- 1,461
- 2,214
- 159
পর্ব ১৫
প্রায় ফাঁকা সিনেমা হলে রাজীব অনুরিমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। পিছনের সারিতে বসে কিছুটা দূর থেকে সেটা প্রত্যক্ষ করছিলো সমীর। অনুরিমা ছটফট করছিলো আর বলছিলো , "প্লিজ রাজীব বাবু , এতো তাড়াতাড়ি এতোদূর এগোবেন না। আমাকে একটু সময় দিন দয়া করে। "
ক্রমাগত বলার ফলে রাজীব অনুরিমাকে ছেড়ে দিলো।
- "ঠিক আছে , তুমি যদি প্রস্তুত না থাকো , তাহলে আমি জোর করবো না। কিন্তু মনে রেখো , তুমি যত দেরী করবে ততোই তার ফল দেরীতে পাবে।"
এই বলে রাজীব সিনেমার স্ক্রিনে নিজের ফোকাসটা ঘুরিয়ে নিলো। সে আর কিছু করলোও না , কিছু বললোও না। অনুরিমার কিছুটা খারাপ লাগলো। সে এভাবে রাজীবকে বলতে চাইনি , কিন্তু সে একটু বেশিই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলো। রাজীব তো যা করছে সেটা তাদের দাম্পত্য জীবনের ভালোর জন্যই করছে। এইভাবে সে কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলো। তারপর নিজেই রাজীবের দিকে হাত বাড়ালো। রাজীবের হাত স্পর্শ করে বললো , "আপনি এবার শুরু করতে পারেন , আমি নিজের মন কে তৈরি করিয়ে নিয়েছি। "
এই কথা শোনা মাত্রই রাজীব আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে অনুরিমাকে জড়িয়ে ধরলো ! ধরে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে লাগলো। অনুরিমা আর কোনো প্রতিবাদ করলো না , নিথর হয়ে এক পরপুরুষের লালামিশ্রিত চুমু নিজের দেহে নিতে লাগলো। রাজীব ওকে চুমু খেতে খেতে ওর সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায় এসে পৌঁছলো , সেটা হলো তার ঘাড়। ঘাড়ে চুমু পড়তেই অনুরিমা কুকঁড়িয়ে উঠলো। রাজীব বুঝতে পারলো সে অনুরিমার মোক্ষম জায়গায় স্পর্শ করেছে। এবার অনুরিমার রেহাই নেই। সে অনুরিমার ঘাড়ে ঠোঁট বসিয়ে ক্রমাগত চুমু খেতে লাগলো। অনুরিমা ঘাড় বেঁকিয়ে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছিলো , কিন্তু বারংবার অসফল হচ্ছিলো। শেষে অনুরিমা বলে উঠলো , "ছাড়েন এবার , অনেক হয়েছে। আমাকে একটু বিরতি দিন। "
অনুরিমার কথায় রাজীবের হুঁশ ফিরলো। সে নিজেকে সংযত করে অনুরিমার ঘাড় থেকে মুখটা সরিয়ে নিলো। অনুরিমা লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। সে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলো, এসব যে তার জীবনে প্রথমবার হচ্ছিলো , কোনো পরপুরুষের সাথে এরকম একটা ফাঁকা সিনেমা হলে....... ।
অনুরিমার আতংকিত অবস্থা দেখে রাজীব তার শরীরের উপর থেকে নিজের হাত দুটোও সরিয়ে নিলো , ওকে কিছুক্ষণ নিজের মতো করে একা ছেড়ে দিলো। পাশ থেকে রাজীব উঠে গেলো। রাজীবকে উঠে যেতে দেখে অনুরিমা একটু অবাক হলো। মনে প্রশ্ন জাগলো , সে কেন উঠে গেলো ? কোথায় গেলো ? সে কি আবার তার উপর রাগ করেছে ? এই মানুষটা কে যে এখন অনুরিমার সবচেয়ে বেশি দরকার নিজের স্বামীকে ঠিক করার জন্য ! তাকে তো চটালে চলবে না ! ওর কি এখন রাজীব বাবুর পেছনে যাওয়া উচিত ? কোথায় গেলেন দেখার জন্য।
এসব মনে মনে ভাবতে লাগলো অনুরিমা। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো যে সে অপেক্ষা করবে কিছুক্ষণ , না এলে তখন গিয়ে দেখবে , বা ফোন করবে। ওদিকে ঠিক পিছনের সারিতে বসে আড়াল থেকে সবটা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করছিলো সমীর। তার মনে এক অদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল , যা সে বাক্যের দ্বারা বলে কাউকে বোঝাতে পারবে না। তার প্যান্টের ভিতর বাল্জ এর সৃষ্টি হয়েছিল , অর্থাৎ তার পুংজননেন্দ্রিয়টি প্যান্টের ভেতর ফুলে ফেঁপে উঠেছিল এসব দৃশ্য অনুভব করে।
রাজীব আসলে গেছিলো অনুরিমার জন্য জলের বোতল কিনে আনতে। অনুরিমাকে এরূপ বিধস্ত অবস্থায় দেখে খানিকটা আঁতকে উঠেছিল রাজীব। অনুরিমা যে এতোটা ভয় পেয়ে যাবে সেটা রাজীব কল্পনা করতে পারেনি। তাই ওকে সুস্থ স্বাভাবিক করতে রাজীব ফুড কাউন্টারে গেছিলো কিছু খাবার আর পানীয় আনতে।
কিছুক্ষণ পর রাজীব এক বাকেট পপ কর্ন ও একটা জলের বোতল নিয়ে হলে ঢুকলো। সিনেমা তখনও চলছিলো , ইন্টারভেল হয়নি। অনুরিমার পাশে এসে বসলো রাজীব। রাজীবকে দেখে অনুরিমা হাঁফ ছাড়লো। রাজীবকে হঠাৎ উঠে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতে যাবেই তার আগে রাজীব উত্তর দিলো যে সে অনুরিমার জন্য পপ কর্ন ও জলের বোতল আনতে গেছিলো। কারণ অনুরিমাকে দেখে তার খুব টেন্সড লাগছিলো, তাই সে ভাবলো কিছু খাবার আর জল সে তার বন্ধু অনুরিমার জন্য যদি নিয়ে আসে।
রাজীবের এই কাইন্ড জেসচার অনুরিমার খুব ভালো লাগলো। সে যেন ভুলেই গেলো কিছুক্ষণ আগে এই রাজীবই তাকে কতোটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছিলো। রাজীব তাকে পপ কর্ন এর বাকেট-টা দিলো। অনুরিমা সাদরে সেটি গ্রহণ করলো। কয়েকটা কর্ন সে মুখে দিয়ে চেবাতে লাগলো। সৌজন্যতাবশতঃ রাজিবকেও অফার করলো , রাজীব পোলাইটলি রিফিউস করলো। কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো। তারপর ইন্টার্ভালের সময় এসে পড়লো। বিরতির সময়ে অনুরিমা ও রাজীব একটু বাইরে বেড়োলো , রিফ্রেশ হতে।
সমীর নিজের সিটেই বসেছিলো। ওখান থেকে নড়লো না চড়লো না। পাছে যদি রাজীবের ন্যায়ে অনুরিমাও তাকে ধরে ফেলে। সে তাই ঘাপটি মেরে নিজের সিটেই বসে রইলো। সিনেমা চলাকালীন অবশ্য সে একটি কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছিলো। নিজের উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে না পেরে সমীর সিটে বসেই অনুরিমা ও রাজীবের মধ্যে ঘটে যাওয়া মুহূর্তগুলো কে পূনরায় চিন্তা করে হস্তমৈথুন করেছিল। লিঙ্গ থেকে রস খসে গড়িয়ে পড়েছিল সিটের সামনে মেঝেতে। ইন্টার্ভালে আলো ফিরলে সে চেক করতে থাকে তার বাঁড়া নিঃসৃত রস কোথাও কোনো সন্দেহভাজন দাগ ফেলেছে কিনা কোনো ফাঁকা সিটে বা মেঝেতে। সেটা পরবর্তীতে হলের স্টাফরা জানতে পারলে কোনো বড়ো ইস্যু নাহলেও সেটা সমীরের বিবেক ও পৌরুষত্বের কাছে খুবই এম্ব্যারাসিং ব্যাপার , যে সে তার স্ত্রীকে তার ডাক্তারের সাথে চাক্ষুস দেখে সিনেমা হলেই মাল ফেলে হলের পরিষ্কার মেঝে বা সিটে দাগ করে একাকার করে দিয়েছে। সে যে নিজের পাপের কোনো চিহ্ন রাখতে চায়না। তাতে তার বিবেকে আঘাত লাগবে। সে আজকে এখানে এসেছে একটা অনুভূতি নিতে , নিজের ম্যান সম্মান কে নিজের যৌনরসের মাধ্যমে হলে ছড়িয়ে দিতে নয়।
হল থেকে বাইরে বেরিয়ে অনুরিমা ওয়াশরুমে গেলো। রাজীব বাইরে অপেক্ষা করছিলো। ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর অনুরিমা ও রাজীব একটু এদিক-ওদিক ঘুরলো। বিভিন্ন সিনেমার অ্যাড দেখে সেইসব সিনেমা নিয়ে চর্চা আলোচনা করলো। দুজনের মধ্যে সবকিছু ফের স্বাভাবিক হয়েগেছিলো। রাজীব সেটা করার জন্য উদ্যত হয়েছিল। তাই হল থেকে বেরিয়ে হলে ঘটে যাওয়া মুহূর্তগুলি নিয়ে সে একটি বাক্যও খরচা করেনি। সেই প্রসঙ্গই আনতে দেয়নি।
সেকেন্ড হাফ শুরু হওয়ার কিছু মুহূর্ত আগে তারা ফের হলে প্রবেশ করলো। সমীর সেই থেকে নিজের স্থানেই বসেছিলো। চাতক পাখির মতো তাদের ফেরার অপেক্ষা করছিলো। তাদের আসতে দেখে সমীর মাথাটা নিচু করে নিলো। কারণ তখনও সিনেমার সেকেন্ড হাফ শুরু হয়নি , ফলে থিয়েটারের আলো নেভেনি। ছদ্মবেশে থাকলেও সে কোনোপ্রকার রিস্ক নিতে চাইছিলনা।
রাজীব ও অনুরিমা পূনরায় নিজের সিটে গিয়ে বিরাজমান হলো। ইন্টার্ভালের সময়ে রাজীব ও অনুরিমার মধ্যে হওয়া স্বাভাবিক কথোপকথন অনুরিমার জড়তাকে অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলো। আর এটাই রাজীব চেয়েছিলো। কিন্তু এখন সে কোনো তাড়াহুড়ো করতে চাইছিলো না। শুধু সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষারত ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে সিনেমা শুরু হলো। যথারীতি আলো আবার নিভে অন্ধকার নেমে এলো হলে। সমীরও একটু রিল্যাক্স হলো থিয়েটার অন্ধকার হয়ে যাওয়ায়। এবার সে আরো মনোযোগ দিয়ে সামনের সারিতে কি ঘটছে তার উপর নজর রাখতে পারবে। কিছুক্ষণ সব স্বাভাবিক থাকলো। রাজীব কোনোরকম "উদ্যোগ" নিলোনা অনুরিমার দিকে হাত বাড়ানোর। অনুরিমা সেটা আশা করেনি। কারণ ও জানে রাজীব তাকে কেন হলে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিলো না যে দ্বিতীয়ার্ধে এতো সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রাজীব কেন কিছু করছে না ? যদিও না করলেই ভালো বাট রিহার্সাল ইস ইনএভিটেবেল। কখনো না কখনো তো তাকে এটা করতেই হবে। কতোক্ষণ বা কতোদিন সে পরিস্থিতি থেকে মুখ ফিরিয়ে পালাবে ? রাজীবই তো তাকে বলেছে যত তাড়াতাড়ি রিহার্সাল হবে ততো তাড়াতাড়ি তারা সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারবে।
তাই না পারতে লজ্জার মাথা খেয়ে অনুরিমাই তাকে জিজ্ঞেস করে উঠলো তাদের রিহার্সালের কথা। আর রাজীব ঠিক এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। তাই সে আগে থেকে আগ বাড়িয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনুরিমা বললো , "রাজীব বাবু , আপনি কি করবেন বলেছিলেন ..... মানে আমাদের রিহার্সাল ..... সেটা করবেন না ?"
- "আমি তো তোমায় সময় দিচ্ছিলাম , তুমি প্রস্তুত হলেই আমি প্রস্তুত।"
নিচু স্বরে অনুরিমা বললো , "হুমঃ ..... আমি প্রস্তুত। "
- "ঠিক তো ? আর হেসিটেট করবে না তো ?"
- "নাহঃ। .... আপনিই বলেছেন না, দ্রৌপদীকেও পরিস্থিতির কারণে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে অনেক কঠিন কার্য করতে হয়েছিল , তাহলে এই যুগের অনুরিমা কেন সেটা পারবে না ? যখন এসবের পেছনে উদ্দেশ্যেটাই হলো আমার স্বামীর মঙ্গল কামনা , তাকে সঠিক পথে নিয়ে আনা। "
"চিন্তা করোনা , আমি আছি তো। আমার উপর আস্থা রাখো , সব ঠিক হয়ে যাবে ", এই বলে রাজীব অনুরিমার হাত স্নেহের সাথে স্পর্শ করলো। অনুরিমা এবার কিছু বললো না। সে নিজের মনকে মানিয়ে নিয়েছিলো এই অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার জন্য।