- 389
- 58
- 29
৩৭।।
কাজল থাকতেই তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে নিয়েছিল পৃথা, অর্নব আজকে আর ঠান্ডা জলে স্নান করতে দেয়নি ওকে, বারবার করে গিজারের জলে স্নান করতে বলে দিয়েছিল, করেও ছিল ও, অন্যথা করেনি অর্নবের কথার, শুনেছিল… আর শুনবে নাই বা কেন… আজ সকালটা যে বড়ই মধুর করে শুরু হয়েছে তার… ঘুম ভেঙেছে নববধূর মত সারা শরীরে আদর মেখে…
কাজল বেরিয়ে যেতেই আর সময় নষ্ট করে নি পৃথা, তৈরী হতে থেকেছে অফিস যাবার জন্য… আয়নার সামনে দাড়িয়ে তম্বী দেহের ওপরে শাড়ীর প্লিটটাকে ঠিক করতে অর্নবের উদ্দেশ্যে মুখ না তুলেই বলে ওঠে, ‘এই, আমার ফোনটা একটু অন করে দাও না গো… সেই কাল আসার সময় বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তারপর ভুলেই গিয়েছি অন করতে, চার্জেও বসাই নি, কে জানে চার্জ আছে কি না…’
অর্নব এক মনে চুপ করে বিছানায় বসে পৃথার শাড়ী পরা দেখছিল… সুঠাম শরীরটায় কি অদ্ভুত ভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ীটা… ফর্সা দেহে গাঢ় সবুজ রঙটা খুব ভালো মানিয়েছে… তারিয়ে তারিয়ে পৃথার তারুণ্যে ভরা শরীরটাকে চোখ দিয়ে উপভোগ করছিল অর্নব… মনে পড়ে যাচ্ছিল এই কিছু ঘন্টা আগেও ওই নরম শরীরটাকে নিজের দেহের নীচে নিয়ে নিষ্পেশিত করেছে মনের সুখে… শাড়ী পরার সময় পৃথা কখনো পাশের দিকে ফিরে দাঁড়াচ্ছে, আবার কখনও পেছন ফিরে, অথবা সাজের প্রয়োজনে তারই সামনে… তাই বিছানায় বসেই সে পৃথার দেহের প্রতিটা ভঙ্গিমার রূপ মনের ফ্রেমে আটকিয়ে নিচ্ছিল অপলক চোখে…
হিলহিলে চেহারাটাকে শাড়ীটা সাপের মত পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে যেন… আর ওই ভাবে টাইট করে শাড়ী পরার কারণে শাড়ীর ওপর দিয়েই দেহের প্রতিটা চড়াই উৎরাই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে… কল্পনার কোন অবকাশই রাখে নি কোথাও… স্ফিত উত্তল নিতম্ব, সঠিক পরিমাপের বুক, আর সেই সাথে গাঢ় রঙের সাথে ফর্সা চামড়ার অদ্ভুত কন্ট্রাস্ট… চোখ সরানোই যেন সম্ভব নয় এই দেহের ওপর থেকে… শাড়ীর কুঁচিটা নাভীর ঠিক নীচে, দুই পাশ থেকে শাড়ীর পাড়টা একটু তেরচা হয়ে কোনাকুনি হারিয়ে গিয়েছে সেই গভীর নাভীর তলা দিয়ে, শাড়ীর কুঁচির মধ্যে… প্লিট করে রাখা আঁচলের তলা থেকে উঁকি দিচ্ছে ব্লাউজের মধ্যে আবধ্য সুগোল একটা স্তনের পার্শদিক… ব্লাউজটার পীঠের দিকে খুব বেশী কাটা না হলেও, পীঠের তিলটা এমন জায়গায় পড়েছে, যে ওটার ফলে যেন আরো বেশি করে লোভনীয় হয়ে উঠেছে ফর্সা মসৃণ গোটা পীঠটাই…
‘কোই… মোবাইলটা অন করলে? নাকি হাঁ করে আমাকেই শুধু গিলে যাবে?’ ট্যারা চোখে অর্নব যেখানটায় বসে থাকতে পারে, সেই দিকটার দিকে আন্দাজ করে তাকিয়ে বলে পৃথা…
‘অ্যা… হ্যা… এই তো… দিচ্ছি অন করে…’ পৃথার তাড়া খেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানার থেকে নেমে দাঁড়ায় অর্নব… ‘কোথায় রেখেছ তোমার মোবাইলটা?’ প্রশ্ন করে সে…
শাড়ীর আঁচলটাকে কোমর থেকে পেঁচিয়ে ঘুরিয়ে গুঁজে দেয় কোমরের মধ্যে… আয়নায় শেষ বারের মত ভালো করে নিজের সাজটা দেখে নিতে নিতে বলে, ‘দেখই না… মনে হয় ব্যাগের মধ্যেই রয়েছে, কালকে তো আর ফেরার পরে বেরও করি নি…’
‘তোমার ব্যাগের মধ্যে?… হাত দেবো?’ ইতস্থত করে অর্নব।
কথাটা শুনে মুখ তোলে পৃথা… বক্র ভুরুতে কপট রাগ ফুটিয়ে বলে ওঠে, ‘বাব্বা, আমার ব্যাগে হাত দেবে, তাতেও বাবুর এত কুন্ঠা… অন্য কোন পেত্নীর ব্যাগ বললে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিতো…’
কাঁচুমাচু মুখ করে জবাব দেয় অর্নব, ‘মেয়েদের ব্যাগ বলেই ইতস্থত করছিলাম… এখানে অন্যের ব্যাগের কথা কোথা থেকে এলো?’
‘জানি জানি… সুযোগ পেলেই আর একটা পেত্নীকে চাইবে তখন… চিনি না আবার?’ ছদ্ম রাগ সরায় না মুখ থেকে পৃথা… মজা লাগে অর্নবের পেছনে লাগতে…
‘মোটেই না… আমাকে কি সেই রকম মনে হয় নাকি তোমার?’ অর্নবের গলার স্বরটা ভেসে আসে ড্রইংরুমের থেকে…
সেটা শুনে গলা তুলে পৃথা বলে ওঠে, ‘সেটা তো আমি এসে পড়েছি বলে আর হলো না, নয়তো কোন পেত্নীকে ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিতে, আর তারপর তার ঘাড়ে চেপে বসতে…’
এবার আর কোন জবাব আসে না ও ঘর থেকে… তাতে পৃথা এবার সত্যিই ক্ষেঁপে যায়, উত্তর না পেয়ে… ‘কি হলো? মনের মত কথা বললাম বলে কি চুপ করে গেলে?’ বলে ওঠে সে।
তাও কোন উত্তর নেই… তা দেখে এবার নিজেই এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের দিকে… দরজা পেরোতেই চোখে পড়ে ঘরের মাঝে তার ফোনটাকে শূণ্যে ভাসতে… অন্য কেউ হলে নির্ঘাত আঁতকে উঠতো… ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা, ভেতরে জমা বিরক্তিটা উধাও হয়ে যায় সেই সাথে…
পৃথাকে বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে বলে ওঠে অর্নব, ‘তুমি একবার বাড়িতে ফোন করো তো!’
হটাৎ করে অর্নবের গলার স্বর সিরিয়াস হয়ে যেতে ভুরু কুঁচকে যায় পৃথার, উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে, ‘কেন গো? এনিথিং রং?’
‘বুঝতে পারছি না… প্রায় গোটা চল্লিশেক মিসড্ কল… তোমার বাপীর… একবার ফোন করো তো…’ ফোনটা পৃথার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে অর্নব।
তাড়াতাড়ি করে ফোনটা হাতে তুলে নেয় পৃথা, কল লিস্টএ দেখে সত্যিই চল্লিশটা মিসড্ কল দেখাচ্ছে… ভয় পেয়ে যায় সে… ত্রস্ত চোখে তাকায় অর্নবের পানে… ভীত গলায় জিজ্ঞাসা করে, ‘এতবার ফোন করেছে বাপী… কোন বিপদ হলো না তো?’
‘সেই জন্যই তো বলছি, আগে টেনশন না করে ফোনটা করো… দেখো কেন এত বার ফোন করেছে…’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করে অর্নব পৃথাকে।
‘বড্ডো ভুল হয়ে গেছে গো… আমি সাধারণতঃ ফোন কখনো বন্ধ করি না, কালকেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম… কি হলো বলো তো…’ বাবার নাম্বার ডায়াল করতে করতে বলে পৃথা, গলার স্বরে উদ্বেগ মিশে থাকে…
ফোনের মধ্যে বীপ…বীপ… শব্দ শোনা যায়, কল লাগে না কিছুতেই… আরো টেনশনে পড়ে যায় পৃথা… বার বার করে ট্রাই করে ফোন লাগাবার… যত সময় গড়ায়, ততই যেন মলিন হয়ে ওঠে তার মুখ।
হটাৎ করেই কল লেগে যায়… রিং হয় ফোনের ওই প্রান্তে… তাড়াতাড়ি করে পৃথা বলে ওঠে, ‘হ্যালো বাপী?’
ওপাশ থেকে উত্তর আসে, ‘নারে… আমি ছোটকা বলছি…’
‘ও তুমি? আমি আসলে বাপীর মিসড্ কল দেখে রিং ব্যাক করলাম… কেমন আছো ছোটকা? তোমার সাথে কতদিন কথা হয়নি… ভালো আছো তো? তাও তো বাপী মায়ের সাথে রোজ কথা হয় আমার, তোমার সাথে তো কথাই হয় না… করতে পারো তো ফোন মাঝে মাঝে… ইশ… ভুলেই গেছ তিতিরকে, না?’ অভিমান ঝরে পৃথার গলার স্বরে।
‘না রে… সেটা নয়… আসলে বুঝিস তো, আমি একটু অন্য ধরণের মানুষ, ওই সব লোকলৌকিকতা ঠিক আসে না আমার… যাক, তোর শরীর কেমন আছে… বৌদির কাছে শুনেছিলাম তোর নাকি জ্বর হয়েছিল… এখন ভালো আছিস তো?’ প্রশ্ন করেন পৃথার ছোট কাকা।
‘হ্যা গো… এক দম ফিট এখন… এই তো অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলাম…’ উত্তর দেয় পৃথা, মনে মনে বলে তোমার জামাই আমাকে এত যত্নে রেখেছে, সেখানে আমি ফিট না থেকে পারি? ভাবতেই হাসি খেলে যায় ঠোঁটে, লালের আভা লাগে গালের ওপরে… মনে পড়ে যায় ভোরের আদর…
ভাবতে ভাবতেই ফিরে মনে পড়ে যায় পৃথার… ঠোঁটের ওপর থেকে লেগে থাকা স্মিত হাসিটা মুছে যায় তার… ‘আচ্ছা ছোটকা, তোমার কাছে বাপীর ফোনটা কেন? আর বাপীই বা এতবার ফোন করেছিল কেন গো?’ উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে সে।
‘হ্যা… মানে তোকে বলার জন্যই ফোন করেছিলাম… আসলে কি হয়েছে জানিস…’ বলতে বলতে চুপ করে যান পৃথার ছোট কাকা…
তাকে এই ভাবে কথার মাঝে চুপ করে যেতে মনের মধ্যে একটা শঙ্কা চেপে বসে যেন… বুকের মধ্যেটায় ধকধক করে ওঠে তার… হাতের মুঠোয় মোবাইলটাকে আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি হয়েছে ছোটকা… চুপ করে গেলে কেন?’
সাথে সাথে উত্তর আসে না কোন… বোঝাই যায় একটু ইতস্তত করছে পৃথার কাকা উত্তর দিতে গিয়ে… তারপর ধীর কন্ঠে বলেন, ‘আসলে ফোনটা কাল আমিই তোকে করেছিলাম… বড়দাকে গতকাল রাতে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়েছে…’
কথাটা শুনেই শেষ করতে দেয় না পৃথা, চেঁচিয়ে ওঠে প্রায় ফোনের মধ্যেই… ‘কী? বা… বাপীর কি হয়েছে বললে? নার্সিংহোম… কেন?’ থরথর করে কেঁপে ওঠে পৃথার শরীরটা অজানা ভয়ে…
‘না, না, এত ব্যস্ত হোস না… এখন ঠিক আছে… আসলে…’ বোঝাতে যান উনি।
প্রায় ছিনিয়ে নেয় কথাটা কাকার মুখ থেকে পৃথা… কাঁদো কাঁদো গলায় বলে সে, ‘কি হয়েছে আমার বাপীর… বলো না গো ছোটকা… আমার বাপী কি নেই?…’ বলতে বলতে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে সে…
পৃথাকে এই ভাবে ভেঙে পড়তে দেখে তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে অর্নব… টেনে নেয় তাকে নিজের বুকের মধ্যে… হাত রাখে পীঠের ওপরে… পৃথা মুখ তুলে তাকায় অর্নবের না দেখা মুখের পানে… চোখ ভর্তি জল টলটল করে তার… অর্নবের বুকের মধ্যে ফোঁপায় সে…
কানে আসে তার ছোটকাকার কন্ঠস্বর… ‘দূর বোকা মেয়ে… এত ভেঙে পড়ছিস কেন? আমি কি তাই বললাম… আগে থাকতে বাজে বাজে কথা ভেবে বসিস… আরে এখন তো আর বিপদ নেই… ঠিক আছে বড়দা…’
এক হাত দিয়ে মোবাইলটাকে কানে ধরে অন্য হাত দিয়ে খামচে ধরে অর্নবের হাত… ভাঙা গলায় প্রশ্ন করে পৃথা, ‘ঠিক বলছো ছোটকা… বাপী ঠিক আছে… কিচ্ছু হয় নি তো বাপীর… তুমি ঠিক বলছো তো?’ প্রশ্ন করার ফাঁকে মুখ তুলে তাকায় সে, যেন মনের মানুষটার কাছ থেকেও আস্বস্থ হতে চাইছে… যেন ওই মানুষটাই ঠিক বলতে পারবে যে ভয়টা তার অমূলক কিনা…
‘হ্যা রে তিতির, বললাম তো… তোর বাপী এখন ঠিক আছে… তবে হ্যা, এখনও ICCUতে আছে, তবে আগের বিপদটা আর নেই…’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করেন ভদ্রলোক।
‘কি… কি হয়েছিল বাপীর?’ অর্নবের হাত ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে প্রশ্ন করে পৃথা, প্রথম দিকের ঝটকাটা খানিকটা সে কাটিয়ে ওঠে বাপী ভালো আছে শুনে…
‘একটা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মত হয়েছিল কাল রাতে… আমরা সাথে সাথেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে বড়দাকে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই এই যাত্রায় তেমন কোন খারাপ কিছু ঘটে যায় নি…’ বলেন পৃথার ছোটকাকা… তারপর একটু থেমে প্রশ্ন করেন উনি, ‘তুই কি একবার আসতে পারবি? না, না, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই… জানি এক্ষুনি আসা সম্ভবও নয়, টিকিটই বা পাবি কি করে, তবে পারলে দেখ যদি আসতে পারিস… তোর কথা বলছিল খুব…’
তার কথা বলছিল শুনে ফের বুকের ভেতরটা টনটন করে ওঠে পৃথার… বলে সে, ‘আমি দেখছি ছোটকা… দেখছি আমি… যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি… তুমি বাপীর সাথে থেকো, হ্যা… দেখো বাপী কে… আমি আসছি…’ তারপরই হটাৎ করে মনে পড়ে যেতে জিজ্ঞাসা করে, ‘ছোটকা, মা… মা কেমন আছে গো… মা ঠিক আছে তো?’
‘হ্যা রে মা, বৌদি ঠিক আছে… বাড়িতেই আছে, আর তাছাড়া তোর কাম্মাও তো রয়েছে বৌদির সাথে, তুই ভাবিস না কিছু…’ আস্বস্থ করেন ফের পৃথাকে… ‘তাহলে ছাড়ি তিতির… তুই সাবধানে আসিস… আর আসার ঠিক হলে একবার আমাকে ফোন করে দিস, কেমন?’
‘আ…আচ্ছা ছোটকা… আমি দেখছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি… তুমি একটু বাপীকে দেখো, কেমন?’ বলতে বলতে চিন্তায় পাংশুটে হয়ে যায় তার মুখ… শোনে ওপাশ থেকে তার ছোটকাকার ফোন কেটে দেবার আওয়াজ।
ফোনটাকে হাতের মুঠোয় ধরে রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে অর্নবের বুকের মধ্যে মাথা রেখে… চোখ দিয়ে সরু ধারায় জল গড়ায়… অন্য হাতে খামচে ধরে রাখে অর্নবের হাতটাকে… অর্নব হাতের আলিঙ্গনে ধরে রাখে পৃথাকে নিজের বুকের সাথে সাঁটিয়ে… যেন তার ভেতরের প্রাণশক্তিটাকে ঢেলে দেবার চেষ্টা করে পৃথার বুকের মধ্যে…
‘হ্যা গো… বাপী ঠিক আছে… তাই না গো?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা, প্রশ্নের মধ্যেও যেন একটা অজানা আশঙ্কা মিশে থাকে তার…
‘কিচ্ছু হবে না তোমার বাপীর… দেখো… একদম ভালো আছেন উনি… তুমি কিচ্ছুটি চিন্তা করো না…’ আশ্বাস দেয় অর্নব পৃথার মাথার চুলে চুমু খেয়ে… তারপর পৃথাকে ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুমি অফিসে একটা ফোন করো… বলো আজই তুমি বাড়ি যাচ্ছ… তোমার বাপীর ব্যাপারটা খুলে বলো… বলে ছুটি নাও বেশ কয়’একদিনের…’
ভেজা চোখে মুখ তুলে তাকায় পৃথা… ‘কি করে? কি করে যাবো আমি?’ অসহায়এর মত প্রশ্ন করে সে…
পৃথার মাথাটা টেনে নেয় নেয় অর্নব নিজের কোলের ওপরে… বলে, ‘আমি আছি তো… চিন্তা করছো কেন… তুমি অফিসে ফোন করে বলে দাও শুধু যে আজকেই তুমি বাড়ি চলে যাচ্ছ…’
‘কিন্তু কি করে অর্নব? আমি যে সেই রকম কিছু জানি না এখানকার… কোথায় টিকিট কাটবো, কিসে যাবো…’ হতাশ গলায় বলে পৃথা।
‘আমি আছি তো!’ পৃথার কাঁধে হাতের চাপ দিয়ে ভরসা দেয় অর্নব, ‘তুমি অফিসে শুধু ফোনটা করো, আমি এদিকটা দেখছি… এত ভেঙে পড়ো না…’
‘অর্নব…’ ধরা গলায় ডাক দেয় পৃথা…
‘বলো না সোনা… কি হয়েছে?’ হাত রাখে মাথার ওপরে পৃথার…
‘বাপী…’ আর কিছু বলতে পারে না সে, গলা বুজে যায় আবেগে…
পৃথার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে অর্নব… দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘কেন এখনই এই সব আজে বাজে চিন্তা করছো বলো তো… তোমার বাপীর কিছু হতেই পারে না… গিয়ে দেখবে সব ঠিক আছে…’
‘তুমি যাবে না আমার সাথে?’ শূন্যের পানে হাত বাড়ায় পৃথা… খামচে ধরে অর্নবের কাঁধটাকে…
‘তোমার আগে যাবার ব্যবস্থাটা করি, তারপর আমার কথা…’ বলতে বলতে ফের উঠে দাঁড়ায় সে… ‘তুমি ফোনটা করো, আমি আসছি…’
‘আমায় ছেড়ে যেও না গো… আমার কাছেই থাকো না…’ কাতর মুখে তাকায় পৃথা… খানিক আগের করা মুখের সব মেকাপ ততক্ষনে একেবারে ঘেঁটে গিয়েছে চোখের জলে… চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে এই কয়’এক মুহুর্তেই উদ্বিগ্নতায়…
‘আমি আছি তো সোনা… আমি আছি… ঘরেই আছি…’ আস্বস্থ করে অর্নব তার প্রিয়াকে…
আর কথা বাড়ায় না পৃথা, মোবাইলটা তুলে ডায়াল করতে থাকে অফিসের নাম্বারে… অর্নবও ওর থেকে সরে গিয়ে এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে, যেখানে ওর মোবাইলটা রাখা আছে, ডায়াল করে প্রণবকে…
৩৮।।
বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে পৃথা একটা গাড়ি ভাড়া করে সোজা পৌছে যায় বাড়ি… দরজায় বেল টিপে অপেক্ষা করতে থাকে সে… মনের মধ্যে নানান আশঙ্কা ছেয়ে থাকে তার…
প্রণবকে বলে অর্নব ওর জন্য ফ্লাইটের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সকালেই… ওদের অফিসের এজেন্টকে দিয়ে, তাই কোন অসুবিধাই হয়নি সন্ধ্যের ফ্লাইট ধরতে… প্রণব আর অর্নব পৃথাকে কলকাতার এয়ারপোর্টএ পৌছিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে… পৃথা চেয়েছিল অর্নবও ওর সাথেই ফ্লাইটে আসুক, কিন্তু শেষে বুঝেছিল যে সেটা সম্ভব নয়, অর্নব এই ভাবে ঢুকবে কি করে এয়ারপোর্টের মধ্যে? তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল প্রণব আর অর্নব গাড়িতে শিলিগুড়ি পৌছাবে, আর পৃথা তার আগেই ফ্লাইটে বাড়ি চলে আসবে… কারণ পৃথার পৌছানোটার প্রয়োজন অনেক বেশি…
সুশান্ত পৃথার বাবার কথাটা শুনে একবার চেষ্টা করেছিল বলতে যে সে সাথে যাবে, কিন্তু যখন দেখে যে পৃথা রাজি নয় তাকে সঙ্গে নেবার, আর দ্বিরুক্তি করে নি সে, পিছিয়ে গিয়েছে… শুধু বন্ধুত্বর খাতিরে বলেছিল, ‘যদি দরকার লাগে, সাথে সাথে আমাকে একটা ফোন করে দিস, আমি যা হোক করে পৌছে যাবো তোর ওখানে…’
মাথা নেড়ে শায় দিয়েছিল পৃথা… কারণ সে জানতো অর্নব থাকার পর আর কারুর তার পাশে থাকার প্রয়োজন হবে না…
বাড়ি আসার পর থেকে কোথা থেকে যেন ঝড়ের মত সময় বয়ে যায় পৃথার… দিনরাত এক হয়ে যায় নার্সিংহোম বাড়ি আর বাড়ি নার্সিংহোম করে… জলের মত টাকা খরচ হতে থাকে… কিন্তু তার এতটুকুও আঁচ লাগে না পৃথার বা তার বাড়ির কারুর গায়ে… ঢালের মত তাকে আগলে রাখে প্রণবেকে সামনে রেখে সেই অদৃশ্য মানুষটা… এতটুকুও খামতি হতে দেয় না পৃথার বাবার চিকিৎসায়… একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠেন পৃথার বাবা… হাঁফ ছাড়ে সকলে।
প্রণবরা এই ক’দিন একটা হোটেলের ডবল বেডেড রুম বুক করে নিয়েছিল, সেখানেই ছিল দুই বন্ধু… ছিল বলতে এক প্রকার এসে স্নান করে খেয়ে যাওয়া… তা নয়তো রাতদিন থেকেছে দুই জনেই পৃথার সাথে, নার্সিংহোমে…
দিন সাতেক পর ছাড়া পান পৃথার বাপী নার্সিংহোম থেকে, পৃথারা তাকে বাড়ি নিয়ে আসে… ডাক্তার বারবার করে তাদের সাবধান করে দিয়েছে কোন ভাবেই যেন বেশি স্ট্রেসড্ না নিতে হয় তাঁকে… সেই মতই তাকে খুব সাবধানে রাখা হয়েছে নিজের ঘরে… একান্ত প্রিয়জন ছাড়া কাউকেই খুব একটা আসতে দেওয়া হচ্ছে না দেখা করতে… শুধু শুধু যাতে ধকল না পড়ে ওনার ওপরে…
বাবাকে গুছিয়ে দিয়ে মায়ের কাছে যায় পৃথা… ‘এবার তুমিও একটু রেস্ট নাও তো… অনেক ধকল গেলো তোমার ওপর দিয়ে…’
এই কয় দিন সত্যিই ভদ্রমহিলার ওপর দিয়ে যথেষ্ট ধকল গিয়েছে… সন্তান দূরে থাকলে যে কি হয়, সেটা উনি বুঝে গেছেন… তাই সেটা ভেবে আরো বেশি উদ্বিগ্ন তিনি… ধীরে ধীরে বয়স বাড়ছে তাদের… তাই আজ না হয় সামলে নিয়েছেন সবাইকে পাশে পেয়ে, কিন্তু ভবিষ্যতেও যে এই ঘটনা ঘটবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কি? এবারে যেমন ঠিক সময় পৃথাকে ফোনে পাওয়া যায় নি… তবুও পাশে তাঁর ছোট দেওয়র ছিল, তাই রক্ষে পেয়েছে পৃথার বাবা এ যাত্রায়, কিন্তু যদি না থাকত? তখন কি করতেন উনি? ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে যেন ওনার… পৃথা কাছে এসে বসতেই ধীর স্বরে বলেন, ‘তুই আর ফিরে যাস না তিতির… দেখলি তো কি কান্ডটা ঘটে গেলো… এর পরও আমাদের ফেলে চলে যাবি?’ চিন্তার ছাপ পড়ে ওনার মুখে।
পৃথা এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে, হাতের মধ্যে মায়ের হাতটাকে তুলে ধরে বলে, ‘কিন্তু মা, এই ভাবে এখানে বসে থেকেও তো চলবে না আমার… না গেলে হবে বলো?’
‘কেন যাবি? কিসের জন্য? টাকার কি দরকার আমাদের? তোর বাবার কি অভাব পড়েছে যে তোকে চাকরি করে আমাদের খাওয়াতে হবে?’ অভিমান মেশানো গলায় বলেন পৃথার মা।
‘আমি কি টাকার জন্য চাকরী করতে গিয়েছি মা? বাপীর যা আছে, আমি জানি তাতে আমার চাকরী করার কোন প্রয়োজনই নেই… কিন্তু সেটা তো বড় কথা নয়… আমারও স্বনির্ভরতা থাকার দরকার, তাই না? বলো তুমি?’ মায়ের হাতের ওপরে চাপ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।
‘আমি ওসব স্বনির্ভরতা টিরভরতা বুঝি না… বাড়ির মেয়ে বাড়ি থাকবে না, সেটাই আমার কাছে সব থেকে বাজে ব্যাপার… কি ভাবে থাকিস বলতো মা… কে জানে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস কিনা, এই তো শুনলাম জ্বরে পড়েছিলিস… তুই বল, মায়ের মন শায় দেয় এই সব দেখে?’ বলতে বলতে মুখ ভার হয়ে ওঠে পৃথার মায়ের… ‘এবার তোর একটা বিয়ে দিয়ে দেবো আমি… তোর বাপী একটু সুস্থ হোক, আমি ঠিক তোর বিয়ে দিয়ে দেবো…’
‘আমি কি বিয়ে করে বর নিয়ে তোমার কাছেই থাকবো?’ হাসতে হাসতে বলে পৃথা… হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে নিজের বুকের মধ্যে…
‘না, তা নয়…’ আমতা আমতা করেন উনি।
‘তাহলে? তাহলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে তো সেই অন্য জায়গাতেই গিয়ে থাকবো, তাতে আর তোমাদের কি সুরাহা হবে, হু?’ মায়ের চিবুকটা আঙুলে তুলে বলে সে।
‘জানি যা…’ পৃথার হাত থেকে মুখটা সরিয়ে নেন… ‘তবুও তো জানবো যে আমাদের মেয়ে কারুর হাতে রয়েছে, ভালো রয়েছে, তাতেও তো খানিকটা নিশ্চিন্দে থাকতে পারবো…’
‘এখনই যে নেই, তাই বা কে বললো তোমায়?’ চোখের তারায় কৌতুক ঝরে পড়ে পৃথার… মনের মধ্যে অর্নবের নামটা ভেসে ওঠে তার… বুকের মধ্যেটায় কেমন ঢিপঢিপ করে ওঠে অকারণেই…
‘সে যাই বল, একা তো থাকিস… তাই কতটা ভালো থাকতে পারিস সে আমার জানা আছে…’ মুখে ফেরে আদরের মেয়ের জন্য চিন্তার ছায়া…
‘আমি একা থাকি কে বলল তোমায়?’ হাসে পৃথা মিটি মিটি…
‘মানে? আমি তো জানি তুই একাই থাকিস… একলা একটা ফ্ল্যাটে… সেই রকমই তো শুনেছিলাম… আবার কে জুটেছে?’ চিন্তা বাড়ে মায়ের মুখে।
‘আরে, কাজল আছে তো…’ তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে পৃথা, বুঝতে পারে মায়ের মন চিন্তায় আরো বেশি করে উতলা হয়ে উঠছে… ‘খুব ভালো মেয়েটা, জানো মা, আমার হাতে হাতে সব কাজ করে দেয়… ওকে তো প্রণবদাই এনে দিয়েছে, আগেও ওই ফ্ল্যাটেই কাজ করতো, খুব বিশ্বাসী মেয়েটা… আর ভিষন ভালো…’
‘সেটা কথা নয় মা, একটা কাজের লোকের হাতে আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে রাখবো, সেটা হয়? তুই কি সেই ভাবে মানুষ হয়েছিস? বলতো তিতির? শেষে আমার এত আদরের মেয়ে কাজের লোকের ভরসায় দিন কাটাবে, আমি বেঁচে থাকতে? না, না, এটা হয় না… আমি তোর বাপীর সাথে কথা বলবো, এর একটা বিহিত করতেই হবে আমায়…’ মাথা নেড়ে বলে ওঠেন পৃথার মা… মুখ পরিষ্কার চিন্তার ছায়া ঘনায় আরো…
‘আরে, তুমি এত ভাবছ কেন আমায় নিয়ে, আমি ঠিক আছি ওখানে… আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না… তুমি বিশ্বাস করো…’ মাকে বোঝাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে পৃথা…
‘সে তুই যাই বল, আমি এবার তোর একটা বিয়ে দেবোই… আমি দেখছি তোর ছোটকার সাথে কথা বলে, তোর মামাকেও বলবো একটা ছেলে দেখতে…’ হাত নেড়ে বলে ওঠেন উনি।
‘আচ্ছা, মা, বাপীর এখন এই অবস্থা, এখনই তোমার এই সব চিন্তা মাথায় এলো? কি যে করো না…’ মায়ের কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা…
‘না, না, সে তুই যাই বলিস তিতির, আমি তোর বাপীর সাথে কথা বলেছি আগেই… উনিও রাজি আমার সাথে, তোর এবার একটা বিয়ে দেবার দরকার… আর তোকে একা একা আমি ফেলে রাখতে চাই না…’ জেদ ধরে রাখেন ভদ্রমহিলা।
‘উফ… তুমি চাইলেই কি হবে নাকি… আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে চাই না যে… এই তো সবে চাকরীতে জয়েন করলাম…’ ফের বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা…
‘এই তিতির, তুই একটা আমাকে সোজা সাপটা কথা বলতো… তুই কি কাউকে পছন্দ করেছিস নাকি? তা সেটাই বল… তাকেই না হয় নিয়ে আয়… দেখি কে… এই ভাবে না না বলে যাচ্ছিস কেন?’ চেপে ধরার চেষ্টা করেন পৃথার মা মেয়েকে…
মায়ের কথায় সহসা কাল লাল হয়ে যায় যেন পৃথার… গালের ওপরে লালীমার আভা লাগে… মাথা নীচু করে নেয় সে…
মায়ের নজর এড়ায় না… মেয়ের দিকে ভালো করে ঘুরে বসে হাত রাখেন পৃথার কাঁধে, ‘কে রে তিতির? তোর ব্যাঙ্কেরই কেউ? তা এতদিন বলিস নি কেন? আমরা কি সেই রকম বাবা মা তোর?’ বলতে বলতে মেয়ের চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরেন ওপর দিক করে…
মায়ের চোখে চোখ রাখতে লজ্জা লাগে পৃথার, ঢোক গেলে সে… ‘না, মানে সেটা নয়…’
‘সেটা যে নয়, সেটা তো আমি বুঝছি… কিন্তু কোনটা… সেইটা তো আমায় বল…’ গলার স্বরে স্নেহ ঝরে পড়ে ভদ্রমহিলার…
‘আচ্ছা মা, তোমার জামাইয়ের যদি আগে একটা বিয়ে হয়ে থাকে, তুমি মেনে নিতে পারবে?’ চোখ ভরা ভীতি নিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘আমার মেয়ে যদি তাকে নিয়ে সুখি হয়, না মেনে নেবার কি আছে রে? আমার কাছে আমার মেয়ের সুখটাই বড়, আর কিছু লাগে না আমার… সে গরীব না বড়লোক, তার আগে বিয়ে হয়েছে কি হয়নি সেটা আমার কাছে প্রয়োজনীয় নয়… যেটা প্রয়োজনীয় সে আমার মেয়েকে সুখি রাখতে পারবে কি না… সেটাই জানার দরকার…’ পৃথার কপালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দিয়ে বলেন ভদ্রমহিলা।
‘ওহ! মা গো… তুমি কি ভালো… তুমি আমার বেস্ট মা ইন দ্য ওয়ার্ল্ড…’ মা কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে পৃথা… সারা মুখটা খুশিতে ঝলমল করে ওঠে তার…
পৃথার মাও পৃথাকে জড়িয়ে রাখেন নিজের বুকের মধ্যে… পীঠের ওপরে হাত বোলান আদরের… ‘তা হ্যা রে মা, কি করে ছেলেটা?’ প্রশ্ন করেন তিনি।
‘ব্যবসা… খুব বড় একটা ফ্যাক্টারী আছে কেমিকালএর… ও এখানকার ছেলে নয়, ওর বাড়ি ছত্তিসগড়ে… কিন্তু জানো মা, ওর না কেউ নেই… আগে কানাডায় থাকতো, ওখানেই বিয়ে করেছিল, কিন্তু ওর আগের বউএর ক্যান্সার হয়েছিল, মারা গিয়েছিল, তারপর থেকে ও এখানে, মানে কলকাতাতেই থাকে… আমি তো ওর ফ্ল্যাটেই থাকি ভাড়া…’ আবেগে যেন সব বলতে ইচ্ছা করে পৃথার, তার মাকে… এতদিন এই সব বলতে না পেরে যেন হাঁফিয়ে উঠেছিল সে মনে মনে… আজ সব উগরে দিতে চায় মায়ের কাছে…
‘কেউ নেই বলছিস… সব দিক দেখে নিয়েছিস তো… আর কিছুই না, আজকাল যা সব শুনি…’ মনের মধ্যে একটু শঙ্কার বাসা বাঁধে কোথাও…
‘হ্যা মা, আমি সব দিক দেখে শুনে তবেই এগিয়েছি… বড্ডো ভালো ছেলে… একটু বয়স বেশি ঠিকই, কিন্তু আমাকে ভিষন সামলে রাখে… এই যে বাপীর চিকিৎসার টাকা, সব তো ওই দিয়েছে, ওর বন্ধুর হাত দিয়ে…’ মাকে বলতে পেরে যেন নিজেকে খুব হাল্কা লাগে পৃথার।
‘ও… ওই ছেলেটি… প্রণবদা প্রণবদা করছিলিস যাকে?’ জিজ্ঞাসা করেন পৃথার মা…
‘হ্যা… ওই তো অর্নবের বন্ধু… ওর ব্যবসার পার্টনারও… আমাকে এখানে আসার টিকিট যোগাড় করে আমাকে প্লেনে তুলে দিয়ে শিলিগুড়ি চলে এসেছে, যাতে বাপীর চিকিৎসার কোন অসুবিধা না হয় দেখতে…’ উজ্জল মুখে উত্তর দেয় পৃথা।
‘তা অর্নব… হ্যা অর্নবই তো বললি নামটা… তা অর্নব আসে নি?’ প্রশ্ন করেন ভদ্রমহিলা।
‘হ্যা এসে…’ বলতে গিয়েই থমকায় পৃথা… তাড়াতাড়ি সামলে নেয় কথা… এসেছে বললে সে জানে মা বলবেন তাকে নিয়ে আসার জন্য, তখন তো আর এক বিপদ হবে, কাকে আনবে সে? একটা কায়াহীন মানুষকে? ‘না, মানে ও আসতে পারে নি, একটু আটকে গেছে, তাই তো বন্ধুকে পাঠিয়েছে এখানে…’ তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে সে।
‘ওহ! তা এখন একবার বলে দে আসতে… তুই এখানে থাকতে থাকতেই আমরা কথা বলে নিই ওর সাথে…’ বলে ওঠেন পৃথার মা।
‘এ…এখানে আসতে বলবো?’ ঢোক গেলে পৃথা… কি করে পরিস্থিতি সামলাবে বুঝতে পারে না… অর্নবকে এদের সামনে হাজির করবে সে কি করে? সেটা যে একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার একটা… মা যদি অর্নবকে এই অবস্থায় দেখে, তবে তো ভিমরি খাবে, তখন মাকে রাজি করানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে তার কাছে, যতটা সহজে মা মেনে নিয়েছে অর্নবকে, তখন ততটাই বেঁকে বসবে যে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না…
‘হ্যা… এখানে… আমাদের তো একবার কথা বলতে হবে ছেলেটির সাথে… বিয়ে বলে কথা, আর চারপাঁচটা আত্মীয় সজনের সাথে আলাপ পরিচয় হবে, তবেই না জিনিসটা একটা জায়গায় পৌছাবে… তুই এখানে থাকতেই বরং ওকে আসতে বলে দে… ততদিন না হয় তুই আমাদের কাছেই থাক…’ স্বাভাবিক স্বরে কথা বলে উঠে দাঁড়ান পৃথার মা, ‘নাঃ একবার যাই তোর বাবার কাছে, মানুষটা ঘরে একা আছে, আর তাছাড়া ওনাকেও কথাটা জানিয়ে রাখি…’ বলতে বলতে পা বাড়ান ঘরের বাইরে।
‘এবার কি হবে?’ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে পৃথা… ‘দুম করে আনন্দের মধ্যে বলে তো দিলাম অর্নবের কথাটা মায়ের কাছে, কিন্তু এখানে যে ডেকে পাঠাবে মা, সেটা তো মাথায় ছিল না… এখন?’
৩৯।।
‘চলো, মা তোমার সাথে কথা বলবে বলে ডেকেছে…’ হোটেলের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে পৃথা…
বাড়ি থেকে মাকে একটু আসছি বলে চলে এসেছে সোজা অর্নবের হোটেলে। আসলে একবার অর্নবের সাথে কথা না বলা অবধি সে নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না কিছুতেই… তার তো মাথাতেই আসছে না কি ভাবে মায়ের সামনে ওঠা এই সিচুয়েশনটা হ্যান্ডেল করবে ও… মা রাজি, কিন্তু কার সাথে তার বিয়ে দেবে? যাকে দেখা যায় না? মা যদি জানতে পারে, তাহলে তার মুখের এক্সপ্রেশনটা কিরকম হবে ভাবতেই পৃথার বুক শুকিয়ে যাচ্ছিল… তাই বাড়ি থেকে বেরিয়েই একটা রিক্সা নিয়ে সোজা অর্নবের হোটেলে এসে হাজির হয়েছে… পৃথাকে আসতে দেখে প্রণব আর থাকে নি ঘরে… আসছি একটু বলে বাহানা দেখিয়ে পৃথাকে ঘরের মধ্যে রেখে বেরিয়ে গিয়েছে প্রায় সাথে সাথেই… সে জানে কাবাবে হাড্ডি হওয়া না তার বন্ধু চাইবে, না ব্যাপারটা ভালো দেখাবে… তার থেকে দুই কপোত কপোতিকে একান্তে ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেছে প্রণব…
‘মা ডেকেছে মানে?’ অর্নবের বিস্মিত কন্ঠ স্বর ভেসে আসে ঘরের মধ্যে থেকে… অর্নবের গলার স্বর কানে যেতেই বুকের মধ্যেটায় কেমন তোলপাড় করে ওঠে যেন… সারা শরীরের মধ্যে শিহরণ খেলে যায়… গলার মধ্যে একরাশ ভালোবাসা উঠে এসে দলা পাকায়… গাঢ় হয়ে ওঠে চোখের দৃষ্টি… দ্রুততা পায় নিঃশ্বাস… পৃথা ফিরে রুমের দরজাটাকে বন্ধ করে দেয়… লক তুলে দেই ছিটকিনির… শিলিগুড়ি আসা ইস্তক নানান ভাবে সময় বয়ে গিয়েছে, কখনও বাপীর চিন্তায়, সঙ্কায়, উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে, আবার বাপী নার্সিং হোম থেকে ফেরার পর অন্যান্য আত্মীয় সজনদের আসা যাওয়ার মধ্যে দিয়ে… তাই এই ক’দিনে ও অর্নবের সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ভিষন ভাবে…
অর্নব এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার তিতিরের দিকে… পৃথাকে এতদিন পর রুমের মধ্যে দেখে তারও ভেতরে বুকের মধ্যে দামামা বেজে ওঠে… এই কটা দিন সেও অন্য কিছু ভাবার অবকাশ পায় নি পৃথাকে নিয়ে, কিন্তু আজ, এই ভাবে, একাকী হোটেলের রুমের একান্তে পৃথাকে দেখে অস্থির হয়ে ওঠে তার মন… স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পৃথার দিকে… সাজ একেবারেই সামান্য বলা যেতে পারে পৃথার… পরনে একটা আকাশি নীল জেগিংস আর গায়ের ওপরে চাপানো রয়েছে গাঢ় সবুজ রঙের টি-শার্ট… জেগিংসটা পায়ের সাথে যে ভাবে টাইট হয়ে চেপে বসে আছে, তাতে সেটাকে শরীরের দ্বিতীয় চামড়া বললেও অত্যক্তি করা হয় না… গোল সুডৌল মাংসল পুরুষ্টু থাইগুলো যেন আরো বেশি করে আকর্শনীয় হয়ে উঠেছে তাতে… পৃথা সামনে ফিরে থাকলেও অনতি দূরে দাঁড়িয়েও অর্নবের বুঝতে অসুবিধা হয় না ভারী উত্তল নিতম্ব কি পরিমানে এবং কতটা লোভনীয় ভাবে ঠেলে ফুটে রয়েছে জেগিংসএর কাপড় ভেদ করে… গায়ের ওপরের টি-শার্টটাও যথাবিধ শরীরের সাথে চেপে বসে রয়েছে, যাতে দেহের চড়াই উৎরাই গুলো চোখের সামনে যেন মেলে ধরে হাতছানি দিয়ে ডাকছে অর্নবকে… ব্রায়ে বাঁধা পরা সুগোল বুকদুটো ঠেলে উঠে রয়েছে বেশ খানিকটা… কাঁধ থেকে একটা বড় ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখা…
ধীর পায়ে এগিয়ে যায় অর্নব… একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় পৃথার… অর্নবের এগিয়ে আসা অনুভব করে পৃথাও… বুঝে ফের শিহরীত হয় সে… খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ঘাড়ের রোঁয়া… আস্তে আস্তে হাত তোলে সে… বাড়ায় সামনের পানে… ছোয়া পায় তার ভালোবাসার মানুষটার দেহটায়… নিজেও কয়এক কদম এগিয়ে দাঁড়ায়… হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে… মুখ নামায় মানুষটার অদেখা বুকটার ওপরে… মাথা রাখে ঘাড় কাত করে… হাত তুলে আঙুলের বিলি কাটে অর্নবের বুকের লোমে… ফিসফিসায় পৃথা, ‘মাকে বলেছি আমি…’ একটু থেমে দম নেয়… কথাটা বলতে বলতে আরো যেন গলে, মিশে যেতে চায় অর্নবের বুকের মধ্যে… ‘মা… রাজি হয়েছে আমাদের বিয়ের…’ বলতে বলতেই কোথা থেকে যেন একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরে পৃথাকে… তাড়াতাড়ি ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ লোকায় সে অর্নবের বুকের মাঝে… লাল হয়ে ওঠে ফর্সা কানের লতীদুটো তার…
উত্তরে কিছু বলে না অর্নব… পৃথার চিবুকটাকে হাতে নিয়ে তুলে ধরে নিজের মুখের পানে, তারপর ঝুঁকে ঠোঁটটাকে ডুবিয়ে দেয় পৃথার পাতলা ঠোঁটের ওপরে… গালের দাড়ি ভেসে বেড়ায় পৃথার মুখে, গলায়… দুজন দুজনের ঠোঁট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ভুলে যায় কি কথা শুরু হয়েছিল তাদের… হারিয়ে যায় তারা একে অপরে ঠোঁটের মধ্যে…
দরজায় নক শুনে তাড়াতাড়ি আলাদা হয় দুজনে… এগিয়ে দরজা খুলে ধরে পৃথা… ওপাশে একজন রুম সার্ভিসের ছেলে দাড়িয়ে আছে দেখে… পৃথাকে দেখে বলে সে, ‘স্যর বললেন রুমে দু-কাপ কফি দিয়ে যেতে, তাই…’
দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় পৃথা, ছেলেটি ঘরের মধ্যে ঢুকে নামিয়ে রাখে কফির ট্রে’টাকে টেবিলের ওপরে… তারপর কেমন একটা সন্দিঘ্ন চকিত দৃষ্টি হেনে তাকায় পৃথার দিকে, যেন মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায় ছেলেটির… মেয়েটি একা, অথচ দেখে যেন মনে হচ্ছে আরো কেউ ছিল ঘরে… মেয়েটির মাথার চুল অবিনস্ত… বাথরুমের দরজাটাও খোলা, এই নয় যে কেউ রয়েছে বাথরুমে… কফিও অর্ডার দেওয়া হয়েছে দু-কাপ… ঠিক যেন মেলাতে পারে না সে… ওকে এই ভাবে ইতস্থত করতে দেখে পৃথা প্রশ্ন করে, ‘আর কিছু বলবে?’
পৃথার প্রশ্নে থতমত খায় ছেলেটি, তবুও আর একবার ঘরের মধ্যে নজর ঘুরিয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়… পৃথা বন্ধ করে দেয় দরজাকে ফের… ঘাড়ের ওপরে গরম নিঃশ্বাসে ছোঁয়া পড়ে তার… দুটো বলিষ্ঠ হাত দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে তার শরীরটাকে পেছন থেকে… হাতের একটা তালু মেলে থাকে তার তলপেটের ওপরে অপর হাতে তালু এসে পড়ে সগঠিত স্তনের ঠিক নীচটায়… আবেশে শিথিল হয়ে যায় পৃথার শরীর… নিজের দেহটাকে পেছন পানে হেলিয়ে দেয় সে অর্নবের বুকের ওপরে… অর্নব মুখ নীচু করে ঠোঁট রাখে পৃথার খোলা গলার পাশে… পৃথার মনে হয় যেন ওই তপ্ত ঠোঁটের ছোয়ায় পুড়ে গেল তার ওই জায়গার চামড়াটা… ‘অর্নব…’ ফিসফিসিয়ে ওঠে পৃথা… ‘কি করছহহহহ…’ আরামে দুচোখ মুদে আসে তার… ঘন হয়ে ওঠে নিঃশ্বাস… বুকের মধ্যে তোলপাড় করে এক অব্যক্ত অনুভূতি…
ছোট ছোট চুমু এঁকে দিতে থাকে পৃথার খোলা ঘাড়ের চামড়ায় অর্নব… আস্তে আস্তে সেই চুম্বনের রেখা উঠে আসে পৃথার কানের পেছন দিকে… আলতো স্পর্শে জিভ ঠেকায় কানের পেছনদিকটায়… পৃথার মতই ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে সে, ‘কেন… কি করেছি আমি?’
কানের পাশে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই সারা শরীরটার মধ্যে শিহরণ খেলে যায় পৃথার… সিরসির করে ওঠে পুরো দেহটা তার… ‘আহহহহহ…’ চাপা শিৎকার বেরিয়ে আসে মুখ থেকে… ‘জানো না কি করছ?’ চাপা স্বরে বলে সে… ‘এই রকম করলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না যে…’
‘কে বলেছে সামলাতে নিজেকে?’ কানের লতীটাকে মুখের মধ্যে টেনে নেবার আগে প্রশ্ন করে অর্নব…
সারা শরীরে যেন আগুন ধরে যাচ্ছে মনে হয় পৃথার… বুকের নীচে থাকা অর্নবের হাতটাকে তুলে নিজেই চেপে ধরে নরম স্তনদুটোর ওপরে… আরো এলিয়ে দেয় দেহটাকে অর্নবের দিকে… ‘ইশশশশ… আমি যে আর পারছি না গো… সারা শরীর কেমন করছে… নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না যে…’ ফিসফিস করে বলে ওঠে পৃথা…
‘আমি কি তোমায় নিজেকে আটকে রাখতে বলেছি?’ বলতে বলতে কানের গর্তের মধ্যে জিভটাকে প্রবেশ করিয়ে দেয় অর্নব…
‘ওহ! মাহহহ…’ সিঁটিয়ে ওঠে পৃথা… অর্নবের হাতটাকে প্রাণপনে চেপে ধরে নিজের বুকের ওপরে… ‘ইশশশশ… এখন এমন কোরো না গো… যদি প্রণবদা এসে পড়ে… ইশশশশ কি লজ্জায় পড়ে যাবো বলো তো…’ মুখে বলে ঠিকই, কিন্তু নিজের উত্তল নিতম্বটাকে ঠেলে দেয় অর্নবের কোলের দিকে… স্পর্শ পায় স্ফিত হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটার নিজের নরম নিতম্বের দুই দাবনার বিভাজিকায়…
পৃথার কাঁধটা ধরে ঝট করে ঘুরিয়ে দেয় তাকে নিজের দিকে করে, ‘প্রণব এখন আসবে না’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে অর্নব… তারপর ঝুঁকে নিজের ঠোঁটটাকে মিলিয়ে দেয় পৃথার ঠোঁটের সাথে… দুহাত তুলে আঁকড়ে ধরে অর্নবকে পৃথা… ব্রা আর টি-শার্টের আড়ালে থাকা নরম বুকদুটো নিষ্পেশিত হতে থাকে অর্নবের চওড়া বুকের ওপরে… ‘আমায় আদর করো… আদর করো আমায়…’ অর্নবের ঠোঁট থেকে মুখ তুলে বিড়বিড় করে বলে ওঠে পৃথা… তারপর ফের এগিয়ে বাড়িয়ে দেয় নিজের ঠোঁটটাকে তার মানুষটার পানে… অর্নবও ফের তুলে নেয় পৃথার ঠোঁটটাকে নিজের মুখের মধ্যে… জিভটাকে ঢুকিয়ে দেয় পৃথার মুখে… দুটো জিভ একে অপরের সাথে খেলা করতে থাকে… অর্নবের একটা হাত নেমে যায় পৃথার পীঠ বেয়ে উত্তল নিতম্বটার ওপরে… হাতের তালু চেপে বসে নরম দাবনায়… চাপ বাড়ে… ‘উমমমম…’ গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা অর্নবের জিভটাকে মুখের মধ্যে চুষতে চুষতে… নিজের বুকটাকে আরো চেপে ধরে অর্নবের সাথে… সেও হাত নামিয়ে দেয় অর্নবের পীঠের ওপর থেকে তাদের শরীরের মাঝে… হাতের মুঠোয় চেপে ধরে অর্নবের পৌরষটাকে যেটা এতক্ষন তার তলপেটের ওপরে ঢুঁ মারছিল বারংবার… মুঠোয় ধরে ওপর নিচে করে হাতটাকে… নখের আঁচড় কাটে পুরুষাঙ্গটার সংবেদনশীল মাথায়…
নিজের লিঙ্গের মাথায় পৃথার আঙুলের ছোঁয়া পড়তেই কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব… খুলে যায় তাদের একে অপরে সাথে আটকে থাকা মুখের জোড়… ‘আহহহহহ…’ শিৎকার বেরিয়ে আসে অর্নবের মুখ থেকে… পৃথার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে… আরো জোরে চেপে ধরে পুরুষাঙ্গটাকে তার নরম হাতের মুঠোর মধ্যে… নাড়ায় সেটিকে ওপর নিচে করে…
হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে যায় অর্নবের সামনে, পুরুষাঙ্গটাকে হাতের মধ্যে বাগিয়ে ধরে… অর্নবের বুঝতে অসুবিধা হয় না কেন পৃথা বসে পড়তে চাইছে, তাই তাড়াতাড়ি করে তার কাঁধটা ধরে আটকায়… ‘এখন নয়… পরে…’ ফিসফিসিয়ে জানায় সে… ‘আই ওয়ান্ট ইয়ু… নাও…’
‘দেন টেক মী…’ উত্তরে ফিসফিসায় পৃথাও… ফের সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অর্নবের গালে হাত রেখে মুখটা তুলে এগিয়ে দেয় সামনের পানে… চেপে ধরে নিজের ঠোঁটটাকে আবার… চুমু খায় অর্নবের মুখে মুখ রেখে…
অর্নব পৃথার পরা টি-শার্টটাকে ধরে এক লহমায় খুলে ফেলে দেয় মাটিতে… পৃথা হাতটাও যেন সংক্রিয় ভাবে চলে যায় নিজের শরীরের পেছন দিকে… খুলে ফেলে লাল রঙের ব্রায়ের হুক… দেহের থেকে সেটাকে ছাড়িয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় দূরে… কোমরের কাছে জেগিংসের বোতামগুলো পটাপট খুলে ফেলে ক্ষিপ্র গতিতে… কোমর বেকিয়ে চুড়িয়ে সেটাকেও নামিয়ে দেয় দেহ থেকে নীচে… এক পায়ের চাপে চেপে ধরে টান মেরে খুলে দেয় শরীর থেকে জেগিংসটাকে আপন গরজে… সেই সাথে খুলে ফেলে পরে থাকা ছোট্ট প্যান্টিটাও… তারপর একেবারে জন্মদিনের পোষাকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত তোলে সামনের পানে… বলে ওঠে, ‘টেক মী… মেক লাভ টু মী সোনা… এসো…’
অবলীলায় পৃথার শরীরটাকে তুলে নেয় শূণ্যে… দুই হাতে… পাঁজাকোলা করে… হাত পেঁচিয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে পৃথা… তার হাতের ভরসায় ঝুলতে থাকে সে ঘরে শূণ্যে… ওই ভাবেই তাকে নিয়ে এগিয়ে যায় ঘরের মধ্যে পাতা দুটো বিছানার একটার দিকে… নামিয়ে দেয় পৃথাকে বিছানার ওপরে… পৃথাও জড়িয়ে রাখা হাত দিয়ে টেনে নেয় অর্নবকে নিজের দিকে… বিছানায় শুয়ে… অনুভব করে অর্নবের ভারী লোমশ দেহটা নিজের দেহের ওপরে… তার বুকের লোমগুলো ঘসা খায় নগ্ন নরম বুকের ওপরে, বোঁটায়, বোঁটার বলয়ে… নিজের দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে তুলে ধরে জঙ্ঘাটাকে অর্নবের পানে… ডান হাতটাকে নামিয়ে দিয়ে মুঠোয় ধরে শক্ত লিঙ্গটাকে… সেটাকে ধরে ওটার মাথাটাকে ঘসে ভিজে ওঠা যোনিওষ্ঠে… সামনে পেছনে করে ঘসে চলে তার ব্যাকুল যোনির মুখে… দুজনেই গুঙিয়ে ওঠে আরামে… একটু একটু করে লিঙ্গটাকে নিজের যোনির ওপরে ঘসার ব্যাসটাকে কমিয়ে আনতে থাকে পৃথা… তারপর একটা সময় সেটা শুধু ঠেঁকে যোনির মুখটায়… আলতো করে নীচ থেকে কোমরটাকে তুলে ধরে সে… আর অনুভব করে কি অবলিলায় তার রসে হড়হড়ে হয়ে ওঠা যোনির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে ওই রকম স্ফিত লিঙ্গের মাথাটা… ‘উমমমম…’ দাঁতে দাঁত চেপে গোঙায় সে…
কুনুইয়ে ভর রেখে দেহেটাকে একটু তুলে ধরে অর্নব, তারপর পৃথার পানে তাকিয়ে চাপা কুন্ঠিত গলায় বলে ওঠে, ‘কিন্তু তিতির… আমার কাছে যে কন্ডোম নেই… এটা একবার ভাবা উচিত ছিল, তাই না… এখন তো…’
‘আমারও এখন সেফ নয়…’ ফিসফিসিয়ে জানায় পৃথা… হাত তুলে গাঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে তুলে থাকা অর্নবের শরীরটাকে… টেনে নেয় অর্নবকে নিজের বুকের ওপরে সে… ঠোঁটটা তুলে ডুবিয়ে দেয় অর্নবের ঠোঁটের ওপরে অক্লেশে… পৃথার মুখের মধ্যেই যেন অর্নবের কথাগুলো হারিয়ে যায় এই ভাবে… অনুভব করে সে তার লিঙ্গের ওপরে পৃথার যোনির ভেজা নরম উষ্ণ পেশীর চাপ… পৃথার এই কামনভরা আলিঙ্গনে কেমন যেন দূর্বল হয়ে পড়ে সে… মনের মধ্যে উঠে আসা কুন্ঠাটা মিলিয়ে যেতে থাকে একটু একটু করে…
তাও সে আরো একবার শেষ চেষ্টা করে… ‘কিন্তু… কিন্তু যদি তুমি প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ো?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথাকে…
‘তাহলে আমার মত সুখি কেউ হবে না…’ ঠোঁটের কোনে হাসি মাখিয়ে উত্তর দেয় পৃথা গাঢ় স্বরে… চোখের তারায় ঘরের বৈদ্যুতিক আলো যেন ঝিলিক দেয়…
‘কিন্তু… ইফ ইয়ু হ্যাভ আ বেবী?’ সসংকোচে প্রশ্ন করে অর্নব…
হাসিটা মোছে না পৃথার ঠোঁট থেকে… আস্তে করে ঘাড় নেড়ে উত্তর দেয় পৃথা… ‘ইট উইল বী ইয়োর বেবী… আই’ল বী গ্ল্যাড টূ হ্যাভ ইয়োর বেবী…’
কিন্তু তবুও কুন্ঠা যায় না অর্নবের… আরো যেন বেশি করে কুন্ঠীত হয়ে পড়েছে সে যখন জেনেছে যে পৃথা সেফ নয় এখন… শুরুটা হয়তো সেই করেছিল ঠিকই, কিন্তু হটাৎ করেই ব্যাপারটা মাথায় আসতে অস্বস্থিটা শুরু হয় তার মধ্যে… অথচ তার পুরুষাঙ্গের চারপাশে পৃথার চেপে বসে থাকা যোনির কোমল চাপটাও সে অগ্রাহ্য করতে পারে না কোনমতেই… দ্বিধা যেন কিছুতেই সরাতে পারে না মনের মধ্যে থেকে অর্নব…
এই ভাবে চুপ করে থাকা দেখে অর্নবের মনের দ্যুবিধা বুঝধে অসুবিধা হয় না পৃথার… আরো গাঢ় আলিঙ্গনে টেনে নেয় অর্নবকে নিজের বুকের মধ্যে… উত্তেজনায় শক্ত হয়ে ওঠা বুকের বোঁটাগুলো চেপে বসে অর্নবের লোমশ ছাতির ওপরে… ফিসফিসায় পৃথা… ‘আই লাভ ইয়ু অর্নব… আমি তোমার জীবনে থাকতে চাই… যে কোন উপায়ে… তাতে যদি আমি আজ প্রেগনেন্ট হয়েও যাই… তাই সই… আমি তোমার মধ্যে একেবারে মিশে একাকার হয়ে যেতে চাই… একেবারে তোমার হয়ে যেতে চাই অর্নব… প্লিজ… আর কিছু ভেবো না… আমায় নাও… আমায় ভালোবাসো অর্নব… তোমার তিতির তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে… এখন আর কিছু ভেবো না… প্লিজ… আই লাভ ইয়ু সোনা… লাভ ইয়ু…’
তাও প্রায় মিনিট খানেক চুপ করে থাকে অর্নব… তারপর ধীরে ধীরে নিজের মুখ নামিয়ে দেয় পৃথার পানে… ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে দেয় ঠোঁট… গভীর চুম্বন এঁকে দেয় পৃথার পাতলা নরম ঠোঁটেতে…
‘আই লাভ ইয়ু টু, তিতির…’ ঠোঁটের ওপর থেকে মুখটা তুলে গাঢ় স্বরে বলে ওঠে অর্নব… ‘আমি তোমায় আমার জীবনে পেয়ে ধন্য তিতির… ধন্য আমি… তোমার ভালোবাসা পেয়ে… তোমাকে সরিয়ে রাখার ক্ষমতা আমার নেই… ক্ষমতা নেই আমার তোমার ভালোবাসা অস্বীকার করার…’
‘দেন টেক মী বেবী…’ মৃদু হেসে উত্তর দেয় পৃথা… ‘আই ওয়ান্ট ইয়ু ইন্সাইড মী… আই ওয়ান্ট ইয়ু সো ব্যাড…’
পৃথার কথায় অর্নবের বুকের মধ্যেটায় যেন ধকধক করে ওঠে আবেগে… তাও সে সেকেন্ডের কয়এক ভগ্নাংশ ইতস্থত করে যেন কোমরটাকে সামান্য তুলে ধরতে… তারপর নামায় কোমর… পৃথার শরীরের মধ্যে ঢুকে যায় তার দৃঢ় লিঙ্গটা অনায়াসে… পৃথার যোনির মধ্যেটা এতটাই ভিজে উঠেছে যে মাত্র বার দুয়েক চেষ্টা করতে হয় তাকে ঢোকাবার জন্য… শেষে প্রায় পুরো লিঙ্গটাই সেঁদিয়ে যায় একেবারে পৃথার নরম যোনির অভ্যন্তরে… লিঙ্গের শেষে ঝুলতে থাকা অদৃশ্য অন্ডকোষটা এসে ঠেঁকে পৃথার সুগোল নিতম্বে…
‘ওহহহহহ… অর্নব… ইট ফিলস্ সো গুড টু হ্যাভ ইয়ু ইন্সাইড মী…!’ ফিসফিসিয়ে জানায় পৃথা… অর্নবকে জড়িয়ে ধরে মুখটাকে তুলে খুঁজে নেয় তার ঠোঁটটাকে ফের… নিজে জিভটাকে পুরে দেয় অর্নবের মুখের মধ্যে… পা তুলে পুরুষ্টু উরুর সাহায্যে কাঁচি দিয়ে ধরে অর্নবের কায়াহীন কোমরটাকে… বুকটাকে ঠেলে রাখে অর্নবের বুকের সাথে… নীচ থেকে তোলা দেয় কোমরের অর্নবের ছন্দের সাথে… অনুভব করে কি ভাবে তার দেহটাকে ভরিয়ে তুলেছে অর্নবের স্ফিত পুরুষাঙ্গটা… হটাৎ করে সে বুঝতে পারে খুব শিঘ্রই তার অর্গাজম হতে চলেছে… খুব শীঘ্রই পেতে চলেছে সে চরম সুখ… কাঁপন ধরে তার পায়ের পেশিতে… কেঁপে ওঠে তলপেট… তাড়াতাড়ি অর্নবের কোমর থেকে পা খুলে নামায় বিছানার ওপরে… হাঁটুর থেকে মুড়ে পায়ের পাতায় ভর রাখে সে… অর্নবের কোমরের ধাক্কার সাথে তাল মিলিয়ে তুলে তুলে দেয় নিজের জঙ্ঘাটাকে অর্নবের পানে… গ্রহণ করে অর্নবের শক্ত পুরুষাঙ্গটাকে নিজের দেহের গভীরের পরম ভালোবাসায়…
অর্নবের কোমরের আন্দোলনের গতি বাড়ে… দ্রুত ঢুকতে বেরুতে থাকে শক্ত লিঙ্গটা পৃথার ভেজা যোনির মধ্যে… ঠেলে ঠেলে প্রায় গুঁজে দেয় নিজের পুরুষাঙ্গটাকে অর্নব… যোনির ভেতরের শিরাউপশিরায় ঘর্সন লাগে তার লিঙ্গের সাথে… পৃথার যোনির মধ্যে ছড়িয়ে দেয় অফুরন্ত পুলকের কম্পন… যে কম্পন ছড়িয়ে পড়তে থাকে যোনি থেকে আরো অভ্যন্তরে… ছড়িয়ে পড়ে শরীরের কোনায় কোনায়… প্রথম দিকে শুধু মাত্র অল্প অল্প গোঙানী বেরিয়ে আসছিল পৃথার মুখ থেকে রমনসুখে… কিন্তু আস্তে আস্তে সে গোঙানী বাড়তে থাকে… রূপান্তরিত হতে থাকে প্রবল শিৎকারে… ঘন হয়ে উঠতে থাকে তার নিঃশ্বাস… সংকোচন অনুভূত হয় জরায়ুর মধ্যে… একটা অদ্ভুত খিঁচুনিতে কেঁপে ওঠে পৃথার দেহটা… থেকে থেকে কেঁপে ওঠে শরীরের নিম্নাঙ্গ… ‘ওহহহহহ… ইশশশশশ…’ পৃথা হিসিয়ে ওঠে অর্নবের চওড়া কাঁধটাকে খামচে ধরে… চেপে ধরে তাকে নিজের বুকের সাথে আরো কষে… ঠেলে দেয় নিজের বুকটাকে অর্নবের পানে যত শক্তি আছে তাই দিয়ে… বন্ধ করে নেয় চোখদুটোকে চেপে… যোনির পেশি দিয়ে কামড়ে ধরার চেষ্টা করে আসা যাওয়া করতে থাকা পুরুষাঙ্গটাকে প্রবল ভাবে… অনুভব করে পৃথা, অর্নবের দেহের প্রতিটা ধাক্কা কেমন ভাবে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে উঠছে তার নরম তলতলে নিতম্বের দাবনাদুটো… ভেজা যোনির ওষ্ঠের সাথে অর্নবের নগ্ন শরীরের আঘাতে একটা কেমন থপথপে আওয়াজ ভরে উঠেছে ঘরের মধ্যেটায়… অর্নবের লিঙ্গটা ঢুকছে বেরুচ্ছে তার যোনির মধ্যে থেকে কি সুন্দর গতিতে… সবল, কিন্তু বেদনাদায়ক নয়… আরামদায়ক… পৃথা অনুভব করে তার যোনির ওষ্ঠগুলোয় সঞ্চারিত হচ্ছে রক্ত… ফুলে উঠছে সেগুলো আরো বেশি করে… ভিজে উঠছে সে সময়ের সাথে আরো বেশি… আরো দ্রুত…
‘ওহহ তিতির… তোমার ভেতরটা কি টাইট…’ ফিসফিসিয়ে বলে অর্নব কোমরের আন্দোলনকে একই গতিতে রেখে দিয়ে… একবারের জন্যও থামে না সে… যদিও তার অভিলাষা এখনি নিজের বীর্যস্খরণ নয়… সে চায় আগে পৃথার রাগমোচন হয়ে যাক… কিন্তু যে পরিমানে আরামের মধ্যে দিয়ে সে চলছে, কতক্ষন তার পক্ষে নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব তাতে সে যথেষ্ট সন্দিহান…
‘ওহহহহহ মাহহহহ… উমমমম্ফফফফফফ…’ মুখ বিকৃত করে দাঁতে দাঁত চেপে কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… শিৎকারটা অদ্ভুত ভাবে বেরিয়ে আসে নিঃশ্বাসের সাথে মিলে মিশে… কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিল হয়তো অর্নবের কথায়, কিন্তু শুরু করার আগেই সুনামীর মত আছড়ে পড়ে যেন সুখটা… হাতের নখ বিঁধে যায় অর্নবের খোলা কাঁধের মাংসপেশির মধ্যে… অনুভব করে পৃথা তার দেহের গভীরে যেন তরঙ্গের পর তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে… প্রচন্ড সুখটা তার শরীরের যোনির প্রতিটা শিরাউপশিরা বেয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পেটে, বুকে, গলায়, মুখে, হাতে, পায়ে… সব… সর্বত্র… থরথর করে কাঁপতে থাকে তার পুরো শরীরটাই… কোঁকিয়ে ওঠে সে ঘটতে থাকা প্রচন্ড রাগমোচনের অভিঘাতে… ‘ওহ!… ওহ! মাই গড… আহহহহহ…’
‘তিতির… আমার… আমারও হবে…’ হাফাতে হাফাতে বলে ওঠে অর্নব… তার পক্ষে আর নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না… লিঙ্গের চারপাশ থেকে কামড়ে ধরা যোনির পেশির সুখে সে নিজেকে সামলাতে পারে না আর… দাঁতে দাঁত চেপে ধরে সে প্রাণপনে… আরো বেড়ে যায় তার কোমরের আন্দোলনের গতি… ঠেসে ঠেসে ধরতে থাকে আরো ফুলে বেড়ে ওঠা লিঙ্গটাকে পৃথার নরম ভেজা যোনির মধ্যে… অনুভব করে নিজের পুরুষাঙ্গের মাথাটার সংবেদনশীলতার বৃদ্ধি…
‘গিভ ইট টু মী, বেবী, ডোন্ট পুল আউট… কাম ইন্সাইড মী!!!’ ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলে ওঠে পৃথা… হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে… অন্য হাত তুলে বোলায় অর্নবের দাড়িভরা গালের ওপরে… অনুভব করে অর্নবের বেড়ে ওঠা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস… ‘কাম ইন্সাইড মী, বেবী… কাম ইন্সাইড মী…’ ফিসফিসিয়ে বলে চলে সে বারংবার অর্নবের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে… পাদুটোকে আরো ফাঁক করে মেলে ধরে তার শরীরের মধ্যে অর্নবের ভালোবাসার বীজ গ্রহণ করার অদ্যম আকাঙ্খায়… যোনির পেশি দিয়ে সবলে কামড়ে ধরে তার শরীরের ভেতরে থাকা অর্নবের দৃঢ় পুরুষাঙ্গটাকে…
‘উমমফফফ…’ পৃথার কানে আসে অদেখা অর্নবের গোঙানী… আর সেই সাথে নিজের শরীরের অভ্যন্তরে অনুভূত হয় তপ্ত লাভার প্রবেশের… ‘আহহহহ…’ প্রবল আরামে শিৎকার বেরিয়ে আসে পৃথার মুখের মধ্যে থেকে… প্রানপনে আঁকড়ে ধরে অর্নবের কায়াহীন দেহটাকে নিজের বুকের সাথে… ফের কেঁপে ওঠে তার জঠর… কেঁপে ওঠে সুঠাম থাইদুটো অর্নবের কোমরটাকে আঁকড়ে ধরে… কাঁপন ধরে তলপেটে, নিতম্বে, যোনির প্রতিটা পরতে… অর্নবের বীর্যস্খলনের সাথেই পুণরায় উপভোগ করতে থাকে তার দ্বিতীয়বারের রাগমোচন…
খানিকক্ষন দুজনেই চুপচাপ শুয়ে থাকে একে অপরের শরীরের সাথে এক হয়ে… কানে বাজে দুজনের গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ শুধু… আলিঙ্গনের মধ্যেই পৃথা অনুভব করে ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসা অর্নবের শরীরটাকে…
আস্তে আস্তে পৃথাকে ছেড়ে উঠে বসে অর্নব… গভীর গলায় বলে ওঠে, ‘যাও… বাথরুমে ধুয়ে এসো…’
আর একবারও কথা বাড়ায় না পৃথা, মন চায় আরো একটু শুয়ে থাকতে… উপভোগ করতে অর্নবের দেহের নির্যাসটাকে নিজের শরীরের মধ্যে নিয়ে… কিন্তু অর্নবের মুখের ওপরে আর কথা বলে না, চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে ঢোকে… হান্ড শাওয়ারটা হাতে নিয়ে জলের ধারাটাকে ঘুরিয়ে ধরে যোনি লক্ষ্য করে… আঙুল ঢুকিয়ে পরিষ্কার করতে থাকে শরীরের ভেতরে জমে থাকা অর্নবের ভালোবাসার অফুরাণ দান… খানিকটা নিজের আঙুলের ডগায় নিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরে সে… ভালো করে চেয়ে থাকে হড়হড়ে সাদা পদার্থটার পানে… তারপর আঙুলটাকে পুরে দেয় মুখের মধ্যে… স্বাদ নেয় অর্নবের বীর্যের সাথে নিজের দেহরসের সংমিশ্রনে তৈরী রস… মনে মনে বলে ওঠে পৃথা… ‘মাই লাভ… মাই অর্নব…’ তারপর ফের ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে পরিষ্কার করাতে…
কাজল থাকতেই তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে নিয়েছিল পৃথা, অর্নব আজকে আর ঠান্ডা জলে স্নান করতে দেয়নি ওকে, বারবার করে গিজারের জলে স্নান করতে বলে দিয়েছিল, করেও ছিল ও, অন্যথা করেনি অর্নবের কথার, শুনেছিল… আর শুনবে নাই বা কেন… আজ সকালটা যে বড়ই মধুর করে শুরু হয়েছে তার… ঘুম ভেঙেছে নববধূর মত সারা শরীরে আদর মেখে…
কাজল বেরিয়ে যেতেই আর সময় নষ্ট করে নি পৃথা, তৈরী হতে থেকেছে অফিস যাবার জন্য… আয়নার সামনে দাড়িয়ে তম্বী দেহের ওপরে শাড়ীর প্লিটটাকে ঠিক করতে অর্নবের উদ্দেশ্যে মুখ না তুলেই বলে ওঠে, ‘এই, আমার ফোনটা একটু অন করে দাও না গো… সেই কাল আসার সময় বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তারপর ভুলেই গিয়েছি অন করতে, চার্জেও বসাই নি, কে জানে চার্জ আছে কি না…’
অর্নব এক মনে চুপ করে বিছানায় বসে পৃথার শাড়ী পরা দেখছিল… সুঠাম শরীরটায় কি অদ্ভুত ভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ীটা… ফর্সা দেহে গাঢ় সবুজ রঙটা খুব ভালো মানিয়েছে… তারিয়ে তারিয়ে পৃথার তারুণ্যে ভরা শরীরটাকে চোখ দিয়ে উপভোগ করছিল অর্নব… মনে পড়ে যাচ্ছিল এই কিছু ঘন্টা আগেও ওই নরম শরীরটাকে নিজের দেহের নীচে নিয়ে নিষ্পেশিত করেছে মনের সুখে… শাড়ী পরার সময় পৃথা কখনো পাশের দিকে ফিরে দাঁড়াচ্ছে, আবার কখনও পেছন ফিরে, অথবা সাজের প্রয়োজনে তারই সামনে… তাই বিছানায় বসেই সে পৃথার দেহের প্রতিটা ভঙ্গিমার রূপ মনের ফ্রেমে আটকিয়ে নিচ্ছিল অপলক চোখে…
হিলহিলে চেহারাটাকে শাড়ীটা সাপের মত পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে যেন… আর ওই ভাবে টাইট করে শাড়ী পরার কারণে শাড়ীর ওপর দিয়েই দেহের প্রতিটা চড়াই উৎরাই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে… কল্পনার কোন অবকাশই রাখে নি কোথাও… স্ফিত উত্তল নিতম্ব, সঠিক পরিমাপের বুক, আর সেই সাথে গাঢ় রঙের সাথে ফর্সা চামড়ার অদ্ভুত কন্ট্রাস্ট… চোখ সরানোই যেন সম্ভব নয় এই দেহের ওপর থেকে… শাড়ীর কুঁচিটা নাভীর ঠিক নীচে, দুই পাশ থেকে শাড়ীর পাড়টা একটু তেরচা হয়ে কোনাকুনি হারিয়ে গিয়েছে সেই গভীর নাভীর তলা দিয়ে, শাড়ীর কুঁচির মধ্যে… প্লিট করে রাখা আঁচলের তলা থেকে উঁকি দিচ্ছে ব্লাউজের মধ্যে আবধ্য সুগোল একটা স্তনের পার্শদিক… ব্লাউজটার পীঠের দিকে খুব বেশী কাটা না হলেও, পীঠের তিলটা এমন জায়গায় পড়েছে, যে ওটার ফলে যেন আরো বেশি করে লোভনীয় হয়ে উঠেছে ফর্সা মসৃণ গোটা পীঠটাই…
‘কোই… মোবাইলটা অন করলে? নাকি হাঁ করে আমাকেই শুধু গিলে যাবে?’ ট্যারা চোখে অর্নব যেখানটায় বসে থাকতে পারে, সেই দিকটার দিকে আন্দাজ করে তাকিয়ে বলে পৃথা…
‘অ্যা… হ্যা… এই তো… দিচ্ছি অন করে…’ পৃথার তাড়া খেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানার থেকে নেমে দাঁড়ায় অর্নব… ‘কোথায় রেখেছ তোমার মোবাইলটা?’ প্রশ্ন করে সে…
শাড়ীর আঁচলটাকে কোমর থেকে পেঁচিয়ে ঘুরিয়ে গুঁজে দেয় কোমরের মধ্যে… আয়নায় শেষ বারের মত ভালো করে নিজের সাজটা দেখে নিতে নিতে বলে, ‘দেখই না… মনে হয় ব্যাগের মধ্যেই রয়েছে, কালকে তো আর ফেরার পরে বেরও করি নি…’
‘তোমার ব্যাগের মধ্যে?… হাত দেবো?’ ইতস্থত করে অর্নব।
কথাটা শুনে মুখ তোলে পৃথা… বক্র ভুরুতে কপট রাগ ফুটিয়ে বলে ওঠে, ‘বাব্বা, আমার ব্যাগে হাত দেবে, তাতেও বাবুর এত কুন্ঠা… অন্য কোন পেত্নীর ব্যাগ বললে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিতো…’
কাঁচুমাচু মুখ করে জবাব দেয় অর্নব, ‘মেয়েদের ব্যাগ বলেই ইতস্থত করছিলাম… এখানে অন্যের ব্যাগের কথা কোথা থেকে এলো?’
‘জানি জানি… সুযোগ পেলেই আর একটা পেত্নীকে চাইবে তখন… চিনি না আবার?’ ছদ্ম রাগ সরায় না মুখ থেকে পৃথা… মজা লাগে অর্নবের পেছনে লাগতে…
‘মোটেই না… আমাকে কি সেই রকম মনে হয় নাকি তোমার?’ অর্নবের গলার স্বরটা ভেসে আসে ড্রইংরুমের থেকে…
সেটা শুনে গলা তুলে পৃথা বলে ওঠে, ‘সেটা তো আমি এসে পড়েছি বলে আর হলো না, নয়তো কোন পেত্নীকে ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিতে, আর তারপর তার ঘাড়ে চেপে বসতে…’
এবার আর কোন জবাব আসে না ও ঘর থেকে… তাতে পৃথা এবার সত্যিই ক্ষেঁপে যায়, উত্তর না পেয়ে… ‘কি হলো? মনের মত কথা বললাম বলে কি চুপ করে গেলে?’ বলে ওঠে সে।
তাও কোন উত্তর নেই… তা দেখে এবার নিজেই এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের দিকে… দরজা পেরোতেই চোখে পড়ে ঘরের মাঝে তার ফোনটাকে শূণ্যে ভাসতে… অন্য কেউ হলে নির্ঘাত আঁতকে উঠতো… ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা, ভেতরে জমা বিরক্তিটা উধাও হয়ে যায় সেই সাথে…
পৃথাকে বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে বলে ওঠে অর্নব, ‘তুমি একবার বাড়িতে ফোন করো তো!’
হটাৎ করে অর্নবের গলার স্বর সিরিয়াস হয়ে যেতে ভুরু কুঁচকে যায় পৃথার, উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে, ‘কেন গো? এনিথিং রং?’
‘বুঝতে পারছি না… প্রায় গোটা চল্লিশেক মিসড্ কল… তোমার বাপীর… একবার ফোন করো তো…’ ফোনটা পৃথার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে অর্নব।
তাড়াতাড়ি করে ফোনটা হাতে তুলে নেয় পৃথা, কল লিস্টএ দেখে সত্যিই চল্লিশটা মিসড্ কল দেখাচ্ছে… ভয় পেয়ে যায় সে… ত্রস্ত চোখে তাকায় অর্নবের পানে… ভীত গলায় জিজ্ঞাসা করে, ‘এতবার ফোন করেছে বাপী… কোন বিপদ হলো না তো?’
‘সেই জন্যই তো বলছি, আগে টেনশন না করে ফোনটা করো… দেখো কেন এত বার ফোন করেছে…’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করে অর্নব পৃথাকে।
‘বড্ডো ভুল হয়ে গেছে গো… আমি সাধারণতঃ ফোন কখনো বন্ধ করি না, কালকেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম… কি হলো বলো তো…’ বাবার নাম্বার ডায়াল করতে করতে বলে পৃথা, গলার স্বরে উদ্বেগ মিশে থাকে…
ফোনের মধ্যে বীপ…বীপ… শব্দ শোনা যায়, কল লাগে না কিছুতেই… আরো টেনশনে পড়ে যায় পৃথা… বার বার করে ট্রাই করে ফোন লাগাবার… যত সময় গড়ায়, ততই যেন মলিন হয়ে ওঠে তার মুখ।
হটাৎ করেই কল লেগে যায়… রিং হয় ফোনের ওই প্রান্তে… তাড়াতাড়ি করে পৃথা বলে ওঠে, ‘হ্যালো বাপী?’
ওপাশ থেকে উত্তর আসে, ‘নারে… আমি ছোটকা বলছি…’
‘ও তুমি? আমি আসলে বাপীর মিসড্ কল দেখে রিং ব্যাক করলাম… কেমন আছো ছোটকা? তোমার সাথে কতদিন কথা হয়নি… ভালো আছো তো? তাও তো বাপী মায়ের সাথে রোজ কথা হয় আমার, তোমার সাথে তো কথাই হয় না… করতে পারো তো ফোন মাঝে মাঝে… ইশ… ভুলেই গেছ তিতিরকে, না?’ অভিমান ঝরে পৃথার গলার স্বরে।
‘না রে… সেটা নয়… আসলে বুঝিস তো, আমি একটু অন্য ধরণের মানুষ, ওই সব লোকলৌকিকতা ঠিক আসে না আমার… যাক, তোর শরীর কেমন আছে… বৌদির কাছে শুনেছিলাম তোর নাকি জ্বর হয়েছিল… এখন ভালো আছিস তো?’ প্রশ্ন করেন পৃথার ছোট কাকা।
‘হ্যা গো… এক দম ফিট এখন… এই তো অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলাম…’ উত্তর দেয় পৃথা, মনে মনে বলে তোমার জামাই আমাকে এত যত্নে রেখেছে, সেখানে আমি ফিট না থেকে পারি? ভাবতেই হাসি খেলে যায় ঠোঁটে, লালের আভা লাগে গালের ওপরে… মনে পড়ে যায় ভোরের আদর…
ভাবতে ভাবতেই ফিরে মনে পড়ে যায় পৃথার… ঠোঁটের ওপর থেকে লেগে থাকা স্মিত হাসিটা মুছে যায় তার… ‘আচ্ছা ছোটকা, তোমার কাছে বাপীর ফোনটা কেন? আর বাপীই বা এতবার ফোন করেছিল কেন গো?’ উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে সে।
‘হ্যা… মানে তোকে বলার জন্যই ফোন করেছিলাম… আসলে কি হয়েছে জানিস…’ বলতে বলতে চুপ করে যান পৃথার ছোট কাকা…
তাকে এই ভাবে কথার মাঝে চুপ করে যেতে মনের মধ্যে একটা শঙ্কা চেপে বসে যেন… বুকের মধ্যেটায় ধকধক করে ওঠে তার… হাতের মুঠোয় মোবাইলটাকে আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি হয়েছে ছোটকা… চুপ করে গেলে কেন?’
সাথে সাথে উত্তর আসে না কোন… বোঝাই যায় একটু ইতস্তত করছে পৃথার কাকা উত্তর দিতে গিয়ে… তারপর ধীর কন্ঠে বলেন, ‘আসলে ফোনটা কাল আমিই তোকে করেছিলাম… বড়দাকে গতকাল রাতে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়েছে…’
কথাটা শুনেই শেষ করতে দেয় না পৃথা, চেঁচিয়ে ওঠে প্রায় ফোনের মধ্যেই… ‘কী? বা… বাপীর কি হয়েছে বললে? নার্সিংহোম… কেন?’ থরথর করে কেঁপে ওঠে পৃথার শরীরটা অজানা ভয়ে…
‘না, না, এত ব্যস্ত হোস না… এখন ঠিক আছে… আসলে…’ বোঝাতে যান উনি।
প্রায় ছিনিয়ে নেয় কথাটা কাকার মুখ থেকে পৃথা… কাঁদো কাঁদো গলায় বলে সে, ‘কি হয়েছে আমার বাপীর… বলো না গো ছোটকা… আমার বাপী কি নেই?…’ বলতে বলতে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে সে…
পৃথাকে এই ভাবে ভেঙে পড়তে দেখে তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে অর্নব… টেনে নেয় তাকে নিজের বুকের মধ্যে… হাত রাখে পীঠের ওপরে… পৃথা মুখ তুলে তাকায় অর্নবের না দেখা মুখের পানে… চোখ ভর্তি জল টলটল করে তার… অর্নবের বুকের মধ্যে ফোঁপায় সে…
কানে আসে তার ছোটকাকার কন্ঠস্বর… ‘দূর বোকা মেয়ে… এত ভেঙে পড়ছিস কেন? আমি কি তাই বললাম… আগে থাকতে বাজে বাজে কথা ভেবে বসিস… আরে এখন তো আর বিপদ নেই… ঠিক আছে বড়দা…’
এক হাত দিয়ে মোবাইলটাকে কানে ধরে অন্য হাত দিয়ে খামচে ধরে অর্নবের হাত… ভাঙা গলায় প্রশ্ন করে পৃথা, ‘ঠিক বলছো ছোটকা… বাপী ঠিক আছে… কিচ্ছু হয় নি তো বাপীর… তুমি ঠিক বলছো তো?’ প্রশ্ন করার ফাঁকে মুখ তুলে তাকায় সে, যেন মনের মানুষটার কাছ থেকেও আস্বস্থ হতে চাইছে… যেন ওই মানুষটাই ঠিক বলতে পারবে যে ভয়টা তার অমূলক কিনা…
‘হ্যা রে তিতির, বললাম তো… তোর বাপী এখন ঠিক আছে… তবে হ্যা, এখনও ICCUতে আছে, তবে আগের বিপদটা আর নেই…’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করেন ভদ্রলোক।
‘কি… কি হয়েছিল বাপীর?’ অর্নবের হাত ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে প্রশ্ন করে পৃথা, প্রথম দিকের ঝটকাটা খানিকটা সে কাটিয়ে ওঠে বাপী ভালো আছে শুনে…
‘একটা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মত হয়েছিল কাল রাতে… আমরা সাথে সাথেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে বড়দাকে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই এই যাত্রায় তেমন কোন খারাপ কিছু ঘটে যায় নি…’ বলেন পৃথার ছোটকাকা… তারপর একটু থেমে প্রশ্ন করেন উনি, ‘তুই কি একবার আসতে পারবি? না, না, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই… জানি এক্ষুনি আসা সম্ভবও নয়, টিকিটই বা পাবি কি করে, তবে পারলে দেখ যদি আসতে পারিস… তোর কথা বলছিল খুব…’
তার কথা বলছিল শুনে ফের বুকের ভেতরটা টনটন করে ওঠে পৃথার… বলে সে, ‘আমি দেখছি ছোটকা… দেখছি আমি… যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি… তুমি বাপীর সাথে থেকো, হ্যা… দেখো বাপী কে… আমি আসছি…’ তারপরই হটাৎ করে মনে পড়ে যেতে জিজ্ঞাসা করে, ‘ছোটকা, মা… মা কেমন আছে গো… মা ঠিক আছে তো?’
‘হ্যা রে মা, বৌদি ঠিক আছে… বাড়িতেই আছে, আর তাছাড়া তোর কাম্মাও তো রয়েছে বৌদির সাথে, তুই ভাবিস না কিছু…’ আস্বস্থ করেন ফের পৃথাকে… ‘তাহলে ছাড়ি তিতির… তুই সাবধানে আসিস… আর আসার ঠিক হলে একবার আমাকে ফোন করে দিস, কেমন?’
‘আ…আচ্ছা ছোটকা… আমি দেখছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি… তুমি একটু বাপীকে দেখো, কেমন?’ বলতে বলতে চিন্তায় পাংশুটে হয়ে যায় তার মুখ… শোনে ওপাশ থেকে তার ছোটকাকার ফোন কেটে দেবার আওয়াজ।
ফোনটাকে হাতের মুঠোয় ধরে রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে অর্নবের বুকের মধ্যে মাথা রেখে… চোখ দিয়ে সরু ধারায় জল গড়ায়… অন্য হাতে খামচে ধরে রাখে অর্নবের হাতটাকে… অর্নব হাতের আলিঙ্গনে ধরে রাখে পৃথাকে নিজের বুকের সাথে সাঁটিয়ে… যেন তার ভেতরের প্রাণশক্তিটাকে ঢেলে দেবার চেষ্টা করে পৃথার বুকের মধ্যে…
‘হ্যা গো… বাপী ঠিক আছে… তাই না গো?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা, প্রশ্নের মধ্যেও যেন একটা অজানা আশঙ্কা মিশে থাকে তার…
‘কিচ্ছু হবে না তোমার বাপীর… দেখো… একদম ভালো আছেন উনি… তুমি কিচ্ছুটি চিন্তা করো না…’ আশ্বাস দেয় অর্নব পৃথার মাথার চুলে চুমু খেয়ে… তারপর পৃথাকে ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুমি অফিসে একটা ফোন করো… বলো আজই তুমি বাড়ি যাচ্ছ… তোমার বাপীর ব্যাপারটা খুলে বলো… বলে ছুটি নাও বেশ কয়’একদিনের…’
ভেজা চোখে মুখ তুলে তাকায় পৃথা… ‘কি করে? কি করে যাবো আমি?’ অসহায়এর মত প্রশ্ন করে সে…
পৃথার মাথাটা টেনে নেয় নেয় অর্নব নিজের কোলের ওপরে… বলে, ‘আমি আছি তো… চিন্তা করছো কেন… তুমি অফিসে ফোন করে বলে দাও শুধু যে আজকেই তুমি বাড়ি চলে যাচ্ছ…’
‘কিন্তু কি করে অর্নব? আমি যে সেই রকম কিছু জানি না এখানকার… কোথায় টিকিট কাটবো, কিসে যাবো…’ হতাশ গলায় বলে পৃথা।
‘আমি আছি তো!’ পৃথার কাঁধে হাতের চাপ দিয়ে ভরসা দেয় অর্নব, ‘তুমি অফিসে শুধু ফোনটা করো, আমি এদিকটা দেখছি… এত ভেঙে পড়ো না…’
‘অর্নব…’ ধরা গলায় ডাক দেয় পৃথা…
‘বলো না সোনা… কি হয়েছে?’ হাত রাখে মাথার ওপরে পৃথার…
‘বাপী…’ আর কিছু বলতে পারে না সে, গলা বুজে যায় আবেগে…
পৃথার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে অর্নব… দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘কেন এখনই এই সব আজে বাজে চিন্তা করছো বলো তো… তোমার বাপীর কিছু হতেই পারে না… গিয়ে দেখবে সব ঠিক আছে…’
‘তুমি যাবে না আমার সাথে?’ শূন্যের পানে হাত বাড়ায় পৃথা… খামচে ধরে অর্নবের কাঁধটাকে…
‘তোমার আগে যাবার ব্যবস্থাটা করি, তারপর আমার কথা…’ বলতে বলতে ফের উঠে দাঁড়ায় সে… ‘তুমি ফোনটা করো, আমি আসছি…’
‘আমায় ছেড়ে যেও না গো… আমার কাছেই থাকো না…’ কাতর মুখে তাকায় পৃথা… খানিক আগের করা মুখের সব মেকাপ ততক্ষনে একেবারে ঘেঁটে গিয়েছে চোখের জলে… চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে এই কয়’এক মুহুর্তেই উদ্বিগ্নতায়…
‘আমি আছি তো সোনা… আমি আছি… ঘরেই আছি…’ আস্বস্থ করে অর্নব তার প্রিয়াকে…
আর কথা বাড়ায় না পৃথা, মোবাইলটা তুলে ডায়াল করতে থাকে অফিসের নাম্বারে… অর্নবও ওর থেকে সরে গিয়ে এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে, যেখানে ওর মোবাইলটা রাখা আছে, ডায়াল করে প্রণবকে…
৩৮।।
বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে পৃথা একটা গাড়ি ভাড়া করে সোজা পৌছে যায় বাড়ি… দরজায় বেল টিপে অপেক্ষা করতে থাকে সে… মনের মধ্যে নানান আশঙ্কা ছেয়ে থাকে তার…
প্রণবকে বলে অর্নব ওর জন্য ফ্লাইটের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সকালেই… ওদের অফিসের এজেন্টকে দিয়ে, তাই কোন অসুবিধাই হয়নি সন্ধ্যের ফ্লাইট ধরতে… প্রণব আর অর্নব পৃথাকে কলকাতার এয়ারপোর্টএ পৌছিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে… পৃথা চেয়েছিল অর্নবও ওর সাথেই ফ্লাইটে আসুক, কিন্তু শেষে বুঝেছিল যে সেটা সম্ভব নয়, অর্নব এই ভাবে ঢুকবে কি করে এয়ারপোর্টের মধ্যে? তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল প্রণব আর অর্নব গাড়িতে শিলিগুড়ি পৌছাবে, আর পৃথা তার আগেই ফ্লাইটে বাড়ি চলে আসবে… কারণ পৃথার পৌছানোটার প্রয়োজন অনেক বেশি…
সুশান্ত পৃথার বাবার কথাটা শুনে একবার চেষ্টা করেছিল বলতে যে সে সাথে যাবে, কিন্তু যখন দেখে যে পৃথা রাজি নয় তাকে সঙ্গে নেবার, আর দ্বিরুক্তি করে নি সে, পিছিয়ে গিয়েছে… শুধু বন্ধুত্বর খাতিরে বলেছিল, ‘যদি দরকার লাগে, সাথে সাথে আমাকে একটা ফোন করে দিস, আমি যা হোক করে পৌছে যাবো তোর ওখানে…’
মাথা নেড়ে শায় দিয়েছিল পৃথা… কারণ সে জানতো অর্নব থাকার পর আর কারুর তার পাশে থাকার প্রয়োজন হবে না…
বাড়ি আসার পর থেকে কোথা থেকে যেন ঝড়ের মত সময় বয়ে যায় পৃথার… দিনরাত এক হয়ে যায় নার্সিংহোম বাড়ি আর বাড়ি নার্সিংহোম করে… জলের মত টাকা খরচ হতে থাকে… কিন্তু তার এতটুকুও আঁচ লাগে না পৃথার বা তার বাড়ির কারুর গায়ে… ঢালের মত তাকে আগলে রাখে প্রণবেকে সামনে রেখে সেই অদৃশ্য মানুষটা… এতটুকুও খামতি হতে দেয় না পৃথার বাবার চিকিৎসায়… একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠেন পৃথার বাবা… হাঁফ ছাড়ে সকলে।
প্রণবরা এই ক’দিন একটা হোটেলের ডবল বেডেড রুম বুক করে নিয়েছিল, সেখানেই ছিল দুই বন্ধু… ছিল বলতে এক প্রকার এসে স্নান করে খেয়ে যাওয়া… তা নয়তো রাতদিন থেকেছে দুই জনেই পৃথার সাথে, নার্সিংহোমে…
দিন সাতেক পর ছাড়া পান পৃথার বাপী নার্সিংহোম থেকে, পৃথারা তাকে বাড়ি নিয়ে আসে… ডাক্তার বারবার করে তাদের সাবধান করে দিয়েছে কোন ভাবেই যেন বেশি স্ট্রেসড্ না নিতে হয় তাঁকে… সেই মতই তাকে খুব সাবধানে রাখা হয়েছে নিজের ঘরে… একান্ত প্রিয়জন ছাড়া কাউকেই খুব একটা আসতে দেওয়া হচ্ছে না দেখা করতে… শুধু শুধু যাতে ধকল না পড়ে ওনার ওপরে…
বাবাকে গুছিয়ে দিয়ে মায়ের কাছে যায় পৃথা… ‘এবার তুমিও একটু রেস্ট নাও তো… অনেক ধকল গেলো তোমার ওপর দিয়ে…’
এই কয় দিন সত্যিই ভদ্রমহিলার ওপর দিয়ে যথেষ্ট ধকল গিয়েছে… সন্তান দূরে থাকলে যে কি হয়, সেটা উনি বুঝে গেছেন… তাই সেটা ভেবে আরো বেশি উদ্বিগ্ন তিনি… ধীরে ধীরে বয়স বাড়ছে তাদের… তাই আজ না হয় সামলে নিয়েছেন সবাইকে পাশে পেয়ে, কিন্তু ভবিষ্যতেও যে এই ঘটনা ঘটবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কি? এবারে যেমন ঠিক সময় পৃথাকে ফোনে পাওয়া যায় নি… তবুও পাশে তাঁর ছোট দেওয়র ছিল, তাই রক্ষে পেয়েছে পৃথার বাবা এ যাত্রায়, কিন্তু যদি না থাকত? তখন কি করতেন উনি? ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে যেন ওনার… পৃথা কাছে এসে বসতেই ধীর স্বরে বলেন, ‘তুই আর ফিরে যাস না তিতির… দেখলি তো কি কান্ডটা ঘটে গেলো… এর পরও আমাদের ফেলে চলে যাবি?’ চিন্তার ছাপ পড়ে ওনার মুখে।
পৃথা এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে, হাতের মধ্যে মায়ের হাতটাকে তুলে ধরে বলে, ‘কিন্তু মা, এই ভাবে এখানে বসে থেকেও তো চলবে না আমার… না গেলে হবে বলো?’
‘কেন যাবি? কিসের জন্য? টাকার কি দরকার আমাদের? তোর বাবার কি অভাব পড়েছে যে তোকে চাকরি করে আমাদের খাওয়াতে হবে?’ অভিমান মেশানো গলায় বলেন পৃথার মা।
‘আমি কি টাকার জন্য চাকরী করতে গিয়েছি মা? বাপীর যা আছে, আমি জানি তাতে আমার চাকরী করার কোন প্রয়োজনই নেই… কিন্তু সেটা তো বড় কথা নয়… আমারও স্বনির্ভরতা থাকার দরকার, তাই না? বলো তুমি?’ মায়ের হাতের ওপরে চাপ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা।
‘আমি ওসব স্বনির্ভরতা টিরভরতা বুঝি না… বাড়ির মেয়ে বাড়ি থাকবে না, সেটাই আমার কাছে সব থেকে বাজে ব্যাপার… কি ভাবে থাকিস বলতো মা… কে জানে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস কিনা, এই তো শুনলাম জ্বরে পড়েছিলিস… তুই বল, মায়ের মন শায় দেয় এই সব দেখে?’ বলতে বলতে মুখ ভার হয়ে ওঠে পৃথার মায়ের… ‘এবার তোর একটা বিয়ে দিয়ে দেবো আমি… তোর বাপী একটু সুস্থ হোক, আমি ঠিক তোর বিয়ে দিয়ে দেবো…’
‘আমি কি বিয়ে করে বর নিয়ে তোমার কাছেই থাকবো?’ হাসতে হাসতে বলে পৃথা… হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে নিজের বুকের মধ্যে…
‘না, তা নয়…’ আমতা আমতা করেন উনি।
‘তাহলে? তাহলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে তো সেই অন্য জায়গাতেই গিয়ে থাকবো, তাতে আর তোমাদের কি সুরাহা হবে, হু?’ মায়ের চিবুকটা আঙুলে তুলে বলে সে।
‘জানি যা…’ পৃথার হাত থেকে মুখটা সরিয়ে নেন… ‘তবুও তো জানবো যে আমাদের মেয়ে কারুর হাতে রয়েছে, ভালো রয়েছে, তাতেও তো খানিকটা নিশ্চিন্দে থাকতে পারবো…’
‘এখনই যে নেই, তাই বা কে বললো তোমায়?’ চোখের তারায় কৌতুক ঝরে পড়ে পৃথার… মনের মধ্যে অর্নবের নামটা ভেসে ওঠে তার… বুকের মধ্যেটায় কেমন ঢিপঢিপ করে ওঠে অকারণেই…
‘সে যাই বল, একা তো থাকিস… তাই কতটা ভালো থাকতে পারিস সে আমার জানা আছে…’ মুখে ফেরে আদরের মেয়ের জন্য চিন্তার ছায়া…
‘আমি একা থাকি কে বলল তোমায়?’ হাসে পৃথা মিটি মিটি…
‘মানে? আমি তো জানি তুই একাই থাকিস… একলা একটা ফ্ল্যাটে… সেই রকমই তো শুনেছিলাম… আবার কে জুটেছে?’ চিন্তা বাড়ে মায়ের মুখে।
‘আরে, কাজল আছে তো…’ তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে পৃথা, বুঝতে পারে মায়ের মন চিন্তায় আরো বেশি করে উতলা হয়ে উঠছে… ‘খুব ভালো মেয়েটা, জানো মা, আমার হাতে হাতে সব কাজ করে দেয়… ওকে তো প্রণবদাই এনে দিয়েছে, আগেও ওই ফ্ল্যাটেই কাজ করতো, খুব বিশ্বাসী মেয়েটা… আর ভিষন ভালো…’
‘সেটা কথা নয় মা, একটা কাজের লোকের হাতে আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে রাখবো, সেটা হয়? তুই কি সেই ভাবে মানুষ হয়েছিস? বলতো তিতির? শেষে আমার এত আদরের মেয়ে কাজের লোকের ভরসায় দিন কাটাবে, আমি বেঁচে থাকতে? না, না, এটা হয় না… আমি তোর বাপীর সাথে কথা বলবো, এর একটা বিহিত করতেই হবে আমায়…’ মাথা নেড়ে বলে ওঠেন পৃথার মা… মুখ পরিষ্কার চিন্তার ছায়া ঘনায় আরো…
‘আরে, তুমি এত ভাবছ কেন আমায় নিয়ে, আমি ঠিক আছি ওখানে… আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না… তুমি বিশ্বাস করো…’ মাকে বোঝাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে পৃথা…
‘সে তুই যাই বল, আমি এবার তোর একটা বিয়ে দেবোই… আমি দেখছি তোর ছোটকার সাথে কথা বলে, তোর মামাকেও বলবো একটা ছেলে দেখতে…’ হাত নেড়ে বলে ওঠেন উনি।
‘আচ্ছা, মা, বাপীর এখন এই অবস্থা, এখনই তোমার এই সব চিন্তা মাথায় এলো? কি যে করো না…’ মায়ের কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা…
‘না, না, সে তুই যাই বলিস তিতির, আমি তোর বাপীর সাথে কথা বলেছি আগেই… উনিও রাজি আমার সাথে, তোর এবার একটা বিয়ে দেবার দরকার… আর তোকে একা একা আমি ফেলে রাখতে চাই না…’ জেদ ধরে রাখেন ভদ্রমহিলা।
‘উফ… তুমি চাইলেই কি হবে নাকি… আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে চাই না যে… এই তো সবে চাকরীতে জয়েন করলাম…’ ফের বোঝাবার চেষ্টা করে পৃথা…
‘এই তিতির, তুই একটা আমাকে সোজা সাপটা কথা বলতো… তুই কি কাউকে পছন্দ করেছিস নাকি? তা সেটাই বল… তাকেই না হয় নিয়ে আয়… দেখি কে… এই ভাবে না না বলে যাচ্ছিস কেন?’ চেপে ধরার চেষ্টা করেন পৃথার মা মেয়েকে…
মায়ের কথায় সহসা কাল লাল হয়ে যায় যেন পৃথার… গালের ওপরে লালীমার আভা লাগে… মাথা নীচু করে নেয় সে…
মায়ের নজর এড়ায় না… মেয়ের দিকে ভালো করে ঘুরে বসে হাত রাখেন পৃথার কাঁধে, ‘কে রে তিতির? তোর ব্যাঙ্কেরই কেউ? তা এতদিন বলিস নি কেন? আমরা কি সেই রকম বাবা মা তোর?’ বলতে বলতে মেয়ের চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরেন ওপর দিক করে…
মায়ের চোখে চোখ রাখতে লজ্জা লাগে পৃথার, ঢোক গেলে সে… ‘না, মানে সেটা নয়…’
‘সেটা যে নয়, সেটা তো আমি বুঝছি… কিন্তু কোনটা… সেইটা তো আমায় বল…’ গলার স্বরে স্নেহ ঝরে পড়ে ভদ্রমহিলার…
‘আচ্ছা মা, তোমার জামাইয়ের যদি আগে একটা বিয়ে হয়ে থাকে, তুমি মেনে নিতে পারবে?’ চোখ ভরা ভীতি নিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘আমার মেয়ে যদি তাকে নিয়ে সুখি হয়, না মেনে নেবার কি আছে রে? আমার কাছে আমার মেয়ের সুখটাই বড়, আর কিছু লাগে না আমার… সে গরীব না বড়লোক, তার আগে বিয়ে হয়েছে কি হয়নি সেটা আমার কাছে প্রয়োজনীয় নয়… যেটা প্রয়োজনীয় সে আমার মেয়েকে সুখি রাখতে পারবে কি না… সেটাই জানার দরকার…’ পৃথার কপালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দিয়ে বলেন ভদ্রমহিলা।
‘ওহ! মা গো… তুমি কি ভালো… তুমি আমার বেস্ট মা ইন দ্য ওয়ার্ল্ড…’ মা কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে পৃথা… সারা মুখটা খুশিতে ঝলমল করে ওঠে তার…
পৃথার মাও পৃথাকে জড়িয়ে রাখেন নিজের বুকের মধ্যে… পীঠের ওপরে হাত বোলান আদরের… ‘তা হ্যা রে মা, কি করে ছেলেটা?’ প্রশ্ন করেন তিনি।
‘ব্যবসা… খুব বড় একটা ফ্যাক্টারী আছে কেমিকালএর… ও এখানকার ছেলে নয়, ওর বাড়ি ছত্তিসগড়ে… কিন্তু জানো মা, ওর না কেউ নেই… আগে কানাডায় থাকতো, ওখানেই বিয়ে করেছিল, কিন্তু ওর আগের বউএর ক্যান্সার হয়েছিল, মারা গিয়েছিল, তারপর থেকে ও এখানে, মানে কলকাতাতেই থাকে… আমি তো ওর ফ্ল্যাটেই থাকি ভাড়া…’ আবেগে যেন সব বলতে ইচ্ছা করে পৃথার, তার মাকে… এতদিন এই সব বলতে না পেরে যেন হাঁফিয়ে উঠেছিল সে মনে মনে… আজ সব উগরে দিতে চায় মায়ের কাছে…
‘কেউ নেই বলছিস… সব দিক দেখে নিয়েছিস তো… আর কিছুই না, আজকাল যা সব শুনি…’ মনের মধ্যে একটু শঙ্কার বাসা বাঁধে কোথাও…
‘হ্যা মা, আমি সব দিক দেখে শুনে তবেই এগিয়েছি… বড্ডো ভালো ছেলে… একটু বয়স বেশি ঠিকই, কিন্তু আমাকে ভিষন সামলে রাখে… এই যে বাপীর চিকিৎসার টাকা, সব তো ওই দিয়েছে, ওর বন্ধুর হাত দিয়ে…’ মাকে বলতে পেরে যেন নিজেকে খুব হাল্কা লাগে পৃথার।
‘ও… ওই ছেলেটি… প্রণবদা প্রণবদা করছিলিস যাকে?’ জিজ্ঞাসা করেন পৃথার মা…
‘হ্যা… ওই তো অর্নবের বন্ধু… ওর ব্যবসার পার্টনারও… আমাকে এখানে আসার টিকিট যোগাড় করে আমাকে প্লেনে তুলে দিয়ে শিলিগুড়ি চলে এসেছে, যাতে বাপীর চিকিৎসার কোন অসুবিধা না হয় দেখতে…’ উজ্জল মুখে উত্তর দেয় পৃথা।
‘তা অর্নব… হ্যা অর্নবই তো বললি নামটা… তা অর্নব আসে নি?’ প্রশ্ন করেন ভদ্রমহিলা।
‘হ্যা এসে…’ বলতে গিয়েই থমকায় পৃথা… তাড়াতাড়ি সামলে নেয় কথা… এসেছে বললে সে জানে মা বলবেন তাকে নিয়ে আসার জন্য, তখন তো আর এক বিপদ হবে, কাকে আনবে সে? একটা কায়াহীন মানুষকে? ‘না, মানে ও আসতে পারে নি, একটু আটকে গেছে, তাই তো বন্ধুকে পাঠিয়েছে এখানে…’ তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে সে।
‘ওহ! তা এখন একবার বলে দে আসতে… তুই এখানে থাকতে থাকতেই আমরা কথা বলে নিই ওর সাথে…’ বলে ওঠেন পৃথার মা।
‘এ…এখানে আসতে বলবো?’ ঢোক গেলে পৃথা… কি করে পরিস্থিতি সামলাবে বুঝতে পারে না… অর্নবকে এদের সামনে হাজির করবে সে কি করে? সেটা যে একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার একটা… মা যদি অর্নবকে এই অবস্থায় দেখে, তবে তো ভিমরি খাবে, তখন মাকে রাজি করানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে তার কাছে, যতটা সহজে মা মেনে নিয়েছে অর্নবকে, তখন ততটাই বেঁকে বসবে যে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না…
‘হ্যা… এখানে… আমাদের তো একবার কথা বলতে হবে ছেলেটির সাথে… বিয়ে বলে কথা, আর চারপাঁচটা আত্মীয় সজনের সাথে আলাপ পরিচয় হবে, তবেই না জিনিসটা একটা জায়গায় পৌছাবে… তুই এখানে থাকতেই বরং ওকে আসতে বলে দে… ততদিন না হয় তুই আমাদের কাছেই থাক…’ স্বাভাবিক স্বরে কথা বলে উঠে দাঁড়ান পৃথার মা, ‘নাঃ একবার যাই তোর বাবার কাছে, মানুষটা ঘরে একা আছে, আর তাছাড়া ওনাকেও কথাটা জানিয়ে রাখি…’ বলতে বলতে পা বাড়ান ঘরের বাইরে।
‘এবার কি হবে?’ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে পৃথা… ‘দুম করে আনন্দের মধ্যে বলে তো দিলাম অর্নবের কথাটা মায়ের কাছে, কিন্তু এখানে যে ডেকে পাঠাবে মা, সেটা তো মাথায় ছিল না… এখন?’
৩৯।।
‘চলো, মা তোমার সাথে কথা বলবে বলে ডেকেছে…’ হোটেলের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে পৃথা…
বাড়ি থেকে মাকে একটু আসছি বলে চলে এসেছে সোজা অর্নবের হোটেলে। আসলে একবার অর্নবের সাথে কথা না বলা অবধি সে নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না কিছুতেই… তার তো মাথাতেই আসছে না কি ভাবে মায়ের সামনে ওঠা এই সিচুয়েশনটা হ্যান্ডেল করবে ও… মা রাজি, কিন্তু কার সাথে তার বিয়ে দেবে? যাকে দেখা যায় না? মা যদি জানতে পারে, তাহলে তার মুখের এক্সপ্রেশনটা কিরকম হবে ভাবতেই পৃথার বুক শুকিয়ে যাচ্ছিল… তাই বাড়ি থেকে বেরিয়েই একটা রিক্সা নিয়ে সোজা অর্নবের হোটেলে এসে হাজির হয়েছে… পৃথাকে আসতে দেখে প্রণব আর থাকে নি ঘরে… আসছি একটু বলে বাহানা দেখিয়ে পৃথাকে ঘরের মধ্যে রেখে বেরিয়ে গিয়েছে প্রায় সাথে সাথেই… সে জানে কাবাবে হাড্ডি হওয়া না তার বন্ধু চাইবে, না ব্যাপারটা ভালো দেখাবে… তার থেকে দুই কপোত কপোতিকে একান্তে ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেছে প্রণব…
‘মা ডেকেছে মানে?’ অর্নবের বিস্মিত কন্ঠ স্বর ভেসে আসে ঘরের মধ্যে থেকে… অর্নবের গলার স্বর কানে যেতেই বুকের মধ্যেটায় কেমন তোলপাড় করে ওঠে যেন… সারা শরীরের মধ্যে শিহরণ খেলে যায়… গলার মধ্যে একরাশ ভালোবাসা উঠে এসে দলা পাকায়… গাঢ় হয়ে ওঠে চোখের দৃষ্টি… দ্রুততা পায় নিঃশ্বাস… পৃথা ফিরে রুমের দরজাটাকে বন্ধ করে দেয়… লক তুলে দেই ছিটকিনির… শিলিগুড়ি আসা ইস্তক নানান ভাবে সময় বয়ে গিয়েছে, কখনও বাপীর চিন্তায়, সঙ্কায়, উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে, আবার বাপী নার্সিং হোম থেকে ফেরার পর অন্যান্য আত্মীয় সজনদের আসা যাওয়ার মধ্যে দিয়ে… তাই এই ক’দিনে ও অর্নবের সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ভিষন ভাবে…
অর্নব এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার তিতিরের দিকে… পৃথাকে এতদিন পর রুমের মধ্যে দেখে তারও ভেতরে বুকের মধ্যে দামামা বেজে ওঠে… এই কটা দিন সেও অন্য কিছু ভাবার অবকাশ পায় নি পৃথাকে নিয়ে, কিন্তু আজ, এই ভাবে, একাকী হোটেলের রুমের একান্তে পৃথাকে দেখে অস্থির হয়ে ওঠে তার মন… স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পৃথার দিকে… সাজ একেবারেই সামান্য বলা যেতে পারে পৃথার… পরনে একটা আকাশি নীল জেগিংস আর গায়ের ওপরে চাপানো রয়েছে গাঢ় সবুজ রঙের টি-শার্ট… জেগিংসটা পায়ের সাথে যে ভাবে টাইট হয়ে চেপে বসে আছে, তাতে সেটাকে শরীরের দ্বিতীয় চামড়া বললেও অত্যক্তি করা হয় না… গোল সুডৌল মাংসল পুরুষ্টু থাইগুলো যেন আরো বেশি করে আকর্শনীয় হয়ে উঠেছে তাতে… পৃথা সামনে ফিরে থাকলেও অনতি দূরে দাঁড়িয়েও অর্নবের বুঝতে অসুবিধা হয় না ভারী উত্তল নিতম্ব কি পরিমানে এবং কতটা লোভনীয় ভাবে ঠেলে ফুটে রয়েছে জেগিংসএর কাপড় ভেদ করে… গায়ের ওপরের টি-শার্টটাও যথাবিধ শরীরের সাথে চেপে বসে রয়েছে, যাতে দেহের চড়াই উৎরাই গুলো চোখের সামনে যেন মেলে ধরে হাতছানি দিয়ে ডাকছে অর্নবকে… ব্রায়ে বাঁধা পরা সুগোল বুকদুটো ঠেলে উঠে রয়েছে বেশ খানিকটা… কাঁধ থেকে একটা বড় ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখা…
ধীর পায়ে এগিয়ে যায় অর্নব… একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় পৃথার… অর্নবের এগিয়ে আসা অনুভব করে পৃথাও… বুঝে ফের শিহরীত হয় সে… খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ঘাড়ের রোঁয়া… আস্তে আস্তে হাত তোলে সে… বাড়ায় সামনের পানে… ছোয়া পায় তার ভালোবাসার মানুষটার দেহটায়… নিজেও কয়এক কদম এগিয়ে দাঁড়ায়… হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে… মুখ নামায় মানুষটার অদেখা বুকটার ওপরে… মাথা রাখে ঘাড় কাত করে… হাত তুলে আঙুলের বিলি কাটে অর্নবের বুকের লোমে… ফিসফিসায় পৃথা, ‘মাকে বলেছি আমি…’ একটু থেমে দম নেয়… কথাটা বলতে বলতে আরো যেন গলে, মিশে যেতে চায় অর্নবের বুকের মধ্যে… ‘মা… রাজি হয়েছে আমাদের বিয়ের…’ বলতে বলতেই কোথা থেকে যেন একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরে পৃথাকে… তাড়াতাড়ি ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ লোকায় সে অর্নবের বুকের মাঝে… লাল হয়ে ওঠে ফর্সা কানের লতীদুটো তার…
উত্তরে কিছু বলে না অর্নব… পৃথার চিবুকটাকে হাতে নিয়ে তুলে ধরে নিজের মুখের পানে, তারপর ঝুঁকে ঠোঁটটাকে ডুবিয়ে দেয় পৃথার পাতলা ঠোঁটের ওপরে… গালের দাড়ি ভেসে বেড়ায় পৃথার মুখে, গলায়… দুজন দুজনের ঠোঁট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ভুলে যায় কি কথা শুরু হয়েছিল তাদের… হারিয়ে যায় তারা একে অপরে ঠোঁটের মধ্যে…
দরজায় নক শুনে তাড়াতাড়ি আলাদা হয় দুজনে… এগিয়ে দরজা খুলে ধরে পৃথা… ওপাশে একজন রুম সার্ভিসের ছেলে দাড়িয়ে আছে দেখে… পৃথাকে দেখে বলে সে, ‘স্যর বললেন রুমে দু-কাপ কফি দিয়ে যেতে, তাই…’
দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় পৃথা, ছেলেটি ঘরের মধ্যে ঢুকে নামিয়ে রাখে কফির ট্রে’টাকে টেবিলের ওপরে… তারপর কেমন একটা সন্দিঘ্ন চকিত দৃষ্টি হেনে তাকায় পৃথার দিকে, যেন মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায় ছেলেটির… মেয়েটি একা, অথচ দেখে যেন মনে হচ্ছে আরো কেউ ছিল ঘরে… মেয়েটির মাথার চুল অবিনস্ত… বাথরুমের দরজাটাও খোলা, এই নয় যে কেউ রয়েছে বাথরুমে… কফিও অর্ডার দেওয়া হয়েছে দু-কাপ… ঠিক যেন মেলাতে পারে না সে… ওকে এই ভাবে ইতস্থত করতে দেখে পৃথা প্রশ্ন করে, ‘আর কিছু বলবে?’
পৃথার প্রশ্নে থতমত খায় ছেলেটি, তবুও আর একবার ঘরের মধ্যে নজর ঘুরিয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়… পৃথা বন্ধ করে দেয় দরজাকে ফের… ঘাড়ের ওপরে গরম নিঃশ্বাসে ছোঁয়া পড়ে তার… দুটো বলিষ্ঠ হাত দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে তার শরীরটাকে পেছন থেকে… হাতের একটা তালু মেলে থাকে তার তলপেটের ওপরে অপর হাতে তালু এসে পড়ে সগঠিত স্তনের ঠিক নীচটায়… আবেশে শিথিল হয়ে যায় পৃথার শরীর… নিজের দেহটাকে পেছন পানে হেলিয়ে দেয় সে অর্নবের বুকের ওপরে… অর্নব মুখ নীচু করে ঠোঁট রাখে পৃথার খোলা গলার পাশে… পৃথার মনে হয় যেন ওই তপ্ত ঠোঁটের ছোয়ায় পুড়ে গেল তার ওই জায়গার চামড়াটা… ‘অর্নব…’ ফিসফিসিয়ে ওঠে পৃথা… ‘কি করছহহহহ…’ আরামে দুচোখ মুদে আসে তার… ঘন হয়ে ওঠে নিঃশ্বাস… বুকের মধ্যে তোলপাড় করে এক অব্যক্ত অনুভূতি…
ছোট ছোট চুমু এঁকে দিতে থাকে পৃথার খোলা ঘাড়ের চামড়ায় অর্নব… আস্তে আস্তে সেই চুম্বনের রেখা উঠে আসে পৃথার কানের পেছন দিকে… আলতো স্পর্শে জিভ ঠেকায় কানের পেছনদিকটায়… পৃথার মতই ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে সে, ‘কেন… কি করেছি আমি?’
কানের পাশে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই সারা শরীরটার মধ্যে শিহরণ খেলে যায় পৃথার… সিরসির করে ওঠে পুরো দেহটা তার… ‘আহহহহহ…’ চাপা শিৎকার বেরিয়ে আসে মুখ থেকে… ‘জানো না কি করছ?’ চাপা স্বরে বলে সে… ‘এই রকম করলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না যে…’
‘কে বলেছে সামলাতে নিজেকে?’ কানের লতীটাকে মুখের মধ্যে টেনে নেবার আগে প্রশ্ন করে অর্নব…
সারা শরীরে যেন আগুন ধরে যাচ্ছে মনে হয় পৃথার… বুকের নীচে থাকা অর্নবের হাতটাকে তুলে নিজেই চেপে ধরে নরম স্তনদুটোর ওপরে… আরো এলিয়ে দেয় দেহটাকে অর্নবের দিকে… ‘ইশশশশ… আমি যে আর পারছি না গো… সারা শরীর কেমন করছে… নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না যে…’ ফিসফিস করে বলে ওঠে পৃথা…
‘আমি কি তোমায় নিজেকে আটকে রাখতে বলেছি?’ বলতে বলতে কানের গর্তের মধ্যে জিভটাকে প্রবেশ করিয়ে দেয় অর্নব…
‘ওহ! মাহহহ…’ সিঁটিয়ে ওঠে পৃথা… অর্নবের হাতটাকে প্রাণপনে চেপে ধরে নিজের বুকের ওপরে… ‘ইশশশশ… এখন এমন কোরো না গো… যদি প্রণবদা এসে পড়ে… ইশশশশ কি লজ্জায় পড়ে যাবো বলো তো…’ মুখে বলে ঠিকই, কিন্তু নিজের উত্তল নিতম্বটাকে ঠেলে দেয় অর্নবের কোলের দিকে… স্পর্শ পায় স্ফিত হয়ে ওঠা পুরুষাঙ্গটার নিজের নরম নিতম্বের দুই দাবনার বিভাজিকায়…
পৃথার কাঁধটা ধরে ঝট করে ঘুরিয়ে দেয় তাকে নিজের দিকে করে, ‘প্রণব এখন আসবে না’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে অর্নব… তারপর ঝুঁকে নিজের ঠোঁটটাকে মিলিয়ে দেয় পৃথার ঠোঁটের সাথে… দুহাত তুলে আঁকড়ে ধরে অর্নবকে পৃথা… ব্রা আর টি-শার্টের আড়ালে থাকা নরম বুকদুটো নিষ্পেশিত হতে থাকে অর্নবের চওড়া বুকের ওপরে… ‘আমায় আদর করো… আদর করো আমায়…’ অর্নবের ঠোঁট থেকে মুখ তুলে বিড়বিড় করে বলে ওঠে পৃথা… তারপর ফের এগিয়ে বাড়িয়ে দেয় নিজের ঠোঁটটাকে তার মানুষটার পানে… অর্নবও ফের তুলে নেয় পৃথার ঠোঁটটাকে নিজের মুখের মধ্যে… জিভটাকে ঢুকিয়ে দেয় পৃথার মুখে… দুটো জিভ একে অপরের সাথে খেলা করতে থাকে… অর্নবের একটা হাত নেমে যায় পৃথার পীঠ বেয়ে উত্তল নিতম্বটার ওপরে… হাতের তালু চেপে বসে নরম দাবনায়… চাপ বাড়ে… ‘উমমমম…’ গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা অর্নবের জিভটাকে মুখের মধ্যে চুষতে চুষতে… নিজের বুকটাকে আরো চেপে ধরে অর্নবের সাথে… সেও হাত নামিয়ে দেয় অর্নবের পীঠের ওপর থেকে তাদের শরীরের মাঝে… হাতের মুঠোয় চেপে ধরে অর্নবের পৌরষটাকে যেটা এতক্ষন তার তলপেটের ওপরে ঢুঁ মারছিল বারংবার… মুঠোয় ধরে ওপর নিচে করে হাতটাকে… নখের আঁচড় কাটে পুরুষাঙ্গটার সংবেদনশীল মাথায়…
নিজের লিঙ্গের মাথায় পৃথার আঙুলের ছোঁয়া পড়তেই কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব… খুলে যায় তাদের একে অপরে সাথে আটকে থাকা মুখের জোড়… ‘আহহহহহ…’ শিৎকার বেরিয়ে আসে অর্নবের মুখ থেকে… পৃথার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে… আরো জোরে চেপে ধরে পুরুষাঙ্গটাকে তার নরম হাতের মুঠোর মধ্যে… নাড়ায় সেটিকে ওপর নিচে করে…
হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে যায় অর্নবের সামনে, পুরুষাঙ্গটাকে হাতের মধ্যে বাগিয়ে ধরে… অর্নবের বুঝতে অসুবিধা হয় না কেন পৃথা বসে পড়তে চাইছে, তাই তাড়াতাড়ি করে তার কাঁধটা ধরে আটকায়… ‘এখন নয়… পরে…’ ফিসফিসিয়ে জানায় সে… ‘আই ওয়ান্ট ইয়ু… নাও…’
‘দেন টেক মী…’ উত্তরে ফিসফিসায় পৃথাও… ফের সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অর্নবের গালে হাত রেখে মুখটা তুলে এগিয়ে দেয় সামনের পানে… চেপে ধরে নিজের ঠোঁটটাকে আবার… চুমু খায় অর্নবের মুখে মুখ রেখে…
অর্নব পৃথার পরা টি-শার্টটাকে ধরে এক লহমায় খুলে ফেলে দেয় মাটিতে… পৃথা হাতটাও যেন সংক্রিয় ভাবে চলে যায় নিজের শরীরের পেছন দিকে… খুলে ফেলে লাল রঙের ব্রায়ের হুক… দেহের থেকে সেটাকে ছাড়িয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় দূরে… কোমরের কাছে জেগিংসের বোতামগুলো পটাপট খুলে ফেলে ক্ষিপ্র গতিতে… কোমর বেকিয়ে চুড়িয়ে সেটাকেও নামিয়ে দেয় দেহ থেকে নীচে… এক পায়ের চাপে চেপে ধরে টান মেরে খুলে দেয় শরীর থেকে জেগিংসটাকে আপন গরজে… সেই সাথে খুলে ফেলে পরে থাকা ছোট্ট প্যান্টিটাও… তারপর একেবারে জন্মদিনের পোষাকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত তোলে সামনের পানে… বলে ওঠে, ‘টেক মী… মেক লাভ টু মী সোনা… এসো…’
অবলীলায় পৃথার শরীরটাকে তুলে নেয় শূণ্যে… দুই হাতে… পাঁজাকোলা করে… হাত পেঁচিয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে পৃথা… তার হাতের ভরসায় ঝুলতে থাকে সে ঘরে শূণ্যে… ওই ভাবেই তাকে নিয়ে এগিয়ে যায় ঘরের মধ্যে পাতা দুটো বিছানার একটার দিকে… নামিয়ে দেয় পৃথাকে বিছানার ওপরে… পৃথাও জড়িয়ে রাখা হাত দিয়ে টেনে নেয় অর্নবকে নিজের দিকে… বিছানায় শুয়ে… অনুভব করে অর্নবের ভারী লোমশ দেহটা নিজের দেহের ওপরে… তার বুকের লোমগুলো ঘসা খায় নগ্ন নরম বুকের ওপরে, বোঁটায়, বোঁটার বলয়ে… নিজের দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে তুলে ধরে জঙ্ঘাটাকে অর্নবের পানে… ডান হাতটাকে নামিয়ে দিয়ে মুঠোয় ধরে শক্ত লিঙ্গটাকে… সেটাকে ধরে ওটার মাথাটাকে ঘসে ভিজে ওঠা যোনিওষ্ঠে… সামনে পেছনে করে ঘসে চলে তার ব্যাকুল যোনির মুখে… দুজনেই গুঙিয়ে ওঠে আরামে… একটু একটু করে লিঙ্গটাকে নিজের যোনির ওপরে ঘসার ব্যাসটাকে কমিয়ে আনতে থাকে পৃথা… তারপর একটা সময় সেটা শুধু ঠেঁকে যোনির মুখটায়… আলতো করে নীচ থেকে কোমরটাকে তুলে ধরে সে… আর অনুভব করে কি অবলিলায় তার রসে হড়হড়ে হয়ে ওঠা যোনির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে ওই রকম স্ফিত লিঙ্গের মাথাটা… ‘উমমমম…’ দাঁতে দাঁত চেপে গোঙায় সে…
কুনুইয়ে ভর রেখে দেহেটাকে একটু তুলে ধরে অর্নব, তারপর পৃথার পানে তাকিয়ে চাপা কুন্ঠিত গলায় বলে ওঠে, ‘কিন্তু তিতির… আমার কাছে যে কন্ডোম নেই… এটা একবার ভাবা উচিত ছিল, তাই না… এখন তো…’
‘আমারও এখন সেফ নয়…’ ফিসফিসিয়ে জানায় পৃথা… হাত তুলে গাঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে তুলে থাকা অর্নবের শরীরটাকে… টেনে নেয় অর্নবকে নিজের বুকের ওপরে সে… ঠোঁটটা তুলে ডুবিয়ে দেয় অর্নবের ঠোঁটের ওপরে অক্লেশে… পৃথার মুখের মধ্যেই যেন অর্নবের কথাগুলো হারিয়ে যায় এই ভাবে… অনুভব করে সে তার লিঙ্গের ওপরে পৃথার যোনির ভেজা নরম উষ্ণ পেশীর চাপ… পৃথার এই কামনভরা আলিঙ্গনে কেমন যেন দূর্বল হয়ে পড়ে সে… মনের মধ্যে উঠে আসা কুন্ঠাটা মিলিয়ে যেতে থাকে একটু একটু করে…
তাও সে আরো একবার শেষ চেষ্টা করে… ‘কিন্তু… কিন্তু যদি তুমি প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ো?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথাকে…
‘তাহলে আমার মত সুখি কেউ হবে না…’ ঠোঁটের কোনে হাসি মাখিয়ে উত্তর দেয় পৃথা গাঢ় স্বরে… চোখের তারায় ঘরের বৈদ্যুতিক আলো যেন ঝিলিক দেয়…
‘কিন্তু… ইফ ইয়ু হ্যাভ আ বেবী?’ সসংকোচে প্রশ্ন করে অর্নব…
হাসিটা মোছে না পৃথার ঠোঁট থেকে… আস্তে করে ঘাড় নেড়ে উত্তর দেয় পৃথা… ‘ইট উইল বী ইয়োর বেবী… আই’ল বী গ্ল্যাড টূ হ্যাভ ইয়োর বেবী…’
কিন্তু তবুও কুন্ঠা যায় না অর্নবের… আরো যেন বেশি করে কুন্ঠীত হয়ে পড়েছে সে যখন জেনেছে যে পৃথা সেফ নয় এখন… শুরুটা হয়তো সেই করেছিল ঠিকই, কিন্তু হটাৎ করেই ব্যাপারটা মাথায় আসতে অস্বস্থিটা শুরু হয় তার মধ্যে… অথচ তার পুরুষাঙ্গের চারপাশে পৃথার চেপে বসে থাকা যোনির কোমল চাপটাও সে অগ্রাহ্য করতে পারে না কোনমতেই… দ্বিধা যেন কিছুতেই সরাতে পারে না মনের মধ্যে থেকে অর্নব…
এই ভাবে চুপ করে থাকা দেখে অর্নবের মনের দ্যুবিধা বুঝধে অসুবিধা হয় না পৃথার… আরো গাঢ় আলিঙ্গনে টেনে নেয় অর্নবকে নিজের বুকের মধ্যে… উত্তেজনায় শক্ত হয়ে ওঠা বুকের বোঁটাগুলো চেপে বসে অর্নবের লোমশ ছাতির ওপরে… ফিসফিসায় পৃথা… ‘আই লাভ ইয়ু অর্নব… আমি তোমার জীবনে থাকতে চাই… যে কোন উপায়ে… তাতে যদি আমি আজ প্রেগনেন্ট হয়েও যাই… তাই সই… আমি তোমার মধ্যে একেবারে মিশে একাকার হয়ে যেতে চাই… একেবারে তোমার হয়ে যেতে চাই অর্নব… প্লিজ… আর কিছু ভেবো না… আমায় নাও… আমায় ভালোবাসো অর্নব… তোমার তিতির তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে… এখন আর কিছু ভেবো না… প্লিজ… আই লাভ ইয়ু সোনা… লাভ ইয়ু…’
তাও প্রায় মিনিট খানেক চুপ করে থাকে অর্নব… তারপর ধীরে ধীরে নিজের মুখ নামিয়ে দেয় পৃথার পানে… ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে দেয় ঠোঁট… গভীর চুম্বন এঁকে দেয় পৃথার পাতলা নরম ঠোঁটেতে…
‘আই লাভ ইয়ু টু, তিতির…’ ঠোঁটের ওপর থেকে মুখটা তুলে গাঢ় স্বরে বলে ওঠে অর্নব… ‘আমি তোমায় আমার জীবনে পেয়ে ধন্য তিতির… ধন্য আমি… তোমার ভালোবাসা পেয়ে… তোমাকে সরিয়ে রাখার ক্ষমতা আমার নেই… ক্ষমতা নেই আমার তোমার ভালোবাসা অস্বীকার করার…’
‘দেন টেক মী বেবী…’ মৃদু হেসে উত্তর দেয় পৃথা… ‘আই ওয়ান্ট ইয়ু ইন্সাইড মী… আই ওয়ান্ট ইয়ু সো ব্যাড…’
পৃথার কথায় অর্নবের বুকের মধ্যেটায় যেন ধকধক করে ওঠে আবেগে… তাও সে সেকেন্ডের কয়এক ভগ্নাংশ ইতস্থত করে যেন কোমরটাকে সামান্য তুলে ধরতে… তারপর নামায় কোমর… পৃথার শরীরের মধ্যে ঢুকে যায় তার দৃঢ় লিঙ্গটা অনায়াসে… পৃথার যোনির মধ্যেটা এতটাই ভিজে উঠেছে যে মাত্র বার দুয়েক চেষ্টা করতে হয় তাকে ঢোকাবার জন্য… শেষে প্রায় পুরো লিঙ্গটাই সেঁদিয়ে যায় একেবারে পৃথার নরম যোনির অভ্যন্তরে… লিঙ্গের শেষে ঝুলতে থাকা অদৃশ্য অন্ডকোষটা এসে ঠেঁকে পৃথার সুগোল নিতম্বে…
‘ওহহহহহ… অর্নব… ইট ফিলস্ সো গুড টু হ্যাভ ইয়ু ইন্সাইড মী…!’ ফিসফিসিয়ে জানায় পৃথা… অর্নবকে জড়িয়ে ধরে মুখটাকে তুলে খুঁজে নেয় তার ঠোঁটটাকে ফের… নিজে জিভটাকে পুরে দেয় অর্নবের মুখের মধ্যে… পা তুলে পুরুষ্টু উরুর সাহায্যে কাঁচি দিয়ে ধরে অর্নবের কায়াহীন কোমরটাকে… বুকটাকে ঠেলে রাখে অর্নবের বুকের সাথে… নীচ থেকে তোলা দেয় কোমরের অর্নবের ছন্দের সাথে… অনুভব করে কি ভাবে তার দেহটাকে ভরিয়ে তুলেছে অর্নবের স্ফিত পুরুষাঙ্গটা… হটাৎ করে সে বুঝতে পারে খুব শিঘ্রই তার অর্গাজম হতে চলেছে… খুব শীঘ্রই পেতে চলেছে সে চরম সুখ… কাঁপন ধরে তার পায়ের পেশিতে… কেঁপে ওঠে তলপেট… তাড়াতাড়ি অর্নবের কোমর থেকে পা খুলে নামায় বিছানার ওপরে… হাঁটুর থেকে মুড়ে পায়ের পাতায় ভর রাখে সে… অর্নবের কোমরের ধাক্কার সাথে তাল মিলিয়ে তুলে তুলে দেয় নিজের জঙ্ঘাটাকে অর্নবের পানে… গ্রহণ করে অর্নবের শক্ত পুরুষাঙ্গটাকে নিজের দেহের গভীরের পরম ভালোবাসায়…
অর্নবের কোমরের আন্দোলনের গতি বাড়ে… দ্রুত ঢুকতে বেরুতে থাকে শক্ত লিঙ্গটা পৃথার ভেজা যোনির মধ্যে… ঠেলে ঠেলে প্রায় গুঁজে দেয় নিজের পুরুষাঙ্গটাকে অর্নব… যোনির ভেতরের শিরাউপশিরায় ঘর্সন লাগে তার লিঙ্গের সাথে… পৃথার যোনির মধ্যে ছড়িয়ে দেয় অফুরন্ত পুলকের কম্পন… যে কম্পন ছড়িয়ে পড়তে থাকে যোনি থেকে আরো অভ্যন্তরে… ছড়িয়ে পড়ে শরীরের কোনায় কোনায়… প্রথম দিকে শুধু মাত্র অল্প অল্প গোঙানী বেরিয়ে আসছিল পৃথার মুখ থেকে রমনসুখে… কিন্তু আস্তে আস্তে সে গোঙানী বাড়তে থাকে… রূপান্তরিত হতে থাকে প্রবল শিৎকারে… ঘন হয়ে উঠতে থাকে তার নিঃশ্বাস… সংকোচন অনুভূত হয় জরায়ুর মধ্যে… একটা অদ্ভুত খিঁচুনিতে কেঁপে ওঠে পৃথার দেহটা… থেকে থেকে কেঁপে ওঠে শরীরের নিম্নাঙ্গ… ‘ওহহহহহ… ইশশশশশ…’ পৃথা হিসিয়ে ওঠে অর্নবের চওড়া কাঁধটাকে খামচে ধরে… চেপে ধরে তাকে নিজের বুকের সাথে আরো কষে… ঠেলে দেয় নিজের বুকটাকে অর্নবের পানে যত শক্তি আছে তাই দিয়ে… বন্ধ করে নেয় চোখদুটোকে চেপে… যোনির পেশি দিয়ে কামড়ে ধরার চেষ্টা করে আসা যাওয়া করতে থাকা পুরুষাঙ্গটাকে প্রবল ভাবে… অনুভব করে পৃথা, অর্নবের দেহের প্রতিটা ধাক্কা কেমন ভাবে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে উঠছে তার নরম তলতলে নিতম্বের দাবনাদুটো… ভেজা যোনির ওষ্ঠের সাথে অর্নবের নগ্ন শরীরের আঘাতে একটা কেমন থপথপে আওয়াজ ভরে উঠেছে ঘরের মধ্যেটায়… অর্নবের লিঙ্গটা ঢুকছে বেরুচ্ছে তার যোনির মধ্যে থেকে কি সুন্দর গতিতে… সবল, কিন্তু বেদনাদায়ক নয়… আরামদায়ক… পৃথা অনুভব করে তার যোনির ওষ্ঠগুলোয় সঞ্চারিত হচ্ছে রক্ত… ফুলে উঠছে সেগুলো আরো বেশি করে… ভিজে উঠছে সে সময়ের সাথে আরো বেশি… আরো দ্রুত…
‘ওহহ তিতির… তোমার ভেতরটা কি টাইট…’ ফিসফিসিয়ে বলে অর্নব কোমরের আন্দোলনকে একই গতিতে রেখে দিয়ে… একবারের জন্যও থামে না সে… যদিও তার অভিলাষা এখনি নিজের বীর্যস্খরণ নয়… সে চায় আগে পৃথার রাগমোচন হয়ে যাক… কিন্তু যে পরিমানে আরামের মধ্যে দিয়ে সে চলছে, কতক্ষন তার পক্ষে নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব তাতে সে যথেষ্ট সন্দিহান…
‘ওহহহহহ মাহহহহ… উমমমম্ফফফফফফ…’ মুখ বিকৃত করে দাঁতে দাঁত চেপে কোঁকিয়ে ওঠে পৃথা… শিৎকারটা অদ্ভুত ভাবে বেরিয়ে আসে নিঃশ্বাসের সাথে মিলে মিশে… কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিল হয়তো অর্নবের কথায়, কিন্তু শুরু করার আগেই সুনামীর মত আছড়ে পড়ে যেন সুখটা… হাতের নখ বিঁধে যায় অর্নবের খোলা কাঁধের মাংসপেশির মধ্যে… অনুভব করে পৃথা তার দেহের গভীরে যেন তরঙ্গের পর তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে… প্রচন্ড সুখটা তার শরীরের যোনির প্রতিটা শিরাউপশিরা বেয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পেটে, বুকে, গলায়, মুখে, হাতে, পায়ে… সব… সর্বত্র… থরথর করে কাঁপতে থাকে তার পুরো শরীরটাই… কোঁকিয়ে ওঠে সে ঘটতে থাকা প্রচন্ড রাগমোচনের অভিঘাতে… ‘ওহ!… ওহ! মাই গড… আহহহহহ…’
‘তিতির… আমার… আমারও হবে…’ হাফাতে হাফাতে বলে ওঠে অর্নব… তার পক্ষে আর নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না… লিঙ্গের চারপাশ থেকে কামড়ে ধরা যোনির পেশির সুখে সে নিজেকে সামলাতে পারে না আর… দাঁতে দাঁত চেপে ধরে সে প্রাণপনে… আরো বেড়ে যায় তার কোমরের আন্দোলনের গতি… ঠেসে ঠেসে ধরতে থাকে আরো ফুলে বেড়ে ওঠা লিঙ্গটাকে পৃথার নরম ভেজা যোনির মধ্যে… অনুভব করে নিজের পুরুষাঙ্গের মাথাটার সংবেদনশীলতার বৃদ্ধি…
‘গিভ ইট টু মী, বেবী, ডোন্ট পুল আউট… কাম ইন্সাইড মী!!!’ ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলে ওঠে পৃথা… হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের গলাটাকে… অন্য হাত তুলে বোলায় অর্নবের দাড়িভরা গালের ওপরে… অনুভব করে অর্নবের বেড়ে ওঠা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস… ‘কাম ইন্সাইড মী, বেবী… কাম ইন্সাইড মী…’ ফিসফিসিয়ে বলে চলে সে বারংবার অর্নবের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে… পাদুটোকে আরো ফাঁক করে মেলে ধরে তার শরীরের মধ্যে অর্নবের ভালোবাসার বীজ গ্রহণ করার অদ্যম আকাঙ্খায়… যোনির পেশি দিয়ে সবলে কামড়ে ধরে তার শরীরের ভেতরে থাকা অর্নবের দৃঢ় পুরুষাঙ্গটাকে…
‘উমমফফফ…’ পৃথার কানে আসে অদেখা অর্নবের গোঙানী… আর সেই সাথে নিজের শরীরের অভ্যন্তরে অনুভূত হয় তপ্ত লাভার প্রবেশের… ‘আহহহহ…’ প্রবল আরামে শিৎকার বেরিয়ে আসে পৃথার মুখের মধ্যে থেকে… প্রানপনে আঁকড়ে ধরে অর্নবের কায়াহীন দেহটাকে নিজের বুকের সাথে… ফের কেঁপে ওঠে তার জঠর… কেঁপে ওঠে সুঠাম থাইদুটো অর্নবের কোমরটাকে আঁকড়ে ধরে… কাঁপন ধরে তলপেটে, নিতম্বে, যোনির প্রতিটা পরতে… অর্নবের বীর্যস্খলনের সাথেই পুণরায় উপভোগ করতে থাকে তার দ্বিতীয়বারের রাগমোচন…
খানিকক্ষন দুজনেই চুপচাপ শুয়ে থাকে একে অপরের শরীরের সাথে এক হয়ে… কানে বাজে দুজনের গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ শুধু… আলিঙ্গনের মধ্যেই পৃথা অনুভব করে ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসা অর্নবের শরীরটাকে…
আস্তে আস্তে পৃথাকে ছেড়ে উঠে বসে অর্নব… গভীর গলায় বলে ওঠে, ‘যাও… বাথরুমে ধুয়ে এসো…’
আর একবারও কথা বাড়ায় না পৃথা, মন চায় আরো একটু শুয়ে থাকতে… উপভোগ করতে অর্নবের দেহের নির্যাসটাকে নিজের শরীরের মধ্যে নিয়ে… কিন্তু অর্নবের মুখের ওপরে আর কথা বলে না, চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে ঢোকে… হান্ড শাওয়ারটা হাতে নিয়ে জলের ধারাটাকে ঘুরিয়ে ধরে যোনি লক্ষ্য করে… আঙুল ঢুকিয়ে পরিষ্কার করতে থাকে শরীরের ভেতরে জমে থাকা অর্নবের ভালোবাসার অফুরাণ দান… খানিকটা নিজের আঙুলের ডগায় নিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরে সে… ভালো করে চেয়ে থাকে হড়হড়ে সাদা পদার্থটার পানে… তারপর আঙুলটাকে পুরে দেয় মুখের মধ্যে… স্বাদ নেয় অর্নবের বীর্যের সাথে নিজের দেহরসের সংমিশ্রনে তৈরী রস… মনে মনে বলে ওঠে পৃথা… ‘মাই লাভ… মাই অর্নব…’ তারপর ফের ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে পরিষ্কার করাতে…