........পর্ব..............১২....................
কতক্ষন দৌড়িয়েছি বলতে পারবো না ৷ জয় আমার পিছনে পড়ে গেছে ৷ আমি একটি বড় গাছের পিছনে লুকিয়ে জয়ের অপেক্ষা করতে লাগলাম ৷ তার ব্যাগটা এখনো আমার কাছে ৷ কিছুক্ষন পর জয় আমার সামনে দিয়ে দৌড়াচ্ছিলো ৷
আমি ফিস ফিস করে জ,,,,,,য়,,, বলে ডাক দিতেই সে দৌড় থামিয়ে আমার কাছে এসে হাপাতে হাপাতে বললো : তু..মি তো ভা...ই সে..ই সেই দৌড়াতে পারো ৷ বাপ...রে বা..প ৷ আমার ব্যাগটা কোথায় ?
এই তো আমার কাছে ৷
দাও ব্যাগটা দাও ৷ এটা কোথাও লুকিয়ে রাখি ৷
কি আছে এতে ?
তারা যা চেয়েছিলো সেটা এখানে, এই ব্যাগের ভিতর আছে ৷
ওওও ৷ জীবনের থেকে কি ব্যাগটাই দামি হয়ে গেলো তোমার কাছে ৷
হুমম ৷ তুমি জান না ! এই ব্যাগটাই কয়েকটা পরিবারকে বাচাঁতে পারে ৷ যেখানে আমার পরিবারও আছে ৷ কিন্তু তোমার কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে ৷
সেটা কেন ?
এই যে, তুমি আমার জন্য খামোখাই বিপদে পড়লে ৷ এখান থেকে বেচেঁ ফিরবো কি না জানি না ৷ তোমাকে শুধু শুধু বিপদে ফেললাম ৷
নিজের ভয়কে কোন রকম সংযত করে বললাম : এসব বাদ দাও এখন ৷ তকদিরে যা আছে তা ঘটবেই ৷ এখন কি করবো আমরা সেটা বলো ৷
চলো সামনের দিকে ৷ ব্যাগটা কোথাও লুকিয়ে রাখতে হবে ৷ এই বলে দুজনে বড় বড় ঝোপঝাড়ের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম ৷
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ঝোপেড় ভিতর বড় গাছের গোড়ায় এসে দাড়ালাম ৷ সাজিদ ব্যাগটা গাছের গোড়ায় একটি ছোট্ট গর্তের ভিতরে রেখে মাটি এবং পাতা দিয়ে ঢেকে দিলো ৷
আমরা বের হবো তখনই কিছু পায়ের আওয়াজ আসতে লাগলো এদিকে ৷ আমরা আবার ঝোপে ঢুকে গেলাম ৷
সে আশেপাশেই আছে ৷ দ্রুত খুজে বের করো ৷ লোকটার কথা শুনে সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়লো ৷
আমি আর জয় সাবধানে ঝোপ দিয়ে সামনে এগুতো থাকলাম ৷
কি করা যায় এখন ? এভাবে কোথায় গিয়ে থামবো আমরা ৷
ভয় পেও না ৷ এটা বড় কোন জঙ্গল নয় ৷ তেমন গভীরও নয় ৷ সম্ভত আমাদের সামনে মেইন রাস্তা হবে ৷ কিন্তু এখন মেইন রাস্তা উঠাই মানে বিপদ ৷ জয় আস্তে আস্তে বললো ৷
এক কাজ করো জয় ৷ পুলিশকে ফোন করো ৷আমি ফিসফিস করে বললাম ৷
জয় আমার দিকে তাকিয়ে বললো : পরমার্শটা মন্দ হয়নি ৷ এই বলে পোকেটে হাত দিলো ৷ কিন্তু একি ! মোবাইলটা কোথায় ?
কি হলো জয় ?
সম্ভবত দৌড়াতে গিয়ে মোবাইলটা পকেট থেকে পড়ে গেছে ৷
এখন কি হবে ?
চলো সামনের দিকে যেতে থাকি ৷ এই বলে জয় আমাকে নিয়ে সামনে চলতে থাকলো ৷ আমরা হাটতে হাটতে ঝোপ থেকে বেরহয়ে এসেছি ৷ হঠাৎ কিছু লোকের গলার আওয়াজ পেয়েই আবার আমরা ঘন ঝোপের ভিতর প্রবেশ করতে লাগলাম ৷
এই শালা ! তুই তাদের কোথায় দেখেছিস ? তাদের একজন বললো ৷
বস ! আমি এই ঝোপটার আশে পাশেই দেখেছি ৷ এখানে খুজলে পাওয়া যাবে ৷
আমরা তাদের কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি ৷ তাহলে এটাই তাদের বস ৷
এই ঝোপটা কতটুকু বড় ? তাদের বস বললো ৷
বস ! বেশি বড় নয় ৷ আমরা চারদিক থেক ঘিরে ফেললে হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই খুজে শেষ করতে পারবো ৷
তাহলে সবাইকে বল চারদিক থেকে ঘিরে ফেলতে ৷ তাদের বস বললো ৷
এখানটাই জঙ্গলটা খুবই ঘন ৷ তবে বেশি বড় নয় ৷ বড় বড় গাছও আছে অনেক ৷ কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা চারদিক থেকে ঘিরে টর্চ মেরে, লাঠি দিয়ে ঝোপঝাড় খুচিঁয়ে খুচিঁয়ে খুজতে লাগলো ৷ আমরা দুজন পুরোই ফেসে গেছি ৷ এখান থেকে বেচেঁ বেরহওয়া মিরাকেল ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ আমরা সামনে এগিয়ে ছোট্ট একটি গর্তের সামনে বসে পড়লাম ৷
এখন কি করা উচিত ? আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম ৷
জয় কিছুক্ষণ ভেবে বললো : তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছে ৷ অযথাই আমার কারনে বিপদে পড়লে ৷ এই বলে জয় গর্তটা দেখতে লাগলো ৷ সেখানে একজন লুকাতে পারবে, যদি কেউ গর্তের উপর মাটি বা লতা পাতা দিয়ে ঢেকে দেয়৷
জয় গর্তটা দেখে বললো : তুমি এক কাজ করো ,এই গর্তের ভিতর ঢুকে যাও ৷ আমার কারণে যেন তোমার কিছু না হয়৷
কিন্তু তুমি কোথায় লুকাবে ? আমি বিস্মিত হয়ে বললাম ৷
জয় বললো : আমি ঝোপঝাড়ে লুকাচ্ছি ৷ তা ছাড়া এখানে দুজন লুকানো সম্ভব নয় ৷
কিন্তু তারা যদি তোমাকে পেয়ে যায় তখন ? আমি চিন্তিত হয়ে বললাম ৷
ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবেই ৷ কিন্তু তোমার কিছু হয়ে যাক সেটা আমি চাই না ৷ জয় বললো ৷
না, না তা হয় না ৷ যদি তুমি ধরা পড়ে যাও তো তোমার পরিবারের কি হবে ? তা ছাড়া তুমি ছাড়া তাদের মুখোশ খুলবে কে ? আমি তার হাত ধরে বললাম ৷
যদি আমার কিছু হয়ে যায় আমার ঐ ব্যাগের লেপটপটা একজনের কাছে পৌছে দিও ৷ জয় আমার দিকে চেয়ে বললো ৷
আমি অবাক হয়ে বললাম : কার কাছে ?
আমার লেপটপটি আমার বন্ধুর কাছে পৌছে দিও ৷ জয় বললো ৷
কে সে ? আমি তাকে চিনবো কি করে ?
তার নাম কার্তিক ! আমার জানে জিগার দোস্ত ৷ আমার জন্য সে জীবনও দিতে পারে ৷ আমরা এক সাথে কলেজে পড়েছি ৷ তার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি ৷ সে কেশবপুর থানার পুলিশ অফিসার ৷ কি পারবেনা ? জয় বললো ৷
আমি মাথা নেড়ে হ্যা সূচক জবাব দিয়ে বললাম যে, আমি পারবো ৷
তাহলে এখন গর্তে ঢুকে যাও ৷ আমি লতা পাতা দিয়ে ঢেকে দিচ্ছি ৷ জয় বললো ৷
গর্তে লুকিয়ে থাকলেই যে বেঁচে যাবো এর কোন গ্যারান্টি আছে ৷ আমি জয়কে বললাম ৷
তোমাকে লুকিয়েই আমি এখান থেকে সরে পড়ে তাদের মনোযোগ আমার দিকে করে নিবো ৷ যাতে করে তারা এদিকে না আসে ৷ জয় বললো ৷
তুমি কেন আমার জন্য নিজেকে বিপদে ফেলতে চাইছো ৷ বরং তুমি লুকাও ৷ আমি তোমাকে ঢেকে দিচ্ছি ৷
এখন বহস করার সময় নয় ৷ তোমাকে খুজে পেলে কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই তারা তোমাকে মেরে ফেলবে ৷ আর যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের ঐ ভিডিও গুলো না দিচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাকে বাচিয়ে রাখবে ৷ জয় বললো৷
তারা তোমাকে বাঁচতে দিবে এটা তুমি বিশ্বাস করো ? আমি জেনে শুনে এই বিপদে তোমাকে ছেড়ে দিতে পারি না ৷ আমি তার কাধ ঝাকিয়ে বললাম ৷
এদিকে ক্রমইশ তারা এগিয়ে আসছে ৷ টর্চের আলোর সাথে তাদের কথার আওয়াজ এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়ছে ৷
মানিক তুমি কেন বোঝতে পারছো না ৷ তারা তোমাকে বিনা কারনেই,চিন্তা ভাবনা করা ছাড়াই মেরে ফেলতে পারে ৷ আসো আসো, হাতে সময় নেই ৷ এই বলে জয় আমাকে গর্তের দিকে ঠেলতে লাগলো ৷
আমি এভাবে জয়কে ছাড়তে পারিনা ৷ কি করা যায়! কি করা যায় ! হ্যা মাথায় এক আইডিয়া এসেছে ৷ আমি জয়কে বললাম : তুমি কি গাছে উঠতে পারো ?
আমার কথা শুনে জয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ৷ আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো যেন মনে হয় আমি তার প্রিয় কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর সংবাদ দিচ্ছি ৷
হঠাৎ গাছের কথা কেন ? জয় অবাক হয়ে বললো ৷
এটা বড় জঙ্গল না হলেও এখানকার গাছ গুলো বেশ বড় বড় ৷ আমরা গ্রামে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে কখনো কখনো গাছে চড়েছি ৷ তুমি যদি গাছে লুকাতে জানো, তাহলে তোমাকে খুজে পাওয়া মুশকিল ৷ বিশেষ করে সেটা যদি রাতে হয় এবং গাছটা যদি ঘন ডাল -পালা , শাখা- প্রশাখা হয় ৷
জয় উপরে মাথা তুলে কয়েকটি গাছের উপর চোখ বুলিয়ে নিলো ৷ বেশ অন্ধকার উপরের দিকে ৷ আর বেশ শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বড় বড় গাছ ৷ জয় আমার দিকে চেয়ে বললো : আমি কখনো চড়িনি গাছে ৷
আমি একটু ভেবে বললাম : তাহলে তুমি এই গর্তে ঢুকে পড় ৷ আমি গাছে চড়ে লুকাচ্ছি ৷
জয় বললো : কিন্ত.................৷
আমি তাকে থামিয়ে বললাম : এখন আর বহস করো না প্লিজ ৷ এখান থোকে ফিরলে দুজনই ফিরবো ৷ না হয় দুজনই মরবো ৷
জয় আমকে জড়িয়ে ধরে বললো : সত্যিই তুমি খুব ভালে বন্ধু ৷ তুমি কি আমার একটা কথা রাখবে ?
ঠিক আছে বলো !
যদি আমি ধরাও পড়ে যাই ৷ তুমি কিন্তু ধরা দিবে না,আমাকে মেরে ফেললেও তুমি আসবেনা ৷ এখান থেকে তুমি বের হতে পারলে, ব্যাগটা নিয়ে তোমার কাছে রেখে দিবে
যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমার বাকি কাজটা তুমি করে দিবে ৷ তুমি কমপক্ষে ঐ ব্যাগটা আমার বন্ধুর কাছে পৌছে দিবে৷ জয় দরদ মাখা চেহারা করে বললো ৷
তাকে দেখে আমার অনেক কষ্ট লাগলো ৷ তার প্রতি দুর্বলতা অনুভব করছি আমি ৷ মায়া হচ্ছে তাকে দেখে ৷ আমি তাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম : ভরসা রাখো ! তোমার কিচ্ছু হবে না ৷
তারপর জয়কে গর্তে ঢুকিয়ে কোনরকম লতা পাতা দিয়ে ঢেকে দিলাম ৷ যেহেতু তারা কাছাকাছি চলে এসেছে ৷
এরপর আমি সেই জায়গাটা ছেড়ে ,একটু দূরে গিয়ে বড় একটা গাছে চড়ে উঠলাম ৷ আমার জন্য গাছ চড়াটা মামুলি ব্যাপার ৷ তারপর একটা বড় মোটা ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম৷
গাছের পাতা আর ডালটা আমাকে লুকিয়ে রাখতে যথেষ্ঠ ছিলো ৷ আমি সেখানে শুয়ে আশেপাশে যতটুকু সম্ভব নজর রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম ৷