তেই… সারা শরীর সিরসির করে ওঠে তার… তাড়াতাড়ি হাত তুলে রাখে অর্নবের ঝুকিয়ে রাখা মাথার ওপরে… আঙুলগুলো না দেখা চুলের গোছার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়… নিজের শরীরটাকে বেঁকিয়ে বুকটাকে আরো বাড়িয়ে ধরে অর্নবের মুখের পানে… ‘আহহহহ সোনা… চোষোওওও…’ ফিসফিসিয়ে ওঠে সে… অর্নব স্তন পরিবর্তন করে… মন দেয় অপর স্তনটায়… ওই ভাবে বাড়িয়ে ধরা স্তনটার বোঁটাটাকে মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে থাকা আগেরটার মত করে… ‘ইশশশশশ…’ হিশিয়ে ওঠে পৃথা… ‘নাও ফাক মী…’ ফের কোমরটাকে একটু বাড়িয়ে, এগিয়ে ধরার চেষ্টা করে সে… ‘ফাক মী প্লিজ… আই অ্যাম রেডি ফর ইয়ু… প্লিজ ফাক মী… আই ক্যান ফিল ইয়ু ইন্সাইড…’ নিজের বুকের ওপরে অর্নবের মাথাটাকে আরো ভালো করে চেপে ধরতে ধরতে বলে ওঠে পৃথা…

পৃথার বুকের ওপর থেকে মুখ তোলে অর্নব… দুহাতের বেড়ে পৃথার নরম শরীরটাকে ধরে নিয়ে মুখ নামায় ওর ঠোঁটের ওপরে… বারে বারে চুমু খেতে থাকে পাতলা ঠোঁটগুলোর ওপরে… ঘন হয়ে ওঠে নিঃশ্বাস… আর সেই সাথেই কোমরটাকে সামান্য টেনে নেয় বাইরের পানে… তারপর চাপ দেয় সামনের দিকে… রসে থাকা যোনির মধ্যে সেঁধিয়ে যায় আরো খানিকটা অংশ ওই দৃঢ় পুরুষাঙ্গটার… ‘উমমমম…’ অর্নবের মুখের ওপরে শিশিয়ে ওঠে পৃথা… নিজের যোনির মধ্যে উপলব্ধি করে পুরুষাঙ্গটার আরো খানিকটার প্রবেশ… এবার আর লাগে না তার… বরং অন্য ধরণের উপলব্ধি হয়… ভালো লাগার উপলব্ধি… আরামের উপলব্ধি… অর্নবের মাথার ওপর থেকে হাত নেমে যায় পীঠের ওপরে… নিজের বুকটাকে আরো খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করে অর্নবের ছাতিটাকে নিজের বুক দিয়ে… ‘ফাক মী… সোনা… ফাক মী…’ গুনগুনিয়ে ওঠে ফের অর্নবের মুখ তার ঠোঁটের ওপর থেকে একটু সরতেই… তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় শূণ্যের পানে… যেখানটায় অর্নবের চোখ থাকার কথা… সে জানে, সে না দেখতে পেলেও এই মুহুর্তে অর্নবও তার চোখের মণির দিকেই তাকিয়ে রয়েছে… পড়ে নিচ্ছে তার ভেতরের ভালো লাগার সমস্ত অনুভূতিগুলো চোখের তারা দিয়ে… বুকের মধ্যে তোলপাড় হতে থাকে পৃথার… হ্যা… এই ক্ষণটার জন্যই সে অপেক্ষা করেছিল কতদিন ধরে… অপেক্ষা করেছিল তার এই ভালোবাসারা মানুষটাকে নিজের শরীরের মধ্যে গ্রহণ করার প্রবল আশায়… আহহহহহ… ভাবতেই সিরসির করে ওঠে শরীরটা তার… আজ সেই মানুষটা জিনিসটা তার শরীরের মধ্যে… একেবারে ভেতরে… হি ইজ গোইং টু ফাক মী… ইয়েস… হি ইজ হোইং টু ফাক মী… ওহহহহ… মনে মনে ভাবতেই তার তলপেটটা কেঁপে ওঠে তিরতির করে… শিরদাঁড়া বেয়ে হটাৎ একটা গরম লাভা বেয়ে নেমে যায় তার… বোঁ বোঁ করে ওঠে মাথার মধ্যেটায়… একিহহহ… নট সো ফাস্ট… এত তাড়াতাড়ি… এখনও তো কিছু হয়ই নি… এর মধ্যেই… নিজেই অবাক হয়ে যায় সে… ভাবতেও পারে না কি করে? অর্গ্যাজম্‌ এর অনুভূতি তার কাছে প্রথম নয়… অনেক বার সে মাস্টার্বেশন করে অর্গ্যাজম্‌এর আরাম উপভোগ করেছে সে… কিন্তু সেটা যে এই ভাবে কিছু না করেই আছড়ে পড়বে তার শরীরের মধ্যে… সঙ্গম শুরু হওয়ার আগেই যে সম্নুখিন হবে সেই চরম অনুভূতির… ভাবতেই পারে না পৃথা… অবিশ্বাস্য… এ কি করে? মনে মনে অবাক হয়ে ভাবে… কিন্তু সে যে বুঝতে পারছে… আসছে… আসছে সেই আরামটা… ‘ওহহহহহহ সোনাআআআআহহহহহ… গডডডডড… আই অ্যাম কামিং… উফফফফ… প্লিজ হোল্ড মি টাইট… আই অ্যাম কামিং… ইয়েস ইয়েস… ইটস দেয়ার… ওহহহহ… ইটস দে……য়া……র… কা…আ…আ…আ…মি…মি…মিং…ন…ন…’ অর্নবকে খামচে ধরে চিৎকার করে ওঠে পৃথা… নিজের জঙ্ঘাটাকে সজোরে এগিয়ে ঠেলে ধরে অর্নবের কোলের দিকে… কাঁপতে থাকে তার পুরো শরীরটা থরথর করে… অর্নবের পীঠের মাংসে নখ বিঁধে যায়… অর্নব পৃথার কাঁপতে থাকা দেহটাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে চেপে ধরে রাখে… আর ওর বুকের মধ্যে ঢুকে কাঁপতে কাঁপতে পৃথা তার চরম সুখ অনুভব করতে থাকে…
 

soukoli

Member
389
58
29
৩৫।।

আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে পৃথা… কমে আসে দেহের কাঁপুনি… তবুও নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখে তাকে অর্নব… আরো একটু সময় দেয় নিজেকে সামলে নেবার… অনুভব করে পীঠের ওপরে থাকা হাতদুটোও ধীরে ধীড়ে শিথিল হয়ে আসছে… তারপর এক সময় পীঠ থেকে সরে নেমে যায় পৃথার দেহের পাশে… এলিয়ে পড়ে থাকে শরীরের দুই পাশে… পীঠের ওপরে নখের আঁচড়ের ফলে জ্বালা করে অর্নবের, কিন্তু তাতে কোন গুরুত্ব দেয় না সে… পৃথার ঝাঁকড়া চুলের মধ্যে মুখ গুঁজে শ্বাস টানে… শ্যাম্পু করা চুলের গন্ধ নেয় বুকের মধ্যে… আস্তে আস্তে আলগা করে আলিঙ্গন… টেবিলের ওপরে এলিয়ে বসে থাকে পৃথা… মুখ তুলে তাকায় সে… হয়তো চেষ্টা করে তার প্রিয়তমের মুখটা দেখার… মাথা নামিয়ে একটা গভীর চুম্বন এঁকে দেয় অর্নব পৃথার ঠোঁটে… তারপর সে মুখ সরাতেই ফিসফিসিয়ে ওঠে পৃথা… ‘লাভ ইয়ু সোনা… লাভ ইয়ু…’

নিঃশব্দে হাসে অর্নব… তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অবলীলায় টেবিলের ওপর থেকে তুলে নেয় এলিয়ে থাকা পৃথার শরীরটা… যোনির মধ্যে থেকে পিছলিয়ে বেরিয়ে আসে দৃঢ় পুরুষাঙ্গটা… কোলের মধ্যে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের কৌচের পানে… শূণ্যে ঝুলতে থাকে পৃথার নরম দেহটা… নির্দিধায় আপন শরীরটা এলিয়ে রাখে সে অর্নবের বলিষ্ঠ দুই হাতের মধ্যে… নিঃসংকোচে… নির্ভয়ে… ঘরের মধ্যে ভেসে বেড়ায় স্বল্প ভ্যলুইমে রাখা ড্যারেন বারেনবোইমের পিয়ানোর সুরের মুর্ছনা…

আলতো করে নামিয়ে পৃথাকে শুইয়ে দেয় কৌচের ওপরে… পৃথা চিৎ হয়ে শুয়ে শরীর টানটান করে দেয়… অর্নব তার পাশে এসে বসে… মুখ তুলে তাকায় পৃথা.. হাত বাড়িয়ে অর্নব মাথাটাকে ধরে নামিয়ে আনে… ঠোঁট মেলায় অর্নবের ঠোঁটের সাথে… হাত তুলে অর্নবের গলাটাকে জড়িয়ে ধরে আর কাছে টেনে নেয় তাকে…

দুজনের ঠোঁট একে অপরের সাথে লেগে থাকে… পৃথা ঠোঁট ফাঁক করে আমন্ত্রণ জানায় অর্নবের জিভটাকে… অর্নবও ঢুকিয়ে দেয় তার জিভটা… দুটো জিভ একে অপরের সাথে ঘুরে বেড়ায় মুখের মধ্যে… পৃথা অনুভব করে বুকের ওপরে অর্নবের হাতের ছোঁয়া… উমমমম… অর্নবের মুখের মধ্যেই গুঙিয়ে ওঠে সে… শরীর বেঁকিয়ে বুকটাকে তুলে ধরে অর্নবের হাতের তালুর মধ্যে… চাপ বুকের ওপরে… মুঠোভর স্তনটাকে ধরে আলতো হাতে চেপে ধরে চটকায় অর্নব… আহহহহ… পৃথার হাল্কা শিৎকার বেরিয়ে আসে…

হাতটাকে বুকের ওপর থেকে আস্তে আস্তে নামিয়ে দেয় আরো নীচের পানে… মেদহীন মসৃণ তলপেট বেয়ে নেবে যায় সে হাত নীচে, আরো নীচের দিকে… আঙুলের ডগায় স্পর্শ লাগে পশম কোমল যোনিকেশের… হাতটাকে বাড়িয়ে দেয় দুই উরুর সন্ধিস্থলে… লোমের আড়ালে থাকা পুরো যোনিটা ঢাকা পড়ে হাতের মুঠোয়… উমমম… কৌচের গদীর ওপরে পায়ের পাতার চাপ রেখে কোমরটাকে তুলে ধরে পৃথা… আহহহহ… যোনিতে হাতের স্পর্শে সিরসির করে ওঠে শরীর… ঠোঁট ছেড়ে কানের লতীতে মুখ রাখে অর্নব… গরম নিঃশ্বাস ঝাপটা দেয় পৃথার কানের মধ্যে… লতীটাকে মুখের মধ্যে পুরে চুষতে থাকে আলতো করে অর্নব… আবেশে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে পৃথার…

কানের লতী ছেড়ে মুখ গুঁজে দেয় ঘাড়ের মধ্যে অর্নব… ঘাড়ে অর্নবের ছোয়া পেতে মাথাটাকে হেলিয়ে দেয় আরো কাত করে পৃথা… অর্নবের সুবিধার্থে… অর্নব মুখ ঘসে ঘাড়ের মসৃণ চামড়ায়… ছোট্ট করে কামড় বসায় নরম ত্বকে… পৃথার মনে হয় যেন ছোট একটা বিদ্যুতের তরঙ্গ বয়ে গেলো শিড়দাঁড়া বেয়ে… অনুভব করে ছোট ছোট কামড় আর চুম্বন তার ঘাড়ে, গলায়, চোয়ালে, কাঁধের ওপরে… আহহহহ… সিরসির করতে থাকে সমস্ত শরীর… কাঁটা দিয়ে ওঠে গায়ে… দ্রুত হয়ে উঠতে থাকে নিঃশ্বাস… কাঁধ থেকে ফের মুখ ফিরে আসে পৃথার ফাঁক হয়ে থাকা ঠোঁটের ওপরে… দু জোড়া ঠোঁট ফের মিলে যায় পরম আবেশে… দুজন দুজনকে পাগলের মত চুমু খেতে থাকে… পৃথা ডানহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের গলা… চেপে ধরে রাখে নিজের ঠোঁটের ওপরে অর্নবের ঠোঁট জোড়াটাকে…

অর্নবের হাত যোনি ছেড়ে ফিরে আসে তার নরম বুকের ওপরে… বাঁ দিকের স্তনটায় আঙুলের ডগা বোলায়… খেলে বেড়ায় স্তনের ওপরে… স্তনের বোঁটায়… স্তন বলয়ে… উমমমম… গুঙিয়ে ওঠে পৃথা অর্নবের মুখের মধ্যে… বোঝে অসম্ভব দ্রুততার সাথে সে আবার ভিজে উঠছে… হড়হড়ে হয়ে উঠছে যোনির ভেতরটা… মুঠোর মধ্যে ধরা পড়ে স্তনটা… চাপ দেয় সেটায়… এবার আর আলতো করে নয়… বেশ জোরে… প্রায় কাঁচিয়ে মুঠোর মধ্যে ধরে চটকায় পুরো স্তনটাকেই… উমমমম… ফের গোঙায় পৃথা… শক্ত, ফুলে ওঠে তার স্তনের বোঁটা… সারা শরীরটা ছটফট করে প্রেয়াষ্পদের আদরে… অর্নব অপর স্তনটাকে তুলে নেয় হাতের মুঠোয়… সেটাকেও ধরে চটকাতে থাকে ঠিক আগের মত করে… ইশশশশশ… অর্নবের মুখের ওপর থেকে নিজের মুখ তুলে চাপা শিৎকার দিয়ে ওঠে পৃথা…

অর্নব হাত সরিয়ে মুখ নামিয়ে স্তনের বোঁটাকে মুখের মধ্যে পুরে নেয়… জিভ বোলায় বোঁটার চার ধারে… ওহহহহ মাআআআআহহহহ… কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… অর্নবের চুলটাকে খামচে ধরে মুঠোয়… আহহহহহহহ… সারা শরীরের মধ্যে যেন অসহ্য সুখ দৌড়ে বেড়াচ্ছে বলে মনে হয় তার… অসহ্য সুখ আছড়ে পড়তে থাকে বুকে, নাভীতে, ভগাঙ্কুরের ওপরে… নিজের শরীরটাকে বেঁকিয়ে সোফার কিনারে নিয়ে আসে পৃথা… পাদুটোকে মাটির ওপরে রেখে মেলে ধরে মাংসল পুরুষ্টু উরু দুই দিকে খুলে দিয়ে… আর পারছে না সে… ভিষন ভাবে এই মুহুর্তে তার যোনির মধ্যে কিছুর স্পর্শ পাওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে… ছটফট করে ওঠে সোফায় শুয়ে…

অর্নব যেন তার মনটা অদ্ভুত ভাবে পড়ে ফেলে… মুখে কারুর কোন কথা নেই… কিন্তু তাদের একের মনের ভাব অবলীলায় বয়ে চলে অপরের কাছে… হাতের একটা আঙুল তুলে ছোয়ায় ভিজে ওঠা যোনির ভাঁজে… আহহহহহহ… শিঁটিয়ে উঠে কোমর বেঁকিয়ে তুলে ধরে নিজের জঙ্ঘাটাকে অর্নবের আঙুলের দিকে… অর্নবের আঙুল খেলা করে ওর খুলে মেলে রাখা যোনির ওপরে, ভগাঙ্কুর ছুয়ে… কাঁপন ধরে যোনিটায়… আঙুলের সাথে সাথে নিজের কোমর ঘোরায় পৃথা… তুলে তুলে ধরে আঙুলের আরো ভালো করে স্পর্শ পাবার আশায়… স্তনের বোঁটায় অর্নবের মুখ আর ভগাঙ্কুরের ওপরে তার আঙুল… দুই জায়গায় একই সাথে সংস্পর্শ তাকে পাগল করে তোলে… তার সারা দেহে আগুন ছুটতে থাকে…

সবে যখন পৃথা ভাবতে শুরু করেছে, এবার হয়তো আঙুল সরাবে অর্নব, কারণ আর সে নিতে পারে না ওর স্পর্শ তার যোনির ওপরে, এতটাই সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে জায়গাটা… ঠিক তখনই আঙুলটাকে আমূল ঢুকিয়ে দেয় যোনির মধ্যে অর্নব… একেবারে শেষ গাঁট অবধি… ঈঈঈঈঈঈঈঈ… শিঁটিয়ে ওঠে পৃথা… মাথাটাকে বেঁকিয়ে গুঁজে দেয় সোফার গদির মধ্যে… বুকটা এগিয়ে উঠে যায় অর্নবের মুখের দিকে আরো ভালো করে… অর্নব বার দুয়েক যোনির মধ্যে আঙুলটাকে ঢুকিয়ে বের করে নেয়… রসে ভেজা আঙুলটাকে রাখে ফের ভগাঙ্কুরের ওপরে… চক্রাকারে বোলায় সেখানটায়… তারপর আবার ঢুকিয়ে দেয় আঙুলটাকে যোনির মধ্যে… এবার বেশ জোরে জোরে আঙুল চালনা করে যোনির মধ্যে ভেতর বাইরে করে… হাতের চেটোটা ঘসা খায় যোনির মুখটায়, ভগাঙ্কুরের ওপরে… পেটের মধ্যে হাজারটা পোকা কিলবিলিয়ে ওঠে যেন… হাত দিয়ে খামচে ধরে কৌচের কাপড়টাকে… আঙুলের ছন্দে নিজের নিতম্বটাকে তুলে যোনিটাকে বারে বারে তুলে ঠেলে দিতে থাকে অর্নবের হাতের দিকে… ওহহহহহহ… কেঁপে ওঠে তার সারা শরীর… পৃথা পরিষ্কার বুঝতে পারে আবার তার শরীরের মধ্যে চরম সুখ তৈরী হচ্ছে… যে সুখে ফের সে ভেসে যাবে আজ… ভাবতেই বিনবিন করে আরো খানিকটা রস গড়িয়ে বেরিয়ে আসে অর্নবের আঙুলের সাথে… ধকধক করে ওঠে পেটের পেশিগুলো… তিরতির করে কাঁপন জাগে তলপেটে… সেই আগের অনুভূত হওয়া লাভার উদ্গীরণের অপেক্ষা করে সে… আসছে… আসছে… আর একটু… আর একটু… মনে মনে অপেক্ষা করে সেই চরম সুখটার…

আকস্মিক আঙুলটাকে বের করে নেয় যোনির মধ্যে থেকে অর্নব, সে সাথে মুখটাকেও সরিয়ে নেয় বুকের ওপর থেকে… ননননন… কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… ‘না… প্লিজ… এ…এখন থামলে কেনহহহহ? আর একটু করো নাহহহহ…’ কাতর গলায় বলে ওঠে সে… কিন্তু অর্নব উত্তর দেয় না… পৃথার শরীরটাকে ঘুরিয়ে শোয়ায়… কোমর থেকে শরীরের নীচটা বেরিয়ে থাকে সোফার থেকে বাইরে… পা দুটোকে ধরে দুই পাশে সরিয়ে দেয়… তারপর পৃথা অনুভব করে অর্নবের দেহটাকে তার ওই মেলে রাখা দুই পায়ের ফাঁকে… হাত বাড়িয়ে দেয় সে শূণ্যে… গলা জড়িয়ে ধরে অর্নবের… ধরে টেনে নেয় নিজের দিকে… যোনির মুখে ছোয়া পায় অর্নবের পৌরুষের… আহহহহহ… সম্ভাব্য অভিঘাতের আশায় শিৎকার বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে… অর্নব মুখ নামিয়ে চুমু খায় কানের পাশে… পৃথা মুখ ফিরিয়ে খুঁজে নেয় অর্নবের ঠোঁটটা… চেপে ধরে নিজের ঠোঁট তার পুরুষালী ঠোঁটের ওপরে… উমমমমম… অর্নবের মুখের মধ্যেই গোঙায় সে… খানিক পরেই ওর ঠোঁট ছেড়ে নেবে যায় অর্নব মেলে রাখা পায়ের ফাঁকে… পাদুটোকে দুই হাতের মধ্যে ধরে হাটুর থেকে মুড়ে ঠেলে পিছিয়ে দেয় আরো… যার ফলে আরো খুলে মেলে যায় অর্নবের সামনে পৃথার যোনিটা… যোনির পাপড়িতে লেগে থাকা রস চকচক করে ঘরের স্তিমিত আলোয়… একটা ঝাঁঝালো গন্ধ এসে ঝাপটা দেয় অর্নবের নাকে… অর্নব জিভ বের করে লম্বা লম্বী ভাবে চেটে দেয় পুরো যোনিটাকে… মুখের মধ্যে নোনতা স্বাদ এসে ঠেকে… জিভটাকে সরু করে ছোঁয়ায় ভগাঙ্কুরে… ওহহহহহ মাআআআআআ… হাত বাড়িয়ে অর্নবের মাথাটাকে ধরে কঁকিয়ে ওঠে পৃথা… নীচ থেকে নিতম্বটাকে তুলে আরো ঠেলে দেয় যোনিটাকে অর্নবের পানে…

‘ওহ গড… ইয়েস… সাক মী… লিক মাই কান্ট্‌ লাইক দ্যাট…’ ফিসফিসিয়ে ওঠে পৃথা… যে ভাবে যোনির মধ্যে অর্নবের জিভের আসা যাওয়া করছে, তাতে কতক্ষন নিজেকে আর ধরে রাখা সম্ভব বুঝতে পারে না সে… তিরতির করে ফের তার রাগমোচনের সুখটা ফের উঠে আসছে বোঝে পৃথা… থরথর করে কাঁপতে থাকে তার শরীরটা… অনুভব করে কি অদ্ভুত কায়দায় অর্নব ওর যোনিটাকে চেটে চলেছে… কখনো পুরো যোনিটাকে নীচ থেকে ওপর অবধি চেটে দিচ্ছে, কখনও জিভটাকে ভরে দিচ্ছে যোনির একেবারে ভেতরে… জিভ দিয়েই সঙ্গম করছে তার যোনিটায়… পরক্ষনেই পুরো জিভটা সরাসরি পেতে চেপে ধরছে তার ভগাঙ্কুরটার ওপরে… ওই ভাবেই চেপে ধরে ঘসছে ভগাঙ্কুরের ওপরে… পায়ের আঙুলের টিক দিয়ে ঠেলে ধরে যোনিটাকে আরো উঁচু করে… অনুভব করে সুখ আছড়ে পড়ছে ঢেউএর মত তার যোনির মধ্যে… আর সেই তরঙ্গের রেশ যোনি থেকে বেয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেহের আনাচে কানাচে… ‘ওওওওওও মাআআআআআআ…’ কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… গুটিয়ে রাখা পুরো পাটাই থরথর করে কেঁপে ওঠে ভিষন ভাবে… সজোরে আঘাত হানে চরম সুখ… সেই তীব্র সুখের আবেশে উল্টে যায় চোখের মণি তার… বেঁকে যায় পুরো শরীরটাই সোফার ওপরে… ‘ওওওওওওও মাগোওওওও ইশশশশশ… ইইইইইইইইই…’ গলা তুলে চিল্‌ চিৎকার করে ওঠে প্রচন্ড সুখের আবেশে… ‘ওহ! ই…ইট মী!… ইট মী… ডোন্ট স্টপ!… ডোন্ট স্টপ!… ওহ! ফাক!… ইট মীইইইইইইই…’ রাগমোচনের প্রচন্ড সুখের মধ্যে পাগলের মত বলে চলে সে… যোনির মধ্যে দিয়ে এক ঝলকে প্রায় উথলে বেরিয়ে আসে বর্ণহীন উষ্ণ রস… যেন প্রায় যোনির মধ্যে থেকে উগড়ে দেয় দেহের মধ্যে পুঞ্জিভূত রসের ধারা… মাখামাখি হয়ে যায় অর্নবের মুখের সাথে… ঝরে পড়া পাতার মত থরথর করে কাঁপে পৃথার পুরো শরীরটাই… কাঁপন চলে প্রায় সেকেন্ড দুয়েক ধরে… এক নাগাড়ে… তারপর আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে সেই কম্পন… সোফার ওপরেই এলিয়ে পড়ে পৃথা সাম্প্রতিক রাগমোচনের ক্লান্তিতে… হাঁফাতে থাকে মুখ দিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস টেনে… চোখ বন্ধ করে…

পৃথা শান্ত হতে অর্নব আরো বার দুয়েক জিভ দিয়ে চেটে দেয় রসে ভরা যোনিটাকে… জিভের ছোঁয়ায় কেঁপে কেঁপে ওঠে পৃথার শরীর… তিরতির করে কেঁপে ওঠে নরম নিতম্বটাও… হাতের মধ্যে ধরে রাখা পৃথার পা দুটোকে ছেড়ে দিয়ে ফের উঠে আসে অর্নব, ওপর দিকে, পৃথার শরীর বেয়ে… মুখের ওপরে পড়া নিঃশ্বাস অনুভব করে হাতদুটোকে বাড়িয়ে দেয় পৃথা… পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে প্রিয়তমের গলাটাকে… টেনে নিয়ে আসে নিজের কাছে… ঠোঁটটা চেপে ধরে অর্নবের ঠোঁটের ওপরে… স্বাদ পায় নিজের দেহরসের অর্নবের মুখে… অর্নবের ঠোঁটটা নিজের মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চুষতে থাকে অক্লেশে… ‘ইয়ু ক্যান ডু ম্যাজিক… লাভ ইয়ু…’ ফিসফিসিয়ে বলে চুমু খাবার ফাঁকে… নিঃশব্দে হাসে শুধু অর্নব… হাত বোলায় পৃথার গালে, গলায়, কাঁধে…

পৃথা নিজের ডান হাতটাকে নামিয়ে দেয় তাদের দুই জনের শরীরের মাঝখান দিয়ে… মুঠোয় ধরে শক্ত হয়ে থাকা পুরুষাঙ্গটাকে… হাতের তেলো যেন পুড়ে যায় তার, এতটাই গরম ঠেকে পুরুষাঙ্গটা তার… মনে হয় যেন কেউ গরম তেলে চুবিয়ে সদ্য তুলে তার হাতের মধ্যে ধরিয়ে দিয়েছে… হাতের মুঠোয় ধরে ওটার গায়ের চামড়াটা আগু পিছু নাড়ায় ‘আহহহহ… ফাক মী… আমার মধ্যে এসো এবার… প্লিজ…’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে অর্নবকে… বলতে বলতে নিজের পাদুটোকে ফের গুটিয়ে তুলে রাখে সোফার ওপরে… ফের দুই দিকে ফিরিয়ে মেলে দেয় নিজের যোনিটাকে অর্নবের সামনে… তারপর নিজের হাতেই পুরুষাঙ্গটাকে ধরে তার মাথাটাকে রাখে যোনির মুখটায়… সেখানটায় স্পর্শ পেতেই ফের কেঁপে ওঠে দেহটা তার… উমমমমম… গুঙিয়ে ওঠে আরামে… পুরুষাঙ্গের মাথাটাকে ঘসে নিজের যোনির মুখে… তারপর নিজের কোমরটাকে তুলে চেষ্টা করে এগিয়ে ধরতে, কিন্তু অর্নব হাত তুলে বাধা দেয় তাতে… প্রশ্ন চোখে মুখ তুলে তাকায় সে… কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারে কি কারণে অর্নব তাকে বাধা দিয়েছে…

অর্নব নিজের হাতে পুরুষাঙ্গটাকে ধরে নেয়… তারপর সেটাকে আরো বারদুয়েক যোনির মুখটায় ঘসে বেরিয়ে আসা রস মাখায় ভালো করে সেটার মাথায়… তারপর ফের যোনির মুখের কাছটায় রেখে চুপ করে দাঁড়ায় খানিক…

অধৈর্য হয়ে ওঠে পৃথা… ‘প্লিজ… প্লিজ ফাক মী…’ হিসিয়ে ওঠে সে…

অর্নব এবার আসতে করে কোমরের চাপ দেয়… রসে ভরা যোনির মধ্যে সট্‌ করে লিঙ্গের মাথাটা অক্লেশে ঢুকে যায় এক ধাক্কায়… ‘ওহ! ফাক…’ শিঁটিয়ে ওঠে পৃথা… উপলব্ধি করে তার যোনির পেশিগুলোকে সরিয়ে স্থুল মাথাটা কি ভাবে সেঁদিয়ে গিয়েছে শরীরের ভেতরে… আর একটু চাপ দেয় অর্নব… আরো খানিকটা অংশ ঢুকে যায়… অর্নব এবার টেনে বাইরের দিকে বের করে নেয় খানিকটা, লিঙ্গটাকে… শুধু মাত্র মাথাটা ঢুকিয়ে রাখে… পৃথা টানটান উত্তেজনায় অপেক্ষা করে… ধকধক করতে থাকে বুকের মধ্যেটা… ‘ওহহহহহহ! শীইইইটটট্‌…’ কোঁকিয়ে ওঠে সে যখন এক ধাক্কায় সম্পূর্ণ লিঙ্গটাকেই ঢুকিয়ে দেয় অর্নব ওর শরীরের মধ্যে… ঢুকিয়ে দিয়েই চুপ করে রেখে দেয় চেপে ধরে… ওর লিঙ্গের পরিধির সাথে পৃথার যোনিটাকে মানিয়ে নেবার সময় দেয়… তারপর যখন বোঝে পৃথা তৈরী… আস্তে আস্তে কোমর নাড়াতে শুরু করে… রমনের ছন্দ তৈরী করে পৃথার যোনিতে… পৃথা আবেশে নিজের পা দুখানা তুলে দেয় ওপর পানে… অর্নবের কাঁধের ওপরে…

অর্নব নাগাড়ে রমন করে চলে পৃথার যোনি… তার নিরাকার দেহটা আছড়ে পড়ে পৃথার নরম নিতম্বের ওপরে… সারা ড্রইংরুমটায় ভরে যায় একটানা থপথপ শব্দে… ছাপিয়ে যায় পিয়ানোর সুরের মুর্ছনাকেও… ভারী হয়ে ওঠে ঘরের বাতাস মিলনের তীব্র মাতাল করা গন্ধে…

‘আহহহহ… আহহহহহ’ প্রতিবার শরীরের গভীরে লিঙ্গের প্রবেশের সাথে গুঙিয়ে গুঙিয়ে উঠতে থাকে পৃথা… শরীর মিলনের শব্দের সাথে অদ্ভুত ভাবে মিলে যায় তার যৌনাত্বক শিৎকারগুলো… একটু একটু করে ফের চরম সুখের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে তার শরীরটা… যোনির মধ্যে থেকে তীব্র সুখ বেয়ে চলে যায় মাথার দিকে আর খানিকটা পায়ের পাতায়… তলপেটের মধ্যে ফের তৈরী হতে থাকা উষ্ণ লাভার অনুভূতি এড়ায় না পৃথার… নিজেই উপযাযক হয়ে অর্নবের কাঁধ থেকে পা নামিয়ে হাঁটুর নীচে হাত রেখে টেনে বুকের কাছে নিয়ে আসে… মেলে ধরে আরো ভালো করে যোনিটাকে অর্নবের আঘাতের সামনে… ‘আহহহহহ… করো সোনা… করোহহহহহ… আর একটু… আমার আবার হবে… আসছে… হ্যা সোনা… আসছে…’ ফিসফিসিয়ে জানান দেয় পৃথা… যোনির পেশি দিয়ে কামড়ে ধরার চেষ্টা করে যাতায়াত করতে থাকা লিঙ্গটাকে..

হটাৎ কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা ফের… ‘ওহহহহহ… ওহহহহ গড… ইয়েসসসস… ফাক মী!… ইয়োর কক ফিলস্‌ সো গুড… ফাক মীঈঈঈঈঈঈঈঈ!…’ শেষেরটা ফের চিল চিৎকার করে ওঠে পৃথা… ফের থরথর করে কাঁপন ধরে তার শরীরে… একই সন্ধ্যেয় তৃতীয়বারের জন্য রাগ মোচন করে তীব্র সুখের মধ্যে দিয়ে…

পৃথাকে রাগমোচন করতে দেখে একটু থেমে থাকে অর্নব… সময় দেয় তাকে ধাতস্থ হবার… তারপর যখন বোঝে যে একটু শান্ত হয়েছে পৃথা, ফের শুরু করে কোমর সঞ্চালনের… এবার আর আস্তে নয়… প্রবল গতিতে চলতে থাকে রমন… আছড়ে পড়তে থাকে লিঙ্গটা যোনির মধ্যে… ‘হমমমম…’ গুঙিয়ে ওঠে অর্নব রমন করতে করতেই… আরো জোরে চেপে ধরে পৃথার পা দুটোকে ওর দেহের সাথে… প্রতিটা আঘাতের সাথে নরম সুগোল বুকদুটো দুলে দুলে ওঠে সেই অভিঘাতে… পৃথার বুঝতে অসুবিধা হয় না অর্নবের বীর্যস্খলনের সময় আর খুব দূরে নেই… হাত বাড়িয়ে আঁকড়ে ধরে অর্নবের বাহু… গুনগুনিয়ে ওঠে সে… ‘কাম বেবী কাম… কাম ইন্সাইড মী… গিভ ইট টু মী… ফাক মী বেবী… গিভ ইট টু মী… আই অ্যাম সেফ নাও… ইয়ু ডোন্ট হ্যাভ টু ওয়ারি… গীভ ইট টু মী…’ পৃথার মুখ থেকে ‘সেফ’ কথাটা শুনে আর রাখতে পারে না নিজেকে সংযত… কেমন অদ্ভুত স্বরে ঘড়ঘড় করে ওঠে গলার মধ্যে থেকে… আর বার দুয়েক কোমর দোলায় সে… তারপরই চেপে ঠেসে ধরে নিজের লিঙ্গটাকে পৃথার যোনির অভ্যন্তরে… ‘উমফফফ…’ গুঙিয়ে ওঠে সে… পৃথা অনুভব করে তার জরায়ুর গায়ে এসে প্রচন্ড গতিতে ধাক্কা মারে এক উষ্ণ অনুভূতি… তার মনে হয় যেন কেউ তপ্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে শরীরের মধ্যে… সেও অর্নবের সাথে কেঁপে ওঠে… ‘ওহহহহহহ মাহহহহহহ… দাওওওওও… সোনাআআআআ…’ শিৎকার দিয়ে ওঠে সে… অর্নবের সাথেই তারও যোনির মধ্যে তীব্র রাগমোচন হয় ফের… অর্নবের বাহুটাকে আঁকড়ে ধরে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে সেও…

আস্তে আস্তে দুটো শরীর ক্লান্ত হয়ে এলিয়ে যায়… পৃথা সোফার ওপরে ওই ভাবেই আধ শোয়া হয়ে পড়ে থাকে, আর তার দেহের ওপরে এলিয়ে পড়ে থাকে কায়াহীন অর্নব।

9

৩৬।।

ঘুমটা অর্নবেরই প্রথম ভাঙে… জানলার ফাঁক গলে ভোরের প্রথম সূর্যের আলোর রেখাটা এসে পড়ে তার মুখের ওপরে… আলতো করে চোখ খুলে তাকায়… পাশে, তার শরীর ছুঁয়ে পেছন ফিরে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পৃথা… নরম নিতম্বটা ছুয়ে রয়েছে তার কোলের সাথে… মাথাটা ডানহাতের বাহুর ওপরে রাখা… অর্নব আলতো করে বাঁ হাতটা তুলে রাখে পৃথার নিতম্বের ওপরে… তুলতুলে নরম শরীরটায় হাতটা যেন ডুবে যায় তার… কোমল শরীরের স্পর্শ পেয়ে পৌরষ জেগে ওঠে যেন ইষৎ… কোমরটাকে সামান্য এগিয়ে ছোঁয়া দেয় নিতম্বে, একটু একটু করে মাথা তুলে দাঁড়াতে থাকা পুরুষাঙ্গটা দিয়ে… মুখ নামিয়ে কাঁধের খাঁজে হাল্কা চুমু খায় সে… পৃথার নবীন শরীরের গন্ধে ভরে ওঠে বুক…

অর্নবের ছোয়ায় পাতলা হয়ে আসে ঘুম, চোখ না খুলেই বলে ওঠে পৃথা… ‘গুড মর্নিং…’ ভোরের বাতাস জানলা দিয়ে এসে তার নগ্ন শরীরের ওপরে আবেশ সৃষ্টি করে… আবেশ সৃষ্টি করে অর্নবের দেহের পুরষালী স্পর্শ… ঠোঁটে ফুটে ওঠে স্মিত হাসি… ঘাড় ঘুরিয়ে মাথাটাকে অর্নবের দিকে ফিরিয়ে মেলে ধরে নিজের ঠোঁটটাকে… অর্নব ঝুঁকে চুমু খায় মেলে রাখা ঠোঁটের ওপরে… ফিসফিসিয়ে বলে, ‘গুড মর্নিং… ভোর হয়ে গেছে, সোনা…’

‘উমমম… জানি…’ বন্ধ চোখেই গুঙিয়ে উত্তর দেয় পৃথা… তারপর আবার মুখ ফিরিয়ে পেছন করে অর্নবের বাহুর ওপরে মাথাটাকে নামিয়ে দেয়… নিতম্বের ওপরে থাকা হাতটাকে নিজের হাতে ধরে টেনে নেয় আদুল বুকের ওপরে… চাপ দেয় অর্নবের হাতের ওপরে… চাপ পড়ে পৃথার স্তনে… ‘উমমমম…’ গুনগুনিয়ে ওঠে নরম স্তনে চাপ পেয়ে… অর্নব হাতে তেলোয় অনুভব করে তার এই সামান্য স্পর্শেই সাড়া দিতে শক্ত হয়ে ওঠা স্তনের বোঁটাটা… পৃথা আরো সরে ঢুকে আসে অর্নবের কোলের মধ্যে… নিজের নরম নিতম্বটাকে আরো বেশি করে প্রায় গুঁজে দেয় যেন অর্নবের কোলের মধ্যে… স্পর্শ নেয় জেগে ওঠা পুরুষাঙ্গটার নিজের দেহের সাথে… অর্নব একটু ঝুঁকে মুখ রাখে পৃথার গলা আর কাঁধের মাঝে… হাতের মধ্যে ধরা স্তনের বোঁটাটাকে দুটো আঙুল দিয়ে ধরে… আলতো করে সেটাকে ঘোরায় আঙুলের চাপে রেখে… ‘ইশশশশ…’ শিসিয়ে ওঠে পৃথা… মুখ ঘুরিয়ে হাতটাকে বাড়িয়ে দেয় পেছন দিকে, অর্নবের চুলটাকে খামচে ধরে টেনে আনে নিজের মুখের ওপরে, তারপর নিজের ঠোঁটটার ওপরে চেপে ধরে অর্নবের ঠোঁটটাকে… অর্নব মুখের মধ্যে টেনে নেয় পাতলা ঠোঁটের পাটি… হাতের মধ্যে ধরা স্তনটাকে নিয়ে চটকাতে চটকাতে চুষতে থাকে পৃথার পাতলা ঠোঁটটাকে… ‘উমমমম…’ অর্নবের মুখের মধ্যেই গোঙায় চাপা গলায় পৃথা… অর্নব বদল করে স্তন… অপর স্তনটাকে নিজের হাতের মুঠোয় কাঁচিয়ে ধরে সে…

অর্নবের মুখে মুখ রেখেই ঘুরে যায় পৃথা… চিৎ হয়ে শোয়…

অর্নব পৃথার ঠোঁট ছেড়ে নেবে যায় আর একটু নীচের দিকে… চুমু খেতে থাকে পৃথার চিবুকে, গলার ওপরে… মাঝে মাঝে ছোট ছোট কামড় বসায়… পৃথা অর্নবের চুল ধরে আরো নামাবার চেষ্টা করে তার দেহের নীচের পানে… কিন্তু অর্নব গলার নীচে ইচ্ছা করেই আর নামে না… চুমু খায় তার কন্ঠার হাড়ে…

‘প্লিজ…’ ফিসফিসিয়ে ওঠে পৃথা… ‘লিক মাই টিটিস… বাইট দেম… মার্ক মী ইয়োর্স…’

অদৃশ্য ঠোঁটের কোনে হাসি খেলে যায় অর্নবের… মনে মনে সেও খুশি হয় পৃথার অনুরোধ শুনে… সময়ও নষ্ট করে না আর… চুমু খেতে খেতে নেবে যায় আরো খানিকটা, পৃথার শরীর বেয়ে… মুখ রাখে বাম স্তনের পাশটায়… মুখ ডুবিয়ে চাপ দেয় নরম ত্বকের মধ্যে… পুরো মুখটাই নাক সমেত ডেবে ঢুকে যায় স্তনের কোমলত্বের মধ্যে… শ্বাস নেয় একটা বড় করে… তারপর মুখটাকে সামান্য তুলে জিভ বের করে ছোয়া দেয়… জিভটাকে সরু করে চক্রাকারে ঘোরাতে থাকে স্তনের ত্বকের ওপরে, পুরো স্তনটাকে জুড়ে… একটু একটু করে ছোট করে আনতে থাকে সেই ভেজা জিভের ছোঁয়ার পরিধী… সেই সাথে বুকের মাঝখানে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে জিভের ডগাটাকে… শেষে পৌছায় ইপ্সিত প্রান্তে… ছোয়া দেয় ভেজা জিভ দিয়ে শক্ত ফুলে প্রায় দাঁড়িয়ে থাকা স্তনের বোঁটার ওপরে… ‘উমমম আহহহ…’ গুঙিয়ে ওঠে পৃথা, নিজের স্তনের বোঁটায় ভেজা স্পর্শ পেয়ে… পীঠ বেঁকিয়ে তুলে ধরে বুকটাকে অর্নবের সামনে… নুড়ির আকার ধারণ করা বোঁটার ওপরে জিভটাকে বোলাতে থাকে অর্নব… জিভ দিয়ে নাড়া দেয় ওটাতে… ঘোরায় চক্রাকারে বলয় ধরে… তারপর এক সময় মুখের মধ্যে পুরে, টেনে নেয় বোঁটাকে… হাল্কা দাঁতের কামড় বসায় বোঁটাটার ওপরে…

‘ইয়েস…!’ হিশিয়ে ওঠে পৃথা…

অর্নব এক নাগাড়ে মুখের মধ্যে থাকা বোঁটাটা চোষে, কামড়ায়, চাটে… প্রায় মিনিট খানেক ধরে চলে তার এই কর্মকান্ড… কানে আসে পৃথার একটানা গোঙানী… পেলব দেহটা মোচড়ায় সে… অর্নব অপর বোঁটার ওপরে মনোনিবেশ করে… একই ভাবে সেটাকেও মুখের মধ্যে নিয়ে আদর করে চলে সমানে… আর সেই সাথে ফেলে আসা বুকের বোঁটাকে হাতের আঙুলের চাপে বন্দি করে নেয়… মোচড়ায় সেটাকে… রগড়ায় আঙুলের চাপে ধরে…

‘ওহহহহ মাআআহহহ…’ গুঙিয়ে ওঠে পৃথা… হাত বাড়িয়ে অর্নবের হাতটাকে নিজের হাতের মুঠোয় ধরে নেয়… তারপর সেটাকে ঠেলে নামিয়ে দেয় দেহের আরো নীচের পানে… পা দুটোকে ফাঁক করে মেলে ধরা নগ্ন যোনির ওপরে চেপে ধরে… ঘসে সেখানটায় অর্নবের হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে ধরে…

নরম লোমশ যোনির ওপরে চেপে বসে অর্নবের হাতের তালু… যোনিটা কি পরিমাণ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার… আঙুল বাড়িয়ে রাখে যোনির মুখটায়… পাপড়িগুলোর ওপরে… আঙুলের ডগায় স্পর্শ লাগে পিচ্ছিল যোনি রস… সেই রস আঙুলের ডগায় নিয়ে ছোঁয়া দেয় ভগাঙ্কুরটার ওপরে… ‘ওহহহহহহ…’ শিঁটিয়ে ওঠে পৃথা… পা দুখানি আরো মেলে কোমর থেকে তুলে ধরে নিজের জঙ্ঘাটাকে অর্নবের আঙুলের দিকে… যোনির মধ্যে থেকে যেন বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে যায় শরীরের অভ্যন্তরে… কেঁপে ওঠে তার শরীরটা… সেই কম্পন অনুভব করে অর্নবও, ভগাঙ্কুরের ওপরে রাখা আঙুলের ডগায়…

ফিসফিসিয়ে আদেশ করে পৃথা… ‘পুট ইয়োর ফিঙ্গার্স ইনসাইড…’

আর দ্বিতীয়বার বলতে হয় না অর্নবকে, সে যেন এটার অপেক্ষাতেই ছিল, প্রথমে একটা, তারপর আরো একটা আঙুল সামান্য বেঁকিয়ে ঢুকিয়ে দেয় রসে ভরে থাকা হড়হড়ে যোনির মধ্যে… আস্তে আস্তে ঢোকাতে বের করতে শুরু করে সে যোনির মধ্যে আঙুল পুরে রেখে… অর্নবের আঙুলের যাতায়াতের ছন্দে নীচ থেকে কোমরের তোলা দেয় পৃথা… নিতম্বটাকে তুলে এগিয়ে ধরতে থাকে অর্নবের পানে… সাথে নাগাড়ে শিৎকার বেরিয়ে আসতে থাকে তার মুখ থেকে… হাত বাড়িয়ে নিজের স্তনের একটা বোঁটা টেনে ধরে আঙুলের চাপে ধরে… টানতে থাকে মুচড়ে ধরে… অর্নব যোনির মধ্যে থাকা আঙুলদুটোকে একটু বাঁকায়… এমন ভাবে বেঁকিয়ে ধরে যাতে যোনির মধ্যের অভিষ্ট বিন্দুটায় পৌছতে পারে সে আঙুলের ডগাটাকে…

‘আহহহ… ইশশশশশ…’ পৃথার গোঙানী ধীরে ধীরে রূপান্তরিত থাকে থাকে শিৎকারে… আর চাপা গলায় নয়… একটু একটু করে পারদ চড়ে গলার স্বরের অর্নবের অঙ্গুলিসঞ্চালনের সাথে সাথে… অর্নবের আঙুল মাখামাখি হয়ে যায় পৃথার দেহের আঠালো রসে… আপন হাতের মুঠোয় প্রায় খামচে ধরে চটকায় স্তনটাকে নিয়ে পৃথা… অর্নব মুখ নামিয়ে চুমু খায় মেলে রাখা থাইয়ের ভেতরের নরম চামড়ায়… ‘ইইইইই… মাহহহহহহ… ইশশশশশশ…’ কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা হটাৎ… পায়ের আঙুলের টিক দিয়ে তুলে ধরে কোমরটা বেশ খানিকটা বিছানার থেকে… দেহের আরো গভীরে গেঁথে যায় অর্নবের আঙুলদুটো… তালু চেপে বসে যোনির মুখটায়, ভগাঙ্কুরটার ওপরে… থরথর করে কাঁপে পৃথার তলপেট… কাঁপে দুটো কোমল সুঠাম উরু… গলগল করে উষ্ণ রস বেরিয়ে আসে যোনির ভেতর থেকে… ভাসিয়ে দেয় অর্নবের চেপে ধরা হাতের চেটো… ঝরে পড়ে সেই চটচটে ফেনিয়ে ওঠা রস… বিছানার ওপরে… এক হাতের মুঠোয় নিজের স্তনটাকে চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে খামচে ধরে বিছানার চাঁদর… ‘ওহ! গড!… ইটস্‌ সো হার্ড… মাগোহহহহহ…!’ রাগমোচনের অভিঘাতে কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… উরুদুটোকে একে অপরের সাথে চেপে ধরে প্রাণপনে যোনির মধ্যে পুরে রাখা অর্নবের হাত সমেত… রাগমোচনের সুখে অবশ হয়ে আসে তার শরীর… তারপর আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসে সে… কোমর নামিয়ে এলিয়ে পড়ে বিছানার ওপরে… অর্নব যোনির মধ্যে থেকে হাতটা টেনে বের করে নেয়… এগিয়ে গিয়ে রাখে পৃথার স্তনের ওপরে… যোনির রসে ভেজা আঙুলটাকে মাখিয়ে দিতে থাকে তার স্তনের দুটো বোঁটায়… তারপর এগিয়ে গিয়ে মুখ রাখে সেই স্তনের ওপরে… জিভ বার করে চাটে বোঁটাটাকে মুখের মধ্যে নিয়ে… স্বাদ নেয় পৃথার দেহের রসের তার স্তনের বোঁটার ওপরে… গুঙিয়ে ওঠে পৃথার চাপা গলায়…

অর্নবের কাঁধ ধরে টেনে নেয় নিজের আরো কাছে পৃথা… ঠোঁটা বাড়িয়ে চেপে ধরে অর্নবের ঠোঁটের ওপরে… চুমু খায় পরম ভালোবাসায়…

হটাৎ করে অর্নবকে ধরে চিৎ করে শুইয়ে দেয় পৃথা… তারপর নিজে উঠে বসে অর্নবের ওপর দিয়ে পা ফিরিয়ে রেখে চড়ে বসে সে ওর কোমরের ওপরে… ঠোঁটের কোনে লেগে থাকে একরাশ দুষ্টুমীর হাসি… অর্নবের কাঁধদুটো ধরে ঝুঁকে আসে না দেখা মুখের ওপরে… হাত তুলে আন্দাজে ছোয় অর্নবের ঠোঁটের ওপরে… ছোট ছোট চুমু এঁকে দিতে থাকে বড় বড় গোঁফ দাড়ির জঙ্গলের ফাঁকে থাকা পুরু ঠোঁটের ওপরে… আস্তে আস্তে নামতে থাকে চুমু খেতে খেতে, নীচের দিকে… হাত দিয়ে তুলে সরিয়ে ধরে বুকের ওপরে পড়ে থাকা সেই দাড়ির রাশি… চুমু খায় গলায়… কন্ঠায়… লোমশ বুকের মাঝে… হাত বোলায় চওড়া ছাতির ওপরে… বোলাতে বোলাতেই হাতের আঙুলের ডগায় ঠেঁকে লোমের আড়ালে থাকা ছোট্ট বুকের বোঁটাটা… আঙুলের ফাঁকে ধরে চিমটি কাটে সেটায় আলগোছে… আঙুল বোলায় বোঁটাটার চারধারে… তারপর সেই খানটায় মুখটা নামিয়ে জিভ ছোঁয়ায় সে… দাঁত দিয়ে কুরেকুরে দিতে থাকে আলতো চাপে… ‘উউউহহহহ…’ গুঙিয়ে ওঠে অর্নব পৃথার কর্মকান্ডে… হাত তুলে বিলি কেটে দেয় এলোমেলো হয়ে থাকা পৃথার ঝাঁকড়া চুলের মধ্যে… অর্নবের গোঙানী কানে যেতে মজা পায় পৃথা… মুখ বদলায় অপর বোঁটার পানে… সেই সাথে হাতটাকে নামিয়ে দেয় অর্নবের শরীরের নীচে, আন্দাজ করে… হাল্কা আঁচড় কাটে নখের, হাতের গতিপথের সাথে… হাত নেমে যায় বুক থেকে পেশল পেট বেয়ে আরো নীচে… অর্নবের জেগে থাকা পৌরষের পানে… কিন্তু তক্ষুনি ছোঁয়া দেয় না সেটায়… বরং হাত বাড়িয়ে তার আশপাশের জায়গাগুলোয় নখের সাহায্যে আলতো আঁচড় কেটে যেতে থাকে এক ভাবে… তার থাইয়ে, পায়ে, তলপেটের ওপরে… হাতের নড়াচড়ার মাঝেই ছোয়া লাগে ঋজু পুরুষাঙ্গর… ঠোঁটের কোনে লেগে থাকে কামে ভরা হাসির লেশ…

একটা সময় বোধহয় নিজের খেলা আর ভালো লাগে না… মাথা নামিয়ে সরে যায় নিজেই নীচের পানে… পেট বেয়ে চুমু খেতে থাকে ছোট ছোট… তার খুলে মেলে রাখা মাথার চুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে অর্নবের ভেতরটা… শ্বাস টানে সে জোরে…

দুই পায়ের ফাঁকে পৌছিয়ে উবু হয়ে বসে পড়ে পৃথা… ধরে দৃঢ় পুরুষাঙ্গটাকে হাতের মুঠোয়… মুখ তুলে সামনের পানে একবার চায়, যেন অর্নবের চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করে সে এই মুহুর্তে অর্নবের ভেতরে ঘটতে থাকা মনের অবস্থাটা… যদিও তার চোখে কিছুই পড়ে না, কিন্তু সে তার মনের আয়নায় দেখতে পায় অর্নবের চোখদুটোকে একেবারে স্পষ্ট… চোখে ভাসে অর্নবের ভুরুর ওপরে থাকা কাঁটা দাগটা… ঠোঁটে খেলে যায় কামনাভরা বক্র হাসি… মুখ নামায়… হাতের মুঠোয় ধরে রাখা দৃঢ় লিঙ্গটার মাথায় জিভ রাখে… লিঙ্গের গায়ের চামড়াটাকে টেনে নামিয়ে দেয় খানিকটা… চোখে দেখার দরকার পড়ে না তার… এই মুহুর্তে তার মুখের সামনে সে জানে অর্নবের ভিষন উত্তেজিত হয়ে থাকা পুরুষাঙ্গটা চামড়া সরানো অবস্থায় মুখিয়ে রয়েছে তার জন্য… তার মুখের ছোঁয়া পাবার আশায়… লিঙ্গটার মাথায় থাকা স্থুল গোলাকৃতি মাথাটা নিশ্চয়ই লাল হয়ে উঠেছে তার মুখের মধ্যে প্রবেশের কামনায়… সময় নষ্ট করে না পৃথা… সেই তো নিজেই ভিষন ভাবে মনে মনে উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছে লিঙ্গটাকে নিজের মুখের মধ্যে নেবার জন্য… মুখটাকে হাঁ করে একবারে গিলে নেয় যেন… ঠোঁটদুটো বন্ধ করে ঠোট চেপে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ধরে লিঙ্গের মাথাটাকে… জিভ রাখে ওটার ওপরে… অবসম্ভাবী ভাবেই মুখের ভেতর থেকে এক রাশ লালা বেরিয়ে এসে ভিজিয়ে তোলে লিঙ্গটাকে… ঠোঁটের কোন দিয়ে খানিকটা লালা বেরিয়ে এসে জমা হয় লিঙ্গের গায়ে বের দিয়ে রাখা আঙুলের পাশটায়… মাথাটাকে ওপর নীচে করে চুষতে শুরু করে অদৃশ্য পুরুষাঙ্গটাকে… বের দিয়ে রাখা আঙুলটাকেও সেই সাথে ওপর নীচে করে লিঙ্গের গায়ের আলগা ছালটা সমেত… কানে আসে অর্নবের গোঙানীর আওয়াজ… ‘ওহহহহহহ… উমমমমম…’ চুষতে চুষতেই মুচকি হাসে সে… ভালো লাগে অর্নবকে এই ভাবে আরাম দিতে পারছে ভেবে… অর্নব একটু ঝুঁকে উঁচু হয়ে আধ শোয়া উঠে বসে, হাত বাড়িয়ে পৃথার চুলটাকে গোছা করে ধরে হাতের মুঠোয়…

এই ভাবে চুল ধরতে দেখে পৃথা ভাবে অর্নব বোধহয় সরিয়ে দিতে চাইছে তাকে, তার লিঙ্গের ওপর থেকে… তাড়াতাড়ি করে লিঙ্গটাকে মুখ থেকে বের করে নেয় সে, বলে ওঠে, ‘এই রকম করছ কেন? দাঁড়াও না… মেক মী ডু ইট… মেক মী সাক্‌ ইয়োর কক্‌…’ বলেই ফের মুখ ডোবায় অর্নবের কোলের মধ্যে… মুখের মধ্যে পুরে নেয় পুরুষাঙ্গটাকে এক নিমেশে… পুণরায় শুরু করে চুষতে… বোলাতে থাকে নরম জিভটাকে লিঙ্গের মাথার চারপাশে চক্রাকারে…

চুষতে চুষতেই ডান হাতটাকে নামিয়ে দেয় নিজের উরুর ফাঁকে… আঙুল রাখে নিজের যোনির রসে ভেজা পাপড়ির ওপরে… খেলা করে ভগাঙ্কুরটাকে আঙুলের চাপে রেখে… ঘসে… তারপর দুটো আঙুল সামান্য বেঁকিয়ে ঢুকিয়ে দেয় যোনির মধ্যেটায়… মাথা নামা ওঠানোর ছন্দে আঙুল ঢোকে বেরোয় নিজের যোনির মধ্যে… গুঙিয়ে ওঠে পৃথা মুখের মধ্যে অর্নবের লিঙ্গটাকে পুরে রাখা অবস্থাতেই… ‘উমমমম… উমমমম…’ নিস্তব্দ ঘরের মধ্যে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে চলে দুজনের গোঙানী, ভেজা মুখের থেকে বেরিয়ে আসা চকচক শব্দ আর সেই সাথে রসে ভেজা যোনির মধ্যে আঙুল চালানোর একটা অদ্ভুত আওয়াজ… সব কটা শব্দ মিলে মিশে অদ্ভুত আবহাওয়া সৃষ্টি করে তোলে যেন ঘরের মধ্যেটায়…

‘ওহ!…’ গোঙাতে গোঙাতে বলে ওঠে অর্নব… ‘ইয়ু আর অ্যামেজিং…’ নীচ থেকে কোমরটাকে তুলে ধরে রাখার চেষ্টা করে পৃথার মুখের সামনে আরো বেশি করে… অর্নবের লিঙ্গটাকে হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে চেটে দেয় একেবারে নীচ থেকে মাথা অবধি… জিভ বোলায় অন্ডকোষের ওপরে… আর সেই সাথে আঙুলটাকে যোনির মধ্যে থেকে বের করে এনে চাপ দিয়ে ঘসতে থাকে নিজের ভগাঙ্কুরটাকে… প্রবল গতিতে… ‘আহহহহ… ইশশশশ… উমমমম…’ হিসিয়ে উঠতে থাকে মাঝে মাঝেই পৃথা… কোমর নামিয়ে চেপে ধরতে থাকে নিজের আঙুলটাকেই ওপর থেকে… ক্ষনে ক্ষনে বৃদ্ধি পায় আঙুলের চাপ… যেমন বেড়ে যায় তার চোষার জোশও… পাগলের মত প্রচন্ড গতিতে নিজের ভগাঙ্কুরটাকে ঘসে চলে হাতের সবকটা আঙুল মেলে দিয়ে… ‘আমমউউফফ্‌…’ কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… নিজের যোনির ওপরে আঙুল ঘসতে ঘসতেই কথাটা মাথার মধ্যে বিদ্যুতের মত খেলে যায় হটাৎ করে… সে এই মুহুর্তে একজনের সামনে স্বমেহন করছে… বহু আগে যখন তার বন্ধু মধুময়ন্ত্রীর সামনে করেছিল, তখন সেটা ছিল প্রথমবার তার জীবনে, তাই যতটা না বন্ধুর উপস্থিতি বাস্তবিক ছিল, তার থেকে বেশি ছিল শেখার আগ্রহ, তারপর থেকে সে আর কখনই কারুর সামনে স্বমেহনে প্রবৃত্ত হয়নি, যখনই করেছে, সবার আড়ালে, একান্তে, কিন্তু আজ সে অপর একজনের সামনে স্বমেহনের নির্যাস নিতে ব্যস্ত… যতই সে তার কাছের প্রিয় মানুষটা হোক না কেন… আর এই ভাবে উল্টো দিকে বসে তার স্বমেহন দেখতে থাকা আরএকজনের সামনে নিজের শরীর থেকে সুখ নিংড়ে নেওয়া যে কতটা যৌনাত্বক, আগে কখনও বোঝে নি সে… যদিও কায়াহীন মানুষটা, তবুও সে জানে তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে এক দৃষ্টিতে… লক্ষ্য করছে তাকে… শাক্ষী থাকছে তার মুখের ওপরে খেলে বেড়ানো কামের পরশের রেশ… দেখছে স্বমেহনের সময় তার শরীরের ছটফটানি… চোখের সামনে ছলকে ছলকে উঠছে হাতের অভিঘাতে নরম বুকদুটো… ‘আআআআআআআহহহহহ…’ একটা প্রবল শিহরণ খেলে যায় দেহের মধ্যে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই… অর্ধনিমিলিত চোখ তুলে তাকায় সামনের পানে… বোঝার চেষ্টা করে কতটা আগ্রহের সাথে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তার অর্নব…

অর্নবেরও বুঝতে বাকি থাকে না আবার রাগমোচনের সন্মুখিন হতে চলেছে তার প্রিয়ার… উঠে বসে হাত বাড়িয়ে মুঠোয় ধরে দুলতে থাকা পৃথার নরম মুঠিভর স্তনটাকে… টান দেয় বৃন্তটায়… ‘নননন… ইশশশশশ… হুম্মম্মম্মম্ম…’ অদ্ভুত আওয়াজ বের করতে থাকে মুখ দিয়ে পৃথা… অর্নবের লিঙ্গটাকে ছেড়ে দিয়ে পা মুড়ে সোজা হয়ে বসে বিছানায়… এক মুহুর্তের জন্যও সরায় না হাতটাকে নিজের যোনির ওপর থেকে… প্রাণপনে ঘসে যায় ভগাঙ্কুরটার ওপরে… বুকটা বেঁকে এগিয়ে মেলে ধরে অর্নবের পানে… বাঁ হাতটাকে পেছনে দিকে বিছানার ওপরে রেখে ভর রাখে শরীরের… পুরো শরীরটাই ধনুকের মত বেঁকে যায় টানটান হয়ে… অর্নব এগিয়ে গিয়ে মুখের মধ্যে একটা স্তনের বোঁটা তুলে নেয়… আলতো করে কামড় বসায় সেই বোঁটাটায়… ‘ওহহহহহহহ মাহহহহহহ… ঈঈঈঈঈঈঈঈঈ…’ গলা ছেড়ে চিৎকার করে ওঠে সে… অর্নবের চোখে পড়ে ঝিনিক দিয়ে ওঠা তার তলপেটের কম্পন… শুধু তলপেট নয়… থরথর করে কাঁপন ধরে যায় দেহের মধ্যে… মাথাটাকে হেলিয়ে দেয় পেছন দিকে… ‘ওওওওওওওও মাআআআআআ… ইশশশশশ…’ কোঁকাতে কোঁকাতে রাগমোচন ঘটায় পৃথা… যোনির মধ্যে থেকে হড়হড়ে আঠালো রস চুইঁয়ে বেরিয়ে এসে ভরিয়ে তোলে যোনির ওপরে ধরে রাখা হাতের তেলোকে… উরুর শিরায় টান ধরে…

তারপর একটা সময় ওই ভাবেই পা মুড়ে বসে পড়ে বিছানায়… হাঁফাতে থাকে মুখ দিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস টেনে… ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকায় সামনের পানে… মুখের মধ্যে হটাৎ করে কোথা থেকে এক রাশ লজ্জা এসে ভীড় করে যেন… জানলা দিয়ে আসা ভোরের আলোর সাথে লাল হয়ে ওঠে নাকের ডগা, কানের লতী…

শরীরটা একটু বশে এলে দুই হাতে পায়ে ভর করে ফিরে যায় অর্নবের দিকে… অদেখা শরীরটায় ধাক্কা খায় এগিয়ে যেতে গিয়ে… বোঝে অর্নব উঠে বসে আছে… বাঁ হাতটা তুলে রাখে অর্নবের বুকের ওপরে… তারপর ঠেলে ফের তাকে চিৎ করে শুইয়ে দেয় বিছানায়… নিজে এগিয়ে গিয়ে চড়ে বসে শুয়ে থাকা অর্নবের কোমরের ওপরে… হাত বাড়িয়ে অর্নবের মুখটাকে বুঝে নিয়ে মুখ নামায় সে… চুমু খায় ঠোঁটের ওপরে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে… ফিসফিসিয়ে বলে, ‘বদমাইশ লোকটা… এই ভাবে দেখছিলে কেন? ইশ্‌… আমার লজ্জা লাগে না?’

অর্নব গাঢ় গলায় উত্তর দেয়, ‘ইয়ু ওয়ের লুকিং সো সেক্সি হানী… ভিষন ভালো লাগছিল তোমায় তখন দেখতে…’

অর্নবের কথায় খুশিতে যেন গলে যায় সে, ঠোঁটের কোনে হাসি খেলে যায় তার… ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বলে, ‘অসভ্য বুড়ো… বদমাইশ একটা… মেয়েদের ওই সব করতে দেখতে খুব ভালো লাগে, না?’ বলতে বলতে ফের ঝুঁকে পড়ে সামনের পানে… ঠোঁট ঠেকায় অর্নবের ঠোঁটের ওপরে..

উত্তরে অর্নব বলে, ‘ইয়ু আর সো অ্যামেজিং…’ হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে পৃথার শরীরটাকে… পীঠের ওপরে খানিক ঘুরে হাতটা নেমে যায় নিচের দিকে… হাতের তালুর মধ্যে নিতম্বের একটা নরম বর্তুল দাবনা চেপে ধরে টেপে… মোচড়ায় হাতের তালুর মধ্যে পুরে নিয়ে… অর্নবের মুখের মধ্যে চাপা গলায় গুঙিয়ে ওঠে পৃথা আরামে… ‘উমমমম…’ তারপর অর্নবের মুখের ওপর থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে সে, ‘স্প্যাঙ্ক মী…’

এটা পৃথার অনুরোধ না আদেশ বুঝতে পারে না অর্নব… কিন্তু শোনার সাথে সাথেই সিরসির করে ওঠে পুরুষাঙ্গটা তার… তবুও আরো একবার নিশ্চিত হবার জন্য প্রশ্ন করে সে, ‘অ্যা?’

অর্নবের ঘাড়ে, কানের ওপরে মুখ ঘসে পৃথা… শরীরটাকে ডাইনে বাঁয়ে বেঁকিয়ে চুড়িয়ে নিজের বুকদুটোকে ঘসে অর্নবের লোমেশ বুকের ওপরে… ফের ফিসফিসায় অর্নবের কানের কাছে মুখ রেখে… ‘আই ওয়ান্ট ইয়ু টু স্ল্যাপ মাই অ্যাস চিকস্‌… স্ল্যাপ দেম…’

পৃথার নিতম্বের ওপরে রাখা হাতটাকে তুলে ধরে একটু অর্নব… তারপর হাতটাকে নামিয়ে এনে সপাটে চপেটাঘাত হানে পৃথার ওই নরম তুলতুলে নিতম্বের দাবনাটার ওপরে… সারা ঘরের মধ্যে ‘চটাস্‌…’ করে আওয়াজটা ছিটকে ওঠে যেন… অর্নবকে দুই হাতের মধ্যে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে রেখে তার কানের মধ্যে হিসিয়ে ওঠে পৃথা… ‘ইয়েস্‌… ওয়ান্স মোর…’

ফের হাত তোলে অর্নব… আবার সজোরে নামিয়ে এনে ওই কড়া হাতের আর একটা চড় কষায় নরম নিতম্বের ওপরে… ঘরের মধ্যে ফের প্রতিধ্বনিত হয় চড়ের আওয়াজ… ‘চটাস্‌…’ কানের মধ্যে পৃথা সিসিয়ে ওঠে ফের… ‘ইশশশশ… উমমম… এগেন…’ ওই রকম কড়া হাতের আঘাত নিজের নরম নিতম্বের পড়তে তার মনে হয় যেন ওখানটায় কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে… একটা তীব্র জ্বালা নিতম্বের দাবনা থেকে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের কোনায় কোনায়… প্রতিটা প্রান্তে… নতুন করে রস গড়াতে শুরু করে ভেজা যোনির মধ্যে থেকে… আরো ভিজে ওঠে সে… ‘চটাস্‌…’ এবার চড়টা এসে পড়ে তার অন্য দাবনাটায়… নিজেই বুঝতে পারে চড়ের আঘাতে কেমন করে দুলে ওঠে দাবনাদুটো… ফের গোঙায় এক অদ্ভুত শারিরীয় ভালো লাগায় সে… দাবনার ওপরে হাত রাখে অর্নব… তার ফলে আরো জ্বালা করে ওঠে দাবনাদুটো তার… ফিসফিসিয়ে ওঠে সে… ‘উমমমম… লাভ ইয়ু জানু… লাভ ইয়ু…’ চুমু খায় অর্নবের খালি ঘাড়টার মধ্যে… হাল্কা হাল্কা কামড় দেয় সরু দাঁত দিয়ে… জিভ বের করে চেটে দেয় ঘাড়ের চামড়াটা প্রায় কাঁধ থেকে কানের কাছ পর্যন্ত…

আস্তে আস্তে উঠে বসে অর্নবে শরীরের ওপরে ফের… পাদুটোকে হাঁটুর থেকে মুড়ে রাখে বিছানায়… তারপর নিজের শরীরটাকে একটু তুলে ধরে… ডান হাতটাকে পেছনে নিয়ে গিয়ে ধরে অর্নবের শক্ত লিঙ্গটাকে মুঠো করে… তারপর সেটার মাথাটাকে একটু টেনে এনে ঘসে নিজের যোনির মুখে, ভগাঙ্কুরটার ওপরে… তার শরীরের ভেতরকার রসে মেখে যায় লিঙ্গের মাথাটা… হড়হড়ে হয়ে ওঠে একেবারে… অর্নব চুপ করে শুয়ে থেকে অপেক্ষা করতে থাকে পৃথা কি করে সেটা দেখার জন্য… নিজের থেকে একটুও কিছু করার চেষ্টা করে না সে…

লিঙ্গের মুখটা নিজের যোনির ফাঁকে সেট করে ধরে পৃথা… তারপর ওটাকে জায়গায় ধরে রেখে আস্তে আস্তে নিজের দেহটাকে ফের নামিয়ে দেয় অর্নবের কোলের দিকে… তার দেহের চাপে লিঙ্গটা অবলীলায় সেঁদিয়ে যায় ওর রসে ভেজা যোনির মধ্যে… ‘হুমমমম…’ পৃথার মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরিয়ে আসে… আরো চাপ দেয় দেহের… এবার একেবারে পুরো লিঙ্গটাই ঢুকে যায় ওর শরীরের গহবরের মধ্যে… ভরে ওঠে যোনিটা একেবারে… ‘আহহহহহ…’ সন্তুষ্টির শিৎকার বেরোয় পৃথার মুখ থেকে… চোখ বন্ধ হয়ে যায় আরামে… যোনির পেশির সাহায্যে চারধার দিয়ে কামড়ে ধরে ভেতরে ভরে থাকা লিঙ্গটাকে… হাত ফিরিয়ে এনে রাখে অর্নবের বুকের ওপরে… শিড়দাঁড়া সোজা করে বসে এবার… তারপর ধীরে ধীরে দোলাতে থাকে কোমরটাকে, যোনির মধ্যে পুরুষাঙ্গটাকে পুরে রেখে… কখনো সামনে পেছনে করে, কখনও চক্রাকারে… একটু একটু করে গতি বাড়ে কোমর আন্দোলনের… একটা হাত তুলে নিজের স্তনটাকে চেপে ধরে… স্তনের বোঁটাটাকে আঙুলের চাপে ধরে টানে… মোচড়ায়… দেখতে দেখতে বিকৃত হয়ে উঠতে থাকে মুখায়বটা… চেপে বন্ধ কোরে নেয় চোখ… ফাঁক হয়ে যায় পাতলা ঠোঁটদুটো… ঠোঁটের আড়াল থেকে ঝকঝক সাদা সুন্দর করে সাজানো দাঁতের সারি চোখে পরে অর্নবের… এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পৃথার দিকে… দেখতে থাকে কি সুন্দর করে নিজের যৌনসুখটাকে টেনে নিংড়ে বের করে নিচ্ছে শরীর থেকে তার… অর্নব হাত তুলে রাখে পৃথার অপর স্তনটার ওপরে… মুঠিভর স্তনটাকে হাতের মধ্যে পুরে নেয়… সেটার ওপরে চাপ দেয় সেও… পৃথা অর্নবের বুকের ওপর থেকে হাত তুলে চেপে ধরে তার হাতটাকে নিজের বুকের মধ্যে… আরো জোরে জোরে কোমর দোলায় অর্নবের কোলের ওপরে বসে… ভগাঙ্কুরের ওপরে অদৃশ্য লিঙ্গকেশের ঘর্ষণে প্রায় পাগল হয়ে ওঠে সে আরামে… ‘উফফফফফ… মাআআআআআ…’ কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… গুঙিয়ে ওঠে অর্নবও… কঠিন লিঙ্গে যোনির পেশির চাপ পড়ে…

ইচ্ছা করেই পৃথার আরাম খাওয়ায় ছেদ ঘটায় সে… কোমরটা ধরে আন্দোলনটাকে থামিয়ে দেয় সে… জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় পৃথা… অর্নব কিছু মুখে বলে না, শুধু ওকে ওর ওপর থেকে নামিয়ে দেয় পাশে… তারপর নিজেও উঠে বসে পৃথার পীঠে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘পেছন ফিরে চার হাত পায়ে ভর রেখে বসো…’

হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের কোনে… ঘুরে চার হাত পায়ের ওপরে ভর রেখে বসে সে, মাথাটাকে বুকের কাছে থেকে নামিয়ে রাখে বিছানায়, বালিশের ওপরে… গোলাকার লোভনীয় নিতম্বটাকে তুলে মেলে ধরে অর্নবের দিকে… ঘাড় কাত করে পিটপিট করে তাকায় অর্নবের দিকে… যদিও শূণ্য, তাও তার বুঝতে অসুবিধা হয় না এই মুহুর্তে অর্নব তারই পেছন দিকে পজিশন নিয়েছে… পরক্ষনেই ছোঁয়া পায় শক্ত পুরুষাঙ্গটার, তার ভিজে থাকা যোনির মুখটায়… সেটাকে ওর ওই ভেজা যোনির মুখে ঘসতে অনুভব করে পৃথা…

‘ডু ইট…’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে পৃথা… ‘প্লিজ… ফাক মী…’

অর্নবের অদৃশ্য ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলে যায়… দুই হাতের তালুর চাপে টেনে ধরে নিতম্বের নরম দাবনা দুটোকে দুই ধারে… মনে হয় যেন হাতদুটো মাখনের তালের মধ্যেই ডুবে গেলো একেবারে… যোনির মুখে থাকা শক্ত লিঙ্গটায় চাপ দেয় সে… সড়াৎ করে ঢুকে যায় সেটা পৃথার বাড়িয়ে ধরা শরীরটার মধ্যে এক ধাক্কায়… ‘আহহহহহহ…’ পৃথার মুখ দিয়ে শিৎকার বেরিয়ে আসে নিজের দেহের মধ্যে শক্ত লিঙ্গটার উপস্থিতি অনুভব করে… হাঁটু দুটোকে বিছানার ওপরে ঘসে সরিয়ে দেয় দুই পাশে… আরো ভালো করে ফাঁক করে মেলে ধরে নিজেকে অর্নবের কাছে… ডান হাতটাকে বিছানার থেকে তুলে দুই পায়ের ফাঁকে নিয়ে আসে… চেপে ধরে নিজের ভগাঙ্কুরটাকে আঙুলের নীচে… চেপে চেপে ঘসে সেখানে… মাঝে মধ্যে হাতটাকে আরো খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে ছুঁয়ে দেয় ঝুলতে থাকা অর্নবের অন্ডকোষটাকেও… অর্নব শুরু করে রমন… কোমর দুলিয়ে গেঁথে দিতে থাকে তার সবল লিঙ্গটাকে পৃথার শরীরের একেবারে অভ্যন্তরে… বারে বারে… আর সেই প্রতিঘাতে গুঙিয়ে গুঙিয়ে উঠতে থাকে পৃথা… নাগাড়ে… অর্নবের রমনের ধাক্কায় দুলে ওঠে পৃথার শরীরটা… শরীরের নীচে দুলতে থাকে সামান্য ঝুলে থাকা নরম লোভনীয় স্তনদুটো…

প্রায় মিনিট দশেক ধরে চলে এই ভাবে এক নাগাড়ে রমন… যোনির মধ্যে থেকে টপটপ করে ঝরে পড়তে থাকে পৃথার দেহের রস, বিছানার ওপরে… ভিজে যায় চাদর তোষক… কিন্তু সেই দিকে কোন খেয়াল থাকে না দুজনেরই… এক সময় অর্নব টেনে বের করে নেয় পৃথার শরীর থেকে পুরুষাঙ্গটাকে… হাতের চাপে ইশারা করে তাকে বিছানায় চিৎ হয়ে শোয়ার… বিনাবাক্য ব্যয়ে শুয়ে পড়ে পৃথা… পাদুটোকে দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে মেলে ধরে নিজের জঙ্ঘাটাকে অর্নবের সামনে… হাতদুটোকে পাশে ফেলে রাখে অবহেলায়…

অর্নব ওর মেলে রাখা দুই পায়ের ফাঁকে গিয়ে বসে… হাত দিয়ে নিজের লিঙ্গটাকে ধরে ঠেকায় যোনির মুখে, তারপর চেপে ভরে দেয় সেটার মধ্যে একেবারে… ‘মাহহহহহহ…’ শিঁটিয়ে ওঠে পৃথা এই ভাবে এক ধাক্কায় পুরো লিঙ্গটা তার শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবার ফলে… হাত তুলে নিজের দুটো স্তনকে দুই হাতের মুঠোয় চেপে ধরে সে… চেপে ধরে আঙুলের চাপে স্তনের বোঁটাদুটোকে… মুচড়ে দেয় সে দুটোকে প্রাণপনে… বিকৃত হয়ে যায় তার নিজেরই মুখটা ব্যথায়… নাকি আরামে? অর্নব হাত দিয়ে ঠেলে দেয় পৃথার পাদুটোকে ধরে আরো ওপর দিকে, প্রায় ওর বুকের কাছে… কোমর দোলায়… ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গতি… সারা ঘরের মধ্যে একটানা সঙ্গমের শব্দ ভরে ওঠে যেন… আর পারে না সে নিজেকে ধরে রাখতে… বুঝতে পারে যে কোন মুহুর্তে বীর্যস্খলণ হবে তার… গায়ের যত জোর আছে, আঘাত হানে পৃথার যোনির মধ্যে পুরে রাখা পুরুষাঙ্গটা দিয়ে… যোনির মধ্যে থেকে ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসতে থাকে সাদা ফেনিয়ে ওঠা রস… মেলে রাখা দুটো উরুর ভেতর দিকটায় সেই ছিটকে আসা রসে মাখামাখি হয়ে যায়… খানিকটা রস গড়িয়ে নেমে যায় নিতম্বের দুই খাঁজ বেয়ে বিছানার দিকে…

‘উমমমফফফফ…’ একটা জোরে শিৎকার দিয়ে ওঠে পৃথা… ‘আসছেএএএএএ… আই অ্যাম কামিংন্নন্নন্নন্ন্‌…’

অর্নবও দাঁতে দাঁত চিপে বলে ওঠে, ‘আমিওহহহ… আমারও আসছেহহহ…’ হাঁফায় সে কথার ফাঁকে… কিন্তু থামায় না তার রমন… তার মনে হয় যেন শিশ্নাগ্রে আগুন লেগে গিয়েছে… গায়ের যত শক্তি আছে, চেপে চেপে ধরে পৃথার দেহের মধ্যে নিজের লিঙ্গটাকে… আর তারপরই… কেঁপে ওঠে পুরুষাঙ্গটা পৃথার শরীরের মধ্যে… তপ্ত লাভার মত বীর্যগুলো ঝরে পড়তে থাকে পৃথার দেহের অভ্যন্তরে… আর সেই বীর্যখরণের অভিঘাতে কেঁপে ওঠে পৃথাও… ‘ইয়েস… গিভ ইট… গিভ ইট টু মী… ওহহহহহ মাহহহহহ… লাভ ইয়ু… গড… ফাক মীইইইইইইইইই…’ বলে শেষ বারে মত একবার চিলচিৎকার দিয়ে ওঠে সে… হাত তুলে খামচে ধরে অর্নবের কাঁধটাকে আন্দাজে ভর করে তারপর তলা থেকে নিজের জঙ্ঘাটা তুলে ঠেসে ধরে অর্নবের দিকে… কাঁপতে থাকে সেও জ্বরের রুগীর মত… যোনির পেশি দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করে দেহের মধ্যে গেঁথে থাকা লিঙ্গটাকে কামড়ে ধরার…

তারপর অর্নব এলিয়ে পড়ে পৃথার শরীরের ওপরে… পৃথা হাত তুলে রাখে পরিশ্রান্ত অর্নবের পীঠে…

একটু দম পেতে, অর্নব পৃথার কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘গুড মর্নিং…’

হাসে পৃথা, ‘ইয়েস বেবী… গুড মর্নিং…’ পরম ভালোবাসায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে অর্নবের পীঠের ওপরে…
 
Top