• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব

kumdev

Member
437
397
79
।।৪৫।।


সকাল সকাল সাজগোজ করে তৈরী হন গুলনার এহসান। শালোয়ার কামিজ পরেছে কমলা রঙের,গায়ের সঙ্গে মিশে গেছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে বার কয়েক দেখল।কি করছে দেব এখন।ঘর থেকে বের হতে নাদিয়া বেগম বলেন,শাড়ি পরবি না?
— একটা পরলেই হল। আমি তো মডেলিং করতে যাইতেছি না।
— সব সময় ব্যাকা ব্যাকা কথা। সুজা করে কথা বললি কি দোষ হয়?
মাকে জড়িয়ে ধরে হামি দিলেন গুলনার।
— এইসব তোমার বাপের লগে করো,আমারে ভুলাইতে পারবা না।
— এই সপ্তায় আসবো না,ঘর-দোর গুছাইতে হবে। পরের সপ্তা থিকা আসুম।
— তুমার আর আসনের দরকার কি?
গুলনার মনে মনে মজা পায়। তিনি জানেন মায়ের মুখের কথা আর মনের কথা আলাদা। আগের দিন গোছগাছ করা ছিল। ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বেরোবার আগে মাকে বলেন,আসি?
— জাহান্নামে যাও।
কথাটা নিজের কানে যেতে চমকে ওঠেন নাদিয়া বেগম। ‘তোবা তোবা’ এ তিনি কি কইলেন। গুলনার বুঝতে পারেন মায়ের অবস্থা,ফিরে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, আল্লাপাক মায়ের মনের কথা বুঝতে পারে।
এতবড় একটা বিপর্যয় মেয়েটাকে কাবু করতে পারে নাই নাদিয়াবেগমের কাছে এইটা একটা রহস্য। এই উৎসাহ উদ্দিপনা লোক দেখানো নয়তো?
— মন্টি তুই আমারে কিছু লুকাইস না,আমি তোর মা। মা হইলে বুঝবি আমার অবস্থা।
— মা না-হইয়াও বুঝি মা।
— ছাই বুঝস।
মামুন তাগাদা দিলেন,আপু দেরী হইয়া যায়।
— এইটা হইছে দিদির চামচা। নাদিয়া বেগম বলেন।
ড.মামুন নিজে ড্রাইভ করেন। দিদি তার অতি প্রিয়,তার মনে সর্বদা একটা শঙ্কা দিদির জীবনটা না নষ্ট হয়ে যায়। ভদ্রলোক দেখতে সুন্দর কিন্তু সেটাই কি সব? এসব আলোচনা দিদির সঙ্গে করতে পারে না পাছে দিদি আহত হয়। মাকেও বলতে পারেনা দিদির কশম। তবে সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ড.মামুন চুপ করে বসে থাকবেন না।
রহিমা বেগম পরিবেশন করছিলেন।মুমতাজ ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে বলল,মা আপনে সরেন।
রহিমা বেগম হাত ধুয়ে বলদেবের পাশে বসে বললেন,বাজান অত রাত অবধি কি পড়ো?
--এইবার আমারে পরীক্ষায় বসতে হবে আর সময় নাই।লাজুক গলায় বলল বলদেব।
--ঠাকুর-পো দিদিমণিরে পাইয়া আমাগো ভুইলা যাবেন নাতো?
--ভাবিজান আপনে মায়েরে ভুলতে পারছেন?
--খাওনের সময় এইসব কি কথা?রহিমা বেগম বিরক্ত হন।তুমি খাও বাজান।

হেড মিস্ট্রেসের সঙ্গে আলাপ হল। ডাক্তার রিয়াজের পরিচয় জেনে খুব খাতির করলেন ভদ্রমহিলা। সামান্য আলাপে বুঝতে বাকী থাকে না জীবিকার জন্য নয় শখ করে চাকরি করছেন গুলনার এহসান। প্রথম দিন স্কুলে গুলানারের ভালই কাটল। আগের স্কুল থেকে এই স্কুলের মান অনেক ভাল। সম্ভবত রাজধানী শহরের লাগোয়া একটা কারণ হতে পারে। গুলনার আর তিনটি মেয়ে ছাড়া বাকীরা বিবাহিতা। অবশ্য একঅর্থে গুলনারও বিবাহিতাদের দলে পড়ে। মামুন পৌছে দিয়ে গেছে। সেই একমাত্র তার আস্তানা চেনে। পরশুদিন ছুটি স্থানীয় এক পরব উপলক্ষ্যে। অন্যান্য চাকরির তুলনায় স্কুলে এই এক সুবিধা। বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগে আছে। ভোরবেলা বেরিয়ে রাতের মধ্যে ফিরে আসতে হবে।টুকটাক দুই-একটা জিনিস আনার থাকলেও আসল লক্ষ্য তার দেব।নুসরত বেচারী একা পারুলখালা আছে নাকি কাজ ছেড়ে দিয়েছে।তার জন্য অনেক করেছে নুসরত।
--কি ভাবছেন?
গুলনার তাকিয়ে দেখলেন সাহানা।মৃদু হেসে বললেন,কাল তো ছুটি বাসায় যাবেন নাকি?
--যেতে তো হবেই।আমার আশায় ওরা বসে থাকে হা-পিত্যেশ।
সাহানার সম্পর্কে শুনেছে।বাপ-মা হারাতে দুই বোনের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে।এজন্য বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি।বোনেরা এখন বড় হয়েছে তারাই আপুর বিয়ের জন্য এখন তাগাদা দেয়।চাকরি করার আগেই থেকেই একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয়।সে নাকি এখনো অপেক্ষা করছে।বোনেদের প্রতি কর্তব্য পালন বিষয়টা গুলনারের ভালো লাগে।
--আসি মিসেস সোম।
--হ্যা-হ্যা আপনাকে এখন লং জার্নি করতে হবে।
--দূরত্বটা কমাবার উপায় নেই।ওদের কলেজ আর আমার স্কুলের জন্য বাসা বদল করতে পারছি না।আসি?
সকাল সকাল এসে হাজির হয় যাতে নুসরত অফিস যাবার আগে ধরতে পারে। দরজায় তালা বন্ধ। কি ব্যাপার এর মধ্যেই নুসরত অফিস চলে গেল? বন্ধ দরজার সামনে বোরখায় ঢাকা মহিলাকে দেখে স্থানীয় একজন মহিলা জিজ্ঞেস করে, কাউরে খুজেন?
— এইখানে নুসরত জাহান থাকে– -।
— জ্বি তিনি থাকতেন আর একজন দিদিমণিও থাকতেন। তানারা আর থাকেন না।
lUdE8PDQE3Zx7UV7wjXJV_I6Xel_KZtGg1eKjkJVzSKIbS62BgvKRw7SHrtygujWbl4Z_Oe-cnu5fZkT__0dYORv9Q8YOhpRHusTq8P3MKl0xQ3RD0lu8p8Cl-Ef46k=s0-d-e1-ft

নুসরত বাসা ছেড়ে দিয়েছে।এই লটবহর নিয়ে কোথায় যাবেন এখন। এক মুহূর্ত ভেবে দ্রুত সিদ্ধান্ত করেন গুলনার ডিএমের অফিসে গেলেই সব মীমাংসা হয়।হাটতে হাটতে বড় রাস্তার দিকে চললেন।একটা অটো আসতে হাত তুলে দাড় করায়। অটোরিক্সায় উঠে ডিএমের বাংলো বলতে ছুটে চলে অটো। ঢুকতে গিয়ে বাধা,একজন সিপাই জিজ্ঞেস করে, কার কাছে আসছেন?
এইটা ডিএমের বাংলো তার স্কুল না এতক্ষনে খেয়াল হয়। গুলনার বলেন,বলদেব সোম।
— ও বলদা? একটু দাড়ান।
সিপাইয়ের মুখে বলদা শুনে খারাপ লাগে। ততক্ষনে বলদেব এসে জিজ্ঞেস করে,ম্যাডাম আপনি কারে চান?
নিজের বিবিরে চেনে না এইটা সত্যি বলদা। মুখে নেকাব সরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন গুলনার। বলে কিনা ‘কারে চান। ‘বলদেব দ্রুত অফিসে ঢুকে গেল। গুলনার অবাক হলেন,তিনি ঠিক দেখছেন তো? হ্যা ঠিকই দেখেছেন,আবার আগের মত পায়জামা পরে অফিসে এসেছেন,আউলানো চুল। কিন্তু পালালেন কেন ধন্দ্বে পড়ে যান। নজরে পড়ল হাসি মুখে নুসরত আসছে।
— কে মন্টি-দি? সিপাইজি ওনাকে স্যর ডাকছেন।
সিপাইরা সালাম করে পথ করে দিল। গুলনার কাছে গিয়ে নুসরতকে জিজ্ঞেস করে,দেব পালালেন কেন? চিনতে পারে নাই?
নুসরত মুখ টিপে হেসে বলে,নিজের বিবিরে চিনবেন না অত বোকা উনি নন। খুশিতে খবর দিতে আসছে স্যরকে। গুলনারের ফর্সা মুখে লালচে আভা দেখা যায়।
— তুই এখন কোথায় থাকিস?
— তাড়াতাড়িতে তোমারে খবর দিতে পারিনি। একা একা ঐখানে ভয় করছিল। তারপর ম্যামকে বলতে উনি কাছেই একটা ওয়ান রুম ফ্লাটের ব্যবস্থা করে দিলেন। ভাড়াটা একটু বেশি কিন্তু রাস্তার ধারে অফিসের কাছে। এসো ভিতরে এসো।
— যাচ্ছি। তুই দেবকে একবার ডেকে দে তো। গুলনার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
একটু পরে মুখ কাচুমাচু করে বলদেব বাইরে এসে এদিক-ওদিক তাকায়। গুলনার ডাকে,এদিকে আসেন। আপনের প্যাণ্ট কই?
— বাসায় আছে। নিয়ে আসবো?
— বাসায় থাকলে হবে? ভাত হাড়িতে থাকলে পেট ভরবে?
— সেইটা ঠিক বলছো। আমি ভাবলাম পিয়নের পার্ট পিয়নের সাজই ভাল। অফিসারের সাজ হলে অন্যেরা বিব্রত হতে পারে।
গুলনার কি বলবে একথার উওর ভেবে পান না। গভীর কথা কত সহজ ভাবে বলে দেব। মুখে স্মিত হাসি টেনে গুলনার বলেন,পিয়নের কাজ করতে হবে না,আমি ঠিক করেছি আজই আপনাকে নিয়ে যাবো।
— সব তুমি ঠিক করবে?
— তাহলে কে করবে, আপনের স্যর?
— আমি কি সেই কথা বললাম?
— তবে আপনে কি বললেন?
— তুমিই সব ঠিক করবে। হয়েছে?
ডিএম সাহেবা বেরিয়ে আসতে ওদের কথা বন্ধ হয়ে যায়। গুলনার লাজুক হেসে বললেন, সালাম ম্যডাম।
— আলেকুম সালাম,জীবনের সব কথা কি আজই সেরে নেবেন। ভিতরে আসেন।
ডিএম সাহেবার ঘরে ঢোকে সবাই।সুলতান সাহেব চোখবড় করে তাকিয়ে থাকেন। জেনিফার আলম নিজের জায়গায় বসে জিজ্ঞেস করেন,তারপর বলুন নতুন স্কুল কেমন লাগছে?
— খুব ভালো– আপনি আমার জন্য যা করেছেন কোনদিন ভুলবো না।
— একি মনের কথা নাকি সৌজন্য? কথাটা বলে জেনিফার হেসে উঠলেন।
গুলনার মাথা নীচু করে বসে থাকেন। জেনিফার বলেন,আরে না না ঠাট্টা করলাম। তা ম্যাডাম বলুকে এখানেই ফেলে রেখে যাবেন?
— জ্বি না, আজই নিয়ে যাবো বলে এসেছি।
— আজই? জেনিফারের মুখ ম্লান হয়ে গেল। তারপর বলদেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, বলু দাঁড়িয়ে কেন? তৈরী হয়ে নেও।
— আমি তৈরী স্যর।
— তোমার আম্মুরে বলবে না? এই পোষাকে শ্বশুর বাড়ি গেলে তানার মান থাকবে?
— সে কথাটাই আমি ভাবতেছি। অফিস থেকে ফিরে আম্মুকে কথাটা বলা উচিত।
— ফিরে না,এখনি যাও। রেডি হয়ে নুসরত বেগমের ফ্লাটে চলে এসো।
বলদেব বেরিয়ে গেল,সেদিকে তাকিয়ে থেকে জেনিফার আলম বলেন,যেন নিজেকে নিজেই বলছেন,সবাই নিজের ভাল চায়,নিজের কথা ভাবে। অন্যের কথা ভাবার ফুরসত নাই তাদের। আর এই মানুষটা অন্যের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের কথা ভাবার সময়ই পায়না। জানেন গুলনার, হিন্দুদের বিশ্বাস গঙ্গার পানিতে শরীর পবিত্র হয়। সত্য-মিথ্যা জানিনা কিন্তু বলতে পারি এই মানুষটার সঙ্গ পেলে বাঁচার আশ্বাস ফিরে পাই।
ম্লান হাসি ফোটে জেনিফারের ঠোটে। তারপর উদাসভাবে বলেন,বলুর সঙ্গে আর দেখা হবে না। দোয়া করি আল্লাপাক আপনাদের সুখী করুক। আপনি ফিরে গিয়ে ওকে দিয়ে একটা চিঠি লিখে পাঠাবেন ডিএমকে এ্যাড্রেস করে চাকরি করবে না। পাওনা গণ্ডা কিছু থাকলে আমি পাঠিয়ে দেবো।
— জ্বি। গুলনার বলেন,ডিএম সাহেবার মুখে দেবের প্রশংসা তার শুনতে ভাল লাগে না। এই জন্যই তিনি সাত তাড়াতাড়ি ছুটে এসেছেন।
নুসরতের ফ্লাট গুলনারের পছন্দ হয়। ছোট বেশ খোলামেলা। দেওয়ালে হেলানো রয়েছে তানপুরাটা। নুসরত জিজ্ঞেস করে, মন্টি-দি খালাম্মা শুনে কি বললেন?
— কি বলবে? মায়েরা যা করে– খুব কাঁদল। চাকরি করতেই দিতে চাইছিল না। বাপির চেষ্টায় শেষে সম্ভব হয়। বাইরে কে যেন কড়া নাড়ছে? মনে হয় দেব আসছেন?
নুসরত উঠে দরজা ঘেষে জিজ্ঞেস করে,কে-এ-এ?
বাইরে থেকে মহিলা কণ্ঠের সাড়া এল,আমরা দরজা খোলো।
না,এতো ডিএম সাহেবা না। তাহলে আবার কে এল? গুলনারের সঙ্গে চোখাচুখি হতে গুলনার উঠে জিজ্ঞেস করে, কে কারে চান?
— মন্টি আমি,দরজা খোলো।
গুলনার সরে গিয়ে নুসরতকে দরজা খুলতে ইশারা করেন। নুসরত দরজা খুলতে রহিমা বেগম ঢুকলেন,পিছনে দেব– একেবারে সাহেব।পোশাকের সঙ্গে বেমানান বগলদাবা করে একটা টিনের বাক্স।
গুলনার বেগমের রাগ হয় আবার হাসি পায়। কিছু বলার আগে একরাশ হেসে বলদেব বলে,আম্মু সাজায়ে দিয়েছে।
গুলনার হাসি চেপে রহিমা বেগমকে কদম বুসি করেন। সেই সঙ্গে নুসরতও। চিবুক স্পর্শ করে মনে মনে দোয়া করেন রহিমাবেগম। তারপর সোফায় বসে বলেন,শোনো মা, বলা আজকালকার মানুষের মত চালাক-চতুর না। অন্য রকম– পানির মত অর মন। তোমার পরে ভরসা করে দিলাম। ইচ্ছা ছিল চিরকাল আমার কাছে রেখে দেব। বলা বলে আম্মু ইচ্ছারে বেশী প্রশ্রয় দিতে নাই তাইলে মঙ্গল হয়না।
গুলনার জিজ্ঞেস করেন,এই বাক্সে কি আছে?
--আমার জরুরী জিনিসপ্ত্র।
--খোলেন দেখি জরুরী কি কি আছে?
গুলনার বাক্স হতে বই দরকারী কাগজ পত্র বের করে নিজের ট্রলি ব্যাগে ভরে বললেন,বাক্স নিতে হবে না।
ডিএম সাহেবা এসে তাগাদা দিলেন,আসুন গাড়ি এসে গেছে। ওরা নীচে নেমে এল। সায়েদ এসেছে মাকে নিয়ে যাবে। নীচে নেমে রহিমা বেগম জিজ্ঞেস করেন,আচ্ছা মা তোমার বাপে কি করেন?
— আমি উনারে চিনি। ঢাকার রিয়াজডাক্তারের মেয়ে। উত্তর দিল সায়েদ।
— তুই চিনিস নাকি?
— না চিনিনা,উনার নাম সবাই জানে– নামকরা ডাক্তার। সায়েদ বলে।
বলদেব রহিমা বেগমের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে দাড়াতে রহিমা বেগম বুকে চেপে ধরেন।জেনিফার অবাক হয়ে দেখেন বলু তো মহিলার নিজের ছেলে নয় রক্ত সম্পর্কেরও কেউ নয় তাহলে এত মায়া?এক সময় ব্লুকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, এই বেটা নিজে কান্দে না,সবাইরে কাঁদায়। রহিমা বেগমের গলা ধরে আসে।
গাড়ি আসার সময় হয়ে গেছে। প্লাট ফর্মে বেশ ভীড়। জেনিফার আলমের কাছে এসে বলদেব বলে,স্যর আসি?
— দরকার পড়লে যোগাযোগ করবে। আমি ঢাকায় গেলে দেখা হবে।
ট্রেন ঢুকতে একহাতে বাধার সৃষ্টি করে গুলনারকে উঠতে সাহায্য করে বলদেব। কে একজন ঝেঝে ওঠে,আরে মিঞা হাত সরান না। উঠতে দিবেন তো?
গুলনার উঠে জায়গা পেয়ে যায়। বলদেব উঠে দ্রুত গুলনারের পাশে বসে পড়ে। ট্রেন ছেড়েদিল। গুলনার দেবের কাণ্ডকারখানা দেখে মনে মনে হাসেন। বিবির গায়ে কারও ছোয়া লাগতে দেবে না।
ফ্লাটে পৌছাল তখন রাত প্রায় সাড়ে-নটা। গুলনার টাকা দিয়ে বলেন,নীচে হোটেল আছে দুইজনের খাবার নিয়ে আসেন।
সুন্দর করে বলদেবের বিছানা করে দিলেন। অন্য ঘরে নিজের বিছানা করলেন। আজ থেকে শুরু হল স্বামী-স্ত্রীর নতুন জীবন। রাতের খাবার খেয়ে গুলনার বলেন,আপন এইখানে শোবেন আর আমি পাশের ঘরে।
— আমি তোমারে দেখতে পাবো না?
— যতক্ষন জাগনো থাকবেন দেখতে পাবেন। আপনে শুয়ে পড়েন।
বলদেব শুয়ে পড়ে,গুলনার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়। হঠাৎ নজরে পড়ে বদেবের চোখ থেকে পানি পড়ে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,কাদছেন কেন?
বলদেব হেসে বলে,কাদি না। মায়ের কথা মনে পড়ল। আমার মাও এইভাবে ঘুম পাড়াতো।
গুলনারের বুকে শীতল শিহরন অনুভুত হয়।
 
Last edited:

Kala23

New Member
69
87
18
Nice
 

kumdev

Member
437
397
79
।।৪৬।।


বাগানের গাছগুলো পরিচর্যা হয়না আবার আগাছায় ভরে গেছে। সামান্য একজন কর্মচারী বলুর অনুপস্থিতি ভীষণভাবে বদলে দিয়েছে সমগ্র বাংলোটাকে। অফিসে ঢোকার আগে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে দেখলেন জেনিফার আলম সিদ্দিকি।আকাশের দিকে তাকালেন,হালকা মেঘ ভেসে চলেছে।ভোরের বাতাসে হিমেল পরশ।তিন-তিনটে বসন্ত পেরয়ে গেল দেখতে দেখতে। নিজের ঘরে ঢূকে চেয়ারে এলিয়ে দিলেন শরীরটাকে। ম্যাডামের পরিবর্তন নুসরত জাহানের নজর এড়ায় না। কয়েকটা ফাইলে সই করাতে হবে নুসরত জাহান উঠে ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলল,ম্যাম আপনার শরীর খারাপ?
সোজা হয়ে বসে হাসলেন জেনিফার,জিজ্ঞেস করেন,তোমার বন্ধুর কি খবর? তার মনে কোনো ক্ষোভ নেইতো?
এতবছর পর এই প্রশ্ন? কিছুটা অবাক হলেও নুসরত হেসে বলল,বিয়ে করে ওরা ভালোই আছে।
--তুমিও এবার একটা বিয়ে করো।
নুসরতের মুখ লাল হয়। ম্যাম আজ একটু অন্য মুডে।
--বলু বলতো ভিতরে আছে বলেই বাইরে দেখতে পাই। আমিই যা ভাবছি সেটাই সত্য অন্য সব ভুল এই চিন্তাটাই ভুল। নুসরত একদিন ঘুরে এসো বাড়ীর থেকে।
ম্যাম কি বলতে চাইছে বুঝতে অসুবিধে হয়না। নুসরতের সব কথাই ম্যাম জানে। ঠোটে ঠোট চেপে কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল,হ্যা যাবো। শুনেছি আব্বু অনেক বদলে গিয়েছে। নেশাও নাকি ছেড়ে দিয়েছেন।
জেনিফার আলম ফাইল খুলে চোখ বোলাতে বোলাতে বলেন, সব ভালো করে তুমি দেখেছো তো?
--হ্যা ম্যাম। যেখানে গোলমাল আছে পাশে নোট দেওয়া আছে।
বেশ কিছু ফাইলে সই সাবুদ করার পর জেনিফার কলম রেখে আড়মোড়া ভাঙ্গেন। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন, বলু থাকলে এতক্ষন চা এসে যেতো।
--হ্যা দেখছি। ত্রস্ত পায়ে নুসরত বেরিয়ে জমিলকে চায়ের ফরমাশ করে ফিরে আসে।
দেবকে ভুলতে পারেন নি ম্যাম। অবশ্য ম্যাম কেন সেও কি ভুলতে পেরেছে? নুসরত বলল,দেব চলে যাবার পর অফিসটা কেমন নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে।
জমিল দু-কাপ চা দিয়ে গেল।
চায়ে চুমুক দিয়ে জেনিফার বললেন, আমারও বদলির সময় হয়ে এল। বলুর কাজ করার মধ্যে নিছক কর্তব্য নয় কাউকে তোয়াজ তোষামোদ নয় থাকত সেবার মনোভাব। যেভাবে একজন মানুষ একজন আর্তের সেবা করে। একবার বলেছিলাম, তুমি তো হিন্দু? কি বলল জানো? আজ্ঞে তা বলতে পারেন।
নুসরতের ঠোটে স্মিত হাসি।
--তুমি হাসছো? বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম,তা বলতে পারি মানে? আমি যদি বলি তুমি মুসলিম?
--সেইটা আপনার বিবেচনা।
--তুমি কি নেমাজ করো?
--আমি তো পুজোপাঠও করি না।
--তুমি তা হলে কি?
--আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি। মনুষ্যত্বকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে চাই। ইচ্ছে করলে আমি মুসলিম কিম্বা খ্রীষ্টান হয়ে যেতে পারি কিন্তু বাঘ হতে পারব না বাঘও চেষ্টা করলে মানুষ হতে পারবে না।
--বেশী লেখাপড়া না করলেও কথা বলত জ্ঞানীর মতো।
--ধর্মের এক নতুন তাৎপর্যের কথা বলুর কাছে শিখেছি। সব কিছুর নিজস্ব ধর্ম আছে,এক এক ঋতুতে এক একরকম ফুল ফল হয়। জীবের ধর্ম আছে,মানুষের মন অন্য মনের সংস্পর্শ নাহলে নিজেকে মনে হবে নিঃসঙ্গ।
মণ্টী অপা চলে যাবার পর নুসরত মর্মে মর্মে বুঝেছে,নিঃসঙ্গতা কাকে বলে?
জেনিফার বলতে থাকেন,শরীরও অন্য শরীরের স্পর্শ চায়।
নুসরতের কেমন একটা শিহরণ খেলে যায়,বিহবল চোখে ম্যামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
--নেও চাখেয়ে নেও ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমাকে এখন একবার বেরোতে হবে। ঐ অফিসে কিছু কাজ আছে।
--ম্যাম একটা কথা বলবো?
--হ্যা বলো,এত সঙ্কোচ করছো কেন?
--আপনার কোথায় বদলি হচ্ছে?
--দেখা যাক কোথায় হয়।

জেনিফার বেরিয়ে গেলেন।পিয়ন জমিলও সঙ্গে গেল।এ্যানেক্স বিল্ডিং-এ জিপ থামতে অফিসে খবর চলে যায়।শুরু হয় কর্ম তৎপরতা। ডিএম সাহেবা উপরে উঠে সোজা মোজাম্মেল হকের ঘরে ঢুকলেন।
তৈয়ব মিঞাকে বেশ খুশি খুশি লাগে।মিনু উসমানি ডাকতে কাছে গিয়ে তৈয়ব বলল,বলুন ম্যাম।
--কি ব্যাপার তোমাকে বেশ খুশি খুশি লাগছে?
--শোনেন নাই?
--কি শুনব?
--ডিএম বদলি হয়ে যাচ্ছে।
মিনু উসমানিকে খুব খুশি মনে হল না।ম্যাডাম একটু তেরিয়া টাইপ হলেও সৎ।উনি আসার পর অফিসের চেহারা বদলে দিয়েছেন।তৈয়বদের আয়ও কমে গেছে,সময়মতো কাজ হলে পয়সা দিয়ে কেউ কাজ করায়।এরপর কে আসবে কে জানে।
--কি ভাবতেছেন ম্যাডাম?
--ভাবছি আমার কে আসবে,এই সিদ্দিকি ম্যাডাম বেশ সৎ অফিসার।
--ঐ রকম মনে হয়।বলারে মনে আছে?
--কে বলা?
--ঐযে এখানে কাজ করতো একজনরে বিয়ে করে চলে গেল।
--বলদেব,কেন?
--সে সরকারী কর্মী সে কেন প্রাইভেট কাম করবে?স্যার তারে দিয়ে প্রাইভেট কাম করাতো।নিরীহ তাই কিছু বলতি পারতো না।
--প্রাইভেট কাম মানে?
--স্যারের ঘরদোর গুছানোর কাজ।
--তুমি এত খবর পাও কি করে?
তৈয়বের মুখে বাহাদুরী হাসি।তার শাশুড়ী স্যারের রান্না করে সেকথা বলেনা।
 
Last edited:

Kala23

New Member
69
87
18
Apni update dite thakun , comment abar akebare sese i debo
 

kumdev

Member
437
397
79
।।৪৭।।


এক ছাদের নীচে থাকে মাঝে মাঝে শরীরে এমন জ্বলুনি শুরু হয় গুলনারই বুঝতে পারে।নিজেকে শাসন করে,না এমন তোমায় সাজে না।দেখতে দেখতে সময় হয়ে এল আর একটু ধৈর্য ধরো।বাথরুমে গিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজ যৌনাঙ্গের দেকে দেখে মনে মনে বলে,আর কটাদিন সোনা।কই ওনার মধ্যে তো এমন হয়না।পড়াশুনা নিয়ে মশগুল এতকাছে থেকেও কখনো অধিকার ফলায়নি।
সকাল বেলা রান্না করে দেবকে খাইয়ে দাইয়ে স্কুলে বেরিয়ে যান গুলনার এহসান।পিএস পরীক্ষার ফল বের হয়নি।খুব খেটেছে।স্কুলে একদিন সাইদা বেগম সই করতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ভুমিকা শুনে গুলনার ভ্রু কুচকে তাকান।মানুষের এত কৌতূহল কেন? সাইদা তার চেয়ে বয়সে বেশ বড়,তার কলিগ। গুলনারের বিষয় ইতিহাস সাইদা বেগম ইংরেজি পড়ান।
— আপনি নামের শেষে সোম লেখেন। আপনার স্বামী কি হিন্দু?
— সেইটা আমি বলতে পারবো না।
— বুঝলাম না।
— শুনতে অদ্ভুত লাগবে তিনি নিজেরে শুধু মানুষ মনে করেন।
— ইন্টারেষ্টিং। ভাবছি একদিন উনার সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
— প্রয়োজন ছাড়া আলাপ তার অপছন্দ। গুলনার বলেন।
গায়ে পড়ে আলাপ করা গুলনার পছন্দ করেন না।এই ছোকছোকানিতে বিরক্ত হয়। বাধ্য হয়ে বানিয়ে বলতে হল। সাইদা একটু মনক্ষুন্ন হন।
— ভদ্রলোক সামাজিক নন?
সামাজিক নন কথা বললে তোমার নেশা ধরে যাবে। গুলনার খোচাটা গায়ে মাখে না বলেন,তা বলতে পারেন। মাপ করবেন আমার ক্লাস আছে।
দুজন দু-ঘরে শোবার ব্যবস্থা দেব এত সহজে মেনে নেবে আশা করেনি গুলনার। শুধু একটা ব্যাপার স্কুল থেকে ফিরলেই বায়না,গান শুনাও।গান না-শুনালে এমন অশান্তি করে তা বলার নয়। খাবে না তার সঙ্গে কথা বলবে না। তখন বাধ্য হয়ে তানপুরা নিয়ে বসতে হয়। ওনার আম্মু বলছিলেন উনি কাঁদেন না– । কিন্তু গান শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। গুলনার লক্ষ্য করেছেন দেবের পছন্দ রবীন্দ্র নাথের গান। বাড়ী থেকে তাই ‘গীতবিতান’ নিয়ে এসে নতুন করে ঝালানো শুরু করেন।
প্রাইভেটে ভাল রেজাল্ট করা কঠিন। তাও প্রথম বিভাগে পাস করে দেব। দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ভর্তি করে দিলেন কলেজে। দুপুরে একা একা বাড়িতে বসে কাটাতে হয়না। প্রতি সপ্তাহে দুইরাত বাড়িতে একা থাকতে হয় দেবকে। গুলনার দেখা করতে যান মায়ের সঙ্গে।বাসায় থাকলেই বা কি বরং না থাকলে দেবের সুবিধে।ইচ্ছেমত আশপাশ অঞ্চল ঘুরতে বের হয়। নদীর স্রোতের মত সময় বয়ে যায়।দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েকটা বছর। কলেজে কিছু বন্ধু-বান্ধবী জুটেছে গুলনারের পছন্দ নয়। নিষেধ করতে গেলে আবার কি হয় ভেবে কিছু বলেন না। কড়া নজর রাখেন পড়াশুনায় কোন ঢিলেমী না পড়ে। একদিন স্কুল থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছেন অমনি আবদার গান শুনাও। গুলনার বলেন,এখন না পরে। ব্যস নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। রাতে খেতে ডাকলে বলে,ক্ষিধে নেই। যে মানুষ খেতে ভালবাসে কেউ বিশ্বাস করবে ক্ষিধে নেই? অগত্যা তানপুরা নিয়ে বসলেন গুলনার। তানপুরার মুর্ছনায় দরজা খুলে গেল। গুলনার গায়,
”আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি…..। ”
সামনে বলদেব চোখ বুজে গান শুনছে,কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। গান শেষ হলে চোখ খোলে বলদেব। গুলনার জিজ্ঞেস করেন,আমি যখন গান গাই আপনি চোখ বুজে থাকেন,আমার দিকে দেখেন না। আমারে কি আপনার অপছন্দ?
হাসিতে সারা মুখ উদ্ভাসিত। বলদেব নীচু হয়ে দুই করতলে গুলনারের দু-গাল ধরে। গুলনারের বুক কেপে ওঠে মনে হল দেব বুঝি তাকে চুম্বন করবে। করলেও আজ তিনি আপত্তি করবেন না। বলদেব কপালে কপাল ছুইয়ে বলে,তুমি বলেছিলে জাগনো থাকলে তোমারে দেখতে পাবো বিশ্বাস করো চোখ বুজলেও আমি আমার মন্টিকে দেখতে পাই।
গুলনারকে ছেড়ে বলদেব উঠে দাড়িয়ে বলে,ক্ষিধে লেগেছে খেতে দেও।
গুলনার রান্না ঘরে গিয়ে খাবার সাজাতে থাকে। গানের চর্চা ছেড়েই দিয়েছিল,দেবের জন্য আবার গান শুরু করেছে গুলনার।
রাতের খাওয়ার পর বলদেব নিজের ঘরে শুতে চলে যায়। গুলনারের চোখে ঘুম আসে না। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন। রাতে এমন করে শরীরের মধ্যে অনেক কষ্টে নিজেকে দমণ করে গুলনার। দেবের কি তার মতো যন্ত্রণা হয় না? একদিনও আবদার করেনি তার কাছে শোবার জন্য। হঠাৎ মনে হল কেউ দরজায় শব্দ করছে। গুলনারের মুখে হাসি ফোটে। উঠে দরজা খুলে দেখেন কেউ কোথাও নেই। তাহলে বোধ হয় চলে গেছে? সন্তর্পণে দেবে ঘরের ভিতর উকি দিলেন,শিশুর মত বালিশ আকড়ে ঘুমোচ্ছে বলদেব। তাহলে ভুল শুনে থাকবেন।
একদিন নুসরতের ফোন আসে। ডিএম বদলি হয়ে চলে গেছেন অন্যত্র।সঙ্গে আমিনাবেগমকে নিয়ে গেছেন।কোথায় গেছেন কাউকে বলেন নি।যাবার আগে খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন।সবাই ওকে সংবর্ধনা দেবার কথা বললে উনি মুখের উপর বলে দেন,সবাই নানা প্রশস্তি করবেন তিনি মনে এক মুখে আর এক পছন্দ করেন না।তিনি যা ভাল বুঝেছেন করেছেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু করেন নি।যদি কারো স্বার্থে আঘাত লেগে থাকে তিনি অসহায়। নুসরত বলে,মন্টি-দি একবার এসো না। কতদিন তোমায় দেখি না। গুলনার বলেন,নারে এখন অসম্ভব,কদিন পর দেবের ফাইন্যাল পরীক্ষা।
পরীক্ষার কটাদিন গুলনার ছুটি নেয়। বেরোবার আগে দেবের কপালে চুম্বন করে দোয়া মাগে। ঐ সপ্তাহে বাড়ি যায়নি গুলনার। নাদিয়া বেগম অস্থির হয়ে ছেলে মামুনকে খোজ নিতে বলেন। বিরক্ত ড.মামুন হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে মুন্সিগঞ্জের দিকে গাড়ি চালালো। ফ্লাটের দরজায় নক করতে অপা দরজা খুলে ইশারায় মুখে আঙ্গুল দিয়ে শব্দ করতে নিষেধ করেন। গুলনারের সঙ্গে ঘরে ঢুকে অদ্ভুতভাবে অপাকে লক্ষ্য করেন।
— দুলাভাই কই?
ইঙ্গিতে দেখালেন,পাশের ঘরে।
— অপা তুমি কিন্তু আম্মুরেও ছাড়ায়ে যাচ্ছো।
লাজুক হেসে গুলনার বলেন,তুই বুঝবি না একটা বলদরে মানুষ করা কত ঝঞ্ঝাট। সব সময় নজর রাখতে হয়– ।
— তুমি স্কুলে গেলে কে নজর রাখে?
— এখন স্কুলে যাই না,ছুটি নিয়েছি।
ড.মামুন হতবাক,কি বলবেন ভেবে পান না। নারীর ভালবাসা নিছক নর-নারীর প্রেম নয়,একটি মিশ্র উপাদান। অপা কেন আসেনি,বাসায় ফিরে মাকে কি বলবেন?
— ড.মামুন কতক্ষন?
সবাই চমকে দেখে বলদেব দরজায় দাড়িয়ে। গুলনার বিরক্ত হয়ে বলেন,আসেন আড্ডা দেন।
বলদেব ব্যাজার মুখে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতে গুলনার বলেন,থাক রাগ দেখাতে হবে না। পনেরো মিনিট কথা বলেন।
— দেখলে মামুন,আমি কি রাগ দেখালাম?
গুলনার বলেন,বসেন টিফিনটাও সেরে নেন। গুলনার রান্না ঘরে চলে গেলেন। ড.মামুন ভাবেন,তিনি এ কোন পাগলখানায় এসে পড়লেন? আম্মুকে এসব বলা যাবে না। ড.মামুন জিজ্ঞেস করেন,আপনি অপার সব কথা শোনেন কেন? প্রতিবাদ করতে পারেন না?
বলদেব উদাসভাবে কি যেন ভাবে,তারপর ধীরভাবে বলে, আমার মা বলতো বলা মানিয়ে চলতে হয় সংসারে, মানিয়ে চলার মধ্যে কোন গ্লানি নেই। ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স মানে হেরে যাবার ভয় মানিয়ে চলার অন্তরায়। গুলনার চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,ওকে আমার বিরুদ্ধে কি লাগাচ্ছেন?
বলদেব ঘাড় নেড়ে বলে,দেখলে মামুন দিস ইজ কমপ্লেক্স।
মামুন লক্ষ্য করে কথাবার্তা অনেক বদলে গেছে জিজ্ঞেস করে, আপনার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
— আমি আমার মত লিখছি এবার যিনি খাতা দেখবেন তিনি তার জ্ঞান বুদ্ধি মত নম্বর দেবেন।
টিফিন সেরে ড.মামুন উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন,আম্মুরে কি বলবো?
— যা খুশি। তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে মিথ্যে বলা শেখাবো?
ড.মামুন সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবেন,অপা তোমারে মিথ্যে বলতে হবে না। তোমার হয়ে সে পাপ আমিই করবো।
বলদেবের প্রতি আগের বিরূপতা কেটে গেছে।এখন মনে হচ্ছে অপা ভুল করে নাই।
 
Last edited:

kumdev

Member
437
397
79
।।৪৮।।


প্রায়ই গুজব শোনা যাচ্ছে আজ না কাল রেজাল্ট বেরোবে। যার রেজাল্ট তার কোন হুঁশ নেই টেনশন কেবল গুলনার এহসানের।রেজাল্টের সঙ্গে জড়িয়ে আরেকটা ব্যাপার।রেজাল্ট ভাল হলে এতদিনের চেপে রাখা ইচ্ছে বাধন আলগা হয়ে যাবে সারারাত ধরে--কল্পনা করে রাঙা হয় মুখ। একদিন স্কুলে ক্লাস সেরে বেরিয়েছেন বেয়ারা এসে খবর দিল ম্যাডাম আপনার ফোন। কে করল? কার ফোন? কি ব্যাপার কিছু হল নাকি বাড়িতে? দুরু দুরু বুকে ফোন ধরেন গুলনার,হ্যালো?
— অপা আমি– মামুন।
— হ্যা বল।
— তুমি এখন কোথায়?
— স্কুলে,কেন কিছু হয়েছে?
— কেলেঙ্কারি হয়েছে।
— ভাই কি হয়েছে বল। সবাই ভাল আছে তো?
— সবার কথা জানি না,আমার খুব ভালো লাগছে।
— তুই এই জন্য ফোন করেছিস? আমি রাখলাম– ।
— না না অপা ফোন রাখলে তোমারে আফশোস করতে হবে। দুলাভাই যে এমন করতে পারে আমি ভাবতেও পারি নাই। ছিঃ-ছিঃ অপা– ।
— কি যা তা বলতেছিস। ও বাড়ি ছাইড়া অখন বাইর হয় না।
— সেকেণ্ড ক্লাস সেকেণ্ড।
— মামুন আমার শরীরের মধ্যে কেমুন করে,ভাই দোহাই তোর ঠিক কইরা বল।
— রেজাল্ট বাইর হইছে। দুলাভাই সেকেণ্ড হইছে। এবছর ফার্স্ট ক্লাস কেউ পায় নাই। আমারে কি দিবা বলো।
— আমার সোনা ভাই,তামাশা করিস না কি হইছে ঠিক কইরা বল।
— তামাশা আমি করলাম? তামাশা করছে তোমার খসমে ।
কান লাল হয় গুলনারের বলেন,আমি কাল বাড়ি যাইতেছি। কাউরে কিছু বলিস না সারপ্রাইজ দিমু। তোর দুলাভাইরে শ্বশুরবাড়ি দেখামু।
ফোন রেখে দিলেন গুলনার,তার শরীর এখনো কাঁপছে। টিচার্স রুমে গিয়ে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। আর দুটো ক্লাস আছে।
— মিস এহসান শরীর খারাপ? মিসেস রাবেয়া জিজ্ঞেস করলেন।
— না সেরকম কিছু না। আমি কিন্তু ম্যারেড। গুলনার বলেন।
মনটা অস্থির, সময় যেন অতি মন্থর। ঘড়ির কাটা নড়তেই চায় না। মামুনের ভুল হয় নাই তো? মামুন মোটেই ছেলে মানুষ নয়। ছুটির ঘণ্টা পড়তেই কাগজ-পত্তর গুছিয়ে নিয়ে গুলনার বাসার দিকে রওনা দিলেন। পথে ওষুধের দোকান দেখে এক মুহূর্ত ভাবে। তারপর দোকানে গিয়ে কন্ট্রাসেপটিভ পিল কিনে নিল। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে দাড়াতেই দরজা খুলে গেল।
— আপনি দরজা খুললেন কেন? আমি তো বেল বাজাই নাই।
— আমি তোমার গন্ধ পাই।
— শুধু গন্ধেই খুশি?
— টানাটানি করলে ফুলের পাপড়ি ছিড়ে যেতে পারে।
গুলনার ঘরে ঢুকে দেখলেন,মাটিতে কার্পেট পাতা। দেওয়ালে হেলান দেওয়া তানপুরা। ধুপ জ্বলছে।
— এ আবার কি?
— বিশ্রাম করো। তারপর গান ,আমি সব প্রস্তুত করে রেখেছি।
শুধু গান আর কোনো আকাঙ্খ্যা নেই?কিছুটা উষ্মার সঙ্গে বলে,গান শুনলে পেট ভরবে,রান্না করবে কে?
বলদেব মাথা নীচু করে কয়েক মুহূর্ত ভাবে তারপর বলে,মন্টি একটা কথা বলবো?
— এ আবার কি ঢং?
— আমার খুব ইচ্ছা করে বউ নিয়া একদিন রেস্টুরেণ্টে খাই।
— কখনো তো বলেন নাই?
— মনে আসলেও বলিনি। বেকার মানুষ এইসব ইচ্ছারে প্রশ্রয় দেওয়া ভাল দেখায় না।
— বেকার মানুষ তাই ঘরে বসে খালি উলটাপালটা চিন্তা।
বলদেব আর কথা বলেনা। নিজের ঘরে ফিরে যায়। গুলনার চেঞ্জ করে পাখা চালিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন। অদ্ভুত মানুষ পরীক্ষা দিতে হয় দিল। রেজাল্ট নিয়ে কোন চিন্তা নেই। একছাদের নীচে যুবতী বউ অথচ কেমন নিস্পৃহতা।নাকি উপেক্ষা? কত কষ্ট করে প্রতিনিয়ত নিজেকে সংযত রাখতে হয়েছে সে কেবল সেই জানে। এক একদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে ভেবেছে যা হবার হবে ছুটে যাই দেবের কাছে তারপর নিজেই নিজেকে শাসন করেছে। অনেক বেলা হল এবার চা করা যাক। রেজাল্টের কথা বলবে না দেখা যাক কি করে?
— কি ভাবছেন? গুলনার বলদেবের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
— তোমার কথা।
— জিভের ডগায় কথা সাজায়ে রেখেছেন?বসে বসে কেবল ভাবুন।
— বিশ্বাস করো আমি সাজিয়ে কথা বলতে পারিনা,যা মনে এল বললাম।
এর উপর রাগ করাও যায়না গুলনার বলল, ঠিক আছে,আসুন চা হয়ে গেছে।
বলদেব দেখল কার্পেটের উপর চায়ের ট্রে। প্লেটে খাবার দেখে জিভে জল এসে যায়। বলদেব বসে খেতে শুরু করে। তারপর শুরু হয় গান। বলদেব বলে,তোমারে আজ খুব খুশি-খুশি লাগতেছে। এইটা আমার খুব ভাল লাগে।
দেখেই ভাল লাগে,ব্যাস তাহলে সারা জীবন দেখতেই থাকুন।বাসায় নিয়ে গেলে কি করবে কে জানে।গুলনার বলল,
অনেক দেখেছেন এইবার ওঠেন গান শুনলে তো পেট ভরবে না। আপনার জন্য রেষ্টুরেণ্ট সারা রাত খোলা থাকবে না।
— মুখ দিয়ে যখন বের করেছি আমার ইচ্ছে অপুর্ণ থাকবে না,আমি জানতাম।
— আপনে জানতেন? তাহলে ওকথা বললেন কেন?
— কোন কথা?
— আমি বেকার….ইচ্ছা প্রকাশ ঠিক না…আপনার সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক? আমাদের মধ্যে কোন কিছু গোপন থাকা উচিত না।
— মন্টি? একটা কথা মনে পড়ছে আমি তোমারে গোপন করি নাই– খেয়াল ছিল না।
— কি খেয়াল ছিল না?
— একদিন ঘুরতে বেরিয়েছি একটা লোক গায়ে পড়ে আলাপ করল। আমার নাম কি,তোমার সাথে কি সম্পর্ক আমার,কি পড়ি– এইসব কত প্রশ্ন।
— আপনি সব গড়গড় করে বলে দিলেন? জানা নাই শুনা নাই কি মতলব কে জানে? কত রকমের মানুষ হয়।
— বলা ঠিক হয় নাই তাই না?
—আপনি ঘুরতে বেরিয়েছিলেন মানে?
বলদেব বুঝতে পারে ধরা পড়ে গেছে বলল,তুমি দুই দিন থাকো না একা একা কি করি তাই--।
গুলনার বেগম হেসে ফেলে সত্যি মানুষটা কোন ধাতুতে গড়া।বলল,যাক বলেছেন এখন আর ভেবে কি হবে? তৈরী হয়ে নিন।
রেষ্টুরেণ্টে খাওয়া সেরে ফুরফুরে মন নিয়ে ওরা বাসায় ফিরে এল। কাল বাড়ি যাবে বলদেবকে বলেন নি। ঘরে ঢুকে বলদেব বলে,এইবার তুমি ঘুমাও,আমি আসি?
— কোথায় যাবেন?
— বাঃ ঘুমাবো না? রাত কত হয়েছে ঘড়িতে দেখেছো?
— আমার সাথে ঘুমাতে ইচ্ছা হয় না?
— তুমিই তো আমারে আলাদা শুতে বলেছো।
— আজ থেকে আমরা একসঙ্গে ঘুমাবো।
— সত্যিই? তাহলে খুব মজা হবে। ছেলে মানুষের মত লাফিয়ে ওঠে বলদেব।
আনন্দ ধরে না অথচ ভাবখানা ভাজা মাছ উল্টায়ে খেতে জানে না গুলনার মনে মনে ভাবেন। জিজ্ঞেস করেন,কি মজা হবে?
— শুয়ে শুয়ে গল্প করবো,গায়ে হাত বুলায়ে দেবো তোমার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাবো তারপর– ।
— তারপর?
— তারপর একসময় আমরা হারিয়ে যাবো অন্ধকার ঘুমের দেশে,রং-বেরঙ্গের স্বপ্নের জগতে। বেশ মজা তাই না? জানো মন্টি, মা আমাকে বানিয়ে বানিয়ে কত গল্প বলতো, আর আমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম।
গুলনার মুগ্ধ হয়ে শোনে,বলদেব যখন কথা বলে চলে যায় যেন অন্য কোন অচিন জগতে। দুজনে শুয়ে পড়ে। গুলনার জিজ্ঞেস করেন,আমাকে আদর করতে ইচ্ছে হয়না?
— করে তো– ইচ্ছে করে– না থাক।
— আমাদের মধ্যে আমরা ইচ্ছেকে গোপন করবো না একটু আগে বলিনি?
— তোমার পুরা শরীরটা দেখতে ইচ্ছা করে।
একরাশ লজ্জা মেঘের মত ঢেকে ফেলে গুলনারকে,লাজুক গলায় বলেন,আমি কি দেখতে মানা করেছি?
গুলনার জামার বোতাম খুলে দিয়ে হাত উচু করেন। বলদেব দুহাতে জামাটা উপর দিয়ে খুলে দিল।
— মণ্টি তুমি খুব ফর্সা গোরাদের মত।
— আপনার ভাল লাগে না?
— তুমি কালা হলেও আমার ভাল লাগতো। তোমার পেট চাতালের মত। হাত বোলায় বলদেব। আমার খুব ভাল লাগে।
— পেটে বাচ্চা এলে এরকম থাকবে না।
প্যাজামার দড়িতে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে,এইটা খুলি?
— আপনি খুব অসভ্য।
— তাহলে থাক।
— আপনার ইচ্ছা হলে খোলেন।
HGFyEJWV5WgNDGF2yBinXSl6Am0WhFcsY9jPhUbP02cNEmjoAXk3AI7nU1hD2IcuIW_mvRQ=s0-d-e1-ft

দড়িতে টান দিতে লজ্জায় গুলনার ঘুরে উপুড় হয়ে যায়। পাছাটা উচু করে ধরে যাতে পায়জামাটা খুলতে অসুবিধে না হয়। বলদেব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে নিরাবরণ শরীরের দিকে।তারপর প্যাণ্টি টেনে নামাতে থাকে।চিত হয়ে পাগলটার কাণ্ড দেখতে থাকে। তর্জনি দিয়ে উরুতে চাপ দেয়।
— কি করেন?
— তুমি এত ফর্সা টিপ দিলেই লাল হয়ে যায়। বলদেব পাছার উপর গাল রেখে শুয়ে পড়ল।
গুলনার বলেন,আপনি কি জামা-প্যাণ্ট পরেই ঘুমাবেন?
— আজ আমরা দুজনে দুজনের শরীরে শরীর লাগিয়ে শুয়ে থাকবো। লাইট নিভিয়ে দেবো?
— না থাক।
বলদেব একে একে সব খুলে ফেলে। গুলনার আড়চোখে দেখেন দেবের বিশাল পুরুষাঙ্গ। সারা শরীর শিরশির করে ওঠে। বলদেবের নজরে পড়ে পাছার ফাকে কি যেন বাদামী রঙ্গের,আঙ্গুল দিয়ে খোচাতে থাকে,কিছুতেই উঠছে না। গুলনার জিজ্ঞেস করেন, কি করছেন? ঐটা তিল।
মন্টিকে ঠেলে চিত করে ফেলে। চোখ বুজে থাকে গুলনার। বলদেব চিবুক থেকে শুরু করে গলা বুকে নাক ঘষতে থাকে। নাভিতে চুমু খায়। তলপেটে মুখ ঘষে। অবশেষে চেরায় নাক দিয়ে দীর্ঘ ঘ্রাণ নিল। গুলনারের শরীর সুখে দুমড়ে মুচড়ে যায়। একটা পা তুলে দিলেন বলদেবের কাধে। বলদেব দু-পায়ের ফাকে বসে বিশ্রাম করে। গুলনার চোখ খুলে বলদেবকে দেখেন।
বলদেব জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছো?
— ভাবছি সেদিনের সেই জানোয়ারদের কথা।
— সেই হারামজাদাদের কথা ভুলে যাও। বলদেব বলে।
— আজ আর তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই। বরং তাদের জন্য আমি আপনাকে পেলাম। আপনি আমার বুকের উপর শুয়ে বিশ্রাম করেন।
— তুমি পারবে আমারে বুকে নিয়ে থাকতে?
— আমাকে পারতেই হবে। চিরকাল আমাকে আগলে রাখতে হবে।
আমার মণ্টি সোনা বলে বলদেব গুলনারকে বুকে জড়ীয়ে ধরে তুলে বসিয়ে দিল। গুলনার দেবের কাধে পরম নির্ভরতায় মাথা রাখে। গুলনারে সারা পিঠে খুটে দিতে থাকে বলদেব। কোলে করে নিয়ে নীচে নামে গুলনার দু-পায়ে দেবের কোমর জড়িয়ে ধরে। চেরার মুখ তর্জনি দিয়ে খোচা দিল। গুলনার ফিসফিস করে বলেন,কি করছেন?
— ভাবছি যদি ব্যথা পাও?
— আমি সহ্য করবো,আমার কথা ভাববেন না।
— তা বললে কি হয়?
বলদেব নিজের পুরুষাঙ্গের কাছে গুলনারে ভোদা এনে ভাবছে কি করবে?
— কি ভাবতেছেন বলেন তো? সারারাত ভোদা আগলায়ে বইসা থাকবেন? গুলনার অস্থির সারা শরীরে জ্বলুনি শুরু হয়েছে।
বলদেব ধীরে ধীরে চেরার মুখে ল্যাওড়া ঘষতে থাকে।গুলনার বিরক্ত হয়ে বলেন,আপনে কি করতেছেন বলেন তো? আলপনা দেন নিকি?
কথা শুনে বলদেবের হাসি পায় কিন্তু মণ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,না মানে আমি ভাবছিলাম– ।
গুলনার উঠে বসেন। একজন মেয়ের পক্ষে কতটা বেহায়া হওয়া যায়। গুলনার বলেন,আর মানে-মানে করতে হবে না।
NcdzLO3KtRiZ0AEdr5mIA9WJofsDkoROpXaE_eBiO6bnCb2OJw-c0v0gRYuEmliKznXy-12JAE4SwmGs-Juw74vO_oU7VlA0XvowzooC0wbj541vR_kRI7ce-lsbPzagzYqqpnqEM7n6eHklPezYeqvE8gbc7eUrPQ=s0-d-e1-ft

গুলনার ভাবেন সেই দেবের উপর চড়বে তাহলে নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকবে। উনার যা সাইজ একটু শঙ্কা মনে ছিলই। বলদেবকে ঠেলে চিত করে ফেলে ওর বুকের উপর চেপে বসলো। ল্যাওড়ার উপর চেরা রেখে শরীরের ভার ছেড়ে দিতে পুচপুচ করে গেথে গেল আমুল। গুলনারের দম বন্ধ হয়ে আসে প্রায়। পুরোটা ঢুকতে নিশ্বাস ছেড়ে বলদেবের গলা ধরে টেনে ঠোটে ঠোট চেপে ধরে বলল, ঠাপাতে শুরু করেন। দুহাতে জড়িয়ে ধরে মণ্টিকে। মিনিট দশ-বারো পর গুলনারের পানি খসে যায়। একটু দম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন,আপনের হয় নাই?
— মণ্টি তুমি একেবারে ঘেমে গেছো।
— থাক আর দরদ দেখাতে হবে না।
জিজ্ঞেস না করলেও বুঝতে পেরেছেন। গুলনার আবার ঠাপাতে লাগল। কিছুক্ষণ পর বলদেব কাতরে ওঠে,মণ্টি– মণ্টি-ই-ই-ই।
গুলনার বুঝতে পারে ভোদা ভেসে যাচ্ছে উষ্ণ বীর্যে। বুকের উপর শরীর এলিয়ে দিলেন। গুলনারের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয় বলদেব।
— চলুন বাথরুমে যাই।
মণ্টিকে কোলে নিয়ে বলদেব বাথরুমে নিয়ে গেল। জল দিয়ে ভোদা ধুয়ে দিতে থাকে।
গুলনার জিজ্ঞেস করেন,আপনের ভাল লেগেছে?
— হ্যা। তোমার?
— খুব ভাল লেগেছে। কাল আপনেরে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবো।
বাথরুমে জল দিয়ে ধুয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল।উপরে চড়ে করলে বেশ পরিশ্রম হয়,ওনার বেরোতে এত দেরী হয়। গুলনারকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল বলদেবও।
গুলনার চুপ করে করে শুয়ে আছেন পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে আছে দেবের হাত। এমন উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল ভেবে লজ্জা পাচ্ছেন। রাগের মাথায় দেবকে যা না তাই বলেছেন অবশ্য দেব কিছু মনে করেনি। এই মানুষকে নিয়ে তাকে কাটাতে হবে জীবন ভোর। এই ভাল হয়তো প্রথম প্রথম সঙ্কোচ থাকে পরে সহজ হয়ে যাবে। আচমকা পালটি খেয়ে দেবকে জড়িয়ে ধরে গুলনার চুমু খেল।
 
Last edited:

kumdev

Member
437
397
79
।।৪৯।।


জানলা দিয়ে ভোরের আলো এসে পড়েছে বিছানায়। ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলে তাকালেন।কালকের স্মৃতি অনুভুত হয় সারা শরীরে। উঠতে গিয়ে বাধা পেয়ে দেখলেন,একটা পুরুষ্ট হাত তাকে চেপে রেখেছে। নিজের দিকে চোখ পড়তে লজ্জায় রক্তিম হলেন গুলনার। রাতে উত্তেজনার মাথায় ভাল করে দেখার সুযোগ হয়নি। এত বড় দেবের ল্যাওড়া,নিজের ভিতরে নিয়েছিল ভেবে অবাক লাগে। দেবের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে আয়নার সামনে দাড়ালেন। দেবের গায়ে ইবলিশের মত শক্তি। সেদিন যদি দেব থাকতো তাহলে ছেলেগুলোর যে কি দশা করতো ভেবে মজা পান। বাথরুমে গিয়ে সাবান মেখে স্নান করলেন। একটা নাইটি গলিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে চায়ের পানি চাপিয়ে দেবকে ডাকতে গিয়েও ডাকলেন না,লজ্জা করল। একটা চাদর এনে চাপা দিলেন। রান্না ঘর থেকে হাক দিলেন,ওঠেন,চা হয়ে গেছে।
চায়ের পানি ফুটছে। স্কুল থেকে ফিরে আজ বাড়ি যাবেন। আব্বু বিয়ের কথা বলেছিলেন কিন্তু বেশি পীড়াপিড়ি করেন নি। ভেবে অবাক লাগে এত নিশ্চিন্ত থাকেন কি করে? একটা কথা আছে কন্যাদায় গ্রস্থ পিতা,আব্বুকে দেখে তা মনে হয় না। খুব খারাপ লাগছে আব্বু যখন শুনবেন তার আদরের মণ্টি তাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে এক অন্য ধর্মের মানুষকে কি প্রতিক্রিয়া হবে? মানুষটা অন্য মানুষের মত নয় একথা কি সবাই বুঝবে? মনে হচ্ছে দেব উঠেছেন,সাড়া পাওয়া যাচ্ছে উকি মেরে দেখলেন লুঙ্গি পরেছেন। এবার সামনা সামনি হওয়া যায়। খাবার আর চা নিয়ে প্রবেশ করলেন গুলনার।
— মনে আছে তো আজ বাড়ি যাবো?
— মণ্টি কাল কষ্ট হয়নি তো?
গুলনার রক্তিম হয় বলেন, এত কথা বলেন কেন? প্রথম দিনেই কিছু হোক আমার ইচ্ছা না।
— কি ইচ্ছা না?
— কিছু না। মনে মনে ভাবেন,বলদা কি সাধে বলে?
— মণ্টি আমার পাশে একটু বসবে?
— রান্না করবে কে? সারা রাত একসাথে শুয়েছিলাম তাতে হয়নি? চা খেয়ে গোসল করেন আমি রান্না ঘরে যাই। স্কুল আছে না?
রান্না করতে করতে ভাবেন খুব ভয় ছিল সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন নাতো? একটু কষ্ট হলেও খুব উপভোগ করেছেন। মনে হচ্ছিল দেব তাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিক। চিন্তাটা কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। দেবকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া হবে সবার? একমাত্র মামুনই জানে,আব্বুর কথা ভেবে চিন্তা হচ্ছে,তার কাজে কোনোভাবে আব্বু ব্যথা পাক গুলনার সহ্য করতে পারবে না।
বলদেবকে খাইয়ে স্কুলে বেরিয়ে গেলেন গুলনার এহসান। বেলা বাড়ে,একা একা বলদেবের সময় কাটেনা। স্কুল থেকে ফিরে তাগাদা দেন গুলনার। ব্যাগ রেখে বাথরুমে ঢূকলেন। বলদেব চুপচাপ বসে থাকে, কি পরবে ঠিক করতে পারে না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে গুলনার অবাক,এখনো রেডি হন নাই?
— তুমি বললে রেডি হতে,কি পরবো তুমি বলেছো?
গুলনারের ভাল লাগে দেবের এই নির্ভরতা। মুখে বলেন,সব আমাকে করতে হবে?
একপ্রস্থ জামা-প্যাণ্ট বের করে দিলেন,নিজের কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে। গুলনার দেখলেন খুব স্মার্ট লাগছে দেবকে। তার ইচ্ছে দেব কোন কলেজের অধ্যাপক হোক। ওর একাডেমিক ক্যারিয়ার ভালই অসুবিধে হবার কথা নয়। ঘণ্টা তিনেক পর বাড়ির সামনে পৌছালো।
0

রাস্তার ধারে বিশাল আকাশ চুম্বি বাড়ী।সারি সারি স্তম্ভ তার উপর বিশাল বারান্দা। বিরাট গেট গেট পেরিয়ে একটা রাস্তা ডান পাশে চলে গেছে গ্যারাজের দিকে।ধাপে ধাপে বড় সিড়ী বেয়ে উপরে উঠে তারপর বাম দিকে দরজা।উপরে লেখা এহসান মঞ্জিল।বলদেব অবাক বিস্ময়ে থমকে দাড়ায়।গুলনার সিড়ি বেয়ে দু-ধাপ উঠে পিছন ফিরে বললেন,কি হল দাঁড়িয়ে রইলেন?
বলদেব কাছে এসে বলল,মণ্টি তুমি এত বড়লোক।
--এটা আমার বাবার বাড়ি।
ওরা উপরে উঠে গেল দারোয়ান দাঁড়িয়ে সালাম করে, করিম ছাড়া কেউ দেখেনি।নিজের ঘরে দরজা খুলে দেবকে বসিয়ে করিমকে বলেন,ওনাকে চা দাও। তারপর বাথরুমে চলে গেলেন।
করিম রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে ছোটদির ঘরের দিকে যেতে গেলে পিছন থেকে নাদিয়া বেগম বলেন,কার চা নিয়া যাস?
— ছোটদি আসছেন। করিম দৌড় দেয়।
— কে আসছে এই করিম,কে আসছে? দেখছো কথার জবাব দেয়না,বলতে বলতে নাদিয়া বেগম করিমের পিছনে পিছনে গিয়ে মণ্টির ঘরে ঢুকে দেবকে দেখেই আবার বেরিয়ে আসেন।
ব্যাটারে একেবারে অন্দরে আইনা তুলছে। বেরিয়ে এসে ছেলেকে ডাকেন,এ্যাই মামুন– মামুন।
মামুন ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে ফিসফিস করে বলেন,দেখ তো বাবা মণ্টির ঘরে কে আসলো? করিমটার যদি কোনো আক্কেল থাকে– -একেবারে ভিতরে নিয়া তুলছে।
মামুন উকি দিয়ে দেখে বলেন,উনি তোমার দামাদ।
নাদিয়া বেগমের বিষম খাবার অবস্থা। বলে কি মামুন? মায়ের লগে ফাজলামি?
ড.রিয়াজ আজ সকাল সকাল বাড়ি ফিরেছেন। উত্তেজিত নাদিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করেন,কি হইল এত শোরগোল কিসের?
— কি হওনের বাকী আছে? শুনছো মামুন কি কয়?
— আবু দুলাভাই আসছে।
— দুলাভাই? বলদেব আসছে নাকি?
মামুন অবাক আব্বুর কথা শুনে। ড.রিয়াজ মণ্টির ঘরে ঢুকতে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায় বলদেব। নাদিয়া বেগমও সঙ্গে সঙ্গে ঢুকলেন।
— বসো।
বলদেব বসে,সামনে সোফায় ড.রিয়াজ সাহেব বসে জিজ্ঞেস করেন,তোমার নাম বলদেব সোম?
— জ্বি।
— আমি মণ্টির বাবা। নাদিয়া বেগমকে দেখিয়ে বলেন,এই হল তার গর্ভধারিনী।
বলদেব দুজনের পা ছুয়ে প্রণাম করে। নাদিয়া বেগমের বিস্ময়ের সীমা থাকে না। ইতিমধ্যে দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছেন গুলনার। হতবাক হয়ে শুনছেন আব্বুর কথা।
— তুমি পরীক্ষা দিছিলে,তার কোন খবর পাইছ?
— জ্বি সেইটা মণ্টি বলতে পারবে।
ড.রিয়াজ ঘর কাপিয়ে হো-হো করে হেসে ওঠেন। নাদিয়া বেগমের গা জ্বালা করে। এত হাসি কোথা থেকে আসছে কে জানে। সারাদিন চেম্বার নিয়া পইড়া থাকেন,এত খবর পাইলেন কেমনে?
— আব্বু ওর সাব্জেক্টে প্রথম হয়েছে। গুলনার ঘরে ঢুকে বলেন।
— সেকেণ্ড ক্লাস ফার্স্ট? ড.রিয়াজ বলেন।
এবার মণ্টির বিস্ময়ের পালা। মামুনের দিকে তাকায় ভাইয়া বলে নাইতো?বুঝতে পারে মেয়ের পাত্র দেখার গরজ নাই কেন?
— ওইদিকে কি দেখতেছিস? তোরা ভাবিস বাপ হইয়া আমার কোন চিন্তা নাই?মামুন কয় নাই।
মামুন কি যেন বলতে যায় ড রিয়াজ হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন,বুঝছি আপুর তোমারে কশম দিছে।
গুলনারের মনে পড়ে দেব বলছিল কে নাকি পথে তাকে নানাকথা জিজ্ঞেস করছিল। তাহলে আব্বু স্পাই লাগাইছেন?
ড.রিয়াজ হাসি থামিয়ে বলদেবকে জিজ্ঞেস করেন,এইবার কি করবা?
দেব ঘাড় ঘুরিয়ে মণ্টিকে দেখে। মন্টি বলেন,এম.এ পড়বো। আমার ইচ্ছা দেব অধ্যাপনা করুক।
— তোমার ইচ্ছা? ড.রিয়াজ মেয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
— না মানে দেবেরও তাই ইচ্ছা। অপ্রস্তুত গুলনার সাফাই দেয়।
নাদিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে ড.রিয়াজ বলেন,তোমরা দামাদ খুজতেছিলা,তোমার মাইয়া মনের মত কইরা দামাদ বানাইয়া নিছে।
— আচ্ছা দেব এইবার একটা কথা মণ্টি না, তুমি নিজে কও।
— জ্বি।
— তোমার নাম বলদেব সোম তার মানে তুমি হিন্দু?
— তা বলতে পারেন।
— তুমি কি বলো?
— জ্বি আমি হিন্দু কি মুসলমান সেইভাবে কখনো ভাবিনি। আমি একটা জিনিস বুঝি সেইটা মানুষ।
— রাইট। হিন্দু-মুসলিম-ইশাই যাই হও সবার মধ্যেই মানুষের মৌলিক চাহিদা একই। তুমি পিয়নের কাজ করতে তুমি পিয়ন আর যদি মণ্টি তোমারে অধ্যাপক বানায় তুমি অধ্যাপক। এই বদল হইলেও তুমি সেই দেব।
--হ্যা স্যার।
--স্যার কি?আব্বু কইতে শরম করে? গুলনার ধমক দেয়।
--হ্যা আব্বু এইটা ঠিক।বলদেব শুধরে নিয়ে বলল।
ড রিয়াজ বলেন, মনে হয় আমার বেগমের মনে অনেক প্রশ্ন কিলবিলাইতেছে। আমি যাই তারে সামাল দিতে হইবো।
নাদিয়া বেগমের মনে হয় তিনি ছাড়া সবাই ব্যাপারটা জানতো। ভীষণ অভিমাণ হয় তার কি সংসারে কোন মুল্য নাই? করিম পর্যন্ত তার কথার জবাব দেয় না।
ড.রিয়াজ বলেন,বিবিজান আসেন।
নাদিয়ে বেগম বলেন,আমারে সামাল দেওনের দরকার নাই।
ড.রিয়াজ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলদেবকে বলেন,তুমি বিশ্রাম নেও,আমি চেঞ্জ কইরা আসি।
নাদিয়া বেগম স্বামীকে অনুসরন করেন। গুলনার একটা লুঙ্গি এগিয়ে দিয়ে বলেন, কথার জবাব দিতে পারেন না? কেউ কিছু জিগাইলে আমার দিকে চাওনের কি আছে?
— পাস করেছি তুমি আগে আমাকে বলেছো? না বললে আমি জানবো কি করে?
— দেখেন আপনে অখন গ্রাজুয়েট পোলাপানের মত কথা বইলেন না।
— আচ্ছা মণ্টি,তুমি আমার সঙ্গে একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারোনা? সারাক্ষন খালি ধমকাও?
গুলনার পিছন ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে নীচু হয়ে দেবের মাথা বুকে চেপে ধরে বলেন,তাইলে কারে ধমকাবো ? কে আমার ধমকানোর ধার ধারে বলেন?
মণ্টির বাহুবন্ধন হতে মুক্ত হলে দেব বলে,তুমি আমাকে এইভাবে ধরে যত খুশি ধমকাও আমার কিছু হবে না। তুমি ছুয়ে থাকলে সব উপেক্ষা করতে পারি।
গুলনার চোখের পানি আড়াল করতে ওয়ারড্রবের পাল্লা খুলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কি এমন কথা বলল চোখে পানি আসার মত? গুলনার ভাবেন,আসলে বলার দরদি ভঙ্গি হৃদয়কে বিদ্ধ করে। নিজেকে সামলে নিয়ে গুলনার দেবের কাছে এসে বলেন,সত্যি বলবেন আমি যে আপনেরে ধমকাই তাতে খারাপ লাগে না?
— না।
— তাইলে আপনের ব্যক্তিত্ব নাই?
— অনেকে তাই মনে করে।ব্যক্তিত্ব শিং-র মত সবাইরে গুতা দেবার জন্য না।মনে করি আমার বিবি আমারে ধমকায় তাতে কার কি?
— আপনের বিবির কোন দোষ নাই?
— থাকবে না কেন? দুইজন যদি নিজেদের এক মনে করে তাইলে আর কোন কমপ্লেক্স থাকে না।
গুলনারের মন ভরে যায়। ইচ্ছে করছে সারা বাড়ি দাপাদাপি করে ছুটে বেড়ায়।
— তাইলে আপনি একা থাকেন আর মনে করবেন আমি আপনের মধ্যে আছি। বলে চলে যান গুলনার।
দেব দরজা বন্ধ করে চেঞ্জ করতে থাকে। দেব পাস করেছে তার মানে আবার তাকে পড়তে হবে। মন্টিকে ছেড়ে ভার্সিটিতে গিয়ে লেকচার শুনতে হবে? পড়াশুনা খারাপ লাগে না কিন্তু উদ্দেশ্যমুলক ধরাবাধা শিক্ষায় হাপিয়ে ওঠে মন। ছোটবেলায় পড়েছিল, “খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই খেলা লাঙ্গল চষা। “সব কিছুকে খেলা বলে ভাবতে পারলে আর ক্লান্তি লাগে না।
 
Last edited:

kumdev

Member
437
397
79
।।৫০।।


সবাই বসে গেছে খাবার টেবিলে,নাদিয়া বেগমের দেখা নেই। পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সকলে কি ব্যাপার? অগত্যা গুলনার ডাকতে গেলেন মাকে। নাদিয়া বেগম বই মুখে নিয়ে বসে আছেন। গুলনারকে আসতে দেখে গভীর মনোযোগ দিলেন বইতে।
— মা,খাইতে আসো। সবাই বসে আছে।
— তুমি আমারে মা কইবা না।
মুচকি হেসে গুলনার বলেন, ঠিক আছে কমু না,খাইতে আসো।
— আমার ক্ষুধা নাই।
— আমার পরে রাগ করছো?
— ক্যান? তুমি আমার কে,তোমার পরে রাগ করতে যাবো ক্যান? অখন যাও,আমার শরীর ভাল না। আমারে বকাইও না।
গুলনার হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন। মামুন জিজ্ঞেস করলো,কি আইল না?
বিরক্ত হয়ে বসে পড়ল গুলনার।আম্মুটা এমুন পোলাপানের মত করে ভাল্লাগেনা।
ড.এহসান বললেন,না আসে থাক। একদিন না খাইলে কিছু হইবো না।
সবাই খেতে শুরু করল।বলদেবের মনে হল সেই হয়তো কারণ, এদিক-ওদিক তাকিয়ে ইতস্তত করে।
--আপনের আবার কি হইল?গুলনার জিজ্ঞেস করে।
--আমি একবার চেষ্টা করতে পারি?
সবাই অবাক হয়ে দেবের দিকে তাকায়। এখনো ভাল করে আলাপ হলনা বলে কি না চেষ্টা করবে?গুলনার ভাবেন এ কোন বলদের পাল্লায় পড়ল।ড রিয়াজ বললেন, না বাবা তুমি খাও। আমার বেগম ভারী জিদ্দি। একবার জিদ করলে কারো ক্ষমতা নাই তারে বুঝায়।
--না মানে উনি না খেয়ে থাকবেন--।
— আব্বু ওনারে একটা সুযোগ দিয়া দেখেন। সাধ হইছে যখন সেইটা পুরণ হোক।মজা করে বললেন গুলনার।কথাটা বলে আবার ভাবে অপমানিত হয়ে ফিরবে না পাঠালেই ভাল হত।
বলদেব ধীরে ধীরে নাদিয়া বেগমের দরজার কাছে গিয়ে বলে,মা আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
নাদিয়া বেগম অবাক হয়ে চোখ তুলে দেখে বলেন,আমারে মা কও কোন সুবাদে? তোমারে কে পাঠাইল ডাক্তার না তার বেটি?
— জ্বি কেউ পাঠায় নাই। আমি নিজেই আসছি। করিম আপনেরে মা কয় সেই সুবাদে আমিও বললাম।
— করিম? সেতো কাজের লোক।
— ধরেন আমিও তাই।
নাদিয়া বেগমের কথা বলতে খারাপ লাগে না বলেন,আসো ভিতরে আসো। কি বলতে আসছো?
— আমি একটু আসতেছি। দেব চলে গেল।
নাদিয়া বেগম অবাক বলে ভিতরে আসতে চায় যেই বলল আসো। তখন বলে একটু আসতেছি। দেব খাবার ঘরে এসে বলল,আপনারা খেয়ে নিন। আমি মার সাথে খাবো।
— আমরা খেয়ে নেবো মানে? ড.রিয়াজ মনে মনে ভাবেন পাগলে কয় কি?
দেব দাঁড়ায় না আবার চলে গেল। এবার সরাসরি নাদিয়া বেগমের ঘরে। দেবকে আড়চোখে দেখে নাদিয়া বেগম বলেন,কি বলতে চাও বলো।
— মা সবাই আপনাকে গোপন করছে,আমি কিছু গোপন করি নাই। যা জানতে চান বলেন অপছন্দ হলেও আমি মিথ্যা কথা বলবো না।
নাদিয়া বেগম সুযোগটা হাতছাড়া করা সমীচীন মনে করেন না। একটু ইতস্তত করেন, জিজ্ঞেস করলেই কি সত্যি কথা বলবে? এমন কৌশলে জিজ্ঞেস করবেন,যাতে পেটের কথা বেরিয়ে আসে।
— বাড়িতে তোমার কে কে আছে?
— মা আমরা বড় গরীব। আমার থাকার মধ্যে ছিল মা। লোকের বাড়ি ঢেকিতে পাড় দিয়ে চাল ঝেড়ে বহু কষ্টে আমারে বড় করছে।
হায় হায় এ তো হাভাতে ঘরের পোলা। কথার কোন রাখঢাক নাই। জিজ্ঞেস করেন, তোমার মা কি বিধবা?
— সধবা হয়েও বলতে পারেন বিধবা। আমার বাপে মায়রে ফেলায়ে চলে গেছে। আমার বয়স তখন নয় কি দশ।
নাদিয়া বেগম অবাক হন,কৌশল না করতেই সব কেমন গড়্গড় করে বলে যাচ্ছে। মনে হয় না মিথ্যে বলছে।
— তুমি কি কাজ করতা?
— জ্বি নির্দিষ্ট কোন কাজ না যখন যেমন পেতাম– ।
— যখন যেমন পাইতাম মানে?
— ঘর ছাওয়া রাস্তার মাটি কাটা বাগান করা ম্যাসেজ করা শেষে ডিএম অফিসে পিয়ন।
নাদিয়া বেগমের চোখ ছানা বড়া। আহা কামের কি ছিরি। বলে কি লোকটা? মণ্টি শ্যাষে একটা পিয়নরে বিয়া করল? তাইলে এত ল্যাখাপড়া পাশ করার কি দরকার ছিল? গলার স্বর বদলে জিজ্ঞেস করেন,কি বললা পিয়ন?
— জ্বি। একজন মেট্রিক পাস ছেলেকে অফিসারের কাজ কেন দেবে?
নাদিয়া বেগম চোখে অন্ধকার দেখেন। এত খবর তার জানা ছিল না। কপাল চাপড়ে বলেন,হায় আল্লা কচি মেয়েটার সব্বোনাশ করাইছো তাতেও তোমার আশ মিটে নাই? নসিবে আর কি কি আছে কে জানে? সেইসব দেখার জন্য আমার বাঁচার ইচ্ছা নাই– ।
— সব্বোনাশ কেন বলছেন মা। এতো নিছক দুর্ঘটনা।
নাদিয়া বেগম স্থির দৃষ্টিতে দেবকে দেখেন। কোন দুর্ঘটনার কথা বলতেছে? তুমি কোন দুর্ঘটনার কথা কও?
— ঐ যে জানোয়ার গুলো যা করেছে। তার জন্য মণ্টির কি দোষ বলেন?
— তুমি সেই সব শুনছো?
— আমি তো হাসপাতালে গেছিলাম ডিএম সাহেবার সঙ্গে। এক জানোয়ার হাসপাতালে এসেছিল তারে ধরেছি। ডিএম সাহেবা পরে সব কটাকে ধরেছেন।
অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেবকে দেখেন যেন ভুত দেখছেন। সব জানে,জেনে শুনেও বিয়া করছে। নাদিয়া বেগম এর আগে এমন মানুষ দেখেন নাই। দেবের সম্পর্কে কৌতুহল বাড়ে, জিজ্ঞেস করেন,তুমি নাপাক জেনেও তারে বিয়া করছো?
— মা, শরীর নাপাক হয়না ধুইলে ময়লা সাফ হয়ে যায়,নাপাক হয় মন। মন্টির মত মন খুজলে আপনি হাজারটা পাইবেন না।
নাদিয়া বেগম একটু নরম হলেন,তোমার মা নাই কইলা না?
— আম্মুর কাছে আমি সেই স্নেহ পেয়েছি।
— আম্মু আবার কে?
— দারোগাসাহেবের বিবি। আগে ওনার কাছে থাকতাম,আমারে ব্যাটার মত ভালবাসেন। জানেন মা, মন্টি আমারে গ্রাজুয়েট করেছে। অধ্যাপক করতে চায়।
— তোমাদের বিয়ে হয়েছে কবে?
— এই স্কুলে মণ্টি যোগ দেবার আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
এতকাল বিয়ে হয়েছে তাকে কেউ বিন্দু বিসর্গ জানায় নি? অভিমানে চোখে পানি এসে যায়। মায়ের মন তবু ধন্দ কাটেনা,অর্থের লোভে বিয়া করে নাই তো?
— আমাদের অবস্থা তুমি জানতা?
--কি করে জানবো। মন্টি তো কিছু বলে নাই। জানেন মা,আমি পাস করেছি সেইটাও আমারে বলে নাই।
— তোমার রাগ হয় নাই?
— মন্টির উপর আমি রাগ করতে পারি না।
--অসুবিধা কোথায়?
--সেইটা বলে বোঝাতে পারবো না।
থাক তোমারে আর বুঝাইয়া বলতে হবে না নাদিয়া বেগম ভাবেন।ছেলেটা বড় সরল,কিছু বাধো-বাধো ভাব থাকলেও বলদেবকে পছন্দ হয়, জিজ্ঞেস করেন, তুমি খাইছো?
— মা না খাইলে কেমন করে খাবো?
— ওইদিকে দেখো মা খায় নাই আর বাপ বেটির সেই খেয়াল থাকলে তো?
— না মা অরাও খাইতেছিল না। আমি বললাম আপনারা খাইয়া নেন। আমি মার সঙ্গে খাবো।
ফিক করে হেসে নাদিয়া বেগম বলেন,তুমি একটা ডাকাইত।
— ডাকাইত বললেন কেন মা? কি ডাকাতি করলাম?
— তুমি আমার মাইয়াডারে ডাকাতি করছো। চলো অখন খাইয়া নাও ম্যালা রাইত হইছে। দেখো তো ওদের খাওয়া হইল কি না?
দেব ডাইনিং রুমে এসে দেখল খাওয়া শেষ হলেও সবাই বসে আছে। দেব ঢুকতেই সকলে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায়। বলদেব বলে,আপনাদের হলে টেবিল খালি করলে ভাল হয়। এখন আমরা খেতে বসবো।
দেব ফিরে যেতে মামুন বলেন,অপা তুমি কারে বিয়া করছো?
— এতো দেখি ম্যাজিসিয়ান,ড.রিয়াজ বলেন।
গুলনারও অবাক কম হয়নি। শোবার সময় জিজ্ঞেস করতে হবে কি ভাবে মাকে ম্যানেজ করলেন? একে একে তারা হাত-মুখ ধুয়ে যে যার ঘরের দিকে পা বাড়ায়। করিম টেবিল পরিস্কার করে। আড়াল থেকে গুলনার দেখেন,দেব আর মা আসতেছে।
ডাইনিং হলে ঢুকে নাদিয়া বেগম বলেন,তুমি বসো বাবা। বেশি রাইত কইরা খাইলে শরীর খারাপ হয়। করিম ডাইনিং টেবিলে একটা প্লেট এনে দিল। বলদেব বলে, একটা প্লেটে দুইজন খাবো? আর একটা প্লেট আনো।
করিম আর একটা প্লেট আনে,বলদেব দুদিকে দুটো প্লেট রাখে।
— কাচাকাছি রাখো,নাইলে দিমু কেমনে? নাদিয়ে বেগম বলেন।
অগত্যা বলদেব প্লেটদুটি সেইভাবে রাখলো। দুজনে খেতে বসলো সামনা সামনি। একজন বাইরের পুরুষ মানুষের সঙ্গে একাকী এর আগে মাকে খেতে দেখেন নি গুলনার। প্লেটে ভাত তুলে দিচ্ছেন মা। দেব মাথা নীচু করে খেতে থাকে। সস্নেহ দৃষ্টিতে দেবের খাওয়া দেখছেন মা।
— তোমারে আর একটু ভাত দেই।
— দিতে পারেন,আমি একটু বেশি খাই।
নাদিয়া বেগম গায়ে হাত বুলিয়ে বলেন, খাও বাবা– যোয়ান বয়স এই সময় তো খাইবা।
গুলনার ঢুকে বলেন,পিয়নটারে অত আস্কারা দিও না।
— তুই এখানে ক্যান আসছস। আড়াল থিকা কথা শুনা বদ অইভ্যাস আমি পছন্দ করিনা।
— আমি পানি নিতে আসছি।
— তুমি কিছু মনে কইরো না বাবা। অর কথা ওইরকম।
— মা আপনি গুরুজন। দেখেন কে কি কইল সেইটা বড় কথা না সেই কথার ভাবটা হল আসল কথা।
— বাবা তোমার উপর আমার খুব ভরসা তুমি মাইটারে দেইখো। নাদিয়া বেগম আন্তরিকতার সঙ্গে বলেন।
— ওনারে কে দেখে তার ঠিক নাই উনি দেখবো আমারে? গুলনার পানিই ভরতে ভরতে বলেন।
— তু এইখান থিকা যাবি? আমাগো কথার মইধ্যে তরে কে ডাকছে কথা কইতে?
গুলনার পানি নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে করিমকে বলেন, আমরা আসি? তুই খাইয়া সব ঠীকঠাক কইরা রাখিস।
— জ্বি আপনে কুনো চিন্তা কইরবেন,আপনে আসেন। করিম বলে।
গুলনার বেগম ঘরে বসে ভাবছেন,এক্টু আগে মজা করে বলেছিল আপনার ব্যক্তিত্ব নাই।যার এত আত্মবিশ্বাস তাকে ব্যক্তিত্বহীন কিভাবে বলা যায়।সবে এক পলক দেখেছে কি দেখেনি মাকে কিভাবে সেই মাকে টেবিলে এনে ছাড়লো।দেবকে যত জানছে তার ধারণাগুলো চুর চুর ভেঙ্গে পড়ছে।
 
Last edited:
Top